HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পূর্ণ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে
আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা :
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা :
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব’ বইটি বের করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। এজন্য একজন মুমিন কার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে এবং কার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে না- এ বিষয়টি জানা তার একটি মৌলিক দায়িত্ব। প্রত্যেক মানুষেরই কমবেশি অন্য মানুষের সাথে বন্ধুত্ব থাকে। কিন্তু মুমিন ব্যক্তি যে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। কেননা মানুষ বন্ধুর চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। সে যদি কোন অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু বানায়, তাহলে তার দ্বীন ও ঈমান নষ্ট হতে পারে। এমনকি অসৎ বন্ধুত্বের কারণে মানুষ জাহান্নামেও যেতে পারে। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىَّ قَالَ : اَلرَّجُلُ عَلٰى دِيْنِ خَلِيْلِهٖ فَلْيَنْظُرْ اَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীন বা আদর্শ অনুযায়ী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছো, তা দেখে নাও।
(আবু দাউদ, হা/৪৮৩৫; তিরমিযী, হা/২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৯৮)
এজন্য পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে মুমিনকে অবশ্যই বুঝে-শুনে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর দুশমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দুশমন, ইসলামের দুশমন, ইসলামী ব্যক্তিত্বের দুশমন, ইসলামী জামা‘আতের দুশমন এমন ব্যক্তিকে একজন মুমিন কোনভাবেই বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে পারে না।
ইসলামে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার গুরুত্ব, মুমিনের বন্ধু কারা এবং শত্রু কারা, সৎ বন্ধুত্ব এবং অসৎ বন্ধুত্বের পরিণাম কী- এসব বিষয় নিয়ে এ বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এ বইটি পাঠ করে মুসলিম ভাই ও বোনেরা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। ইনশাআল্লাহ
বইটি প্রকাশনা কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং দু‘আ করছি আল্লাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ শ্রম ও খেদমতকে কবুল করে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
‘আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব’ বইটি বের করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। এজন্য একজন মুমিন কার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে এবং কার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে না- এ বিষয়টি জানা তার একটি মৌলিক দায়িত্ব। প্রত্যেক মানুষেরই কমবেশি অন্য মানুষের সাথে বন্ধুত্ব থাকে। কিন্তু মুমিন ব্যক্তি যে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। কেননা মানুষ বন্ধুর চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। সে যদি কোন অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু বানায়, তাহলে তার দ্বীন ও ঈমান নষ্ট হতে পারে। এমনকি অসৎ বন্ধুত্বের কারণে মানুষ জাহান্নামেও যেতে পারে। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىَّ قَالَ : اَلرَّجُلُ عَلٰى دِيْنِ خَلِيْلِهٖ فَلْيَنْظُرْ اَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীন বা আদর্শ অনুযায়ী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছো, তা দেখে নাও।
(আবু দাউদ, হা/৪৮৩৫; তিরমিযী, হা/২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৯৮)
এজন্য পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে মুমিনকে অবশ্যই বুঝে-শুনে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর দুশমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দুশমন, ইসলামের দুশমন, ইসলামী ব্যক্তিত্বের দুশমন, ইসলামী জামা‘আতের দুশমন এমন ব্যক্তিকে একজন মুমিন কোনভাবেই বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে পারে না।
ইসলামে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার গুরুত্ব, মুমিনের বন্ধু কারা এবং শত্রু কারা, সৎ বন্ধুত্ব এবং অসৎ বন্ধুত্বের পরিণাম কী- এসব বিষয় নিয়ে এ বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এ বইটি পাঠ করে মুসলিম ভাই ও বোনেরা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। ইনশাআল্লাহ
বইটি প্রকাশনা কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং দু‘আ করছি আল্লাহ যেন সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করেন এবং আমাদের এ শ্রম ও খেদমতকে কবুল করে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা হচ্ছে - اَلْوَلَاءُ وَالْبَرَاءُ (আল-ওয়ালাউ ওয়াল-বারাউ)। اَلْوَلَاءُ (আল-ওয়ালাউ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- বন্ধুত্ব পোষণ করা, অভিভাবক বানানো, সম্পর্ক জোড়া ইত্যাদি। আর اَلْبَرَاءُ (আল-বারাউ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- সম্পর্কচ্ছেদ করা, ত্যাগ করা, শত্রুতা পোষণ করা ইত্যাদি।
আল-ওয়ালাউ এর উৎস হচ্ছে ভালোবাসা, আর আল-বারাউ এর উৎস হচ্ছে ঘৃণা। আল-ওয়ালাউ সাহায্যের দিকে উৎসাহিত করে আর আল-বারাউ শত্রুতার দিকে উৎসাহিত করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করাই হচ্ছে - اَلْوَلَاءُ وَالْبَرَاءُ (আল-ওয়ালাউ ওয়াল-বারাআউ) এর মূল কথা।
ইসলামে এ দুটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। একজন মুমিন ব্যক্তি কাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে এবং কাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে- এ জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত অপরিহার্য। আল্লাহর কোন শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা আবার কোন মুমিনের সাথে শত্রুতা পোষণ করা ঈমানের দাবির বিপরীত।
ঈমানের দাবি হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করবে। কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে কেবল আল্লাহর জন্যই করবে এবং কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করতে হলে তাও আল্লাহর জন্যই করবে। আল্লাহ যা ভালোবাসেন মুমিন তা ভালোবাসবে, আর আল্লাহ যা ঘৃণা করেন মুমিন তা ঘৃণা করবে।
ঈমানের স্বাদ হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পোষণ করা :
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْاِيْمَانِ اَنْ يَكُوْنَ اللهُ وَرَسُوْلُه اَحَبَّ اِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَاَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّه اِلَّا لِلّٰهِ، وَاَنْ يَكْرَهَ اَنْ يَعُوْدَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ اَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে :
(১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়,
(২) কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এবং
(৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৬।]
ঈমানের পূর্ণতা হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা :
عَنْ مُعَاذٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ قَالَ مَنْ اَعْطٰى لِلّٰهِ تَعَالٰى وَمَنَعَ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَحَبَّ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَبْغَضَ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَنْكَحَ لِلّٰهِ تَعَالٰى فَقَدِ اسْتَكْمَلَ اِيْمَانَهٗ
মু‘আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই দান করা থেকে বিরত থাকল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসল, আবার আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই বিবাহ করল সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল। [তিরমিযী, হা/২৫২১; আবু দাউদ, হা/৪৬৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬১৭।]
এ হাদীসে মুমিনের ৫টি আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি হলো :
১. اَلْحُبُّ لِلّٰهِ (কাউকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা) অর্থাৎ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে অথবা কাউকে আল্লাহওয়ালা মনে করে অথবা আল্লাহ ভালোবাসতে নির্দেশ করেছেন বিধায় তাকে ভালোবাসা।
২. اَلْبُغْضُ لِلّٰهِ (কাউকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করা) অর্থাৎ কোন ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে নয়; বরং শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই তাকে ঘৃণা করে।
ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَوْثَقُ عُرَى الْاِيْمَانِ الْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হা/৩৫৮৭৯।]
যে যাকে ভালোবাসবে পরকালেও সে তার সাথি হবে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ قَالَ : اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ
আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৮৮।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَاَيْتُ اَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ - - فَرِحُوْا بِشَىْءٍ لَمْ اَرَهُمْ فَرِحُوْا بِشَىْءٍ اَشَدَّ مِنْهُ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَلرَّجُلُ يُحِبُّ الرَّجُلَ عَلَى الْعَمَلِ مِنَ الْخَيْرِ يَعْمَلُ بِهٖ وَلَا يَعْمَلُ بِمِثْلِهٖ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -: اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাহাবীদেরকে দেখেছি যে, তারা একটি বিষয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছে, যেভাবে খুশি হতে আমি তাদেরকে আর কখনো দেখিনি। (বিষয়টি হচ্ছে) একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে ভালোবাসে; কিন্তু তার মতো আমল করতে পারে না। তখন নবী ﷺ বললেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে। [আবু দাউদ, হা/৫১২৯।]
যারা নবী ﷺ কে ভালোবাসবে তারা নবীর সাথি হবে :
﴿وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! [সূরা নিসা- ৬৯।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ ، اَنَّهٗ قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَتٰى قِيَامُ السَّاعَةِ ؟ فَقَامَ النَّبِيُّ اِلَى الصَّلَاةِ ، فَلَمَّا قَضٰى صَلَاتَهٗ قَالَ : اَيْنَ السَّائِلُ عَنْ قِيَامِ السَّاعَةِ ؟ فَقَالَ الرَّجُلُ : اَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : مَا اَعْدَدْتَّ لَهَا ؟ قَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا اَعْدَدْتُّ لَهَا كَبِيْرَ صَلَاةٍ وَلَا صَوْمٍ اِلَّا اَنِّيْ أُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ وَاَنْتَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ فَمَا رَاَيْتُ فَرِحَ الْمُسْلِمُوْنَ بَعْدَ الْاِسْلَامِ فَرَحَهُمْ بِهٰذَا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? তখন নবী ﷺ সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। তখন তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তেমন কিছু প্রস্তুত করে রাখিনি। বেশি নামাযও নয় এবং বেশি রোযাও নয়। তবে আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসবে। আর তুমিও তার সাথে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর এ কথা শুনার পর মানুষ যত খুশি হয়েছে ইসলাম গ্রহণের পর এত খুশি অন্য কিছুতে হয়নি। [তিরমিযী, হা/২৩৮৫।]
আল-ওয়ালাউ এর উৎস হচ্ছে ভালোবাসা, আর আল-বারাউ এর উৎস হচ্ছে ঘৃণা। আল-ওয়ালাউ সাহায্যের দিকে উৎসাহিত করে আর আল-বারাউ শত্রুতার দিকে উৎসাহিত করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করাই হচ্ছে - اَلْوَلَاءُ وَالْبَرَاءُ (আল-ওয়ালাউ ওয়াল-বারাআউ) এর মূল কথা।
ইসলামে এ দুটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। একজন মুমিন ব্যক্তি কাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে এবং কাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে- এ জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত অপরিহার্য। আল্লাহর কোন শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা আবার কোন মুমিনের সাথে শত্রুতা পোষণ করা ঈমানের দাবির বিপরীত।
ঈমানের দাবি হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করবে। কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে কেবল আল্লাহর জন্যই করবে এবং কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করতে হলে তাও আল্লাহর জন্যই করবে। আল্লাহ যা ভালোবাসেন মুমিন তা ভালোবাসবে, আর আল্লাহ যা ঘৃণা করেন মুমিন তা ঘৃণা করবে।
ঈমানের স্বাদ হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পোষণ করা :
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْاِيْمَانِ اَنْ يَكُوْنَ اللهُ وَرَسُوْلُه اَحَبَّ اِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَاَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّه اِلَّا لِلّٰهِ، وَاَنْ يَكْرَهَ اَنْ يَعُوْدَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ اَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে :
(১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়,
(২) কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এবং
(৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৬।]
ঈমানের পূর্ণতা হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা :
عَنْ مُعَاذٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ قَالَ مَنْ اَعْطٰى لِلّٰهِ تَعَالٰى وَمَنَعَ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَحَبَّ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَبْغَضَ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَاَنْكَحَ لِلّٰهِ تَعَالٰى فَقَدِ اسْتَكْمَلَ اِيْمَانَهٗ
মু‘আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই দান করা থেকে বিরত থাকল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসল, আবার আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করল এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই বিবাহ করল সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল। [তিরমিযী, হা/২৫২১; আবু দাউদ, হা/৪৬৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬১৭।]
এ হাদীসে মুমিনের ৫টি আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি হলো :
১. اَلْحُبُّ لِلّٰهِ (কাউকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা) অর্থাৎ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে অথবা কাউকে আল্লাহওয়ালা মনে করে অথবা আল্লাহ ভালোবাসতে নির্দেশ করেছেন বিধায় তাকে ভালোবাসা।
২. اَلْبُغْضُ لِلّٰهِ (কাউকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করা) অর্থাৎ কোন ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে নয়; বরং শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই তাকে ঘৃণা করে।
ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَوْثَقُ عُرَى الْاِيْمَانِ الْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হা/৩৫৮৭৯।]
যে যাকে ভালোবাসবে পরকালেও সে তার সাথি হবে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ قَالَ : اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ
আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৮৮।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَاَيْتُ اَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ - - فَرِحُوْا بِشَىْءٍ لَمْ اَرَهُمْ فَرِحُوْا بِشَىْءٍ اَشَدَّ مِنْهُ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَلرَّجُلُ يُحِبُّ الرَّجُلَ عَلَى الْعَمَلِ مِنَ الْخَيْرِ يَعْمَلُ بِهٖ وَلَا يَعْمَلُ بِمِثْلِهٖ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -: اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাহাবীদেরকে দেখেছি যে, তারা একটি বিষয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছে, যেভাবে খুশি হতে আমি তাদেরকে আর কখনো দেখিনি। (বিষয়টি হচ্ছে) একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে ভালোবাসে; কিন্তু তার মতো আমল করতে পারে না। তখন নবী ﷺ বললেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে। [আবু দাউদ, হা/৫১২৯।]
যারা নবী ﷺ কে ভালোবাসবে তারা নবীর সাথি হবে :
﴿وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! [সূরা নিসা- ৬৯।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ ، اَنَّهٗ قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَتٰى قِيَامُ السَّاعَةِ ؟ فَقَامَ النَّبِيُّ اِلَى الصَّلَاةِ ، فَلَمَّا قَضٰى صَلَاتَهٗ قَالَ : اَيْنَ السَّائِلُ عَنْ قِيَامِ السَّاعَةِ ؟ فَقَالَ الرَّجُلُ : اَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : مَا اَعْدَدْتَّ لَهَا ؟ قَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا اَعْدَدْتُّ لَهَا كَبِيْرَ صَلَاةٍ وَلَا صَوْمٍ اِلَّا اَنِّيْ أُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ اَحَبَّ وَاَنْتَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ فَمَا رَاَيْتُ فَرِحَ الْمُسْلِمُوْنَ بَعْدَ الْاِسْلَامِ فَرَحَهُمْ بِهٰذَا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? তখন নবী ﷺ সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। তখন তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তেমন কিছু প্রস্তুত করে রাখিনি। বেশি নামাযও নয় এবং বেশি রোযাও নয়। তবে আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসবে। আর তুমিও তার সাথে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর এ কথা শুনার পর মানুষ যত খুশি হয়েছে ইসলাম গ্রহণের পর এত খুশি অন্য কিছুতে হয়নি। [তিরমিযী, হা/২৩৮৫।]
মুমিন ব্যক্তি কার সাথে বন্ধুত্ব করবে তা আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ﴾
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঐসব মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। [সূরা মায়েদা- ৫৫।]
এখানে মুমিনের তিন প্রকারের বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়া হয়েছে।
১. আল্লাহ তা‘আলা।
২. তাঁর রাসূল।
৩. ঈমানদারগণ।
﴿اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ﴾
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঐসব মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। [সূরা মায়েদা- ৫৫।]
এখানে মুমিনের তিন প্রকারের বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়া হয়েছে।
১. আল্লাহ তা‘আলা।
২. তাঁর রাসূল।
৩. ঈমানদারগণ।
আলোচ্য আয়াতে যে তিন ধরণের বন্ধুর পরিচয় দেয়া হয়েছে, তন্মধ্যে প্রথম বন্ধু হলেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। মানবজাতির বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য পূর্ণমাত্রায় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং আল্লাহই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। আল্লাহ মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিঃস্বার্থ অভিভাবক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَمِ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَ فَاللهُ هُوَ الْوَلِيُّ وَهُوَ يُحْيِى الْمَوْتٰى وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ﴾
তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে? কেবল আল্লাহই তো একমাত্র অভিভাবক (বন্ধু)। তিনিই মৃতদের জীবন দানে সক্ষম এবং তিনিই সবকিছুর উপর অসীম ক্ষমতাবান। [সূরা শুরা- ৯।]
﴿وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ﴾
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। [সূরা শূরা- ২৮।]
মৃতকে জীবনদানের ক্ষমতা, বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং পৃথিবীকে শস্য-শ্যামল করার শক্তি ইত্যাদি গুণ একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তির মাঝেই নেই। সুতরাং আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির বন্ধু ও অভিভাবক একমাত্র আল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলাই মুমিনের প্রকৃত বন্ধু :
﴿وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ﴾
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। [সূরা শূরা- ৩১।]
﴿اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ﴾
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। [সূরা বাক্বারা- ১০৭।]
কেউ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তবে সে খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ اللهُ حَفِيْظٌ عَلَيْهِمْ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ﴾
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন (অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে এর পরিণাম ভোগ করাবেন)। আর তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও। [সূরা শূরা- ৬।]
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ اَعْدَآءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ﴾
ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও কোন সাড়া দেবে না। বরং তাদেরকে যে ডাকা হয়েছে, সে কথা তারা জানেই না। যখন সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে। [সূরা আহকাফ- ৫, ৬।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ ‐ بَلِ اللهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। আসলে আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং তিনিই তোমাদের উত্তম সাহায্যকারী। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯, ১৫০।]
﴿اَمِ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَ فَاللهُ هُوَ الْوَلِيُّ وَهُوَ يُحْيِى الْمَوْتٰى وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ﴾
তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে? কেবল আল্লাহই তো একমাত্র অভিভাবক (বন্ধু)। তিনিই মৃতদের জীবন দানে সক্ষম এবং তিনিই সবকিছুর উপর অসীম ক্ষমতাবান। [সূরা শুরা- ৯।]
﴿وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ﴾
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। [সূরা শূরা- ২৮।]
মৃতকে জীবনদানের ক্ষমতা, বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং পৃথিবীকে শস্য-শ্যামল করার শক্তি ইত্যাদি গুণ একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তির মাঝেই নেই। সুতরাং আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির বন্ধু ও অভিভাবক একমাত্র আল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলাই মুমিনের প্রকৃত বন্ধু :
﴿وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ﴾
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। [সূরা শূরা- ৩১।]
﴿اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ﴾
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। [সূরা বাক্বারা- ১০৭।]
কেউ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তবে সে খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ اللهُ حَفِيْظٌ عَلَيْهِمْ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ﴾
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন (অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে এর পরিণাম ভোগ করাবেন)। আর তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও। [সূরা শূরা- ৬।]
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ اَعْدَآءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ﴾
ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও কোন সাড়া দেবে না। বরং তাদেরকে যে ডাকা হয়েছে, সে কথা তারা জানেই না। যখন সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে। [সূরা আহকাফ- ৫, ৬।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ ‐ بَلِ اللهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। আসলে আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং তিনিই তোমাদের উত্তম সাহায্যকারী। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯, ১৫০।]
আল্লাহ তা‘আলার পর নবী-রাসূলগণ হলেন মুমিনদের আসল বন্ধু। এসব মহাপুরুষ মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যবস্থা করে গেছেন। সাথে সাথে তাদের প্রতারক বন্ধুদের স্বরূপ উদঘাটন করে দিয়ে মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থাও করেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ اللهِ مُبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ ﴾
(আল্লাহ প্রেরণ করেছেন) এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন। যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। [সূরা তালাক্ব- ১১।]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ﴾
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর প্রতি কেবল রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। [সূরা আম্বিয়া- ১০৭।]
অর্থাৎ তিনি কেবল মানবজাতির বন্ধুই নন বরং সমগ্র মাখলুকাতের জন্য আল্লাহর রহমত।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে ঈমানের লক্ষণ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَالِدِه وَوَلَدِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা ও তার সন্তানাদি হতে অধিক প্রিয় না হই। [সহীহ বুখারী, হা/১৪।]
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَالِدِه وَوَلَدِه وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তানসন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হই। [সহীহ বুখারী, হা/১৫।]
মুসলিম জাতির জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ হলেন আদর্শ :
মুমিন যে কাউকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ কে আমাদের আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا﴾
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ (-র সন্তুষ্টি) ও শেষ দিবসের (মুক্তি) কামনা করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে- তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে। [সূরা আহযাব- ২১।]
প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া। মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম চরিত্রের দৃষ্টান্ত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। কারণ তিনিই ছিলেন একমাত্র উন্নত চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
হে নবী! আপনিই উন্নত চরিত্রের অধিকারী। [সূরা ক্বালাম- ৪।]
যে ব্যক্তি যতবেশি নবী ﷺ এর সুন্নাত তথা আদর্শের অনুসরণ করবে সে ততবেশি আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভ করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে উম্মতের আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর ভালোবাসাকে নবী ﷺ এর আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন।
মুমিনের কাছে পৃথিবীর কোন কিছুই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের চেয়ে বেশি প্রিয় হতে পারে না :
﴿قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَأْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ﴾
বলো, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের বংশধর, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালোবাস- এসব অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। [সূরা তাওবা- ২৪।]
সাহাবীগণ নবী ﷺ কে অত্যধিক ভালোবাসতেন :
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ( اَخَذَ بِيَدِهٖ وَقَالَ : يَا مُعَاذُ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ فَقُلْتُ لَهٗ : بِأَبِيْ وَ أُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَ أَنَا وَ اللهِ أُحِبُّكَ . فَقَالَ : اُوْصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
মু‘আজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ আমার হাত ধরলেন এবং বললেন, হে মু‘আজ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তখন মু‘আজ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক; আল্লাহর শপথ! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি ছেড়ে দিও না।
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরাতিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আপনার স্মরণ, আপনার শুকরিয়া এবং উত্তমভাবে আপনার ইবাদাত করার জন্য সাহায্য করুন। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/ ১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
নবী ﷺ কে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করা :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ -- : يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِىَ لَيْسَ فِىْ قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ . ثُمَّ قَالَ لِىْ : يَا بُنَىَّ وَذٰلِكَ مِنْ سُنَّتِىْ وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِىْ فَقَدْ أَحَبَّنِىْ . وَمَنْ أَحَبَّنِىْ كَانَ مَعِىَ فِى الْجَنَّةِ
সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যদি এমন অবস্থায় সকাল এবং সন্ধ্যায় উপনীত হতে পার যে, কারো প্রতি তোমার অন্তরে বিদ্বেষ নেই তবে তুমি তা-ই করো। হে বৎস! এটা হলো আমার সুন্নত তথা আদর্শ। আর যে আমার আদর্শকে ভালোবাসল সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মিশকাত, হা/১৭৫।]
﴿رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ اللهِ مُبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ ﴾
(আল্লাহ প্রেরণ করেছেন) এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন। যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। [সূরা তালাক্ব- ১১।]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ﴾
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর প্রতি কেবল রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। [সূরা আম্বিয়া- ১০৭।]
অর্থাৎ তিনি কেবল মানবজাতির বন্ধুই নন বরং সমগ্র মাখলুকাতের জন্য আল্লাহর রহমত।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে ঈমানের লক্ষণ :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَالِدِه وَوَلَدِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা ও তার সন্তানাদি হতে অধিক প্রিয় না হই। [সহীহ বুখারী, হা/১৪।]
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَالِدِه وَوَلَدِه وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তানসন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হই। [সহীহ বুখারী, হা/১৫।]
মুসলিম জাতির জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ হলেন আদর্শ :
মুমিন যে কাউকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ কে আমাদের আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا﴾
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ (-র সন্তুষ্টি) ও শেষ দিবসের (মুক্তি) কামনা করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে- তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে। [সূরা আহযাব- ২১।]
প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া। মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম চরিত্রের দৃষ্টান্ত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। কারণ তিনিই ছিলেন একমাত্র উন্নত চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
হে নবী! আপনিই উন্নত চরিত্রের অধিকারী। [সূরা ক্বালাম- ৪।]
যে ব্যক্তি যতবেশি নবী ﷺ এর সুন্নাত তথা আদর্শের অনুসরণ করবে সে ততবেশি আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভ করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে উম্মতের আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর ভালোবাসাকে নবী ﷺ এর আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন।
মুমিনের কাছে পৃথিবীর কোন কিছুই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের চেয়ে বেশি প্রিয় হতে পারে না :
﴿قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَأْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ﴾
বলো, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের বংশধর, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালোবাস- এসব অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। [সূরা তাওবা- ২৪।]
সাহাবীগণ নবী ﷺ কে অত্যধিক ভালোবাসতেন :
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ( اَخَذَ بِيَدِهٖ وَقَالَ : يَا مُعَاذُ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ فَقُلْتُ لَهٗ : بِأَبِيْ وَ أُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَ أَنَا وَ اللهِ أُحِبُّكَ . فَقَالَ : اُوْصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
মু‘আজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ আমার হাত ধরলেন এবং বললেন, হে মু‘আজ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তখন মু‘আজ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক; আল্লাহর শপথ! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি ছেড়ে দিও না।
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরাতিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আপনার স্মরণ, আপনার শুকরিয়া এবং উত্তমভাবে আপনার ইবাদাত করার জন্য সাহায্য করুন। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/ ১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
নবী ﷺ কে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করা :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ -- : يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِىَ لَيْسَ فِىْ قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ . ثُمَّ قَالَ لِىْ : يَا بُنَىَّ وَذٰلِكَ مِنْ سُنَّتِىْ وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِىْ فَقَدْ أَحَبَّنِىْ . وَمَنْ أَحَبَّنِىْ كَانَ مَعِىَ فِى الْجَنَّةِ
সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যদি এমন অবস্থায় সকাল এবং সন্ধ্যায় উপনীত হতে পার যে, কারো প্রতি তোমার অন্তরে বিদ্বেষ নেই তবে তুমি তা-ই করো। হে বৎস! এটা হলো আমার সুন্নত তথা আদর্শ। আর যে আমার আদর্শকে ভালোবাসল সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মিশকাত, হা/১৭৫।]
আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের প্রতি নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সত্যপন্থীদের সাথে বন্ধুত্ব করে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। [সূরা তাওবা- ১১৯।]
মুমিনরা একে অপরের বন্ধু :
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। [সূরা তাওবা- ৭১।]
দুনিয়ার জীবনপথে মুমিনদের সাথি হবে মুমিনরাই। সাহচর্যের প্রভাব সুদূর প্রসারী হয়ে থাকে বিধায় কুরআন মুমিনদের সমাজবদ্ধ জীবন যাপনেরই নির্দেশিকা দিয়েছে। আল্লাহদ্রোহীদের সাহচর্য মুমিনদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সমাজ জীবনে মুমিনদের সম্পর্ক ঈমানদারদের সঙ্গে কেমন হবে এবং আল্লাহদ্রোহী কাফিরদের সঙ্গে কেমন হবে, সে সম্পর্কে কুরআন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে,
﴿مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মাদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। [সূরা ফাতহ- ২৯।]
আলোচ্য আয়াতাংশে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাথিদের সময়কার সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতে গড়া ঈমানদারদের সত্যপন্থী দল সমাজের একটি অংশ। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর আদর্শবিরোধী কাফিরদের নিয়ে সমাজের বাতিলপন্থীদের আরেকটি দল। এই উভয় দলের লোকদের নিয়ে তখনকার সমাজ। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যেন বিশ্বের সকল মানুষ সেই দ্বীন বা জীবনবিধান অনুসরণ করে চলে এবং এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি এবং আখিরাতের জীবনে মুক্তি পেতে পারে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ ছিলেন এ পথের অনুসারী। কিন্তু সমাজের দ্বিতীয় অংশটি প্রকৃত সত্যকে না মানার কারণে রাসূল ও মুমিনদের ঘোর বিরোধী হয়ে প্রকৃত সত্যের উল্টো পথে যেমন নিজেরা চলত, তেমনি সমাজকেও সে পথে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করত। তাই স্বাভাবিকভাবেই হক ও বাতিলপন্থীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম বিরোধ, যা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
বাতিলপন্থীদের জন্য মুমিনগণ ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। অর্থাৎ কাফিরদের জন্য মুমিনগণ ছিলেন আপোসহীন। অথচ মুমিনগণ নিজেদের মধ্যে ছিলেন একে অন্যের হিতাকাঙ্ক্ষী, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। মুমিনগণের এ ধরণের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার ফলে তারা যেমন দুনিয়ার জীবনে সামাজিক শান্তি-শৃংখলার সাথে জীবন যাপন করতে পারতেন, তেমনি পরকালীন জীবনে মুক্তির পথ অনুসন্ধানও তাদের জন্য সহজ হয়ে যেত।
দুনিয়ার জীবনে মুমিনগণ যেন একই দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। দেহের একটি অঙ্গে অসুবিধা দেখা দিলে সম্পূর্ণ দেহটাই অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বস্তুত প্রকৃত ঈমানদারদের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ত সম্পর্ক থেকেও অধিকতর ঘনিষ্ঠ। এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এ বন্ধুত্ব এবং বন্ধুত্বের প্রভাব কেবল দুনিয়ার জীবনেই ফলপ্রসূ নয়, বরং পরকালের অসীম ও অনন্ত জীবনেও তা সুদূরপ্রসারী। কারণ মুমিনগণ পরস্পরকে দুনিয়ার জীবনে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে চলার এবং আখিরাতের জীবনে মুক্তির জন্য সহযোগিতা করে থাকে।
মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই :
﴿اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক বহাল রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। [সূরা হুজুরাত- ১০।]
মুমিনদের বন্ধুত্ব আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ :
﴿وَاذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا﴾
তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে; এমতাবস্থায় তিনি তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। [সূরা আলে ইমরান- ১০৩।]
আল্লাহর পথে লড়াইকারী মুমিন বন্ধুদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন :
﴿اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ﴾
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো হয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। [সূরা সাফ- ৪।]
আল্লাহর জন্য যারা বন্ধুত্ব করবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাবে :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সাত প্রকারের লোক যাদেরকে আল্লাহ তাঁর ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে দুজন হলেন তারা, যারা আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসত ও আল্লাহর জন্য মিলিত হতো এবং আল্লাহর জন্যই বিচ্ছিন্ন হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫০৫; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; ইবনে খুযাইমা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৫।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। [সূরা তাওবা- ১১৯।]
মুমিনরা একে অপরের বন্ধু :
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। [সূরা তাওবা- ৭১।]
দুনিয়ার জীবনপথে মুমিনদের সাথি হবে মুমিনরাই। সাহচর্যের প্রভাব সুদূর প্রসারী হয়ে থাকে বিধায় কুরআন মুমিনদের সমাজবদ্ধ জীবন যাপনেরই নির্দেশিকা দিয়েছে। আল্লাহদ্রোহীদের সাহচর্য মুমিনদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সমাজ জীবনে মুমিনদের সম্পর্ক ঈমানদারদের সঙ্গে কেমন হবে এবং আল্লাহদ্রোহী কাফিরদের সঙ্গে কেমন হবে, সে সম্পর্কে কুরআন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে,
﴿مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মাদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। [সূরা ফাতহ- ২৯।]
আলোচ্য আয়াতাংশে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাথিদের সময়কার সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতে গড়া ঈমানদারদের সত্যপন্থী দল সমাজের একটি অংশ। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর আদর্শবিরোধী কাফিরদের নিয়ে সমাজের বাতিলপন্থীদের আরেকটি দল। এই উভয় দলের লোকদের নিয়ে তখনকার সমাজ। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যেন বিশ্বের সকল মানুষ সেই দ্বীন বা জীবনবিধান অনুসরণ করে চলে এবং এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি এবং আখিরাতের জীবনে মুক্তি পেতে পারে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ ছিলেন এ পথের অনুসারী। কিন্তু সমাজের দ্বিতীয় অংশটি প্রকৃত সত্যকে না মানার কারণে রাসূল ও মুমিনদের ঘোর বিরোধী হয়ে প্রকৃত সত্যের উল্টো পথে যেমন নিজেরা চলত, তেমনি সমাজকেও সে পথে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করত। তাই স্বাভাবিকভাবেই হক ও বাতিলপন্থীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম বিরোধ, যা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
বাতিলপন্থীদের জন্য মুমিনগণ ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। অর্থাৎ কাফিরদের জন্য মুমিনগণ ছিলেন আপোসহীন। অথচ মুমিনগণ নিজেদের মধ্যে ছিলেন একে অন্যের হিতাকাঙ্ক্ষী, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। মুমিনগণের এ ধরণের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার ফলে তারা যেমন দুনিয়ার জীবনে সামাজিক শান্তি-শৃংখলার সাথে জীবন যাপন করতে পারতেন, তেমনি পরকালীন জীবনে মুক্তির পথ অনুসন্ধানও তাদের জন্য সহজ হয়ে যেত।
দুনিয়ার জীবনে মুমিনগণ যেন একই দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। দেহের একটি অঙ্গে অসুবিধা দেখা দিলে সম্পূর্ণ দেহটাই অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বস্তুত প্রকৃত ঈমানদারদের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ত সম্পর্ক থেকেও অধিকতর ঘনিষ্ঠ। এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এ বন্ধুত্ব এবং বন্ধুত্বের প্রভাব কেবল দুনিয়ার জীবনেই ফলপ্রসূ নয়, বরং পরকালের অসীম ও অনন্ত জীবনেও তা সুদূরপ্রসারী। কারণ মুমিনগণ পরস্পরকে দুনিয়ার জীবনে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে চলার এবং আখিরাতের জীবনে মুক্তির জন্য সহযোগিতা করে থাকে।
মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই :
﴿اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক বহাল রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। [সূরা হুজুরাত- ১০।]
মুমিনদের বন্ধুত্ব আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ :
﴿وَاذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا﴾
তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে; এমতাবস্থায় তিনি তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। [সূরা আলে ইমরান- ১০৩।]
আল্লাহর পথে লড়াইকারী মুমিন বন্ধুদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন :
﴿اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ﴾
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো হয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। [সূরা সাফ- ৪।]
আল্লাহর জন্য যারা বন্ধুত্ব করবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাবে :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সাত প্রকারের লোক যাদেরকে আল্লাহ তাঁর ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে দুজন হলেন তারা, যারা আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসত ও আল্লাহর জন্য মিলিত হতো এবং আল্লাহর জন্যই বিচ্ছিন্ন হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫০৫; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; ইবনে খুযাইমা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৫।]
যারা ঈমান আনবে এবং কুফর, শিরক ও বিদআতমুক্তভাবে দ্বীনের উপর অটল থাকবে সেসব মুমিনই হবে একে অপরের বন্ধু। কিন্তু যারা কুফর, শিরক ও বিদআতের মধ্যে লিপ্ত থাকবে অথবা কাফির ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক রাখবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না, যদিও তারা আত্মীয় হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের অনেক আয়াতে মুমিনদেরকে সতর্ক করেছেন।
আত্মীয়রা দ্বীনদার না হলে আন্তরিক সম্পর্ক চলবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারাই যালিম। [সূরা তাওবা- ২৩।]
আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে মাতাপিতার কথাও শুনা যাবে না :
﴿وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا﴾
তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের অনুসরণ করো না। [সূরা আনকাবূত- ৮।]
এটা পিতামাতার অধিকার যে, ছেলেমেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধুমাত্র পিতামাতার ধর্ম বলেই ছেলেমেয়েদেরকে সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার পিতামাতার ধর্ম ভুল ও মিথ্যা, তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে সঠিক ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। এমনকি তাদের উপর চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ থেকে সরে আসতে হবে। পিতামাতার সাথে যখন এ ধরণের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করতে হবে। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। সন্তান যদি সঠিক পথ অবলম্বন করে থাকে এবং পিতামাতার বৈধ অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ত্রুটি না করে থাকে; আর পিতামাতা যদি কেবল পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী না হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করে থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
আপনজনের বিপক্ষে হলেও ন্যায়বিচার করতে হবে :
﴿وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى﴾
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ইনসাফের সাথে কথা বলবে, যদিও তা আত্মীয়স্বজনদের বিপক্ষে হয়। [সূরা আন‘আম- ১৫২।]
মাতাপিতার বিপক্ষে হলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো। যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। [সূরা নিসা- ১৩৫।]
পিতৃপুরুষ ভুল পথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা জায়েয নয় :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ﴾
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে)? [সূরা বাক্বারা- ১৭০।]
অমুসলিম আত্মীয়ের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা যাবে না :
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়; যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, নিশ্চয় তারা জাহান্নামী। [সূরা তাওবা- ১১৩।]
আত্মীয়তার সম্পর্ক কিয়ামতের দিন কোন কাজে লাগবে না :
﴿لَنْ تَنْفَعَكُمْ اَرْحَامُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ﴾
কিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তানসন্ততি কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন; তোমরা যা কর তিনি সে সম্পর্কে মহাদ্রষ্টা। [সূরা মুমতাহিনা- ৩।]
মুমিনরা যেন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততির মায়ায় পড়ে আল্লাহর বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরে না যায়, সেজন্য কুরআনের ঘোষণা হলো,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমনটি করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা মুনাফিকূন- ৯।]
ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি সবকিছুই আসলে মানুষের দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য মাত্র। এসবের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে মানবজাতি কি তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেদের সম্পর্ক ঠিক রাখে, না আল্লাহর বন্ধুত্বের পরিবর্তে সম্পত্তির মোহে বা সন্তানাদির মায়ায় ডুবে যায়, সে পরীক্ষা করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। সুতরাং আল্লাহর বন্ধুত্বের বিনিময়ে রক্তের সম্পর্ক একেবারেই মূল্যহীন। নূহ (আঃ) একজন উচ্চমর্যাদার নবী হওয়া সত্ত্বেও নিজের অবাধ্য ছেলেকে মহাপ্লাবনের হাত থেকে উদ্ধার করার সুপারিশ করলে তার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেছিলেন, اِنَّه لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ অর্থাৎ সে তো তোমার আহল নয়। [সূরা হুদ- ৪৬।]
অর্থাৎ নূহ (আঃ) এর ছেলেটি তাঁর ঔরসজাত সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ঈমান না আনার কারণে তার সম্পর্কে নবীর সুপারিশ অগ্রাহ্য হয়েছে। রক্ত সম্পর্ক থাকলেও পিতার মমতা বা বন্ধুত্ব পাওয়ার গুণ তার মাঝে ছিল না। এ কারণেই মহান আল্লাহ ছেলেকে নবীর আহল নয় বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আত্মীয়রা দ্বীনদার না হলে আন্তরিক সম্পর্ক চলবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারাই যালিম। [সূরা তাওবা- ২৩।]
আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে মাতাপিতার কথাও শুনা যাবে না :
﴿وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا﴾
তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের অনুসরণ করো না। [সূরা আনকাবূত- ৮।]
এটা পিতামাতার অধিকার যে, ছেলেমেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধুমাত্র পিতামাতার ধর্ম বলেই ছেলেমেয়েদেরকে সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার পিতামাতার ধর্ম ভুল ও মিথ্যা, তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে সঠিক ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। এমনকি তাদের উপর চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ থেকে সরে আসতে হবে। পিতামাতার সাথে যখন এ ধরণের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করতে হবে। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। সন্তান যদি সঠিক পথ অবলম্বন করে থাকে এবং পিতামাতার বৈধ অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ত্রুটি না করে থাকে; আর পিতামাতা যদি কেবল পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী না হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করে থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
আপনজনের বিপক্ষে হলেও ন্যায়বিচার করতে হবে :
﴿وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى﴾
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ইনসাফের সাথে কথা বলবে, যদিও তা আত্মীয়স্বজনদের বিপক্ষে হয়। [সূরা আন‘আম- ১৫২।]
মাতাপিতার বিপক্ষে হলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো। যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। [সূরা নিসা- ১৩৫।]
পিতৃপুরুষ ভুল পথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা জায়েয নয় :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ﴾
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে)? [সূরা বাক্বারা- ১৭০।]
অমুসলিম আত্মীয়ের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা যাবে না :
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়; যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, নিশ্চয় তারা জাহান্নামী। [সূরা তাওবা- ১১৩।]
আত্মীয়তার সম্পর্ক কিয়ামতের দিন কোন কাজে লাগবে না :
﴿لَنْ تَنْفَعَكُمْ اَرْحَامُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ﴾
কিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তানসন্ততি কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন; তোমরা যা কর তিনি সে সম্পর্কে মহাদ্রষ্টা। [সূরা মুমতাহিনা- ৩।]
মুমিনরা যেন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততির মায়ায় পড়ে আল্লাহর বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরে না যায়, সেজন্য কুরআনের ঘোষণা হলো,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমনটি করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। [সূরা মুনাফিকূন- ৯।]
ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি সবকিছুই আসলে মানুষের দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য মাত্র। এসবের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে মানবজাতি কি তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেদের সম্পর্ক ঠিক রাখে, না আল্লাহর বন্ধুত্বের পরিবর্তে সম্পত্তির মোহে বা সন্তানাদির মায়ায় ডুবে যায়, সে পরীক্ষা করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। সুতরাং আল্লাহর বন্ধুত্বের বিনিময়ে রক্তের সম্পর্ক একেবারেই মূল্যহীন। নূহ (আঃ) একজন উচ্চমর্যাদার নবী হওয়া সত্ত্বেও নিজের অবাধ্য ছেলেকে মহাপ্লাবনের হাত থেকে উদ্ধার করার সুপারিশ করলে তার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেছিলেন, اِنَّه لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ অর্থাৎ সে তো তোমার আহল নয়। [সূরা হুদ- ৪৬।]
অর্থাৎ নূহ (আঃ) এর ছেলেটি তাঁর ঔরসজাত সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ঈমান না আনার কারণে তার সম্পর্কে নবীর সুপারিশ অগ্রাহ্য হয়েছে। রক্ত সম্পর্ক থাকলেও পিতার মমতা বা বন্ধুত্ব পাওয়ার গুণ তার মাঝে ছিল না। এ কারণেই মহান আল্লাহ ছেলেকে নবীর আহল নয় বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বন্ধু হওয়ার জন্য মুমিনদের কতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- নামায কায়েম করা, যাকাতব্যবস্থা চালু করা, নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলিতে আল্লাহ ও রাসূলের দেয়া সীমারেখা অনুসরণ করে চলা এবং সমাজ জীবনেও তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা। সমাজব্যবস্থা ইসলাম নির্দেশিত কাঠামোতে গড়ে তোলার বাস্তব চেষ্টা করা। সমাজে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও মিথ্যা প্রতিরোধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করা। আল্লাহর বান্দাদেরকে গায়রুল্লাহর দাসত্ব থেকে মুক্ত করে একমাত্র তাঁরই গোলামী করে চলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। সত্যপন্থীদের চলার পথ সুগম করে দেয়া ও বাতিলপন্থীদের অন্যায় ও অসত্য প্রতিষ্ঠার উপর আঘাত হানা। মুমিনদের সর্বপ্রকার সহায়তা করা এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
পরস্পরকে সহযোগিতা করা :
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। [সূরা মায়েদা- ২।]
মুমিনরা পরস্পরের শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রকৃত বন্ধু। কেননা তারা একে অপরকে রাববুল আলামীনের পথে চলতে সহায়তা করে। আল্লাহ তা‘আলার বিধিনিষেধ মেনে চলতে ও তাঁর দেয়া সীমারেখার ভেতর থেকে বিশ্বজাহানকে তাঁরই পথে পরিচালনা করার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকে। এখানে تَعَاوَنُوْا (তা‘আওয়ানূ) বলতে সাহায্য, সহায়তা, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এমন ধরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বুঝানো হয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের, নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। এমনকি যদি কোথাও মুসলিমদের উপর যুলুম হতে থাকে এবং ইসলামী সমাজের সাথে সম্পর্কের কারণে তারা দারুল ইসলামের সরকার ও তার অধিবাসীদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে নিজেদের এ মজলুম ভাইদের সাহায্য করা তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে। যেভাবে কাফিররা পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা (ঈমানদাররা) যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
সৎকার্যের নির্দেশ ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করা, সালাত কায়েম করা ও যাকাত দেয়া :
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। [সূরা তাওবা- ৭১।]
যেকোন মুসলিম সম্প্রদায়কে সমর্থন ও সাহায্য করা :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। [সূরা আনফাল- ৭২।]
অন্যান্য মুসলিম ভাইদের আনন্দ এবং দুর্দশায় সাথি হওয়া :
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍْ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَثَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ فِىْ تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ اِذَا اشْتَكٰى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعٰى لَهٗ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শনে, প্রেম-ভালোবাসায়, মায়া-মমতায় এবং একের সাহায্যে অন্যের ছুটে আসায় ঈমানদারদেরকে তুমি এক দেহের সমতুল্য দেখবে। যেমন দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা হলে গোটা দেহটাই অনিদ্রা এবং জ্বরে তার শরীক হয়ে যায় (ঈমানদারদের অবস্থাও অনুরূপ)। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৭৩।]
অন্যান্য মুসলিমদেরকে ঠাট্টা করা থেকে বিরত থাকা :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে উত্তম আবার কোন মহিলা সম্প্রদায়ও যেন অপর কোন মহিলা সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে বেশি উত্তম। [সূরা হুজুরাত- ১১।]
এ আয়াতে এমনসব বড় বড় অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা সাধারণত মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো- একে অপরের ইজ্জতের উপর হামলা করা, মনোকষ্ট দেয়া, অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা এবং একে অপরের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা। এসব কারণ অন্যান্য কারণের সাথে মিশে বড় বড় ফিতনা সৃষ্টি করে।
একে অপরকে খারাপ নামে না ডাকা :
﴿وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ﴾
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়েও সম্বোধন করো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা কতই না জঘন্য কাজ! যারা এ ধরণের আচরণ থেকে ফিরে না আসে, (প্রকৃতপক্ষে) তারাই যালিম। [সূরা হুজুরাত- ১১।]
لَمْزٌ (লামযুন) শব্দটির মধ্যে বিদ্রূপ ও কুৎসা ছাড়াও আরো অর্থ রয়েছে। যেমন- উপহাস করা, অপবাদ আরোপ করা, দোষ বের করা এবং খোলাখুলি বা গোপনে অথবা ইশারা-ইঙ্গিত করে কাউকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল বানানো। এসব কাজও যেহেতু পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাই এসব হারাম করে দেয়া হয়েছে। কাউকে খারাপ নামে ডাকা অথবা তাকে এমন উপাধি দেয়া, যা তার অপছন্দ হয়- এসবকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাফির-মুশরিকদের ঘৃণা করা ও তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করা :
﴿قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِۤيْ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۚ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؗ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗ﴾
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। [সূরা মুমতাহিনা– ৪।]
একটি বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ) এবং তার অনুসারীদেরকে মুসলিম জাতির আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আর সেটা হলো, মুশরিকদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা। ইবরাহীম (আঃ) নিজ পিতা মুশরিক হওয়ার কারণে তার থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন। এমনকি তার সাথে যারা মুমিন ছিলেন সকলেই তাদের মুশরিক জাতি থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যতক্ষণ না তোমরা তাওহীদের অনুসারী হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়টিকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জাতির জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করেছেন বিধায় আমাদের সমাজেও যারা শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা মুমিনদের জন্য বৈধ নয়।
দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের থেকে দূরে থাকতে হবে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের উপর তোমার কোন দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। [সূরা আন‘আম- ১৫৯।]
বিভিন্ন যুগের লোকেরা পরবর্তীকালে তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তির প্রভাবে আসল দ্বীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার মতবাদ গড়ে তুলেছে। দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন কথা মিশিয়ে দিয়েছে। নিজেদের কুসংস্কার, বিলাসিতা, আন্দাজ-অনুমান ও নিজেদের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এর আকীদা বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং কাট-ছাঁট করে তাকে পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছে। অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে তার সাথে জুড়ে দিয়েছে। মনগড়া আইন রচনা করেছে। আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যেসব নবী-রাসূল এ দ্বীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মনীষীগণ এ দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের কারো কারো প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক বাড়াবাড়ি করেছে; আবার কারো কারো প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেই চলছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানবসমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানবসমাজ বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে। কাজেই বর্তমানে যারাই আসল দ্বীনের অনুসারী হবে, তাদের জন্য এসব বিভিন্ন সম্প্রদায় ও দলাদলি থেকে আলাদা হয়ে ইসলামের সঠিক মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে হবে।
সুতরাং যারা শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে এবং ইখলাছের সাথে বিদআতমুক্ত আমল করবে তাদেরকে নিয়ে মুসলিমদের জামা‘আত গঠিত হবে। তারা পরস্পরের বন্ধু হবে এবং মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করবে।
মুসলিম জামা‘আতের সাথে একতায় থাকা এবং ভাগাভাগি না করা :
﴿وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا﴾
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [সূরা আলে ইমরান- ১০৩।]
আল্লাহর রশি বলতে তাঁর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে রশির সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে- এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয়। অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে জামায়াতবদ্ধ করে দেয়। এ রশিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলিমরা দ্বীনকেই প্রকৃত গুরুত্বের অধিকারী মনে করবে, সে ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করবে। যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সে একই প্রকারে দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার গর্তে নিক্ষেপ করেছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَنْ اِبْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ رَاٰى مِنْ اَمِيْرِهٖ شَيْئًا يَّكْرَهُهٗ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَاِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ اِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কিছু দেখল, যা সে অপছন্দ করে তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি মুসলিম জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যাওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪, ৭১৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০২; দারেমী, হা/২৫৭৩।]
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - - اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ اَوْ يَدْعُوْ اِلٰى عَصَبَةٍ اَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلٰى اُمَّتِىْ يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلَا يَتَحَاشَ مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِىْ لِذِىْ عَهْدٍ عَهْدَهٗ فَلَيْسَ مِنِّىْ وَلَسْتُ مِنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের মতো মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের উপর আক্রমণ করে, আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে, মু’মিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তার অঙ্গীকারও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয় এবং আমিও তার কেউ নই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯২; নাসাঈ, হা/৪১১৪।]
পরস্পরকে সহযোগিতা করা :
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। [সূরা মায়েদা- ২।]
মুমিনরা পরস্পরের শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রকৃত বন্ধু। কেননা তারা একে অপরকে রাববুল আলামীনের পথে চলতে সহায়তা করে। আল্লাহ তা‘আলার বিধিনিষেধ মেনে চলতে ও তাঁর দেয়া সীমারেখার ভেতর থেকে বিশ্বজাহানকে তাঁরই পথে পরিচালনা করার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকে। এখানে تَعَاوَنُوْا (তা‘আওয়ানূ) বলতে সাহায্য, সহায়তা, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এমন ধরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বুঝানো হয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের, নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। এমনকি যদি কোথাও মুসলিমদের উপর যুলুম হতে থাকে এবং ইসলামী সমাজের সাথে সম্পর্কের কারণে তারা দারুল ইসলামের সরকার ও তার অধিবাসীদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে নিজেদের এ মজলুম ভাইদের সাহায্য করা তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে। যেভাবে কাফিররা পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা (ঈমানদাররা) যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
সৎকার্যের নির্দেশ ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করা, সালাত কায়েম করা ও যাকাত দেয়া :
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। [সূরা তাওবা- ৭১।]
যেকোন মুসলিম সম্প্রদায়কে সমর্থন ও সাহায্য করা :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। [সূরা আনফাল- ৭২।]
অন্যান্য মুসলিম ভাইদের আনন্দ এবং দুর্দশায় সাথি হওয়া :
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍْ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَثَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ فِىْ تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ اِذَا اشْتَكٰى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعٰى لَهٗ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শনে, প্রেম-ভালোবাসায়, মায়া-মমতায় এবং একের সাহায্যে অন্যের ছুটে আসায় ঈমানদারদেরকে তুমি এক দেহের সমতুল্য দেখবে। যেমন দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা হলে গোটা দেহটাই অনিদ্রা এবং জ্বরে তার শরীক হয়ে যায় (ঈমানদারদের অবস্থাও অনুরূপ)। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৭৩।]
অন্যান্য মুসলিমদেরকে ঠাট্টা করা থেকে বিরত থাকা :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে উত্তম আবার কোন মহিলা সম্প্রদায়ও যেন অপর কোন মহিলা সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে বেশি উত্তম। [সূরা হুজুরাত- ১১।]
এ আয়াতে এমনসব বড় বড় অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা সাধারণত মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো- একে অপরের ইজ্জতের উপর হামলা করা, মনোকষ্ট দেয়া, অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা এবং একে অপরের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা। এসব কারণ অন্যান্য কারণের সাথে মিশে বড় বড় ফিতনা সৃষ্টি করে।
একে অপরকে খারাপ নামে না ডাকা :
﴿وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ﴾
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়েও সম্বোধন করো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা কতই না জঘন্য কাজ! যারা এ ধরণের আচরণ থেকে ফিরে না আসে, (প্রকৃতপক্ষে) তারাই যালিম। [সূরা হুজুরাত- ১১।]
لَمْزٌ (লামযুন) শব্দটির মধ্যে বিদ্রূপ ও কুৎসা ছাড়াও আরো অর্থ রয়েছে। যেমন- উপহাস করা, অপবাদ আরোপ করা, দোষ বের করা এবং খোলাখুলি বা গোপনে অথবা ইশারা-ইঙ্গিত করে কাউকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল বানানো। এসব কাজও যেহেতু পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাই এসব হারাম করে দেয়া হয়েছে। কাউকে খারাপ নামে ডাকা অথবা তাকে এমন উপাধি দেয়া, যা তার অপছন্দ হয়- এসবকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাফির-মুশরিকদের ঘৃণা করা ও তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করা :
﴿قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِۤيْ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۚ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؗ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗ﴾
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। [সূরা মুমতাহিনা– ৪।]
একটি বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ) এবং তার অনুসারীদেরকে মুসলিম জাতির আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আর সেটা হলো, মুশরিকদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা। ইবরাহীম (আঃ) নিজ পিতা মুশরিক হওয়ার কারণে তার থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন। এমনকি তার সাথে যারা মুমিন ছিলেন সকলেই তাদের মুশরিক জাতি থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যতক্ষণ না তোমরা তাওহীদের অনুসারী হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়টিকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জাতির জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করেছেন বিধায় আমাদের সমাজেও যারা শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা মুমিনদের জন্য বৈধ নয়।
দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের থেকে দূরে থাকতে হবে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের উপর তোমার কোন দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। [সূরা আন‘আম- ১৫৯।]
বিভিন্ন যুগের লোকেরা পরবর্তীকালে তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তির প্রভাবে আসল দ্বীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার মতবাদ গড়ে তুলেছে। দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন কথা মিশিয়ে দিয়েছে। নিজেদের কুসংস্কার, বিলাসিতা, আন্দাজ-অনুমান ও নিজেদের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এর আকীদা বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং কাট-ছাঁট করে তাকে পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছে। অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে তার সাথে জুড়ে দিয়েছে। মনগড়া আইন রচনা করেছে। আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যেসব নবী-রাসূল এ দ্বীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মনীষীগণ এ দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের কারো কারো প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক বাড়াবাড়ি করেছে; আবার কারো কারো প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেই চলছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানবসমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানবসমাজ বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে। কাজেই বর্তমানে যারাই আসল দ্বীনের অনুসারী হবে, তাদের জন্য এসব বিভিন্ন সম্প্রদায় ও দলাদলি থেকে আলাদা হয়ে ইসলামের সঠিক মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে হবে।
সুতরাং যারা শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে এবং ইখলাছের সাথে বিদআতমুক্ত আমল করবে তাদেরকে নিয়ে মুসলিমদের জামা‘আত গঠিত হবে। তারা পরস্পরের বন্ধু হবে এবং মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করবে।
মুসলিম জামা‘আতের সাথে একতায় থাকা এবং ভাগাভাগি না করা :
﴿وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا﴾
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [সূরা আলে ইমরান- ১০৩।]
আল্লাহর রশি বলতে তাঁর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে রশির সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে- এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয়। অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে জামায়াতবদ্ধ করে দেয়। এ রশিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলিমরা দ্বীনকেই প্রকৃত গুরুত্বের অধিকারী মনে করবে, সে ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করবে। যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সে একই প্রকারে দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার গর্তে নিক্ষেপ করেছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
عَنْ اِبْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ رَاٰى مِنْ اَمِيْرِهٖ شَيْئًا يَّكْرَهُهٗ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَاِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ اِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কিছু দেখল, যা সে অপছন্দ করে তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি মুসলিম জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যাওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪, ৭১৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০২; দারেমী, হা/২৫৭৩।]
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - - اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ اَوْ يَدْعُوْ اِلٰى عَصَبَةٍ اَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلٰى اُمَّتِىْ يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلَا يَتَحَاشَ مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِىْ لِذِىْ عَهْدٍ عَهْدَهٗ فَلَيْسَ مِنِّىْ وَلَسْتُ مِنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের মতো মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের উপর আক্রমণ করে, আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে, মু’মিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তার অঙ্গীকারও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয় এবং আমিও তার কেউ নই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯২; নাসাঈ, হা/৪১১৪।]
তারা মুমিনদের ব্যাপারে নরম এবং কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন :
﴿مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর যারা তাঁর সাথে আছে (অর্থাৎ সাহাবীরা) তারা কাফিরদের উপর কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল। [সূরা ফাতহ- ২৯।]
তারা তাদের ঈমানের পরিপক্কতা, নীতির দৃঢ়তা, চারিত্রিক শক্তি এবং ঈমানী দূরদর্শিতার মাধ্যমে কাফিরদের মুকাবিলায় মজবুত পাথরের মতো অনমনীয় ও আপোষহীন ছিলেন। তারা অস্থিরমনা ছিলেন না যে, কাফিররা তাদেরকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরিয়ে দিতে পারবে। আবার তারা নরম ঘাসও ছিলেন না যে, কাফিররা অতি সহজেই তাদেরকে চিবিয়ে ফেলতে পারবে। কোন প্রকার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করা যায় না। কোন লোভ দেখিয়ে তাদেরকে কেনা যায় না। যে মহৎ উদ্দেশ্যে তারা জীবন বাজি রেখে মুহাম্মাদ ﷺ কে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তা থেকে বিচ্যুত করার ক্ষমতা কাফিরদের ছিল না। তাদের মধ্যে যতটুকু কঠোরতা ছিল তা কাফিরদের জন্য, ঈমানদারদের জন্য নয়। ঈমানদারদের কাছে তারা বিনম্র, স্নেহশীল ও দুঃখের সাথি ছিলেন। নীতি ও উদ্দেশ্যের ঐক্য তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
বিরোধীদের হুমকি শুনলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেত :
﴿اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ﴾
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। [সূরা আলে ইমরান- ১৭৩।]
তারা ঈমানকে ভালোবাসতেন :
﴿وَلٰكِنَّ اللهَ حَبَّبَ اِلَيْكُمُ الْاِيْمَانَ وَزَيَّنَهٗ فِيْ قُلُوْبِكُمْ﴾
কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা দান করেছেন এবং তিনি তোমাদের অন্তরে তা সুশোভিত করে দিয়েছেন। [সূরা হুজুরাত- ৭।]
তারা পাপকে ঘৃণা করতেন :
﴿وَكَرَّهَ اِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ﴾
তিনি তোমাদের অন্তরে কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন; আর এমন লোকেরাই সুপথে আছে। [সূরা হুজুরাত- ৭।]
দুনিয়ার কাজ তাদেরকে ইবাদাত পালন থেকে বিরত রাখতে পারত না :
﴿رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ﴾
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। [সূরা নূর- ৩৭।]
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছেন :
﴿لِلْفُقَرَآءِ الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَّيَنْصُرُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ﴾
(এ সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী। [সূরা হাশর- ৮।]
তারা একে অপরকে খুবই ভালোবাসতেন :
﴿وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ﴾
যারা তাদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্ব থেকেই এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করে এসেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদের নিকট যারা হিজরত করে এসেছিল তাদেরকে ভালোবাসত। [সূরা হাশর- ৯।]
আরববাসীদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, স্নেহ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা বিভিন্ন গোত্র থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে শত শত বছর থেকে শত্রুতা চলে আসছিল। বিশেষ করে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে এটা ছিল সুস্পষ্ট। মাত্র দুই থেকে তিন বছরে তাদের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে, যা তাদেরকে একটি সীসা ঢালা প্রাচীরে পরিণত করে।
তারা নিজেদের প্রয়োজন বাদ দিয়ে অপরের প্রয়োজন মেটাতেন :
﴿وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ﴾
আর তারা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। [সূরা হাশর- ৯।]
﴿مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর যারা তাঁর সাথে আছে (অর্থাৎ সাহাবীরা) তারা কাফিরদের উপর কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল। [সূরা ফাতহ- ২৯।]
তারা তাদের ঈমানের পরিপক্কতা, নীতির দৃঢ়তা, চারিত্রিক শক্তি এবং ঈমানী দূরদর্শিতার মাধ্যমে কাফিরদের মুকাবিলায় মজবুত পাথরের মতো অনমনীয় ও আপোষহীন ছিলেন। তারা অস্থিরমনা ছিলেন না যে, কাফিররা তাদেরকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরিয়ে দিতে পারবে। আবার তারা নরম ঘাসও ছিলেন না যে, কাফিররা অতি সহজেই তাদেরকে চিবিয়ে ফেলতে পারবে। কোন প্রকার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করা যায় না। কোন লোভ দেখিয়ে তাদেরকে কেনা যায় না। যে মহৎ উদ্দেশ্যে তারা জীবন বাজি রেখে মুহাম্মাদ ﷺ কে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তা থেকে বিচ্যুত করার ক্ষমতা কাফিরদের ছিল না। তাদের মধ্যে যতটুকু কঠোরতা ছিল তা কাফিরদের জন্য, ঈমানদারদের জন্য নয়। ঈমানদারদের কাছে তারা বিনম্র, স্নেহশীল ও দুঃখের সাথি ছিলেন। নীতি ও উদ্দেশ্যের ঐক্য তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
বিরোধীদের হুমকি শুনলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেত :
﴿اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ﴾
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। [সূরা আলে ইমরান- ১৭৩।]
তারা ঈমানকে ভালোবাসতেন :
﴿وَلٰكِنَّ اللهَ حَبَّبَ اِلَيْكُمُ الْاِيْمَانَ وَزَيَّنَهٗ فِيْ قُلُوْبِكُمْ﴾
কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা দান করেছেন এবং তিনি তোমাদের অন্তরে তা সুশোভিত করে দিয়েছেন। [সূরা হুজুরাত- ৭।]
তারা পাপকে ঘৃণা করতেন :
﴿وَكَرَّهَ اِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ﴾
তিনি তোমাদের অন্তরে কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন; আর এমন লোকেরাই সুপথে আছে। [সূরা হুজুরাত- ৭।]
দুনিয়ার কাজ তাদেরকে ইবাদাত পালন থেকে বিরত রাখতে পারত না :
﴿رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ﴾
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। [সূরা নূর- ৩৭।]
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছেন :
﴿لِلْفُقَرَآءِ الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَّيَنْصُرُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ﴾
(এ সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী। [সূরা হাশর- ৮।]
তারা একে অপরকে খুবই ভালোবাসতেন :
﴿وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ﴾
যারা তাদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্ব থেকেই এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করে এসেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদের নিকট যারা হিজরত করে এসেছিল তাদেরকে ভালোবাসত। [সূরা হাশর- ৯।]
আরববাসীদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, স্নেহ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা বিভিন্ন গোত্র থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে শত শত বছর থেকে শত্রুতা চলে আসছিল। বিশেষ করে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে এটা ছিল সুস্পষ্ট। মাত্র দুই থেকে তিন বছরে তাদের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে, যা তাদেরকে একটি সীসা ঢালা প্রাচীরে পরিণত করে।
তারা নিজেদের প্রয়োজন বাদ দিয়ে অপরের প্রয়োজন মেটাতেন :
﴿وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ﴾
আর তারা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। [সূরা হাশর- ৯।]
সৎ বন্ধুত্বের বিপরীতে রয়েছে অসৎ বন্ধুত্ব। মুমিনগণ যেমন একে অপরের বন্ধু, এর বিপরীতে কাফির-মুশরিকরাও একে অপরের বন্ধু। যে সকল লোক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সৎ মুমিনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং কুরআন ও সুন্নাহের বিরোধিতা করে তারা একে অপরের বন্ধু। তারা অন্যায় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করে। তারা মানুষকে আল্লাহর দ্বীন থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। পূর্বযুগে অনেকে ইসলামের সাথে শত্রুতা করেছে; অনুরূপভাবে বর্তমান যুগেও ইসলামের দুশমন রয়েছে।
খারাপ লোকের সঙ্গী খারাপ লোকই হয়ে থাকে :
﴿وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ فَزَيَّنُوْا لَهُمْ مَّا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সহচরবৃন্দ, যারা তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। অবশেষে তাদের ব্যাপারেও তাদের পূর্ববর্তী জিন ও মানুষের ন্যায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। নিশ্চয় তারা ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা হা-মীম সাজদা- ২৫।]
এটা আল্লাহর স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিধান। খারাপ নিয়ত ও খারাপ আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী মানুষের জন্য তিনি কখনো ভালো সঙ্গী দেন না। তার ঝোঁক ও আগ্রহ অনুসারে তিনি তাকে খারাপ সঙ্গীই জুটিয়ে দেন। সে যতই দুষ্কর্মের গহবরে নামতে থাকে ততই জঘন্যতর মানুষ ও শয়তান তার সহচর ও পরামর্শদাতা হতে থাকে। কারো কারো উক্তি, অমুক ব্যক্তি নিজে খুব ভালো কিন্তু তার বন্ধুবান্ধব জুটেছে খারাপ- এটা বাস্তবের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রকৃতির বিধান হলো, প্রতিটি ব্যক্তি নিজে যেমন তার বন্ধুও জোটে ঠিক তেমনি। একজন সৎ ও নেক মানুষের সাহচর্যে খারাপ মানুষ আসলেও বেশি সময় সে তার সাথে থাকতে পারে না। অনুরূপ অসৎ উদ্দেশ্যে কর্মরত একজন দুষ্কর্মশীল মানুষের সাথে হঠাৎ সৎ মানুষের বন্ধুত্ব হলেও তা বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না।
যালিমরা ও কাফিররা একে অপরের বন্ধু :
﴿وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۚ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ﴾
নিশ্চয় যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের বন্ধু। [সূরা জাসিয়া- ১৯।]
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
যারা কুফরী করেছে তারা একে অপরের বন্ধু। [সূরা আনফাল- ৭৩।]
কাফিরদের বন্ধু হলো তাগুত :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ﴾
আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। [সূরা বাক্বারা- ২৫৭।]
কাফিরদের বন্ধু হলো শয়তান :
﴿اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
এরা সবাই শয়তানের দল :
﴿اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
অসৎ বন্ধু সৎকর্মে বাধা হয়ে যায় :
﴿يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! (কেননা) আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান- ২৮, ২৯।]
অসৎ বন্ধুর সঙ্গী না হওয়ার কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়ে তার ঐ অসৎ বন্ধুকে সম্বোধন করে বলবে, যদি আমি দুনিয়াতে তোমার সাথি হতাম তাহলে আমাকেও জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হতো। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
﴿فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ ‐ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ اِنِّيْ كَانَ لِيْ قَرِيْنٌ ‐ يَقُوْلُ اَاِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِيْنَ ‐ اَاِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَاِنَّا لَمَدِيْنُوْنَ ‐ قَالَ هَلْ اَنْتُمْ مُطَّلِعُوْنَ ‐ فَاطَّلَعَ فَرَاٰهُ فِيْ سَوَآءِ الْجَحِيْمِ ‐ قَالَ تَاللهِ اِنْ كِدْتَّ لَتُرْدِيْنِ ‐ وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ﴾
তারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলবে, দুনিয়ায় আমার এক বন্ধু ছিল। সে বলত, তুমি কি এতে ঈমান রাখো যে, যখন আমরা মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা প্রতিফলপ্রাপ্ত হব? আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি তাকে উঁকি মেরে দেখতে চাও? অতঃপর সে উঁকি মেরে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে। সে বলবে, আল্লাহর শপথ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করার উপক্রম করেছিলে। যদি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকত, তবে আমিও তোমার ন্যায় সাজাপ্রাপ্তদের সাথে জাহান্নামে হাযির হতাম। [সূরা সাফফাত, ৫০-৫৭।]
খারাপ লোকের সঙ্গী খারাপ লোকই হয়ে থাকে :
﴿وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ فَزَيَّنُوْا لَهُمْ مَّا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সহচরবৃন্দ, যারা তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। অবশেষে তাদের ব্যাপারেও তাদের পূর্ববর্তী জিন ও মানুষের ন্যায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। নিশ্চয় তারা ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা হা-মীম সাজদা- ২৫।]
এটা আল্লাহর স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিধান। খারাপ নিয়ত ও খারাপ আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী মানুষের জন্য তিনি কখনো ভালো সঙ্গী দেন না। তার ঝোঁক ও আগ্রহ অনুসারে তিনি তাকে খারাপ সঙ্গীই জুটিয়ে দেন। সে যতই দুষ্কর্মের গহবরে নামতে থাকে ততই জঘন্যতর মানুষ ও শয়তান তার সহচর ও পরামর্শদাতা হতে থাকে। কারো কারো উক্তি, অমুক ব্যক্তি নিজে খুব ভালো কিন্তু তার বন্ধুবান্ধব জুটেছে খারাপ- এটা বাস্তবের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রকৃতির বিধান হলো, প্রতিটি ব্যক্তি নিজে যেমন তার বন্ধুও জোটে ঠিক তেমনি। একজন সৎ ও নেক মানুষের সাহচর্যে খারাপ মানুষ আসলেও বেশি সময় সে তার সাথে থাকতে পারে না। অনুরূপ অসৎ উদ্দেশ্যে কর্মরত একজন দুষ্কর্মশীল মানুষের সাথে হঠাৎ সৎ মানুষের বন্ধুত্ব হলেও তা বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না।
যালিমরা ও কাফিররা একে অপরের বন্ধু :
﴿وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۚ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ﴾
নিশ্চয় যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের বন্ধু। [সূরা জাসিয়া- ১৯।]
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ﴾
যারা কুফরী করেছে তারা একে অপরের বন্ধু। [সূরা আনফাল- ৭৩।]
কাফিরদের বন্ধু হলো তাগুত :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ﴾
আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। [সূরা বাক্বারা- ২৫৭।]
কাফিরদের বন্ধু হলো শয়তান :
﴿اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। [সূরা আ‘রাফ- ২৭।]
এরা সবাই শয়তানের দল :
﴿اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সূরা মুজাদালা- ১৯।]
অসৎ বন্ধু সৎকর্মে বাধা হয়ে যায় :
﴿يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! (কেননা) আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান- ২৮, ২৯।]
অসৎ বন্ধুর সঙ্গী না হওয়ার কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়ে তার ঐ অসৎ বন্ধুকে সম্বোধন করে বলবে, যদি আমি দুনিয়াতে তোমার সাথি হতাম তাহলে আমাকেও জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হতো। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
﴿فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ ‐ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ اِنِّيْ كَانَ لِيْ قَرِيْنٌ ‐ يَقُوْلُ اَاِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِيْنَ ‐ اَاِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَاِنَّا لَمَدِيْنُوْنَ ‐ قَالَ هَلْ اَنْتُمْ مُطَّلِعُوْنَ ‐ فَاطَّلَعَ فَرَاٰهُ فِيْ سَوَآءِ الْجَحِيْمِ ‐ قَالَ تَاللهِ اِنْ كِدْتَّ لَتُرْدِيْنِ ‐ وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ﴾
তারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলবে, দুনিয়ায় আমার এক বন্ধু ছিল। সে বলত, তুমি কি এতে ঈমান রাখো যে, যখন আমরা মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা প্রতিফলপ্রাপ্ত হব? আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি তাকে উঁকি মেরে দেখতে চাও? অতঃপর সে উঁকি মেরে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে। সে বলবে, আল্লাহর শপথ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করার উপক্রম করেছিলে। যদি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকত, তবে আমিও তোমার ন্যায় সাজাপ্রাপ্তদের সাথে জাহান্নামে হাযির হতাম। [সূরা সাফফাত, ৫০-৫৭।]
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা তারা একে অপরের বন্ধু (কিন্তু তারা উভয়েই তোমাদের শত্রু)। সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা মায়েদা- ৫১।]
ইসলামকে নিয়ে তামাশাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। [সূরা মায়েদা- ৫৭।]
কাফিরদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। [সূরা নিসা- ১৪৪।]
কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বকারীরা মুনাফিক :
﴿بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا﴾
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের নিকট সম্মান কামনা করে? নিশ্চয় সমস্ত সম্মান আল্লাহরই। [সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯।]
ইসলামের দুশমন যতই ঘনিষ্ট হোক তার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রেখেছে তা আরো জঘন্য। আর আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা অনুধাবন করতে পার। [সূরা আলে ইমরান- ১১৮।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা তারা একে অপরের বন্ধু (কিন্তু তারা উভয়েই তোমাদের শত্রু)। সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা মায়েদা- ৫১।]
ইসলামকে নিয়ে তামাশাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। [সূরা মায়েদা- ৫৭।]
কাফিরদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। [সূরা নিসা- ১৪৪।]
কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বকারীরা মুনাফিক :
﴿بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا﴾
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের নিকট সম্মান কামনা করে? নিশ্চয় সমস্ত সম্মান আল্লাহরই। [সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯।]
ইসলামের দুশমন যতই ঘনিষ্ট হোক তার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রেখেছে তা আরো জঘন্য। আর আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা অনুধাবন করতে পার। [সূরা আলে ইমরান- ১১৮।]
যেসব লোক সকল নবীর যুগে ইসলামের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে বর্তমানে তাদের মতো যারা হবে তারাই ইসলামের দুশমন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইসলামের দুশমনদের যেসব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এসব বৈশিষ্ট্য বর্তমানে যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তাদের সাথে কোন মুমিনের বন্ধুত্ব থাকবে না। নিচে এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো :
যারা মুমিনদেরকে মিথ্যাবাদী বলে :
﴿وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا﴾
এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিলেন, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছেছে। [সূরা আন‘আম- ৩৪।]
যারা মুমিনদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ – وَاِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ﴾
যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেত তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত। [সূরা মুতাফ্ফিফীন- ২৯, ৩০।]
যারা মুমিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে :
﴿يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ﴾
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। [সূরা ইয়াসীন- ৩০।]
যারা মুমিনদেরকে পাগল বলে অপবাদ দেয় :
﴿وَقَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الَّذِىْ نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُاِنَّكَ لَمَجْنُوْنٌ﴾
তারা বলে, ওহে! যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, নিশ্চয় তুমি একজন উন্মাদ। [সূরা হিজর- ৬।]
যারা মুমিনদেরকে ক্ষমতার লোভী বলে অপবাদ দেয় :
﴿قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا وَتَكُوْنَ لَكُمَا الْكِبْرِيَآءُ فِى الْاَرْضِؕ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِيْنَ ﴾
তারা (ফিরাউন সম্প্রদায় নবীকে) বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তুমি কি তা হতে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের নিকট এসেছ, নাকি যাতে করে জমিনে তোমাদের দুজনের প্রতিপত্তি হয় সেজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই। [সূরা ইউনুস– ৭৮।]
যারা মুমিনদেরকে ফাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে :
﴿وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤىْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗۤ اِنِّۤىْ اَخَافُ اَنْ يُّبَدِّلَ دِيْنَكُمْ اَوْ اَنْ يُّظْهِرَ فِى الْاَرْضِ الْفَسَادَ﴾
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। [সূরা মুমিন- ২৬।]
যারা মুমিনদেরকে নিম্ন শ্রেণির মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْاَرْذَلُوْنَ﴾
তারা (নূহ আঃ এর জাতি নবীকে) বলল, আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নীচু শ্রেণির লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে? [সূরা শু‘আরা– ১১১।]
যারা মুমিনদেরকে কুলক্ষণ মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ﴾
তারা (নগরীর লোকেরা নবীদেরকে) বলল, আমরা তোমাদেরকে কুলক্ষণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। [সূরা ইয়াসীন- ১৮।]
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং সত্যের বিরোধিতা করে :
﴿وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا﴾
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। [সূরা কাহফ- ৫৬।]
যারা অনৈসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে উত্তম মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اِنْ هٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيْدَانِ اَنْ يُّخْرِجَاكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيْقَتِكُمُ الْمُثْلٰى﴾
তারা (ফিরাউন সম্প্রদায়) বলল, অবশ্যই এ দুজন (মুসা ও হারুন আঃ) যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে। [সূরা ত্বা–হা– ৬৩।]
তারা দেশের মানুষকে এ বলে ভয় দেখাচ্ছিল যে, মূসা (আঃ) এর বিজয় হলে তোমাদের এ শিল্প, চারুকলা, সংস্কৃতি এবং নারী স্বাধীনতাসহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
যারা মুমিনদের বিরুদ্ধে সর্বদা ষড়যন্ত্র করে :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًا﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। [সূরা সাবা- ৩৩।]
যারা মুমিনদেরকে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় :
﴿هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لَا تُنْفِقُوْا عَلٰى مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتّٰى يَنْفَضُّوْا وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ﴾
তারা (মুনাফিকরা) বলে, আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় করো না, যাতে করে তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। [সূরা মুনাফিকূন- ৭।]
যারা মুমিনদেরকে বিতাড়িত করতে চায় :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ﴾
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন যে, অবশ্যই আমি যালিমদেরকে বিনাশ করব। [সূরা ইবরাহীম- ১৩।]
যারা মুমিনদের উপর যুলুম-নির্যাতন করে :
﴿اِنَّهُمْ اِنْ يَّظْهَرُوْا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوْكُمْ اَوْ يُعِيْدُوْكُمْ فِىْ مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوْا اِذًا اَبَدًا﴾
(আসহাবের কাহফের মুমিনরা বলেছিল) তারা (ইসলামের শত্রুরা) যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না। [সূরা কাহফ- ২০।]
আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করা ও তাঁর বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দুনিয়ার যেখানেই যা কিছু প্রচেষ্টা চলছে, মুসলিমরা যতই নির্যাতিত হচ্ছে তাতে কাফিরদের মনে একটুও সমবেদনা জাগবে না। কেননা কাফিরদের সমস্ত আগ্রহ আল্লাহর হুকুম অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কাজ যে যেখানেই করবে কাফিররা যদি তাতে শরীক নাও হতে পারে, তবুও অন্ততপক্ষে জিন্দাবাদ ধ্বনি দেবে। এভাবে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বুকে সাহস যোগাবে। অপরদিকে যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকে, তাহলে কাফিররা তাকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে একটুও ইতস্ততবোধ করবে না।
যারা মুমিনদেরকে শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্র করে :
﴿قَالُوْا حَرِّقُوْهُ وَانْصُرُوْاۤ اٰلِهَتَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ﴾
তারা (নমরুদ ও তার সাথিরা) বলল, তাকে (ইবরাহীম আঃ কে) পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবতাদেরকে সাহায্য করো, যদি তোমরা তা করতে পার। [সূরা সূরা কাহফ- ২০।]
যারা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় :
﴿وَلَا يَزَالُوْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ حَتّٰى يَرُدُّوْكُمْ عَنْ دِيْنِكُمْ﴾
তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়। [সূরা বাক্বারা- ২১৭।]
যারা মুমিনদেরকে গ্রেফতার ও হত্যা করতে চায় :
﴿وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ﴾
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমাকে বন্দী করা বা হত্যা করা অথবা নির্বাসিত করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে, অপরদিকে আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন; কিন্তু আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী। [সূরা আনফাল- ৩০।]
এটা এমন সময়ের কথা যখন কুরাইশদের এ আশঙ্কা নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল যে, এখন মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় চলে যাবেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য দারুন নাদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা ডাকল। কীভাবে এ বিপদের পথ রোধ করা যায়- এ ব্যাপারে তারা পরামর্শ করল।
এক দলের মতামত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে ও পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক। মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ মত গৃহীত হলো না। কারণ তারা বলল, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথি কারাগারের বাইরে থাকবে, তারা কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাঁকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না।
দ্বিতীয় দলের মত ছিল, একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও। তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কী করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই? কিন্তু এ মতটিও গৃহিত হলো না। তারা বলল, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর। কথার মাধ্যমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে আরবের অন্যান্য গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে। তারপর প্রচুর পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমাদের উপর আক্রমণ করে বসবে।
সবশেষে আবু জেহেল মত প্রকাশ করল যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় তরবারি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে। তারা সবাই মিলে একই সঙ্গে তাঁকে হত্যা করবে। এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়িত্বটি সকল গোত্রের উপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আর সবার সঙ্গে লড়াই করা বনু আবদে মানাফের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ মতটি সবাই পছন্দ করল। হত্যা করার জন্য লোকদের নাম নির্ধারিত হলো। হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো। এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল সে রাতে ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই নবী ﷺ বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আলী (রাঃ) কে নিজের বিছানায় রেখে আবু বকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে সাওর নামক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর মদিনায় চলে যান। ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে যায়।
যারা মুমিনদেরকে মিথ্যাবাদী বলে :
﴿وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا﴾
এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিলেন, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছেছে। [সূরা আন‘আম- ৩৪।]
যারা মুমিনদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ – وَاِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ﴾
যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেত তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত। [সূরা মুতাফ্ফিফীন- ২৯, ৩০।]
যারা মুমিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে :
﴿يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ﴾
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। [সূরা ইয়াসীন- ৩০।]
যারা মুমিনদেরকে পাগল বলে অপবাদ দেয় :
﴿وَقَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الَّذِىْ نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُاِنَّكَ لَمَجْنُوْنٌ﴾
তারা বলে, ওহে! যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, নিশ্চয় তুমি একজন উন্মাদ। [সূরা হিজর- ৬।]
যারা মুমিনদেরকে ক্ষমতার লোভী বলে অপবাদ দেয় :
﴿قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا وَتَكُوْنَ لَكُمَا الْكِبْرِيَآءُ فِى الْاَرْضِؕ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِيْنَ ﴾
তারা (ফিরাউন সম্প্রদায় নবীকে) বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তুমি কি তা হতে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের নিকট এসেছ, নাকি যাতে করে জমিনে তোমাদের দুজনের প্রতিপত্তি হয় সেজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই। [সূরা ইউনুস– ৭৮।]
যারা মুমিনদেরকে ফাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে :
﴿وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤىْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗۤ اِنِّۤىْ اَخَافُ اَنْ يُّبَدِّلَ دِيْنَكُمْ اَوْ اَنْ يُّظْهِرَ فِى الْاَرْضِ الْفَسَادَ﴾
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। [সূরা মুমিন- ২৬।]
যারা মুমিনদেরকে নিম্ন শ্রেণির মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْاَرْذَلُوْنَ﴾
তারা (নূহ আঃ এর জাতি নবীকে) বলল, আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নীচু শ্রেণির লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে? [সূরা শু‘আরা– ১১১।]
যারা মুমিনদেরকে কুলক্ষণ মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ﴾
তারা (নগরীর লোকেরা নবীদেরকে) বলল, আমরা তোমাদেরকে কুলক্ষণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। [সূরা ইয়াসীন- ১৮।]
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং সত্যের বিরোধিতা করে :
﴿وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا﴾
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। [সূরা কাহফ- ৫৬।]
যারা অনৈসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে উত্তম মনে করে :
﴿قَالُوْاۤ اِنْ هٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيْدَانِ اَنْ يُّخْرِجَاكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيْقَتِكُمُ الْمُثْلٰى﴾
তারা (ফিরাউন সম্প্রদায়) বলল, অবশ্যই এ দুজন (মুসা ও হারুন আঃ) যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে। [সূরা ত্বা–হা– ৬৩।]
তারা দেশের মানুষকে এ বলে ভয় দেখাচ্ছিল যে, মূসা (আঃ) এর বিজয় হলে তোমাদের এ শিল্প, চারুকলা, সংস্কৃতি এবং নারী স্বাধীনতাসহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
যারা মুমিনদের বিরুদ্ধে সর্বদা ষড়যন্ত্র করে :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًا﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। [সূরা সাবা- ৩৩।]
যারা মুমিনদেরকে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় :
﴿هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لَا تُنْفِقُوْا عَلٰى مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتّٰى يَنْفَضُّوْا وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ﴾
তারা (মুনাফিকরা) বলে, আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় করো না, যাতে করে তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। [সূরা মুনাফিকূন- ৭।]
যারা মুমিনদেরকে বিতাড়িত করতে চায় :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ﴾
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন যে, অবশ্যই আমি যালিমদেরকে বিনাশ করব। [সূরা ইবরাহীম- ১৩।]
যারা মুমিনদের উপর যুলুম-নির্যাতন করে :
﴿اِنَّهُمْ اِنْ يَّظْهَرُوْا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوْكُمْ اَوْ يُعِيْدُوْكُمْ فِىْ مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوْا اِذًا اَبَدًا﴾
(আসহাবের কাহফের মুমিনরা বলেছিল) তারা (ইসলামের শত্রুরা) যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না। [সূরা কাহফ- ২০।]
আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করা ও তাঁর বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দুনিয়ার যেখানেই যা কিছু প্রচেষ্টা চলছে, মুসলিমরা যতই নির্যাতিত হচ্ছে তাতে কাফিরদের মনে একটুও সমবেদনা জাগবে না। কেননা কাফিরদের সমস্ত আগ্রহ আল্লাহর হুকুম অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কাজ যে যেখানেই করবে কাফিররা যদি তাতে শরীক নাও হতে পারে, তবুও অন্ততপক্ষে জিন্দাবাদ ধ্বনি দেবে। এভাবে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বুকে সাহস যোগাবে। অপরদিকে যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকে, তাহলে কাফিররা তাকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে একটুও ইতস্ততবোধ করবে না।
যারা মুমিনদেরকে শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্র করে :
﴿قَالُوْا حَرِّقُوْهُ وَانْصُرُوْاۤ اٰلِهَتَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ﴾
তারা (নমরুদ ও তার সাথিরা) বলল, তাকে (ইবরাহীম আঃ কে) পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবতাদেরকে সাহায্য করো, যদি তোমরা তা করতে পার। [সূরা সূরা কাহফ- ২০।]
যারা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় :
﴿وَلَا يَزَالُوْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ حَتّٰى يَرُدُّوْكُمْ عَنْ دِيْنِكُمْ﴾
তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়। [সূরা বাক্বারা- ২১৭।]
যারা মুমিনদেরকে গ্রেফতার ও হত্যা করতে চায় :
﴿وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ﴾
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমাকে বন্দী করা বা হত্যা করা অথবা নির্বাসিত করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে, অপরদিকে আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন; কিন্তু আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী। [সূরা আনফাল- ৩০।]
এটা এমন সময়ের কথা যখন কুরাইশদের এ আশঙ্কা নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল যে, এখন মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় চলে যাবেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য দারুন নাদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা ডাকল। কীভাবে এ বিপদের পথ রোধ করা যায়- এ ব্যাপারে তারা পরামর্শ করল।
এক দলের মতামত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে ও পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক। মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ মত গৃহীত হলো না। কারণ তারা বলল, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথি কারাগারের বাইরে থাকবে, তারা কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাঁকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না।
দ্বিতীয় দলের মত ছিল, একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও। তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কী করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই? কিন্তু এ মতটিও গৃহিত হলো না। তারা বলল, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর। কথার মাধ্যমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে আরবের অন্যান্য গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে। তারপর প্রচুর পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমাদের উপর আক্রমণ করে বসবে।
সবশেষে আবু জেহেল মত প্রকাশ করল যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় তরবারি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে। তারা সবাই মিলে একই সঙ্গে তাঁকে হত্যা করবে। এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়িত্বটি সকল গোত্রের উপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আর সবার সঙ্গে লড়াই করা বনু আবদে মানাফের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ মতটি সবাই পছন্দ করল। হত্যা করার জন্য লোকদের নাম নির্ধারিত হলো। হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো। এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল সে রাতে ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই নবী ﷺ বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আলী (রাঃ) কে নিজের বিছানায় রেখে আবু বকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে সাওর নামক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর মদিনায় চলে যান। ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে যায়।
যেসব দলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের কর্মসূচী নেই :
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ﴾
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই কাফির। [সূরা মায়েদা- ৪৪।]
যেসব দলের নেতা কাফির :
﴿فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهٖ جِهَادًا كَبِيْرًا﴾
সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি এর দ্বারা (কুরআনের সাহায্যে) তাদের সাথে প্রবল সংগ্রাম চালিয়ে যাও। [সূরা ফুরক্বান- ৫২।]
যেসব দলের নেতা মুনাফিক :
﴿وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ﴾
আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা মানবে না এবং তাদের নির্যাতনকে উপেক্ষা করবে। [সূরা আহযাব- ৪৮।]
যেসব দলের নেতা মিথ্যাবাদী :
﴿فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ﴾
অতএব তুমি মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না। [সূরা ক্বালাম- ৮।]
যেসব দলের নেতা অসৎ ও চরিত্রহীন :
﴿وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِيْنٍ ‐ هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ ۢبِنَمِيْمٍ ‐ مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ اَثِيْمٍ﴾
আর তুমি তাদের অনুসরণ করো না, যারা কথায় কথায় শপথ করে এবং যারা লাঞ্ছিত হয়। যারা বেহুদা গালমন্দ করে, মানুষকে অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে বেড়ায়। আর যারা কল্যাণের কাজে বাধা দান করে এবং সীমালঙ্ঘন করে। [সূরা ক্বালাম, ১০-১২।]
مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ (মান্না‘ইল লিল খায়র) তথা যে কল্যাণের কাজে বাধা দান করে। اَلْخَيْرُ (আল খায়র) শব্দটি সম্পদ অর্থে ব্যবহৃত হয় আবার কল্যাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ থেকে বান্দা ও আল্লাহ কারো হকই আদায় করত না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা কল্যাণের পথ থেকে নিজেরাই যে কেবল বিরত থাকত তা নয়, বরং অন্যদেরকেও তা থেকে বিরত রাখত। তারা পৃথিবীতে কল্যাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোনভাবেই যেন কল্যাণ বিস্তার লাভ করতে না পারে এ উদ্দেশ্যেই তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে।
مُعْتَدٍ (মু‘তাদিন) তথা সীমালঙ্ঘনকারী- যে প্রতিটি কাজে নৈতিকতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে নিজের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যাবলির জন্য যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকত। হারাম পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করত এবং হারাম পথেই তা ব্যয় করত। মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করত। তার হাত কোন প্রকার যুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকত না। কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই সে যথেষ্ট মনে করত না, বরং আরো অগ্রসর হয়ে সততা ও কল্যাণের পথের অনুসারীদেরকে উত্যক্ত করত এবং যারা কল্যাণের জন্য কাজ করত তাদের উপর নির্যাতন চালাত।
যেসব দলের নেতা ফাসিক :
﴿وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ﴾
(সেসব) সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। [সূরা শু‘আরা- ১৫১, ১৫২।]
যেসব দল বাতিলের অনুসরণ করে :
﴿ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَاَنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَّبِّهِمْؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ لِلنَّاسِ اَمْثَالَهُمْ﴾
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্বকে মেনে চলেছে। এভাবেই আল্লাহ মানুষকে তাদের সঠিক অবস্থা জানিয়ে দেন। [সূরা মুহাম্মাদ- ৩।]
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ﴾
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই কাফির। [সূরা মায়েদা- ৪৪।]
যেসব দলের নেতা কাফির :
﴿فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهٖ جِهَادًا كَبِيْرًا﴾
সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি এর দ্বারা (কুরআনের সাহায্যে) তাদের সাথে প্রবল সংগ্রাম চালিয়ে যাও। [সূরা ফুরক্বান- ৫২।]
যেসব দলের নেতা মুনাফিক :
﴿وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ﴾
আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা মানবে না এবং তাদের নির্যাতনকে উপেক্ষা করবে। [সূরা আহযাব- ৪৮।]
যেসব দলের নেতা মিথ্যাবাদী :
﴿فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ﴾
অতএব তুমি মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না। [সূরা ক্বালাম- ৮।]
যেসব দলের নেতা অসৎ ও চরিত্রহীন :
﴿وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِيْنٍ ‐ هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ ۢبِنَمِيْمٍ ‐ مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ اَثِيْمٍ﴾
আর তুমি তাদের অনুসরণ করো না, যারা কথায় কথায় শপথ করে এবং যারা লাঞ্ছিত হয়। যারা বেহুদা গালমন্দ করে, মানুষকে অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে বেড়ায়। আর যারা কল্যাণের কাজে বাধা দান করে এবং সীমালঙ্ঘন করে। [সূরা ক্বালাম, ১০-১২।]
مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ (মান্না‘ইল লিল খায়র) তথা যে কল্যাণের কাজে বাধা দান করে। اَلْخَيْرُ (আল খায়র) শব্দটি সম্পদ অর্থে ব্যবহৃত হয় আবার কল্যাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ থেকে বান্দা ও আল্লাহ কারো হকই আদায় করত না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা কল্যাণের পথ থেকে নিজেরাই যে কেবল বিরত থাকত তা নয়, বরং অন্যদেরকেও তা থেকে বিরত রাখত। তারা পৃথিবীতে কল্যাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোনভাবেই যেন কল্যাণ বিস্তার লাভ করতে না পারে এ উদ্দেশ্যেই তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে।
مُعْتَدٍ (মু‘তাদিন) তথা সীমালঙ্ঘনকারী- যে প্রতিটি কাজে নৈতিকতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে নিজের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যাবলির জন্য যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকত। হারাম পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করত এবং হারাম পথেই তা ব্যয় করত। মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করত। তার হাত কোন প্রকার যুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকত না। কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই সে যথেষ্ট মনে করত না, বরং আরো অগ্রসর হয়ে সততা ও কল্যাণের পথের অনুসারীদেরকে উত্যক্ত করত এবং যারা কল্যাণের জন্য কাজ করত তাদের উপর নির্যাতন চালাত।
যেসব দলের নেতা ফাসিক :
﴿وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ﴾
(সেসব) সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। [সূরা শু‘আরা- ১৫১, ১৫২।]
যেসব দল বাতিলের অনুসরণ করে :
﴿ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَاَنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَّبِّهِمْؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ لِلنَّاسِ اَمْثَالَهُمْ﴾
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্বকে মেনে চলেছে। এভাবেই আল্লাহ মানুষকে তাদের সঠিক অবস্থা জানিয়ে দেন। [সূরা মুহাম্মাদ- ৩।]
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে শত্রুতায় পরিণত হবে :
﴿اَ لْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ﴾
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। [সূরা যুখরুফ- ৬৭।]
পরকালে কেবল সেসব বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যা নেকী ও আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যসব বন্ধুত্ব শত্রুতায় রূপান্তরিত হবে। আজ যারা গোমরাহী, যুলুম-অত্যাচার এবং গোনাহের কাজে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী, কাল কিয়ামতের দিন তারাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে এবং নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি মানুষ এ পৃথিবীতেই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে দেখতে সক্ষম হয় যে, কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া ধ্বংসাত্মক।
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে :
﴿وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান, ২৭- ২৯।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা পরকালে আক্ষেপ করবে :
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗقَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারাই (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপর পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (মতো) ব্যবধান থাকত! সুতরাং সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর! [সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৮।]
অসৎ নেতারা তাদের দলের সবাইকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
﴿يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ﴾
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! [সূরা হুদু ৯৮।]
এ আয়াত থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় কোন জাতি বা দলের নেতৃত্ব দেয় কিয়ামতের দিনও তারাই তাদের নেতা হবে। যদি তারা দুনিয়ায় সত্যের পথে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা কিয়ামতের দিনও তাদেরই পতাকাতলে সমবেত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। আর যদি তারা মিথ্যার দিকে আহবান জানিয়ে থাকে, তাহলে যারা এখানে তাদের পথে চলেছে তারা সেখানেও তাদেরই পেছনে থাকবে এবং তাদের নেতৃত্বে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাবে।
আর যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং তাদেরকে সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত করেছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে- এ যালিমরা তাদেরকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে এনেছে, তখন তারা নিজেদের বিপদের জন্য তাদেরকে দায়ী করবে। তারা এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, তাদের সামনে নেতারা চলবে আর তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে।
হাশরের ময়দানে অসৎ নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে বিতর্ক হবে
নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হবে :
﴿وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ نِ الْقَوْلَ﴾
তুমি যদি যালিমদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান করা হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩১।]
অনুসারী :
﴿يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। [সূরা সাবা- ৩১।]
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ﴾
তখন অহংকারীরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত রেখেছিলাম? বস্তুত তোমরাই ছিলে অপরাধী। [সূরা সাবা- ৩২।]
অনুসারী :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ ﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। অতঃপর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা লজ্জা ঢাকতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩৩।]
﴿قَالُوْاۤ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَاْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ﴾
দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরাই তো আমাদের কাছে ডানদিক থেকে আসতে। [সূরা সাফ্ফাত- ২৮।]
এখানে اَلْيَمِيْنِ (আল ইয়ামীন) কে যদি শক্তি অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে। আর যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে যে, যে পথে তোমরা আমাদেরকে চালাচ্ছ এটিই একমাত্র কল্যাণের পথ। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদেরকে নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করেছ তা-ই সত্য।
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالُوْا بَلْ لَّمْ تَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍۚ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِيْنَ – فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَاۗ اِنَّا لَذَآئِقُوْنَ ‐ فَاَغْوَيْنَاكُمْ اِنَّا كُنَّا غَاوِيْنَ ﴾
সবলরা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্বও ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। অতএব আমাদের উপর আমাদের প্রতিপালকের কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, আর আমরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট ছিলাম। [সূরা সাফ্ফাত, ২৯-৩২।]
অতএব নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি ভোগ করবে। তখন অনুসারীদের এ ওজর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওজরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহ লোকেরা নিজেরাই সরল ও সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।
অনুসারী :
﴿وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ﴾
যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? [সূরা মু’মিন- ৪৭।]
তারা এমন কোন আশা নিয়ে এ কথা বলবে না যে, তাদের ঐসব নেতা কিংবা শাসক বা পথপ্রদর্শক প্রকৃতই তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে বা তা কিছুটা লাঘব করিয়ে দেবে। তখন তাদের কাছে এ সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এখানে এসব লোক আমাদের কোন কাজে আসার মতো নয়। তারা তাদেরকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য বলবে, আপনি তো দুনিয়ায় অত্যন্ত ক্ষমতাবলে আমাদের উপর আপনার নেতৃত্ব চালাতেন; এখন এখানে যে বিপদ আমাদের উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন তো দেখি!
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ﴾
দাম্ভিকরা বলবে, আমরা তো সবাই জাহান্নামে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে ফেলেছেন। [সূরা মু’মিন- ৪৮।]
অনুসারী :
﴿وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ ﴾
সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর শাসিত্ম হতে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে কি? [সূরা ইবরাহীম- ২১।]
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ﴾
তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। [সূরা ইবরাহীম- ২১।]
অনুসারীরা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ اَقْدَامِنَا لِيَكُوْنَا مِنَ الْاَسْفَلِيْنَ﴾
কাফিররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা নিম্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম সাজদা- ২৯।]
﴿وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِيْلَا – رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا﴾
তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা এবং প্রধানদের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিশাপ দিন। [সূরা আহযাব- ৬৭, ৬৮।]
তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে :
﴿اِذْ تَبَرَّاَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَاَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْاَسْبَابُ﴾
(তখন কি করুণ অবস্থা হবে) যখন অনুসরণীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [সূরা বাক্বারা- ১৬৬।]
অনুসারীরা পরিতাপ করতে থাকবে
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا لَوْ اَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّاَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوْا مِنَّاؕ كَذٰلِكَ يُرِيْهِمُ اللهُ اَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْؕ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنَ النَّارِ﴾
অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের জন্য (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে তারা যেভাবে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও সেভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ তাদের সামনে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করবেন, কিন্তু (কোনক্রমেই) তারা জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। [সূরা বাক্বারা- ১৬৭।]
অনেক ধোঁকাবাজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি আছে, যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে সরিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা অন্ধের মতো ধোঁকাবাজ নেতাদের পেছনে কেন চলছ? নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তোমরা চিন্তা করছ না কেন যে, সত্যের বিপরীতে তোমরা কোন্ দিকে পরিচালিত হচ্ছ? যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কী বুঝিয়েছিল তা স্বচক্ষে দেখবে আর এ কথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করেছে, তখন তারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, তোমরাই তো আমাদেরকে বিপথগামী করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের কথাই মেনে নিতাম।
নেতারা তখন বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না, যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তোমাদের মতো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। তোমরাই তো আমাদের সেনাদল ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। তোমরা শ্লোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করত না। তোমরা আমাদের সৈন্য না হলে একজন মানুষের উপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারত না।
এখন এ কথা মেনে নিচ্ছ না কেন যে, আসলে রাসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করেছিলেন তোমরা নিজেরাই তার উপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে পার্থিব ভোগবিলাসের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা এমনসব পীরের সন্ধানে ছিলে, যারা তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিত। তোমরা এমনসব পন্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধান করছিলে, যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ‘আত এবং তোমাদের মনের মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে হালাল করে দিত। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারত। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল, যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা না হোক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট হতো। তোমাদের এমনসব শাসকের প্রয়োজন ছিল, যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র ও অবিশ্বস্ত এবং যাদের পৃষ্ঠপোশকতায় তোমরা সবরকমের অসৎকাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেন হয়েছিল। এখন তোমরা কেন এ কথা বলছ যে, তোমরা নিরপরাধ আর আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম।
জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছ কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকানোর জন্য সবধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। প্রকৃত ব্যাপারটি তো কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তোমরা রাত দিনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছিলে। তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিল, এটা ছিল বাস্তব ঘটনা।
পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা যেসব ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল, মুসলিমরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয়। আর ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ভুল ও মিথ্যা নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে। এসব আয়াত এমনসব লোকের জন্য সতর্কবাণী, যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালিমদের আনুগত্য করে। তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে কিয়ামতের দিন এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতমও নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। কাজেই ভেবে দেখো, তোমরা যাদের পেছনে দৌড়াচ্ছ অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছ তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদেরকেই কোথায় নিয়ে যাবে?
﴿اَ لْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ﴾
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। [সূরা যুখরুফ- ৬৭।]
পরকালে কেবল সেসব বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যা নেকী ও আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যসব বন্ধুত্ব শত্রুতায় রূপান্তরিত হবে। আজ যারা গোমরাহী, যুলুম-অত্যাচার এবং গোনাহের কাজে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী, কাল কিয়ামতের দিন তারাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে এবং নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি মানুষ এ পৃথিবীতেই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে দেখতে সক্ষম হয় যে, কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া ধ্বংসাত্মক।
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে :
﴿وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান, ২৭- ২৯।]
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা পরকালে আক্ষেপ করবে :
﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗقَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ﴾
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারাই (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপর পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (মতো) ব্যবধান থাকত! সুতরাং সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর! [সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৮।]
অসৎ নেতারা তাদের দলের সবাইকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
﴿يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ﴾
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! [সূরা হুদু ৯৮।]
এ আয়াত থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় কোন জাতি বা দলের নেতৃত্ব দেয় কিয়ামতের দিনও তারাই তাদের নেতা হবে। যদি তারা দুনিয়ায় সত্যের পথে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা কিয়ামতের দিনও তাদেরই পতাকাতলে সমবেত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। আর যদি তারা মিথ্যার দিকে আহবান জানিয়ে থাকে, তাহলে যারা এখানে তাদের পথে চলেছে তারা সেখানেও তাদেরই পেছনে থাকবে এবং তাদের নেতৃত্বে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাবে।
আর যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং তাদেরকে সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত করেছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে- এ যালিমরা তাদেরকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে এনেছে, তখন তারা নিজেদের বিপদের জন্য তাদেরকে দায়ী করবে। তারা এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, তাদের সামনে নেতারা চলবে আর তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে।
হাশরের ময়দানে অসৎ নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে বিতর্ক হবে
নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হবে :
﴿وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ نِ الْقَوْلَ﴾
তুমি যদি যালিমদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান করা হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩১।]
অনুসারী :
﴿يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। [সূরা সাবা- ৩১।]
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ﴾
তখন অহংকারীরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত রেখেছিলাম? বস্তুত তোমরাই ছিলে অপরাধী। [সূরা সাবা- ৩২।]
অনুসারী :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ ﴾
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। অতঃপর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা লজ্জা ঢাকতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩৩।]
﴿قَالُوْاۤ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَاْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ﴾
দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরাই তো আমাদের কাছে ডানদিক থেকে আসতে। [সূরা সাফ্ফাত- ২৮।]
এখানে اَلْيَمِيْنِ (আল ইয়ামীন) কে যদি শক্তি অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে। আর যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে যে, যে পথে তোমরা আমাদেরকে চালাচ্ছ এটিই একমাত্র কল্যাণের পথ। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদেরকে নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করেছ তা-ই সত্য।
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالُوْا بَلْ لَّمْ تَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍۚ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِيْنَ – فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَاۗ اِنَّا لَذَآئِقُوْنَ ‐ فَاَغْوَيْنَاكُمْ اِنَّا كُنَّا غَاوِيْنَ ﴾
সবলরা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্বও ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। অতএব আমাদের উপর আমাদের প্রতিপালকের কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, আর আমরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট ছিলাম। [সূরা সাফ্ফাত, ২৯-৩২।]
অতএব নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি ভোগ করবে। তখন অনুসারীদের এ ওজর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওজরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহ লোকেরা নিজেরাই সরল ও সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।
অনুসারী :
﴿وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ﴾
যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? [সূরা মু’মিন- ৪৭।]
তারা এমন কোন আশা নিয়ে এ কথা বলবে না যে, তাদের ঐসব নেতা কিংবা শাসক বা পথপ্রদর্শক প্রকৃতই তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে বা তা কিছুটা লাঘব করিয়ে দেবে। তখন তাদের কাছে এ সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এখানে এসব লোক আমাদের কোন কাজে আসার মতো নয়। তারা তাদেরকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য বলবে, আপনি তো দুনিয়ায় অত্যন্ত ক্ষমতাবলে আমাদের উপর আপনার নেতৃত্ব চালাতেন; এখন এখানে যে বিপদ আমাদের উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন তো দেখি!
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ﴾
দাম্ভিকরা বলবে, আমরা তো সবাই জাহান্নামে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে ফেলেছেন। [সূরা মু’মিন- ৪৮।]
অনুসারী :
﴿وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ ﴾
সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর শাসিত্ম হতে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে কি? [সূরা ইবরাহীম- ২১।]
নেতৃবৃন্দ :
﴿قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ﴾
তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। [সূরা ইবরাহীম- ২১।]
অনুসারীরা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে :
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ اَقْدَامِنَا لِيَكُوْنَا مِنَ الْاَسْفَلِيْنَ﴾
কাফিররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা নিম্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম সাজদা- ২৯।]
﴿وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِيْلَا – رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا﴾
তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা এবং প্রধানদের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিশাপ দিন। [সূরা আহযাব- ৬৭, ৬৮।]
তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে :
﴿اِذْ تَبَرَّاَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَاَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْاَسْبَابُ﴾
(তখন কি করুণ অবস্থা হবে) যখন অনুসরণীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [সূরা বাক্বারা- ১৬৬।]
অনুসারীরা পরিতাপ করতে থাকবে
﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا لَوْ اَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّاَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوْا مِنَّاؕ كَذٰلِكَ يُرِيْهِمُ اللهُ اَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْؕ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنَ النَّارِ﴾
অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের জন্য (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে তারা যেভাবে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও সেভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ তাদের সামনে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করবেন, কিন্তু (কোনক্রমেই) তারা জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। [সূরা বাক্বারা- ১৬৭।]
অনেক ধোঁকাবাজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি আছে, যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে সরিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা অন্ধের মতো ধোঁকাবাজ নেতাদের পেছনে কেন চলছ? নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তোমরা চিন্তা করছ না কেন যে, সত্যের বিপরীতে তোমরা কোন্ দিকে পরিচালিত হচ্ছ? যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কী বুঝিয়েছিল তা স্বচক্ষে দেখবে আর এ কথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করেছে, তখন তারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, তোমরাই তো আমাদেরকে বিপথগামী করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের কথাই মেনে নিতাম।
নেতারা তখন বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না, যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তোমাদের মতো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। তোমরাই তো আমাদের সেনাদল ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। তোমরা শ্লোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করত না। তোমরা আমাদের সৈন্য না হলে একজন মানুষের উপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারত না।
এখন এ কথা মেনে নিচ্ছ না কেন যে, আসলে রাসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করেছিলেন তোমরা নিজেরাই তার উপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে পার্থিব ভোগবিলাসের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা এমনসব পীরের সন্ধানে ছিলে, যারা তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিত। তোমরা এমনসব পন্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধান করছিলে, যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ‘আত এবং তোমাদের মনের মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে হালাল করে দিত। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারত। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল, যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা না হোক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট হতো। তোমাদের এমনসব শাসকের প্রয়োজন ছিল, যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র ও অবিশ্বস্ত এবং যাদের পৃষ্ঠপোশকতায় তোমরা সবরকমের অসৎকাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেন হয়েছিল। এখন তোমরা কেন এ কথা বলছ যে, তোমরা নিরপরাধ আর আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম।
জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছ কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকানোর জন্য সবধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। প্রকৃত ব্যাপারটি তো কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তোমরা রাত দিনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছিলে। তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিল, এটা ছিল বাস্তব ঘটনা।
পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা যেসব ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল, মুসলিমরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয়। আর ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ভুল ও মিথ্যা নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে। এসব আয়াত এমনসব লোকের জন্য সতর্কবাণী, যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালিমদের আনুগত্য করে। তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে কিয়ামতের দিন এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতমও নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। কাজেই ভেবে দেখো, তোমরা যাদের পেছনে দৌড়াচ্ছ অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছ তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদেরকেই কোথায় নিয়ে যাবে?
যারা বন্ধুত্ব রাখে তারা যালিম :
﴿وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ اِنَّكَ اِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ﴾
জ্ঞান (কুরআন) আসার পরও আপনি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। [সূরা বাকারা- ১৪৫।]
সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি তাদের ভয়ে অন্তরে কোন বিশ্বাস না রেখে তাদের দ্বীনের অনুসরণ করতেন বাহ্যিকভাবে তাহলেও তিনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হতেন।
তাদের আমল বরবাদ হয়ে যাবে :
﴿وَلَا يَزَالُوْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ حَتّٰى يَرُدُّوْكُمْ عَنْ دِيْنِكُمْ وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। [সূরা বাক্বারা- ২১৭।]
আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না :
﴿لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ شَيْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقَاةً ﴾
মুমিনরা যেন মুমিনদের ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। [সূরা আলে ইমরান- ২৮।]
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯।]
তারা হেদায়াত পাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা, তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। (এরপরও) তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা মায়েদা- ৫১।]
দুনিয়ার স্বার্থে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে কেবল ঈমানদারদের সাথে বন্ধুত্ব করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি এভাবেও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যারা এরূপ করবে তাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। কেননা কাফিররা ইসলামের দুশমন। তারা সর্বদা ইসলাম এবং মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করার জন্য তৎপর থাকে। এখন যদি কোন মুমিন তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে তারা আরো বেশি ইসলামের ক্ষতি করার সুযোগ পাবে। এমনকি যদি কোন নামধারি মুসলিম কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে মুসলিমদের মধ্যে কুফরী কাজকর্ম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে তবে এটা পুরো মুসলিম সমাজের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে এরই বাস্তবতা লক্ষ্য করা যায়। নামধারি অনেক মুসলিম নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়; অথচ তারা কাফির-মুশরিকদের মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য রাত-দিন কাজ করছে। তাই তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে কাফিরদের আদর্শকেই মানুষ উত্তম বলে মনে করতে থাকবে। আর কাফিররাও এটাই চায় যে, মুসলিমরা নামে মুসলিম থাকলেও আদর্শগত দিক দিয়ে আমাদের অনুসারী হয়ে যাক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯।]
আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কাফিরদের আনুগত্য করলে নিঃসন্দেহে তারা কুফরীতে ফিরিয়ে নেবে। কারণ তারা কুফরী ব্যতীত অন্য কোন কিছুতে সন্তুষ্ট নয়। তারা সর্বদা মুমিনদের কাছ থেকে কুফরীকেই কামনা করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আরো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
ওহুদের যুদ্ধে মুসলিমদের বাহ্যিক পরাজয় ঘটলে মুনাফিকরা ভাবল ইয়াহুদিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা দরকার। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আশ্রয় মিলবে। অতঃপর ইয়াহুদিরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের পক্ষ অবলম্বন করল এবং বলল, আমি ভয় করি; কেননা অভাব অনটনের সময় তাদের ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে বন্ধুত্ব বা কোন সম্পর্ক রাখাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মুমিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো, যারা ঈমান আনে তাদের মধ্যে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে বিরুদ্ধাচরনকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করবে; সে পিতামাতা, ভাই, স্ত্রী-সন্তান, গোত্র-গোষ্ঠী যে-ই হোক না কেন।
বাধ্য হয়ে কুফরী সমাজে থাকলেও অন্তরে ঈমান অটুট রাখতে হবে :
﴿مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّ ۢبِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللهِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ﴾
যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করল এবং তার হৃদয়কে কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রাখল, তাঁর উপর আল্লাহর রাগ পতিত হবে; আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানের উপর অবিচল। এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়; নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [সূরা নাহল- ১০৬।]
যদি কোন মুমিন ইসলামের কোন শত্রুদলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ থেকে চরম যুলুম-নির্যাতন, ভয়-ভীতি এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান গোপন রেখে কাফিরদের সাথে অবস্থান করতে পারবে। এমনকি চরম অবস্থায় কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, তার অন্তর ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের ভয় যেন তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে না ফেলে, যার ফলে আল্লাহর ভয় মন থেকে ওঠে যায়। মানুষ বড়জোর তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ তাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের স্বার্থ ও জান-মালের হেফাজত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে লক্ষণীয় যে, ঐ কুফরী কথা বা কাজ যেন অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাণনাশের কারণ না হয়।
তবে এর অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি একটি ‘রুখসাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরণের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। অন্যথায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয় হচ্ছে, মানুষের এ রক্ত-মাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। নবী ﷺ এর যুগে এ উভয় ধরণের ঘটনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। একদিকে আছেন খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ)। তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর অটল থাকেন। আরো আছেন বিলাল (রাঃ)। তাঁকে লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুর প্রান্তরে শোইয়ে তার উপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিনি ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) শব্দ উচ্চারণ করে নিজের ঈমানের উপর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানাতে থাকেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫০।]
অন্যদিকে আছেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। তাঁকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি কাফিরদের চাহিদামতো সবকিছু বলে দিলেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভালো না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছাড়েনি। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের অবস্থা কী? তিনি জবাব দিলেন, مُطْمَئِنًّا بِالْاِيْمَانِ তথা ঈমানের উপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত। এ কথায় নবী ﷺ বললেন, যদি তারা আবারো এ ধরণের যুলুম করে, তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৩৫০।]
﴿وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ اِنَّكَ اِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ﴾
জ্ঞান (কুরআন) আসার পরও আপনি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। [সূরা বাকারা- ১৪৫।]
সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি তাদের ভয়ে অন্তরে কোন বিশ্বাস না রেখে তাদের দ্বীনের অনুসরণ করতেন বাহ্যিকভাবে তাহলেও তিনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হতেন।
তাদের আমল বরবাদ হয়ে যাবে :
﴿وَلَا يَزَالُوْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ حَتّٰى يَرُدُّوْكُمْ عَنْ دِيْنِكُمْ وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। [সূরা বাক্বারা- ২১৭।]
আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না :
﴿لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ شَيْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقَاةً ﴾
মুমিনরা যেন মুমিনদের ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। [সূরা আলে ইমরান- ২৮।]
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯।]
তারা হেদায়াত পাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা, তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। (এরপরও) তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা মায়েদা- ৫১।]
দুনিয়ার স্বার্থে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে কেবল ঈমানদারদের সাথে বন্ধুত্ব করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি এভাবেও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যারা এরূপ করবে তাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। কেননা কাফিররা ইসলামের দুশমন। তারা সর্বদা ইসলাম এবং মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করার জন্য তৎপর থাকে। এখন যদি কোন মুমিন তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে তারা আরো বেশি ইসলামের ক্ষতি করার সুযোগ পাবে। এমনকি যদি কোন নামধারি মুসলিম কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে মুসলিমদের মধ্যে কুফরী কাজকর্ম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে তবে এটা পুরো মুসলিম সমাজের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে এরই বাস্তবতা লক্ষ্য করা যায়। নামধারি অনেক মুসলিম নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়; অথচ তারা কাফির-মুশরিকদের মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য রাত-দিন কাজ করছে। তাই তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে কাফিরদের আদর্শকেই মানুষ উত্তম বলে মনে করতে থাকবে। আর কাফিররাও এটাই চায় যে, মুসলিমরা নামে মুসলিম থাকলেও আদর্শগত দিক দিয়ে আমাদের অনুসারী হয়ে যাক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আলে ইমরান- ১৪৯।]
আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কাফিরদের আনুগত্য করলে নিঃসন্দেহে তারা কুফরীতে ফিরিয়ে নেবে। কারণ তারা কুফরী ব্যতীত অন্য কোন কিছুতে সন্তুষ্ট নয়। তারা সর্বদা মুমিনদের কাছ থেকে কুফরীকেই কামনা করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আরো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
ওহুদের যুদ্ধে মুসলিমদের বাহ্যিক পরাজয় ঘটলে মুনাফিকরা ভাবল ইয়াহুদিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা দরকার। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আশ্রয় মিলবে। অতঃপর ইয়াহুদিরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের পক্ষ অবলম্বন করল এবং বলল, আমি ভয় করি; কেননা অভাব অনটনের সময় তাদের ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে বন্ধুত্ব বা কোন সম্পর্ক রাখাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়। [সূরা মুজাদালা- ২২।]
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মুমিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো, যারা ঈমান আনে তাদের মধ্যে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে বিরুদ্ধাচরনকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করবে; সে পিতামাতা, ভাই, স্ত্রী-সন্তান, গোত্র-গোষ্ঠী যে-ই হোক না কেন।
বাধ্য হয়ে কুফরী সমাজে থাকলেও অন্তরে ঈমান অটুট রাখতে হবে :
﴿مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّ ۢبِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللهِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ﴾
যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করল এবং তার হৃদয়কে কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রাখল, তাঁর উপর আল্লাহর রাগ পতিত হবে; আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানের উপর অবিচল। এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়; নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [সূরা নাহল- ১০৬।]
যদি কোন মুমিন ইসলামের কোন শত্রুদলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ থেকে চরম যুলুম-নির্যাতন, ভয়-ভীতি এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান গোপন রেখে কাফিরদের সাথে অবস্থান করতে পারবে। এমনকি চরম অবস্থায় কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, তার অন্তর ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের ভয় যেন তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে না ফেলে, যার ফলে আল্লাহর ভয় মন থেকে ওঠে যায়। মানুষ বড়জোর তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ তাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের স্বার্থ ও জান-মালের হেফাজত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে লক্ষণীয় যে, ঐ কুফরী কথা বা কাজ যেন অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাণনাশের কারণ না হয়।
তবে এর অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি একটি ‘রুখসাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরণের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। অন্যথায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয় হচ্ছে, মানুষের এ রক্ত-মাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। নবী ﷺ এর যুগে এ উভয় ধরণের ঘটনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। একদিকে আছেন খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ)। তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর অটল থাকেন। আরো আছেন বিলাল (রাঃ)। তাঁকে লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুর প্রান্তরে শোইয়ে তার উপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিনি ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) শব্দ উচ্চারণ করে নিজের ঈমানের উপর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানাতে থাকেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫০।]
অন্যদিকে আছেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। তাঁকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি কাফিরদের চাহিদামতো সবকিছু বলে দিলেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভালো না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছাড়েনি। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের অবস্থা কী? তিনি জবাব দিলেন, مُطْمَئِنًّا بِالْاِيْمَانِ তথা ঈমানের উপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত। এ কথায় নবী ﷺ বললেন, যদি তারা আবারো এ ধরণের যুলুম করে, তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৩৫০।]
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না সে যদি সালাতকে অস্বীকারপূর্বক এমনটি করে থাকে তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর সালাত ফরয হওয়াকে স্বীকৃতি দানের পর যদি কেউ সালাত আদায় না করে তাহলেও সে আমলগতভাবে কুফরী কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। [সূরা তাওবা- ৫।]
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। [সূরা তাওবা- ১১।]
সূরা তাওবার এ দুটি আয়াতে মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যদি তারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে এটা জানা যাচ্ছে যে, যদি কেউ সালাত কায়েম না করে এবং যাকাত আদায় না করে তাহলে সে মুমিনদের দ্বীনি ভাই অর্থাৎ বন্ধু হতে পারে না।
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না অনেক হাদীসে তাকে কাফির সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْاَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ সালাত ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী হিসেবে মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে সালাতে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান হা/১৪৬৩।]
عَنْ اُمِّ اَيْمَنَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا تَتْرُكْ الصَّلَاةَ مُتَعَمِّدًا فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَرَسُولِهٖ
উম্মে আইমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তুমি সালাত ত্যাগ করো না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা উঠে যায়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৩৬৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ اَلصَّلَاةُ . فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও কাফিরদের মধ্যে যে পার্থক্যকারী জিনিস রয়েছে তা হলো সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; সুনানে বায়হাকী আল কুবরা, হা/৬২৯১।]
এ হাদীসটিতে নবী ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কাফির এবং মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী জিনিস হচ্ছে সালাত। আবু হাতীম (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কেননা সালাত ত্যাগ করা কুফরীর প্রথম ধাপ। যখন ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে এবং সালাত ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় তখন সে অন্যান্য ফরয ইবাদাতও ত্যাগ করে। আর যখন সে সালাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্যত সে সালাত অস্বীকারকারী হয়ে যায়। এজন্য নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর শেষ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেই তার উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩।]
সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَهَامَانَ وَفِرْعَوْنَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের ওসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে না অর্থাৎ সালাত আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে। আর কিয়ামতের দিন সে কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে এটা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ হোক অথবা নারী হোক যারা সালাত আদায় করে না তারা তওবা করে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কোন মুমিন বন্ধুত্ব করতে পারে না।
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। [সূরা তাওবা- ৫।]
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। [সূরা তাওবা- ১১।]
সূরা তাওবার এ দুটি আয়াতে মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যদি তারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে এটা জানা যাচ্ছে যে, যদি কেউ সালাত কায়েম না করে এবং যাকাত আদায় না করে তাহলে সে মুমিনদের দ্বীনি ভাই অর্থাৎ বন্ধু হতে পারে না।
যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না অনেক হাদীসে তাকে কাফির সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْاَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ সালাত ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী হিসেবে মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে সালাতে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান হা/১৪৬৩।]
عَنْ اُمِّ اَيْمَنَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا تَتْرُكْ الصَّلَاةَ مُتَعَمِّدًا فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَرَسُولِهٖ
উম্মে আইমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তুমি সালাত ত্যাগ করো না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা উঠে যায়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৩৬৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ اَلصَّلَاةُ . فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও কাফিরদের মধ্যে যে পার্থক্যকারী জিনিস রয়েছে তা হলো সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; সুনানে বায়হাকী আল কুবরা, হা/৬২৯১।]
এ হাদীসটিতে নবী ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কাফির এবং মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী জিনিস হচ্ছে সালাত। আবু হাতীম (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কেননা সালাত ত্যাগ করা কুফরীর প্রথম ধাপ। যখন ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে এবং সালাত ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় তখন সে অন্যান্য ফরয ইবাদাতও ত্যাগ করে। আর যখন সে সালাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্যত সে সালাত অস্বীকারকারী হয়ে যায়। এজন্য নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর শেষ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেই তার উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩।]
সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَهَامَانَ وَفِرْعَوْنَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের ওসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করবে না অর্থাৎ সালাত আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে। আর কিয়ামতের দিন সে কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, সালাত ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে এটা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ হোক অথবা নারী হোক যারা সালাত আদায় করে না তারা তওবা করে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কোন মুমিন বন্ধুত্ব করতে পারে না।
কাফির-মুশরিকরা বা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীরা ইসলামের দুশমন। বিধায় তাদের সাথে মুসলিমদের আন্তরিক বন্ধুত্ব থাকতে পারে না; বরং তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। কীভাবে কাফির-মুশরিকদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اَتُرِيْدُوْنَ اَنْ تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِيْنًا﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোন প্রমাণ দিতে চাও? [সূরা নিসা- ১৪৪।]
কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা যাবে না :
﴿وَلَوْ كَانُوْا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالنَّبِيِّ وَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوْهُمْ اَوْلِيَآءَ وَلٰكِنَّ كَثِيْرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের উপর অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। [সূরা মায়েদা- ৮১।]
কাফিরদের উপর নির্ভর করা যাবে না :
কোন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিংবা নিরাপত্তার খাতিরে কাফিরদের উপর নির্ভর করা কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার পরিচয় বহন করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
†n Cgvb`viMY! †Zvgiv Bqvûw` I wLª÷vb‡`i‡K eÜy wn‡m‡e MÖnY K‡iv bv| †Kbbv, Zviv wb‡RivB G‡K Ac‡ii eÜz| (GiciI) †Zvgv‡`i ga¨ †_‡K hviv Zv‡`i‡K eÜz wn‡m‡e MÖnY Ki‡e, †m Zv‡`iB GKRb e‡j MY¨ n‡e| wbðq Avjvn hvwjg‡`i‡K mrc‡_ cwiPvwjZ K‡ib bv| [সূরা মায়েদা- ৫১।]
কুফরীর কোন বিষয়ে একমত পোষণ করা যাবে না :
কুফুরীর কোন বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য মেনে নেয়া। তাদের বিশ্বাসহীনতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُؕ وَمَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ نَصِيْرًا﴾
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল; তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের পথ থেকে উত্তম। এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন; আর আল্লাহ যাকে লানত করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। [সূরা নিসা- ৫১, ৫২।]
মুসলিম উম্মাহর মধ্য হতে যারাই কাফিরদের সঙ্গে যোগ দেবে এবং তাদের অপকর্মের সঙ্গী হবে তারাই মুনাফিকীর কারণে নিজের জন্য ডেকে আনবে আযাব। আজ এই উম্মাহর কেউ কমিউনিজম, কেউ সোশালিজম, কেউ সেক্যুলার হয়ে কুফরের মূলনীতিগুলো মুসলমানদের আবাসভূমিতে বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়েছে এবং এ লক্ষ্যে জনগণকে এ সমস্ত শয়তানী বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এভাবে তারা মুসলিম জাতিকে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসারী বানাচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَنْ تَرْضٰى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلَا النَّصَارٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ﴾
ইয়াহুদি এবং খ্রিস্টানরা কখনোই আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। [সূরা বাক্বারা- ১২০।]
কাফিরদের সান্নিধ্যের অন্বেষণ করা যাবে না :
কাফিরদের ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করার অর্থ হলো তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কযুক্ত করা। আল্লাহ তা‘আলা এ রকম কাজ নিষেধ করে ইরশাদ করেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ اَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ اِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ﴾
হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। [সূরা মুমতাহিনা- ১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের জয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ।]
কাফিরদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের সাথে কেউ একাত্মতা প্রকাশ করলে সন্দেহাতীতভাবে সে কাফিরদের মিত্রে পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ﴾
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। [সূরা হুদ- ১১৩।]
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, কোনকিছুর প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অর্থ হলো তার উপর নির্ভর করা এবং সমর্থনের জন্য তার দারস্থ হওয়া এবং এভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যা তোমাকে তুষ্টি দেয়। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, কোন মুসলিমের পক্ষেই কাফিরদেরকে পছন্দ করা কিংবা তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা সঙ্গত নয়। একজন কাফিরের বন্ধু কাফির এবং একজন মুরতাদ বা অবাধ্যের বন্ধু আরেকজন অবাধ্য। আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
﴿ وَلَوْلَاۤ اَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ اِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيْلًا اِذًا لَّاَذَقْنَاكَ ضِعْفَ الْحَيَاةِ وَضِعْفَ الْمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيْرًا﴾
আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। আর তা হলে অবশ্যই আমি তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ এবং পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম। তখন তুমি আমার বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পেতে না। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৩, ৭৪।]
আমাদের এটি মনে রাখতে হবে যে, এভাবে সৃষ্টির সেরা নবী ﷺ কে যে রকম ধমকের সুরে আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সম্বোধন করেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কি রকম হতে পারে।
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করা যাবে না :
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَدُّوْا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ﴾
তারা ইচ্ছা পোষণ করে যে, আপনি তাদের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় (ধর্মীয় বিষয়ে সৌজন্যতা সহকারে) আসেন। সুতরাং তারা আপনার সঙ্গে সমঝোতা করবে। [সূরা ক্বালাম- ৯।]
কাফিরদেরকে অন্তরঙ্গ ভাবা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ ‐ هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। [সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯।]
এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মুসলিমদের সেই দল সম্পর্কে যারা মুনাফিক এবং ইয়াহুদিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখত। কেননা সে সময়ে তারা (মুনাফিক ও ইয়াহুদি) তাদের (মুসলিমদের) প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করে মুসলিমদের কাফির-মুনাফিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করলেন।
কাফিরদের অনুগত হওয়া যাবে না :
কাফিরদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার আনুগত্য তাদের সঙ্গে মৈত্রীর আরেকটি নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا﴾
তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে অমনোযোগী করে দিয়েছি। অতঃপর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে। [সূরা কাহফ- ২৮।]
﴿وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
এ আয়াত সম্পর্কে ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যেহেতু তোমরা আল্লাহর বিধান ও শরিয়াতকে বাদ দিয়ে অন্যের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছ সেহেতু তোমরা আল্লাহর উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছ। আর এটাই হচ্ছে শিরক। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ‘‘তারা (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা) তাদের আলেম ও সন্নাসীদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আনআমের ১২১ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
কুরআন তাচ্ছিল্যকারীদের সঙ্গে একত্রে বসা যাবে না :
কাফির-মুশরিকরা যখন কুরআনকে নিয়ে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে উপহাস করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তখন তাদের সঙ্গে বসা মানে তাদেরকে সমর্থন করা। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا﴾
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, এর অর্থ হলো এই যে, যদি আপনি তাদের এ কাজ করতে দেখেন এবং এ সম্পর্কে কিছুই না বলেন, তখন এটি সুস্পষ্ট হয় যে, আপনার আনুগত্য তাদের জন্য যা আপনাকে তাদের মতো করে দেয়। তিনি আরো বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পরিষ্কারভাবে কাফিরদের ধর্মদ্রোহীমূলক যাবতীয় কর্মকান্ডে বসার বা প্রত্যক্ষ করে আনন্দ লাভ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। [তাফসীরে তাবারী।]
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদান করা যাবে না :
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে কাফিরদের সাথে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয়। কেননা কর্তৃত্বশীল কাফিরদের প্রতি আনুগত্যের কারণে তাদের কুফরী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা মুসলিমদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার অর্থ হলো তাদের পদমর্যাদার প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা, যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে কোনক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَنْ يَّجْعَلَ اللهُ لِلْكَافِرِيْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ سَبِيْلًا﴾
আর কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না। [সূরা নিসা- ১৪১।]
কাফিরদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের কার্যক্রমের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তাদের পোষাকের অনুসরণ কিংবা তাদের ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের স্টাইল পরিবর্তন করা- এই জিনিসগুলো তাদের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিকে পরিষ্কার করে।
কাফিরদেরকে কাছে টানা যাবে না :
কাফিরদের সাহচর্যে আনন্দ অনুভব করা, তাদের কাছে নিজেদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি ব্যক্ত করা, তাদেরকে কাছে টানা এবং তাদেরকে সম্মান করা তাদের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনেরই পরিচয় বহন করে।
কাফিরদের ভ্রষ্টতার কাজে সহযোগিতা করা যাবে না :
তাদের ভ্রষ্টতার কাজে সাহায্য করা কিংবা সাহায্য যুগিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করার অর্থ হলো নিজেকে তাদের মিত্রে পরিণত করা। কুরআন দুটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। একটি হলো, লূত (আঃ) এর স্ত্রী সংক্রান্ত এবং অপরটি নূহ (আঃ) এর স্ত্রী সম্পর্কিত। লূত (আঃ) এর স্ত্রী তার শহরের লোকদেরকে লূত (আঃ) এর বিরুদ্ধে সমর্থন যুগিয়েছিল এবং লূত (আঃ) এর লোকদের দুর্দশায় উৎফুল্ল হয়েছিল। এমনকি লূত (আঃ) এর অতিথিদের সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করেছিল। অনুরূপ ঘটনা নূহ (আঃ) এর স্ত্রীর ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ﴾
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন, কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত (উভয়ের কেউই) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। অতঃপর তাদেরকে (সে স্ত্রীদেরকে) বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। [সূরা তাহরীম- ১০।]
কাফিরদেরকে সম্মান করা যাবে না :
কাফিরদেরকে বেশি বেশি সম্মানিত করা এবং নির্বোধের মতো বিশাল বিশাল টাইটেলে ভূষিত করা তাদের প্রতি মিত্রতা প্রদর্শনেরই নামান্তর। কিছু লোক তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রকাশের ভঙ্গি হিসেবে তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় তাদের সিনায় হাত রাখে। কেউবা আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ তাদের মাথা নামিয়ে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا﴾
যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে আউলিয়া (রক্ষাকারী, সাহায্যকারী বা বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান-মর্যাদা অন্বেষণ করে? নিঃসন্দেহে সকল সম্মান তো আল্লাহরই। [সূরা নিসা- ১৩৯।]
প্রকৃতপক্ষে এ কাফিররা মুসলিমদের থেকে যা প্রাপ্য তা হলো ভয়াবহ সমালোচনা এবং তাচ্ছিল্য। নবী ﷺ আমাদেরকে তাদের সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নিতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَبْدَءُوا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارٰى بِالسَّلَامِ فَاِذَا لَقِيْتُمْ اَحَدَهُمْ فِىْ طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوْهُ اِلٰى اَضْيَقِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না এবং যখন তোমরা তাদের সঙ্গে রাস্তায় সাক্ষাৎ কর তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ পাশ দিয়ে যেতে বাধ্য করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮৯; তিরমিযী, হা/২৭০০।]
কাফিরদের সঙ্গে বসবাস করা যাবে না :
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهٗ فَاِنَّهٗ مِثْلُهٗ
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে-ই কাফিরদের সাথে যোগ দেয় এবং তাদের মাঝে বসবাস করে সে তাদেরই একজন। [আবু দাউদ, হা/২৭৮৯।]
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا تُسَاكِنُوْا الْمُشْرِكِيْنَ وَلَا تَجَامِعُوْهُمْ فَمَنْ سَاكِنُهُمْ اَوْ جَامَعَهُمْ فَلَيْسَ مِنَّا
সামুর ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কাফিরদের সাথে বসবাস করো না এবং তাদের সাথে যোগ দিও না। যে-ই তাদের সঙ্গে বসবাস করে কিংবা তাদের মাঝে বাস করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [সুনানে বায়হাকী কুবরা, হা/১৮২০১; তিরমিযী, হা/১৬০৫।]
কাফিরদের সাথে জোগসাজস করা যাবে না :
কাফিরদের সঙ্গে জোগসাজস করা, তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা, তাদের পক্ষ হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা, তাদেরকে মুসলিমদের তথ্য দেয়া, কিংবা মুসলিমদেরকে গ্রেফতার করে তাদের হাতে তুলে দেয়া অথবা তাদের কোন পদে অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করা এগুলো সবই তাদের মিত্রদের কাজ। বর্তমান মুসলিম বিশ্ব সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে সকল রোগে আক্রান্ত এটি সেগুলোর অন্যতম। এটি পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করেছে এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ মুসলিম সমাজের সকল স্তরকে কলুষিত করেছে। এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিয়েই মিশরে ইংরেজ দখলদারির শেষে শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহ.) বলেছিলেন, ‘‘সাদা ইংরেজরা চলে গেছে কিন্তু বাদামী ইংরেজরা এখনো আমাদের সঙ্গে বিদ্যমান।’’
কাফিরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ না করা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের একজন হিসেবে গণ্য হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩৩।]
তাদের শাসন কর্তৃত্ব মেনে নেয়া যাবে না :
﴿وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا﴾
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না এবং (তাদের পক্ষ হতে আগত) নির্যাতনকে উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। [সূরা আহযাব- ৪৮।]
তাদের নিকট থেকে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে না :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ওয়াবারা প্রান্তরে পৌঁছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে পূর্ব থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে তুমি ফিরে যাও, فَلَنْ اَسْتَعِيْنَ بِمُشْرِكٍ ‘‘আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না’’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন লোকটি চলে গেল। অতঃপর যখন আমরা ‘শাজারায়’ উপনীত হলাম, তখন সে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করল এবং তার পূর্বের কথাই পুনরায় বলল, নবীও তাঁর পূর্বের কথা পুনরায় বললেন এবং আরো বললেন, তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। ফলে এবারও সে চলে গেল। তারপর সে আবার ‘বায়দা’ নামক স্থানে নবী ﷺ সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে প্রথমবারের মতো জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, জ্বী-হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, এখন (আমাদের সাথে) চলো। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৫৮।]
মুসলিমরা তাদের নারীদেরকে বিয়ে করতে পারবে না :
﴿وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّؕ وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ﴾
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
বিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে নিছক একটি যৌন সম্পর্ক নয়; বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যাণ-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মুমিন স্বামী বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধররাও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরণের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম, কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবনধারা লালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করে না। কোন খাঁটি মুমিন কেবল নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কুফর ও শিরক লালন করতে পারে না।
মুসলিম নারীদেরকে তাদের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না :
﴿وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْاؕ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ﴾
আর তোমরা (মুমিন নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
মুসলিমরা তাদের এবং তারাও মুসলিমদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না :
عَنْ اُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلَا الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজন মুসলিম একজন কাফিরের উত্তরাধিকারী হয় না এবং একজন কাফির একজন মুসলিমের উত্তরাধিকারী হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২৫; তিরমিযী, হা/২১০৭।]
মুসলিমরা মুশরিকদের যবাই করা গোশত খেতে পারে না :
﴿وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
তারা মারা গেলে তাদের জানাযা পড়া যাবে না :
﴿وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। [সূরা তাওবা- ৮৪।]
মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে তার ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। নবী ﷺ অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তাটি দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ কেই জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। ফলে তিনি এজন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন নেতার জন্য এমন কোন কাজ করা বৈধ হবে না, যাতে শত্রুপক্ষের সাহস বেড়ে যায়।
মুশরিকরা মারা গেলে মুসলিমরা তাদের জন্য ক্ষমা চাইতে পারবে না :
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। [সূরা তাওবা- ১১৩।]
তাদের ঐসব মজলিশে যোগদান করা যাবে না যেখানে দ্বীন ইসলামের কোন বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয় :
﴿اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا﴾
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম জাতিকে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহের আলোকে জীবন গড়তে হবে। এটাই ইসলামের দাবি। কেউ যদি নামে মুসলিম হয় আর আকিদা-বিশ্বাস ও কাজকর্মের দিক দিয়ে কাফির-মুশরিকদের সমান হয় তবে এমন ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার কোন সার্থকতা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করি। সুতরাং আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে, আমরা কতটুকু আল্লাহর কথা মেনে চলেছি। এ দুনিয়া মুমিনের জন্য জান্নাত নয়। এটা হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। এখানের সুখ-দুঃখ আসল বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং আসল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে তার হুকুম-আহকাম পালন করছি কি না। আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যদি দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তবুও কোন ক্ষতি নেই। কেননা এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা পরকালে জান্নাত দেবেন। আর যদি কেউ এই পার্থিব জীবনের অল্প কয়েক দিনের সুখ ভোগ করতে যেয়ে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিজের ইসলামী আদর্শকে বাদ দিয়ে বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য আল্লাহর দুশমনদের সাথে হাত মিলিয়ে চলে তাহলে এমন ব্যক্তি যদিও দুনিয়াতে কয়েক দিনের সুখ ভোগ করবে; কিন্তু মৃত্যুর পরই সে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে। তখন আর আফসোস করে কোন কাজ হবে না।
যে তাগুত অস্বীকার না করলে ঈমানই সঠিক হয় না, সেই তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম রাখা আবার জান্নাতের আশা করা এটা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। আসুন! নবী-রাসূলগণ যে তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছিলেন আমরা সেই তাওহীদের ছায়াতলে সমবেত হই এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজে আত্মনিয়োগ করি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন। যাতে আমরা পরকালে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং জান্নাতের নিয়ামত লাভ করতে পারি। আমীন
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَ سَلِّمْ عَلٰى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اَتُرِيْدُوْنَ اَنْ تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِيْنًا﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোন প্রমাণ দিতে চাও? [সূরা নিসা- ১৪৪।]
কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা যাবে না :
﴿وَلَوْ كَانُوْا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالنَّبِيِّ وَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوْهُمْ اَوْلِيَآءَ وَلٰكِنَّ كَثِيْرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের উপর অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। [সূরা মায়েদা- ৮১।]
কাফিরদের উপর নির্ভর করা যাবে না :
কোন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিংবা নিরাপত্তার খাতিরে কাফিরদের উপর নির্ভর করা কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার পরিচয় বহন করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾
†n Cgvb`viMY! †Zvgiv Bqvûw` I wLª÷vb‡`i‡K eÜy wn‡m‡e MÖnY K‡iv bv| †Kbbv, Zviv wb‡RivB G‡K Ac‡ii eÜz| (GiciI) †Zvgv‡`i ga¨ †_‡K hviv Zv‡`i‡K eÜz wn‡m‡e MÖnY Ki‡e, †m Zv‡`iB GKRb e‡j MY¨ n‡e| wbðq Avjvn hvwjg‡`i‡K mrc‡_ cwiPvwjZ K‡ib bv| [সূরা মায়েদা- ৫১।]
কুফরীর কোন বিষয়ে একমত পোষণ করা যাবে না :
কুফুরীর কোন বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য মেনে নেয়া। তাদের বিশ্বাসহীনতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُؕ وَمَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ نَصِيْرًا﴾
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল; তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের পথ থেকে উত্তম। এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন; আর আল্লাহ যাকে লানত করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। [সূরা নিসা- ৫১, ৫২।]
মুসলিম উম্মাহর মধ্য হতে যারাই কাফিরদের সঙ্গে যোগ দেবে এবং তাদের অপকর্মের সঙ্গী হবে তারাই মুনাফিকীর কারণে নিজের জন্য ডেকে আনবে আযাব। আজ এই উম্মাহর কেউ কমিউনিজম, কেউ সোশালিজম, কেউ সেক্যুলার হয়ে কুফরের মূলনীতিগুলো মুসলমানদের আবাসভূমিতে বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়েছে এবং এ লক্ষ্যে জনগণকে এ সমস্ত শয়তানী বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এভাবে তারা মুসলিম জাতিকে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসারী বানাচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَنْ تَرْضٰى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلَا النَّصَارٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ﴾
ইয়াহুদি এবং খ্রিস্টানরা কখনোই আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। [সূরা বাক্বারা- ১২০।]
কাফিরদের সান্নিধ্যের অন্বেষণ করা যাবে না :
কাফিরদের ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করার অর্থ হলো তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কযুক্ত করা। আল্লাহ তা‘আলা এ রকম কাজ নিষেধ করে ইরশাদ করেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ اَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ اِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ﴾
হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। [সূরা মুমতাহিনা- ১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের জয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ।]
কাফিরদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের সাথে কেউ একাত্মতা প্রকাশ করলে সন্দেহাতীতভাবে সে কাফিরদের মিত্রে পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ﴾
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। [সূরা হুদ- ১১৩।]
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, কোনকিছুর প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অর্থ হলো তার উপর নির্ভর করা এবং সমর্থনের জন্য তার দারস্থ হওয়া এবং এভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যা তোমাকে তুষ্টি দেয়। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, কোন মুসলিমের পক্ষেই কাফিরদেরকে পছন্দ করা কিংবা তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা সঙ্গত নয়। একজন কাফিরের বন্ধু কাফির এবং একজন মুরতাদ বা অবাধ্যের বন্ধু আরেকজন অবাধ্য। আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
﴿ وَلَوْلَاۤ اَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ اِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيْلًا اِذًا لَّاَذَقْنَاكَ ضِعْفَ الْحَيَاةِ وَضِعْفَ الْمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيْرًا﴾
আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। আর তা হলে অবশ্যই আমি তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ এবং পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম। তখন তুমি আমার বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পেতে না। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৩, ৭৪।]
আমাদের এটি মনে রাখতে হবে যে, এভাবে সৃষ্টির সেরা নবী ﷺ কে যে রকম ধমকের সুরে আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সম্বোধন করেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কি রকম হতে পারে।
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করা যাবে না :
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَدُّوْا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ﴾
তারা ইচ্ছা পোষণ করে যে, আপনি তাদের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় (ধর্মীয় বিষয়ে সৌজন্যতা সহকারে) আসেন। সুতরাং তারা আপনার সঙ্গে সমঝোতা করবে। [সূরা ক্বালাম- ৯।]
কাফিরদেরকে অন্তরঙ্গ ভাবা যাবে না :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ ‐ هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। [সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯।]
এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মুসলিমদের সেই দল সম্পর্কে যারা মুনাফিক এবং ইয়াহুদিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখত। কেননা সে সময়ে তারা (মুনাফিক ও ইয়াহুদি) তাদের (মুসলিমদের) প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করে মুসলিমদের কাফির-মুনাফিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করলেন।
কাফিরদের অনুগত হওয়া যাবে না :
কাফিরদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার আনুগত্য তাদের সঙ্গে মৈত্রীর আরেকটি নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا﴾
তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে অমনোযোগী করে দিয়েছি। অতঃপর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে। [সূরা কাহফ- ২৮।]
﴿وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ﴾
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
এ আয়াত সম্পর্কে ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যেহেতু তোমরা আল্লাহর বিধান ও শরিয়াতকে বাদ দিয়ে অন্যের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছ সেহেতু তোমরা আল্লাহর উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছ। আর এটাই হচ্ছে শিরক। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ‘‘তারা (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা) তাদের আলেম ও সন্নাসীদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আনআমের ১২১ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
কুরআন তাচ্ছিল্যকারীদের সঙ্গে একত্রে বসা যাবে না :
কাফির-মুশরিকরা যখন কুরআনকে নিয়ে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে উপহাস করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তখন তাদের সঙ্গে বসা মানে তাদেরকে সমর্থন করা। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا﴾
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, এর অর্থ হলো এই যে, যদি আপনি তাদের এ কাজ করতে দেখেন এবং এ সম্পর্কে কিছুই না বলেন, তখন এটি সুস্পষ্ট হয় যে, আপনার আনুগত্য তাদের জন্য যা আপনাকে তাদের মতো করে দেয়। তিনি আরো বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পরিষ্কারভাবে কাফিরদের ধর্মদ্রোহীমূলক যাবতীয় কর্মকান্ডে বসার বা প্রত্যক্ষ করে আনন্দ লাভ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। [তাফসীরে তাবারী।]
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদান করা যাবে না :
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে কাফিরদের সাথে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয়। কেননা কর্তৃত্বশীল কাফিরদের প্রতি আনুগত্যের কারণে তাদের কুফরী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা মুসলিমদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার অর্থ হলো তাদের পদমর্যাদার প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা, যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে কোনক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَنْ يَّجْعَلَ اللهُ لِلْكَافِرِيْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ سَبِيْلًا﴾
আর কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না। [সূরা নিসা- ১৪১।]
কাফিরদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের কার্যক্রমের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তাদের পোষাকের অনুসরণ কিংবা তাদের ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের স্টাইল পরিবর্তন করা- এই জিনিসগুলো তাদের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিকে পরিষ্কার করে।
কাফিরদেরকে কাছে টানা যাবে না :
কাফিরদের সাহচর্যে আনন্দ অনুভব করা, তাদের কাছে নিজেদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি ব্যক্ত করা, তাদেরকে কাছে টানা এবং তাদেরকে সম্মান করা তাদের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনেরই পরিচয় বহন করে।
কাফিরদের ভ্রষ্টতার কাজে সহযোগিতা করা যাবে না :
তাদের ভ্রষ্টতার কাজে সাহায্য করা কিংবা সাহায্য যুগিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করার অর্থ হলো নিজেকে তাদের মিত্রে পরিণত করা। কুরআন দুটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। একটি হলো, লূত (আঃ) এর স্ত্রী সংক্রান্ত এবং অপরটি নূহ (আঃ) এর স্ত্রী সম্পর্কিত। লূত (আঃ) এর স্ত্রী তার শহরের লোকদেরকে লূত (আঃ) এর বিরুদ্ধে সমর্থন যুগিয়েছিল এবং লূত (আঃ) এর লোকদের দুর্দশায় উৎফুল্ল হয়েছিল। এমনকি লূত (আঃ) এর অতিথিদের সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করেছিল। অনুরূপ ঘটনা নূহ (আঃ) এর স্ত্রীর ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ﴾
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন, কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত (উভয়ের কেউই) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। অতঃপর তাদেরকে (সে স্ত্রীদেরকে) বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। [সূরা তাহরীম- ১০।]
কাফিরদেরকে সম্মান করা যাবে না :
কাফিরদেরকে বেশি বেশি সম্মানিত করা এবং নির্বোধের মতো বিশাল বিশাল টাইটেলে ভূষিত করা তাদের প্রতি মিত্রতা প্রদর্শনেরই নামান্তর। কিছু লোক তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রকাশের ভঙ্গি হিসেবে তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় তাদের সিনায় হাত রাখে। কেউবা আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ তাদের মাথা নামিয়ে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا﴾
যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে আউলিয়া (রক্ষাকারী, সাহায্যকারী বা বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান-মর্যাদা অন্বেষণ করে? নিঃসন্দেহে সকল সম্মান তো আল্লাহরই। [সূরা নিসা- ১৩৯।]
প্রকৃতপক্ষে এ কাফিররা মুসলিমদের থেকে যা প্রাপ্য তা হলো ভয়াবহ সমালোচনা এবং তাচ্ছিল্য। নবী ﷺ আমাদেরকে তাদের সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নিতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَبْدَءُوا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارٰى بِالسَّلَامِ فَاِذَا لَقِيْتُمْ اَحَدَهُمْ فِىْ طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوْهُ اِلٰى اَضْيَقِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না এবং যখন তোমরা তাদের সঙ্গে রাস্তায় সাক্ষাৎ কর তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ পাশ দিয়ে যেতে বাধ্য করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮৯; তিরমিযী, হা/২৭০০।]
কাফিরদের সঙ্গে বসবাস করা যাবে না :
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهٗ فَاِنَّهٗ مِثْلُهٗ
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে-ই কাফিরদের সাথে যোগ দেয় এবং তাদের মাঝে বসবাস করে সে তাদেরই একজন। [আবু দাউদ, হা/২৭৮৯।]
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا تُسَاكِنُوْا الْمُشْرِكِيْنَ وَلَا تَجَامِعُوْهُمْ فَمَنْ سَاكِنُهُمْ اَوْ جَامَعَهُمْ فَلَيْسَ مِنَّا
সামুর ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কাফিরদের সাথে বসবাস করো না এবং তাদের সাথে যোগ দিও না। যে-ই তাদের সঙ্গে বসবাস করে কিংবা তাদের মাঝে বাস করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [সুনানে বায়হাকী কুবরা, হা/১৮২০১; তিরমিযী, হা/১৬০৫।]
কাফিরদের সাথে জোগসাজস করা যাবে না :
কাফিরদের সঙ্গে জোগসাজস করা, তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা, তাদের পক্ষ হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা, তাদেরকে মুসলিমদের তথ্য দেয়া, কিংবা মুসলিমদেরকে গ্রেফতার করে তাদের হাতে তুলে দেয়া অথবা তাদের কোন পদে অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করা এগুলো সবই তাদের মিত্রদের কাজ। বর্তমান মুসলিম বিশ্ব সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে সকল রোগে আক্রান্ত এটি সেগুলোর অন্যতম। এটি পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করেছে এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ মুসলিম সমাজের সকল স্তরকে কলুষিত করেছে। এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিয়েই মিশরে ইংরেজ দখলদারির শেষে শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহ.) বলেছিলেন, ‘‘সাদা ইংরেজরা চলে গেছে কিন্তু বাদামী ইংরেজরা এখনো আমাদের সঙ্গে বিদ্যমান।’’
কাফিরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ না করা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের একজন হিসেবে গণ্য হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩৩।]
তাদের শাসন কর্তৃত্ব মেনে নেয়া যাবে না :
﴿وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا﴾
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না এবং (তাদের পক্ষ হতে আগত) নির্যাতনকে উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। [সূরা আহযাব- ৪৮।]
তাদের নিকট থেকে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে না :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ওয়াবারা প্রান্তরে পৌঁছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে পূর্ব থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে তুমি ফিরে যাও, فَلَنْ اَسْتَعِيْنَ بِمُشْرِكٍ ‘‘আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না’’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন লোকটি চলে গেল। অতঃপর যখন আমরা ‘শাজারায়’ উপনীত হলাম, তখন সে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করল এবং তার পূর্বের কথাই পুনরায় বলল, নবীও তাঁর পূর্বের কথা পুনরায় বললেন এবং আরো বললেন, তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। ফলে এবারও সে চলে গেল। তারপর সে আবার ‘বায়দা’ নামক স্থানে নবী ﷺ সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে প্রথমবারের মতো জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, জ্বী-হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, এখন (আমাদের সাথে) চলো। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৫৮।]
মুসলিমরা তাদের নারীদেরকে বিয়ে করতে পারবে না :
﴿وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّؕ وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ﴾
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
বিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে নিছক একটি যৌন সম্পর্ক নয়; বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যাণ-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মুমিন স্বামী বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধররাও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরণের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম, কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবনধারা লালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করে না। কোন খাঁটি মুমিন কেবল নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কুফর ও শিরক লালন করতে পারে না।
মুসলিম নারীদেরকে তাদের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না :
﴿وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْاؕ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ﴾
আর তোমরা (মুমিন নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
মুসলিমরা তাদের এবং তারাও মুসলিমদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না :
عَنْ اُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلَا الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজন মুসলিম একজন কাফিরের উত্তরাধিকারী হয় না এবং একজন কাফির একজন মুসলিমের উত্তরাধিকারী হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২৫; তিরমিযী, হা/২১০৭।]
মুসলিমরা মুশরিকদের যবাই করা গোশত খেতে পারে না :
﴿وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
তারা মারা গেলে তাদের জানাযা পড়া যাবে না :
﴿وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। [সূরা তাওবা- ৮৪।]
মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে তার ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। নবী ﷺ অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তাটি দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ কেই জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। ফলে তিনি এজন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন নেতার জন্য এমন কোন কাজ করা বৈধ হবে না, যাতে শত্রুপক্ষের সাহস বেড়ে যায়।
মুশরিকরা মারা গেলে মুসলিমরা তাদের জন্য ক্ষমা চাইতে পারবে না :
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। [সূরা তাওবা- ১১৩।]
তাদের ঐসব মজলিশে যোগদান করা যাবে না যেখানে দ্বীন ইসলামের কোন বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয় :
﴿اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا﴾
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম জাতিকে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহের আলোকে জীবন গড়তে হবে। এটাই ইসলামের দাবি। কেউ যদি নামে মুসলিম হয় আর আকিদা-বিশ্বাস ও কাজকর্মের দিক দিয়ে কাফির-মুশরিকদের সমান হয় তবে এমন ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার কোন সার্থকতা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করি। সুতরাং আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে, আমরা কতটুকু আল্লাহর কথা মেনে চলেছি। এ দুনিয়া মুমিনের জন্য জান্নাত নয়। এটা হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। এখানের সুখ-দুঃখ আসল বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং আসল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে তার হুকুম-আহকাম পালন করছি কি না। আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যদি দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তবুও কোন ক্ষতি নেই। কেননা এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা পরকালে জান্নাত দেবেন। আর যদি কেউ এই পার্থিব জীবনের অল্প কয়েক দিনের সুখ ভোগ করতে যেয়ে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিজের ইসলামী আদর্শকে বাদ দিয়ে বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য আল্লাহর দুশমনদের সাথে হাত মিলিয়ে চলে তাহলে এমন ব্যক্তি যদিও দুনিয়াতে কয়েক দিনের সুখ ভোগ করবে; কিন্তু মৃত্যুর পরই সে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে। তখন আর আফসোস করে কোন কাজ হবে না।
যে তাগুত অস্বীকার না করলে ঈমানই সঠিক হয় না, সেই তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম রাখা আবার জান্নাতের আশা করা এটা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। আসুন! নবী-রাসূলগণ যে তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছিলেন আমরা সেই তাওহীদের ছায়াতলে সমবেত হই এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজে আত্মনিয়োগ করি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন। যাতে আমরা পরকালে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং জান্নাতের নিয়ামত লাভ করতে পারি। আমীন
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَ سَلِّمْ عَلٰى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন