hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৫
অসৎ বন্ধুত্বের পরিণাম
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে শত্রুতায় পরিণত হবে :

﴿اَ لْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ﴾

সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। [সূরা যুখরুফ- ৬৭।]

পরকালে কেবল সেসব বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যা নেকী ও আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যসব বন্ধুত্ব শত্রুতায় রূপান্তরিত হবে। আজ যারা গোমরাহী, যুলুম-অত্যাচার এবং গোনাহের কাজে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী, কাল কিয়ামতের দিন তারাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে এবং নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি মানুষ এ পৃথিবীতেই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে দেখতে সক্ষম হয় যে, কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কোন্ প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া ধ্বংসাত্মক।

অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে :

﴿وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا﴾

সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [সূরা ফুরক্বান, ২৭- ২৯।]

যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা পরকালে আক্ষেপ করবে :

﴿وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗقَرِيْنٌ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ﴾

যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারাই (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপর পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (মতো) ব্যবধান থাকত! সুতরাং সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর! [সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৮।]

অসৎ নেতারা তাদের দলের সবাইকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :

﴿يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ﴾

সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! [সূরা হুদু ৯৮।]

এ আয়াত থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় কোন জাতি বা দলের নেতৃত্ব দেয় কিয়ামতের দিনও তারাই তাদের নেতা হবে। যদি তারা দুনিয়ায় সত্যের পথে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা কিয়ামতের দিনও তাদেরই পতাকাতলে সমবেত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। আর যদি তারা মিথ্যার দিকে আহবান জানিয়ে থাকে, তাহলে যারা এখানে তাদের পথে চলেছে তারা সেখানেও তাদেরই পেছনে থাকবে এবং তাদের নেতৃত্বে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাবে।

আর যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং তাদেরকে সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত করেছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে- এ যালিমরা তাদেরকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে এনেছে, তখন তারা নিজেদের বিপদের জন্য তাদেরকে দায়ী করবে। তারা এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, তাদের সামনে নেতারা চলবে আর তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে।

হাশরের ময়দানে অসৎ নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে বিতর্ক হবে

নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হবে :

﴿وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ نِ الْقَوْلَ﴾

তুমি যদি যালিমদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান করা হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩১।]

অনুসারী :

﴿يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ﴾

দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। [সূরা সাবা- ৩১।]

নেতৃবৃন্দ :

﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ﴾

তখন অহংকারীরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত রেখেছিলাম? বস্তুত তোমরাই ছিলে অপরাধী। [সূরা সাবা- ৩২।]

অনুসারী :

﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ ﴾

দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। অতঃপর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা লজ্জা ঢাকতে থাকবে। [সূরা সাবা- ৩৩।]

﴿قَالُوْاۤ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَاْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ﴾

দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরাই তো আমাদের কাছে ডানদিক থেকে আসতে। [সূরা সাফ্ফাত- ২৮।]

এখানে اَلْيَمِيْنِ (আল ইয়ামীন) কে যদি শক্তি অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে। আর যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে যে, যে পথে তোমরা আমাদেরকে চালাচ্ছ এটিই একমাত্র কল্যাণের পথ। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদেরকে নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করেছ তা-ই সত্য।

নেতৃবৃন্দ :

﴿قَالُوْا بَلْ لَّمْ تَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍۚ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِيْنَ فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَاۗ اِنَّا لَذَآئِقُوْنَ فَاَغْوَيْنَاكُمْ اِنَّا كُنَّا غَاوِيْنَ ﴾

সবলরা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্বও ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। অতএব আমাদের উপর আমাদের প্রতিপালকের কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, আর আমরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট ছিলাম। [সূরা সাফ্ফাত, ২৯-৩২।]

অতএব নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি ভোগ করবে। তখন অনুসারীদের এ ওজর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওজরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহ লোকেরা নিজেরাই সরল ও সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।

অনুসারী :

﴿وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ﴾

যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? [সূরা মু’মিন- ৪৭।]

তারা এমন কোন আশা নিয়ে এ কথা বলবে না যে, তাদের ঐসব নেতা কিংবা শাসক বা পথপ্রদর্শক প্রকৃতই তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে বা তা কিছুটা লাঘব করিয়ে দেবে। তখন তাদের কাছে এ সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এখানে এসব লোক আমাদের কোন কাজে আসার মতো নয়। তারা তাদেরকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য বলবে, আপনি তো দুনিয়ায় অত্যন্ত ক্ষমতাবলে আমাদের উপর আপনার নেতৃত্ব চালাতেন; এখন এখানে যে বিপদ আমাদের উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন তো দেখি!

নেতৃবৃন্দ :

﴿قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ﴾

দাম্ভিকরা বলবে, আমরা তো সবাই জাহান্নামে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে ফেলেছেন। [সূরা মু’মিন- ৪৮।]

অনুসারী :

﴿وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ ﴾

সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর শাসিত্ম হতে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে কি? [সূরা ইবরাহীম- ২১।]

নেতৃবৃন্দ :

﴿قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ﴾

তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। [সূরা ইবরাহীম- ২১।]

অনুসারীরা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে :

﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ اَقْدَامِنَا لِيَكُوْنَا مِنَ الْاَسْفَلِيْنَ﴾

কাফিররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা নিম্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম সাজদা- ২৯।]

﴿وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِيْلَا رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا﴾

তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা এবং প্রধানদের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিশাপ দিন। [সূরা আহযাব- ৬৭, ৬৮।]

তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে :

﴿اِذْ تَبَرَّاَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَاَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْاَسْبَابُ﴾

(তখন কি করুণ অবস্থা হবে) যখন অনুসরণীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [সূরা বাক্বারা- ১৬৬।]

অনুসারীরা পরিতাপ করতে থাকবে

﴿وَقَالَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا لَوْ اَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّاَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوْا مِنَّاؕ كَذٰلِكَ يُرِيْهِمُ اللهُ اَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْؕ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنَ النَّارِ﴾

অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের জন্য (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে তারা যেভাবে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও সেভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ তাদের সামনে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করবেন, কিন্তু (কোনক্রমেই) তারা জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। [সূরা বাক্বারা- ১৬৭।]

অনেক ধোঁকাবাজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি আছে, যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে সরিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা অন্ধের মতো ধোঁকাবাজ নেতাদের পেছনে কেন চলছ? নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তোমরা চিন্তা করছ না কেন যে, সত্যের বিপরীতে তোমরা কোন্ দিকে পরিচালিত হচ্ছ? যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কী বুঝিয়েছিল তা স্বচক্ষে দেখবে আর এ কথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করেছে, তখন তারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, তোমরাই তো আমাদেরকে বিপথগামী করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের কথাই মেনে নিতাম।

নেতারা তখন বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না, যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তোমাদের মতো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। তোমরাই তো আমাদের সেনাদল ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। তোমরা শ্লোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করত না। তোমরা আমাদের সৈন্য না হলে একজন মানুষের উপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারত না।

এখন এ কথা মেনে নিচ্ছ না কেন যে, আসলে রাসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করেছিলেন তোমরা নিজেরাই তার উপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে পার্থিব ভোগবিলাসের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা এমনসব পীরের সন্ধানে ছিলে, যারা তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিত। তোমরা এমনসব পন্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধান করছিলে, যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ‘আত এবং তোমাদের মনের মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে হালাল করে দিত। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারত। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল, যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা না হোক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট হতো। তোমাদের এমনসব শাসকের প্রয়োজন ছিল, যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র ও অবিশ্বস্ত এবং যাদের পৃষ্ঠপোশকতায় তোমরা সবরকমের অসৎকাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেন হয়েছিল। এখন তোমরা কেন এ কথা বলছ যে, তোমরা নিরপরাধ আর আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম।

জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছ কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকানোর জন্য সবধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। প্রকৃত ব্যাপারটি তো কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তোমরা রাত দিনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছিলে। তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিল, এটা ছিল বাস্তব ঘটনা।

পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা যেসব ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল, মুসলিমরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয়। আর ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ভুল ও মিথ্যা নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে। এসব আয়াত এমনসব লোকের জন্য সতর্কবাণী, যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালিমদের আনুগত্য করে। তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে কিয়ামতের দিন এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতমও নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। কাজেই ভেবে দেখো, তোমরা যাদের পেছনে দৌড়াচ্ছ অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছ তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদেরকেই কোথায় নিয়ে যাবে?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন