HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পূর্ণ কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে
শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,
﴿ اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফ- ৫)
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, শয়তান মানুষের চরম শত্রু। তাই শয়তানের শত্রুতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো অধিকাংশ মানুষই শয়তানকে শত্রু না বানিয়ে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। তারা পদে পদে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। এভাবে শয়তানের অনুসরণের মাধ্যমে তারা জাহান্নামের উপযুক্ত হচ্ছে। এজন্য সকলের দায়িত্ব হলো, শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং শয়তানের কাজ থেকে দূরে থাকা। শয়তান কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, কোন্ কোন্ জালে আবদ্ধ করে শয়তান মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর শয়তানের কবল থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কী করতে হবে- এ বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি। কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা এ বইয়ের মধ্যে উক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, দ্বীনদরদী মুসলিম ভাই ও বোনেরা এ বইটি পাঠ করলে যথেষ্ট উপকৃত হবেন।
বইটি প্রকাশনা কাজে যারা যেভাবে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং দু‘আ করছি আল্লাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ আমলকে কবুল করে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
‘শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,
﴿ اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফ- ৫)
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, শয়তান মানুষের চরম শত্রু। তাই শয়তানের শত্রুতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো অধিকাংশ মানুষই শয়তানকে শত্রু না বানিয়ে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। তারা পদে পদে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। এভাবে শয়তানের অনুসরণের মাধ্যমে তারা জাহান্নামের উপযুক্ত হচ্ছে। এজন্য সকলের দায়িত্ব হলো, শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং শয়তানের কাজ থেকে দূরে থাকা। শয়তান কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, কোন্ কোন্ জালে আবদ্ধ করে শয়তান মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর শয়তানের কবল থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কী করতে হবে- এ বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি। কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা এ বইয়ের মধ্যে উক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, দ্বীনদরদী মুসলিম ভাই ও বোনেরা এ বইটি পাঠ করলে যথেষ্ট উপকৃত হবেন।
বইটি প্রকাশনা কাজে যারা যেভাবে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং দু‘আ করছি আল্লাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ আমলকে কবুল করে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
شَيْطَانٌ (শাইত্বান) শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হলো شَيَاطِيْنٌ । বাংলা ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে- সীমালঙ্ঘনকারী, দাম্ভিক, স্বৈরাচারী, বিদ্রোহী, অবাধ্যতাকারী ইত্যাদি। এসব বৈশিষ্ট্যের জিন এবং মানুষ উভয়ের জন্যই শয়তান শব্দ ব্যবহার করা হয়। শয়তান শব্দটি প্রাচীনকাল থেকেই সকল ধর্মের লোকদের কাছে একটি সুপরিচিত শব্দ। শয়তান জিনের মধ্যেও রয়েছে আবার মানুষের মধ্যেও রয়েছে।
ইসলামের বিরুদ্ধাচারী নেতাদেরকে কুরআনে শয়তান বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ ﴾
আর যখন তারা (মুনাফিকরা) নিজেদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি; আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি। [সূরা বাক্বারা- ১৪।]
শয়তানের কাজ হলো একজনের বিরুদ্ধে অন্যজনকে ক্ষেপিয়ে তোলা, ঝগড়া লাগানো, অসৎ কাজের দিকে ধাবিত করা। বিশেষ করে যেখানেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের কাজ হয় সেখানেই শয়তান বাধা দেয়।
এ পৃথিবীতে যত প্রকার পাপকাজ সম্পাদিত হচ্ছে, তার পেছনে প্রবঞ্চনা দানকারী হচ্ছে ইবলিস শয়তান। শয়তান এবং তার অনুসারীরা সবাই মিলে তাদের অভিশপ্ত কার্যকলাপের দ্বারা প্রতিদিন অনেক বান্দাকে ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্য পথ হতে বিচ্যুত করার চরম চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
শয়তান আল্লাহর অবাধ্য। সে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ অমান্য করেছে, যার ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য সে সর্বদা মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا﴾ ﴿
নিশ্চয় শয়তান পরম দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। [সূরা মারইয়াম- ৪৪।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا﴾
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। [সূরা ফাতির- ৬।]
ইসলামের বিরুদ্ধাচারী নেতাদেরকে কুরআনে শয়তান বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ ﴾
আর যখন তারা (মুনাফিকরা) নিজেদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি; আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি। [সূরা বাক্বারা- ১৪।]
শয়তানের কাজ হলো একজনের বিরুদ্ধে অন্যজনকে ক্ষেপিয়ে তোলা, ঝগড়া লাগানো, অসৎ কাজের দিকে ধাবিত করা। বিশেষ করে যেখানেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের কাজ হয় সেখানেই শয়তান বাধা দেয়।
এ পৃথিবীতে যত প্রকার পাপকাজ সম্পাদিত হচ্ছে, তার পেছনে প্রবঞ্চনা দানকারী হচ্ছে ইবলিস শয়তান। শয়তান এবং তার অনুসারীরা সবাই মিলে তাদের অভিশপ্ত কার্যকলাপের দ্বারা প্রতিদিন অনেক বান্দাকে ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্য পথ হতে বিচ্যুত করার চরম চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
শয়তান আল্লাহর অবাধ্য। সে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ অমান্য করেছে, যার ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য সে সর্বদা মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا﴾ ﴿
নিশ্চয় শয়তান পরম দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। [সূরা মারইয়াম- ৪৪।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا﴾
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। [সূরা ফাতির- ৬।]
কুরআন মাজীদে শয়তানকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন,
১. اِبْلِيْسٌ (ইবলিস) :
﴿ وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ ﴾
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [সূরা বাক্বারা– ৩৪।]
اِبْلِيْسٌ শব্দটি بَلَسٌ ও اِبْلَاسٌ শব্দমূল থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া, ভয়ে ও আতঙ্কে নিথর হয়ে যাওয়া, দুঃখে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া, সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা এবং হতাশা ও ব্যর্থতার ফলে মরিয়া হয়ে উঠা।
শয়তানকে ইবলিস বলার কারণ হলো, হতাশা ও নিরাশার ফলে সে প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করার জন্য সকল কৌশল অবলম্বন করে।
২. اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) :
﴿ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ﴾
প্রতারক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। [সূরা ফাতির- ৫।]
اَلْغَرُوْرُ শব্দটি غَرَرٌ শব্দমূল হতে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে, ধোঁকা, প্রতারণা ইত্যাদি। আর اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) অর্থ হচ্ছে, মহা ধোঁকাবাজ, মহা প্রতারক।
শয়তানকে প্রতারক বলার কারণ হলো সে সবসময় মিথ্যা আশা ও ওয়াদা দিয়ে মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে রাখে; কিন্তু মানুষ অনেক সময় শয়তানের ধোঁকাবাজি ধরতে পারে না।
৩. اَلْخَنَّاسُ (আল খান্নাস) :
﴿ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴾
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের বাদশার কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মা‘বুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। [সূরা নাস।]
خَنَّاسٌ শব্দটি خُنُوْسٌ শব্দমূল থেকে নির্গত হয়েছে। এর অর্থ- সামনে এসে আবার পিছিয়ে যাওয়া, প্রকাশ হয়ে আবার গোপন হয়ে যাওয়া। খান্নাস আধিক্যবোধক শব্দ। তাই এর অর্থ বারবার সামনে আসা এবং পিছিয়ে যাওয়া, বারবার প্রকাশ হওয়া এবং গোপন হয়ে যাওয়া। শয়তানকে খান্নাস বলা হয়েছে এ কারণে যে, সে বারবার এসে প্ররোচনা দেয় এবং বারবার লুকিয়ে যায়। এভাবে সে প্ররোচনা দিতেই থাকে।
মানুষের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে খান্নাস বা কুমন্ত্রণাদানকারী রূপে। চিন্তার জগতে লোভ-লালসার ক্রমবর্ধমান উৎপত্তি খান্নাসরূপী শয়তানের কাজ। ধীরে ধীরে কুমন্ত্রণার প্রকাশ ঘটে আচরণ ও কথাবার্তায়। এরপর শয়তান তার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে ঈর্ষা এবং শত্রুতা সৃষ্টি করে। খান্নাসের কুমন্ত্রণা মানুষের ভেতর মানুষ হওয়ার স্পৃহাকে নষ্ট করে। খান্নাস মিথ্যাকে শোভনীয় করে তোলে ধরে। আর শয়তানের অনুসারী মানুষ পরনিন্দা শুরু করে, লোকের নামে বদনাম ছড়ায়, সমাজে শত্রুতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কথাবার্তা বলে এবং উদ্বেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অন্যের অধিকার হরণ করে। এভাবে পুরো সমাজকে তারা অশান্তিময় করে তোলে।
১. اِبْلِيْسٌ (ইবলিস) :
﴿ وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ ﴾
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [সূরা বাক্বারা– ৩৪।]
اِبْلِيْسٌ শব্দটি بَلَسٌ ও اِبْلَاسٌ শব্দমূল থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া, ভয়ে ও আতঙ্কে নিথর হয়ে যাওয়া, দুঃখে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া, সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা এবং হতাশা ও ব্যর্থতার ফলে মরিয়া হয়ে উঠা।
শয়তানকে ইবলিস বলার কারণ হলো, হতাশা ও নিরাশার ফলে সে প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করার জন্য সকল কৌশল অবলম্বন করে।
২. اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) :
﴿ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ﴾
প্রতারক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। [সূরা ফাতির- ৫।]
اَلْغَرُوْرُ শব্দটি غَرَرٌ শব্দমূল হতে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে, ধোঁকা, প্রতারণা ইত্যাদি। আর اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) অর্থ হচ্ছে, মহা ধোঁকাবাজ, মহা প্রতারক।
শয়তানকে প্রতারক বলার কারণ হলো সে সবসময় মিথ্যা আশা ও ওয়াদা দিয়ে মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে রাখে; কিন্তু মানুষ অনেক সময় শয়তানের ধোঁকাবাজি ধরতে পারে না।
৩. اَلْخَنَّاسُ (আল খান্নাস) :
﴿ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴾
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের বাদশার কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মা‘বুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। [সূরা নাস।]
خَنَّاسٌ শব্দটি خُنُوْسٌ শব্দমূল থেকে নির্গত হয়েছে। এর অর্থ- সামনে এসে আবার পিছিয়ে যাওয়া, প্রকাশ হয়ে আবার গোপন হয়ে যাওয়া। খান্নাস আধিক্যবোধক শব্দ। তাই এর অর্থ বারবার সামনে আসা এবং পিছিয়ে যাওয়া, বারবার প্রকাশ হওয়া এবং গোপন হয়ে যাওয়া। শয়তানকে খান্নাস বলা হয়েছে এ কারণে যে, সে বারবার এসে প্ররোচনা দেয় এবং বারবার লুকিয়ে যায়। এভাবে সে প্ররোচনা দিতেই থাকে।
মানুষের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে খান্নাস বা কুমন্ত্রণাদানকারী রূপে। চিন্তার জগতে লোভ-লালসার ক্রমবর্ধমান উৎপত্তি খান্নাসরূপী শয়তানের কাজ। ধীরে ধীরে কুমন্ত্রণার প্রকাশ ঘটে আচরণ ও কথাবার্তায়। এরপর শয়তান তার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে ঈর্ষা এবং শত্রুতা সৃষ্টি করে। খান্নাসের কুমন্ত্রণা মানুষের ভেতর মানুষ হওয়ার স্পৃহাকে নষ্ট করে। খান্নাস মিথ্যাকে শোভনীয় করে তোলে ধরে। আর শয়তানের অনুসারী মানুষ পরনিন্দা শুরু করে, লোকের নামে বদনাম ছড়ায়, সমাজে শত্রুতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কথাবার্তা বলে এবং উদ্বেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অন্যের অধিকার হরণ করে। এভাবে পুরো সমাজকে তারা অশান্তিময় করে তোলে।
আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুর মধ্যেই তাঁর হেকমত নিহিত রয়েছে, যা তিনিই ভালো জানেন। আর তাঁর সেই হেকমতের অংশ হলো, ইবলিসকে সৃষ্টি করা। তিনি এর মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা ও কুদরতকে প্রকাশ করেছেন। তিনি যেমন সৃষ্টি করেছেন রাতের বিপরীত দিন, আলোর বিপরীত অন্ধকার, রোগের বিপরীত ঔষধ, পানির বিপরীত আগুন এবং মন্দের বিপরীত ভালো। ঠিক তেমনিভাবে ফেরেশতাদের বিপরীত শয়তান সৃষ্টি করেছেন। কেননা ফেরেশতারা কেবল মঙ্গলজনক কাজে নিয়োজিত থাকে; আর শয়তান কেবল অমঙ্গলজনক কাজে নিয়োজিত থাকে। আর এটা হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কুদরতের পূর্ণতা। তিনি এর দ্বারা এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের বিপরীত বস্তুও সৃষ্টি করতে সক্ষম।
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ হচ্ছে যে, তিনি অনুগ্রহকারী। আবার এর বিপরীতে তাঁর আরেকটি গুণ হচ্ছে, তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। তাঁর এ উভয় গুণের পূর্ণতা বাস্তবায়ন হয়েছে শয়তান সৃষ্টির ফলে। তিনি যেমন তাঁর নেক বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন, তেমনিভাবে তিনি শয়তানের অনুসারীদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন।
আল্লাহ সত্য ও অসত্য দুটো পথই দেখিয়ে দিয়েছেন, যে যেটা বেছে নেবে সে সে অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কার পাবে। সত্য পথ দেখানোর জন্য তিনি যেমন দূত পাঠিয়েছেন, তেমনি মিথ্যার উস্কানি দিতে শয়তানকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন। আর সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন এবং আসমানী কিতাবও দিয়েছেন।
আমরা জাগতিক বিচারেও দেখি যে, পরীক্ষা যত কঠিন হয়, তাতে উত্তীর্ণ হলে তার ফলাফলও তত দামী হয়। জান্নাত আল্লাহর এক অসীম অনুগ্রহ ও অচিন্তনীয় পুরস্কার। এটা পেতে আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, সাধনা করতে হবে, শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। শয়তান যদি না-ই থাকত, তবে এ পরীক্ষা থাকত না।
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ হচ্ছে যে, তিনি অনুগ্রহকারী। আবার এর বিপরীতে তাঁর আরেকটি গুণ হচ্ছে, তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। তাঁর এ উভয় গুণের পূর্ণতা বাস্তবায়ন হয়েছে শয়তান সৃষ্টির ফলে। তিনি যেমন তাঁর নেক বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন, তেমনিভাবে তিনি শয়তানের অনুসারীদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন।
আল্লাহ সত্য ও অসত্য দুটো পথই দেখিয়ে দিয়েছেন, যে যেটা বেছে নেবে সে সে অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কার পাবে। সত্য পথ দেখানোর জন্য তিনি যেমন দূত পাঠিয়েছেন, তেমনি মিথ্যার উস্কানি দিতে শয়তানকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন। আর সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন এবং আসমানী কিতাবও দিয়েছেন।
আমরা জাগতিক বিচারেও দেখি যে, পরীক্ষা যত কঠিন হয়, তাতে উত্তীর্ণ হলে তার ফলাফলও তত দামী হয়। জান্নাত আল্লাহর এক অসীম অনুগ্রহ ও অচিন্তনীয় পুরস্কার। এটা পেতে আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, সাধনা করতে হবে, শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। শয়তান যদি না-ই থাকত, তবে এ পরীক্ষা থাকত না।
শয়তানের লক্ষ্য হলো, মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখা। তাই শয়তান ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সংঘাত সৃষ্টি করে। রক্তপাত শয়তান খুব পছন্দ করে। মানুষের রক্ত পান করে সে পুষ্ট হয়। এভাবে মানুষের মাধ্যমে শয়তান তার কর্মসূচী বাস্তবায়িত করে।
শয়তান সবসময় মানুষের সাথে লেগে থাকে। মানুষ যতই নিজেকে একা ভাবুক না কেন, সে আসলে একা নয়। মানুষের সাথে শয়তান আছেই। শয়তান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে যেন সে মানুষের অজান্তে তার মধ্যে বাস করে নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে পারে।
মানুষের মধ্যে একটি দিক হচ্ছে আল্লাহর আর অপর দিকটি হচ্ছে শয়তানের। মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করলে সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় আর আল্লাহকে ভুলে গেলে শয়তানের দিকে ধাবিত হয়। মানুষের সাধনা হচ্ছে শয়তান থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনা।
শয়তান জান্নাতে ছিল, সুতরাং সে জানে জান্নাত কেমন। সে এটাও জানে জাহান্নামের শাস্তি কেমন। তাই কোন মানুষ জান্নাতের সুখ-শান্তি ভোগ করবে আর সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে এটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। এজন্য সে মানুষকে তার আগুনের সঙ্গী বানানোর জন্য সমস্ত শক্তি ব্যয় করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করে বলেন,
﴿ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ ﴾
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা থেকে দূরে রাখতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? [সূরা মায়েদা- ৯১।]
শয়তান সবসময় মানুষের সাথে লেগে থাকে। মানুষ যতই নিজেকে একা ভাবুক না কেন, সে আসলে একা নয়। মানুষের সাথে শয়তান আছেই। শয়তান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে যেন সে মানুষের অজান্তে তার মধ্যে বাস করে নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে পারে।
মানুষের মধ্যে একটি দিক হচ্ছে আল্লাহর আর অপর দিকটি হচ্ছে শয়তানের। মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করলে সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় আর আল্লাহকে ভুলে গেলে শয়তানের দিকে ধাবিত হয়। মানুষের সাধনা হচ্ছে শয়তান থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনা।
শয়তান জান্নাতে ছিল, সুতরাং সে জানে জান্নাত কেমন। সে এটাও জানে জাহান্নামের শাস্তি কেমন। তাই কোন মানুষ জান্নাতের সুখ-শান্তি ভোগ করবে আর সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে এটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। এজন্য সে মানুষকে তার আগুনের সঙ্গী বানানোর জন্য সমস্ত শক্তি ব্যয় করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করে বলেন,
﴿ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ ﴾
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা থেকে দূরে রাখতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? [সূরা মায়েদা- ৯১।]
ইবলিস আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল :
﴿وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ﴾
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [সূরা বাক্বারা– ৩৪।]
আল্লাহ ইবলিসকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন :
﴿قَالَ يَاۤ اِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ اَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّؕ اَسْتَكْبَرْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِيْنَ﴾
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি যাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, নাকি তুমি শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশীলদের একজন? [সূরা সোয়াদু ৭৫।]
ইবলিস যুক্তি খাটিয়ে উত্তর দিল :
﴿قَالَ اَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِيْنٍ﴾
সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম; তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে মাটি থেকে। [সূরা আ‘রাফু ১২।]
ইবলিস যে অন্যায়গুলো করেছিল আজ আমাদের অনেকের মধ্যেও সে অন্যায়গুলো বিদ্যমান। যেমন-
১। ইবলিস আল্লাহর ১টি সিজদা অমান্য করেছিল, আর আজ মুসলিম নামধারী অনেক মানুষ দৈনিক ১৭ রাক‘আত ফরজ নামাযের ৩৪ টি ফরয সিজদা অমান্য করে যাচ্ছে।
২। ইবলিস অহংকার করে নিজেকে আদম (আঃ) এর চেয়ে উঁচু শ্রেণির ভেবেছিল, অনেক ভালো মুসলিমও অহংকার করে অন্য মানুষদের কোন না কোনভাবে খাটো করে দেখে।
৩। ইবলিস অপরাধ করা সত্ত্বেও তা স্বীকার করেনি এবং ক্ষমাও চায়নি, আমরাও প্রতিদিন কত অপরাধ করি কিন্তু সেটা স্বীকার করি না এবং ক্ষমাও চাই না।
৪। ইবলিস আল্লাহর সাথে অহংকার করেছিল, আমরা আজ মুসলিম হয়েও বিনয়ের গুণ ভুলে যাচ্ছি।
৫। ইবলিস আদম (আঃ) এর সাথে হিংসা করে নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিল, আমাদের মধ্যেও অনেকেই সেই হিংসার রোগে আক্রান্ত।
৬। ইবলিস আল্লাহর সৃষ্টির ক্ষতি ও অকল্যাণ কামনা করেছিল, আমরা প্রতিমুহূর্তে কত মানুষের ক্ষতি করি তার কোন হিসাব নেই।
৭। ইবলিস আল্লাহর নির্দেশের বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিল। আজ আমরাও যুক্তি দেখিয়ে আল্লাহর কত বিধান অমান্য করে যাচ্ছি।
﴿وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ﴾
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [সূরা বাক্বারা– ৩৪।]
আল্লাহ ইবলিসকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন :
﴿قَالَ يَاۤ اِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ اَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّؕ اَسْتَكْبَرْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِيْنَ﴾
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি যাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, নাকি তুমি শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশীলদের একজন? [সূরা সোয়াদু ৭৫।]
ইবলিস যুক্তি খাটিয়ে উত্তর দিল :
﴿قَالَ اَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِيْنٍ﴾
সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম; তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে মাটি থেকে। [সূরা আ‘রাফু ১২।]
ইবলিস যে অন্যায়গুলো করেছিল আজ আমাদের অনেকের মধ্যেও সে অন্যায়গুলো বিদ্যমান। যেমন-
১। ইবলিস আল্লাহর ১টি সিজদা অমান্য করেছিল, আর আজ মুসলিম নামধারী অনেক মানুষ দৈনিক ১৭ রাক‘আত ফরজ নামাযের ৩৪ টি ফরয সিজদা অমান্য করে যাচ্ছে।
২। ইবলিস অহংকার করে নিজেকে আদম (আঃ) এর চেয়ে উঁচু শ্রেণির ভেবেছিল, অনেক ভালো মুসলিমও অহংকার করে অন্য মানুষদের কোন না কোনভাবে খাটো করে দেখে।
৩। ইবলিস অপরাধ করা সত্ত্বেও তা স্বীকার করেনি এবং ক্ষমাও চায়নি, আমরাও প্রতিদিন কত অপরাধ করি কিন্তু সেটা স্বীকার করি না এবং ক্ষমাও চাই না।
৪। ইবলিস আল্লাহর সাথে অহংকার করেছিল, আমরা আজ মুসলিম হয়েও বিনয়ের গুণ ভুলে যাচ্ছি।
৫। ইবলিস আদম (আঃ) এর সাথে হিংসা করে নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিল, আমাদের মধ্যেও অনেকেই সেই হিংসার রোগে আক্রান্ত।
৬। ইবলিস আল্লাহর সৃষ্টির ক্ষতি ও অকল্যাণ কামনা করেছিল, আমরা প্রতিমুহূর্তে কত মানুষের ক্ষতি করি তার কোন হিসাব নেই।
৭। ইবলিস আল্লাহর নির্দেশের বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিল। আজ আমরাও যুক্তি দেখিয়ে আল্লাহর কত বিধান অমান্য করে যাচ্ছি।
শয়তানের বিভিন্ন কার্যাবলি ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তান যেসব কৌশল অবলম্বন করে সেসবের অনেকটাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। নিচে তা আলোচনা করা হলো :
শয়তান মানুষকে দেখে কিন্তু মানুষ তাকে দেখে না :
﴿اِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْؕ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনয়ন করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
শয়তান মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় :
﴿وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا﴾
মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। [সূরা নিসা- ৬০।]
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
﴿اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّاؕ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ﴾
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। [সূরা ফাতির- ৬।]
শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ত্রুটি করে না :
﴿وَاِخْوَانُهُمْ يَمُدُّوْنَهُمْ فِى الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُوْنَ﴾
তাদের সঙ্গি-সাথিরা তাদেরকে বিভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২০২।]
শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে (জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দকাজের নির্দেশ দেয়। [সূরা নূর- ২১।]
শয়তান পাপকাজকে সুন্দর করে দেখায় :
﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুন্দর করে দিয়েছিল। [সূরা আন‘আম- ৪৩।]
﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ﴾
শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পায় না। [সূরা নামল- ২৪।]
শয়তান মানুষকে সালাত ও যিকির থেকে দূরে রাখে :
﴿ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾
শয়তান তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা বিরত থাকবে না? [সূরা মায়েদা- ৯১।]
মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর শয়তানের কাজ :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়েদা- ৯০।]
শয়তান মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে :
﴿اِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنَاثًاۚ وَاِنْ يَّدْعُوْنَ اِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيْدًا – لَعَنَهُ اللهُۘ وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا ‐ وَلَاُضِلَّنَّهُمْ وَلَاُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِؕ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا﴾
তারা তাঁর পরিবর্তে দেব-দেবীদেরকেই আহবান করে এবং বিদ্রোহী শয়তানকেই ডাকে, অথচ আল্লাহ তাকে লানত করেছেন। সে বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করবই। অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কর্ণচ্ছেদ করবে। অবশ্যই তাদেরকে (আরো) নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। অতএব (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা নিসা : ১৭-১১৯।]
আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সে কাজে ব্যবহার করা এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে ব্যবহার না করা। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে, তা সবই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন জন্মশাসন, বৈরাগ্যবাদ, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খাসি বানানো ও মেয়েদের উপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তাদেরকে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে টেনে আনা, যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শয়তানের অনুসারীরা দুনিয়ায় এ ধরণের আরো যেসব কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো আসলে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্বজাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধিবিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।
শয়তান মানুষের সন্তান ও সম্পদে শরীক হয়ে যায় :
﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْؕ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾
তোমার আহবানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ করো, তাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতিতে শরীক হয়ে যাও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪।]
এ আয়াতে শয়তানকে এমন এক ডাকাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে জনপদ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হুকুম দিতে থাকে- এদিকে লুটপাট করো, ওদিকে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাও এবং সেদিকে ধ্বংস করো। শয়তানের অশ্বারোহী ও পদাতিক বলতে এমনসব জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্নভাবে ইবলিসের বিধ্বংসী অভিযানে সহযোগিতা করছে। যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন ও তা খরচ করার ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ করে, তার সাথে যেন শয়তান শরীক হয়ে যায়। পরিশ্রমে তার কোন অংশ নেই; কিন্তু অপরাধ, পাপ ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণতিতে সে শুধু অংশীদারই নয় বরং বৃহত্তম অংশীদার। এভাবে সন্তান হয় মানুষের নিজের, সুতরাং তাকে লালন-পালন করার জন্য সে নিজের কর্মক্ষমতা ও সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু শয়তানের ইঙ্গিতে এ সন্তানকে মানুষ এমনভাবে গোমরাহী ও নৈতিক চরিত্রহীনতার শিক্ষা দেয়, যেন মনে হয় সে একা এ সন্তানের পিতা নয় বরং তার পিতৃত্বে শয়তানও শরীক আছে।
শয়তানের প্রথম কাজ হলো লজ্জা ও পর্দা উঠিয়ে দেয়া :
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَايَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا﴾
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ করতে না পারে; যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
মানুষকে তার স্বভাবসুলভ সহজসরল পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের প্রথম কৌশল হলো লজ্জার অনুভূতিতে আঘাত করা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার দরজা খুলে দেয়া এবং তাকে যৌন লালসার পথে পরিচালিত করা। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করার জন্য তার যে দুর্বলতম স্থানটিকে সে বেছে নেয় সেটি হলো, যৌনবিষয়ক দিক। যে লজ্জাকে আল্লাহ তা‘আলা মানবীয় প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, সে প্রথমে তার উপরই আঘাত হানে। শয়তান ও তার শিষ্যদের এ কর্মনীতি আদিকাল থেকে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে বাজারে না দাঁড় করানো পর্যন্ত তাদের প্রগতির শুরুই হতে পারে না।
শয়তান জিহাদে বের হওয়ার সময় ভয় দেখায় :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا﴾
যেদিন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পলায়ন করেছিল, নিশ্চয় শয়তান তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। [সূরা আলে ইমরান- ১৫৫।]
দারিদ্রে্যর ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
﴿اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَّاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]
শয়তান মানুষের মনে প্রতারণামূলক আশা দেয় :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ﴾
যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকে লোভ দেখিয়েছে এবং (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। [সূরা মুহাম্মাদ- ২৫।]
﴿يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾
সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। [সূরা নিসা- ১২০।]
অসৎকাজ করার প্রকাশ্য আহবানকে মানুষ খুব কমই গ্রহণ করে, এটা মানুষের স্বভাবসুলভ প্রবণতা। তাই নিজের জালে আবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক অসৎকর্মের আহবায়ক কল্যাণকামীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়। মানুষের মধ্যে উচ্চতর বিষয়াবলি লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য অর্জন করে এ পথেই। শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্র হচ্ছে,
সে মানুষের সামনে তাকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়ার টোপ ফেলে, তারপর তাকে এমন পথের সন্ধান দেয়, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শয়তানের সকল কর্মই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেয়ার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তখন কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ-উপভোগ লাভের আশায় উদ্বুদ্ধ করে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দেয়। কারো মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আখিরাত বলতে কিছুই নেই। মৃত্যুর পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয় যে, আখিরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে অমুক হুজুরের বদৌলতে, অমুকের দু‘আর বরকতে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরণের আশার ছলনায় ভুলানো যায়, তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
শয়তান মানুষের সাথে প্রতারণা করে :
﴿لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান- ২৯।]
﴿وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
স্মরণ করো, যখন শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকব। অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। [সূরা আনফাল- ৪৮।]
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে :
﴿وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا﴾
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩।]
মানুষকে পাপে লিপ্ত করে নিজে কেটে পড়ে :
﴿كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ﴾
তাদের তুলনা শয়তানের মতো, সে মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]
শয়তান অবাস্তব কথা বলায় :
﴿وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – اِنَّمَا يَاْمُرُكُمْ بِالسُّوْٓءِ وَالْفَحْشَآءِ وَاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না সে বিষয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়। [সূরা বাক্বারা- ১৬৮, ১৬৯।]
শয়তান প্রতারণামূলক ও চমকপ্রদ কথা বলায় :
﴿وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ﴾
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। [সূরা আন‘আম- ১১২।]
শয়তান মানুষকে মন্ত্র ও যাদু শিক্ষা দেয় :
﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। [সূরা বাক্বারা- ১০২।]
শয়তান নবীদের কথাকেও বিকৃত করত :
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤى اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِۤيْ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ‐ لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْؕ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ﴾
(হে নবী) আমি তোমার আগে এমন কোন নবী কিংবা রাসূলই প্রেরণ করিনি (যারা এ ঘটনার সম্মুখীন হননি যে) যখন তিনি (আল্লাহর আয়াত পাঠ করার) আগ্রহ প্রকাশ করতেন তখন শয়তান তার সে আগ্রহের কাছে (কাফিরদের মনে) সন্দেহ ঢেলে দেয়নি। অতঃপর আল্লাহ শয়তানের নিক্ষিপ্ত (সন্দেহগুলো) মিটিয়ে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে (আরো) মজবুত করে দেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষেপ করে তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, যাদের অমত্মরে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয় যালিমরা চরম মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। [সূরা হজ্জ- ৫২, ৫৩।]
যখনই নবী ﷺ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের সামনে সেগুলোর সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে উল্টো অর্থ তোলে ধরেছে। আল্লাহ শয়তানের বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নবীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং শয়তানের ঢুকানো সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি দূর করে দেন। শয়তান এক একটি আয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে যেসব জটিলতা সৃষ্টি করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী কোন অধিকতর সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সেগুলো পরিষ্কার করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের ফিতনাকে লোকদের জন্য পরীক্ষা এবং নকল থেকে আসলকে আলাদা করার একটা মাধ্যমে পরিণত করেছেন। বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা এসব জিনিস থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এগুলো তাদের জন্য ভ্রষ্টতার উপকরণে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী লোকেরা এসব কথা থেকে নবী ও আল্লাহর কিতাবের সত্য হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করে এবং তারা অনুভব করতে থাকে যে, এগুলো শয়তানের অনিষ্টকর কার্যকলাপ। এ জিনিসটি তাদেরকে একদম নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, এটি নির্ঘাত কল্যাণ ও সত্যের দাওয়াত, নতুবা শয়তান এতে এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ত না।
হকের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীর দাওয়াতের মুকাবিলায় এসব হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ এসব শয়তানী ফিতনার মূলোচ্ছেদ করেছেন। ফলে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সত্যের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েছে। সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ-সংশয় দূরীভূত হয়েছে। শয়তান ও তার সাথিরা এসব কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর আয়াতকে মর্যাদাহীন করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকেই মানুষের মধ্যে আসল ও নকলের পার্থক্য করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এ পথেই আসল ও নির্ভেজাল লোকেরা সত্যের দাওয়াতের দিকে এগিয়ে আসে এবং ভেজাল লোকেরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায়।
ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন মূলত সে মানুষ। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে ভুলত্রুটি সংঘটিত হতেই পারে। বড় বড় সৎকর্মপরায়ণ ও জ্ঞানবান লোকেরাও অনেক সময় ভুল করে বসেন। এ ক্ষেত্রে উচিত হলো তাদের ভুলগুলো বাদ দিয়ে সঠিক বিষয়গুলো গ্রহণ করা। কিন্তু যারা তাদের প্রতি সীমাতিরিক্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করে থাকে, তারা তাদের সঠিক কথার সাথে সাথে ভুল কথাগুলোও চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করে নেয়। অপরদিকে মন্দচরিত্রের লোকেরা তাদের ভুলত্রুটিগুলো অনুসন্ধানের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে। ফলে যখনই তারা কোন ধরণের ভুল করে বসেন, তখনই তারা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
শয়তান মানুষকে দেখে কিন্তু মানুষ তাকে দেখে না :
﴿اِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْؕ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনয়ন করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
শয়তান মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় :
﴿وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا﴾
মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। [সূরা নিসা- ৬০।]
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
﴿اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّاؕ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ﴾
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। [সূরা ফাতির- ৬।]
শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ত্রুটি করে না :
﴿وَاِخْوَانُهُمْ يَمُدُّوْنَهُمْ فِى الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُوْنَ﴾
তাদের সঙ্গি-সাথিরা তাদেরকে বিভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২০২।]
শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে (জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দকাজের নির্দেশ দেয়। [সূরা নূর- ২১।]
শয়তান পাপকাজকে সুন্দর করে দেখায় :
﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুন্দর করে দিয়েছিল। [সূরা আন‘আম- ৪৩।]
﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ﴾
শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পায় না। [সূরা নামল- ২৪।]
শয়তান মানুষকে সালাত ও যিকির থেকে দূরে রাখে :
﴿ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾
শয়তান তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা বিরত থাকবে না? [সূরা মায়েদা- ৯১।]
মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর শয়তানের কাজ :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়েদা- ৯০।]
শয়তান মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে :
﴿اِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنَاثًاۚ وَاِنْ يَّدْعُوْنَ اِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيْدًا – لَعَنَهُ اللهُۘ وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا ‐ وَلَاُضِلَّنَّهُمْ وَلَاُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِؕ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا﴾
তারা তাঁর পরিবর্তে দেব-দেবীদেরকেই আহবান করে এবং বিদ্রোহী শয়তানকেই ডাকে, অথচ আল্লাহ তাকে লানত করেছেন। সে বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করবই। অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কর্ণচ্ছেদ করবে। অবশ্যই তাদেরকে (আরো) নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। অতএব (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা নিসা : ১৭-১১৯।]
আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সে কাজে ব্যবহার করা এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে ব্যবহার না করা। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে, তা সবই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন জন্মশাসন, বৈরাগ্যবাদ, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খাসি বানানো ও মেয়েদের উপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তাদেরকে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে টেনে আনা, যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শয়তানের অনুসারীরা দুনিয়ায় এ ধরণের আরো যেসব কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো আসলে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্বজাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধিবিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।
শয়তান মানুষের সন্তান ও সম্পদে শরীক হয়ে যায় :
﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْؕ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾
তোমার আহবানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ করো, তাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতিতে শরীক হয়ে যাও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪।]
এ আয়াতে শয়তানকে এমন এক ডাকাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে জনপদ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হুকুম দিতে থাকে- এদিকে লুটপাট করো, ওদিকে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাও এবং সেদিকে ধ্বংস করো। শয়তানের অশ্বারোহী ও পদাতিক বলতে এমনসব জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্নভাবে ইবলিসের বিধ্বংসী অভিযানে সহযোগিতা করছে। যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন ও তা খরচ করার ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ করে, তার সাথে যেন শয়তান শরীক হয়ে যায়। পরিশ্রমে তার কোন অংশ নেই; কিন্তু অপরাধ, পাপ ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণতিতে সে শুধু অংশীদারই নয় বরং বৃহত্তম অংশীদার। এভাবে সন্তান হয় মানুষের নিজের, সুতরাং তাকে লালন-পালন করার জন্য সে নিজের কর্মক্ষমতা ও সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু শয়তানের ইঙ্গিতে এ সন্তানকে মানুষ এমনভাবে গোমরাহী ও নৈতিক চরিত্রহীনতার শিক্ষা দেয়, যেন মনে হয় সে একা এ সন্তানের পিতা নয় বরং তার পিতৃত্বে শয়তানও শরীক আছে।
শয়তানের প্রথম কাজ হলো লজ্জা ও পর্দা উঠিয়ে দেয়া :
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَايَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا﴾
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ করতে না পারে; যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
মানুষকে তার স্বভাবসুলভ সহজসরল পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের প্রথম কৌশল হলো লজ্জার অনুভূতিতে আঘাত করা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার দরজা খুলে দেয়া এবং তাকে যৌন লালসার পথে পরিচালিত করা। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করার জন্য তার যে দুর্বলতম স্থানটিকে সে বেছে নেয় সেটি হলো, যৌনবিষয়ক দিক। যে লজ্জাকে আল্লাহ তা‘আলা মানবীয় প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, সে প্রথমে তার উপরই আঘাত হানে। শয়তান ও তার শিষ্যদের এ কর্মনীতি আদিকাল থেকে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে বাজারে না দাঁড় করানো পর্যন্ত তাদের প্রগতির শুরুই হতে পারে না।
শয়তান জিহাদে বের হওয়ার সময় ভয় দেখায় :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا﴾
যেদিন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পলায়ন করেছিল, নিশ্চয় শয়তান তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। [সূরা আলে ইমরান- ১৫৫।]
দারিদ্রে্যর ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
﴿اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَّاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]
শয়তান মানুষের মনে প্রতারণামূলক আশা দেয় :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ﴾
যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকে লোভ দেখিয়েছে এবং (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। [সূরা মুহাম্মাদ- ২৫।]
﴿يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾
সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। [সূরা নিসা- ১২০।]
অসৎকাজ করার প্রকাশ্য আহবানকে মানুষ খুব কমই গ্রহণ করে, এটা মানুষের স্বভাবসুলভ প্রবণতা। তাই নিজের জালে আবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক অসৎকর্মের আহবায়ক কল্যাণকামীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়। মানুষের মধ্যে উচ্চতর বিষয়াবলি লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য অর্জন করে এ পথেই। শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্র হচ্ছে,
সে মানুষের সামনে তাকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়ার টোপ ফেলে, তারপর তাকে এমন পথের সন্ধান দেয়, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শয়তানের সকল কর্মই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেয়ার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তখন কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ-উপভোগ লাভের আশায় উদ্বুদ্ধ করে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দেয়। কারো মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আখিরাত বলতে কিছুই নেই। মৃত্যুর পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয় যে, আখিরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে অমুক হুজুরের বদৌলতে, অমুকের দু‘আর বরকতে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরণের আশার ছলনায় ভুলানো যায়, তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
শয়তান মানুষের সাথে প্রতারণা করে :
﴿لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান- ২৯।]
﴿وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
স্মরণ করো, যখন শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকব। অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। [সূরা আনফাল- ৪৮।]
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে :
﴿وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا﴾
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩।]
মানুষকে পাপে লিপ্ত করে নিজে কেটে পড়ে :
﴿كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ﴾
তাদের তুলনা শয়তানের মতো, সে মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]
শয়তান অবাস্তব কথা বলায় :
﴿وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – اِنَّمَا يَاْمُرُكُمْ بِالسُّوْٓءِ وَالْفَحْشَآءِ وَاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না সে বিষয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়। [সূরা বাক্বারা- ১৬৮, ১৬৯।]
শয়তান প্রতারণামূলক ও চমকপ্রদ কথা বলায় :
﴿وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ﴾
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। [সূরা আন‘আম- ১১২।]
শয়তান মানুষকে মন্ত্র ও যাদু শিক্ষা দেয় :
﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। [সূরা বাক্বারা- ১০২।]
শয়তান নবীদের কথাকেও বিকৃত করত :
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤى اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِۤيْ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ‐ لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْؕ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ﴾
(হে নবী) আমি তোমার আগে এমন কোন নবী কিংবা রাসূলই প্রেরণ করিনি (যারা এ ঘটনার সম্মুখীন হননি যে) যখন তিনি (আল্লাহর আয়াত পাঠ করার) আগ্রহ প্রকাশ করতেন তখন শয়তান তার সে আগ্রহের কাছে (কাফিরদের মনে) সন্দেহ ঢেলে দেয়নি। অতঃপর আল্লাহ শয়তানের নিক্ষিপ্ত (সন্দেহগুলো) মিটিয়ে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে (আরো) মজবুত করে দেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষেপ করে তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, যাদের অমত্মরে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয় যালিমরা চরম মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। [সূরা হজ্জ- ৫২, ৫৩।]
যখনই নবী ﷺ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের সামনে সেগুলোর সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে উল্টো অর্থ তোলে ধরেছে। আল্লাহ শয়তানের বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নবীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং শয়তানের ঢুকানো সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি দূর করে দেন। শয়তান এক একটি আয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে যেসব জটিলতা সৃষ্টি করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী কোন অধিকতর সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সেগুলো পরিষ্কার করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের ফিতনাকে লোকদের জন্য পরীক্ষা এবং নকল থেকে আসলকে আলাদা করার একটা মাধ্যমে পরিণত করেছেন। বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা এসব জিনিস থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এগুলো তাদের জন্য ভ্রষ্টতার উপকরণে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী লোকেরা এসব কথা থেকে নবী ও আল্লাহর কিতাবের সত্য হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করে এবং তারা অনুভব করতে থাকে যে, এগুলো শয়তানের অনিষ্টকর কার্যকলাপ। এ জিনিসটি তাদেরকে একদম নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, এটি নির্ঘাত কল্যাণ ও সত্যের দাওয়াত, নতুবা শয়তান এতে এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ত না।
হকের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীর দাওয়াতের মুকাবিলায় এসব হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ এসব শয়তানী ফিতনার মূলোচ্ছেদ করেছেন। ফলে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সত্যের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েছে। সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ-সংশয় দূরীভূত হয়েছে। শয়তান ও তার সাথিরা এসব কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর আয়াতকে মর্যাদাহীন করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকেই মানুষের মধ্যে আসল ও নকলের পার্থক্য করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এ পথেই আসল ও নির্ভেজাল লোকেরা সত্যের দাওয়াতের দিকে এগিয়ে আসে এবং ভেজাল লোকেরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায়।
ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন মূলত সে মানুষ। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে ভুলত্রুটি সংঘটিত হতেই পারে। বড় বড় সৎকর্মপরায়ণ ও জ্ঞানবান লোকেরাও অনেক সময় ভুল করে বসেন। এ ক্ষেত্রে উচিত হলো তাদের ভুলগুলো বাদ দিয়ে সঠিক বিষয়গুলো গ্রহণ করা। কিন্তু যারা তাদের প্রতি সীমাতিরিক্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করে থাকে, তারা তাদের সঠিক কথার সাথে সাথে ভুল কথাগুলোও চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করে নেয়। অপরদিকে মন্দচরিত্রের লোকেরা তাদের ভুলত্রুটিগুলো অনুসন্ধানের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে। ফলে যখনই তারা কোন ধরণের ভুল করে বসেন, তখনই তারা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে শয়তান সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন, যাতে আমরা শয়তানকে চিনতে পারি এবং তার কবল থেকে বাঁচতে পারি। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
শয়তান আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْتِيْ أَحَدَكُمْ فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ فَيَقُولُ : اللهُ، فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ فَيَقُوْلُ : اللهُ، فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ اللهَ؟ فَإِذَا وَجَدَ ذٰلِكَ أَحَدُكُمْ، فَلْيَقُلْ : اٰمَنْتُ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ
আবু হুরায়রা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শয়তান তোমাদের নিকট এসে বলে, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন? জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? উত্তরে সে বলে, আল্লাহ। তখন সে আবার প্রশ্ন করে তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন তোমাদের কারো মনে এমন ওয়াসওয়াসা আসবে তখন সে যেন বলে ‘‘আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছি’’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৫৮।]
শয়তান মানুষের নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِذَا اسْتَيْقَظَ اَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهٖ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيْتُ عَلٰى خَيَاشِيْمِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শয়তান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে। [সহীহ মুসিলম, হা/৪৫২।]
মানুষ ঘুমানোর সময় শয়তান মাথার চুলে গিঁট দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ اَحَدِكُمْ اِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلٰى مَكَانِ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ، فَاِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَاَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَاِلَّا اَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় যে, তোমার সম্মুখে আছে লম্বা রাত, অতএব তুমি ঘুমিয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি সজাগ হয়ে আল্লাহকে মনে করে, একটি গিঁট খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর নামায পড়লে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে ভোরে উঠে অপবিত্র মন নিয়ে ও আলস্য সহকারে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২।]
ফজরের সালাত আদায় না করলে শয়তান কানে প্রস্রাব করে দেয় :
عَنْ عَبْدِ ا للهِ قَالَ : ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ رَجُلٌ فَقِيْلَ : مَا زَالَ نَائِمًا حَتّٰى اَصْبَحَ مَا قَامَ اِلَى الصَّلَاةِ، فَقَالَ : بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ اُذُنِه
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ এর সম্মুখে এক লোক সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো- ভোর বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, নামাযের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন নবী ﷺ বললেন, শয়তান তার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৪।]
শয়তান নামাযের মধ্যে দৃষ্টি এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেয় :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ ا للهِ عَنِ الْاِلْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ : هُوَ اخْتِلَاسٌ يَّخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি। জবাবে তিনি বলেন, এটা (শয়তানের) থাবা; শয়তান বান্দার নামাযের মধ্যে এ থাবা দিয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫১।]
শয়তান মানুষের নামাযে গোলমাল সৃষ্টি করে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ اَنَّه صَلّٰى صَلَاةً فَقَالَ : اِنَّ الشَّيْطَانَ عَرَضَ لِيْ فَشَدَّ عَلَىَّ لِيَقْطَعَ الصَّلَاةَ عَلَىَّ فَأَمْكَنَنِي ا للهُ مِنْهُ، فَذَعَتُّه ، وَلَقَدْ هَمَمْتُ اَنْ أُوْثِقَه اِلٰى سَارِيَةٍ حَتّٰى تُصْبِحُوْا فَتَنْظُرُوْا اِلَيْهِ فَذَكَرْتُ قَوْلَ سُلَيْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ : ﴿رَبِّ هَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْۢبَغِيْ لِأَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِيْ﴾ فَرَدَّهُ ا للهُ خَاسِئًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ নামায শেষ করে বললেন, শয়তান আমার সামনে এসে নামায বিনষ্ট করার জন্য আমার উপর আক্রমণ করল। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর বিজয়ী করে দিলেন, ফলে আমি তাকে পরাজিত করলাম এবং তাকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে ইচ্ছা করলাম, যাতে সকালে উঠে তোমরা তাকে দেখতে পাও। কিন্তু সুলায়মান (আঃ) এর একটি কথা আমার স্মরণ হলো। (তিনি আল্লাহর কাছে এ বলে দু‘আ করেছিলেন যে) ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন আমার পরে কেউ এর অধিকারী হবে না’’ [সূরা তূর-১৩।]। অতঃপর আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অপমানিত করে তাড়িয়ে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২১০।]
উল্লেখ্য যে, সুলায়মান (আঃ) যে রাজত্বের জন্য দু‘আ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দান করেছিলেন। এজন্য নবী ﷺ শয়তানকে বেঁধে রাখতে পারতেন, কিন্তু সুলায়মান (আঃ) এর কথা স্মরণ করে তিনি তা করেননি।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : إِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا قَامَ يُصَلِّيْ جَاءَ الشَّيْطَانُ فَلَبَسَ عَلَيْهِ حَتّٰى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلّٰى، فَإِذَا وَجَدَ ذٰلِكَ اَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন শয়তান তার নিকট এসে তার মনে নানা ধরণের সংশয় সৃষ্টি করে দেয়। যার ফলে সে ব্যক্তি মনে রাখতে পারে না যে, কত রাক‘আত নামায পড়েছে। তোমাদের কেউ যখন এমন অবস্থায় পতিত হবে তখন সে বসে বসেই দুটি সিজদা (সিজদায়ে সাহু) করবে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৩২।]
সূর্য উদয়ের সময় শয়তান শিং পেতে রাখে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - قَالَ : فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সূর্যোদয়ের সময় সালাত আদায় করা বন্ধ রাখবে। কারণ সূর্য শয়তানের দুশিংয়ের মধ্যখানে উদিত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪১৯।]
শয়তান মানুষের আমল নষ্ট করাতে চায় :
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، قَالَ قَالَ عُمَرُ يَوْمًا لِّأَصْحَابِ النَّبِيِّ فِيْمَ تَرَوْنَ هٰذِهِ الْاٰيَةَ نَزَلَتْ ﴿أَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَه جَنَّةٌ﴾ قَالُوْا : اَللهُ اَعْلَمُ . فَغَضِبَ عُمَرُ فَقَالَ قُوْلُوْا نَعْلَمُ اَوْ لَا نَعْلَمُ . فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيْ نَفْسِيْ مِنْهَا شَىْءٌ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ . قَالَ عُمَرُ يَا ابْنَ اَخِيْ قُلْ وَلَا تَحْقِرْ نَفْسَكَ . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ضُرِبَتْ مَثَلًا لِعَمَلٍ . قَالَ عُمَرُ اَىُّ عَمَلٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِعَمَلٍ . قَالَ عُمَرُ لِرَجُلٍ غَنِيٍّ يَعْمَلُ بِطَاعَةِ ا للهِ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ بَعَثَ ا للهُ لَهُ الشَّيْطَانَ فَعَمِلَ بِالْمَعَاصِيْ حَتّٰى اَغْرَقَ اَعْمَالَهٗ
উবাইদ ইবনে উমাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন উমর (রাঃ) নবী ﷺ এর সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ﴿اَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَه جَنَّةٌ﴾ আয়াতটি কোন্ উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে? সবাই বললেন, আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। এ কথা শ্রবণ করে উমর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, জানি অথবা জানি না বলুন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ ব্যাপারে আমি একটি ধারণা পোষণ করি। উমর (রাঃ) বললেন, ভাতিজা! তুমি নিজেকে তুচ্ছ ভেব না। তোমার ধারণা ব্যক্ত করো। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, এটিকে (আয়াতটি) কর্মের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন, কী ধরণের কর্মের উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে? আবদুল্লাহ ইবনে আববাস বললেন, শুধুমাত্র কর্মের উদাহরণ। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, এমন একজন সম্পদশালী লোকের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যে মহান ও ক্ষমতাশালী আল্লাহ তা‘আলার অনুগত গোলাম হিসেবে কাজ করে। এরপর আল্লাহ তার কাছে শয়তানকে পাঠিয়ে দেন, ফলে সে অবাধ্যতামূলক আমল করে। এমনকি তার সমস্ত কর্মকে নষ্ট করে দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৩৮।]
শয়তান মানুষকে কবরপূজায় লিপ্ত করে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا صَارَتِ الْأَوْثَانُ الَّتِيْ كَانَتْ فِيْ قَوْمِ نُوْحٍ فِي الْعَرَبِ بَعْدُ، اَمَّا وُدٌّ كَانَتْ لِكَلْبٍ بِدَوْمَةِ الْجَنْدَلِ، وَأَمَّا سُوَاعٌ كَانَتْ لِهُذَيْلٍ، وَأَمَّا يَغُوْثُ فَكَانَتْ لِمُرَادٍ ثُمَّ لِبَنِيْ غُطَيْفٍ بِالْجُرُفِ عِنْدَ سَبَا، وَأَمَّا يَعُوْقُ فَكَانَتْ لِهَمْدَانَ، وَأَمَّا نَسْرٌ فَكَانَتْ لِحِمْيَرَ، لِاٰلِ ذِي الْكَلَاعِ . اَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِيْنَ مِنْ قَوْمِ نُوْحٍ، فَلَمَّا هَلَكُوْا اَوْحَى الشَّيْطَانُ اِلٰى قَوْمِهِمْ اَنِ انْصِبُوْا اِلٰى مَجَالِسِهِمُ الَّتِيْ كَانُوْا يَجْلِسُوْنَ اَنْصَابًا، وَسَمُّوْهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوْا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتّٰى اِذَا هَلَكَ أُولٰئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূহ (আঃ) এর কাওমে যেসব মূর্তি ও দেব-দেবীর প্রচলন ছিল, পরবর্তী সময়ে তা আরবদের মধ্যেও চালু হয়েছিল। ওয়াদ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি। দাওমাতুল জানদাল নামক স্থানে ছিল এর মন্দির। আর সূওয়া‘ ছিল মক্কার নিকটবর্তী হুযাইল গোত্রের দেবমূর্তি। ইয়াগুস ছিল প্রথমে মুরাদ গোত্রের, পরে (মুরাদের শাখা গোত্র) বনী গুতাইফের দেবতা। এর আস্তানা ছিল সাবার নিকটবর্তী জাওক নামক স্থানে। আর ইয়া‘ঊক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি। আর নাসর ছিল হিম্য়ার গোত্রের শাখা যুলকালার দেবমূর্তি। নাসর কাওমে নূহের কিছু সৎলোকের নামও ছিল। এ লোকগুলো মারা গেলে তারা যেখানে বসে ইবাদাত করত, পরবর্তীতে শয়তান সেখানে কিছু মূর্তি তৈরি করার জন্য তাদের কাওমের মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। তাই তাদের নামে কিছু মূর্তি তৈরি করে স্থাপন করে। কিন্তু তখনও সেসব মূর্তির পূজা করা হতো না। পরবর্তীতে সমসাময়িক যুগের লোকজন মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকার জ্ঞান বিলুপ্ত হলে জীবিতরা সেগুলোর পূজা করতে শুরু করে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮২০।]
শয়তান মানুষকে মূর্তিপূজায় লিপ্ত করে :
ইয়া‘কূব ইবনে আসিম আস সাক্বাফী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললেন, আপনি এ কেমন হাদীস বর্ণনা করছেন যে, এত এত দিনের মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ অথবা অবিকল কোন শব্দ। তারপর তিনি বললেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, যা ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেবে। আর এ ঘটনা সংঘটিত হবেই। এরপর তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়া ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর মতো হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দেবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দুব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরণের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা এ ধরণের প্রত্যেকের জান কবজ করে নেবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবজ করে নেবে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। তাদের স্বভাব হবে দ্রতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রাণীর ন্যায়। তারা কল্যাণকে কল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শয়তান এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আমার আহবানে সাড়া দেবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন্ বিষয়ের আদেশ করছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তিপূজার নির্দেশ দেবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করবে। আর তখনই শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যে এ আওয়াজ শুনবে সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করবে। এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকবে। আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা শুক্র ফোঁটার অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বর্ণনাকারী নু‘মান (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে হঠাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। অতঃপর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট এসো। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তারপর আবারো বলা হবে, জাহান্নামী দল বের করো। জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? উত্তরে বলা হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শ’ নিরানববই জন। অতঃপর তিনি বললেন, এ-ই তো ঐদিন, যেদিন কিশোরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে। আর এটি একটি চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৭১।]
কোন নারীর সাথে কেউ একা থাকলে শয়তান তৃতীয়জন হিসাবে অবস্থান নেয় :
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : إِيَّاكُمْ وَالدُّخُوْلَ عَلَى النِّسَاءِ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ : الْحَمْوُ الْمَوْتُ . - قَالَ : لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ . وَمَعْنٰى قَوْلِهٖ : اَلْحَمْوُ . يُقَالُ هُوَ أَخُو الزَّوْجِ كَأَنَّهٗ كَرِهَ لَهٗ أَنْ يَخْلُوَ بِهَا .
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান থাকো। তখন এক আনসারী ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তখন নবী ﷺ বললেন, দেবর হলো মৃত্যুর সমান (অর্থাৎ অনাকাঙ্খিত বিপদ) এবং তিনি আরো বলেন, যখনই কোন লোক কোন নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান করে তখন শয়তান সেখানে তৃতীয়জন হিসেবে অবস্থান করে। [তিরমিযী, হা/১২০৪।]
শয়তান মানুষের রগের ভেতর দিয়ে চলে এবং কু-ধারণা সৃষ্টি করে :
عَنْ صَفِيَّةَ زَوْجِ النَّبِيِّ اَنَّهَا جَاءَتْ رَسُوْلَ ا للهِ تَزُوْ هُ فِي اعْتِكَافِه فِي الْمَسْجِدِ، فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَّمَضَانَ، فَتَحَدَّثَتْ عِنْدَه سَاعَةً، ثُمَّ قَامَتْ تَنْقَلِبُ، فَقَامَ النَّبِيُّ مَعَهَا يَقْلِبُهَا، حَتّٰى اِذَا بَلَغَتْ بَابَ الْمَسْجِدِ عِنْدَ بَابِ أُمِّ سَلَمَةَ مَرَّ رَجُلَانِ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَسَلَّمَا عَلٰى رَسُوْلِ ا للهِ فَقَالَ لَهُمَا النَّبِيُّ : عَلٰى رِسْلِكُمَا اِنَّمَا هِيَ صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَىٍّ . فَقَالَا : سُبْحَانَ ا للهِ يَا رَسُوْلَ ا للهِ . وَكَبُرَ عَلَيْهِمَا . فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَبْلُغُ مِنَ الْإِنْسَانِ مَبْلَغَ الدَّمِ، وَإِنِّيْ خَشِيْتُ اَنْ يَقْذِفَ فِيْ قُلُوْبِكُمَا شَيْئًا .
নবী ﷺ এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (একবার) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে দেখা করার জন্য মসজিদে গেলেন। তিনি তখন রমাযানের শেষ দশ দিনে ই‘তিকাফে ছিলেন। সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর কাছে (বসে) কিছু সময় কথাবার্তা বললেন। অতঃপর (ঘরে) ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। নবীও সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন এবং তাঁকে এগিয়ে দেবার জন্য উম্মু সালামা (রাঃ) এর দরজার কাছে মসজিদের দরজা পর্যন্ত গেলেন। তখন দু’জন আনসারী সাহাবী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিলেন। তখন নবী ﷺ তাদেরকে বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা করো। এ মহিলা হলো হুয়াই-এর কন্যা সাফিয়্যা। তাঁরা বললেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন নবী ﷺ বললেন, শয়তান মানুষের শিরায় পৌঁছতে ক্ষমতা রাখে। তাই আমার ভয় হলো, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণার সৃষ্টি করে দেয় কি না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৩৫।]
সন্তান ভূমিষ্ট হলেই শয়তান স্পর্শ করে :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ ا للهِ يَقُوْلُ : مَا مِنْ بَنِيْ اٰدَمَ مَوْلُوْدٌ اِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِيْنَ يُوْلَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِّنْ مَّسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا . ثُمَّ يَقُوْلُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : ﴿وَإِنِّيْ أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই, জন্মের সময় শয়তান যাকে স্পর্শ করে না। সৃষ্টি হওয়ার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করে বলেই সে চিৎকার দিয়ে কাঁদে। তবে মারইয়াম ও তার পুত্র (ঈসা) এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এর কারণ মারইয়ামের মায়ের এ প্রার্থনা وإنَّىْ أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (ইন্নি উ‘ঈযুহা বিকা ওয়া যুর্রিইয়াতাহা মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি মারইয়ামকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩১।]
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : صِيَاحُ الْمَوْلُوْدِ حِيْنَ يَقَعُ نَزْغَةٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চার চিৎকার শয়তানের খোঁচার কারণে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩০।]
শয়তান ভালো কাজ থেকে বিরত রাখতে শপথ করায় :
আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা (আমার পিতা) আবু বকর (রাঃ) একজন কিংবা কয়েকজন মেহমান নিয়ে (বাড়ি) আসলেন। অতঃপর তিনি বেশ কিছু রাত পর্যন্ত নবী ﷺ এর কাছে অতিবাহিত করে ফিরে আসলে আমার আম্মা বললেন, আপনি আপনার মেহমান কিংবা মেহমানদেরকে আজ রাতের খাবার খাওয়াতে দেরী করে ফেলেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এখনো তাদেরকে রাতের খাবার খাওয়াওনি? আম্মা বললেন, আমরা তাঁর বা তাঁদের সামনে খাবার উপস্থিত করেছিলাম; কিন্তু তারা বা তিনি খেতে রাজি হননি। তখন আবু বকর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে গেলেন, দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং খাবার গ্রহণ করবেন না বলে শপথ করলেন। আবদুর রহমান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আত্মগোপন করলে আবু বকর (রাঃ) বললেন, ওরে মূর্খ! তখন তাঁর স্ত্রীও (আমার আম্মা) কসম করলেন, তিনি না খেলে তিনিও খাবেন না। এদিকে মেহমান বা মেহমানগণও কসম করলেন যে, আবু বকর (রাঃ) না খাওয়া পর্যন্ত তারাও খাবেন না। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) বললেন, এটা শয়তানের কাজ। তারপর তিনি খাবার আনতে বললেন এবং নিজে খেলেন, তারাও (মেহমানগণ) খাদ্য খেলেন। (খেতে বসে) তারা যে লোকমাই মুখে উঠাচ্ছিলেন তার নীচ থেকে তার চেয়েও বেশি খাবার বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তা দেখে আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে বনী ফিরাসের বোন! এটা কী, তার স্ত্রীও (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, হে আমার চোখের শীতলতা! আমাদের খাওয়ার আগে যে পরিমাণ খাবার ছিল এখন তো তার চেয়েও বেশি হয়ে গেছে। অতঃপর সবাই মিলে তা খেলেন। আবু বকর (রাঃ) এ (বরকতময়) খাদ্য থেকে কিছু অংশ নবী ﷺ এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। পরে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নবী ﷺ তা খেয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪১।]
শয়তান একে অপরের মধ্যে উস্কানি সৃষ্টি করে :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ اَيِسَ اَنْ يَعْبُدَهُ الْمُصَلُّوْنَ فِيْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ وَلٰكِنْ فِي التَّحْرِيْشِ بَيْنَهُمْ .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আরব ভূখন্ডে মুসল্লীগণ শয়তানের উপাসনা করবে- এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে পড়েছে। তবে তাদের একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়নি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৯৬।]
অস্ত্র দিয়ে মানুষের দিকে ইঙ্গিত করা শয়তানের কাজ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَا يُشِيْرُ اَحَدُكُمْ اِلٰى اَخِيْهِ بِالسِّلَاحِ فَإِنَّه لَا يَدْرِيْ اَحَدُكُمْ لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِيْ يَدِه فَيَقَعُ فِيْ حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ভাই যেন তরবারি দিয়ে তার ভাই-এর প্রতি ইঙ্গিত না করে। কেননা তোমরা জান না, হয়ত শয়তান তার মধ্যে হাত রেখে টানতে থাকে তারপর সে জাহান্নামের গর্তে পড়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৬২।]
যে শয়তান বড় অন্যায় করাতে পারে বড় শয়তান তাকে ভালোবাসে :
عَنْ جَابِرٍ اَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : يَبْعَثُ الشَّيْطَانُ سَرَايَاهُ فَيَفْتِنُوْنَ النَّاسَ فَأَعْظَمُهُمْ عِنْدَه مَنْزِلَةً اَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, শয়তান তার সৈন্য বাহিনীকে পাঠিয়ে লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করে। অতঃপর তাদের মধ্যে সে-ই তার নিকট সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয়, যে অধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০০০।]
‘হাই’ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ اِنَّ ا للهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ، وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ، فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَه اَنْ يَّشَمِّتَه ، وَأَمَّا التَّثَاوُبُ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَرُدَّهٗ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ : هَا . ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে ‘আল্হাম্দু লিল্লাহ’ বললে যে সব মুসলিম তা শুনবে, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হবে ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’ বলে জবাব দেয়া। আর হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং যথাসাধ্য তা রোধ করা উচিত। যখন কোন ব্যক্তি হাই তোলার সময় মুখ খোলে বা হা করে আওয়াজ দেয়, তখন শয়তান তার প্রতি বিদ্রূপ করে হাসে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২২৩।]
শয়তান খারাপ স্বপ্ন দেখায় :
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَلرُّؤْيَا مِنَ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৪৭।]
বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খাবারে শরীক হয়ে যায় :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كُنَّا اِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ اَيْدِيَنَا حَتّٰى يَبْدَأَ رَسُوْلُ اللهِ فَيَضَعَ يَدَهٗ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهٗ مَرَّةً طَعَامًا فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ بِيَدِهَا ثُمَّ جَاءَ اَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهٖ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ اَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهٗ جَاءَ بِهٰذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَجَاءَ بِهٰذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهٖ فَأَخَذْتُ بِيَدِهٖ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّ يَدَهٗ فِيْ يَدِيْ مَعَ يَدِهَا
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমরা কোন খাবার অনুষ্ঠানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে উপবিষ্ট হতাম তখন যতক্ষণ তিনি স্বীয় হাত রেখে আরম্ভ না করতেন ততক্ষণ আমরা আমাদের হাত (আহারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সাথে এক খাবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম। এমনি মুহূর্তে একটি মেয়ে এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সে খাবারে হাত দিতে গেলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে নিলেন।
অতঃপর একজন বেদুঈন এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকেও তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল। তিনি তারও হাত ধরে নিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর নাম স্মরণ করা না হলে শয়তান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। সে এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। অতঃপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে। যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে; কিন্তু আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! অবশ্যই তার (শয়তানের) হাত মেয়েটির হাতসহ আমার হাতের মুঠোয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৫৪।]
শয়তান বাম হাতে খায় :
عَنْ جَابِرٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : لَا تَأْكُلُوْا بِالشِّمَالِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِالشِّمَالِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বাম হাতে আহার করবে না। কারণ, শয়তান বাম হাতে আহার করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৫৯।]
পড়ে যাওয়া খাদ্য না উঠালে শয়তান তাতে অংশ নেয় :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ اَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَىْءٍ مِنْ شَأْنِهٖ حَتّٰى يَحْضُرَهٗ عِنْدَ طَعَامِهٖ فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ اَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ اَذًى ثُمَّ لَيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ اَصَابِعَهٗ فَإِنَّهٗ لَا يَدْرِيْ فِيْ اَىِّ طَعَامِهٖ تَكُوْنُ الْبَرَكَةُ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের সকল কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের কারো যদি লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, তবে সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৯৮।]
শয়তানের বাঁশি হলো ঘণ্টা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ : اَ لْجَرَسُ مَزَامِيْرُ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঘণ্টা হলো শয়তানের বাঁশি। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৪১।]
শয়তানের আড্ডাখানা হলো বাজার :
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ : لَا تَكُوْنَنَّ اِنِ اسْتَطَعْتَ اَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوْقَ وَلَا اٰخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَهٗ
সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে বাজারে প্রবেশকারীদের মাঝে তুমি প্রথম হয়ো না এবং সেখান থেকে বহির্গমনকারীদের মাঝে তুমি শেষ লোক হয়ো না। কেননা বাজার হলো শয়তানের আড্ডাখানা। আর সেখানেই সে তার ঝান্ডা উঁচু করে রাখে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২০৯।]
শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَتَمَثَّلُ فِيْ صُوْرَةِ الرَّجُلِ فَيَأْتِي الْقَوْمَ فَيُحَدِّثُهُمْ بِالْحَدِيْثِ مِنَ الْكَذِبِ فَيَتَفَرَّقُوْنَ فَيَقُوْلُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ سَمِعْتُ رَجُلًا اَعْرِفُ وَجْهَهٗ وَلَا اَدْرِيْ مَا اسْمُهٗ يُحَدِّثُ .
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শয়তান মানুষের আকৃতিতে লোকের কাছে আসে এবং মিথ্যা হাদীস শোনায়। পরে লোকেরা সেখান থেকে পৃথক হয়ে চলে যায়। তারপর তাঁদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে হাদীস বলতে শুনেছি, যার চেহারা দেখলে চিনতে পারব কিন্তু তার নাম জানি না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭।]
শয়তান মুহাম্মাদ ﷺ এর রূপ ধারণ করতে পারে না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ ، فَقَدْ رَاٰنِيْ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُ بِيْ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল সে বাস্তবে আমাকেই দেখল। কেননা শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৯০৫।]
শয়তান আযান ও ইকামত সহ্য করতে পারে না :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ اَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهٗ ضُرَاطٌ حَتّٰى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِيْنَ، فَإِذَا قُضِىَ النِّدَاءَ اَقْبَلَ حَتّٰى اِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ اَدْبَرَ، حَتّٰى اِذَا قُضِىَ التَّثْوِيْبَ اَقْبَلَ حَتّٰى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِه ، يَقُوْلُ : اُذْكُرْ كَذَا، اُذْكُرْ كَذَا . لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتّٰى يَظَلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِيْ كَمْ صَلّٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পেছনের দিকে দৌড়াতে থাকে, যাতে সে আযানের শব্দ না শুনতে পায়। আযান শেষ হলে আবার সে ফিরে আসে। অতঃপর যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখনো সে পেছনের দিকে দৌড়াতে থাকে। ইকামত শেষ হলে আবার সে ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। সে বলে, তুমি এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো। অতঃপর যা তার স্মরণে ছিল না এমন কথাও স্মরণ করতে বলে। এমনকি সে কত রাক‘আত নামায পড়ল তাও ভুলে যায়। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭২।]
বান্দা সিজদা দিলে শয়তান কাঁদে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا قَرَأَ ابْنُ اٰدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِيْ يَقُوْلُ يَا وَيْلَهٗ وَفِيْ رِوَايَةِ اَبِيْ كُرَيْبٍ يَا وَيْلِيْ أُمِرَ ابْنُ اٰدَمَ بِالسُّجُوْدِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُوْدِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّارُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, হায়! আমার দুর্ভাগ্য! ইবনে কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হলো। তারপর সে সিজদা করল এবং এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হলো, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম; ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৬।]
শয়তান উমর (রাঃ) কে ভয় পেত :
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِيْ وَقَّاصٍ قَالَ : اِسْتَأْذَنَ عُمَرُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَعِنْدَه نِسَاءٌ مِّنْ قُرَيْشٍ يُكَلِّمْنَهٗ وَيَسْتَكْثِرْنَهٗ عَالِيَةً اَصْوَاتُهُنَّ فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ قُمْنَ يَبْتَدِرْنَ الْحِجَابَ فَأَذِنَ لَه رَسُوْلُ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ يَضْحَكُ فَقَالَ عُمَرُ : اَضْحَكَ اللهُ سِنَّكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَجِبْتُ مِنْ هٰؤُلَاءِ اللَّاتِيْ كُنَّ عِنْدِيْ فَلَمَّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ ابْتَدَرْنَ الْحِجَابَ . قَالَ عُمَرُ : فَأَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَحَقُّ اَنْ يَهَبْنَ ثُمَّ قَالَ عُمَرُ : اَىْ عَدُوَّاتِ اَنْفُسِهِنَّ اَتَهَبْنَنِيْ وَلَا تَهَبْنَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قُلْنَ : نَعَمْ اَنْتَ اَغْلَظُ وَأَفَظُّ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ . قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ قَطُّ سَالِكًا فَجًّا اِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ
সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে প্রবেশের সম্মতি চাইলেন। তখন কুরাইশ নারীরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কথোপকথনে লিপ্ত ছিল এবং তারা উচ্চৈঃস্বরে বেশি বেশি কথা বলছিল। কিন্তু যখন উমর (রাঃ) অনুমতি চাইলেন এরা উঠে অভ্যন্তরে চলে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসছিলেন। উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনার মুখকে হাস্যোজ্জ্বল রাখুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি তাদের ব্যাপারে অবাক হচ্ছি, যারা আমার নিকট উপবিষ্ট ছিল তারা তোমার শব্দ শুনামাত্রই অভ্যন্তরে চলে গেল। উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেই তো এদের অধিক ভয় করা উচিত। তারপর উমর (রাঃ) বললেন, ওহে! নিজের প্রাণের শত্রুরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর; অথচ আল্লাহর রাসূলকে ভয় কর না? তারা বলল, হ্যাঁ- তুমি তো আল্লাহর রাসূলের চেয়ে বেশি তেজস্বী এবং রাগী। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! যখন শয়তান তোমাকে কোন রাস্তায় চলতে দেখে তখন সে তোমার রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ ধরে চলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯৬।]
শয়তান আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْتِيْ أَحَدَكُمْ فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ فَيَقُولُ : اللهُ، فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ فَيَقُوْلُ : اللهُ، فَيَقُوْلُ : مَنْ خَلَقَ اللهَ؟ فَإِذَا وَجَدَ ذٰلِكَ أَحَدُكُمْ، فَلْيَقُلْ : اٰمَنْتُ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ
আবু হুরায়রা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শয়তান তোমাদের নিকট এসে বলে, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন? জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? উত্তরে সে বলে, আল্লাহ। তখন সে আবার প্রশ্ন করে তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন তোমাদের কারো মনে এমন ওয়াসওয়াসা আসবে তখন সে যেন বলে ‘‘আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছি’’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৫৮।]
শয়তান মানুষের নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِذَا اسْتَيْقَظَ اَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهٖ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيْتُ عَلٰى خَيَاشِيْمِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শয়তান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে। [সহীহ মুসিলম, হা/৪৫২।]
মানুষ ঘুমানোর সময় শয়তান মাথার চুলে গিঁট দেয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ اَحَدِكُمْ اِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلٰى مَكَانِ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ، فَاِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَاِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَاَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَاِلَّا اَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় যে, তোমার সম্মুখে আছে লম্বা রাত, অতএব তুমি ঘুমিয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি সজাগ হয়ে আল্লাহকে মনে করে, একটি গিঁট খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর নামায পড়লে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে ভোরে উঠে অপবিত্র মন নিয়ে ও আলস্য সহকারে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২।]
ফজরের সালাত আদায় না করলে শয়তান কানে প্রস্রাব করে দেয় :
عَنْ عَبْدِ ا للهِ قَالَ : ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ رَجُلٌ فَقِيْلَ : مَا زَالَ نَائِمًا حَتّٰى اَصْبَحَ مَا قَامَ اِلَى الصَّلَاةِ، فَقَالَ : بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ اُذُنِه
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ এর সম্মুখে এক লোক সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো- ভোর বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, নামাযের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন নবী ﷺ বললেন, শয়তান তার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৪।]
শয়তান নামাযের মধ্যে দৃষ্টি এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেয় :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ ا للهِ عَنِ الْاِلْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ : هُوَ اخْتِلَاسٌ يَّخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি। জবাবে তিনি বলেন, এটা (শয়তানের) থাবা; শয়তান বান্দার নামাযের মধ্যে এ থাবা দিয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫১।]
শয়তান মানুষের নামাযে গোলমাল সৃষ্টি করে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ اَنَّه صَلّٰى صَلَاةً فَقَالَ : اِنَّ الشَّيْطَانَ عَرَضَ لِيْ فَشَدَّ عَلَىَّ لِيَقْطَعَ الصَّلَاةَ عَلَىَّ فَأَمْكَنَنِي ا للهُ مِنْهُ، فَذَعَتُّه ، وَلَقَدْ هَمَمْتُ اَنْ أُوْثِقَه اِلٰى سَارِيَةٍ حَتّٰى تُصْبِحُوْا فَتَنْظُرُوْا اِلَيْهِ فَذَكَرْتُ قَوْلَ سُلَيْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ : ﴿رَبِّ هَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْۢبَغِيْ لِأَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِيْ﴾ فَرَدَّهُ ا للهُ خَاسِئًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ নামায শেষ করে বললেন, শয়তান আমার সামনে এসে নামায বিনষ্ট করার জন্য আমার উপর আক্রমণ করল। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর বিজয়ী করে দিলেন, ফলে আমি তাকে পরাজিত করলাম এবং তাকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে ইচ্ছা করলাম, যাতে সকালে উঠে তোমরা তাকে দেখতে পাও। কিন্তু সুলায়মান (আঃ) এর একটি কথা আমার স্মরণ হলো। (তিনি আল্লাহর কাছে এ বলে দু‘আ করেছিলেন যে) ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন আমার পরে কেউ এর অধিকারী হবে না’’ [সূরা তূর-১৩।]। অতঃপর আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অপমানিত করে তাড়িয়ে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২১০।]
উল্লেখ্য যে, সুলায়মান (আঃ) যে রাজত্বের জন্য দু‘আ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দান করেছিলেন। এজন্য নবী ﷺ শয়তানকে বেঁধে রাখতে পারতেন, কিন্তু সুলায়মান (আঃ) এর কথা স্মরণ করে তিনি তা করেননি।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ ا للهِ قَالَ : إِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا قَامَ يُصَلِّيْ جَاءَ الشَّيْطَانُ فَلَبَسَ عَلَيْهِ حَتّٰى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلّٰى، فَإِذَا وَجَدَ ذٰلِكَ اَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন শয়তান তার নিকট এসে তার মনে নানা ধরণের সংশয় সৃষ্টি করে দেয়। যার ফলে সে ব্যক্তি মনে রাখতে পারে না যে, কত রাক‘আত নামায পড়েছে। তোমাদের কেউ যখন এমন অবস্থায় পতিত হবে তখন সে বসে বসেই দুটি সিজদা (সিজদায়ে সাহু) করবে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৩২।]
সূর্য উদয়ের সময় শয়তান শিং পেতে রাখে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - قَالَ : فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সূর্যোদয়ের সময় সালাত আদায় করা বন্ধ রাখবে। কারণ সূর্য শয়তানের দুশিংয়ের মধ্যখানে উদিত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪১৯।]
শয়তান মানুষের আমল নষ্ট করাতে চায় :
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، قَالَ قَالَ عُمَرُ يَوْمًا لِّأَصْحَابِ النَّبِيِّ فِيْمَ تَرَوْنَ هٰذِهِ الْاٰيَةَ نَزَلَتْ ﴿أَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَه جَنَّةٌ﴾ قَالُوْا : اَللهُ اَعْلَمُ . فَغَضِبَ عُمَرُ فَقَالَ قُوْلُوْا نَعْلَمُ اَوْ لَا نَعْلَمُ . فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيْ نَفْسِيْ مِنْهَا شَىْءٌ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ . قَالَ عُمَرُ يَا ابْنَ اَخِيْ قُلْ وَلَا تَحْقِرْ نَفْسَكَ . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ضُرِبَتْ مَثَلًا لِعَمَلٍ . قَالَ عُمَرُ اَىُّ عَمَلٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِعَمَلٍ . قَالَ عُمَرُ لِرَجُلٍ غَنِيٍّ يَعْمَلُ بِطَاعَةِ ا للهِ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ بَعَثَ ا للهُ لَهُ الشَّيْطَانَ فَعَمِلَ بِالْمَعَاصِيْ حَتّٰى اَغْرَقَ اَعْمَالَهٗ
উবাইদ ইবনে উমাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন উমর (রাঃ) নবী ﷺ এর সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ﴿اَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَه جَنَّةٌ﴾ আয়াতটি কোন্ উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে? সবাই বললেন, আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। এ কথা শ্রবণ করে উমর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, জানি অথবা জানি না বলুন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ ব্যাপারে আমি একটি ধারণা পোষণ করি। উমর (রাঃ) বললেন, ভাতিজা! তুমি নিজেকে তুচ্ছ ভেব না। তোমার ধারণা ব্যক্ত করো। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, এটিকে (আয়াতটি) কর্মের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন, কী ধরণের কর্মের উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে? আবদুল্লাহ ইবনে আববাস বললেন, শুধুমাত্র কর্মের উদাহরণ। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, এমন একজন সম্পদশালী লোকের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যে মহান ও ক্ষমতাশালী আল্লাহ তা‘আলার অনুগত গোলাম হিসেবে কাজ করে। এরপর আল্লাহ তার কাছে শয়তানকে পাঠিয়ে দেন, ফলে সে অবাধ্যতামূলক আমল করে। এমনকি তার সমস্ত কর্মকে নষ্ট করে দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৩৮।]
শয়তান মানুষকে কবরপূজায় লিপ্ত করে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا صَارَتِ الْأَوْثَانُ الَّتِيْ كَانَتْ فِيْ قَوْمِ نُوْحٍ فِي الْعَرَبِ بَعْدُ، اَمَّا وُدٌّ كَانَتْ لِكَلْبٍ بِدَوْمَةِ الْجَنْدَلِ، وَأَمَّا سُوَاعٌ كَانَتْ لِهُذَيْلٍ، وَأَمَّا يَغُوْثُ فَكَانَتْ لِمُرَادٍ ثُمَّ لِبَنِيْ غُطَيْفٍ بِالْجُرُفِ عِنْدَ سَبَا، وَأَمَّا يَعُوْقُ فَكَانَتْ لِهَمْدَانَ، وَأَمَّا نَسْرٌ فَكَانَتْ لِحِمْيَرَ، لِاٰلِ ذِي الْكَلَاعِ . اَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِيْنَ مِنْ قَوْمِ نُوْحٍ، فَلَمَّا هَلَكُوْا اَوْحَى الشَّيْطَانُ اِلٰى قَوْمِهِمْ اَنِ انْصِبُوْا اِلٰى مَجَالِسِهِمُ الَّتِيْ كَانُوْا يَجْلِسُوْنَ اَنْصَابًا، وَسَمُّوْهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوْا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتّٰى اِذَا هَلَكَ أُولٰئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূহ (আঃ) এর কাওমে যেসব মূর্তি ও দেব-দেবীর প্রচলন ছিল, পরবর্তী সময়ে তা আরবদের মধ্যেও চালু হয়েছিল। ওয়াদ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি। দাওমাতুল জানদাল নামক স্থানে ছিল এর মন্দির। আর সূওয়া‘ ছিল মক্কার নিকটবর্তী হুযাইল গোত্রের দেবমূর্তি। ইয়াগুস ছিল প্রথমে মুরাদ গোত্রের, পরে (মুরাদের শাখা গোত্র) বনী গুতাইফের দেবতা। এর আস্তানা ছিল সাবার নিকটবর্তী জাওক নামক স্থানে। আর ইয়া‘ঊক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি। আর নাসর ছিল হিম্য়ার গোত্রের শাখা যুলকালার দেবমূর্তি। নাসর কাওমে নূহের কিছু সৎলোকের নামও ছিল। এ লোকগুলো মারা গেলে তারা যেখানে বসে ইবাদাত করত, পরবর্তীতে শয়তান সেখানে কিছু মূর্তি তৈরি করার জন্য তাদের কাওমের মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। তাই তাদের নামে কিছু মূর্তি তৈরি করে স্থাপন করে। কিন্তু তখনও সেসব মূর্তির পূজা করা হতো না। পরবর্তীতে সমসাময়িক যুগের লোকজন মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকার জ্ঞান বিলুপ্ত হলে জীবিতরা সেগুলোর পূজা করতে শুরু করে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮২০।]
শয়তান মানুষকে মূর্তিপূজায় লিপ্ত করে :
ইয়া‘কূব ইবনে আসিম আস সাক্বাফী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললেন, আপনি এ কেমন হাদীস বর্ণনা করছেন যে, এত এত দিনের মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ অথবা অবিকল কোন শব্দ। তারপর তিনি বললেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, যা ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেবে। আর এ ঘটনা সংঘটিত হবেই। এরপর তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়া ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর মতো হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দেবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দুব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরণের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা এ ধরণের প্রত্যেকের জান কবজ করে নেবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবজ করে নেবে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। তাদের স্বভাব হবে দ্রতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রাণীর ন্যায়। তারা কল্যাণকে কল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শয়তান এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আমার আহবানে সাড়া দেবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন্ বিষয়ের আদেশ করছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তিপূজার নির্দেশ দেবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করবে। আর তখনই শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যে এ আওয়াজ শুনবে সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করবে। এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকবে। আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা শুক্র ফোঁটার অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বর্ণনাকারী নু‘মান (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে হঠাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। অতঃপর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট এসো। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তারপর আবারো বলা হবে, জাহান্নামী দল বের করো। জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? উত্তরে বলা হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শ’ নিরানববই জন। অতঃপর তিনি বললেন, এ-ই তো ঐদিন, যেদিন কিশোরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে। আর এটি একটি চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৭১।]
কোন নারীর সাথে কেউ একা থাকলে শয়তান তৃতীয়জন হিসাবে অবস্থান নেয় :
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : إِيَّاكُمْ وَالدُّخُوْلَ عَلَى النِّسَاءِ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ : الْحَمْوُ الْمَوْتُ . - قَالَ : لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ . وَمَعْنٰى قَوْلِهٖ : اَلْحَمْوُ . يُقَالُ هُوَ أَخُو الزَّوْجِ كَأَنَّهٗ كَرِهَ لَهٗ أَنْ يَخْلُوَ بِهَا .
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান থাকো। তখন এক আনসারী ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তখন নবী ﷺ বললেন, দেবর হলো মৃত্যুর সমান (অর্থাৎ অনাকাঙ্খিত বিপদ) এবং তিনি আরো বলেন, যখনই কোন লোক কোন নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান করে তখন শয়তান সেখানে তৃতীয়জন হিসেবে অবস্থান করে। [তিরমিযী, হা/১২০৪।]
শয়তান মানুষের রগের ভেতর দিয়ে চলে এবং কু-ধারণা সৃষ্টি করে :
عَنْ صَفِيَّةَ زَوْجِ النَّبِيِّ اَنَّهَا جَاءَتْ رَسُوْلَ ا للهِ تَزُوْ هُ فِي اعْتِكَافِه فِي الْمَسْجِدِ، فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَّمَضَانَ، فَتَحَدَّثَتْ عِنْدَه سَاعَةً، ثُمَّ قَامَتْ تَنْقَلِبُ، فَقَامَ النَّبِيُّ مَعَهَا يَقْلِبُهَا، حَتّٰى اِذَا بَلَغَتْ بَابَ الْمَسْجِدِ عِنْدَ بَابِ أُمِّ سَلَمَةَ مَرَّ رَجُلَانِ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَسَلَّمَا عَلٰى رَسُوْلِ ا للهِ فَقَالَ لَهُمَا النَّبِيُّ : عَلٰى رِسْلِكُمَا اِنَّمَا هِيَ صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَىٍّ . فَقَالَا : سُبْحَانَ ا للهِ يَا رَسُوْلَ ا للهِ . وَكَبُرَ عَلَيْهِمَا . فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَبْلُغُ مِنَ الْإِنْسَانِ مَبْلَغَ الدَّمِ، وَإِنِّيْ خَشِيْتُ اَنْ يَقْذِفَ فِيْ قُلُوْبِكُمَا شَيْئًا .
নবী ﷺ এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (একবার) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে দেখা করার জন্য মসজিদে গেলেন। তিনি তখন রমাযানের শেষ দশ দিনে ই‘তিকাফে ছিলেন। সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর কাছে (বসে) কিছু সময় কথাবার্তা বললেন। অতঃপর (ঘরে) ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। নবীও সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন এবং তাঁকে এগিয়ে দেবার জন্য উম্মু সালামা (রাঃ) এর দরজার কাছে মসজিদের দরজা পর্যন্ত গেলেন। তখন দু’জন আনসারী সাহাবী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিলেন। তখন নবী ﷺ তাদেরকে বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা করো। এ মহিলা হলো হুয়াই-এর কন্যা সাফিয়্যা। তাঁরা বললেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন নবী ﷺ বললেন, শয়তান মানুষের শিরায় পৌঁছতে ক্ষমতা রাখে। তাই আমার ভয় হলো, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণার সৃষ্টি করে দেয় কি না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৩৫।]
সন্তান ভূমিষ্ট হলেই শয়তান স্পর্শ করে :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ ا للهِ يَقُوْلُ : مَا مِنْ بَنِيْ اٰدَمَ مَوْلُوْدٌ اِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِيْنَ يُوْلَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِّنْ مَّسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا . ثُمَّ يَقُوْلُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : ﴿وَإِنِّيْ أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই, জন্মের সময় শয়তান যাকে স্পর্শ করে না। সৃষ্টি হওয়ার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করে বলেই সে চিৎকার দিয়ে কাঁদে। তবে মারইয়াম ও তার পুত্র (ঈসা) এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এর কারণ মারইয়ামের মায়ের এ প্রার্থনা وإنَّىْ أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (ইন্নি উ‘ঈযুহা বিকা ওয়া যুর্রিইয়াতাহা মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি মারইয়ামকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩১।]
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : صِيَاحُ الْمَوْلُوْدِ حِيْنَ يَقَعُ نَزْغَةٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চার চিৎকার শয়তানের খোঁচার কারণে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩০।]
শয়তান ভালো কাজ থেকে বিরত রাখতে শপথ করায় :
আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা (আমার পিতা) আবু বকর (রাঃ) একজন কিংবা কয়েকজন মেহমান নিয়ে (বাড়ি) আসলেন। অতঃপর তিনি বেশ কিছু রাত পর্যন্ত নবী ﷺ এর কাছে অতিবাহিত করে ফিরে আসলে আমার আম্মা বললেন, আপনি আপনার মেহমান কিংবা মেহমানদেরকে আজ রাতের খাবার খাওয়াতে দেরী করে ফেলেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এখনো তাদেরকে রাতের খাবার খাওয়াওনি? আম্মা বললেন, আমরা তাঁর বা তাঁদের সামনে খাবার উপস্থিত করেছিলাম; কিন্তু তারা বা তিনি খেতে রাজি হননি। তখন আবু বকর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে গেলেন, দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং খাবার গ্রহণ করবেন না বলে শপথ করলেন। আবদুর রহমান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আত্মগোপন করলে আবু বকর (রাঃ) বললেন, ওরে মূর্খ! তখন তাঁর স্ত্রীও (আমার আম্মা) কসম করলেন, তিনি না খেলে তিনিও খাবেন না। এদিকে মেহমান বা মেহমানগণও কসম করলেন যে, আবু বকর (রাঃ) না খাওয়া পর্যন্ত তারাও খাবেন না। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) বললেন, এটা শয়তানের কাজ। তারপর তিনি খাবার আনতে বললেন এবং নিজে খেলেন, তারাও (মেহমানগণ) খাদ্য খেলেন। (খেতে বসে) তারা যে লোকমাই মুখে উঠাচ্ছিলেন তার নীচ থেকে তার চেয়েও বেশি খাবার বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তা দেখে আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে বনী ফিরাসের বোন! এটা কী, তার স্ত্রীও (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, হে আমার চোখের শীতলতা! আমাদের খাওয়ার আগে যে পরিমাণ খাবার ছিল এখন তো তার চেয়েও বেশি হয়ে গেছে। অতঃপর সবাই মিলে তা খেলেন। আবু বকর (রাঃ) এ (বরকতময়) খাদ্য থেকে কিছু অংশ নবী ﷺ এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। পরে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নবী ﷺ তা খেয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪১।]
শয়তান একে অপরের মধ্যে উস্কানি সৃষ্টি করে :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ اَيِسَ اَنْ يَعْبُدَهُ الْمُصَلُّوْنَ فِيْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ وَلٰكِنْ فِي التَّحْرِيْشِ بَيْنَهُمْ .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আরব ভূখন্ডে মুসল্লীগণ শয়তানের উপাসনা করবে- এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে পড়েছে। তবে তাদের একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়নি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৯৬।]
অস্ত্র দিয়ে মানুষের দিকে ইঙ্গিত করা শয়তানের কাজ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَا يُشِيْرُ اَحَدُكُمْ اِلٰى اَخِيْهِ بِالسِّلَاحِ فَإِنَّه لَا يَدْرِيْ اَحَدُكُمْ لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِيْ يَدِه فَيَقَعُ فِيْ حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ভাই যেন তরবারি দিয়ে তার ভাই-এর প্রতি ইঙ্গিত না করে। কেননা তোমরা জান না, হয়ত শয়তান তার মধ্যে হাত রেখে টানতে থাকে তারপর সে জাহান্নামের গর্তে পড়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৬২।]
যে শয়তান বড় অন্যায় করাতে পারে বড় শয়তান তাকে ভালোবাসে :
عَنْ جَابِرٍ اَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : يَبْعَثُ الشَّيْطَانُ سَرَايَاهُ فَيَفْتِنُوْنَ النَّاسَ فَأَعْظَمُهُمْ عِنْدَه مَنْزِلَةً اَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, শয়তান তার সৈন্য বাহিনীকে পাঠিয়ে লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করে। অতঃপর তাদের মধ্যে সে-ই তার নিকট সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয়, যে অধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০০০।]
‘হাই’ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ اِنَّ ا للهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ، وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ، فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَه اَنْ يَّشَمِّتَه ، وَأَمَّا التَّثَاوُبُ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَرُدَّهٗ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ : هَا . ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে ‘আল্হাম্দু লিল্লাহ’ বললে যে সব মুসলিম তা শুনবে, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হবে ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’ বলে জবাব দেয়া। আর হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং যথাসাধ্য তা রোধ করা উচিত। যখন কোন ব্যক্তি হাই তোলার সময় মুখ খোলে বা হা করে আওয়াজ দেয়, তখন শয়তান তার প্রতি বিদ্রূপ করে হাসে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২২৩।]
শয়তান খারাপ স্বপ্ন দেখায় :
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَلرُّؤْيَا مِنَ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৪৭।]
বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খাবারে শরীক হয়ে যায় :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كُنَّا اِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ اَيْدِيَنَا حَتّٰى يَبْدَأَ رَسُوْلُ اللهِ فَيَضَعَ يَدَهٗ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهٗ مَرَّةً طَعَامًا فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ بِيَدِهَا ثُمَّ جَاءَ اَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهٖ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ اَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهٗ جَاءَ بِهٰذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَجَاءَ بِهٰذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهٖ فَأَخَذْتُ بِيَدِهٖ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّ يَدَهٗ فِيْ يَدِيْ مَعَ يَدِهَا
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমরা কোন খাবার অনুষ্ঠানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে উপবিষ্ট হতাম তখন যতক্ষণ তিনি স্বীয় হাত রেখে আরম্ভ না করতেন ততক্ষণ আমরা আমাদের হাত (আহারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সাথে এক খাবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম। এমনি মুহূর্তে একটি মেয়ে এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সে খাবারে হাত দিতে গেলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে নিলেন।
অতঃপর একজন বেদুঈন এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকেও তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল। তিনি তারও হাত ধরে নিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর নাম স্মরণ করা না হলে শয়তান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। সে এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। অতঃপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে। যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে; কিন্তু আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! অবশ্যই তার (শয়তানের) হাত মেয়েটির হাতসহ আমার হাতের মুঠোয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৫৪।]
শয়তান বাম হাতে খায় :
عَنْ جَابِرٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : لَا تَأْكُلُوْا بِالشِّمَالِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِالشِّمَالِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বাম হাতে আহার করবে না। কারণ, শয়তান বাম হাতে আহার করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৫৯।]
পড়ে যাওয়া খাদ্য না উঠালে শয়তান তাতে অংশ নেয় :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ اَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَىْءٍ مِنْ شَأْنِهٖ حَتّٰى يَحْضُرَهٗ عِنْدَ طَعَامِهٖ فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ اَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ اَذًى ثُمَّ لَيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ اَصَابِعَهٗ فَإِنَّهٗ لَا يَدْرِيْ فِيْ اَىِّ طَعَامِهٖ تَكُوْنُ الْبَرَكَةُ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের সকল কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের কারো যদি লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, তবে সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৯৮।]
শয়তানের বাঁশি হলো ঘণ্টা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ : اَ لْجَرَسُ مَزَامِيْرُ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঘণ্টা হলো শয়তানের বাঁশি। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৪১।]
শয়তানের আড্ডাখানা হলো বাজার :
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ : لَا تَكُوْنَنَّ اِنِ اسْتَطَعْتَ اَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوْقَ وَلَا اٰخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَهٗ
সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে বাজারে প্রবেশকারীদের মাঝে তুমি প্রথম হয়ো না এবং সেখান থেকে বহির্গমনকারীদের মাঝে তুমি শেষ লোক হয়ো না। কেননা বাজার হলো শয়তানের আড্ডাখানা। আর সেখানেই সে তার ঝান্ডা উঁচু করে রাখে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২০৯।]
শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَتَمَثَّلُ فِيْ صُوْرَةِ الرَّجُلِ فَيَأْتِي الْقَوْمَ فَيُحَدِّثُهُمْ بِالْحَدِيْثِ مِنَ الْكَذِبِ فَيَتَفَرَّقُوْنَ فَيَقُوْلُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ سَمِعْتُ رَجُلًا اَعْرِفُ وَجْهَهٗ وَلَا اَدْرِيْ مَا اسْمُهٗ يُحَدِّثُ .
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শয়তান মানুষের আকৃতিতে লোকের কাছে আসে এবং মিথ্যা হাদীস শোনায়। পরে লোকেরা সেখান থেকে পৃথক হয়ে চলে যায়। তারপর তাঁদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে হাদীস বলতে শুনেছি, যার চেহারা দেখলে চিনতে পারব কিন্তু তার নাম জানি না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭।]
শয়তান মুহাম্মাদ ﷺ এর রূপ ধারণ করতে পারে না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ ، فَقَدْ رَاٰنِيْ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُ بِيْ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল সে বাস্তবে আমাকেই দেখল। কেননা শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৯০৫।]
শয়তান আযান ও ইকামত সহ্য করতে পারে না :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ اَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهٗ ضُرَاطٌ حَتّٰى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِيْنَ، فَإِذَا قُضِىَ النِّدَاءَ اَقْبَلَ حَتّٰى اِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ اَدْبَرَ، حَتّٰى اِذَا قُضِىَ التَّثْوِيْبَ اَقْبَلَ حَتّٰى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِه ، يَقُوْلُ : اُذْكُرْ كَذَا، اُذْكُرْ كَذَا . لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتّٰى يَظَلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِيْ كَمْ صَلّٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পেছনের দিকে দৌড়াতে থাকে, যাতে সে আযানের শব্দ না শুনতে পায়। আযান শেষ হলে আবার সে ফিরে আসে। অতঃপর যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখনো সে পেছনের দিকে দৌড়াতে থাকে। ইকামত শেষ হলে আবার সে ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। সে বলে, তুমি এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো। অতঃপর যা তার স্মরণে ছিল না এমন কথাও স্মরণ করতে বলে। এমনকি সে কত রাক‘আত নামায পড়ল তাও ভুলে যায়। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭২।]
বান্দা সিজদা দিলে শয়তান কাঁদে :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا قَرَأَ ابْنُ اٰدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِيْ يَقُوْلُ يَا وَيْلَهٗ وَفِيْ رِوَايَةِ اَبِيْ كُرَيْبٍ يَا وَيْلِيْ أُمِرَ ابْنُ اٰدَمَ بِالسُّجُوْدِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُوْدِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّارُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, হায়! আমার দুর্ভাগ্য! ইবনে কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হলো। তারপর সে সিজদা করল এবং এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হলো, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম; ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৬।]
শয়তান উমর (রাঃ) কে ভয় পেত :
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِيْ وَقَّاصٍ قَالَ : اِسْتَأْذَنَ عُمَرُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَعِنْدَه نِسَاءٌ مِّنْ قُرَيْشٍ يُكَلِّمْنَهٗ وَيَسْتَكْثِرْنَهٗ عَالِيَةً اَصْوَاتُهُنَّ فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ قُمْنَ يَبْتَدِرْنَ الْحِجَابَ فَأَذِنَ لَه رَسُوْلُ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ يَضْحَكُ فَقَالَ عُمَرُ : اَضْحَكَ اللهُ سِنَّكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَجِبْتُ مِنْ هٰؤُلَاءِ اللَّاتِيْ كُنَّ عِنْدِيْ فَلَمَّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ ابْتَدَرْنَ الْحِجَابَ . قَالَ عُمَرُ : فَأَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَحَقُّ اَنْ يَهَبْنَ ثُمَّ قَالَ عُمَرُ : اَىْ عَدُوَّاتِ اَنْفُسِهِنَّ اَتَهَبْنَنِيْ وَلَا تَهَبْنَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قُلْنَ : نَعَمْ اَنْتَ اَغْلَظُ وَأَفَظُّ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ . قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ قَطُّ سَالِكًا فَجًّا اِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ
সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে প্রবেশের সম্মতি চাইলেন। তখন কুরাইশ নারীরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কথোপকথনে লিপ্ত ছিল এবং তারা উচ্চৈঃস্বরে বেশি বেশি কথা বলছিল। কিন্তু যখন উমর (রাঃ) অনুমতি চাইলেন এরা উঠে অভ্যন্তরে চলে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসছিলেন। উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনার মুখকে হাস্যোজ্জ্বল রাখুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি তাদের ব্যাপারে অবাক হচ্ছি, যারা আমার নিকট উপবিষ্ট ছিল তারা তোমার শব্দ শুনামাত্রই অভ্যন্তরে চলে গেল। উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেই তো এদের অধিক ভয় করা উচিত। তারপর উমর (রাঃ) বললেন, ওহে! নিজের প্রাণের শত্রুরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর; অথচ আল্লাহর রাসূলকে ভয় কর না? তারা বলল, হ্যাঁ- তুমি তো আল্লাহর রাসূলের চেয়ে বেশি তেজস্বী এবং রাগী। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! যখন শয়তান তোমাকে কোন রাস্তায় চলতে দেখে তখন সে তোমার রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ ধরে চলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯৬।]
মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তান সব ধরণের পথ অবলম্বন করে। সে এমন সব পথে প্রবেশ করে যে, অধিকাংশ মানুষ তা অনুভব করতে পারে না। এজন্য শয়তানের প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ধাপে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এ ধাপগুলো হচ্ছে-
১। শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করতে চেষ্টা করে। কেননা যদি কোন মানুষ ঈমান ত্যাগ করে কুফরী অবলম্বন করে তাহলে তার হাজারও ভালো কাজ থাকলেও তা কোন কাজে আসে না। সুতরাং সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য সে কাফির হয়ে যায় এবং সে শয়তানের পরম বন্ধুতে পরিণত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ﴾
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। [সূরা বাক্বারা- ১৬।]
২। শয়তান মানুষকে শিরকে লিপ্ত করে :
কোন মানুষ যদি কুফর ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করে, তাহলে শয়তান তাকে শিরকের মধ্যে লিপ্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। যদি তাকে শিরকে লিপ্ত করতে পারে, তবে সে সফল হয়। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ মুমিন দাবি করা সত্ত্বেও মুশরিক হয়ে যায়। ফলে তার জীবনের সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং পরকালে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ﴾
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ফলে তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা মায়েদা– ৭২।]
৩। শয়তান মানুষকে বিদ‘আতে লিপ্ত করে :
যখন কোন মানুষ কুফর ও শিরক ত্যাগ করে নিজেকে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যে লিপ্ত করে তখন শয়তান তাকে দিয়ে এমন কাজ করাতে চায় যার ফলে তার ঐ নেক আমলগুলো কোন কাজে না আসে। এজন্য সে মানুষকে এমন এক অপরাধে লিপ্ত করে, যাকে বলা হয় বিদ‘আত। মানুষ বিদ‘আতী কাজসমূহ সওয়াব মনে করেই করে থাকে। এ কারণে সে বুঝতে পারে না যে, সে ভালো কাজ করেও জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ اَنَا فَرَطُكُمْ عَلٰى الْحَوْضِ فَمَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَه اَبَدًا لَيَرِدُ عَلَيَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ وَأَنَا أُحَدِّثُهُمْ هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ وَأَنَا اَشْهَدُ عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُه يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ اِنَّهُمْ مِنِّيْ فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَأَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি (কিয়ামতের দিন) হাওজে কাওসারের স্থানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব। যে সেখানে পৌঁছবে, সে সেখান থেকে পান করতে পারবে। আর যে সেখান থেকে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। (আমি দেখতে পাব) কিছু লোক আমার দিকে আগমন করবে এবং আমি তাদেরকে চিনতেও পারব; আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু পরে আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা টেনে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ! এরা তো আমার উম্মত। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি জান না- তোমার পর এরা তোমার দ্বীনের মধ্যে কত বিদ‘আত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা আমার থেকে দূর হয়ে যাক। [সহীহ বুখারী, হা/৬২১২।]
৪। শয়তান মানুষকে কুসংস্কারে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে বিভিন্ন কুসংস্কারে লিপ্ত করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। সমাজে প্রচলিত অনেক কাজ এমন আছে যেগুলোকে মানুষ সামাজিক প্রথা হিসেবে পালন করে। অথচ এসব কুসংস্কারের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্নভাবে বিজাতির অনুসরণ করে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اِبْنِ عُمُرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির অনুসরণ করল, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪০৩১।]
৫। শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহে লিপ্ত করে :
একজন মানুষ মুমিন হলেও তার দায়িত্ব হচ্ছে, সব ধরণের কবীরা গোনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে তাকে জাহান্নামী বানানোর চেষ্টা করে। অথচ সে যদি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে অন্যান্য ছোটখাটো গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا﴾
তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গোনাহ হতে নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাক, তবে আমি তোমাদের (অতীতের) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। [সূরা নিসা- ৩১।]
৬। শয়তান মানুষের সামনে সগীরা গোনাহকে হালকা করে তোলে ধরে :
মানুষ সাধারণত সগীরা গোনাহকে হালকা মনে করে। অথচ সূত্র হচ্ছে, কেউ যদি সগীরা গোনাহকে তুচ্ছ মনে করে অথবা বারবার সগীরা গোনাহ করতে থাকে, তবে তার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। যেহেতু মানুষ সগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয় না, সেজন্য শয়তান বান্দাদেরকে অধিক হারে সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে। আর যারা সবসময় সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত থাকে, অথবা হালালের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ও কবীরা গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اَلْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَّا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهٖ وَعِرْضِهٖ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰى حَوْلَ الْحِمٰى، يُوْشِكُ اَنْ يُوَاقِعَهٗ . اَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، اَلَا اِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهٗ، اَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً اِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ . اَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন চারণভূমির আশপাশে স্বীয় পশু চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। (জেনে রেখো) প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সীমারেখা থাকে। তাই সাবধান! (এ দুনিয়াতে) আল্লাহর সীমারেখা হলো তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা ভালো থাকলে গোটা দেহ ভালো থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হয়ে যাবে তখন গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা হলো ক্বলব তথা অন্তর। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫১।]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ : يَا عَائِشَةُ اِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি ছোট পাপ থেকে সাবধান থাকো। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে এরও অনুসন্ধানকারী রয়েছে। [দারেমী, হা/২৭৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪১৫।]
৭। শয়তান মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে :
শয়তান যখন মানুষকে কোন পাপে লিপ্ত করতে চায়, তখন ঐ পাপের সাময়িক লাভ ও সৌন্দর্যের দিকে তার মনোযোগ আকৃষ্ট করে। যেমনিভাবে শয়তান আদম (আঃ) এর সাথে করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَوَسْوَسَ اِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاۤ اٰدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلٰى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلٰى﴾
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন দানকারী বৃক্ষের কথা ও এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না? [সূরা ত্বা–হা– ১২০।]
৮। শয়তান বিপদের সময় ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ اِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيْفِ وَفِيْ كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلٰى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِا للهِ وَلَا تَعْجِزْ وَإِنْ اَصَابَكَ شَىْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ اَنِّيْ فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا . وَلٰكِنْ قُلْ قَدَرُ اللهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না। আর যদি তোমার উপর কোন বিপদ আসে তাহলে এমন কথা বলো না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হতো না। বরং এ কথা বলো যে, আল্লাহ তা‘আলা যা নির্দিষ্ট করেছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা لَوْ (যদি) শব্দটি শয়তানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৬৭।]
৯। শয়তান মানুষকে অলস করে তোলে :
কথায় বলে, ‘‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’’ শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কর্মবিমুখ ও অলস করে তোলে। বিশেষ করে দ্বীনের কাজের ক্ষেত্রে অলস করে তোলে এবং খারাপ কাজে উৎসাহিত করে। একজন মুমিন কখনোই তার মূল্যবান সময়কে অলসতা করে নষ্ট করতে পারে না। কারণ এ মূল্যবান সময় তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিয়ামত। সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। নবী (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنَ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ اَلصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে ব্যাপারে অনেক লোকই উদাসীন। একটি হচ্ছে, সুস্থতা; আর অপরটি হচ্ছে, অবসর। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৯।]
১০। শয়তান পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া লাগায় :
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং আস্তে আস্তে তা তর্ক ও ঝগড়ায় রূপ নেয়। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ وَإِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে, যেন তারা তোমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আনআম- ১২১।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانِ مَّرِيْدٍ﴾
কতক মানুষ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে। [সূরা হাজ্জ- ৩।]
১১। শয়তান পাপকাজকে চাকচিক্য করে দেখায় :
বদর যুদ্ধের দিন কাফিরদের সাথে গায়িকা মেয়েরা ছিল এবং তারা গানবাজনাও করছিল। আর শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছিল। সে তাদেরকে মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলাচ্ছিল এবং তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল। তাদের কানে কানে সে বলছিল, তোমাদেরকে কে পরাজিত করতে পারে? আমি তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছি। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْ ﴾
যখন শয়তান তাদের কার্যাবলিকে তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল, তখন সে গর্বভরে বলেছিল, কোন মানুষই আজ তোমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না, আমি (সাহায্যার্থে) তোমাদের কাছেই থাকব। [সূরা আনফাল- ৪৮।]
১২। শয়তান হারামকে হালাল বানানোর কৌশল শিখিয়ে দেয় :
নিজেকে যথেষ্ট ভালো মানুষ বলে বিশ্বাস করানো এবং নিজের অন্যায় কাজগুলো নিজেই যুক্তি দিয়ে ন্যায় কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে শয়তান তার উদ্দেশ্য অর্জন করে নেয়। যেমন- কেউ ঘুষ দিয়ে ভাবছে যে, সেটা দোষের কিছু না, কারণ সে নিজে তা তো খাচ্ছে না। আর ঘুষ না দিলে তো কাজটা কোনভাবে করানো যাচ্ছে না। এভাবে সে হালাল ঘুষের প্রচলন শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে হালাল সুদ, হালাল লোন, হালাল ইন্স্যুরেন্স, হালাল লটারি- এ রকম অনেক কিছুই হালাল হয়ে যাওয়া শুরু হয়। যে সিগারেট খায় তাকে যদি বলা হয়, এটা ইসলামি শরীয়াতে হারাম, তবে সে যুক্তি দেখায়- এটা হারাম নয়, মাকরূহ। যে মিলাদ করছে তাকে যদি বলা হয় যে, মিলাদ করা বিদ‘আত, তবে সে বলে, তাহলে এত মানুষ যে এটা করে। শয়তান যেভাবে আদম (আঃ) এর সামনে নত না হওয়ার জন্য যুক্তিতর্ক দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, সে যা করেছে সেটাই ঠিক; সে রকম মানুষ যুক্তি দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, কোন হারামটা আসলে হারাম না। এভাবে সে শয়তানের দলের একজন হয়ে যায়।
১৩। শয়তান সন্দেহ ঢুকিয়ে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয় :
শয়তান মানুষের ভালো কাজগুলোতে সন্দেহ সৃষ্টি করে। তারপর ধীরে ধীরে তার সে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয়। যেমন কেউ প্রতিজ্ঞা করল- সে নিয়মিত নামায পড়বে; তখন শয়তান তার মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়- তোমার কাপড় অপবিত্র, এটা দিয়ে নামায হবে না। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কিছু টাকা দান করবে, তখন শয়তান তার মনে বাজারের তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয় এবং এ কুমন্ত্রণা দেয় যে, আগে কেনাকাটা তারপর দান-খয়রাত। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কুরআন পাঠ করবে। তখন শয়তান তাকে বলে, হাতের কাজ শেষ করে নাও তারপর কুরআন পাঠ করো। অতঃপর হাতের কাজ শেষ হতে হতে জীবন শেষ হয়ে যায়, আল্লাহর বাণীগুলো পাঠ করার সময় আর হয় না।
১৪। শয়তান মানুষকে বিনোদনে লিপ্ত করে কর্তব্য কাজ থেকে দূরে রাখে :
শয়তান যতভাবে পারে মানুষকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তাদের মাথায় হাজারো ধরণের অযথা তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ক ভরিয়ে রাখে, যাতে করে আল্লাহ তাকে কী করতে বলেছেন এবং কী করতে নিষেধ করেছেন, সেটা মনে রাখতে না পারে। যখনি সে একা বসে থাকে বা রাতে বিছানায় শুতে যায়, তখন আর তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে না; বরং তার কানে বাজে ডায়ালগ, চোখ বন্ধ করলে কোন মুভির নাচ-গান বা মারামারির দৃশ্য তার সামনে ভেসে উঠে অথবা সে মুখে কোন হিন্দি গান গুন গুন করতে থাকে। এভাবে সে ফজর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আর আযান হলেই শয়তান তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
এ কারণেই আল্লাহ আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত নামায বুঝে-শুনে, গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছেন, যাতে করে আমরা ভালো জিনিসগুলো ভুলে না যাই। কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেটা করতে পারে না।
এ যুগের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিয়েছে, যেটা আগে ছিল না। আজকালকার তরুণ-তরুণীরা মোবাইল ফোন, টিভি, এসবের মাধ্যমে নাচ-গান দেখে ও শুনে। মোবাইলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেহুদা আড্ডা মারে। এত কিছু করার পর তাদের আর ভালো কিছু করার সময় কোথায়?
আজকাল আর শয়তানদেরকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করার জন্য এত ব্যবস্থা করে ফেলেছে যে, মানবজাতিকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে মানুষরূপী শয়তান দিয়ে পৃথিবী ভরিয়ে ফেলার যে মহাপরিকল্পনা শয়তানের রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত নিষ্ঠার সাথে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে।
১৫। শয়তান মানুষকে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হতে দেয় না :
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন-
﴿وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ﴾
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রেখো) নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। [সূরা ইবরাহীম- ৭।]
এখানে আল্লাহ আমাদেরকে কথা দিয়েছেন যে, যদি আমরা তাঁর কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে দিতেই থাকবেন। নিশ্চয় শয়তান চাইবে না মানুষ শুকরিয়া আদায় করুক এবং আরো ভালো থাকুক। এ কারণে শয়তান মানুষকে কখনই পরিতৃপ্ত হতে দেয় না।
১৬। শয়তান সবসময় সম্মান ও সম্পত্তি হারানোর ভয় দেখায় :
শয়তান মানুষকে অভাবের ভয় দেখানোর পদ্ধতিটি হাজার হাজার বছর থেকে সফলভাবে প্রয়োগ করে আসছে। আজও কোটি কোটি মানুষ সম্পত্তি জমানোর জন্য কাজ করতে করতে তাদের জীবন শেষ করে ফেলে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবরে যায় একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে এবং সমস্ত সম্পত্তি, উপাধি ও ক্ষমতা পেছনে ফেলে। যাদের ঈমান দুর্বল শয়তান তাদেরকে সবসময় এসব কিছু হারানোর ভয়ে রাখে, যাতে করে তারা আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ হয় কৃপণে পরিণত হয়, না হয় সম্পত্তি ধরে রাখার জন্য এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা তারা করে না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন,
﴿اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِۚ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًاؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]
১৭। শয়তান আরো চাওয়ার এবং আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয় :
শয়তান সবসময় আরো চাওয়ার ও আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। মানুষের যতই থাকুক সে আরো চাইবে, সবসময় আরো কিছু পাওয়ার একটা জেদ থাকবে। কারণ যখন মানুষ জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে, তখন সে ধিরস্থির হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কথা ভাবা শুরু করবে। শয়তান কোনভাবেই চায় না এটা হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اَ لْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ ﴾
কবরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রাখে। সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। আবারো সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানতে! (তাহলে সাবধান হয়ে যেতে)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নামকে দেখতে পাবে। অতঃপর অবশ্যই তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। [সূরা তাকাসুর।]
১৮। শয়তান আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয় :
কিছু মানুষ আছে যাদেরকে শয়তান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, অনুভুতি, আবেগ- সবকিছুই শয়তানের দখলে চলে গেছে। এরা কথা বললে খারাপ কথা বলে, এদের কাজগুলো বেশিরভাগই হারাম কাজ। যেমন টিভি দেখলে এরা দেখে তারকাদের সাক্ষাতকার, মিউজিক শো, নানা ধরণের খারাপ সিরিয়াল। মুভি দেখলে দেখে সব মারামারি, খুনাখুনি, হরোর মুভি, না হয় হারাম প্রেম-ভালোবাসা ও পরকীয়ার মুভি। খবরের কাগজে এরা সব হারাম খবর পড়ে- কে কাকে ধর্ষণ করল, কোন মডেলের ছবিতে শরীরের কতখানি দেখা যায়। কম্পিউটারে বসলে এরা ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় সিনেমা, ফেসবুকে পরকীয়া, অবৈধ মেলামেশা, মোবাইল ফোনে গান শুনা, ছবি দেখা, গীবত করা, গোপন খবর ফাঁস করে দেয়া- এসব কাজে ব্যস্ত থাকে। এভাবে এরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ধরণের শয়তানী কাজ করা যায়, তার সবই করে। এরা তাদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে দিয়ে দিয়েছে। তাদের চালকের আসনে আর বিবেক বসে নেই, বসে আছে শয়তান। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
এ ধরণের মানুষদের সম্পর্কে সাবধান। আল্লাহ এদেরকে শয়তানের দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরা আর সাধারণ মানুষ নেই। আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা মানুষরূপী শয়তান। এরা বাবা-মা, ভাইবোন, ছেলেমেয়ে যেই হোক না কেন, সর্বদা এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে থাকতে গিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার কথা ভুলে না যাওয়া হয় অথবা আল্লাহদ্রোহী কোন কাজ শুরু করা না হয়।
আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা পৃথিবীতে এসেছি আল্লাহকে খুশি রেখে নিজে ভালো থাকার জন্য। আল্লাহর বিনিময়ে অন্যদেরকে খুশি রাখার জন্য নয়। তাই কখনো নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেয়া যাবে না। কখনো বাবা-মার অন্যায়ের সমর্থনে নিজেকে শেষ করা যাবে না। মানুষরূপী শয়তান হয়ে জঘন্য কাজ করে নিজের উপর আল্লাহর আক্রমণ ডেকে আনা যাবে না। এদের কাছ থেকে সসম্মানে বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ আল্লাহ আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
শয়তান মানুষকে বোকা বানানোর এ পদ্ধতিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে সফলভাবে ব্যবহার করে আসছে। পৃথিবীতে বহু মানুষকে সে প্রতিনিয়ত বোকা বানিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি তার সহযোগী হয়ে তার কাজ করতে না চাই, তাহলে শয়তানের এসব কৌশলের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে মানুষের পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘায়িত করেছেন। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করা ও ধোঁকা দেয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ। এজন্য সবসময় আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ শয়তান আমাদেরকে পাপে জড়িয়ে দিয়ে সে কেটে পড়ে, আর বিপদে পড়ি আমরা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
﴿اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ﴾
সে (শয়তান) মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]
১। শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করতে চেষ্টা করে। কেননা যদি কোন মানুষ ঈমান ত্যাগ করে কুফরী অবলম্বন করে তাহলে তার হাজারও ভালো কাজ থাকলেও তা কোন কাজে আসে না। সুতরাং সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য সে কাফির হয়ে যায় এবং সে শয়তানের পরম বন্ধুতে পরিণত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ﴾
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। [সূরা বাক্বারা- ১৬।]
২। শয়তান মানুষকে শিরকে লিপ্ত করে :
কোন মানুষ যদি কুফর ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করে, তাহলে শয়তান তাকে শিরকের মধ্যে লিপ্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। যদি তাকে শিরকে লিপ্ত করতে পারে, তবে সে সফল হয়। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ মুমিন দাবি করা সত্ত্বেও মুশরিক হয়ে যায়। ফলে তার জীবনের সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং পরকালে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ﴾
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ফলে তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা মায়েদা– ৭২।]
৩। শয়তান মানুষকে বিদ‘আতে লিপ্ত করে :
যখন কোন মানুষ কুফর ও শিরক ত্যাগ করে নিজেকে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যে লিপ্ত করে তখন শয়তান তাকে দিয়ে এমন কাজ করাতে চায় যার ফলে তার ঐ নেক আমলগুলো কোন কাজে না আসে। এজন্য সে মানুষকে এমন এক অপরাধে লিপ্ত করে, যাকে বলা হয় বিদ‘আত। মানুষ বিদ‘আতী কাজসমূহ সওয়াব মনে করেই করে থাকে। এ কারণে সে বুঝতে পারে না যে, সে ভালো কাজ করেও জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ اَنَا فَرَطُكُمْ عَلٰى الْحَوْضِ فَمَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَه اَبَدًا لَيَرِدُ عَلَيَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ وَأَنَا أُحَدِّثُهُمْ هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ وَأَنَا اَشْهَدُ عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُه يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ اِنَّهُمْ مِنِّيْ فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَأَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি (কিয়ামতের দিন) হাওজে কাওসারের স্থানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব। যে সেখানে পৌঁছবে, সে সেখান থেকে পান করতে পারবে। আর যে সেখান থেকে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। (আমি দেখতে পাব) কিছু লোক আমার দিকে আগমন করবে এবং আমি তাদেরকে চিনতেও পারব; আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু পরে আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা টেনে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ! এরা তো আমার উম্মত। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি জান না- তোমার পর এরা তোমার দ্বীনের মধ্যে কত বিদ‘আত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা আমার থেকে দূর হয়ে যাক। [সহীহ বুখারী, হা/৬২১২।]
৪। শয়তান মানুষকে কুসংস্কারে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে বিভিন্ন কুসংস্কারে লিপ্ত করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। সমাজে প্রচলিত অনেক কাজ এমন আছে যেগুলোকে মানুষ সামাজিক প্রথা হিসেবে পালন করে। অথচ এসব কুসংস্কারের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্নভাবে বিজাতির অনুসরণ করে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اِبْنِ عُمُرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির অনুসরণ করল, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪০৩১।]
৫। শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহে লিপ্ত করে :
একজন মানুষ মুমিন হলেও তার দায়িত্ব হচ্ছে, সব ধরণের কবীরা গোনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে তাকে জাহান্নামী বানানোর চেষ্টা করে। অথচ সে যদি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে অন্যান্য ছোটখাটো গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا﴾
তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গোনাহ হতে নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাক, তবে আমি তোমাদের (অতীতের) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। [সূরা নিসা- ৩১।]
৬। শয়তান মানুষের সামনে সগীরা গোনাহকে হালকা করে তোলে ধরে :
মানুষ সাধারণত সগীরা গোনাহকে হালকা মনে করে। অথচ সূত্র হচ্ছে, কেউ যদি সগীরা গোনাহকে তুচ্ছ মনে করে অথবা বারবার সগীরা গোনাহ করতে থাকে, তবে তার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। যেহেতু মানুষ সগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয় না, সেজন্য শয়তান বান্দাদেরকে অধিক হারে সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে। আর যারা সবসময় সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত থাকে, অথবা হালালের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ও কবীরা গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اَلْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَّا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهٖ وَعِرْضِهٖ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰى حَوْلَ الْحِمٰى، يُوْشِكُ اَنْ يُوَاقِعَهٗ . اَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، اَلَا اِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهٗ، اَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً اِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ . اَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন চারণভূমির আশপাশে স্বীয় পশু চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। (জেনে রেখো) প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সীমারেখা থাকে। তাই সাবধান! (এ দুনিয়াতে) আল্লাহর সীমারেখা হলো তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা ভালো থাকলে গোটা দেহ ভালো থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হয়ে যাবে তখন গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা হলো ক্বলব তথা অন্তর। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫১।]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ : يَا عَائِشَةُ اِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি ছোট পাপ থেকে সাবধান থাকো। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে এরও অনুসন্ধানকারী রয়েছে। [দারেমী, হা/২৭৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪১৫।]
৭। শয়তান মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে :
শয়তান যখন মানুষকে কোন পাপে লিপ্ত করতে চায়, তখন ঐ পাপের সাময়িক লাভ ও সৌন্দর্যের দিকে তার মনোযোগ আকৃষ্ট করে। যেমনিভাবে শয়তান আদম (আঃ) এর সাথে করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَوَسْوَسَ اِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاۤ اٰدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلٰى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلٰى﴾
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন দানকারী বৃক্ষের কথা ও এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না? [সূরা ত্বা–হা– ১২০।]
৮। শয়তান বিপদের সময় ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করায় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ اِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيْفِ وَفِيْ كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلٰى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِا للهِ وَلَا تَعْجِزْ وَإِنْ اَصَابَكَ شَىْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ اَنِّيْ فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا . وَلٰكِنْ قُلْ قَدَرُ اللهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না। আর যদি তোমার উপর কোন বিপদ আসে তাহলে এমন কথা বলো না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হতো না। বরং এ কথা বলো যে, আল্লাহ তা‘আলা যা নির্দিষ্ট করেছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা لَوْ (যদি) শব্দটি শয়তানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৬৭।]
৯। শয়তান মানুষকে অলস করে তোলে :
কথায় বলে, ‘‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’’ শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কর্মবিমুখ ও অলস করে তোলে। বিশেষ করে দ্বীনের কাজের ক্ষেত্রে অলস করে তোলে এবং খারাপ কাজে উৎসাহিত করে। একজন মুমিন কখনোই তার মূল্যবান সময়কে অলসতা করে নষ্ট করতে পারে না। কারণ এ মূল্যবান সময় তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিয়ামত। সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। নবী (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنَ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ اَلصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে ব্যাপারে অনেক লোকই উদাসীন। একটি হচ্ছে, সুস্থতা; আর অপরটি হচ্ছে, অবসর। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৯।]
১০। শয়তান পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া লাগায় :
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং আস্তে আস্তে তা তর্ক ও ঝগড়ায় রূপ নেয়। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ وَإِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে, যেন তারা তোমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আনআম- ১২১।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانِ مَّرِيْدٍ﴾
কতক মানুষ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে। [সূরা হাজ্জ- ৩।]
১১। শয়তান পাপকাজকে চাকচিক্য করে দেখায় :
বদর যুদ্ধের দিন কাফিরদের সাথে গায়িকা মেয়েরা ছিল এবং তারা গানবাজনাও করছিল। আর শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছিল। সে তাদেরকে মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলাচ্ছিল এবং তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল। তাদের কানে কানে সে বলছিল, তোমাদেরকে কে পরাজিত করতে পারে? আমি তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছি। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْ ﴾
যখন শয়তান তাদের কার্যাবলিকে তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল, তখন সে গর্বভরে বলেছিল, কোন মানুষই আজ তোমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না, আমি (সাহায্যার্থে) তোমাদের কাছেই থাকব। [সূরা আনফাল- ৪৮।]
১২। শয়তান হারামকে হালাল বানানোর কৌশল শিখিয়ে দেয় :
নিজেকে যথেষ্ট ভালো মানুষ বলে বিশ্বাস করানো এবং নিজের অন্যায় কাজগুলো নিজেই যুক্তি দিয়ে ন্যায় কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে শয়তান তার উদ্দেশ্য অর্জন করে নেয়। যেমন- কেউ ঘুষ দিয়ে ভাবছে যে, সেটা দোষের কিছু না, কারণ সে নিজে তা তো খাচ্ছে না। আর ঘুষ না দিলে তো কাজটা কোনভাবে করানো যাচ্ছে না। এভাবে সে হালাল ঘুষের প্রচলন শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে হালাল সুদ, হালাল লোন, হালাল ইন্স্যুরেন্স, হালাল লটারি- এ রকম অনেক কিছুই হালাল হয়ে যাওয়া শুরু হয়। যে সিগারেট খায় তাকে যদি বলা হয়, এটা ইসলামি শরীয়াতে হারাম, তবে সে যুক্তি দেখায়- এটা হারাম নয়, মাকরূহ। যে মিলাদ করছে তাকে যদি বলা হয় যে, মিলাদ করা বিদ‘আত, তবে সে বলে, তাহলে এত মানুষ যে এটা করে। শয়তান যেভাবে আদম (আঃ) এর সামনে নত না হওয়ার জন্য যুক্তিতর্ক দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, সে যা করেছে সেটাই ঠিক; সে রকম মানুষ যুক্তি দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, কোন হারামটা আসলে হারাম না। এভাবে সে শয়তানের দলের একজন হয়ে যায়।
১৩। শয়তান সন্দেহ ঢুকিয়ে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয় :
শয়তান মানুষের ভালো কাজগুলোতে সন্দেহ সৃষ্টি করে। তারপর ধীরে ধীরে তার সে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয়। যেমন কেউ প্রতিজ্ঞা করল- সে নিয়মিত নামায পড়বে; তখন শয়তান তার মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়- তোমার কাপড় অপবিত্র, এটা দিয়ে নামায হবে না। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কিছু টাকা দান করবে, তখন শয়তান তার মনে বাজারের তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয় এবং এ কুমন্ত্রণা দেয় যে, আগে কেনাকাটা তারপর দান-খয়রাত। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কুরআন পাঠ করবে। তখন শয়তান তাকে বলে, হাতের কাজ শেষ করে নাও তারপর কুরআন পাঠ করো। অতঃপর হাতের কাজ শেষ হতে হতে জীবন শেষ হয়ে যায়, আল্লাহর বাণীগুলো পাঠ করার সময় আর হয় না।
১৪। শয়তান মানুষকে বিনোদনে লিপ্ত করে কর্তব্য কাজ থেকে দূরে রাখে :
শয়তান যতভাবে পারে মানুষকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তাদের মাথায় হাজারো ধরণের অযথা তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ক ভরিয়ে রাখে, যাতে করে আল্লাহ তাকে কী করতে বলেছেন এবং কী করতে নিষেধ করেছেন, সেটা মনে রাখতে না পারে। যখনি সে একা বসে থাকে বা রাতে বিছানায় শুতে যায়, তখন আর তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে না; বরং তার কানে বাজে ডায়ালগ, চোখ বন্ধ করলে কোন মুভির নাচ-গান বা মারামারির দৃশ্য তার সামনে ভেসে উঠে অথবা সে মুখে কোন হিন্দি গান গুন গুন করতে থাকে। এভাবে সে ফজর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আর আযান হলেই শয়তান তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
এ কারণেই আল্লাহ আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত নামায বুঝে-শুনে, গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছেন, যাতে করে আমরা ভালো জিনিসগুলো ভুলে না যাই। কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেটা করতে পারে না।
এ যুগের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিয়েছে, যেটা আগে ছিল না। আজকালকার তরুণ-তরুণীরা মোবাইল ফোন, টিভি, এসবের মাধ্যমে নাচ-গান দেখে ও শুনে। মোবাইলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেহুদা আড্ডা মারে। এত কিছু করার পর তাদের আর ভালো কিছু করার সময় কোথায়?
আজকাল আর শয়তানদেরকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করার জন্য এত ব্যবস্থা করে ফেলেছে যে, মানবজাতিকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে মানুষরূপী শয়তান দিয়ে পৃথিবী ভরিয়ে ফেলার যে মহাপরিকল্পনা শয়তানের রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত নিষ্ঠার সাথে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে।
১৫। শয়তান মানুষকে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হতে দেয় না :
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন-
﴿وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ﴾
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রেখো) নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। [সূরা ইবরাহীম- ৭।]
এখানে আল্লাহ আমাদেরকে কথা দিয়েছেন যে, যদি আমরা তাঁর কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে দিতেই থাকবেন। নিশ্চয় শয়তান চাইবে না মানুষ শুকরিয়া আদায় করুক এবং আরো ভালো থাকুক। এ কারণে শয়তান মানুষকে কখনই পরিতৃপ্ত হতে দেয় না।
১৬। শয়তান সবসময় সম্মান ও সম্পত্তি হারানোর ভয় দেখায় :
শয়তান মানুষকে অভাবের ভয় দেখানোর পদ্ধতিটি হাজার হাজার বছর থেকে সফলভাবে প্রয়োগ করে আসছে। আজও কোটি কোটি মানুষ সম্পত্তি জমানোর জন্য কাজ করতে করতে তাদের জীবন শেষ করে ফেলে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবরে যায় একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে এবং সমস্ত সম্পত্তি, উপাধি ও ক্ষমতা পেছনে ফেলে। যাদের ঈমান দুর্বল শয়তান তাদেরকে সবসময় এসব কিছু হারানোর ভয়ে রাখে, যাতে করে তারা আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ হয় কৃপণে পরিণত হয়, না হয় সম্পত্তি ধরে রাখার জন্য এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা তারা করে না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন,
﴿اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِۚ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًاؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]
১৭। শয়তান আরো চাওয়ার এবং আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয় :
শয়তান সবসময় আরো চাওয়ার ও আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। মানুষের যতই থাকুক সে আরো চাইবে, সবসময় আরো কিছু পাওয়ার একটা জেদ থাকবে। কারণ যখন মানুষ জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে, তখন সে ধিরস্থির হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কথা ভাবা শুরু করবে। শয়তান কোনভাবেই চায় না এটা হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اَ لْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ ﴾
কবরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রাখে। সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। আবারো সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানতে! (তাহলে সাবধান হয়ে যেতে)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নামকে দেখতে পাবে। অতঃপর অবশ্যই তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। [সূরা তাকাসুর।]
১৮। শয়তান আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয় :
কিছু মানুষ আছে যাদেরকে শয়তান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, অনুভুতি, আবেগ- সবকিছুই শয়তানের দখলে চলে গেছে। এরা কথা বললে খারাপ কথা বলে, এদের কাজগুলো বেশিরভাগই হারাম কাজ। যেমন টিভি দেখলে এরা দেখে তারকাদের সাক্ষাতকার, মিউজিক শো, নানা ধরণের খারাপ সিরিয়াল। মুভি দেখলে দেখে সব মারামারি, খুনাখুনি, হরোর মুভি, না হয় হারাম প্রেম-ভালোবাসা ও পরকীয়ার মুভি। খবরের কাগজে এরা সব হারাম খবর পড়ে- কে কাকে ধর্ষণ করল, কোন মডেলের ছবিতে শরীরের কতখানি দেখা যায়। কম্পিউটারে বসলে এরা ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় সিনেমা, ফেসবুকে পরকীয়া, অবৈধ মেলামেশা, মোবাইল ফোনে গান শুনা, ছবি দেখা, গীবত করা, গোপন খবর ফাঁস করে দেয়া- এসব কাজে ব্যস্ত থাকে। এভাবে এরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ধরণের শয়তানী কাজ করা যায়, তার সবই করে। এরা তাদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে দিয়ে দিয়েছে। তাদের চালকের আসনে আর বিবেক বসে নেই, বসে আছে শয়তান। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
এ ধরণের মানুষদের সম্পর্কে সাবধান। আল্লাহ এদেরকে শয়তানের দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরা আর সাধারণ মানুষ নেই। আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা মানুষরূপী শয়তান। এরা বাবা-মা, ভাইবোন, ছেলেমেয়ে যেই হোক না কেন, সর্বদা এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে থাকতে গিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার কথা ভুলে না যাওয়া হয় অথবা আল্লাহদ্রোহী কোন কাজ শুরু করা না হয়।
আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা পৃথিবীতে এসেছি আল্লাহকে খুশি রেখে নিজে ভালো থাকার জন্য। আল্লাহর বিনিময়ে অন্যদেরকে খুশি রাখার জন্য নয়। তাই কখনো নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেয়া যাবে না। কখনো বাবা-মার অন্যায়ের সমর্থনে নিজেকে শেষ করা যাবে না। মানুষরূপী শয়তান হয়ে জঘন্য কাজ করে নিজের উপর আল্লাহর আক্রমণ ডেকে আনা যাবে না। এদের কাছ থেকে সসম্মানে বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ আল্লাহ আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
শয়তান মানুষকে বোকা বানানোর এ পদ্ধতিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে সফলভাবে ব্যবহার করে আসছে। পৃথিবীতে বহু মানুষকে সে প্রতিনিয়ত বোকা বানিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি তার সহযোগী হয়ে তার কাজ করতে না চাই, তাহলে শয়তানের এসব কৌশলের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে মানুষের পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘায়িত করেছেন। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করা ও ধোঁকা দেয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ। এজন্য সবসময় আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ শয়তান আমাদেরকে পাপে জড়িয়ে দিয়ে সে কেটে পড়ে, আর বিপদে পড়ি আমরা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
﴿اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ﴾
সে (শয়তান) মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]
বর্তমান যুগে ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার মাধ্যমে খারাপ কাজ ছড়িয়ে দিয়ে শয়তান তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে টেলিভিশন। বিজ্ঞানের সৃষ্টি হিসেবে টেলিভিশনের কোন দোষ নেই। তবে এর ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে তার ভালো-মন্দের দিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, টেলিভিশনের মাধ্যমে যা সম্প্রচার করা হচ্ছে তার মধ্যে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি থাকে। যেমন, টেলিভিশনের অপব্যবহারের কয়েকটি ধ্বংসাত্মক দিক হচ্ছে,
১. অবৈধ ছবি দেখা।
২. গায়রে মাহরাম মেয়েদের কণ্ঠ শোনা।
৩. পুরুষরা গায়রে মাহরাম মহিলাদের দেখা।
৪. অশ্লীলতার বিস্তার।
৫. বিজাতীয় অনুকরণ।
৬. সময়ের অপচয়।
৭. লজ্জাশীলতা উঠে যাওয়া।
৮. গান-বাজনার প্রতি আসক্তি।
৯. ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ কমে যাওয়া।
১০. যুবক-যুবতীদের চরিত্র নষ্ট হওয়া।
১১. আল্লাহর ইবাদাতে গাফলতি করা।
১২. মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক কবীরা গোনাহ আছে, যা টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষ অর্জন করছে; অথচ এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ﴾
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। (জেনে রেখো) এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। [সূরা লুক্বমান- ৬।]
টেলিভিশন মানুষের লজ্জা উঠিয়ে দিয়েছে :
মহিলাদেরকে বেপর্দা বানিয়ে বেহায়াপনা প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে টেলিভিশন। অথচ লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। এটা মানুষের চারিত্রিক অলংকার। নবী ﷺ বলেন-
اَ لْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْاِيْمَانِ
লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। [সহীহ বুখারী, হা/৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬১; নাসাঈ, হা/৫০০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৭০৮।]
টেলিভিশনের মাধ্যমে গান-বাজনার বিস্তার ঘটছে :
গান-বাজনা টেলিভিশনের একটি নিয়মিত প্রোগাম। এমনিতেই তো এটা হারাম। কিন্তু টেলিভিশন যেহেতু বেহায়াপনায় পূর্ণ। এজন্য এসব গান-বাজনা বেহায়া মেয়েদের কণ্ঠে পরিবেশন করা হয়। যেসব মেয়েকে কণ্ঠ দিতে দেখা যায় তারাও আবার বেপর্দা যুবতী। গান অন্তরে মুনাফিকীর বীজ বপন করে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,
اَ لْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ
গান অন্তরে মুনাফিকী জন্ম দেয়। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৫৩৫।]
মোটকথা, টেলিভিশনের যত গোনাহ আছে তন্মধ্যে উলেলখযোগ্য গোনাহ হলো, গান-বাজনার গোনাহ। অধিকাংশ টেলিভিশনে দর্শক এ মারাত্মক গুনাহে লিপ্ত রয়েছে। কখনো তাদের ঘর থেকে গানের এমন সুর ওঠে যে, পরস্পরের কথাও শুনা যায় না। এমনও দেখা যায় যে, একদিকে মসজিদে নামায শুরু হয়েছে আর অন্য দিকে টেলিভিশন চলছে। এটা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না। মুসলিম হয়ে কুফুরী কাজের ব্যাপারে তো লজ্জিত হওয়া উচিত।
টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট হয় :
অনেকে ভলিয়ম বাড়িয়ে দিয়ে গান-বাজনা শুনতে থাকে- এটা আশপাশের লোকদের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ প্রতিবেশী চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক ইসলাম তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُولَ اللهِ - - قَالَ : لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮১।]
عَنْ اَبِي شُرَيْحٍ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَايِقَهٗ
আবু শুরাইহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়! আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়! আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়! সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, কে- হে আল্লাহর রাসূল? তখন নবী ﷺ উত্তরে বললেন, যার অনিষ্টতা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১৬।]
টেলিভিশন দেখতে দেখতে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় :
মানুষ যখন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অনবরত পাপ কাজে লিপ্ত থাকে তখন তার অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। তাকে ভালো উপদেশ দিলেও সে তা কাজে লাগাতে চায় না। এমনকি নানা যুক্তি দেখিয়ে সে তার পাপগুলোকে বৈধ করে নিতে চায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
﴿اَفَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُ وَاَضَلَّهُ اللهُ عَلٰى عِلْمٍ وَّخَتَمَ عَلٰى سَمْعِهٖ وَقَلْبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰى بَصَرِهٖ غِشَاوَةًؕ فَمَنْ يَّهْدِيْهِ مِنْ ۢبَعْدِ اللهِؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ﴾
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন; আর তার চক্ষুর উপর রেখে দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে আছে, যে তাকে হেদায়াত করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [সূরা জাসিয়া- ২৩।]
গোনাহের প্রতি ঘৃণাবোধ মন থেকে মুছে যায় :
গোনাহ মুসলিমের নেক কাজকেও ধ্বংস করে দেয়। এজন্য গোনাহ ছাড়ার প্রতি কুরআন ও হাদীসে যতটুকু জোর দেয়া হয়েছে, এত জোর কোন নফল নামাযের জন্যও দেয়া হয়নি। যেমন : আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿وَذَرُوْا ظَاهِرَ الْاِثْمِ وَبَاطِنَهٗ﴾
তোমরা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য গোনাহ ছাড়ো। [সূরা আনআম- ১২০।]
﴿وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾
তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না। [সূরা আনআম- ১৫১।]
অনেক হাদীসে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাগিদ করা হয়েছে। প্রিয় নবী ﷺ বলেন,
وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ
প্রকৃত মুহাজির সে, যে আল্লাহর নিষেধকৃত কাজ থেকে দূরে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/১০; আবু দাউদ, হা/২৪৮৩; নাসাঈ, হা/৪৯৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৩৪।]
গোনাহ না ছেড়ে যে লোক ইবাদাত করে তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যে নড়বড়ে একটি বিল্ডিং-এর ফাউন্ডেশন মজবুত করার চিন্তা না করে তার ভাঙ্গা দেয়ালগুলোকে রঙ করার কাজে ব্যস্ত থাকে।
টেলিভিশন মূল্যবান সময় নষ্ট করে :
সময় মুমিনের এক মূল্যবান সম্পদ। কোন মুমিন এ সম্পদকে অবহেলায় নষ্ট করতে পারে না। কেননা মুমিনের অন্যতম গুণ হলো অনর্থক বিষয়াবলি থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ﴾
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র এবং যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে। [সূরা মু’মিনূন- ১, ৩।]
لَغْوٌ (লাগভুন) বলতে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে বুঝানো হয়, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন এবং যাতে কোন ফায়দা হয় না। তাছাড়া যেগুলোর পরিণাম কল্যাণময় নয় এবং যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয়- তা সবই ‘লাগভুন’ এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, মুমিন অনর্থক ও বেহুদা কথা ও কাজে কান দেয় না, সেদিকে দৃষ্টি দেয় না এবং সে ব্যাপারে কোন প্রকার কৌতুহলও প্রকাশ করে না। যেখানে এ ধরণের কথাবার্তা হতে থাকে, সেখানে সে অংশগ্রহণ করে না। আর যদি কোথাও এসবের মুখোমুখি হয়েও যায়, তাহলে তা এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্ততপক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। এ ছোট্ট ও সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে যে কথা বলা হয়েছে তা আসলে মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। মুমিন এমন এক ব্যক্তি, যার মধ্যে সবসময় দায়িত্বানুভূতি সজাগ থাকে, সে মনে করে দুনিয়াটা আসলে একটা পরীক্ষাগৃহ। যে জিনিসটিকে জীবন, বয়স, সময় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, সেটি আসলে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ। তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ সময়টি দেয়া হয়েছে। যে ছাত্র পরীক্ষার হলে বসে নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে যাচ্ছে, সে যেমন নিজের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পূর্ণ ব্যস্ততা সহকারে তার মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন করে দেয়, ঠিক তেমনি মুমিন ব্যক্তিও গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় কাটায়। ছাত্রটি যেমন এ ঘণ্টাগুলোর একটি সেকেন্ডও অহেতুক কাজে নষ্ট করতে চায় না, ঠিক তেমনি মুমিনও দুনিয়ার সময়কে এমনসব কাজে ব্যয় করে, যা পরিণামের দিক দিয়ে কল্যাণকর। এমনকি সে খেলাধুলা ও আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও এমনসব জিনিস নির্বাচন করে, যা নিছক সময় কাটানোর কারণ হয় না বরং কোন অপেক্ষাকৃত ভালো উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাকে তৈরি করে। তার দৃষ্টিতে সময় অবহেলা করার জিনিস নয় বরং ব্যবহার করার জিনিস। এছাড়াও মুমিন ব্যক্তি সবসময় শান্ত প্রকৃতি এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন গুণের অধিকারী হয়। সে ফলদায়ক কথা বলতে পারে, কিন্তু অহেতুক কথা বলতে পারে না। সে ব্যঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস করতে পারে, কিন্তু ঠাট্টা-তামাসায় মেতে উঠতে পারে না, বাজে ঠাট্টা-মস্করা সহ্য করতে পারে না এবং আনন্দ-ফূর্তির কথাবার্তাকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারে না। মুমিনের কান গালি-গালাজ, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা কথা, গান-বাজনা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে সমাজে এসব চলে ঐ সমাজে সে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।
নশ্বর এ জীবনের হাতেগোণা কয়েকটি শ্বাস প্রশ্বাসই মানুষের জীবনের মূল পুঁজি। এর প্রতিটি সেকেন্ড মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী। প্রিয় নবী ﷺ বলেন-
إِنَّ مِنْ حُسْنِ اِسْلَامِ الْمَرْءِ، تَرَكُهٗ مَالَا يَعْنِيْهِ
একজন মুসলিমের দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অযথা কাজ ছেড়ে দেয়া। [তিরমিযী, হা/২৩১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/২৭৫।]
হাদীসে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَيْسَ يَتَحَسَّرُ اَهْلُ الْجَنَّةِ اِلَّا عَلٰى سَاعَةٍ مَرَّتْ بِهِمْ لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهَا
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জান্নাতবাসীরা একটা ব্যাপার ছাড়া আর কোন ব্যাপারে আফসোস করবে না, যে ব্যাপারে আফসোস করবে তা হলো- দুনিয়ার ঐসব মুহূর্ত যার মধ্যে তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থেকেছে। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১৬৬০৮।]
উদাসীন মুসলিম যার কোন দিন টেলিভিশন দেখা ছাড়া অতিবাহিত হয় না তার একটু বসে চিন্তা করা উচিত যে, এর মাধ্যমে সে পরকালীন জীবনের জন্য কত বড় আফসোসের কারণ তৈরি করছে।
শারীরিক ক্ষতি :
অনেকেই দীর্ঘ রাত জেগে টেলিভিশন দেখে থাকে। শয়তান এ কাজের মাধ্যমে কয়েকটি ফায়দা হাসিল করে :
১. অনেক রাত জেগে থাকার কারণে এই বান্দা ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে পারে না। যার ফলে তার ফরয নামায কাযা হয়ে যায়।
২. যে সময়টাকে আল্লাহ তা‘আলা ঘুমের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেসময় জাগ্রত থাকার কারণে সে শরীরেরও ক্ষতি করে। শারীরিক সুস্থতা এবং নিরাপদ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক বড় নিয়ামত। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ মূল্যবান নিয়ামতের সদ্ব্যবহার করে না। বরং এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنَ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ اَلصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে ব্যাপারে অনেক লোকই উদাসীন। একটি হচ্ছে, সুস্থতা; আর অপরটি হচ্ছে, অবসর। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৯।]
পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয় :
পরিবার-পরিজন আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। পরিবার-পরিজনকে ভরণ-পোষণ দেয়ার জন্য একজন মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু এই পরিবার-পরিজন যাতে জাহান্নামের উপযুক্ত না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখার জন্য পরিবারের প্রধানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْا اَ نْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾
হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজের পরিবারকে ঐ আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর। [সূরা তাহরীম- ৬।]
আয়াতে বর্ণিত ‘আহলুন’ শব্দ দ্বারা স্ত্রী-পুত্র, দাস-দাসী সবাইকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াতের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, মুসলিমদের জন্য সব ফরজসমূহ নিজে শেখা এবং আয়ত্তাধীন লোকদেরকে শেখানো ওয়াজিব।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেক পিতামাতা নিজেরাই তাদের পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অধিকাংশ সময় অভিভাবকরা বাসাবাড়িতে অবস্থান করে না। এই সুযোগে তাদের পরিবারের লোকজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেলিভিশন, মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় তারা নাচ-গান ও অশ্লীল ছবি দেখতে থাকে। যখন অভিভাবক আসার সময় হয় তখন বন্ধ করে দেয়। এভাবে তারা জাহান্নামের উপযুক্ত হচ্ছে। এজন্য পরিবার প্রধানের দায়িত্ব হলো এসব পাপ থেকে যাতে তারা দূরে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা।
যেসব ছেলেমেয়েরা অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে তারা সাধারণত পিতামাতার কথা শুনতে চায় না। এ জন্য মূলত দায়ী অভিভাবকরা। তারা যদি ছোটকাল থেকেই সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতেন এবং পাপমুক্ত পরিবেশে তাদেরকে গড়ে তুলতেন তাহলে তারা অবশ্যই পিতামাতার কথা শুনত এবং তাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করত।
১. অবৈধ ছবি দেখা।
২. গায়রে মাহরাম মেয়েদের কণ্ঠ শোনা।
৩. পুরুষরা গায়রে মাহরাম মহিলাদের দেখা।
৪. অশ্লীলতার বিস্তার।
৫. বিজাতীয় অনুকরণ।
৬. সময়ের অপচয়।
৭. লজ্জাশীলতা উঠে যাওয়া।
৮. গান-বাজনার প্রতি আসক্তি।
৯. ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ কমে যাওয়া।
১০. যুবক-যুবতীদের চরিত্র নষ্ট হওয়া।
১১. আল্লাহর ইবাদাতে গাফলতি করা।
১২. মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক কবীরা গোনাহ আছে, যা টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষ অর্জন করছে; অথচ এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ﴾
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। (জেনে রেখো) এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। [সূরা লুক্বমান- ৬।]
টেলিভিশন মানুষের লজ্জা উঠিয়ে দিয়েছে :
মহিলাদেরকে বেপর্দা বানিয়ে বেহায়াপনা প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে টেলিভিশন। অথচ লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। এটা মানুষের চারিত্রিক অলংকার। নবী ﷺ বলেন-
اَ لْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْاِيْمَانِ
লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। [সহীহ বুখারী, হা/৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৬১; নাসাঈ, হা/৫০০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৭০৮।]
টেলিভিশনের মাধ্যমে গান-বাজনার বিস্তার ঘটছে :
গান-বাজনা টেলিভিশনের একটি নিয়মিত প্রোগাম। এমনিতেই তো এটা হারাম। কিন্তু টেলিভিশন যেহেতু বেহায়াপনায় পূর্ণ। এজন্য এসব গান-বাজনা বেহায়া মেয়েদের কণ্ঠে পরিবেশন করা হয়। যেসব মেয়েকে কণ্ঠ দিতে দেখা যায় তারাও আবার বেপর্দা যুবতী। গান অন্তরে মুনাফিকীর বীজ বপন করে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,
اَ لْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ
গান অন্তরে মুনাফিকী জন্ম দেয়। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৫৩৫।]
মোটকথা, টেলিভিশনের যত গোনাহ আছে তন্মধ্যে উলেলখযোগ্য গোনাহ হলো, গান-বাজনার গোনাহ। অধিকাংশ টেলিভিশনে দর্শক এ মারাত্মক গুনাহে লিপ্ত রয়েছে। কখনো তাদের ঘর থেকে গানের এমন সুর ওঠে যে, পরস্পরের কথাও শুনা যায় না। এমনও দেখা যায় যে, একদিকে মসজিদে নামায শুরু হয়েছে আর অন্য দিকে টেলিভিশন চলছে। এটা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না। মুসলিম হয়ে কুফুরী কাজের ব্যাপারে তো লজ্জিত হওয়া উচিত।
টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট হয় :
অনেকে ভলিয়ম বাড়িয়ে দিয়ে গান-বাজনা শুনতে থাকে- এটা আশপাশের লোকদের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ প্রতিবেশী চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক ইসলাম তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُولَ اللهِ - - قَالَ : لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮১।]
عَنْ اَبِي شُرَيْحٍ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَايِقَهٗ
আবু শুরাইহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়! আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়! আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়! সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, কে- হে আল্লাহর রাসূল? তখন নবী ﷺ উত্তরে বললেন, যার অনিষ্টতা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১৬।]
টেলিভিশন দেখতে দেখতে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় :
মানুষ যখন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অনবরত পাপ কাজে লিপ্ত থাকে তখন তার অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। তাকে ভালো উপদেশ দিলেও সে তা কাজে লাগাতে চায় না। এমনকি নানা যুক্তি দেখিয়ে সে তার পাপগুলোকে বৈধ করে নিতে চায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
﴿اَفَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُ وَاَضَلَّهُ اللهُ عَلٰى عِلْمٍ وَّخَتَمَ عَلٰى سَمْعِهٖ وَقَلْبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰى بَصَرِهٖ غِشَاوَةًؕ فَمَنْ يَّهْدِيْهِ مِنْ ۢبَعْدِ اللهِؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ﴾
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন; আর তার চক্ষুর উপর রেখে দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে আছে, যে তাকে হেদায়াত করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [সূরা জাসিয়া- ২৩।]
গোনাহের প্রতি ঘৃণাবোধ মন থেকে মুছে যায় :
গোনাহ মুসলিমের নেক কাজকেও ধ্বংস করে দেয়। এজন্য গোনাহ ছাড়ার প্রতি কুরআন ও হাদীসে যতটুকু জোর দেয়া হয়েছে, এত জোর কোন নফল নামাযের জন্যও দেয়া হয়নি। যেমন : আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿وَذَرُوْا ظَاهِرَ الْاِثْمِ وَبَاطِنَهٗ﴾
তোমরা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য গোনাহ ছাড়ো। [সূরা আনআম- ১২০।]
﴿وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾
তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না। [সূরা আনআম- ১৫১।]
অনেক হাদীসে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাগিদ করা হয়েছে। প্রিয় নবী ﷺ বলেন,
وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ
প্রকৃত মুহাজির সে, যে আল্লাহর নিষেধকৃত কাজ থেকে দূরে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/১০; আবু দাউদ, হা/২৪৮৩; নাসাঈ, হা/৪৯৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৩৪।]
গোনাহ না ছেড়ে যে লোক ইবাদাত করে তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যে নড়বড়ে একটি বিল্ডিং-এর ফাউন্ডেশন মজবুত করার চিন্তা না করে তার ভাঙ্গা দেয়ালগুলোকে রঙ করার কাজে ব্যস্ত থাকে।
টেলিভিশন মূল্যবান সময় নষ্ট করে :
সময় মুমিনের এক মূল্যবান সম্পদ। কোন মুমিন এ সম্পদকে অবহেলায় নষ্ট করতে পারে না। কেননা মুমিনের অন্যতম গুণ হলো অনর্থক বিষয়াবলি থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ﴾
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র এবং যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে। [সূরা মু’মিনূন- ১, ৩।]
لَغْوٌ (লাগভুন) বলতে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে বুঝানো হয়, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন এবং যাতে কোন ফায়দা হয় না। তাছাড়া যেগুলোর পরিণাম কল্যাণময় নয় এবং যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয়- তা সবই ‘লাগভুন’ এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, মুমিন অনর্থক ও বেহুদা কথা ও কাজে কান দেয় না, সেদিকে দৃষ্টি দেয় না এবং সে ব্যাপারে কোন প্রকার কৌতুহলও প্রকাশ করে না। যেখানে এ ধরণের কথাবার্তা হতে থাকে, সেখানে সে অংশগ্রহণ করে না। আর যদি কোথাও এসবের মুখোমুখি হয়েও যায়, তাহলে তা এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্ততপক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। এ ছোট্ট ও সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে যে কথা বলা হয়েছে তা আসলে মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। মুমিন এমন এক ব্যক্তি, যার মধ্যে সবসময় দায়িত্বানুভূতি সজাগ থাকে, সে মনে করে দুনিয়াটা আসলে একটা পরীক্ষাগৃহ। যে জিনিসটিকে জীবন, বয়স, সময় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, সেটি আসলে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ। তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ সময়টি দেয়া হয়েছে। যে ছাত্র পরীক্ষার হলে বসে নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে যাচ্ছে, সে যেমন নিজের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পূর্ণ ব্যস্ততা সহকারে তার মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন করে দেয়, ঠিক তেমনি মুমিন ব্যক্তিও গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় কাটায়। ছাত্রটি যেমন এ ঘণ্টাগুলোর একটি সেকেন্ডও অহেতুক কাজে নষ্ট করতে চায় না, ঠিক তেমনি মুমিনও দুনিয়ার সময়কে এমনসব কাজে ব্যয় করে, যা পরিণামের দিক দিয়ে কল্যাণকর। এমনকি সে খেলাধুলা ও আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও এমনসব জিনিস নির্বাচন করে, যা নিছক সময় কাটানোর কারণ হয় না বরং কোন অপেক্ষাকৃত ভালো উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাকে তৈরি করে। তার দৃষ্টিতে সময় অবহেলা করার জিনিস নয় বরং ব্যবহার করার জিনিস। এছাড়াও মুমিন ব্যক্তি সবসময় শান্ত প্রকৃতি এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন গুণের অধিকারী হয়। সে ফলদায়ক কথা বলতে পারে, কিন্তু অহেতুক কথা বলতে পারে না। সে ব্যঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস করতে পারে, কিন্তু ঠাট্টা-তামাসায় মেতে উঠতে পারে না, বাজে ঠাট্টা-মস্করা সহ্য করতে পারে না এবং আনন্দ-ফূর্তির কথাবার্তাকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারে না। মুমিনের কান গালি-গালাজ, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা কথা, গান-বাজনা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে সমাজে এসব চলে ঐ সমাজে সে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।
নশ্বর এ জীবনের হাতেগোণা কয়েকটি শ্বাস প্রশ্বাসই মানুষের জীবনের মূল পুঁজি। এর প্রতিটি সেকেন্ড মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী। প্রিয় নবী ﷺ বলেন-
إِنَّ مِنْ حُسْنِ اِسْلَامِ الْمَرْءِ، تَرَكُهٗ مَالَا يَعْنِيْهِ
একজন মুসলিমের দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অযথা কাজ ছেড়ে দেয়া। [তিরমিযী, হা/২৩১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/২৭৫।]
হাদীসে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَيْسَ يَتَحَسَّرُ اَهْلُ الْجَنَّةِ اِلَّا عَلٰى سَاعَةٍ مَرَّتْ بِهِمْ لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهَا
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জান্নাতবাসীরা একটা ব্যাপার ছাড়া আর কোন ব্যাপারে আফসোস করবে না, যে ব্যাপারে আফসোস করবে তা হলো- দুনিয়ার ঐসব মুহূর্ত যার মধ্যে তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থেকেছে। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১৬৬০৮।]
উদাসীন মুসলিম যার কোন দিন টেলিভিশন দেখা ছাড়া অতিবাহিত হয় না তার একটু বসে চিন্তা করা উচিত যে, এর মাধ্যমে সে পরকালীন জীবনের জন্য কত বড় আফসোসের কারণ তৈরি করছে।
শারীরিক ক্ষতি :
অনেকেই দীর্ঘ রাত জেগে টেলিভিশন দেখে থাকে। শয়তান এ কাজের মাধ্যমে কয়েকটি ফায়দা হাসিল করে :
১. অনেক রাত জেগে থাকার কারণে এই বান্দা ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে পারে না। যার ফলে তার ফরয নামায কাযা হয়ে যায়।
২. যে সময়টাকে আল্লাহ তা‘আলা ঘুমের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেসময় জাগ্রত থাকার কারণে সে শরীরেরও ক্ষতি করে। শারীরিক সুস্থতা এবং নিরাপদ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক বড় নিয়ামত। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ মূল্যবান নিয়ামতের সদ্ব্যবহার করে না। বরং এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنَ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ اَلصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে ব্যাপারে অনেক লোকই উদাসীন। একটি হচ্ছে, সুস্থতা; আর অপরটি হচ্ছে, অবসর। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৯।]
পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয় :
পরিবার-পরিজন আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। পরিবার-পরিজনকে ভরণ-পোষণ দেয়ার জন্য একজন মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু এই পরিবার-পরিজন যাতে জাহান্নামের উপযুক্ত না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখার জন্য পরিবারের প্রধানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْا اَ نْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾
হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজের পরিবারকে ঐ আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর। [সূরা তাহরীম- ৬।]
আয়াতে বর্ণিত ‘আহলুন’ শব্দ দ্বারা স্ত্রী-পুত্র, দাস-দাসী সবাইকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াতের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, মুসলিমদের জন্য সব ফরজসমূহ নিজে শেখা এবং আয়ত্তাধীন লোকদেরকে শেখানো ওয়াজিব।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেক পিতামাতা নিজেরাই তাদের পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অধিকাংশ সময় অভিভাবকরা বাসাবাড়িতে অবস্থান করে না। এই সুযোগে তাদের পরিবারের লোকজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেলিভিশন, মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় তারা নাচ-গান ও অশ্লীল ছবি দেখতে থাকে। যখন অভিভাবক আসার সময় হয় তখন বন্ধ করে দেয়। এভাবে তারা জাহান্নামের উপযুক্ত হচ্ছে। এজন্য পরিবার প্রধানের দায়িত্ব হলো এসব পাপ থেকে যাতে তারা দূরে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা।
যেসব ছেলেমেয়েরা অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে তারা সাধারণত পিতামাতার কথা শুনতে চায় না। এ জন্য মূলত দায়ী অভিভাবকরা। তারা যদি ছোটকাল থেকেই সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতেন এবং পাপমুক্ত পরিবেশে তাদেরকে গড়ে তুলতেন তাহলে তারা অবশ্যই পিতামাতার কথা শুনত এবং তাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করত।
বর্তমান যুগে মোবাইল একটি অতি পরিচিত নাম। অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ মোবাইল এখন বাজারে পাওয়া যায়। সম্প্রতি ইন্টারনেট প্রযুক্তিও এ মোবাইলে সংযুক্ত হয়েছে। টিভি, ভিসিডি, কম্পিউটার এসবের কাজ এখন মোবাইলের মাধ্যমেও করা যায়। কিন্তু এই মোবাইল নামক ক্ষুদ্র যন্ত্রটির অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এভাবে শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিল করছে। যেমন-
১. অবৈধ সম্পর্কের অবাধ বিস্তার :
পারিবারিক শাসনের কারণে যারা এতদিন প্রেম বা ভালোবাসার কবলে পড়েনি, তারাও আজ মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলছে। যে যুবক টাকার অভাবে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না, এখন সেও মোবাইলের স্বত্ত্বাধিকারী হয়েছে। নিজের মোবাইল সেটে সজোরে গান শুনছে।
২. গান-বাদ্যের বিস্তার :
রিংটোন মোবাইলের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মোবাইলে লোড করা অধিকাংশ রিংটোনই বাংলা, ইংরেজি বা হিন্দি গানের মিউজিক হয়ে থাকে। অথচ গান-বাদ্যে অংশগ্রহণ করা বা শুনা উভয়ই গুনাহের কাজ। অশ্লীল গান তো আরো মারাত্মক পাপের বিষয়। যারা কোনদিন গান-বাজনা শুনেননি এবং নিজের ধার্মিকতাকে রক্ষা করেছেন, তারাও এ পর্যায়ে মোবাইলে গান বা মিউজিক শুনতে একরকম বাধ্যই হন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে পর্যন্ত গানের রিংটোন বেজে উঠে। মোবাইল বন্ধ না করে সালাত শুরু করলে, কল এসে পড়লে গানের আওয়াজ শুধু এর বাহকের নয়, সকল মুসল্লীর সালাতে ব্যঘাত ঘটায়।
অনেকে গান চালু করে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যদি এই গান শুনা অবস্থায় কেউ মারা যায় তাহলে তার কী অবস্থা হবে, এক বার ভেবে দেখেছেন কি?
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ ﴾
এক শ্রেণির লোক রয়েছে যারা কোনরূপ ইল্ম ছাড়াই (মানুষকে) আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য অনর্থক কথা ক্রয় করে। [সূরা লুকমান- ৬।]
অধিকাংশ মুফাস্সিরগণের মতে, এ আয়াতে লাহওয়াল হাদীস দ্বারা গান-বাজনাকে বুঝানো হয়েছে।
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, (এই আয়াত) গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে অবর্তীণ হয়েছে।
৩. বাদ্যযন্ত্র : আল্লাহ তা‘আলা শয়তানকে লক্ষ্য করে বলেন-
﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ﴾
তাদের মধ্য হতে তুমি যাদেরকে স্বীয় স্বর দ্বারা বিপথগামী করতে পার তাদেরকে বিপথগামী করতে থাকো। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪।]
এখানে স্বর অর্থ : গান ও বাদ্যযন্ত্র।
মোবাইল ব্যবহারকারীদের করণীয় :
১. মোবাইলে কথা বলার শুরুতে ও সমাপ্তিতে বিশুদ্ধভাবে সালাম দিন। অপর পাশ থেকে আগে সালাম দিলে, শুদ্ধভাবে সালামের জবাব দিন।
২. অযথা মিস কল দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. দু-একবার রিং করার পর রিসিভ না করলে, অপর পক্ষ কোন জরুরি কাজে আছে ভেবে আপাতত বিরত থাকুন। প্রয়োজনে পরে আবার কল করুন।
৪. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জামা‘আতের সময় কাউকে কল করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. গভীর রাতে একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন করে অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো থেকে বিরত থাকুন।
৬. মোবাইলে যাতে কখনো কোন নাজায়েয বিষয়ের অবতারণা না হয়, সে ব্যাপারে সবসময় সাবধান থাকুন।
৭. মোবাইলের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
১. অবৈধ সম্পর্কের অবাধ বিস্তার :
পারিবারিক শাসনের কারণে যারা এতদিন প্রেম বা ভালোবাসার কবলে পড়েনি, তারাও আজ মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলছে। যে যুবক টাকার অভাবে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না, এখন সেও মোবাইলের স্বত্ত্বাধিকারী হয়েছে। নিজের মোবাইল সেটে সজোরে গান শুনছে।
২. গান-বাদ্যের বিস্তার :
রিংটোন মোবাইলের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মোবাইলে লোড করা অধিকাংশ রিংটোনই বাংলা, ইংরেজি বা হিন্দি গানের মিউজিক হয়ে থাকে। অথচ গান-বাদ্যে অংশগ্রহণ করা বা শুনা উভয়ই গুনাহের কাজ। অশ্লীল গান তো আরো মারাত্মক পাপের বিষয়। যারা কোনদিন গান-বাজনা শুনেননি এবং নিজের ধার্মিকতাকে রক্ষা করেছেন, তারাও এ পর্যায়ে মোবাইলে গান বা মিউজিক শুনতে একরকম বাধ্যই হন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে পর্যন্ত গানের রিংটোন বেজে উঠে। মোবাইল বন্ধ না করে সালাত শুরু করলে, কল এসে পড়লে গানের আওয়াজ শুধু এর বাহকের নয়, সকল মুসল্লীর সালাতে ব্যঘাত ঘটায়।
অনেকে গান চালু করে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যদি এই গান শুনা অবস্থায় কেউ মারা যায় তাহলে তার কী অবস্থা হবে, এক বার ভেবে দেখেছেন কি?
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ ﴾
এক শ্রেণির লোক রয়েছে যারা কোনরূপ ইল্ম ছাড়াই (মানুষকে) আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য অনর্থক কথা ক্রয় করে। [সূরা লুকমান- ৬।]
অধিকাংশ মুফাস্সিরগণের মতে, এ আয়াতে লাহওয়াল হাদীস দ্বারা গান-বাজনাকে বুঝানো হয়েছে।
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, (এই আয়াত) গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে অবর্তীণ হয়েছে।
৩. বাদ্যযন্ত্র : আল্লাহ তা‘আলা শয়তানকে লক্ষ্য করে বলেন-
﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ﴾
তাদের মধ্য হতে তুমি যাদেরকে স্বীয় স্বর দ্বারা বিপথগামী করতে পার তাদেরকে বিপথগামী করতে থাকো। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪।]
এখানে স্বর অর্থ : গান ও বাদ্যযন্ত্র।
মোবাইল ব্যবহারকারীদের করণীয় :
১. মোবাইলে কথা বলার শুরুতে ও সমাপ্তিতে বিশুদ্ধভাবে সালাম দিন। অপর পাশ থেকে আগে সালাম দিলে, শুদ্ধভাবে সালামের জবাব দিন।
২. অযথা মিস কল দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. দু-একবার রিং করার পর রিসিভ না করলে, অপর পক্ষ কোন জরুরি কাজে আছে ভেবে আপাতত বিরত থাকুন। প্রয়োজনে পরে আবার কল করুন।
৪. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জামা‘আতের সময় কাউকে কল করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. গভীর রাতে একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন করে অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো থেকে বিরত থাকুন।
৬. মোবাইলে যাতে কখনো কোন নাজায়েয বিষয়ের অবতারণা না হয়, সে ব্যাপারে সবসময় সাবধান থাকুন।
৭. মোবাইলের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ اَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ اَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتْ الشَّيَاطِينُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন রমাযান মাস আগমন করে তখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৮; ইবনে হিববান, হা/৩৪৩৪; সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হা/৮২৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭৮০।]
এ হাদীসে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা রমাযান মাসে শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেন। সুতরাং খুব সহজেই এই প্রশ্ন আসে যে, শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার পরেও মানবজাতি পাপকাজে লিপ্ত থাকে কীভাবে?
এর উত্তর হলো :
(১) শয়তান যাকে ১১ মাস কুমন্ত্রণা দিতে পারে তাকে একমাস কুমন্ত্রণা না দিলেও সে পাপকাজ করে যায়। কারণ সারা বছর শয়তানের কাজ করলে শয়তানী কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এজন্য একমাস শয়তান বাঁধা থাকলেও পূর্বের অভ্যাসের কারণে মানুষ পাপকাজ করে।
(২) শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ বলেই শয়তান একেবারে শেষ হয়ে যায়নি বা মরে যায়নি; বরং সে এখনো জীবিত আছে এবং দীর্ঘ ১১টি মাস সে তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ওই ১১ মাস শয়তান যেসব মানুষকে পাপে জড়াতে পেরেছে তার প্রভাব মানুষকে রমাযান মাসেও প্রভাবিত করে।
যেমন, কোন ব্যক্তি যদি ১ঘণ্টা দৌড়ায় এবং হঠাৎ সে থেমে যায়, তাহলে সে ১ মিনিটেই দৌড়ের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে না। ঠিক তেমনিভাবে ১টি মাসের জন্য শয়তানের কার্যক্ষমতা অক্ষম করে দিলেও তার প্রভাব থেকে যায়।
(৩) নবী ﷺ বলেছেন, শয়তানরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা স্বল্প জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারে। সুতরাং কেউ যদি শয়তানের ঘোরাফেরার আওতার বাইরে থাকে তাহলে সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। কিন্তু যারা শয়তানকে খোঁজে বেড়ায় তারা শয়তান থেকে বাঁচতে পারে না।
(৪) এমনও হতে পারে, পবিত্র রমাযান মাসে বড় বড় শয়তানরা অনুপস্থিত থাকে; কিন্তু শয়তানের দোসররা মুক্ত থাকে এবং তারাই মানুষের ভেতরে কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয়।
(৫) এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা যে শয়তানকে বন্দি করেন সে জিন জাতির সদস্য; কিন্তু মানবজাতির ভেতরের শয়তান তখনো মুক্ত থাকে।
শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করাটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটি অনুগ্রহ। কেননা এ সময় শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার কারণে বান্দা সৎকাজ করার সুযোগ পায় এবং নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে। আর এ সুযোগ দ্বারা মুমিনগণই বেশি উপকৃত হয়। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা এ মাসে রোযা পালন করাসহ আরো কিছু কর্মনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলোকে সঠিকভাবে পালন করলেই শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন রমাযান মাস আগমন করে তখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৮; ইবনে হিববান, হা/৩৪৩৪; সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হা/৮২৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭৮০।]
এ হাদীসে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা রমাযান মাসে শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেন। সুতরাং খুব সহজেই এই প্রশ্ন আসে যে, শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার পরেও মানবজাতি পাপকাজে লিপ্ত থাকে কীভাবে?
এর উত্তর হলো :
(১) শয়তান যাকে ১১ মাস কুমন্ত্রণা দিতে পারে তাকে একমাস কুমন্ত্রণা না দিলেও সে পাপকাজ করে যায়। কারণ সারা বছর শয়তানের কাজ করলে শয়তানী কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এজন্য একমাস শয়তান বাঁধা থাকলেও পূর্বের অভ্যাসের কারণে মানুষ পাপকাজ করে।
(২) শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ বলেই শয়তান একেবারে শেষ হয়ে যায়নি বা মরে যায়নি; বরং সে এখনো জীবিত আছে এবং দীর্ঘ ১১টি মাস সে তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ওই ১১ মাস শয়তান যেসব মানুষকে পাপে জড়াতে পেরেছে তার প্রভাব মানুষকে রমাযান মাসেও প্রভাবিত করে।
যেমন, কোন ব্যক্তি যদি ১ঘণ্টা দৌড়ায় এবং হঠাৎ সে থেমে যায়, তাহলে সে ১ মিনিটেই দৌড়ের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে না। ঠিক তেমনিভাবে ১টি মাসের জন্য শয়তানের কার্যক্ষমতা অক্ষম করে দিলেও তার প্রভাব থেকে যায়।
(৩) নবী ﷺ বলেছেন, শয়তানরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা স্বল্প জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারে। সুতরাং কেউ যদি শয়তানের ঘোরাফেরার আওতার বাইরে থাকে তাহলে সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। কিন্তু যারা শয়তানকে খোঁজে বেড়ায় তারা শয়তান থেকে বাঁচতে পারে না।
(৪) এমনও হতে পারে, পবিত্র রমাযান মাসে বড় বড় শয়তানরা অনুপস্থিত থাকে; কিন্তু শয়তানের দোসররা মুক্ত থাকে এবং তারাই মানুষের ভেতরে কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয়।
(৫) এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা যে শয়তানকে বন্দি করেন সে জিন জাতির সদস্য; কিন্তু মানবজাতির ভেতরের শয়তান তখনো মুক্ত থাকে।
শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করাটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটি অনুগ্রহ। কেননা এ সময় শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার কারণে বান্দা সৎকাজ করার সুযোগ পায় এবং নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে। আর এ সুযোগ দ্বারা মুমিনগণই বেশি উপকৃত হয়। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা এ মাসে রোযা পালন করাসহ আরো কিছু কর্মনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলোকে সঠিকভাবে পালন করলেই শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।
আবদুল্লাহ ইবনে নাহীক (রাঃ) আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে একজন আবেদ লোক ছিলেন। তিনি ষাট বছর আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতে কাটিয়েছিলেন। শয়তান তাঁকে অনেকভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অবশেষে সে একজন মহিলার মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করে। সে তার উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে যে, তাকে যেন জিনে ধরেছে এ লক্ষণ প্রকাশ পায়। এদিকে ঐ মহিলাটির ভাইদেরকে সে এ কুমন্ত্রণা দেয় যে, ঐ আবেদের কাছেই এর চিকিৎসা হতে পারে। তারা মহিলাটিকে ঐ আবেদের কাছে নিয়ে গেল। আবেদ লোকটি তখন তার চিকিৎসা করে দিলেন।
মহিলাটি তার ওখানেই থাকতে লাগল। একদিন আবেদ মহিলাটির পার্শ্বেই ছিলেন, এমন সময় শয়তান তাঁর মনে কুচিন্তার উদ্রেক করল। শেষ পর্যন্ত তিনি মহিলাটির সাথে ব্যভিচার করে বসলেন। ফলে মহিলাটি গর্ভবর্তী হয়ে গেল। এখন এ লজ্জা নিবারণের পন্থা ঐ শয়তানই বাতলিয়ে দিল যে, তিনি যেন মহিলাটিকে মেরে ফেলেন, অন্যথায় রহস্য খুলে যাবে। সুতরাং ঐ আবেদ মহিলাটিকে হত্যা করে ফেললেন। ওদিকে শয়তান মহিলাটির ভাইদের মনে আবেদের উপর সন্দেহ জাগিয়ে তোলল। তারা আবেদের দিকে অগ্রসর হলো। এদিকে শয়তান আবেদের কাছে এসে বলল, মহিলাটির আত্মীয়রা আপনার কাছে আসছে। এখন আপনার মান-সম্মানও যাবে এবং প্রাণও যাবে। সুতরাং এখন যদি আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করেন এবং আমি যা বলি তা মেনে নেন তবে আপনার মান-সম্মান ও প্রাণ বেঁচে যেতে পারে। আবেদ বললেন, ঠিক আছে, তুমি যা বলবে আমি তাই করতে প্রস্তুত আছি। শয়তান তখন বললো, আমাকে সিজদা করুন। তখন তিনি সিজদা করলেন। শয়তান তখন বলল, হে হতভাগ্য! ধিক! তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [তাফসীরে ইবনে কাসীর- ৬ষ্ট খন্ড, ৩৭৬ পৃঃ, , সূরা হাশরের ১৬নং আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে।]
মহিলাটি তার ওখানেই থাকতে লাগল। একদিন আবেদ মহিলাটির পার্শ্বেই ছিলেন, এমন সময় শয়তান তাঁর মনে কুচিন্তার উদ্রেক করল। শেষ পর্যন্ত তিনি মহিলাটির সাথে ব্যভিচার করে বসলেন। ফলে মহিলাটি গর্ভবর্তী হয়ে গেল। এখন এ লজ্জা নিবারণের পন্থা ঐ শয়তানই বাতলিয়ে দিল যে, তিনি যেন মহিলাটিকে মেরে ফেলেন, অন্যথায় রহস্য খুলে যাবে। সুতরাং ঐ আবেদ মহিলাটিকে হত্যা করে ফেললেন। ওদিকে শয়তান মহিলাটির ভাইদের মনে আবেদের উপর সন্দেহ জাগিয়ে তোলল। তারা আবেদের দিকে অগ্রসর হলো। এদিকে শয়তান আবেদের কাছে এসে বলল, মহিলাটির আত্মীয়রা আপনার কাছে আসছে। এখন আপনার মান-সম্মানও যাবে এবং প্রাণও যাবে। সুতরাং এখন যদি আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করেন এবং আমি যা বলি তা মেনে নেন তবে আপনার মান-সম্মান ও প্রাণ বেঁচে যেতে পারে। আবেদ বললেন, ঠিক আছে, তুমি যা বলবে আমি তাই করতে প্রস্তুত আছি। শয়তান তখন বললো, আমাকে সিজদা করুন। তখন তিনি সিজদা করলেন। শয়তান তখন বলল, হে হতভাগ্য! ধিক! তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [তাফসীরে ইবনে কাসীর- ৬ষ্ট খন্ড, ৩৭৬ পৃঃ, , সূরা হাশরের ১৬নং আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে।]
মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিভ্রান্ত করার কাজে শয়তান সদা তৎপর। তার প্রতারণা থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কুরআন ও হাদীসে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার কিছু উপায় বলে দেয়া হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
১। আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া :
শয়তান যখনই মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ﴾
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [সূরা আরাফ- ২০০, সূরা ফুসসিলাত- ৩৬।]
শয়তান থেকে সবসময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। তবে কুরআন ও হাদীসে নিম্নোক্ত কয়েকটি স্থানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
১/১. কুরআন তিলাওয়াতের সময় :
কুরআন তিলাওয়াত একটি বড় ইবাদাত। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় বুঝে-শুনে পাঠ করতে হবে, যাতে আল্লাহর বাণীর মর্ম বুঝা যায়। কিন্তু বান্দা কুরআন বুঝে-শুনে পাঠ করুক- শয়তান এটা চায় না। তাই শয়তান যাতে ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [সূরা নাহল- ৯৮।]
১/২. প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের সময় :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ اِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ قَالَ : اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের সময় বলতেন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।
হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও স্ত্রী জিন হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭।]
১/৩. মসজিদে প্রবেশের সময় :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেন,
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
আ‘উযুবিল্লা-হিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলত্বা-নিহিল কাদীম মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
আমি মহান আল্লাহর সম্মানিত চেহারা ও স্থায়ী রাজত্বের মাধ্যমে তার নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, যদি তুমি এটা বল তখন শয়তান বলে, সে আমার কাছ থেকে সারা দিনের জন্য নিরাপত্তা পেয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪৬৬।]
১/৪. সালাতে ওয়াসওয়াসার সময় :
عَنْ اَبِي الْعَلَاءِ اَنَّ عُثْمَانَ بْنَ اَبِي الْعَاصِ اَتَى النَّبِيَّ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ صَلَاتِيْ وَقِرَاءَتِيْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَه خِنْزِبٌ فَإِذَا اَحْسَسْتَه فَتَعَوَّذْ بِا للهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا . قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّيْ
আবদুল আ‘লা (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) নবী ﷺ এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার, আমার সালাত ও কিরা‘আতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এটা এক (প্রকারের) শয়তান- যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপর আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৩১।]
১/৫. রাগের সময় :
عَنْ عَدِىِّ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ : سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ صُرَدٍ، رَجُلًا مِّنْ اَصْحَابِ النَّبِيِّ قَالَ اسْتَبَّ رَجُلَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ فَغَضِبَ اَحَدُهُمَا، فَاشْتَدَّ غَضَبُه حَتَّى انْتَفَخَ وَجْهُه وَتَغَيَّرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ اِنِّيْ لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِيْ يَجِدُ . فَانْطَلَقَ اِلَيْهِ الرَّجُلُ فَأَخْبَرَه بِقَوْلِ النَّبِيِّ وَقَالَ : تَعَوَّذْ بِا للهِ مِنَ الشَّيْطَانِ
আদী ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাহাবী সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেল, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি যা সে বললে তার রাগ দূর হয়ে যেত। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করল এবং বলল, ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮।]
১/৬. খারাপ স্বপ্ন দেখলে :
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ الرُّؤْيَا مِنَ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِذَا حَلَمَ اَحَدُكُمْ حُلْمًا يَكْرَهُهُ فَلْيَنْفُثْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاَثًا وَلْيَتَعَوَّذْ بِا للهِ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ .
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে অপছন্দ করে, তখন যেন সে তার বাম পাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) আশ্রয় প্রার্থনা করে; তাহলে সেটি তার কোন ক্ষতি করবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৯০।]
১/৭. স্ত্রী সহবাসের সময় :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্ত্রীর কাছে আসে তখন সে যেন বলে,
بِاسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা।
আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখো। আর আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করো।
(রাসূল সাঃ বলেন) অতঃপর তাদেরকে যে সন্তান দেয়া হবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪১, ৩২৭১ ‘অযু অধ্যায়, সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৪ ‘ত্বালাক’ অধ্যায়, আহমাদ, হা/১৯০৮।]
১/৮. কারো নিরাপত্তা চাওয়ার সময় :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন তখন বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-কে এই বলে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন,
اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিওয়া হা-ম্মাতিওয়া মিন কুল্লি আইনিন লা-ম্মাতিন।
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীগুলোর আশ্রয় নিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী বস্তু হতে এবং প্রত্যেক অনিষ্টকর দৃষ্টি হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়; তিরমিযী, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৩৭।]
২। কুরআন তিলাওয়াত করা :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِى تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬০।]
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ ، أَنْزَلَ مِنْهُ اٰيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ ، وَلَا يُقْرَاٰنِ فِيْ دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبُهَا شَيْطَانٌ
নু‘মান ইবনে বাশীর নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুহাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখলেন। সেখান থেকে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করলেন, যার মাধ্যমে তিনি সূরা বাক্বারা সমাপ্ত করেছেন। যদি কোন ঘরে তিন রাত্রি পর্যন্ত এ দুটি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২৮৮২।]
৩। ইখলাছ অবলম্বন করা :
শয়তান সকলকে ধোঁকা দিয়ে জাহান্নামী করতে পারলেও ইখলাছ অবলম্বনকারীকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তান আল্লাহর কাছে এই ওয়াদা করেছে।
﴿قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেভাবে আমাকে বিপথগামী করেছ অনুরূপভাবে অবশ্যই আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গোনাহের কাজসমূহ) শোভন করে তোলব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে ব্যতীত। [সূরা হিজর- ৩৯, ৪০।]
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। [সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩।]
৪। আল্লাহকে স্মরণ করা :
আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তান কাছে আসতে পারে না। যখন মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করা থেকে দূরে সরে যায়, তখন শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। [সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭।]
৫। বিশেষ একটি দু‘আ পাঠ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ قَالَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهٗ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهٗ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَ لَهٗ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَهٗ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهٗ ذٰلِكَ حَتّٰى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ اَحَدٌ بِاَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ اِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ اَكْثَرَ مِنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার বলবে,
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهٗ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লী শাইইন ক্বাদীর।
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর। সমস্ত প্রসংশা তাঁর, তিনি সমস্ত বস্তুর উপর শক্তিশালী।’’
সে ১০টি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে। তার নামে লেখা হবে ১০০টি নেকী এবং তার নাম থেকে ১০০টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের সংশ্রব থেকে সংরক্ষিত থাকবে। আর কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার চেয়ে বেশি আমল করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮; তিরমিযী, হা/৩৪৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৪১০।]
৬। জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকা এবং জামা‘আতে সালাত আদায় করা :
ইসলাম মুসলিম জাতিকে জামা‘আতবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ একাকী থাকলে শয়তান ধোঁকা দেয়।
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِىْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلَاةُ اِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَاِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে গ্রামে বা প্রান্তরে তিনজন লোকও অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়ে যায়। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলত্যাগী বকরীকে ধরে খায়। [আবু দাউদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৭০; মিশকাত, হা/১০৬৭।]
৭। তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : اِذَا قَرَاَ ابْنُ اٰدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِىْ يَقُوْلُ يَا وَيْلَهٗ - وَفِىْ رِوَايَةِ اَبِىْ كُرَيْبٍ يَا وَيْلِىْ اُمِرَ ابْنُ اٰدَمَ بِالسُّجُوْدِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُوْدِ فَاَبَيْتُ فَلِىَ النَّارُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করে, তখন শয়তান দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায় আফসোস! আবু কুরাইবের বর্ণনায় এসেছে, হায় আমার দুর্ভোগ! বনী আদমকে সিজদার আদেশ দেয়া হলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হলো। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্য হলাম ও জাহান্নামী হলাম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫২; মিশকাত, হা/৮৯৫।]
৮। তাশাহহুদের সময় ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা :
عَنْ نَافِعٍ قَالَ : كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرَ اِذَا جَلَسَ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلٰى رُكْبَتَيْهِ وَاَشَارَ بِاِصْبَعِهٖ وَاَتْبَعَهَا بَصَرَهٗ ثُمَّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَهِيَ اَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ . يَعْنِيْ السَّبَابَةِ
নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাতে (শেষ বৈঠকে) বসতেন, তখন তিনি তার হাত হাটুদ্বয়ের উপর রাখতেন এবং আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন; তিনি তার চোখের দৃষ্টিও সেখানে রাখতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটি অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শয়তানের বিরুদ্ধে লোহার চেয়ে কঠিন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯; মিশকাত, হা/৯১৭।]
৯। সালাতের কাতার সোজা করা ও ফাঁকা না রাখা :
সালাতে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো জরুরি। আর দু’জনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা ঠিক নয়। কারণ ফাঁকা রাখলে সেখানে শয়তান নিজের জায়গা করে নেয়।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْاَعْنَاقِ فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ اِنِّىْ لَاَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَاَنَّهَا الْحَذَفُ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কাতারগুলো মিলাও এবং পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাও, আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানদেরকে কাতারের মধ্যে এমনভাবে ঢুকতে দেখি, যেমন ছোট ছাগল ঢুকে। [আবু দাউদ হা/৪৪৭; মিশকাত হা/১০৯৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৯২।]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِاَيْدِىْ اِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ
সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধ মিলাও, ফাঁকা বন্ধ করো, নিজের ভাইয়ের প্রতি কোমল হও এবং শয়তানের জন্য পথ ছেড়ে দিও না। [আবু দাউদ হা/৬৬৬; রিয়াযুস সালেহীন হা/১০৯১।]
১০। ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ سَمِعَ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : اِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهٗ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهٖ وَعِنْدَ طَعَامِهٖ قَالَ الشَّيْطَانُ لَا مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ وَاِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهٖ قَالَ الشَّيْطَانُ اَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ فَاِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهٖ قَالَ اَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এ ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই এবং খাদ্যও নেই। আর যখন সে আল্লাহর স্মরণ ছাড়া প্রবেশ করে তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেলে। অতঃপর যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকা ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ পেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৭১; আবু দাউদ, হা/৩৭৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৪১৬১।]
১১. ডান হাতে আহার করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيِّ قَالَ : لِيَأْكُلْ اَحَدُكُمْ بِيَمِيْنِهٖ وِلِيَشْرِبْ بِيَمِيْنِهٖ وِلِيَأْخُذْ بِيَمِيْنِهٖ وَلْيُعْطِ بِيَمِيْنِهٖ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهٖ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهٖ وِيُعْطِيْ بِشِمَالِهٖ وِيَأْخُذُ بِشِمَالِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন ডান হাত দ্বারা আহার করে, ডান হাত দ্বারা পানাহার করে এবং ডান হাত দ্বারা আদান-প্রদান করে। কেননা শয়তান বাম হাত দ্বারা আহার করে, বাম হাত দ্বারা পানাহার করে এবং বাম হাত দ্বারা দান করে ও বাম হাত দ্বারাই গ্রহণ করে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৬; সিলসিলা সহীহাহা, হা/১২৩৬।]
১২। খাদ্য নষ্ট না করা, এমনকি পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে নেয়া :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ اَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَىْءٍ مِنْ شَأْنِهٖ حَتّٰى يَحْضُرَهٗ عِنْدَ طَعَامِهٖ فَاِذَا سَقَطَتْ مِنْ اَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ اَذًى ثُمَّ لَيَأْكُلْهَا وَلَاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَاِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ اَصَابِعَهٗ فَاِنَّهٗ لَا يَدْرِيْ فِيْ اَىِّ طَعَامِهٖ تَكُوْنُ الْبَرَكَةُ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের সকল কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যদি কারো লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩২৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৬৪)]
১৩। শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ وَكَّلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَاَتَانِيْ اٰتٍ فَجَعَلَ يَحْثُوْ مِنَ الطَّعَامِ فَاَخَذْتُهٗ فَقُلْتُ لَاَرْفَعَنَّكَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ فَقَالَ اِذَا اَوَيْتَ اِلٰى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ وَلَا يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتّٰى تُصْبِحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوْبٌ ذَاكَ شَيْطَانٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে রমাযানের যাকাত সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করলেন। অতঃপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দু’হাতের আঁজলা ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত তোমার নিকট শয়তান আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাচারী এবং শয়তান ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫।]
১৪। হাই আসলে মুখের উপর হাত রাখা :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِىْ سَعِيْدٍ عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : اِذَا تَثَاوَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهٖ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ
আবদুর রহমান ইবনে আবু সাঈদ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন তার হাত মুখের উপর রাখে। কেননা (এ সময়) শয়তান ভেতরে ঢুকে পড়ে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৮৩; আবু দাউদ, হা/৫০২৮; মিশকাত হা/৪৭৩৭।]
১৫। আল্লাহর উপর ভরসা করা :
ঈমান আনার সাথে সাথে সৎকাজ করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তাহলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আল্লাহ বলেন,
﴿اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে তাদের উপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। [সূরা নাহল- ৯৯।]
১৬. নবী ﷺ এর কিছু পরামর্শ :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِذَا كَانَ جُنْحُ اللَّيْلِ - اَوْ اَمْسَيْتُمْ - فَكُفُّوْا صِبْيَانَكُمْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْتَشِرُ حِيْنَئِذٍ فَاِذَا ذَهَبَ سَاعَةٌ مِّنَ اللَّيْلِ فَخَلُّوْهُمْ وَاَغْلِقُوا الْاَبْوَابَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا وَاَوْكُوْا قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ وَخَمِّرُوْا اٰنِيَتَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ وَلَوْ اَنْ تَعْرُضُوْا عَلَيْهَا شَيْئًا وَاَطْفِئُوْا مَصَابِيْحَكُمْ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাত্রি যখন ঘনিভূত হবে অথবা বলেছেন, তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দেখে রাখবে। কেননা, শয়তান তখন ঘুরাফেরা করে। অতঃপর রাত্রি ঘণ্টাখানিক পার হলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। আর তোমরা দরজাগুলো আটকে রাখবে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। কেননা শয়তান কোন বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা তোমাদের মশকসমূহের মুখ বেঁধে রাখবে এবং আল্লাহর নাম মনে করবে। আর তোমাদের বাসনগুলো আবৃত রাখবে, যদি তার উপর একটি কাঠিও রেখে হয় এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৬৮।]
শয়তান থেকে বাঁচার জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু উপদেশ :
১. মহান আল্লাহর উপর শিরকমুক্ত পরিপূর্ণ ঈমান রাখতে হবে। কেননা বান্দা শিরক করলে শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়।
২. একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করতে হবে এবং লোক দেখানো আমল পরিত্যাগ করতে হবে।
৩. সার্বিক ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুসরণ করতে হবে।
৪. সবধরণের বিদ‘আত থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা সাধারণ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বিদ‘আতে লিপ্ত হলে শয়তান বেশি খুশি হয়। কারণ সাধারণ পাপকর্ম থেকে তওবা করা হয়, কিন্তু বিদআত থেকে তওবা করা হয় না। যেহেতু বিদআতী ব্যক্তি বিদআতকে সওয়াবের কাজ মনে করে থাকে। তাই এটা পরিত্যাগ করার তার চিন্তাই থাকে না।
৫. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে বিনয় ও নম্রতার সাথে জামা‘আতে আদায় করতে হবে।
৬. ফরজ সালাত ছাড়াও সুন্নত ও নফল সালাতসমূহ অধিকহারে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
৭. নফল সিয়াম আদায় করতে হবে। কেননা সিয়াম শয়তানী প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৮. গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
৯. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। কেননা শয়তান বিতাড়িত করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো আল্লাহর যিকির।
১০. আত্মসমালোচনা করতে হবে এবং তদ্বানুযায়ী আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
১১. আল্লাহর কাছে দু‘আ করে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
১২. অধিকহারে ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে হবে এবং বেশি করে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করতে হবে।
১৩. শয়তানকে খুশি করে এমন আসবাবপত্র থেকে নিজ গৃহকে মুক্ত রাখতে হবে। যেমন বাদ্য-যন্ত্র, ঘণ্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য এবং যাবতীয় গর্হিত বিষয়বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত করা।
১৪. পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৫. পরনারীর সাথে নির্জন না হওয়া। কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের তৃতীয় জন হিসেবে সেখানে বিরাজ করে।
১৬. অপব্যয় ও অপচয় করা যাবে না। কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই।
১৭. প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
১৮. বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন সে বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা জানায়।
১। আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া :
শয়তান যখনই মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ﴾
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [সূরা আরাফ- ২০০, সূরা ফুসসিলাত- ৩৬।]
শয়তান থেকে সবসময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। তবে কুরআন ও হাদীসে নিম্নোক্ত কয়েকটি স্থানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
১/১. কুরআন তিলাওয়াতের সময় :
কুরআন তিলাওয়াত একটি বড় ইবাদাত। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় বুঝে-শুনে পাঠ করতে হবে, যাতে আল্লাহর বাণীর মর্ম বুঝা যায়। কিন্তু বান্দা কুরআন বুঝে-শুনে পাঠ করুক- শয়তান এটা চায় না। তাই শয়তান যাতে ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [সূরা নাহল- ৯৮।]
১/২. প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের সময় :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ اِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ قَالَ : اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের সময় বলতেন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।
হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও স্ত্রী জিন হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭।]
১/৩. মসজিদে প্রবেশের সময় :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেন,
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
আ‘উযুবিল্লা-হিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলত্বা-নিহিল কাদীম মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
আমি মহান আল্লাহর সম্মানিত চেহারা ও স্থায়ী রাজত্বের মাধ্যমে তার নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, যদি তুমি এটা বল তখন শয়তান বলে, সে আমার কাছ থেকে সারা দিনের জন্য নিরাপত্তা পেয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪৬৬।]
১/৪. সালাতে ওয়াসওয়াসার সময় :
عَنْ اَبِي الْعَلَاءِ اَنَّ عُثْمَانَ بْنَ اَبِي الْعَاصِ اَتَى النَّبِيَّ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ صَلَاتِيْ وَقِرَاءَتِيْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَه خِنْزِبٌ فَإِذَا اَحْسَسْتَه فَتَعَوَّذْ بِا للهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا . قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّيْ
আবদুল আ‘লা (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) নবী ﷺ এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার, আমার সালাত ও কিরা‘আতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এটা এক (প্রকারের) শয়তান- যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপর আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৩১।]
১/৫. রাগের সময় :
عَنْ عَدِىِّ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ : سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ صُرَدٍ، رَجُلًا مِّنْ اَصْحَابِ النَّبِيِّ قَالَ اسْتَبَّ رَجُلَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ فَغَضِبَ اَحَدُهُمَا، فَاشْتَدَّ غَضَبُه حَتَّى انْتَفَخَ وَجْهُه وَتَغَيَّرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ اِنِّيْ لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِيْ يَجِدُ . فَانْطَلَقَ اِلَيْهِ الرَّجُلُ فَأَخْبَرَه بِقَوْلِ النَّبِيِّ وَقَالَ : تَعَوَّذْ بِا للهِ مِنَ الشَّيْطَانِ
আদী ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাহাবী সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেল, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি যা সে বললে তার রাগ দূর হয়ে যেত। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করল এবং বলল, ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮।]
১/৬. খারাপ স্বপ্ন দেখলে :
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ الرُّؤْيَا مِنَ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِذَا حَلَمَ اَحَدُكُمْ حُلْمًا يَكْرَهُهُ فَلْيَنْفُثْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاَثًا وَلْيَتَعَوَّذْ بِا للهِ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ .
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে অপছন্দ করে, তখন যেন সে তার বাম পাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) আশ্রয় প্রার্থনা করে; তাহলে সেটি তার কোন ক্ষতি করবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৯০।]
১/৭. স্ত্রী সহবাসের সময় :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্ত্রীর কাছে আসে তখন সে যেন বলে,
بِاسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা।
আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখো। আর আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করো।
(রাসূল সাঃ বলেন) অতঃপর তাদেরকে যে সন্তান দেয়া হবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪১, ৩২৭১ ‘অযু অধ্যায়, সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৪ ‘ত্বালাক’ অধ্যায়, আহমাদ, হা/১৯০৮।]
১/৮. কারো নিরাপত্তা চাওয়ার সময় :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন তখন বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-কে এই বলে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন,
اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিওয়া হা-ম্মাতিওয়া মিন কুল্লি আইনিন লা-ম্মাতিন।
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীগুলোর আশ্রয় নিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী বস্তু হতে এবং প্রত্যেক অনিষ্টকর দৃষ্টি হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়; তিরমিযী, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৩৭।]
২। কুরআন তিলাওয়াত করা :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِى تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬০।]
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ ، أَنْزَلَ مِنْهُ اٰيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ ، وَلَا يُقْرَاٰنِ فِيْ دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبُهَا شَيْطَانٌ
নু‘মান ইবনে বাশীর নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুহাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখলেন। সেখান থেকে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করলেন, যার মাধ্যমে তিনি সূরা বাক্বারা সমাপ্ত করেছেন। যদি কোন ঘরে তিন রাত্রি পর্যন্ত এ দুটি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২৮৮২।]
৩। ইখলাছ অবলম্বন করা :
শয়তান সকলকে ধোঁকা দিয়ে জাহান্নামী করতে পারলেও ইখলাছ অবলম্বনকারীকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তান আল্লাহর কাছে এই ওয়াদা করেছে।
﴿قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেভাবে আমাকে বিপথগামী করেছ অনুরূপভাবে অবশ্যই আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গোনাহের কাজসমূহ) শোভন করে তোলব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে ব্যতীত। [সূরা হিজর- ৩৯, ৪০।]
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। [সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩।]
৪। আল্লাহকে স্মরণ করা :
আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তান কাছে আসতে পারে না। যখন মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করা থেকে দূরে সরে যায়, তখন শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। [সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭।]
৫। বিশেষ একটি দু‘আ পাঠ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ قَالَ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهٗ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهٗ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَ لَهٗ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَهٗ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهٗ ذٰلِكَ حَتّٰى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ اَحَدٌ بِاَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ اِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ اَكْثَرَ مِنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার বলবে,
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهٗ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লী শাইইন ক্বাদীর।
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর। সমস্ত প্রসংশা তাঁর, তিনি সমস্ত বস্তুর উপর শক্তিশালী।’’
সে ১০টি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে। তার নামে লেখা হবে ১০০টি নেকী এবং তার নাম থেকে ১০০টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের সংশ্রব থেকে সংরক্ষিত থাকবে। আর কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার চেয়ে বেশি আমল করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮; তিরমিযী, হা/৩৪৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৪১০।]
৬। জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকা এবং জামা‘আতে সালাত আদায় করা :
ইসলাম মুসলিম জাতিকে জামা‘আতবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ একাকী থাকলে শয়তান ধোঁকা দেয়।
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِىْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلَاةُ اِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَاِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে গ্রামে বা প্রান্তরে তিনজন লোকও অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়ে যায়। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলত্যাগী বকরীকে ধরে খায়। [আবু দাউদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৭০; মিশকাত, হা/১০৬৭।]
৭। তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : اِذَا قَرَاَ ابْنُ اٰدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِىْ يَقُوْلُ يَا وَيْلَهٗ - وَفِىْ رِوَايَةِ اَبِىْ كُرَيْبٍ يَا وَيْلِىْ اُمِرَ ابْنُ اٰدَمَ بِالسُّجُوْدِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُوْدِ فَاَبَيْتُ فَلِىَ النَّارُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করে, তখন শয়তান দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায় আফসোস! আবু কুরাইবের বর্ণনায় এসেছে, হায় আমার দুর্ভোগ! বনী আদমকে সিজদার আদেশ দেয়া হলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হলো। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্য হলাম ও জাহান্নামী হলাম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫২; মিশকাত, হা/৮৯৫।]
৮। তাশাহহুদের সময় ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা :
عَنْ نَافِعٍ قَالَ : كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرَ اِذَا جَلَسَ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلٰى رُكْبَتَيْهِ وَاَشَارَ بِاِصْبَعِهٖ وَاَتْبَعَهَا بَصَرَهٗ ثُمَّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَهِيَ اَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ . يَعْنِيْ السَّبَابَةِ
নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাতে (শেষ বৈঠকে) বসতেন, তখন তিনি তার হাত হাটুদ্বয়ের উপর রাখতেন এবং আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন; তিনি তার চোখের দৃষ্টিও সেখানে রাখতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটি অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শয়তানের বিরুদ্ধে লোহার চেয়ে কঠিন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯; মিশকাত, হা/৯১৭।]
৯। সালাতের কাতার সোজা করা ও ফাঁকা না রাখা :
সালাতে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো জরুরি। আর দু’জনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা ঠিক নয়। কারণ ফাঁকা রাখলে সেখানে শয়তান নিজের জায়গা করে নেয়।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْاَعْنَاقِ فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ اِنِّىْ لَاَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَاَنَّهَا الْحَذَفُ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কাতারগুলো মিলাও এবং পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাও, আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানদেরকে কাতারের মধ্যে এমনভাবে ঢুকতে দেখি, যেমন ছোট ছাগল ঢুকে। [আবু দাউদ হা/৪৪৭; মিশকাত হা/১০৯৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৯২।]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِاَيْدِىْ اِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ
সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধ মিলাও, ফাঁকা বন্ধ করো, নিজের ভাইয়ের প্রতি কোমল হও এবং শয়তানের জন্য পথ ছেড়ে দিও না। [আবু দাউদ হা/৬৬৬; রিয়াযুস সালেহীন হা/১০৯১।]
১০। ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ سَمِعَ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : اِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهٗ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهٖ وَعِنْدَ طَعَامِهٖ قَالَ الشَّيْطَانُ لَا مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ وَاِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهٖ قَالَ الشَّيْطَانُ اَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ فَاِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهٖ قَالَ اَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এ ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই এবং খাদ্যও নেই। আর যখন সে আল্লাহর স্মরণ ছাড়া প্রবেশ করে তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেলে। অতঃপর যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকা ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ পেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৭১; আবু দাউদ, হা/৩৭৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৪১৬১।]
১১. ডান হাতে আহার করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيِّ قَالَ : لِيَأْكُلْ اَحَدُكُمْ بِيَمِيْنِهٖ وِلِيَشْرِبْ بِيَمِيْنِهٖ وِلِيَأْخُذْ بِيَمِيْنِهٖ وَلْيُعْطِ بِيَمِيْنِهٖ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهٖ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهٖ وِيُعْطِيْ بِشِمَالِهٖ وِيَأْخُذُ بِشِمَالِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন ডান হাত দ্বারা আহার করে, ডান হাত দ্বারা পানাহার করে এবং ডান হাত দ্বারা আদান-প্রদান করে। কেননা শয়তান বাম হাত দ্বারা আহার করে, বাম হাত দ্বারা পানাহার করে এবং বাম হাত দ্বারা দান করে ও বাম হাত দ্বারাই গ্রহণ করে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৬; সিলসিলা সহীহাহা, হা/১২৩৬।]
১২। খাদ্য নষ্ট না করা, এমনকি পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে নেয়া :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ اَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَىْءٍ مِنْ شَأْنِهٖ حَتّٰى يَحْضُرَهٗ عِنْدَ طَعَامِهٖ فَاِذَا سَقَطَتْ مِنْ اَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ اَذًى ثُمَّ لَيَأْكُلْهَا وَلَاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَاِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ اَصَابِعَهٗ فَاِنَّهٗ لَا يَدْرِيْ فِيْ اَىِّ طَعَامِهٖ تَكُوْنُ الْبَرَكَةُ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের সকল কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যদি কারো লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩২৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৬৪)]
১৩। শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ وَكَّلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَاَتَانِيْ اٰتٍ فَجَعَلَ يَحْثُوْ مِنَ الطَّعَامِ فَاَخَذْتُهٗ فَقُلْتُ لَاَرْفَعَنَّكَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ فَقَالَ اِذَا اَوَيْتَ اِلٰى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ وَلَا يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتّٰى تُصْبِحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوْبٌ ذَاكَ شَيْطَانٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে রমাযানের যাকাত সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করলেন। অতঃপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দু’হাতের আঁজলা ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত তোমার নিকট শয়তান আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাচারী এবং শয়তান ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫।]
১৪। হাই আসলে মুখের উপর হাত রাখা :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِىْ سَعِيْدٍ عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : اِذَا تَثَاوَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهٖ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ
আবদুর রহমান ইবনে আবু সাঈদ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন তার হাত মুখের উপর রাখে। কেননা (এ সময়) শয়তান ভেতরে ঢুকে পড়ে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৮৩; আবু দাউদ, হা/৫০২৮; মিশকাত হা/৪৭৩৭।]
১৫। আল্লাহর উপর ভরসা করা :
ঈমান আনার সাথে সাথে সৎকাজ করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তাহলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আল্লাহ বলেন,
﴿اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে তাদের উপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। [সূরা নাহল- ৯৯।]
১৬. নবী ﷺ এর কিছু পরামর্শ :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِذَا كَانَ جُنْحُ اللَّيْلِ - اَوْ اَمْسَيْتُمْ - فَكُفُّوْا صِبْيَانَكُمْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْتَشِرُ حِيْنَئِذٍ فَاِذَا ذَهَبَ سَاعَةٌ مِّنَ اللَّيْلِ فَخَلُّوْهُمْ وَاَغْلِقُوا الْاَبْوَابَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا وَاَوْكُوْا قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ وَخَمِّرُوْا اٰنِيَتَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ وَلَوْ اَنْ تَعْرُضُوْا عَلَيْهَا شَيْئًا وَاَطْفِئُوْا مَصَابِيْحَكُمْ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাত্রি যখন ঘনিভূত হবে অথবা বলেছেন, তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দেখে রাখবে। কেননা, শয়তান তখন ঘুরাফেরা করে। অতঃপর রাত্রি ঘণ্টাখানিক পার হলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। আর তোমরা দরজাগুলো আটকে রাখবে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। কেননা শয়তান কোন বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা তোমাদের মশকসমূহের মুখ বেঁধে রাখবে এবং আল্লাহর নাম মনে করবে। আর তোমাদের বাসনগুলো আবৃত রাখবে, যদি তার উপর একটি কাঠিও রেখে হয় এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৬৮।]
শয়তান থেকে বাঁচার জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু উপদেশ :
১. মহান আল্লাহর উপর শিরকমুক্ত পরিপূর্ণ ঈমান রাখতে হবে। কেননা বান্দা শিরক করলে শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়।
২. একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করতে হবে এবং লোক দেখানো আমল পরিত্যাগ করতে হবে।
৩. সার্বিক ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুসরণ করতে হবে।
৪. সবধরণের বিদ‘আত থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা সাধারণ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বিদ‘আতে লিপ্ত হলে শয়তান বেশি খুশি হয়। কারণ সাধারণ পাপকর্ম থেকে তওবা করা হয়, কিন্তু বিদআত থেকে তওবা করা হয় না। যেহেতু বিদআতী ব্যক্তি বিদআতকে সওয়াবের কাজ মনে করে থাকে। তাই এটা পরিত্যাগ করার তার চিন্তাই থাকে না।
৫. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে বিনয় ও নম্রতার সাথে জামা‘আতে আদায় করতে হবে।
৬. ফরজ সালাত ছাড়াও সুন্নত ও নফল সালাতসমূহ অধিকহারে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
৭. নফল সিয়াম আদায় করতে হবে। কেননা সিয়াম শয়তানী প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৮. গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
৯. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। কেননা শয়তান বিতাড়িত করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো আল্লাহর যিকির।
১০. আত্মসমালোচনা করতে হবে এবং তদ্বানুযায়ী আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
১১. আল্লাহর কাছে দু‘আ করে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
১২. অধিকহারে ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে হবে এবং বেশি করে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করতে হবে।
১৩. শয়তানকে খুশি করে এমন আসবাবপত্র থেকে নিজ গৃহকে মুক্ত রাখতে হবে। যেমন বাদ্য-যন্ত্র, ঘণ্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য এবং যাবতীয় গর্হিত বিষয়বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত করা।
১৪. পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৫. পরনারীর সাথে নির্জন না হওয়া। কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের তৃতীয় জন হিসেবে সেখানে বিরাজ করে।
১৬. অপব্যয় ও অপচয় করা যাবে না। কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই।
১৭. প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
১৮. বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন সে বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা জানায়।
শয়তান বান্দাকে সালাত আদায় করা হতে বিরত রাখতে চায়। সুতরাং যখনই জামা‘আতের সময় হবে তখনই তার উচিত আল্লাহর এই বাণী স্মরণ করা এবং জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা।
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [সূরা বাক্বারা- ৪৩।]
শয়তান বান্দাকে যাকাত আদায় করা হতে বিরত রাখতে চায়। তাই যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে সে যেন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করে এবং যাকাত আদায় করে।
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا﴾
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। [সূরা মুয্যাম্মিল- ২০।]
শয়তান মানুষকে সিয়াম পালন থেকেও বিরত রাখতে চায়। সুতরাং যখন রমাযান মাস শুরু হবে তখন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করতে হবে এবং সিয়াম পালন করতে হবে।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। [সূরা বাক্বারা- ১৮৩।]
শয়তান বান্দাকে হজ্জ পালন করা হতেও বিরত রাখতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের সক্ষম হবে সে যেন আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করে এবং দেরী না করে হজ্জ আদায় করে নেয়।
﴿وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ﴾
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ পালন করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। [সূরা আলে ইমরান- ৯৭।]
শয়তান মুসলিমদেরকে জিহাদ থেকে দূরে রাখতে চায়। কারণ তারা যদি সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়, তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে। শয়তান এটা সহ্য করতে পারবে না। এজন্য সে নানাভাবে নানা কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথ থেকে দূরে রাখে। এজন্য কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করা এবং দেরী না করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করা।
﴿كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরা জান না। [সূরা বাক্বারা- ২১৬।]
শয়তান মানুষকে দিয়ে মিথ্যা বলাতে চায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ করা এবং মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকা।
﴿وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য। [সূরা মুরসালাত- ১৫।]
শয়তান মানুষের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে। তাই যখন কোন ব্যাপারে কারো মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হবে তখনই তার উচিত হবে আল্লাহর নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অহংকার থেকে ফিরে আসা।
﴿اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ﴾
আল্লাহ ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [সূরা লুকমান- ১৮।]
শয়তান মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। তাই যখনই কারো মধ্যে হিংসার আগুন জ্বলবে তখনই তার উচিত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং হিংসা থেকে সরে আসা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىَّ - - قَالَ : اِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَاِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সাবধান! তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো; কেননা হিংসা ঐভাবে নেক আমলকে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। [আবু দাউদ, হা/৪৯০৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৪১২।]
শয়তান মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়। যখন কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কৃপণতা অনুভব করবে তখনই তার উচিত হবে, আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী স্মরণ করা এবং কৃপণতা না করে সামর্থ্যানুযায়ী নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য ও আল্লাহর দ্বীনের জন্য ব্যয় করা।
﴿وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ﴾
যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। [সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮।]
শয়তান অনেক সময় মানুষকে অপচয়কারী বানাতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি ধনসম্পদের মালিক হবে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহর ঘোষিত নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অপচয় থেকে দূরে থাকা।
﴿وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا اِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْاۤ اِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّه كَفُوْرًا﴾
তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। [সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬, ২৭।]
শয়তান মানুষের দ্বারা অশ্লীল কথা বলাতে এবং ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত করতে চায়। যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অশ্লীলতা এবং ঝগড়াটে মনোভাব অথবা গালি-গালাজ করার মনোভাব লক্ষ্য করবে তার কর্তব্য হলো কুরআনের এ বাণী স্মরণ করা এবং এ সমস্ত অভ্যাস থেকে দূরে থাকা।
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ﴾
যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। [সূরা নূর- ১৯।]
শয়তান কোন কোন মানুষকে অপরকে হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য যখনই কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কাউকে হত্যা করার প্ররোচনা অনুভব করবে সে যেন কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি স্মরণ করে এবং হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
﴿وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا﴾
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হন, তাকে লানত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাশাস্তি। [সূরা নিসা– ৯৩।]
শয়তান অনেক মানুষকে বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার জন্যও প্রলুব্ধ করে। বাস্তবেও দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে এ ধরণের কুচিন্তা অনুভব করবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং নিজের জীবনকে বিনাশ করা থেকে বিরত থাকা।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنَ قَتَلَ نَفْسَهٗ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهٗ فِيْ يَدِهٖ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهٖ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ شَرِبَ سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করবে এবং বিষপান করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পড়তে থাকবে, এভাবে সে ব্যক্তি তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩১৩; তিরমিযী, হা/২০৪৩।]
শয়তান মানুষকে অপরের হক নষ্ট করার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগায়। এজন্য মানুষ নানাভাবে হারাম-হালাল বিবেচনা না করে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করছে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত বানিয়ে নিচ্ছে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার মানসিকতা অনুভব করবে সে অবশ্যই আল্লাহর এ বাণীকে স্মরণ করবে এবং শয়তানের প্ররোচনা হতে দূরে থাকবে।
﴿وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদের কিছু অংশ খেতে পার। [সূরা বাক্বারা- ১৮৮।]
শয়তান মানুষকে অপরের জমি দখল করতে উৎসাহ দেয়। এজন্য অনেক মানুষ অপরের জমি দখল করে নেয় এবং এ নিয়ে এমন ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি হয়, যা একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এজন্য কোন ব্যক্তির মনে যখনই অন্যায়ভাবে কারো জমি জবরদখল করার কুচিন্তা জাগবে তখনই সে যেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীটি স্মরণ করে এবং অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করা থেকে বিরত থাকে।
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ - - يَقُوْلُ : مَنْ اَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْاَرْضِ ظُلْمًا فَاِنَّهٗ يُطَوَّقُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ اَرَضِيْنَ
সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের একবিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিন তার গলায় বেড়ি বানিয়ে পরিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২০, মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৩।]
শয়তান মানুষকে এ ভুলের মধ্যেও নিমজ্জিত করে যে, সে মনে করে আমি হারাম-হালাল বাছ-বিচার না করে কামাই-রোজগার করে সম্পদ জমা করে নেই। তারপর হজ্জ করে এবং দান-খয়রাত করে সেই পাপ মোচন করে নেব। যে ব্যক্তি তার মনের মধ্যে এ ধরণের মিথ্যা আশা দেখতে পাবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর নিচের হাদীসটি স্মরণ করা এবং এ ধরণের কু-লালসা থেকে বিরত থাকা। কারণ সম্পদ যদি হালাল না হয় তবে তা কোনভাবেই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالَا حَرَامًا فَيَتَصَدَّقُ مِنْهُ فَيُقْبَلُ مِنْهُ ، وَلَا يُنْفِقُ مِنْهُ فَيُبَارَكُ لَهٗ فِيْهِ ، وَلَا يَتْرُكُهٗ خَلْفَ ظَهْرِهٖ اِلَّا كَانَ زَادَهٗ اِلَى النَّارِ ، اِنَّ اللهَ تَعَالٰى لَا يَمْحُو السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ ، وَلٰكِنْ يَّمْحُو السَّيِّئَ بِالْحَسَنِ ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيْثَ
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে প্রয়োজন পূরণের জন্য খরচ করলেও তাতে কোন বরকত হয় না। হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে বান্দা যদি তা থেকে দান করে তবে আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। সে সম্পদ রেখে মারা গেলে তা জাহান্নামের পথে তার জন্য পাথেয় হবে। আল্লাহ মন্দ দিয়ে মন্দকে মিটান না; বরং ভালো দিয়ে মন্দকে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয় মন্দ মন্দকে দূরীভূত করতে পারে না। [মুসনাদে আহমদ, হা/৩৬৭২; মুসনাদুল বাযযার, হা/২০২৬।]
শয়তান অনেক মানুষকে চুরি-ডাকাতির প্রতি উৎসাহিত করে। যার ফলে অনেকেই এসব কাজে লিপ্ত রয়েছে। এজন্য সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই যে সকল লোক নিজেদের মধ্যে চুরি-ডাকাতি জাতীয় বদ অভ্যাস লক্ষ্য করবে, তারা যেন কুরআনের এ বাণী মনে করে এ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখে।
﴿وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। [সূরা মায়েদা- ৩৮।]
শয়তান অনেক মানুষকে ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। অথচ ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা অভিভাবকের দায়িত্ব। যে সন্তানের পিতা ছোটকালেই মারা গেছে এবং সন্তানটি ইয়াতীম হয়ে পড়েছে তার বাবা তার জন্য যে সম্পদ রেখে গেছে এ সম্পদটুকু যে অভিভাবক গ্রাস করবে, সে যেন নিজের পেটে আগুন প্রবেশ করায়। সুতরাং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার মতো অন্যায় কাজে যারা লিপ্ত হতে চায় তাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের এ বাণীকে স্মরণ করা এবং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا﴾
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা নিসা- ১০।]
শয়তান মানুষকে ব্যবসায় ধোঁকা দিতে প্ররোচনা দেয়। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা ব্যবসায় সততা বজায় রাখে না। নকল মালকে আসল মাল বলে চালিয়ে দেয়। অধিক লাভ পাওয়ার আশায় অনেক মানুষ বলে যে, আমি এ মালটি এত টাকায় কিনেছি; অথচ সে এত টাকা দিয়ে মালটি কিনেনি। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ মালকে নতুন মাল বলে বিক্রি করে দেয়। যারা এ সকল অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পাপীদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এজন্য যারাই নিজেদের মধ্যে ব্যবসায় ধোঁকা দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে তাদের উচিত নবী ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং ব্যবসায় ধোঁকা দেয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَرَّ عَلٰى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهٗ فِيْهَا فَنَالَتْ اَصَابِعُهٗ بَلَلًا فَقَالَ : مَا هٰذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ؟ قَالَ اَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اَفَلَا جَعَلْتَهٗ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর তিনি স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তখন তিনি বললেন, হে স্তুপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫।]
শয়তান মানুষকে সুদ খাওয়ার কাজে উৎসাহিত করে। এজন্য আজ মানুষ অহরহ সুদী কারবারে জড়িয়ে পড়েছে এবং সুদ খাওয়া যে এক মারাত্মক অন্যায়, শয়তান তাদের মন থেকে এ চিন্তাটুকু পর্যন্ত দূর করে দিয়েছে। যার ফলে গোটা সমাজ আজ সুদে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। যারাই সুদী লেনদেনে লিপ্ত রয়েছে তারা কিয়ামতের দিন পাগলের মতো পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে। তাই যে ব্যক্তি সুদী কারবারে লিপ্ত রয়েছে অথবা সুদে লিপ্ত হওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীটি স্মরণ করা এবং সুদ খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের অবশিষ্ট অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। [সূরা বাক্বারা- ২৭৮।]
শয়তান মানুষকে ঘুষ খেতে উৎসাহিত করে। এজন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি কিংবা দায়িত্বশীলদেরকে ঘুষ নিতে দেখা যায়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে ঘুষ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই হারাম। যারা এ ধরণের কাজে লিপ্ত তাদের উচিত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং এ জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ ا للهِ : اَلرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিচারকার্যে ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়কে লানত করেছেন। [তিরমিযী, হা/১৩৩৬।]
عَنْ عَبْدِ ا للهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ : اَلرَّاشِيْ وَالْمُرْتَشِيْ فِي النَّارِ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামী। [মুজামুল কাবীর লিত-তাবারানী, হা/১৪০০।]
শয়তান মানুষকে খিয়ানত করতে উৎসাহিত করে। অথচ সকল ক্ষেত্রে আমানতের খিয়ানত করা মারাত্মক অপরাধ। খিয়ানত শুধু ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথেও খিয়ানত হতে পারে। যেমন, মুখে মুখে ঈমানের দাবি করা এবং আমলী জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করার মাধ্যমে খিয়ানত করা, দ্বীনি দায়িত্ব পালনে অলসতা করার মাধ্যমে খিয়ানত করা। হাত, পা, চক্ষু, জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক, জীবন ও যৌবন ইত্যাদি আল্লাহর নিয়ামতসমূহকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার না করার মাধ্যমে খিয়ানত করা।
সুতরাং যারা এ ধরণের অপরাধে লিপ্ত থাকে তাদের উচিত নিম্নোল্লিখিত আল্লাহর বাণী স্মরণ করা এবং আমানতের খিয়ানত না করা।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَ نْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না। [সূরা আনফাল- ২৭।]
তাছাড়া খিয়ানত করাকে নবী ﷺ মুনাফিকের স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ : اِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ ، وَاِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা : (১) যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, (২) যখন ওয়াদা করে তখন ওয়াদা ভঙ্গ করে, (৩) যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/২২০।]
এভাবে ইসলামের যত আদেশ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে শয়তান যখনই বাধা দেবে তখনই তার বিরোধিতা করে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। অপর দিকে যখনই শয়তান ইসলামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ করার জন্য উৎসাহ দেবে তখনই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং ঐ নিষিদ্ধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [সূরা বাক্বারা- ৪৩।]
শয়তান বান্দাকে যাকাত আদায় করা হতে বিরত রাখতে চায়। তাই যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে সে যেন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করে এবং যাকাত আদায় করে।
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا﴾
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। [সূরা মুয্যাম্মিল- ২০।]
শয়তান মানুষকে সিয়াম পালন থেকেও বিরত রাখতে চায়। সুতরাং যখন রমাযান মাস শুরু হবে তখন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করতে হবে এবং সিয়াম পালন করতে হবে।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। [সূরা বাক্বারা- ১৮৩।]
শয়তান বান্দাকে হজ্জ পালন করা হতেও বিরত রাখতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের সক্ষম হবে সে যেন আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করে এবং দেরী না করে হজ্জ আদায় করে নেয়।
﴿وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ﴾
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ পালন করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। [সূরা আলে ইমরান- ৯৭।]
শয়তান মুসলিমদেরকে জিহাদ থেকে দূরে রাখতে চায়। কারণ তারা যদি সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়, তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে। শয়তান এটা সহ্য করতে পারবে না। এজন্য সে নানাভাবে নানা কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথ থেকে দূরে রাখে। এজন্য কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করা এবং দেরী না করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করা।
﴿كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরা জান না। [সূরা বাক্বারা- ২১৬।]
শয়তান মানুষকে দিয়ে মিথ্যা বলাতে চায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ করা এবং মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকা।
﴿وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য। [সূরা মুরসালাত- ১৫।]
শয়তান মানুষের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে। তাই যখন কোন ব্যাপারে কারো মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হবে তখনই তার উচিত হবে আল্লাহর নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অহংকার থেকে ফিরে আসা।
﴿اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ﴾
আল্লাহ ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [সূরা লুকমান- ১৮।]
শয়তান মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। তাই যখনই কারো মধ্যে হিংসার আগুন জ্বলবে তখনই তার উচিত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং হিংসা থেকে সরে আসা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىَّ - - قَالَ : اِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَاِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সাবধান! তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো; কেননা হিংসা ঐভাবে নেক আমলকে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। [আবু দাউদ, হা/৪৯০৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৪১২।]
শয়তান মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়। যখন কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কৃপণতা অনুভব করবে তখনই তার উচিত হবে, আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী স্মরণ করা এবং কৃপণতা না করে সামর্থ্যানুযায়ী নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য ও আল্লাহর দ্বীনের জন্য ব্যয় করা।
﴿وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ﴾
যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। [সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮।]
শয়তান অনেক সময় মানুষকে অপচয়কারী বানাতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি ধনসম্পদের মালিক হবে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহর ঘোষিত নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অপচয় থেকে দূরে থাকা।
﴿وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا اِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْاۤ اِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّه كَفُوْرًا﴾
তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। [সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬, ২৭।]
শয়তান মানুষের দ্বারা অশ্লীল কথা বলাতে এবং ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত করতে চায়। যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অশ্লীলতা এবং ঝগড়াটে মনোভাব অথবা গালি-গালাজ করার মনোভাব লক্ষ্য করবে তার কর্তব্য হলো কুরআনের এ বাণী স্মরণ করা এবং এ সমস্ত অভ্যাস থেকে দূরে থাকা।
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ﴾
যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। [সূরা নূর- ১৯।]
শয়তান কোন কোন মানুষকে অপরকে হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য যখনই কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কাউকে হত্যা করার প্ররোচনা অনুভব করবে সে যেন কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি স্মরণ করে এবং হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
﴿وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا﴾
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হন, তাকে লানত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাশাস্তি। [সূরা নিসা– ৯৩।]
শয়তান অনেক মানুষকে বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার জন্যও প্রলুব্ধ করে। বাস্তবেও দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে এ ধরণের কুচিন্তা অনুভব করবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং নিজের জীবনকে বিনাশ করা থেকে বিরত থাকা।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنَ قَتَلَ نَفْسَهٗ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهٗ فِيْ يَدِهٖ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهٖ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ شَرِبَ سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করবে এবং বিষপান করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পড়তে থাকবে, এভাবে সে ব্যক্তি তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩১৩; তিরমিযী, হা/২০৪৩।]
শয়তান মানুষকে অপরের হক নষ্ট করার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগায়। এজন্য মানুষ নানাভাবে হারাম-হালাল বিবেচনা না করে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করছে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত বানিয়ে নিচ্ছে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার মানসিকতা অনুভব করবে সে অবশ্যই আল্লাহর এ বাণীকে স্মরণ করবে এবং শয়তানের প্ররোচনা হতে দূরে থাকবে।
﴿وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদের কিছু অংশ খেতে পার। [সূরা বাক্বারা- ১৮৮।]
শয়তান মানুষকে অপরের জমি দখল করতে উৎসাহ দেয়। এজন্য অনেক মানুষ অপরের জমি দখল করে নেয় এবং এ নিয়ে এমন ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি হয়, যা একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এজন্য কোন ব্যক্তির মনে যখনই অন্যায়ভাবে কারো জমি জবরদখল করার কুচিন্তা জাগবে তখনই সে যেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীটি স্মরণ করে এবং অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করা থেকে বিরত থাকে।
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ - - يَقُوْلُ : مَنْ اَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْاَرْضِ ظُلْمًا فَاِنَّهٗ يُطَوَّقُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ اَرَضِيْنَ
সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের একবিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিন তার গলায় বেড়ি বানিয়ে পরিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২০, মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৩।]
শয়তান মানুষকে এ ভুলের মধ্যেও নিমজ্জিত করে যে, সে মনে করে আমি হারাম-হালাল বাছ-বিচার না করে কামাই-রোজগার করে সম্পদ জমা করে নেই। তারপর হজ্জ করে এবং দান-খয়রাত করে সেই পাপ মোচন করে নেব। যে ব্যক্তি তার মনের মধ্যে এ ধরণের মিথ্যা আশা দেখতে পাবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর নিচের হাদীসটি স্মরণ করা এবং এ ধরণের কু-লালসা থেকে বিরত থাকা। কারণ সম্পদ যদি হালাল না হয় তবে তা কোনভাবেই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالَا حَرَامًا فَيَتَصَدَّقُ مِنْهُ فَيُقْبَلُ مِنْهُ ، وَلَا يُنْفِقُ مِنْهُ فَيُبَارَكُ لَهٗ فِيْهِ ، وَلَا يَتْرُكُهٗ خَلْفَ ظَهْرِهٖ اِلَّا كَانَ زَادَهٗ اِلَى النَّارِ ، اِنَّ اللهَ تَعَالٰى لَا يَمْحُو السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ ، وَلٰكِنْ يَّمْحُو السَّيِّئَ بِالْحَسَنِ ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيْثَ
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে প্রয়োজন পূরণের জন্য খরচ করলেও তাতে কোন বরকত হয় না। হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে বান্দা যদি তা থেকে দান করে তবে আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। সে সম্পদ রেখে মারা গেলে তা জাহান্নামের পথে তার জন্য পাথেয় হবে। আল্লাহ মন্দ দিয়ে মন্দকে মিটান না; বরং ভালো দিয়ে মন্দকে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয় মন্দ মন্দকে দূরীভূত করতে পারে না। [মুসনাদে আহমদ, হা/৩৬৭২; মুসনাদুল বাযযার, হা/২০২৬।]
শয়তান অনেক মানুষকে চুরি-ডাকাতির প্রতি উৎসাহিত করে। যার ফলে অনেকেই এসব কাজে লিপ্ত রয়েছে। এজন্য সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই যে সকল লোক নিজেদের মধ্যে চুরি-ডাকাতি জাতীয় বদ অভ্যাস লক্ষ্য করবে, তারা যেন কুরআনের এ বাণী মনে করে এ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখে।
﴿وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। [সূরা মায়েদা- ৩৮।]
শয়তান অনেক মানুষকে ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। অথচ ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা অভিভাবকের দায়িত্ব। যে সন্তানের পিতা ছোটকালেই মারা গেছে এবং সন্তানটি ইয়াতীম হয়ে পড়েছে তার বাবা তার জন্য যে সম্পদ রেখে গেছে এ সম্পদটুকু যে অভিভাবক গ্রাস করবে, সে যেন নিজের পেটে আগুন প্রবেশ করায়। সুতরাং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার মতো অন্যায় কাজে যারা লিপ্ত হতে চায় তাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের এ বাণীকে স্মরণ করা এবং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا﴾
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা নিসা- ১০।]
শয়তান মানুষকে ব্যবসায় ধোঁকা দিতে প্ররোচনা দেয়। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা ব্যবসায় সততা বজায় রাখে না। নকল মালকে আসল মাল বলে চালিয়ে দেয়। অধিক লাভ পাওয়ার আশায় অনেক মানুষ বলে যে, আমি এ মালটি এত টাকায় কিনেছি; অথচ সে এত টাকা দিয়ে মালটি কিনেনি। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ মালকে নতুন মাল বলে বিক্রি করে দেয়। যারা এ সকল অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পাপীদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এজন্য যারাই নিজেদের মধ্যে ব্যবসায় ধোঁকা দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে তাদের উচিত নবী ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং ব্যবসায় ধোঁকা দেয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَرَّ عَلٰى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهٗ فِيْهَا فَنَالَتْ اَصَابِعُهٗ بَلَلًا فَقَالَ : مَا هٰذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ؟ قَالَ اَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اَفَلَا جَعَلْتَهٗ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর তিনি স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তখন তিনি বললেন, হে স্তুপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫।]
শয়তান মানুষকে সুদ খাওয়ার কাজে উৎসাহিত করে। এজন্য আজ মানুষ অহরহ সুদী কারবারে জড়িয়ে পড়েছে এবং সুদ খাওয়া যে এক মারাত্মক অন্যায়, শয়তান তাদের মন থেকে এ চিন্তাটুকু পর্যন্ত দূর করে দিয়েছে। যার ফলে গোটা সমাজ আজ সুদে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। যারাই সুদী লেনদেনে লিপ্ত রয়েছে তারা কিয়ামতের দিন পাগলের মতো পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে। তাই যে ব্যক্তি সুদী কারবারে লিপ্ত রয়েছে অথবা সুদে লিপ্ত হওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীটি স্মরণ করা এবং সুদ খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের অবশিষ্ট অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। [সূরা বাক্বারা- ২৭৮।]
শয়তান মানুষকে ঘুষ খেতে উৎসাহিত করে। এজন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি কিংবা দায়িত্বশীলদেরকে ঘুষ নিতে দেখা যায়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে ঘুষ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই হারাম। যারা এ ধরণের কাজে লিপ্ত তাদের উচিত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং এ জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকা।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ ا للهِ : اَلرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিচারকার্যে ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়কে লানত করেছেন। [তিরমিযী, হা/১৩৩৬।]
عَنْ عَبْدِ ا للهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ : اَلرَّاشِيْ وَالْمُرْتَشِيْ فِي النَّارِ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামী। [মুজামুল কাবীর লিত-তাবারানী, হা/১৪০০।]
শয়তান মানুষকে খিয়ানত করতে উৎসাহিত করে। অথচ সকল ক্ষেত্রে আমানতের খিয়ানত করা মারাত্মক অপরাধ। খিয়ানত শুধু ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথেও খিয়ানত হতে পারে। যেমন, মুখে মুখে ঈমানের দাবি করা এবং আমলী জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করার মাধ্যমে খিয়ানত করা, দ্বীনি দায়িত্ব পালনে অলসতা করার মাধ্যমে খিয়ানত করা। হাত, পা, চক্ষু, জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক, জীবন ও যৌবন ইত্যাদি আল্লাহর নিয়ামতসমূহকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার না করার মাধ্যমে খিয়ানত করা।
সুতরাং যারা এ ধরণের অপরাধে লিপ্ত থাকে তাদের উচিত নিম্নোল্লিখিত আল্লাহর বাণী স্মরণ করা এবং আমানতের খিয়ানত না করা।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَ نْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না। [সূরা আনফাল- ২৭।]
তাছাড়া খিয়ানত করাকে নবী ﷺ মুনাফিকের স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ : اِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ ، وَاِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা : (১) যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, (২) যখন ওয়াদা করে তখন ওয়াদা ভঙ্গ করে, (৩) যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/২২০।]
এভাবে ইসলামের যত আদেশ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে শয়তান যখনই বাধা দেবে তখনই তার বিরোধিতা করে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। অপর দিকে যখনই শয়তান ইসলামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ করার জন্য উৎসাহ দেবে তখনই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং ঐ নিষিদ্ধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
যারা ঈমানদার নয় :
﴿اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেই। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
যারা সত্য অস্বীকার করে :
﴿اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَ زًّا﴾
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানকে ছেড়ে দিয়েছি? যাতে সে তাদেরকে মন্দকর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে। [সূরা মারইয়াম- ৮৩।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় :
﴿اِنَّمَا سُلْطَانُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَهٗ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِهٖ مُشْرِكُوْنَ﴾
তার আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং যারা তাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। [সূরা নাহল- ১০০।]
যারা পাপাচারী ও মিথ্যুক :
﴿تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ﴾
তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা শু‘আরা- ২২২।]
যারা নফসের দাসত্ব করে এবং লোভী হয়ে থাকে :
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ – وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِۚ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ﴾
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে, এমনকি সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা ঐ কুকুরের ন্যায়, যার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে থাকো, যাতে তারা চিন্তা করে। [সূরা আ‘রাফ- ১৭৫, ১৭৬।]
যারা আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন থেকে গাফিল থাকে :
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। [সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭।]
﴿اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেই। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
যারা সত্য অস্বীকার করে :
﴿اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَ زًّا﴾
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানকে ছেড়ে দিয়েছি? যাতে সে তাদেরকে মন্দকর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে। [সূরা মারইয়াম- ৮৩।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় :
﴿اِنَّمَا سُلْطَانُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَهٗ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِهٖ مُشْرِكُوْنَ﴾
তার আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং যারা তাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। [সূরা নাহল- ১০০।]
যারা পাপাচারী ও মিথ্যুক :
﴿تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ﴾
তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা শু‘আরা- ২২২।]
যারা নফসের দাসত্ব করে এবং লোভী হয়ে থাকে :
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ – وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِۚ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ﴾
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে, এমনকি সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা ঐ কুকুরের ন্যায়, যার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে থাকো, যাতে তারা চিন্তা করে। [সূরা আ‘রাফ- ১৭৫, ১৭৬।]
যারা আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন থেকে গাফিল থাকে :
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। [সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭।]
শয়তান ভুল পথে নিয়ে গেলে ফিরে আসতে হবে :
﴿وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ﴾
শয়তান যদি তোমাকে ভুলের মধ্যে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। [সূরা আন‘আম- ৬৮।]
শয়তানের বাহিনীর সাথে লড়াই করতে হবে :
﴿فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِؕ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا﴾
তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। [সূরা নিসা- ৭৬।]
শয়তান খাঁটি মুসলিমকে বিভ্রান্ত করতে পারে না :
﴿قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ – قَالَ هٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيْمٌ – اِنَّ عِبَادِيْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِيْنَ ﴾
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত। আল্লাহ বললেন, এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ, বিভ্রামত্মদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না। [সূরা হিজর, ৩৯-৪২।]
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। [সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩।]
দাসত্ব ও আনুগত্যের পথই হচ্ছে আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র সোজা পথ। যারা এ পথ অবলম্বন করবে তাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব চলবে না। শয়তান নিজেও স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, তারা তার ফাঁদে পা দেবে না। তবে যারা নিজেরাই দাসত্ব ও আনুগত্যের পথ থেকে সরে এসে নিজেদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথ হারিয়ে ফেলবে, তারা ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে। ইবলিসকে কেবলমাত্র ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কারো হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
আল্লাহভীরু লোকেরা শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِۚ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ﴾
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী, শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। [সূরা আ‘রাফ- ২০১।]
কুরআন পড়ার সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [সূরা নাহল- ৯৮।]
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতে হবে :
﴿ رَبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَ اَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ﴾
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। [সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮।]
﴿وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ﴾
শয়তান যদি তোমাকে ভুলের মধ্যে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। [সূরা আন‘আম- ৬৮।]
শয়তানের বাহিনীর সাথে লড়াই করতে হবে :
﴿فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِؕ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا﴾
তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। [সূরা নিসা- ৭৬।]
শয়তান খাঁটি মুসলিমকে বিভ্রান্ত করতে পারে না :
﴿قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ – قَالَ هٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيْمٌ – اِنَّ عِبَادِيْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِيْنَ ﴾
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত। আল্লাহ বললেন, এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ, বিভ্রামত্মদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না। [সূরা হিজর, ৩৯-৪২।]
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ﴾
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। [সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩।]
দাসত্ব ও আনুগত্যের পথই হচ্ছে আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র সোজা পথ। যারা এ পথ অবলম্বন করবে তাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব চলবে না। শয়তান নিজেও স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, তারা তার ফাঁদে পা দেবে না। তবে যারা নিজেরাই দাসত্ব ও আনুগত্যের পথ থেকে সরে এসে নিজেদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথ হারিয়ে ফেলবে, তারা ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে। ইবলিসকে কেবলমাত্র ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কারো হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
আল্লাহভীরু লোকেরা শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِۚ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ﴾
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী, শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। [সূরা আ‘রাফ- ২০১।]
কুরআন পড়ার সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
﴿فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [সূরা নাহল- ৯৮।]
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতে হবে :
﴿ رَبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَ اَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ﴾
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। [সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮।]
শয়তানের আনুগত্য না করার জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছেন :
﴿اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مٌّبِيْنٌ﴾
আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে) হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা ইয়াসীন- ৬০।]
মানুষের কাজে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন উভয়ই অংশগ্রহণ করে। আবার কখনো শুধু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে কাজ করে; কিন্তু অন্তর সে কাজে সহযোগী হয় না। কেউ যদি এমন অবস্থায় কোন গোনাহ করে যে, তার অন্তর তাতে সাড়া দেয়নি এবং তার কণ্ঠ আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে এটা হবে বাইরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও এতে সন্তোষ প্রকাশ করে, তাহলে সে হবে ভেতরে ও বাইরে উভয় পর্যায়ে শয়তানের ইবাদাতকারী।
তারপরও অনেক লোক শয়তানের অনুসরণ করে :
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيْدٍ﴾
মানুষের মধ্যে কতক (লোক) অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তারা প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করে। [সূরা হজ্জ- ৩।]
শয়তানের অনুসরণ করেও তারা সঠিক পথে আছে বলে মনে করে :
﴿اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল; আর তারা মনে করত, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। [সূরা আ‘রাফ- ৩০।]
আল্লাহ শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন :
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ﴾
হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
﴿وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা যুখরুফ- ৬২।]
আল্লাহ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাক্বারা- ১৬৮।]
﴿وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা আন‘আম- ১৪২।]
কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের পদাঙ্ক হতে বাঁচার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা শুধু শয়তানের কাছ থেকে সতর্ক হও, কারণ অনেক ঈমানদার মুসলমান আছেন, যারা শয়তানকে দেখতে পান এবং এতে করে তারা নিজেরাই সতর্ক হতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি যুবতী মেয়ে একজন ঈমানদার যুবকের কাছে এসে বলল, চলো আজ আমরা দু’জনে একসাথে রাত কাটাই। তখন ওই যুবক বলবে, দু‘জনে একসাথে রাত কাটাব? তাও আবার একটা মেয়ের সাথে? সে তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ করবে।
কিন্তু ওই একই যুবতী যদি ওই যুবকের সাথে ফোনে কথা বলে তাহলে এটা তেমন কোন বড় সমস্যা মনে করা হয় না। পরবর্তীতে মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, চলো আমরা হোটেলে গিয়ে কিছু খাই। এটাও তেমন কোন বড় সমস্যা মনে করা হয় না।। এরপর মেয়েটি বলল, তাহলে রাতটা তুমি আমার সাথে কাটাচ্ছ না কেন? তখন ছেলেটি বলল, কোন সমস্যা নয়। এটাই হলো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ। আর শয়তানের এই পদাঙ্ক অনুসরণ একজন মুমিন বান্দাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ কারণে আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে সতর্ক হতে বলেছেন। শয়তানের পদাঙ্ক হলো এমন একটি জিনিস যেটি খুবই বিপদজনক। যদি কেউ আগ বাড়িয়ে শয়তানের কাছে যায় তাহলে শয়তানের কাছে তার মাথানত এবং বিভিন্ন পাপকাজ করার বা পাপে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চরমে পৌঁছে। তাই আমরা যতই শয়তানের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করব ততই আমাদের পাপকাজে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
﴿اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مٌّبِيْنٌ﴾
আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে) হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা ইয়াসীন- ৬০।]
মানুষের কাজে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন উভয়ই অংশগ্রহণ করে। আবার কখনো শুধু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে কাজ করে; কিন্তু অন্তর সে কাজে সহযোগী হয় না। কেউ যদি এমন অবস্থায় কোন গোনাহ করে যে, তার অন্তর তাতে সাড়া দেয়নি এবং তার কণ্ঠ আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে এটা হবে বাইরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও এতে সন্তোষ প্রকাশ করে, তাহলে সে হবে ভেতরে ও বাইরে উভয় পর্যায়ে শয়তানের ইবাদাতকারী।
তারপরও অনেক লোক শয়তানের অনুসরণ করে :
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيْدٍ﴾
মানুষের মধ্যে কতক (লোক) অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তারা প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করে। [সূরা হজ্জ- ৩।]
শয়তানের অনুসরণ করেও তারা সঠিক পথে আছে বলে মনে করে :
﴿اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল; আর তারা মনে করত, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। [সূরা আ‘রাফ- ৩০।]
আল্লাহ শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন :
﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ﴾
হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
﴿وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা যুখরুফ- ৬২।]
আল্লাহ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাক্বারা- ১৬৮।]
﴿وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ﴾
আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা আন‘আম- ১৪২।]
কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের পদাঙ্ক হতে বাঁচার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা শুধু শয়তানের কাছ থেকে সতর্ক হও, কারণ অনেক ঈমানদার মুসলমান আছেন, যারা শয়তানকে দেখতে পান এবং এতে করে তারা নিজেরাই সতর্ক হতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি যুবতী মেয়ে একজন ঈমানদার যুবকের কাছে এসে বলল, চলো আজ আমরা দু’জনে একসাথে রাত কাটাই। তখন ওই যুবক বলবে, দু‘জনে একসাথে রাত কাটাব? তাও আবার একটা মেয়ের সাথে? সে তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ করবে।
কিন্তু ওই একই যুবতী যদি ওই যুবকের সাথে ফোনে কথা বলে তাহলে এটা তেমন কোন বড় সমস্যা মনে করা হয় না। পরবর্তীতে মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, চলো আমরা হোটেলে গিয়ে কিছু খাই। এটাও তেমন কোন বড় সমস্যা মনে করা হয় না।। এরপর মেয়েটি বলল, তাহলে রাতটা তুমি আমার সাথে কাটাচ্ছ না কেন? তখন ছেলেটি বলল, কোন সমস্যা নয়। এটাই হলো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ। আর শয়তানের এই পদাঙ্ক অনুসরণ একজন মুমিন বান্দাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ কারণে আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে সতর্ক হতে বলেছেন। শয়তানের পদাঙ্ক হলো এমন একটি জিনিস যেটি খুবই বিপদজনক। যদি কেউ আগ বাড়িয়ে শয়তানের কাছে যায় তাহলে শয়তানের কাছে তার মাথানত এবং বিভিন্ন পাপকাজ করার বা পাপে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চরমে পৌঁছে। তাই আমরা যতই শয়তানের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করব ততই আমাদের পাপকাজে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
শয়তানের আনুগত্য করা শিরক :
﴿وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
﴿وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা নিসা- ১১৯।]
﴿اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
শয়তানের অনুসারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿قَالَ فَالْحَقُّؗ وَالْحَقَّ اَقُوْلُ – لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ اَجْمَعِيْنَ﴾
আল্লাহ বললেন, তবে তাই ঠিক; আর আমি সত্য কথাই বলে থাকি। অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব তোমাকে দিয়ে এবং তাদের (মানুষ ও জিন জাতির) মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে। [সূরা সোয়াদ- ৮৪, ৮৫।]
﴿فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا﴾
শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করব। তারপর আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই। [সূরা মারইয়াম- ৬৮।]
﴿وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
﴿وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা নিসা- ১১৯।]
﴿اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
শয়তানের অনুসারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿قَالَ فَالْحَقُّؗ وَالْحَقَّ اَقُوْلُ – لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ اَجْمَعِيْنَ﴾
আল্লাহ বললেন, তবে তাই ঠিক; আর আমি সত্য কথাই বলে থাকি। অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব তোমাকে দিয়ে এবং তাদের (মানুষ ও জিন জাতির) মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে। [সূরা সোয়াদ- ৮৪, ৮৫।]
﴿فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا﴾
শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করব। তারপর আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই। [সূরা মারইয়াম- ৬৮।]
﴿وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْؕ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِيْۚ فَلَا تَلُوْمُوْنِيْ وَلُوْمُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ مَاۤ اَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّؕ اِنِّيْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُؕ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ﴾
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, বরং তোমরা নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, নিশ্চয় যালিমদের জন্য (প্রস্তুত) রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। [সূরা ইবরাহীম- ২২।]
যখন কিয়ামতে সব মুকাদ্দামার ফায়সালা শেষ হবে তখন জাহান্নামীরা সবাই সেখানে অবস্থানকারী শয়তানের কাছে গিয়ে তিরস্কার করে বলবে, হতভাগা! তুই তো আমাদেরকে ধ্বংস করলে। তখন শয়তান উত্তরে বলবে, তোমরা দেখতেই পাচ্ছ, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদেরকে যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, সবই ছিল নিছক প্রতারণা। আমি তো কেবল তোমাদেরকে সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যার দিকে ডেকেছিলাম, সৎকাজের মুকাবিলায় অসৎকাজ করার জন্য আহবান করেছিলাম। এর বেশি আর কিছুই করিনি। আমার কথা মানা অথবা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা তোমাদের ছিল। তোমাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিঃসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমিই নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছ?
আমি সেসব ভুয়া ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছিলাম এবং আল্লাহর ওয়াদা যে সত্য আমার ওয়াদা যে মিথ্যা- এর ভুরি-ভুরি অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান ছিল। এতদ্বসত্ত্বেও তোমরা আমার ওয়াদাকে সত্য এবং আল্লাহর ওয়াদাকে মিথ্যা মনে করেছ। নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি তোমাদেরকেই বহন করতে হবে।
তবে কথা এই যে, তোমাদের উপর আমার এছাড়া অন্য কোনো জোর ছিল না যে, আমি তোমাদেরকে পথভ্রষ্টতার দিকে ডেকেছিলাম। অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছিলে। যদি না মানতে, তবে আমি বলপূর্বক তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারতাম না। যখন এটা প্রমাণিত, অতএব আমাকে সম্পূর্ণ ভৎর্সনা করো না। বেশি ভৎর্সনা নিজেদেরকেই করো। কারণ আযাবের আসল হোতা তোমরাই।
আর তোমাদের কথার উদ্দেশ্য যদি সাহায্য প্রার্থনা হয়; তবে আমি অন্যের সাহায্য কীভাবে করতে পারি, যখন আমি নিজেই বিপদগ্রস্ত এবং সাহায্য প্রত্যাশী হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি জানি যে, কেউ আমাকে সাহায্য করবে না। নতুবা আমিও তোমাদের কাছে নিজের জন্য সাহায্য প্রত্যাশা করতাম। কেননা তোমাদের সাথেই আমার সম্পর্ক বেশি। সুতরাং এখন না আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী হতে পারি এবং না তোমরা আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী হতে পার, তবে আমি যদি তোমাদের শিরককে সত্য মনে করতাম, তবুও এ সম্পর্কের কারণে সাহায্য প্রার্থনার অবকাশ থাকত, কিন্তু আমি স্বয়ং তোমাদের এ কর্মকে মিথ্যা মনে করি যে, তোমরা ইতোপূর্বে দুনিয়াতে আমাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করতে। অর্থাৎ আমার এমন আনুগত্য করতে, যে আনুগত্য বিশেষভাবে আল্লাহর প্রাপ্য। অতএব আমার সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করারও কোন অধিকার নেই। নিশ্চয় যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। অতএব তোমরা আযাবে পড়ে থাকো। আমাকে ভৎর্সনা করো না। তোমরা যে যুলুম করেছ, তা তোমরাই ভোগ করো। আমি যা করেছি, তা আমি ভোগ করব। এসব কথাবার্তার এখন আর কোন অর্থ হয় না।
এ হচ্ছে ইবলীস শয়তানের উত্তরের সারমর্ম। এতে আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যদের ভরসাও ছিন্ন হয়েছে। কেননা ইবলীস শয়তানই হচ্ছে অন্য উপাস্যদের উপাসনার আসল প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা এবং প্রকৃতপক্ষে এ উপাসনা দ্বারা সেই অধিক সন্তুষ্ট হয়। এ কারণেই কিয়ামতের দিন জাহান্নামীরা তার সাথেই কথাবার্তা বলবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্যকে কিছুই বলবে না। যখন সে পরিস্কার জবাব দিয়ে দেবে, তখন অন্যদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়।
হে আল্লাহর বান্দারা! আপনারা কি একটু চিন্তা করবেন? আজ দুনিয়ার মানুষ যেসব নেতানেত্রীদের পেছনে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করছে, যাদের নামে তারা শ্লোগান দিচ্ছে তারা পরকালে কোন পরিণতির সম্মুখীন হবে? যেসব দলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের কর্মসূচী নেই, সেসব দলের নেতানেত্রীরাও এভাবে শয়তানের মতো জবাব দিয়ে কেটে পড়বে। তখন তারা এবং তাদের অনুসারীরা উভয়পক্ষই বিপদে পড়বে। অতএব আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।
وَصَلَّىْ اللهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, বরং তোমরা নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, নিশ্চয় যালিমদের জন্য (প্রস্তুত) রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। [সূরা ইবরাহীম- ২২।]
যখন কিয়ামতে সব মুকাদ্দামার ফায়সালা শেষ হবে তখন জাহান্নামীরা সবাই সেখানে অবস্থানকারী শয়তানের কাছে গিয়ে তিরস্কার করে বলবে, হতভাগা! তুই তো আমাদেরকে ধ্বংস করলে। তখন শয়তান উত্তরে বলবে, তোমরা দেখতেই পাচ্ছ, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদেরকে যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, সবই ছিল নিছক প্রতারণা। আমি তো কেবল তোমাদেরকে সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যার দিকে ডেকেছিলাম, সৎকাজের মুকাবিলায় অসৎকাজ করার জন্য আহবান করেছিলাম। এর বেশি আর কিছুই করিনি। আমার কথা মানা অথবা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা তোমাদের ছিল। তোমাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিঃসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমিই নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছ?
আমি সেসব ভুয়া ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছিলাম এবং আল্লাহর ওয়াদা যে সত্য আমার ওয়াদা যে মিথ্যা- এর ভুরি-ভুরি অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান ছিল। এতদ্বসত্ত্বেও তোমরা আমার ওয়াদাকে সত্য এবং আল্লাহর ওয়াদাকে মিথ্যা মনে করেছ। নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি তোমাদেরকেই বহন করতে হবে।
তবে কথা এই যে, তোমাদের উপর আমার এছাড়া অন্য কোনো জোর ছিল না যে, আমি তোমাদেরকে পথভ্রষ্টতার দিকে ডেকেছিলাম। অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছিলে। যদি না মানতে, তবে আমি বলপূর্বক তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারতাম না। যখন এটা প্রমাণিত, অতএব আমাকে সম্পূর্ণ ভৎর্সনা করো না। বেশি ভৎর্সনা নিজেদেরকেই করো। কারণ আযাবের আসল হোতা তোমরাই।
আর তোমাদের কথার উদ্দেশ্য যদি সাহায্য প্রার্থনা হয়; তবে আমি অন্যের সাহায্য কীভাবে করতে পারি, যখন আমি নিজেই বিপদগ্রস্ত এবং সাহায্য প্রত্যাশী হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি জানি যে, কেউ আমাকে সাহায্য করবে না। নতুবা আমিও তোমাদের কাছে নিজের জন্য সাহায্য প্রত্যাশা করতাম। কেননা তোমাদের সাথেই আমার সম্পর্ক বেশি। সুতরাং এখন না আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী হতে পারি এবং না তোমরা আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী হতে পার, তবে আমি যদি তোমাদের শিরককে সত্য মনে করতাম, তবুও এ সম্পর্কের কারণে সাহায্য প্রার্থনার অবকাশ থাকত, কিন্তু আমি স্বয়ং তোমাদের এ কর্মকে মিথ্যা মনে করি যে, তোমরা ইতোপূর্বে দুনিয়াতে আমাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করতে। অর্থাৎ আমার এমন আনুগত্য করতে, যে আনুগত্য বিশেষভাবে আল্লাহর প্রাপ্য। অতএব আমার সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করারও কোন অধিকার নেই। নিশ্চয় যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। অতএব তোমরা আযাবে পড়ে থাকো। আমাকে ভৎর্সনা করো না। তোমরা যে যুলুম করেছ, তা তোমরাই ভোগ করো। আমি যা করেছি, তা আমি ভোগ করব। এসব কথাবার্তার এখন আর কোন অর্থ হয় না।
এ হচ্ছে ইবলীস শয়তানের উত্তরের সারমর্ম। এতে আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যদের ভরসাও ছিন্ন হয়েছে। কেননা ইবলীস শয়তানই হচ্ছে অন্য উপাস্যদের উপাসনার আসল প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা এবং প্রকৃতপক্ষে এ উপাসনা দ্বারা সেই অধিক সন্তুষ্ট হয়। এ কারণেই কিয়ামতের দিন জাহান্নামীরা তার সাথেই কথাবার্তা বলবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্যকে কিছুই বলবে না। যখন সে পরিস্কার জবাব দিয়ে দেবে, তখন অন্যদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়।
হে আল্লাহর বান্দারা! আপনারা কি একটু চিন্তা করবেন? আজ দুনিয়ার মানুষ যেসব নেতানেত্রীদের পেছনে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করছে, যাদের নামে তারা শ্লোগান দিচ্ছে তারা পরকালে কোন পরিণতির সম্মুখীন হবে? যেসব দলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের কর্মসূচী নেই, সেসব দলের নেতানেত্রীরাও এভাবে শয়তানের মতো জবাব দিয়ে কেটে পড়বে। তখন তারা এবং তাদের অনুসারীরা উভয়পক্ষই বিপদে পড়বে। অতএব আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।
وَصَلَّىْ اللهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন