মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত তখন আবু বকর ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনসারদের কোনো একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন, তারা (সকলেই বসে বসে) কাঁদছেন। তাদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? তারা বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমাদের মজলিস স্মরণ করে কাঁদছি। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আনসারদের অবস্থা বললেন। বর্ণনাকারী বললেন, (তা শুনে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরের কিনারা দিয়ে মাথা বেঁধে (ঘর থেকে) বেরিয়ে আসলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। এ দিনের পর আর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন নি। তারপর হামদ ও সানা পাঠ করে সমবেত সহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, “আমি আনসারগণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি; কেননা তারাই আমার অতি আপনজন, তারাই আমার বিশ্বস্ত লোক। তারা তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে। তাদের যা প্রাপ্য তা তারা এখনো পায় নি। তাদের ভালো লোকদের উত্তম কার্যকলাপ সাদরে গ্রহণ করবে এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫১০।]
২- ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্তিম পীড়ায় আক্রান্তকালে) একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে, চাদরের দু-প্রান্ত দু’কাধে পেঁচিয়ে এবং মাথায় একটি পট্টি বেঁধে (ঘর থেকে) বের হলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। হামদ ও সানার পর বললেন, “হে লোক সকল! জনসংখ্যা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর আনসারগণের সংখ্যা ক্রমশ: হ্রাস পেয়ে যাবে! এমনকি তারা খাদ্য-দ্রব্যে লবনের মতো (সামান্য পরিমাণে) পরিণত হবে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করে সে ইচ্ছা করলে কারো উপকার বা অপকার করতে পারে, তখন সে যেন উত্তম আনসারদের ভালো কার্যাবলী গ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে ভুল-ত্রুটিকারীর ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮০০।]
৩- ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“ঈমানের চিহ্ন হলো আনসারদেরকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর চিহ্ন হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪।]
৪- ইমাম বুখারী ও মুসলিম বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, অথবা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“মুমিনরাই আনসারদেরকে ভালোবাসে এবং মুনাফিকরাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যারা তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫।]
৫- ইমাম মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে আলাপ করলেন এবং বললেন, “ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয়জন”। এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮৬।]
৭- ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় শিশু এবং মহিলাদের বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে আসতে দেখলেন। তিনি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি আল্লাহর নামে বলছি, তোমরা সব লোকদের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আমি আল্লাহর নামে বলছি, তোমরা সব লোকের তুলনায় আমার কাছে অধিক প্রিয়”। তিনি আনসারদের একথা বলেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫০৮।]
৮- ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“(হুনায়নের দিবসে) আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি কুরাইশ ও আরব গোত্রের মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই তিনি দেন নি। ফলে আনসারদের একদল নাখোশ হলো এবং তারা এব্যাপারে কথা বলাবলি করতে লাগলো। তাদের সমালোচনা বৃদ্ধি পেলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। আল্লাহর যথযথ হামদ ও সানা শেষে তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, “হে আনসারগণ! আমার ব্যাপারে তোমাদের কথাবার্তা (সমালোচনা) আমার কাছে পৌঁছেছে! তোমরা আমার ওপর রেগে অভিমানে মনে কষ্ট পেয়েছো! অথচ আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাই নি, যার পরে আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা ছিলে রিক্তহস্ত, যার পরে আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও শত্রু, যার পরে আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তখন আনসারগন জবাবে বললেন, অবশ্যই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই আমাদের ওপর অধিক ও উত্তম ইহসানকারী। তিনি বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি আমার প্রশ্নের জবাব দিবে না? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে কীসের উত্তর দিবো? আমাদের ওপর সব অনুগ্রহ ও অনুকম্পা তো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পারো, আর তোমরা তা সত্যই বলবে, আর তোমরা তা সত্যই বলবে যে, লোকেরা যখন আপনাকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিলো, আমরা তখন আপনার ওপর ঈমান এনেছি, সত্যায়ন করেছি, আপনি সহায়-সাহায্যহীন অবস্থায় এসেছিলেন, আমরা আপনাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি, আপনি বিতাড়িত অবস্থায় এসেছিলেন, আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি এবং আপনি নিঃস্ব অবস্থায় এসেছেন আমরা আপনাকে সহানুভূতি দিয়েছি। হে আনসারগণ! তোমরা কি তোমাদের মনে এমন কিছুতে কষ্ট পেয়েছো যা ছিল দুনিয়ার সামান্য সম্পদ, যেগুলো ওদেরকে প্রদান করার মাধ্যমে আমি তাদের অন্তরকে আকৃষ্ট করেছি, যাতে তারা ইসলাম গ্রহণ করে? আর আমি তোমাদেরকে তোমাদের ইসলামের ওপর সমর্পন করেছি? হে আনসারগণ! কিন্তু তোমরা কি এ কথার সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নবীকে সাথে নিয়ে। যে সত্তার হাতে মুহাম্মাদ এর জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি না আমি হিজরত করে তোমাদের কাছে আগমণ করেছি তা হলে তো আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোনো উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। হে আল্লাহ আপনি আনসারদেরকে রহমত করুন, আনসারদের সন্তানদেরকে ও তাদের সন্তানদের সন্তানদের রহমত করুন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আনসার সম্প্রদায় কাঁদলেন, এমনকি তারা দাঁড়ি ভিজিয়ে ফেললেন। তারা বলতে লাগলো, আমরা আল্লাহর রাসূলের বণ্টন ও অংশে সন্তুষ্ট। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে থেকে চলে গেলেন এবং তারাও যার যার স্থানে চলে গেলেন। [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১১৭৩০।]
আনসার কারা? কেন তারা এ মর্যাদাপ্রাপ্ত হলেন?
হাফেয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন, ( الأنصار ) আনসার শব্দটি ( ناصر ) নাসের এর বহুবচন। যেমন ( أصحاب ) আসহাব শব্দটি ( صاحب ) সাহেব-এর বহুবচন। অথবা শব্দটি ( نصير ) নাসির-এর বহুবচন, যেমন ( أشراف ) আশরাফ শব্দটি ( شريف ) শরীফ-এর বহুবচন। ( الأنصار ) আল-আনসার শব্দের মধ্যে লামটি নির্দিষ্টকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনসারকে বুঝানো হয়েছে। এরা আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোক। তারা পূর্বে ‘বনী কাইলা’ নামে পরিচিত ছিলো। একই মায়ের থেকে দু’টি গোত্র একত্রিত হলে তাদেরকে ‘বনী কাইলা’ বলে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আনসার নামকরণ করেছেন। ফলে তারা এ নামে পরিচিত লাভ করেন। তাদের সন্তান-সন্ততি, মিত্র ও দাস-দাসীদেরকেও আনসার হিসেবে অভিহিত করা হয়’। [ফাতহুল বারী, ১/৬৩।]
তাদের মর্যাদার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, আল্লাহ মানবজাতির পঠিত কুরআনে তাদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মন কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯]
আল্লাহর কসম, মানুষের মাঝে তাদের অস্তিত্ব বজায় থাকার এটি সর্বোত্তম গুণ। ব্যক্তি ও সমাজে তারা বিরাজমান না থাকার চেয়ে কুরআনে তাদের উল্লেখ আরো অধিক সম্মানজনক।
সাইয়্যেদ কুতুব রহ. ‘ফি যিলালিল কুরআন’-এ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ আয়াতে আনসারদের চারিত্রিক বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ও গুণাবলী স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ শ্রেণিটি এমন অতুলনীয় গুণে গুণান্বিত ছিলো এবং এতো উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলো যে, বাস্তব জগতে যদি তাদের অস্তিত্ব না থাকতো, তাহলে তারা মানুষের মনে কেবল কল্পনার আকারেই ডানা মেলে উড়ে বেড়াতো এবং কতগুলো শ্রেষ্ঠ উদাহরণ কল্পচিত্র হিসেবেই মানুষের হৃদয়ে বিরাজ করতো। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন,
“আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯]
যারা তাদের পূর্বেই এ আবাসভূমি ও ঈমানকে আবাসস্থল বানিয়েছিলো। অর্থাৎ হিজরতের আবাসভূমি মদীনা, যেখানে মুহাজিরদের আগেই আনসাররা বসবাস করতো এবং সেখানে ঈমানকেও তারা তাদের বাসস্থান বানিয়েছিলো, অর্থাৎ ঈমান যেনো তাদের বাড়িঘরে পরিণত হয়েছিলো। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কথা। ঈমানের সাথে আনসারদের যে ঘনিষ্ঠ অবস্থান ছিলো, সেটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। মূলত ঈমানই ছিলো তাদের ঘরবাড়ি ও বাসস্থান, এখানে তাদের অন্তরাত্মা বাস করতো ও বিশ্রাম নিতো, যেমন মানুষ নিজেদের বাড়িঘরে বাস করে ও বিশ্রাম নেয়।
“আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯]
মদীনার আনসারগণ মুহাজিরদেরকে যেভাবে সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছেন মানবেতিহাসে এ ধরণের ঘটনা সত্যিই বিরল। এতো ভক্তি ও সমাদর, এতো মুক্তহস্তে বদান্যতা, এমন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অংশগ্রহণ, আশ্রয়দান ও দায়ভার বহনে এতো প্রতিযোগিতা ইতিহাসে সত্যিই নজিরবিহীন। আর মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯] অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যেমন ‘ফাই’; এসবের ব্যাপারে তাদের মনে লেশমাত্রও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতো না।
“নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯] নিজের প্রয়োজন থাকা সত্তেও অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া সর্বোচ্চ স্তরের মহানুভবতা। আনসাররা এ স্তরেই উপনীত হয়েছিলো, মানবেতিহাসে যার কোনো উপমা নেই। সকল অবস্থা ও ক্ষেত্রেই তাদের এ মহত্ত্ব উদারতা অব্যাহত ছিলো, যা প্রাচীন ও আধুনিক মানুষের আচরণে একটা অলৌকিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
“যাদের মন কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯] বস্তুত মনের ও প্রবৃত্তির সংকীর্ণতা প্রতিটি কল্যাণকর কাজের প্রধান বাধা। কেননা কল্যাণকর কাজ মাত্রই হচ্ছে তা কোনো না কোনো প্রকারের ত্যাগ স্বীকারের নামান্তর। হয় তা আর্থিক বদান্যতা, নচেত অন্তরে সহানুভূতির বদান্যতা, নচেৎ চেষ্টা সাধনার বদান্যতা, অথবা প্রয়োজনে জীবন ও সময়ের ত্যাগ স্বীকার করা। যে ব্যক্তি এতোটা সংকীর্ণমনা ও স্বার্থপর যে, সব সময় কিছু না কিছু নিতে চায়, কিছুই দিতে চায় না, সে কখনো কোনো কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি মনের এ সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতার উর্ধ্বে ওঠতে পারে। সে কল্যাণকর পথের এ বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং দান ও ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। এটাই হছে প্রকৃত সফলতা।
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা আনসারদের পাঁচটি সুউচ্চ গুণাবলী অন্তর্ভুক্ত করে। সেগুলো হচ্ছে:
১- ঈমানকে তারা আবাসস্থান বানিয়েছিলো। অর্থাৎ মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই তারা ঈমান এনেছিলো।
২- মুহাজিদরদেরকে ভালোবেসেছিলো। ভিনদেশীদের প্রতি সাধারণ মানুষের যেরকম বিরূপভাব থাকে তারা মুহাজিদরদের প্রতি তেমন বিরূপভাব পোষণ করেন নি; বরং তারা তাদেরকে ভালোবেসেছিলেন।
৩- তাদের অন্তর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত ছিলো। পরদেশীরা সেখানে এসে পার্থিব যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছিলো সে ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনোরূপ ঈর্ষা ছিলো না।
৪- তারা অন্য ভাইকে নিজের ওপরে অগ্রাধিকার দিতেন, যদিও তাদের নিজেদের অভাব থাকতো।
৫- অন্তরের কার্পণ্য ও স্বভাবজাত কৃপণতা থেকে নিজেরা মুক্ত ছিলেন।
বাস্তবিকপক্ষেই যার মধ্যে এসব গুণাবলী পাওয়া যাবে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা ও তাকে ভালোবাসা অধিক যোগ্য। তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা ও ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। আর ভালোবাসা ও রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এরূপ উপদেশ দেওয়াই হচ্ছে যথার্থ।
আনসারদের অধিকারসমূহ:
১- তাদেরকে সম্মানের সাথে ভালোবাসা, তাদের প্রশংসা করা, তাদের আপত্তিকর সমালোচনা করা হলে তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যোত্তর দেওয়া এবং উপরে বর্ণিত হাদীসের উল্লিখিত তাদের সৎগুণাবলী মানুষের মাঝে প্রচার-প্রসার করা। কেননা তাদের ভালোবাসা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইসলামের ভালোবাসার প্রমাণ।
ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “ঈমানের আলামত হলো আনসারগণকে ভালোবাসা আর নিফাকের আলামত হলো তাদেরকে ঘৃণা করা”। ইসলামের প্রাথমিকযুগে আনসাররা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যেভাবে অকৃত্রিম ভালোবেসেছেন তা ঈমানের আলামত হিসেবে গণ্য হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদেরকে ঘৃণা করবে এবং তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে তার অন্তরে আল্লাহর নির্ধারিত অত্যাবশ্যকীয় ঈমান থাকবে না।
তাদের সবাইকে ভালোবাসতে হবে, কোনো পার্থক্য করা যাবে না। ইবন হাযাম রহ. ‘আল-ইহকাম’ গ্রন্থে বলেন, ‘এমনিভাবে আনসারদের প্রতি ভালোবাসা সকল আনসারদের প্রতি মহান আল্লাহর এক নি‘আমত, যা অন্যদের প্রতি বর্তাবে না। আর তাদের সবাইকে সমভাবে ভালোবাসতে হবে। এ ব্যাপারে একজনকে অন্যের ওপর প্রধান্য দেওয়া যাবে না।
২- উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী তাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও ঈর্ষা পোষণ করা যাবে না। এমনকি কেউ কেউ তাদের প্রতি বিদ্বেষকে কবীরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করেছেন। ইবন হাজার হাইতামী রহ. তার ‘আয-যাওয়াজের’ কিতাবে বলেছেন, চারশত চৌষট্টি ও পঁয়ষট্টিতম কবীরা গুনাহ হলো, আনসারগণকে ঘৃণা করা ও কোনো সাহাবীকে গালি দেওয়া। ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে বর্ণনা করেছেন,
«من علامة الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، ومن علامة النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ» .
“ঈমানের চিহ্ন হলো আনসারদেরকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর চিহ্ন হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪।]
ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে বলেছেন,
“মুমিনরাই আনসারদেরকে ভালোবাসে এবং মুনাফিকরাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যারা তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫।]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬।]
৩- তাদের কারো সামান্যতম ইহসান থাকলেও তা গ্রহণ করা এবং এর ওপর সন্তুষ্ট থাকা আর তাদের কারো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা ক্ষমা করে দেওয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করে সে ইচ্ছা করলে কারো উপকার বা অপকার করতে পারে, তখন সে যেন উত্তম আনসারদের ভালো কার্যাবলী গ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে ভুল-ত্রুটিকারীর ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮০০।]
৪- আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং ইসলামের সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে তারা যেভাবে সাহায্য করেছেন সে সুন্দর গুণগুলো গ্রহণ করে নেওয়া, তাদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব সুউচ্চ গুণাবলীতে গুণান্বিত করেছেন সেগুলো গ্রহণের মাধ্যমে অন্তরের সৎগুণাবলীর অনুশীলন করা। কেননা ভালোবাসার অর্থই হলো কাজে-কর্মে ও আমলের মাধ্যমে অংশীদার হওয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/414/6
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।