HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য

লেখকঃ ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য

ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী

অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ; শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর ঐসব বান্দাদের উপর, যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন; আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, পুনরুত্থান সত্য, কিয়ামত সত্য, সিরাত (পুলসিরাত) সত্য, হিসাব-নিকাশ সত্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা কিছু বলেছেন, তার সবকিছুই সত্য।

অতঃপর:

যখন " وصف الجنة و النار من صحيح الأخبار "(সহীহ হাদিসের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা) নামক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পায়, তখন আমি দেখলাম যে, তার ব্যাপারে এবং তার বাইরে অন্যান্য গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির ব্যাপারে মানুষের সবিশেষ আকর্ষণ, যেগুলোতে শুধু সহীহ হাদিসই সংকলিত হয়েছে এবং তার মধ্য থেকে এই বিশাল একটি সংখ্যা বিতরণ করা হয়ে গেছে; আর এটা বার্তা বহন করে নির্ভেজাল জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক জাগরণের; আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, একজনন সত্যিকার মুসলিম যুবক এমন নয় যে, তার নিকট প‍ঁচা ও মূল্যবান সবকিছু যাই পেশ করা হবে তা সমভাবে গ্রহণ করবে; বরং সে বাছাই ও পছন্দ করে গ্রহণ করবে; কারণ, জীবন সংক্ষিপ্ত, আর জ্ঞানের পরিধি অনেক ব্যাপক।

আর এ জন্যই আমি এই পুস্তিকার মধ্যে পুনরায় দৃষ্টি দিয়েছি; অতঃপর আমি প্রথম সংস্করণের মধ্যে হওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করে নিয়েছি এবং ২১ নং হাদিসটি বিলুপ্ত করে দিয়েছি; কারণ, তার সনদের উৎকৃষ্টতা ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আমি হাফেয আল-মুনযেরীকে অনুসরণ করেছিলাম, অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, এটা হয়েছিল তাঁর উদারত ও নমনীয়তার কারণে; অতঃপর আমি প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদের শুরুতে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ প্রতিস্থাপন করেছি এবং কয়েকটি হাদিস অতিরিক্ত উল্লেখ করেছি, যা প্রথম সংস্করণের সাথে তুলনা করলে স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। পূর্বের সংস্করণে হাদীস সংখ্যা ছিল ৭৫টি; আর দ্বিতীয় সংস্করণে হাদিসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬টিতে [প্রকৃতপক্ষে এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে হাদিসের সংখ্যা হবে ৯৫টি; কেননা, হাদিসের ক্রমিক নং উল্লেখ করার সময় ৭১ এর পরে ৭২ না লিখে ৭৩ লিখেছেন। আর আমিও লেখক যেভাবে হাদিসের ক্রমিক সংখ্যা ব্যবহার করেছেন ঠিক সেভাবে ব্যবহার করেছি। - অনুবাদক।]।

অতঃপর আমি জানিয়ে দিতে চাই যে, এর মধ্যে যা বর্ণিত হয়েছে, তাকেই আমি চূড়ান্ত সংখ্যা বলে মনে করি না; বরং আমি বিষয়বস্তুর উপর তাকে সংক্ষিপ্ত উদ্দীপক হিসেবে উপস্থাপন করেছি; আর অনুরূপভাবে তথ্য পেশ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করি নি; তবে পাঠকের সামনে হাদিসের মান সম্পর্কিত একেবারে কাছাকাছি ও সর্বজন প্রসিদ্ধ পদ্ধতিটি পেশ করেছি।

এই তো আমার কথা; আমি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যাতে তাঁর অনুগ্রহ ও করুনায় পদস্খলন থেকে রক্ষা করেন, আমাদেরকে উপকারী ও সঠিক জ্ঞান দান করেন এবং আমাদের জ্ঞানকে কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য দলিল-প্রমাণ বানিয়ে দেন।

হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসাসহ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তাওবা করছি।

লেখক:

আল্লাহ তা‘আলার দারস্থ এক ফকীর বান্দা

ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী

১৪ সাওয়াল ১৪১০ হি.

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট হিদায়াত চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমরা আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সুতরাং আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

অতঃপর:

সবচেয়ে সত্য কথা হল আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হিদায়েত হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত; আর নিকৃষ্ট কাজ হল দীনের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়; আর প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবনই হল বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আতই গুমরাহী; আর প্রত্যেক গুমরাহীর স্থান হবে জাহান্নামে। নিশ্চয়ই যা কম ও যথেষ্ট, তা ঐ বস্তু থেকে অনেক উত্তম, যা পরিমাণে বেশি ও অনর্থক হয়। আর তোমাদেরকে যেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, অবশ্যই তা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে; আর তোমরা তা প্রতিহত করতে পারবে না।

অতঃপর: জান্নাত ও জাহান্নাম প্রসঙ্গে বহু গ্রন্থ রয়েছে, কিন্তু সেই গ্রন্থগুলো সহীহ ও দুর্বল হাদিসকে এক সাথে সংগ্রহ করেছে এবং ঐসব গ্রন্থের লেখকগণ এই ক্ষেত্রে চরম শৈথিল্য প্রদর্শন করেছেন; আর এই ক্ষেত্রে তারা যুক্তি পেশ করেছেন যে, এগুলো হল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পর্যায়ভুক্ত; অথচ এর মধ্যে দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রুটি রয়েছে:

প্রথমত: জান্নাত ও তার মধ্যকার নিয়ামত অথবা জাহান্নাম ও তার মধ্যকার শাস্তির বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করার বিষয়টি গায়েব বা অদৃশ্য জগতের বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত, আর গায়েবী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা খাঁটি ইসলামী আকিদার অন্তর্ভুক্ত বিষয়; সুতরাং এই ব্যাপারে কিভাবে শৈথিল্য প্রদর্শন বা অবহেলা করা যাবে?!

দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি হাদিসের কিতাবসমূহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং সুন্নাহ’র পাশে থেকে পড়াশুনা ও গবেষণায় ব্যস্ত থাকবে, সে বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের মধ্যেই এমন সব কাঙ্খিত বিষয় ও বস্তু পেয়ে যাবে, যা সর্বপ্রকার দুর্বল ও জাল (মাউযু) হাদিস থেকে তাকে প্রয়োজনমুক্ত করবে।

এ জন্য আমি জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে এই পাণ্ডুলিপি সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং তা সংকলনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ হাদিসগুলোর উপর নির্ভর করেছি, যাতে প্রত্যেক খতিব (বক্তা) ও ওয়ায়েয (উপদেশ দাতা) যখন এই বিষয়ের উপর কথা বলবেন বা আলোচনা পেশ করবেন, তখন তার হাতে এর একটি কপি থাকে এবং তার যাতে দুর্বল বা বানোয়াট (মাউযু) হাদিসের আশ্রয় নিতে না হয়।

প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের ঘ্রাণ
১. আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« من قتل معاهدا , لم يرح رائحة الجنة , وإن ريحها توجد من مسيرة أربعين عاما » . ( رواه البخاري ) .

“যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: যিম্মীদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ এবং হারবীদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ( أبواب الجزية والموادعة ), পরিচ্ছেদ: বিনা অপরাধে যে ব্যক্তি যিম্মীকে হত্যা করবে, তার অপরাধ ( باب إثم من قتل معاهدا بغير جرم ), হাদিস নং- ২৯৯৫।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( لم يرح ): لم يشم অর্থাৎ- সে ঘ্রাণ পাবে না।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাতের দরজাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [ الرعد : ٢٣، ٢٤ ]

“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও। আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।” [সূরা আর-রা‘দ: ২৩ - ২৪]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مَ‍َٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ ﴾ [ص: ٤٩، ٥٠ ]

“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস— চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।” [সূরা সোয়াদ: ৪৯ - ৫০]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [ الزمر : ٧٣ ]

“আর যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা জান্নাতের কাছে আসবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা ভাল ছিলে, সুতরাং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।” [সূরা যুমার: ৭৩]

২. ‘উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« من شهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له , وأن محمدا عبده ورسوله , وأن عيسى عبد الله ورسوله وكلمتة ألقاها إلى مريم وروح منه , والجنة حق , والنار حق ، أدخله الله الجنة على ما كان من العمل » . و في رواية : « من أبواب الجنة الثمانية أيها شاء » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; আর ঈসা আ. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর কালেমা, যা তিনি মারইয়ামের নিকট পরিবেশন করেছেন এবং তিনি (ঈসা আ.) হলেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (নির্দেশ); আর যে ব্যক্তি আরও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত সত্য এবং জাহান্নাম সত্য, তাহলে সে যে আমল করত, তার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অপর এক বর্ণনায় আছে: জান্নাতের আটটি দরজার মধ্য থেকে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: নবীগণ ( كتاب الأنبياء ), পরিচ্ছেদ: তার কথা: হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না ... ( باب قوله : يا أهل الكتاب لا تغلوا في دينكم ...), হাদিস নং- ৩২৫২]

৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« من أنفق زوجين في سبيل الله نودي من أبواب الجنة : يا عبد الله ! هذا خير , فمن كان من أهل الصلاة دعي من باب الصلاة , ومن كان من أهل الجهاد دعي من باب الجهاد , ومن كان من أهل الصيام دعي من باب الريان , ومن كان من أهل الصدقة دعي من باب الصدقة » . فقال أبو بكر رضي الله عنه : بأبي أنت وأمي يا رسول الله ! ما على من دعي من تلك الأبواب من ضرورة , فهل يدعى أحد من تلك الأبواب كلها ؟ . قال : « نعم , وأرجو أن تكون منهم » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটা উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তথা আল্লাহ পথে জিহাদকারী, তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান নামক দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে সাদকা দানকারী, তাকে সাদকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা ও মাতা কুরবান হউক! সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো আবশ্যকতা নেই, তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, আমি আশা করি তুমি হবে তাদের মধ্যে একজন।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সাওম ( كتاب الصوم ), পরিচ্ছেদ: সাওম পালনকারীদের জন্য রাইয়্যান ( باب الريان للصائمين ), হাদিস নং- ১৭৯৮; মুসলিম (৭ / ১১৬ - নববী)।]

৪. খালিদ ইবন ‘উমাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«خَطَبَنَا عُتْبَةُ بْنُ غَزْوَانَ , فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ , ثُمَّ قَالَ : أَمَّا بَعْدُ , فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ آذَنَتْ بِصُرْمٍ , وَوَلَّتْ حَذَّاءَ , وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلاَّ صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الإِنَاءِ , يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا , وَإِنَّكُمْ مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لاَ زَوَالَ لَهَا , فَانْتَقِلُوا بِخَيْرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ , فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ , فَيَهْوِى فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا , وَوَاللَّهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ , وَلَقَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ أَرْبَعِينَ سَنَةً , وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ , وَلَقَدْ رَأَيْتُنِى سَابِعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الشَّجَرِ , حَتَّى قَرِحَتْ أَشْدَاقُنَا ... » . ( رواه مسلم ) .

“উতবা ইবন গাযওয়ান আমাদের সামনে ভাষণ দিয়েছেন; তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: নিশ্চয় দুনিয়া তার চলে যাওয়ার জানান দিচ্ছে, দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে, পানি পানকারী ব্যক্তির পাত্রের অবশিষ্ট পানির মত তার সময় সামান্যই বাকি আছে; আর তোমরা নিশ্চিতভাবে দুনিয়ার জগৎ থেকে এমন জগতের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছ, যার কোনো ধ্বংস নেই; সুতরাং তোমাদের সামনে যে ভাল কাজ আছে, তা নিয়ে প্রস্থান কর। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়েছে যে, একটি পাথর জাহান্নামের কিনার থেকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে, অতঃপর তা নীচের দিকে ধাবিত হবে সত্তর বছর, কিন্তু সে পাথরটি তার (জাহান্নামের) তলার নাগাল পাবে না; আল্লাহর কসম! সেই জাহান্নামকে পূর্ণ করা হবে; তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছ? আর আমাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব হবে চল্লিশ বছরের ভ্রমণপথের মত; আর তার (জান্নাতের) সামনে অবশ্যই একদিন আসবে, যেদিনটি ভিড়ের কারণে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করবে; আর অবশ্যই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমাকে সাত জনের সপ্তম ব্যক্তি হিসেবে দেখেছি, যখন গাছের পাতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো খাবার ছিল না, এমনকি আমাদের দুই গালের অভ্যন্তরস্থ মুখের প্রান্তদেশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে ...।” [মুসলিম (১৮ / ১০২ - নববী) হাদিসটি মাওকুফ।]

৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ... وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ لَكَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرٍ أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“... শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের দূরত্বের মত; অথবা বর্ণনাকারী বলেন: মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর ( كتاب التفسير ), পরিচ্ছেদ: সূরা বনী ইসরাঈল [আল-ইসরা] ( باب سورة بني إسرائيل [ الإسراء ]), হাদিস নং- ৪৪৩৫; মুসলিম (৩ / ৬৯ - নববী)।]

৬. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«في الجنة ثمانية أبواب فيها باب يسمى الريان لا يدخله إلا الصائمون » . ( رواه البخاري ) . و رواه أحمد عن عتبة بن عبد السلمي مرفوعا بلفظ : «الجنة لها ثمانية أبواب , و النار لها سبعة أبواب » .

“জান্নাতের মধ্যে আটটি দরজা রয়েছে, তাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে, তা দিয়ে শুধু সাওম পালনকারীগণই প্রবেশ করবে।” আর আহমদ র. ‘উতবা ইবন আবদ আস-সুলামী থেকে ‘মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছন: “জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, আর জাহান্নামের রয়েছে সাতটি দরজা।” [বুখারী, আস-সহীহ (৬ / ৩২৮ – ফতহুল বারী); আহমদ র. এর বর্ণনাটিকে আলবানী বিশুদ্ধ বলেছেন: ‘আস-সহীহা’ ( الصحيحة ), ক্রমিক নং- ১৮১২]

৭. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ , فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا , إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ , فَيُقَالُ : أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا » . ( رواه مسلم ) .

“সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এমন প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে নি; তবে ঐ ব্যক্তি ক্ষমার বাইরে থাকে, যে ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ বা শত্রুতা রয়েছে; অতঃপর (ফেরেশ্তাদেরকে) বলা হয়: তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।” [মুসলিম (১৬ / ১২২ - নববী)।]

৮. ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ , فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوُضُوءَ , ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له , وَ أشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ , يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ » . ( رواه مسلم و الترمذي ) .

“তোমাদের যে কেউ পূর্ণরূপে উযু করে এই দো‘আ পাঠ করবে: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له , وَ أشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল), তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” [মুসলিম ও তিরমিযী।]

তৃতীয় পরিচ্ছেদ: সর্বপ্রথম যার জন্য জান্নাত খুলে দেয়া হবে
৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الْجَنَّةِ » . ( أخرجه مسلم ) .

“কিয়ামতের দিনে নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।” [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “আমি প্রথম ব্যক্তি, যে জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করব, আর নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি” ( باب فِى قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم : « أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا » ), হাদিস নং- ৫০৫]

১০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« آتِى بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ : مَنْ أَنْتَ ؟ فَأَقُول : ُ مُحَمَّدٌ , فَيَقُولُ : بِكَ أُمِرْتُ لاَ أَفْتَحُ لأَحَدٍ قَبْلَكَ » . ( أخرجه مسلم ) .

“কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলব, মুহাম্মদ। খাজাঞ্চি বলবেন: ‘আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না’।” [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “আমি প্রথম ব্যক্তি, যে জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করব, আর নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি” ( باب فِى قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم : « أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا » ), হাদিস নং- ৫০৭]

চতুর্থ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী মানুষ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [ الزمر : ٧٣ ]

“আর যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা জান্নাতের কাছে আসবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা ভাল ছিলে, সুতরাং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।” [সূরা যুমার: ৭৩]

১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« كُنْتُ قَائِمًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , فَجَاءَ حَبْرٌ مِنْ أَحْبَارِ الْيَهُودِ , فَقَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ ! فَدَفَعْتُهُ دَفْعَةً كَادَ يُصْرَعُ مِنْهَا , فَقَالَ : لِمَ تَدْفَعُنِى فَقُلْتُ : أَلاَ تَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ ! فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : إِنَّمَا نَدْعُوهُ بِاسْمِهِ الَّذِى سَمَّاهُ بِهِ أَهْلُهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ اسْمِى مُحَمَّدٌ الَّذِى سَمَّانِى بِهِ أَهْلِى » . فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : جِئْتُ أَسْأَلُكَ . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَيَنْفَعُكَ شَىْءٌ إِنْ حَدَّثْتُكَ ؟ » . فقَالَ : أَسْمَعُ بِأُذُنَىَّ , فَنَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعُودٍ مَعَهُ . فَقَالَ : « سَلْ » . فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : أَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَ تُبَدَّلُ الأَرْضُ غَيْرَ الأَرْضِ وَالسَّمَوَاتُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « هُمْ فِى الظُّلْمَةِ دُونَ الْجِسْرِ » . قَالَ : فَمَنْ أَوَّلُ النَّاسِ إِجَازَةً ؟ قَالَ : « فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ » . قَالَ الْيَهُودِىُّ : فَمَا تُحْفَتُهُمْ حِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ؟ قَالَ : « زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ » . قَالَ : فَمَا غِذَاؤُهُمْ عَلَى إِثْرِهَا ؟ قَالَ : « يُنْحَرُ لَهُمْ ثَوْرُ الْجَنَّةِ الَّذِى كَانَ يَأْكُلُ مِنْ أَطْرَافِهَا » . قَالَ : فَمَا شَرَابُهُمْ عَلَيْهِ قَالَ : « مِنْ عَيْنٍ فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلاً » . قَالَ صَدَقْتَ » ... ( أخرجه مسلم ) .

“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম; ইতঃমধ্যে ইয়াহূদীদের এক পণ্ডিত ব্যক্তি এসে বলল: আসসলামু ‘আলাইকুম ইয়া মুহাম্মদ ( السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ !) ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়েই গিয়েছিল! তখন সে বলল: তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? জবাবে আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ ( يَا رَسُولَ اللَّهِ !) ! বলতে পার না? ইয়াহূদী বলল: আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার পরিজন যে নাম রেখেছে, সে নামেই ডাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মদ, আমার পরিবারের লোকই আমার এই নাম রেখেছে। তারপর ইয়াহূদী বলল: আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞাসা করতে এসেছি; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি কিছু বলি? সে বলল: আমি আমার কান পেতে শুনব; এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে যে লাঠিটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকা-ঝোকা করলেন; তারপর বললেন: জিজ্ঞাসা কর, ইয়াহূদী বলল: যেদিন এক যমীন ও আসমান পাল্টে গিয়ে অন্য যমীন ও আসমানে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম: তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল: কে সর্ব প্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন: দরিদ্র মুহাজিরগণ। ইয়াহূদী বলল: জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে, তখন তাদের তোহফা (উপহার) কী হবে? তিনি বললেন: মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল: এরপর তাদের সকালের নাস্তা কী হবে? তিনি বললেন: তাদের জন্য জান্নাতে ষাঁড় যবেহ করা হবে, যা জান্নাতের আশে পাশে চরে বেড়াত। সে বলল: এরপর তাদের পানীয় কী হবে? তিনি বললেন: সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি, যার নাম ‘সালসাবিল’। সে বলল: আপনি ঠিক বলেছেন। ...।” [মুসলিম, হায়েয অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: পুরুষ ও মহিলার বীর্যের বিবরণ এবং সন্তান যে উভয়ের বীর্য ও ডিম্ব থেকে সৃষ্টি হয় তার বর্ণনা ( باب بَيَانِ صِفَةِ مَنِىِّ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ وَأَنَّ الْوَلَدَ مَخْلُوقٌ مِنْ مَائِهِمَ ), হাদিস নং- ৭৪২]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( حبْرٌ مِنْ أَحْبَارِ الْيَهُودِ ): ইয়াহূদী পণ্ডিতগণের মধ্য থেকে এক পণ্ডিত।

( زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ ): মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ, আর তা খুবই সুস্বাদু।

১২. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« يدخل الفقراء المسلمين الجنة قبل أغنيائهم بنصف يوم , وهو خمسمائة عام » . ( رواه الترمذي ) .

“দরিদ্র মুসলিমগণ ধনী মুসলিমগণের অর্ধদিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর সেই অর্ধদিনের পরিমাণ হবে (দুনিয়ার হিসাবে) পাঁচশত বছর।” [তিরমিযী (৩ / ৮৪) এবং তিনি বলেছেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ; আর আলবানীও হাদিসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন।]

১৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« عرض علي أول ثلاثة يدخلون الجنة : شهيد , وعفيف متعفف , وعبد أحسن عبادة الله ونصح لمواليه » . ( رواه الترمذي ) .

“আমাকে প্রদর্শন করানো হয়েছে ঐ তিন ব্যক্তিকে, যারা প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে: শহীদ, সচ্চরিত্রবান পবিত্র ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যে সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছে ও তার মনিবদের (কর্তৃপক্ষের) কল্যাণ কামনা করেছে।” [তিরমিযী (৩ / ৮৪) এবং তিনি বলেছেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ; আর আলবানী হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন।]

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীগণ কর্তৃক জান্নাতে প্রবেশের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَأُدۡخِلَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡۖ تَحِيَّتُهُمۡ فِيهَا سَلَٰمٌ ٢٣ ﴾ [ ابراهيم : ٢٣ ]

“আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” [সূরা ইবরাহীম: ২৩]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٤٩ ﴾ [ الاعراف : ٤٩ ]

“এরাই কি তারা, যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ্ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمُ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢ ﴾ [ النحل : ٣٢ ]

“ফিরিশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিশতাগণ বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে, তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।” [সূরা আন-নাহল: ৩২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ٤٥ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٍ ءَامِنِينَ ٤٦ ﴾ [ الحجر : ٤٥، ٤٦ ]

“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে। তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা শান্তিতে নিরাপত্তার সাথে এতে প্রবেশ কর’।” [সূরা আল-হিজর: ৪৫ - ৪৬]

১৪. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ليدخلن الجنة من أمتي سبعون ألفا أو سبعمائة ألف , ( لا يدري أبو حازم أيهما قال ) , متماسكون , آخذ بعضهم بعضا , لا يدخل أولهم حتى يدخل آخرهم , وجوههم على صورة القمر ليلة البدر » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক অথবা সাত লক্ষ লোক একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বর্ণনাকারী আবূ হাযেমের নিশ্চিত জানা নেই যে, তিনি উভয় সংখ্যার মধ্যে কোনটি বলেছেন) তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলেই একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা ( باب صفة الجنة والنار ), হাদিস নং- ৬১৮৭; মুসলিম (৩ / ৯২ - নববী)।]

১৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن أول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر , ثم الذين يلونهم على أشد كوكب دري في السماء إضاءة , لا يبولون ولا يتغوطون , ولا يتفلون ولا يمتخطون , أمشاطهم الذهب , ورشحهم المسك , ومجامرهم الألوة الألنجوج عود الطيب , وأزواجهم الحور العين , أخلاقهم على خلق رجل واحد على صورة أبيهم آدم : ستون ذراعا في السماء» . ( رواه البخاري ومسلم ).

“সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব, আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরণী হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ছাইদানি বা আগরদানি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। ডাগড় চক্ষু বিশিষ্টা হূরগণ হবে তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই রকম। তারা সকলেই তাদের আদি পিতা আদম আ. এর আকৃতিতে হবে। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আম্বীয়া ( كتاب الأنبياء ), পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী ( باب قول الله تعالى ), হাদিস নং- ৩১৪৯; মুসলিম (১৭ / ১৭১ - নববী)।]

অপর এক বর্ণনায় এসেছে:

«ولكل واحد منهم زوجتان يرى مخ سوقهما من وراء اللحم من الحسن , ولا اختلاف بينهم ولا تباغض , قلوبهم قلب رجل واحد , يسبحون الله بكرة وعشيا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আর তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত থাকবে। তারা সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৭৩; মুসলিম (১৭ / ১৭৩ - নববী)।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( الألنجوج ): সুগন্ধময় কাঠ, যা ধূপায়িত করার দ্বারা সুবাস ছড়ানো হয়।

( زمرة ): দল বা গোষ্ঠী।

( مجامرهم الألوة ): এমন কাঠ, যা ধূপায়িত করার দ্বারা সুবাস ছড়ানো হয়; কেউ কেউ বলেন: সুগন্ধযুক্ত ঐ কাঠকেই তাদের ছাইদানি বানানো।

( المجامر ): শব্দটি " مجمرة " শব্দের বহুবচন, তার অর্থ: ধূপপাত্র; আর তাকে" مجمرة " বা ছাইদানি নামে নামকরণ করার কারণ হল, যেহেতু তাতে অঙ্গার রাখা হয় তার মধ্যে রাখা সুগন্ধিযুক্ত কাঠকে পুড়িয়ে সুবাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।

( مخ سوقهما ): হাড়ের অভ্যন্তরে যা থাকে; আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল: তার চরম সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া; আর তা হল হাড়ের অভ্যন্তরে যা কিছু আছে, তাকে হাড়, গোশত ও চামড়া আড়াল করতে পারবে না।

( قلوبهم قلب رجل واحد ): অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ও মতবিরোধ থাকবে না; কারণ, যাবতীয় মন্দ ও নিন্দিত চরিত্র থেকে তাদের অন্তর পবিত্র হয়ে গেছে।

১৬. মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« يدخل أهل الجنة الجنة جردا , مردا , مكحلين , أبناء ثلاثين أو ثلاث وثلاثين سنة » . ( رواه الترمذي ) .

“জান্নাতবাসীগণ পশমহীন শরীর, দাড়ি-গোঁফবিহীন মুখ, সুরমা দেয়া চোখের মত কাজল কালো চোখ এবং ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সের যুবক অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [তিরমিযী (৪ / ৮৮); আর হাইছামী ‘আল-মাজমা’ ( المجمع ) গ্রন্থের মধ্যে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন (১০ / ৩৯৯)। আর আলবানীও হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

" جرد ": " أجرد "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার শরীর তথা চামড়ার উপর কোন পশম নেই।

" مرد ": " أمرد "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার চেহারায় কোনো পশম নেই। (যেমন দাঁড়ি বা গোফ)

" الكحل ": " أكحل "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার চক্ষু এমন কালো বর্ণ ধারণ করেছে, মনে হয় যেন তাতে সুরমা লাগানো হয়েছে।

১৭. মিকদাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ما من أحد يموت سقطًا ولا هرمًا , وإنما الناس فيما بين ذلك , إلا بعث ابن ثلاثين سنة , فمن كان من أهل الجنة كان على مسحة آدم , وصورة يوسف , وقلب أيوب , ومن كان من أهل النار عظموا وفخموا كالجبال » . ( رواه البيهقي و الطبراني ) .

“যে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে মায়ের পেট থেকে মৃত ভুমিষ্ট হয়ে, অথবা বৃদ্ধ বয়সে, আর মানুষ তো এতদোভয়ের মাঝেই হয়ে থাকে, তাদেরকেই পুনরায় জীবিত করা হবে তেত্রিশ বছরের যুবক হিসেবে। অতঃপর তাদের মধ্যে যে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে হবে পরিমাপে আদম আ. এর মত, চেহারা-ছবিতে ইউসূফ আ. এর মত এবং অন্তরের দিক থেকে আইয়ূব আ. এর মত। আর সে যদি জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তার পুনরুত্থান হবে পাহাড়ের মত বিশাল আকারের শরীর নিয়ে।” [বায়হাকী হাসান সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন; তাবারানী।]

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: সর্বনিম্ন মানের জান্নাতবাসীর মর্যাদা
১৮. মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً قَالَ هُوَ رَجُلٌ يَجِىءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ ادْخُلِ الْجَنَّةَ . فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ فَيُقَالُ لَهُ أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ . فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ . فَقَالَ فِى الْخَامِسَةِ رَضِيتُ رَبِّ . فَيَقُولُ هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ . قَالَ رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً قَالَ أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِى وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ » . ( رواه مسلم ) .

“একবার মূসা আলাহিসসালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেন: সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে: পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে: হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেন: তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ ; পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে: হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা আ. বললেন: হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এরা তারাই, যাদেরকে আমি পছন্দ করে নিয়েছি, তাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে চূড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি, তারপর তাতে মোহর মেরে রেখেছি, তাতে এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয়নি।” [মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতবাসী ( باب أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً فِيهَا ), হাদিস নং- ৪৮৫]

১০
সপ্তম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের স্তরসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [ طه : ٧٥ ]

“আর যারা তাঁর কাছে সৎকর্ম করে মুমিন অবস্থায় আসবে, তাদের জন্যই রয়েছে উচ্চতম মর্যাদা।” [সূরা ত্ব-হা: ৭৫]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ كُلّٗا نُّمِدُّ هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحۡظُورًا ٢٠ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [ الاسراء : ٢٠، ٢١ ]

“তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং ওদেরকে সাহায্য করেন; আর তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে ওদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আর আখেরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।” [সূরা আল-ইসরা: ২০ - ২১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦ ﴾ [ النساء : ٩٥، ٩٦ ]

“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এসব তাঁর কাছ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা: ৯৫ - ৯৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [ المجادلة : ١١ ]

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-মুজাদালা: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ ال عمران : ١٦٢، ١٦٣ ]

“আল্লাহ যেটাতে সন্তুষ্ট, যে তারই অনুসরণ করে, সে কি ওর মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই যার আবাস? আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! আল্লাহর কাছে তারা বিভিন্ন স্তরের; তারা যা করে, আল্লাহ সেসব ভালভাবে দেখেন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৬২ - ১৬৩]

১৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن أهل الجنة يتراءون أهل الغرف من فوقهم كما تتراءون الكوكب الدري الغابر في الأفق من المشرق أو المغرب لتفاضل ما بينهم » . قالوا : يا رسول الله ! تلك منازل الأنبياء لا يبلغها غيرهم . قال : « بلى ؛ والذي نفسي بيده ؛ رجال آمنوا بالله , وصدقوا المرسلين » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“অবশ্যই জান্নাতবাসীগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও। এটা হবে তাদের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধানের কারণে। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এ তো নবীগণের জায়গা। তাঁদের ছাড়া অন্যরা তথায় পৌঁছতে পারবে না। তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তারা এমন কিছু লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং রাসূলগণকে সত্য বলে স্বীকার করেছে (তারা সেখানে পৌঁছতে পারবে)।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৮৩; মুসলিম (১৭ / ১৬৯ - নববী)।]

২০. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن في الجنة مائة درجة أعدها الله للمجاهدين في سبيل الله ما بين الدرجتين كما بين السماء والأرض , فإذا سألتم الله فاسألوه الفردوس فإنه أوسط الجنة وأعلى الجنة » . ( رواه البخاري ) .

“আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত করে রেখেছেন। দু’টি স্তরের মধ্যে ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের ন্যায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কারণ, এটাই হল সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: জিহাদ ( كتاب الجهاد والسير ), পরিচ্ছেদ: আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা ( باب درجات المجاهدين في سبيل الله . يقال هذه سبيلي وهذا سبيلي ), হাদিস নং- ২৬৩৭]

২১. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«أصيب الحارثة يوم بدر وهو غلام , فجاءت أمه إلى النبي صلى الله عليه و سلم , فقالت يا رسول الله ! قد عرفت منزلة حارثة مني , فإن يكن في الجنة أصبر وأحتسب , وإن تكن الأخرى , تر ما أصنع ؟ فقال : ويحك أو هبلت أو جنة واحدة هي؟ إنها جنان كثيرة , وإنه في جنة الفردوس» . ( رواه البخاري ) .

“বদরের যুদ্ধের দিন হারেসা রা. শহীদ হলেন, আর তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। তাঁর মা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার সাথে হারিসার স্থান সম্পর্কে আপনি তো অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতী হয়, তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং সাওয়াব মনে করব। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন আমি কি করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার জন্য আফসোস! অথবা তুমি কি বেওকুফ হয়ে গেল! জান্নাত কি একটা নাকি? জান্নাত তো অনেক। আর সেই হারেসা তো রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউসের মাঝে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: মাগাযী ( كتاب المغازي ), পরিচ্ছেদ: বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা ( باب فضل من شهد بدرا হাদিস নং- ৩৭৬১]

২২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن أهل الدرجات العلي ليراهم من هو أسفل منهم كما ترون الكوكب الدري في أفق السماء , وان أبا بكر وعمر منهم وأنعما » . ( رواه أحمد و الترمذي ) .

“নিশ্চয়ই (জান্নাতের) উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে যারা তাদের থেকে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে তারা তাদেরকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের উচ্চ দিগন্তে উজ্জ্বল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও। আর আবূ বকর ও ওমর রা. তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরা উভয়ে সে নে‘আমতে প্রবেশ করবে, আর তাদের জন্য সেটা যথাযথ [ وأنعما শব্দটির কয়েকটি অর্থ আছে, সবকয়টি অর্থকে আমি এখানে একসাথে বর্ণনা করেছি। [সম্পাদক]]।” [আহমদ; তিরমিযী, আর এই হাদিসটি ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে আছে, ক্রমিক নং- ২০২৬]

২৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ان الله عز و جل ليرفع الدرجة للعبد الصالح في الجنة , فيقول : يا رب ! أنى لي هذه ؟ فيقول : باستغفار ولدك لك » . ( رواه أحمد ) .

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মধ্যে সৎ বান্দার মর্যাদাকে সুউচ্চ ও সমুন্নত করবেন; অতঃপর সে বলবে: হে আমার প্রতিপালক! আমার এই মর্যাদা কিভাবে হল? তখন তিনি বলবেন: তোমার সন্তান কর্তৃক তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।” [আহমদ; হাফেজ ইবনু কাছীর ‘আন-নিহায়া’ ( النهاية ) এর মধ্যে (২ / ৩৪০) বলেন: তার সনদ সহীহ।]

২৪. আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ : اقْرَأْ وَارْتَقِ , وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا , فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا » . ( رواه أبو داود و الترمذي ) .

“(কিয়ামতের দিন) কুরআন পাঠকারীকে বলা হবে: কুরআন পড় এবং জান্নাতের মানযিলে আরোহন কর এবং থেমে থেমে কুরআন পড়তে থাক যেমন তুমি দুনিয়ায় পড়তে। কারণ, জান্নাতে তোমার স্থান (মানযিল) হবে সেই শেষ আয়াতটি শেষ করা পর্যন্ত, যা তুমি পড়ছ।” [আবূ দাউদ; তিরমিযী, আর তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ।]

২৫. ফাদালা ইবন ‘উবাইদ এবং তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« من قرأ عشر آيات فى ليلة ؛ كتب له قنطار , والقنطار خير من الدنيا وما فيها , فإذا كان يوم القيامة ؛ يقول ربك عز و جل : اقرأ وارق بكل آية درجة , حتى ينتهى إلى آخر آية معه , يقول الله عز و جل للعبد : اقبض , فيقبض , فيقول العبد بيده : يا رب ! أنت أعلم . فيقول : بهذه الخلد وبهذه النعيم» . ( رواه الطبراني ) .

“যে ব্যক্তি রাত্রে (আল-কুরআনের) দশটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এক ‘কিনতার’ [কিনতার ( قنطار ) শব্দের ব্যাখা: ‘কিনতার’ হল একটি বিশেষ পরিমাপ, যা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রকম হয়ে আসছে; একশ রতল; কোটি; অধিক সম্পদ। — দেখুন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরবী - বাংলা অভিধান এবং ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী - বাংলা ব্যবহারিক অভিধান।] (সাওয়াব) লিখে দেয়া হবে; আর এক ‘কিনতার’ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম; সুতরাং যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তুমি পড় এবং প্রত্যেকটি আয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদার সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠ, এভাবে করে সে যখন তার আয়ত্তে থাকা সর্বশেষ আয়াত পাঠ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন: গ্রহণ কর, তখন সে গ্রহণ করবে, তখন বান্দা তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বলবে, হে রব! আপনি ভালো জানেন, (আমি কি গ্রহণ করব?) তখন তিনি বলবেন: এ স্থায়ী জীবন থেকে আর এ সুখের জীবন থেকে।” [হাইছামী ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (২ / ২৬৭) বলেন: তাবারানী ‘আল-কাবীর’ ( الكبير ) ও ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন, তার সনদে ইসমাঈল ইবন ‘আইয়াশ নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন, কিন্তু শামবাসীদের নিকট থেকে তার কিছু বর্ণনা রয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য, আর এটি সেগুলোর অন্তর্গত।]

১১
অষ্টম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদপূর্ণ স্থান
২৬. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:

« إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِىَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِى إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِىَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ » .

“যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন তোমরা সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, যে আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দো‘আ করবে। ওসীলা হল হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দো‘আ করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত বৈধ হয়ে যাবে।” [মুসলিম, অধ্যায়: সালাত ( كتاب الصلاة ), পরিচ্ছেদ: আযানের জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলা মুস্তাহাব; এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য ওসীলা’র দো‘য়া করা ( باب اسْتِحْبَابِ الْقَوْلِ مِثْلَ قَوْلِ الْمُؤَذِّنِ لِمَنْ سَمِعَهُ ثُمَّ يُصَلِّى عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَسْأَلُ اللَّهَ لَهُ الْوَسِيلَةَ ), হাদিস নং- ৮৭৫]

১২
নবম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের ভিত্তি ও তার মাটি
২৭. আদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الجنة ؟ فقال : من يدخل الجنة حيّ فيها و لا يموت , و ينعم فيها و لا يبأس , لا تبلى ثيابه و لا يفنى شبابه . قيل : يا رسول الله ! ما بناؤها ؟ قال : «لَبِنةٌ من ذهبٍ , ولبنةٌ من فضةٍ , وملاطُها المِسْكُ، وتُرابُها الزعفَران , وحصباؤها اللؤْلُؤ والياقوتُ» . ( رواه الطبراني ) .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল? জবাবে তিনি বললেন: যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি তাতে চিরজীবন লাভ করবে এবং সে মৃত্যুবরণ করবে না; সে তাতে সুখ-শান্তি লাভ করবে এবং দুঃখিত ও চিন্তিত হবে না; তার পোষাক-পরিচ্ছদ পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনও বিলুপ্ত হবে না। জিজ্ঞাসা করা হল: হে আল্লাহর রাসূল! তার (জান্নাতের) অবকাঠামো কি ধরনের? জবাবে তিনি বললেন: একটি ইট হল স্বর্ণের, আর অপর ইটটি হল রৌপ্যের, তার প্লাস্টার হল মিশক, তার মাটি হল জা‘ফরান এবং তার কঙ্কর বা পাথরকুচিসমূহ হল মুক্তা ও ইয়াকূত (নীলকান্ত মণি)।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া; তাবারানী; আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৮৫) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন; আর হাইছামীও ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (১০ / ৩৯৭) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।]

২৮. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن في الجنة مراغا من مسك مثل مراغ دوابكم في الدنيا » . ( رواه الطبراني ) .

“নিশ্চয়ই দুনিয়াতে তোমাদের পশুগুলোর চারণভূমির মত করে জান্নাতের মধ্যে মিশকের একটি চারণভূমি থাকবে।” [তাবারানী উত্তম সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৮৭) বলেছেন।]

২৯. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ... دخلت الجنة فإذا فيها جنابذ اللؤلؤ وإذا ترابها المسك » . ( رواه البخاري ) .

“... আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, তখন তাতে দেখি অনেকগুলো মুক্তার গম্বুজ এবং তার মাটিসমূহ মিশক মিশ্রিত।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আম্বীয়া ( كتاب الأنبياء ), পরিচ্ছেদ: ইদ্রিস আ. সম্পর্কে আলোচনা ( باب ذكر إدريس عليه السلام ), হাদিস নং- ৩১৬৪]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( الجنابذ ): গম্বুজসমূহ।

১৩
দশম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ﴾ [ التوبة : ٧٢ ]

“আরও (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের।” [সূরা আত-তাওবা: ৭২]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَهُمۡ فِي ٱلۡغُرُفَٰتِ ءَامِنُونَ ٣٧ ﴾ [ سبا : ٣٧ ]

“আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।” [সূরা সাবা: ৩৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥ ﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]

“তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম।” [সূরা আল-ফুরকান: ৭৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [ الزمر : ٢٠ ]

“তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।” [সূরা যুমার: ২০]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢ ﴾ [ الرحمن : ٧٢ ]

“তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।” [সূরা আর-রাহমান: ৭২]

৩০. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِى الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ , طُولُهَا سِتُّونَ مِيلاً , لِلْمُؤْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ , يَطُوفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ , فَلاَ يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضًا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“নিশ্চয়ই মুমিনদের জন্য জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মূর্তির একটি তাঁবু থাকবে; আকাশের দিকে এর উচ্চতা হবে ষাট মাইল। তাতে মুমিনের পরিবার-পরিজন থাকবে, তাদের কাছে মুমিন ব্যক্তিগণ যাবে, তবে তাদের একজন অপরজনকে দেখতে পাবে না।” [বুখারী, আস-সহীহ (৮ / ২৬৪ - ফতহুল বারী) ; মুসলিম, অধ্যায়: জান্নাত এবং তার নিয়ামত ও অধিবাসীদের বর্ণনা ( الجنة وصفة نعيمها وأهلها ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের তাঁবুসমূহ এবং মুমিনদের জন্য তাতে যে পরিবার থাকবে তার বিবরণ প্রসঙ্গে ( باب فِى صِفَةِ خِيَامِ الْجَنَّةِ وَمَا لِلْمُؤْمِنِينَ فِيهَا مِنَ الأَهْلِينَ ), হাদিস নং- ৭৩৩৭।]

৩১. আবূ মালেক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن في الجنة غرفة يرى ظاهرها من باطنها , وباطنها من ظاهرها , أعدها الله لمن أطعم الطعام , وألان الكلام , وتابع الصيام , وصلى بالليل والناس نيام» . ( رواه أحمد و ابن حبان ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে একটি কক্ষ থাকবে, যার ভিতর থেকে বহির্ভাগ দেখা যাবে এবং বহির্ভাগ থেকে তার ভিতরভাগ দেখা যাবে; আল্লাহ তা‘আলা তা তৈরি করেছেন ঐ ব্যক্তির জন্য, যে অপরকে খাদ্য দান করে, নরম সুরে কথা বলে, সাওম পালন করে এবং মানুষ যখন ঘুমায় তখন সে সালাত আদায় করে।” [আহমদ; ইবন হিব্বান; ইমাম তিরমিযী র. হাদিসটি আলী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন; আর তাবারানী ‘আল-কাবীর’ ( الكبير ) এর মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রা. থেকে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন; আর আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (২ / ২৪) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন; আর অনুরূপ মন্তব্য করেছেন হাইছামী ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (১০ / ৩৯৭); আর এই হাদিসটি ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে আছে (২ / ২২০)।]

৩২. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«أتى جبريل النبي صلى الله عليه و سلم , فقال : يا رسول الله ! هذه خديجة قد أتت معها إناء فيه إدام أو طعام أو شراب , فإذا هي أتتك فاقرأ عليها السلام من ربها ومني , وبشرها ببيت في الجنة من قصب , لا صخب فيه ولا نصب » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! ঐ যে খাদিজা রা. একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় রয়েছে; যখন তিনি পৌঁছে যাবেন, তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন, আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসাদের সুসংবাদ দিবেন, যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল এবং থাকবে না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সাহাবীদের ফযীলত ( كتاب فضائل الصحابة ), পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বিয়ে এবং তাঁর মর্যাদা ( باب تزويج النبي صلى الله عليه و سلم خديجة وفضلها رضي الله عنه ), হাদিস নং- ৩৬০৯; মুসলিম; আরও দেখুন: মিশকাতুল মাসাবীহ (৩ / ২৬৬)।]

৩৩. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« من بنى لله مسجدا ولو كمفحص قطاة لبيضها , بنى الله له بيتا في الجنة » . ( رواه أحمد ) .

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মাসজিদ নির্মাণ করল, যদিও তা তিতির পাখির ডিম পাড়ার উদ্দেশ্যে করা গর্তের মত হউক না কেন, তবে আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরি করে রাখবেন।” [আহমদ; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে (৫ / ২৬৫) সহীহ বলেছেন; আর সহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে উসমান ইবন ‘আফ্ফান রা. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে।]

৩৪. মুমিন জননী উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلاَّ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ أَوْ إِلاَّ بُنِىَ لَهُ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ » . ( رواه مسلم ) .

“যে কোন মুসলিম বান্দা ফরয ব্যতীত দৈনিক অতিরিক্ত বার রাকা‘আত সালাত আল্লাহর উদ্দেশ্য আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করা হবে।” [মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের সালাত ( صلاة المسافرين ), পরিচ্ছেদ: ফরযের আগে ও পরে নিয়মিত সুন্নাত সালাতের ফযীলত এবং তার রাকাত সংখ্যার বিবরণ ( باب فَضْلِ السُّنَنِ الرَّاتِبَةِ قَبْلَ الْفَرَائِضِ وَبَعْدَهُنَّ وَبَيَانِ عَدَدِهِنَّ ), হাদিস নং- ১৭২৯; আর এই হাদিসটি ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে আছে, ক্রমিক নং- ৬২৩৪]

৩৫. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« دخلت الجنة , فإذا أنا بقصر من ذهب , فقلت : لمن هذا القصر ؟ قالوا : لشاب من قريش , فظننت أني أنا هو , فقلت : ومن هو ؟ قالوا : عمر بن الخطاب » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম; তখন আমি আমাকে একটি স্বর্ণের প্রাসাদের নিকট দেখতে পেলাম। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এই প্রাসাদটি কার জন্য? তারা বলল: কুরাইশ বংশের এক যুবকের জন্য; তখন আমি ধারণা করলাম যে, আমিই সেই ব্যক্তি; তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কে সেই যুবক? তারা বলল: ওমর ইবনুল খাত্তাব।” [বুখারী ও মুসলিম।]

৩৬. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إذا خلص المؤمنون من النار حبسوا بقنطرة بين الجنة والنار , فيتقاصون مظالم كانت بينهم في الدنيا , حتى إذا نقوا وهذبوا , أذن لهم بدخول الجنة , فوالذي نفس محمد صلى الله عليه و سلم بيده لأحدهم بمسكنه في الجنة أدل بمنزله كان في الدنيا » . ( رواه البخاري ) .

“মুমিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সুতরাং সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেভাবে চিনত, তার চেয়ে অধিক সহজে তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: যুলুম ( كتاب المظالم ), পরিচ্ছেদ: অপরাধের দণ্ড ( باب قصاص المظالم ), হাদিস নং- ২৩০৮]

১৪
একাদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [ البقرة : ٢٥ ]

“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” [সূরা আল-বাকারা: ২৫।]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [ محمد : ١٥ ]

“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।” [সূরা মুহাম্মদ: ১৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [ الدخان : ٥١، ٥٢ ]

“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে।” [সূরা আদ-দুখান: ৫১ - ৫২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [ الرحمن : ٥٠ ]

“উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ।” [সূরা আর-রাহমান: ৫০]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [ الرحمن : ٦٦ ]

“উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ।” [সূরা আর-রাহমান: ৬৬]

৩৭. মু‘য়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد» . ( رواه الترمذي ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।” [তিরমিযী (৪ / ১০০), আর তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ। আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৩৮. আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« الكوثر نهر في الجنة , حافتاه من ذهب , ومجراه على الدر والياقوت , تربته أطيب من المسك , وماؤه أحلى من العسل , وأبيض من الثلج » . ( رواه الترمذي و ابن ماجه ) .

“কাউসার হচ্ছে জান্নাতের মধ্যকার একটি নদী; তার পার্শ্বদেশ বা কিনারা হল স্বর্ণের; তার স্রোতধারা বা নালা হল মণিমুক্ত ও ইয়াকুতের উপর; তার মৃত্তিকা হল মিশকের চেয়ে অধিক সুগন্ধময়; তার পানি হবে মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি ও বরফের চেয়ে অধিক সাদা।” [তিরমিযী (৫ / ১২০), আর তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ। আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪৩৩৪]

৩৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« بينما أنا أسير في الجنة إذا أنا بنهر حافتاه قباب الدر المجوف , قلت : ما هذا يا جبريل ؟ قال هذا الكوثر الذي أعطاك ربك , فإذا طينه أو طيبه مسك أذفر » . ( رواه البخاري ) .

“আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক ঝর্ণার কাছে আসার পর দেখি যে তার দু’টি ধারে ফাপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এটা কী? তিনি বললেন: এটা ঐ কাউসার, যা আপনার প্রভু আপনাকে দান করেছেন। তখন দেখতে পেলাম যে, তার মাটিতে অথবা ঘ্রাণে ছিল উৎকৃষ্ট মানের মিশকের সুগন্ধি। (বর্ণনাকারী হুদবা র. সন্দেহ করেছেন)।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২১০]

৪০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم : ما الكوثر ؟ قال : ذاك نهر أعطانيه الله يعني في الجنة أشد بياضا من اللبن , وأحلى من العسل , فيها طير أعناقها كأعناق الجزر منها » . قال عمر : إن هذه لناعمة . قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أكلتها أحسن منها » . ( رواه الترمذي ) .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হল: কাওসার কি? তিনি বললেন: এটা একটা ঝর্ণা বা নদী, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জান্নাতের মধ্যে দান করবেন, যা দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা এবং মধুর চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি; তাতে (জান্নাতে) এমন সব পাখি থাকবে, যেগুলোর ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মত।” উমর রা. বললেন: নিশ্চয়ই মোটা তরতাজা চিত্তাকর্ষক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা যারা খাবে তারা হবে আরও বেশি সুন্দর ও উত্তম বা চিত্তাকর্ষক।” [তিরমিযী (৪ / ৮৭), তিনি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।]

৪১. সাম্মাক র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« أنه لقي عبد الله بن عباس بالمدينة بعدما كف بصره , فقال يا ابن عباس ! ما أرض الجنة ؟ قال : مرمرة بيضاء من فضة كأنها مرآة . قلت : ما نورها ؟ قال : ما رأيت الساعة التي يكون فيها طلوع الشمس؛ فذلك نورها , ألا إنه ليس فيها شمس ولا زمهرير . قلت : فما أنهارها ؟ أفي أخدود ؟ قال : لا , ولكنها تجري على أرض الجنة مستكنة , لا تفيض ها هنا ولا ها هنا , قال الله لها : كوني ! فكانت . قلت : فما حلل الجنة ؟ قال : فيها شجرة فيها ثمر كأنه الرمان , فإذا أراد ولي الله منها كسوة انحدرت إليه من غصنها , فانفلقت له عن سبعين حلة ألوانا بعد ألوان , ثم تنطبق فترجع كما كانت » .

“তিনি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. এর দৃষ্টি শক্তি লোপ পাওয়ার পর তাঁর সাথে মদীনাতে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি বলেন: হে ইবনু আব্বাস! জান্নাতের ভূমি কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: তা হবে রৌপ্যের চেয়ে সাদা মার্বেল (মরমর) পাথরের, মনে হবে যেন আয়নার মত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তার আলো কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: তুমি সূর্যোদয় হওয়া অবস্থার যে সময়টি লক্ষ্য করেছ, সেটাই হল তার আলো; তবে সেখানে সূর্য প্রখরতাপ কিংবা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কোনটাই থাকবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তার নদীগুলোর অবস্থা কেমন হবে? সেগুলো কি গর্তের মধ্যে হবে? জবাবে তিনি বললেন: না, বরং সেগুলো প্রবাহিত হবে জান্নাতের ভূমির উপর দিয়ে লুক্কায়িত (সুপ্ত) অবস্থায়, এখান সেখান দিয়ে (যত্র-তত্র সীমালঙ্ঘন করে) প্রবাহিত হবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন: হও! তখন হয়ে যাবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদগুলোর অবস্থা কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: সেখানে গাছ থাকবে, তাতে আনারের মত ফল থাকবে; তারপর যখন আল্লাহর বন্ধু ব্যক্তি সেখানকার (জান্নাতের) পোশাক-পরিচ্ছদ বা কাপড় পরিধানের ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন সেই গাছের ডাল থেকে তার নিকট তা নেমে আসবে, তারপর তা তার জন্য সত্তরটি রং বেরং –এর পোশাকে পরিণত হবে; অতঃপর গাছটি মিলে যাবে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯১) বলেছেন।]

৪২. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« الشهداء على بارق نهر بباب الجنة , في قبة خضراء , يخرج عليهم رزقهم من الجنة بكرة وعشيا » . ( رواه أحمد ) .

“শহীদগণ জান্নাতের দরজায় অবস্থিত চকচকে নদীর তীরে সবুজ গম্বুজ বা তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছে; তাদের নিকট জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রিযিক বের হয়ে আসে।” [আহমদ; হাকেম; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে (৩ / ২৩৫) হাসান বলেছেন।]

১৫
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউযের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ ٣ ﴾ [ الكوثر : ١، ٣ ]

“নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার দান করেছি। কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ।” [সূরা আল-কাউসার]

৪৩. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« حوضي مسيرة شهر , ماؤه أبيض من اللبن , وريحه أطيب من المسك , وكيزانه كنجوم السماء , من شرب منها فلا يظمأ أبدا » . ( رواه البخاري ) .

“আমার হাউয (হাউযে কাউসার) এক মাসের দূরত্ব সমান (বড়) হবে; তার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা; তার ঘ্রাণ হবে মিশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২০৮]

৪৪. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن قدر حوضي كما بين أيلة وصنعاء من اليمن , وإن فيه من الأباريق كعدد نجوم السماء » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আমার হাউযের পরিমাণ হল ইয়ামানের আয়লা ও সান‘আ নামক স্থানদ্বয়ের দূরত্বের সমান; আর তার পানপত্রসমূহ আকাশের তারকারাজির সংখ্যাতুল্য।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২০৯; মুসলিম (৯ / ৬২ - নববী)।]

৪৫. আবূ হাযেম র. থেকে বর্ণিত, তিনি সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أنا فرطكم على الحوض , من مر علي شرب , ومن شرب لم يظمأ أبدا , ليردن علي أقوام أعرفهم ويعرفونني , ثم يحال بيني وبينهم » . قال أبو حازم : فسمعني النعمان بن أبي عياش , فقال : هكذا سمعت من سهل ؟ فقلت نعم , فقال : أشهد على أبي سعيد الخدري لسمعته وهو يزيد فيها : « فأقول : إنهم مني , فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك . فأقول سحقا سحقا لمن غير بعدي » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে; আর যে (হাউযের) পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তৈরি করে দেয়া হবে। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম বলেন: নুমান ইবন আবূ ‘আইয়্যাশ আমার কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করার পর বললেন, তুমিও কি সাহল থেকে এরূপ শুনেছ? তখন আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: আমি আবূ সা‘ঈদ খুদরী রা. সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার কাছ থেকে এতটুকু অতিরিক্ত শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি তখন বলব: এরা তো আমারই উম্মত; তখন বলা হবে, তুমি তো জান না, তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তিকলাপ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন আমি বলব: আমার পরে যারা দীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকুক।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২১২; মুসলিম (১৫ / ৫৩ - নববী)।]

ইমাম বুখারী র. বলেছেন: “ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: سحقا অর্থ- দূরত্ব / দূর হউক।

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( الفرط ): যিনি সর্বপ্রথম আগমন করবেন তাদের জন্য হাউয, বালতি ও পানি পানের অন্যান্য উপকরণসমূহকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করে রাখার জন্য।

( فرطكم على الحوض ): হাউযের নিকট পৌঁছার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের সকলের অগ্রগামী হব।

৪৬. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة , ومنبري على حوضي » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্য থেকে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউযের উপর অবস্থিত।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২১৬; মুসলিম (৯ / ৬২ - নববী)।]

৪৭. আসমা বিনত আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إني على الحوض , حتى أنظر من يرد علي منكم , وسيؤخذ ناس دوني , فأقول : يا رب ! مني ومن أمتي . فيقال : هل شعرت ما عملوا بعدك ؟ والله , ما برحوا يرجعون على أعقابهم » . فكان ابن أبي مليكة يقول : اللهم ! إنا نعوذ بك أن نرجع على أعقابنا , أو نفتن عن ديننا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“নিশ্চয়ই আমি হাউযের তীরে থাকব। যাতে করে তোমাদের মাঝ থেকে যারা আমার কাছে আসবে, আমি তাদেরকে দেখতে পাই। তখন কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে; তখন আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! এরা আমার লোক, এরা আমার উম্মত। তখন বলা হবে: তুমি কি জান তোমার পরে এরা কি সব করেছে? আল্লাহর কসম! এরা দীন থেকে সর্বদাই পশ্চাদমুখী হয়েছিল।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২২০; মুসলিম (১৫ / ৫৫ - নববী)।]

তখন ইবন আবি মুলায়কা বললেন: হে আল্লাহ! দীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা থেকে অথবা দীনের ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।

৪৮. আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! مَا آنِيَةُ الْحَوْضِ ؟ قَالَ : « وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لآنِيَتُهُ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ نُجُومِ السَّمَاءِ وَكَوَاكِبِهَا , أَلاَ فِى اللَّيْلَةِ الْمُظْلِمَةِ الْمُصْحِيَةِ , آنِيَةُ الْجَنَّةِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا لَمْ يَظْمَأْ آخِرَ مَا عَلَيْهِ , يَشْخُبُ فِيهِ مِيزَابَانِ مِنَ الْجَنَّةِ , مَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ , عَرْضُهُ مِثْلُ طُولِهِ , مَا بَيْنَ عَمَّانَ إِلَى أَيْلَةَ , مَاؤُهُ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ , وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ » . ( رواه مسلم ) .

“আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! হাউযের পাত্র সংখ্যা কত হবে? জবাবে তিনি বললেন: “যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম! সেই হাউযের পাত্র এমন রাতের আকাশের নক্ষত্র ও তারকারাজির চেয়েও বেশি, যার অন্ধকারে কোন পরিবর্তন ঘটে না। ঐ পাত্র জান্নাতেরই পাত্র; যে ব্যক্তি ঐ পাত্র থেকে পান করবে, সে ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না। ঐ হাউযের মধ্যে জান্নাত থেকে প্রবাহিত দু’টি নালার সংযোগ রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ হাউয থেকে পান করবে, সে আর পিপাসার্ত হবে না। সেই হাউযের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হবে, সেই হাউযের প্রশস্ততা আম্মান থেকে আয়লার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সেই হাউযের পানি দুধের চেয়ে বেশি সাদা এবং মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি।” [মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায়: ফাদায়েল ( الفضائل ), পরিচ্ছেদ: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য হাউয সাব্যস্ত হওয়া এবং তার বিবরণ প্রসঙ্গে ( باب إِثْبَاتِ حَوْضِ نَبِيِّنَا -صلى الله عليه وسلم- وَصِفَاتِهِ ), হাদিস নং- ৬১২৯]

৪৯. সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« حوضي ما بين عدن إلى عمان , ماؤه أحلى من العسل , و أشَدُّ بَيَاضًا مِنْ اللَّبَنِ , و أكوابه كنجوم السماء , من شرب منه لم يظمأ بعدها أبدا , أول الناس عليّ ورودا فقراء المهاجرين , الشعث رؤوسا , الدنس ثيابا , الذين لا تفتح لهم أبواب السدد , لا ينكحون المنعمات , والذين يعطون كل الذي عليهم , ولا يعطون الذي لهم » .

“আমার হাউযের বড়ত্ব ‘আদন’ থেকে ‘আম্মান’ পর্যন্ত দূরত্বের সমান; তার পানি মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি, দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা, তার পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির মত; যে ব্যক্তি তার থেকে পান করবে, সে আর কোন দিন পিপাসার্ত হবে না। আমার নিকট সর্বপ্রথম আগমনকারী ব্যক্তি হবে হতদরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের এলোমেলো মাথা ও মলিন পোশাক, যাদের জন্য ন্যায্য দরজাসমূহ খোলা হয় না, যারা প্রাচুর্যশালী নারীদেরকে বিয়ে করতে সক্ষম হয় না; আর যাদের কাছ থেকে তাদের উপর ন্যস্ত যাবতীয় বস্তু আদায় করে নেওয়া হয়, অথচ তাদের অধিকার সঠিকভাবে তাদেরকে দেয়া হয় না।” [ইবনু আবি ‘আসেম, আস-সুন্নাহ (২ / ৩৪৭)।]

৫০. ‘উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« أن النبي صلى الله عليه و سلم خرج يوما , فصلى على أهل أحد صلاته على الميت , ثم انصرف على المنبر , فقال : « إني فرط لكم , وأنا شهيد عليكم , وإني والله لأنظر إلى حوضي الآن , وإني أعطيت مفاتيح خزائن الأرض أو مفاتيح الأرض , وإني والله ما أخاف عليكم أن تشركوا بعدي , ولكن أخاف عليكم أن تنافسوا فيها » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বের হলেন এবং ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের প্রতি জানাযার সালাতের মত করে সালাত আদায় করলেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে ফিরে এসে বললেন: “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য হাউযের কিনারে আগে পৌঁছব। নিশ্চয় আমি তোমাদের (কার্যাবলীর) সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! আমি এই মুহূর্তে আমার হাউয দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্ব ভাণ্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে, অথবা (বলেছেন) বিশ্বের চাবি প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার মৃত্যুর পর তোমরা শির্ক করবে এ ভয় করি না; তবে তোমাদের সম্পর্কে আমার ভয় হয় যে, দুনিয়া অর্জনে তোমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب في الحوض ), হাদিস নং- ৬২১৮; মুসলিম (১৫ / ৫৭ - নববী)।]

১৬
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বৃক্ষ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ ﴾ [ الواقعة : ٢٧، ٣٢ ]

“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।” [সূরা আল-ওয়াকিয়া: ২৭ - ৩২]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ ﴾ [ الرحمن : ٤٦، ٤٨ ]

“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।” [সূরা আর-রাহমান: ৪৬ - ৪৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ ٦٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٦٣ مُدۡهَآمَّتَانِ ٦٤ ﴾ [ الرحمن : ٦٢، ٦٤ ]

“এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দু’টি।” [সূরা আর-রাহমান: ৬২ - ৬৪]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ ﴾ [ المرسلات : ٤١ ]

“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণবহুল স্থানে।” [সূরা আল-মুরসালাত: ৪১]

৫১. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن في الجنة شجرة , يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها » . إن شئتم فاقرؤوا : ﴿ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ ﴾ ( رواه البخاري ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৭৯]

৫২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إن في الجنة لشجرة , يسير الراكب الجواد المضمر السريع مائة عام ما يقطعها» . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ায় উৎকৃষ্ট, উৎফুল্ল ও দ্রুতগামী অশ্বের একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা প্রসঙ্গে ( باب صفة الجنة والنار ), হাদিস নং- ৬১৮৬; মুসলিম (১৭ / ১৬৭ - নববী)।]

৫৩. আসমা বিনত আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিদরাতুল মুন্তাহার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছি, তখন তিনি বলেছেন:

«يسير الراكب في ظل الفنن منها مائة سنة , أو يستظل بظلها مائة راكب شك يحيى , فيها فراش الذهب , كأن ثمرها القلال» . ( رواه الترمذي ) .

“তার একটি ডালের ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, অথবা তার ছায়া দ্বারা একশত আরোহী ছায়া লাভ করতে পারবে (বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া সন্দেহ করেছেন); তাতে স্বর্ণের পতঙ্গ থাকবে, তার ফলগুলো যেন কলসির মত (বড়)।” [তিরমিযী (৪ / ৮৬); তিনি বলেছেন: হাদিসটি হাসান, গরীব। তবে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন।]

৫৪. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« نَخْلُ الْجَنَّةِ جُذُوعُهَا زُمُرُّدٌ أَخْضَرُ ، وَكَرَبُهَا ذَهَبٌ أَحْمَرُ ، وَسَعَفُهَا كِسْوَةٌ لأَهْلِ الْجَنَّةِ ، مِنْهَا مُقَطَّعَاتُهُمْ وَحُلَلُهُمْ ، وَثَمَرُهَا أَمْثَالُ الْقِلالِ و الدِّلاءِ ، أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ ، وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ , وَأَلْيَنُ مِنَ الزُّبْدِ , لَيْسَ فيها عَجْمٌ » .

“জান্নাতের খেজুর গাছের কাণ্ডসমূহ হবে সবুজ পান্নার, মূলসমূহ হবে লাল স্বর্ণের এবং তার ডালসমূহ হবে জান্নাতবাসীদের আচ্ছাদন; তার থেকে তাদের কাপড়ের টুকরা ও পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা হবে এবং তার ফলসমূহ হবে কলসি ও বালতির মত বড় আকৃতির, দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা, মধুর চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি এবং মাখনের চেয়ে অধিক নরম, তাতে কোনো বীচি থাকবে না।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটিকে এভাবে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তার সনদ উৎকৃষ্ট; যেমনটি আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৫) বলেছেন।]

৫৫. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« طوبى شجرة في الجنة مسيرة مائة عام , ثياب أهل الجنة تخرج من أكمامها» . ( رواه أحمد ) .

“‘তুবা’ জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার বড়ত্ব একশ বছরের পথের সমান; জান্নাতবাসীদের বস্ত্র তার আবরণ থেকে বেরিয়ে আসবে।” [আহমদ; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে হাসান বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫৫২৩।]

৫৬. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ما في الجنة شجرة إلا وساقها من ذهب » . ( رواه الترمذي ) .

“জান্নাতের মধ্যে যত গাছ আছে, সকল গাছের কাণ্ড হল স্বর্ণের।” [তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে সহীহ বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫৫২৩।]

৫৭. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« سيد ريحان الجنة الحناء » . ( رواه الطبراني ) .

“জান্নাতের মধ্যে সুগন্ধিযুক্ত গাছের নেতা হল মেহেদী গাছ।” [তাবারানী, ‘আল-কাবীর’ ( الكبير ); আর আলবানী হাদিসটিকে ‘আস-সহীহা’ ( الصحيحة ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৩ / ৪০৭) সহীহ বলেছেন, ক্রমিক নং- ১৪২০]

৫৮. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لقيت إبراهيم ليلة أسري بي , فقال : يا محمد ! أقرئ أمتك مني السلام , وأخبرهم أن الجنة طيبة التربة , عذبة الماء , وأنها قيعان , وأن غراسها : سبحان الله , والحمد لله , ولا إله إلا الله , والله أكبر » . ( رواه الترمذي ) .

“মিরাজের রজনীতে আমি ইবরাহীম আ. এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি বললেন: হে মুহাম্মদ! তুমি আমার পক্ষ থেকে তোমার উম্মতকে সালাম পেশ করো এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, জান্নাতের মাটি সুগন্ধময়, মিষ্টি পানি; আর তা হল সমতল ভূমি এবং তার বৃক্ষরোপন হল: সুবহানাল্লাহ ( سبحان الله ), আলাহমদুলিল্লাহ ( الحمد لله ), লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ( لا إله إلا الله ) এবং আল্লাহু আকবার ( الله أكبر ) ।” [তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে হাসান বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫০২৮]

১৭
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয়
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [ الواقعة : ٢٠، ٢١ ]

“আর তাদের ঈপ্সিত পাখীর গোশ্ত নিয়ে। আর তাদের জন্য থাকবে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূর।” [সূরা আল-ওয়াকিয়া: ২০ - ২১]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مَ‍َٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِ‍ِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ﴾ [ص: ٤٩، ٥١ ]

“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস— চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে।” [সূরা সোয়াদ: ৪৯ - ৫১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [ الانسان : ٥، ٦ ]

“নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর— এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।” [সূরা আল-ইনসান: ৫ - ৬]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ يُرۡزَقُونَ فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ٤٠﴾ [ غافر : ٤٠ ]

“কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।” [সূরা গাফের: ৪০]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [ الزخرف : ٧١ ]

“স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” [সূরা যুখরুফ: ৭১]

৫৯. জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا , وَيَشْرَبُونَ , وَلاَ يَتْفُلُونَ , وَلاَ يَبُولُونَ , وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ , وَلاَ يَمْتَخِطُونَ» . قَالُوا : فَمَا بَالُ الطَّعَامِ ؟ قَالَ : «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ , يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَسَ» . ( رواه مسلم ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতবাসীগণ সেখানে খাবে এবং পান করবে; তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, প্রস্রাব করবে না, পায়খানা করবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: তাহলে খাবারের অবস্থা কি হবে? জবাবে তিনি বললেন: “ঢেকুরের মাধ্যমেই তা হযম হয়ে যাবে; আর সেখানকার ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধময়। আর তাদেরকে ইলহাম করা হবে (স্বাভাবিকভাবে বের হবে) তাসবীহ ও তাহমীদ (আল্লাহর প্রশংসা), যেমনিভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের ইলহাম (তোমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ) করানো হয়।” [মুসলিম (১৭ / ১৭৩ - নববী)।]

৬০. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن طير الجنة كأمثال البخت , ترعى في شجر الجنة » . فقال أبو بكر رضي الله عنه : يا رسول الله ! إن هذه لطير ناعمة . فقال أكلتها أنعم منها , ( قالها ثلاثا ) , وأني لأرجو أن تكون ممن يأكل منها يا أبا بكر » . ( رواه أحمد ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের পাখি হবে খোরাসানী উটের মত, সেগুলো জান্নাতের গাছে গাছে চরবে।” অতঃপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: হে আল্লাহ রাসূল! নিশ্চয়ই এই পাখিগুলো মোলায়েম ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে। তখন তিনি বললেন: “সেগুলো যারা খাবে, তারা তার চেয়ে বেশি মোলায়েম ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ (তিনি এই কথাটি তিনবার বলেছেন); আর আমি অবশ্যই কামনা করি যে, তুমি হবে তাদেরই একজন, যার তা থেকে খাবে।” [ইমাম আহমদ র. হাদিসটি উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৮) বলেছেন; আর ইরাকী (৩০০৮) বলেন: তার সনদ বিশুদ্ধ।]

৬১. সালেম ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«كان أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم يقولون : إن الله لينفعنا بالأعراب و مسائلهم . قال : أقبل أعرابي يوما , فقال : يا رسول الله ! قد ذكر الله عز و جل في الجنة شجرة مؤذية , و ما كنت أرى أن في الجنة شجرة تؤذي صاحبها . فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : فما هي ؟ قال : السدر , فإن لها شوكا مؤذيا . قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أليس الله يقول : ﴿ في سدر مخضود ﴾ يخضد الله شوكه , فيجعل مكان كل شوكة ثمرة , فإنها لتنبت ثمرا تفتق الثمرة منها عن اثنين و سبعين لونا من طعام , ما فيها لون يشبه الآخر » .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বলতেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বেদুইনগণ ও তাদের প্রশ্ন করার মাধ্যমে আমাদের অনেক উপকার করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন: কোন একদিন এক বেদুইন আগমন করল, তারপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মধ্যে একটি কষ্টদায়ক বৃক্ষ থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন, অথচ আমি মনে করি না যে, জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ থাকবে, যা জান্নাতবাসীকে কষ্ট দিবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাস করলেন: “সেই বৃক্ষটি কোনটি?” সে বলল: কুলবৃক্ষ; কেননা, তার মাঝে কষ্টদায়ক কাঁটা রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি: ﴿ في سدر مخضود ﴾ [যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ] ? আল্লাহ তা‘আলা তার কাঁটা কেটে দিয়েছেন, তারপর প্রত্যেকটি কাঁটার জায়গায় একটি করে ফলের ব্যবস্থা করেছেন; সুতরাং সেই বৃক্ষটি অনেক ফল দিবে, তার ফল থেকে বাহাত্তর রঙের খাবার বেরিয়ে আসবে, তাতে একটি রঙের সাথে অন্যটির কোন মিল থাকবে না।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০) বলেছেন: তার সনদ বিশুদ্ধ।]

৬২. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« بلغ عبد الله بن سلام مقدم النبي صلى الله عليه و سلم المدينة , فأتاه , فقال : إني سائلك عن ثلاث لا يعلمهن إلا نبي . قال : ما أول أشراط الساعة ؟ وما أول طعام يأكله أهل الجنة ؟ ومن أي شيء ينزع الولد إلى أبيه ومن أي شيء ينزع إلى أخواله ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « أخبرني بهن آنفا جبريل » . فقال عبد الله ابن سلام : ذاك عدو اليهود من الملائكة . فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « أما أول أشراط الساعة فنار تحشرالناس من المشرق إلى المغرب , وأما أول طعام يأكله أهل الجنة فزيادة كبد الحوت , وأما الشبه في الولد فإن الرجل إذا غشي المرأة فسبقها ماؤه كان الشبه له وإذا سبق ماؤها كان الشبه لها » . قال أشهد أن لا إله إلا الله وأنك رسول الله صلى الله عليه و سلم .

ثم قال : يا رسول الله ! إن اليهود قوم بهت , إن علموا بإسلامي قبل أن تسألهم بهتوني عندك . فجاءت اليهود , ودخل عبد الله البيت , فقال النبي صلى الله عليه و سلم : « أي رجل فيكم عبد الله بن سلام » . قالوا : أعلمنا وابن أعلمنا , وأخيرنا وابن أخيرنا . فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : «أفرأيتم إن أسلم عبد الله ؟» . قالوا : أعاذه الله من ذلك . فخرج عبد الله إليهم , فقال أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله . فقالوا : شرنا وابن شرنا , ووقعوا فيه » . ( رواه البخاري ) .

“আবদুল্লাহ ইবন সালাম রা. এর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন: আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি; এগুলোর সঠিক উত্তর নবী ব্যতীত অন্য কেউ জানে না— (১) কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত ও লক্ষণ কী? (২) জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম খাবার কী? এবং (৩) কি কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনও পিতার অনুরূপ, আবার কখনও বা মায়ের অনুরূপ হয়? নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এই বিষয়গুলো সম্পর্কে এইমাত্র জিবরাঈল আ. আমাকে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবন সালাম রা. একথা শুনে বললেন, ফিরিশতাদের মধ্যে তিনিই ইয়াহূদীদের শত্রু। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার প্রশ্নের জবাবে) বললেন: (১) কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম লক্ষণ হল লেলীহান আগুন, যা মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে সমবেত করবে; (২) জান্নাতবাসীগণ সর্বপ্রথম যে খাবার ভক্ষণ করবে, তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ; (৩) যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে, তবে সন্তান পিতার অনুরূপ হয়; আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে, তবে সন্তান মায়ের অনুরূপ হয়। আবদুল্লাহ ইবন সালাম বললেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল।

অতঃপর সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীগণ এমন একটি সম্প্রদায়, যারা অন্যের কুৎসা রটনায় অত্যন্ত পটু। আমার ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে আবদুল্লাহ ইবন সালাম কেমন লোক? জবাবে তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র; তিনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আচ্ছা বলত, যদি আবদুল্লাহ ইবন সালাম ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে কেমন হবে? তোমরা তখন কি করবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে এ কাজ থেকে রক্ষা করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার এ কথাটি বললেন, তারাও আগের মত করে উত্তর দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবন সালাম বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন: أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল)। এ কথা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ লোক এবং মন্দ লোকের ছেলে। আর তারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য আরও নানান কথাবার্তা বলতে শুরু করল।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সাহাবীদের ফযীলত ( كتاب فضائل الصحابة ), পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তাঁর সাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করেছেন ( باب كيف آخى النبي صلى الله عليه و سلم بين أصحابه ), হাদিস নং- ৩৭২৩]

৬৩. আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« إن الرجل من أهل الجنة ليشتهي الشراب من شراب الجنة , فيجيء إليه الإبريق , فيقع في يده , فيشرب , فيعود إلى مكانه » .

“নিশ্চয়ই জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি জান্নাতের পানীয় থেকে পানীয় গ্রহণ করার আকঙ্খা প্রকাশ করবে, অতঃপর তার নিকট জগ বা এ জাতীয় পানপাত্র চলে আসবে এবং তার হাতের মধ্যে পানীয় ঢালবে, তারপর সে পান করবে; অতঃপর সেই পাত্র আবার তার জায়গায় ফিরে যাবে।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটি ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; আর হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৬) বলেছেন: তার সনদ উৎকৃষ্ট।]

১৮
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [ الحج : ٢٣ ]

“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।” [সূরা আল-হাজ্জ: ২৩]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِ‍ِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [ الكهف : ٣١ ]

“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!” [সূরা আল-কাহাফ: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [ الانسان : ٢١ ]

“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” [সূরা আল-ইনসান: ২১]

৬৪. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لاَ يَبْأَسُ , لاَ تَبْلَى ثِيَابُهُ , وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُ » . ( رواه مسلم ) .

“যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি শুধু সুখ-শান্তি উপভোগ করবে, কখনও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে না; তার পোষাক-পরিচ্ছদ পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনও বিনষ্ট হবে না।” [মুসলিম (১৭ / ৭৪ - নববী)।]

৬৫. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أول زمرة يدخلون الجنة كأن وجوههم ضوء القمر ليلة البدر , والزمرة الثانية على لون أحسن كوكب درى فى السماء , لكل رجل منهم زوجتان من الحور العين , على كل زوجة سبعون حلة , يرى مخ سوقهما من وراء لحومهما وحللها كما يرى الشراب الأحمر فى الزجاجة البيضاء » . ( رواه الطبراني ) .

“সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল মনে হবে যেন পূর্ণিমার রাতের চাঁদের আলোর মত উজ্জ্বল। আর দ্বিতীয় দল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত সুন্দর বর্ণের। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরদের মধ্য থেকে দু’জন স্ত্রী থাকবে, প্রত্যেক স্ত্রী’র গায়ে থাকবে সত্তর সেট পোষাক, যার সৌন্দর্যের ফলে গোশত ও তার পোষাক ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা ঠিক তেমনিভাবে দেখা যাবে, যেমনিভাবে সাদা গ্লাসের মধ্যে লাল পানীয় দেখা যায়।” [তাবারানী হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০১) বলেছেন।]

৬৬. আবদুল্লা ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه و سلم , فقال : يا رسول الله ! أخبرنا عن ثياب أهل الجنة خلقا تخلق أم نسجا تنسج ؟ فضحك بعض القوم , فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : مم تضحكون ؟ ! من جاهل يسأل عالما ؟ ثم أكب رسول الله صلى الله عليه و سلم , ثم قال : أين السائل ؟ قال : هو ذا أنا يا رسول الله . قال : لا , بل تشقق عنها ثمر الجنة ثلاث مرات » . ( رواه أحمد ) .

“কোনো এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন করল, তারপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে জান্নাতবাসীদের কাপড় সম্পর্কে বলে দিন, তা কি সৃষ্টি করা হবে, নাকি বয়ন করা হবে? তখন কাওমের (সম্প্রদায়ের) কেউ কেউ হাসল, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কেন হাসছ?! অজ্ঞ ব্যক্তি জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করার কারণে? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রশ্নকর্তার বিষয়ে) মনোনিবেশ করলেন, তারপর বললেন: প্রশ্নকর্তা কোথায়? সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! এই তো আমি। তখন তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন: না; বরং (গাছ থেকে হবে) জান্নাতের ফলসমূহ থেকে তা ফেটে বেরিয়ে আসবে। (এই কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন)।” [ইমাম আহমদ র. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আর শাইখ আলবানীও তার ‘আস-সিলসিলাতুস সহীহা’ ( السلسلة الصحيحة ) নামক গ্রন্থেরে মধ্যে (৪ / ৬৪০) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।]

১৯
ষোড়শ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বিছানা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فِيهَا سُرُرٞ مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥ وَزَرَابِيُّ مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [ الغاشية : ١٣، ١٦ ]

“সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ, আর প্রস্তুত থাকবে পানপাত্র, সারি সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা।” [সূরা আল-গাশিয়া: ১৩ - ১৬]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤ ﴾ [ الرحمن : ٥٤ ]

“সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের। আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” [সূরা আর-রাহমান: ৫৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [ الرحمن : ٧٦ ]

“তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।” [সূরা আর-রাহমান: ৭৬]

৬৭. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ وَفُرُشٖ مَّرۡفُوعَةٍ ٣٤ ﴾ [আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ] প্রসঙ্গে বলেছেন:

« ارتفاعها كما بين السماء والأرض , مسيرة ما بينها خمسمائة عام » . ( رواه ابن أبي الدنيا و الترمذي ) .

“তার (বিছানার) উচ্চতা হবে আসমান এবং যমীনের মধ্যকার উচ্চতার মত, তার মধ্যকার আয়তন হল পাঁচশত বছরের ভ্রমণপথের দূরেত্বের সমান।” [ইবনু আবিদ দুনিয়া; তিরমিযী (৪ / ৮৬), তিনি বলেছেন: “হাদিসটি হাসান গরীব, হাদিসটিকে আমরা শুধু রাশেদীন ইবন সা‘দ কর্তৃক বর্ণিত হাদিস হিসেবেই জানি।”আমি বলি: বরং ইবনু হিব্বান ও বায়হাকী র. এর মতে, ইবনু ওহাব এই হাদিসটির মত হাদিস বর্ণনা করেছেন, যেমনিভাবে হাফেয ইবনু কাছীর এই হাদিসটি উল্লেখ করেছেন (৪ / ৩১২)।অতঃপর আমি ইমাম আহমদ র. এর নিকট এই হাদিসটির অপর আরেকটি সনদ পেয়েছি, ইবনু কাছীর র. (৪ / ৩১২) ইবনু লাহি‘আ’র হাদিস হিসেবে উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি বলেছেন: আমাদেরকে দাররাজ হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তার ‘তাদলীস’ হওয়া সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন; সুতরাং হাদিসটি উৎকৃষ্ট এবং তার সনদগুলো দ্বারা শক্তিশালী, আলহামদুলিল্লাহ।]

৬৮. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বাণী: ﴿ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ ﴾ [যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের] প্রসঙ্গে বলেছেন:

« قد أُخبرتم بالبطائن , فكيف بالظاهر ؟ !» . ( رواه البيهقي ) .

“তোমাদেরকে অভ্যন্তরভাগের ব্যাপারে জানানো হয়েছে, সুতরাং (ভেবে দেখ) তার বর্হিভাগের অবস্থা কেমন হতে পারে?! [ইমাম বায়হাকী র. হাদিসটি হাসান সনদে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০৩) বলেছেন।]

২০
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের নারীসমষ্টি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [ الواقعة : ٢٢، ٢٣ ]

“আর তাদের জন্য থাকবে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূর, যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা।” [সূরা আল-ওয়াকিয়া: ২২ - ২৩]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ مَفَازًا ٣١ حَدَآئِقَ وَأَعۡنَٰبٗا ٣٢ وَكَوَاعِبَ أَتۡرَابٗا ٣٣ ﴾ [ النبا : ٣١، ٣٣ ]

“নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আছে সাফল্য, উদ্যানসমূহ, আঙ্গুরসমূহ, আর সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী।” [সূরা আন-নাবা: ৩১ - ৩৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧ ﴾ [ الواقعة : ٣٥، ٣٧ ]

“নিশ্চয় আমরা তাদেরকে সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে— অতঃপর তাদেরকে করেছি কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা।” [সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৩৫ - ৩৭]

৬৯. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لروحة في سبيل الله أو غدوة خير من الدنيا وما فيها ولقاب قوس أحدكم من الجنة أو موضع قيد يعني سوطه خير من الدنيا وما فيها , ولو أن امرأة من أهل الجنة اطلعت إلى أهل الأرض لملأت ما بينهما ريحا , لأضاءت ما بينهما , ولنصيفها على رأسها خير من الدنيا وما فيها» . ( رواه البخاري ) .

“আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। আর তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোনো মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয়, তাহলে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী সবকিছু সুরভীতে ভরপুর হয়ে যাবে এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: জিহাদ ( كتاب الجهاد والسير ), পরিচ্ছেদ: ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুর ও তাদের গুণাবলী, তাদের দর্শনে দৃষ্টি স্থির থাকে না এবং তাদের চোখের মনি অতীব কালো ও চোখের সাদা অংশ অতীব শুভ্র ( باب الحور العين وصفتهن يحار فيها الطرف شديدة سواد العين شديدة بياض العين ), হাদিস নং- ২৬৪৩।]

৭০. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن أول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر , و التي تليها على أضوإ كوكب دري في السماء , لكل امرئ منهم زوجتان اثنتان , يرى مخ سوقهما من وراء اللحم , وما في الجنة أعزب » . ( رواه البخاري ) .

“সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। আর জান্নাতের মধ্যে কোনো অবিবাহিত নেই।” [বুখারী (৬ / ৩২১ - ফাতহুল বারী)।]

৭১. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَّكِئُ فِى الْجَنَّةِ سَبْعِينَ سَنَةً قَبْلَ أَنْ يَتَحَوَّلَ ، ثُمَّ تَأْتِيهِ امْرَأَتُهُ ، فَتَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ ، فَيَنْظُرُ وَجْهَهُ فِى خَدِّهَا أَصْفَى مِنَ الْمِرْآةِ ، وَإِنَّ أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ عَلَيْهَا تُضِىءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ، فَتُسَلِّمُ عَلَيْهِ ، قَالَ : فَيَرُدُّ السَّلامَ , وَيَسْأَلُهَا مَنْ أَنْتِ؟ فَتَقُولُ : أَنَا مِنَ الْمَزِيدِ ، وَإِنَّهُ لَيَكُونُ عَلَيْهَا سَبْعُونَ ثَوْبًا , أَدْنَاهَا مِثْلُ النُّعْمَانِ مِنْ طُوبَى ، فَيَنْفُذُهَا بَصَرُهُ حَتَّى يَرَى مُخَّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ ذَلِكَ ، وَإِنَّ عَلَيْهَا مِنَ التِّيجَانِ , إِنَّ أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ منها لَتُضِىءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ » . ( رواه الطبراني ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে পুরুষ ব্যক্তি একভাবে সত্তর বছর হেলান দিয়ে থাকবে, অতঃপর তার নিকট তার স্ত্রী আসবে এবং সে তার দুই কাঁধের উপর (মৃদু) আঘাত করবে; তারপর সে তার সামনের দিকে লক্ষ্য করে দেখবে তার (স্ত্রী’র) গণ্ডদেশ (গাল) আয়নার চেয়েও অনেক বেশি স্বচ্ছ; তার চেহারার উপর একটি ছোট্ট মুক্তাদানার আলোর প্রতিবিম্ব নিশ্চিতভাবে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সমপরিমাণ জায়গাকে আলোকিত করে দিবে; অতঃপর তার স্ত্রী তাকে সালাম পেশ করবে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তারপর সেও সালামের জবাব পেশ করবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করবে: তুমি কে? তখন সে বলবে: আমি (তোমার জন্য) অতিরিক্ত বরাদ্ধ; আর তার পোশাক হবে সত্তরটি, তন্মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের পোশাকটির অবস্থা হবে ‘তুবা’ নামক বৃক্ষ থেকে উৎপাদিত ‘নু‘মান’ নামক পাহাড়ের মত; তারপর সেই পোশাক তাকে পরানো হবে, তারপরেও এর বাইরে থেকে সৌন্দর্যের ফলে তার পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে; আর তার মাথায় থাকবে (মুক্তার) মুকুট, যার মধ্যকার ছোট্ট একটি মুক্তাদানা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সমপরিমাণ জায়গাকে আলোকিত করে দিবে।” [তাবারানী হাদিসটি উৎকৃষ্ট সনদে ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, যা হাইছামী ‘আল-মাজমা’ ( المجمع ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (১০ / ৪১৮) বলেছেন।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( أَنَا مِنَ الْمَزِيدِ ): অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥ ﴾ [ق: ٣٥ ] [এখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে তারও বেশি। - সূরা ক্বাফ: ৩৫]।

( النُّعْمَان ): আরাফাতের পাহাড়।

( فَيَنْفُذُهَا ): তার দৃষ্টি এই কাপড়সমূহকে অতিক্রম করবে।

( طُوبَى ): এমন বৃক্ষের নাম, যার থেকে জান্নাতবাসীদের কাপড় বেরিয়ে আসবে।

৭৩. মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا تؤذى امرأة زوجها في الدنيا ؛ الا قالت زوجته من الحور العين : لا تؤذيه قاتلك الله ؛ فإنما هو عندك دخيل , يوشك أن يفارقك إلينا » . ( رواه أحمد و الترمذي ) .

“দুনিয়ার জীবনে কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দিলে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরদের মধ্য থেকে তার স্ত্রী বলে: তুমি তাকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন; কারণ, সে তো তোমার নিকট আগন্তুক, শীঘ্রই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে।” [আহমদ; তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে সহীহ বলেছেন, ক্রমিক নং- ৭০৬৯]

২১
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের মধ্যে দৈহিক মিলন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [ الزخرف : ٧١ ]

“সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” [সূরা যুখরুফ: ৭১]

৭৪. যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« جاء رَجُلٌ مِنْ الْيَهُودِ إلى رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ : يَا أَبَا الْقَاسِمِ ! أَلَسْتَ تَزْعُمُ أَنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونِ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ ؟ وَقَالَ لِأَصْحَابِهِ : إِنْ أَقَرَّ لِي بِهَا ؛ خَصَمْتُهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « بَلَى ؛ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ , إِنَّ أَحَدَهُمْ لَيُعْطَى قُوَّةَ مِائَةِ رَجُلٍ فِي الْمَطْعَمِ وَالْمَشْرَبِ وَالْجِمَاعِ» . فَقَالَ لَهُ الْيَهُودِيُّ : فَإِنَّ الَّذِي يَأْكُلُ وَيَشْرَبُ يكُونُ لَهُ الْحَاجَةُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «حَاجَةُ أَحَدِهِمْ عَرَقٌ يَفِيضُ مِنْ جُلُودِهِمْ مِثْلُ الْمِسْكِ ؛ فَإِذَا الْبَطْنُ قَدْ ضَمُرَ » . ( رواه النسائي ) .

“ইয়াহূদীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, তারপর বলল: হে আবূল কাসেম! তুমি কি মনে কর না যে, জান্নাতের অধিবাসীগণ সেখানে খাবে এবং পান করবে? এবং সাথে সাথে সে (ইয়াহূদী ব্যক্তি) তার সঙ্গীদেরকে বলল: যদি সে আমার নিকট তা স্বীকার করে, তাহলে আমি তাকে পরাজিত করতে পারব। অতঃপর জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই; যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর শপথ! তাদের প্রত্যেককে খাওয়া-দাওয়া, পান করা ও যৌন মিলনের ক্ষেত্রে একশত পুরুষের ক্ষমতা দান করা হবে।” তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে ইয়াহূদী বলল: যে ব্যক্তি খাবে এবং পান করবে, তাহলে তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনের কী হবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের প্রকৃতিক প্রয়োজন হল ঘাম, যা তাদের ত্বক থেকে মিশকের ন্যায় প্রবাহিত হবে; আর যখন (তাদের) পেট হবে হালকা পাতলা।” [ইমাম নাসায়ী র. সহীহ সনদে ‘আল-কুবরা’ ( الكبرى ) নামক গ্রন্থের মধ্যে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন; যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء ) নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( الحاجة ): অর্থাৎ প্রস্রাব ও পায়খানা।

( خَصَمْتُهُ ): আমি তাকে পরাজিত করব।

৭৫. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« يعطى المؤمن في الجنة قوة كذا وكذا من الجماع » . قيل : يا رسول الله ! أو يطيق ذلك ؟ قال : « يعطى قوة مائة رجل » . ( رواه الترمذي ) .

“মুমিন ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যে এই এই পরিমাণ যৌনক্ষমতা প্রদান করা হবে”। বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল! সে কি এমন ক্ষমতা রাখবে? জবাবে তিনি বললেন: তাকে একশত পুরুষের ক্ষমতা দেয়া হবে।” [তিরমিযী (৪ / ৮৪), তিনি বলেন: হাদিসটি সহীহ, গরীব।]

২২
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের মধ্যে হূর কর্তৃক সঙ্গীত পরিবেশন
৭৬. আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن أزواج أهل الجنة ليغنين أزواجهن بأحسن أصوات ما سمعها أحد قط , إن مما يغنين به :

نحن الخيرات الحسان

أزواج قوم كرام

ينظرن بقرة أعيان

وإن مما يغنين به :

نحن الخالدات فلا يمتنه

نحن الآمنات فلا يخفنه

نحن المقيمات فلا يظعنه »

( رواه الطبراني ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের স্ত্রীগণ (হূরগণ) তাদের স্বামীদের উদ্দেশ্য করে এমন সুন্দর সুরে সঙ্গীত পরিবেশন করবে, যা কেউ কোনো দিন শুনে নি; আর তারা যেসব সঙ্গীত পরিবেশন করবে, তন্মধ্যে একটি হল:

আমরা হলাম উত্তম, সুন্দরী

স্বামীগণ হলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মানিত

তারা দেখে আনন্দের চোখে।

আর তারা যেসব সঙ্গীত পরিবেশন করবে, তন্মধ্যে আরও একটি হল:

আমরা হলাম চিরস্থায়ী, সুতরাং আমরা কখনও তাকে ছেড়ে মরব না

আমারা হলাম নিরাপদ, সুতরাং তারা তাকে ভয় করবে না

আমরা হলাম স্থায়ীভাবে বসবাসকারিনী, সুতরাং তারা তার থেকে প্রস্থান করবে না।” [তাবারানী হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৩০১১) বলেছেন ।]

৭৭. আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ما من عبد يدخل الجنة؛ إلا يجلس عند رأسه وعند رجليه ثنتان من الحور العين ؛ تغنيانه بأحسن صوت سمعه الجن والإنس وليس بمزامير الشيطان , ولكن بتحميد الله وتقديسه » . ( رواه الطبراني ) .

“যে কোনো বান্দাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার মাথা ও দুই পায়ের নিকট দুইজন ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূর বসবে এবং মানুষ ও জিন জাতি কখনও যে গান শুনেছে তার থেকেও সুন্দর স্বরে-সুরে তারা উভয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করবে; আর সেই সঙ্গীত শয়তানের বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে পরিবেশিত হবে না, বরং তা পরিবেশিত হবে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে।” [তাবারানী হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৩০১১) বলেছেন ।]

৭৮. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن الحور العين ليغنين فى الجنة ؛ ويقلن :

نحن الحور الحسانخبئنا لأزواج كرام» .

“নিশ্চয়ই ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরগণ জান্নাতের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করবে; আর তারা বলবে:

আমরা হলাম সুন্দরী হূর

আমাদেরকে গোপন করে রাখা হয়েছে সম্মানিত স্বামীদের জন্য উপহারস্বরূপ।” [‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) [২ / ৫৮], ক্রমিক নং- ১৫৯৮]

২৩
বিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের অলঙ্কার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [ الحج : ٢٣ ]

“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।” [সূরা আল-হাজ্জ: ২৩]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [ الانسان : ٢١ ]

“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” [সূরা আল-ইনসান: ২১]

৭৯. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لو كان أدنى أهل الجنة حليه عدلت بحلية أهل الدنيا جميعًا ؛ لكان ما يحليه الله به فى الآخرة أفضل من حلية أهل الدنيا جميعًا » . ( رواه الطبراني ) .

“যদি একজন নিম্নমানের জান্নাতবাসীর অলঙ্কারকে দুনিয়াবাসীদের সকলের অলঙ্কারের সাথে বিনিময় বা পরিমাপ করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ জান্নাতবাসীকে পরকালে যে অলঙ্কার পরিয়ে দিবেন, তা গোটা দুনিয়াবাসীর অলঙ্কারের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম হবে।” [তাবারানী হাদিসটি হাসান সনদে ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৩০০৪) বলেছেন।]

৮০. মিকদাম ইবন মা‘দিকারাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহীদকে দেওয়া বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন:

« ... ويوضع على رأسه تاج الوقار , الياقوتة منه خير من الدنيا وما فيها » . ( رواه الترمذي و ابن ماجه ) .

“ ... এবং তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে, তার মধ্যকার একটি ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম হবে।” [ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. সহীহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; দেখুন: ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ (৩ / ৩৫৮)।]

২৪
একবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের রুমাল
৮১. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« أهدي للنبي صلى الله عليه و سلم جبة سندس , وكان ينهى عن الحرير , فعجب الناس منها , فقال : « والذي نفس محمد بيده ؛ لمناديل سعد بن معاذ في الجنة أحسن من هذا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেওয়া হল, অথচ তিনি রেশমী কাপড় ব্যবহারে নিষেধ করতেন; তবে সাহাবীগণ কাপড়টি দেখে আনন্দিত হলেন। তখন তিনি বললেন: সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘আযের রুমালগুলো এর চেয়ে উৎকৃষ্ট।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: হিবা ও তার ফযীলত ( كتاب الهبة وفضلها ), পরিচ্ছেদ: মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা ( باب قبول الهدية من المشركين ), হাদিস নং- ২৪৭৩; মুসলিম (১৬ / ২৩ - নববী)।]

২৫
দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের বাজার (মেলা)
৮২. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوقًا يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ , فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ , فَتَحْثُو فِى وُجُوهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ , فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالاً , فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حُسْنًا وَجَمَالاً , فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ : وَاللَّهِ ! لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً ! فَيَقُولُونَ : وَأَنْتُمْ وَاللَّهِ ! لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً » . ( رواه امسلم ) .

“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে একটি বাজার থাকবে, তাতে প্রত্যেক জুমার দিন জান্নাতবাসীগণ আগমন করবে; অতঃপর উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে তাদের চেহারা ও পোষাক-পরিচ্ছদের মধ্যে; অতঃপর তাদের সৌন্দর্য ও শোভা বৃদ্ধি পাবে, তারপর তারা তাদের পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যাবে এমতাবস্থায় যে, আগের চেয়ে তাদের সৌন্দর্য ও শোভা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তাদের পরিবার পরিজন বলবে: আল্লাহর কসম! আমাদের পরবর্তীতে তোমাদের সৌন্দর্য ও শোভা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে! অতঃপর তারাও বলবে: আর তোমরা, আল্লাহর কসম! আমাদের পরবর্তীতে তোমাদেরও সৌন্দর্য ও শোভা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে!” [মুসলিম (১৬ / ১৭০ - নববী)।]

২৬
ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীগণ কর্তৃক তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃষ্টিদান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [ القيامة : ٢٢، ٢٣ ]

“সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ২২ - ২৩]

৮৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« قال أناس : يا رسول الله ! هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ فقال : « هل تضارون في الشمس ليس دونها سحاب ؟ » . قالوا : لا يا رسول الله . قال : « هل تضارون في القمر ليلة البدر ليس دونه سحاب ؟ » . قالوا : لا يا رسول الله . قال : « فإنكم ترونه يوم القيامة كذلك » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“লোকজন (সাহাবীগণ) বলল: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বলেন: মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: সিরাত হল জাহান্নামের পুল ( باب الصراط جسر جهنم ), হাদিস নং- ৬২০৪; মুসলিম (৩ / ১৭ - নববী)।]

৮৪. সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ ؛ يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى : تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا ؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّار؟ . قَالَ : « فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ , فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ » . ( رواه مسلم ) . ثم تلا هذه الآية : ﴿ لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ﴾ [ يونس : ٢٦ ] .

“জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন: তোমরা কি চাও আমি আরও অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবে: আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি? আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? আর আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এরপর আল্লাহ তা‘আলা পর্দা উঠিয়ে নিবেন; অতএব আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেয়া হয়নি বা হবে না।” [মুসলিম (৩ / ১৭ - নববী)।] অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন: ﴿ لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ﴾ [যারা ইহসানের সাথে আমল করে (উত্তমরূপে কাজ করে) তাদের জন্য আছে জান্নাত এবং আরো বেশি] [সূরা ইউনুস: ২৬]।

২৭
চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ: রবের সামনে দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির জন্য দু’টি জান্নাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥٣ ﴾ [ الرحمن : ٤٦، ٥٣ ]

“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?” [সূরা আর-রাহমান: ৪৬ - ৫৩]

৮৫. আবূ মূসা / কায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن في الجنة خيمة من لؤلؤة مجوفة , عرضها ستون ميلا , في كل زاوية منها أهل ما يرون الآخرين , يطوف عليهم المؤمنون , وجنتان من فضة آنيتهما وما فيهما , وجنتان من ذهب آنيتهما وما فيهما , وما بين القوم وبين أن ينظروا إلى ربهم إلا رداء الكبرياء على وجهه في جنة عدن » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মূর্তির একটি তাঁবু থাকবে; এর প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। এর এক কোণের জন অপর কোণের জনকে দেখতে পাবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে থাকবে দু’টি উদ্যান, যার সমুদয় পাত্র এবং ভেতরের সকল বস্তু হবে রূপার তৈরি। অনুরূপ আরও দু’টি দু’টি উদ্যান থাকবে, যার পাত্রসমূহ এবং অভ্যন্তরীণ সকল বস্তু হবে স্বর্ণের তৈরি। আর ‘জান্নাতে আদন’ এর মধ্যে জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভের মাঝখানে আল্লাহর বড়ত্বের প্রভাবময় আভা ভিন্ন আর কিছু থাকবে না।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর ( كتاب التفسير ), পরিচ্ছেদ: সূরা আর-রাহমানের তাফসীর ( باب تفسير سورة الرحمن ), হাদিস নং- ৪৫৯৭; মুসলিম (৩ / ১৬ - নববী)।]

২৮
পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে মুমিন ব্যক্তির দৈর্ঘ্য
৮৬. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« خلق الله عز و جل آدم على صورته , طوله ستون ذراعا , فلما خلقه ؛ قال : اذهب فسلم على أولئك النفر من الملائكة جلوس , فاستمع ما يحيونك ؛ فإنها تحيتك وتحية ذريتك » . فقال : السلام عليكم . فقالوا : السلام عليك ورحمة الله . فزادوه : ورحمة الله . فكل من يدخل الجنة على صورة آدم , فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আল্লাহ তা‘আলা আদম আ. কে তাঁর যথাযথ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেন: তুমি যাও, উপবিষ্ট ফিরিশতাদের এই দলকে সালাম কর এবং মনোযোগ সহকারে শোন- তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ, এটাই হবে তোমার এবং তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা), তাই তিনি গিয়ে বললেন: ‘আসসালামু আলাইকুম’। তারা জবাবে বললেন: ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেন: ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন: প্রত্যেক ব্যক্তি, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আদম আ. এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এই পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ হ্রাস পেয়ে আসছে।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: অনুমতি প্রার্থনা ( كتاب الاستئذان ), পরিচ্ছেদ: সালামের সূচনা প্রসঙ্গে ( باب بدء السلام ), হাদিস নং- ৫৮৭৩; মুসলিম (১৭ / ১৭৭ - নববী)।]

২৯
ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ: আল্লাহর পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সন্তুষ্টি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ﴾ [ ال عمران : ١٥ ]

“যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ خَيۡرُ ٱلۡبَرِيَّةِ ٧ جَزَآؤُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ رَبَّهُۥ ٨ ﴾ [ البينة : ٧، ٨ ]

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের রবের কাছে আছে তাদের পুরস্কার : স্থায়ী জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য, যে তার রবকে ভয় করে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনা: ৭ - ৮]

৮৭. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن الله تبارك وتعالى يقول لأهل الجنة : يا أهل الجنة ! فيقولون : لبيك ربنا , وسعديك , فيقول : هل رضيتم ؟ فيقولون : وما لنا لا نرضى وقد أعطيتنا ما لم تعط أحدا من خلقك . فيقول : أنا أعطيكم أفضل من ذلك ؟ قالوا : يا رب وأي شيء أفضل من ذلك ؟ فيقول : أحل عليكم رضواني فلا أسخط عليكم بعده أبدا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীগণকে সম্বোধন করে বলবেন: হে জান্নাতবাসীগণ! তারা জবাবে বলবে, হে আমাদের প্রভু! হাযির, আমরা আপনার সমীপে হাযির। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছে? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে এমন বস্তু দান করেছেন, যা আপনার মাখলুকাতের ভিতর থেকে আর কাউকে দান করেননি; অতএব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না? তখন তিনি বলবেন: আমি এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব। তারা বলবে: হে প্রভু! এর চেয়েও উত্তম কোন বস্তু? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করব; এরপর আমি আর কখনও তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা ( باب صفة الجنة والنار ), হাদিস নং- ৬১৮৩; মুসলিম (১৭ / ১৬৮ - নববী)।]

৩০
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ١٠٧ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبۡغُونَ عَنۡهَا حِوَلٗا ١٠٨ ﴾ [ الكهف : ١٠٧، ١٠٨ ]

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।” [সূরা আল-কাহাফ: ১০৭ - ১০৮]

৮৮. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ ؛ يُنَادِى مُنَادٍ : إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلاَ تَسْقَمُوا أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلاَ تَمُوتُوا أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلاَ تَهْرَمُوا أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلاَ تَبْتَئِسُوا أَبَدًا » . فَذَلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ : ﴿وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ » . ( رواه مسلم ) .

“যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন এক ঘোষক এই বলে ঘোষণা করবে: নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য সুস্থতা রয়েছে, সুতরাং তোমরা আর কখনও অসুস্থ হবে না; আর তোমারা জীবিত, সুতরাং তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করবে না; তোমরা নিশ্চয়ই যুবক হয়ে গেছ, সুতরাং তোমরা কখনও বৃদ্ধ হবে না; তোমাদের এখন সুখের জীবন, সুতরাং তোমরা আর কখনও দুঃখিত ও চিন্তিত হবে না। অতএব এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী’র চরম বাস্তবতা: ﴿وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ [আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের ওয়ারিস করা হয়েছে।’] [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪৩]।” [মুসলিম (১৭ / ১৭৪ - নববী)।]

অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:

( لاَ تَبْتَئِسُوا ): তোমরা দুঃখ-কষ্ট অনুভব করবে না।

৮৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« يؤتى بالموت كهيئة كبش أملح , فينادي مناد : يا أهل الجنة ! فيشرئبون وينظرون , فيقول : هل تعرفون هذا ؟ فيقولون : نعم ؛ هذا الموت , وكلهم قد رآه . ثم ينادي : يا أهل النار ! فيشرئبون وينظرون , فيقول : هل تعرفون هذا ؟ فيقولون : نعم ؛ هذا الموت , وكلهم قد رآه , فيذبح . ثم يقول يا أهل الجنة ! خلود فلا موت , ويا أهل النار ! خلود فلا موت . ثم قرأ : ﴿ وأنذرهم يوم الحسرة إذ قضي الأمر وهم في غفلة وهؤلاء في غفلة أهل الدنيا وهم لا يؤمنون﴾ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“কিয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি ধূসর রঙের মেষের আকৃতিতে আনা হবে; তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিয়ে বলবে: হে জান্নাতবাসী! তখন তাঁরা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে; তখন ঘোষক বলবে: তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে: হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কারণ, তারা প্রত্যেকেই একে দেখেছে। তারপর ঘোষণাকারী আবার ডাক দিয়ে বলবে: হে জাহান্নামবাসী! তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে; তখন ঘোষক বলবে: তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে: হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কেননা, তারা প্রত্যেকেই একে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে। আর ঘোষক বলেবেন: হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে (এখানে) থাক; তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! স্থায়ীভাবে (এখানে) থাক; তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন: ﴿ وأنذرهم يوم الحسرة إذ قضي الأمر وهم في غفلة وهؤلاء في غفلة أهل الدنيا وهم لا يؤمنون﴾ [আর তাদেরকে সতর্ক করে দিন পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। অথচ তারা রয়েছে গাফলতিতে নিমজ্জিত এবং তারা ঈমান আনছে না।] [সূরা মারইয়াম: ৩৯]।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর ( كتاب التفسير ), পরিচ্ছেদ: সূরা মারইয়ামের তাফসীর ( باب تفسير سورة مريم ), হাদিস নং- ৪৪৫৩; মুসলিম (১৭ / ১৮৫ - নববী)।]

৩১
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের কাতার সংখ্যা
৯০. বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أهل الجنة عشرون ومائة صف , ثمانون منها من هذه الأمة , وأربعون من سائر الأمم » . ( رواه الترمذي ) .

“জান্নাতবাসীদের কাতার (সারি) সংখ্যা হবে একশত বিশটি; তন্মধ্যে আশি সারি হবে এই উম্মত (উম্মাতে মুহাম্মাদী) থেকে; আর বাকি সকল উম্মত হবে চল্লিশ কাতার।” [তিরমিযী (৪ / ৮৯), তিনি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।]

৯১. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« كنا مع النبي صلى الله عليه و سلم في قبة , فقال : « أترضون أن تكونوا ربع أهل الجنة » . قلنا : نعم , قال : « أترضون أن تكونوا ثلث أهل الجنة » . قلنا : نعم , قال : « أترضون أن تكونوا شطر أهل الجنة » . قلنا : نعم , قال : «والذي نفس محمد بيده ؛ إني لأرجو أن تكونوا نصف أهل الجنة , وذلك أن الجنة لا يدخلها إلا نفس مسلمة , وما أنتم في أهل الشرك إلا كالشعرة البيضاء في جلد الثور الأسود أو كالشعرة السوداء في جلد الثور الأحمر» . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“একদা আমরা কোনো এক তাঁবুতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম; তখন তিনি বললেন: তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে, এটা কি তোমরা পছন্দ কর? আমরা বললাম: হ্যাঁ; তিনি আবার বললেন: তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হবে, এটা কি তোমরা পছন্দ কর? আমরা বললাম: হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: শপথ ঐ মহান সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জান! আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে, তোমরা বেহেশতীদের অর্ধেক হবে। আর এটা চিরন্তন সত্য যে, বেহেশতে কেবলমাত্র মুসলিমগণই প্রবেশ করতে পারবে। আর মুশরিকদের মুকাবিলায় তোমরা হচ্ছ এমন, যেমন কালো ষাঁড়ের চামড়ার উপর শুভ্র পশম, অথবা লাল ষাঁড়ের চামড়ার উপর কালো পশম।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: হাশরের অবস্থা ( باب كيف الحشر ), হাদিস নং- ৬১৬৩; মুসলিম (৩ / ৯৫ - নববী)।]

৩২
ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ: সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি
৯২. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বলেন:

« هل تمارون في القمر ليلة بدر ليس دونه حجاب ( سحاب ) ؟ » . قالوا : لا يا رسول الله ! قال : « فهل تمارون في الشمس ليس دونها سحاب ؟ » . قالوا : لا , قال : « فإنكم ترونه كذلك , يحشر الناس يوم القيامة , فيقول : من كان يعبد شيئا ؛ فليتبع , فمنهم من يتبع الشمس , ومنهم من يتبع القمر , ومنهم من يتبع الطواغيت , وتبقى هذه الأمة فيها منافقوها , فيأتهم الله , فيقول : أنا ربكم , فيقولون : هذا مكاننا حتى يأتينا ربنا , فإذا جاء ربنا ؛ عرفناه , فيأتيهم الله , فيقول : أنا ربكم . فيقولون : أنت ربنا , فيدعوهم , و يضرب الصراط بين ظهراني جهنم , فأكون أول من يجوز من الرسل بأمته , ولا يتكلم يومئذ أحد إلا الرسل , وكلام الرسل يومئذ : اللهم سلم سلم , وفي جهنم كلاليب مثل شوك السعدان , هل رأيتم شوك السعدان ؟ » . قالوا : نعم , قال : فإنها مثل شوك السعدان , غير أنه لا يعلم قدرعظمها إلا الله , تخطف الناس بأعمالهم , فمنهم من يوبق بعمله , ومنهم من يخردل ثم ينجو , حتى إذا أراد الله رحمة من أراد من أهل النار ؛ أمر الله الملائكة أن يخرجوا من كان يعبد الله , فيخرجونهم ويعرفونهم بآثار السجود , وحرم الله على النار أن تأكل أثر السجود , فيخرجون من النار , فكل ابن أدم تأكله النار إلا أثر السجود , فيخرجون من النار قد امتحشوا , فيصب عليهم ماء الحياة , فينبتون كما تنبت الحبة في حميل السيل , ثم يفرغ الله من القضاء بين العباد , ويبقى رجل بين الجنة والنار ( وهو آخر أهل النار دخولا الجنة ) , مقبل بوجهه قبل النار , فيقول : يا رب ! اصرف وجهي عن النار ؛ قد قشبني ريحها , وأحرقني ذكاؤها , فيقول : هل عسيت إن أفعل ذلك بك أن تسأل غير ذلك ؟ فيقول : لا , وعزتك . فيعطي الله ما يشاء من عهد وميثاق , فيصرف الله وجهه عن النار .

فإذا أقبل به على الجنة ؛ رأى بهجتها ؛ سكت ما شاء الله أن يسكت , ثم قال : يا رب ! قدمني عند باب الجنة , فيقول الله له : أليس قد أعطيت العهود والميثاق أن لا تسأل غير الذي كنت سألت ؟ فيقول : يا رب ! لا أكون أشقى خلقك . فيقول : فما عسيت إن أعطيتك ذلك أن لا تسأل غيره ؟ فيقول : لا , وعزتك لا أسأل غير ذلك . فيعطي ربه ما شاء من عهد وميثاق , فيقدمه إلى باب الجنة , فإذا بلغ بابها ؛ فرأى زهرتها وما فيها من النضرة والسرور , فسكت ما شاء الله أن يسكت , فيقول : يارب ! أدخلني الجنة , فيقول الله : ويحك يا بن آدم ! ما أغدرك ! أليس قد أعطيت العهد والميثاق أن لا تسأل غير الذي أعطيت ؟ فيقول : يا رب ! لا تجعلني أشقى خلقك . فيضحك الله عز و جل منه , ثم يأذن له في دخول الجنة , فيقول : تمن , فيتمنى , حتى إذا انقطعت أمنيته ؛ قال الله عز و جل : تمن كذا وكذا , أقبل . يذكره ربه حتى إذا انتهت به الأماني , قال الله تعالى : لك ذلك ومثله معه , و ذلك الرجل آخر أهل الجنة دخولا الجنة » . ( أخرجه البخاري و مسلم ) .

“মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যে যার উপাসনা করত, সে যেন তার অনুসরণ করে; তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু এ উম্মাহ, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন: “আমি তোমাদের রব।” তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব। আর তাঁর যখন শুভাগমন হবে, তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ আগমন করবেন এবং বলবেন: “আমি তোমাদের রব।” তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতুপথ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবে: ‘ اللهم سلم سلم ’ (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম), অর্থাৎ হে আল্লাহ! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মত। তোমরা কি সা‘দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সা‘দান [সা‘দান চতুর্পাশ্বে কাঁটা বিশিষ্ট এক প্রকার গাছ, মরু অঞ্চলে জন্মে, যার কাঁটাগুলো বাঁকা হয়ে থাকে। এগুলো উটের খাদ্য।] কাঁটার মতই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে জখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, তারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফিরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন, এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এ ছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা‘আলাকে অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেবেন। এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। তারপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌঁছিয়ে দিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচেয়ে হতভাগ্য ব্যক্তি আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাতক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পুরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে, তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য্য ও তার অভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। এরপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন: হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গিকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য আমাকে করবেন না। এতে আল্লাহ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। তখন সে চাইবে, এমনকি তার চাওয়ার আকাঙ্খা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন: এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্খা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এ সবই তোমার, এর সাথে আরও সমপরিমাণ (তোমাকে দেয়া হল); আর এই ব্যক্তিই হল জান্নাতে প্রবেশ করার দিক থেকে সর্বশেষ ব্যক্তি।” [বুখারী, অধ্যায়: সালাতের বিবরণ ( كتاب صفة الصلاة ), পরিচ্ছেদ: সিজদার ফযিলত ( باب فضل السجود ), হাদিস নং- ৭৭৩; মুসলিম (৩ / ৮১ - নববী)।]

৩৩
ত্রিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের চিত্র বর্ণনাতীত
৯৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« قال الله تعالى : أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت , ولا أذن سمعت , ولا خطر على قلب بشر » ؛ مصداق ذلك في كتاب الله : فاقرؤوا إن شئتم : ﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٧ ] » . ( رواه البخاري و مسلم ) .

“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনও দেখে নি, কোনো কান কখনও শুনেনি এবং যার কল্পনা কোনো মানুষের মনে কখনও উদয় হয় নি; এ রকম কথা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে আছে; সুতরাং তোমরা ইচ্ছা করলে পাঠ করতে পার: ﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ] [সূরা আস-সাজদা: ১৭]।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৭২; মুসলিম (১৭ / ১৬৬ - নববী)।]

৯৪. সাহল ইবন সা‘দ আস-সা‘দী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« موضع سوط في الجنة خير من الدنيا وما فيها » . ( رواه البخاري ) .

“জান্নাতের মধ্যে এক চাবুক পরিমাণ জায়গার মূল্যমান দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৭৮]

৯৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ولقاب قوس أحدكم في الجنة خير مما طلعت عليه الشمس أو تغرب » . ( رواه البخاري ) .

“আর জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ পরিমাণ জায়গার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম, যেই পরিমাণ জায়গায় সূর্যোদয় হয় এবং সূর্যাস্ত যায় (অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর চেয়ে উত্তম)।” [বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা ( كتاب بدء الخلق ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি ( باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة ), হাদিস নং- ৩০৮০]

৯৬. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أدنى أهل الجنة درجة لمن يقوم على رأسه عشرة آلاف خادم بيد كل واحد صفحتان : واحدة من ذهب ، والأخرى من فضة » . ( رواه الطبراني ) .

“মর্যাদার দিক থেকে সর্বনিম্ন মানের জান্নাতবাসী হবেন ঐ ব্যক্তি, যার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে এক হাজার খাদেম, তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে দু’টি করে পাত্র: একটি হবে স্বর্ণের, আর অপরটি হবে রৌপ্যের।” [তাবারানী হাদিসটি শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইবনু হাজার ‘আল-ফাতহ’ (৬ / ৩২৪) নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন।]

সবশেষে বলা যায়, এটি হলো সর্বশেষ হাদিস, যার মাধ্যমে ‘সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য’ বিষয়ক সংকলনটি সমাপ্ত হল; আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন একে আমার জন্য ও আমার মুমিন ভাইদের জন্য চেষ্টা-সাধনা ও গবেষণার ব্যাপারে এবং বহু মূল্যবান এই পণ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মূল্যবান ও উৎকৃষ্ট ত্যাগ স্বীকারে সাহায্যকারী বানিয়ে দেন; যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন, আমাদের সকলকে জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন এবং সেখানে আমাদেরকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সমবেত করে দেন; নিশ্চয়ই তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আবেদন গ্রহণে যথাযোগ্য।

৩৪
গ্রন্থপঞ্জি
১. ‘তাখরীজুল এহইয়া’ ( تخريج الإحياء ), হাফেয আল-‘ইরাকী, জাতীয় সংস্করণের প্রান্ত-টীকাসহ।

২. ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ), হাফেয আল-মুনযেরী, প্রকাশনা: দারুল ফিকর।

৩. ‘সিলসিলাতুল আহাদীসা আস-সহীহা’ ( سلسلة الأحاديث الصحيحة ): আলবানী, প্রকাশনা: আল-মাকতাবু আল-ইসলামী।

৪. ‘সুনানু ইবনি মাজাহ’ ( سنن ابن ماجه ): ইবনু মাজাহ আল-কাযবিনী, বিন্যাস: মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, প্রকাশনা: দারুল ফিকর।

৫. ‘সানানু আবি দাউদ’ ( سنن أبي داود ), আবূ দাউদ আস-সিজিসতানী, দারু এহইয়াউস সুন্নাহ আন-নবুবীয়াহ।

৬. ‘সুনানুত তিরমিযী’ ( سنن الترمذي ), আবূ ঈসা আত-তিরমিযী, প্রকাশনা: দারুল ফিকর।

৭. ‘সুনানুদ দারেমী’ ( سنن الدارمي ), আবূ মুহাম্মদ আদ-দারেমী, বৈরুত।

৮. ‘সুনানুন নাসায়ী’ ( سنن النسائي ), আবূ আবদির রহমান আন-নাসায়ী, দারুত তুরাস।

৯. ‘সহীহুল বুখারী মা‘আ ফাতহিল বারী’ ( صحيح البخاري مع فتح الباري ):দারুল ফিকর।

১০. ‘সহীহু মুসলিম মা‘আ শরহিন নববী’ ( صحيح مسلم مع شرح النووي ): মাকতাবতু যাহরান।

১১. ‘যিলালুল জান্নাত ফী তাখরীজিস সুন্নাহ’ ( ظلال الجنة في تخريج السنة ): আলবানী, প্রকাশনা: আল-মাকতাবু আল-ইসলামী।

১২. ‘কিতাবুস সুন্নাহ’ ( كتاب السنة ): ইবনু আবি ‘আসেম, প্রকাশনা: আল-মাকতাবু আল-ইসলামী।

১৩. ‘আল-লুওলুও ওয়াল মারজান ফীমা ইত্তাফাকা ‘আলাইহে আশ-শাইখান’ ( اللؤلؤ و المرجان فيما اتفق عليه الشيخان ): মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।

১৪. ‘মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ’ ( مجمع الزوائد ): আল-হাইছামী, মাকতাবাতুল কুদস।

১৫. ‘মিফতাহু কুনুযিস সুন্নাহ’ ( مفتاح كنوز السنة ): ফিনসানক, অনুবাদ: মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।

১৬. ‘আল-মুয়াত্তা’ ( الموطأ ): ইমাম মালেক ইবন আনাস, বিন্যাস: মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।

১৭. ‘সহীহুল বুখারী’ ( صحيح البخاري ): আল-মাকতাবা আশ-শামেলা ( المكتبة الشاملة ), দ্বিতীয় প্রকাশ ( الإصدار الثاني )। [অনুবাদক ]।

১৮. ‘সহীহু মুসলিম’ ( صحيح مسلم ): আল-মাকতাবা আশ-শামেলা ( المكتبة الشاملة ), দ্বিতীয় প্রকাশ ( الإصدار الثاني )। [ অনুবাদক]।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন