hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়্যতসমূহ

লেখকঃ সালেহ ইবন আব্দুর রহমান আল-হুসাইন, আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল-হাজ

সপ্তম অসিয়্যত: নারীদের সম্পর্কে অসিয়্যত
১- ইমাম তিরমিযী ও ইবন মাজাহ রহ. আমর ইবন আহওয়াস রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার পিতা (আহওয়াস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজে উপস্থিত হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হামদ ও সানা শেষে (উম্মতের উদ্দেশ্যে) কতিপয় উপদেশ প্রদান করলেন। এতে তিনি বললেন,

«أَلَا وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا، فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٌ عِنْدَكُمْ، لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئًا غَيْرَ ذَلِكَ، إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ، فَإِنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ فِي المَضَاجِعِ، وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا، أَلَا إِنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقًّا، وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقًّا، فَأَمَّا حَقُّكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ فَلَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ، وَلَا يَأْذَنَّ فِي بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ، أَلَا وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ» .

“শোনো, তোমরা স্ত্রীদের সাথে কল্যাণের অসিয়্যত গ্রহণ করো, (উপদেশ নাও)। তারা তো তোমাদের কাছে বন্দী (নিরুপায়)। তা ছাড়া আর কোনো বিষয়ে তোমরা তাদের মালিক নও; কিন্তু তারা যদি সুস্পষ্ট অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয় তবে ভিন্ন কথা। তারা যদি তা করে তবে তাদের শয্যায় তাদের আলাদা রাখবে, মৃদু প্রহার করবে, কঠোরভাবে নয়। তারপর তারা যদি তোমাদের আনুগত্য করে তবে আর তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করবে না (তাদেরকে তালাক দিবে না)। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে আর তোমাদের ওপরও স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, যাদের তোমরা অপছন্দ করো তাদের তোমাদের ঘরে স্থান দিবে না অথবা যাদের তোমরা অপছন্দ করো, তাদের গৃহে অনুমতি দিবে না। শোনো, তোমাদের ওপর স্ত্রীদের অধিকার হলো, তাদের ভরন-পোষণ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি উত্তম আচরণ করবে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬৩। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৫১।]

মুসনাদে শিহাব গ্রন্থে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, এটি ছিলো বিদায় হজের কুরবানীর দিনের ভাষণ।

২- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজের বিবরণ বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে আরাফাতের ময়দানের ভাষণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ» .

“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর দেয়া নিরাপত্তার মাধ্যমে গ্রহণ করেছ। আর তাদের লজ্জাস্থান তোমরা হালাল করেছ আল্লাহর কালেমা তথা ওয়াদার মাধ্যমে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]

এ দু’টি হাদীস সময়ের ব্যাপারে বাহ্যিকভাবে বিরোধ রয়েছে। এর বিরোধ নিরসনে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতের দিনে বিদায় হজের ভাষণে নারীর ব্যাপারে অসিয়্যত করেছেন, অতঃপর কুরবানীর দিনে তাঁর কুরবানীর সালাতের ভাষণেও নারীর সম্পর্কে অসিয়্যত করেছেন।

ইসলামের নারীর মর্যাদা:

মুসলিম সমাজে নারী পিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এক কন্যা হয়ে লালিত-পালিত হয়। বিয়ের পরে তার প্রিয় স্বামী তার যাবতীয় প্রয়োজন মিটায়, স্বামীর গৃহ তারই গৃহ হয়ে যায়, উভয়ে পরস্পর ভালোবাসা ও রহমত বিনিময় করে থাকেন। মা তার সম্রাজ্যে তার ছেলে-সন্তান, নাতী-নাতনী বা তার আত্মীয়কে তার কাধে-পিঠে করে যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণে লালন-পালন করে থাকেন।

পক্ষান্তরে কিছু সমাজে মানবরূপী হায়েনারা নারীদেরকে চোখের আকর্ষণ, ভোগ-বিলাস ও লালসার উপকরণ মনে করে, যারা তাদের থেকে ভোগ ছাড়া আর কিছুই আশা করে না অথবা তারা নারীকে সমান অধিকারের নামে পুরুষের অংশীদার বানিয়ে তার ঘরের সব কাজে অংশগ্রহণ করায়, এমনকি ঘর ও গাড়ির কিস্তি পরিশোধেও তাকে সমানহারে অংশগ্রহণ করতে হয় অথবা তাদের সন্তানেরা তাদেরকে বৃদ্ধ বয়সে দেখা-শুনার ঝামেলা এড়ানোর জন্য বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। এর চেয়ে তাদের আর কোন দায়-দায়িত্ব থাকে না!

পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার:

আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে তাওহীদের আলোচনার সাথেই পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢﴾ [ الاسراء : ٢٣، ٢٤ ]

“আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩-২৪]

কাযী আবু বকর ইবন ‘আরাবী আল-মালেকী রহ. ‘আহকামুল কুরআন’ এ উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা দীনের অন্যতম একটি রুকন। আর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কথা ও কাজ উভয় মাধ্যমে হতে হবে’।

পিতামাতা কাফির হলেও এমনকি তারা সন্তানকে কুফুরী করতে বাধ্য করলেও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَإِن جَٰهَدَاكَ عَلَىٰٓ أَن تُشۡرِكَ بِي مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٞ فَلَا تُطِعۡهُمَاۖ وَصَاحِبۡهُمَا فِي ٱلدُّنۡيَا مَعۡرُوفٗاۖ وَٱتَّبِعۡ سَبِيلَ مَنۡ أَنَابَ إِلَيَّۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ١٥﴾ [ لقمان : ١٥ ]

“আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শির্ক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে। আর অনুসরণ করো তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৫]

পাক-পবিত্র সুন্নাতে রাসূলে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও উত্তম আচরণের সর্বাধিক গুরুত্ব এসেছে। তাদেরকে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশী হকদার বলে ঘোষণা দিয়েছে। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,

يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي؟ قَالَ : «أُمُّكَ» قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ : «ثُمَّ أُمُّكَ» قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ : «ثُمَّ أُمُّكَ» قَالَ : ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ : «ثُمَّ أَبُوكَ» .

“হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, তারপর কে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপরে তোমার বাবা”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৮।] এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করাকে বাবার ওপর তিনবার অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

অন্যদিকে পিতামাতার সাথে অবাধ্যতাকে শরী‘আত কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত করেছে। আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ - وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ - أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ» ، قَالَ : فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا : لَيْتَهُ سَكَتَ .

“একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করাবো না? সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, তাহলো, আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখো, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া -এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।]

স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ:

আল-কুরআন বলেছে, বিয়ে-শাদীর মূল উদ্দেশ্য হলো স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রহমত বজায় থাকা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ﴾ [ الروم : ٢١ ]

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]

আল-কুরআন স্ত্রীর সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে। যদি কোনো কারণে স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন সুন্দরভাবে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِ﴾ [ النساء : ١٩ ]

“আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿فَإِمۡسَاكُۢ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ تَسۡرِيحُۢ بِإِحۡسَٰنٖ﴾ [ البقرة : ٢٢٩ ]

“অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৯]

আল্লাহ তা‘আলা নারীকে যে রূপ অধিকার দিয়েছেন তেমনি স্বামীর জন্যও নারীর ওপর অনুরূপ অধিকার সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [ البقرة : ٢٢٨ ]

“আর স্ত্রীদের জন্য তেমন অধিকার থাকবে যেমনি তাদের উপর (স্বামীর জন্য) দায়-দায়িত্ব রয়েছে প্রচলিত নিয়মে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৮]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রজ্ঞাময় এককথায় তাদের সাথে সদাচরণ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,

«أَكْمَلُ المُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، وَخَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِنِسَائِهِمْ» .

“পরিপূর্ণ ঈমানদার মুমিন হলো সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সুন্দর। তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম”। [তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬২, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي» .

“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম ব্যক্তি”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৮৯৫, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাদাভাবে তাদের অধিকার বর্ণনা করেছেন। মু‘আবিয়াহ ইবন হাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

«يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ : «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ : " وَلَا تُقَبِّحْ أَنْ تَقُولَ : قَبَّحَكِ اللَّهُ» .

“আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! স্বামীদের ওপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার? তিনি বললেন, যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) তা খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। তার চেহারায় মারবে না এবং তাকে গাল-মন্দ করবে না। আর তাকে ঘর থেকে বের করে দিবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪২। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, পরস্পরের ছাড় ও ত্যাগ ব্যতীত সুন্দর বসবাস ও সুখী জীবন সম্ভব নয়। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» .

“কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না; (কেননা) তার কোনো চরিত্র অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো (চরিত্র-অভ্যাস) টি সে পছন্দ করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৯।]

আর আল-কুরআন এ দিকেই ইশারা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বসবাসের আয়াতে বলেছে,

﴿فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا﴾ [ النساء : ١٩ ]

“আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

কন্যা সন্তানের প্রতি ভালোবাসা:

বিভিন্ন যুগে অনেক সমাজেই মানুষ পুত্র সন্তানকে বেশি ভালোবাসে এনং তাকে কন্যা সন্তানের ওপর অগ্রাধিকার থাকে। এজন্যই ইসলামী শরী‘আত সন্তানদের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। যেমন, ছেলে-মেয়ে উভয়কেই দান ও হেবার ক্ষেত্রে সমানাধিকার দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নু‘মান ইবন বাশীরের বাবা বাশীর আল-আনসারীকে দানের ক্ষেত্রে তার পুত্র সন্তানকে তার অন্য ভাইদের ওপর বিশেষ প্রধান্য দেওয়া দেখে বললেন,

«فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ» .

“আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, তুমি তোমার সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখো”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬২৩।]

সৎপূর্বসূরীরা ছেলে-মেয়ের মাঝে সবক্ষেত্রে সমতা বিধান করা ফরয বলেছেন এমনকি তাদেরকে চুম্বন করার ক্ষেত্রেও সমানহারে চুম্বন করতে হবে। এ ব্যাপারে ত্রুটি করা থেকে সুন্নতে নববী সতর্ক করেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أُحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَيْنِ : الْيَتِيمِ، وَالْمَرْأَةِ»

“হে আল্লাহ! আমি দুই দুর্বলের অর্থাৎ ইয়াতীম ও নারীর অধিকার (নস্যাৎ করা) নিষিদ্ধ করছি”। [সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৯১০৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৭৮।] অর্থাৎ ইয়াতীম ও নারীর অধিকার খর্ব করার গুনাহ থেকে আমি আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি।

এমনিভাবে তাদেরকে উত্তমরূপে লালন-পালন করার ব্যাপারে হাদীসে অনেক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কন্যা সন্তানের লালন-পালন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম থেকে আড়াল হবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ ابْتُلِيَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ، فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ، كُنَّ سِتْرًا لَهُ مِنَ النَّارِ» .

“যাকে এসব কন্যা সন্তানের দ্বারা কোনোরূপ পরীক্ষা করা হয় এবং সে তাদেরকে উত্তমরূপে লালন-পালন করে, তবে সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২৯।]

এরচেয়েও বড় অঙ্গিকার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, আর তা হলো কন্যা সন্তানের লালন-পালনকারী তাঁর সাথে জান্নাতে একত্রে থাকবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ» وَضَمَّ أَصَابِعَهُ» .

“যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা সন্তানকে প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, কিয়ামত দিবসে সে ও আমি এমন অবস্থায় আসব, এই বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একত্র করলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৩১।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন