hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৬
শয়তান থেকে বাঁচার জন্য যে মুহূর্তে যা করণীয়
 শয়তান বান্দাকে সালাত আদায় করা হতে বিরত রাখতে চায়। সুতরাং যখনই জামা‘আতের সময় হবে তখনই তার উচিত আল্লাহর এই বাণী স্মরণ করা এবং জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা।

﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾

তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [সূরা বাক্বারা- ৪৩।]

 শয়তান বান্দাকে যাকাত আদায় করা হতে বিরত রাখতে চায়। তাই যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে সে যেন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করে এবং যাকাত আদায় করে।

﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا﴾

সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। [সূরা মুয্যাম্মিল- ২০।]

 শয়তান মানুষকে সিয়াম পালন থেকেও বিরত রাখতে চায়। সুতরাং যখন রমাযান মাস শুরু হবে তখন আল্লাহর এ নির্দেশকে স্মরণ করতে হবে এবং সিয়াম পালন করতে হবে।

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। [সূরা বাক্বারা- ১৮৩।]

 শয়তান বান্দাকে হজ্জ পালন করা হতেও বিরত রাখতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের সক্ষম হবে সে যেন আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করে এবং দেরী না করে হজ্জ আদায় করে নেয়।

﴿وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ﴾

আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ পালন করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। [সূরা আলে ইমরান- ৯৭।]

 শয়তান মুসলিমদেরকে জিহাদ থেকে দূরে রাখতে চায়। কারণ তারা যদি সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়, তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে। শয়তান এটা সহ্য করতে পারবে না। এজন্য সে নানাভাবে নানা কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথ থেকে দূরে রাখে। এজন্য কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণী স্মরণ করা এবং দেরী না করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করা।

﴿كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾

যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরা জান না। [সূরা বাক্বারা- ২১৬।]

 শয়তান মানুষকে দিয়ে মিথ্যা বলাতে চায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ করা এবং মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকা।

﴿وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য। [সূরা মুরসালাত- ১৫।]

 শয়তান মানুষের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে। তাই যখন কোন ব্যাপারে কারো মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হবে তখনই তার উচিত হবে আল্লাহর নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অহংকার থেকে ফিরে আসা।

﴿اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ﴾

আল্লাহ ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [সূরা লুকমান- ১৮।]

 শয়তান মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। তাই যখনই কারো মধ্যে হিংসার আগুন জ্বলবে তখনই তার উচিত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং হিংসা থেকে সরে আসা।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىَّ - - قَالَ : اِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَاِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সাবধান! তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো; কেননা হিংসা ঐভাবে নেক আমলকে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। [আবু দাউদ, হা/৪৯০৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৪১২।]

 শয়তান মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়। যখন কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কৃপণতা অনুভব করবে তখনই তার উচিত হবে, আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী স্মরণ করা এবং কৃপণতা না করে সামর্থ্যানুযায়ী নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য ও আল্লাহর দ্বীনের জন্য ব্যয় করা।

﴿وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ﴾

যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। [সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮।]

 শয়তান অনেক সময় মানুষকে অপচয়কারী বানাতে চায়। এজন্য যে ব্যক্তি ধনসম্পদের মালিক হবে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহর ঘোষিত নিম্নের এ বাণী স্মরণ করা এবং অপচয় থেকে দূরে থাকা।

﴿وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا اِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْاۤ اِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّه كَفُوْرًا﴾

তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। [সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬, ২৭।]

 শয়তান মানুষের দ্বারা অশ্লীল কথা বলাতে এবং ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত করতে চায়। যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অশ্লীলতা এবং ঝগড়াটে মনোভাব অথবা গালি-গালাজ করার মনোভাব লক্ষ্য করবে তার কর্তব্য হলো কুরআনের এ বাণী স্মরণ করা এবং এ সমস্ত অভ্যাস থেকে দূরে থাকা।

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ﴾

যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। [সূরা নূর- ১৯।]

 শয়তান কোন কোন মানুষকে অপরকে হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য যখনই কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে কাউকে হত্যা করার প্ররোচনা অনুভব করবে সে যেন কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি স্মরণ করে এবং হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

﴿وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا﴾

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হন, তাকে লানত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাশাস্তি। [সূরা নিসা– ৯৩।]

 শয়তান অনেক মানুষকে বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার জন্যও প্রলুব্ধ করে। বাস্তবেও দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে এ ধরণের কুচিন্তা অনুভব করবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর এ বাণী স্মরণ করা এবং নিজের জীবনকে বিনাশ করা থেকে বিরত থাকা।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : ‏ مَنَ قَتَلَ نَفْسَهٗ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهٗ فِيْ يَدِهٖ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهٖ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ شَرِبَ سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهٗ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করবে এবং বিষপান করতে থাকবে, এভাবে তথায় সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পড়তে থাকবে, এভাবে সে ব্যক্তি তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩১৩; তিরমিযী, হা/২০৪৩।]

 শয়তান মানুষকে অপরের হক নষ্ট করার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগায়। এজন্য মানুষ নানাভাবে হারাম-হালাল বিবেচনা না করে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করছে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত বানিয়ে নিচ্ছে। তাই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার মানসিকতা অনুভব করবে সে অবশ্যই আল্লাহর এ বাণীকে স্মরণ করবে এবং শয়তানের প্ররোচনা হতে দূরে থাকবে।

﴿وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾

তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদের কিছু অংশ খেতে পার। [সূরা বাক্বারা- ১৮৮।]

 শয়তান মানুষকে অপরের জমি দখল করতে উৎসাহ দেয়। এজন্য অনেক মানুষ অপরের জমি দখল করে নেয় এবং এ নিয়ে এমন ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি হয়, যা একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এজন্য কোন ব্যক্তির মনে যখনই অন্যায়ভাবে কারো জমি জবরদখল করার কুচিন্তা জাগবে তখনই সে যেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীটি স্মরণ করে এবং অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করা থেকে বিরত থাকে।

عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ - - يَقُوْلُ : مَنْ اَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْاَرْضِ ظُلْمًا فَاِنَّهٗ يُطَوَّقُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ اَرَضِيْنَ

সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের একবিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিন তার গলায় বেড়ি বানিয়ে পরিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২০, মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৩।]

 শয়তান মানুষকে এ ভুলের মধ্যেও নিমজ্জিত করে যে, সে মনে করে আমি হারাম-হালাল বাছ-বিচার না করে কামাই-রোজগার করে সম্পদ জমা করে নেই। তারপর হজ্জ করে এবং দান-খয়রাত করে সেই পাপ মোচন করে নেব। যে ব্যক্তি তার মনের মধ্যে এ ধরণের মিথ্যা আশা দেখতে পাবে তার কর্তব্য হলো নবী ﷺ এর নিচের হাদীসটি স্মরণ করা এবং এ ধরণের কু-লালসা থেকে বিরত থাকা। কারণ সম্পদ যদি হালাল না হয় তবে তা কোনভাবেই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالَا حَرَامًا فَيَتَصَدَّقُ مِنْهُ فَيُقْبَلُ مِنْهُ ، وَلَا يُنْفِقُ مِنْهُ فَيُبَارَكُ لَهٗ فِيْهِ ، وَلَا يَتْرُكُهٗ خَلْفَ ظَهْرِهٖ اِلَّا كَانَ زَادَهٗ اِلَى النَّارِ ، اِنَّ اللهَ تَعَالٰى لَا يَمْحُو السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ ، وَلٰكِنْ يَّمْحُو السَّيِّئَ بِالْحَسَنِ ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيْثَ

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে প্রয়োজন পূরণের জন্য খরচ করলেও তাতে কোন বরকত হয় না। হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে বান্দা যদি তা থেকে দান করে তবে আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। সে সম্পদ রেখে মারা গেলে তা জাহান্নামের পথে তার জন্য পাথেয় হবে। আল্লাহ মন্দ দিয়ে মন্দকে মিটান না; বরং ভালো দিয়ে মন্দকে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয় মন্দ মন্দকে দূরীভূত করতে পারে না। [মুসনাদে আহমদ, হা/৩৬৭২; মুসনাদুল বাযযার, হা/২০২৬।]

 শয়তান অনেক মানুষকে চুরি-ডাকাতির প্রতি উৎসাহিত করে। যার ফলে অনেকেই এসব কাজে লিপ্ত রয়েছে। এজন্য সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই যে সকল লোক নিজেদের মধ্যে চুরি-ডাকাতি জাতীয় বদ অভ্যাস লক্ষ্য করবে, তারা যেন কুরআনের এ বাণী মনে করে এ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখে।

﴿وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾

যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। [সূরা মায়েদা- ৩৮।]

 শয়তান অনেক মানুষকে ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। অথচ ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা অভিভাবকের দায়িত্ব। যে সন্তানের পিতা ছোটকালেই মারা গেছে এবং সন্তানটি ইয়াতীম হয়ে পড়েছে তার বাবা তার জন্য যে সম্পদ রেখে গেছে এ সম্পদটুকু যে অভিভাবক গ্রাস করবে, সে যেন নিজের পেটে আগুন প্রবেশ করায়। সুতরাং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়ার মতো অন্যায় কাজে যারা লিপ্ত হতে চায় তাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের এ বাণীকে স্মরণ করা এবং ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا﴾

নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা নিসা- ১০।]

 শয়তান মানুষকে ব্যবসায় ধোঁকা দিতে প্ররোচনা দেয়। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা ব্যবসায় সততা বজায় রাখে না। নকল মালকে আসল মাল বলে চালিয়ে দেয়। অধিক লাভ পাওয়ার আশায় অনেক মানুষ বলে যে, আমি এ মালটি এত টাকায় কিনেছি; অথচ সে এত টাকা দিয়ে মালটি কিনেনি। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ মালকে নতুন মাল বলে বিক্রি করে দেয়। যারা এ সকল অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পাপীদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এজন্য যারাই নিজেদের মধ্যে ব্যবসায় ধোঁকা দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে তাদের উচিত নবী ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং ব্যবসায় ধোঁকা দেয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَرَّ عَلٰى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهٗ فِيْهَا فَنَالَتْ اَصَابِعُهٗ بَلَلًا فَقَالَ : مَا هٰذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ؟ قَالَ اَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اَفَلَا جَعَلْتَهٗ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর তিনি স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তখন তিনি বললেন, হে স্তুপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫।]

 শয়তান মানুষকে সুদ খাওয়ার কাজে উৎসাহিত করে। এজন্য আজ মানুষ অহরহ সুদী কারবারে জড়িয়ে পড়েছে এবং সুদ খাওয়া যে এক মারাত্মক অন্যায়, শয়তান তাদের মন থেকে এ চিন্তাটুকু পর্যন্ত দূর করে দিয়েছে। যার ফলে গোটা সমাজ আজ সুদে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। যারাই সুদী লেনদেনে লিপ্ত রয়েছে তারা কিয়ামতের দিন পাগলের মতো পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে। তাই যে ব্যক্তি সুদী কারবারে লিপ্ত রয়েছে অথবা সুদে লিপ্ত হওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে তার কর্তব্য হলো, আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীটি স্মরণ করা এবং সুদ খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের অবশিষ্ট অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। [সূরা বাক্বারা- ২৭৮।]

 শয়তান মানুষকে ঘুষ খেতে উৎসাহিত করে। এজন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি কিংবা দায়িত্বশীলদেরকে ঘুষ নিতে দেখা যায়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে ঘুষ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই হারাম। যারা এ ধরণের কাজে লিপ্ত তাদের উচিত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নের বাণী স্মরণ করা এবং এ জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকা।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ ا للهِ  : اَلرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিচারকার্যে ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়কে লানত করেছেন। [তিরমিযী, হা/১৩৩৬।]

عَنْ عَبْدِ ا للهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ : اَلرَّاشِيْ وَالْمُرْتَشِيْ فِي النَّارِ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঘুষ প্রদানকারী এবং ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামী। [মুজামুল কাবীর লিত-তাবারানী, হা/১৪০০।]

 শয়তান মানুষকে খিয়ানত করতে উৎসাহিত করে। অথচ সকল ক্ষেত্রে আমানতের খিয়ানত করা মারাত্মক অপরাধ। খিয়ানত শুধু ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথেও খিয়ানত হতে পারে। যেমন, মুখে মুখে ঈমানের দাবি করা এবং আমলী জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করার মাধ্যমে খিয়ানত করা, দ্বীনি দায়িত্ব পালনে অলসতা করার মাধ্যমে খিয়ানত করা। হাত, পা, চক্ষু, জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক, জীবন ও যৌবন ইত্যাদি আল্লাহর নিয়ামতসমূহকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার না করার মাধ্যমে খিয়ানত করা।

সুতরাং যারা এ ধরণের অপরাধে লিপ্ত থাকে তাদের উচিত নিম্নোল্লিখিত আল্লাহর বাণী স্মরণ করা এবং আমানতের খিয়ানত না করা।

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَ نْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾

হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না। [সূরা আনফাল- ২৭।]

তাছাড়া খিয়ানত করাকে নবী ﷺ মুনাফিকের স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ : اِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ ، وَاِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা : (১) যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, (২) যখন ওয়াদা করে তখন ওয়াদা ভঙ্গ করে, (৩) যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/২২০।]

এভাবে ইসলামের যত আদেশ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে শয়তান যখনই বাধা দেবে তখনই তার বিরোধিতা করে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। অপর দিকে যখনই শয়তান ইসলামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ করার জন্য উৎসাহ দেবে তখনই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং ঐ নিষিদ্ধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন