hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড

লেখকঃ ড. মনজুরে এলাহী, আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান, নোমান আবুল বাশার কাউসার বিন খালেদ, ইকবাল হোসাইন মাসুম, আবুল কালাম আজাদ, জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের, মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

৪৯
এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ
হজ ও উমরার উদ্দেশে এহরামের ফলে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া বিষয়ের তিন অবস্থা।

নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ।

কেবল পুরুষের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ।

কেবল নারীর ক্ষেত্রেই নিষিদ্ধ।

নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিষয় সাত প্রকার।

প্রথমত: মুন্ডন কিংবা অন্য কোন উপায়ে মাথার চুল ফেলে দেয়া। আল্লাহ তা’আলা তার পবিত্র কালামে স্পষ্ট বর্ণনার মাধ্যমে মাথার চুল ফেলে দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। কুরআনে এসেছে—

وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ

অর্থ: যে পর্যন্ত না হাদি [কেরান ও তামাত্তুকারী শুকরিয়া স্বরূপ যে পশু জবেহ করে তাকে ‘হাদি’ বলে।]র পশু তার স্থানে পোঁছায়, তোমরা মাথা মুন্ডন কর না। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৬]

অসুস্থতা কিংবা মাথায় উকুন জনিত যন্ত্রণার ফলে যে ব্যক্তি মাথার চুল ফেলতে বাধ্য হবে, তার প্রদেয় ফিদয়া সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে—

فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ

অর্থ: তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মাথায় যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা পশু জবাই দ্বারা ফিদয়া প্রদান করে। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৬]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বিষয়টি বিশদ করেছেন এভাবে—

কাব বিন আজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল, আমি রাসূলের নিকট উপস্থিত হলাম, তখন আমার মুখে উকুন ঝরে পড়ছিল। দেখে রাসূল বললেন :

ما كنت أرى أن الجهد قد بلغ منك ما أرى، أ تجد شاةً ؟

তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছ এটা আমার ধারণা ছিল না। তোমার কাছে কোন বকরি আছে ? আমি বললাম, না। অত:পর নাজিল হল—

فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ .

তবে সিয়াম, বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করবে। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৬] তিনি বলেন: তা হচ্ছে তিন দিন রোজা রাখা, কিংবা ছয় জন মিসকিনকে আহার করানো। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ খাবার। [বোখারি, মুসলিম]

এ হাদিস ফিদয়া সংক্রান্ত আয়াতকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে পূর্ণভাবে। স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে উল্লেখিত আয়াতের সিয়ামের সংখ্যা হচ্ছে তিন। সদকার পরিমাণ হচ্ছে ছয় জন মিসকিনের জন্য তিন সা’। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ (অর্থাৎ এক কেজি বিশ গ্রাম)। পশু জবাইয়ের ইচ্ছা করলে বকরির চেয়ে বড় যে কোন পশু জবেহ করে দেবে। এ তিনটির যে কোন একটি ফিদয়া হিসেবে প্রদানের সুযোগ রয়েছে। আয়াতটি এ ব্যাপারে উত্তম দলিল। কুরআন ও সহিহ হাদিসের স্পষ্ট প্রামাণ্যতার ফলে এ ব্যাপারে পিছ-পা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অধিকাংশ শরিয়তবিদ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। পশু জবাই করে ফিদয়ার ক্ষেত্রে এমন বকরি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যা কোরবানির উপযুক্ত। পশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাবতীয় ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। আলেমগণ একে ‘ফিদয়াতুল আযা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, কারণ আল্লাহ তা’আলা একে পবিত্র কুরআনে أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ বলে বর্ণনা করেছেন। [খালেছুল জুমান : ৭৭]

মস্তক ব্যতীত দেহের অন্য কোন স্থানের লোম মুন্ডন করলে বিজ্ঞ আলেমগণের ইজতিহাদ অনুযায়ী বিষয়টি নানারূপে বিভক্ত হবে। কিছু ক্ষেত্রে ফিদয়া প্রদান করতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে দিতে হবে দম। কারণ, মাথা মুন্ডন করার ফলে যেমন পরিচ্ছন্নতা ও স্বাচ্ছনদ্য অনুভব হয়, তেমনি দেহের লোম ফেললেও এক প্রকার স্বস্তি অনুভূত হয়। তাই উভয়টিকে একই হুকুমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। [খালেছুল জুমান : ৮৩]

দ্বিতীয়ত: নখ উপড়ে ফেলা, কর্তন করা কিংবা ছাঁটা—চুল মুন্ডন করার হুকুমের ভিত্তিকে—ইত্যাদি এহরাম অবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম। ইবনে মুনযির বলেন: আলেমগণ এ ব্যাপারে এক মত যে, নখ কাটা মুহরিমের জন্য হারাম। হাত কিংবা পায়ের নখ—উভয়ের ক্ষেত্রেই একই হুকুম। তবে, যদি নখ ফেটে যায় এবং তাতে যন্ত্রণা হয় তবে যন্ত্রণাদায়ক স্থানটিকে ছেঁটে দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ কারণে কোন ফিদয়া ওয়াজিব হবে না। [মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরাহ : ৪৪]

তৃতীয়ত: এহরাম বাধার পর শরীর, কাপড় কিংবা এ দুটির সাথে সম্পৃক্ত অন্য কিছুতে আতর ব্যবহার করা। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত হাদিস দ্বারা জানা যায় মুহরিমের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন

لا يلبس ثوبا مسه زعفران ولا ورس

জাফরান কিংবা ওয়ারাস (এক জাতীয় সুগন্ধি) মিশ্রিত কাপড় পরিধান করবে না। [ফতহুল বারি : ৪/১৮১] অপর এক হাদিসে তিনি আরাফায় অবস্থান কালে বাহনে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণকারী এক সাহাবি সম্পর্কে এরশাদ করেন:

لا تقربوه طيبا

তোমরা তার কাছে আতর নিয়ো না। [মুসলিম : ৪/৩৮৮] অপর রেওয়ায়েতে এসেছে

ولا يمس طيبا

আতর স্পর্শ করো না। [মুসলিম : ৪/৩৮৭] এর কারণে উল্লেখ করে তিনি বলেন:

فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا

কারণ, কেয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তার পুনরুত্থান ঘটবে। [প্রাগুক্ত : ৪/৩৮৮] মুহরিমের জন্য বৈধ নয় সুগন্ধি গ্রহণ, পানীয়ের সাথে জাফরান মিশ্রিত করা যা পানীয়ের স্বাদে ও গন্ধে প্রভাব সৃষ্টি করে, অথবা চায়ের সাথে এতটা গোলাপ জল মিশ্রণ করা, যা তার স্বাদে ও গন্ধে পরিবর্তন ঘটায়। মুহরিম ব্যক্তি সুগন্ধি মিশ্রিত সাবান ব্যবহার করবে না। [মানসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরা : ৪৭] এহরামের পূর্বে ব্যবহৃত সুগন্ধিতে কোন সমস্যা নেই। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,

كنت أنظر إلى وبيص المسك في مفارق رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو محرم

এহরাম অবস্থাতেই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মস্তকের সিঁথিতে মেশকের উজ্জ্বলতার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলাম। [বোখারি : ১৪৩৮]

চতুর্থত: জমহুর ওলামার মতানুসারে বিবাহ এহরাম অবস্থায় অবৈধ। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন : মুহরিম বিবাহ করবে না, বিবাহ দেবে না এবং প্রস্তাবও পাঠাবে না। [মুসলিম : ৫/২০৯]

সুতরাং, কোন মুহরিমের পক্ষে বৈধ নয় বিয়ে করা, কিংবা অলি ও উকিল হয়ে কারো বিয়ের ব্যবস্থা করা অথবা এহরাম হতে মুক্ত হওয়া অবধি কাউকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো। এমনিভাবে নারী মুহরিমের জন্যও একই হুকুম। সে কোন পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারবে না।

পঞ্চমত: এহরাম অবস্থায় মুহরিমের জন্য সহবাস অবৈধ। শরিয়তবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, এহরাম অবস্থায় অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে কেবল সহবাস হজকে নষ্ট করে দেয়। কুরআনে বর্ণিত আয়াত,

فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ

(যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।) [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৭]

আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে সহবাস ও সহবাস জাতীয় যাবতীয় বিষয়কেই সন্নিবেশ করে। এহরামের অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে সহবাসই সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর অনিষ্টকারী। এর কয়েকটি অবস্থা রয়েছে:

প্রথম অবস্থা : ওকুফে আরাফার পূর্বে মুহরিম ব্যক্তির স্ত্রী-সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া। আলেমদের কারো মাঝেই এ ব্যাপারে বিরোধ নেই যে, এর মাধ্যমে তার হজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তার কর্তব্য হচ্ছে, আরম্ভ করা হজটি সমাপ্ত করা, এবং পরবর্তীতে তা কাজা করা। তাকে হাদী (পশু কোরবানি) দিতে হবে। পশুটি কেমন হবে এ ব্যাপারে জমহুরের মত হচ্ছে তার কর্তব্য একটি উট জবেহ করা। । [খালেছুল জুমান : ১১৪]

দ্বিতীয় অবস্থা: ওকুফে আরাফার পরে, জামরায়ে আকাবা ও তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে ইমাম মালেক, শাফেয়ি ও আহমদসহ জমহুর ফুকাহাদের মতে তার হজ ফাসেদ হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় তার উপর দুটি হুকুম আরোপিত হবে। এক: তার উপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে। সে ফিদয়া আদায় করতে হবে একটি উট বা গাভি দ্বারা, যা কোরবানি করার উপযুক্ত। এবং সব গোশত মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে, নিজে কিছুই গ্রহণ করবে না। দ্বিতীয়: সহবাসের ফলে হজটি নষ্ট হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে নষ্ট হজটিই পূরণ করা তার কর্তব্য এবং বিলম্ব না করে পরবর্তী বছরেই নষ্ট হজটির কাজা আদায় করতে হবে। ইমাম মালেক তার রচিত মুআত্তায় বলেন: ‘আমি জানতে পেরেছি যে, উমর, আলী এবং আবু হুরায়রা রা.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মুহরিম থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন যে, তারা আপন গতিতে হজ শেষ করবে। এবং পরবর্তী বছরে হজ আদায় করবে এবং কোরবানি প্রদান করবে। [মুআত্তা মালেক : ১৩০৭/১]

তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন: পরবর্তী বছর যখন তারা হজের এহরাম বাঁধবে, তখন হজ শেষ করা অবধি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। [প্রাগুক্ত]

তৃতীয় অবস্থা: যদি জামরায়ে আকাবা আদায়ের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে সহবাস সংঘটিত হয়, তবে সকলের মতানুসারেই তার হজটি শুদ্ধ। মোটকথা, সর্বসম্মত মত হল ওকুফে আরাফার পূর্বে সহবাস হজকে বিনষ্ট করে দেয়। জামরায়ে আকাবার পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে এ ক্ষেত্রেও সকলের ঐক্যমত হল হজ নষ্ট হবে না। যদি ওকুফে আরাফার পর এবং জামরার পূর্বে সহবাস হয়, জমহুর আইম্মার মতে হজ নষ্ট হয়ে যাবে। এহরাম বিরোধী অন্যান্য বিষয়গুলো হজকে সমূলে নষ্ট করবে না। [খালেছু জুমান : ১১৪]

দ্বিতীয় অবস্থা: জামরায়ে আকাবা ও মস্তক মুন্ডনের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে হজটি শুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে তার উপর দুটি বিষয় ওয়াজিব হবে।

একটি বকরি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করা যার সমুদয় গোশত গরিব মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হবে। ফিদয়া দানকারী কিছুই গ্রহণ করবে না।

হাজি এহরামের এলাকার বাইরে গমন করবে এবং নতুন করে এহরাম বাঁধবে এবং মুহরিম অবস্থায় তাওয়াফে এফাদার জন্য ইজার ও চাদর পড়ে নিবে। [মানাসিকুল হাজ্জা ওয়াল উমরা : ৪৯]

এহরাম অবস্থায় কামোত্তেজনাসহ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা নিষিদ্ধ। যেমন চুম্বন, স্পর্শ ইত্যাদি। কুরআনে এসেছে,

مَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ

অর্থ: যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজের সময়ে যৌন-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৭]

আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে নানা অর্থের সন্নিবেশ করে। ১. সহবাস—ইতিপূর্বে আমরা এর সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। ২. সহবাস পূর্ব মেলামেশা—যেমন কামোত্তেজনার সাথে চুম্বন, স্পর্শ ও আমোদ ইত্যাদি। সুতরাং মুহরিমের পক্ষে কামোত্তেজনার সাথে স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন, স্পর্শ আমোদ-প্রমোদ ইত্যাদি কোনভাবেই বৈধ নয়। এমনিভাবে, মুহরিম অবস্থায় স্ত্রীর জন্য তার স্বামীকে সুযোগ করে দেয়াও বৈধ নয়। কামভাব নিয়ে স্ত্রীর প্রতি নজর করাও নিষিদ্ধ, কারণ, এর মাধ্যমে সহবাসের অনুরূপ সম্ভোগ হয়। ৩. সহবাস সম্পর্কিত কথপোকথন—যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে বলল, আমরা এহরাম থেকে মুক্ত হয়ে এমন এমন করব। [খালেছুল জুমান : পৃ : ৭৬]

আয়াতে উল্লেখিত الفسوق শব্দটি একই সাথে আল্লাহর আনুগত্যের যাবতীয় অনুষঙ্গ থেকে নিজেকে প্রত্যাহারকে বুঝায়। [খালেছুল জুমান : ৭৬]

সপ্তম: এহরাম অবস্থায় শিকার অবৈধ। হজ কিংবা উমরা—যে কোন অবস্থাতেই মুহরিমের জন্য স্থলজ প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ—এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত। তবে ঐকমত্য সংঘটিত হয়েছে এমন সব প্রাণীর ক্ষেত্রে যার গোশত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়, এবং যা বন্য প্রাণী-ভুক্ত। উক্ত ‘শিকার’-এর সংজ্ঞা হল এমন সব প্রাণী যা স্থলজ, হালাল, এবং প্রাকৃতিকভাবেই বন্য, যেমন হরিণ, হরিণ-শাবক, খরগোশ, কবুতর ইত্যাদি। কারণ, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন—

وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا

অর্থ: যতক্ষণ তোমরা এহরামে থাকবে, ততক্ষণ তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হারাম। [সূরা মায়েদা, আয়াত : ৯৬] অপর স্থানে এসেছে—

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ

অর্থ: হে মুমিনগণ! এহরামে থাকাবস্থায় তোমরা শিকার-জন্তু হত্যা করো না। [সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯৫]

সুতরাং, শিকার-জন্তু এহরাম অবস্থায় হত্যা করা বৈধ নয়। একই রূপে উল্লিখিত ধরনের জন্তু হত্যার ক্ষেত্রে কারণ হওয়াও নিষিদ্ধ, যেমন দেখিয়ে দেয়া, ইশারা করা, বা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে হত্যায় সহযোগিতা করা।

আবু কাতাদা হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—তিনি কতিপয় সাহাবির সাথে ছিলেন, যারা ছিলেন মুহরিম, পক্ষান্তরে তিনি ছিলেন হালাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাদের সম্মুখে। আবু কাতাদা জুতো সেলাইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারা তাকে অবহিত করেননি। তারা চাচ্ছিলেন যেন তিনি তা দেখতে পান। তিনি তা দেখতে পেলেন এবং ঘোড়ার লাগাম ধরলেন। অত:পর ঘোড়ায় চড়লেন কিন্তু ভুলে তীর-ধনুক রেখে গেলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাকে তীর ধনুক দাও। তারা উত্তর করল: আমরা, আল্লাহর কসম! তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে নেমে এলেন এবং তীর-ধনুক নিয়ে ঘোড়ায় চড়লেন ও গাধার উপর আক্রমণ করলেন। অত:পর জংলি গাধাটিকে জবেহ করে নিয়ে এলেন। ইতিমধ্যে সেটি মরে গিয়েছিল। সকলে আহার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল...। [মুসলিম : ৪/৩৬৩]

শিকার করা জন্তু দ্বারা আহার গ্রহণের তিন হুকুম।

প্রথমত: এমন জন্তু যা মুহরিম ব্যক্তি হত্যা করেছে কিংবা হত্যায় শরিক হয়েছে। এমন জন্তু খাওয়া মুহরিম ও অন্য সকলের জন্য হারাম।

দ্বিতীয়ত: মুহরিমের সাহায্য নিয়ে কোনো হালাল ব্যক্তি যে জন্তুকে হত্যা করেছে, যেমন মুহরিম ব্যক্তি শিকার দেখিয়ে দিয়েছে, অথবা শিকারের অস্ত্র এগিয়ে দিয়েছে—এমন জন্তু কেবল মুহরিমের জন্য হারাম—অন্য সকলের জন্য হালাল।

তৃতীয়ত: হালাল ব্যক্তি যে জন্তু মুহরিমের জন্য হত্যা করেছে। এমন জন্তুও মুহরিমের জন্য হারাম। অন্য সকলের জন্য হালাল। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন—

صيد البر لكم حلال ما لم تصيدوه أو يصد لكم

অর্থ: স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হালাল যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা তা শিকার কর, কিংবা তোমাদের উদ্দেশে শিকার করা হয়। [আবু দাউদ : ১৮৫১, তিরমিজি : ৫/১৮৭]

আবু কাতাদা হতে বর্ণিত, তিনি একটি জংলি গাধা শিকার করলেন। আবু কাতাদা মুহরিম ছিলেন না। তার সঙ্গীরা সকলেই মুহরিম ছিলেন। সকলে তা হতে আহার গ্রহণ করেছিল। পরে তাদের আহারের ব্যাপারে মতানৈক্য হল। এ ব্যাপারে তারা রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন: কেউ কি ইঙ্গিত করেছে বা কোন কিছুর নির্দেশ দিয়েছে? তারা উত্তর করল: না। তিনি বললেন: তবে তোমরা খাও। [বোখারি : ১৭২৫, মুসলিম : ১১৯৬]

মুহরিম ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার হত্যা করে, তবে এর জন্য তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছে,

وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَوْ عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا

অর্থ: তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু, যার ফয়সালা করবে তোমাদের মাঝে দুজন ন্যায়বান লোক, কাবায় প্রেরণ করা হাদী (কোরবানি) রূপে। কিংবা তার কাফফারা হচ্ছে দরিদ্রকে খাদ্য দান করা অথবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করা। [সূরা মায়েদা, আয়াত : ৯৫]

সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি কবুতর হত্যা করে তবে তার বিনিময় হচ্ছে একটি বকরি জবেহ করা, কবুতরের ফিদয়া স্বরূপ যা দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেবে। কিংবা বকরির মূল্য নির্ধারণ করে সমপরিমাণ খাদ্য মিসকিনদের দিয়ে দেবে। (যতজন মিসকিনকে সম্ভব) প্রতি মিসকিনকে অর্ধ সা’ আহার প্রদান করবে। অথবা প্রতি মিসকিনের খাদ্যের পরিবর্তে একদিন রোজা রাখবে। এ তিন পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন ইচ্ছাধিকার থাকবে। [মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরা : ৫১]

পক্ষান্তরে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় কিংবা হিংস্র প্রাণীকে শিকার-জন্তু হিসেবে গণ্য করা হবে না। সুতরাং হারাম এলাকা কিংবা অন্য যে কোন স্থানে মুহরিম বা হালাল, সকলের জন্য তা হত্যা করা বৈধ। প্রমাণ: আবু সাইদ খুদরি হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য হত্যা-বৈধ প্রাণীর উল্লেখ করে বলেন: সাপ, বিচ্ছু, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ—আর কাককে ঢিল ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেবে, হত্যা করবে না—লোলুপ কুকুর, মাংসাশী পাখি, হিংস্র পশু। [তিরমিজি : ৮৩৮]

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হারাম, কিংবা হালাল উভয় এলাকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যার বৈধতা প্রদান করেছেন, কাক, মাংসাশী পাখি, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং লোলুপ কুকুর। ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে ‘সাদা কাক’। [খালেছুল জুমান, ফতহুল বারি : খন্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫১১, শরহে মুসলিম : খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৭২]

ইবনে মাসঊদের হাদিসও এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ্য, তিনি বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এক মুহরিমকে সাপ হত্যার অনুমতি প্রদান করেছেন। [শরহে মুসলিম : খন্ড ৭, পৃষ্ঠা : ৪৯১]

এহরামের কারণে বৃক্ষ কর্তন মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ নয়। কারণ, এতে এহরামে কোন প্রকার প্রভাব সৃষ্টি হয় না। তবে তা যদি হারামের নির্দিষ্ট সীমার ভিতরে হয়, তবে মুহরিম হোক কিংবা হালাল—সকলের জন্য হারাম। এই মৌলনীতির ভিত্তিতে আরাফায় মুহরিম কিংবা হালাল, উভয়ের জন্য বৃক্ষ কর্তন বৈধ; মুযদালেফা ও মিনায় অবৈধ। কারণ, আরাফা হারামের বাইরে, মুযদালেফা ও মিনা হারামের সীমা-ভুক্ত।

এ সাতটি এহরাম বিরোধী বিষয় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম।

বিশেষভাবে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ আরো দুটি বিষয় রয়েছে, তা নিম্নরূপ:

১. মাথা আবৃত করা। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় বাহনে পিষ্ট মুহরিম ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরশাদ করেন : তাকে পানি ও বড়ই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং তার দুই কাপড় দ্বারা কাফন পরাও এবং তার মস্তক আবৃত করো না। [শরহে মুসলিম : খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৮৭] ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে—

لا تخمروا رأسه و لا وجهه .

তার মস্তক ও মুখমন্ডল আবৃত করো না। [মুসলিম : ৪/৫৪৩]

সুতরাং, পুরুষ মুহরিমের জন্য পাগড়ি, টুপি ও রুমাল জাতীয় কাপড় দিয়ে মস্তক আবৃত করা বৈধ নয়, যা তার দেহের সাথে লেগে থাকে। এবং মুসলিমের বর্ণনা মোতাবেকে মুখও আবৃত করা বৈধ নয়। আর যা মস্তকের সাথে লেগে থাকে না; যেমন ছাতা, গাড়ির হুড, তাঁবু ইত্যাদি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। প্রমাণ: উম্মে হাসিন হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলের সাথে হজ পালন করলাম- যখন তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। অত:পর তিনি বাহনে চড়ে প্রত্যাবর্তন করলেন, তার সাথে ছিলেন বেলাল ও উসামা। তাদের একজন বাহন চালাচ্ছিলেন, অপরজন রাসূলের মস্তকের উপরে কাপড় উঁচিয়ে রেখেছিলেন, যা তাকে সূর্য থেকে ছায়া দিচ্ছিল। [মুসলিম : ২২৮৭]

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, তাকে তাপ হতে ঢেকে রাখছিল, যতক্ষণ না তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ সমাপ্ত করলেন।

মাথায় আসবাব-পত্র বহন করা অবৈধ নয়, যদিও তা মাথার কিছু অংশ ঢেকে ফেলে। কারণ, সাধারণত এর মাধ্যমে কেউ মাথা আবৃত করার উদ্দেশ্য করে না। পানিতে ডুব দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই, যদিও তা মাথাকে সম্পূর্ণ আবৃত করে নেয়।

২. স্বাভাবিক অবস্থায় যে পোশাক পরিধান করা হয়, তা পরিধান পুরুষের জন্য বৈধ নয়। হোক তা জোববার মত পুরো শরীর ঢেকে নেয়ার মত পোশাক কিংবা পাজামার মত অর্ধাঙ্গ ঢাকে এমন পোশাক। প্রমাণ: উমর রা. বর্ণিত হাদিস—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুহরিমের পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন : সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, মোজা এবং এমন কাপড় পরিধান করতে পারবে না, যাতে জাফরান ও ওয়ারাস (এক প্রকার সুগন্ধি) ব্যবহার করা হয়েছে। [মুসলিম : ৪/৩৩১]

তবে, যদি ইজার ক্রয় করার মত টাকা না থাকে, তবে পাজামাই পরিধান করে নিবে। এবং জুতো কেনার মত সংগতি না থাকলে মোজা পরে নিবে, সাথে অন্য কিছু পরিধান করবে না। প্রমাণ: ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার ময়দানে খুতবা প্রদান করতে শুনেছি, তিনি বলছেন : যে ইজার পাবে না, সে যেন পাজামা পরে নেয়। যে জুতো পাবে না, সে যেন মোজা পরে নেয়। [মুসলিম : ৪/৩৩১]

পরিধান ব্যতীত জামা শরীরের সাথে কেবল পেঁচিয়ে রাখাতে কোন দোষ নেই।

স্বাভাবিক অবস্থায় ঝুল জামা যেভাবে পরিধান করা হয়, সেভাবে পরিধান না করে চাদর হিসেবে ব্যবহারে কোন দোষ নেই।

জোড়া-তালি যুক্ত চাদর বা লুঙ্গি পরিধানে কোন বাধা নেই।

ইজারের উপর রশি বাধা নিষিদ্ধ নয়।

আংটি, হাত-ঘড়ি, চশমা, শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার বৈধ। গলায় পানির মশক এবং দান-পাত্র ঝুলাতে পারবে। যদি চাদর খুলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা বেধে রাখতে পারবে, কারণ, এ সমস্ত বিষয়ে রাসূলের পক্ষ হতে কোন স্পষ্ট কিংবা ইঙ্গিতসূচক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। কেবল যখন রাসূলকে মুহরিমের পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি এরশাদ করেছিলেন: সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, এবং মোজা পরিধান করবে না।

পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর যখন রাসূল পরিধানের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে জানালেন, তখন প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত পরিধেয় ছাড়া অন্য যাবতীয় পোশাক মুহরিম ব্যক্তি পরিধান করতে পারবে।

জুতো না থাকলে পায়ের সুরক্ষার জন্য তিনি মুহরিম ব্যক্তির জন্য মোজা ব্যবহার বৈধতা প্রদান করেছেন। সুতরাং, এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, চোখের সুরক্ষার জন্য চশমা ব্যবহারও বৈধ।

শেষোক্ত নিষিদ্ধ বিষয় দুটো কেবল পুরুষের ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট। নারীর জন্য তার মস্তক আবৃত করে রাখতে পারবে, এবং এহরাম অবস্থায় যে কোন ধরনের পোশাকই পরতে পারবে। তবে, অত্যধিক সাজ-সজ্জা করবে না, হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে না, তবে পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখবে। কারণ, মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সামনে মুখমন্ডল উন্মুক্ত করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। এহরামে পরিধান করা বৈধ, এমন যে কোন পোশাক নারী-পুরুষ উভয় মুহরিমই পরিবর্তন করে পরিধান করতে পারবে।

মুহরিম ব্যক্তি যদি উল্লেখিত সহবাস, শিকার হত্যা বা এ জাতীয় যে কোন একটি এহরাম বিরোধী কাজ করে, তবে এ ক্ষেত্রে তিন অবস্থা হবে:

প্রথমত: হয়তো সে তা ভুলে, [এ ক্ষেত্রে এক দল উলামা, যাদের মাঝে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম মালেক রয়েছেন, বলেন, ভুল কিংবা বিস্মৃতি—উভয় ক্ষেত্রেই ফিদয়া ওয়াজিব হবে।] না জেনে, বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় করবে। এ ক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না। তার কোন পাপ হবে না, ফিদয়া ওয়াজিব হবে না, কিংবা তার হজও নষ্ট হবে না। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا .

হে রব! আমরা যদি বিস্মৃত হই, কিংবা ভুল করি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ২৮৬] অপর স্থানে এসেছে

وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ

তোমরা ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা থাকলে অপরাধ হবে। [সূরা আহযাব, আয়াত : ৫] ভিন্ন এক আয়াতে এসেছে

مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ .

যে ঈমান আনার পর কুফুরে নিমজ্জিত হল, এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখল, তার উপর আল্লাহর গজব আপতিত হবে এবং তার জন্য আছে মহা-শাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফুরিতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার হৃদয় ঈমানে অবিচলিত। [সূরা নহল, আয়াত : ১০৬]

বাধ্য করার পর যদি কুফুরির হুকুমই রহিত হয়ে যায়, তবে কুফুরি ব্যতীত অন্যান্য পাপের ক্ষেত্রে কী হুকুম হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, বাধ্য হয়ে কিংবা ওজরের কারণে যদি এহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হয়ে যায়, তবে হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না। বরং, তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। শিকার হত্যা সংক্রান্ত নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন

مَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ

তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। [সূরা মায়েদা, আয়াত : ৯৫]

এ আয়াতে বিনিময় ওয়াজিব হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক ইচ্ছাকৃতভাবে করাকে শর্ত করেছেন। শাস্তি ও জামানত আরোপ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করা শর্ত। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না করে, তবে তাকে বিনিময়ও দিতে হবে না, এবং সে পাপীও হবে না। তবে যখন ওজর দূরীভূত হবে, এবং অজ্ঞাত ব্যক্তি জ্ঞাত হবে, বিস্মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে সক্ষম হবে, নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত হবে, তৎক্ষণাৎ তাকে নিষিদ্ধ বিষয় হতে নিজেকে মুক্ত করে নিতে হবে। ওজর দূর হওয়ার পরও যদি সে তাতে যুক্ত থাকে, তবে সে পাপী হবে, সন্দেহ নেই। এবং যথারীতি তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। উদাহরণত: ঘুমন্ত অবস্থায় মুহরিম যদি মাথা ঢেকে নেয়, তাহলে যতক্ষণ নিদ্রিত থাকবে, ততক্ষণ তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তার কর্তব্য হল মস্তক আবৃত করা। জেনে বুঝেও যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মস্তক আবৃত রেখে দেয়, তবে এ জন্য তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে।

দ্বিতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, কিন্তু ওজর সাপেক্ষে ঘটানো। এ ক্ষেত্রে তাকে ওয়াজিব প্রদেয় আদায় করতে হবে, এবং সে পাপী হবে না। প্রমাণ: আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন

وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ

যে পর্যন্ত না কোরবানির পশু তার স্থানে উপনীত হয়, তোমরা মস্তক মুন্ডন কর না। তবে তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মস্তকে যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া দেবে। [সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৯৬]

তৃতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, বৈধ কোন ওজর ব্যতীত সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রদেয় প্রদান করতে হবে, এবং পাপীও হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন