মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজ পালন করেছি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হজের ভাষণে) আল্লাহর হামদ ও সানা করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা সম্ভবত এ বছরের পরে (আগামী বছর) আমাকে আর দেখতে পাবে না। তোমরা সম্ভবত এ বছরের পরে (আগামী বছর) আমাকে আর দেখতে পাবে না। তোমরা সম্ভবত এ বছরের পরে (আগামী বছর) আমাকে আর দেখতে পাবে না। এ কথা শুনে ইয়ামেনের আযদ গোত্রের এক লম্বা লোক দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা তাহলে কী করব? মুসনাদে আহমদের অন্য বর্ণনায় আছে, তাহলে আমাদের থেকে আপনি কী অঙ্গিকার চাচ্ছেন? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করবে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, তোমাদের রমযান মাসের সাওম পালন করবে, তোমাদের ঘরের (বাইতুল্লাহর) হজ পালন করবে, সন্তুষ্টচিত্তে যাকাত আদায় করবে এবং তোমাদের মধ্যে যিনি আমির হবেন তার অনুগত্য করবে, তাহলে তোমরা তোমাদের মহান রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২২৬০, শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, হাদীসটি সহীহ; কিন্তু এ সনদটি দ‘য়ীফ; কেননা এ সনদে ফারাজ ইবন ফাদালা –আততানুখী আশশামী- রয়েছেন, যিনি দয়ীফ। তিরমিযী, হাদীস নং ৬১৬, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
ইসলামে সালাতের মর্যাদা:
সালাত দীনের স্তম্ভ। এটি ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে দ্বিতীয় রুকন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাক্ষ্যদানের পরে সালাতের স্থান। এককথায় ইসলামের আমলসমূহের মধ্যে সালাত অন্যতম শ্রেষ্ঠ রুকন এবং দীন ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারিক শি‘আর তথা নিদর্শন। শামসুল আইম্মাহ সারখাসী আল-হানাফী রহ. বলেন, “যেহেতু আল্লাহর ওপর ঈমানের পরেই সালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর সালাত দীনের স্তম্ভ”। [শু‘আবুল ঈমান লিল-বাইহাকী, হাদীস নং ২৫৫০। ইবন হাজার আসকালানী রহ. ‘তালখীসুল হাবীর’ এ বলেন, “ইমাম নাওয়াবী রহ. ‘তানকীহ’ কিতাবে হাদীসটিকে মুনকার ও বাতিল বলেছেন। তবে তিনি ইমাম নাওয়াবীর কথাকে রদ করে বলেছেন, এ হাদীসের সনদে শুধু দুর্বলতা ও ইনকিতা‘ আছে, তবে বাতিল নয়। দেখুন, তালখীসুল হাবীর: ১/৩০৮। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। দেখুন, সিলসিলাতুল আহাদীসুদ-দয়ীফা: ১৪/১০৬৬।]
অতএব, কেউ তাবু টানাতে চাইলে তাকে শুরুতেই মূলস্তম্ভ স্থাপন করতে হবে। সালাত দীনের সর্বোচ্চ নিদর্শন ও আলামত। প্রত্যেক নবীর শরী‘আতেই সালাতের বিধান ছিলো।... ইমাম সারখাসী রহ. আরো বলেন, আমি আমার শাইখ উস্তাদ শামসুল আইম্মাহ আল-হালওয়ানী রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি আল্লাহর বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন,
﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤﴾ [ طه : ١٤ ]
“এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো”। [সূরা তা-হা, আয়াত: ১৪] অর্থাৎ আমি প্রত্যেক প্রেরিত নবীর ওপর অবতীর্ণ কিতাবে সালাতের কথা উল্লেখ করেছি। তিনি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় আরো বলেছেন,
“কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪২-৪৩]। এ আয়াত থেকে সালাতের তাগীদ সাব্যস্ত হচ্ছে। যখনই জাহান্নামে যাওয়ার কারণে হিসেবে সালাত পরিত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে তখনই বুঝা গেল যে তা ঈমানের দ্বিতীয়টি। কারণ, শাব্দিক অর্থে ‘মুসল্লী’ তো বলা হয় তাকে, যিনি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথমটির পরে থাকে। [মাবসূত, সুরুখসী, দারুল মা‘আরিফ, বৈরুত, প্রকাশকাল, ১৯৯৩ইং, পৃ. ১/৪।]
ইসলামে সালাতের অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরো স্পষ্ট প্রমাণিত হয় এভাবে যে, একমাত্র জ্ঞানশূন্য বা হায়েজ ও নিফাস ব্যতীত কোনো মুসলিমের থেকে কোনো অবস্থাতেই সালাত রহিত হয় না। অসুস্থ ব্যক্তির ওপরও সাধ্যানুযায়ী সালাত আদায় করা ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,
“কিন্তু যদি তোমরা ভয় কর, তবে হেঁটে কিংবা আরোহণ করে (আদায় করে নাও)”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৯] অর্থাৎ তোমাদের জন্য যেভাবে সালাত আদায় করা সহজ হয় সেভাবে সালাত আদায় করো।
সময়মত সালাত আদায় করাও ফরয। এমনকি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মোকাবিলারত থাকলেও ওয়াক্তমত সালাত আদায় করতে হবে; যদিও এতে নিজের চলা বা দৌড়ানো বা শত্রুকে অস্ত্রদ্বারা আঘাত করতে অসুবিধে হয় তবুও সালাত বাদ দেওয়া যাবে না।
সালাতে রয়েছে আল্লাহর সাক্ষাতপ্রত্যাশীর সাহচর্য, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দার প্রশান্তি ও আরাম, আল্লাহওয়ালা মুত্তাকি বান্দার সাহায্য ও সহযোগিতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৫]
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সালাতের ব্যাপারে স্পষ্ট গাফলাতি ও অবহেলা দেখা দিয়েছে। এটি প্রতিটি জীবন্ত আত্মাই লক্ষ্য করে। বর্তমান মুসলিমের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে ও তাদের অবস্থা দেখলে দুঃখ অনুশোচনায় হৃদয় ভরাক্রান্ত হয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতটি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে, আবার কেউ নিয়মিত না পড়ে অলসতা করছে, আবার কেউ সালাতের শর্ত ও ওয়াক্তমত আদায় না করে ত্রুটি বিচ্যুতি করছে। অন্যদিকে একাগ্রচিত্ততার সাথে সালাত আদায় না করার ত্রুটি অনেকের মধ্যেই লক্ষণীয়।
মুসলিমরা যদি যথাযথভাবে সালাত আদায় করতো, উত্তমরূপে সালাত কায়েম করতো তাহলে সালাত তাদের পারিপার্শ্বিক ও নৈতিক অবস্থার সংশোধন করার উপায় হতো। কেননা সালাত মানুষকে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। চিরন্তন সত্যবাদী মহান আল্লাহ বলেছেন,
“এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো”। [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]
বর্তমানে অনেক মুসলিমের দিকে তাকালে দেখা যায় যারা অনেকেই সালাত আদায় করে; কিন্তু তাদের মধ্যে সালাতের কোনো নিদর্শন ও প্রভাব নেই। এর মূল কারণ হলো অনেক মুসল্লীই শুধু অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বাহ্যিক নড়াচড়া ও উঠা বসা ইত্যাদি করে সালাত আদায় করছে। তারা সালাতের প্রকৃতরূপ ও খুশু‘র (একাগ্রচিত্ততা) সাথে তা আদায় করছে না। ফলে সালাতও তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল, পবিত্রতা ও সংশোধন করছে না।
(আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তিনি উত্তম সাহায্যকারী)
সালাতের ব্যাপারে উদাসীনতা স্বত্বেও এর গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম মুহূর্তে উম্মতকে সালাতের অসিয়্যত করে গেছেন। জীবনের শেষ সময় তাঁর যখন শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো তখন তাঁর শেষ কথা ছিলো সালাত! সালাত! হে আমার উম্মত সময়মত সালাত আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক, তিনি উম্মতের জন্য কতই না সুন্দর নসীহত করেছেন! আল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
সালাতের হুকুম:
ইবন রুশদ মালেকী রহ. বলেন, কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সালাত ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে। এটা এতোই স্পষ্ট ও জ্ঞাতব্য বিষয় যে, এ সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। [বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ, ইবন রুশদ আল-হাফীদ আল-মালেকী, ১/৯৬।]
“অতপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
শাওকানী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সালাত নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা। যেমন, বলা হয়, وقَّته فهو موقوت وقَّته فهو مؤقَّت অর্থাৎ আল্লাহ বান্দাহর ওপর সালাত ফরয করেছেন এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরয করেছেন। অতএব, শর‘ঈ ওযর যেমন, ঘুম বা ভুলে যাওয়া বা এরূপ অন্য কোনো কারণ ছাড়া কারো জন্য এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয়।
সালাত নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে আদায় না করে এর নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরয হওয়ার আরেকটি দলীল হলো, এটি ভয়-ভীতির সময়েও বান্দাহর ওপর থেকে রহিত হয় না। আল্লাহ মুসলিমের ওপর ভয়-ভীতি ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলারত অবস্থায়ও নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত করো এবং আল্লাহর জন্য বিনীত হয়ে দাঁড়াও। কিন্তু যদি তোমরা ভয় করো, তবে হেঁটে কিংবা আরোহণ করে (আদায় করে নাও)”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে বলেছেন,
অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মত আদায় করা। ঘুম বা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি শর‘ঈ ওযর ব্যতীত বিলম্বে সালাত আদায় করা কবীরা গুনাহ। বরং অনেক আলেমের মতে এভাবে বিলম্বে সালাত আদায়কারী ও সালাত তরককারীর একই হুকুম।
তাই হে মুসলিম ভাই, বিলম্বে সালাত আদায় থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনি আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তারা লোকদেরকে (সালাত) দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২]
২- সালাতে সক্রিয় থাকা ও সালাত আদায় করতে সক্ষম হওয়াতে খুশি হওয়া। কেননা সালাতে অলসতা ও সালাতকে বোঝা মনে করা মুনাফিকের আলামত। আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন,
“আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২]
৩- সালাতের জন্য নিম্নোক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা:
ক- সুন্দর কাপড় পরিধান করা।
খ- ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে শরী‘আত অনুমোদিত নফল সালাত আদায় করা।
গ- যেসব কারণে সালাতে মস্তিষ্ক বাজে চিন্তা করে তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। যেমন, খাবার সামনে রেখে সালাত আদায় করা বা অতি গরম বা অতি ঠাণ্ডায় সালাত আদায় করা।
৪- পুরুষের জন্য জামা‘আতে সালাত আদায় করা। সুস্থ ও মুকিম পুরুষের ওপর জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। জামা‘আতে সালাত আদায়ের দলীল হলো এক অন্ধ সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতূম) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, তার বাড়ি মসজিদ থেকে দূরে এবং এমন কোনো লোক নেই যে তাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। তাই তিনি বাড়িতে সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
যারা জামা‘আতে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। গৃহে নারী ও শিশু থাকায় তাদের হেফাযতের কারণে তিনি এ কাজ করেন নি। মূলত এটি ছিলো শর‘ঈ ওযর।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে যখন দেখি ভয়-ভীতির সময়ও জামা‘আতে সালাত আদায় করা রহিত হয় না। আল্লাহ ভীতি ও যুদ্ধের সময়ও জামা‘আতে সালাত আদায় করার বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন, অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবেন, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে, তখন তারা যেন আপনাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন আপনার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে। কাফিররা কামনা করে যদি তোমরা তোমাদের অস্ত্র-শস্ত্র ও আসবাব-পত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও তাহলে তারা তোমাদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কোন কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তাহলে অস্ত্র রেখে দেওয়াতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। আর তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছেন লাঞ্ছনা-দায়ক আযাব”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২]
এ আদেশ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাগণেদের কাছে স্থায়ীরূপে স্থির হয়েছিল; এমনকি তারা জামা‘আত তরককারীকে মুনাফিক মনে করতেন। কেউ অসুস্থ হলেও কষ্ট করে জামা‘আতে উপস্থিত হতেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথা শুনুন, আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে সে যেন ঐসব সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ করে যেসব সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের পন্থা-পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করেছেন। আর এসব সালাতও হেদায়াতের পন্থা-পদ্ধতি। যেমন এই ব্যক্তি সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত না হয়ে বাড়িতে সালাত পড়ে থাকে, অনুরূপ তোমরাও যদি তোমাদের বাড়িতে সালাত পড়ো তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পন্থা-পদ্ধতি পরিত্যাগ করলে। আর তোমরা যদি এভাবে তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পদ্ধতি পরিত্যাগ করো তাহলে অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলবে। ‘আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা মনে করতাম সর্বজনবিদিত মুনাফিক ব্যতীত কেউ-ই জামা‘আতে সালাত পড়া ছেড়ে দেয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এমন ব্যক্তি জামা‘আতে উপস্থিত হতো যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে সালাতের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪।]
৫- সালাতে করণীয় কাজে ও পঠিত সূরা ও দো‘আর ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসন্ধান করা। যাতে সালাতে মুসলিমের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীর পূর্ণ অনুসরণ হয়,
«وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي» .
“যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৮।]
৬- সালাতে খুশু‘ (একনিষ্ঠা) ও মনের একাগ্রচিত্ততা বজায় রাখা। এটি সালাতের অন্যতম আদব; বরং এটি সালাতের মূল ও রুহ। এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো, এসব উদ্দেশ্যেই শরী‘আত সালাতের বিধান বিধিবদ্ধ করেছেন। যেমন ব্যক্তির তাকওয়া ও অন্যান্য উত্তম আখলাক অর্জন এবং অসচ্চরিত্র ও সমস্ত অশ্লীল ও অন্যায় থেকে বিরত থাকা; বরং বান্দাহর একনিষ্ঠতা ও মনের একাগ্রচিত্ততা অনুযায়ী সালাতের সাওয়াব প্রত্যাশা করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“এমন অনেক লোক আছে যারা সালাত আদায় করে, কিন্তু তাদের সালাত পরিপূর্ণভাবে না হওয়ায় তারা পূর্ণ সাওয়াব প্রাপ্ত হয় না; বরং তাদের কেউ দশভাগের একভাগ, নয়ভাগের একভাগ, আটভাগের একভাগ, সাতভাগের একভাগ, ছয়ভাগের একভাগ, পাচঁভাগের একভাগ, চারভাগের একভাগ, তিনভাগের একভাগ বা অর্ধেক সাওয়াব প্রাপ্ত হয়ে থাকে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৯৬, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সুনান আল-কুবরা লিলবাইহাকী, হাদীস নং ৬১৬; তাবরানী ও তাহহাভী।]
হাদীসে এসেছে, দীন থেকে সর্বপ্রথম খুশু‘ (একনিষ্ঠতা) চলে যাবে। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“এ উম্মতের থেকে সর্বপ্রথম খুশু‘ (একনিষ্ঠতা) উঠিয়ে নেওয়া হবে; এমনকি তুমি কাউকে বিনয়াবনত পাবে না”। [হাইসামী রহ. বলেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার মু‘জাম আল-কাবীরে বর্ণনা করেছেন। সনদটি হাসান। মাজমাউয-যাওয়ায়েদ, ২/১৩৬।]
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
প্রথম অংশ বাহ্যিক বিনয়: সালাতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ধীর-স্থিরভাবে রাখা, শান্ত-শিষ্টভাবে সালাত আদায় করা এবং এদিক ওদিক না তাকানো।
দ্বিতীয় অংশ আভ্যন্তরীণ বিনয়: একাগ্রচিত্তে এমনাভাবে সালাত আদায় করা যেন মুসল্লি সালাতে পঠিত ও কৃত সব কথা ও কাজ অনুভব করতে পারে। এতে সে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই লাভবান হবে।
এছাড়া কিছু উপাদান ও কারণ রয়েছে যা সালাত খুশু‘ বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী এসব উপাদান ও কারণসমূহ একত্রিত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৬৯]
সালাতে একনিষ্ঠতা ও বিনয়ের উপকরণ ও উপায়সমূহ হলো:
ক- উত্তমরূপে ও পরিপূর্ণভাবে সালাতের প্রস্তুতি নেওয়া। যেমন, পরিপূর্ণভাবে অযু করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা এবং সালাতের উপযোগী সুন্দর জায়গা নির্বাচন করা।
খ- আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ানো ও তাঁর সাথে মুনাজাতের অনুভূতি অনুভব করা। কেননা সালাতে মুসল্লী তাঁর মালিক আল্লাহ তা‘আলার সামনে দণ্ডায়মান হয় এবং তাঁর সাথে গোপনে আলাপচারী করে।
গ- অন্তরের একাগ্রতা বজায় রাখার যথাযথ চেষ্টা করা।
ঘ- আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া (আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়া)।
ঙ- পঠিত কুরআনের আয়াত ও দো‘আর অর্থ বুঝার চেষ্টা করা।
চ- সালাতে চড়াচড়া এবং এর ধরণ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা। সালাতে এভাবে নড়াচড়া কীভাবে নিজেকে আল্লাহর সামনে অবনত ও বিনয়ী করা হয় তা চিন্তা-ভাবনা করা।
ছ- তারতীল তথা ধীর-স্থির ও সুন্দর আওয়াজে কিরাত পড়া।
জ- কিরাআত, দো‘আ ও যিকরের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহণ করে বৈচিত্র নিয়ে আসা। অর্থাৎ সবসময় একই আয়াত বা সূরা, সবসময় একই দো‘আ ও যিকির না করে অনুমোদিত বিভিন্ন দো‘আ ও যিকর পাঠ করা।
ঝ- সালাতের আগের ও পরের সুন্নাতসমূহ নিয়মিত আদায় করা।
ঞ- সাজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/414/3
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।