মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
اَلتَّقْوٰى (আত-তাক্বওয়া) শব্দের ন্যায় اَلْمُتَّقِى (আল-মুত্তাক্বী) শব্দটিও وَقَايَةٌ শব্দ থেকে উৎপন্ন। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহভীতি অর্জনকারী, হেফাজতকারী, রক্ষাকারী ইত্যাদি। আর ইসলামিক পরিভাষায় মুত্তাক্বী বলা হয় ঐসব ব্যক্তিকে, যাদের মধ্যে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহে বর্ণিত মুত্তাক্বীদের গুণাবলি যথাযথভাবে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যার মধ্যে যতবেশি গুণের সমাবেশ ঘটবে, সে তত বড় মুত্তাক্বী হিসেবে বিবেচিত হবে। নিম্নে মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. মুত্তাক্বীরা গায়েবের প্রতি সুদৃঢ় ঈমান আনয়ন করে :
মুত্তাক্বীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয়সমূহের প্রতি যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। যেমন- আল্লাহর প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি, জান্নাতের সুখ ও জাহান্নামের শাস্তির প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে মুত্তাক্বীদের গুণাবলী বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম এ বৈশিষ্ট্যটিই উল্লেখ করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।
(সূরা বাক্বারা, ২-৫)
অত্র আয়াত থেকে আরো জানা যায় যে, মুত্তাক্বীগণ যথাযথভাবে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, হালাল পন্থায় উপার্জন করে এবং তা হতেই ব্যয় করে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে এবং তারা সর্বদা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
২. মুত্তাক্বীগণ সর্বদা সৎকর্মে ব্যস্ত থাকে :
মুত্তাক্বী বান্দাগণ নিজেদেরকে সর্বদা সৎকর্মে ব্যস্ত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে তাদের পরিচয় প্রদানপূর্বক কিছু বিশেষ সৎকর্মের কথা উল্লেখ করে বলেন,
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসত্ব মোচনের জন্য দান করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে ও অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে। আর যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা - ১৭৭)
৩. মুত্তাক্বীগণ মানুষকে ক্ষমা করে :
মুত্তাক্বীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা অন্যদেরকে ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنْ تَعْفُوْاۤ أَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى﴾
মাফ করে দেয়াই তাক্বওয়ার নিকটতম। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ২২)
অতএব যেহেতু মুত্তাক্বীগণ সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যস্ত থাকে, সুতরাং তারা অনেক সময় কারো কাছ থেকে অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণ না করে তাকে ক্ষমা করার মাধ্যমেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের অন্যতম দাবি। কেননা প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধ সীমা হচ্ছে, কারো প্রতি যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে সে তার প্রতি ঠিক ততটুকুই প্রতিশোধ নেবে। তার চেয়ে বেশি কিছু করার অধিকার তার নেই। অন্যের কৃত যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে যেয়ে নিজেই যালিম হওয়া উচিত নয়। একটি অন্যায়ের পরিবর্তে তার চেয়ে বড় অন্যায় করে ফেলা বৈধ নয়। যদি কেউ কাউকে একটি চপেটাঘাত করে তাহলে সে তাকে একটি চপেটাঘাতই করতে পারে, অসংখ্য লাথি ও ঘুষি মারতে পারে না। অনুরূপ গোনাহের প্রতিশোধ গোনাহের কাজের মাধ্যমে নেয়া ঠিক নয়। যেমন কোন দুষ্ট লোক যদি কারো বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করে, তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য তার বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করা জায়েয হবে না।
৪. মুত্তাক্বীগণ ক্রোধ সংবরণ করে থাকে :
মুত্তাক্বীদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা সর্বদা ক্রোধ সংবরণ করে চলে এবং একান্ত বাধ্য না হলে তা প্রকাশ করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা স্বচ্ছলতা ও অভাবের মধ্যে থেকেও ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৪)
উল্লেখ্য যে, তাদের ক্রোধান্বিত হওয়ার ভিত্তিটিও তাদের ঈমানের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং যখন তারা আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোন কাজ করতে দেখে, তখন ক্রোধান্বিত হয় এবং যখন আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কোন কাজ করতে দেখে, তখন আনন্দিত হয়।
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী- শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়।
(সূরা আ‘রাফ- ২০১)
অতএব শয়তান যখন তার কুমন্ত্রণা প্রয়োগের মাধ্যমে কোন মুত্তাক্বী বান্দাকে বিচ্যুত করতে সক্ষম হয়, তখন সাথে সাথেই তাদের অন্তরে তা ধরা পড়ে যায়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং আল্লাহর কথা স্মরণপূর্বক বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করে পুনরায় নেকীর কাজসমূহে মনোযোগী হয়। অতঃপর তারা এর উপরই অটল থাকে।
৬. মুত্তাক্বীগণ সগীরা গোনাহসমূহ হতেও বিরত থাকে :
মুত্তাক্বীগণ কবীরা গুনাহসমূহ হতে বিরত থাকার পাশাপাশি সগীরা গুনাহসমূহের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। তারা সগীরা গুনাহসমূহকে সগীরা গুনাহ মনে না করে কবীরা গুনাহের সমতুল্যই মনে করে থাকে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি (ভাষণ প্রদানকালে) বলেন, (হে লোকসকল!) তোমরা এমন এমন কাজ করে থাক, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চোরের চেয়ে সূক্ষ্ম। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় আমরা সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক মনে করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৯২; বায়হাকী হা/২১২৮০; সুনানে দারেমী হা/২৮২৪।]
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী ﷺ এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে যে, যেন সে একটা পর্বতের নিচে বসে রয়েছে। আর সে আশংকা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপরে ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৮।]
৭. তারা শয়তান ও তার সঙ্গীদের থেকে দূরে থাকে :
মুত্তাক্বীগণ সর্বদা শয়তান ও তার অনুচরদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কেননা তারা ভালো করেই জানে যে, তারা কখনো তাদের কল্যাণ কামনা করে না। বরং শয়তান ও তার অনুচরবৃন্দ সর্বদা আল্লাহর বান্দাদেরকে কীভাবে পথভ্রষ্ট করা যায়- এই কর্মেই ব্যস্ত থাকে এবং মানুষকে এর দিকেই আহবান করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সততা নেকীর পথ দেখায় এবং নেকী জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে, তাকে আল্লাহর নিকটে সত্যনিষ্ঠ হিসেবে লিখে নেয়া হয়। আর মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায় এবং পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর নিকটে মিথ্যুক হিসেবে লিখে নেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬০৭।]
৯. তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে :
আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সেগুলোকে সম্মান করা ঈমানের অন্যতম একটি দাবি। তাই এটিও মুত্তাক্বীদের জন্য অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যদি কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে, তবে এটা তো তার অন্তরের তাক্বওয়া মাত্র। (সূরা হজ্জ- ৩২)
উল্লেখ্য যে, شَعَآئِرَ তথা নিদর্শনাবলী দু’ধরনের হতে পারে- (১) আল্লাহর ইবাদাতমূলক কর্ম তথা সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি। (২) আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন স্মৃতিচিহ্ন তথা বাইতুল্লাহ বা কা‘বাঘর, সাফা-মারওয়া, কুরবানীর জন্য চিহ্নিত জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ ইত্যাদি। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকায়িত তাক্বওয়ার ফলেই সংঘটিত হয়। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি জেনে-বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কোন অমর্যাদা পোষণ করে, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মনে আল্লাহর কোন ভয় নেই।
১০. তারা সর্বদা ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে :
মুত্তাক্বীগণ সর্বক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে থাকে। যেমন- তিনি বলেন,
তোমরা ইনসাফ করো, কারণ এ কাজটি আল্লাহকে ভয় করে চলার অধিক নিকটতর পন্থা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত। (সূরা মায়েদা- ৮)
অনুরূপভাবে তারা স্বীয় নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারেও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে। কেননা হাদীসে এসেছে,
আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি সম্মত নই। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সকল ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। নুমান বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৭; বায়হাকী, হা/১২৩৫১; মিশকাত, হা/৩০১৯।]
১১. মুত্তাক্বীগণ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে :
জিহাদ হচ্ছে ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। এর মধ্যেই রয়েছে শাহাদাতের বিশেষ মর্যাদা। আর এর প্রয়োগ ক্ষেত্রও ব্যাপক। এর জন্য অনেক সময় জান ও মাল বিলিয়ে দেয়াও আবশ্যক হয়ে যায়। তাই মুত্তাক্বীগণ আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য নিজেদেরকে সর্বদা প্রস্তুত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
১২. মুত্তাক্বীগণ সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করে :
সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করা তাক্বওয়ার অন্যতম পরিচায়ক। কেননা অনেক সন্দেহযুক্ত বিষয় এরূপ রয়েছে যে, সেগুলো পালন করলে গুনাহে পতিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তা হতে বিরত থাকলেও কোন সমস্যা নেই। এরূপ আশংকাবোধের কারণে মুত্তাক্বী ব্যক্তিগণ অনেক সময় অনেক বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,
মানুষের মনে যে বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় সেটা ত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ তাত্বওয়ার উচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারবে না । [সহীহ বুখারী, কিতাবুল ঈমান, মুয়াল্লীক সূত্রে বর্ণিত।]
মুত্তাক্বী (আল্লাহভীরু) হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে সেসব বিষয়ও পরিত্যাগ করে, যাতে ক্ষতি নেই। এ ভয়ে যে যাতে ক্ষতি আছে (তাতে পতিত না হয়)। [তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২০১।]
নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট, আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে, সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল যদি সংরক্ষিত চারণভূমির পাশে পশু চরায়, তাহলে এ আশংকা রয়েছে যে, সে পশু তার ভেতরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক রাজারই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর হারামকৃত বিষয়সমূহ। জেনে রেখো! দেহের মধ্যে এক টুক্রা গোশ্ত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে, তখন সমস্ত দেহই সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায়, তখন সমস্ত দেহই নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রেখো! তা হলো ‘কাল্ব’ তথা হৃদয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৯৮; মিশকাত, হা/২৭৬২।]
আবু হাওরা‘ আস-সাদী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাসান ইবনে আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কী মুখস্ত করেছেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে মুখস্ত করেছি যে, সন্দেহযুক্ত বিষয় ছেড়ে সন্দেহমুক্ত বিষয়ের দিকে ধাবিত হও। [তিরমিযী, হা/২৫১৮; সুনানে দারেমী, হা/২৫৮৭; নাসাঈ, হা/৫৭১১।]
১৩. মুত্তাক্বীগণ কিয়ামত দিবসের শাস্তিকে ভয় করে :
কিয়ামত হচ্ছে পৃথিবীতে আগত সমস্ত মানুষের একত্রিত হওয়ার দিন। এ দিনের পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। তাই মুত্তাক্বীগণ সর্বদা এ দিবসের শাস্তিকে খুবই ভয় করে থাকে। কুরআন মাজীদে এসেছে,
যারা ভয় করে এ দ্বারা তুমি তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করো যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হবে। এমতাবস্থায় তিনি ব্যতীত তাদের জন্য অন্য কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না। (এ উপদেশের মাধ্যমে) হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা আন‘আম- ৫১)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, তুমি এ কুরআন দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করো, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, ক্বিয়ামতের দিন তারা প্রভুর রহমত লাভ করবে। যেদিন তাদের কোন স্বজন ও সুপারিশকারী থাকবে না, যদি তিনি তাদেরকে শাস্তি দিতে চান। যাতে তারা তাক্বওয়াবান হয়। আর তাদেরকে সতর্ক করুন এটা দ্বারা যে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত কোন ফায়সালাকারী নেই। যাতে তারা মুত্তাক্বী হয়। ফলে তারা এ দুনিয়াতে এমন আমল করবে, যা দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিবেন এবং এর দ্বারা তাদের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। [তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/৪৫৫।]
অতএব মুত্তাক্বীগণ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিনকে ভীষণভাবে ভয় করে এবং তার জন্য যথাসাধ্য প্র্রস্তুতি গ্রহণ করে। এতদসত্ত্বেও তারা গোপন ক্রটি ও অপ্রকাশ্য পাপ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় সন্ত্রস্ত হয়ে কাঁদে। তারা সেদিনের ভয় করে, যেদিন চোখ নিম্নগামী হবে, কণ্ঠস্বর থেমে যাবে, এদিক-সেদিক তাকানো বন্ধ হয়ে যাবে। গোপনীয়তা প্রকাশ্য হয়ে যাবে, আড়ালের পাপ বেরিয়ে পড়বে, মানুষ তাদের আমলনামা নিয়ে চলবে, ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, বৃদ্ধরা উন্মাদ হয়ে যাবে। বন্ধু দুষ্প্রাপ্য হবে, জাহান্নাম দৃষ্টির সামনে চলে আসবে। কাফেররা হতাশ হয়ে পড়বে, আগুন প্রজ্বলিত হবে, মানুষের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যাবে এবং তাদের বাকশক্তি রুদ্ধ করা হবে, কথা বলবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
১৪. মুত্তাক্বীগণ কিয়ামত দিবসের জবাবদিহিতাকে ভয় করে :
মুত্তাক্বী বান্দাগণ কিয়ামত দিবসে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতা করাকে খুবই ভয় করে থাকে। কুরআন মাজীদে এসেছে,
ইতিপূর্বে আমি মূসা ও হারূনকে সত্য-মিথ্যার ফায়সালাকারী জ্যোতির্ময় এবং মুত্তাক্বীদের জন্য নসীহত তথা উপদেশবাণী সম্বলিত কিতাব তাওরাত প্রদান করেছি, যারা না দেখেই নিজেদের প্রভুকে ভয় করে। আর যারা (হিসাব-নিকাশের বিভীষিকাময়) কিয়ামতের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। (সূরা আম্বিয়া- ৪৮, ৪৯)
১৫. মুত্তাক্বীগণ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে :
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাটা হচ্ছে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশ। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অনেক সুস্পষ্ট নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে। যেমন- কুরআন মাজীদে ‘উলুল আলবাব’ তথা বিবেকবান বান্দার গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে,
সুতরাং তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তাকেও ভয় করো (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো), নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
যুবাইর ইবনে মুতঈম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯৮।]
অতএব মুত্তাক্বীগণ যে কোন ধরনের সম্পর্ক বিশেষ করে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। সুতরাং এটা তাদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
১৬. মুত্তাক্বীগণ রাত্রিজাগরণ করে আল্লাহর ইবাদাত করে :
নফল ইবাদাতসমূহের মধ্যে রাত্রিজাগরণ তথা শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করাটা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হওয়া যায়। আর মুত্তাক্বী বান্দাগণ কখনো এ সুযোগ হাতছাড়া করে না। এজন্যই কুরআন মাজীদে মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে,
তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশার সাথে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা- ১৬)
অত্র আয়াতে দেহকে বিছানা থেকে আলাদা বলতে রাত্রিজাগরণ করে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করাকেই বুঝানো হয়েছে।
১৭. মুত্তাক্বীগণ পৃথিবীতে দম্ভ করে বেড়ায় না :
পৃথিবীতে দম্ভ করে বেড়ানো এবং সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা অবশ্যই শয়তানের কাজ। মুত্তাক্বী বান্দাগণ কখনো এরূপ কর্মে লিপ্ত হয় না। বরং তারা সর্বদা এর বিপরীত কর্মে তথা যারা এরূপ কর্মে লিপ্ত তাদেরকে দমানো যায়, সেই কাজে সচেষ্ট থাকে। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
এটা (জান্নাত) আখিরাতের সে আবাস যা আমি নির্ধারিত করে রেখেছি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ক্বাসাস- ৮৩)
১৮. মুত্তাক্বীগণ অত্যন্ত ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনীত ও অনুগত হয়ে থাকে :
হে নবী, আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চেয়ে উত্তম জিনিসের সন্ধান দেব? (তবে শোনো!) যারা মুত্তাক্বী তাদের জন্য স্বীয় প্রভুর নিকট রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়, সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে, পবিত্র স্ত্রীগণ তাদের সাথী হবে এবং সন্তোষলাভে তারা ধন্য হবে; আল্লাহ নিশ্চয় তার বান্দাদের উপর গভীর দৃষ্টি রাখেন। (এসব মুত্তাক্বী লোকদের পরিচয় হল-) যারা বলে, হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহসমূহ মাফ করে দাও এবং আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনীত, অনুগত, দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী।
(সূরা আলে ইমরান : ১৫-১৭)
১৯. মুত্তাক্বীগণ ইবাদাত করে ভয় ও আশা সহকারে :
কারো ইবাদাত কবুল হওয়া এবং না হওয়াটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তাই কোন ইবাদাত করার পর সেটা কবুল হবেই হবে অথবা অবশ্যই বাতিল হবে- এরূপ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। বরং এ ক্ষেত্রে এরূপ ধারণা পোষণ করতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা এটি ইচ্ছা করলে কবুল নাও করতে পারেন এবং দৃঢ়ভাবে এ আশায়ও রাখতে হবে যে, এটি আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন। এ কারণেই মুত্তাক্বী বান্দাগণ ইবাদাত করে ভয় ও আশার সাথে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায়।
(সূরা সাজদা- ১৬)
উল্লেখ্য যে, এরূপ ধারণা অবশ্যই যথাসম্ভব আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ অনুসারে করতে হবে।
এই হলো মুত্তাক্বী বান্দাদের প্রকৃত পরিচয়। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের সমাজে মুত্তাক্বী বান্দাদের পরিচয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করা হয়ে থাকে, যা অতি বিভ্রান্তিকর। যেমন-
কেউ কেউ মনে করে যে, যে ব্যক্তি অধিক অপরিচ্ছন্ন থাকে, ছেঁড়া জামা পরিধান করে, চুল এলোমেলো ও জমাটবাধা অবস্থায় থাকে, সে-ই মুত্তাক্বী ব্যক্তি।
আবার কেউ কেউ মনে করে যে, যে ব্যক্তি সমাজে ও রাষ্ট্রের নানা ধরনের ঝামেলা থেকে বিশেষ করে রাজনৈতিক ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু মসজিদে বসে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করে, সে-ই সবচেয়ে বড় মুত্তাক্বী।
সুতরাং কাউকে মুত্তাক্বী হিসেবে আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই এসব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া অতি জরুরি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/575/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।