HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সাহাবীদের পেয়েছি, কিন্তু আহলে-বাইতকে হারাই নি
লেখকঃ আবু খলিফা আলি ইব্ন মুহাম্মদ আল-কুদাইবি
الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه، ملء السموات والأرض، وملء ما شاء ربنا من شيء بعده، وصلوات الله وسلامه على صفوة خلقه وخاتم رسله محمد، وعلى آله وصحبه ومن اتبعهم بإحسان إلى يوم الدين .
প্রিয় পাঠক, আপনার সামনে আমার জীবন থেকে এ ক’টা পৃষ্ঠা পেশ করছি। কারণ কিছু ভাবনা, কতিপয় প্রশ্ন আমাকে এমন এক সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে যার কল্পনা কখনো করিনি! বলতে দ্বিধা নেই মানুষের জীবনে এটাই বড় যুদ্ধ। সত্য-মিথ্যার যুদ্ধ। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আকিদার সাথে অকাট্য সত্য আকিদার যুদ্ধ।
কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে একান্তভাবে কারো ব্যক্তিগত জীবনের, কিন্তু এ অভিজ্ঞতা তেমন নয়, এ অভিজ্ঞতা আমার, আপনার ও অনেকের। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত কতক আকিদা ও বিশ্বাসের ওপর আমরা যারা জন্মেছি, তার শিক্ষা-দীক্ষায় বেড়ে উঠেছি, তার জন্য যত ত্যাগ স্বীকার করেছি, সর্বোপরি তার সুরক্ষার জন্য উৎসর্গ হয়েছি, অতঃপর এক সময় স্পষ্ট হল সত্য তার বিপরীত! তাদের সবার অভিজ্ঞতা এটা। পরিবার, বংশ ও সন্তানের পক্ষে গোঁড়ামি করা মূলত মূল্যবান বস্তুর বিনিময়ে মূল্যহীন বস্তু ক্রয় করা বৈ কিছু নয়। অথচ আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তাই উত্তম ও স্থায়ী।
আবু খলিফা, আলি আল-কুদাইবি
২৭/৩/২০০৫ই.
প্রিয় পাঠক, আপনার সামনে আমার জীবন থেকে এ ক’টা পৃষ্ঠা পেশ করছি। কারণ কিছু ভাবনা, কতিপয় প্রশ্ন আমাকে এমন এক সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে যার কল্পনা কখনো করিনি! বলতে দ্বিধা নেই মানুষের জীবনে এটাই বড় যুদ্ধ। সত্য-মিথ্যার যুদ্ধ। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আকিদার সাথে অকাট্য সত্য আকিদার যুদ্ধ।
কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে একান্তভাবে কারো ব্যক্তিগত জীবনের, কিন্তু এ অভিজ্ঞতা তেমন নয়, এ অভিজ্ঞতা আমার, আপনার ও অনেকের। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত কতক আকিদা ও বিশ্বাসের ওপর আমরা যারা জন্মেছি, তার শিক্ষা-দীক্ষায় বেড়ে উঠেছি, তার জন্য যত ত্যাগ স্বীকার করেছি, সর্বোপরি তার সুরক্ষার জন্য উৎসর্গ হয়েছি, অতঃপর এক সময় স্পষ্ট হল সত্য তার বিপরীত! তাদের সবার অভিজ্ঞতা এটা। পরিবার, বংশ ও সন্তানের পক্ষে গোঁড়ামি করা মূলত মূল্যবান বস্তুর বিনিময়ে মূল্যহীন বস্তু ক্রয় করা বৈ কিছু নয়। অথচ আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তাই উত্তম ও স্থায়ী।
আবু খলিফা, আলি আল-কুদাইবি
২৭/৩/২০০৫ই.
আমি শিয়া পরিবারে বড় হয়েছি, যে পরিবার শিয়া জ্ঞান চর্চা ও শিয়া মাজহাব সুরক্ষার ব্রতকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমি যখন ছোট তখন আমার পিতা মারা যান। আমার ও আমার ভাই-বোনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আমার খালু। তিনি কালো পাগড়ীধারী শিয়া বড় শায়খ। বাহরাইনের “জাদ্দে হাফস” শহরে অবস্থিত এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি ইলম অর্জন করেন। অতঃপর ইরানের কুম শহরে শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
তিনি আমাদের ব্যাপারে খুব যত্নশীল ছিলেন। তিনি লক্ষ্য রাখতেন যেন আমরা সঙ্গদোষে তুষ্ট না হই, আমাদের থেকে এমন কিছু প্রকাশ না পায়, যা আমাদের সুখ্যাতি বিনষ্ট করে, পারিবারিক আদর্শকে কলঙ্কিত করে এবং যে কারণে আমাদের রব আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন। তিনি এতটাই লক্ষ্য রাখতেন যে, যখন জানলেন আমি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, আমার আগ্রহ আমি সঙ্গীত টিচার হবো, তিনি খুব রাগ করলেন। তিনি আমাকে নিষেধ করে বললেন, আমার শৈশবে আমি এমন কাউকে পাইনি যে আমাকে উপদেশ দেবে ও আমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে নিবে। একা একা অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার উপদেশ শোন।
আমি বলতে পারি, আমার মাথা থেকে সঙ্গীত শিখার চিন্তা দূর করার পেছনে আমার খালুর অনেক অবদান রয়েছে। সাথে অন্য কারণও ছিল যে জন্য আমি সে দিকে এগুতে পারিনি।
আমার মার ইচ্ছা ছিল আমি যেন শিয়াদের আনন্দ ও বিষাদের ধর্মীয় সব উৎসবে অংশ গ্রহণ করি। তার ধারণা এতে অনেক সাওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে। বিশেষভাবে তিনি যেহেতু ইমাম হুসাইনের খাদেম, তাই এ জন্য আমাকে নিয়ে তার আগ্রহের কমতি ছিল না।
রোগ-শোক ও সাংসারিক ব্যস্ততা কিছুকেই তিনি বাধা মনে করতেন না, ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ গ্রহণ করতেন! তিনি বিশ্বাস করতেন এতে অংশ না নেয়া পাপ, অংশ নিলে রোগ থেকে মুক্তি মিলে ও বরকত হাসিল হয়।
আমার নানা জীবন ভর ঢোল বানিয়েছেন, যা মুহররমের তাজিয়া মিছিল ও রমযানের শেষ রাতগুলোতে ঘটা করে বাজানো হত বিশেষ করে ঐ রাতে যে রাতকে বলা হত “লাইলাতুল বেদা”। এখানে বলে রাখি, আমার গোটা পরিবার তখন শিয়া সাইয়্যেদ খুয়ীর অনুসারী ছিল, যার আমিও একজন সদস্য ছিলাম।
এ পরিবেশের কারণে আমি শৈশব থেকে ‘মানামাহ’ শহরে অবস্থিত ‘হাম্মাম’ জনপদে উদ্যাপিত আলহাজ্ব আব্বাসের মাতমে অংশ গ্রহণ করা পছন্দ করতাম।
প্রত্যেক উৎসবে সর্বাগ্রে উপস্থিত হওয়া আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছিল, যেন হুসাইনী তাজিয়া মিছিলে আমার আগে কেউ ঝাণ্ডা হাতে নিতে না পারে।
সামান্য বড় হয়ে মাতমের মিছিলে যখন অংশ নিতাম, তখন শিকলের আঘাতে আমার পিঠ আমি রক্তাক্ত করতাম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমি সেসব বন্ধুদের সঙ্গ বেশী পছন্দ করতাম, যারা ধর্মীয় উৎসবে সোৎসাহে অংশ গ্রহণ করত। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শিক্ষার বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করার ন্যায় আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ছিল। তাই এসব উৎসবে যোগদানের অজুহাতে ক্লাসে অধিকাংশ অনুপস্থিতি ছিল আমাদের। বিশেষ করে শিয়া শিক্ষকগণ আমাদের কখনো এ জন্য জবাবদিহি করতেন না, বরং তাদের থেকে উৎসাহ পেতাম।
দুঃখের হলেও সত্য যে, অধিকাংশ যুবক এসব উৎসব আগমনে পুলক অনুভব করত। কারণ এতে তাদের জন্য যুবতী মেয়েদের সাথে মেশার সেরা সুযোগ ছিল, যেহেতু এসব অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণে তেমন বিধি-নিষেধ থাকত না। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
আমার পরিবারে এক রেওয়াজ ছিল মান্নত করা। আমার ফুফুর কখনো গর্ভ টিকত না। তার বাচ্চা হয়ে জন্মের পূর্বে মারা যেত, অথবা প্রসবের পরেই মারা যেত। এ ঘটনা তার একাধিকবার ঘটেছে, এক পর্যায়ে আমার পরিবার প্রায় নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তারা ইমাম আলির জন্য মান্নত করল, যদি তিনি তাদেরকে বাচ্চা দেন ও সকল বিপদ থেকে মুক্ত রাখেন, [কখনো মান্নতকারীর মান্নত মোতাবেক কিছু ঘটতে দেখা যায়, তার অর্থ মান্নত সহি পন্থায় হয়েছে, অথবা গায়রুল্লাহর জন্য মান্নত করা ঠিক, এমনটি নয়। কারণ খৃস্টানরা অনেক সময় গীর্জায় গিয়ে চিরকুমারী মারইয়ামের নিকট রোগ মুক্তি অথবা রিযক তলব করে, কিন্তু আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাদের উদ্দিষ্ট বস্তু প্রদান করেন, যা তাদের জন্য ফিতনা ও তাদেরকে ঢিল দেয়া স্বরূপ। এরূপ সকল বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে ঘটে, যেমন হিন্দু মূর্তিপূজকরা তাদের উপাস্যদের নিকট কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করে তাদেরকে ঢিল দেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ﴿ سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٢ ﴾ [ الاعراف : ١٨١ ] “অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না”। [সূরা আল-আরাফ: (১৮১)] এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম সাদেক বলেন: “এখানে উদ্দেশ্য ঐ পাপী ব্যক্তি যাকে পাপ সত্ত্বেও নিয়ামত প্রদান করা হয়, যা তাকে পাপ থেকে ইস্তেগফার করা ভুলিয়ে দেয়”। [আল-কাফি: (২/৪৫২)] আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আহ্বান করা শুধু পাপই নয়, বরং সকল পাপ থেকে বড় পাপ। আল-নুরি আত-তাবরিসি মুস্তাদরাক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন: “কোন পাপ সবচেয়ে বড়? তিনি বলেন: আল্লাহর সাথে তোমার শরীক করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন!” [আল-মুস্তাদরাক: (১৪/৩৩১)] মুসলিম মাত্রই জানে যে, দোয়া এক প্রকার ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত কাউকে নিবেদন করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ] “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন: (১৮)] অনুরূপ মান্নতও ইবাদত, আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়। আল-নুরি তাবরাসি বর্ণনা করেন: “ইমাম জাফর সাদেক আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করতে নিষেধ করেছেন”। [আল- মুস্তাদরাক: (১৬/৮২)]আয়াতুল্লাহ আল-উজমা মুহাম্মদ আমিন জয়নুদ্দিন “কালিমাতুত তাকওয়া” গ্রন্থে বলেন: আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়, যেমন রাসূল, নবী, ওলী, ফেরেশতা অথবা নেককার বান্দা। অনুরূপ জায়েজ নয় কা’বা, মসজিদ, ইবাদত খানা ও অন্য সকল সম্মানীত স্থানের নামে মান্নত করা”। [“কালিমাতুত তাকওয়া”: (৬/৪২২), মাসআলা নং: (৬৩)]মুসলিম আরো বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ একভাবে উপকার, ক্ষতি, রিযক ও রোগ মুক্তির মালিক, তিনি ব্যতীত কেউ উপকার, ক্ষতি, রিযক ও রোগ মুক্তির মালিক নয়।মানব জাতিকে পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন: “বল আমি কারো উপকার বা ক্ষতির মালিক নই”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মখলুক, তিনি যখন কারো উপকার বা ক্ষতির ক্ষমতা রাখেন না, তিনি ব্যতীত অন্যান্য নবী, ইমাম ও নেককার লোক কিভাবে মালিক হবেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ ﴾ [ الجن : ٢٠، ٢١ ] “বল, ‘নিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরীক করি না। বল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোন অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোন কল্যাণ করার’। [সূরা আল-জিন: (২০-২১)]অতএব শয়তানের চাকচিক্যের কারণে কোন বিবেকবানের পক্ষে ধোঁকায় লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়। পাঠবর্গ মনে রাখবেন এসব ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য সাধরণ মানুষের বিশ্বাসের বর্ণনা দেয়া, যা তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে আল্লাহর সাথে দুর্বল সম্পর্ক ও তার ওপর দুর্বল ইমানের কারণে। অন্যথায় কোন বিবেক নিজের মধ্যে এসব বিশ্বাস স্থান দিতে পারে না, যে তিলাওয়াত করে: ﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ ٣٦ ﴾ [ الزمر : ٣٥ ] “আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন”? [সূরা আয-যুমার: (২৬)] নিশ্চয় মুসলিমের জন্য তার রবই যথেষ্ট। অন্যদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [ يوسف : ١٠٥ ] “তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (ইবাদাতে) র্শিক করা অবস্থায়”। [সূরা ইউসূফ: (১০৬)]] তাহলে প্রতি বছর আশুরার দিন প্রত্যুষে বাচ্চাকে তাজিয়া মিছিলে উপস্থিত করবেন। তার পড়নে থাকবে কাফন [সাদা কাপড়], যা মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা রক্তে রঞ্জিত করবে। এ জন্য তাকে ইমাম হুসাইনের ঘোড়ার সাদৃশ্য ঘোড়ায় আরোহণ করানো হত।
আমার ফুফুর বাচ্চা হল, তারা তার নাম রাখল আকিল। [পূর্ণ নাম আকিল ইব্ন আব্দুল জলিল আল-আহমদ।] কয়েক বছর এভাবে মান্নত পূরণ করার পর আকিল জানল যে, আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়। ইমাম আলি একজন মানুষ। তাকে কিংবা অন্য কোন মানুষকে ইবাদত উৎসর্গ করা যায় না, যেমন দোয়া, ফরিয়াদ ও মান্নত। সে তার পিতাকে বোঝাল যে, এ মান্নত হারাম। অতঃপর এ ঘটনা তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকল, যা মানুষের ক্ষেত্রে কমই ঘটে।
অনুরূপ কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা আমার জীবনেও ঘটেছে। আমি যখন ছোট আমার ঘাড়ে অপারেশন করা হয়, কয়েক দিন পর ক্ষত স্থানটি ফুলে গেল, ফলে দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হল।
আমার মা বলেন: তোমার স্বাস্থ্য খুব খারাপ ছিল। তুমি ছিলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
আমার ওপর তার আশঙ্কার কারণে জনৈক শিয়া পণ্ডিতের পরামর্শ মোতাবেক আমাকে সাকিয়্যাহ শহরে অবস্থিত এক মাজারে নিয়ে যান। আমার সুস্থতার জন্য সেখানে মান্নত করেন। কারণ অন্যান্য শিয়াদের মত তার বিশ্বাস ছিল মাজার, সমাধি ও কবরস্থ ব্যক্তিরা মানুষের উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে।
ইচ্ছা সত্ত্বেও বিশেষ কোনো কারণে কয়েক বছর হল মান্নত পূর্ণ করার জন্য সেখানে যেতে পারেননি, আমি বড় হলাম।
অতঃপর আমি যখন আল্লাহর হিদায়েতে আহলে-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় প্রত্যাবর্তন করি এবং সবাই জেনে গেল, আমার পরিবার আমার নিকট প্রমাণ করতে চাইল যে, আমার আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতে প্রত্যাবর্তন করা আহলে বাইতের প্রতি অসদাচরণ ও তাদের ওপর জুলমের শামিল!
আমার পরিবার আমাকে মায়ের মান্নত স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্পষ্ট বলল: আহলে বাইত না হলে তুমি সুস্থ হতে না, আজ পর্যন্ত জীবিতও থাকতে না। অতঃপর তারা আমাকে সতর্ক করে দিল আমি যেন মান্নতের ব্যাপারে অবহেলা না করি। তারা আমাকে মান্নত পূর্ণ করার জন্য সে মাজারে তাদের সাথে যেতে উদ্বুদ্ধ করল, যেন আমাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ না করে, অথবা আমার মৃত্যু না হয়।
তারা আমাকে বোঝাতে ও তাদের সাথে মাজারে নিয়ে যেতে বারবার চেষ্টা করল। তারা চেষ্টা করল আমাকে শিয়া ধর্মে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হল।
হাসির খোরাক হল, গত কয়েক বছর যাবত ঐ মাজারকে পবিত্র জ্ঞান করা, তার নিকট ফরিয়াদ করা ও তার জন্য মান্নত করার পর জানাজানি হল যে, ঐ মাজার সম্পর্কে যা প্রচার করা হয়েছিল সব ধারণার ওপর ধারণা। [রবিউল আউয়াল (১৪২৫হি.) মোতাবেক মে (২০০৪ইং) সনে শিয়াদের কতক কর্মকাণ্ড সেখানে মাজারের অস্তিত্ব জানান দেয়, তার সাথে কতক আকিদাও প্রচার করা হয়, যেমন সবাই যে মাহদির জন্য অপেক্ষা করছে এখানে তার মায়ের নিদর্শন রয়েছে এবং এ স্থান পবিত্র! প্রভৃতি।] অতঃপর ঐ মাজার সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হল। আল্লাহর প্রশংসা।
তিনি আমাদের ব্যাপারে খুব যত্নশীল ছিলেন। তিনি লক্ষ্য রাখতেন যেন আমরা সঙ্গদোষে তুষ্ট না হই, আমাদের থেকে এমন কিছু প্রকাশ না পায়, যা আমাদের সুখ্যাতি বিনষ্ট করে, পারিবারিক আদর্শকে কলঙ্কিত করে এবং যে কারণে আমাদের রব আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন। তিনি এতটাই লক্ষ্য রাখতেন যে, যখন জানলেন আমি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, আমার আগ্রহ আমি সঙ্গীত টিচার হবো, তিনি খুব রাগ করলেন। তিনি আমাকে নিষেধ করে বললেন, আমার শৈশবে আমি এমন কাউকে পাইনি যে আমাকে উপদেশ দেবে ও আমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে নিবে। একা একা অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার উপদেশ শোন।
আমি বলতে পারি, আমার মাথা থেকে সঙ্গীত শিখার চিন্তা দূর করার পেছনে আমার খালুর অনেক অবদান রয়েছে। সাথে অন্য কারণও ছিল যে জন্য আমি সে দিকে এগুতে পারিনি।
আমার মার ইচ্ছা ছিল আমি যেন শিয়াদের আনন্দ ও বিষাদের ধর্মীয় সব উৎসবে অংশ গ্রহণ করি। তার ধারণা এতে অনেক সাওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে। বিশেষভাবে তিনি যেহেতু ইমাম হুসাইনের খাদেম, তাই এ জন্য আমাকে নিয়ে তার আগ্রহের কমতি ছিল না।
রোগ-শোক ও সাংসারিক ব্যস্ততা কিছুকেই তিনি বাধা মনে করতেন না, ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ গ্রহণ করতেন! তিনি বিশ্বাস করতেন এতে অংশ না নেয়া পাপ, অংশ নিলে রোগ থেকে মুক্তি মিলে ও বরকত হাসিল হয়।
আমার নানা জীবন ভর ঢোল বানিয়েছেন, যা মুহররমের তাজিয়া মিছিল ও রমযানের শেষ রাতগুলোতে ঘটা করে বাজানো হত বিশেষ করে ঐ রাতে যে রাতকে বলা হত “লাইলাতুল বেদা”। এখানে বলে রাখি, আমার গোটা পরিবার তখন শিয়া সাইয়্যেদ খুয়ীর অনুসারী ছিল, যার আমিও একজন সদস্য ছিলাম।
এ পরিবেশের কারণে আমি শৈশব থেকে ‘মানামাহ’ শহরে অবস্থিত ‘হাম্মাম’ জনপদে উদ্যাপিত আলহাজ্ব আব্বাসের মাতমে অংশ গ্রহণ করা পছন্দ করতাম।
প্রত্যেক উৎসবে সর্বাগ্রে উপস্থিত হওয়া আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছিল, যেন হুসাইনী তাজিয়া মিছিলে আমার আগে কেউ ঝাণ্ডা হাতে নিতে না পারে।
সামান্য বড় হয়ে মাতমের মিছিলে যখন অংশ নিতাম, তখন শিকলের আঘাতে আমার পিঠ আমি রক্তাক্ত করতাম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমি সেসব বন্ধুদের সঙ্গ বেশী পছন্দ করতাম, যারা ধর্মীয় উৎসবে সোৎসাহে অংশ গ্রহণ করত। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শিক্ষার বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করার ন্যায় আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ছিল। তাই এসব উৎসবে যোগদানের অজুহাতে ক্লাসে অধিকাংশ অনুপস্থিতি ছিল আমাদের। বিশেষ করে শিয়া শিক্ষকগণ আমাদের কখনো এ জন্য জবাবদিহি করতেন না, বরং তাদের থেকে উৎসাহ পেতাম।
দুঃখের হলেও সত্য যে, অধিকাংশ যুবক এসব উৎসব আগমনে পুলক অনুভব করত। কারণ এতে তাদের জন্য যুবতী মেয়েদের সাথে মেশার সেরা সুযোগ ছিল, যেহেতু এসব অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণে তেমন বিধি-নিষেধ থাকত না। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
আমার পরিবারে এক রেওয়াজ ছিল মান্নত করা। আমার ফুফুর কখনো গর্ভ টিকত না। তার বাচ্চা হয়ে জন্মের পূর্বে মারা যেত, অথবা প্রসবের পরেই মারা যেত। এ ঘটনা তার একাধিকবার ঘটেছে, এক পর্যায়ে আমার পরিবার প্রায় নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তারা ইমাম আলির জন্য মান্নত করল, যদি তিনি তাদেরকে বাচ্চা দেন ও সকল বিপদ থেকে মুক্ত রাখেন, [কখনো মান্নতকারীর মান্নত মোতাবেক কিছু ঘটতে দেখা যায়, তার অর্থ মান্নত সহি পন্থায় হয়েছে, অথবা গায়রুল্লাহর জন্য মান্নত করা ঠিক, এমনটি নয়। কারণ খৃস্টানরা অনেক সময় গীর্জায় গিয়ে চিরকুমারী মারইয়ামের নিকট রোগ মুক্তি অথবা রিযক তলব করে, কিন্তু আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাদের উদ্দিষ্ট বস্তু প্রদান করেন, যা তাদের জন্য ফিতনা ও তাদেরকে ঢিল দেয়া স্বরূপ। এরূপ সকল বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে ঘটে, যেমন হিন্দু মূর্তিপূজকরা তাদের উপাস্যদের নিকট কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করে তাদেরকে ঢিল দেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ﴿ سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٢ ﴾ [ الاعراف : ١٨١ ] “অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না”। [সূরা আল-আরাফ: (১৮১)] এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম সাদেক বলেন: “এখানে উদ্দেশ্য ঐ পাপী ব্যক্তি যাকে পাপ সত্ত্বেও নিয়ামত প্রদান করা হয়, যা তাকে পাপ থেকে ইস্তেগফার করা ভুলিয়ে দেয়”। [আল-কাফি: (২/৪৫২)] আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আহ্বান করা শুধু পাপই নয়, বরং সকল পাপ থেকে বড় পাপ। আল-নুরি আত-তাবরিসি মুস্তাদরাক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন: “কোন পাপ সবচেয়ে বড়? তিনি বলেন: আল্লাহর সাথে তোমার শরীক করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন!” [আল-মুস্তাদরাক: (১৪/৩৩১)] মুসলিম মাত্রই জানে যে, দোয়া এক প্রকার ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত কাউকে নিবেদন করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ] “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন: (১৮)] অনুরূপ মান্নতও ইবাদত, আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়। আল-নুরি তাবরাসি বর্ণনা করেন: “ইমাম জাফর সাদেক আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করতে নিষেধ করেছেন”। [আল- মুস্তাদরাক: (১৬/৮২)]আয়াতুল্লাহ আল-উজমা মুহাম্মদ আমিন জয়নুদ্দিন “কালিমাতুত তাকওয়া” গ্রন্থে বলেন: আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়, যেমন রাসূল, নবী, ওলী, ফেরেশতা অথবা নেককার বান্দা। অনুরূপ জায়েজ নয় কা’বা, মসজিদ, ইবাদত খানা ও অন্য সকল সম্মানীত স্থানের নামে মান্নত করা”। [“কালিমাতুত তাকওয়া”: (৬/৪২২), মাসআলা নং: (৬৩)]মুসলিম আরো বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ একভাবে উপকার, ক্ষতি, রিযক ও রোগ মুক্তির মালিক, তিনি ব্যতীত কেউ উপকার, ক্ষতি, রিযক ও রোগ মুক্তির মালিক নয়।মানব জাতিকে পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন: “বল আমি কারো উপকার বা ক্ষতির মালিক নই”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মখলুক, তিনি যখন কারো উপকার বা ক্ষতির ক্ষমতা রাখেন না, তিনি ব্যতীত অন্যান্য নবী, ইমাম ও নেককার লোক কিভাবে মালিক হবেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ ﴾ [ الجن : ٢٠، ٢١ ] “বল, ‘নিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরীক করি না। বল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোন অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোন কল্যাণ করার’। [সূরা আল-জিন: (২০-২১)]অতএব শয়তানের চাকচিক্যের কারণে কোন বিবেকবানের পক্ষে ধোঁকায় লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়। পাঠবর্গ মনে রাখবেন এসব ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য সাধরণ মানুষের বিশ্বাসের বর্ণনা দেয়া, যা তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে আল্লাহর সাথে দুর্বল সম্পর্ক ও তার ওপর দুর্বল ইমানের কারণে। অন্যথায় কোন বিবেক নিজের মধ্যে এসব বিশ্বাস স্থান দিতে পারে না, যে তিলাওয়াত করে: ﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ ٣٦ ﴾ [ الزمر : ٣٥ ] “আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন”? [সূরা আয-যুমার: (২৬)] নিশ্চয় মুসলিমের জন্য তার রবই যথেষ্ট। অন্যদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [ يوسف : ١٠٥ ] “তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (ইবাদাতে) র্শিক করা অবস্থায়”। [সূরা ইউসূফ: (১০৬)]] তাহলে প্রতি বছর আশুরার দিন প্রত্যুষে বাচ্চাকে তাজিয়া মিছিলে উপস্থিত করবেন। তার পড়নে থাকবে কাফন [সাদা কাপড়], যা মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা রক্তে রঞ্জিত করবে। এ জন্য তাকে ইমাম হুসাইনের ঘোড়ার সাদৃশ্য ঘোড়ায় আরোহণ করানো হত।
আমার ফুফুর বাচ্চা হল, তারা তার নাম রাখল আকিল। [পূর্ণ নাম আকিল ইব্ন আব্দুল জলিল আল-আহমদ।] কয়েক বছর এভাবে মান্নত পূরণ করার পর আকিল জানল যে, আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য মান্নত করা বৈধ নয়। ইমাম আলি একজন মানুষ। তাকে কিংবা অন্য কোন মানুষকে ইবাদত উৎসর্গ করা যায় না, যেমন দোয়া, ফরিয়াদ ও মান্নত। সে তার পিতাকে বোঝাল যে, এ মান্নত হারাম। অতঃপর এ ঘটনা তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকল, যা মানুষের ক্ষেত্রে কমই ঘটে।
অনুরূপ কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা আমার জীবনেও ঘটেছে। আমি যখন ছোট আমার ঘাড়ে অপারেশন করা হয়, কয়েক দিন পর ক্ষত স্থানটি ফুলে গেল, ফলে দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হল।
আমার মা বলেন: তোমার স্বাস্থ্য খুব খারাপ ছিল। তুমি ছিলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
আমার ওপর তার আশঙ্কার কারণে জনৈক শিয়া পণ্ডিতের পরামর্শ মোতাবেক আমাকে সাকিয়্যাহ শহরে অবস্থিত এক মাজারে নিয়ে যান। আমার সুস্থতার জন্য সেখানে মান্নত করেন। কারণ অন্যান্য শিয়াদের মত তার বিশ্বাস ছিল মাজার, সমাধি ও কবরস্থ ব্যক্তিরা মানুষের উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে।
ইচ্ছা সত্ত্বেও বিশেষ কোনো কারণে কয়েক বছর হল মান্নত পূর্ণ করার জন্য সেখানে যেতে পারেননি, আমি বড় হলাম।
অতঃপর আমি যখন আল্লাহর হিদায়েতে আহলে-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় প্রত্যাবর্তন করি এবং সবাই জেনে গেল, আমার পরিবার আমার নিকট প্রমাণ করতে চাইল যে, আমার আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতে প্রত্যাবর্তন করা আহলে বাইতের প্রতি অসদাচরণ ও তাদের ওপর জুলমের শামিল!
আমার পরিবার আমাকে মায়ের মান্নত স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্পষ্ট বলল: আহলে বাইত না হলে তুমি সুস্থ হতে না, আজ পর্যন্ত জীবিতও থাকতে না। অতঃপর তারা আমাকে সতর্ক করে দিল আমি যেন মান্নতের ব্যাপারে অবহেলা না করি। তারা আমাকে মান্নত পূর্ণ করার জন্য সে মাজারে তাদের সাথে যেতে উদ্বুদ্ধ করল, যেন আমাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ না করে, অথবা আমার মৃত্যু না হয়।
তারা আমাকে বোঝাতে ও তাদের সাথে মাজারে নিয়ে যেতে বারবার চেষ্টা করল। তারা চেষ্টা করল আমাকে শিয়া ধর্মে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হল।
হাসির খোরাক হল, গত কয়েক বছর যাবত ঐ মাজারকে পবিত্র জ্ঞান করা, তার নিকট ফরিয়াদ করা ও তার জন্য মান্নত করার পর জানাজানি হল যে, ঐ মাজার সম্পর্কে যা প্রচার করা হয়েছিল সব ধারণার ওপর ধারণা। [রবিউল আউয়াল (১৪২৫হি.) মোতাবেক মে (২০০৪ইং) সনে শিয়াদের কতক কর্মকাণ্ড সেখানে মাজারের অস্তিত্ব জানান দেয়, তার সাথে কতক আকিদাও প্রচার করা হয়, যেমন সবাই যে মাহদির জন্য অপেক্ষা করছে এখানে তার মায়ের নিদর্শন রয়েছে এবং এ স্থান পবিত্র! প্রভৃতি।] অতঃপর ঐ মাজার সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হল। আল্লাহর প্রশংসা।
ইমাম খুয়ী ছিলেন নাজাফ অঞ্চলের বড় গুরু ও শিক্ষার কেন্দ্র-বিন্দু। তার মৃত্যুর পর কাফন-দাফন শেষ করে আমরা তার লাশের প্রতিকৃতি খাটে বহন করে চললাম। জানাজায় অংশ নেয়া আমরা সবাই হঠাৎ চমকে উঠলাম পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে “ইমাম খুয়ী চাঁদে জাহির হয়েছেন”! সংবাদ শুনে। যদিও আমরা কেউ দেখিনি, কিন্তু মানামাহ অঞ্চলের কতক লোক এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করল। এ খবর দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল, অনেকে বিশ্বাস করল, বিশেষ করে নারীরা।
আমরা আরো আশ্চর্য হলাম যে, আমাদের সাথে অংশ নেয়া কতক লোক অনুরূপ দাবি করে চাঁদের দিকে ইশারা করছেন! আমার বন্ধু আলি আমাকে বলল, তুমি কিছু দেখ? বললাম: না, সে আমাকে বলল, আমিও কিছু দেখি না। আমি বললাম, তাহলে তুমি কেন তাদের সাথে দাবি করেছ তুমি খুয়ীর চেহারা দেখছ, অথচ তুমি দেখনি?! সে বলল, তাদের অনুভূতি দেখনি, তারা কেমন আবেগে রয়েছে?! আমার ওপর তাদের চটে যাওয়াকে আমি ভয় করেছি, যদি না দেখি! আমরা তার কথা শুনে হেসে দিলাম।
মানামার জনৈক অধিবাসী সে দিন ভালো এক কথা বলেছিল, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করে চাঁদে জাহির হননি, খুয়ী কিভাবে জাহির হল?!
আমরা আরো আশ্চর্য হলাম যে, আমাদের সাথে অংশ নেয়া কতক লোক অনুরূপ দাবি করে চাঁদের দিকে ইশারা করছেন! আমার বন্ধু আলি আমাকে বলল, তুমি কিছু দেখ? বললাম: না, সে আমাকে বলল, আমিও কিছু দেখি না। আমি বললাম, তাহলে তুমি কেন তাদের সাথে দাবি করেছ তুমি খুয়ীর চেহারা দেখছ, অথচ তুমি দেখনি?! সে বলল, তাদের অনুভূতি দেখনি, তারা কেমন আবেগে রয়েছে?! আমার ওপর তাদের চটে যাওয়াকে আমি ভয় করেছি, যদি না দেখি! আমরা তার কথা শুনে হেসে দিলাম।
মানামার জনৈক অধিবাসী সে দিন ভালো এক কথা বলেছিল, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করে চাঁদে জাহির হননি, খুয়ী কিভাবে জাহির হল?!
শুরুতেই আমি দাবি করছি না যে, মনুষ্য চরিত্রের উৎকর্ষে আমি উন্নীত হয়েছি। তবে মানুষ তার নিজস্ব আদর্শের প্রতি যে পরিমাণ অনুগত থাকে অথবা যতটুকু ধার্মিক হয় বা যে পরিমাণ ইসলামী আদর্শ গ্রহণ করে, তাতে রেড সিগনালও থাকে, যা সে অতিক্রম করতে পারে না, ব্যত্যয় ঘটলে স্বাভাবিক স্বভাব ও প্রশংসার স্থান থেকে ছিটকে পড়ে।
শিয়া মাজহাবের সাথে আমার প্রথম বিরোধ দেখা দেয় চারিত্রিক বিষয়ে। শুরুতে আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম যে, ব্যক্তিগত বিষয়াদির সাথে মাজহাবের দূরতম বা নিকটতম সম্পর্ক নেই। অতঃপর এক দিন যখন আসল বাস্তবতা প্রকাশ পেল তখন সত্যকে আড়াল করে রাখা পর্দা আমার সামনে থেকে সরে গেল।
আমাকে শিয়াদের তিনটি বিষয় অধিক আন্দোলিত করত:
সাহাবীদের গালি দেয়া ও তাদের ওপর লানত করা।
মুত‘আ বিয়ে।
চিরঞ্জীব আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত মখলুকের নিকট দোয়া করা ও তাদের ওপর ভরসা করা।
এ তিনটি বিষয় ছিল হিদায়েতের দিকে প্রত্যাবর্তন করার আমার প্রথম মশাল। এ থেকে আমার চিরচেনা ও অন্তরে ধারণা করা ইমামিয়্যাহ আকিদা থেকে ধীরে ধীরে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় ধাবিত হই। অথচ এক সময় তাদের সাথে শত্রুতা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা ও তাদের দিকে তুচ্ছতার দৃষ্টি দেয়াই ছিল আমার নিকট ইবাদত।
শিয়া মাজহাবের সাথে আমার প্রথম বিরোধ দেখা দেয় চারিত্রিক বিষয়ে। শুরুতে আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম যে, ব্যক্তিগত বিষয়াদির সাথে মাজহাবের দূরতম বা নিকটতম সম্পর্ক নেই। অতঃপর এক দিন যখন আসল বাস্তবতা প্রকাশ পেল তখন সত্যকে আড়াল করে রাখা পর্দা আমার সামনে থেকে সরে গেল।
আমাকে শিয়াদের তিনটি বিষয় অধিক আন্দোলিত করত:
সাহাবীদের গালি দেয়া ও তাদের ওপর লানত করা।
মুত‘আ বিয়ে।
চিরঞ্জীব আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত মখলুকের নিকট দোয়া করা ও তাদের ওপর ভরসা করা।
এ তিনটি বিষয় ছিল হিদায়েতের দিকে প্রত্যাবর্তন করার আমার প্রথম মশাল। এ থেকে আমার চিরচেনা ও অন্তরে ধারণা করা ইমামিয়্যাহ আকিদা থেকে ধীরে ধীরে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় ধাবিত হই। অথচ এক সময় তাদের সাথে শত্রুতা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা ও তাদের দিকে তুচ্ছতার দৃষ্টি দেয়াই ছিল আমার নিকট ইবাদত।
আমি সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছি ঠিক, কারণ আমার বিশ্বাস ছিল তারা আহলে বাইতের হক আত্মসাৎ করেছেন, কিন্তু তাদের আমি গালি দিতাম না।
সাহাবীদের ব্যাপারে তখন আমার সিদ্ধান্ত কি ছিল, এ প্রশ্নের বাইরে বিষয়টা আমার নিকট ছিল ভদ্রতা ও সচ্চরিত্রের খেলাফ। এ জন্যই আমি তাদেরকে গালি দেয়নি।
আমি মনে করতাম কোন ধর্ম এ জাতীয় কর্ম-কাণ্ডের নির্দেশ দিতে পারে না। আমি এমন কোন ধর্ম সম্পর্কে শুনিনি, যে তার অনুসারীদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পেশাব-পায়খানার সময় মৃতদের গালি ও তাদের ওপর লানত করে আনন্দ উপভোগ করার নির্দেশ দিয়েছে। এসব ভণ্ডামি থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। যেমন শিয়াদের উমদাতুল মুহাক্কিকিন মুহাম্মদ তুসেরকানি নিজ কিতাব “লাআলিল আখবার” (৪/৯২) এ বলেছেন: “জেন রেখ তাদের ওপর লানত করার সবচেয়ে উত্তম স্থান, উত্তম সময় ও উপযুক্ত হালাত হচ্ছে যখন তুমি পেশাব করার স্থানে থাকো। -তাদের ওপর লানত- নির্জনে, পায়খানার মুহূর্তে ও নাপাকি দূর করার সময় প্রসন্ন চিত্তে বারবার বল: “হে আল্লাহ ওমরকে লানত কর, অতঃপর আবু বকর ও উমরকে, অতঃপর ওসমান ও ওমরকে, অতঃপর মুয়াবিয়া ও ওমরকে...। হে আল্লাহ লানত কর আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হাকামকে। কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের কর্মের ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে তাদের সবার ওপর লানত কর”!!!
আমি অবাক হলাম রাসূলুল্লাহর সাহাবীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার ফলে আমার অন্তরে শিয়াদের কর্ম-কাণ্ডের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয় ও আমি তার সমালোচনা শুরু করি।
সাহাবীদের গালি দেয়া ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে লানত করার প্রতি আমাদের লিখনিগুলো স্পষ্টভাবে উদ্বুদ্ধ করে ও উৎসাহ দেয়। প্রথমে তাদের কাফের বলা, অতঃপর মুরতাদ বলা, অতঃপর তাদের ওপর লানত করা ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছেদ করার তাগিদ দেয়। পুরাতন ও নতুন সব গ্রন্থে তার বর্ণনা রয়েছে, যা কম-বেশী সবার জানা।
একটি উদাহরণ: “রিজালুল কাশি” গ্রন্থে “হানান ইব্ন সাদির পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি আবু জাফর ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সবাই মুরতাদ হয়েছে শুধু তিনজন ব্যতীত। আমি বললাম: তিনজন কারা? তিনি বললেন: মিকদাদ ইব্ন আসওয়াদ, আবু যর গিফারি ও সালমান আল-ফারসি। তিনি বলেন: তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়, তারা বায়েত গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর যখন তাদেরকে জোরপূর্বক খলিফার নিকট নিয়ে আসা হয় তারা বায়েত করেন”। [আল-কাফি: (৮/২৪৫), দারাজাতুর রাফি‘আহ: (পৃ.২১৩)]
কতক বর্ণনায় এ তিনজনের সাথে আরো চারজন যোগ করা হয়, যেন সাহাবীদের সংখ্যা সাত পর্যন্ত পৌঁছে, সাহাবীদের ক্ষেত্রে তারা সাত সংখ্যা অতিক্রম করে না। তাদের ধারণায় এ সাত সাহাবীই মুসলিম।
কতক বর্ণনায় রয়েছে: “হারেস ইব্ন আল-মুগিরা আন-নাসরি বলেন: আমি আব্দুল মালিক ইব্ন আয়ূনকে শুনেছি, তিনি আবু আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি বলেন: তখন সব মানুষ ধ্বংস হল [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর যখন সব সাহাবী আবু বকরের হাতে বায়ত করল।]! তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, হে ইব্ন আয়ূন! সবাই ধ্বংস হল। আমি বললাম: পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে যে ছিল?! তিনি বলেন: ক্ষতিগ্রস্তদের ওপর গোমরাহীর দার উন্মুক্ত হয়েছে। আল্লাহর শপথ তিনজন ব্যতীত সবাই ধ্বংস হল। অতঃপর তাদের সাথে আবু সাসান যোগ দিল”। [আরদুবিলি বলেছেন: আবু সাসানের নাম হাসিন ইব্ন মুনযির। তাকেই আবু সাসান বলা হয়। অতঃপর এ বর্ণনা কাশি থেকে বর্ণনা করেন। জামেউর রিওয়াইয়াত: (২/৩৮৭)]
শিয়ারা সাহাবীদের কাফের বলার মতবাদ থেকে আবু বকর ও ওমরকে কুরাইশের দু’টি মূর্তি আখ্যা দেয়, তাদের ওপর লানতের বর্ণনা সমৃদ্ধ বদ দোয়ার অজিফা পাঠ করে, তাদেরকে মূর্তি, জিবত ও তাগুতের সাথে তুলনা করে।
এসব দেখে আল্লাহর বাণীর সামনে দীর্ঘসময় চিন্তা করলাম:
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [ التوبة : 100]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবা: (১০০)]
এখানে স্পষ্ট দেখলাম আল্লাহ তা‘আলা মুহাজির, আনসার ও ইমানে অগ্রজদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছেন: আবু বকর, ওমর, উসমান, তালহা, যুবায়ের, সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস, আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ ও সাদ ইব্ন মুয়ায প্রমুখগণ। শিয়ারা যাদের লানত করে এমন অনেকেই রয়েছেন এ কাতারে।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম: এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি সাহাবীদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের জন্য তিনি জান্নাত তৈরি করেছেন, এরপর একজন জ্ঞানী লোক কিভাবে বলে সাহাবীগণ আলির ওপর জুলম করেছে ও তার থেকে খিলাফত জবর দখল করেছে?!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের ওপর সন্তুষ্টি নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন, বিশেষ করে প্রথম তিন খলিফা আবু বকর, ওমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ। তাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, যা আমরা বারবার তিলাওয়াত করি। অতঃপর তারা যদি তার মৃত্যুর পর কুফরে ফিরে যায় ও ফেতনায় মগ্ন হয়, বরং শিয়ারা তাদের ওপর কুরআন বিকৃতি করা ও দীনের বিধান পরিবর্তন করার অপবাদ আরোপ করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তা জানতেন কি-না?! যদি আল্লাহ জানেন, সকল মুসলিমের আকিদাও তাই, তাহলে আমরা যে আয়াত তিলাওয়াত করি, যেখানে তাদের প্রশংসা রয়েছে তার হুকুম কি, অথচ তারা [শিয়াদের নিকট] মুনাফিক ও মুরতাদ?!
তাহলে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে, কুরআনে তাদের ওপর সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়ে কি রাসূলকে ধোঁকা দিয়েছেন! এরূপ কথা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, তিনি সকল দোষ মুক্ত। কিভাবে সম্ভব রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেন, যাদের ওপর আস্থা পোষণ করেন, তারা তার মৃত্যুর পর কুফরে ফিরে যাবে?!
এ জাতীয় মতবাদ কি তামাশা নয়, আল্লাহর সাথে শিয়াদের এ তামাশা করার মানে কি, যা সরাসরি কুফরি?!!
আল্লাহ কেন সাহাবীদের মুখোশ উন্মোচন করেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেন তাদের থেকে সতর্ক করেননি?!
আমি এর কোন সদুত্তর পাইনি, আমার পক্ষে এ ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট, কুরআনে ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানীতে তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন। কারণ তিনি জানতেন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত ও সুন্নতের ওপর জীবন পরিচালনা করবেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨ ﴾ [ الفتح : ١٨ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। [সূরা আল-ফাতহ: (১৮)]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন: তিনি সাহাবীদের অন্তরের অবস্থা জানেন, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন ও তাদের ওপর সাকিনা নাযিল করেছেন। অতএব তাদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা বা সন্দেহ পোষণ করা জায়েজ নয়। [আল-ফাসল লি ইব্ন হাজম আল-উন্দুলুসী: (৪/২২৫)]
সাহাবীদের ব্যাপারে তখন আমার সিদ্ধান্ত কি ছিল, এ প্রশ্নের বাইরে বিষয়টা আমার নিকট ছিল ভদ্রতা ও সচ্চরিত্রের খেলাফ। এ জন্যই আমি তাদেরকে গালি দেয়নি।
আমি মনে করতাম কোন ধর্ম এ জাতীয় কর্ম-কাণ্ডের নির্দেশ দিতে পারে না। আমি এমন কোন ধর্ম সম্পর্কে শুনিনি, যে তার অনুসারীদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পেশাব-পায়খানার সময় মৃতদের গালি ও তাদের ওপর লানত করে আনন্দ উপভোগ করার নির্দেশ দিয়েছে। এসব ভণ্ডামি থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। যেমন শিয়াদের উমদাতুল মুহাক্কিকিন মুহাম্মদ তুসেরকানি নিজ কিতাব “লাআলিল আখবার” (৪/৯২) এ বলেছেন: “জেন রেখ তাদের ওপর লানত করার সবচেয়ে উত্তম স্থান, উত্তম সময় ও উপযুক্ত হালাত হচ্ছে যখন তুমি পেশাব করার স্থানে থাকো। -তাদের ওপর লানত- নির্জনে, পায়খানার মুহূর্তে ও নাপাকি দূর করার সময় প্রসন্ন চিত্তে বারবার বল: “হে আল্লাহ ওমরকে লানত কর, অতঃপর আবু বকর ও উমরকে, অতঃপর ওসমান ও ওমরকে, অতঃপর মুয়াবিয়া ও ওমরকে...। হে আল্লাহ লানত কর আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হাকামকে। কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের কর্মের ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে তাদের সবার ওপর লানত কর”!!!
আমি অবাক হলাম রাসূলুল্লাহর সাহাবীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার ফলে আমার অন্তরে শিয়াদের কর্ম-কাণ্ডের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয় ও আমি তার সমালোচনা শুরু করি।
সাহাবীদের গালি দেয়া ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে লানত করার প্রতি আমাদের লিখনিগুলো স্পষ্টভাবে উদ্বুদ্ধ করে ও উৎসাহ দেয়। প্রথমে তাদের কাফের বলা, অতঃপর মুরতাদ বলা, অতঃপর তাদের ওপর লানত করা ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছেদ করার তাগিদ দেয়। পুরাতন ও নতুন সব গ্রন্থে তার বর্ণনা রয়েছে, যা কম-বেশী সবার জানা।
একটি উদাহরণ: “রিজালুল কাশি” গ্রন্থে “হানান ইব্ন সাদির পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি আবু জাফর ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সবাই মুরতাদ হয়েছে শুধু তিনজন ব্যতীত। আমি বললাম: তিনজন কারা? তিনি বললেন: মিকদাদ ইব্ন আসওয়াদ, আবু যর গিফারি ও সালমান আল-ফারসি। তিনি বলেন: তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়, তারা বায়েত গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর যখন তাদেরকে জোরপূর্বক খলিফার নিকট নিয়ে আসা হয় তারা বায়েত করেন”। [আল-কাফি: (৮/২৪৫), দারাজাতুর রাফি‘আহ: (পৃ.২১৩)]
কতক বর্ণনায় এ তিনজনের সাথে আরো চারজন যোগ করা হয়, যেন সাহাবীদের সংখ্যা সাত পর্যন্ত পৌঁছে, সাহাবীদের ক্ষেত্রে তারা সাত সংখ্যা অতিক্রম করে না। তাদের ধারণায় এ সাত সাহাবীই মুসলিম।
কতক বর্ণনায় রয়েছে: “হারেস ইব্ন আল-মুগিরা আন-নাসরি বলেন: আমি আব্দুল মালিক ইব্ন আয়ূনকে শুনেছি, তিনি আবু আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি বলেন: তখন সব মানুষ ধ্বংস হল [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর যখন সব সাহাবী আবু বকরের হাতে বায়ত করল।]! তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, হে ইব্ন আয়ূন! সবাই ধ্বংস হল। আমি বললাম: পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে যে ছিল?! তিনি বলেন: ক্ষতিগ্রস্তদের ওপর গোমরাহীর দার উন্মুক্ত হয়েছে। আল্লাহর শপথ তিনজন ব্যতীত সবাই ধ্বংস হল। অতঃপর তাদের সাথে আবু সাসান যোগ দিল”। [আরদুবিলি বলেছেন: আবু সাসানের নাম হাসিন ইব্ন মুনযির। তাকেই আবু সাসান বলা হয়। অতঃপর এ বর্ণনা কাশি থেকে বর্ণনা করেন। জামেউর রিওয়াইয়াত: (২/৩৮৭)]
শিয়ারা সাহাবীদের কাফের বলার মতবাদ থেকে আবু বকর ও ওমরকে কুরাইশের দু’টি মূর্তি আখ্যা দেয়, তাদের ওপর লানতের বর্ণনা সমৃদ্ধ বদ দোয়ার অজিফা পাঠ করে, তাদেরকে মূর্তি, জিবত ও তাগুতের সাথে তুলনা করে।
এসব দেখে আল্লাহর বাণীর সামনে দীর্ঘসময় চিন্তা করলাম:
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [ التوبة : 100]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবা: (১০০)]
এখানে স্পষ্ট দেখলাম আল্লাহ তা‘আলা মুহাজির, আনসার ও ইমানে অগ্রজদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছেন: আবু বকর, ওমর, উসমান, তালহা, যুবায়ের, সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস, আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ ও সাদ ইব্ন মুয়ায প্রমুখগণ। শিয়ারা যাদের লানত করে এমন অনেকেই রয়েছেন এ কাতারে।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম: এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি সাহাবীদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের জন্য তিনি জান্নাত তৈরি করেছেন, এরপর একজন জ্ঞানী লোক কিভাবে বলে সাহাবীগণ আলির ওপর জুলম করেছে ও তার থেকে খিলাফত জবর দখল করেছে?!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের ওপর সন্তুষ্টি নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন, বিশেষ করে প্রথম তিন খলিফা আবু বকর, ওমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ। তাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, যা আমরা বারবার তিলাওয়াত করি। অতঃপর তারা যদি তার মৃত্যুর পর কুফরে ফিরে যায় ও ফেতনায় মগ্ন হয়, বরং শিয়ারা তাদের ওপর কুরআন বিকৃতি করা ও দীনের বিধান পরিবর্তন করার অপবাদ আরোপ করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তা জানতেন কি-না?! যদি আল্লাহ জানেন, সকল মুসলিমের আকিদাও তাই, তাহলে আমরা যে আয়াত তিলাওয়াত করি, যেখানে তাদের প্রশংসা রয়েছে তার হুকুম কি, অথচ তারা [শিয়াদের নিকট] মুনাফিক ও মুরতাদ?!
তাহলে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে, কুরআনে তাদের ওপর সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়ে কি রাসূলকে ধোঁকা দিয়েছেন! এরূপ কথা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, তিনি সকল দোষ মুক্ত। কিভাবে সম্ভব রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেন, যাদের ওপর আস্থা পোষণ করেন, তারা তার মৃত্যুর পর কুফরে ফিরে যাবে?!
এ জাতীয় মতবাদ কি তামাশা নয়, আল্লাহর সাথে শিয়াদের এ তামাশা করার মানে কি, যা সরাসরি কুফরি?!!
আল্লাহ কেন সাহাবীদের মুখোশ উন্মোচন করেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেন তাদের থেকে সতর্ক করেননি?!
আমি এর কোন সদুত্তর পাইনি, আমার পক্ষে এ ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট, কুরআনে ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানীতে তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন। কারণ তিনি জানতেন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত ও সুন্নতের ওপর জীবন পরিচালনা করবেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨ ﴾ [ الفتح : ١٨ ]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। [সূরা আল-ফাতহ: (১৮)]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন: তিনি সাহাবীদের অন্তরের অবস্থা জানেন, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন ও তাদের ওপর সাকিনা নাযিল করেছেন। অতএব তাদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা বা সন্দেহ পোষণ করা জায়েজ নয়। [আল-ফাসল লি ইব্ন হাজম আল-উন্দুলুসী: (৪/২২৫)]
শিয়াদের নিকট মুত‘আ বিয়ে বৈধ বরং মুস্তাহাব সত্ত্বেও শুরু থেকে তার প্রতি আমার অন্তরে ঘৃণা ছিল। যখন মুত‘আ বিয়ে হারামের কোন দলিল আমার চোখে পড়েনি, তখন থেকে এ বিয়ে আমার নিকট পরিহার যোগ্য ছিল। কেউ যদি মুত‘আ বিয়ের বৈধতা নিয়ে আলোচনা করত, তার আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করতাম। আমি শুধু জিজ্ঞাসা করতাম: তোমার বোনের ব্যাপারে মুত‘আ পছন্দ কর?? সে শরমে উত্তর দিত: না, বরং কখনো গোস্বার সাথে উত্তর দিত।
প্রয়োজনের খাতিরে সাময়িকভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল করা হয়েছিল, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম ঘোষণা করেন, যা বিশুদ্ধ হাদিসে রয়েছে। আশ্চর্য হল শিয়াদের কিতাবে আহলে বাইত থেকে বর্ণিত একাধিক বর্ণনাতেও মুত‘আ বিয়ে হারাম ও তার খারাপির বর্ণনা রয়েছে। যার প্রতি আমার কওমের শিয়ারা মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেন না।
আব্দুল্লাহ ইব্ন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে মুত‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন: এর মাধ্যমে তুমি নিজেকে নাপাক কর না”।
আলি ইব্ন ইয়াকতিন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি আবুল হাসানকে মুত‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বলেন: মুত‘আর সাথে তোমার সম্পর্ক কি, আল্লাহ তার থেকে তোমাকে পবিত্র করেছেন?!”।
হিশাম ইব্ন হাকাম বর্ণনা করেন, আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: “আমাদের নিকট দুরাচারী ব্যতীত কেউ মুত‘আ বিয়ে করে না”। [আন-নাওয়াদের লি আহমদ ইব্ন ঈসা আল-কুম্মি: (পৃ.৮৭)]
শায়খ তুসি ইস্তেবসার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: জায়েদ ইব্ন আলি সূত্রে আমর ইব্ন খালেদ বর্ণনা করেন, তিনি [জায়েদ] তার পিতা ও চাচাদের থেকে বর্ণনা করেন, তারা আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধা ও মুত‘আ হারাম ঘোষণা করেছেন”।
‘তাকিইয়া’র আশ্রয় নেয়া ব্যতীত শিয়াদের নিকট এর কোন উত্তর নেই। তাদের নিকট এসব বর্ণনা ‘তাকিইয়া’র ওপর নির্ভরশীল। কারণ এর সাথে সাধারণ মুসলিমের মিল রয়েছে”!
উল্লেখ্য এসব বর্ণনা তাদের দৃষ্টিতেও বিশুদ্ধ, কিন্তু আহলে সুন্নাহর সাথে মিল রয়েছে তাই তারা প্রত্যাখ্যান করে!
প্রয়োজনের খাতিরে সাময়িকভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল করা হয়েছিল, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম ঘোষণা করেন, যা বিশুদ্ধ হাদিসে রয়েছে। আশ্চর্য হল শিয়াদের কিতাবে আহলে বাইত থেকে বর্ণিত একাধিক বর্ণনাতেও মুত‘আ বিয়ে হারাম ও তার খারাপির বর্ণনা রয়েছে। যার প্রতি আমার কওমের শিয়ারা মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেন না।
আব্দুল্লাহ ইব্ন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে মুত‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন: এর মাধ্যমে তুমি নিজেকে নাপাক কর না”।
আলি ইব্ন ইয়াকতিন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি আবুল হাসানকে মুত‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বলেন: মুত‘আর সাথে তোমার সম্পর্ক কি, আল্লাহ তার থেকে তোমাকে পবিত্র করেছেন?!”।
হিশাম ইব্ন হাকাম বর্ণনা করেন, আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: “আমাদের নিকট দুরাচারী ব্যতীত কেউ মুত‘আ বিয়ে করে না”। [আন-নাওয়াদের লি আহমদ ইব্ন ঈসা আল-কুম্মি: (পৃ.৮৭)]
শায়খ তুসি ইস্তেবসার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: জায়েদ ইব্ন আলি সূত্রে আমর ইব্ন খালেদ বর্ণনা করেন, তিনি [জায়েদ] তার পিতা ও চাচাদের থেকে বর্ণনা করেন, তারা আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধা ও মুত‘আ হারাম ঘোষণা করেছেন”।
‘তাকিইয়া’র আশ্রয় নেয়া ব্যতীত শিয়াদের নিকট এর কোন উত্তর নেই। তাদের নিকট এসব বর্ণনা ‘তাকিইয়া’র ওপর নির্ভরশীল। কারণ এর সাথে সাধারণ মুসলিমের মিল রয়েছে”!
উল্লেখ্য এসব বর্ণনা তাদের দৃষ্টিতেও বিশুদ্ধ, কিন্তু আহলে সুন্নাহর সাথে মিল রয়েছে তাই তারা প্রত্যাখ্যান করে!
শৈশব থেকে আমরা শিখেছি আশুরার রাতে মাতম ও বিলাপ করে আবু আব্দুল্লাহ [হুসাইন রা.] এর মুসিবত স্মরণ করা ইবাদত। আফসোস! আমাদের কেউ কি ঘুণাক্ষরেও এসব নিয়ে ভেবেছেন, কুরআন-হাদিস মোতাবিক কি-না যাচাই করেছেন, অথবা কুরআন-হাদিস বিরোধী সন্দেহ করেছেন?!. না, কেউ করেননি!
এভাবে আমারও কয়েকটি বছর পার হল, এক সময় আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখলাম, যা আমাকে সুন্নী হতে বাধ্য করল।
আমার ভাবতে অবাক লাগে আমি কি পরিমাণ গোমরাহ ছিলাম!
শিয়াদের বড় পণ্ডিত তাবরিজিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: তাজিয়া মিছিল বৈধ? তিনি উত্তর বলেন: ইমামদের জমানায় শিয়ারা ‘তাকিইয়া’ অবলম্বন করত। তাদের জমানায় সম্ভব ছিল না, তাই তার অস্তিত্ব ছিল না বিধায় এ যুগে না-জায়েয হওয়ার প্রমাণ নয়। তখন যদি শিয়ারা বর্তমান যুগের ন্যায় জীবন ধারণে সক্ষম হত, যেমন আমরা আমাদের নিদর্শনগুলো পালন করি ও প্রকাশ করতে সক্ষম, তাহলে তারাও করতেন যেমন আমরা করছি। যেমন শোক প্রকাশের নিমিত্তে হুসাইনি মাজার বরং ঘরের দরজাও কালো পতাকা উড়ানো প্রভৃতি”। [সিরাতুন নাজাত লিল খুইয়ী, খ.২, (পৃ.৫৬২) পরিশিষ্টি।]
শিয়া মাজহাবের আলেমদের নিকট মুহররমের মাতম ও তাজিয়া মিছিল ইস্তেহসান বা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর নিদর্শন জিন্দা করার নামে মুহররমে কৃত এসব কর্ম-কাণ্ডের পক্ষে কুরআন-হাদিসের কোন দলিল নেই।
বরং আহলে বাইতের ইমাম ও পূর্বযুগের শিয়া আলেমদের বাণী তার বিপরীত! ইব্ন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বিলাপ করা জাহিলি যুগের আমল”। [মান লাইয়াহদুরুল ফাকিহ: (৪/৩৭৬)]
তাবরাসি বর্ণনা করেন, আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “জাহিলি যুগের আমল তিনটি, কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তাতে মগ্ন থাকবে: নক্ষত্রের ওসিলায় বৃষ্টি তলব করা, মানুষের বংশে কলঙ্ক লেপন করা ও মৃতদের ওপর বিলাপ করা”। [মুস্তাদরাকুল ওসায়েল: (১/১৪৩)]
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন: “যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহিম মারা যায়, আমাকে তিনি নির্দেশ করেন আমি তার গোসল দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাফন পড়ান ও তার গায়ে সুগন্ধি লাগান। আমাকে তিনি বলেন: হে আলি তাকে নিয়ে চল। আমি তাকে নিয়ে ‘বাকি’ কবর স্থানে আসি। তিনি তার ওপর সালাত পড়েন। যখন তাকে লম্বা শয়ন অবস্থায় দেখলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে দিলেন। তার কাঁদা দেখে মুমিনরাও কাঁদা আরম্ভ করল, এমনকি পুরুষদের কান্না নারীদের কান্নার আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন: চোখ অশ্রু ঝরাবে, অন্তর ব্যথিত হবে ঠিক, কিন্তু আল্লাহ নারাজ হন এমন কিছু আমরা বলব না। হে ইবরাহিম নিশ্চয় তোমার বিরহে আমরা শোকাহত, তোমার জন্য আমরা ব্যথিত”। [বিহারুল আনওয়ার: (৮২/১০০-১০১)]
দেখুন মাতম সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমাম আলির অবস্থান কি। চিন্তা করুন হারাম ও জাহিলি যুগের আমল শিয়াদের নিকট কিভাবে মুস্তাহাব হল?!
মাতম ও তাজিয়ার নিষেধাজ্ঞায় কোন অস্পষ্টতা নেই, তাই তুসি ও ইব্ন হামজাহ তা হারাম বলেছেন। তুসি দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলেছেন: তার যুগের শিয়ারা মাতম হারাম সম্পর্কে একমত ছিল। [দেখুন: আয-যিকরা লিশ শাহীদিল আউয়াল: (পৃ.৭২)]
শিয়াদের বর্ণনায় পরিষ্কার আছে যে, চেহারায় ও বুকে আঘাত করা ঘৃণিত বিদআত, যার প্রতি সন্তুষ্ট নয় আল্লাহ, তার রাসূল ও পবিত্র ইমামগণ।
ইমাম বাকের বলেছেন: “তাকদিরকে দোষারোপ করা, চিৎকার করে কাঁদা, চেহারায় ও বুকে আঘাত করা ও মাথার চুল ছেড়া প্রভৃতিভাবে শোক প্রকাশ করা হারাম। যে বিলাপ করল সে ধৈর্য পরিহার করল ও সঠিক পথ বিচ্যুত হল”। [কালিনি তার কাফি গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: (৩/২২২-২২৩), ফায়দুল কাশানি ফিল ওয়াফি: (১৩/৮৭), হুর আল-আমেলি ফি ওসায়েলুশ শিয়াহ: (২/৯১৫)]
বর্ণিত আছে, ইমাম হুসাইন তার বোন জয়নবকে বলেছেন: “হে বোন, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ যেভাবে শোক প্রকাশ করতে বলেছেন সেভাবে শোক প্রকাশ কর। জেনে রেখ, জমিনের সবাই মারা যাবে, আসমানের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত, যিনি নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন তাই মখলুক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একলা। আমার পিতা আমার চেয়ে উত্তম, আমার মাতা আমার চেয়ে উত্তম, আমার ভাই আমার চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও সকল মুসলিমের আদর্শ”। তিনি এভাবে তার বোনকে সান্ত্বনা দেন। অতঃপর তাকে বলেন: “হে বোন আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, তুমি আমার কসম পূর্ণ করবে, আমি যখন মারা যাব বুকের কাপড় ছিঁড়বে না, চেহারায় আঘাত করবে না, আমার বিরহে মুসিবত ও ধ্বংসকে আহ্বান করবে না”। [আল-মালহুফ লি ইব্ন তাউস: (পৃ.৫০), মুনতাহাল আমাল লি আব্বাস আল-কুম্মি: (১/৪৮১)]
মুহাম্মদ ইব্ন মক্কী আল-আমেলি [আশ-শাহীদুল আউয়াল] তুসির বাণী নকল করেন: “চেহারায় ও বুকে আঘাত করা এবং চুল ছেঁড়া সবার নিকট হারাম। তিনি ‘মবসুত’ গ্রন্থে এ কথা বলেছেন। দ্বিতীয় এ কারণে যে, এতে আল্লাহর তাকদিরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়”। [আয-যিকরা: (পৃ.৭২)]
কালো কাপড় পরিধান সম্পর্কে ইমাম আলি ‘আলাইহিস সালামের বাণীই যথেষ্ট: “তোমরা কালো কাপড় পরিধান কর না, কারণ তা ফিরআউনের পোশাক”। [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহ: (১/১৬৩), ওসায়েলুশ শিয়াহ: (৩/২৭৮)]
মাতম করা, গায়ে রক্ত মাখা ও কালো কাপড় পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা এবং তার বিপরীত জগতে শিয়াদের অবস্থান দেখে হতবাক হলাম! কারণ এগুলো অন্তরে লালন করে বড় হয়েছি, এসব আমার নিকট আহলে বাইতের প্রতি মহব্বতের প্রতীক! আমি জানতাম না তাজিয়া মিছিল, মাতম ও তাতে কৃত কর্মসমূহ আহলে বাইতের ইমামদের বাণী, ওসিয়ত ও তাদের দাদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সরাসরি লঙ্ঘন।
এভাবে আমারও কয়েকটি বছর পার হল, এক সময় আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখলাম, যা আমাকে সুন্নী হতে বাধ্য করল।
আমার ভাবতে অবাক লাগে আমি কি পরিমাণ গোমরাহ ছিলাম!
শিয়াদের বড় পণ্ডিত তাবরিজিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: তাজিয়া মিছিল বৈধ? তিনি উত্তর বলেন: ইমামদের জমানায় শিয়ারা ‘তাকিইয়া’ অবলম্বন করত। তাদের জমানায় সম্ভব ছিল না, তাই তার অস্তিত্ব ছিল না বিধায় এ যুগে না-জায়েয হওয়ার প্রমাণ নয়। তখন যদি শিয়ারা বর্তমান যুগের ন্যায় জীবন ধারণে সক্ষম হত, যেমন আমরা আমাদের নিদর্শনগুলো পালন করি ও প্রকাশ করতে সক্ষম, তাহলে তারাও করতেন যেমন আমরা করছি। যেমন শোক প্রকাশের নিমিত্তে হুসাইনি মাজার বরং ঘরের দরজাও কালো পতাকা উড়ানো প্রভৃতি”। [সিরাতুন নাজাত লিল খুইয়ী, খ.২, (পৃ.৫৬২) পরিশিষ্টি।]
শিয়া মাজহাবের আলেমদের নিকট মুহররমের মাতম ও তাজিয়া মিছিল ইস্তেহসান বা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর নিদর্শন জিন্দা করার নামে মুহররমে কৃত এসব কর্ম-কাণ্ডের পক্ষে কুরআন-হাদিসের কোন দলিল নেই।
বরং আহলে বাইতের ইমাম ও পূর্বযুগের শিয়া আলেমদের বাণী তার বিপরীত! ইব্ন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বিলাপ করা জাহিলি যুগের আমল”। [মান লাইয়াহদুরুল ফাকিহ: (৪/৩৭৬)]
তাবরাসি বর্ণনা করেন, আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “জাহিলি যুগের আমল তিনটি, কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তাতে মগ্ন থাকবে: নক্ষত্রের ওসিলায় বৃষ্টি তলব করা, মানুষের বংশে কলঙ্ক লেপন করা ও মৃতদের ওপর বিলাপ করা”। [মুস্তাদরাকুল ওসায়েল: (১/১৪৩)]
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন: “যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহিম মারা যায়, আমাকে তিনি নির্দেশ করেন আমি তার গোসল দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাফন পড়ান ও তার গায়ে সুগন্ধি লাগান। আমাকে তিনি বলেন: হে আলি তাকে নিয়ে চল। আমি তাকে নিয়ে ‘বাকি’ কবর স্থানে আসি। তিনি তার ওপর সালাত পড়েন। যখন তাকে লম্বা শয়ন অবস্থায় দেখলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে দিলেন। তার কাঁদা দেখে মুমিনরাও কাঁদা আরম্ভ করল, এমনকি পুরুষদের কান্না নারীদের কান্নার আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন: চোখ অশ্রু ঝরাবে, অন্তর ব্যথিত হবে ঠিক, কিন্তু আল্লাহ নারাজ হন এমন কিছু আমরা বলব না। হে ইবরাহিম নিশ্চয় তোমার বিরহে আমরা শোকাহত, তোমার জন্য আমরা ব্যথিত”। [বিহারুল আনওয়ার: (৮২/১০০-১০১)]
দেখুন মাতম সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমাম আলির অবস্থান কি। চিন্তা করুন হারাম ও জাহিলি যুগের আমল শিয়াদের নিকট কিভাবে মুস্তাহাব হল?!
মাতম ও তাজিয়ার নিষেধাজ্ঞায় কোন অস্পষ্টতা নেই, তাই তুসি ও ইব্ন হামজাহ তা হারাম বলেছেন। তুসি দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলেছেন: তার যুগের শিয়ারা মাতম হারাম সম্পর্কে একমত ছিল। [দেখুন: আয-যিকরা লিশ শাহীদিল আউয়াল: (পৃ.৭২)]
শিয়াদের বর্ণনায় পরিষ্কার আছে যে, চেহারায় ও বুকে আঘাত করা ঘৃণিত বিদআত, যার প্রতি সন্তুষ্ট নয় আল্লাহ, তার রাসূল ও পবিত্র ইমামগণ।
ইমাম বাকের বলেছেন: “তাকদিরকে দোষারোপ করা, চিৎকার করে কাঁদা, চেহারায় ও বুকে আঘাত করা ও মাথার চুল ছেড়া প্রভৃতিভাবে শোক প্রকাশ করা হারাম। যে বিলাপ করল সে ধৈর্য পরিহার করল ও সঠিক পথ বিচ্যুত হল”। [কালিনি তার কাফি গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: (৩/২২২-২২৩), ফায়দুল কাশানি ফিল ওয়াফি: (১৩/৮৭), হুর আল-আমেলি ফি ওসায়েলুশ শিয়াহ: (২/৯১৫)]
বর্ণিত আছে, ইমাম হুসাইন তার বোন জয়নবকে বলেছেন: “হে বোন, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ যেভাবে শোক প্রকাশ করতে বলেছেন সেভাবে শোক প্রকাশ কর। জেনে রেখ, জমিনের সবাই মারা যাবে, আসমানের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত, যিনি নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন তাই মখলুক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একলা। আমার পিতা আমার চেয়ে উত্তম, আমার মাতা আমার চেয়ে উত্তম, আমার ভাই আমার চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও সকল মুসলিমের আদর্শ”। তিনি এভাবে তার বোনকে সান্ত্বনা দেন। অতঃপর তাকে বলেন: “হে বোন আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, তুমি আমার কসম পূর্ণ করবে, আমি যখন মারা যাব বুকের কাপড় ছিঁড়বে না, চেহারায় আঘাত করবে না, আমার বিরহে মুসিবত ও ধ্বংসকে আহ্বান করবে না”। [আল-মালহুফ লি ইব্ন তাউস: (পৃ.৫০), মুনতাহাল আমাল লি আব্বাস আল-কুম্মি: (১/৪৮১)]
মুহাম্মদ ইব্ন মক্কী আল-আমেলি [আশ-শাহীদুল আউয়াল] তুসির বাণী নকল করেন: “চেহারায় ও বুকে আঘাত করা এবং চুল ছেঁড়া সবার নিকট হারাম। তিনি ‘মবসুত’ গ্রন্থে এ কথা বলেছেন। দ্বিতীয় এ কারণে যে, এতে আল্লাহর তাকদিরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়”। [আয-যিকরা: (পৃ.৭২)]
কালো কাপড় পরিধান সম্পর্কে ইমাম আলি ‘আলাইহিস সালামের বাণীই যথেষ্ট: “তোমরা কালো কাপড় পরিধান কর না, কারণ তা ফিরআউনের পোশাক”। [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহ: (১/১৬৩), ওসায়েলুশ শিয়াহ: (৩/২৭৮)]
মাতম করা, গায়ে রক্ত মাখা ও কালো কাপড় পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা এবং তার বিপরীত জগতে শিয়াদের অবস্থান দেখে হতবাক হলাম! কারণ এগুলো অন্তরে লালন করে বড় হয়েছি, এসব আমার নিকট আহলে বাইতের প্রতি মহব্বতের প্রতীক! আমি জানতাম না তাজিয়া মিছিল, মাতম ও তাতে কৃত কর্মসমূহ আহলে বাইতের ইমামদের বাণী, ওসিয়ত ও তাদের দাদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সরাসরি লঙ্ঘন।
আমাদের ‘কুদাইবিয়াহ’ [কুদাইবিয়াহ বাহরাইনের প্রসিদ্ধ এলাকা, মানামাহ শহরে অবস্থিত। এটাই আমার পূর্বপুরুষের শহর ও তাদের জন্মস্থান। অনেক আগে থেকেই আশপাশের লোকদের তীর্থস্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল এ এলাকা। বিশেষভাবে মুহরিক এলাকার লোকদের জন্য, কারণ তার বায়ূ ও পরিবেশ খুব ভাল। আমার নানা ও বয়স্ক মুরুব্বীদের কাছে এমনি শুনেছি।] এলাকায় জনৈক ব্যক্তি কুরআন-হাদিসের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা ও মানুষের সমস্যার সমাধান করে খুব খ্যাতি অর্জন করে ছিল।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা গ্রহণ করার পর যখন আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীগণ আমাকে শিয়া ধর্মে ফিরাতে অপারগ হল, তারা আমাকে সংকীর্ণ ও কোণঠাসা করার নিমিত্তে আপত্তিকর অপপ্রচার আরম্ভ করল।
কুদাইবিয়ার এ ভদ্রলোক নিজেই আমার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে ফিরানোর দায়িত্ব নিলো। শিয়াদের নিকট তার জ্ঞান ও নেক আমলের ব্যাপক খ্যাতি। সে আমার কাছে এসে কূটনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বলল: তার পিতা আমার পিতার বন্ধু ছিল, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন।
অতঃপর অন্যান্য আলোচনা আরম্ভ করল। ইতিমধ্যে সে আমার সামনে এলোমেলোভাবে কুরআন খুলল ও অস্পষ্ট উচ্চারণ করল, আমি যা বুঝিনি। অতঃপর বলল: এ আয়াত পড়, আমি পড়লাম। তার ধারণা মোতাবিক সে আয়াত আমাকে আমার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে সতর্ক করছে!!
আমাকে বলল: এ আয়াত রহমত। এ আয়াত তোমার জন্য অতি উত্তম যদি মান। আজ রাতে এ আয়াত তুমি কয়েকবার শ্রবণ করবে। নিশ্চিত এ আয়াত তোমার কল্যাণের বার্তাবাহী!
সত্যিই আমি যখন গাড়িতে ওঠে আমার অডিও ক্যাসেট চালু করি, সে আয়াত শুনতে পাই!
আমি তাকে ডেকে বললাম: আপনি সত্য বলেছেন!
সে মুচকি হেসে বলল: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেন! যদি তুমি এ আয়াত মান আল্লাহ তোমাকে অধিক তাওফিক দিবেন।
আমি বাড়ি ফিরে যখন আমার টেলিভিশন ওপেন করি, হুবহু সে আয়াত শুনে আঁতকে উঠি!
আমি তার কথা স্মরণ করলাম। দ্রুত ওঠে আমার সংগ্রহে রাখা কুরআন খুললাম, এলোমেলো ভাবেই, এখানেও সে আয়াত দেখে অবাক হলাম!
আমি সে রাতে ঘুমাইনি, তার ভয়ে কিংবা তার কারিশমায় নয়, বরং আমার সামনে বিকশিত সত্য ও আমার ওপর ভর করা ভাবনাতে ডুবে ছিলাম। আমি চিন্তা করে করে ভোর করলাম: “তার কথা কিভাবে সত্য হল?! কিভাবে, কিভাবে আমার সামনে এসব প্রকাশ পেল প্রভৃতি?!”
কয়েক দিন পর অত্র এলাকার আমার এক শিয়া বন্ধুর কথা শুনে আশ্চর্য হলাম, সে বলল: “এ ব্যক্তি তাদেরকে ভবিষ্যৎ বাণী করেছে অতিসত্বর কুদাইবি পূর্বের ন্যায় শিয়া ধর্মে ফিরে আসবে। আমি হাসলাম এবং বললাম: এ লোক গায়েব জানে, না সে যাদুকর?!
এখানে আমার কথায় আমিই ভাবতে শুরু করলাম, নিশ্চয় সে যাদুকর, তার যাদুর ব্যাপারে সন্দেহ কোথায়?!
আমি তার সম্পর্কে আমার বন্ধুর কথা, আমার ও তার আলোচনা এবং বারবার দেখা আয়াতের কারিশমা একসঙ্গে যোগ করলাম।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম: সে আমার নিকট কি চায়?
অত্র এলাকার আমার পিতার এক বন্ধুকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন সে নেককার নয় যেমন এলাকার মানুষেরা ধারণা করে, সে জিনের সাথে কাজ করে।
কয়েক দিন যাবৎ সে আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করছে, সে আমার ভাল চায়, তার দৃষ্টিতে আহলে বাইতের অনুসরণে রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ আহলে বাইতকে এসব লোকদের থেকে পবিত্র রাখুন।
আমি তার পরীক্ষা নেয়া ও তার দৌরাত্ম্য দেখার মনস্থ করি। অধিকাংশ মজলিসে আমি তার সাথে তাওহিদ ও শিরকের আলোচনা করি। আমি তাকে যা প্রশ্ন করি ও যে দলিল দেই তার উত্তরে তার অপারগতা প্রকাশ পায়।
একদা সে শিয়া-সুন্নী কতক লোক জমা করল, আমি তাদের সামনে শিরকের আলোচনা আরম্ভ করি। সে রাতে আমার সাথে কৃত তার আমলের বর্ণনা দেই। কোন উত্তর করল না সে, বরং মজলিস থেকে তার ওঠা দেখে সবাই আশ্চর্য হল। এ সুযোগে আমি তার মুখোশ খুলে দিলাম, তার ভণ্ডামী সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেল। তখন আমি আল্লাহর বাণী স্মরণ করলাম:
﴿ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّٰحِرُونَ ٧٧ ﴾ [ يونس : ٧٧ ]
“অথচ যাদুকররা সফল হয় না”। [সূরা ইউনুস: (৭৭)] অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ إِنَّ كَيۡدَ ٱلشَّيۡطَٰنِ كَانَ ضَعِيفًا ٧٦ ﴾ [ النساء : ٧٦ ]
“নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল”। [সূরা নিসা: (৭৬)]
এতেই ক্ষান্ত হল না, বরং আমার থেকে এলাকার লোকদের দূরে রাখার জন্য তার সব চেষ্টা ব্যয় করল, যেন কেউ আমার কারণে প্রভাবিত না হয়। তার দাবি আমার উদ্দেশ্য অসৎ!
তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হল, মানুষ তার সম্পর্কে জেনে গেল, উল্টো সে লাঞ্ছিত হল। তখন থেকে এলাকায় সে যাদুকর হিসেবে পরিচিতি পেল এবং লজ্জায় বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দিল। কারো সাথে সাক্ষাত হলে নিজের কর্মের সাফাই গেয়ে বলে: আমি তার ভালোর জন্য এরূপ করেছি।
আমি বুঝি না তারা কুরআন ও হাদিস থেকে কোথায় বাস করে, অথচ কুরআন-হাদিসে যাদু ও যাদুকর থেকে দূরে থাকার আদেশ করেছে, বরং তার কুফরির ঘোষণা দিয়েছে!! তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হল দলিল-প্রমাণের পরিবর্তে যাদু ও কারিশমার আশ্রয় নেয়া?!
আমাদের বর্ণনায় আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে হিফাজত থাক”। তারা বলল: কি? তিনি বললেন: “আল্লাহর সাথে শরীক করা ও যাদু...”। [ওসায়েলুশ শিয়াহ: (১৫/৩৩০), বিহারুল আনওয়ার: (৭৮/১১৩)]
ইমাম জাফর সাদেক ‘আলাইহিস সালাম তার দাদা আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “যে যাদুর কোন শিক্ষা করল, কম কিংবা বেশী, সে কুফরি করল”। [ওসায়েলুশ শিয়াহ: (১৭/১৪৮), বিহারুল আনওয়ার: (৬৭/২১০)]
ইমাম আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গেল, তাকে জিজ্ঞাসা করল ও তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মদের ওপর নাযিলকৃত দীনের সাথে কুফরি করল”। [মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল: (১৩/১০০)]
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা গ্রহণ করার পর যখন আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীগণ আমাকে শিয়া ধর্মে ফিরাতে অপারগ হল, তারা আমাকে সংকীর্ণ ও কোণঠাসা করার নিমিত্তে আপত্তিকর অপপ্রচার আরম্ভ করল।
কুদাইবিয়ার এ ভদ্রলোক নিজেই আমার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে ফিরানোর দায়িত্ব নিলো। শিয়াদের নিকট তার জ্ঞান ও নেক আমলের ব্যাপক খ্যাতি। সে আমার কাছে এসে কূটনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বলল: তার পিতা আমার পিতার বন্ধু ছিল, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন।
অতঃপর অন্যান্য আলোচনা আরম্ভ করল। ইতিমধ্যে সে আমার সামনে এলোমেলোভাবে কুরআন খুলল ও অস্পষ্ট উচ্চারণ করল, আমি যা বুঝিনি। অতঃপর বলল: এ আয়াত পড়, আমি পড়লাম। তার ধারণা মোতাবিক সে আয়াত আমাকে আমার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে সতর্ক করছে!!
আমাকে বলল: এ আয়াত রহমত। এ আয়াত তোমার জন্য অতি উত্তম যদি মান। আজ রাতে এ আয়াত তুমি কয়েকবার শ্রবণ করবে। নিশ্চিত এ আয়াত তোমার কল্যাণের বার্তাবাহী!
সত্যিই আমি যখন গাড়িতে ওঠে আমার অডিও ক্যাসেট চালু করি, সে আয়াত শুনতে পাই!
আমি তাকে ডেকে বললাম: আপনি সত্য বলেছেন!
সে মুচকি হেসে বলল: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেন! যদি তুমি এ আয়াত মান আল্লাহ তোমাকে অধিক তাওফিক দিবেন।
আমি বাড়ি ফিরে যখন আমার টেলিভিশন ওপেন করি, হুবহু সে আয়াত শুনে আঁতকে উঠি!
আমি তার কথা স্মরণ করলাম। দ্রুত ওঠে আমার সংগ্রহে রাখা কুরআন খুললাম, এলোমেলো ভাবেই, এখানেও সে আয়াত দেখে অবাক হলাম!
আমি সে রাতে ঘুমাইনি, তার ভয়ে কিংবা তার কারিশমায় নয়, বরং আমার সামনে বিকশিত সত্য ও আমার ওপর ভর করা ভাবনাতে ডুবে ছিলাম। আমি চিন্তা করে করে ভোর করলাম: “তার কথা কিভাবে সত্য হল?! কিভাবে, কিভাবে আমার সামনে এসব প্রকাশ পেল প্রভৃতি?!”
কয়েক দিন পর অত্র এলাকার আমার এক শিয়া বন্ধুর কথা শুনে আশ্চর্য হলাম, সে বলল: “এ ব্যক্তি তাদেরকে ভবিষ্যৎ বাণী করেছে অতিসত্বর কুদাইবি পূর্বের ন্যায় শিয়া ধর্মে ফিরে আসবে। আমি হাসলাম এবং বললাম: এ লোক গায়েব জানে, না সে যাদুকর?!
এখানে আমার কথায় আমিই ভাবতে শুরু করলাম, নিশ্চয় সে যাদুকর, তার যাদুর ব্যাপারে সন্দেহ কোথায়?!
আমি তার সম্পর্কে আমার বন্ধুর কথা, আমার ও তার আলোচনা এবং বারবার দেখা আয়াতের কারিশমা একসঙ্গে যোগ করলাম।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম: সে আমার নিকট কি চায়?
অত্র এলাকার আমার পিতার এক বন্ধুকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন সে নেককার নয় যেমন এলাকার মানুষেরা ধারণা করে, সে জিনের সাথে কাজ করে।
কয়েক দিন যাবৎ সে আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করছে, সে আমার ভাল চায়, তার দৃষ্টিতে আহলে বাইতের অনুসরণে রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ আহলে বাইতকে এসব লোকদের থেকে পবিত্র রাখুন।
আমি তার পরীক্ষা নেয়া ও তার দৌরাত্ম্য দেখার মনস্থ করি। অধিকাংশ মজলিসে আমি তার সাথে তাওহিদ ও শিরকের আলোচনা করি। আমি তাকে যা প্রশ্ন করি ও যে দলিল দেই তার উত্তরে তার অপারগতা প্রকাশ পায়।
একদা সে শিয়া-সুন্নী কতক লোক জমা করল, আমি তাদের সামনে শিরকের আলোচনা আরম্ভ করি। সে রাতে আমার সাথে কৃত তার আমলের বর্ণনা দেই। কোন উত্তর করল না সে, বরং মজলিস থেকে তার ওঠা দেখে সবাই আশ্চর্য হল। এ সুযোগে আমি তার মুখোশ খুলে দিলাম, তার ভণ্ডামী সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেল। তখন আমি আল্লাহর বাণী স্মরণ করলাম:
﴿ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّٰحِرُونَ ٧٧ ﴾ [ يونس : ٧٧ ]
“অথচ যাদুকররা সফল হয় না”। [সূরা ইউনুস: (৭৭)] অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ إِنَّ كَيۡدَ ٱلشَّيۡطَٰنِ كَانَ ضَعِيفًا ٧٦ ﴾ [ النساء : ٧٦ ]
“নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল”। [সূরা নিসা: (৭৬)]
এতেই ক্ষান্ত হল না, বরং আমার থেকে এলাকার লোকদের দূরে রাখার জন্য তার সব চেষ্টা ব্যয় করল, যেন কেউ আমার কারণে প্রভাবিত না হয়। তার দাবি আমার উদ্দেশ্য অসৎ!
তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হল, মানুষ তার সম্পর্কে জেনে গেল, উল্টো সে লাঞ্ছিত হল। তখন থেকে এলাকায় সে যাদুকর হিসেবে পরিচিতি পেল এবং লজ্জায় বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দিল। কারো সাথে সাক্ষাত হলে নিজের কর্মের সাফাই গেয়ে বলে: আমি তার ভালোর জন্য এরূপ করেছি।
আমি বুঝি না তারা কুরআন ও হাদিস থেকে কোথায় বাস করে, অথচ কুরআন-হাদিসে যাদু ও যাদুকর থেকে দূরে থাকার আদেশ করেছে, বরং তার কুফরির ঘোষণা দিয়েছে!! তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হল দলিল-প্রমাণের পরিবর্তে যাদু ও কারিশমার আশ্রয় নেয়া?!
আমাদের বর্ণনায় আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে হিফাজত থাক”। তারা বলল: কি? তিনি বললেন: “আল্লাহর সাথে শরীক করা ও যাদু...”। [ওসায়েলুশ শিয়াহ: (১৫/৩৩০), বিহারুল আনওয়ার: (৭৮/১১৩)]
ইমাম জাফর সাদেক ‘আলাইহিস সালাম তার দাদা আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “যে যাদুর কোন শিক্ষা করল, কম কিংবা বেশী, সে কুফরি করল”। [ওসায়েলুশ শিয়াহ: (১৭/১৪৮), বিহারুল আনওয়ার: (৬৭/২১০)]
ইমাম আলি ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গেল, তাকে জিজ্ঞাসা করল ও তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মদের ওপর নাযিলকৃত দীনের সাথে কুফরি করল”। [মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল: (১৩/১০০)]
গোঁড়ামি মানুষ থেকে দয়া ও মমতা নিঃশেষ করে একই সময় হাস্যকর ও দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দেয়!
এখানে এরকম দু’টি ঘটনা উল্লেখ করছি: একটি ঘটনা ঘটেছে আমার সুন্নী হওয়ার পর। অপর ঘটনা ঘটেছে ছোট এক বাচ্চার সাথে, যার মধ্যে তখনো আমাদের গোঁড়ামি বুঝার ক্ষমতা হয়নি, যে গোঁড়ামি আমাদের শুষ্ক-সবুজ ধ্বংস করে দিয়েছে।
আসর সালাত শেষে আমি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে। উম্মু ইবরাহিম নামে পরিচিত এক বৃদ্ধ মহিলার দৃষ্টি আমার ওপর পড়ল। সে আমাকে ও আমার পরিবারকে ভালো করে চিনে।
তার হাতে একটি ব্যাগ, ভেতরে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তাকে সালাম দেয়ার পর সে আমার, আমার দাদি, আমার মা ও ভাই-বোন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর মসজিদের পাশে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার হাত থেকে ব্যাগটি গ্রহণ করলাম। আমরা যখন বাড়ির কাছে পৌঁছলাম, সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল: কোথা থেকে এসেছ? আমি মুখে বললাম ও স্বতঃস্ফূর্ত মসজিদের দিকে ইশারা করলাম: মসজিদ থেকে! এ বলে সে আমার ওপর চটে গেল, আমার চেহারায় থুথু মেরে বলল: আল্লাহ তোমার চেহারা কালো করুন! আমাকে জানানো হয়েছিল: তুমি সুন্নী হয়েছ কিন্তু আমি তাদের কথায় বিশ্বাস করেনি। এ হল আমার নিজের ঘটনা।
আর ছোট বাচ্চা [ওমর ইব্ন আলি]র ঘটনাটি বলেছে তার এক চাচা। কুদাইবিয়ার অধিবাসী ওমরের বৃদ্ধ দাদির সাথে শিয়া কতিপয় মহিলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে তাদের সাথে মাতমের মজলিসে বসত ও যাওয়া-আসা করত।
একবার তিনি তাদের সাথে মজলিসে বসে আছেন, সাথে ছোট নাতি ওমর। ওমর তখন খুব ছোট, নিজের নামটা পর্যন্ত ভাল করে উচ্চারণ করতে পারে না।
ওমর মাতম ঘরের বারান্দায় খেলা-ধুলো করছিল, হটাৎ মাটিতে পরে কেঁদে দিল। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার জনৈক নারী তাকে কোলে নিয়ে আদর করল, যেন সে শান্ত হয় ও তার কান্না থেমে যায়। নারী ওমরকে জিজ্ঞাসা করল: তোমার নাম কি ছেলে? ওমর বলল: ওমাল, অর্থাৎ ওমর। সে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করল, কারণ তার উচ্চারণ থেকে সে বুঝতে পারেনি। ওমর একই উত্তর দ্বিতীয়বার দিল। তখন বাচ্চার দাদি –সবার সামনে- বলল: তার নাম ওমর। বাচ্চার দাদি মহিলার পরবর্তী কাণ্ড দেখে অবাক হল, সে ওমরকে তার কাছে ফেরত দিয়ে বলল: যাও, তোমার ওপর আল্লাহর লানত, ওমরের ওপর, যে তোমার নাম রেখেছে ওমর তার ওপর এবং যে নিজ সন্তানের নাম রাখে ওমর তার ওপর...! [এ মহিলা তার অজান্তে আহলে বাইতকেও লানত করেছে। তাবরাসি “ইলামুল ওরা”: (১/২১৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ইমাম হাসানের এক সন্তানের নাম ছিল ওমর। ইমাম জয়নুল আবেদিন তার এক সন্তানের নাম রেখেছেন ওমর, যেমন শায়ক কুম্মি “মুনতাহাল আমাল”: (২/৫৯) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর-বিলি “কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আইম্মাহ”: (৩/৩১) গ্রন্থে বলেছেন: ইমাম মূসা কাজেম এর এক সন্তানের নাম ছিল ওমর। দেখুন গোঁড়ামি মানুষকে কিভাবে অধঃপতনে নিয়ে যায়!] বাচ্চার দাদি তখনি শেষবারের মত মাতমের মজলিস ত্যাগ করে চলে আসেন।
এখানে এরকম দু’টি ঘটনা উল্লেখ করছি: একটি ঘটনা ঘটেছে আমার সুন্নী হওয়ার পর। অপর ঘটনা ঘটেছে ছোট এক বাচ্চার সাথে, যার মধ্যে তখনো আমাদের গোঁড়ামি বুঝার ক্ষমতা হয়নি, যে গোঁড়ামি আমাদের শুষ্ক-সবুজ ধ্বংস করে দিয়েছে।
আসর সালাত শেষে আমি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে। উম্মু ইবরাহিম নামে পরিচিত এক বৃদ্ধ মহিলার দৃষ্টি আমার ওপর পড়ল। সে আমাকে ও আমার পরিবারকে ভালো করে চিনে।
তার হাতে একটি ব্যাগ, ভেতরে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তাকে সালাম দেয়ার পর সে আমার, আমার দাদি, আমার মা ও ভাই-বোন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর মসজিদের পাশে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার হাত থেকে ব্যাগটি গ্রহণ করলাম। আমরা যখন বাড়ির কাছে পৌঁছলাম, সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল: কোথা থেকে এসেছ? আমি মুখে বললাম ও স্বতঃস্ফূর্ত মসজিদের দিকে ইশারা করলাম: মসজিদ থেকে! এ বলে সে আমার ওপর চটে গেল, আমার চেহারায় থুথু মেরে বলল: আল্লাহ তোমার চেহারা কালো করুন! আমাকে জানানো হয়েছিল: তুমি সুন্নী হয়েছ কিন্তু আমি তাদের কথায় বিশ্বাস করেনি। এ হল আমার নিজের ঘটনা।
আর ছোট বাচ্চা [ওমর ইব্ন আলি]র ঘটনাটি বলেছে তার এক চাচা। কুদাইবিয়ার অধিবাসী ওমরের বৃদ্ধ দাদির সাথে শিয়া কতিপয় মহিলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে তাদের সাথে মাতমের মজলিসে বসত ও যাওয়া-আসা করত।
একবার তিনি তাদের সাথে মজলিসে বসে আছেন, সাথে ছোট নাতি ওমর। ওমর তখন খুব ছোট, নিজের নামটা পর্যন্ত ভাল করে উচ্চারণ করতে পারে না।
ওমর মাতম ঘরের বারান্দায় খেলা-ধুলো করছিল, হটাৎ মাটিতে পরে কেঁদে দিল। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার জনৈক নারী তাকে কোলে নিয়ে আদর করল, যেন সে শান্ত হয় ও তার কান্না থেমে যায়। নারী ওমরকে জিজ্ঞাসা করল: তোমার নাম কি ছেলে? ওমর বলল: ওমাল, অর্থাৎ ওমর। সে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করল, কারণ তার উচ্চারণ থেকে সে বুঝতে পারেনি। ওমর একই উত্তর দ্বিতীয়বার দিল। তখন বাচ্চার দাদি –সবার সামনে- বলল: তার নাম ওমর। বাচ্চার দাদি মহিলার পরবর্তী কাণ্ড দেখে অবাক হল, সে ওমরকে তার কাছে ফেরত দিয়ে বলল: যাও, তোমার ওপর আল্লাহর লানত, ওমরের ওপর, যে তোমার নাম রেখেছে ওমর তার ওপর এবং যে নিজ সন্তানের নাম রাখে ওমর তার ওপর...! [এ মহিলা তার অজান্তে আহলে বাইতকেও লানত করেছে। তাবরাসি “ইলামুল ওরা”: (১/২১৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ইমাম হাসানের এক সন্তানের নাম ছিল ওমর। ইমাম জয়নুল আবেদিন তার এক সন্তানের নাম রেখেছেন ওমর, যেমন শায়ক কুম্মি “মুনতাহাল আমাল”: (২/৫৯) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর-বিলি “কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আইম্মাহ”: (৩/৩১) গ্রন্থে বলেছেন: ইমাম মূসা কাজেম এর এক সন্তানের নাম ছিল ওমর। দেখুন গোঁড়ামি মানুষকে কিভাবে অধঃপতনে নিয়ে যায়!] বাচ্চার দাদি তখনি শেষবারের মত মাতমের মজলিস ত্যাগ করে চলে আসেন।
শিয়াদের ইতিহাস গবেষণাকারীর নিকট পরিষ্কার হবে যে, ইমামিয়্যাহ আকিদা, যা এ যুগের শিয়াদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা কায়েম করার মূলনীতি, ইমাম হাসান আসকারির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খোদ শিয়াদের নিকট স্পষ্ট ছিল না, তার মৃত্যুর পর শিয়ারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়, যেমন বার ইমামিয়্যাহ ও ইসমাইলিয়াহ প্রভৃতি।
শিয়াদের তখন অজিফা ছিল উমাইয়াহ ও আব্বাসিয়াহ খলিফাদের সাথে বিদ্রোহ করা এবং আলির বংশধরকে খিলাফতের হকদার দাবি করা। সবার মধ্যে এ প্রেরণা কাজ করেছিল, এর নীতিতে তখন শিয়াদের দল-উপদল পরিচালিত হত, তখনো নির্দিষ্ট বার ইমামের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এ জন্য শিয়ারা তখন আহলে বাইতের সদস্যদের মধ্যে কোন পার্থক্য করত না, যেখানে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে কোন ইমাম বা বিদ্রোহী বিদ্রোহ করত, তার সাথে তারা যোগ দিত। যেমন ইমাম জায়েদ ইব্ন আলি ও জিন নাফছিজ জাকিয়াহ প্রভৃতি নেতাদের আন্দোলনে দেখা গেছে।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, আলি জয়নুল আবেদিন –বার ইমামিয়াদের চতুর্থ ইমাম- আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কিছু জটিলতা ও আন্দোলনগত সমস্যার কারণে তাদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ান।
অতঃপর তিনি ইবাদতে মশগুল হন, সেখান থেকে জাহেদ ও অধিক সালাত আদায়কারী পরিচিত লাভ করেন। আল-মুফিদ ও আল-আরবিলি উল্লেখ করেন যে, “তিনি প্রতি রাত-দিনে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [আল-ইরশাদ: (পৃ.২৫৬), কাশফুল গুম্মাহ: (২/২৯৩)] মুত্তাকি এ বুযুর্গ থেকে যেসব বাণী উল্লেখ করা হয়, তার সারাংশ উপদেশ, দোয়া-দরূদ ও শরয়ী বিধান, যা আলেমদের ফতোয়া প্রদানে সহায়ক।
তাকে ইমাম মানার ক্ষেত্রে এখানে বড় শূন্যতা দেখা দেয়। এ শূন্যতা পূরণ ও তার ইমামত প্রমাণের প্রচেষ্টা স্বরূপ শিয়া ইমামিয়ারা তার মুজিযা ও প্রশংসার আলোচনায় অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। অথচ তখন শিয়ারা ইলম ও ফজিলতের স্বীকৃতি স্বরূপ তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করত, রাজনীতিবিদ বা ইমাম হওয়ার কারণে নয়। [এখানে বলে রাখি শিয়াদের যেগ্রুপ যাকে পছন্দ করত তার মুজিজা সম্পর্কে অনেক ঘটনা তৈরি করত। এটা তাদের স্বভাব ছিল। যেমন ইসমাইলিয়ারা ইসমাইল ইব্ন জাফর সাদেক এর ইমামত, রেফাইয়ারা রেফায়ির ইমামত এবং তিজানিয়ারা তিজানির ইমামত প্রমাণ করার জন্য অনেক ঘটনা ও মুজিজার সৃষ্টি করেছে। আমরা তাই গ্রহণ করব, যা প্রকৃত ও বাস্তবতা নির্ভর।]
তাই দেখি জায়েদ ইব্ন জয়নুল আবেদিন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুফায় আগমন করে ‘মুমিন তাক’ ও তার সাথীদের থেকে তার পিতা আলি ইব্ন হুসাইন [জয়নুল আবেদিন]র ইমামতের কথা শুনে আশ্চর্য হন। এক পর্যায়ে তিনি মুমিন তাককে বলেন: “হে আবু জাফর [মুমিন তাক], আমি আমার পিতার সাথে এক দস্তরখানে বসতাম। তিনি আমার ওপর স্নেহ স্বরূপ গোস্তের বড় টুকরা চিবিয়ে ছোট করে দিতেন, গরম লোকমা ঠাণ্ডা করে দিতেন, অথচ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করার জন্য দয়া করলেন না, দীন সম্পর্কে আপনাকে বললেন আমাকে বললেন না তিনি”?! ‘মুমিন তাক’ উত্তর দিল: “আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! আপনার ওপর জাহান্নামের আগুনের আশঙ্কায় তিনি বলেননি, তার আশঙ্কা ছিল যদি আপনি গ্রহণ না করেন! আমাকে তিনি সংবাদ দিয়েছেন, কারণ আমি কবুল করলে নাজাত পাব, অন্যথায় আমার জাহান্নামে প্রবেশকে বড় করে দেখেননি, যেমন ইয়াকুব নিজ সন্তানদের থেকে স্বপ্ন গোপন করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/১৭৪)]
চিন্তা করুন..! ইমামের ছেলে পিতার ইমামত সম্পর্কে জানেন না, তার মুখে কখনো শ্রবণ করিনি, না পিতা তার জামানায় ইমামত দাবি করেছেন, কিন্তু ‘মুমিন তাক’ ও তার অনুসারীরা তার পিতা জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুর পর এসব দাবি উত্থাপন করে!
শিয়াদের ইতিহাসে এ এক অধ্যায়। অন্যান্য অধ্যায়ও রয়েছে, যা ইমামত মতবাদকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়।
এ ছাড়া শিয়াদের অনেক হাদিস প্রমাণ করে ইমাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকা সম্ভব। অজ্ঞ থাকাবস্থায় করণীয় কি তার বর্ণনাও রয়েছে। অথচ ইমামিয়্যাহ আকিদায় এরূপ কখনো সম্ভব নয়, বরং বার ইমাম ও তাদের সন্তানদের পরিচয়সহ তাদের ওপর ইমান আনা শিয়া ইমামিয়্যাদের ওপর ফরজ।
কুলাইনি “আল-কাফি” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করল: আমি সকাল-সন্ধ্যায় যদি ইমামের সাক্ষাত না পাই যার অনুসরণ করব, তখন আমার করণীয় কি?... তিনি বলেন: [তুমি বল]: “তুমি যাকে মহব্বত কর, আমি তাকে মহব্বত করি, তুমি যার সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর, আমি তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জাহির করেন”। [আল-কাফি: (১/৩৪২)]
ইমাম সাদেক থেকে সাদুক বর্ণনা করেন: “যখন তোমরা ইমামকে না দেখে জীবনের একযুগ পার করবে, তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে?... বলা হল: যদি এমন হয় তাহলে আমরা কি করব? তিনি বলেন: “তোমরা প্রথম ইমামকে আঁকড়ে থাক, যতক্ষণ না তোমাদের সামনে পরবর্তী ইমাম জাহির হয়”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৩৪৮, ৩৫০-৩৫১)]
আল-কুলাইনি, সাদুক ও আল-মুফিদ প্রমুখ বর্ণনা করেন ঈসা ইব্ন আব্দুল্লাহ আল-আলাওয়ি আল-আমরি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইব্ন মুহাম্মদ ‘আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি বলেন: আমি তাকে বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! যদি এমন হয় আল্লাহ আমাকে আপনার যুগ না দেখান তাহলে কার অনুসরণ করব? তিনি বলেন: আবু আব্দুল্লাহ বললেন: মূসার অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি মূসা মারা যান কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি তার সন্তান মারা যান বড় ভাই ও ছোট সন্তান রেখে কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর, অতঃপর সর্বদা এভাবে অনুসরণ কর। আমি বললাম: আমি যদি তাকে না চিনি, তার স্থান না জানি, কি করব?.. তিনি বললেন: তুমি বলবে: “হে আল্লাহ তোমার দলিল ও হুজ্জত হিসেবে বিগত ইমামের যে সন্তান রয়েছে তার বেলায়েত আমি গ্রহণ করছি..! কারণ তোমর জন্য এতটুকু যথেষ্ট”!!
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে যারারাহ ইব্ন আয়ূন, ইয়াকুব ইব্ন শু‘আইব ও আব্দুল আলা থেকে, তারা সবাই ইমাম সাদেককে জিজ্ঞাসা করেছেন: “ইমাম যখন কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন মানুষেরা কি করবে? তিনি বলেন: আল্লাহ যেরূপ বলেছেন সেরূপ হয়ে যাবে, আল্লাহ ইরশাদ করেন:
﴿فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢﴾ [ التوبة : 122]
“অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সর্তক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে”। [সূরা আত-তাওবা: (১২২)]
আমি বললাম: তাদের পরিণতি কেমন হবে? তিনি বললেন: তারা অপারগ। আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! মুতাফাক্কেহ বা জ্ঞানীদের আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষাকারীদের অবস্থা কেমন হবে? তিনি বললেন: আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন, তুমি জান না মুহাম্মদ ও ইসার মাঝখানে দুই শত পঞ্চাশ বছর ব্যবধান ছিল। মুহাম্মদের অপেক্ষায় ইসার দীনের ওপর এক প্রজন্ম মারা গেছে। আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ সাওয়াব দান করেছেন?! আমি বললাম: মনে করুন আমরা যাত্রা করলাম, অতঃপর আমাদের এক-গ্রুপ রাস্তায় মারা গেল? তিনি বললেন:
﴿ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [ النساء : ١٠٠ ]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা নিসা: (১০০)]
আমি বললাম: [মনে করুন] আমরা মদিনায় গেলাম, সেখানে ইমামের গেট পেলাম তালাবন্ধ, তিনি পর্দার আড়ালে? তিনি বললেন: এসব ঘটবে প্রকাশে। তুমি মদিনায় প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা কর, অমুক কার নিকট ওসিয়ত করেছেন? তারা বলবে: অমুকের নিকট”। [তাফরিরুল আইইয়াশী: (২/১১৭-১১৮), আল-ইমামাহ ওয়াত তাবসিরাহ মিনাল হায়রাহ: (পৃ.২২৬), ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫)]
বরং অনেক বর্ণনা প্রমাণ করে যে, স্বয়ং ইমামগণ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত নিজেদের ইমামত অথবা তাদের পরবর্তী ইমাম সম্পর্কে জানতেন না। আর তাদের অনুসারী ইমামিয়্যারা বরাবর এক ইমামের মৃত্যুর পর পরবর্তী ইমাম নির্ধারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হত। প্রত্যেক ইমামকে তারা অনুরোধ করত পরবর্তী ইমাম নির্দিষ্ট করে যান, যেন নতুন ইমাম জানা ব্যতীত তাদের মৃত্যু না হয়।
“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে ইমাম হাসান আসকারির ছাত্র আবু জাফর মুহাম্মদ আস-সাফার বলেন: “অধ্যায়: ইমামগণ জানেন তাদের মৃত্যুর পূর্বে কার জন্য ওসিয়ত করবেন, কারণ আল্লাহ তাদের জানিয়ে দেন”। [“বাসায়েরুদ দারাজাত”: (পৃ.৪৩৫)]
এ অধ্যায়ে তিনি অনেক বর্ণনা পেশ করেছেন, একটি বর্ণনা: আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম থেকে আব্দুর রহমান আল-খাজ্জার বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: ইসমাইল ইব্ন ইবরাহিমের ছোট এক বাচ্চা ছিল তিনি তাকে খুব মহব্বত করতেন। ইসমাইলের মনোযোগ তার প্রতিই বেশী ছিল, আল্লাহ তা হতে দিলেন না। তিনি বললেন: হে ইসমাইল সে [ইমাম] অমুক। আল্লাহ যখন ইসমাইলের মৃত্যুর ফয়সালা করেন ও তার ওসি এসে উপস্থিত হল, তিনি বললেন: হে বৎস যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, আমি যেমন করেছি তেমন করবে। তাই কোন ইমাম মৃত্যু বরণ করেন না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন কার জন্য ওসিয়ত করবে!
“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে একটি অধ্যায় রয়েছে “ইমাম জানেন তার মৃত্যুর পর কে ইমাম হবেন” নামে!
ইমামিয়্যাহ আকিদায় ধারণ করা এসব রহস্য ও জটিলতার কারণে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত খোদ ইমাম জানেন না তার পরবর্তী ইমাম কে। তাই সাধারণ শিয়া তো বটেই প্রখ্যাত বর্ণনাকারী ও ইমামদের সাথীগণ পর্যন্ত দুই ইমামের মাঝে দিকভ্রষ্ট থাকেন।
বর্ণনা করা হয় ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর প্রসিদ্ধ শাগরেদ জুরারা ইব্ন আয়ূন ইমাম সাদেকের পরবর্তী ইমাম না জেনেই মারা যান!
জুরারা নিজ ছেলে উবাইদুল্লাহর নিকট কুফা থেকে মদিনায় পত্র লিখেন যেন তাকে নতুন ইমাম সম্পর্কে জানানো হয়, কিন্তু উত্তর আসার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তখন কুরআন বুকে ধরে বলেন: “হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, তুমি এ কুরআনে যার ইমামত নির্দিষ্ট করেছ তাকেই আমি ইমাম মানছি”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫,৭৬)]
যদি তিনি অথবা ইমামের অন্য শাগরেদ জানত যে, জাফর সাদেকের পর মুসা কাজেম ইমাম, তাহলে পত্র লেখা ও সন্দেহ পোষণ ব্যতীত তার প্রতি ইমান আনত।
আল-সেফার, আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আল-কাশি বলেছেন: ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদগণ যেমন হিশাম ইব্ন সালেম আল-জাওয়ালিকি, মুহাম্মদ ইব্ন আন-নুমান আল-আহওয়াল প্রমুখদের –প্রথম- বিবেচনায় জাফর সাদেক এর মৃত্যুর পর আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ ইমাম ছিলেন। কারণ আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “ইমামত বড় সন্তানের মধ্যে থাকবে যদি তার মাথায় সমস্যা না থাকে”। ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর শাগরেদ আম্মার আস-সাবাতি শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ এর ইমামতের ওপর অটল ছিলেন! [আল-কাফি: (১/৩৫১-৩৫২), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্ন সালেম এর জীবনী দেখুন।]
হিশাম ইব্ন সালেম আল-জাওয়ালিকি বর্ণনা করেন: তিনি শিয়াদের এক গ্রুপসহ আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহের দরবারে গমন করেন, অতঃপর তাকে ফেকহি কতক মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু তিনি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাই তারা তার ইমামত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন ও তার দরবার থেকে বেরিয়ে যান। [তিনি বলেন:] “আমরা ছিলাম পেরেশান ও দিকভ্রষ্ট... আমরা কাঁদতে কাঁদতে দিকহারা হয়ে কুফার এক রাস্তায় বসে পড়লাম। আমরা ঠিক করতে পারছিলাম না কার কাছে যাব ও কাকে আমাদের উদ্দিষ্ট বানাব। আমরা বলতে ছিলাম: মুরজিয়াতের নিকট?!. জায়দিয়াদের নিকট?!.. মুতাজিলাদের নিকট?!. খারেজিদের নিকট?!. কোথায় যাব? আমরা এভাবেই ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম আমার অপরিচিত এক ব্যক্তি আমার দিকে হাতে ইশারা করছে... তিনি বললেন: প্রবেশ কর, আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন! আমি প্রবেশ করলাম। দেখলাম আবুল হাসান মুসা। তিনি আমাকে নিজ থেকে বললেন: না মুরজিয়াদের দিকে, না কাদরিয়াদের দিকে, না জায়দিয়াদের দিকে, না খারেজিদের দিকে!.. বরং আমার দিকে, আমার দিকে..! আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনার পিতা চলে গেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ... আমি বললাম: তার পরবর্তী আমাদের নেতা কে? তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাকে তার পথ দেখাবেন। আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনিই কি সে? তিনি বললেন: না, আমি তা বলছি না। আমি অন্তরে বললাম: আমি প্রশ্ন করতে ভুল করেছি, অতঃপর বললাম: আমি আপনার প্রতি উৎসর্গ! আপনার কোন ইমাম রয়েছে? তিনি বললেন: না, তখন তার ভয় ও সম্মানের কারণে আমার অন্তরে কিছু প্রবেশ করল, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না”। [আল-কাফি: (১/৩৫১), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), মুনতাহাল আমাল: (২/২৫৮), দেখুন রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্ন সালেম এর জীবনী।]
এ বর্ণনায় হিশাম বলেন: মানুষেরা –শুরুতে- আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতার ইমামতে একমত ছিল। ইমামিয়্যাহ সম্প্রদায়ের কুতুবরা পর্যন্ত জানে না কাজেম কিসের ভিত্তিতে ইমাম হলেন, তিনি নিজেও ইমামতের ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হিশাম ইব্ন সালেম ও তার সাথীগণ আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ-এর ইমামতের দাবি থেকে প্রত্যাবর্তন করুন বা না-করুন, আল-আফতাহ তার পিতার মৃত্যুর পর মাত্র সত্তুর দিন পর মারা যান। তিনি কোন সন্তান রেখে যাননি, যার মধ্যে ইমামত চালু থাকবে। এ ঘটনা তখন ইমামতের মাসআলায় বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। কেউ ইমামতের ধারণা থেকে ফিরে যান, ইমামিয়াদের দফতর থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন। কেউ নতুন ইমাম মুসা ইব্ন জাফরের ওপর ইমান আনয়ন করেন, তারা মুসুবিয়াহ নামে পরিচিত। অপর গ্রুপ যেমন আব্দুল্লাহ ইব্ন বুকাইর ও আম্মার ইব্ন মুসা আস-সাবাতি মুসার ভাইকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা ফাতহিয়াহ নামে পরিচিত। তারা ছিল ইমাম সাদেক ও তার পরবর্তী ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদ।
প্রিয় পাঠক, আপনি মনে করবেন না ইমামতের মাসআলা এ বিভ্রান্তি ও সমস্যার পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, বরং ইসমাইলকে ওসি মনোনীত করা ও তার ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ইমামিয়্যাহ মতবাদ মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। আরেক সমস্যা দেখা দেয় আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতার সন্তান বিহীন মারা যাওয়ার ফলে। অতঃপর কাজেমের ইমামত প্রমাণের জটিলতা, অবশেষে বাগদাদে হারুনুর রশিদের জেলখানায় ১৮৪ হিজরিতে তার অদৃশ্য মৃত্যুর ফলে জটিলতার ওপর জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন শিয়া মুসুবিয়ারা বলত তিনি জেলখানা থেকে পলায়ন করেছেন!
প্রকৃত অর্থে মুসা কাজেমের মৃত্যুটি রহস্যাবৃত। তার অধিকাংশ সন্তান, ছাত্র ও সাথীদের ওপর তার ব্যাপারটি অস্পষ্ট। যেমন প্রখ্যাত বর্ণনাকারী আলি ইব্ন আবু হামজাহ, আলি ইব্নুল খাত্তাব, গালেব ইব্ন উসমান, মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন আম্মার আত-তাগলিবি আস-সায়রাফি, ইসহাক ইব্ন জারির, মুসা ইব্ন বাকার, ওয়াহাইব ইব্ন হাফস আল-জারিরি, ইয়াহইয়া ইব্নু হুসাইন ইব্ন জায়েদ ইব্ন আলি ইব্নুল হুসাইন, ইয়াহইয়া ইব্ন আল-কাসেম আল-হেযা আবু বাসির, আব্দুর রহমান ইব্নুল হাজ্জাজ, রেফাআহ ইব্ন মুসা, ইউনুস ইব্ন ইয়াকুব, জামিল ইব্ন দারাজ, হাম্মাদ ইব্ন ইসা, আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আবু নাসার ও আলে মেহরান প্রমুখ বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ। [আল-গায়বাহ লিত তুসী: (পৃ.৪৭), আল-কাফি: (১/৩৪), উইনুল আখবারুর রেদা: (পৃ.৩৯)]
মুসুবিয়াদের কাজেমকে ইমাম মেনে নেয়া ও তার সন্তান আলি রেদার ইমামত প্রত্যাখ্যান করার পেছনে কতক বর্ণনা রয়েছে, যার দাবি ইমাম কাজেম নিজেই হাদি, তিনি মৃত্যুর পূর্বে পুনরায় উত্থিত হবেন। আত-তুসি “আল-গায়বাহ” কিতাবে তার কতিপয় বর্ণনা উল্লেখ করে আলোকপাত করেছেন। [আল-গায়বাহ: (পৃ.২৯-৪০)]
আলি রেদা কিভাবে জানলেন তার পিতার মৃত্যুর সংবাদ, কখন জানলেন এবং কখন নিশ্চিত হলেন তার পিতার খলিফা হিসেবে তিনি ইমাম হয়েছেন এ সম্পর্কে অনেক সন্দেহ ও প্রশ্ন রয়েছে। ইমাম কাজেমের মৃত্যু ও ছেলে আলি রেদার পিতার মৃত্যু সংবাদ জানতে সময় ক্ষেপণ হয়েছিল কি-না, পিতার পরবর্তী তার ইমাম হওয়ার মধ্যে বিরতি ছিল কি-না প্রভৃতি?! [আল-কাফি: (১/৩৮১)]
শিয়াদের নিকট প্রচলিত কতক হাদিস-ই আলি রেদার ইমামতের সন্দেহ পাকাপোক্ত করেছিল, যেমন: “ইমামকে একমাত্র ইমামই গোসল দিবেন”। তারা বলল: তাহলে কিভাবে আলি রেদা তার পিতার গোসল দিলেন, যিনি বাগদাদে মারা যান, আলি রেদা তখন মদিনায়?!! [আল-কাফি: (১/৩৮৫)]
আলি রেদার ইমামতের বিষয়টা শুধু সাধারণ শিয়াদের নিকটই অস্পষ্ট ছিল না, বরং কাজেমের সন্তান ও তার স্ত্রী আসিরাহ [উম্মে আহমদ]র নিকটও অস্পষ্ট ছিল, যেমন ইতিহাস উল্লেখ করেছে। [আল-কাফি: (১/৩৮১-৩৮২)]
কোন এক বর্ণনা বলে: মদিনায় শিয়ারা ইমাম কাজেমের মৃত্যুর সংবাদ শুনে উম্মে আহমদের ঘরের সামনে জড়ো হয় ও আহমদ ইব্ন ইমাম কাজেমের হাতে বায়েত গ্রহণ করে, তিনি তাদের থেকে বায়েত নেন। [হায়াতুল ইমাম মুসা ইব্ন জাফর, লি বাকের শরীফ আল-কুরাশি: (পৃ.৪১০-৪১১), তুহফাতুল আলম থেকে নেয়া, লি সাইয়্যেদ জাফর, আলে বাহরুল উলুম: (২/৮৭)]
ইমামিয়ারা আলি রেদার ইমামত প্রমাণে বিভিন্ন দলিলের আশ্রয় নিয়ে বারবার ব্যর্থ হতে ছিল, তাদের এ সমস্যার সমাধান না হতেই (২০৩হি.)তে খোরাসানে তিনি মারা যান, তখন তার ছেলে মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের বয়স মাত্র সাত। ফলে ইমামত মতবাদ নতুন সমস্যার সম্মুখীন হল। ছেলে পিতার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ধারণা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। কারণ একজন বাচ্চাকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের জন্য বাছাই করবেন কোন যুক্তিতে টিকে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে যার নিজের ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদে কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই, শরীয়ত যার ওপর কোন বিধান ফরজ করেনি, যিনি নিজ পিতা থেকে ইলম অর্জন করার সুযোগ লাভ করেননি, তার পিতা যখন মদিনা ত্যাগ করেন, তখন তার বয়স মাত্র চার বছর, তিনি কিভাবে ইমাম হবেন! [আল-মাকালাত ওয়াল ফেরাক, লিল আশ-আরি আল-কুম্মি: (পৃ.৯৬-৯৮), ফেরাকুশ শিয়াহ লিন নাওবখতি: (পৃ.৮৮)]
এসব কারণে শিয়ারা বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্তি হয়:
ক. এক ফেরকা কাজেমের ইমামতে ফিরে আসেন, আলি রেদার ইমামত থেকে সরে দাঁড়ান এবং মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামত প্রত্যাখ্যান করেন।
খ. এক ফেরকা আলি রেদার ভাই আহমদ ইব্ন মুসার ইমামতে বিশ্বাসী হন। কারণ তিনি আলি রেদার খুব সম্মান ও মহব্বতের পাত্র ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল জায়দিয়াদের ন্যায়। তিনি এক দল লোকের সাথে কুফার উদ্দেশ্য রওয়ানা করেন। তার ইলম, তাকওয়া ও পরহেজগারি প্রসিদ্ধ ছিল, যেমন আল-মুফিদ ইরশাদ গ্রন্থে বলেছেন। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৮৮), আল-মাকালাত: (পৃ.৯৭)]... তাদের ধারণা আলি রেদা তার জন্য ওসিয়ত করেছেন ও তার ইমামতের ঘোষণা দিয়েছেন। [আল-ফুসুলুল মুখতারাহ: (পৃ.২৫৬)]
গ. শিয়াদের অপর গ্রুপ ইমাম মুহাম্মদ ইব্ন আল-কাসেম ইব্ন ওমর ইব্ন আলি ইব্ন হুসাইন ইব্ন আলি ইব্ন আবি তালিবের ইমামতের স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি কুফায় থাকতেন। তার ইবাদত, দুনিয়ার প্রতি নির্লোভ, তাকওয়া, ইলম ও ফিকহি গভীরতা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল। তিনি ২১৮হি.তে তালেকান নামক স্থানে খলিফা আল-মুতাসিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। [মুকাতিলুত তালেবিয়্যিন: (পৃ.৫৭৯), তারিখে তাবারি: (৭/২২৩)]
ঘ. অপর ফেরকা ছোট বাচ্চা মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামতে বিশ্বাসী হল, কিন্তু সমস্যা তাদের পিছু ছাড়ল না। কারণ ইমাম জাওয়াদ তার যৌবনের শুরুতেই মারা যান, তখন তার দুই ছেলে আলি হাদি ও মুসা ছোট, বড় ছেলের বয়স মাত্র সাত। ইমাম জাওয়াদ আব্দুল্লাহ ইব্ন মিসওয়ারের নিকট সম্পদ, সন্তানের ব্যয়ভার ও গোলাম দেখাশোনার ওসিয়ত করে যান। হাদি বড় হলে তার নিকট এসব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন!! এর সাক্ষী ছিলেন আবু জাফরের মাওলা আহমদ ইব্ন আবি খালেদ। [আল-কাফি: (১/৩২৫)]
এ ঘটনা তখন শিয়াদের মাঝে প্রবল ঝড় তুলেছিল: বয়সের কারণে যখন হাদি নিজেই পিতার দৃষ্টিতে সম্পদ, পিতার সন্তানদের দেখাশোনা ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত নয়, সে কিভাবে ইমামতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে?! অন্যথায় এ সময়ের ইমাম কে?! ইতিপূর্বে এ প্রশ্নই ইমাম আলি রেদাকে করা হয়েছিল তার মৃত্যুর সময়, যখন জাওয়াদ ছোট। ইমামতের বিষয়টি আরো জটিল, কঠিন ও ঘোলাটে করে তুলেছে ছোট দুই ভাই আলি ও মুসা, তাদের মধ্যে ইমাম কে?!
ইমাম নির্ধারণে অস্পষ্টতা, শিয়াদের প্রখ্যাত আলেমদের পর্যন্ত ইমাম না-জানা, ইমামত নির্ধারণে মুহাম্মদ ইব্ন আল-ফারাজের শরণাপন্ন হওয়া, অতঃপর এক ব্যক্তির আগমন করা ও তাকে গোপনে বলা যে, ইমাম জাওয়াদ নিজ ছেলে আলি হাদির ইমামতের ওসিয়ত করেছেন প্রভৃতি বিষয় আল-কুলাইনি ও আল-মুফিদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। [আল-কাফি: (১/৩২৪), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩২৮)]
ইমামতের ব্যাপারে এসব ভ্রান্তি ও অস্পষ্টতার কারণে জাওয়াদের অনুসারী শিয়া ইমামিয়ারা দু’ভাবে ভাগ হয়েছে:
এক গ্রুপ হাদির ইমামতের দাবিদার।
অপর গ্রুপ তার ভাই মুসার ইমামতের দাবিদার। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৯১)]
কিন্তু ইমাম হাদি নিজের ছেলে মুহাম্মদকে তার খলিফা মনোনীত করে সবাইকে অবাক করে দেন! অতঃপর সে ইমাম হাদির জীবতাস্থায় মারা যান, ফলে তার অপর সন্তান হাসান আসকারীর ইমামতের ঘোষণা দেন। তাকে বলেন: “হে বৎস, আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য বলছি, আল্লাহ তোমার মধ্যে একটি জিনিস দান করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/৩২৬-৩২৭), বাসায়েরুদ দারাজাত লিস-সাফা: (পৃ.৪৭৩), আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ.৩৩৭), আল-গায়বাহ লিত তুসি: (পৃ.১২২)]
আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আত-তুসি আবু হাশেম দাউদ ইব্ন আল-কাসেম আল-জাফরি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: যখন আবু জাফর মারা যায় আমি আবুল হাসান আল-আসকারির নিকট ছিলাম, অথচ তিনি ইমামতের জন্য তাকেই নির্ধারণ ছিলেন। আমি চিন্তা করছিলাম এ হল আবু ইবরাহিম ও ইসমাইলের ঘটনা। আবুল হাসান আমার নিকটবর্তী হয়ে বললেন: ঠিকই বলেছ আবুল হাশেম, আবু জাফরের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, তিনি তার স্থানে আবু মুহাম্মদকে নির্ধারণ করেছেন। যেমন আবু আব্দুল্লাহর ঘোষণা দেয়ার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইসমাইলকে ইমাম ঘোষণা দেন। বিষয়টা তেমনি যেমন তোমর অন্তর কল্পনা করেছে, কিন্তু বাতিলপন্থীরা অস্বীকার করেছে... আবু মুহাম্মদ আমার পরবর্তী আমার স্থলাভিষিক্ত, তার নিকট তোমাদের প্রয়োজনীয় সব পাবে, তার কাছে রয়েছে ইমামতের নিদর্শন। আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা। [আল-কাফি: (১/৩২৮), আল-গায়বাহ: (পৃ.৫৫, ১৩০), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩৩৭), বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি: (৫০/২৪১)]
অনুরূপ ঘটেছিল ইসমাইলিয়াদের সাথে, তারা ইসমাইল ইব্ন জাফরের ইন্তেকাল অস্বীকার করেছিল, কারণ জাফর সাদেক তার ইমামত সম্পর্কে স্পষ্ট বলেছিলেন। অনুরূপ ইমাম হাদির অনুসারী শিয়াদের একগ্রুপ তার ছেলে মুহাম্মদের ইন্তেকালের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের দৃষ্টিতে তিনি জীবিত ও অদৃশ্য। তারা দাবি করেছে, হাদি তাকিয়ার আশ্রয় নিয়ে সত্য গোপন করে তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেছেন!!
কিন্তু হাসান আল-আসকারি সামুররা শহরে ২৬০হি. সনে নিঃসন্তান হয়ে মারা যাওয়ায় ইমামতের মাসআলায় আবার কালো মেঘ দেখা দেয়, যে ইমামতের ধারাবাহিকতা তাদের নিকট অবশ্য জরুরী। সেখান থেকে তারা চৌদ্দ ফেরকায় বিভক্ত হয়, যেমন আল-কুম্মি “মাকালাত ওয়াল ফেরাক” গ্রন্থে, নাওবখতি “ফেরাকুশ শিয়াহ” গ্রন্থে, ইব্ন আবি জায়নব আন-নুমানি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে, সাদুক “ইকমালুদ্দিন” গ্রন্থে, আল-মুফিদ “আল-ইরশাদ” গ্রন্থে ও আত-তুসি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে ও অন্যান্য শিয়া আলেমগণ বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
শিয়াদের তখন অজিফা ছিল উমাইয়াহ ও আব্বাসিয়াহ খলিফাদের সাথে বিদ্রোহ করা এবং আলির বংশধরকে খিলাফতের হকদার দাবি করা। সবার মধ্যে এ প্রেরণা কাজ করেছিল, এর নীতিতে তখন শিয়াদের দল-উপদল পরিচালিত হত, তখনো নির্দিষ্ট বার ইমামের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এ জন্য শিয়ারা তখন আহলে বাইতের সদস্যদের মধ্যে কোন পার্থক্য করত না, যেখানে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে কোন ইমাম বা বিদ্রোহী বিদ্রোহ করত, তার সাথে তারা যোগ দিত। যেমন ইমাম জায়েদ ইব্ন আলি ও জিন নাফছিজ জাকিয়াহ প্রভৃতি নেতাদের আন্দোলনে দেখা গেছে।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, আলি জয়নুল আবেদিন –বার ইমামিয়াদের চতুর্থ ইমাম- আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কিছু জটিলতা ও আন্দোলনগত সমস্যার কারণে তাদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ান।
অতঃপর তিনি ইবাদতে মশগুল হন, সেখান থেকে জাহেদ ও অধিক সালাত আদায়কারী পরিচিত লাভ করেন। আল-মুফিদ ও আল-আরবিলি উল্লেখ করেন যে, “তিনি প্রতি রাত-দিনে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [আল-ইরশাদ: (পৃ.২৫৬), কাশফুল গুম্মাহ: (২/২৯৩)] মুত্তাকি এ বুযুর্গ থেকে যেসব বাণী উল্লেখ করা হয়, তার সারাংশ উপদেশ, দোয়া-দরূদ ও শরয়ী বিধান, যা আলেমদের ফতোয়া প্রদানে সহায়ক।
তাকে ইমাম মানার ক্ষেত্রে এখানে বড় শূন্যতা দেখা দেয়। এ শূন্যতা পূরণ ও তার ইমামত প্রমাণের প্রচেষ্টা স্বরূপ শিয়া ইমামিয়ারা তার মুজিযা ও প্রশংসার আলোচনায় অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। অথচ তখন শিয়ারা ইলম ও ফজিলতের স্বীকৃতি স্বরূপ তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করত, রাজনীতিবিদ বা ইমাম হওয়ার কারণে নয়। [এখানে বলে রাখি শিয়াদের যেগ্রুপ যাকে পছন্দ করত তার মুজিজা সম্পর্কে অনেক ঘটনা তৈরি করত। এটা তাদের স্বভাব ছিল। যেমন ইসমাইলিয়ারা ইসমাইল ইব্ন জাফর সাদেক এর ইমামত, রেফাইয়ারা রেফায়ির ইমামত এবং তিজানিয়ারা তিজানির ইমামত প্রমাণ করার জন্য অনেক ঘটনা ও মুজিজার সৃষ্টি করেছে। আমরা তাই গ্রহণ করব, যা প্রকৃত ও বাস্তবতা নির্ভর।]
তাই দেখি জায়েদ ইব্ন জয়নুল আবেদিন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুফায় আগমন করে ‘মুমিন তাক’ ও তার সাথীদের থেকে তার পিতা আলি ইব্ন হুসাইন [জয়নুল আবেদিন]র ইমামতের কথা শুনে আশ্চর্য হন। এক পর্যায়ে তিনি মুমিন তাককে বলেন: “হে আবু জাফর [মুমিন তাক], আমি আমার পিতার সাথে এক দস্তরখানে বসতাম। তিনি আমার ওপর স্নেহ স্বরূপ গোস্তের বড় টুকরা চিবিয়ে ছোট করে দিতেন, গরম লোকমা ঠাণ্ডা করে দিতেন, অথচ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করার জন্য দয়া করলেন না, দীন সম্পর্কে আপনাকে বললেন আমাকে বললেন না তিনি”?! ‘মুমিন তাক’ উত্তর দিল: “আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! আপনার ওপর জাহান্নামের আগুনের আশঙ্কায় তিনি বলেননি, তার আশঙ্কা ছিল যদি আপনি গ্রহণ না করেন! আমাকে তিনি সংবাদ দিয়েছেন, কারণ আমি কবুল করলে নাজাত পাব, অন্যথায় আমার জাহান্নামে প্রবেশকে বড় করে দেখেননি, যেমন ইয়াকুব নিজ সন্তানদের থেকে স্বপ্ন গোপন করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/১৭৪)]
চিন্তা করুন..! ইমামের ছেলে পিতার ইমামত সম্পর্কে জানেন না, তার মুখে কখনো শ্রবণ করিনি, না পিতা তার জামানায় ইমামত দাবি করেছেন, কিন্তু ‘মুমিন তাক’ ও তার অনুসারীরা তার পিতা জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুর পর এসব দাবি উত্থাপন করে!
শিয়াদের ইতিহাসে এ এক অধ্যায়। অন্যান্য অধ্যায়ও রয়েছে, যা ইমামত মতবাদকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়।
এ ছাড়া শিয়াদের অনেক হাদিস প্রমাণ করে ইমাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকা সম্ভব। অজ্ঞ থাকাবস্থায় করণীয় কি তার বর্ণনাও রয়েছে। অথচ ইমামিয়্যাহ আকিদায় এরূপ কখনো সম্ভব নয়, বরং বার ইমাম ও তাদের সন্তানদের পরিচয়সহ তাদের ওপর ইমান আনা শিয়া ইমামিয়্যাদের ওপর ফরজ।
কুলাইনি “আল-কাফি” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করল: আমি সকাল-সন্ধ্যায় যদি ইমামের সাক্ষাত না পাই যার অনুসরণ করব, তখন আমার করণীয় কি?... তিনি বলেন: [তুমি বল]: “তুমি যাকে মহব্বত কর, আমি তাকে মহব্বত করি, তুমি যার সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর, আমি তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জাহির করেন”। [আল-কাফি: (১/৩৪২)]
ইমাম সাদেক থেকে সাদুক বর্ণনা করেন: “যখন তোমরা ইমামকে না দেখে জীবনের একযুগ পার করবে, তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে?... বলা হল: যদি এমন হয় তাহলে আমরা কি করব? তিনি বলেন: “তোমরা প্রথম ইমামকে আঁকড়ে থাক, যতক্ষণ না তোমাদের সামনে পরবর্তী ইমাম জাহির হয়”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৩৪৮, ৩৫০-৩৫১)]
আল-কুলাইনি, সাদুক ও আল-মুফিদ প্রমুখ বর্ণনা করেন ঈসা ইব্ন আব্দুল্লাহ আল-আলাওয়ি আল-আমরি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইব্ন মুহাম্মদ ‘আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি বলেন: আমি তাকে বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! যদি এমন হয় আল্লাহ আমাকে আপনার যুগ না দেখান তাহলে কার অনুসরণ করব? তিনি বলেন: আবু আব্দুল্লাহ বললেন: মূসার অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি মূসা মারা যান কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি তার সন্তান মারা যান বড় ভাই ও ছোট সন্তান রেখে কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর, অতঃপর সর্বদা এভাবে অনুসরণ কর। আমি বললাম: আমি যদি তাকে না চিনি, তার স্থান না জানি, কি করব?.. তিনি বললেন: তুমি বলবে: “হে আল্লাহ তোমার দলিল ও হুজ্জত হিসেবে বিগত ইমামের যে সন্তান রয়েছে তার বেলায়েত আমি গ্রহণ করছি..! কারণ তোমর জন্য এতটুকু যথেষ্ট”!!
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে যারারাহ ইব্ন আয়ূন, ইয়াকুব ইব্ন শু‘আইব ও আব্দুল আলা থেকে, তারা সবাই ইমাম সাদেককে জিজ্ঞাসা করেছেন: “ইমাম যখন কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন মানুষেরা কি করবে? তিনি বলেন: আল্লাহ যেরূপ বলেছেন সেরূপ হয়ে যাবে, আল্লাহ ইরশাদ করেন:
﴿فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢﴾ [ التوبة : 122]
“অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সর্তক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে”। [সূরা আত-তাওবা: (১২২)]
আমি বললাম: তাদের পরিণতি কেমন হবে? তিনি বললেন: তারা অপারগ। আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! মুতাফাক্কেহ বা জ্ঞানীদের আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষাকারীদের অবস্থা কেমন হবে? তিনি বললেন: আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন, তুমি জান না মুহাম্মদ ও ইসার মাঝখানে দুই শত পঞ্চাশ বছর ব্যবধান ছিল। মুহাম্মদের অপেক্ষায় ইসার দীনের ওপর এক প্রজন্ম মারা গেছে। আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ সাওয়াব দান করেছেন?! আমি বললাম: মনে করুন আমরা যাত্রা করলাম, অতঃপর আমাদের এক-গ্রুপ রাস্তায় মারা গেল? তিনি বললেন:
﴿ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [ النساء : ١٠٠ ]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা নিসা: (১০০)]
আমি বললাম: [মনে করুন] আমরা মদিনায় গেলাম, সেখানে ইমামের গেট পেলাম তালাবন্ধ, তিনি পর্দার আড়ালে? তিনি বললেন: এসব ঘটবে প্রকাশে। তুমি মদিনায় প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা কর, অমুক কার নিকট ওসিয়ত করেছেন? তারা বলবে: অমুকের নিকট”। [তাফরিরুল আইইয়াশী: (২/১১৭-১১৮), আল-ইমামাহ ওয়াত তাবসিরাহ মিনাল হায়রাহ: (পৃ.২২৬), ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫)]
বরং অনেক বর্ণনা প্রমাণ করে যে, স্বয়ং ইমামগণ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত নিজেদের ইমামত অথবা তাদের পরবর্তী ইমাম সম্পর্কে জানতেন না। আর তাদের অনুসারী ইমামিয়্যারা বরাবর এক ইমামের মৃত্যুর পর পরবর্তী ইমাম নির্ধারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হত। প্রত্যেক ইমামকে তারা অনুরোধ করত পরবর্তী ইমাম নির্দিষ্ট করে যান, যেন নতুন ইমাম জানা ব্যতীত তাদের মৃত্যু না হয়।
“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে ইমাম হাসান আসকারির ছাত্র আবু জাফর মুহাম্মদ আস-সাফার বলেন: “অধ্যায়: ইমামগণ জানেন তাদের মৃত্যুর পূর্বে কার জন্য ওসিয়ত করবেন, কারণ আল্লাহ তাদের জানিয়ে দেন”। [“বাসায়েরুদ দারাজাত”: (পৃ.৪৩৫)]
এ অধ্যায়ে তিনি অনেক বর্ণনা পেশ করেছেন, একটি বর্ণনা: আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম থেকে আব্দুর রহমান আল-খাজ্জার বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: ইসমাইল ইব্ন ইবরাহিমের ছোট এক বাচ্চা ছিল তিনি তাকে খুব মহব্বত করতেন। ইসমাইলের মনোযোগ তার প্রতিই বেশী ছিল, আল্লাহ তা হতে দিলেন না। তিনি বললেন: হে ইসমাইল সে [ইমাম] অমুক। আল্লাহ যখন ইসমাইলের মৃত্যুর ফয়সালা করেন ও তার ওসি এসে উপস্থিত হল, তিনি বললেন: হে বৎস যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, আমি যেমন করেছি তেমন করবে। তাই কোন ইমাম মৃত্যু বরণ করেন না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন কার জন্য ওসিয়ত করবে!
“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে একটি অধ্যায় রয়েছে “ইমাম জানেন তার মৃত্যুর পর কে ইমাম হবেন” নামে!
ইমামিয়্যাহ আকিদায় ধারণ করা এসব রহস্য ও জটিলতার কারণে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত খোদ ইমাম জানেন না তার পরবর্তী ইমাম কে। তাই সাধারণ শিয়া তো বটেই প্রখ্যাত বর্ণনাকারী ও ইমামদের সাথীগণ পর্যন্ত দুই ইমামের মাঝে দিকভ্রষ্ট থাকেন।
বর্ণনা করা হয় ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর প্রসিদ্ধ শাগরেদ জুরারা ইব্ন আয়ূন ইমাম সাদেকের পরবর্তী ইমাম না জেনেই মারা যান!
জুরারা নিজ ছেলে উবাইদুল্লাহর নিকট কুফা থেকে মদিনায় পত্র লিখেন যেন তাকে নতুন ইমাম সম্পর্কে জানানো হয়, কিন্তু উত্তর আসার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তখন কুরআন বুকে ধরে বলেন: “হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, তুমি এ কুরআনে যার ইমামত নির্দিষ্ট করেছ তাকেই আমি ইমাম মানছি”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫,৭৬)]
যদি তিনি অথবা ইমামের অন্য শাগরেদ জানত যে, জাফর সাদেকের পর মুসা কাজেম ইমাম, তাহলে পত্র লেখা ও সন্দেহ পোষণ ব্যতীত তার প্রতি ইমান আনত।
আল-সেফার, আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আল-কাশি বলেছেন: ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদগণ যেমন হিশাম ইব্ন সালেম আল-জাওয়ালিকি, মুহাম্মদ ইব্ন আন-নুমান আল-আহওয়াল প্রমুখদের –প্রথম- বিবেচনায় জাফর সাদেক এর মৃত্যুর পর আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ ইমাম ছিলেন। কারণ আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “ইমামত বড় সন্তানের মধ্যে থাকবে যদি তার মাথায় সমস্যা না থাকে”। ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর শাগরেদ আম্মার আস-সাবাতি শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ এর ইমামতের ওপর অটল ছিলেন! [আল-কাফি: (১/৩৫১-৩৫২), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্ন সালেম এর জীবনী দেখুন।]
হিশাম ইব্ন সালেম আল-জাওয়ালিকি বর্ণনা করেন: তিনি শিয়াদের এক গ্রুপসহ আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহের দরবারে গমন করেন, অতঃপর তাকে ফেকহি কতক মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু তিনি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাই তারা তার ইমামত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন ও তার দরবার থেকে বেরিয়ে যান। [তিনি বলেন:] “আমরা ছিলাম পেরেশান ও দিকভ্রষ্ট... আমরা কাঁদতে কাঁদতে দিকহারা হয়ে কুফার এক রাস্তায় বসে পড়লাম। আমরা ঠিক করতে পারছিলাম না কার কাছে যাব ও কাকে আমাদের উদ্দিষ্ট বানাব। আমরা বলতে ছিলাম: মুরজিয়াতের নিকট?!. জায়দিয়াদের নিকট?!.. মুতাজিলাদের নিকট?!. খারেজিদের নিকট?!. কোথায় যাব? আমরা এভাবেই ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম আমার অপরিচিত এক ব্যক্তি আমার দিকে হাতে ইশারা করছে... তিনি বললেন: প্রবেশ কর, আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন! আমি প্রবেশ করলাম। দেখলাম আবুল হাসান মুসা। তিনি আমাকে নিজ থেকে বললেন: না মুরজিয়াদের দিকে, না কাদরিয়াদের দিকে, না জায়দিয়াদের দিকে, না খারেজিদের দিকে!.. বরং আমার দিকে, আমার দিকে..! আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনার পিতা চলে গেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ... আমি বললাম: তার পরবর্তী আমাদের নেতা কে? তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাকে তার পথ দেখাবেন। আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনিই কি সে? তিনি বললেন: না, আমি তা বলছি না। আমি অন্তরে বললাম: আমি প্রশ্ন করতে ভুল করেছি, অতঃপর বললাম: আমি আপনার প্রতি উৎসর্গ! আপনার কোন ইমাম রয়েছে? তিনি বললেন: না, তখন তার ভয় ও সম্মানের কারণে আমার অন্তরে কিছু প্রবেশ করল, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না”। [আল-কাফি: (১/৩৫১), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), মুনতাহাল আমাল: (২/২৫৮), দেখুন রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্ন সালেম এর জীবনী।]
এ বর্ণনায় হিশাম বলেন: মানুষেরা –শুরুতে- আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতার ইমামতে একমত ছিল। ইমামিয়্যাহ সম্প্রদায়ের কুতুবরা পর্যন্ত জানে না কাজেম কিসের ভিত্তিতে ইমাম হলেন, তিনি নিজেও ইমামতের ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হিশাম ইব্ন সালেম ও তার সাথীগণ আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতাহ-এর ইমামতের দাবি থেকে প্রত্যাবর্তন করুন বা না-করুন, আল-আফতাহ তার পিতার মৃত্যুর পর মাত্র সত্তুর দিন পর মারা যান। তিনি কোন সন্তান রেখে যাননি, যার মধ্যে ইমামত চালু থাকবে। এ ঘটনা তখন ইমামতের মাসআলায় বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। কেউ ইমামতের ধারণা থেকে ফিরে যান, ইমামিয়াদের দফতর থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন। কেউ নতুন ইমাম মুসা ইব্ন জাফরের ওপর ইমান আনয়ন করেন, তারা মুসুবিয়াহ নামে পরিচিত। অপর গ্রুপ যেমন আব্দুল্লাহ ইব্ন বুকাইর ও আম্মার ইব্ন মুসা আস-সাবাতি মুসার ভাইকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা ফাতহিয়াহ নামে পরিচিত। তারা ছিল ইমাম সাদেক ও তার পরবর্তী ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদ।
প্রিয় পাঠক, আপনি মনে করবেন না ইমামতের মাসআলা এ বিভ্রান্তি ও সমস্যার পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, বরং ইসমাইলকে ওসি মনোনীত করা ও তার ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ইমামিয়্যাহ মতবাদ মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। আরেক সমস্যা দেখা দেয় আব্দুল্লাহ ইব্ন আল-আফতার সন্তান বিহীন মারা যাওয়ার ফলে। অতঃপর কাজেমের ইমামত প্রমাণের জটিলতা, অবশেষে বাগদাদে হারুনুর রশিদের জেলখানায় ১৮৪ হিজরিতে তার অদৃশ্য মৃত্যুর ফলে জটিলতার ওপর জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন শিয়া মুসুবিয়ারা বলত তিনি জেলখানা থেকে পলায়ন করেছেন!
প্রকৃত অর্থে মুসা কাজেমের মৃত্যুটি রহস্যাবৃত। তার অধিকাংশ সন্তান, ছাত্র ও সাথীদের ওপর তার ব্যাপারটি অস্পষ্ট। যেমন প্রখ্যাত বর্ণনাকারী আলি ইব্ন আবু হামজাহ, আলি ইব্নুল খাত্তাব, গালেব ইব্ন উসমান, মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন আম্মার আত-তাগলিবি আস-সায়রাফি, ইসহাক ইব্ন জারির, মুসা ইব্ন বাকার, ওয়াহাইব ইব্ন হাফস আল-জারিরি, ইয়াহইয়া ইব্নু হুসাইন ইব্ন জায়েদ ইব্ন আলি ইব্নুল হুসাইন, ইয়াহইয়া ইব্ন আল-কাসেম আল-হেযা আবু বাসির, আব্দুর রহমান ইব্নুল হাজ্জাজ, রেফাআহ ইব্ন মুসা, ইউনুস ইব্ন ইয়াকুব, জামিল ইব্ন দারাজ, হাম্মাদ ইব্ন ইসা, আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আবু নাসার ও আলে মেহরান প্রমুখ বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ। [আল-গায়বাহ লিত তুসী: (পৃ.৪৭), আল-কাফি: (১/৩৪), উইনুল আখবারুর রেদা: (পৃ.৩৯)]
মুসুবিয়াদের কাজেমকে ইমাম মেনে নেয়া ও তার সন্তান আলি রেদার ইমামত প্রত্যাখ্যান করার পেছনে কতক বর্ণনা রয়েছে, যার দাবি ইমাম কাজেম নিজেই হাদি, তিনি মৃত্যুর পূর্বে পুনরায় উত্থিত হবেন। আত-তুসি “আল-গায়বাহ” কিতাবে তার কতিপয় বর্ণনা উল্লেখ করে আলোকপাত করেছেন। [আল-গায়বাহ: (পৃ.২৯-৪০)]
আলি রেদা কিভাবে জানলেন তার পিতার মৃত্যুর সংবাদ, কখন জানলেন এবং কখন নিশ্চিত হলেন তার পিতার খলিফা হিসেবে তিনি ইমাম হয়েছেন এ সম্পর্কে অনেক সন্দেহ ও প্রশ্ন রয়েছে। ইমাম কাজেমের মৃত্যু ও ছেলে আলি রেদার পিতার মৃত্যু সংবাদ জানতে সময় ক্ষেপণ হয়েছিল কি-না, পিতার পরবর্তী তার ইমাম হওয়ার মধ্যে বিরতি ছিল কি-না প্রভৃতি?! [আল-কাফি: (১/৩৮১)]
শিয়াদের নিকট প্রচলিত কতক হাদিস-ই আলি রেদার ইমামতের সন্দেহ পাকাপোক্ত করেছিল, যেমন: “ইমামকে একমাত্র ইমামই গোসল দিবেন”। তারা বলল: তাহলে কিভাবে আলি রেদা তার পিতার গোসল দিলেন, যিনি বাগদাদে মারা যান, আলি রেদা তখন মদিনায়?!! [আল-কাফি: (১/৩৮৫)]
আলি রেদার ইমামতের বিষয়টা শুধু সাধারণ শিয়াদের নিকটই অস্পষ্ট ছিল না, বরং কাজেমের সন্তান ও তার স্ত্রী আসিরাহ [উম্মে আহমদ]র নিকটও অস্পষ্ট ছিল, যেমন ইতিহাস উল্লেখ করেছে। [আল-কাফি: (১/৩৮১-৩৮২)]
কোন এক বর্ণনা বলে: মদিনায় শিয়ারা ইমাম কাজেমের মৃত্যুর সংবাদ শুনে উম্মে আহমদের ঘরের সামনে জড়ো হয় ও আহমদ ইব্ন ইমাম কাজেমের হাতে বায়েত গ্রহণ করে, তিনি তাদের থেকে বায়েত নেন। [হায়াতুল ইমাম মুসা ইব্ন জাফর, লি বাকের শরীফ আল-কুরাশি: (পৃ.৪১০-৪১১), তুহফাতুল আলম থেকে নেয়া, লি সাইয়্যেদ জাফর, আলে বাহরুল উলুম: (২/৮৭)]
ইমামিয়ারা আলি রেদার ইমামত প্রমাণে বিভিন্ন দলিলের আশ্রয় নিয়ে বারবার ব্যর্থ হতে ছিল, তাদের এ সমস্যার সমাধান না হতেই (২০৩হি.)তে খোরাসানে তিনি মারা যান, তখন তার ছেলে মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের বয়স মাত্র সাত। ফলে ইমামত মতবাদ নতুন সমস্যার সম্মুখীন হল। ছেলে পিতার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ধারণা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। কারণ একজন বাচ্চাকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের জন্য বাছাই করবেন কোন যুক্তিতে টিকে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে যার নিজের ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদে কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই, শরীয়ত যার ওপর কোন বিধান ফরজ করেনি, যিনি নিজ পিতা থেকে ইলম অর্জন করার সুযোগ লাভ করেননি, তার পিতা যখন মদিনা ত্যাগ করেন, তখন তার বয়স মাত্র চার বছর, তিনি কিভাবে ইমাম হবেন! [আল-মাকালাত ওয়াল ফেরাক, লিল আশ-আরি আল-কুম্মি: (পৃ.৯৬-৯৮), ফেরাকুশ শিয়াহ লিন নাওবখতি: (পৃ.৮৮)]
এসব কারণে শিয়ারা বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্তি হয়:
ক. এক ফেরকা কাজেমের ইমামতে ফিরে আসেন, আলি রেদার ইমামত থেকে সরে দাঁড়ান এবং মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামত প্রত্যাখ্যান করেন।
খ. এক ফেরকা আলি রেদার ভাই আহমদ ইব্ন মুসার ইমামতে বিশ্বাসী হন। কারণ তিনি আলি রেদার খুব সম্মান ও মহব্বতের পাত্র ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল জায়দিয়াদের ন্যায়। তিনি এক দল লোকের সাথে কুফার উদ্দেশ্য রওয়ানা করেন। তার ইলম, তাকওয়া ও পরহেজগারি প্রসিদ্ধ ছিল, যেমন আল-মুফিদ ইরশাদ গ্রন্থে বলেছেন। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৮৮), আল-মাকালাত: (পৃ.৯৭)]... তাদের ধারণা আলি রেদা তার জন্য ওসিয়ত করেছেন ও তার ইমামতের ঘোষণা দিয়েছেন। [আল-ফুসুলুল মুখতারাহ: (পৃ.২৫৬)]
গ. শিয়াদের অপর গ্রুপ ইমাম মুহাম্মদ ইব্ন আল-কাসেম ইব্ন ওমর ইব্ন আলি ইব্ন হুসাইন ইব্ন আলি ইব্ন আবি তালিবের ইমামতের স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি কুফায় থাকতেন। তার ইবাদত, দুনিয়ার প্রতি নির্লোভ, তাকওয়া, ইলম ও ফিকহি গভীরতা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল। তিনি ২১৮হি.তে তালেকান নামক স্থানে খলিফা আল-মুতাসিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। [মুকাতিলুত তালেবিয়্যিন: (পৃ.৫৭৯), তারিখে তাবারি: (৭/২২৩)]
ঘ. অপর ফেরকা ছোট বাচ্চা মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামতে বিশ্বাসী হল, কিন্তু সমস্যা তাদের পিছু ছাড়ল না। কারণ ইমাম জাওয়াদ তার যৌবনের শুরুতেই মারা যান, তখন তার দুই ছেলে আলি হাদি ও মুসা ছোট, বড় ছেলের বয়স মাত্র সাত। ইমাম জাওয়াদ আব্দুল্লাহ ইব্ন মিসওয়ারের নিকট সম্পদ, সন্তানের ব্যয়ভার ও গোলাম দেখাশোনার ওসিয়ত করে যান। হাদি বড় হলে তার নিকট এসব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন!! এর সাক্ষী ছিলেন আবু জাফরের মাওলা আহমদ ইব্ন আবি খালেদ। [আল-কাফি: (১/৩২৫)]
এ ঘটনা তখন শিয়াদের মাঝে প্রবল ঝড় তুলেছিল: বয়সের কারণে যখন হাদি নিজেই পিতার দৃষ্টিতে সম্পদ, পিতার সন্তানদের দেখাশোনা ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত নয়, সে কিভাবে ইমামতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে?! অন্যথায় এ সময়ের ইমাম কে?! ইতিপূর্বে এ প্রশ্নই ইমাম আলি রেদাকে করা হয়েছিল তার মৃত্যুর সময়, যখন জাওয়াদ ছোট। ইমামতের বিষয়টি আরো জটিল, কঠিন ও ঘোলাটে করে তুলেছে ছোট দুই ভাই আলি ও মুসা, তাদের মধ্যে ইমাম কে?!
ইমাম নির্ধারণে অস্পষ্টতা, শিয়াদের প্রখ্যাত আলেমদের পর্যন্ত ইমাম না-জানা, ইমামত নির্ধারণে মুহাম্মদ ইব্ন আল-ফারাজের শরণাপন্ন হওয়া, অতঃপর এক ব্যক্তির আগমন করা ও তাকে গোপনে বলা যে, ইমাম জাওয়াদ নিজ ছেলে আলি হাদির ইমামতের ওসিয়ত করেছেন প্রভৃতি বিষয় আল-কুলাইনি ও আল-মুফিদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। [আল-কাফি: (১/৩২৪), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩২৮)]
ইমামতের ব্যাপারে এসব ভ্রান্তি ও অস্পষ্টতার কারণে জাওয়াদের অনুসারী শিয়া ইমামিয়ারা দু’ভাবে ভাগ হয়েছে:
এক গ্রুপ হাদির ইমামতের দাবিদার।
অপর গ্রুপ তার ভাই মুসার ইমামতের দাবিদার। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৯১)]
কিন্তু ইমাম হাদি নিজের ছেলে মুহাম্মদকে তার খলিফা মনোনীত করে সবাইকে অবাক করে দেন! অতঃপর সে ইমাম হাদির জীবতাস্থায় মারা যান, ফলে তার অপর সন্তান হাসান আসকারীর ইমামতের ঘোষণা দেন। তাকে বলেন: “হে বৎস, আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য বলছি, আল্লাহ তোমার মধ্যে একটি জিনিস দান করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/৩২৬-৩২৭), বাসায়েরুদ দারাজাত লিস-সাফা: (পৃ.৪৭৩), আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ.৩৩৭), আল-গায়বাহ লিত তুসি: (পৃ.১২২)]
আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আত-তুসি আবু হাশেম দাউদ ইব্ন আল-কাসেম আল-জাফরি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: যখন আবু জাফর মারা যায় আমি আবুল হাসান আল-আসকারির নিকট ছিলাম, অথচ তিনি ইমামতের জন্য তাকেই নির্ধারণ ছিলেন। আমি চিন্তা করছিলাম এ হল আবু ইবরাহিম ও ইসমাইলের ঘটনা। আবুল হাসান আমার নিকটবর্তী হয়ে বললেন: ঠিকই বলেছ আবুল হাশেম, আবু জাফরের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, তিনি তার স্থানে আবু মুহাম্মদকে নির্ধারণ করেছেন। যেমন আবু আব্দুল্লাহর ঘোষণা দেয়ার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইসমাইলকে ইমাম ঘোষণা দেন। বিষয়টা তেমনি যেমন তোমর অন্তর কল্পনা করেছে, কিন্তু বাতিলপন্থীরা অস্বীকার করেছে... আবু মুহাম্মদ আমার পরবর্তী আমার স্থলাভিষিক্ত, তার নিকট তোমাদের প্রয়োজনীয় সব পাবে, তার কাছে রয়েছে ইমামতের নিদর্শন। আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা। [আল-কাফি: (১/৩২৮), আল-গায়বাহ: (পৃ.৫৫, ১৩০), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩৩৭), বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি: (৫০/২৪১)]
অনুরূপ ঘটেছিল ইসমাইলিয়াদের সাথে, তারা ইসমাইল ইব্ন জাফরের ইন্তেকাল অস্বীকার করেছিল, কারণ জাফর সাদেক তার ইমামত সম্পর্কে স্পষ্ট বলেছিলেন। অনুরূপ ইমাম হাদির অনুসারী শিয়াদের একগ্রুপ তার ছেলে মুহাম্মদের ইন্তেকালের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের দৃষ্টিতে তিনি জীবিত ও অদৃশ্য। তারা দাবি করেছে, হাদি তাকিয়ার আশ্রয় নিয়ে সত্য গোপন করে তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেছেন!!
কিন্তু হাসান আল-আসকারি সামুররা শহরে ২৬০হি. সনে নিঃসন্তান হয়ে মারা যাওয়ায় ইমামতের মাসআলায় আবার কালো মেঘ দেখা দেয়, যে ইমামতের ধারাবাহিকতা তাদের নিকট অবশ্য জরুরী। সেখান থেকে তারা চৌদ্দ ফেরকায় বিভক্ত হয়, যেমন আল-কুম্মি “মাকালাত ওয়াল ফেরাক” গ্রন্থে, নাওবখতি “ফেরাকুশ শিয়াহ” গ্রন্থে, ইব্ন আবি জায়নব আন-নুমানি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে, সাদুক “ইকমালুদ্দিন” গ্রন্থে, আল-মুফিদ “আল-ইরশাদ” গ্রন্থে ও আত-তুসি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে ও অন্যান্য শিয়া আলেমগণ বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
শেষ জমানায় মাহদি আগমন করবেন, আহলে বাইতে আগমন করবেন, বিশেষ করে ফাতেমার বংশে জন্ম নিবেন প্রভৃতি বিষয়ে শিয়া-সুন্নাহ কারো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই।
আমি অন্যান্য শিয়াদের ন্যায় ‘সাহেবুজ জামানে’র ওপর ভরসা করা শিখেছি। শৈশব থেকে শিখেছি তার অনেক উপাধি রয়েছে। যেমন ‘হুজ্জাতুল্লাহ’, ‘আল-কায়েম’, ‘সাহেবুজ জমান’, ‘আবু সালেহ’, ‘সাহেবুল আমর’ ও ‘সাহেবুল আসর’ প্রভৃতি। কিন্তু কখনো ধারণা করেনি যে, আমি শৈশব থেকে যে সত্বার ওপর ভরসা করেছি, যার সাথে আমার আশা ও আনন্দ সম্পৃক্ত করেছি তিনি শুধুই ধারণা ও স্বপ্নপুরুষ।
ইমামের মহব্বত কখনো আমাকে এ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেয়নি, কিন্তু স্বাধীন আলোচনা এ বাস্তবতার দিকে আমাকে ধাবিত করেছে।
আমি অন্যান্য শিয়াদের ন্যায় ‘সাহেবুজ জামানে’র ওপর ভরসা করা শিখেছি। শৈশব থেকে শিখেছি তার অনেক উপাধি রয়েছে। যেমন ‘হুজ্জাতুল্লাহ’, ‘আল-কায়েম’, ‘সাহেবুজ জমান’, ‘আবু সালেহ’, ‘সাহেবুল আমর’ ও ‘সাহেবুল আসর’ প্রভৃতি। কিন্তু কখনো ধারণা করেনি যে, আমি শৈশব থেকে যে সত্বার ওপর ভরসা করেছি, যার সাথে আমার আশা ও আনন্দ সম্পৃক্ত করেছি তিনি শুধুই ধারণা ও স্বপ্নপুরুষ।
ইমামের মহব্বত কখনো আমাকে এ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেয়নি, কিন্তু স্বাধীন আলোচনা এ বাস্তবতার দিকে আমাকে ধাবিত করেছে।
সাহেবুজ জমানের একটি উপাধি আমাকে অবাক ও ব্যথিত করেছে। আল্লামা আন-নুরি ও আত-তাবরাসি বিখ্যাত গ্রন্থ [আন-নাজমুস সাকেব ফি আহওয়ালিল ইমামিল হুজাজ্জাতিল গায়েব] এ যার উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা আত-তাবরাসিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই, এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, শায়খ “আব্বাস আল-কুম্মি”, শায়খ “আগা বুজরুক তেহরানি”, শায়খ “মুহাম্মদ হুসাইন আলে কাশেফুল গেতা”, “সাইয়্যেদ আব্দুল মুহসিন শারফুদ্দিন আল-মুসুবি” প্রমুখ মূল গ্রন্থ প্রণেতাগণ তার ছাত্র।
তিনি উল্লেখ করেছেন সাহেবুজ জমানের এক উপাধি “খসরু মাজুস”, [আন-নাজমুস সাকেব: (পৃ.১/১৮৫)] এটা ইমামের সাত চল্লিশতম উপাধি!
আমার নিকট যা ছিল বড় আশ্চর্য ও অবাক কাণ্ড!
আমাদের ইমামকে কিভাবে “খসরু মাজুস” [অগ্নি পূজক] বলা হয়?! সাহেবুজ জমানের সাথে মাজুসের কি সম্পর্ক?!
সাহেবুজ জমানের আগমন হবে আহলে বাইতের শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, বিশেষ করে আবু বকর ও ওমর... আমরা এভাবেই শিখেছি। ওমর ইব্ন খাত্তাব ইসলামের খলিফা, যার যুগে ইরান বিজয় হয় ও ইরান ইসলামের পতাকা তলে প্রবেশ করে। ইতিহাসে প্রথমবারের মত তার যুগে ইরানে আযান ও সালাত কায়েম হয়। আমি ওমরের অবদান ও ইসলামের দাবিদার ইরানীদের সাথে তার শত্রুতার সম্পর্ক খুঁজছিলাম।
আপনি চাইলে আল্লামা মাজলিসির লেখা বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের নিম্নের বর্ণনা দেখুন, আপনিও আমার ন্যায় আহত ও হতবাক হবেন।
মাজলিসি বর্ণনা করেন, আন-নাওশেযান ইব্ন আল-বুদমুরদান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পারস্যরা যখন কাদিসিয়া থেকে হটে গেল, রুস্তমের পরাজয় ও আরবদের বিজয়ী হওয়ার সংবাদ যখন ইয়াজদাজার ইব্ন শাহরিয়ার নিকট পৌঁছল, তিনি মনে করলেন রুস্তম ও পারস্যরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। মুবাদির এসে তাকে কাদিসিয়ার ঘটনা, পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিহত হওয়া ও সেখান থেকে তাদের পলায়নের সংবাদ দিল। এ সংবাদ শুনে ইয়াজদাজার পরিবারসহ পলায়ন করল ও ইওয়ানের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তিনি বললেন: আসসালামু আলাইকা হে ইওয়ানবাসী! আমি তোমার থেকে চলে যাচ্ছি, অতিসত্বর আমি অথবা আমার সন্তানের কেউ তোমার নিকট ফিরে আসবে, যার সময় এখনো হয়নি।
সুলাইমান আদ-দাইলামি বলেন: আমি আলি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামের নিকট জিজ্ঞাসা করি: “অথবা আমার সন্তানের কোন ব্যক্তি” এ কথার অর্থ কি? তিনি বললেন: তিনি তোমাদের প্রত্যাশিত লোক “কায়েম বি আম-রিল্লাহ”, আমার ষষ্ঠ সন্তান। ইয়াজদার তাকে জন্ম দিয়েছে, সেই তার সন্তান... [বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৬৩-১৬৪)]
নিশ্চয় তা হবে প্রতিশোধ গ্রহণের দিন!
সাহেবুজ জমান ইব্ন ইয়াজদার ইরানে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়ানো মুসলিমদের থেকে তার পূর্বপুরুষ অগ্নিপুজকদের বদলা নিবেন! তাদের বর্ণনা এরূপ। “খসরু মাজুস” উপাধি থেকেও এরূপ বুঝে আসে!
আল্লাহু আকবার..! এ বাস্তবতা থেকে আমি কোথায় ছিলাম?!
যদিও আমার নিকট এর চেয়ে অবাক কাণ্ড ও অধিক আশ্চর্যের বিষয় রয়েছে..!
মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহিম আন-নুমানি লিখিত “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে রয়েছে, আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “যখন আল-কায়েম বের হবেন, তখন আরব, কুরাইশ ও তার মাঝে শুধু তলোয়ারই থাকবে। তিনি তাদের কাউকে গ্রহণ করবেন না, তবে তলোয়ার যাকে গ্রহণ করে”। [আল-গায়বাহ: (পৃ.২৩৪)]
লক্ষ্য করুন শিয়াদের সকল বিদ্বেষের কেন্দ্র আরব, বিশেষ করে কুরাইশদের ওপর তাদের ক্ষোভ প্রচণ্ড?!
তাদের বর্ণনা থেকে আরো প্রমাণ হয় যে, আল-কায়েম “আরবের শত্তুরটি বংশ হত্যা করে সমূলে ধ্বংস করে দিবেন”। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (৫২/৩৩৩), টিকা নং: (১)]
এ বর্ণনার সাথে সাহেবুজ জমানের উপাধি “খসরু মাজুস” যোগ করুন। সাহেবুজ জামানের পূর্বপুরুষ ইয়াজদার তার সম্পর্কে মুসলিমদের সতর্ক করে গেছে, কারণ মুসলিমরা তাকে ও তার দলবলকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে!!
এসব ঘটনা সচেতন ব্যক্তিকে বজ্রের ন্যায় আঘাত করে..!
আল্লামা আত-তাবরাসিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই, এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, শায়খ “আব্বাস আল-কুম্মি”, শায়খ “আগা বুজরুক তেহরানি”, শায়খ “মুহাম্মদ হুসাইন আলে কাশেফুল গেতা”, “সাইয়্যেদ আব্দুল মুহসিন শারফুদ্দিন আল-মুসুবি” প্রমুখ মূল গ্রন্থ প্রণেতাগণ তার ছাত্র।
তিনি উল্লেখ করেছেন সাহেবুজ জমানের এক উপাধি “খসরু মাজুস”, [আন-নাজমুস সাকেব: (পৃ.১/১৮৫)] এটা ইমামের সাত চল্লিশতম উপাধি!
আমার নিকট যা ছিল বড় আশ্চর্য ও অবাক কাণ্ড!
আমাদের ইমামকে কিভাবে “খসরু মাজুস” [অগ্নি পূজক] বলা হয়?! সাহেবুজ জমানের সাথে মাজুসের কি সম্পর্ক?!
সাহেবুজ জমানের আগমন হবে আহলে বাইতের শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, বিশেষ করে আবু বকর ও ওমর... আমরা এভাবেই শিখেছি। ওমর ইব্ন খাত্তাব ইসলামের খলিফা, যার যুগে ইরান বিজয় হয় ও ইরান ইসলামের পতাকা তলে প্রবেশ করে। ইতিহাসে প্রথমবারের মত তার যুগে ইরানে আযান ও সালাত কায়েম হয়। আমি ওমরের অবদান ও ইসলামের দাবিদার ইরানীদের সাথে তার শত্রুতার সম্পর্ক খুঁজছিলাম।
আপনি চাইলে আল্লামা মাজলিসির লেখা বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের নিম্নের বর্ণনা দেখুন, আপনিও আমার ন্যায় আহত ও হতবাক হবেন।
মাজলিসি বর্ণনা করেন, আন-নাওশেযান ইব্ন আল-বুদমুরদান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পারস্যরা যখন কাদিসিয়া থেকে হটে গেল, রুস্তমের পরাজয় ও আরবদের বিজয়ী হওয়ার সংবাদ যখন ইয়াজদাজার ইব্ন শাহরিয়ার নিকট পৌঁছল, তিনি মনে করলেন রুস্তম ও পারস্যরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। মুবাদির এসে তাকে কাদিসিয়ার ঘটনা, পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিহত হওয়া ও সেখান থেকে তাদের পলায়নের সংবাদ দিল। এ সংবাদ শুনে ইয়াজদাজার পরিবারসহ পলায়ন করল ও ইওয়ানের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তিনি বললেন: আসসালামু আলাইকা হে ইওয়ানবাসী! আমি তোমার থেকে চলে যাচ্ছি, অতিসত্বর আমি অথবা আমার সন্তানের কেউ তোমার নিকট ফিরে আসবে, যার সময় এখনো হয়নি।
সুলাইমান আদ-দাইলামি বলেন: আমি আলি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামের নিকট জিজ্ঞাসা করি: “অথবা আমার সন্তানের কোন ব্যক্তি” এ কথার অর্থ কি? তিনি বললেন: তিনি তোমাদের প্রত্যাশিত লোক “কায়েম বি আম-রিল্লাহ”, আমার ষষ্ঠ সন্তান। ইয়াজদার তাকে জন্ম দিয়েছে, সেই তার সন্তান... [বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৬৩-১৬৪)]
নিশ্চয় তা হবে প্রতিশোধ গ্রহণের দিন!
সাহেবুজ জমান ইব্ন ইয়াজদার ইরানে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়ানো মুসলিমদের থেকে তার পূর্বপুরুষ অগ্নিপুজকদের বদলা নিবেন! তাদের বর্ণনা এরূপ। “খসরু মাজুস” উপাধি থেকেও এরূপ বুঝে আসে!
আল্লাহু আকবার..! এ বাস্তবতা থেকে আমি কোথায় ছিলাম?!
যদিও আমার নিকট এর চেয়ে অবাক কাণ্ড ও অধিক আশ্চর্যের বিষয় রয়েছে..!
মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহিম আন-নুমানি লিখিত “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে রয়েছে, আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “যখন আল-কায়েম বের হবেন, তখন আরব, কুরাইশ ও তার মাঝে শুধু তলোয়ারই থাকবে। তিনি তাদের কাউকে গ্রহণ করবেন না, তবে তলোয়ার যাকে গ্রহণ করে”। [আল-গায়বাহ: (পৃ.২৩৪)]
লক্ষ্য করুন শিয়াদের সকল বিদ্বেষের কেন্দ্র আরব, বিশেষ করে কুরাইশদের ওপর তাদের ক্ষোভ প্রচণ্ড?!
তাদের বর্ণনা থেকে আরো প্রমাণ হয় যে, আল-কায়েম “আরবের শত্তুরটি বংশ হত্যা করে সমূলে ধ্বংস করে দিবেন”। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (৫২/৩৩৩), টিকা নং: (১)]
এ বর্ণনার সাথে সাহেবুজ জমানের উপাধি “খসরু মাজুস” যোগ করুন। সাহেবুজ জামানের পূর্বপুরুষ ইয়াজদার তার সম্পর্কে মুসলিমদের সতর্ক করে গেছে, কারণ মুসলিমরা তাকে ও তার দলবলকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে!!
এসব ঘটনা সচেতন ব্যক্তিকে বজ্রের ন্যায় আঘাত করে..!
শৈশব থেকে আমাকে একটি ঘটনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, আমি আমার সরলতায় যা বিশ্বাস করেছি, তাতে কোন চিন্তা করেনি, সুস্থ বিবেক দ্বারা তা যাচাই করেনি।
ঘটনার সারাংশ: ইমাম হাসান আল-আসকারি “বিশির ইব্ন সুলাইমান আন-নাখ্খাস’কে ডেকে পাঠালেন, তাকে বললেন: আমি তোমাকে একটি গোপন বিষয়ে অবহিত করব, তুমি ব্যতীত কাউকে তা বলব না। অতঃপর তিনি তার জন্য টার্কি ভাষায় একটি পত্র লিখেন ও তার ওপর তার আংটির মোহর লাগান। অতঃপর তাকে দুইশত বিশ দিরহাম প্রদান করেন। আর বলেন: এ দিরহামগুলো গ্রহণ কর ও বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হও। তুমি ‘নাখ্খাসাহ’ বাজারে এক ব্যক্তিকে দেখবে, তার নাম “ওমর ইব্ন ইয়াজিদ আন-নাখ্খাস”। তার আশ-পাশে অনেক বাদি রয়েছে, একজন বাদির আকৃতি ও গঠন এরূপ –গঠনের বর্ণনা দেন-, সে পুরুষদের থেকে দূরে থাকে। তুমি যদি তাকে দেখ তার নিকট আমার পত্র দিবে।
বিশির বাগদাদে গিয়ে ইমামের কথার সত্যতা পেল। বাদিকে সে পত্র দিল, বাদি পত্র পেয়ে খুব কাঁদলো এবং ওমর ইব্ন ইয়াজিদকে বলল: আমাকে এ পত্র প্রেরকের নিকট বিক্রি করে দিন। খরিদ করে বিশির তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল, সে উত্তর দিল: “আমি রুমের বাদশাহ ইয়াশুআ ইব্ন কায়সারের মেয়ে, আমার মাতা মাসিহের ওসি শামউন ইব্ন হাম্মুন ইব্ন আস-সাফার বংশধর”!!
অতঃপর সে তাকে একটি আশ্চর্য ঘটনা বলল তার দাদা কায়সার সূত্রে। কায়সার তাকে নিজ ভাতিজার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এ বাদি স্বপ্নে দেখেছে ইসার ওসি শামউনের মেয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুহাম্মদ ‘আলাইহিস সালাম ইসা মাসিহ ‘আলাইহিস সালামের নিকট এসেছেন। স্বপ্নে এ বাদি জাহরা, মারইয়াম বিনতে ইমরান ও একহাজার জান্নাতি নারী দেখেছে। স্বপ্নে সে ইমাম হাসান আসকারিকে দেখেছে। হাসান আসকারি তাকে বলেছে: তার দাদা অতিসত্বর মুসলিমদের মোকাবিলার জন্য অমুক দিন যুদ্ধের ঘোষণা দিবেন। তখন তার দায়িত্ব হবে সাধারণ বেশভুষায় খাদেম হিসেবে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেয়া। অবাক লাগে এসব সত্ত্বেও কিভাবে সে বন্দী হল!
এ হল সাহেবুজ জমানের মায়ের ঘটনা। এমন ঘটনা সিনেমার গল্পের সাথেই মানায়। কোন মুসলিমের এ আকিদা হতে পারে না, কারণ কুরআন এসব কুসংস্কার ও এ জাতীয় বাজে গল্প থেকে মুক্ত করার জন্যই এসেছে। আর নার্গিস সাহেবুজ জমানকে কিভাবে গর্ভে ধারণ করবে, সে ঘটনা শোনার জন্য আব্বাস আল-কুম্মির বর্ণনাই যথেষ্ট, যা তিনি “মুনতাহাল আমাল” গ্রন্থে এবং অন্যান্য শিয়া আলেম বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
সাহেবুজ জামান সম্পর্কে শিয়াদের বর্ণনা: আমরা ওসিদের জমাত, আমরা পেটে জন্ম নেই না, বরং আমরা জন্ম নেই পার্শ্বে। আমরা রেহেম থেকে বের হই না, বরং আমরা আমাদের মায়েদের ডান রান থেকে বের হই। কারণ আমরা আল্লাহর নূর, যা কোন নাপাকি স্পর্শ করতে পারে না!!
নবীগণ জন্ম নেন রেহেম থেকে, আর ওসিরা রান থেকে! এসব নোংরামিতে ভরা শিয়াদের ইসলাম কখনো আল্লাহর দীন হতে পারে না?!
সাহেবুজ জমানের জন্মের বর্ণনা: যখন সায়্যেদ ‘আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেন, তার থেকে এক জ্যোতির্ময় নূর প্রকাশ পেল, যা আসমানের দিগন্ত পর্যন্ত আলোকিত করল। আমি দেখলাম সাদা পাখিগুলো আসমান থেকে অবতরণ করে পাখা দ্বারা তার মাথা, চেহারা ও শরীর মাসেহ করে উড়ে যাচ্ছে। আবু মুহাম্মদ আল-হাসান চিৎকার করে বললেন: হে ফূফূ, তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। যখন সে কাছে আসল, আমি তাকে জাড়িয়ে ধরলাম। আমি দেখলাম তার খৎনা করা, নাভির নাড় কাঁটা ও গোসল দেয়া শেষ। তার ডান বাহুতে লেখা রয়েছে: “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার বস্তু”। [মুনতাহাল আমাল, লি আব্বাস আল-কুম্মি: (২/৫৬১)]
সাহেবুজ জমানের ধর্ম ইসলাম নয়!
ইব্ন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি “আল-ইতিকাদাত” গ্রন্থে বলেন: নিশ্চয় মাহদি যখন তার অদৃশ্যতা থেকে বের হবেন, ইসলামী শরীয়তের মিরাস সংক্রান্ত বিধানগুলো রহিত করবেন। তিনি সাদেক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “শরীর সৃষ্টি করার দুই হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ ছায়ার মধ্যে রূহসমূহের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করেছেন। আমাদের কায়েম যখন বের হবেন, তখন আহলে বাইত ছায়ার মধ্যে সৃষ্ট ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে একে অপরের ওয়ারিস হবেন, জন্ম সূত্রে সৃষ্ট ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে ওয়ারিস হবেন না”। [আল-ইতিকাদাত: (পৃ.৮৩)]
তিনি তাকেই হত্যা করবেন, যার বিশ বছর পার হয়েছে কিন্তু দীনের ইলম অর্জন করেনি। [ইলামুল ওরা লিত তাবরানি: (পৃ.৪৩১), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৫২)]
সাহেবুজ জমান আলে দাউদের হুকুম মোতাবেক ফয়সালা করবেন, মুহাম্মদ কিংবা আহলে বাইতের বিধান মোতাবেক ফয়সালা করবেন না। শিয়া বর্ণনাগুলো বলে: “যখন মুহাম্মদের পরিবারে কায়েম বের হবেন, তিনি দাউদ ও সুলাইমানের বিধান মোতাবেক ফয়সালা করবেন, সাক্ষী তালাশ করবেন না”। [উসূলুল কাফি: (১/৩৯৭)] অপর বর্ণনায় এসেছে: “যখন মুহাম্মদের পরিবারে কায়েম বের হবেন, দাউদ ‘আলাইহিস সালামের বিধান মোতাবেক মানুষের মাঝে ফয়সালা করবেন, তিনি সাক্ষীর প্রয়োজন বোধ করবেন না”। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ.৪১৩), ইলামুল ওরা লিত তাবরাসি: (পৃ.৪৩৩)]
এসব মিথ্যাচারের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে জানানো যে, মাহদি কুরআন পরিত্যাগ করে তার জায়গায় অন্য কিতাব গ্রহণ করবেন। আবু বসির সূত্রে নুমানির বর্ণনা এ কথাই প্রমাণ করে, তিনি বলেন: আবু জাফর ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: “কায়েম নতুন নির্দেশ, নতুন কিতাব ও নতুন ফয়সালাসহ বের হবেন” [আল-গায়বাহ লিন নুমানি: (পৃ.১৫৪), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/৩৫৪)]... “যেন আমি তাকে দেখছি, তিনি [কাবা ঘরের] রুকন ও মাকামের মাঝখানে মানুষের কাছ থেকে নতুন কিতাবের বায়েত নিচ্ছেন”। [আল-গায়বাহ লিন নুমানি: (পৃ.১৭৬), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৩৫)]
ঘটনার সারাংশ: ইমাম হাসান আল-আসকারি “বিশির ইব্ন সুলাইমান আন-নাখ্খাস’কে ডেকে পাঠালেন, তাকে বললেন: আমি তোমাকে একটি গোপন বিষয়ে অবহিত করব, তুমি ব্যতীত কাউকে তা বলব না। অতঃপর তিনি তার জন্য টার্কি ভাষায় একটি পত্র লিখেন ও তার ওপর তার আংটির মোহর লাগান। অতঃপর তাকে দুইশত বিশ দিরহাম প্রদান করেন। আর বলেন: এ দিরহামগুলো গ্রহণ কর ও বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হও। তুমি ‘নাখ্খাসাহ’ বাজারে এক ব্যক্তিকে দেখবে, তার নাম “ওমর ইব্ন ইয়াজিদ আন-নাখ্খাস”। তার আশ-পাশে অনেক বাদি রয়েছে, একজন বাদির আকৃতি ও গঠন এরূপ –গঠনের বর্ণনা দেন-, সে পুরুষদের থেকে দূরে থাকে। তুমি যদি তাকে দেখ তার নিকট আমার পত্র দিবে।
বিশির বাগদাদে গিয়ে ইমামের কথার সত্যতা পেল। বাদিকে সে পত্র দিল, বাদি পত্র পেয়ে খুব কাঁদলো এবং ওমর ইব্ন ইয়াজিদকে বলল: আমাকে এ পত্র প্রেরকের নিকট বিক্রি করে দিন। খরিদ করে বিশির তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল, সে উত্তর দিল: “আমি রুমের বাদশাহ ইয়াশুআ ইব্ন কায়সারের মেয়ে, আমার মাতা মাসিহের ওসি শামউন ইব্ন হাম্মুন ইব্ন আস-সাফার বংশধর”!!
অতঃপর সে তাকে একটি আশ্চর্য ঘটনা বলল তার দাদা কায়সার সূত্রে। কায়সার তাকে নিজ ভাতিজার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এ বাদি স্বপ্নে দেখেছে ইসার ওসি শামউনের মেয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুহাম্মদ ‘আলাইহিস সালাম ইসা মাসিহ ‘আলাইহিস সালামের নিকট এসেছেন। স্বপ্নে এ বাদি জাহরা, মারইয়াম বিনতে ইমরান ও একহাজার জান্নাতি নারী দেখেছে। স্বপ্নে সে ইমাম হাসান আসকারিকে দেখেছে। হাসান আসকারি তাকে বলেছে: তার দাদা অতিসত্বর মুসলিমদের মোকাবিলার জন্য অমুক দিন যুদ্ধের ঘোষণা দিবেন। তখন তার দায়িত্ব হবে সাধারণ বেশভুষায় খাদেম হিসেবে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেয়া। অবাক লাগে এসব সত্ত্বেও কিভাবে সে বন্দী হল!
এ হল সাহেবুজ জমানের মায়ের ঘটনা। এমন ঘটনা সিনেমার গল্পের সাথেই মানায়। কোন মুসলিমের এ আকিদা হতে পারে না, কারণ কুরআন এসব কুসংস্কার ও এ জাতীয় বাজে গল্প থেকে মুক্ত করার জন্যই এসেছে। আর নার্গিস সাহেবুজ জমানকে কিভাবে গর্ভে ধারণ করবে, সে ঘটনা শোনার জন্য আব্বাস আল-কুম্মির বর্ণনাই যথেষ্ট, যা তিনি “মুনতাহাল আমাল” গ্রন্থে এবং অন্যান্য শিয়া আলেম বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
সাহেবুজ জামান সম্পর্কে শিয়াদের বর্ণনা: আমরা ওসিদের জমাত, আমরা পেটে জন্ম নেই না, বরং আমরা জন্ম নেই পার্শ্বে। আমরা রেহেম থেকে বের হই না, বরং আমরা আমাদের মায়েদের ডান রান থেকে বের হই। কারণ আমরা আল্লাহর নূর, যা কোন নাপাকি স্পর্শ করতে পারে না!!
নবীগণ জন্ম নেন রেহেম থেকে, আর ওসিরা রান থেকে! এসব নোংরামিতে ভরা শিয়াদের ইসলাম কখনো আল্লাহর দীন হতে পারে না?!
সাহেবুজ জমানের জন্মের বর্ণনা: যখন সায়্যেদ ‘আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেন, তার থেকে এক জ্যোতির্ময় নূর প্রকাশ পেল, যা আসমানের দিগন্ত পর্যন্ত আলোকিত করল। আমি দেখলাম সাদা পাখিগুলো আসমান থেকে অবতরণ করে পাখা দ্বারা তার মাথা, চেহারা ও শরীর মাসেহ করে উড়ে যাচ্ছে। আবু মুহাম্মদ আল-হাসান চিৎকার করে বললেন: হে ফূফূ, তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। যখন সে কাছে আসল, আমি তাকে জাড়িয়ে ধরলাম। আমি দেখলাম তার খৎনা করা, নাভির নাড় কাঁটা ও গোসল দেয়া শেষ। তার ডান বাহুতে লেখা রয়েছে: “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার বস্তু”। [মুনতাহাল আমাল, লি আব্বাস আল-কুম্মি: (২/৫৬১)]
সাহেবুজ জমানের ধর্ম ইসলাম নয়!
ইব্ন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি “আল-ইতিকাদাত” গ্রন্থে বলেন: নিশ্চয় মাহদি যখন তার অদৃশ্যতা থেকে বের হবেন, ইসলামী শরীয়তের মিরাস সংক্রান্ত বিধানগুলো রহিত করবেন। তিনি সাদেক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “শরীর সৃষ্টি করার দুই হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ ছায়ার মধ্যে রূহসমূহের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করেছেন। আমাদের কায়েম যখন বের হবেন, তখন আহলে বাইত ছায়ার মধ্যে সৃষ্ট ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে একে অপরের ওয়ারিস হবেন, জন্ম সূত্রে সৃষ্ট ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে ওয়ারিস হবেন না”। [আল-ইতিকাদাত: (পৃ.৮৩)]
তিনি তাকেই হত্যা করবেন, যার বিশ বছর পার হয়েছে কিন্তু দীনের ইলম অর্জন করেনি। [ইলামুল ওরা লিত তাবরানি: (পৃ.৪৩১), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৫২)]
সাহেবুজ জমান আলে দাউদের হুকুম মোতাবেক ফয়সালা করবেন, মুহাম্মদ কিংবা আহলে বাইতের বিধান মোতাবেক ফয়সালা করবেন না। শিয়া বর্ণনাগুলো বলে: “যখন মুহাম্মদের পরিবারে কায়েম বের হবেন, তিনি দাউদ ও সুলাইমানের বিধান মোতাবেক ফয়সালা করবেন, সাক্ষী তালাশ করবেন না”। [উসূলুল কাফি: (১/৩৯৭)] অপর বর্ণনায় এসেছে: “যখন মুহাম্মদের পরিবারে কায়েম বের হবেন, দাউদ ‘আলাইহিস সালামের বিধান মোতাবেক মানুষের মাঝে ফয়সালা করবেন, তিনি সাক্ষীর প্রয়োজন বোধ করবেন না”। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ.৪১৩), ইলামুল ওরা লিত তাবরাসি: (পৃ.৪৩৩)]
এসব মিথ্যাচারের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে জানানো যে, মাহদি কুরআন পরিত্যাগ করে তার জায়গায় অন্য কিতাব গ্রহণ করবেন। আবু বসির সূত্রে নুমানির বর্ণনা এ কথাই প্রমাণ করে, তিনি বলেন: আবু জাফর ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: “কায়েম নতুন নির্দেশ, নতুন কিতাব ও নতুন ফয়সালাসহ বের হবেন” [আল-গায়বাহ লিন নুমানি: (পৃ.১৫৪), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/৩৫৪)]... “যেন আমি তাকে দেখছি, তিনি [কাবা ঘরের] রুকন ও মাকামের মাঝখানে মানুষের কাছ থেকে নতুন কিতাবের বায়েত নিচ্ছেন”। [আল-গায়বাহ লিন নুমানি: (পৃ.১৭৬), বিহারুল আনওয়ার: (৫২/১৩৫)]
সাহেবুজ জমান কেন অদৃশ্য হলেন, তার অস্তিত্বে বিশ্বাসীরা এর উত্তরে বলেন: তার দৃশ্যে আসার কয়েকটি বাধা রয়েছে, যখন এসব বাধা দূর হলে তিনি প্রকাশ্যে আসবেন।
অতঃপর তারা মাহদির দৃশ্যে আসার বাধা হিসেবে বলেন: তার নিজের হত্যার ভয় ব্যতীত দৃশ্যে আসার কোন ভয় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ ছাড়া অন্য কোন কারণে তার অদৃশ্য হওয়া বৈধ নয়। তিনি কষ্ট ও মুসিবত সহ্য করতেন। নবী ও ইমামদের সম্মান বৃদ্ধি পায় আল্লাহর রাস্তায় তাদের কষ্ট অনুপাতে।
তার পূর্বপুরুষের জীবনী সবার নিকট জানা, তারা মানুষের সাথে ওঠা-বসা করতেন, তাদের কাউকে তারা ভয় করতেন না।
সাহেবুজ জামানে বিশ্বাসীরা কতগুলো বর্ণনা উল্লেখ করেন, যেখানে রয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার আশঙ্কা করে দাওয়াতের শুরুতে মক্কায় আত্মগোপন করে ছিলেন। এভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন থাকার ওপর কিয়াস করে সাহেবুজ জমানের গোপন থাকার যুক্তি পেশ করে। একটি বর্ণনা দেখুন, মাজলিসি বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে বলেছেন: আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পাঁচ বছর ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন, দৃশ্যে আসতেন না। তার সাথে আলি ‘আলাইহিস সালাম ও খাদিজা থাকতেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে নির্দেশ দেন: যা নির্দেশ করা হয় তা প্রকাশ্যে বলে দাও, ফলে দৃশ্যে আসেন ও তার বিষয়টি প্রকাশ করে দেন”। [বিহারুল আনওয়ার: (১৮/১৭৬)]
আল-মাজলিসি বর্ণনা করেন: আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “ওহী প্রাপ্তির পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেরো বছর মক্কায় গুজরান করেন, এতে তিন বছর আত্মগোপন করে ছিলেন প্রকাশ্যে আসতেন না, অবশেষে আল্লাহ তাকে বলেন, যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে বলে দাও। অতঃপর তিনি দাওয়াত প্রকাশ করেন”।
এ জাতীয় অনেক বর্ণনা রয়েছে, যার ভাষা প্রায় এক, সংক্ষেপের জন্য পরিত্যাগ করলাম।
অতঃপর তারা মাহদির দৃশ্যে আসার বাধা হিসেবে বলেন: তার নিজের হত্যার ভয় ব্যতীত দৃশ্যে আসার কোন ভয় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ ছাড়া অন্য কোন কারণে তার অদৃশ্য হওয়া বৈধ নয়। তিনি কষ্ট ও মুসিবত সহ্য করতেন। নবী ও ইমামদের সম্মান বৃদ্ধি পায় আল্লাহর রাস্তায় তাদের কষ্ট অনুপাতে।
তার পূর্বপুরুষের জীবনী সবার নিকট জানা, তারা মানুষের সাথে ওঠা-বসা করতেন, তাদের কাউকে তারা ভয় করতেন না।
সাহেবুজ জামানে বিশ্বাসীরা কতগুলো বর্ণনা উল্লেখ করেন, যেখানে রয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার আশঙ্কা করে দাওয়াতের শুরুতে মক্কায় আত্মগোপন করে ছিলেন। এভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন থাকার ওপর কিয়াস করে সাহেবুজ জমানের গোপন থাকার যুক্তি পেশ করে। একটি বর্ণনা দেখুন, মাজলিসি বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে বলেছেন: আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পাঁচ বছর ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন, দৃশ্যে আসতেন না। তার সাথে আলি ‘আলাইহিস সালাম ও খাদিজা থাকতেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে নির্দেশ দেন: যা নির্দেশ করা হয় তা প্রকাশ্যে বলে দাও, ফলে দৃশ্যে আসেন ও তার বিষয়টি প্রকাশ করে দেন”। [বিহারুল আনওয়ার: (১৮/১৭৬)]
আল-মাজলিসি বর্ণনা করেন: আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “ওহী প্রাপ্তির পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেরো বছর মক্কায় গুজরান করেন, এতে তিন বছর আত্মগোপন করে ছিলেন প্রকাশ্যে আসতেন না, অবশেষে আল্লাহ তাকে বলেন, যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে বলে দাও। অতঃপর তিনি দাওয়াত প্রকাশ করেন”।
এ জাতীয় অনেক বর্ণনা রয়েছে, যার ভাষা প্রায় এক, সংক্ষেপের জন্য পরিত্যাগ করলাম।
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে দাওয়াত দিয়েছেন ঠিক, কিন্তু কখনো মানুষের নজর থেকে অদৃশ্য হননি।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথীদের দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন, যেমন স্ত্রী খাদিজা, আলি ও অন্যান্য সাথীবৃন্দ, কিন্তু তাদের মাহদি এরূপ নয়।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপন থেকে দৃশ্যে এসেছেন, এ সময় তিনি দাওয়াতের প্রস্তুতি নিয়েছেন, দাওয়াতি ময়দানে সাহায্যের জন্য সাথী তৈরি করেছেন।
কিন্তু মাহদি গোপনে আছেন তার কোন সাথী বা অনুসারী নেই। শিয়া ইমামিয়ারা যদিও তার অনুসারী, বাহ্যত তারাই তার অনুসারী, যাদের সংখ্যা এখন লাখে লাখে, এ সংখ্যা কি তার দৃশ্যে আসা ও নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়?!!
উল্লেখ্য একদা আমি মাহদির অস্তিত্ব, তার বাস্তবতা ও তার অদৃশ্য হওয়ার ঘটনার ওপর এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই।
দু’গ্রুপের মধ্যে আলোচনা ছিল: এক গ্রুপ তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, অপর গ্রুপ তার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী। উভয় গ্রুপ শিয়া।
মাহদির অস্তিত্ব অস্বীকারকারী গ্রুপ এক যুক্তিতে বলল: তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম মাহদি সম্পর্কে সকল বর্ণনা ও তার অদৃশ্যে যাওয়ার ঘটনা সত্য। তবে এ কথাও সত্য যে, ঐ সময় তার অদৃশ্যে যাওয়ার কারণ আব্বাসীদের হাতে তার মৃত্যুর আশঙ্কা। কিন্তু মাহদি এখন কেন দৃশ্যে আসছেন না টেলিভিশন, বেতার ও ইন্টারনেটের পর্দায়, অন্তত পক্ষে অডিও, সিডি ও ভিসিডির মাধ্যমে। যেমন অধিকাংশ বিদ্রোহী ও পলাতক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে ঘটে, শাসকগণ যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। যারা তার সাথে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাতের দাবি করে তাদের হাতে কেন এসব তিনি দেননা, যেন বিশ্ববাসী জেনে যায়। অন্তত যারা তাকে অস্বীকার করে তাদেরকে জানানোর জন্য হলেও এটা করা জরুরী। তাহলে মানুষ জেনে নিত, তিনি শুধু স্বপ্নের জগত বা ধারণার বস্তু নন, তার বিশ্বাস কুসংস্কার ও মিথ্যা নয়, বরং সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথীদের দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন, যেমন স্ত্রী খাদিজা, আলি ও অন্যান্য সাথীবৃন্দ, কিন্তু তাদের মাহদি এরূপ নয়।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপন থেকে দৃশ্যে এসেছেন, এ সময় তিনি দাওয়াতের প্রস্তুতি নিয়েছেন, দাওয়াতি ময়দানে সাহায্যের জন্য সাথী তৈরি করেছেন।
কিন্তু মাহদি গোপনে আছেন তার কোন সাথী বা অনুসারী নেই। শিয়া ইমামিয়ারা যদিও তার অনুসারী, বাহ্যত তারাই তার অনুসারী, যাদের সংখ্যা এখন লাখে লাখে, এ সংখ্যা কি তার দৃশ্যে আসা ও নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়?!!
উল্লেখ্য একদা আমি মাহদির অস্তিত্ব, তার বাস্তবতা ও তার অদৃশ্য হওয়ার ঘটনার ওপর এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই।
দু’গ্রুপের মধ্যে আলোচনা ছিল: এক গ্রুপ তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, অপর গ্রুপ তার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী। উভয় গ্রুপ শিয়া।
মাহদির অস্তিত্ব অস্বীকারকারী গ্রুপ এক যুক্তিতে বলল: তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম মাহদি সম্পর্কে সকল বর্ণনা ও তার অদৃশ্যে যাওয়ার ঘটনা সত্য। তবে এ কথাও সত্য যে, ঐ সময় তার অদৃশ্যে যাওয়ার কারণ আব্বাসীদের হাতে তার মৃত্যুর আশঙ্কা। কিন্তু মাহদি এখন কেন দৃশ্যে আসছেন না টেলিভিশন, বেতার ও ইন্টারনেটের পর্দায়, অন্তত পক্ষে অডিও, সিডি ও ভিসিডির মাধ্যমে। যেমন অধিকাংশ বিদ্রোহী ও পলাতক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে ঘটে, শাসকগণ যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। যারা তার সাথে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাতের দাবি করে তাদের হাতে কেন এসব তিনি দেননা, যেন বিশ্ববাসী জেনে যায়। অন্তত যারা তাকে অস্বীকার করে তাদেরকে জানানোর জন্য হলেও এটা করা জরুরী। তাহলে মানুষ জেনে নিত, তিনি শুধু স্বপ্নের জগত বা ধারণার বস্তু নন, তার বিশ্বাস কুসংস্কার ও মিথ্যা নয়, বরং সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ।
১৮
শিয়ারা কেন তাদের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মদ হুসাইন ফদলুল্লার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল?! [শিয়াদের কেন্দ্রবিন্দু লুবনানি প্রখ্যাত আলেম, দুনিয়ার সর্বত্র তার অনুসারী রয়েছে।]বর্তমান শিয়াদের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী দেখবে যে, তাদের মধ্যে খুব দীর্ঘ ও গভীর থেকে জাগরণ আরম্ভ হয়েছে... কিন্তু বেশী দীর্ঘ হবে না।
সুখের সংবাদ শিয়া মাজহাবের কট্টরপন্থীগণ সেসব বর্ণনা যাচাই ও গবেষণা শুরু করেছেন, যা তাজিয়ার পাঠকবর্গ পড়েন, হুসাইনী মিম্বারের খতিব, কট্টর শিয়া যুবক ও শিয়া আলেমগণ বিনা বিচার ও বিনা গবেষণায় মেনে নেন ও প্রচার করেন। তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ইতোপূর্বে জেগেছেন [আয়াতুল্লাহ আল-উজমা আবুল ফজল আল-বারকিয়ী], [আহমদ আল-কাসরুবি], [আল্লামা আল-খুয়াইনী], [ড. মুসা মুসাবি], [মুহাম্মদ আল-ইয়াসিরি], [আহমদ আল-কাতেব] এবং বর্তমান জেগেছেন [আয়াতুল্লাহ আল-উজমা মুহাম্মদ হুসাইন ফদলুল্লাহ]।
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ দেখেছেন যে, আকিদা ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট কতক তথ্য, শৈশব থেকে যার পক্ষে তিনি প্রতিবাদ করতেন, যার ব্যাখ্যা দিতেন, যার দিকে তিনি আহ্বান করতেন, তা বাস্তবতার নিরিখে উঁচুমানের নয়। অথচ তিনি শিয়াদের ইলমের কেন্দ্র ও বড় আলেম!
সায়্যেদ ফদলুল্লাহ ইতিহাসের একটি বিষয় গবেষণা ও নিরিক্ষা শেষে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ফাতেমার ওপর হামলা সম্পর্কে যা বর্ণনা করা হয়, যেমন তাকে আঘাত করা, তার পেটের বাচ্চা ফেলে দেয়া প্রভৃতির সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই।
এ স্পষ্ট ঘোষণার কারণে তিনি প্রতিপক্ষ থেকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন, তাকে গোমরাহ বরং কাফের বলে ফতোয়া প্রচার করা হয়েছিল!
ফাতেমাতুজ জাহরার ওপর হামলা সম্পর্কে কথিত বর্ণনার সমালোচনা করে সায়্যেদ ফদলুল্লাহ বলেন: “তোমার করণীয় কি হবে, যদি কেউ এসে তোমার স্ত্রীর ওপর হামলা করে, তাকে মারতে চায়? তুমি ঘরে বসে শুধু বলবে: لاحول ولاقوة إلا بالله অথবা তোমার স্ত্রীকে আঘাত করতে আসা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে?!
বাহাদুরদের পরাস্তকারী আলি ইব্ন আবি তালেব ‘আলাইহিস সালাম কতিপয় লোককে চোখের সামনে ফাতেমাতুজ জাহরার ওপর হামলা করার সুযোগ দিবেন, আর তিনি ঘরে বসে বলবেন: لاحول ولاقوة إلا بالله العلي العظيم তোমাদের কেউ নিজের ব্যাপারে এরূপ সহ্য করবে?! কেউ না...” [আল-হাউজাতুল ইলমিয়াহ তুদিনুল ইনহিরাফ: (পৃ.২৭-২৮)]
তিনি বলেন: “জাহরা কেন দরজা খুলবেন... তুমি যখন ঘরে থাক, তোমার স্ত্রীও ঘরে থাকে, এমতাবস্থায় কেউ দরজায় নক করল, বিশেষ করে তোমাকে বন্দি করার জন্য যদি আইনের লোক আসে, তোমার স্ত্রীকে তুমি বলবে: তুমি বের হও?... অর্থাৎ ইমাম আলি ভীরু, তার নিকট কোন অহমিকা নেই?! তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খিলাফতের ব্যাপারে ঝগড়া না করা ওসিয়ত করেছেন, কিন্তু তাকে তো স্ত্রীর ওপর হামলাকারীকে প্রতিহত করতে নিষেধ করেননি”! [আল-হাউজাতুল ইলমিয়াহ তুদিনুল ইনহিরাফ: (পৃ.২৭-২৮)]
তিনি আকিদার বিষয়ে কিতাব ও সুন্নাহতে গভীর গবেষণা পর উদাত্তকণ্ঠে সাহসী ঘোষণা দেন যে, ইসলাম বিশুদ্ধ বা বান্দার আমল কবুল হওয়ার জন্য ইমামত শর্ত নয়। এটা এক দৃষ্টিভঙ্গি কতক মুসলিমের নিকট অগ্রাধিকার পেয়েছে কতকের নিকট পায়নি। ইমামত ইজতেহাদি বিষয় সবল ও দুর্বল উভয় হতে পারে।
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ ইমামদের ইলমে গায়েব জানার বিষয়ে সমালোচনা করে আরেকটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর তাফসীরে বলেন:
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
বল, ‘তোমাদেরকে আমি বলি না, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে এবং আমি গায়েব জানি না এবং তোমাদেরকে বলি না, নিশ্চয় আমি ফেরেশতা। আমি কেবল তাই অনুসরণ করি যা আমার কাছে ওহী প্রেরণ করা হয়’। বল ‘অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না’?
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ বলেছেন এ আয়াত স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমে গায়েবের মালিক ছিলেন না। আল্লাহ তা‘আলা রাসূল থেকে চাননি যে, তিনি ইলমে গায়েবের অধিকারী হয়ে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় বলে দিবেন, তাদের প্রত্যেকের সামনে কি অপেক্ষা করছে বলে দিবেন। অধিকাংশ শিয়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যাদুকরের মত মনে করে। [তাফসির মিন ওয়াহইল কুরআন, সূরা আনআন: (৫০)]
দুঃখের বিষয় এসব গবেষণা তাদের অন্তর নাড়া দেয়নি যে, তারা কান লাগিয়ে শুনবে, বিবেক জাগ্রত করেনি যে, তাতে চিন্তা করবে। সায়্যেদ ফদলুল্লাহ দীর্ঘ গবেষণা ও প্রচুর অনুসন্ধান করে খুব শান্ত মেজাজ ও স্থির চিত্তে তার ফলাফল বের করার চেষ্টা করেছেন, বরং তিনি এসব গবেষণা প্রকাশের সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করে যেমন পরিচিতি পেয়েছেন, তেমন গোমরাহ হওয়ার খেতাবও লাভ করেছেন!
সুখের সংবাদ শিয়া মাজহাবের কট্টরপন্থীগণ সেসব বর্ণনা যাচাই ও গবেষণা শুরু করেছেন, যা তাজিয়ার পাঠকবর্গ পড়েন, হুসাইনী মিম্বারের খতিব, কট্টর শিয়া যুবক ও শিয়া আলেমগণ বিনা বিচার ও বিনা গবেষণায় মেনে নেন ও প্রচার করেন। তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ইতোপূর্বে জেগেছেন [আয়াতুল্লাহ আল-উজমা আবুল ফজল আল-বারকিয়ী], [আহমদ আল-কাসরুবি], [আল্লামা আল-খুয়াইনী], [ড. মুসা মুসাবি], [মুহাম্মদ আল-ইয়াসিরি], [আহমদ আল-কাতেব] এবং বর্তমান জেগেছেন [আয়াতুল্লাহ আল-উজমা মুহাম্মদ হুসাইন ফদলুল্লাহ]।
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ দেখেছেন যে, আকিদা ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট কতক তথ্য, শৈশব থেকে যার পক্ষে তিনি প্রতিবাদ করতেন, যার ব্যাখ্যা দিতেন, যার দিকে তিনি আহ্বান করতেন, তা বাস্তবতার নিরিখে উঁচুমানের নয়। অথচ তিনি শিয়াদের ইলমের কেন্দ্র ও বড় আলেম!
সায়্যেদ ফদলুল্লাহ ইতিহাসের একটি বিষয় গবেষণা ও নিরিক্ষা শেষে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ফাতেমার ওপর হামলা সম্পর্কে যা বর্ণনা করা হয়, যেমন তাকে আঘাত করা, তার পেটের বাচ্চা ফেলে দেয়া প্রভৃতির সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই।
এ স্পষ্ট ঘোষণার কারণে তিনি প্রতিপক্ষ থেকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন, তাকে গোমরাহ বরং কাফের বলে ফতোয়া প্রচার করা হয়েছিল!
ফাতেমাতুজ জাহরার ওপর হামলা সম্পর্কে কথিত বর্ণনার সমালোচনা করে সায়্যেদ ফদলুল্লাহ বলেন: “তোমার করণীয় কি হবে, যদি কেউ এসে তোমার স্ত্রীর ওপর হামলা করে, তাকে মারতে চায়? তুমি ঘরে বসে শুধু বলবে: لاحول ولاقوة إلا بالله অথবা তোমার স্ত্রীকে আঘাত করতে আসা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে?!
বাহাদুরদের পরাস্তকারী আলি ইব্ন আবি তালেব ‘আলাইহিস সালাম কতিপয় লোককে চোখের সামনে ফাতেমাতুজ জাহরার ওপর হামলা করার সুযোগ দিবেন, আর তিনি ঘরে বসে বলবেন: لاحول ولاقوة إلا بالله العلي العظيم তোমাদের কেউ নিজের ব্যাপারে এরূপ সহ্য করবে?! কেউ না...” [আল-হাউজাতুল ইলমিয়াহ তুদিনুল ইনহিরাফ: (পৃ.২৭-২৮)]
তিনি বলেন: “জাহরা কেন দরজা খুলবেন... তুমি যখন ঘরে থাক, তোমার স্ত্রীও ঘরে থাকে, এমতাবস্থায় কেউ দরজায় নক করল, বিশেষ করে তোমাকে বন্দি করার জন্য যদি আইনের লোক আসে, তোমার স্ত্রীকে তুমি বলবে: তুমি বের হও?... অর্থাৎ ইমাম আলি ভীরু, তার নিকট কোন অহমিকা নেই?! তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খিলাফতের ব্যাপারে ঝগড়া না করা ওসিয়ত করেছেন, কিন্তু তাকে তো স্ত্রীর ওপর হামলাকারীকে প্রতিহত করতে নিষেধ করেননি”! [আল-হাউজাতুল ইলমিয়াহ তুদিনুল ইনহিরাফ: (পৃ.২৭-২৮)]
তিনি আকিদার বিষয়ে কিতাব ও সুন্নাহতে গভীর গবেষণা পর উদাত্তকণ্ঠে সাহসী ঘোষণা দেন যে, ইসলাম বিশুদ্ধ বা বান্দার আমল কবুল হওয়ার জন্য ইমামত শর্ত নয়। এটা এক দৃষ্টিভঙ্গি কতক মুসলিমের নিকট অগ্রাধিকার পেয়েছে কতকের নিকট পায়নি। ইমামত ইজতেহাদি বিষয় সবল ও দুর্বল উভয় হতে পারে।
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ ইমামদের ইলমে গায়েব জানার বিষয়ে সমালোচনা করে আরেকটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর তাফসীরে বলেন:
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
বল, ‘তোমাদেরকে আমি বলি না, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে এবং আমি গায়েব জানি না এবং তোমাদেরকে বলি না, নিশ্চয় আমি ফেরেশতা। আমি কেবল তাই অনুসরণ করি যা আমার কাছে ওহী প্রেরণ করা হয়’। বল ‘অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না’?
সাইয়্যেদ ফদলুল্লাহ বলেছেন এ আয়াত স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমে গায়েবের মালিক ছিলেন না। আল্লাহ তা‘আলা রাসূল থেকে চাননি যে, তিনি ইলমে গায়েবের অধিকারী হয়ে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় বলে দিবেন, তাদের প্রত্যেকের সামনে কি অপেক্ষা করছে বলে দিবেন। অধিকাংশ শিয়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যাদুকরের মত মনে করে। [তাফসির মিন ওয়াহইল কুরআন, সূরা আনআন: (৫০)]
দুঃখের বিষয় এসব গবেষণা তাদের অন্তর নাড়া দেয়নি যে, তারা কান লাগিয়ে শুনবে, বিবেক জাগ্রত করেনি যে, তাতে চিন্তা করবে। সায়্যেদ ফদলুল্লাহ দীর্ঘ গবেষণা ও প্রচুর অনুসন্ধান করে খুব শান্ত মেজাজ ও স্থির চিত্তে তার ফলাফল বের করার চেষ্টা করেছেন, বরং তিনি এসব গবেষণা প্রকাশের সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করে যেমন পরিচিতি পেয়েছেন, তেমন গোমরাহ হওয়ার খেতাবও লাভ করেছেন!
এসব কারণ ও অন্যান্য বাস্তবতার জন্য আমার ওপর জরুরী ছিল সত্যের অনুসরণ করা, যা উল্লেখ করার সুযোগ এখানে নেই। অতঃপর কয়েক বছর আমার নিজের সাথে দ্বন্দ্বে থাকার পর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছি।
আমি নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না কিভাবে বলি: আমি শিয়া বার ইমামিয়্যাহ, কিন্তু তখনো কি আমার বিশ্বাস শিয়া বার ইমামিয়াদের মত ছিল না, অবশ্যই ছিল..!
তাই আমার জন্য একটি বেছে নেয়া জরুরী হল... কারণ ইসলাম আকিদার ক্ষেত্রে ছাই রং বিশ্বাস করে না। আমি হয় সত্য অনুসরণ করব, অন্যথায় ভ্রান্তদের দলে থাকব।
আমি চূড়ান্তভাবে চিন্তা করলাম... আমি যদি আমার বেড়ে ওঠা আকিদা ত্যাগ করে অন্য আকিদা গ্রহণ করি, যার স্বপক্ষে রয়েছে দলিল, প্রমাণ এবং যা স্বভাব ও আখলাকের দাবি, তাহলে কি হারাব?
আমি গ্রহণ করলাম, কিছুই হারাইনি, বরং লাভ করেছি!
হ্যাঁ... আমি সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকে হারাইনি। কারণ আমি জেনেছি সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইত এক শরীরে এক রূহের মত।
আমি একাই এ পথ গ্রহণ করিনি, বরং আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টির আশায় অনেকে এ পথ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর নিম্নের বাণীকে নিজেদের মশাল হিসেবে গ্রহণ করেছেন:
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [ طه : ٨٢ ]
“আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে বলতে থাকে”। [সূরা তাহা: (৮২)]
আমি নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না কিভাবে বলি: আমি শিয়া বার ইমামিয়্যাহ, কিন্তু তখনো কি আমার বিশ্বাস শিয়া বার ইমামিয়াদের মত ছিল না, অবশ্যই ছিল..!
তাই আমার জন্য একটি বেছে নেয়া জরুরী হল... কারণ ইসলাম আকিদার ক্ষেত্রে ছাই রং বিশ্বাস করে না। আমি হয় সত্য অনুসরণ করব, অন্যথায় ভ্রান্তদের দলে থাকব।
আমি চূড়ান্তভাবে চিন্তা করলাম... আমি যদি আমার বেড়ে ওঠা আকিদা ত্যাগ করে অন্য আকিদা গ্রহণ করি, যার স্বপক্ষে রয়েছে দলিল, প্রমাণ এবং যা স্বভাব ও আখলাকের দাবি, তাহলে কি হারাব?
আমি গ্রহণ করলাম, কিছুই হারাইনি, বরং লাভ করেছি!
হ্যাঁ... আমি সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকে হারাইনি। কারণ আমি জেনেছি সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইত এক শরীরে এক রূহের মত।
আমি একাই এ পথ গ্রহণ করিনি, বরং আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টির আশায় অনেকে এ পথ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর নিম্নের বাণীকে নিজেদের মশাল হিসেবে গ্রহণ করেছেন:
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [ طه : ٨٢ ]
“আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে বলতে থাকে”। [সূরা তাহা: (৮২)]
কাজেমির অবস্থা ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক হতে থাকায় তার পরিবার খুব উদ্বিগ্ন হল। তারা বুঝল সে মৃত্যুকে ভয় করছে, সে অতিশীঘ্র মারা যাবে, কিন্তু সে মরতে চায় না। তার ঘুম কম, খানা কম, ডাক্তাররা তার চিকিৎসায় অপারগ। শিয়া মাশায়েখ ও মোল্লারা পর্যন্ত তার চিকিৎসায় অপারগ। তাদের ধারণা তাকে জিনে আসর করেছে। শিয়া মাশায়েখ ও মোল্লাদের পেছনে তার পরিবার অনেক টাকা নষ্ট করেছে, তারা তাদের ধারণা মত তার চিকিৎসা করত। ভাই ‘সলাহ’ বলেন, তাদের চিকিৎসা ছিল অভিনব, কেউ তাবিজ, কেউ ভৈল্কিবাজি প্রভৃতি দ্বারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা করত। কিন্তু তাদের কাউকে কুরআন দ্বারা চিকিৎসা করতে দেখিনি।
অতঃপর জনৈক শিয়া কুরআন পড়ে তার ওপর দম করার জন্য সুন্নী শায়খের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দিল। এভাবে বলল যে, সুন্নীদের শ্বাস শিয়াদের চিকিৎসা স্বরূপ। কারণ শিয়াদের বিশ্বাস: “শয়তান শয়তানের দ্বারা বিতাড়িত হয়”।
অতঃপর সে তার বাড়ির পাশে অবস্থিত ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট গেল। যখন ইমাম সাহেব তার ওপর দম করল, ভাই ‘সালাহ’ আয়াত শ্রবণ করে অন্তরে প্রশান্তি, স্বস্তি ও প্রসন্নতা অনুভব করলেন।
শায়খ তিলাওয়াত শেষ করলেন, ভাই ‘সালাহ’ পূর্ণ নীরব। কোন কথা নেই, একটি শব্দও নয়, শুধু মসজিদে বসে আছেন তিনি। কারণ মসজিদের পরিবেশ তাকে আরাম ও শান্তি দিচ্ছিল। যখন সালাতের সময় হল মুয়াজ্জিন আযান দিলেন। এ দিকে ভাই ‘সালাহ’ চোখে চোখে মুসল্লিদের পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তারা ইকামত পর্যন্ত মসজিদে আসছেই। চিন্তা না করে মসজিদে ঢুকে তাদের সাথে সালাত আদায় করলেন। দ্বিতীয় দিন সালাতের সময় মসজিদে ভাই ‘সালাহ’ এর উপস্থিতি দেখে ইমাম সাহেব আশ্চর্য হলেন। ইমাম সাহেব যখন তার হালত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন: আল-হামদুলিল্লাহ, আমার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল।
‘সালাহ’ লক্ষ্য করলেন আহলে সুন্নাহ কুরআনের নিকটবর্তী। তিনি মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি সম্মান, ইসলামের নিদর্শনের প্রতি সম্মান, সঠিক সময়ে জমাতের সাথে সালাত আদায় করা ইত্যাদি দেখলেন। তিনি দেখলেন তাদের মিম্বারের খুৎবাগুলো আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনে পরিপূর্ণ। শিয়াদের খুৎবাগুলো এরূপ নয়, যাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ আহলে বাইতের সম্মান ও ইমামদের জীবনী আলোচনা করা কুরআনের আলোকে।
তিনি আমাকে বলেন, কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য তিনি মসজিদে বসতেন। তিনি আমাকে বললেন কুরআন তিলাওয়াত ও গবেষণার প্রতি কিভাবে সে মনোযোগী হল, ইমাম সাহেব কিভাবে তার অন্তরে ইমানের বীজ বপন করলেন।
‘সালাহ’ মসজিদে আসা-যাওয়া অব্যাহত রাখল... তার পরিচিত কতক শিয়া তার অবস্থা দেখল। তারা তাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বুঝানোর সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু তিনি তাদের কথায় সায় দিলেন না। তিনি তাদেরকে বললেন: আমি যখন আহলে সুন্নাহর সাথে সালাত আদায় করি, তখন নিজেকে প্রসন্ন ও প্রফুল্ল মনে করি। বিশেষ করে আমি যখন জাহেরি সালাতে ইমামের কিরাত শ্রবণ করি।
তার ভুল শোধরানোর জন্য তারা কালো পাগড়ীধারী কতিপয় শিয়া আলেম উপস্থিত করল। তাদের বুঝানোর ফাঁকে কতক মাসআলা নিয়ে ‘সালেহ’ তাদের সাথে আলোচনা করেন। তার সাথে তারা একাধিকবার বসল... এক পর্যায়ে তাদের সামনে বিভিন্ন ইখতিলাফি মাসআলা পেশ করলেন। কুরআন বিকৃতি করা, শিয়াদের কুরআন ও কুরআনের ইলমের ওপর গুরুত্ব না দেয়ার বিষয় উত্থাপন করলেন। [এ বিষয়ে আলি খামেনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেন: “আমাদের শিক্ষিত সমাজের কুরআন থেকে বিরত থাকা এবং কুরআনকে যথেষ্ট মনে না করার ফলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার কারণ হয়েছে। কুরআন থেকে দূরত্ব আমাদেরকে সংকীর্ণতায় ফেলে দিবে।”তিনি আরো বলেন: “সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আমাদের নিকট ইজতিহাদের স্বীকৃতির জন্য গবেষণার শুরু ও তার ধারাবাহিকতায় একবারের জন্য কুরআন না দেখলেও চলে! এরূপ কেন?! এর কারণ আমাদের পাঠগুলো কুরআন নির্ভর নয়...”তিনি আরো বলেন: “আমাদের শিক্ষিত সমাজে কেউ যখন শিক্ষার স্বীকৃতি অর্জন করতে চায়, তার উচিত কুরআনের ব্যাখ্যায় না যাওয়া, যেন কেউ তাকে মূর্খতার অপবাদ না দেয়। যেমন কোন মুফাসসির আলেম যার তাফসির থেকে মানুষ উপকৃত হয়, তার দিকে আমাদের ইলমি সমাজ এমনভাবে দৃষ্টি দেয় যেন সে মূর্খ, তার ইলমী কোন যোগ্যতা নেই। এ জন্য তারা তার দরস ত্যাগ করতে বাধ্য হন... এটা কি আপনি বড় মুসিবত মনে করেন না?! “আল-হাওজাতুল ইলমিয়াহ ফি ফিকরিল ইমাম আল-খামেনিয়ী: (পৃ.১০০-১০১)] শিয়াদের প্রমাণ্য গ্রন্থের উদ্ধৃতি দ্বারা প্রমাণ করলেন যে, শিয়ারা সাহাবীদের কুরআন বিকৃতি করার অপবাদ দেয়। [মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি “মিরআতুল উকুল” গ্রন্থে এক হাদিস উল্লেখ করে বলেন: “নিশ্চয় জিবরিল আলাইহিস যে কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসেছেন তার আয়াত সংখ্যা সাত হাজার”। তারপর বলেন: “নির্ভরযোগ্য, কতক নুসখায় রয়েছে হিশাম ইব্ন সালেমের জায়গায় হারুন ইব্ন সালেম, তবে সংবাদ বিশুদ্ধ। এতে সন্দেহ নেই যে, এ সংবাদ ও অন্যান্য সহিহ সংবাদ প্রমাণ করে যে, কুরআনের মধ্যে ত্রুটি ও পরিবর্তন রয়েছে...” এ বিষয়ে আরো বর্ণনা রয়েছে, অতিরিক্ত দেখার জন্য আপনি দেখুন: “শিয়া ও তাহরিফুল কুরআন লি মুহাম্মদ সাইফ”। অথবা দেখুন: “আরা হাওলাল কুরআন লি আয়াতুল্লাহ আল-ফানি আল-স্পাহানি” সেখানে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির তৃপ্তির যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।] তারা ‘সালেহ’-র সাথে আলোচনা থেকে পিছু হটল ও প্রমাণ ব্যতীত অস্বীকার করার পথ অনুসরণ করল।
ভাই ‘সালাহ’-র আহলে সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন দেখে তার পরিবার অবাক হল! এ জন্য তার শিয়া পরিবার ও সাথীগণ রাগান্বিত হল। কিন্তু তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টিকে মানুষের সন্তুষ্টির ওপর প্রাধান্য দিলেন। আজ তিনি আল্লাহর হিদায়েত লাভ করে আনন্দিত। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে তিনি চান দান করেন।
বর্তমান আবু আব্দুর রহমান ‘সালাহ’ ইলম অন্বেষণকারী, আল্লাহ তাকে ইলম প্রদান করুন ও তার মকাম বৃদ্ধি করুন।
অতঃপর জনৈক শিয়া কুরআন পড়ে তার ওপর দম করার জন্য সুন্নী শায়খের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দিল। এভাবে বলল যে, সুন্নীদের শ্বাস শিয়াদের চিকিৎসা স্বরূপ। কারণ শিয়াদের বিশ্বাস: “শয়তান শয়তানের দ্বারা বিতাড়িত হয়”।
অতঃপর সে তার বাড়ির পাশে অবস্থিত ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট গেল। যখন ইমাম সাহেব তার ওপর দম করল, ভাই ‘সালাহ’ আয়াত শ্রবণ করে অন্তরে প্রশান্তি, স্বস্তি ও প্রসন্নতা অনুভব করলেন।
শায়খ তিলাওয়াত শেষ করলেন, ভাই ‘সালাহ’ পূর্ণ নীরব। কোন কথা নেই, একটি শব্দও নয়, শুধু মসজিদে বসে আছেন তিনি। কারণ মসজিদের পরিবেশ তাকে আরাম ও শান্তি দিচ্ছিল। যখন সালাতের সময় হল মুয়াজ্জিন আযান দিলেন। এ দিকে ভাই ‘সালাহ’ চোখে চোখে মুসল্লিদের পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তারা ইকামত পর্যন্ত মসজিদে আসছেই। চিন্তা না করে মসজিদে ঢুকে তাদের সাথে সালাত আদায় করলেন। দ্বিতীয় দিন সালাতের সময় মসজিদে ভাই ‘সালাহ’ এর উপস্থিতি দেখে ইমাম সাহেব আশ্চর্য হলেন। ইমাম সাহেব যখন তার হালত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন: আল-হামদুলিল্লাহ, আমার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল।
‘সালাহ’ লক্ষ্য করলেন আহলে সুন্নাহ কুরআনের নিকটবর্তী। তিনি মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি সম্মান, ইসলামের নিদর্শনের প্রতি সম্মান, সঠিক সময়ে জমাতের সাথে সালাত আদায় করা ইত্যাদি দেখলেন। তিনি দেখলেন তাদের মিম্বারের খুৎবাগুলো আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনে পরিপূর্ণ। শিয়াদের খুৎবাগুলো এরূপ নয়, যাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ আহলে বাইতের সম্মান ও ইমামদের জীবনী আলোচনা করা কুরআনের আলোকে।
তিনি আমাকে বলেন, কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য তিনি মসজিদে বসতেন। তিনি আমাকে বললেন কুরআন তিলাওয়াত ও গবেষণার প্রতি কিভাবে সে মনোযোগী হল, ইমাম সাহেব কিভাবে তার অন্তরে ইমানের বীজ বপন করলেন।
‘সালাহ’ মসজিদে আসা-যাওয়া অব্যাহত রাখল... তার পরিচিত কতক শিয়া তার অবস্থা দেখল। তারা তাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বুঝানোর সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু তিনি তাদের কথায় সায় দিলেন না। তিনি তাদেরকে বললেন: আমি যখন আহলে সুন্নাহর সাথে সালাত আদায় করি, তখন নিজেকে প্রসন্ন ও প্রফুল্ল মনে করি। বিশেষ করে আমি যখন জাহেরি সালাতে ইমামের কিরাত শ্রবণ করি।
তার ভুল শোধরানোর জন্য তারা কালো পাগড়ীধারী কতিপয় শিয়া আলেম উপস্থিত করল। তাদের বুঝানোর ফাঁকে কতক মাসআলা নিয়ে ‘সালেহ’ তাদের সাথে আলোচনা করেন। তার সাথে তারা একাধিকবার বসল... এক পর্যায়ে তাদের সামনে বিভিন্ন ইখতিলাফি মাসআলা পেশ করলেন। কুরআন বিকৃতি করা, শিয়াদের কুরআন ও কুরআনের ইলমের ওপর গুরুত্ব না দেয়ার বিষয় উত্থাপন করলেন। [এ বিষয়ে আলি খামেনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেন: “আমাদের শিক্ষিত সমাজের কুরআন থেকে বিরত থাকা এবং কুরআনকে যথেষ্ট মনে না করার ফলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার কারণ হয়েছে। কুরআন থেকে দূরত্ব আমাদেরকে সংকীর্ণতায় ফেলে দিবে।”তিনি আরো বলেন: “সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আমাদের নিকট ইজতিহাদের স্বীকৃতির জন্য গবেষণার শুরু ও তার ধারাবাহিকতায় একবারের জন্য কুরআন না দেখলেও চলে! এরূপ কেন?! এর কারণ আমাদের পাঠগুলো কুরআন নির্ভর নয়...”তিনি আরো বলেন: “আমাদের শিক্ষিত সমাজে কেউ যখন শিক্ষার স্বীকৃতি অর্জন করতে চায়, তার উচিত কুরআনের ব্যাখ্যায় না যাওয়া, যেন কেউ তাকে মূর্খতার অপবাদ না দেয়। যেমন কোন মুফাসসির আলেম যার তাফসির থেকে মানুষ উপকৃত হয়, তার দিকে আমাদের ইলমি সমাজ এমনভাবে দৃষ্টি দেয় যেন সে মূর্খ, তার ইলমী কোন যোগ্যতা নেই। এ জন্য তারা তার দরস ত্যাগ করতে বাধ্য হন... এটা কি আপনি বড় মুসিবত মনে করেন না?! “আল-হাওজাতুল ইলমিয়াহ ফি ফিকরিল ইমাম আল-খামেনিয়ী: (পৃ.১০০-১০১)] শিয়াদের প্রমাণ্য গ্রন্থের উদ্ধৃতি দ্বারা প্রমাণ করলেন যে, শিয়ারা সাহাবীদের কুরআন বিকৃতি করার অপবাদ দেয়। [মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি “মিরআতুল উকুল” গ্রন্থে এক হাদিস উল্লেখ করে বলেন: “নিশ্চয় জিবরিল আলাইহিস যে কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসেছেন তার আয়াত সংখ্যা সাত হাজার”। তারপর বলেন: “নির্ভরযোগ্য, কতক নুসখায় রয়েছে হিশাম ইব্ন সালেমের জায়গায় হারুন ইব্ন সালেম, তবে সংবাদ বিশুদ্ধ। এতে সন্দেহ নেই যে, এ সংবাদ ও অন্যান্য সহিহ সংবাদ প্রমাণ করে যে, কুরআনের মধ্যে ত্রুটি ও পরিবর্তন রয়েছে...” এ বিষয়ে আরো বর্ণনা রয়েছে, অতিরিক্ত দেখার জন্য আপনি দেখুন: “শিয়া ও তাহরিফুল কুরআন লি মুহাম্মদ সাইফ”। অথবা দেখুন: “আরা হাওলাল কুরআন লি আয়াতুল্লাহ আল-ফানি আল-স্পাহানি” সেখানে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির তৃপ্তির যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।] তারা ‘সালেহ’-র সাথে আলোচনা থেকে পিছু হটল ও প্রমাণ ব্যতীত অস্বীকার করার পথ অনুসরণ করল।
ভাই ‘সালাহ’-র আহলে সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন দেখে তার পরিবার অবাক হল! এ জন্য তার শিয়া পরিবার ও সাথীগণ রাগান্বিত হল। কিন্তু তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টিকে মানুষের সন্তুষ্টির ওপর প্রাধান্য দিলেন। আজ তিনি আল্লাহর হিদায়েত লাভ করে আনন্দিত। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে তিনি চান দান করেন।
বর্তমান আবু আব্দুর রহমান ‘সালাহ’ ইলম অন্বেষণকারী, আল্লাহ তাকে ইলম প্রদান করুন ও তার মকাম বৃদ্ধি করুন।
তিনি ‘জাদ্দে হাফস’ শহরে বাস করতেন, তখনো মানামাহ শহরে বাহরাইনের রাজধানী স্থানান্তর করা হয়নি। তিনি ছিলেন সবজি বিক্রেতা। তিনজন আহলে সুন্নার সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক।
একদা তাদের মাঝে শিয়াদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে গালি ও অপবাদ দেয়ার আলোচনা ওঠে। তিনি তা অস্বীকার করতে পারেননি। তিনি স্পষ্ট বললেন: আমরা শিয়ারা তাকে ঘৃণা করি, তাকে অপছন্দ করি, তাকে গালি দেই ও তাকে লানত করি, সে নাসেবিয়াহ। [ইব্ন রজব আল-বুরসি “মাশারিকুল আনওয়ার: (পৃ.৮৬) গ্রন্থে বলেন: “আয়েশা খিয়ানত করে চল্লিশ দিনার জমা করেছিল, অর্থাৎ যেনা” আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।] আমরা বিশ্বাস করি সে জাহান্নামী। তাদের একজন তাকে বলল, আপনি আল্লাহর বাণী শোনেননি:
﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ ٦﴾ [ الاحزاب : ٦ ]
“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ”। [সূরা আহযাব: (৬)]
তাকে আয়াতটি ব্যাখ্যা করে বোঝাল ও বিস্তারিত বলল। তিনি আয়াত ও অর্থ শ্রবণ করে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ আয়াত কুরআনে রয়েছে? জীবনে এ প্রথম শুনলাম! তারা তাকে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আয়াতটি দেখাল। অতঃপর সে বলল: এখন আমি জানলাম যে, আয়েশা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য স্ত্রীগণ আমার মাতা ও সকল মুমিনের মাতা।
তিনি আরো বললেন: আমার দ্বারা সম্ভব নয় আল্লাহর কালামকে মিথ্যা বলে মানুষকে বিশ্বাস করা।
তাকে আরো বলা হল, আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ إِن كُنتُنَّ تُرِدۡنَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيۡنَ أُمَتِّعۡكُنَّ وَأُسَرِّحۡكُنَّ سَرَاحٗا جَمِيلٗا ٢٨ وَإِن كُنتُنَّ تُرِدۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَ فَإِنَّ ٱللَّهَ أَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنَٰتِ مِنكُنَّ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٢٩ ﴾ [ الاحزاب : ٢٨، ٢٩ ]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বল, ‘যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় করে দেই’। ‘আর যদি তোমরা আল্লাহ, তার রাসূল ও পরকালীন নিবাস কামনা করা, তবে তোমাদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই মহান প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন”। [সূরা আহযাব: (২৮-২৯)]
শিয়া ও সুন্নী এ ব্যাপারে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি। এ আয়াত দু’টিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন তার স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়ার জন্য যদি তারা দুনিয়ার চাকচিক্য গ্রহণ করেন, আর যদি তারা আল্লাহ এবং তার রাসূল ও আখেরাতকে গ্রহণ করেন, তাহলে তাদেরকে রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন।
কোন কাফের বা মুনাফিক দুনিয়ার চাকচিক্যের ওপর আখেরাতকে কিভাবে প্রাধান্য দেয়?! বিবেকীদের নিকট প্রশ্ন রাখলাম..!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যদি অন্তরে নেফাক গোপন করতেন, -আল্লাহর নিকট পানাহ চাই- আল্লাহ কি তার অন্তর ও প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন না! তাহলে আল্লাহ কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সম্পর্কে বললেন না, তিনি মারা গেলেন অথচ সে তার স্ত্রী, মুমিনদের মাতা হিসেবে কথা বলছেন?!
শিয়ারা বিশ্বাস করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় গুনা ও ভুল-ত্রুটি থেকে মাসুম ও নিষ্পাপ। তাহলে আয়েশার সাথে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহ বন্ধন কি ভুল নয়?!
একথা শুনে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন: আমি কিভাবে মুমিনদের মাতা আয়েশাকে গালি দেই, অথচ সে আমার ও সকল মুমিনের মাতা?!
তিনি কতিপয় শিয়া আলেমদের নিকট গেলেন ও তাদেরকে আল্লাহর নিম্নের বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন:
﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ ٦﴾ [ الاحزاب : ٦ ]
“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ”। [সূরা আহযাব: (৬)]
শিয়া আলেমদের কেউ উত্তর এড়িয়ে গেলেন। কেউ স্বীকার করলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ মুমিনদের মাতা, এ আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সনদ।
যখন হজের মৌসুম আসল, তিনি তার দেশ থেকে হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। সেখানে আল্লাহ তার অন্তরকে সত্য গ্রহণের জন্য খুলে দিলেন। হজ থেকে তিনি সুন্নী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। তার সুন্নী হয়ে ফিরে আসা দেখে সবাই অবাক হল।
এ জন্য বাহরাইনে তিনি খুব প্রসিদ্ধি লাভ করলেন, টক অব দা বাহরাইন ও প্রবাদে পরিণত হলেন যে, শিয়া অবস্থায় হজে গেছেন, সুন্নী হয়ে ফিরে এসেছেন।
একদা তাদের মাঝে শিয়াদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে গালি ও অপবাদ দেয়ার আলোচনা ওঠে। তিনি তা অস্বীকার করতে পারেননি। তিনি স্পষ্ট বললেন: আমরা শিয়ারা তাকে ঘৃণা করি, তাকে অপছন্দ করি, তাকে গালি দেই ও তাকে লানত করি, সে নাসেবিয়াহ। [ইব্ন রজব আল-বুরসি “মাশারিকুল আনওয়ার: (পৃ.৮৬) গ্রন্থে বলেন: “আয়েশা খিয়ানত করে চল্লিশ দিনার জমা করেছিল, অর্থাৎ যেনা” আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।] আমরা বিশ্বাস করি সে জাহান্নামী। তাদের একজন তাকে বলল, আপনি আল্লাহর বাণী শোনেননি:
﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ ٦﴾ [ الاحزاب : ٦ ]
“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ”। [সূরা আহযাব: (৬)]
তাকে আয়াতটি ব্যাখ্যা করে বোঝাল ও বিস্তারিত বলল। তিনি আয়াত ও অর্থ শ্রবণ করে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ আয়াত কুরআনে রয়েছে? জীবনে এ প্রথম শুনলাম! তারা তাকে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আয়াতটি দেখাল। অতঃপর সে বলল: এখন আমি জানলাম যে, আয়েশা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য স্ত্রীগণ আমার মাতা ও সকল মুমিনের মাতা।
তিনি আরো বললেন: আমার দ্বারা সম্ভব নয় আল্লাহর কালামকে মিথ্যা বলে মানুষকে বিশ্বাস করা।
তাকে আরো বলা হল, আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ إِن كُنتُنَّ تُرِدۡنَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيۡنَ أُمَتِّعۡكُنَّ وَأُسَرِّحۡكُنَّ سَرَاحٗا جَمِيلٗا ٢٨ وَإِن كُنتُنَّ تُرِدۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَ فَإِنَّ ٱللَّهَ أَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنَٰتِ مِنكُنَّ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٢٩ ﴾ [ الاحزاب : ٢٨، ٢٩ ]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বল, ‘যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় করে দেই’। ‘আর যদি তোমরা আল্লাহ, তার রাসূল ও পরকালীন নিবাস কামনা করা, তবে তোমাদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই মহান প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন”। [সূরা আহযাব: (২৮-২৯)]
শিয়া ও সুন্নী এ ব্যাপারে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি। এ আয়াত দু’টিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন তার স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়ার জন্য যদি তারা দুনিয়ার চাকচিক্য গ্রহণ করেন, আর যদি তারা আল্লাহ এবং তার রাসূল ও আখেরাতকে গ্রহণ করেন, তাহলে তাদেরকে রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন।
কোন কাফের বা মুনাফিক দুনিয়ার চাকচিক্যের ওপর আখেরাতকে কিভাবে প্রাধান্য দেয়?! বিবেকীদের নিকট প্রশ্ন রাখলাম..!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যদি অন্তরে নেফাক গোপন করতেন, -আল্লাহর নিকট পানাহ চাই- আল্লাহ কি তার অন্তর ও প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন না! তাহলে আল্লাহ কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সম্পর্কে বললেন না, তিনি মারা গেলেন অথচ সে তার স্ত্রী, মুমিনদের মাতা হিসেবে কথা বলছেন?!
শিয়ারা বিশ্বাস করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় গুনা ও ভুল-ত্রুটি থেকে মাসুম ও নিষ্পাপ। তাহলে আয়েশার সাথে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহ বন্ধন কি ভুল নয়?!
একথা শুনে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন: আমি কিভাবে মুমিনদের মাতা আয়েশাকে গালি দেই, অথচ সে আমার ও সকল মুমিনের মাতা?!
তিনি কতিপয় শিয়া আলেমদের নিকট গেলেন ও তাদেরকে আল্লাহর নিম্নের বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন:
﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ ٦﴾ [ الاحزاب : ٦ ]
“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ”। [সূরা আহযাব: (৬)]
শিয়া আলেমদের কেউ উত্তর এড়িয়ে গেলেন। কেউ স্বীকার করলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ মুমিনদের মাতা, এ আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সনদ।
যখন হজের মৌসুম আসল, তিনি তার দেশ থেকে হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। সেখানে আল্লাহ তার অন্তরকে সত্য গ্রহণের জন্য খুলে দিলেন। হজ থেকে তিনি সুন্নী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। তার সুন্নী হয়ে ফিরে আসা দেখে সবাই অবাক হল।
এ জন্য বাহরাইনে তিনি খুব প্রসিদ্ধি লাভ করলেন, টক অব দা বাহরাইন ও প্রবাদে পরিণত হলেন যে, শিয়া অবস্থায় হজে গেছেন, সুন্নী হয়ে ফিরে এসেছেন।
আমার পরিবার ও প্রতিবেশীর নিকট—
তাদের প্রতি, যাদেরকে আমি মহব্বত করি এবং যারা আমাকে মহব্বত করেন—
তাদের প্রতি যারা আহলে বাইতকে মহব্বত করেন ও তাদের অনুসরণ করার ইচ্ছা রাখেন—
তার প্রতি যিনি সত্য ও দোদীপ্যমান জ্যোতির আশা করেন—
প্রত্যেক চিন্তাশীল ও সত্যান্বেষণকারীর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান—
প্রত্যেককে মনুষ্য স্বভাবের ডাকে সাড়া দেয়ার আহ্বান, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠ ﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”। [সূরা রূম: (৩০)]—
নিশ্চয় আল্লাহ বিবেক দ্বারা মানব জাতিকে সম্মানিত করেছেন, তাকে অন্য সকল মখলুক থেকে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন। অতএব মানুষের উচিত আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শোকর আদায় করা। কেন সে এ নিয়ামতের শোকর আদায় করবে না, অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:
﴿ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
“অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না”। [সূরা আনআম: (৫০)]
﴿ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٤٤ ﴾ [ البقرة : ٤٤ ]
“তোমরা কি বুঝ না”। [সূরা বাকারা: (৪৪)]
﴿ أَفَلَا تُبۡصِرُونَ ٧٢ ﴾ [ القصص : ٧٢ ]
“তোমরা কি দেখবে না”। [সূরা আল-কাসাস: (৭২)]
এসব আয়াত চিন্তার প্রতি আহ্বান করে, গবেষণার প্রতি আহ্বান করে, বিবেককে অন্ধ অনুকরণ থেকে মুক্ত করার প্রতি আহ্বান করে?!
প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির প্রবৃত্তির অন্ধকার ও অন্ধ অনুকরণ থেকে সতর্ক থাকা উচিত, যা অনিষ্ট ব্যতীত মানুষের জন্য কিছু বয়ে আনে না। যেন সে তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيۡرِ هُدٗى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٠ ﴾ [ القصص : ٥٠ ]
“অতঃপর তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহে যালিম কওমকে হিদায়াত করেন না”। [সূরা কাসাস: (৫০)]
অতএব আহলে বাইতের জন্য আমাদের মহব্বত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতার কারণে। এ কারণে তাদের মর্যাদা। অনুরূপ সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচার্য থেকে মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে যোগসূত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এক পক্ষ তার আত্মীয় অপর পক্ষ তার সাথী। তাদেরকে যারা মহব্বত করল, মূলত তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের জন্যই মহব্বত করল।
এ সত্য বুঝার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় ও সাথীত্বকে গ্রহণ করে সবাইকে জানিয়ে এ ঘোষণা দিতে কোন দ্বিধা নেই: “সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকে হারাইনি”।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين إلى يوم الدين .
তাদের প্রতি, যাদেরকে আমি মহব্বত করি এবং যারা আমাকে মহব্বত করেন—
তাদের প্রতি যারা আহলে বাইতকে মহব্বত করেন ও তাদের অনুসরণ করার ইচ্ছা রাখেন—
তার প্রতি যিনি সত্য ও দোদীপ্যমান জ্যোতির আশা করেন—
প্রত্যেক চিন্তাশীল ও সত্যান্বেষণকারীর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান—
প্রত্যেককে মনুষ্য স্বভাবের ডাকে সাড়া দেয়ার আহ্বান, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠ ﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”। [সূরা রূম: (৩০)]—
নিশ্চয় আল্লাহ বিবেক দ্বারা মানব জাতিকে সম্মানিত করেছেন, তাকে অন্য সকল মখলুক থেকে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন। অতএব মানুষের উচিত আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শোকর আদায় করা। কেন সে এ নিয়ামতের শোকর আদায় করবে না, অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:
﴿ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
“অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না”। [সূরা আনআম: (৫০)]
﴿ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٤٤ ﴾ [ البقرة : ٤٤ ]
“তোমরা কি বুঝ না”। [সূরা বাকারা: (৪৪)]
﴿ أَفَلَا تُبۡصِرُونَ ٧٢ ﴾ [ القصص : ٧٢ ]
“তোমরা কি দেখবে না”। [সূরা আল-কাসাস: (৭২)]
এসব আয়াত চিন্তার প্রতি আহ্বান করে, গবেষণার প্রতি আহ্বান করে, বিবেককে অন্ধ অনুকরণ থেকে মুক্ত করার প্রতি আহ্বান করে?!
প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির প্রবৃত্তির অন্ধকার ও অন্ধ অনুকরণ থেকে সতর্ক থাকা উচিত, যা অনিষ্ট ব্যতীত মানুষের জন্য কিছু বয়ে আনে না। যেন সে তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيۡرِ هُدٗى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٠ ﴾ [ القصص : ٥٠ ]
“অতঃপর তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহে যালিম কওমকে হিদায়াত করেন না”। [সূরা কাসাস: (৫০)]
অতএব আহলে বাইতের জন্য আমাদের মহব্বত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতার কারণে। এ কারণে তাদের মর্যাদা। অনুরূপ সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচার্য থেকে মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে যোগসূত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এক পক্ষ তার আত্মীয় অপর পক্ষ তার সাথী। তাদেরকে যারা মহব্বত করল, মূলত তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের জন্যই মহব্বত করল।
এ সত্য বুঝার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় ও সাথীত্বকে গ্রহণ করে সবাইকে জানিয়ে এ ঘোষণা দিতে কোন দ্বিধা নেই: “সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকে হারাইনি”।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين إلى يوم الدين .
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন