hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়্যতসমূহ

লেখকঃ সালেহ ইবন আব্দুর রহমান আল-হুসাইন, আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল-হাজ

১৬
চতুর্দশ অসিয়্যত: সুদ থেকে হুশিয়ারী
১- ইমাম মুসলিম জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে বিদায় হজের দীর্ঘ ভাষণ থেকে বর্ণনা করেন, এতে তিনি আরাফার দিনে নামিরায় প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজের ভাষণ উল্লেখ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ» .

“আর জাহেলী যুগের সুদ প্রথা বাতিল ঘোষিত হলো। এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম আমি আমাদের প্রাপ্য সুদ, যা আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ বাতিল ঘোষণা করলাম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]

২- আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবন মাজাহ ‘আমর ইবন আহওয়াস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজের ভাষণ উল্লেখ করেন। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَلَا وَإِنَّ كُلَّ رِبًا فِي الجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ، لَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ» .

“জেনে রেখো, জাহেলী যুগের সব সুদ বাতিল করা হলো। তোমাদের মালের মূলধন তোমাদের থাকবে। তোমরা অত্যাচার করবে না এবং অত্যাচারীতও হবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৩৪; তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৮৭। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০৫৫।]

৩- ইমাম দারেমী ও আবু ইয়া‘লা আল-মুসিলী আবু হুররাহ আর-রকাশীর সূত্রে, তিনি তার চাচার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আইয়্যামুত তাশরীকের মধ্য দিনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটের লাগাম ধরে ছিলাম। লোকজনকে তাঁর চারপাশ থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন তিনি তাঁর খুৎবায় বললেন,

«أَلَا إِنَّ كُلَّ رِبًا فِي الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ، أَلَا وَإِنَّ اللَّهَ قَدْ قَضَى أَنَّ أَوَّلَ رِبًا يُوضَعُ رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، لَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ، وَلَا تُظْلَمُونَ» .

“জেনে রেখো, জাহেলী যুগের সব সুদ বাতিল করা হলো। আল্লাহ সর্বপ্রথম আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ বাতিল করার ফয়সালা করেছেন। তোমাদের মালের মূলধন তোমাদের থাকবে। তোমরা অত্যাচার করবে না এবং অত্যাচারিতও হবে না”। [সুনান দারেমী, হাদীস নং ২৫৭৬; মুসনাদ আবু ইয়া‘লা আল-মুসিলী, হাদীস নং ১৫৬৯।]

যদিও এ হাদীসের সনদের ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে; তথাপি যদি এ সনদটি সহীহ হয় তাহলে এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলি যুগের সব সুদ রহিত ও হারাম করার ঘোষণা করেছেন। তিনি তাঁর পরিবার থেকেই সর্বপ্রথম শুরু করেছেন। এ ঘোষণা তিনি বিদায় হজের ভাষণে দু’বার উল্লেখ করেছেন। একবার আরাফার দিনে এবং আরেকবার আইয়্যামে তাশরীকের মাঝের দিনে।

ভূমিকা:

প্রাচীন ও আধুনিককালে সুদের বহুল পরিচিত রূপটি এমন যে, ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে সে উক্ত সময়ের বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করবে। লেনদেনের ক্ষেত্রে এ অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করাকে আরবীয় সুদী ব্যাংকিয়ে ‘খিদমাতুদ দাইন’ (ঋণের বিনিময়ে সেবা) বা ‘ফায়েদা’ (লাভ) বলা হয়। আবার সুদী ঋণকে ‘করদু বিফাইদাহ’ (লাভের বিনিময়ে ঋণ)ও বলা হয়। এ শব্দগুলো আরবী ভাষায় সুদী লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আরবী ছাড়া অন্যান্য ভাষায় সুদকে (Interest) বা লাভ বলে।

রিবার (সুদের) হুকুম:

সমস্ত আসমানী শরী‘আতে সুদ হারাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا١٦٠ وَأَخۡذِهِمُ ٱلرِّبَوٰاْ وَقَدۡ نُهُواْ عَنۡهُ١٦١﴾ [ النساء : ١٦٠، ١٦١ ]

“সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলমের কারণে আমি তাদের ওপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে তাদের বাধা প্রদানের কারণে। আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত, ১৬০-১৬১]

এছাড়া জাহেলী যুগের আইনেও সুদ হারাম ছিলো। যেমন, হামুরাবী ও মিসরী ফিরাউনদের আইনে সুদ হারাম হিলো। এমনকি আধুনিক ধর্মনিরেপক্ষ আইনেও সুদের কিছু প্রকার হারাম করা হয়েছে। যেমন ফ্রান্সের আইনের (১৯৩৫) নং ধারায় ও ইটালির ফৌজদারি আইনের (৬২২) নং ধারায় সুদকে হারাম করা হয়েছে।

আমাদের ইসলামী শরী‘আহ আইনে সুদকে হারাম করা হয়েছে। কুরআনে সুদখোরের ব্যাপারে এতো মারাত্মক ও ভয়াবহ শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে যা অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে বলা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّ﴾ [ البقرة : ٢٧٥ ]

“যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫] রবং আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ٢٧٨ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ فَأۡذَنُواْ بِحَرۡبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِ﴾ [ البقرة : ٢٧٨، ٢٧٩ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯] আর একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী অবশ্যই পরাজিত হবে।

সুদকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ» ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ : «الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ» .

“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে বিরত থাকবে। সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতের হক ব্যতীরেকে তাকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা, রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৬৬।]

যে ব্যক্তি সুদের লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ» ، وَقَالَ : «هُمْ سَوَاءٌ» .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব রক্ষক বা দলীল লেখক এবং সুদের সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন তিনি আরো বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৮।]

ব্যক্তি ও সমাজের ওপর সুদের ভয়াবহতা:

ব্যক্তির ও সমাজের ক্ষতির বিবেচনায় সুদ সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللَّهِ» .

“যখন কোনো সমাজে যিনা ও সুদ প্রকাশ পাবে তখন তারা যেন আল্লাহর আযাবকে নিজেদের উপর বৈধ করে নিলো (অর্থাৎ তাদের ওপর আল্লাহর আযাব অনিবার্য)”। [মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ২২৬১। তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।] এটি মূলত আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীরই প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ٢٧٨ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ فَأۡذَنُواْ بِحَرۡبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِ﴾ [ البقرة : ٢٧٨، ٢٧٩ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯]

আর ব্যক্তির ওপর সুদের ক্ষতির সর্বনিম্ন পর্যায় হলো জীবিকা নির্বাহে বরকত থেকে সে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِ﴾ [ البقرة : ٢٧٦ ]

“আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৬] এছাড়া সুদী কারবারে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ» ، وَقَالَ : «هُمْ سَوَاءٌ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব রক্ষক বা দলীল লেখক এবং সুদের সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন তিনি আরো বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৮।]

সুদের ক্ষতিসমূহ:

সুদের মারাত্মক ক্ষতির কারণে প্রাজ্ঞ শরী‘আত প্রণেতা সুদকে এতো কঠোরভাবে হারাম ও এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সতর্ক ও হুশিয়ারী করেছেন। সুদের বাহ্যিক ক্ষতিকর কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১- মানুষের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় আর পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ থেকে বারণ করা এবং এগুলোর সব উপায়-উপকরণ বন্ধ করা ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম বিধান।

২- সুদের কারণে কর্যে হাসানা বা উত্তম ঋণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কেননা সুদ প্রথা চালু থাকলে মানুষ কর্যে হাসানা দিতে বারণ করে। তখন অভাবী ব্যক্তি সুদ গ্রহণে বাধ্য হয়। আর আল-কুরআন সুদের ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি সদাকা প্রদানে উৎসাহিত করেছে। সূরা বাকারাতে দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করে ১৪ টি আয়াতের পরে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে হুশিয়ারী করে সাতটি আয়াত এসেছে।

আল্লাহ ﴿يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ﴾ “আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন” বলার সাথে সাথে ﴿وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِ﴾ “এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন” বলেছেন।

আবার সূরা আলে-ইমরানে তিনি

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُواْ ٱلرِّبَوٰٓاْ أَضۡعَٰفٗا مُّضَٰعَفَةٗ﴾ [ ال عمران : ١٣٠ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩০] বলার পর সদাকা সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ﴾ [ ال عمران : ١٣٤ ]

“যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে...”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪]

সূরা রূমে আল্লাহ তা‘আলা সুদ সম্পর্কে বলার পরপরই যাকাত সম্পর্কে বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن رِّبٗا لِّيَرۡبُوَاْ فِيٓ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ فَلَا يَرۡبُواْ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن زَكَوٰةٖ تُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُضۡعِفُونَ ٣٩ ﴾ [ الروم : ٣٩ ]

“আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩৯]

৩- সুদের ঋণ পরিশোধে অক্ষম ও অস্বচ্ছল লোকদের সংকীর্ণতা বেড়ে যায়। সুদের কিস্তি পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে কত আদালতে দেন দরবার ও জেল হাজত খাটতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

৪- সুদখোরের মধ্যে পার্থিব চরিত্র বাড়তে থাকে। সুদে অভ্যস্ত ব্যক্তির মধ্যে নানা অসচ্চরিত্র যেমন, খাইখাই, আত্মম্ভরিতা, নিষ্ঠুরতা, শোষণ ও লোভ-লালসা দিন দিন বাড়তে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّ﴾ [ البقرة : ٢٧٥ ]

“যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫]

৫- গরিবের ধন-সম্পদ একশ্রেণীর মানুষের কাছে গচ্ছিত হয়ে যায়।

এ কথা সকলের কাছেই স্পষ্ট যে, বর্তমান যুগে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ধ্বস ও অবক্ষয় সুদের কুপ্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

সুদকে হালাল মনে করা ও সুদী কারবার করা:

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান যুগে অনেক মুসলিম সুদ ভিত্তিক লেনদেনকে হালাল মনে করে এবং তারা এ লেনদেন চর্চা করে। এর কারণ হলো, কিছু আলেমের লেনদেনের হাকিকত সম্পর্কে উদাসীনতা ও সুদ হারামের উদ্দেশ্যকে বিবেচনা না করা। ফলে তারা ব্যাংকে লাভের বিনিময়ে ঋণ আদান-প্রদানকে অনুমতি দিয়েছেন এ যুক্তিতে যে, যে ঋণের বিনিময়ে উপকার সাধিত হয় তাতে আলেমদের মতানৈক্য রয়েছে। তারা একথা ভুলে যায় যে, ব্যাংক যাকে কর্জ বা ঋণ বলে তা ফকিহগণের কর্জ ঋণ নয়। কেননা শর‘ঈ পরিভাষায় কর্জ বা ঋণ হলো, দু’ ব্যক্তির মধ্যে উপকারের চুক্তি, যাতে সময় কোনো উপকরণ হিসেবে ধর্তব্য নয়। অন্যদিকে লাভের বিনিময়ে ব্যাংক যে লোন বা কর্জ দেয় তা দু’ব্যক্তির মাঝে বিনিময়ের চুক্তি, এতে সময় একটি উপকরণ হিসেবে কাজ করে। আর একেই ফিকহের পরিভাষায় সুদী বেচা-কেনা বলে। এর চেয়ে আর কী প্রমাণ লাগবে যে, আরব ব্যাংকসমূহ যখন অনারবী ভাষায় লেনদেন করে তখন একে তারা রিবা বলে, এমনিভাবে অনারবী মুসলিমরাও এ ধরণের লেনদেনকে রিবা নামেই জানে।

তাছাড়া আধুনিক ব্যাংক সুদী কারবারকে কৌশল করে ‘তাওয়াররুক’ বলে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মানুষের অসাবধানতা ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফকিহগণের ‘তাওয়াররুক’ কে সুদী লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন। অথচ ‘তাওয়াররুক’ কে কেউ কেউ জায়েয বলেছেন, আবার কেউ একে হারাম বলেছেন। সুদী কৌশলে যেভাবে লেনদেন করা হয় তার সাথে ‘তাওয়াররুক’ এর সাথে মিল নেই। তাদের এ কথাটি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর মতোই,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡبَيۡعُ مِثۡلُ ٱلرِّبَوٰاْۗ﴾ [ البقرة : ٢٧٥ ]

“এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫]

অসৎ কৌশল আর শর‘ঈ পরিত্রাণের উপায়ের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য; যদিও উভয়ের মধ্যে কিছুটা মিল পাওয়া যায়। এতে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে; কিন্তু আল-হামদুলিল্লাহ উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট। উভয় লেনদেনের উদ্দেশ্যের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। লেনদেনের উদ্দেশ্য যদি হয় রিবা তথা লাভ তাহলে তা অসৎ কৌশল; এটি শর‘ঈ পরিত্রাণের উপায় নয়।

এতে (তাওয়াররুকে) ঋণদাতা ব্যাংক ও ঋণগ্রহীতা লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট উপাদানের ওপর এ মর্মে একমত হয় যে, উভয় লেনদেনকারী সুদে জড়িত না হওয়ার নিয়্যতে শর‘ঈ চুক্তির ন্যায় চুক্তিবদ্ধ হবে। এ ধরণের লেনদেনে অর্থনীতি, সমাজ ও আচার-আচরণে সুদের ধ্বংসাত্মক কুফল স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়, যেমনিভাবে সরাসরি সুদী লেনদেনে অথবা লাভের বিনিময়ে ব্যাংক লোনে পাওয়া যায়। অতএব, আধুনিক ব্যাংক যাকে ‘তাওয়াররুক’ নামে অভিহিত করেছে, এ ধরণের লেনদেনে লেনদেনকারীর নিয়্যত ও সুদ হারামের শর‘ঈ উদ্দেশ্য পর্যবেক্ষণ করলে এর অসৎকৌশল স্পষ্ট হয়ে যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন