মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জ্ঞান মানুষের অমূল্য সম্পদ। এর মূল উৎস হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। এটির ভিত্তিতেই মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির আসনে অধিষ্ঠিত। অনুরূপভাবে তাক্বওয়াও হচ্ছে মানুষের জীবনের অন্য আরো একটি অমূল্য সম্পদ এবং উভয়টির সম্পর্ক খুবই গভীর। কেননা কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জন ছাড়া উক্ত বিষয়ে কারো প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয় না। এজন্যই কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে।
(সূরা ফাতির- ২৮)
এর স্বরূপ হচ্ছে এই যে, যখন কোন বান্দা জানতে পারবে যে, আল্লাহ কে? তিনি কোথায় থাকেন? তিনি কী করেন? তাঁর ক্ষমতা কতটুকু? তাঁর রাগ কেমন? পৃথিবীতে যেসব জাতির উপর তা প্রতিফলিত হয়েছিল, তাদের কীরূপ অবস্থা হয়েছিল? জান্নাত কী? জাহান্নাম কী? তাক্বওয়া কী জিনিস? এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এর উপকার কী এবং এর অনুপস্থিতির অপকারসমূহ কী কী......ইত্যাদি, তাহলেই উক্ত বান্দার মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এসব বিষয়ে কোন কিছু জানতেই পারবে না, তার পক্ষে আল্লাহকে ভয় করা কখনো সম্ভব নয়। বরং সে ভয় করবে ঐসব বিষয়কে, যেসব কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। আর শয়তান এ সুযোগটিই গ্রহণ করে থাকে, যাতে করে উক্ত বান্দা আল্লাহকে ভয় করার পরিবর্তে তাকেই ভয় করে।
২. কুরআন নিয়ে গবেষণা করা :
কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য একটি মহাবিস্ময়কর গ্রন্থ। এতে সমন্বয় ঘটেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জগতের যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)
অতএব কোন ব্যক্তি কুরআন নিয়ে যতবেশি গবেষণা করবে, সে ততবেশি জ্ঞানার্জন করতে পারবে।
৩. আল্লাহর ইবাদাতে মনোনিবেশ করা :
মানুষ সৃষ্টি করার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত করা। এ কাজে মনোনিবেশ করলে বান্দা অনেক দিক থেকেই উপকৃত হয়। বিশেষ করে এর মাধ্যমে বান্দার সবচেয়ে বড় সম্পদ তাক্বওয়া অর্জিত হয়। কুরআন মাজীদে এসেছে,
হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
৪. আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা :
তাক্বওয়া অর্জনের প্রধান দাবি হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধসমূহ তথা আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা। তাছাড়া এটিও আল্লাহর ইবাদাতের অন্যতম একটি অংশ। এ কাজের মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের মধ্য হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজের প্রিয় বান্দাদেরকে নির্বাচিত করে থাকেন। আর এ কাজেই আল্লাহ তা‘আলা অধিক সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। সুতরাং এ কাজে যতবেশি মনোনিবেশ করা যাবে, ততবেশি তাক্বওয়া অর্জন করা যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে। (এ পদ্ধতির মাধ্যমে) তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৯)
৫. রোযা রাখা :
রোযা হচ্ছে তাক্বওয়া অর্জনের জন্য একটি প্রশিক্ষণমূলক ইবাদাত। বান্দা রমাযান মাস ছাড়াও অন্যান্য যে কোন মাসে যতবেশি রোযা রাখবে, সে ততবেশি তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল; যাতে করে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
অপরদিকে রোযা হচ্ছে মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ, যা তাকে পাপের পথ থেকে বিরত রাখে এবং সৎকর্মের দিকে ধাবিত করে। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়ার নিদর্শন। হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিয়াম হচ্ছে (পাপ থেকে বেঁচে থাকার) ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো সিয়াম পালনের দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায় সে যেন বলে আমি একজন সিয়াম পালনকারী। [সহীহ বুখারী, হা/১৮০৫; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫১; মিশকাত, হা/১৯৫৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি স্থায়ী দুর্গ। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৮০।]
৬. সালাত কায়েম করা :
সালাত কায়েম করার সাথে তাক্বওয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কেননা তাক্বওয়াবান ব্যক্তিরাই অধিক সালাত আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করে। তাছাড়া কুরআন মাজীদেও সালাত আদায় করার নির্দেশের সাথে সাথে তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
সালাত কায়েম করো এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় করো। তিনিই তো সেই সত্তা, যার নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৭২)
৭. অর্থ বুঝে কুরআন পাঠ করা :
তাক্বওয়া অর্জনের অন্য একটি উপায় হচ্ছে, আল্লাহর বাণীসমূহ পাঠ করে সেগুলো যথাযথভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করা। কেননা অনুভূতি ও তাক্বওয়ার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে অন্তর। অনুভূতি ছাড়া তাক্বওয়া অর্জিত হয় না। আর আল্লাহর বাণীসমূহ পাঠ করে কিছু বুঝতে না পারলে অনুভূতি সৃষ্টি হয় না। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ করা হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। (এর মাধ্যমে) তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
৮. সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকা :
সত্যবাদীগণ হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। তাক্বওয়াবান ব্যক্তিগণ নিজেদের আল্লাহভীতির তাগিদেই সত্যবাদীতার গুণ অর্জন করে থাকেন। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে তাক্বওয়া অর্জন করার সাথে সাথে সত্যবাদী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
(সূরা তাওবা- ১১৯)
৯. সঠিক পথের অনুসরণ করা :
সরল-সঠিক পথ হচ্ছে আল্লাহর দিকে পৌঁছার একমাত্র পথ। এ পথেই রয়েছে চিরমুক্তি। একমাত্র এ পথ অনুসরণ করেই সৎ ও মুত্তাক্বী বান্দাগণ তাদের চির গন্তব্যস্থল জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। সুতরাং এ পথের অনুসরণ করাটাই হচ্ছে তাক্বওয়া অর্জনের অন্যতম উপায়। কুরআন মাজীদে এসেছে,
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
১০. রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করাটাই হচ্ছে সরল-সঠিক পথের আরেক নাম। কেননা এটিকে ছাড়া অথবা এটিকে এড়িয়ে অন্য কোন পন্থায় উক্ত পথের পথিক হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তোমরা তা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
১১. মহিলাদের পর্দা করা :
পর্দা হচ্ছে মহিলাদের জন্য পালনীয় একটি আবশ্যকীয় বিধান, যা আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট নির্দেশের মাধ্যমে স্থির করেছেন। সুতরাং একজন মুমিন মহিলাকে তাক্বওয়ার তাগিদে অবশ্যই এ বিধান মেনে চলতে হবে। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা পর্দার বিধান দেয়ার প্রথমেই তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলবে না, যাতে করে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হয়। আর তোমরা (কথা বলার সময়) ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব- ৩২, ৩৩)
১২. সঠিক কথা বলা :
সঠিক কথা বলাটা হচ্ছে সত্যবাদী ও মুত্তাক্বী বান্দাদের অন্যতম গুণ। সুতরাং এ গুণটি অর্জন করলেও তাক্বওয়া অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (সূরা আহযাব- ৭০)
১৩. কিয়ামতের ভয়ংকর প্রকম্পনকে ভয় করা :
কিয়ামত হচ্ছে একটি ভয়ংকর দিন। এ দিন মানবজাতি ভীষণ সংকটে পতিত হবে। সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো ঘুরাফেরা করবে। কেউ কারো দিকে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ করবে না। সেদিন সমস্ত মানুষের বিচার করা হবে। কিয়ামত সম্পর্কে এসবকিছু চিন্তা-ভাবনা করলে তাক্বওয়া বৃদ্ধি পায়। এ জন্যই কুরআন মাজীদে এসেছে,
দুনিয়াতে আমরা যা কিছু করে থাকি না কেন- সবকিছুই হচ্ছে আমাদের আমল। এর প্রতি অংশ সম্মানিত ফেরেশতাগণ প্রতিনিয়ত লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিয়ামতের দিন এগুলো আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হাতে তুলে দিবেন। এ ক্ষেত্রে যার আমলনামা ভালো হবে, তাকে তার আমলনামা ডান দিক হতে প্রদান করা হবে এবং যার আমলনামা খারাপ হবে, তাকে তার আমলনামা বাম দিক হতে প্রদান করা হবে। আর এই আমলনামা হাতে পাওয়ার জন্য মানুষ কঠিন চিন্তামগ্ন থাকবে। কেননা এটি হাতে পাওয়ার পরই তাদের জন্য অপেক্ষা করবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। নিজের আমলনামা নিয়ে এরূপ চিন্তা-ভাবনা করলেও তাক্বওয়া অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক মানুষেরই ভেবে দেখা উচিত যে, সে আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য কী পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। (সূরা হাশর- ১৮)
১৫. তাক্বওয়া অর্জনের জন্য আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করা :
আল্লাহর নিয়ামতসমূহের মধ্যে তাক্বওয়া অর্জন করাটাও হচ্ছে অন্যতম একটি বিশেষ নিয়ামত। এটি সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ এটি অর্জন করতে সক্ষম হন। সুতরাং এজন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করা অত্যন্ত জরুরি, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে দু‘আ করতেন। হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ এ মর্মে দু‘আ করতেন যে,
আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি এ মর্মে দু‘আ করতেন যে, ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়াত, পরহেযগারিতা, নৈতিক পবিত্রতা এবং স্বচ্ছলতা বা অন্যের অমুখাপেক্ষিতা প্রার্থনা করছি।’’ [সহীহ মুসলিম, হা/২৭২১।]
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আযাব হতে। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে তাক্বওয়া দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দু‘আ হতে যা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭২২।]
১৬. সফর করা :
সফর হচ্ছে আল্লাহভীতি অর্জন করার আরো একটি মাধ্যম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সফরের মাধ্যমে মানুষকে তাঁর অনেক নিদর্শন দেখিয়ে থাকেন এবং তাদেরকে অনেক ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করে থাকেন। অতঃপর বিজয়ী বান্দাদেরকে নিজের সন্তুষ্টির দ্বারা অনেক পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। এজন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে এ দু‘আ করতেন :
হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার নিকট নেকী ও তাক্বওয়া চাই। আর আপনার পছন্দনীয় আমল চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০৪; তিরমিযী, হা/৩৪৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মিশকাত, হা/২৪৩৪।]
১৭. আত্মসমালোচনা করা :
তাক্বওয়া অর্জনের জন্য আত্মসমালোচনা করাটা হচ্ছে একটি অতি জরুরি বিষয়। আত্মসমালোচনা করলে নিজের মন্দ কর্মের জন্য তওবা এবং সৎকর্মের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। আর এ কাজটি মানুষকে ক্রমান্বয়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে। এজন্যই অনেক মনীষী তাক্বওয়া অর্জনের জন্য আত্মসমালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন-
মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাক্বী হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্যদের সমালোচনার চেয়ে স্বীয় নফস সম্পর্কে কঠোরভাবে আত্মসমালোচনা করবে। যাতে করে সে জানতে পারে যে, তার খাদ্য কোথা হতে এসেছে, তার পানীয় কোথা হতে এসেছে এবং তার পরিধেয় কোথা হতে এসেছে। সেটা হালাল উৎস থেকে এসেছে নাকি হারাম উৎস থেকে? [হিলয়াতুল আওলিয়া ১/১১৪।]
হারেছ ইবনে আসাদ আল-মুহাসেবী বলেন,
اَصْلُ التَّقْوٰى مُحَاسَبَةُ النَّفْسِ
তাক্বওয়ার মূল হচ্ছে আত্মসমালোচনা। [হিলয়াতুল আওলিয়া ২/২৮২।]
১৮. হালাল ভক্ষণ করা :
ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন করা এবং হালাল ভক্ষণ করা। সুতরাং মানুষ ইবাদাত কবুল না হওয়ার ভয়ে হারাম ত্যাগ করে হালাল উপার্জন ও হালাল ভক্ষণের মাধ্যমেও তাক্বওয়া অর্জন করতে পারে। হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছে; অতঃপর (আল্লাহ) বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’ আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’
অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হচ্ছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [সহীহ মুসলিম, হা/১০১৫।]
অনুরূপভাবে শেষ যামানার কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ হালাল উপার্জনের মাধ্যমেও তাক্বওয়া অর্জন করবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ উপার্জনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করবে না যে, সেটি কি হালাল উৎস থেকে এসেছে নাকি হারাম উৎস থেকে এসেছে। [সহীহ বুখারী, মিশকাত, হা/২৭৬১।]
অনুরূপভাবে মানুষ হালাল খাদ্য পরিত্যাগ করে হারাম খাদ্য গ্রহণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারার ভয়েও তাক্বওয়া অর্জন করতে পারে। হাদীসে এসেছে,
আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে যাবে না। [বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৭৮৭, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬০৯।]
১৯. শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক হওয়া :
তাক্বওয়া অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে শয়তান। সে তার বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষকে তাক্বওয়া অর্জন করা থেকে বিরত রাখে। আর সে হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু, যা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা ফাতির- ৬)
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে (সে জেনে রাখুক যে), নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। (সূরা নূর- ২১)
সুতরাং তাক্বওয়া অর্জনের জন্য শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং সেগুলো থেকে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।
২০. আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস :
সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি স্বচ্ছ ও দৃঢ়ভাবে ঈমান আনয়ন করার মাধ্যমেই অধিক তাক্বওয়া অর্জিত হয়। যখন কোন বান্দা আল্লাহর প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি সর্বদা তার প্রকাশ্য ও গোপন সকল কর্মকান্ডসমূহ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তখন গুনাহ করার সময় এক ধরনের লজ্জাশীলতা অথবা ভয় তৈরি হবে। আর এই বিশ্বাসটি তৈরি হবে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর মাধ্যমে-
সাবধান! তারা তাঁর নিকট গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে, তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। আর অন্তরে যা কিছু আছে, সে সম্পর্কেও তিনি সবিশেষে অবহিত। (সূরা হুদ- ৫)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/575/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।