মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মসজিদে আকসার মর্যাদা ও ফজিলতের ব্যাপারে সন্দেহকারীদের জওয়াব দেয়ার পূর্বে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট মসজিদে আকসার ফজিলত ও ইসরার পবিত্র ভূমির মর্যাদা তুলে ধরব। তাহলে সত্য বের হবে ও ইসলামী নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট জানা যাবে। নিন্মে তার বর্ণনা তুলে ধরলাম:
মসজিদে আকসা: কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে যার উল্লেখ রয়েছে, সকল মুফাসসির যার ফজিলতের ওপর একমত। তাদের দলিল কুদস ও মসজিদে আকসা সম্পৃক্ত সূরা ইসরার শুধু প্রথম আয়াতই নয়, বরং কুরআনের অন্যান্য আয়াতও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
“আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম”। [সূরা আম্বিয়া: (৮১)]
“আর তাদের ও যে সব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাতে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। (তাদেরকে বলা হয়েছিল) ‘তোমরা এসব জনপদে রাত-দিন (যখন ইচ্ছা) নিরাপদে ভ্রমণ কর”। [সূরা সাবা: (১৮)]
“আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নিচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব”। [সূরা বাকারা: (৫৮)]
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় মসজিদ। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল জমিনে কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদে হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বলেন চল্লিশ বছর। অতঃপর যেখানে তোমাকে সালাত পায়, সেখানে তা আদায় কর, কারণ এতেই ফজিলত”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৩৬৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ জুলহজ ১৪১৯হি. মার্চ ১৯৯৯ইং।]
মসজিদে আকসা: বরকতময়, বরকতময় তার চারপাশ। মসজিদে আকসা বরকতময় ভূমির মসজিদ, যার চারপাশেও আল্লাহ বরকত দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত সম্পর্কে বলা হয়, মসজিদে আকসার যদি অন্য কোন ফজিলত না থাকত এ আয়াত ব্যতীত তাহলেও যথেষ্ট ছিল। এখানে সকল বরকতের বর্ণনা রয়েছে। কারণ যার চারপাশ বরকতপূর্ণ, তা অবশ্যই দ্বিগুণ বরকতপূর্ণ। মসজিদে আকসাকে মসজিদে হারাম ও মসজদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াও একটি বরকত।
মসজিদে আকসা: মুসলিমদের প্রথম কিবলা। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন, তবে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন যেন তাকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
“আকাশের দিকে বারবার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখেছি”। [সূরা বাকারা: (১৪৪)] ফলে তিনি কাবার দিকে ফিরে গেলেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৯৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।] বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে তার মর্যাদা রহিত হয়নি, বরং তার মর্যাদা মুসলিমের অন্তর ও ইসলামী শরীয়তে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে।
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা থেকে এখানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। তিনি আল্লাহর দুই ঘর ও দুই কেবলার ফজিলত, মর্যাদা ও দর্শন লাভ করেন। আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আমার নিকট বুরাক আনা হল, বুরাক সাদা চতুষ্পদ জন্তু গাধার চেয়ে লম্বা ও খচ্ছরের চেয়ে ছোট। তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে পা রাখে। তিনি বলেন: আমি তাতে সাওয়ার হয়ে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছি। তিনি বলেন: আমি তাকে সেই খুঁটির সাথে বাঁধলাম, যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি বের হলাম। আমার নিকট জিবরিল আলাইহিস সালাম একটি মদ ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসলেন, আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আমাদের নিয়ে দুনিয়ার আসমানে আরোহণ করলেন...”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৫৯), প্রকাশ দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ মুহররম, ১৪২১হি. – এপ্রিল ২০০০ইং।]
মসজিদে আকসা: একমাত্র মসজিদ, যেখানে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমাদের নবী পর্যন্ত সবাই একত্র হয়েছেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইস্তেমা এখানেই সংগঠিত হয়েছে। ইসরার রাতে সকল নবীদের নিয়ে তিনি ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আকসা মুসলিমদের নিদর্শন, উম্মতে মুহাম্মদ সেখানে ইমামতি করবে, শেষ নবী পূর্বের সকল নবীর পবিত্র নিদর্শনসমূহের উত্তরাধিকারী এবং তার রিসালাত সকল পবিত্র ভূমিকে অন্তর্ভুক্তকারী। আরো প্রমাণিত হয় সকল পবিত্র ভূমি দীনে ইসলামের মিরাস, যার ওয়ারিশ কোন দীন হতে পারেনি।
মসজিদে আকসা ব্যতীত দুনিয়ার কোথাও সকল নবী একত্র হননি, এ থেকেও মসজিদে আকসার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
ইমাম মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আমি হিজরে অবস্থান করছিলাম, আর কুরাইশরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, যা আমি ভালো করে আত্মস্থ করেনি। আমি খুব সমস্যায় পড়লাম, এরপূর্বে কখনো এরূপ সমস্যায় পড়িনি। তিনি বলেন আল্লাহ আমার সামনে মসজিদে আকসা উঁচিয়ে ধরলেন, আমি তা দেখতে ছিলাম। তারা আমাকে কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি, যার সংবাদ আমি দেয়নি। আমি নিজেকে নবীদের জমাতের মধ্যে দেখেছি, দেখলাম মুসা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, দেখতে হালকা গড়ন ও কঠিন স্বভাবের, যেন তিনি শানুআ বংশের কেউ। আরো দেখলাম ঈসা ইব্ন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে উরওয়া ইব্ন মাসউদ সাকাফীর। আরো দেখলাম ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে তোমাদের সাথীর, অর্থাৎ তার নিজের। অতঃপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। আমি যখন সালাত থেকে ফারেগ হলাম, কেউ আমাকে বলল হে মুহাম্মদ, তিনি জাহান্নামের ফেরেশতা তাকে সালাম করুন, আমি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম, তিনিই আমাকে প্রথমে সালাম করলেন”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৭৮), সহিহ মুসলিম, প্রকাশক দারুস সালাম।]
মসজিদে আকসা: যার ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন মসজিদে আকসার সাথে মুসলিমের অন্তর এতটা সম্পৃক্ত হবে যে, সে চাইবে তার জন্য ছোট একটু জায়গা হোক, যেখান থেকে সে মসজিদে আকসার দিকে উঁকি দিবে, অথবা যেখান থেকে সে মসজিদে আকসা দেখবে। এতটুকু জায়গা তার নিকট দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আলোচনা করলাম কোনটি উত্তম: মসজিদে রাসূলুল্লাহ না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত সেখানে চার সালাত থেকে উত্তম। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম জায়গা। হয়তো কোন ব্যক্তির জন্য তার ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা হবে, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যাবে, তার জন্য তা সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা তিনি বলেছেন: দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: বিজয়ের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার বিজয়ের সংবাদ দিয়েছেন, যা তার নবুওয়তের আলামত। আউফ ইব্ন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তাবুক যুদ্ধে আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করি, তিনি চামড়ার তাবুতে ছিলেন। তিনি বলেন: কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি আলামত গণনা কর, তন্মধ্যে তিনি বলেন: অতঃপর বায়তুল মাকদিস বিজয় হবে...”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩১৭৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
মসজিদে আকসা: তায়েফায়ে মানসুরা বা সাহায্য প্রাপ্ত দলের আশ্রয়স্থল ও মুমিনদের মধ্যবর্তী ঘর। ইমরান ইব্ন হাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর জিহাদ করতে থাকবে। তাদের সাথে যারা শত্রুতা করবে, তাদের ওপর তারা বিজয়ী হবে, অবশেষে তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি মাসিহ দজ্জালের সাথে জিহাদ করবে”। [আহমদ, আবু দাউদ, হাকেম, তাবরানি ফিল কাবির, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (২৪৮৪), সুনানে আবু দাউদ, প্রকাশক মাকতাবাতুল মাআরেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
আমরা জানি ঈসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনে অবস্থিত বাবে লুদ্দে মাসিহকে পাকড়াও করে হত্যা করবেন।
মসজিদে আকসা: সেই ভূমি যেখানে বান্দাদের উপস্থিতি ও যেখান থেকে পুনরুত্থান ঘটবে। মায়মুনা বিনতে সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর নবী বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বলেন, তিনি বললেন:
« أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَالْمَنْشَرِ»
“উপস্থিতি ও পুনরুত্থানের স্থান”। [আহমদ, ইব্ন মাজাহ, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন রিবঈ রচিত: ফাদায়েলে শাম ও দিমাস্কের হাদিস।]
মসজিদে আকসা: যেখানে দজ্জাল থেকে নিরাপত্তার জন্য মুসলিমরা আশ্রয় নিবে। দজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দজ্জাল সম্পর্কে বলেন:
“... তার নিদর্শন হল সে জমিনে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। তার রাজত্ব প্রত্যেক ঘাটেই বিস্তার করবে। চারটি জায়গায় সে প্রবেশ করতে পারবে না, মসজিদে কাবা, মসজিদুর রাসূল, মসজিদে আকসা ও তূর...”। [আহমদ, হাদিস নং: (২৪০৮৫), (২৪০৮৪), (২৪০৮৩), (২৩৪৭৮), এ হাদিসের সনদ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। দেখুন: মুসনাদে আহমদ, প্রকাশক বায়তুল আফকারিদ দাওলিয়াহ, (২০০৪ইং)]
মসজিদে আকসা: যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ। সকল আলেম একমত যে, মসজিদে আকসা যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা বৈধ নয়, তন্মধ্যে মসজিদে আকসা অন্যতম। এ তিনটি মসজিদের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা অন্যান্য মসজিদের নেই। বুখারি ও মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না, মসজিদে হারাম, মসজিদুর রাসূল ও মসজিদে আকসা”। [বুখারি, হাদিস নং: (১১৮৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
তাই আমরা দেখি অনেক সাহাবিই মসজিদে আকসায় সালাত আদায়ের জন্য দীর্ঘ সফর করেছেন। পরবর্তীতে আদর্শ পূর্বসূরিগণ সেখানে গিয়েছেন, ইলমের দরস ও ছাত্রদের কারণে মুখরিত হয়েছিল মসজিদে আকসা।
ইমাম নববি রহ. বলেন: “এ হাদিসে তিনটি মসজিদের ফজিলত ও অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা রয়েছে। কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ, তাতে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ ও তার জন্য সফর করা বৈধ। আলেমগণ বলেন: এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে সফর করে যাওয়া ফজিলতের নয়। আমাদের মতাবলম্বী শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-জু্ওয়াইনি বলেন: “এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের জন্য সফর করা হারাম”। [আল-মিনহাজ, শারহু সহিহে মুসলিম।]
হাফেজ ইব্ন হাজার বলেন: “হাদিসে এ তিনটি মসজিদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ। প্রথম মসজিদ মুসলিমদের কেবলা, সেখানেই তারা হজ করে। দ্বিতীয় মসজিদ পূর্ববর্তী উম্মতের কেবলা। তৃতীয় মসজিদ তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে”। [ফাতহুল বারি: (৩/৬০৩)]
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বায়তুল মাকদিসের যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করার হুকুম সম্পর্কে বলেন: বুখারি ও মুসলিমে প্রমাণিত যে, তিনটি মসজিদ ব্যতীত (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না... বুখারি ও মুসলিম এ হাদিস আবু সাইদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। অন্যান্য সনদেও বর্ণিত রয়েছে। এ হাদিস প্রসিদ্ধ ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। সকল আলেম এ হাদিস সহিহ বলেছেন, গ্রহণ করেছেন ও তার সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। মুসলিম উম্মার সকল আলেম একমত যে, ইবাদতের জন্য মসজিদে আকসায় সফর করা মুস্তাহাব। ইব্ন ওমর এখানে এসে সালাত আদায় করতেন”। [মাজমু ফতোয়া শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ: (৫-৬/২৭), দ্বিতীয় প্রকাশ (১৩৯৮হি.) আব্দুর রহমান আননাজদি কর্তৃক সংকলিত ও সজ্জিত।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাতের সাওয়াব বর্ধিত হয়। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আলোচনা করলাম উভয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম: মসজিদুর রাসূল না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত তাতে চার সালাতের ফজিলত রাখে। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম স্থান। এমন সময় আসবে যখন ব্যক্তির জন্য ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যায়, সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা বলেছেন: তার জন্য উত্তম হবে দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ। ইমাম নাসায়ি আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্নুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সুলাইমান ইব্ন দাউদ বায়তুল মাকদিস নির্মাণ শেষে আল্লাহর তিনটি দোয়া করেছেন: তার বিচারের ন্যায় বিচারের তাওফিক পাওয়া। এমন বাদশাহি লাভ করা তার পরবর্তী যা কারো লাভ হবে না। এবং যে কেউ এ মসজিদে সালাতের উদ্দেশ্যে আসবে, সে যেন তার মায়ের প্রসবের দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “প্রথম দু’টি তাকে দেয়া হয়েছে। আর আমি আশা করি আমাকে তৃতীয়টি প্রদান করা হয়েছে”। [নাসায়ি, ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং: (১৪০৮), দেখুন: সুনানে নাসায়ি, প্রকাশক মাকতাবাতুল মায়ারেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
মসজিদে আকসা: কুদস ও ফিলিস্তিনে অবিস্থত, আদি যুগ থেকেই পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
ফিলিস্তিনে বনি ইসরাইলের প্রবেশ করার পূর্বে মুসা আলাইহিস সালাম নিজ কওমকে এ নির্দেশ করেছেন, বরং ইহুদিরা নিজেদেরকে যাদের পূর্বসূরি দাবি করে, সেসব নবীদেরও পূর্বে। অতএব প্রমাণিত হল ইহুদিদের পূর্ব থেকে এ ভূমি বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহিম ও লুত আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন:
“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি”। [সূরা আম্বিয়া: (৭১)]
অতএব এখানে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পূর্ব থেকে বরকত ছিল। এ জন্য ইয়াবুসিউনরা [ইয়াবুসিউন: পূর্ব যুগের আরবের একটি বংশ। তারা জাযিরা আরাবিয়ার মাঝেই বসবাস করত। অতঃপর কিনআন বংশের কতক লোক সেখান থেকে প্রস্থান করে, তাদের সাথে তারাও প্রস্থান করে। তারাই সর্বপ্রথম কুদসে অবস্থান করে এবং সেখানে বাড়িঘর সবার পূর্বে তারাই নির্মাণ করে।] তার পাশে বসবাস করেছে, তার ভেতরে বসবাস করেনি, যেহেতু তা ইবাদতের স্থান।
মসজিদে আকসা: যেখানে অনেক সাহাবি প্রবেশ করেছেন। বসবাস করার নিয়তে, ইবাদত, ওয়ায ও শিক্ষা-দীক্ষার জন্য অনেক সাহাবি এখানে সফর করে এসেছেন। বিশেষ করে আবু উবাইদাহ ইব্নুল জাররাহ, যিনি শাম জয়কারী মুসলিম সেনাদের সেনাপতি ছিলেন। বেলাল ইব্ন রাবাহ ওমর ইব্নুল খাত্তাবের সাথে এ মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন ও তাতে আযান দিয়েছেন। মুয়ায ইব্ন জাবাল, আবু উবাইদাহ মৃত্যুর পর তাকে মানুষের খলিফা নির্ধারণ করেছিলেন। আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারি খালেদ ইব্নুল ওয়ালিদ, বায়তুল মাকদিসের বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। উবাদাহ ইব্ন সামেত, ফিলিস্তিনে তিনিই সর্বপ্রথম বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বায়তুল মাকদিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তামিম ইব্ন আউস আদ-দারি, আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম বায়তুল মাকদিসে এসেছেন এবং তার বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন। তাদের ছাড়া আরো অনেকে মসজিদে আকসায় এসেছেন ও বসবাস করেছেন”। [যেসব সাহাবিগণ বায়তুল মাকদিসে এসেছেন, তাদের সম্পর্কে আরো জানার জন্য দেখুন: “মুসিরুল গুরাম ইলা যিয়ারাতিল কুদসে ওয়াশ শাম”। এবং “আল-উনসুল জালিল, বি তারিখিল কুদসে ওয়াল খালিল”।]
মসজিদে আকসা: অন্যান্য শহর থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা মুসলিমগণ বিজয় করেন। এটাই একমাত্র শহর, যার চাবি গ্রহণ করার জন্য খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনা থেকে বের হয়ে কুদসে এসেছেন। ১৫হি.তে মসজিদে আকসার সীমানায় তিনি সালাতের জায়গা নির্মাণ করেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের হাতে বায়তুল মাকদিসের বিজয় দান করেছিলন। তিনি এ পবিত্র ভূমি ওয়াকফ করে দেন, যেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর তার আমানতদারী বজায় থাকে।
মসজিদে আকসা: যেখান থেকে রোম ও ক্রুসেডদের তাড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ক্রুসেডদের নয়টি আক্রমণ তারা প্রতিহত করেন, নুরুদ্দিন মাহমুদ যানকি ও সালাহুদ্দিন আইয়ূবীর নেতৃত্বে। তাদের ব্যতীত আরো অনেক মুসলিম শাসক, যারা মুসলিম মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তাদের হাতে (৯১) বছর পর বায়তুল মাকদিস দখলমুক্ত হয়। আকসা ও কুদসের অবস্থান মুসলিমের অন্তরে অনেক বেশী। এটা মুসলিমদের বরকতময় ভূমি। ইহাই আমাদের আকিদা। শত্রুরা যতই মিথ্যা প্রচার করুক, কখনোই আমাদের অন্তর থেকে তার মহব্বত মুছতে সক্ষম হবে না।
মসজিদে আকসা: যার প্রতি পূর্বাপর সকল মুসলিম আলেম মনোযোগ দিয়েছেন। মসজিদে আকসার ফজিলত সম্পর্কে পূর্বাপর রচনাকৃত গ্রন্থগুলো তার বৈশিষ্ট্যের বড় প্রমাণ। যার পঠন-পাঠন ও গবেষণা এখনো হয়। মসজিদে আকসার ওপর আন্তর্জাতিক মানের যে গবেষণা ও পর্যালোচনা হয়েছে, অন্যান্য ইসলামী শহরের ওপর সেরূপ হয়নি। আদর্শ পূর্বসূরিদের মসজিদে আকসা ও তার বরকতময় ভূমির প্রতি বিশেষ মনোযোগ ছিল। তারা লেখার দ্বারা কুদস, বায়তুল মাকদিস ও মসজিদে আকসার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সেখানে সফরের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, যেহেতু কুরআন ও সুন্নায় তার ফজিলত রয়েছে।
মসজিদে আকসার যত ফজিলত আমরা বর্ণনা করি, তা কখনো আল্লাহ তা‘আলা বাণীর অনুরূপ হবে না, তিনি ইরশাদ করেন:
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
মসজিদে আকসার যদি এ ছাড়া অন্য কোন ফজিলত না হত, তবুও যথেষ্ট ছিল। এতে যাবতীয় বরকতের প্রমাণ রয়েছে। কারণ যার চারপাশে বরকত রয়েছে, তাতে অবশ্যই দ্বিগুণ বরকত আছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বও একটি বরকত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/707/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।