মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তানের পদক্ষেপসমূহ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/591/10
মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তান সব ধরণের পথ অবলম্বন করে। সে এমন সব পথে প্রবেশ করে যে, অধিকাংশ মানুষ তা অনুভব করতে পারে না। এজন্য শয়তানের প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ধাপে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এ ধাপগুলো হচ্ছে-
১। শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করতে চেষ্টা করে। কেননা যদি কোন মানুষ ঈমান ত্যাগ করে কুফরী অবলম্বন করে তাহলে তার হাজারও ভালো কাজ থাকলেও তা কোন কাজে আসে না। সুতরাং সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য সে কাফির হয়ে যায় এবং সে শয়তানের পরম বন্ধুতে পরিণত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। [সূরা বাক্বারা- ১৬।]
২। শয়তান মানুষকে শিরকে লিপ্ত করে :
কোন মানুষ যদি কুফর ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করে, তাহলে শয়তান তাকে শিরকের মধ্যে লিপ্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। যদি তাকে শিরকে লিপ্ত করতে পারে, তবে সে সফল হয়। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ মুমিন দাবি করা সত্ত্বেও মুশরিক হয়ে যায়। ফলে তার জীবনের সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং পরকালে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ফলে তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা মায়েদা– ৭২।]
৩। শয়তান মানুষকে বিদ‘আতে লিপ্ত করে :
যখন কোন মানুষ কুফর ও শিরক ত্যাগ করে নিজেকে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যে লিপ্ত করে তখন শয়তান তাকে দিয়ে এমন কাজ করাতে চায় যার ফলে তার ঐ নেক আমলগুলো কোন কাজে না আসে। এজন্য সে মানুষকে এমন এক অপরাধে লিপ্ত করে, যাকে বলা হয় বিদ‘আত। মানুষ বিদ‘আতী কাজসমূহ সওয়াব মনে করেই করে থাকে। এ কারণে সে বুঝতে পারে না যে, সে ভালো কাজ করেও জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক হাদীসে এসেছে,
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি (কিয়ামতের দিন) হাওজে কাওসারের স্থানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব। যে সেখানে পৌঁছবে, সে সেখান থেকে পান করতে পারবে। আর যে সেখান থেকে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। (আমি দেখতে পাব) কিছু লোক আমার দিকে আগমন করবে এবং আমি তাদেরকে চিনতেও পারব; আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু পরে আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা টেনে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ! এরা তো আমার উম্মত। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি জান না- তোমার পর এরা তোমার দ্বীনের মধ্যে কত বিদ‘আত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা আমার থেকে দূর হয়ে যাক। [সহীহ বুখারী, হা/৬২১২।]
৪। শয়তান মানুষকে কুসংস্কারে লিপ্ত করে :
শয়তান মানুষকে বিভিন্ন কুসংস্কারে লিপ্ত করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। সমাজে প্রচলিত অনেক কাজ এমন আছে যেগুলোকে মানুষ সামাজিক প্রথা হিসেবে পালন করে। অথচ এসব কুসংস্কারের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্নভাবে বিজাতির অনুসরণ করে। হাদীসে এসেছে,
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতির অনুসরণ করল, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪০৩১।]
৫। শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহে লিপ্ত করে :
একজন মানুষ মুমিন হলেও তার দায়িত্ব হচ্ছে, সব ধরণের কবীরা গোনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু শয়তান মানুষকে কবীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে তাকে জাহান্নামী বানানোর চেষ্টা করে। অথচ সে যদি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে অন্যান্য ছোটখাটো গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গোনাহ হতে নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাক, তবে আমি তোমাদের (অতীতের) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। [সূরা নিসা- ৩১।]
৬। শয়তান মানুষের সামনে সগীরা গোনাহকে হালকা করে তোলে ধরে :
মানুষ সাধারণত সগীরা গোনাহকে হালকা মনে করে। অথচ সূত্র হচ্ছে, কেউ যদি সগীরা গোনাহকে তুচ্ছ মনে করে অথবা বারবার সগীরা গোনাহ করতে থাকে, তবে তার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। যেহেতু মানুষ সগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয় না, সেজন্য শয়তান বান্দাদেরকে অধিক হারে সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে। আর যারা সবসময় সগীরা গোনাহের মধ্যে লিপ্ত থাকে, অথবা হালালের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ও কবীরা গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন চারণভূমির আশপাশে স্বীয় পশু চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। (জেনে রেখো) প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সীমারেখা থাকে। তাই সাবধান! (এ দুনিয়াতে) আল্লাহর সীমারেখা হলো তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা ভালো থাকলে গোটা দেহ ভালো থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হয়ে যাবে তখন গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা হলো ক্বলব তথা অন্তর। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫১।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি ছোট পাপ থেকে সাবধান থাকো। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে এরও অনুসন্ধানকারী রয়েছে। [দারেমী, হা/২৭৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪১৫।]
৭। শয়তান মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে :
শয়তান যখন মানুষকে কোন পাপে লিপ্ত করতে চায়, তখন ঐ পাপের সাময়িক লাভ ও সৌন্দর্যের দিকে তার মনোযোগ আকৃষ্ট করে। যেমনিভাবে শয়তান আদম (আঃ) এর সাথে করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন দানকারী বৃক্ষের কথা ও এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না? [সূরা ত্বা–হা– ১২০।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না। আর যদি তোমার উপর কোন বিপদ আসে তাহলে এমন কথা বলো না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হতো না। বরং এ কথা বলো যে, আল্লাহ তা‘আলা যা নির্দিষ্ট করেছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা لَوْ (যদি) শব্দটি শয়তানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৬৭।]
৯। শয়তান মানুষকে অলস করে তোলে :
কথায় বলে, ‘‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’’ শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কর্মবিমুখ ও অলস করে তোলে। বিশেষ করে দ্বীনের কাজের ক্ষেত্রে অলস করে তোলে এবং খারাপ কাজে উৎসাহিত করে। একজন মুমিন কখনোই তার মূল্যবান সময়কে অলসতা করে নষ্ট করতে পারে না। কারণ এ মূল্যবান সময় তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিয়ামত। সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। নবী (সাঃ) বলেছেন,
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে ব্যাপারে অনেক লোকই উদাসীন। একটি হচ্ছে, সুস্থতা; আর অপরটি হচ্ছে, অবসর। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৯।]
১০। শয়তান পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া লাগায় :
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং আস্তে আস্তে তা তর্ক ও ঝগড়ায় রূপ নেয়। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে, যেন তারা তোমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আনআম- ১২১।]
কতক মানুষ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে। [সূরা হাজ্জ- ৩।]
১১। শয়তান পাপকাজকে চাকচিক্য করে দেখায় :
বদর যুদ্ধের দিন কাফিরদের সাথে গায়িকা মেয়েরা ছিল এবং তারা গানবাজনাও করছিল। আর শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছিল। সে তাদেরকে মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলাচ্ছিল এবং তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল। তাদের কানে কানে সে বলছিল, তোমাদেরকে কে পরাজিত করতে পারে? আমি তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছি। কুরআনে এসেছে,
যখন শয়তান তাদের কার্যাবলিকে তাদের দৃষ্টিতে খুব চাকচিক্যময় ও শোভনীয় করে দেখাচ্ছিল, তখন সে গর্বভরে বলেছিল, কোন মানুষই আজ তোমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না, আমি (সাহায্যার্থে) তোমাদের কাছেই থাকব। [সূরা আনফাল- ৪৮।]
১২। শয়তান হারামকে হালাল বানানোর কৌশল শিখিয়ে দেয় :
নিজেকে যথেষ্ট ভালো মানুষ বলে বিশ্বাস করানো এবং নিজের অন্যায় কাজগুলো নিজেই যুক্তি দিয়ে ন্যায় কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে শয়তান তার উদ্দেশ্য অর্জন করে নেয়। যেমন- কেউ ঘুষ দিয়ে ভাবছে যে, সেটা দোষের কিছু না, কারণ সে নিজে তা তো খাচ্ছে না। আর ঘুষ না দিলে তো কাজটা কোনভাবে করানো যাচ্ছে না। এভাবে সে হালাল ঘুষের প্রচলন শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে হালাল সুদ, হালাল লোন, হালাল ইন্স্যুরেন্স, হালাল লটারি- এ রকম অনেক কিছুই হালাল হয়ে যাওয়া শুরু হয়। যে সিগারেট খায় তাকে যদি বলা হয়, এটা ইসলামি শরীয়াতে হারাম, তবে সে যুক্তি দেখায়- এটা হারাম নয়, মাকরূহ। যে মিলাদ করছে তাকে যদি বলা হয় যে, মিলাদ করা বিদ‘আত, তবে সে বলে, তাহলে এত মানুষ যে এটা করে। শয়তান যেভাবে আদম (আঃ) এর সামনে নত না হওয়ার জন্য যুক্তিতর্ক দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, সে যা করেছে সেটাই ঠিক; সে রকম মানুষ যুক্তি দিয়ে আল্লাহকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, কোন হারামটা আসলে হারাম না। এভাবে সে শয়তানের দলের একজন হয়ে যায়।
১৩। শয়তান সন্দেহ ঢুকিয়ে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয় :
শয়তান মানুষের ভালো কাজগুলোতে সন্দেহ সৃষ্টি করে। তারপর ধীরে ধীরে তার সে ভালো কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয়। যেমন কেউ প্রতিজ্ঞা করল- সে নিয়মিত নামায পড়বে; তখন শয়তান তার মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়- তোমার কাপড় অপবিত্র, এটা দিয়ে নামায হবে না। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কিছু টাকা দান করবে, তখন শয়তান তার মনে বাজারের তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয় এবং এ কুমন্ত্রণা দেয় যে, আগে কেনাকাটা তারপর দান-খয়রাত। কেউ ইচ্ছা করল যে, সে কুরআন পাঠ করবে। তখন শয়তান তাকে বলে, হাতের কাজ শেষ করে নাও তারপর কুরআন পাঠ করো। অতঃপর হাতের কাজ শেষ হতে হতে জীবন শেষ হয়ে যায়, আল্লাহর বাণীগুলো পাঠ করার সময় আর হয় না।
১৪। শয়তান মানুষকে বিনোদনে লিপ্ত করে কর্তব্য কাজ থেকে দূরে রাখে :
শয়তান যতভাবে পারে মানুষকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তাদের মাথায় হাজারো ধরণের অযথা তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ক ভরিয়ে রাখে, যাতে করে আল্লাহ তাকে কী করতে বলেছেন এবং কী করতে নিষেধ করেছেন, সেটা মনে রাখতে না পারে। যখনি সে একা বসে থাকে বা রাতে বিছানায় শুতে যায়, তখন আর তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে না; বরং তার কানে বাজে ডায়ালগ, চোখ বন্ধ করলে কোন মুভির নাচ-গান বা মারামারির দৃশ্য তার সামনে ভেসে উঠে অথবা সে মুখে কোন হিন্দি গান গুন গুন করতে থাকে। এভাবে সে ফজর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আর আযান হলেই শয়তান তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
এ কারণেই আল্লাহ আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত নামায বুঝে-শুনে, গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছেন, যাতে করে আমরা ভালো জিনিসগুলো ভুলে না যাই। কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেটা করতে পারে না।
এ যুগের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিয়েছে, যেটা আগে ছিল না। আজকালকার তরুণ-তরুণীরা মোবাইল ফোন, টিভি, এসবের মাধ্যমে নাচ-গান দেখে ও শুনে। মোবাইলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেহুদা আড্ডা মারে। এত কিছু করার পর তাদের আর ভালো কিছু করার সময় কোথায়?
আজকাল আর শয়তানদেরকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করার জন্য এত ব্যবস্থা করে ফেলেছে যে, মানবজাতিকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে মানুষরূপী শয়তান দিয়ে পৃথিবী ভরিয়ে ফেলার যে মহাপরিকল্পনা শয়তানের রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত নিষ্ঠার সাথে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে।
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রেখো) নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। [সূরা ইবরাহীম- ৭।]
এখানে আল্লাহ আমাদেরকে কথা দিয়েছেন যে, যদি আমরা তাঁর কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে দিতেই থাকবেন। নিশ্চয় শয়তান চাইবে না মানুষ শুকরিয়া আদায় করুক এবং আরো ভালো থাকুক। এ কারণে শয়তান মানুষকে কখনই পরিতৃপ্ত হতে দেয় না।
১৬। শয়তান সবসময় সম্মান ও সম্পত্তি হারানোর ভয় দেখায় :
শয়তান মানুষকে অভাবের ভয় দেখানোর পদ্ধতিটি হাজার হাজার বছর থেকে সফলভাবে প্রয়োগ করে আসছে। আজও কোটি কোটি মানুষ সম্পত্তি জমানোর জন্য কাজ করতে করতে তাদের জীবন শেষ করে ফেলে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবরে যায় একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে এবং সমস্ত সম্পত্তি, উপাধি ও ক্ষমতা পেছনে ফেলে। যাদের ঈমান দুর্বল শয়তান তাদেরকে সবসময় এসব কিছু হারানোর ভয়ে রাখে, যাতে করে তারা আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষ হয় কৃপণে পরিণত হয়, না হয় সম্পত্তি ধরে রাখার জন্য এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা তারা করে না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন,
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]
১৭। শয়তান আরো চাওয়ার এবং আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয় :
শয়তান সবসময় আরো চাওয়ার ও আরো পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। মানুষের যতই থাকুক সে আরো চাইবে, সবসময় আরো কিছু পাওয়ার একটা জেদ থাকবে। কারণ যখন মানুষ জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে, তখন সে ধিরস্থির হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কথা ভাবা শুরু করবে। শয়তান কোনভাবেই চায় না এটা হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
কবরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রাখে। সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। আবারো সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানতে! (তাহলে সাবধান হয়ে যেতে)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নামকে দেখতে পাবে। অতঃপর অবশ্যই তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। [সূরা তাকাসুর।]
১৮। শয়তান আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয় :
কিছু মানুষ আছে যাদেরকে শয়তান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, অনুভুতি, আবেগ- সবকিছুই শয়তানের দখলে চলে গেছে। এরা কথা বললে খারাপ কথা বলে, এদের কাজগুলো বেশিরভাগই হারাম কাজ। যেমন টিভি দেখলে এরা দেখে তারকাদের সাক্ষাতকার, মিউজিক শো, নানা ধরণের খারাপ সিরিয়াল। মুভি দেখলে দেখে সব মারামারি, খুনাখুনি, হরোর মুভি, না হয় হারাম প্রেম-ভালোবাসা ও পরকীয়ার মুভি। খবরের কাগজে এরা সব হারাম খবর পড়ে- কে কাকে ধর্ষণ করল, কোন মডেলের ছবিতে শরীরের কতখানি দেখা যায়। কম্পিউটারে বসলে এরা ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় সিনেমা, ফেসবুকে পরকীয়া, অবৈধ মেলামেশা, মোবাইল ফোনে গান শুনা, ছবি দেখা, গীবত করা, গোপন খবর ফাঁস করে দেয়া- এসব কাজে ব্যস্ত থাকে। এভাবে এরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ধরণের শয়তানী কাজ করা যায়, তার সবই করে। এরা তাদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে দিয়ে দিয়েছে। তাদের চালকের আসনে আর বিবেক বসে নেই, বসে আছে শয়তান। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
এ ধরণের মানুষদের সম্পর্কে সাবধান। আল্লাহ এদেরকে শয়তানের দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরা আর সাধারণ মানুষ নেই। আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা মানুষরূপী শয়তান। এরা বাবা-মা, ভাইবোন, ছেলেমেয়ে যেই হোক না কেন, সর্বদা এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে থাকতে গিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার কথা ভুলে না যাওয়া হয় অথবা আল্লাহদ্রোহী কোন কাজ শুরু করা না হয়।
আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা পৃথিবীতে এসেছি আল্লাহকে খুশি রেখে নিজে ভালো থাকার জন্য। আল্লাহর বিনিময়ে অন্যদেরকে খুশি রাখার জন্য নয়। তাই কখনো নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেয়া যাবে না। কখনো বাবা-মার অন্যায়ের সমর্থনে নিজেকে শেষ করা যাবে না। মানুষরূপী শয়তান হয়ে জঘন্য কাজ করে নিজের উপর আল্লাহর আক্রমণ ডেকে আনা যাবে না। এদের কাছ থেকে সসম্মানে বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ আল্লাহ আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
শয়তান মানুষকে বোকা বানানোর এ পদ্ধতিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে সফলভাবে ব্যবহার করে আসছে। পৃথিবীতে বহু মানুষকে সে প্রতিনিয়ত বোকা বানিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি তার সহযোগী হয়ে তার কাজ করতে না চাই, তাহলে শয়তানের এসব কৌশলের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে মানুষের পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘায়িত করেছেন। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করা ও ধোঁকা দেয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ। এজন্য সবসময় আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ শয়তান আমাদেরকে পাপে জড়িয়ে দিয়ে সে কেটে পড়ে, আর বিপদে পড়ি আমরা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
সে (শয়তান) মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/591/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।