মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কাফির-মুশরিকরা বা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীরা ইসলামের দুশমন। বিধায় তাদের সাথে মুসলিমদের আন্তরিক বন্ধুত্ব থাকতে পারে না; বরং তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। কীভাবে কাফির-মুশরিকদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোন প্রমাণ দিতে চাও? [সূরা নিসা- ১৪৪।]
যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের উপর অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। [সূরা মায়েদা- ৮১।]
কাফিরদের উপর নির্ভর করা যাবে না :
কোন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিংবা নিরাপত্তার খাতিরে কাফিরদের উপর নির্ভর করা কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার পরিচয় বহন করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল; তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের পথ থেকে উত্তম। এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন; আর আল্লাহ যাকে লানত করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। [সূরা নিসা- ৫১, ৫২।]
মুসলিম উম্মাহর মধ্য হতে যারাই কাফিরদের সঙ্গে যোগ দেবে এবং তাদের অপকর্মের সঙ্গী হবে তারাই মুনাফিকীর কারণে নিজের জন্য ডেকে আনবে আযাব। আজ এই উম্মাহর কেউ কমিউনিজম, কেউ সোশালিজম, কেউ সেক্যুলার হয়ে কুফরের মূলনীতিগুলো মুসলমানদের আবাসভূমিতে বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়েছে এবং এ লক্ষ্যে জনগণকে এ সমস্ত শয়তানী বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এভাবে তারা মুসলিম জাতিকে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসারী বানাচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। [সূরা মুমতাহিনা- ১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের জয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ।]
কাফিরদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের সাথে কেউ একাত্মতা প্রকাশ করলে সন্দেহাতীতভাবে সে কাফিরদের মিত্রে পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। [সূরা হুদ- ১১৩।]
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, কোনকিছুর প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অর্থ হলো তার উপর নির্ভর করা এবং সমর্থনের জন্য তার দারস্থ হওয়া এবং এভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যা তোমাকে তুষ্টি দেয়। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, কোন মুসলিমের পক্ষেই কাফিরদেরকে পছন্দ করা কিংবা তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা সঙ্গত নয়। একজন কাফিরের বন্ধু কাফির এবং একজন মুরতাদ বা অবাধ্যের বন্ধু আরেকজন অবাধ্য। আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। আর তা হলে অবশ্যই আমি তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ এবং পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম। তখন তুমি আমার বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পেতে না। [সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৩, ৭৪।]
আমাদের এটি মনে রাখতে হবে যে, এভাবে সৃষ্টির সেরা নবী ﷺ কে যে রকম ধমকের সুরে আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সম্বোধন করেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কি রকম হতে পারে।
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করা যাবে না :
কাফিরদের কুফরী বিশ্বাসের প্রশংসা করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَدُّوْا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ﴾
তারা ইচ্ছা পোষণ করে যে, আপনি তাদের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় (ধর্মীয় বিষয়ে সৌজন্যতা সহকারে) আসেন। সুতরাং তারা আপনার সঙ্গে সমঝোতা করবে। [সূরা ক্বালাম- ৯।]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। [সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯।]
এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মুসলিমদের সেই দল সম্পর্কে যারা মুনাফিক এবং ইয়াহুদিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখত। কেননা সে সময়ে তারা (মুনাফিক ও ইয়াহুদি) তাদের (মুসলিমদের) প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করে মুসলিমদের কাফির-মুনাফিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করলেন।
কাফিরদের অনুগত হওয়া যাবে না :
কাফিরদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার আনুগত্য তাদের সঙ্গে মৈত্রীর আরেকটি নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে অমনোযোগী করে দিয়েছি। অতঃপর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে। [সূরা কাহফ- ২৮।]
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আন‘আম- ১২১।]
এ আয়াত সম্পর্কে ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যেহেতু তোমরা আল্লাহর বিধান ও শরিয়াতকে বাদ দিয়ে অন্যের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছ সেহেতু তোমরা আল্লাহর উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছ। আর এটাই হচ্ছে শিরক। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ‘‘তারা (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা) তাদের আলেম ও সন্নাসীদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আনআমের ১২১ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
কুরআন তাচ্ছিল্যকারীদের সঙ্গে একত্রে বসা যাবে না :
কাফির-মুশরিকরা যখন কুরআনকে নিয়ে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে উপহাস করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তখন তাদের সঙ্গে বসা মানে তাদেরকে সমর্থন করা। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, এর অর্থ হলো এই যে, যদি আপনি তাদের এ কাজ করতে দেখেন এবং এ সম্পর্কে কিছুই না বলেন, তখন এটি সুস্পষ্ট হয় যে, আপনার আনুগত্য তাদের জন্য যা আপনাকে তাদের মতো করে দেয়। তিনি আরো বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পরিষ্কারভাবে কাফিরদের ধর্মদ্রোহীমূলক যাবতীয় কর্মকান্ডে বসার বা প্রত্যক্ষ করে আনন্দ লাভ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। [তাফসীরে তাবারী।]
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদান করা যাবে না :
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে কাফিরদের সাথে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয়। কেননা কর্তৃত্বশীল কাফিরদের প্রতি আনুগত্যের কারণে তাদের কুফরী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা মুসলিমদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার অর্থ হলো তাদের পদমর্যাদার প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা, যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে কোনক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আর কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না। [সূরা নিসা- ১৪১।]
কাফিরদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা যাবে না :
কাফিরদের কার্যক্রমের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তাদের পোষাকের অনুসরণ কিংবা তাদের ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের স্টাইল পরিবর্তন করা- এই জিনিসগুলো তাদের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিকে পরিষ্কার করে।
কাফিরদেরকে কাছে টানা যাবে না :
কাফিরদের সাহচর্যে আনন্দ অনুভব করা, তাদের কাছে নিজেদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি ব্যক্ত করা, তাদেরকে কাছে টানা এবং তাদেরকে সম্মান করা তাদের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনেরই পরিচয় বহন করে।
কাফিরদের ভ্রষ্টতার কাজে সহযোগিতা করা যাবে না :
তাদের ভ্রষ্টতার কাজে সাহায্য করা কিংবা সাহায্য যুগিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করার অর্থ হলো নিজেকে তাদের মিত্রে পরিণত করা। কুরআন দুটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। একটি হলো, লূত (আঃ) এর স্ত্রী সংক্রান্ত এবং অপরটি নূহ (আঃ) এর স্ত্রী সম্পর্কিত। লূত (আঃ) এর স্ত্রী তার শহরের লোকদেরকে লূত (আঃ) এর বিরুদ্ধে সমর্থন যুগিয়েছিল এবং লূত (আঃ) এর লোকদের দুর্দশায় উৎফুল্ল হয়েছিল। এমনকি লূত (আঃ) এর অতিথিদের সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করেছিল। অনুরূপ ঘটনা নূহ (আঃ) এর স্ত্রীর ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন, কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত (উভয়ের কেউই) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। অতঃপর তাদেরকে (সে স্ত্রীদেরকে) বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। [সূরা তাহরীম- ১০।]
কাফিরদেরকে সম্মান করা যাবে না :
কাফিরদেরকে বেশি বেশি সম্মানিত করা এবং নির্বোধের মতো বিশাল বিশাল টাইটেলে ভূষিত করা তাদের প্রতি মিত্রতা প্রদর্শনেরই নামান্তর। কিছু লোক তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রকাশের ভঙ্গি হিসেবে তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় তাদের সিনায় হাত রাখে। কেউবা আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ তাদের মাথা নামিয়ে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে আউলিয়া (রক্ষাকারী, সাহায্যকারী বা বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান-মর্যাদা অন্বেষণ করে? নিঃসন্দেহে সকল সম্মান তো আল্লাহরই। [সূরা নিসা- ১৩৯।]
প্রকৃতপক্ষে এ কাফিররা মুসলিমদের থেকে যা প্রাপ্য তা হলো ভয়াবহ সমালোচনা এবং তাচ্ছিল্য। নবী ﷺ আমাদেরকে তাদের সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নিতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না এবং যখন তোমরা তাদের সঙ্গে রাস্তায় সাক্ষাৎ কর তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ পাশ দিয়ে যেতে বাধ্য করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮৯; তিরমিযী, হা/২৭০০।]
সামুর ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কাফিরদের সাথে বসবাস করো না এবং তাদের সাথে যোগ দিও না। যে-ই তাদের সঙ্গে বসবাস করে কিংবা তাদের মাঝে বাস করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [সুনানে বায়হাকী কুবরা, হা/১৮২০১; তিরমিযী, হা/১৬০৫।]
কাফিরদের সাথে জোগসাজস করা যাবে না :
কাফিরদের সঙ্গে জোগসাজস করা, তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা, তাদের পক্ষ হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা, তাদেরকে মুসলিমদের তথ্য দেয়া, কিংবা মুসলিমদেরকে গ্রেফতার করে তাদের হাতে তুলে দেয়া অথবা তাদের কোন পদে অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করা এগুলো সবই তাদের মিত্রদের কাজ। বর্তমান মুসলিম বিশ্ব সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে সকল রোগে আক্রান্ত এটি সেগুলোর অন্যতম। এটি পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করেছে এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ মুসলিম সমাজের সকল স্তরকে কলুষিত করেছে। এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিয়েই মিশরে ইংরেজ দখলদারির শেষে শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহ.) বলেছিলেন, ‘‘সাদা ইংরেজরা চলে গেছে কিন্তু বাদামী ইংরেজরা এখনো আমাদের সঙ্গে বিদ্যমান।’’
কাফিরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ না করা :
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের একজন হিসেবে গণ্য হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩৩।]
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না এবং (তাদের পক্ষ হতে আগত) নির্যাতনকে উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। [সূরা আহযাব- ৪৮।]
তাদের নিকট থেকে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে না :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ওয়াবারা প্রান্তরে পৌঁছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে পূর্ব থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে তুমি ফিরে যাও, فَلَنْ اَسْتَعِيْنَ بِمُشْرِكٍ ‘‘আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না’’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন লোকটি চলে গেল। অতঃপর যখন আমরা ‘শাজারায়’ উপনীত হলাম, তখন সে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করল এবং তার পূর্বের কথাই পুনরায় বলল, নবীও তাঁর পূর্বের কথা পুনরায় বললেন এবং আরো বললেন, তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। ফলে এবারও সে চলে গেল। তারপর সে আবার ‘বায়দা’ নামক স্থানে নবী ﷺ সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে প্রথমবারের মতো জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল, জ্বী-হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, এখন (আমাদের সাথে) চলো। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৫৮।]
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
বিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে নিছক একটি যৌন সম্পর্ক নয়; বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যাণ-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মুমিন স্বামী বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধররাও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরণের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম, কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবনধারা লালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করে না। কোন খাঁটি মুমিন কেবল নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কুফর ও শিরক লালন করতে পারে না।
আর তোমরা (মুমিন নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। [সূরা বাক্বারা- ২২১।]
মুসলিমরা তাদের এবং তারাও মুসলিমদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না :
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজন মুসলিম একজন কাফিরের উত্তরাধিকারী হয় না এবং একজন কাফির একজন মুসলিমের উত্তরাধিকারী হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২৫; তিরমিযী, হা/২১০৭।]
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। [সূরা তাওবা- ৮৪।]
মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে তার ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। নবী ﷺ অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তাটি দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ কেই জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। ফলে তিনি এজন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন নেতার জন্য এমন কোন কাজ করা বৈধ হবে না, যাতে শত্রুপক্ষের সাহস বেড়ে যায়।
মুশরিকরা মারা গেলে মুসলিমরা তাদের জন্য ক্ষমা চাইতে পারবে না :
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। [সূরা তাওবা- ১১৩।]
তাদের ঐসব মজলিশে যোগদান করা যাবে না যেখানে দ্বীন ইসলামের কোন বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয় :
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। [সূরা নিসা- ১৪০।]
পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম জাতিকে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহের আলোকে জীবন গড়তে হবে। এটাই ইসলামের দাবি। কেউ যদি নামে মুসলিম হয় আর আকিদা-বিশ্বাস ও কাজকর্মের দিক দিয়ে কাফির-মুশরিকদের সমান হয় তবে এমন ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার কোন সার্থকতা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করি। সুতরাং আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে, আমরা কতটুকু আল্লাহর কথা মেনে চলেছি। এ দুনিয়া মুমিনের জন্য জান্নাত নয়। এটা হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। এখানের সুখ-দুঃখ আসল বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং আসল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে তার হুকুম-আহকাম পালন করছি কি না। আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যদি দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তবুও কোন ক্ষতি নেই। কেননা এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা পরকালে জান্নাত দেবেন। আর যদি কেউ এই পার্থিব জীবনের অল্প কয়েক দিনের সুখ ভোগ করতে যেয়ে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিজের ইসলামী আদর্শকে বাদ দিয়ে বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য আল্লাহর দুশমনদের সাথে হাত মিলিয়ে চলে তাহলে এমন ব্যক্তি যদিও দুনিয়াতে কয়েক দিনের সুখ ভোগ করবে; কিন্তু মৃত্যুর পরই সে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে। তখন আর আফসোস করে কোন কাজ হবে না।
যে তাগুত অস্বীকার না করলে ঈমানই সঠিক হয় না, সেই তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম রাখা আবার জান্নাতের আশা করা এটা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। আসুন! নবী-রাসূলগণ যে তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছিলেন আমরা সেই তাওহীদের ছায়াতলে সমবেত হই এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজে আত্মনিয়োগ করি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন। যাতে আমরা পরকালে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং জান্নাতের নিয়ামত লাভ করতে পারি। আমীন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।