মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“একদিন ফজরের সালাতের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে এমন এক নসীহত করলেন যে, তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এতো বিদায়ী ব্যক্তির মতো নসীহত, আপনি আমাদের জন্য কিছু অসিয়্যত করুন। তিনি বললেন, তোমাদের আমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করতে অসিয়্যত করছি; যদি হাবশী গোলামও আমীর নিযুক্ত করা হয় তবুও তার প্রতি অনুগত থাকবে, তার নির্দেশ শুনবে। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু বিরোধ দেখবে। তোমাদের কর্তব্য হলো আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতের উপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে। কারণ, সমস্ত বিদ‘আত হলো গুমরাহী”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৭১৪৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]
ভূমিকা:
সরল-সঠিক ইসলামী শরী‘আতের আইন-কানুনসমূহকে ভিনদেশী আজব নিয়ম-কানুনের অনুপ্রবেশ থেকে সংরক্ষণ করা এ উম্মতের প্রত্যেকটি ব্যক্তির ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব; বিশেষ করে এ উম্মতের আলেম, মুজতাহিদ এবং দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারীদের ওপর ন্যস্ত। এটি সঠিক আক্বীদাকে সংরক্ষণ করার জন্যই করতে হবে, যা দীন ইসলামের মূলভিত্তি।
ইসলামী শরী‘আহ আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। এ শরী‘আত এভাবেই অবশিষ্ট থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরল-সঠিক দীন ইসলামের সমস্ত মৌলিক নীতিমালা পরিপূর্ণ করেই মারা যান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
দীন পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পরে এতে কোনো কিছু বাড়ানো বা কমানো বা পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ এসব কাজ করতে চাইলে সে হবে বিদ‘আতী, মিথ্যাবাদী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্মুখে অগ্রবর্তী হওয়ার দুঃসাহসকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না”। [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১]
দীনের মধ্যে নতুনত্ব আনা আসলে ইসলামের মূলভিত্তিকে ধ্বংস করার নামান্তর। উম্মতের ঐক্যকে বিনষ্ট করতে ও মতানৈক্য সৃষ্টি করতে এ বিদ‘আত মারাত্মক ক্ষতিকর। আর এ কারণে উম্মতের মধ্যে শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি-হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে আছে। এ জন্যই আল্লাহর হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের মধ্যে বিদ‘আত ও নতুন আবিষ্কার থেকে বিরত থাকতে বিশেষভাবে অসিয়্যত করেছেন। বিদ‘আত হলো কবীরা গুনাহ এবং তা পথভ্রষ্টতা। যেমন, আল্লাহর হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন,
কোনো মুসলিমই বলতে পারবে না যে, শরী‘আতে বিদ‘আত গ্রহণযোগ্য বা শরী‘আত প্রণেতার কাছে ভালো কাজ বলে গণ্য। এ সত্বেও বিদ‘আত মুসলিমের মাঝে ছড়িয়ে আছে। এর কারণ হলো মানুষ অন্যের বিদ‘আতকে নিষেধ করে; কিন্তু নিজেদের মধ্যে যেসব বিদ‘আত ছড়িয়ে আছে তা স্বীকার তো করেই না; বরং বলে এসব তার পূর্বপুরুষ ও জাতির থেকে প্রাপ্ত হয়েছে। অতএব, এগুলোকে সে বিদ‘আতই মনে করে না। মূলত বিদ‘আতের অর্থ অনেকের কাছেই অস্পষ্ট থাকায় এ ভুল হয়ে থাকে। ইমাম শাতেবী রহ. এর বিদ‘আতের সংজ্ঞাটি সর্বোত্তম সংজ্ঞা। তিনি বলেছেন, ‘বিদ‘আত হলো দীনের মধ্যে আবিষ্কৃত এমন পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে চলে শরী‘আতের ওপর চলা উদ্দেশ্য করা হয়। অর্থাৎ এ পথে চলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
বিদ‘আতের আরো স্পষ্ট নীতিমালা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভে মানুষ এমন সব কাজ করে যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সম্মানিত সাহাবীগণ করেন নি অথচ এ ধরণের কাজ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সময় হওয়া সম্ভবপর ছিলো; কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে সময় তারা করেন নি।
বিদ‘আত ছড়ানোর কারণসমূহ:
প্রথমত: আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইবাদতে অতিরিক্ত করার ভুল ধারণা:
১- জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে সায়িম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সফরে সাওম পালনে (আলাদা) কোন সাওয়াব নেই”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৫।]
২- ইমাম মালিক তার মুয়াত্তায় বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? তারা বললেন, সে মানত করেছে যে, কারো সাথে কথা বলবে না, রোদ থেকে ছায়া নিবে না, বসবে না এবং সাওম পালন করবে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক মহিলার নিকট গমন করলেন। তিনি দেখলেন, মহিলাটি কথাবার্তা বলছে না। তিনি (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করলেন, মহিলাটির এ অবস্থা কেন, কথাবার্তা বলছে না কেন? তারা তাঁকে জানালেন, এ মহিলা নীরব থেকে থেকে হজ পালন করে আসছেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, কথা বলো কেননা তোমার চুপ থেকে হজ পালন কাজটি হালাল নয়। এটি জাহেলি যুগের কাজ। তখন মহিলাটি কথাবার্তা বলল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৩৪।]
৪- যুবাইর ইবন বাক্কার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মালেক ইবন আনাস রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, একলোক তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
«يا أبا عبد الله من أين أحرم؟ قال : من ذي الحليفة من حيث أحرم رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فقال : إني أريد أن أحرم من المسجد من عند القبر، قال : لا تفعل فإني أخشى عليك الفتنة، فقال : فأي فتنة في هذه؟ إنما هي أميال أزيدها . قال : وأي فتنة أعظم من أن تري أنك سبقت إلى فضيلة قصر عنها رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إني سمعت الله يقول : ﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ٦٣﴾ [ النور : ٦٣ ]
“হে আবু আব্দুল্লাহ! আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধবো? তিনি বললেন, যুল হুলাইফা থেকে; যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। সে বললো, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর মসজিদে নববী থেকে ইহরাম বাঁধতে চাই। তিনি (মালিক ইবন আনাস রহ.) বললেন, তুমি এরূপ করো না; কেননা আমি তোমার ব্যাপারে ফিতনার আশংকা করছি। সে বলল, এতে আবার কিসের ফিতনা? এতো কয়েক মাইল অতিরিক্ত পথ মাত্র! তিনি বললেন, তুমি এর চেয়ে আর বড় কী ফিতনার আশংকা করো যে, তুমি মনে করো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি সাওয়াবের অধিকারী হবে? তুমি কি মনে কর যে রাসূল এ সাওয়াব অর্জনে কসুর করেছেন? অথচ আল্লাহ বলেছেন,
“অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩] [মির‘আতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ৮/৩৬৪।]
৫- ইমাম বুখারী রহ. ‘আওন ইবন আবু জুহাইফার সূত্রে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার ভাই আবু দারদার পার্থিব কোনো কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন। তারপর তিনি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য খাবার প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আপনি না খেলে আমি খাব না। এরপর আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাত আদায়ে দাঁড়াতে গেলে সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলে সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো তখন সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, এখন সালাতে দাঁড়ান। এরপর তারা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, আপনার ওপর আপনার রবের হক আছে, আপনার নিজেরও হক আছে, আপনার ওপর রয়েছে আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “সালমান ঠিকই বলেছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৮।]
দ্বিতীয়ত: প্রবৃত্তির অনুসরণ
নিজেকে মানুষের মাঝে প্রকাশ করার আকাঙ্ক্ষা মানব জীবনে বড় প্রভাব ফেলে থাকে। আর এ আকাঙ্ক্ষা যখন শরী‘আতের বাধা-নিষেধ মুক্ত হয়ে দিন দিন বেড়ে উঠতে থাকে, এমনকি ধীরে ধীরে মানুষের অনুভুতিতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয় এবং তার সাধারণ চলাফেরাতেও অনুপ্রবেশ করে, তখন সে ব্যক্তি আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে বিদ‘আত ও নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করতে থাকে এবং তা চর্চা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল”। [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৬]
তৃতীয়ত: মা‘সূম (পাপমুক্ত) নন এমন ব্যক্তির নির্দেশনার প্রতি আত্মসমর্পন:
বিদ‘আত সৃষ্টির আরেকটি কারণ হলো, মা‘সূম তথা পাপমুক্ত নন এমন ব্যক্তির প্রতি আত্মসমর্পন করা ও তার কথা বা কাজকে শরী‘আতের দলীল মনে করা। কেননা যে ব্যক্তি দ্বারা পাপ-পুণ্য দুটোই হতে পারে সে ব্যক্তি ভুল-শুদ্ধ দুটোই করতে পারে। সে ব্যক্তি যদি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন না করে তাহলে সে মিথ্যা বলতে পারে। ফলে এ ধরণের ব্যক্তির কথার প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন ও তার অন্ধ অনুসরণ পথভ্রষ্টতা, বিদ‘আত এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর মিথ্যাচারের কারণ।
আমাদের সম্মানিত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুন নাবিয়্যীন (সর্বশেষ নবী), তার আনিত কিতাব সর্বশেষ আসমানী কিতাব এবং তার শরী‘আত সর্বশেষ শরী‘আত। অতএব, তিনি যে বিধান দিয়েছেন এর ওপর কোনো বিধান নেই এবং তার সুন্নাতের (পথের) ওপর আর কোনো সুন্নত (পথ) নেই। এ সীমারেখা থেকে বের হওয়া মানে বিদ‘আতের পথ সুগম করা।
চতুর্থত: সহীহ হাদীস ছেড়ে দ‘য়ীফ বা দুর্বল হাদীসের ওপর নির্ভর করা:
আলেমগণ বলেছেন, বিদ‘আতের মূল কারণ হলো দ‘য়ীফ বা দুর্বল হাদীস; বরং এর চেয়েও মারাত্মক হলো মাউদু‘ বা বানোয়াট হাদীস। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“কেউ যদি আমার নিকট থেকে কোনো হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে তা মিথ্যা, তবে সে হলো দুই মিথ্যাবাদীর একজন”। [সহীহ মুসলিম, তিনি হাদীসটিকে তার মুকাদ্দামায় উল্লেখ করেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৬২।]
এ ব্যাপারে যে যতটুকু শিথিলতা করবে সে ব্যক্তি সুন্নত থেকে ততটুকু দূরে সরে যাবে এবং বিদ‘আতের ভয়ঙ্কর থাবায় পতিত হবে।
বিদ‘আতে হাসানা ও সাইয়্যেয়াহ নামে বিদ‘আতের শ্রেণিবিভাগ:
কোনো কোনো আলেম বিদ‘আতকে হাসানা ও সাইয়্যেয়াহ এ দু’ প্রকারে ভাগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে বিদ‘আতকে হাসানা ও সাইয়্যেয়াহ এ দু’ প্রকারে ভাগ করার কোনো দলীল নেই। কেননা সব বিদ‘আতই সাইয়্যেয়াহ তথা খারাপ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“সমস্ত বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা এবং সমস্ত ভ্রষ্টতা জাহান্নামে যাবে”। [সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৭৮; সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৭৮৫।]
এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে এতে নিম্নোক্ত বাক্যটি নেই,
« وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ » .
“এবং সমস্ত ভ্রষ্টতা জাহান্নামে যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।] তিনি এ শব্দ ব্যতীত বর্ণনা করেছেন।
আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাখ্যা হবে এরূপ:
«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً» .
“যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো উত্তম প্রথা প্রবর্তন করবে ...(সে তার সওয়াব তো পাবে)”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৭।] যে ব্যক্তি ইসলাম অনুমোদিত কোনো ভালো কাজ করবে এবং তার দেখাদেখি অন্য মানুষেরাও তাকে অনুসরণ করল তবে সে তার সওয়াব তো পাবেই, উপরন্তু সে অনুসারে আমলকারীদের সমপরিমাণ সওয়াবও পাবে। কেননা যখন এক সাহাবী দুর্ভিক্ষের সময় সদকা নিয়ে আসলেন এবং তার দেখাদেখি অন্যান্য সাহাবীগণও সদকা পেশ করলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলেছিলেন।
অন্যদিকে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী,
«نِعْمَت البِدْعَةُ هَذِهِ» .
“কতোই না উত্তম বিদ‘আত এটি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১০।] এখানে শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত উদ্দেশ্য, বিদ‘আতের পারিভাষিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়। কেননা মানুষ একজন ইমামের পিছনে একত্রিত হয়ে তারাবীর সালাত আদায় করা দেখে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ কথা বলেছিলেন। আর সালাতুত তারাবীহ জামা‘আতের সাথে আদায় করা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুমোদিত ও বিধিবদ্ধ। যেহেতু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে কয়েক রাত সালাতুত তারাবীহ আদায় করেছেন। পরে এ সালাত ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি জামা‘আতে আদায় করা ছেড়ে দিয়েছেন। লোকজন একাকী ও ভিন্ন ভিন্ন জামা‘আতে এ সালাত আদায় করছিলেন। অতএব, একজন ইমামের পিছনে জামা‘আতের সাথে এ সালাত আদায় করার পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিলো; যেহেতু তিনি কয়েক রাত এভাবে পড়েছেন, অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে এ সুন্নতটি পুনর্জীবিত করেছেন। তিনি শুধু কারণবশত বন্ধ হওয়া কাজটি পুনরায় চালু করেছেন। আর বন্ধ হওয়ার কারণ ছিলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সালাত মানুষের ওপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। ফলে শাব্দিক অর্থে এ কাজটিকে বিদ‘আত বলা হয়েছে, শর‘ঈ অর্থে নয়। কেননা শর‘ঈ অর্থে বিদ‘আত হারাম। সুতরাং আল্লাহর সীমারেখায় সর্বদা দণ্ডায়মান এবং বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্ক বাণী অবগত উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মতো একজন মানুষের পক্ষে এ ধরণের বিদ‘আত সংঘটিত হতে পারে না।
শরী‘আত সম্মত জায়েয কাজের মাধ্যম হিসেবে বিদ‘আত শর‘ঈ অর্থে গ্রহণযোগ্য নয় যেমন, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও কিতাব ছাপানো; কেননা কোনো কিছুর মাধ্যম উক্ত জিনিসের উদ্দেশ্য হাসিলের হুকুম উদ্দেশ্য অর্জনের মাধ্যমসমূহ স্থান, কাল ও পাত্রভেদে পরিবর্তনশীল আর শর‘ঈ উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম আবিষ্কার করা নিম্নোক্ত হাদীসের অন্তর্ভুক্ত
“যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো উত্তম প্রথা প্রবর্তন করবে সে তার সওয়াব তো পাবেই, উপরন্তু কিয়ামত পর্যন্ত এ আমলটি যারাই করবে তাদের সাওয়াবও লাভ করবে (কিন্তু আমলকারীর সাওয়াব কমানো হবে না)”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৭; মু‘জাম আল-আওসাত, হাদীস নং ৮৯৪৬।]
বিদ‘আতকে হাসানা ও সাইয়্যেয়াহ হিসেবে যেমন ভাগ করা সমীচীন নয়, তেমনি যারা বিদ‘আতকে পাঁচ প্রকারে ভাগ করেন তাও সঠিক নয়। এ পাঁচ প্রকার হলো, ওয়াজিব বিদ‘আত, মুস্তাহাব বিদ‘আত, হারাম বিদ‘আত, মাকরূহ বিদ‘আত ও জায়েয বিদ‘আত। তবে এ প্রকারভেদ দ্বারা যদি বিদ‘আতের শর‘ঈ অর্থ উদ্দেশ্য না করে শাব্দিক অর্থ উদ্দেশ্য করে তাহলে অসুবিধে নেই।
বিদ‘আতের শাব্দিক ও শর‘ঈ অর্থ পার্থক্য নিরূপণে নিম্নোক্ত পদ্ধতিটি হয়ত আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি যে নতুন কাজটি দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চান সেটি সম্পর্কে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, উক্ত কাজটি কী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবী থেকে প্রমাণিত? অর্থাৎ তারা কি কাজটি করেছেন? অতঃপর, তাদের সময় এ কাজের হেতু বা আবশ্যকীয়তা ছিল কী না? এ কাজ করার নিষেধাজ্ঞা অনুপস্থিত ছিলো কী না? যখন দেখবেন কাজটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর কোনো সাহাবী করেন নি; অথচ কাজটির হেতু সে সময় বিদ্যমান ছিলো এবং এ কাজ করতে কোনো নিষেধাজ্ঞাও ছিলো না, তা স্বত্বেও কাজটি করা হলো শর‘ঈ বিদ‘আত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেউ যদি আযানের বাক্যে আল্লাহু আকবর ( الله أكبر ) এর পরিবর্তে আল্লাহু ‘আলা( الله أعلى ) বলে এবং এর দ্বারা সে আল্লাহর অধিক মহত্ত্ব ও সম্মান উদ্দেশ্য করে তখন আমরা বলবো, এ ধরণের কাজ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি অথচ এ কাজের হেতু তখনও বিদ্যমান ছিলো, আর তা হলো আল্লাহর মহত্ত্ব ও সম্মান বর্ণনা করা এবং এ কাজ করতে নিষেধাজ্ঞাও বিদ্যমান ছিলো না। তখন আমরা বুঝব এ কাজটি বিদ‘আত এবং ভ্রষ্টতা।
আরেকটি উদাহরণ উল্লেখ করছি, তা হলো: যদি একদল লোক সালাতুদ দোহা জামা‘আতে আদায় করতে অভ্যস্ত হয় এবং যুক্তি হিসেবে তারা যদি বলে, আমরা একে অন্যেকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে এ কাজটি করছি, তখন একইভাবে আমরা বলবো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে সালাতে অভ্যস্ত করতে জামা‘আতের সাথে সালাতুদ দোহা আদায় করেন নি; অথচ এ কাজের হেতু তথা মানুষকে সালাতুদ দোহার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার হেতু তখনও বিদ্যমান ছিলো এবং নিষেধাজ্ঞাও ছিলো না। এভাবে আমরা জানতে পারলাম, সালাতুদ দোহা এভাবে জামা‘আতে আদায় করা বিদ‘আত। এ ধরণের বিদ‘আতকে বিদ‘আতে ইদাফিয়্যা তথা অতিরিক্ত বিদ‘আত বলে। এটি মূলত আসল বিদ‘আত ও অতিরিক্ত বিদ‘আতের মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য এভাবে ভাগ করা হয়েছে। আসল বিদ‘আত হলো বান্দাহর সেসব আমলসমূহ যা শরী‘আত অননুমোদিত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/414/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।