মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিভ্রান্ত করার কাজে শয়তান সদা তৎপর। তার প্রতারণা থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কুরআন ও হাদীসে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার কিছু উপায় বলে দেয়া হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
১। আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া :
শয়তান যখনই মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [সূরা আরাফ- ২০০, সূরা ফুসসিলাত- ৩৬।]
শয়তান থেকে সবসময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। তবে কুরআন ও হাদীসে নিম্নোক্ত কয়েকটি স্থানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
১/১. কুরআন তিলাওয়াতের সময় :
কুরআন তিলাওয়াত একটি বড় ইবাদাত। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় বুঝে-শুনে পাঠ করতে হবে, যাতে আল্লাহর বাণীর মর্ম বুঝা যায়। কিন্তু বান্দা কুরআন বুঝে-শুনে পাঠ করুক- শয়তান এটা চায় না। তাই শয়তান যাতে ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আমি মহান আল্লাহর সম্মানিত চেহারা ও স্থায়ী রাজত্বের মাধ্যমে তার নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, যদি তুমি এটা বল তখন শয়তান বলে, সে আমার কাছ থেকে সারা দিনের জন্য নিরাপত্তা পেয়ে গেল। [আবু দাউদ, হা/৪৬৬।]
আবদুল আ‘লা (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) নবী ﷺ এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার, আমার সালাত ও কিরা‘আতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এটা এক (প্রকারের) শয়তান- যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপর আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৩১।]
আদী ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাহাবী সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেল, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি যা সে বললে তার রাগ দূর হয়ে যেত। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করল এবং বলল, ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮।]
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে অপছন্দ করে, তখন যেন সে তার বাম পাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে ( أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’’ পড়ে) আশ্রয় প্রার্থনা করে; তাহলে সেটি তার কোন ক্ষতি করবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৯০।]
১/৭. স্ত্রী সহবাসের সময় :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্ত্রীর কাছে আসে তখন সে যেন বলে,
বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা।
আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখো। আর আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করো।
(রাসূল সাঃ বলেন) অতঃপর তাদেরকে যে সন্তান দেয়া হবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪১, ৩২৭১ ‘অযু অধ্যায়, সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৪ ‘ত্বালাক’ অধ্যায়, আহমাদ, হা/১৯০৮।]
১/৮. কারো নিরাপত্তা চাওয়ার সময় :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন তখন বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-কে এই বলে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬০।]
নু‘মান ইবনে বাশীর নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুহাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখলেন। সেখান থেকে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করলেন, যার মাধ্যমে তিনি সূরা বাক্বারা সমাপ্ত করেছেন। যদি কোন ঘরে তিন রাত্রি পর্যন্ত এ দুটি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২৮৮২।]
৩। ইখলাছ অবলম্বন করা :
শয়তান সকলকে ধোঁকা দিয়ে জাহান্নামী করতে পারলেও ইখলাছ অবলম্বনকারীকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তান আল্লাহর কাছে এই ওয়াদা করেছে।
ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেভাবে আমাকে বিপথগামী করেছ অনুরূপভাবে অবশ্যই আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গোনাহের কাজসমূহ) শোভন করে তোলব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে ব্যতীত। [সূরা হিজর- ৩৯, ৪০।]
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। [সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭।]
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর। সমস্ত প্রসংশা তাঁর, তিনি সমস্ত বস্তুর উপর শক্তিশালী।’’
সে ১০টি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে। তার নামে লেখা হবে ১০০টি নেকী এবং তার নাম থেকে ১০০টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের সংশ্রব থেকে সংরক্ষিত থাকবে। আর কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার চেয়ে বেশি আমল করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮; তিরমিযী, হা/৩৪৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৪১০।]
৬। জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকা এবং জামা‘আতে সালাত আদায় করা :
ইসলাম মুসলিম জাতিকে জামা‘আতবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ একাকী থাকলে শয়তান ধোঁকা দেয়।
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে গ্রামে বা প্রান্তরে তিনজন লোকও অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়ে যায়। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলত্যাগী বকরীকে ধরে খায়। [আবু দাউদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৭০; মিশকাত, হা/১০৬৭।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করে, তখন শয়তান দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায় আফসোস! আবু কুরাইবের বর্ণনায় এসেছে, হায় আমার দুর্ভোগ! বনী আদমকে সিজদার আদেশ দেয়া হলে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হলো। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্য হলাম ও জাহান্নামী হলাম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫২; মিশকাত, হা/৮৯৫।]
৮। তাশাহহুদের সময় ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা :
নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাতে (শেষ বৈঠকে) বসতেন, তখন তিনি তার হাত হাটুদ্বয়ের উপর রাখতেন এবং আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন; তিনি তার চোখের দৃষ্টিও সেখানে রাখতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটি অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শয়তানের বিরুদ্ধে লোহার চেয়ে কঠিন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯; মিশকাত, হা/৯১৭।]
৯। সালাতের কাতার সোজা করা ও ফাঁকা না রাখা :
সালাতে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো জরুরি। আর দু’জনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা ঠিক নয়। কারণ ফাঁকা রাখলে সেখানে শয়তান নিজের জায়গা করে নেয়।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কাতারগুলো মিলাও এবং পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাও, আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানদেরকে কাতারের মধ্যে এমনভাবে ঢুকতে দেখি, যেমন ছোট ছাগল ঢুকে। [আবু দাউদ হা/৪৪৭; মিশকাত হা/১০৯৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১০৯২।]
সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধ মিলাও, ফাঁকা বন্ধ করো, নিজের ভাইয়ের প্রতি কোমল হও এবং শয়তানের জন্য পথ ছেড়ে দিও না। [আবু দাউদ হা/৬৬৬; রিয়াযুস সালেহীন হা/১০৯১।]
১০। ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা :
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এ ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই এবং খাদ্যও নেই। আর যখন সে আল্লাহর স্মরণ ছাড়া প্রবেশ করে তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেলে। অতঃপর যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকা ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ পেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৭১; আবু দাউদ, হা/৩৭৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৪১৬১।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন ডান হাত দ্বারা আহার করে, ডান হাত দ্বারা পানাহার করে এবং ডান হাত দ্বারা আদান-প্রদান করে। কেননা শয়তান বাম হাত দ্বারা আহার করে, বাম হাত দ্বারা পানাহার করে এবং বাম হাত দ্বারা দান করে ও বাম হাত দ্বারাই গ্রহণ করে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৬; সিলসিলা সহীহাহা, হা/১২৩৬।]
১২। খাদ্য নষ্ট না করা, এমনকি পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে নেয়া :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের সকল কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যদি কারো লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩২৩; রিয়াযুস সালেহীন, হা/১৬৪)]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে রমাযানের যাকাত সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করলেন। অতঃপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দু’হাতের আঁজলা ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত তোমার নিকট শয়তান আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাচারী এবং শয়তান ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫।]
আবদুর রহমান ইবনে আবু সাঈদ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন তার হাত মুখের উপর রাখে। কেননা (এ সময়) শয়তান ভেতরে ঢুকে পড়ে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৮৩; আবু দাউদ, হা/৫০২৮; মিশকাত হা/৪৭৩৭।]
১৫। আল্লাহর উপর ভরসা করা :
ঈমান আনার সাথে সাথে সৎকাজ করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তাহলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আল্লাহ বলেন,
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রাত্রি যখন ঘনিভূত হবে অথবা বলেছেন, তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দেখে রাখবে। কেননা, শয়তান তখন ঘুরাফেরা করে। অতঃপর রাত্রি ঘণ্টাখানিক পার হলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। আর তোমরা দরজাগুলো আটকে রাখবে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। কেননা শয়তান কোন বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা তোমাদের মশকসমূহের মুখ বেঁধে রাখবে এবং আল্লাহর নাম মনে করবে। আর তোমাদের বাসনগুলো আবৃত রাখবে, যদি তার উপর একটি কাঠিও রেখে হয় এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৬৮।]
শয়তান থেকে বাঁচার জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু উপদেশ :
১. মহান আল্লাহর উপর শিরকমুক্ত পরিপূর্ণ ঈমান রাখতে হবে। কেননা বান্দা শিরক করলে শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়।
২. একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করতে হবে এবং লোক দেখানো আমল পরিত্যাগ করতে হবে।
৩. সার্বিক ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুসরণ করতে হবে।
৪. সবধরণের বিদ‘আত থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা সাধারণ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বিদ‘আতে লিপ্ত হলে শয়তান বেশি খুশি হয়। কারণ সাধারণ পাপকর্ম থেকে তওবা করা হয়, কিন্তু বিদআত থেকে তওবা করা হয় না। যেহেতু বিদআতী ব্যক্তি বিদআতকে সওয়াবের কাজ মনে করে থাকে। তাই এটা পরিত্যাগ করার তার চিন্তাই থাকে না।
৫. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে বিনয় ও নম্রতার সাথে জামা‘আতে আদায় করতে হবে।
৬. ফরজ সালাত ছাড়াও সুন্নত ও নফল সালাতসমূহ অধিকহারে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
৭. নফল সিয়াম আদায় করতে হবে। কেননা সিয়াম শয়তানী প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৮. গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
৯. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। কেননা শয়তান বিতাড়িত করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো আল্লাহর যিকির।
১০. আত্মসমালোচনা করতে হবে এবং তদ্বানুযায়ী আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
১১. আল্লাহর কাছে দু‘আ করে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
১২. অধিকহারে ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে হবে এবং বেশি করে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করতে হবে।
১৩. শয়তানকে খুশি করে এমন আসবাবপত্র থেকে নিজ গৃহকে মুক্ত রাখতে হবে। যেমন বাদ্য-যন্ত্র, ঘণ্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য এবং যাবতীয় গর্হিত বিষয়বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত করা।
১৪. পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৫. পরনারীর সাথে নির্জন না হওয়া। কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের তৃতীয় জন হিসেবে সেখানে বিরাজ করে।
১৬. অপব্যয় ও অপচয় করা যাবে না। কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই।
১৭. প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
১৮. বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন সে বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা জানায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/591/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।