মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১– ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ গ্রন্থে জা‘ফর আস-সাদিক থেকে, তিনি তার পিতা মুহাম্মাদ ইবন বাকের থেকে, তিনি জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে নামিরায় তাঁর দীর্ঘ খুৎবায় বলেছেন,
“আমি তোমাদের মাঝে যে জিনিস রেখে যাচ্ছি তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কি বলবে? তারা বললো, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছেন, আপনার দায়িত্ব আদায় করেছেন এবং নসীহত বা কল্যাণ কামণা করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
২- ইমাম বায়হাকী ও হাকিম রহ. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন:
“আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ (হাদীস)”। [সুনান বাইহাকী, হাদীস নং ২০৩৩৬; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৩১৮। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, ‘ইমাম বুখারী ইকরামা রহ.-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন, এমনিভাবে ইমাম মুসলিম আবু উয়াইস ও অন্যান্য রাবীগণ মুত্তাফাক আলাইহির রাবী’। ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন, ‘ইমাম বুখারী ইকরামা রহ. এর হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেছেন, এমনিভাবে ইমাম মুসলিম আবু উয়াইস দ্বারাও দলিল পেশ করছেন। বুখারী ও মুসলিমে এ হাদীসের আসল রয়েছে। তালখীস, হাদীস নং ৩১৮।]
৩- ইমাম বায়হাকী ও হাকিম রহ. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা এ দুটো আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না। তাহলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত (হাদীস)। আর এ এ দুটি বস্তু কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ না তোমরা আমার সাথে হাউজে কাউসারে মিলিত হচ্ছ”। [মুসতাদরাক হাকিম; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৯।]
৪- মুয়াত্তা মালিকে এসেছে, তিনি বলেন, আমার কাছে এ মর্মে হাদীস পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, এ দুটো আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তাহলো: আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত (হাদীস)”। [মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল ক্বদর, হাদীস নং ৩, (২/৮৯৯)।]
৫- ইমাম মুসলিম রহ. যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘খুম’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা শেষে ওয়াজ-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব (আমি মরে যাবো)। আমি তোমাদের কাছে মজবুত দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি, এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন); এতে হিদায়াত এবং নূর (আলো) রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ করো, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। অতঃপর বললেন, আর আমার আহলে বাইত। আমি আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, হে যায়েদ! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত কারা? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ কি আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাঁর স্ত্রীগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইতে তারাই, যাদের ওপর যাকাত গ্রহণ হারাম। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, এ সব লোক কারা? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরা আলী, ‘আকীল, জাফর ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের পরিবার-পরিজন। বর্ণনাকারী হুসাইন রহ. বললেন, বললেন, এদের সবার জন্য কি যাকাত গ্রহণ হারাম? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]
ভূমিকা:
অহীর দুপ্রকার কুরআন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস সম্পর্কে এ অসিয়্যতটি কুরআনের অনেক আয়াতে বর্ণিত অসিয়্যতের মতোই। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৮-১২৯]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিলো”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]
“তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয় নি এবং বিপথগামীও হয় নি। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল অহী, যা তার প্রতি অহীরূপে প্রেরণ করা হয়”। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২-৪]
অতএব, কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ (তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থন) দীন ইসলামের আকীদা ও বিধি-বিধানের মূল উৎস। এদু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরলে মুসলিম কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। ইমাম মুনাভী ‘ফাইদুল কাদীর’ এ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
“আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা এ দুটো আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না। তাহলো: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত (হাদীস)। আর এ দু’টো কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না, তোমরা এভাবে তা আঁকড়ে ধরবে যতক্ষণ না তোমরা আমার সাথে হাউজে কাউসারে মিলিত হবে”। [মুসতাদরাক হাকিম, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৯।]
ইমাম মুনাভী রহ. বলেন, ‘কুরআন ও সুন্নাহ ইসলামের মূল উৎস, যা এড়িয়ে চলার উপায় নেই এবং এ দু’টি ব্যতীত কোনো হিদায়াতও নেই। যে ব্যক্তি এ দু’টি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে এমমাত্র সেই পাপমুক্ত হবে ও নাজাত পাবে। এ দু’টি সত্য-মিথ্যার স্পষ্ট পার্থক্যকারী এবং সত্য ও মিথ্যার বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে এ দু’টি প্রমাণিক নিয়ন্ত্রক। অতএব, কুরআন ও সুন্নাহ দিকে ফিরে যাওয়া দীনের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞাত ও নিশ্চিত ফরয’।
কুরআন ও সুন্নাহতে রয়েছে হিদায়াত ও নূর। এ দু’টি আল্লাহর হিফাযতে সংরক্ষিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯] এতে রয়েছে সব সমস্যার সমাধান, সর্বস্থান ও সর্বকালে সমস্ত সমস্যা মোকাবলায় প্রজ্ঞাময় দিক নির্দেশনা। এ দু’টি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের সর্বদিক ব্যাপ্ত করে আছে।
“তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে সব কাজই শিক্ষা দেন; এমনকি পেশাব পায়খানার পদ্ধতিও! তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন পায়খানার বা পেশাবের সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে, ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা কাজ করতে, তিনটি টিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে এবং গোবর বা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২।]
আল-কুরআনের মর্যাদা:
আল-কুরআন নিজের মর্যাদা নিজে যেভাবে বর্ণনা করেছে কেউ সেভাবে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করতে সক্ষম হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর যদি এমন কোনো কুরআন হত, যার দ্বারা পাহাড়সমূহকে চলমান করা যেত অথবা জমিনকে টুকরো-টুকরো করা যেত অথবা তার দ্বারা মৃতকে কথা বলানো যেত (তবে সেটা এই কুরআনই হত, আর তারা ঈমান আনত না)”। [সূরা আর-রাদ, আয়াত: ৩১]
“এ কুরআনকে যদি আমি পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম তবে তুমি অবশ্যই তাকে দেখতে, আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ। মানুষের জন্য আমরা এ উদাহরণগুলো পেশ করি। হয়ত তারা চিন্তা-ভাবনা করবে”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২১]
“সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২৩]
কুরআনের মর্যাদা স্বয়ং মহান স্রষ্টা আল্লাহ বর্ণনা করার পরে তাঁর সৃষ্টজীবের মধ্যে সম্ভবত আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কুরআন সম্পর্কে বর্ণনাটি চমৎকার। তিনি বলেছেন,
“আল্লাহর কিতাবে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের সংবাদ এবং তোমাদের মধ্যকার ফয়সালা। এটি চিরন্তন ফয়সালাযুক্ত কথা। এটি কোনো উপহাসের পাত্র নয়। প্রবৃত্তিকামীরা এর দ্বারা বক্র হয় না, আলেমগণ এর অপরিসীম জ্ঞান সাগরে পান করার মাধ্যমে পিপাসামুক্ত হয় না, অধিক যুক্তি খণ্ডনের মোকাবিলায় পুরাতন হয় না, এর আশ্চর্য শেষ হবার নয়। এটি এমন কিতাব কেউ অহংকার বশতঃ ত্যাগ করলে আল্লাহ তাকে ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে আসেন, আর কেউ এ কিতাব ছাড়া অন্য কোথাও হিদায়াত তালাশ করলে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেন। এটি আল্লাহর শক্ত রশি, এটি প্রজ্ঞাময় উপদেশবাণী এবং সহজ-সঠিক পথ। কেউ এ কিতাব অনুযায়ী আমল করলে প্রতিদানপ্রাপ্ত হবে, এর দ্বারা বিচার-ফয়সালা করলে ন্যায় বিচার হবে আর কেউ এ কিতাবের দিকে আহ্বান করলে তাকে ‘সিরাতুম মুসতাকীম’ সহজ-সঠিক পথ দেখানো হবে”। [বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১/৭; ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ’ ৪/১৪৭২।]
সুন্নাহর (হাদীসের) মর্যাদা:
ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস হলো সুন্নাহ। এটি আল-কুরআনের স্পষ্টকারী ও অস্পষ্ট বর্ণনার বিশদ ব্যাখ্যা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“এবং আপনার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে আপনি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পারেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৪৪]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
ইবন ‘আতিয়্যাহ রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘(কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁকে জিজ্ঞেস করা এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর সুন্নত অনুসন্ধান করা’। ইবনুল ‘আরাবী আল-মালেকী রহ. বলেন, আমাদের আলেমগণ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কিতাবের দিকে প্রত্যার্পণ করাও, আর যদি আল্লাহর কিতাবে উক্ত সমস্যার সমাধান পাওয়া না যায় তাহলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের দিকে প্রত্যার্পণ করাও’।
“অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা উপরোক্ত আয়াতের অর্থ বুঝেছেন। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে ইয়ামেনের শাসনকর্তা করে প্রেরণের ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন,
“তোমার কাছে যখন কোনো মোকদ্দমা (বিচার) পেশ করা হবে, তখন তুমি কীভাবে তার ফয়সালা করবে? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফয়সালা করবো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, যদি আল্লাহর কিতাবে এর কোনো সমাধান (সরাসরি) না পাও? তখন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তবে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, যদি তুমি রাসূলের সুন্নাতে এবং আল্লাহর কিতাবে এর কোনো ফয়সালা না পাও? তখন তিনি বললেন, এমতাবস্থায় আমি চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে ইজতিহাদ করবো এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ শৈথিল্য করবো না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বুকে হাত মেরে বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূতকে এরূপ তাওফীক দিয়েছেন, যাতে রাসূলুল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়েছেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৯২।]
কুরআন ও সুন্নাহর সংরক্ষণ:
এ উম্মতের ওপর মহান আল্লাহর অপার করুনা যে, তিনি তাঁর নাযিলকৃত কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
এ আয়াতের প্রত্যায়ন অনুসারে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কুরআনকে বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত অসংখ্য পাণ্ডুলিপি ও হাফেযদের অন্তরে সংরক্ষিত থেকে একটি মাসহাফে (কুরআনে) একত্রিত করার তাওফীক দিয়েছেন। অতঃপর, আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আঠারো বছরেরও কম সময়ে আমীরুল মুমিনীন যুন-নূরাইন উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে একই হরফে ও একই কিতাবে একত্রিত করে উম্মতের মাঝে বিতরণ করার তাওফীক দিয়েছেন। ফলে অন্যান্য আসমানী কিতাব হারিয়ে যাওয়া ও পরিবর্তন হওয়ার যেরূপ সম্মুখীন হয়েছিল, কুরআনকে সে সব সমস্যা থেকে আল্লাহ মুক্ত রেখেছেন। ফলশ্রুতিতে, সমস্ত আসমানী কিতাবের মধ্যে একমাত্র আল-কুরআনই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সনদে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত। এতে যুগ যুগ ধরে কোনো পরিবর্তন স্পর্শ করতে পারে নি।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর সুন্নাতকে সংরক্ষণ ও সত্যায়ন করতে এ উম্মতের আলেমদেরকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি অভিনব পদ্ধতিতে সংরক্ষণের তাওফিক দিয়েছেন, যে পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত কেউ (এতো সূক্ষ্মভাবে) কোনো কিছু সংরক্ষণ করতে পারে নি। এ পদ্ধতির ফলে সহীহ, দ‘য়ীফ, মারফু‘, মাউকুফ, মুত্তাসিল, মুনাকাতি‘, নাসিখ ও মানসূখের মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয়েছে।
বিষয়টি একদমই বর্ণনাতীত। এ পদ্ধতির সূক্ষ্মতা ও নির্ভরযোগ্যতা এতোই বেশি যে, এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ যারা মুহাদ্দিসীনদের জীবন-চরিত ও কিতাবাদি নিয়ে গবেষণা করেন তারা ছাড়া কেউ অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের বিশুদ্ধ উৎস (কিতাব), এসব উৎসের সংরক্ষণ ও প্রমাণের দিক থেকে তাদেরকে বর্তমান যুগের অন্যান্য ধর্মের অনুসারী থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্য-মণ্ডিত করেছেন। ইসলামই একমাত্র দীন যার অনুসারীদের কাছে এ দীনের নবীর ব্যক্তিত্ব, তাঁর সূক্ষ্ম সীরাত, সাধারণ ও একান্ত জীবনের সব কিছুই পরিপূর্ণ ইয়াকীনের সাথে সূর্যালোকের ন্যায় স্পষ্ট ও জ্ঞাত। তাছাড়াও এ দীনের আনিত মূল কিতাবে যে কোনো ধরণের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, হারিয়ে যাওয়া, সংযোজন বা বিয়োজন হয় নি, এ ব্যাপারে উম্মতের পূর্ণ ইয়াকীন রয়েছে।
পক্ষান্তরে, ধর্মীয় বিষয়ক ইতিহাস জ্ঞাত সবাই একথা জানেন যে, অন্যান্য ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের আনিত মূল কিতাব তাদের জীবদ্দশায় অনুসারীদের কাছে নিশ্চিতভাবে পৌঁছেছে একথা কেউ দাবী করতে পারবে না। এমনকি যেসব নবীর প্রতি সম্বন্ধ করা হয় যে এটি উক্ত নবীর আনিত কিতাব, তাদের সাথে কোনো ধারাবাহিক সনদও নেই; বরং তাদের কাছে এটি প্রমাণিত যে, এসব কিতাবে বিকৃতি, পরিবর্তন, মতানৈক্য, পরস্পর বৈপরিত্য এবং পশ্চাৎ ও সম্মুখ সর্বদিক থেকে হয়েছে ভুল-ভ্রান্তি, সংযোজন ও বিয়োজন অনুপ্রবেশ করেছে।
সঠিকভাবে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে ব্যর্থতা:
যুগের পরিক্রমায় এ উম্মতের মধ্যে কিতাবুল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমল করা, এ থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হওয়া এবং এ দুটো থেকে যথাযথ হিদায়াত লাভে ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, তা উম্মতের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে সুন্নাতের ব্যাপারে বলা যায় যে, উম্মাহ সুন্নতের ওপর আমল ছেড়ে দিয়েছে এবং ভ্রান্ত চিন্তা চেতনা তাদের ওপর জয়লাভ করেছে। ফলে তারা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে আমল করা ও এ দু’টি আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে অহীর এ দুপ্রকারের (কুরআন ও হাদীস) মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। তারা ভ্রান্ত দাবী করছে যে, ইলম ও আমলের ব্যাপারে কুরআনে কারীম রাসূলের হাদীসের মুখাপেক্ষী নয়। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণাকারীদের সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছেন। আল-মিক্বদাম ইবন মা‘দীকারিব আল-কিনদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“অচিরেই কোনো ব্যক্তি তার আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১২; আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৬৪। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন; কিন্তু আমি মূল তিরমিযীতে এ সনদে হাদীসটি হাসান গরীব পেয়েছি। -অনুবাদক।]
প্রিয় মুসলিম ভাই, আপনি তাদের প্রত্যাখ্যানে নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণীসমূহ পড়ুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]
“অতএব, আপনার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর আপনি যে ফয়সালা দিবেন সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
মূলকথা হলো, আল্লাহর নাযিলকৃত দু ধরণের অহী, কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে ত্রুটি-বিচ্যুতি কারণে এ উম্মাহর চিন্তা-ভাবনা ও কাজে-কর্মে বিকৃতি সংঘটিত হচ্ছে। এ উম্মাহর দুর্ভাগ্য ও বিকৃতির আরো কারণ হলো, কুরআন-সুন্নাহ থেকে সরে যাওয়া, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য উৎসকে এ দুয়ের উপর প্রধান্য দেওয়া, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের সব কিছু জ্ঞাত; কিন্তু সৃষ্টজগত তা জানে না, এ ব্যাপারে তাদের উদাসিনতা ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে অহী যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো থেকে নাযিল হতো তবে অবশ্যই তাতে অনেক মতানৈক্য পাওয়া যেতো। সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আলামীনের, তিনি এ দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন, আমাদের ওপর তার নি‘আমত সম্পূর্ণ করেছেন এবং ইসলামকে আমাদের জন্য দীন হিসেবে মনোনীত করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/414/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।