hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়্যতসমূহ

লেখকঃ সালেহ ইবন আব্দুর রহমান আল-হুসাইন, আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল-হাজ

তৃতীয় অসিয়্যত: আহলে বাইতের (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজনের) ব্যাপারে অসিয়্যত
১- ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا، بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ : «أَمَّا بَعْدُ، أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ : أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ، وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ " فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ : «وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ : وَمَنْ أَهْلُ بَيْتِهِ؟ يَا زَيْدُ أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ؟ قَالَ : نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ، وَلَكِنْ أَهْلُ بَيْتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعْدَهُ، قَالَ : وَمَنْ هُمْ؟ قَالَ : هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ، وَآلُ جَعْفَرٍ، وَآلُ عَبَّاسٍ قَالَ : كُلُّ هَؤُلَاءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ؟ قَالَ : نَعَمْ» .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘খুম’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা শেষে ওয়াজ-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে মজবুত দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি, এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন); এতে হিদায়াত এবং নূর (আলো) রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ করো, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। অতঃপর বললেন, আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত কারা, হে যায়েদ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ কি আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাঁর স্ত্রীগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইতে তারাই, যাদের ওপর যাকাত গ্রহণ হারাম। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, এ সব লোক কারা? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরা আলী, ‘আকীল, জা‘ফর ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের পরিবার-পরিজন।

বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, বললেন, এদের সবার জন্য যাকাত গ্রহণ হারাম? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]

২- ইমাম বুখারী রহ. ও অন্যান্যরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ارْقُبُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَهْلِ بَيْتِهِ» .

“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারবর্গের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান দেখাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭১৩।]

ইমাম বুখারী ও অন্যান্যরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণনা করেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَرَابَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي» .

“আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করার চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭১৩।]

৩- ইমাম মুসলিম সফিয়্যাহ বিনত শাইবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন,

«خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ، مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ، فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ، ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا، ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ قَالَ : ﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কালো চুন দ্বারা খচিত একটি পশমি চাদর। হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন, তিনি তাঁকে চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর হুসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন, তাঁকেও চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন, তাকেও চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩] [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৪।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার (আহলে বাইত) কারা?

আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا٣٣ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا٣٤﴾ [ الاحزاب : ٣٣، ٣٤ ]

“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে, আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয়- তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩-৩৪]

এ আয়াতসমূহ (বাহ্যিক বর্ণনা ভঙ্গি অনুসারে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আয়াতের দ্বারা তারাই উদ্দেশ্য, তবে আহলে বাইত শুধু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়-স্বজনরাও এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেমন ইতঃপূর্বে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়াও যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আহলে বাইত কারা? তিনি উত্তরে বলেছেন,

«أَهْلُ بَيْتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعْدَهُ، قَالَ : وَمَنْ هُمْ؟ قَالَ : هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ، وَآلُ جَعْفَرٍ، وَآلُ عَبَّاسٍ» .

“আহলে বাইত তারাই, যাদের ওপর যাকাত গ্রহণ হারাম। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, এ সব লোক কারা? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরা আলী, ‘আকীল, জা‘ফর ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের পরিবার-পরিজন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَخَذَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ، فَجَعَلَهَا فِي فِيهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «كِخْ كِخْ» لِيَطْرَحَهَا، ثُمَّ قَالَ : «أَمَا شَعَرْتَ أَنَّا لاَ نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ» .

“হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সদকার একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফেলে দেওয়ার জন্য কাখ কাখ (ওয়াক ওয়াক) বললেন। তারপর বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা সদকা খাই না!”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৯।]

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,

«أَنَّا لَا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ؟» .

“আমাদের জন্য সদকা গ্রহণ হালাল নয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৯।]

সহীহাইনে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে (তারা কীভাবে রাসূলের প্রতি সালাত পেশ করবে? এ প্রশ্নের জবাবে) বলেছেন,

» قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ «.

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর স্ত্রীগণ এবং তাঁর বংশধরগণের ওপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন, যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধরদের ওপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৭।]

এ হাদীস অন্য একটি হাদীসকে ব্যাখ্যা করে, তা হচ্ছে,

«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ» .

“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং তাঁর বংশধরদের ওপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরদের ওপর। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৬।]

অতএব, প্রথম হাদীস অনুসারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘আল’ (পরিবার-পরিজন) হলো তাঁর স্ত্রীগণ ও বংশধরগণ।

কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘আলে ইবরাহীম’ (ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর) বলতে যা বুঝানো হয়েছে ‘আলে মুহাম্মাদ ’ (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর) দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿قَالَتۡ يَٰوَيۡلَتَىٰٓ ءَأَلِدُ وَأَنَا۠ عَجُوزٞ وَهَٰذَا بَعۡلِي شَيۡخًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عَجِيبٞ٧٢ قَالُوٓاْ أَتَعۡجَبِينَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۖ رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَٰتُهُۥ عَلَيۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِۚ إِنَّهُۥ حَمِيدٞ مَّجِيدٞ٧٣﴾ [ هود : ٧٢، ٧٣ ]

“সে বলল, হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার! তারা বললো, আল্লাহর সিদ্ধান্তে আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন? হে নবী পরিবার, আপনাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭২-৭৩]

এ আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি প্রমাণ করে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর বলতে তাঁর স্ত্রী, ইসহাক আলাইহিস সালাম ও ইয়াকূব আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, আহলে বাইত বা নবী পরিবার দ্বারা ব্যাপক অর্থ উদ্দেশ্য; রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় হওয়ার কারণে যাদের ওপর যাকাত গ্রহণ করা হারাম তারা সবাই আহলে বাইত (নবী পরিবার)।

নবী পরিবারের মর্যাদা সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে:

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মিসওয়ার ইবন মাখরামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنَّ عَلِيًّا خَطَبَ بِنْتَ أَبِي جَهْلٍ فَسَمِعَتْ بِذَلِكَ، فَاطِمَةُ فَأَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ : يَزْعُمُ قَوْمُكَ أَنَّكَ لاَ تَغْضَبُ لِبَنَاتِكَ، وَهَذَا عَلِيٌّ نَاكِحٌ بِنْتَ أَبِي جَهْلٍ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَمِعْتُهُ حِينَ تَشَهَّدَ، يَقُولُ : «أَمَّا بَعْدُ أَنْكَحْتُ أَبَا العَاصِ بْنَ الرَّبِيعِ، فَحَدَّثَنِي وَصَدَقَنِي، وَإِنَّ فَاطِمَةَ بَضْعَةٌ مِنِّي وَإِنِّي أَكْرَهُ أَنْ يَسُوءَهَا، وَاللَّهِ لاَ تَجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللَّهِ، عِنْدَ رَجُلٍ وَاحِدٍ» فَتَرَكَ عَلِيٌّ الخِطْبَةَ» .

“আবু জাহলের কন্যাকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এ সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেলন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের খাতিরে রাগান্বিত হন না। আলী তো আবু জাহলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কথা শুনে) খুতবা দিতে প্রস্তুত হলেন। (মিসওয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন) যখন তিনি হামদ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবুল ‘আস ইবন রাবী‘র নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলাম। সে আমার সাথে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর (শোন) ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা; তাঁর কোনো কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর চরম শত্রুর মেয়ে একই ব্যক্তির কাছে একত্রিত হতে পারে না। (এ কথা শুনে) আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাহার করলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৪৯।]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,

«فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي» .

“ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা। যে তাঁকে কষ্ট দিবে (রাগান্বিত করবে), সে যেন আমাকে কষ্ট দিল (রাগান্বিত করলো)”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৪৯।]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,

«فاطمة بَضْعَةٌ مِنِّي، يَرِيبُنِي مَا رَابَهَا وَيُؤْذِينِي مَا آذَاهَا» .

“ফাতিমা আমারই একটা অংশ। যা তাকে বিষণ্ণ করে, তা আমাকেও বিষণ্ণ করে, তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৪৯।]

ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,

«أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ» .

“আমি (ভালোবাসা ও বংশের দিক থেকে) তোমার এবং তুমি আমার”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৯।]

এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে বলেছেন,

«إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ» .

“আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমের দু’টি দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭০৪।]

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে বলেছেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ، وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُ» .

“হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি আপনিও তাকে ভালোবাসুন এবং যে ব্যক্তি তাকে ভালোবাসে তাকেও আপনি ভালোবাসুন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৪।]

আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ [ الاحزاب : ٦ ]

“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬]

কুরআনে (ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের সাথে) পারস্পারিক অভিশাপের আয়াতে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করাটাই তাদের অপরিসীম মর্যাদার প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿فَمَنۡ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡاْ نَدۡعُ أَبۡنَآءَنَا وَأَبۡنَآءَكُمۡ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمۡ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمۡ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰذِبِينَ٦١ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡقَصَصُ ٱلۡحَقُّ٦٢﴾ [ ال عمران : ٦١، ٦٢ ]

“অতঃপর আপনার নিকট জ্ঞান আসার পর যে আপনার সাথে এ বিষয়ে ঝগড়া করে, তবে আপনি তাকে বলে দিন, এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের সন্তানদেরকে ও তোমাদের সন্তানদেরকে, আর আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজদেরকে ও তোমাদের নিজদেরকে, তারপর আমরা বিনীত প্রার্থনা করি, মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা‘নত করি। নিশ্চয় এটি সত্য বিবরণ”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬১-৬২]

আহলে বাইতের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ:

নবীর পরিবার পরিজনের প্রতি ভালোবাসা ও তাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা শর‘ঈ ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» .

“আর আমি আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।] কেননা তাদেরকে ভালোবাসা মানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই ভালোবাসা।

আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পূর্ণ করা অত্যাবশ্যকীয় করে:

১- তাদের উঁচু সম্মান ও মর্যাদা অনুযায়ী তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা।

২- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরূদ ও সালামের সাথে তাদের জন্যও দো‘আ করা।

৩- তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করা, তাদের ইলমী মজলিশে বসা, তাদের থেকে ইলম গ্রহণ করা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, তাদের মধ্যকার মতানৈক্য ও অস্পষ্ট বিষয়গুলোকে ভালো চোখে দেখা, তাদের নৈকট্য লাভের প্রত্যাশা করা এবং তাদের সাথে বিয়ে-শাদী করে বা বিয়ে-শাদী দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি।

৪- তাদেরকে সাহায্য করা, তাদের জন্য সম্পদ ব্যয় করা, তাদের ব্যাপারে সমালোচনার জবাব দেওয়া, তাদের মর্যাদা ও ভালো গুণগুলো আলোচনা করা।

৫- তাদের মধ্যে অসৎ ব্যক্তিকে ভালো পরামর্শ দেওয়া, তার প্রতি ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করা এবং তাকে পবিত্র আহলে বাইতের পথে ফিরে আসার দাওয়াত দেওয়া।

ইমাম আজুররী রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতকে ভালোবাসা, তাদেরকে সম্মান দেওয়া, তাদেরকে সহ্য করা, তাদেরকে উত্তম পথে পরিচালিত করা, তাদের আচরণে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা এবং তাদের জন্য দো‘আ করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরয।

৬- গণীমত ও ফাইয়ের থেকে তাদেরকে এক পঞ্চমাংশ দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا غَنِمۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُۥ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ﴾ [ الانفال : ٤١ ]

“আর তোমরা জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু গনীমতরূপে পেয়েছ, নিশ্চয় আল্লাহর জন্যই তার এক পঞ্চমাংশ ও রাসূলের জন্য, নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য”। [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৪১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿مَّآ أَفَآءَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ كَيۡ لَا يَكُونَ دُولَةَۢ بَيۡنَ ٱلۡأَغۡنِيَآءِ مِنكُمۡۚ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ٧﴾ [ الحشر : ٧ ]

“আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায় [যুদ্ধ ছাড়াই যে ধন-সম্পদ অর্জিত হয় তাকে في বলে। এটি সাধারণত বায়তুল মালে জমা রাখা হয় এবং রাসূল স্বীয় তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতেন। আর যুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জিত হয় তাকে গনিমত غنيمت বলা হয়।] হিসেবে যা দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, আত্মীয়-স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও মুসাফিরদের এটি এ জন্য যে, যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে। রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]

সর্ব যুগেই মুসলিমরা তাদের আকীদার কিতাবে আহলে বাইতের অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করেছেন। যেমন, হিজরী তৃতীয় শতাব্দির হানাফী মাযহাবের ইমাম ত্বহাবী রহ. রচিত ‘আকীদায়ে ত্বহাবিয়্যাহ’-তে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী, তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ ও তাঁর পবিত্র বংশধরকে সব ধরণের নোংরা ও অপবিত্র কথাবার্তা থেকে মুক্ত রেখে উত্তম ধারণা পোষণ করবে, সে ব্যক্তি নিফাক থেকে মুক্ত থাকবে’।

হিজরী সপ্তম শতাব্দির ইমাম শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিইয়্যাহ আল-হাম্বলী রহ. তাঁর ‘আকীদাতুল ওয়াসাতিয়্যাহ’ তে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ এর আকীদাহ বর্ণনায় বলেছেন, ‘তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসেন, তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন, তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিয়্যাত সংরক্ষণ করেন, যেমন তিনি ‘গাদীরে খাম’-এর দিনে বলেছিলেন,

«أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» .

“আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]

কতিপয় কুরাইশ বনী হাশিমের সাথে দুর্ব্যবহার করলে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করেন। ফলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বলেছেন,

«والذي نفسي بيده لا يؤمنون حتى يحبونكم لله ولقرابتي» .

“যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, তারা যতক্ষণ না তোমাদেরকে (বনী হাশিমকে) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আমার আত্মীয়তার খাতিরে তারা ভালো না বাসবে ততক্ষণ তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৩২২১৩; মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৭৫১৫।]

নবী পরিবার (আহলে বাইত) ও সাহাবীদের মধ্যকার সম্পর্ক:

সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের ব্যাপারে তাঁর অসিয়্যত পালন করেছেন। যেমন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَرَابَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي» .

“আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করার চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭১৩।]

«ارْقُبُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَهْلِ بَيْتِهِ» .

“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারবর্গের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান দেখাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭১৩।]

হাদীস দু’টি ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহ বুখারীতে বর্ণনা করেছেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আরো বলতেন,

«افتنا يا أبا الحسن» .

“হে আবু হাসান, আমাদেরকে এ বিষয়ে ফতওয়া দাও”।

একবার আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসরের সালাত শেষে বের হলেন। হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে শিশুদের সাথে খেলাধুলা করতে দেখে তিনি তাকে কাঁধে তুলে নিলেন এবং ছন্দে ছন্দে কবিতা আবৃতি করতে লাগলেন,

بأبي شبيه بالنبيلا شبيه بعلي

হে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সদৃশ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সদৃশ নয়। এ সময় আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সাথেই ছিলেন। একথা শুনে তিনি মুসকি হাসি হাসলেন।

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাইতুল মালের সম্পদ বণ্টন করতে বিবরণী তৈরি করার সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের থেকে শুরু করতেন। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন যে, তিনি নিজের নাম আগে অন্তর্ভুক্ত করবেন অথচ তিনি তা করেন নি; বরং তিনি বলেছেন, “আল্লাহ তাকে যে স্তরে রেখেছেন তোমরাও উমারকে সে স্তরে রেখো”। [তবাকাত, ইবন সা‘দ, ৩/২৯৫।] তার অংশ ছিলো বনী ‘আদির অংশের সাথে। আর বনী ‘আদি কুরাইশদের অনেক পরের সিরিয়ালে ছিলো।

অন্যদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সর্বাধিক বিশুদ্ধ সনদে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। তিনি ‘হাদীসুল কিসা’ এ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। প্রশ্নকারী ও ফতওয়া অনুসন্ধানীকে তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পাঠাতেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের পরে তিনি লোকজনকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই‘আতের ওপর অটল থাকতে নির্দেশ দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবন বুদাইল ইবন ওয়ারাকা আল-খুযা‘ঈ রহ. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমরা কার বাই‘আত গ্রহণ করবো? তিনি বললেন, তোমরা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই‘আত গ্রহণ করো এবং এতে অটল থাকো। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৩৭৮৩১।]

একলোক আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, আমি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অপছন্দ করি। তিনি তাকে বললেন,

«أَبْغَضَكَ اللَّهُ , تُبْغِضُ رَجُلًا سَابِقَةٌ مِنْ سَوَابِقِهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا» .

“আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করুক। তুমি কি এমন (মহান) কাউকে অপছন্দ করো, যার ইসলামে অগ্রে করা কাজসমূহের মধ্যে প্রতিটি কাজ দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা আছে সব কিছুর চেয়ে উত্তম”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৩২১২৭।]

এমনিভাবে আহলে বাইতের সদস্যরাও রাসূলের সাহাবীদেরকে ভালোবাসতেন, সম্মান ও মর্যাদা দিতেন। যেমন, আবু জুহাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে ‘ওয়াহাব আল-খাইর’ নামে ডাকতেন) তিনি বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বললেন,

«يَا أَبَا جُحَيْفَةَ، أَلَا أُخْبِرُكَ بِأَفْضَلِ هَذِهِ الْأُمَّةِ بَعْدَ نَبِيِّهَا؟ قُلْتُ : بَلَى، وَلَمْ أَكُنْ أَرَى أَنَّ أَحَدًا أَفْضَلَ مِنْهُ، قَالَ : أَفْضَلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ بَعْدَ نَبِيِّهَا أَبُو بَكْرٍ، وَبَعْدَ أَبِي بَكْرٍ عُمَرُ، وَبَعْدَهُمَا آخَرُ ثَالِثٌ، وَلَمْ يُسَمِّهِ» .

“হে আবু জুহাইফা! আপনাকে কি আমি জানিয়ে দিব না যে, এ উম্মতের মধ্যে নবীর পরে কার মর্যাদা সর্বাধিক? আমি বললাম, অবশ্যই। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ উম্মতের মধ্যে নবীর পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পরে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তাদের পরে তৃতীয় একজন আছেন, তিনি তার নাম উল্লেখ করেন নি”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৮৩৫; তাবরানী আল-আওসাত, হাদীস নং ৯৯২।]

সহীহাইনে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وُضِعَ عُمَرُ عَلَى سَرِيرِهِ فَتَكَنَّفَهُ النَّاسُ، يَدْعُونَ وَيُصَلُّونَ قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ وَأَنَا فِيهِمْ، فَلَمْ يَرُعْنِي إِلَّا رَجُلٌ آخِذٌ مَنْكِبِي، فَإِذَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَتَرَحَّمَ عَلَى عُمَرَ، وَقَالَ : مَا خَلَّفْتَ أَحَدًا أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أَلْقَى اللَّهَ بِمِثْلِ عَمَلِهِ مِنْكَ، وَايْمُ اللَّهِ إِنْ كُنْتُ لَأَظُنُّ أَنْ يَجْعَلَكَ اللَّهُ مَعَ صَاحِبَيْكَ، وَحَسِبْتُ إِنِّي كُنْتُ كَثِيرًا أَسْمَعُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : «ذَهَبْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ، وَدَخَلْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ، وَخَرَجْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ» .

“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃত্যুদেহ খাটের উপর রাখা হলো। খাটটি কাঁধে নেওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দো‘আ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার কাঁধের উপর হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতের দো‘আ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমার, আমার জন্য আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় এমন কোনো ব্যক্তি আপনি রেখে যান নি, যার আমলের অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহর কসম! আমার এ বিশ্বাস যে, আল্লাহ আপনাকে (জান্নাতে) আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সাথে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি বহুবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি, আবু বকর ও উমার গেলাম। আমি, আবু বকর ও উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবু বকর ও উমার বের হলাম ইত্যাদি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৮৯।]

অন্যদিকে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের বিষয় নিয়ে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার মধ্যে মতানৈক্য থাকা সস্ত্বেও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে সম্মান করতেন, তাকে মর্যাদার আসনে আসীন করতেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হিসেবে তার যথাযথ মর্যাদা সংরক্ষণ করতেন। একবার দুজন লোক বসরায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একজন বলতে লাগল, হে আমাদের মা! আপনি আমাদের পক্ষ থেকে অবাধ্যতা প্রাপ্ত হলেন। অন্যজন বলল, হে আমাদের মা! আপনি তাওবাহ করুন, আপনি ভুল করেছেন। তাদের এ আচরণের সংবাদ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পৌঁছলে তিনি কা‘কা‘ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার দরজায় প্রেরণ করেন। সেখানকার উপস্থিত লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা উক্ত লোকদ্বয়ের নাম উল্লেখ করেন। ফলে তাদেরকে পাকড়াও করে একশত বেত্রাঘাত করেন এবং তাদেরকে সেখান থেকে বিবস্ত্র করে বের করে দেন। [আল-কামিল ফিত তারীখ, ৩/১৪৪।]

শা‘বী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জামালের যুদ্ধের পরে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃতদেহ উপত্যকায় দেখে সেখানে নামলেন, অতঃপর তার চেহারা থেকে ধুলা-বালি সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, আবু মুহাম্মাদ আপনাকে প্রস্তর প্রান্তরে দেখা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। আল্লাহর কাছে আমার দুঃখ-কষ্ট ও উদ্বিগ্নতা পেশ করছি। অতঃপর তিনি তার (তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর) জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করলেন। এরপরে তিনি বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি এ জঘন্য ঘটনার পূর্বে বিশ বছর আগে মারা যেতাম!

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরও বলতেন, আমি অবশ্যই আশা করি, আমি, তালহা ও যুবায়ের সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ٤٧﴾ [ الحجر : ٤٧ ]

“আর আমরা তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৭] [উসদুল গাবাহ ৩/৮৬।]

সুনান বায়হাকী আল-কুবরায়ে তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গোলাম আবু হাবীবা রহ. বলেন,

«دَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مَعَ عِمْرَانَ بْنِ طَلْحَةَ بَعْدَمَا فَرَغَ مِنْ أَصْحَابِ الْجَمَلِ، قَالَ : فَرَحَّبَ بِهِ وَأَدْنَاهُ وَقَالَ : إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ يَجْعَلَنِي اللهُ وَأَبَاكَ مِنَ الَّذِينَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : ﴿وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ٤٧﴾ [ الحجر : ٤٧ ] ، فَقَالَ : يَا ابْنَ أَخِي كَيْفَ فُلَانَةٌ؟ كَيْفَ فُلَانَةٌ؟ قَالَ : وَسَأَلَهُ عَنْ أُمَّهَاتِ أَوْلَادِ أَبِيهِ، قَالَ : ثُمَّ قَالَ : لَمْ نَقْبِضْ أَرْضَكُمْ هَذِهِ السِّنِينَ إِلَّا مَخَافَةَ أَنْ يَنْتَهِبَهَا النَّاسُ، يَا فُلَانُ انْطَلِقْ مَعَهُ إِلَى ابْنِ قَرَظَةَ مَرَّةً فَلْيُعْطِهِ غَلَّةَ هَذِهِ السِّنِينَ، وَيَدْفَعْ إِلَيْهِ أَرْضَهُ، قَالَ : فَقَالَ رَجُلَانِ جَالِسَانِ، نَاحِيَةُ أَحَدِهِمَا الْحَارِثُ الْأَعْوَرُ : اللهُ أَعْدَلُ مِنْ ذَلِكَ، أَنْ نَقْتُلَهُمْ وَيَكُونُوا إِخْوَانَنَا فِي الْجَنَّةِ، قَالَ : قُومَا أَبْعَدَ أَرْضِ اللهِ وَأَسْحَقَهَا، فَمَنْ هُوَ إِذَا لَمْ أَكُنْ أَنَا وَطَلْحَةُ، يَا ابْنَ أَخِي إِذَا كَانَتْ لَكَ حَاجَةٌ فَأْتِنَا» .

“জামালের যুদ্ধের পরে আমি ইমরান ইবন তালহার সাথে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে প্রবেশ করলাম। বর্ণনাকারী আবু হাবীবা রহ. বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে স্বাগত জানালেন এবং কাছে নিলেন। তাকে বললেন, আমি অবশ্যই আশা করি, আমি এবং তোমার বাবা (তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ٤٧﴾ [ الحجر : ٤٧ ]

“আর আমরা তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৭] অতঃপর তিনি বললেন, হে ভাইপো! অমুক অমুক কেমন আছেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সন্তানদের মায়েদের খোঁজ খবর জিজ্ঞেস করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বললেন, এ বছর তোমাদের সম্পত্তি লুটের সম্ভাবনা না থাকলে আমরা তা দখল করে রাখতাম না (অর্থাৎ তাদের সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য তিনি কবজা করে রেখেছেন, ভোগের জন্য নয়)। অতঃপর তিনি একজনকে আদেশ করলেন, হে অমুক তুমি তার (ইমরান ইবন তালহা) সাথে বনী কুরাইযাতে যাও। তাদেরকে বলো, তারা যেনো এ বছরের ফসল তাকে দিয়ে দেয় এবং তার সম্পত্তি যেনো ফিরিয়ে দেয়। তখন পাশে বসা দুজন লোক বসা ছিলো, তাদের একজন হারিস আল-‘আওয়ার, সে বলে উঠল, আল্লাহ অধিক ন্যায়পরায়ণ। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবো এবং তারা জান্নাতে আমাদের ভাই হবে। তখন তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা এখান থেকে উঠে আল্লাহর জমিনের অনেক দূরে চলে যাও, আমার কাছ থেকে দূর হও। আমি এবং তালহা যদি জান্নাতে ভাই ভাই হয়ে আসনে না বসি তাহলে কে বসবে? হে ভাইপো, তোমার কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসবে”। [সুনান আল-কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং ১৬৭১৫; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৫৬১৩, ইমাম হাকিম রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী রহ.ও সহীহ বলেছেন।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের মধ্যে সম্পর্কের অন্যতম নিদর্শন হলো তাদের মধ্যকার বৈবাহিক আত্মীয়তার সম্পর্ক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কন্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে এবং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কন্যা হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বিয়ে করেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’কন্যা রুকাইয়্যা ও উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বিয়ে করেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার তিন পুত্রের নাম রাখেন আবু বকর, উমার ও উসমান। তার কন্যা উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে বিয়ে দেন। হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উম্মে ইসহাক বিনত তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমকে বিয়ে করেন। তিনি হাফসা বিনত আব্দুর রহমান ইবন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমকেও বিয়ে করেন। তিনি তার সন্তানদের নাম রাখেন আবু বকর, উমার ও তালহা। হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সন্তানের নাম রাখেন উমার। ইমাম জাফর আস-সাদিক রহ. এর মাতৃকুলের নানা হলেন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। কেননা তার মা হলেন, ফারওয়াহ বিনত কাসিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আবু বকর। আর উম্মে কাসিম হলেন, আসমা বিনত আব্দুর রহমান ইবন আবু বকর। এ কারণে ইমাম জাফর রহ. কে ولدَني الصديق مرَّتين দু’দিক থেকে আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সন্তান বলা হয়।

সাহাবীগণের মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা; বিশেষ করে হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনদের মধ্যকার ভালোবাসা সম্পর্কে অসংখ্য সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। আর তাদের মধ্যকার এ সুসম্পর্ক বিবেক সম্পন্ন, যৌক্তিক ও সেটি হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা তাদের থেকে কুরআন ও ইসলাম মানুষের কাছে পৌঁছেছে। আর তারাই ইসলামের মূল্যবোধ ও আখলাক আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে অধিক হকদার। বিশেষ করে আল্লাহ মুমিনদের মধ্যে সে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছেন তা পালনে তারা অগ্রগামী। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ﴾ [ الحجرات : ١٠ ]

“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১০]

তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖ﴾ [ التوبة : ٧١ ]

“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১]

হাদীসে মুমিনদের মধ্যকার পরস্পর ভালোবাসা ও দয়ার ব্যাপারে এসেছে,

«مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ، وَتَرَاحُمِهِمْ، وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى» .

“মুমিনদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত একটি মানব দেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন তার সমগ্র দেহ অনিদ্রা ও তাপ ডেকে আনে (অর্থাৎ কোনো একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে সমগ্র অঙ্গই অসুস্থ হয়ে যায়)”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮৬।]

একথা সকলেরই জ্ঞাত যে, তাদের যুগ ছিল ইসলামের সোনালী যুগ; যে যুগে ইসলামের আহকাম ও শিক্ষা-দীক্ষা পরবর্তী যে কোনো যুগের চেয়ে পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো।

অতএব, কিছু ইতিহাসের কিতাবে তাদের সম্পর্কে যে সব অপব্যাখ্যা এসেছে, যেগুলো পূর্বোল্লিখিত সহীহ হাদীসের সাথে মতানৈক্য ও বিরোধপূর্ণ, সেগুলোর দিকে কর্ণপাত করা যাবে না। কেননা ইতিহাসের খবর যেগুলো সহীহ হাদীসের সাথে বিরোধপূর্ণ সেগুলো অধিকাংশই সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতায় হাদীসের সনদের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়; বরং এসবের অধিকাংশই প্রবৃত্তি ও সাম্প্রদায়িকতার কুফল।

জামাল ও সিফফীনের যুদ্ধ সম্পর্কে ইতিহাসে যা এসেছে তার অধিকাংশই সময়ের দীর্ঘসূত্রিতা ও এসব ঘটনার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অগ্রহণযোগ্য, তাছাড়া সেসব ঘটনার যতটুকু জানা যায় তাও আবার দ্বিধা-সন্দেহ যুক্ত ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ। এসব ঘটনা অধিকাংশই খাম-খেয়ালী ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে ডালপালা ছড়িয়েছে। সুতরাং এসব ঘটনার ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ মুমিন ভাইদের ব্যাপারে আমাদেরকে যেভাবে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা ঠিক সেভাবেই বলবো। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ١٠﴾ [ الحشر : ١٠ ]

“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমরা সাহাবীগণের ব্যাপারে ওজর পেশ করবো এ বলে যে, তারা মুজতাহিদ ছিলেন। আর মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হলে দ্বিগুণ সাওয়াব পাবেন, আর ভুল করলে একগুণ সাওয়াব পাবেন। এসব উত্তম লোকদের ব্যাপারে আমাদের এটাই মনে করা উচিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের ঈমান আনয়ন, তাঁর সাহচর্য এবং তাঁর পরে ইসলামের বিজয় ও প্রচার প্রসারে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, মুমিনদের মধ্যে পরস্পর বিরোধের কারণে তাদের ঈমান চলে যায় না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱقۡتَتَلُواْ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَاۖ فَإِنۢ بَغَتۡ إِحۡدَىٰهُمَا عَلَى ٱلۡأُخۡرَىٰ فَقَٰتِلُواْ ٱلَّتِي تَبۡغِي حَتَّىٰ تَفِيٓءَ إِلَىٰٓ أَمۡرِ ٱللَّهِۚ فَإِن فَآءَتۡ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَا بِٱلۡعَدۡلِ وَأَقۡسِطُوٓاْۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ٩ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ١٠﴾ [ الحجرات : ٩، ١٠ ]

“আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করো এবং ন্যায়বিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯-১০] এ আয়াতে যুদ্ধে লিপ্ত দুদলকেই মুমিন বলা হয়েছে।

আহলে বাইতের লোকেরা নিষ্পাপ নন এবং তারা শরী‘আতের বিধান প্রণেতাও নন:

যার কোনো ভুল বা গুনাহ নেই তাকে মা‘সূম বা নিষ্পাপ বলে। আর মানুষের মধ্যে যাদের ভুল হওয়া জায়েয নয় তারা তো কেবল নবী-রাসূলগণ। যাদের কাছে আল্লাহ অহী প্রেরণ করেন এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। কেননা তাদের ভুল হলে আল্লাহর নির্দেশিত দাওয়াতী কাজে ভুল হওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।

অন্যান্য মানুষের মতো আহলে বাইতরাও ইজতিহাদ করতেন। এতে তারা সঠিক বা ভুল উভয়টিই করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হলে দ্বিগুণ সাওয়াব পাবেন আর ভুল ইজতিহাদ করলে একটি সাওয়াব প্রাপ্ত হবেন।

সহীহাইন ব্যতীত অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসের ব্যাপারে বলা যায়,

«إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي، الثَّقَلَيْنِ، وَأَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ : كِتَابُ اللهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ، وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي، أَلَا وَإِنَّهُمَا لَنْ يَفْتَرِقَا، حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ» .

“আমি তোমাদের জন্য এমন দু’টি ভারী জিনিস রেখে গেলাম, যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। (তাহলো: আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত)। এর একটি অন্যটির চেয়ে বড়। আল্লাহর কিতাব এমন একটি রশি যা আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত। আরেকটি হলো আমার আহলে বাইত। এ দু’টি আমার সাথে হাউজে কাউসারে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হবে না”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১১৫৬১; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮৮। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।] এ হাদীস থেকে এটি বুঝা ঠিক হবে না যে, কুরআন ও সুন্নাহর ন্যায় আহলে বাইতরাও শরী‘আতের উৎস (অর্থাৎ তারাও বিধান সংযোগ বা বিয়োজন করতে পারবে, এমনটি বুঝা বৈধ হবে না)।

এ হাদীসটিকে কতিপয় আলেম দ‘য়ীফ বা দুর্বল বলেছেন। আর যদি তা সহীহ বলে ধরেও নেওয়া হয়, তবুও আহলে বাইতের সব সদস্যকে অনুসরণ করা প্রমাণ করে না। কেননা তারা একই সময়ে অধিক ছিলেন এবং তারা তাদের মাযহাব ও ফতওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। এতে একদল অন্যদলকে ভুল বলেছেন।

অনুসরণ করতে হবে শুধু কুরআন ও হাদীসের ওপর, যা আল্লাহ সকলের ওপর অনুসরণ করা ফরয করেছেন। উপরোক্ত হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে মেনে নিলে (হাদীস শুদ্ধ ও তার শব্দাবলী সংরক্ষিত মেনে নিলে) তা থেকে শুধু এটিই প্রমাণ করে যে, মৌলিকভাবে তাদের পথ ও সুন্নত অনুসরণ করতে হবে; তখন তা নিম্নোক্ত হাদীসে যা এসেছে সেটার অনুরূপ হবে:

«َعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ من بعدي» .

“তোমরা আমার পরে আমার সুন্নত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের অনুসরণ করো”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭।] আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে, খোলাফায়ে রাশেদীনরা নিষ্পাপ নন এবং তারা শরী‘আতের কোনো বিধানের ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু নন; এমনকি তাদের থেকে ভুল-ত্রুটিও হতে পারে। তারা একের ভুল-ভ্রান্তি অন্যে শুধরিয়ে দিয়েছেন। তারা অন্যান্য মুজতাহিদের মতোই, যিনি ভুল করলে একটি সাওয়াব পান আর ইজতিহাদে সঠিক মতে উপনীত হতে পারলে দু’টি সাওয়াবের অধিকারী হন। (সুতরাং আহলে বাইতের ব্যাপারে আসা হাদীসটিকে উপরোক্ত খোলাফায়ে রাশেদার ব্যাপারে আসা হাদীসের মতই মনে করতে হবে)।

হাদীসটি সহীহ হলে ইমাম কুরত্ববী রহ. ‘আল-মুফাহহাম’ এ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেটিই সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা। তিনি বলেছেন, ‘নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতের ব্যাপারে তাঁর এ অসিয়্যত ও বিশেষ গুরুত্বারোপ তাঁর পরিবার-পরিজনকে সম্মান প্রদর্শন, মর্যাদা প্রদান ও তাদেরকে ভালোবাসা অত্যাবশ্যকীয় করে; এ ব্যাপারে কারো কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য নয়’।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন