মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সাথে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ করে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক মর্মস্পর্শী নসীহত করলেন, যাতে চক্ষুসমূহ অশ্রু প্রবাহিত করল এবং অন্তরসমূহ ভীত-বিহবল হলো। এ সময় এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! এ মনে হচ্ছে বিদায় গ্রহণের উপদেশ। আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তখন নবী করীম ﷺ বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার বা তাক্বওয়াবান হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং নেতার কথা শুনতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে হাবশী গোলাম হয়। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অল্প দিনের মধ্যে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাহর বাইরে) নতুন সৃষ্ট কাজ হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কাজই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। [তিরমিযী, হা/২৩০৫; মিশকাত, হা/১৬৫।]
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কোন সময় ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই তাক্বওয়া অবলম্বনের উপদেশ দিতেন। যেমন-
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মৃত্যুকালীন রোগে বিছানায় শুয়েছিলেন, তখন তিনি স্বীয় কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কে সর্বশেষ উপদেশ হিসেবে বলেন,
বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সৈন্যদলের আমীর নির্ধারণ করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করার তথা তাক্বওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ করতেন এবং সাধারণ মুসলিম যুদ্ধাদেরকে তাক্বওয়া অর্জনের উপদেশ দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩১; মিশকাত, হা/৩৯২৯।]
৩. তাক্বওয়াবান ব্যক্তিরাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অধিক নৈকট্য লাভকারী :
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ইয়ামান পাঠান, তখন তিনি তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য তার সাথে বের হলেন। মু‘আয সওয়ারীর উপরে আরোহণ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ সওয়ারীর নিচে হাঁটছিলেন। তিনি উপদেশ শেষে বললেন, মু‘আয! সম্ভবত এ বছরের পর তোমার সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হয়ে যাবে। মু‘আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিচ্ছিন্নতায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং মদীনার দিকে ফিরে দেখলেন। তারপর নবী করীম ﷺ বললেন, তাক্বওয়াবান ব্যক্তিরাই আমার সবচেয়ে নিকটে। তারা যেই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৫২; মিশকাত, হা/৫২২৭।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি এ মর্মে প্রার্থনা করতেন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সঠিক পথ, পরহেযগারিতা, গোনাহ হতে নিষ্কলুষতা এবং অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭২১; মিশকাত, হা/২৪৮৪।]
৫. তাক্বওয়া অবলম্বনে সালফে সালেহীনদের অসিয়ত :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর পর সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈসহ অনেক সালফে সালেহীন লোকদেরকে তাক্বওয়া অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেন। নিম্নে এর মধ্য হতে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো :
(১) আবু বকর (রাঃ) খুৎবা প্রদানকালে বলতেন, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহভীতি অর্জনের, তাঁর যথাযথ প্রশংসা করার, কোন কিছু কামনার সাথে ভীত হওয়ার, কোন কিছু প্রার্থনার ক্ষেত্রে বিনয়ের সংমিশ্রণ ঘটানোর। [ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাক্বওয়া, পৃঃ ১৩-১৪।] কেননা আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া ও তাঁর পরিবার পরিজনের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন,
তারা (নবীগণ) সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করতেন, তারা আমাকে ডাকতেন আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিলেন আমার নিকট বিনীত। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)
যখন আবু বকর (রাঃ) এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং উমরের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন, তখন তিনি উমর (রাঃ)-কে ডেকে বিভিন্ন উপদেশ দিলেন। তাকে তিনি প্রথম যা বললেন, তা হচ্ছে اِتَّقِ اللهَ يَا عُمَرَ হে উমর! আল্লাহকে ভয় করো। [ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাক্বওয়া, পৃঃ ১৩-১৪।]
(২) উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় পুত্র আবদুল্লাহর নিকটে পত্র লিখলেন এ বলে যে,
আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করার। কেননা যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। যে তাঁকে ভয় করবে না, আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন। আর যে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে, তাকে নিয়ামত বাড়িয়ে দিবেন। তাক্বওয়াকে তোমার চোখের মণি ও অন্তরের উজ্জলতা বৃদ্ধিকারী করে নাও। [ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাক্বওয়া, পৃঃ ১৪।]
(৩) আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) কোন অভিযান প্রেরণকালে প্রধান সেনাপতিকে বলতেন,
আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি, যা ব্যতীত কোন কিছু কবুল হয় না। তাক্বওয়াবান ব্যতীত কারো উপর রহম করা হয় না। মুত্তাক্বী ব্যতীত কাউকে সওয়াব দেয়া হয় না। তাক্বওয়ার ব্যাপারে উপদেশ দানকারী অনেক। কিন্তু তাক্বওয়াভিত্তিক আমলকারীর সংখ্যা নগণ্য। আল্লাহ আমাদেরকে ও তোমাদেরকে মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাক্বওয়া, পৃঃ ১৪; শায়খ আলী ইবনু নায়েফ আশ-মুহুদ, মাওসূ‘আতুল খুতাব ওয়াদ দুরুস, পৃঃ ২।]
(৫) শু‘বাহ (রহ.) বলেন, আমি যখন কোথাও গমনের ইচ্ছা করতাম, তখন হাকামকে বলতাম, তোমার কোন প্রয়োজন আছে কি? তখন সে বলত, তোমাকে আমি ঐ উপদেশ দিচ্ছি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে দিয়েছিলেন,
যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় করবে, কোন কারণবশত পাপ কাজ হয়ে গেলে তারপর ভালো কাজ করবে, তা তোমার পাপকে মিটিয়ে দিবে। [তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩।]
(৬) ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ইবনু আওন এক লোককে বিদায় দানকালে বললেন তোমার জন্য আবশ্যক হলো তাক্বওয়া অবলম্বন করা। কেননা মুত্তাক্বী কখনো নিঃসঙ্গ ও একাকী হয় না। [আবদুল আযীয ইবনে মুহাম্মাদ, মাওয়ারিদুয যামআন রিদুরুসিয যামান, মদীনা; ৩০তম সংস্করণ, ১৪২৪ হিঃ, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৭৫।]
(৭) সুফিয়ান সাওরী (রহ.) ইবনু আবী যিবকে বলেন, তুমি আল্লাহকে ভয় করলে তিনি তোমাকে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবেন। আর তুমি মানুষকে ভয় করলে মানুষ তোমাকে আল্লাহ থেকে অমুখাপেক্ষী করতে পারবে না। [ইবনুল কাইয়্যিম, আল-ফাওয়ায়েদ, ১ম খন্ড, মিসর : কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, তা.বি, পৃঃ ৫২।]
হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করা ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পোশাক দান করেছি এবং (আরো দিয়েছি) তাক্বওয়ার পোশাক, আর এটাই সর্বোত্তম (পোশাক)। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, হয়তো তারা (এর মাধ্যমে) উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ২৬)
অত্র আয়াতে তাক্বওয়ার পোশাককেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেননা এটি হচ্ছে এমন পোশাক, যা অন্তরকে আচ্ছাদিত করে রাখে। যার কারণে অন্তর বাহিরের যেকোন প্রকার অসাধু চিন্তাচেতনা থেকে মুক্ত থাকে। অতঃপর তা ব্যক্তির আচার-আচরণ ও বাহ্যিক বেশভূষার মধ্যে ফুটে উঠে।
৭. তাক্বওয়া বান্দার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয় :
মানবজীবন হচ্ছে একটি দীর্ঘ সফরের সমতুল্য। যেকোন সফরের জন্য যেরূপ পাথেয় গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, অনুরূপভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সফরের জন্যও পাথেয় গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া অবলম্বন করা। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো; বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
৮. তাক্বওয়া হচ্ছে মানুষের সম্মান ও মর্যাদার প্রকৃত মানদন্ড :
মানুষ সাধারণত বংশ, গোত্র, সম্পদ ও পরিচিতির মানদন্ডে একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করে থাকে। কিন্তু প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা যেটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য, সেটি কেবল তাক্বওয়ার মানদন্ডেই নির্ধারিত হয়। এজন্যই কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْ﴾
আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত, যারা তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাক্বী। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কোন্ ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মানিত? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক তাক্বওয়াবান, আল্লাহর নিকট সে-ই সবচেয়ে সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৯; সুনানে দারেমী, হা/২২৯।]
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বংশগৌরব বা আভিজাত্য হলো ধন-সম্পদ। আর সম্মান হলো তাক্বওয়া অবলম্বন করা। [বায়হাকী, হা/১৪১৫০; তিরমিযী, হা/৩৩২৫; মিশকাত, হা/৪৯০১।]
উক্ববা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের বংশপরিচয় এমন কোন বস্তু নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সকলেই আদমের সন্তান; দাঁড়িপাল্লার উভয় দিকে যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দ্বীন ও তাক্বওয়া ব্যতীত একের উপর অন্যের কোন মর্যাদা নেই। তবে কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাক্যাচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩১৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৪; জামেউল আহাদীস, হা/৭৫৯১; কানযুল উম্মাল, হা/১৩০০; মাজমাউয যাওয়াইদ, হা/১৩০৭৬।]
জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস- ৬২, ৬৩)
১০. আল্লাহ তা‘আলা তাক্বওয়াবানদের অভিভাবক :
﴿وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ﴾
আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক। (সূরা জাসিয়া- ১৯)
১১. তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করার নির্দেশ :
তাক্বওয়ার ভিত্তিতে যে কাজই করা হোক না কেন, সেটি মানবজাতির জন্য খুবই কল্যাণকর। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টির উপর- সে ব্যক্তি উত্তম? নাকি ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে এমন একটি গর্তের কিনারায়, যার তলায় মাটি নেই। ফলে এটা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের (অতল) আগুনের খাদে গিয়ে পড়বে। আর আল্লাহ কখনো যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা- ১০৯)
অত্র আয়াতে একটি উদাহরণের মাধ্যমে তাক্বওয়াহীন জীবনের অসারতার কথা আলোচনাপূর্বক তাক্বওয়াবান জীবনকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে।
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুতে ব্যপ্ত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করায়? তিনি বললেন, আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন্ জিনিস? তিনি বললেন, তা হলো দুটি গর্ত- মুখ ও লজ্জাস্থান। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৭৬; জামেউল আহাদাী, হা/৩৩৪৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯৪।]
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী হয় তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ২০১)
যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে চায়, তাদের মনে যদি কখনো অসৎ চিন্তার সামান্যতম স্পর্শও লাগে, তাহলে তা তাদের মনকে ঠিক তেমনিভাবে আহত করে, যেমন চোখে বালি পড়লে মানুষ যন্ত্রণাবোধ করে। তাদের বিবেক জেগে উঠে এবং তারা অসৎ প্রবণতার এ ধূলোমাটি ঝেড়ে ফেলার কাজে লেগে যায়। অন্যদিকে যারা আল্লাহকে ভয় করে না, অসৎকাজ থেকে বাঁচতেও চায় না এবং শয়তানকে সাথে রেখে চলে, তাদের মনে অসৎ চিন্তা ও অসৎ উদ্দেশ্য পরিপক্কতা লাভ করতে থাকে এবং তারা এসব পঁচা দুর্গন্ধময় আবর্জনায় কোন প্রকার অস্বস্তি অনুভব করে না।
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। (সূরা আনফাল- ২৯)
যখন আল্লাহ তা‘আলা কাউকে এই শক্তিটি প্রদান করবেন, তখন সে প্রতিটি কর্মের সত্য-মিথ্যা অথবা যথার্থতা সম্পর্কে অতি সহজেই জানতে পারবে। অতঃপর এভাবেই সে মনজিলে মাকসূদে পৌঁছে যাবে।
যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
২০. তাক্বওয়াবান ব্যতীত অন্য কারো জন্য সম্পদ ব্যয় করা উচিত নয় :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, ঈমানদার ছাড়া কাউকে সাথী করো না। আর পরহেযগার ব্যতীত কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়। [তিরমিযী, হা/২৩৯৫; আবু দাউদ, হা/৪৮৩৪।]
আবু যর গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে বা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে। কোন কারণবশত পাপ কাজ হয়ে গেলে তারপর ভালো কাজ করবে। তা তোমার পাপকে মিটিয়ে দেবে। [তিরমিযী, হা/১৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩৫৪; সুনানে দারেমী, হা/২৮৪৭; মিশকাত, হা/৫০৮৩।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে যাবে না। দুধ যেমন গাভীর ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথের ধুলা এবং জাহান্নামের আগুন একসাথে জমা হবে না। [তিরমিযী, হা/১৬৩৩; নাসাঈ, হা/৩১০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৬৯, ৩৩২৪; মিশকাত, হা/৩৮২৮।]
বলো, দুনিয়ার জীবন ও সম্পদ খুবই নগণ্য। আর পরকাল খোদাভীরু লোকদের জন্য সর্বাধিক উত্তম; অনন্তর তোমাদের প্রতি একবিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ৭৭)
২৪. তাক্বওয়া সফলতা লাভের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম :
হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ১)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন পরস্পর গোপন কথা বল, তখন গোনাহ, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের নাফরমানির কথাবার্তা বলো না; বরং সৎকর্ম ও আল্লাহকে ভয় করে চলার কথাবার্তা বলো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার সামনে তোমাদের সকলকে একত্রিত করা হবে। (সূরা মুজাদালাহ- ৯)
তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে ভয় করো; শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো এবং আল্লাহর পথে ধনসম্পদ ব্যয় করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যে সকল লোক তার মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা পেয়ে গেল, শুধু তারাই সফলকাম। (সূরা তাগাবুন- ১৬)
যারা কুফরী করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। ফলে তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে, অথচ কিয়ামতের দিন মুত্তাক্বীরাই তাদের ওপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১২)
অতএব আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের কল্যাণ লিখে দিন। আমরা আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। আল্লাহ বলেন, শাস্তি তো আমি যাকে ইচ্ছা তাকে দেই, কিন্তু আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণনা করো। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদা- ২৭)
হে ঈমানদারগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে জিহাদ করো, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
আর মুশরিকদের সাথে তোমরা সকলে মিলে লড়াই করো, যেমনিভাবে তারা সকলে মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করছে। আর জেনে রেখো! আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তওবা- ৩৬)
মুমিনরা একে অপরের ভাই। অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে নাও। আর আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের ওপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
হে ঈমানদারগণ! অধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কোন কোন ধারণা গোনাহের নামান্তর; তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় খোঁজাখুঁজি করো না। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের গীবত না করে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বরং তোমরা নিজেরাই তো এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে থাক। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও দয়াবান। (সূরা হুজুরাত- ১২)
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট প্রবেশ করলাম। এরপর বর্ণনাকারী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। এক পর্যায়ে বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। নবী করীম ﷺ বললেন, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি তাক্বওয়া তথা খোদাভীতি অবলম্বন করো। কেননা এটা তোমার সমস্ত কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে দেবে। [শু‘আবুল ঈমান হা/৪৯৪২; মিশকাত হা/৪৮৬৬।]
আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করো। কেননা এটাই সমস্ত কল্যাণের মূল উৎস। [জামেউল আহাদীস হা/১৪২৪৭; কানযুল উম্মাল হা/৪৩৪৩৭; মু‘জামুয যাওয়াইদ হা/১৮১৭১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০০০।]
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মৃত্যুবরণ করবে না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জনের চেষ্টা করো। রিযিকপ্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদের অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে, তা কেবল তাঁর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। [কানযুল উম্মাল হা/৯৩০৯; জামেউল আহাদীস হা/১৯৩৭৫।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/575/7
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।