hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শয়তান থেকে বাঁচার কৌশল

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

কুরআনে বর্ণিত শয়তানের কার্যক্রম
শয়তানের বিভিন্ন কার্যাবলি ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তান যেসব কৌশল অবলম্বন করে সেসবের অনেকটাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। নিচে তা আলোচনা করা হলো :

শয়তান মানুষকে দেখে কিন্তু মানুষ তাকে দেখে না :

﴿اِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْؕ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾

সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনয়ন করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]

শয়তান মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় :

﴿وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا﴾

মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। [সূরা নিসা- ৬০।]

শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :

﴿اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّاؕ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ﴾

নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। [সূরা ফাতির- ৬।]

শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ত্রুটি করে না :

﴿وَاِخْوَانُهُمْ يَمُدُّوْنَهُمْ فِى الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُوْنَ﴾

তাদের সঙ্গি-সাথিরা তাদেরকে বিভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না। [সূরা আ‘রাফ- ২০২।]

শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় :

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ ﴾

হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে (জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দকাজের নির্দেশ দেয়। [সূরা নূর- ২১।]

শয়তান পাপকাজকে সুন্দর করে দেখায় :

﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾

তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুন্দর করে দিয়েছিল। [সূরা আন‘আম- ৪৩।]

﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ﴾

শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পায় না। [সূরা নামল- ২৪।]

শয়তান মানুষকে সালাত ও যিকির থেকে দূরে রাখে :

﴿ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾

শয়তান তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা বিরত থাকবে না? [সূরা মায়েদা- ৯১।]

মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর শয়তানের কাজ :

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়েদা- ৯০।]

শয়তান মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে :

﴿اِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنَاثًاۚ وَاِنْ يَّدْعُوْنَ اِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيْدًا لَعَنَهُ اللهُۘ وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا وَلَاُضِلَّنَّهُمْ وَلَاُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِؕ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا﴾

তারা তাঁর পরিবর্তে দেব-দেবীদেরকেই আহবান করে এবং বিদ্রোহী শয়তানকেই ডাকে, অথচ আল্লাহ তাকে লানত করেছেন। সে বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করবই। অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কর্ণচ্ছেদ করবে। অবশ্যই তাদেরকে (আরো) নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। অতএব (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা নিসা : ১৭-১১৯।]

আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সে কাজে ব্যবহার করা এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে ব্যবহার না করা। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে, তা সবই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন জন্মশাসন, বৈরাগ্যবাদ, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খাসি বানানো ও মেয়েদের উপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তাদেরকে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে টেনে আনা, যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শয়তানের অনুসারীরা দুনিয়ায় এ ধরণের আরো যেসব কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো আসলে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্বজাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধিবিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।

শয়তান মানুষের সন্তান ও সম্পদে শরীক হয়ে যায় :

﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْؕ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾

তোমার আহবানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ করো, তাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতিতে শরীক হয়ে যাও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪।]

এ আয়াতে শয়তানকে এমন এক ডাকাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে জনপদ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হুকুম দিতে থাকে- এদিকে লুটপাট করো, ওদিকে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাও এবং সেদিকে ধ্বংস করো। শয়তানের অশ্বারোহী ও পদাতিক বলতে এমনসব জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্নভাবে ইবলিসের বিধ্বংসী অভিযানে সহযোগিতা করছে। যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন ও তা খরচ করার ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ করে, তার সাথে যেন শয়তান শরীক হয়ে যায়। পরিশ্রমে তার কোন অংশ নেই; কিন্তু অপরাধ, পাপ ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণতিতে সে শুধু অংশীদারই নয় বরং বৃহত্তম অংশীদার। এভাবে সন্তান হয় মানুষের নিজের, সুতরাং তাকে লালন-পালন করার জন্য সে নিজের কর্মক্ষমতা ও সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু শয়তানের ইঙ্গিতে এ সন্তানকে মানুষ এমনভাবে গোমরাহী ও নৈতিক চরিত্রহীনতার শিক্ষা দেয়, যেন মনে হয় সে একা এ সন্তানের পিতা নয় বরং তার পিতৃত্বে শয়তানও শরীক আছে।

শয়তানের প্রথম কাজ হলো লজ্জা ও পর্দা উঠিয়ে দেয়া :

﴿يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَايَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا﴾

হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ করতে না পারে; যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]

মানুষকে তার স্বভাবসুলভ সহজসরল পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের প্রথম কৌশল হলো লজ্জার অনুভূতিতে আঘাত করা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার দরজা খুলে দেয়া এবং তাকে যৌন লালসার পথে পরিচালিত করা। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করার জন্য তার যে দুর্বলতম স্থানটিকে সে বেছে নেয় সেটি হলো, যৌনবিষয়ক দিক। যে লজ্জাকে আল্লাহ তা‘আলা মানবীয় প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, সে প্রথমে তার উপরই আঘাত হানে। শয়তান ও তার শিষ্যদের এ কর্মনীতি আদিকাল থেকে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে বাজারে না দাঁড় করানো পর্যন্ত তাদের প্রগতির শুরুই হতে পারে না।

শয়তান জিহাদে বের হওয়ার সময় ভয় দেখায় :

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا﴾

যেদিন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পলায়ন করেছিল, নিশ্চয় শয়তান তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। [সূরা আলে ইমরান- ১৫৫।]

দারিদ্রে্যর ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :

﴿اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَّاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾

শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাক্বারা- ২৬৮।]

শয়তান মানুষের মনে প্রতারণামূলক আশা দেয় :

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ﴾

যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকে লোভ দেখিয়েছে এবং (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। [সূরা মুহাম্মাদ- ২৫।]

﴿يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا﴾

সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। [সূরা নিসা- ১২০।]

অসৎকাজ করার প্রকাশ্য আহবানকে মানুষ খুব কমই গ্রহণ করে, এটা মানুষের স্বভাবসুলভ প্রবণতা। তাই নিজের জালে আবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক অসৎকর্মের আহবায়ক কল্যাণকামীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়। মানুষের মধ্যে উচ্চতর বিষয়াবলি লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য অর্জন করে এ পথেই। শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্র হচ্ছে,

সে মানুষের সামনে তাকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়ার টোপ ফেলে, তারপর তাকে এমন পথের সন্ধান দেয়, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শয়তানের সকল কর্মই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেয়ার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তখন কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ-উপভোগ লাভের আশায় উদ্বুদ্ধ করে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দেয়। কারো মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আখিরাত বলতে কিছুই নেই। মৃত্যুর পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয় যে, আখিরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে অমুক হুজুরের বদৌলতে, অমুকের দু‘আর বরকতে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরণের আশার ছলনায় ভুলানো যায়, তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

শয়তান মানুষের সাথে প্রতারণা করে :

﴿لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾

সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান- ২৯।]

﴿وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾

স্মরণ করো, যখন শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকব। অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। [সূরা আনফাল- ৪৮।]

শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে :

﴿وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا﴾

আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩।]

মানুষকে পাপে লিপ্ত করে নিজে কেটে পড়ে :

﴿كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ﴾

তাদের তুলনা শয়তানের মতো, সে মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। [সূরা হাশর- ১৬।]

শয়তান অবাস্তব কথা বলায় :

﴿وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ اِنَّمَا يَاْمُرُكُمْ بِالسُّوْٓءِ وَالْفَحْشَآءِ وَاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ﴾

শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না সে বিষয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়। [সূরা বাক্বারা- ১৬৮, ১৬৯।]

শয়তান প্রতারণামূলক ও চমকপ্রদ কথা বলায় :

﴿وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ﴾

এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। [সূরা আন‘আম- ১১২।]

শয়তান মানুষকে মন্ত্র ও যাদু শিক্ষা দেয় :

﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾

সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। [সূরা বাক্বারা- ১০২।]

শয়তান নবীদের কথাকেও বিকৃত করত :

﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤى اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِۤيْ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْؕ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ﴾

(হে নবী) আমি তোমার আগে এমন কোন নবী কিংবা রাসূলই প্রেরণ করিনি (যারা এ ঘটনার সম্মুখীন হননি যে) যখন তিনি (আল্লাহর আয়াত পাঠ করার) আগ্রহ প্রকাশ করতেন তখন শয়তান তার সে আগ্রহের কাছে (কাফিরদের মনে) সন্দেহ ঢেলে দেয়নি। অতঃপর আল্লাহ শয়তানের নিক্ষিপ্ত (সন্দেহগুলো) মিটিয়ে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে (আরো) মজবুত করে দেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষেপ করে তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, যাদের অমত্মরে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয় যালিমরা চরম মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। [সূরা হজ্জ- ৫২, ৫৩।]

যখনই নবী ﷺ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের সামনে সেগুলোর সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে উল্টো অর্থ তোলে ধরেছে। আল্লাহ শয়তানের বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নবীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং শয়তানের ঢুকানো সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি দূর করে দেন। শয়তান এক একটি আয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে যেসব জটিলতা সৃষ্টি করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী কোন অধিকতর সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সেগুলো পরিষ্কার করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের ফিতনাকে লোকদের জন্য পরীক্ষা এবং নকল থেকে আসলকে আলাদা করার একটা মাধ্যমে পরিণত করেছেন। বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা এসব জিনিস থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এগুলো তাদের জন্য ভ্রষ্টতার উপকরণে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী লোকেরা এসব কথা থেকে নবী ও আল্লাহর কিতাবের সত্য হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করে এবং তারা অনুভব করতে থাকে যে, এগুলো শয়তানের অনিষ্টকর কার্যকলাপ। এ জিনিসটি তাদেরকে একদম নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, এটি নির্ঘাত কল্যাণ ও সত্যের দাওয়াত, নতুবা শয়তান এতে এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ত না।

হকের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীর দাওয়াতের মুকাবিলায় এসব হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ এসব শয়তানী ফিতনার মূলোচ্ছেদ করেছেন। ফলে বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সত্যের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েছে। সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ-সংশয় দূরীভূত হয়েছে। শয়তান ও তার সাথিরা এসব কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর আয়াতকে মর্যাদাহীন করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকেই মানুষের মধ্যে আসল ও নকলের পার্থক্য করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এ পথেই আসল ও নির্ভেজাল লোকেরা সত্যের দাওয়াতের দিকে এগিয়ে আসে এবং ভেজাল লোকেরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায়।

ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন মূলত সে মানুষ। হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে ভুলত্রুটি সংঘটিত হতেই পারে। বড় বড় সৎকর্মপরায়ণ ও জ্ঞানবান লোকেরাও অনেক সময় ভুল করে বসেন। এ ক্ষেত্রে উচিত হলো তাদের ভুলগুলো বাদ দিয়ে সঠিক বিষয়গুলো গ্রহণ করা। কিন্তু যারা তাদের প্রতি সীমাতিরিক্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করে থাকে, তারা তাদের সঠিক কথার সাথে সাথে ভুল কথাগুলোও চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করে নেয়। অপরদিকে মন্দচরিত্রের লোকেরা তাদের ভুলত্রুটিগুলো অনুসন্ধানের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে। ফলে যখনই তারা কোন ধরণের ভুল করে বসেন, তখনই তারা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন