HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নতের প্রতি যত্নবান হওয়ার আদেশ ও তার আদব

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সুন্নতের প্রতি যত্নবান হওয়ার আদেশ ও তার আদব

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সম্পাদানা : চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

ভুমিকা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ, আদেশ ও সম্মতিকে আমরা সুন্নাত বলে জানি। এটি মুমিন জীবনের জন্য অপরিহার্য আদর্শ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ বা সুন্নাহ সম্পর্কে উদাসীনতা ঈমান ও ইসলামের পরিপন্থী একটি বিষয়।

আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামের বহু স্থানে মুসলিম উম্মাহকে আদেশ করেছেন জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করার জন্য। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ মূলত আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন। যে সুন্নাহ অনুসরণ করে না, সে আল্লাহ তাআলার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে। বক্ষমান প্রবন্ধে এ বিষয়টি আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে।

আল-কুরআনের আলোকে আর রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا . ( الحشر : ৭)

আর রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। (সূরা আল হাশর, আয়াত ৭)

আয়াতটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীন হিসাবে যা নিয়ে এসেছেন তা ধারণ করতে হবে। আর তিনি যা নিষেধ করেছেন। তা বর্জন করতে হবে। তার আদেশ ও নিষেধ মুলত আল্লাহ তাআলার আদেশ নির্দেশ।

দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন তা মান্য করা কর্তব্য যদিও সে আদেশটি কুরআনে উল্লেখ করা না হয়। তেমনিভাবে তিনি যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা কর্তব্য। যদিও এ নিষেধটি কুরআনে উল্লেখ করা না হয়।

তিন. এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে যত্নবান হওয়ার প্রতি আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট নির্দেশ।

আর সে মনগড়া কথা বলে না … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى ﴿3﴾ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى ﴿4﴾ ( النجم : ৩-৪)

আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। (সূরা আন নাজম, আয়াত ৩-৪)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনে ইসলামের বিষয়ে মনগড়া কোন কথা বলেননি। এ বিষয়ে যা কিছু বলেছেন তার পুরোটাই আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে প্রেরিত অহী।

দুই. সহীহ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে কথাগুলো আমাদের কাছে পৌছেছে, তার সবগুলোই আল্লাহ তাআলার পক্ষা থেকে এসেছে।

তিন. এ সকল কারণে এ আয়াতের দাবী হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ পালনে যত্নবান হওয়া।

অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ . ( الأحزاب : ২১)

অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আল আহযাব, আয়াত ২১)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ।

দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ যত্ন সহকারে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন এ আয়াতের দাবী।

তিন. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসরণ তারাই করতে পারবে যাদের ঈমান, বিশেষ করে পরকালের প্রতি ঈমান রয়েছে।

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا . ( النساء : ৬৫)

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৬৫)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. এ আয়াতের শানে নুযুল হল, এক আনসারী সাহাবী ও যুবাইর রা. মাঝে জমিতে পানি সেচ নিয়ে একটি বিবাদ হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিবাদের ফয়সালা করে দিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালাটি আনসারী সাহাবীর মনপুত হল না। তিনি এর সমালোচনা করলেন। এ ঘটনা সম্পর্কে এ আয়াতটি নাযিল হয়।

দুই. দীনি বিষয় তো অবশ্যই, দুনিয়াবী বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফয়সালা বা সাজেসন মানা ঈমানের দাবী। কেহ যদি আংশিক ভাবে তার সাজেসন মান্য করে, তবে সে ঈমানদার হতে পারবে না এ আয়াতের দাবী অনুসারে।

তিন. এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে একটি ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচার করার পর এক ব্যক্তি নতুনভাবে বিচারের জন্য উমার রা. এর কাছে এসেছিল। উমার রা. তাকে হত্যা করে ফেললেন (নাউজুবিল্লাহ) । এ ঘটনাটি যে হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে তা সহীহ হাদীস নয়। এ শানে নুযুল বিশ্বাস বা প্রচার করা ঠিক নয়। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর বিশিষ্ট সাহাবী উমার ইবনুল খাত্তাব রা. এর প্রতি একজন মুসলিমকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করার অপবাদ দেয়া হয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।

এ আয়াতের সঠিক শানে নুযুল ওটাই যা প্রথম বর্ণনা করা হল।

চার. এ আয়াতের দাবী হল, জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। আর এ ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।

অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ . ( النساء : ৫৯)

অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৫৯)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. নিজেদের দীনি ও দুনিয়াবী ঝগড়া-বিবাদে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ঈমানের দাবী। যে এতে অনীহা দেখায় সে ঈমানদার হতে পারে না। এমনিভাবে নিজেদের সকল প্রকার বিবাদের মীমাংসার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর কাছে ফিরে আসতে হবে ও সকল সমস্যার সমাধান ওখানে খুজতে হবে।

যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ . ( النساء : ৮০)

যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৮০)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করল সে আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করল।

আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও। সেই আল্লাহর পথ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক। সাবধান! সব বিষয়ই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। (সূরা আশ শুরা, আয়াত ৫২-৫৩)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নির্দেশনা দেন তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই দেন। তার হেদায়েত আল্লাহ তাআলারই হেদায়েত।

দুই. এ আয়াতে বর্ণিত হেদায়েত এর অর্থ হল পথ দেখানো।

১০
অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ . ( النور : ৬৩)

অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে। (সূরা আন নূর, আয়াত ৬৩)

আয়াতটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ আল্লাহ তাআলার শাস্তি ও গজব ডেকে আনতে পারে।

দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুনণাহ অনুসরণ কত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝা গেল আল্লাহ তাআলার এ বাণী দিয়ে।

১১
আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ … .. .
আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ . ( الأحزاب : ৩৪)

আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয় তা তোমরা স্মরণ রেখো। (সূরা আল আহযাব, আয়াত ৩৪)

আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর কালাম ও হিকমাহ বা সুন্নাহ শেখার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত স্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

দুই. তিনি তাদের ঘরে বসে শেখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে অন্যান্য মেয়েদের শিক্ষার জন্য ঘরের বাহিরে যাওয়া নিষেধ হয় না। কারণ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ সর্বদা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সান্নিধ্যে কাটাতেন। তাই তাদের শিক্ষার জন্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু সাধারণ নারীদের বিষয়টি আলাদা। তারা শিক্ষার প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে যেতে পারবেন।

তিন. আল্লাহ রাববুল আলামীন নারীদেরকেও সুন্নাহ পালন ও সংরক্ষণে যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব সুন্নাহ সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব শুধু পুরুষের একার নয়।

১২
সহীহ হাদীসের আলোকে হাদীস - ১
1 - عنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي اللَّه عنه عن النبيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : «دَعُونِي ما تَرَكتُكُمْ : إِنَّما أَهْلَكَ من كَانَ قبْلكُم كَثْرةُ سُؤَالِهمْ ، وَاخْتِلافُهُمْ عَلَى أَنْبيائِهمْ، فَإِذا نَهَيْتُكُمْ عنْ شَيْءٍ فاجْتَنِبُوهُ ، وَإِذا أَمَرْتُكُمْ بأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ ما اسْتَطَعْتُمْ » متفقٌ عليه .

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি যা কিছু তোমাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি, সেগুলোর ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও। (আমাকে কোন প্রশ্ন করো না) জেনে রাখো, তোমাদের পূর্ববর্তি মানুষেরা নবীদের অত্যধিক প্রশ্ন ও তাদের সাথে মতভেদ করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে। আর যখন আমি তোমাদের কোন কাজের আদেশ দেই তখন তখন তা তোমরা যথাসাধ্য পালন করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

১৩
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ( الحشر : ৭)

রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছে তার ধারণ করো আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো। (সূরা আল হাশর, আয়াত ৭) আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশকে আলোচ্য হাদীসটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

দুই. এ হাদীসটির একটি শানে উরুদ বা প্রেক্ষাপট আছে। তা হল: একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণে বললেন, হে মানব সকল! তোমাদের উপর হজ ফরজ করে দেয়া হয়েছে। তোমরা হজ করো। তখন সাহাবী আকরা ইবনে হাবেছ রা. প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটা প্রতি বছর কি হজ করা ফরজ? প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ থাকলেন। কিন্তু সে বার বার প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীসটি এরশাদ করেন।

তিন. অনেক লোক আছেন যারা জানার জন্য নয়, বিতর্ক জুড়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এটা আরো নিন্দনীয়।

চার. এ হাদীস আমাদের আরো শিক্ষা দিচ্ছে, ইসলাম আমাদের যা দিয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা একান্ত কর্তব্য। এর চেয়ে বাড়িয়ে বলা বা করা উচিত নয়। যদি কেহ এ রকম করে তবে সে এ হাদীস মোতাবেক আমল করল না। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর প্রতি যত্নবান ও তা সংরক্ষণেরও দাবী।

বেশী প্রশ্ন ও সহজ বিষয় ঘাটাঘাটি করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِنْ تَسْأَلُوا عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْآَنُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللَّهُ عَنْهَا وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ ﴿101﴾ قَدْ سَأَلَهَا قَوْمٌ مِنْ قَبْلِكُمْ ثُمَّ أَصْبَحُوا بِهَا كَافِرِينَ ﴿102﴾ ( سورة المائدة )

হে মুমিনগণ, তোমরা এমন বিষয়াবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তা তোমাদেরকে পীড়া দেবে। আর কুরআন অবতরণকালে যদি তোমরা সে সম্পর্কে প্রশ্ন কর তাহলে তা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ তা ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। তোমাদের পূর্বে একটি জাতি এরূপ প্রশ্ন করেছিল; তারপর তারা এর কারণে কাফির হয়ে গেল। (সূরা আল মায়েদা , আয়াত ১০১-১০২

১৪
হাদীস - ২
2 - عَنْ أَبِي نَجِيحٍ الْعِرْباضِ بْنِ سَارِيَة رضي اللَّه عنه قال : وَعَظَنَا رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم مَوْعِظَةً بليغةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُون ، فقُلْنَا : يا رَسولَ اللَّه كَأَنَهَا موْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا . قال : « أُوصِيكُمْ بِتَقْوى اللَّه، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وإِنْ تَأَمَّر عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حبشيٌ ، وَأَنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيرى اخْتِلافاً كثِيرا . فَعَلَيْكُمْ بسُنَّتي وَسُنَّةِ الْخُلُفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ ، عضُّوا عَلَيْهَا بالنَّواجِذِ ، وإِيَّاكُمْ ومُحْدثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضلالَةٌ » رواه أبو داود ، والترمذِي وقال حديث حسن صحيح .

আবু নাজীহ ইরাবজ ইবনে সারিয়াহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষায় ওয়াজ করলেন যে, তাতে আমাদের হৃদয় গলে গেল আর চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন আপনার বিদায়ী উপদেশ। আপনি আমাদের আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা তোমাদের নেতার অনুসরণ ও আনুগত্য করবে। যদি হাবশী গোলাম তোমাদের আমীর নির্বাচিত হয়, তবুও। আর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার সুন্নাত আঁকড়ে ধরা সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করা। এ সুন্নাত ও আদর্শকে খুব মজবুতভাবে ধারণ করবে। আর (ধর্মের মধ্যে) সকল প্রকার নবসৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকবে। জেনে রাখো, প্রত্যেকটি বিদআতই পথ ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

১৫
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ভাষায় ওয়াজ করতেন যাতে শ্রোতাদের চোখে পানি এসে যেত।

দুই. সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াজ-নসীহত, খুতবা-বক্তৃতা শোনার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। এতে তারা কখনো ক্লান্তি বোধ করতেন না।

তিন. তাকওয়া বা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ভীতির নীতি অনুসরণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ আল্লাহ তাআলাও দিয়েছেন। তিনি বলেন :

وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ( النساء : ১৩১)

আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর (আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন কর)। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১৩১)

চার. শাসকদের আনুগত্য করা ইসলামে অপরিহার্য। তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ, বিদ্রোহ, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া, তাদের আনুগত্য থেকে বের হওয়া ইত্যাদি গুরুতর পাপ। তবে তাদের সংশোধনের জন্য কাজ করা, আনুগত্যের মধ্যে থেকে তাদের অন্যায়গুলোর সমালোচনা করা দোষের কিছু নয়।

পাঁচ. শাসক যদি অযোগ্য, অপদার্থ হয় তবুও তার আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ মুসলিম অথারিটি ইসলামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার মত অথারিটি না থাকে তাহলে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। প্রত্যেকে যার যার খুশী মত ইসলাম অনুসরণ করবে। ফলে ইসলামের একটি অভিন্ন রূপ কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না।

ছয়. সর্বক্ষেত্রে একজন মুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করবে। তারপর খোলাফায়ে রাশেদীন, আবু বকর রা. উমার রা. উসমান রা. ও আলী রা. দের আদর্শ অনুসরণ করবে। আর যখন কোন বিষয়ে মতভেদ দেখো দেবে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ আরো জরুরী হয়ে পড়ে। আর সুন্নাহ অনুসরণ করার মাধ্যমে ইখতেলাফ দূর হয়ে উম্মতের মধ্যে ঐক্য কায়েম হতে পারে। তাই কুরআন ও সুন্নাহ হল ইসলামী ঐক্যের মূল ভিত্তি। আর বিদআত হল উম্মতকে বিভক্ত করার একটি বড় মাধ্যম।

সাত. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের বিপরীত যা কিছু ধর্ম হিসাবে চালু হবে তা হল বিদআত। বিদআত হল সুন্নাহর বিপরীত। বিদআত ইসলামে একটি মারাত্নক অপরাধ।

আট. এ হাদীসে বিদআত থেকে দুরে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে সতর্ক করেছেন। বিদআত হল, ধর্মের নামে ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়। যা আল্লাহ বলেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ দ্বারা যা প্রমাণিত হয়নি, সাহাবায়ে কেরামের কেউ যা করেননি তা দীনি কাজ বা সওয়াবের বিষয় বলে আমল করার নাম হল বিদআত। বিদআত যেমন কর্মে হয়, তেমনি আকীদা বিশ্বাসেও হয়ে থাকে।

নয়. ‘ধর্মের জন্য নতুন বিষয়ের প্রচলন’ আর ‘ধর্মের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন’ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিদআত নয়। দ্বিতীয়টি বিদআত। প্রথমটি উদাহরণ হিসাবে আজকের যুগের মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজান ও নামাজে মাইক ব্যবহার, ইসলামের দাওয়াতে টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির ব্যবহার পেশ করা যেতে পারে। এগুলো সব ধর্মের জন্য প্রচলন করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ হিসাবে মীলাদুন্নবী উদযাপন, শবে বরাত পালন, ওরস অনুষ্ঠান ইত্যাদি পেশ করা যেতে পারে। এগুলো হল ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কার।

১৬
হাদীস - ৩
3 - عَنْ أَبِي هريرة رضي اللَّه عنه أَن رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قالَ : كُلُّ أُمَّتِي يدْخُلُونَ الْجنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبِي » . قِيلَ وَمَنْ يَأَبى يا رسول اللَّه ؟ قالَ : « منْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجنَّةَ ، ومنْ عصَانِي فَقَدْ أَبِي » رواه البخاري .

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু তারা নয় যারা (আমাকে) অস্বীকার করবে। প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আপনার উম্মতের মধ্যে আবার) কারা আপনাকে অস্বীকার করবে? তিনি বললেনঃ যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হল সে-ই আমাকে অস্বীকার করল। (বর্ণনায় : বুখারী)

১৭
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হয়েও তাকে অস্বীকার করার অপরাধে অপরাধী হওয়া যায়। যেমন কোন ব্যক্তি নিজেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত বলে জোর গলায় দাবী করে। নিজেকে আশেকে রাসূল বলে প্রচার করে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে না। এই হাদীসের ভাষায় এ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অস্বীকার করে। সে কখনো জান্নাতে যাবে না।

দুই. যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ ও আদর্শকে অনুসরণ করে সেই তাকে স্বীকার করে। সেই তার প্রকৃত উম্মত।

তিন. হাদীসটি আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর প্রতি যত্নবান হতে আহবান জানায়।

১৮
হাদীস - ৪
4 - عن أَبِي مسلمٍ ، وقيلَ : أَبِي إِيَاسٍ سلَمةَ بْنِ عَمْرو بن الأَكْوَعِ رضي اللَّه عنه ، أَنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بِشِمَالِهِ فقالَ : « كُلْ بِيمِينكَ » قَالَ : لا أَسْتَطِيعُ . قالَ : « لا استطعَت » ما منعَهُ إِلاَّ الْكِبْرُ فَمَا رَفعَها إِلَى فِيهِ ، رواه مسلم .

আবু মুসলিম -বলা হয়ে থাকে তিনি আবু আয়াস সালমা ইবনে আমর ইবনুল আকওয়া রা. তার থেকে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসে বাম হাতে খেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘তুমি ডান হাতে খাও।’ সে বলল, আমি পারি না। তিনি বললেন, ‘তুমি পারবেও না।’ আসলে অহংকারই তাকে আদেশ পালনে বাধা দিয়েছিল। এরপর সে আর তার ডান হাত মুখে উঠাতে পারেনি। (বুখারী)

১৯
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. ডান হাতে খাওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। বাম হাতে খাওয়া তার সুন্নাহর পরিপন্থী।

দুই. আলোচ্য ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে গড়িমসি করায় তার শাস্তি হয়েছে। সে অহংকার করে তার সুন্নাত-কে অবজ্ঞা করেছে। তাঁর সুন্নাতের সাথে বেয়াদবী করেছে। সুন্নাতের প্রতি আদব প্রদর্শন করেনি।

তিন. যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণে গড়িমসি করে, সুন্নাহর সাথে যথাযথ আদব বজায় রাখে না অথবা অহংকার বসে তা থেকে সরে যায়, এ হাদীস তাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা।

চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর প্রতি যত্নবান হতে এ হাদীস আমাদের নির্দেশ দেয়।

২০
হাদীস - ৫
5 - عنْ أَبِي عبدِ اللَّه النُّعْمَانِ بْنِ بَشيِرٍ رضي اللَّه عنهما، قال : سمِعْتُ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقولُ : « لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّه بَيْنَ وُجُوهِكمْ » متفقٌ عليه

وفي روايةٍ لِمْسلمٍ : كان رسولُ اللُّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يُسَوِّي صُفُوفَنَآ حَتَّى كأَنَّمَا يُسَوي بِهَا الْقِداحَ حَتَّى إِذَا رأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوماً ، فقامَ حتَّى كَادَ أَنْ يكبِّرَ ، فَرأَى رجُلا بادِياً صدْرُهُ فقالَ : « عِبادَ اللَّه لَتُسوُّنَّ صُفوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّه بيْن وُجُوهِكُمْ » .

আবু আব্দুল্লাহ আন নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ‘‘তোমরা নামাজের কাতারগুলো অবশ্যই সোজা করবে, নয়তো আল্লাহ তাআলা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

তবে মুসলিমের অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাতারগুলো সোজা করে দিতেন। মনে হত তিনি যেন এর মাধ্যমে তীর সোজা করছেন। এভাবে সোজা করতে থাকতেন যতক্ষণ তিনি দেখতেন, আমরা বিষয়টি রপ্ত করে ফেলেছি। একদিন তিনি বের হলেন এবং নামাজে দাড়িয়ে তাকবীর দেবেন এমন সময় একজন লোককে দেখলেন, তার বুক কাতারের থেকে আগে চলে গেছে। তিনি বললেনঃ ‘‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারগুলো সোজা করবে অথবা আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।

২১
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. নামাজের জামাআতে কাতারগুলো সোজা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। এটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়।

দুই. নামাজে কাতার সোজা না করা সম্পর্কে এ হাদীসটি একটি সাবধানবাণী। নামাজে কাতার সোজা না হলে সে কারণে আল্লাহ তাআলা নামাজীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন। কাজেই নিজেদের মধ্যে ঐক্য সংহতি বজায় রাখতে হলে নামাজের কাতারগুলো সোজা করতে হবে।

তিন. নামাজে কাতার সোজা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত। তিনি এ সুন্নাহ পালনে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছেন তা চিন্তা করে দেখার বিষয়। এ দিক দিয়ে সুন্নাহর রক্ষণাবেক্ষণ ও তার প্রতি যত্নবান হওয়া কতখানি গুরুত্ব বহন করে তা আমরা অনুমান করতে পারি এ হাদীস দিয়ে।

২২
হাদীস - ৬
6 - عن أَبِي موسى رضي اللَّه عنه قال : احْتَرق بيْتٌ بالْمدِينَةِ عَلَى أَهلِهِ مِنَ اللَّيْل فَلَمَّا حُدِّث رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بِشَأْنِهمْ قال : « إِنَّ هَذِهِ النَّار عَدُوٌّ لكُمْ ، فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ » متَّفقٌ عليه .

আবু মূছা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনায় এক রাতে একটি ঘরে আগুন লেগে গৃহবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে খবরটি বলা হলে তিনি বললেনঃ ‘‘অবশ্যই এ আগুন হল তোমাদের শত্রু। যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে তখন তা নিভিয়ে দেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

২৩
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. যখন ঘুমাতে যাবে তখন ঘরের আগুন নিভিয়ে যাবে। এমনিভাবে যখন বাহিরে যাবে তখন ঘরের আগুন নিভিয়ে যাবে।

দুই. আগুন থেকে সর্বদা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এটা বুঝাবার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ আগুন হল তোমাদের শত্রু।

তিন. আগুনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চরম বিরোধী কাজ। তিনি যাকে শত্রু বলে অভিহিত করেছেন, তাকে কি কখনো শ্রদ্ধা করা যায়? সম্মান দেখানো উচিত? এটা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবাধ্য আচরণ তেমনি শিরক, এতে সন্দেহ নেই।

চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে যত্নবান হলে মানুষ দুনিয়াতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।

২৪
হাদীস - ৭
7 - عَنْهُ قال : قال رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « إِنَّ مَثَل مَا بعَثني اللَّه بِهِ منَ الْهُدَى والْعلْمِ كَمَثَلَ غَيْثٍ أَصَاب أَرْضاً فكَانَتْ طَائِفَةٌ طَيبَةٌ ، قبِلَتِ الْمَاءَ فأَنْبَتتِ الْكلأَ والْعُشْبَ الْكَثِيرَ ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمسكَتِ الماءَ ، فَنَفَعَ اللَّه بها النَّاس فَشَربُوا مِنْهَا وسَقَوْا وَزَرَعَوا . وأَصَابَ طَائِفَةً أُخْرَى ، إِنَّمَا هِيَ قِيعانٌ لا تُمْسِكُ ماءً وَلا تُنْبِتُ كَلأ فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينَ اللَّه ، وَنَفَعَه ما بعَثَنِي اللَّه به ، فَعَلِمَ وعَلَّمَ، وَمثلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذلِكَ رَأْساً وِلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللَّهِ الذي أُرْسِلْتُ بِهِ » متفقٌ عليه

আবু মূছা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে আল্লাহ আমাকে জ্ঞান ও সঠিক পথের দিশা দিয়ে পাঠিয়েছেন, তার উদাহরণ হল বৃষ্টির মত। বৃষ্টির পানি কোন জমিতে পড়লে জমির ভাল অংশ তা চুষে নেয়। ফলে বহু সংখ্যক উদ্ভিদ ও ফসল জন্মায়। জমির আরেকটি শুকনা অংশ বৃষ্টির পানি আটকে রাখে। আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেন। তারা সেখান থেকে পানি পান করে, জমিতে সেচ দেয় এবং ফসল উৎপন্ন করে। জমির আরেকটি অংশ হল কঙ্করময় (অুনর্বর) এলাকা। সেখানে পানিও আটকে না উদ্ভিদও জন্মে না। এটা (প্রথম দুটো দৃষ্টান্ত) হচ্ছে সেই লোকের উদাহরণ, যে আল্লাহর দীনের গভীর জ্ঞান লাভ করে এবং আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে উপকৃত হয়। সে নিজেও জ্ঞান লাভ করে অপরকেও জ্ঞান দান করে। আর শেষের দৃষ্টান্ত হল তার, যে ব্যক্তি দীনের জ্ঞানের দিকে ফিরে তাকায় না এবং যে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তা সে গ্রহণ করে না। (বুখারী ও মুসলিম)

২৫
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চমকপ্রদ ও সকলের কাছে বোধগম্য একটি উদাহরণ দিয়ে উম্মতের প্রতি তার ভূমিকা ও দায়িত্ব-কর্তব্য তুলে ধরেছেন।

দুই. এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রিসালাত বা মিশনকে বৃষ্টির পানির সাথে তুলনা করেছেন। যা সকল মানুষ ও প্রাণীর জন্য উপকারী।

তিন. এ বৃষ্টির পানি (ইসলাম ধর্ম) গ্রহণ ও অনুসরনের দিকে দিয়ে মানুষ জমিনের মতই তিন প্রকার। (ক) যারা ইসলাম শিখেছে, নিজে তা অনুসরণ করেছে আর অন্যদের শিখিয়েছে। এরা হল প্রথম প্রকারের জমিনের মত। যে বৃষ্টির পানি দিয়ে নিজে পরিপুষ্ট হয় আর উদ্ভিদ জন্ম দিয়ে অন্যদের কল্যাণ করে। (খ) যারা ইসলাম শিখেছে কিন্তু নিজেরা তেমন আমল করেনি। এরা হল সেই জমির মত যে উদ্ভিদ জন্ম দেয় না বটে কিন্তু পানি ধরে রাখে যা অন্যের উপকারে আসে। (গ) যারা ইসলাম গ্রহণ করতে পারেনি। তারা সেই জমির মত যে পানি ধরে রাখতে পারে না আর উদ্ভিদ জন্ম দেয় না। অর্থাৎ বৃষ্টির পানি তাদের কোন পরিবর্তন করে না। তারা হল অমুসলিম। আল্লাহ আমাদের প্রথম প্রকার মানুষদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার তাওফীক দিন।

চার. কেহ যদি দীনি জ্ঞান অর্জন করে সে মোতাবেক আমল করতে নাও পারে তবুও তার এ অর্জনটা বৃথা যাবে না। নিজে উপকৃত না হতে পারলেও অন্যরা তার জ্ঞান থেকে লাভবান হতে পারে।

পাঁচ. এ হাদীসটি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর সুন্নাহকে ধারণ, অনুশীলন ও মানুষের কল্যাণে তা ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছে। সাথে সুন্নাহর প্রতি যত্নবান হওয়া, তা সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করা তার আদব বজায় রাখার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।

২৬
হাদীস - ৮
8 - عن جابرٍ رضي اللَّه عنه قال : قال رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «مثَلِي ومثَلُكُمْ كَمَثَل رجُلٍ أَوْقَدَ نَاراً فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَراشُ يَقَعْنَ فيهَا وهُوَ يذُبُّهُنَّ عَنهَا وأَنَا آخذٌ بحُجَزِكُمْ عَنِ النارِ ، وأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ منْ يَدِي » رواه مسلمٌ .

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যেখানে আগুন জ্বালানোর পর তার উপর ফড়িং ও কীট-পতঙ্গ ঝাপিয়ে পড়ছে। (তোমরা যেন কীট-পতঙ্গ) আর সে ব্যক্তি ওগুলোকে তাড়াচ্ছে। (আমি যেন সেই ব্যক্তি) আর আমিও তোমাদের কোমর ধরে টানছি, যেন তোমরা আগুনে না পড়ে যাও। কিন্তু তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ। (মুসলিম)

২৭
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. কীটপতঙ্গ যেমন আগুনে ঝাপ দেয়, এতে যে তাদের ধ্বংস আছে তারা তা অনুভব করতে পারে না। অধিকাংশ মানুষ এমনই যে তাদের মুক্তি ও ধ্বংস কোথায়, তারা তা বুঝতে সক্ষম হয় না। শুধু কুফর নামক আগুনে ঝাপ দেয়ার জন্য ছটফট করে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার মিশন তাদের আগুনে ঝাপ দিতে বারণ করে।

২৮
হাদীস - ৯
9 - عَنْهُ أَنْ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم أَمَر بِلَعْقِ الأَصابِعِ وَالصحْفةِ وقال : « إِنَّكُــم لا تَدْرُونَ في أَيِّهَا الْبَرَكَةَ » رواه مسلم .

وفي رواية لَهُ : « إِذَا وَقَعتْ لُقْمةُ أَحدِكُمْ . فَلْيَأْخُذْهَا فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى ، وَلْيَأْكُلْهَا ، وَلا يَدَعْهَا لَلشَّيْطانِ ، وَلا يَمْسَحْ يَدَهُ بِالْمَندِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أَصَابِعهُ ، فَإِنَّهُ لا يدْرِي في أَيِّ طَعَامِهِ الْبَركَةَ » .

وفي رواية له : « إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيءٍ مِنْ شَأْنِهِ حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ ، فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمْ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَان بِهَا منْ أَذًى، فَلْيأْكُلْها ، وَلا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ .

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাওয়ার পর আঙ্গুল ও থালা চেটে পরিস্কার করে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন আর বলেছেনঃ ‘‘তোমরা জানো না কোন অংশে বরকত রয়েছে। (মুসলিম)

মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের কোন খাবারের লোকমা পড়ে গেলে তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খাবে। শয়তানের জন্য যেন রেখে না দেয়। আঙ্গুল চেটে পরিস্কার করে না খেয়ে রুমাল দ্বারা হাত মুছবে না। কেননা সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের প্রত্যেক কাজ ও প্রতিটি বস্ত্ততে শয়তান উপস্থিত থাকে। এমনকি খাবারের সময়ও সে উপস্থিত হয়। অতএব তোমাদের কারো কোন লোকমা পড়ে গেলে এর ময়লা পরিস্কার করে খেয়ে ফেলা উচিত। শয়তানের জন্য তা রেখে দেয়া উচিত নয়।

২৯
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. খাবার গ্রহণের সময় কোন খাদ্য পরে গেলে তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খেয়ে ফেলা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি সুন্নাত।

দুই. কোন খাদ্য-পানীয় নষ্ট হতে দেয়া ঠিক নয়। এটা সুন্নাতের পরিপন্থী। এটাকে শয়তানের জন্য রেখে দেয়া বলে অভিহিত করা হয়েছে।

তিন. খাদ্যের প্রতিটি অংশে বরকত আছে ঠিক। কিন্তু সকল অংশের বরকত সমান নয়।

চার. আঙ্গুল চেটে পরিস্কার করা সুন্নাত। পরিস্কার করে না খেয়ে রুমাল দিয়ে মুছে ফেলা বা ধুয়ে ফেলা খাদ্য নষ্ট করার শামিল।

পাঁচ. মানুষের প্রতিটি কাজে শয়তান হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে। তাই প্রতিটি কাজকে শয়তানের প্রভাবমুক্ত রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবস্থা দিয়েছেন। এটাও তাঁর সুন্নাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর প্রতি যত্নবান হওয়া এ হাদীসের শিক্ষা।

৩০
হাদীস - ১০
10 - عن ابن عباس ، رضيَ اللَّه عنهما ، قال : قَامَ فينَا رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بمَوْعِظَةٍ فقال : « أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ محشورونَ إِلَى اللَّه تَعَالَى حُفَاةَ عُرَاةً غُرْلاً { كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْداً علَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ } [ الأنبياء : 103] أَلا وَإِنَّ أَوَّلَ الْخَلائِقِ يُكْسى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبراهيم صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم، أَلا وإِنَّهُ سَيُجَاء بِرِجَالٍ مِنْ أُمَّتِى، فَيُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمال فأَقُولُ : يارَبِّ أَصْحَابِي ، فيُقَالُ : إِنَّكَ لا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ، فَأَقُول كَما قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ : { وكُنْتُ عَلَيْهمْ شَهيداً ما دُمْتُ فِيهمْ } إِلَى قولِهِ : { العَزِيز الحَكيمُ } [ المائدة : 117 ، 118 ] فَيُقَالُ لِي : إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مرْتَدِّينَ عَلَى أَعقَابِهِمْ مُنذُ فارَقْتَهُمْ » متفقٌ عليه .

ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে ওয়াজ করার জন্য দাড়িয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছেনঃ ‘‘হে মানবসকল! তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার কাছে খালি পায়ে, নগ্ন শরীরে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন) যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, তেমন করে আবার ফিরিয়ে আনব। এটা আমার ওয়াদা। আমি এ ওয়াদা পূরণ করবোই।’’

জেনে রাখো, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম আ. কে পোশাক পরিধান করানো হবে।

সাবধান! আমার উম্মতের কিছু মানুষকে বাম দিকের লোকদের (জাহান্নামীদের) সাথে পাকড়াও করা হবে। আমি তখন বলব, হে আমার প্রতিপালক! এরাতো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, ‘তুমি জান না, তোমার পর এরা (ধর্মে) কি কি নতুন বিষয় সৃষ্টি করেছে।’ তখন আমি বলব, যেমন বলেছে আল্লাহ তাআলার সৎ বান্দা (ঈসা আ.) ‘‘আমি যতকাল তাদের মধ্যে ছিলাম, তাদের উপর স্বাক্ষী ছিলাম। আর যখন আমাকে উঠিয়ে নিলেন, তখন আপনি ছিলেন, তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনিই সকল বিষয়ের উপর স্বাক্ষী . . . .। (সূরা আল মায়েদার ১১৭-১১৮) আয়াত।

আমাকে বলা হবে, তাদের কাছ থেকে যখন তুমি বিদায় নিয়েছ, তখন তারা তোমার দীন-ধর্ম ছেড়ে পিছনে সরে গেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

৩১
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. কেয়ামতের সময় কি অবস্থায় মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে তা জানা গেল।

দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজ নসীহত, খুতবা বক্তব্যে প্রমাণ হিসাবে আল কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিতেন। এটা সুন্নাত।

তিন. কেয়ামতের পর সর্বপ্রথম মুসলিম জাতির পিতা ইবারহীম আ. কে পোশাক পরানো হবে। এ কথা দ্বারা বুঝা যায় পর্যায়ক্রমে সকলকে পোশাক দেয়া হবে। তবে তা কিভাবে, কি পদ্ধতিতে তা বলা হয়নি।

চার. যারা ইসলাম ধর্মে বিদআতের প্রচলন করেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তার সাহাবায়ে কেরাম ধর্ম হিসাবে যা পালন করেননি, এমন বিষয়কে যারা ধর্মের কাজ হিসাবে পালন করেছে তারা বিদআতী। এদের সম্পর্কে এ হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, বিদআত প্রচলন ও পালন করার অপরাধে তাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত থেকে আলাদা করে জাহান্নামীদের দলে নিয়ে যাওয়া হবে।

পাঁচ. বিদআত ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অপরাধ। যারা বিদআতে লিপ্ত হয় তারা নিজেদের অজান্তেই সুন্নাতে রাসূলের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। তাই সুন্নাহ র প্রতি যত্নবান ও তা সংরক্ষণ করতে হলে সকল প্রকার বিদআত থেকে দুরে থাকতে হবে ও মানুষকে বিদআত থেকে সতর্ক করতে হবে।

৩২
হাদীস - ১১
11 - عَنْ أَبِي سعيدٍ عبدِ اللَّهِ بنِ مُغَفَّلٍ ، رضي اللَّه عنه ، قال : نَهَى رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، عَن الخَذْفِ وقالَ : « إِنَّهُ لا يقْتُلُ الصَّيْدَ ، ولا يَنْكَأُ الْعَدُوَّ ، وَإِنَّهُ يَفْقَأُ الْعَيْنَ ، ويَكْسِرُ السِّنَّ » متفقٌ عليه .

وفي رواية : أَنَّ قريباً لابْنِ مُغَفَّلٍ خَذَفَ ، فَنَهَاهُ وقال : إِنَّ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم نَهَى عن الخَذْفِ وقَالَ : « إِنَّهَا لا تَصِيدُ صَيْداً » ثُمَّ عادَ فقالَ : أُحَدِّثُكَ أَن رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، نَهَى عَنْهُ ، ثُمَّ عُدْتَ تَخْذِفُ ،؟ لا أُكَلِّمُكَ أَبداً .

আবু সায়ীদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, এর দ্বারা কোন শিকারও পড়ে না আর দুশমনও শেষ হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফালের এক আত্নীয় কোন একজনের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিল। তখন আব্দুল্লাহ রা. এই বলে নিষেধ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথর ছুড়তে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ এতে কোন শিকার করা যায় না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি আবার সে কাজ করলে আব্দুল্লাহ রা. তাকে বললেন, আমি তোমাকে বললাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তবুও তুমি আবার পাথর নিক্ষেপ করেছ। আমি তোমার সাথে কখনো কথা বলব না।

৩৩
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. যে কাজের কোন ফল নেই, তা অনর্থক। এ ধরনের সকল কথা ও কাজ পরিহার করা ইসলামের শিক্ষা। সহীহ হাদীসে অনর্থক বিষয় পরিহার করাকে ইসলামের সৌন্দর্য বলা হয়েছে। আল কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তাআলা অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করার জন্য আদেশ করেছেন। যারা পরিহার করে তাদের প্রশংসা করেছেন।

দুই. যারা সুন্নাহর বিরোধিতা করে ও বিদআতে লিপ্ত হয়। তাদের সঙ্গ বর্জন করা, তাদের এড়িয়ে চলা এ হাদীসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. যেমনটি করেছেন।

তিন. আলোচ্য ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ শোনার পরও তা গ্রহণ না করায়, তার প্রতি যত্নবান না হওয়ায় আব্দুল্লাহ রা. তাকে তিরস্কার করলেন ও বয়কট করলেন।

চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ সংরক্ষণ, পালন, প্রসার ও বাস্তবায়নের সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে অগ্রগামী। আমাদের কর্তব্য হল তাদের অনুসরণ করা।

৩৪
হাদীস - ১২
12 - وعنْ عابسِ بن ربيعةَ قال : رَأَيْتُ عُمَرَ بنَ الخطاب ، رضي اللَّه عنه ، يُقَبِّلُ الْحَجَرَ يَعْنِي الأَسْوَدَ ويَقُولُ : إِني أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ ولا تَضُرُّ ، ولَوْلا أنِّي رأَيْتُ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، يُقَبِّلُكَ ما قَبَّلْتُكَ .. متفقٌ عليه .

আবীস ইবনে রাবীয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমার ইবনে খাত্তাব রা. কে হাজরে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি। তখন তিনি বলেছেন, আমি জানি তুমি একখন্ড পাথর মাত্র। তুমি কোন উপকার করতে পার না, ক্ষতিও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তোমাকে চুমো দিতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুমো খেতাম না। (বুখারী ও মুসলিম)

৩৫
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. হাজরে আসওয়াদ চুমো দেয়া একটি সুন্নাত।

দুই. হাজরে আসওয়াদ কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না।

তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চুমো দিয়েছেন, একারণে আমরা তাকে চুমো দেব। অন্য কোন কারণে নয়।

চার. কোন সুন্নাতের হিকমত বা উপকারিতা বুঝে না আসলেও তা পালন করা হল কুরআন ও সন্নাহর দাবী।

পাঁচ. যে সুন্নাতগুলো ভাল লাগে বা যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়, তা গ্রহণ করা, আর যা নিজের কাছে ভাল লাগে না তা এরিয়ে যাওয়াটা সুন্নাতের অনুসরণ নয়। বরং এটা হল নিজের নফস বা প্রবৃত্তির অনুসরণ। উমার রা. তার মন্তব্যে এটাই বুঝিয়েছেন।

বি:দ্র: হাদীসগুলো ইমাম নববী রহ. সংকলিত রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন