hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়্যতসমূহ

লেখকঃ সালেহ ইবন আব্দুর রহমান আল-হুসাইন, আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল-হাজ

১৫
ত্রয়োদশ অসিয়্যত: গোলযোগ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে সতর্কীকরণ
ইমাম বুখারী ও মুসলিম জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিদায় হজের দিনে বলেছেন,

«اسْتَنْصِتِ النَّاسَ» فَقَالَ : «لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ» .

“তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও”, তারপর তিনি বললেন, “আমার পরে তোমরা কাফির (এর মতো) হয়ে যেও না যে, একে অপরের গর্দান কাটবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫।]

ভূমিকা:

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ যামানায় যে সব ফিতনা-ফাসাদ, পাপাচার ও যুলুম-অত্যাচার সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে ভবিষৎ বাণী করেছেন তিনি নৈরাজ্য, রক্তপাত ও হত্যা সম্পর্কেও আমাদেরকে অগ্রীম সংবাদ দিয়েছেন তিনি বলেছেন,

«لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ العِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ - وَهُوَ القَتْلُ القَتْلُ» .

“কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভুমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে (হারজ অর্থ খুন-খারাবী)”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৭।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ الْهَرْجُ» قَالُوا : وَمَا الْهَرْجُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : «الْقَتْلُ الْقَتْلُ» .

“কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না হারজ বৃদ্ধি পাবে সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারজ কী? তিনি বললেন, হারজ হলো খুনখারাবী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৭।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَدْرِي الْقَاتِلُ فِي أَيِّ شَيْءٍ قَتَلَ، وَلَا يَدْرِي الْمَقْتُولُ عَلَى أَيِّ شَيْءٍ قُتِلَ، فَقِيلَ : كَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ؟ قَالَ : «الْهَرْجُ» .

“ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় মানুষের মাঝে এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কী অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কী অপরাধে সে নিহত হয়েছে প্রশ্ন করা হল, এমন যুলুম কিভাবে হবে? তিনি উত্তরে বললেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯০৮ ও ২৯০৯।]

মানুষ হত্যা করা কুফুরীর পরের কবীরা গুনাহ। সুতরাং “মাসলাহা রাজেহা” প্রাধান্যপ্রাপ্ত স্বার্থ ব্যতীত কারও হত্যা বৈধ নয়। অর্থাৎ কাউকে হত্যা করার মাধ্যমে যদি তার হত্যা করার চেয়েও বড় কোনো অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণ হয়, কেবল সে অবস্থায় তাকে হত্যা করা যাবে; অন্যথায় কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا﴾ [ المائ‍دة : ٣٢ ]

“এ কারণেই, আমরা বনী ইসরাঈলের ওপর এ হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩২]

এ আয়াতে কারীমা থেকে আলেমগণ নিম্নোক্ত মূলনীতি গ্রহণ করেছেন: ‘কোনো আত্মাকে ধ্বংস না করাই হলো মূল’।

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, শরী‘আতের মূল হলো, আল্লাহ তা‘আলা হক বা যথাযথ নীতি ব্যতীত কাউকে হত্যা করা হারাম করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا﴾ [ المائ‍دة : ٣٢ ]

“এ কারণেই, আমরা বনী ইসরাঈলের ওপর এ হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩২] সুতরাং হত্যার বিনিময়ে হত্যা অথবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণে হত্যা ছাড়া কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়। জমিনে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করা, যেমন কোনো মুসলিম তার দীন ছেড়ে দেওয়া এবং ডাকাতি করা ইত্যাদি। [কায়েদাতুন মুখতাসারা ফি কিতালিল কুফফার ওয়ামুহাদানাতিহিম, ইবন তাইমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ২০৩-২০৪]

ইবন দাকীক আল-‘ঈদ রহ. যুদ্ধ থেকে বিরত কাফিরকে হত্যা না করার কারণ সম্পর্কে বলেন, সম্ভবত শরী‘আতের মূল হলো কোনো আত্মাকে নষ্ট না করা। আর জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হত্যা করা জায়েয করা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি যুদ্ধ করে না এবং সাধারণত যুদ্ধের জন্য উপযোগীও না, তারা যুদ্ধকারীদের মতো জমিনে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি করে না, ফলে তাদের মূল বিধান হলো তাদেরকে হত্যা না করা। [ইহকামুল আহকাম থেকে সংগৃহীত]

কুরআনের অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও সর্বাধিক অপছন্দনীয় অন্যায় হলো রক্তপাত, জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি ও অহংকার করে নিজের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা করা আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে কুরআনের একশত বিশ বারেরও অধিক বলেছেন।

কুরআনের অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, শরী‘আত মূলত তিনটি অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা হিসেবেই কিসাস, হুদুদ ও জিহাদে হত্যা অনুমোদন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ١٧٩﴾ [ البقرة : ١٧٩ ]

“আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৯]

আরও বলেছেন,

﴿إِنَّمَا جَزَٰٓؤُاْ ٱلَّذِينَ يُحَارِبُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسۡعَوۡنَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓاْ﴾ [ المائ‍دة : ٣٣ ]

“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জমিনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো, তাদেরকে হত্যা করা হবে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩৩]

আরও বলেছেন,

﴿وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ لَّفَسَدَتِ ٱلۡأَرۡضُ﴾ [ البقرة : ٢٥١ ]

“আর আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই জমিন ফাসাদপূর্ণ হয়ে যেত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫১]

অন্যদিকে মুসলিমকে হত্যা করার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সতর্ক করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَن يَقۡتُلۡ مُؤۡمِنٗا مُّتَعَمِّدٗا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدٗا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمٗا٩٣﴾ [ النساء : ٩٣ ]

“আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে আর আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৩]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا التَقَى المُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ فِي النَّارِ» ، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المَقْتُولِ قَالَ : «إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ» .

“দু’জন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ» ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ : «الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ» .

“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে বিরত থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতের হক ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা, রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সচ্চরিত্রের অধিকারিনী মুমিন নারীদের ওপর অপবাদ দেওয়া”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৬৬।]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَنْ يَزَالَ المُؤْمِنُ فِي فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ، مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا» .

“মুমিন ব্যক্তি তার দীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্তমনা থাকে, যে পর্যন্ত সে কোনো হারাম (অবৈধ) রক্তপাতে লিপ্ত না হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৬২।]

এ কারণেই ইমামের বিরুদ্ধে বের হওয়ার বিদ‘আত ইসলামে সর্বাধিক বিপর্যয় ছিলো। ইসলামের ইতিহাসে যুগে যুগে বিবিধ জঘন্য বিদ‘আত সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু তন্মধ্য থেকে একটি বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য সহীহ হাদীসে কঠোরভাবে হুশিয়ারী ও সতর্ক করেছেন। তা হলো, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে খারেজীদের বের হওয়ার বিদ‘আত। তারা অন্যান্য মুসলিমকে কাফির মনে করে এবং তাদেরকে হত্যা করা বৈধ মনে করে।

হাদীস শরীফে এসেছে,

«وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي، يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا، وَلَا يَتَحَاشَى مِنْ مُؤْمِنِهَا، وَلَا يَفِي لِذِي عَهْدٍ عَهْدَهُ، فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ» .

“আর আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ওপর আক্রমণ করে, তাদের ভালো ও মন্দ সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করে, এমনকি তাদের মুমিনকেও রেহাই দেয় না এবং তাদের প্রতি প্রদত্ত (নিরাপত্তার) চুক্তিও পূরণ করে না, আমার সাথে সে ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি সে ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত (দলে) নই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৮।]

অপ্রিয় বাস্তবতা:

বর্তমান বিশ্বে কিছু মুসলিম রক্তপাতকে গুরুত্বহীন মনে করে। তাদের অবস্থা অবলোকন করলে অন্তরাত্মা অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে সোমালিয়া, সুদান, ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিবর্তে তারা নিজেরা নিজেদের ভাইদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে আছে।

মুসলিম বিশ্বের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় যেন তারাই হাদীসে বর্ণিত সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যা। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى َتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ - وَهُوَ القَتْلُ القَتْلُ» .

“কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে হারজ অর্থ খুন-খারাবী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৭।]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَدْرِي الْقَاتِلُ فِي أَيِّ شَيْءٍ قَتَلَ، وَلَا يَدْرِي الْمَقْتُولُ عَلَى أَيِّ شَيْءٍ قُتِلَ، فَقِيلَ : كَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ؟ قَالَ : «الْهَرْجُ » .

“ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় মানুষের মাঝে এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কী অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কী অপরাধে সে নিহত হয়েছে। প্রশ্ন করা হলো, এমন যুলুম কীভাবে হবে? তিনি উত্তরে বললেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯০৮ ও ২৯০৯।]

অতএব, আলেম ও দা‘ঈদের উচিত এ ভয়ঙ্কর ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা, তাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় উম্মতকে যেভাবে গুরুত্বের সাথে ফিতনা-ফাসাদ থেকে সতর্ক করেছেন সেভাবে তাদেরকেও সাবধান করা।

ইসলামী শরী‘আত জীবন সংরক্ষণে যথার্থ ভূমিকা রাখে:

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি ইসলামকে তাদের দীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ দীন তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা দিয়েছে। আল্লাহ মক্কায় মুশরিকদের ওপর তাঁর নিরাপত্তার নি‘আমতকে স্মরণ করে দিয়ে বলেছেন,

﴿أَوَ لَمۡ نُمَكِّن لَّهُمۡ حَرَمًا ءَامِنٗا يُجۡبَىٰٓ إِلَيۡهِ ثَمَرَٰتُ كُلِّ شَيۡءٖ﴾ [ القصص : ٥٧ ]

“আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ এর সুব্যবস্থা করি নি? সেখানে সব ধরনের ফলমূল আমদানী করা হয়”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৫৭]

এভাবে দীন ইসলাম নিরাপত্তার পৃষ্ঠপোষক, সহায়ক ও আবাসস্থল। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿أَوَ لَمۡ يَرَوۡاْ أَنَّا جَعَلۡنَا حَرَمًا ءَامِنٗا وَيُتَخَطَّفُ ٱلنَّاسُ مِنۡ حَوۡلِهِمۡ﴾ [ العنكبوت : ٦٧ ]

“তারা কি দেখে না যে, আমরা ‘হারাম’ কে নিরাপদ বানিয়েছি অথচ তাদের আশপাশ থেকে মানুষদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়?”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৬৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿فَلۡيَعۡبُدُواْ رَبَّ هَٰذَا ٱلۡبَيۡتِ٣ ٱلَّذِيٓ أَطۡعَمَهُم مِّن جُوعٖ وَءَامَنَهُم مِّنۡ خَوۡفِۢ٤﴾ [ قريش : ٣، ٤ ]

“অতএব, তারা যেন এ গৃহের রবের ইবাদাত করে, যিনি ক্ষুধায় তাদেরকে আহার দিয়েছেন আর ভয় থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন”। [সূরা আল-কুরাইশ, আয়াত: ৩-৪]

মানুষ যেসব বালা-মুসিবত ও ভয়-ভীতিতে পতিত হচ্ছে তা মূলত তাদেরই হাতের কামাই। এ কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿وَضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلٗا قَرۡيَةٗ كَانَتۡ ءَامِنَةٗ مُّطۡمَئِنَّةٗ يَأۡتِيهَا رِزۡقُهَا رَغَدٗا مِّن كُلِّ مَكَانٖ فَكَفَرَتۡ بِأَنۡعُمِ ٱللَّهِ فَأَذَٰقَهَا ٱللَّهُ لِبَاسَ ٱلۡجُوعِ وَٱلۡخَوۡفِ بِمَا كَانُواْ يَصۡنَعُونَ ١١٢﴾ [ النحل : ١١٢ ]

“আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিযিক বিপুলভাবে আসত অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নি‘আমত অস্বীকার করল তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন”। [সূরা: আন-নাহল, আয়াত: ১১২]

অতএব, নিরাপত্তার দ্বারাই জনস্বার্থ অর্জিত হয় নিরাপত্তা স্থির হলে, বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এবং যারা মানুষকে ভয়-ভীতি দেখায় তাদেরকে নিঃশেষ করে দিলে মানুষের সর্বাধিক উপকার সাধিত হবে।

শত্রুর ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকা:

একথা সর্বজন বিদিত যে, আমাদের শত্রুরা মুসলিম দেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকা কখনোই চায় না। তারা কখনোই চায় না যে, সেখানে জীবনের নিরাপত্তা থাকুক, ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়ন হোক, আল্লাহর দিকে দাওয়াত চালু থাকুক এবং সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। তারা আশা করে মুসলিম দেশে যেন সর্বদা ফিতনা-ফাসাদ, রাহাজানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকে। এজন্য তারা মুসলিমদেরকে নানা দলে বিভক্ত করতে, তাদের মধ্যে মতানৈক্য ও ঝগড়া-ঝাটি সৃষ্টি করতে একদল সরল মুসলিম ও স্বার্থান্বেষী মানুষকে কাজে লাগিয়ে সুযোগের সন্ধানে থাকে এবং সময় মতো এ সুযোগকে সদ্ব্যবহার করে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, মুসলিমের মধ্যকার দীন ও দুনিয়ার যাবতীয় সমস্যা তাদের মধ্যে বিভক্তি, মতানৈক্য, শয়তানের প্ররোচনা, মুসলিম ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষের ফলেই সংঘটিত হয়েছে।

আল্লাহই সাহায্যকারী, তিনিই আমাদের যথেষ্ট ও তিনি উত্তম অভিভাবক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন