hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়্যতসমূহ

লেখকঃ সালেহ ইবন আব্দুর রহমান আল-হুসাইন, আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল-হাজ

পঞ্চম অসিয়্যত: কর্তৃত্বের অধিকারীর আনুগত্য করা
১- ইমাম মুসলিম ও ইবন হিব্বান রহ. উম্মে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«حَجَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ، فَرَأَيْتُ أُسَامَةَ أَوْ بِلَالًا يَقُودُ بِخِطَامِ نَاقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالْآخَرَ رَافِعُ ثَوْبَهُ يَسْتُرُهُ بِهِ مِنَ الْحَرِّ حَتَّى رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ، ثُمَّ انْصَرَفَ، فَوَقَفَ النَّاسُ، وَقَدْ جَعَلَ ثَوْبَهُ مِنْ تَحْتِ إِبْطِهِ الْأَيْمَنِ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْسَرِ، قَالَ : فَرَأَيْتُ تَحْتَ غُضْرُوفِهِ الْأَيْمَنِ كَهَيْئَةِ جُمْعٍ، ثُمَّ ذَكَرَ قَوْلًا كَثِيرًا وَكَانَ فِيمَا يَقُولُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ أَسْوَدُ يَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، فَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا ".

“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজ করেছি। আমি দেখেছি উসামা বা বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওয়ারির লাগাম ধরে হাকঁছিলেন এবং অপরজন নিজের কাপড় দ্বারা তার মাথার উপর রোদকে আড়াল করে ধরে রেখেছিলেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। মানুষ সব দাঁড়িয়ে গেলো। আর তখন তাঁর কাপড়ের প্রান্তদেশ ডান বগলের নিচ থেকে বাম কাঁধের উপর রাখা ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক আলোচনা করলেন। তিনি যা বলেছেন তার মধ্যে এটাও ছিলো, যদি নাক, কান বা অনুরূপ কোন অঙ্গ কাটা কালো গোলামকে তোমাদের নেতা বানিয়ে দেওয়া হয় এবং সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করে তাহলে তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৫৬৪।]

২- ইমাম তিরমিযী, ইবন হিব্বান ও হাকেম রহ. আবু উমামা আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ فَقَالَ : « أيها الناس أطيعوا رَبَّكُمْ، وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ، وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ» .

“হে মানবসকল! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, তোমাদের ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমীরের অনুসরণ করো, তবেই তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৬১৬; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৫৬৩; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ১৯।]

৩- ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী ‘ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন,

وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بَعْدَ صَلَاةِ الغَدَاةِ مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، فَقَالَ رَجُلٌ : إِنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّهَا ضَلَالَةٌ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَعَلَيْهِ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ» .

“একদিন ফজরের সালাতের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন এক উচ্চাঙ্গের নসীহত করলেন যে, তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন এক ব্যক্তি বললেন: এতো বিদায়ী ব্যক্তির মত নসীহত, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য কী অসিয়্যত করে যাচ্ছেন? তিনি বললেন: তোমাদের আমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করার অসিয়্যত করছি। যদি হাবশী দাসও আমীর নিযুক্ত হয় তবুও তার প্রতি অনুগত থাকবে, তার নির্দেশ শুনবে। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু বিরোধ প্রত্যক্ষ করবে। তোমরা দীনের মধ্যে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে সাবধান থাকবে। কারণ তা হলো গুমরাহী। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঐ যুগ পাবে তার কর্তব্য হলো আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৭১৪২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

কর্তৃত্বের অধিকারীর আনুগত্য করা ফরয:

উপরোক্ত হাদীসসমূহ দ্বারা আমীর বা শাসকের গুরুত্ব ও সঠিকভাবে কার্যাবলী পরিচালনায় তার ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে। এসব কার্যাবলী আমীরের আনুগত্য ও মান্য করা ব্যতীত সম্পাদন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে আমীর বা ক্ষমতাশীলের অনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখো। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]

ইবন আতিয়্যাহ রহ ‘আল-মুহাররার আল-অজীয’ এ বলেন, জমহুর আলেমের মতে ‘উলুল আমর’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমীর তথা শাসকগণ। আবু হুরায়রা, ইবন আব্বাস ও ইবন যায়েদ প্রমুখ মুফাসসীরগণ এ মত ব্যক্ত করেছেন।

কাযী আবু বকর ইবন আরাবী আল-মালেকী বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলার বাণী ﴿وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡ﴾ এর দ্বারা শাসকগণ নাকি আলেমগণ উদ্দেশ্যে এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। তবে আমার কাছে সঠিক হলো শাসক ও আলেম সবাই উদ্দেশ্য। কেননা মূল কর্তৃত্ব ও শাসনকাজ পরিচালনা তাদের ওপর ন্যস্ত। অন্যদিকে অজানা বিষয়ে আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করা ফরয”।

ফখরুর রাযী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু শাসক ও দায়িত্বশীলদের ওপর জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার দেখভালের আদেশ দিয়েছেন সেহেতু জনগণের ওপর তাদের অনুগত্য করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখো। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯] এ জন্যই আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, “শাসকের দায়িত্ব হলো আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী জনগণের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করা এবং তাদের আমানত পৌঁছে দেওয়া। তারা যখন তাদের দায়িত্ব আদায় করবে তখন জনগণের ওপর দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে তাদের মান্য করা ও অনুগত্য করা”।

ইমাম ফখরুর রাযী রহ. নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেছেন,

﴿وَإِذَا جَآءَهُمۡ أَمۡرٞ مِّنَ ٱلۡأَمۡنِ أَوِ ٱلۡخَوۡفِ أَذَاعُواْ بِهِۦۖ وَلَوۡ رَدُّوهُ إِلَى ٱلرَّسُولِ وَإِلَىٰٓ أُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنۡهُمۡ لَعَلِمَهُ ٱلَّذِينَ يَسۡتَنۢبِطُونَهُۥ مِنۡهُمۡۗ وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ لَٱتَّبَعۡتُمُ ٱلشَّيۡطَٰنَ إِلَّا قَلِيلٗا٨٣﴾ [ النساء : ٨٣ ]

“আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিতো, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হতো, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮৩]

‘উলুল আমর’ এর ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে।

একটি হলো: আলেম ও মুজতাহিদ, অন্যটি হলো দেশের শাসক। কেউ কেউ দ্বিতীয় মতকে প্রথম মতের ওপর প্রধান্য দিয়েছেন। কেননা জনগণের ওপর শাসকদের কর্তৃত্ব রয়েছে, পক্ষান্তরে আলেমদের ওপর এরূপ কর্তৃত্ব নেই।

আল-কুরআনের এ দিকনির্দেশনা ও আল্লাহর আদেশসমূহ উম্মতের নিবেদিত নসিহতকারী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সুন্নতে নববীতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَةٌ» .

“যদি তোমাদের ওপর এরূপ কোন হাবশী দাসকেও শাসক নিযুক্ত করা হয়, যার মাথাটি কিশমিশের ন্যায়, তবুও তার কথা শোন ও তার আনুগত্য কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪২;]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«عَلَيْكَ السَّمْعَ وَالطَّاعَةَ فِي عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأَثَرَةٍ عَلَيْكَ» .

“দুঃখে-সুখে, খুশী-অখুশীতে এবং যদিও অন্য কাউকে তোমার ওপরে প্রাধান্য দেওয়া হয় তবুও সর্বাবস্থায় আমীরের নির্দেশ শোনা এবং তার আনুগত্য করা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৬।]

ওয়ায়েল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালামাহ ইবন ইয়াযীদ আল-জু‘ফী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

«يَا نَبِيَّ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، وَقَالَ : «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ» .

“হে আল্লাহর নবী! আপনার কী মত, যদি আমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসে যারা আমাদের থেকে তাদের হক (অধিকার) পুরাপুরি দাবী করে কিন্তু আমাদের হক প্রতিরোধ করে রাখে এ অবস্থায় আমাদের কী করার আদেশ করেন? তার কথা শুনে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলে এবারও তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলে এবারও তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাদের কথা শ্রবণ করো এবং তাদের আনুগত্য করো। প্রকৃতপক্ষে তাদের বোঝা তাদের ওপরই চাপবে, আর তোমাদের বোঝা তোমাদের ওপর চাপবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৬।]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ، فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً»

“কেউ যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলী যুগের মৃত্যুর ন্যায়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৯।]

আনুগত্যের পরিধি:

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীস থেকে এ কথা বুঝা যাচ্ছে যে, আমীর ভালো হোক আর খারাপ হোক সর্বাবস্থায় তাদের কথা শ্রবণ করা, মান্য করা ও আনুগত্য করতে ইসলামী শরি‘আত নির্দেশ দিয়েছে। এতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে ও সমাজে মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হবে। তবে একথা সকলেরই জানা আবশ্যক যে, তাদের কথা শ্রবণ ও আনুগত্য শুধু সৎ ও কল্যাণকর কাজে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন,

«إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوفِ» .

“আমীরের আনুগত্য শুধু সৎ ও কল্যাণকর কাজে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪০।]

অতএব, নিরঙ্কুশ আনুগত্য শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। এটি একমাত্র আল্লাহরই বৈশিষ্ট্য। আমীর যদি অসৎ বা শরী‘আত বিরোধী কোনো কাজের আদেশ দেন তাহলে তার কথা শোনা যাবে না এবং তার আনুগত্যও করা যাবে না। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ» .

“মুসলিমের ওপর অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে আমীরের (শাসকের) কথা শোনা এবং আনুগত্য করা, চাই তা তার মনঃপূত হোক বা না হোক। তবে যদি গুনাহের কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় (তাহলে স্বতন্ত্র কথা)। যদি গুনাহের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে তা শোনাও যাবে না, আনুগত্যও করা যাবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৯।]

অতএব, স্রষ্টার অবাধ্যতা ও গুনাহের কাজে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য করা যাবে না।

এখানে একটি সূক্ষ্ম সতর্কতা উল্লেখ করছি যা অনেক মানুষের কাছেই অজানা। তাহলো, গুনাহের কাজে তাদের আনুগত্য না করা মানে তাদের বিরুদ্ধে বের হওয়া অত্যাবশ্যকীয় নয়; বরং তিনি যে গুনাহের কাজের আদেশ দিয়েছেন তা না করা এবং পূর্বোক্ত আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত সাধারণ আনুগত্য করা অত্যাবশ্যকীয়। মু’তাসিম ও ওয়াসীকের সাথে ইমাম আহমদ রহ. এর ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য। মু’তাসিম ও ওয়াসীক ইমাম আহমদকে কুরআন সৃষ্ট বলতে নির্দেশ দেন; কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. একথা বলতে অস্বীকার করেন, তবে তিনি আমীরের সাধারণ আনুগত্যশীল ছিলেন এবং লোকদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বের হতে নিষেধ করেছেন।

আরেকটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, তাদের সাধারণ আনুগত্য ও কথা শোনা মানে তাদেরকে ভালোবাসা অত্যাবশ্যকীয় করে না। এমনিভাবে তাদের মধ্যে পাপিষ্ঠ ও অত্যাচারীকে ঘৃণা করাও তাদের বিরুদ্ধে বের হওয়া অত্যাবশ্যকীয় করে না। এখানে অনেকেরই পদস্খলণ ঘটে। এ বিষয়টি ভালোভাবে না বুঝার কারণে অনেক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কখনও কোনো পাপের কারণে তাদেরকে ঘৃণা করা অত্যাবশ্যকীয় করে; কিন্তু সাধারণভাবে তাদের অনুগত্য করা ও তাদের কথা শোনা অত্যাবশ্যকীয়। এ সীমালঙ্ঘন করা কারো উচিত নয়। এ পার্থক্যটি ইমাম মুসলিম বর্ণিত আউফ ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ، وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ» قَالُوا : قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ؟ قَالَ : «لَا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ، لَا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ» .

“তোমাদের উত্তম শাসক হচ্ছে যাদের তোমরা ভালোবাসো এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য দো‘আ করো এবং তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। তোমাদের খারাপ শাসক হচ্ছে, যাদের তোমরা ঘৃণা করো এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদের অভিশাপ দাও, আর তারাও তোমাদের অভিশাপ দেয়। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এমন অবস্থার উদ্ভব হলে আমরা কি তাদের ক্ষমতাচ্যুত করব না? তিনি বললেন, না, যতদিন তারা তোমাদের মাঝে সালাত কায়েম করে। না, যতদিন তারা তোমাদের মাঝে সালাত কায়েম করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫৫।]

আমীরের বিরুদ্ধে বের হওয়া হারাম:

ইমাম নাওয়াবী রহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমীরের বিরুদ্ধে বের হওয়া, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের ঐকমত্যে হারাম। যদিও তারা ফাসিক ও যালিম হয়। আমি এখানে যে মত ব্যক্ত করেছি এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে’।

ইবন হাজার রহ. ফাতহুল বারী গ্রন্থে ইবন বাত্তাল রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘সকল ফকিহদের মতে, অত্যাচারী আমীরের আনুগত্য করা ও তার সাথে জিহাদে বের হওয়া ফরয। তার বিরুদ্ধে বের হওয়ার চেয়ে তার অনুগত্য করা উত্তম। কেননা এতে রক্তপাত বন্ধ হবে, সাধারণ মানুষ শান্তিতে বাস করবে। ফকিহগণ তাদের সীমালঙ্ঘনের মাত্রা সীমাবদ্ধ করেন নি, যতক্ষণ তাদের থেকে স্পষ্ট কুফরী প্রকাশ না পায়’।

ইমাম ত্বাহাবী রহ. বলেছেন, ‘আমাদের আমীর ও শাসকের বিরুদ্ধে বের হওয়ার অবকাশ নেই যদিও তারা অত্যাচারী হয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করব না এবং তাদের আনুগত্য থেকে আমরা সরে যাবো না। আমরা মনে করি, তাদের আনুগত্য করা মানে আল্লাহর আনুগত্য করা, যা ফরয। যতক্ষণ তারা গুনাহের কাজের আদেশ না দেয়। তাদেরকে সংশোধন ও সুপথের দিকে আহ্বান করবো’।

এ ব্যাপারে আমাদের সৎ উত্তরসূরীদের ইজমা হলো তাদের বিরুদ্ধে বের হওয়া যাবে না, কেননা তাদের বিরুদ্ধে বের হলে সমাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও মানুষের মাঝে হয়রানি দেখা দিবে। এতে মানুষ দীন ও দুনিয়ার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে না।

আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমীর ব্যতীত মানুষের কল্যাণ হতে পারে না, চাই সৎ ও ন্যায়পরায়ন হোক বা পাপিষ্ঠ। যদি আমীর পাপিষ্ঠ হয় (এতে অসুবিধে নেই, কেননা) মুমিন এসময় তার রবের ইবাদাত করবে। আর পাপীকে তার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া হয়”। [তাফসীরে ত্বাবারী। আমি এ নসটি তাফসীরে ত্বাবারীতে পাই নি। -অনুবাদক।]

আবু হারেস আস-সায়েগ বলেন, ‘আমি আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল)-কে বাগদাদের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম অর্থাৎ শাসকের বিরুদ্ধে লোকদের বের হওয়া সম্পর্কে। তাকে বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ যারা আমীরের বিরুদ্ধে বের হয়েছে তাদের সাথে বের হওয়া সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন? তিনি আমীরের বিরুদ্ধে বের হওয়ার বিষয়টিকে খুব খারাপ বলে জানালেন। তিনি বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ! রক্তপাত! রক্তপাত! আমি বের হওয়া সঠিক মনে করি না। আর এ ব্যাপারে কাউকে বের হতে নির্দেশও দিচ্ছি না। আমরা যে অবস্থায় আছি এতে ধৈর্যধারণ করা ফিতনার চেয়ে উত্তম। তাতে রক্তারক্তি হবে, মানুষের ধন-সম্পদ হালাল মনে করবে এবং মানুষের মান-সম্মানের অপমানিত করা হবে। এ ফিতনার দিনে মানুষ কেমন আছে তা তুমি ভালো করেই জানো। আমি বললাম, তাহলে বর্তমানে মানুষ কি ফিতনায় পতিত হয় নি? তিনি বললেন, যদিও তারা ফিতনায় পড়েছে, তবে তা নির্দিষ্ট ফিতনা। আর যখন তরবারি নিয়ে মানুষ নেমে পড়বে তখন ফিতনাটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এবং সব ধরণের শান্তির পথ বিনষ্ট হবে। তাই এ ফিতনায় ধৈর্যধারণ করা এবং দীনকে রক্ষা করা যুদ্ধের ফিতনায় পতিত হওয়ার চেয়ে উত্তম’।

কেউ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবে, ইসলামে সর্বপ্রথম মহাবিপদ ও মহাবিপর্যয় সংঘটিত হয়েছিল মুসলিমের একদল লোক হিদায়াতপ্রাপ্ত ইমাম উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বিরুদ্ধে বের হওয়ার মাধ্যমে। অতঃপর হিদায়াতপ্রাপ্ত ইমাম আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বিরুদ্ধে বের হওয়া। আমীরের আনুগত্য থেকে বের হওয়া মুসলিম উম্মাহ ও দীনের ক্ষতি ছাড়া তেমন কোনো সুফল বয়ে আনে না।

কর্তৃত্বশীল বা শাসকের প্রতি কল্যাণকামী হওয়া:

তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا : لِمَنْ؟ قَالَ : «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ» .

“কল্যাণ কামনাই দীন। আমরা বললাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য কল্যাণ কামনা” [মুসলিম, হাদীস নং ৫৫।]

শাসকের প্রতি জনগণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাদেরকে নসীহত করা ও তাদের কল্যাণ কামনা করা। নসীহত বলতে সৎ উপদেশ, আদেশ ও নিষেধ ইত্যাদি যা কিছু মানুষ বুঝে সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আমীরের জন্য নসিহত হলো তাকে সৎকাজের আদেশ দেওয়া, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা এবং তাকে কল্যাণকর কাজে পথ দেখানো ও অকল্যাণকর কাজ থেকে সতর্ক করা।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلَاثًا، وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلَاثًا، يَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ، وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا، وَأَنْ تَنَاصَحُوا مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ أَمْرَكُمْ» .

“আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলো তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক করবে না, সকলে আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না এবং আল্লাহ যাকে তোমাদের ওপর দায়িত্বে নিযুক্ত করেন তাকে সদুপদেশ দেওয়া ও তার কল্যাণ কামনা করা”। [মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৮২৫; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৩৮৮।]

এমনিভাবে তাদের সাথে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়ে চলা, অন্তরে মুনাফেকী গোপন না রাখা, তাদের সাথে ধোঁকাবাজি না করা বা তাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ না করা। জুবায়ের ইবন মুত‘ইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মিনায় মসজিদে খাইফে’ বলেছেন,

«ثَلاَثٌ لاَ يُغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ مُسْلِمٍ : إِخْلاَصُ العَمَلِ لِلَّهِ، وَمُنَاصَحَةُ ولاة الأمور، وَلُزُومُ جَمَاعَة المسلمين» .

“তিনটি বিষয়ে কোনো মুসলিম ব্যক্তির অন্তর যেন প্রতারিত না হয়: নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা, যাকে কর্তৃত্বের অধিকারী করা হয়েছে তাকে সদুপদেশ দেওয়া এবং তাদের মুসলিমের জামা‘আতের সাথে একত্রিত থাকা”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৩৩৫০; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৫৮; হাকেম, হাদীস নং ২৯৪।]

এছাড়াও তাদের তাওফিক ও সাহায্য কামনা করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করা। কেননা আমীরের বরকত সর্বসাধারণকেও শামিল করে। এ কারণেই ফুদাইল ইবন ‘ঈয়াদ রহ. বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন, ‘আমার যদি কবুল হওয়া কোনো দো‘আ থাকতো তবে তা আমি আমীরের জন্য রেখে দিতাম (তার জন্য করতাম)’। এটি ইমাম ফুদাইল ইবন ‘ঈয়াদ রহ.-এর গভীর জ্ঞানগর্ভ উক্তি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন