hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সাহাবীদের পেয়েছি, কিন্তু আহলে-বাইতকে হারাই নি

লেখকঃ আবু খলিফা আলি ইব্‌ন মুহাম্মদ আল-কুদাইবি

১১
আহলে বাইতের ইতিহাস ইমামিয়া আকিদার পরিপন্থী
শিয়াদের ইতিহাস গবেষণাকারীর নিকট পরিষ্কার হবে যে, ইমামিয়্যাহ আকিদা, যা এ যুগের শিয়াদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা কায়েম করার মূলনীতি, ইমাম হাসান আসকারির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খোদ শিয়াদের নিকট স্পষ্ট ছিল না, তার মৃত্যুর পর শিয়ারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়, যেমন বার ইমামিয়্যাহ ও ইসমাইলিয়াহ প্রভৃতি।

শিয়াদের তখন অজিফা ছিল উমাইয়াহ ও আব্বাসিয়াহ খলিফাদের সাথে বিদ্রোহ করা এবং আলির বংশধরকে খিলাফতের হকদার দাবি করা। সবার মধ্যে এ প্রেরণা কাজ করেছিল, এর নীতিতে তখন শিয়াদের দল-উপদল পরিচালিত হত, তখনো নির্দিষ্ট বার ইমামের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এ জন্য শিয়ারা তখন আহলে বাইতের সদস্যদের মধ্যে কোন পার্থক্য করত না, যেখানে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে কোন ইমাম বা বিদ্রোহী বিদ্রোহ করত, তার সাথে তারা যোগ দিত। যেমন ইমাম জায়েদ ইব্‌ন আলি ও জিন নাফছিজ জাকিয়াহ প্রভৃতি নেতাদের আন্দোলনে দেখা গেছে।

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, আলি জয়নুল আবেদিন –বার ইমামিয়াদের চতুর্থ ইমাম- আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কিছু জটিলতা ও আন্দোলনগত সমস্যার কারণে তাদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ান।

অতঃপর তিনি ইবাদতে মশগুল হন, সেখান থেকে জাহেদ ও অধিক সালাত আদায়কারী পরিচিত লাভ করেন। আল-মুফিদ ও আল-আরবিলি উল্লেখ করেন যে, “তিনি প্রতি রাত-দিনে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [আল-ইরশাদ: (পৃ.২৫৬), কাশফুল গুম্মাহ: (২/২৯৩)] মুত্তাকি এ বুযুর্গ থেকে যেসব বাণী উল্লেখ করা হয়, তার সারাংশ উপদেশ, দোয়া-দরূদ ও শরয়ী বিধান, যা আলেমদের ফতোয়া প্রদানে সহায়ক।

তাকে ইমাম মানার ক্ষেত্রে এখানে বড় শূন্যতা দেখা দেয়। এ শূন্যতা পূরণ ও তার ইমামত প্রমাণের প্রচেষ্টা স্বরূপ শিয়া ইমামিয়ারা তার মুজিযা ও প্রশংসার আলোচনায় অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। অথচ তখন শিয়ারা ইলম ও ফজিলতের স্বীকৃতি স্বরূপ তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করত, রাজনীতিবিদ বা ইমাম হওয়ার কারণে নয়। [এখানে বলে রাখি শিয়াদের যেগ্রুপ যাকে পছন্দ করত তার মুজিজা সম্পর্কে অনেক ঘটনা তৈরি করত। এটা তাদের স্বভাব ছিল। যেমন ইসমাইলিয়ারা ইসমাইল ইব্‌ন জাফর সাদেক এর ইমামত, রেফাইয়ারা রেফায়ির ইমামত এবং তিজানিয়ারা তিজানির ইমামত প্রমাণ করার জন্য অনেক ঘটনা ও মুজিজার সৃষ্টি করেছে। আমরা তাই গ্রহণ করব, যা প্রকৃত ও বাস্তবতা নির্ভর।]

তাই দেখি জায়েদ ইব্‌ন জয়নুল আবেদিন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুফায় আগমন করে ‘মুমিন তাক’ ও তার সাথীদের থেকে তার পিতা আলি ইব্‌ন হুসাইন [জয়নুল আবেদিন]র ইমামতের কথা শুনে আশ্চর্য হন। এক পর্যায়ে তিনি মুমিন তাককে বলেন: “হে আবু জাফর [মুমিন তাক], আমি আমার পিতার সাথে এক দস্তরখানে বসতাম। তিনি আমার ওপর স্নেহ স্বরূপ গোস্তের বড় টুকরা চিবিয়ে ছোট করে দিতেন, গরম লোকমা ঠাণ্ডা করে দিতেন, অথচ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করার জন্য দয়া করলেন না, দীন সম্পর্কে আপনাকে বললেন আমাকে বললেন না তিনি”?! ‘মুমিন তাক’ উত্তর দিল: “আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! আপনার ওপর জাহান্নামের আগুনের আশঙ্কায় তিনি বলেননি, তার আশঙ্কা ছিল যদি আপনি গ্রহণ না করেন! আমাকে তিনি সংবাদ দিয়েছেন, কারণ আমি কবুল করলে নাজাত পাব, অন্যথায় আমার জাহান্নামে প্রবেশকে বড় করে দেখেননি, যেমন ইয়াকুব নিজ সন্তানদের থেকে স্বপ্ন গোপন করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/১৭৪)]

চিন্তা করুন..! ইমামের ছেলে পিতার ইমামত সম্পর্কে জানেন না, তার মুখে কখনো শ্রবণ করিনি, না পিতা তার জামানায় ইমামত দাবি করেছেন, কিন্তু ‘মুমিন তাক’ ও তার অনুসারীরা তার পিতা জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুর পর এসব দাবি উত্থাপন করে!

শিয়াদের ইতিহাসে এ এক অধ্যায়। অন্যান্য অধ্যায়ও রয়েছে, যা ইমামত মতবাদকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়।

এ ছাড়া শিয়াদের অনেক হাদিস প্রমাণ করে ইমাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকা সম্ভব। অজ্ঞ থাকাবস্থায় করণীয় কি তার বর্ণনাও রয়েছে। অথচ ইমামিয়্যাহ আকিদায় এরূপ কখনো সম্ভব নয়, বরং বার ইমাম ও তাদের সন্তানদের পরিচয়সহ তাদের ওপর ইমান আনা শিয়া ইমামিয়্যাদের ওপর ফরজ।

কুলাইনি “আল-কাফি” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করল: আমি সকাল-সন্ধ্যায় যদি ইমামের সাক্ষাত না পাই যার অনুসরণ করব, তখন আমার করণীয় কি?... তিনি বলেন: [তুমি বল]: “তুমি যাকে মহব্বত কর, আমি তাকে মহব্বত করি, তুমি যার সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর, আমি তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জাহির করেন”। [আল-কাফি: (১/৩৪২)]

ইমাম সাদেক থেকে সাদুক বর্ণনা করেন: “যখন তোমরা ইমামকে না দেখে জীবনের একযুগ পার করবে, তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে?... বলা হল: যদি এমন হয় তাহলে আমরা কি করব? তিনি বলেন: “তোমরা প্রথম ইমামকে আঁকড়ে থাক, যতক্ষণ না তোমাদের সামনে পরবর্তী ইমাম জাহির হয়”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৩৪৮, ৩৫০-৩৫১)]

আল-কুলাইনি, সাদুক ও আল-মুফিদ প্রমুখ বর্ণনা করেন ঈসা ইব্‌ন আব্দুল্লাহ আল-আলাওয়ি আল-আমরি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইব্‌ন মুহাম্মদ ‘আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি বলেন: আমি তাকে বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! যদি এমন হয় আল্লাহ আমাকে আপনার যুগ না দেখান তাহলে কার অনুসরণ করব? তিনি বলেন: আবু আব্দুল্লাহ বললেন: মূসার অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি মূসা মারা যান কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর। আমি বললাম: যদি তার সন্তান মারা যান বড় ভাই ও ছোট সন্তান রেখে কার অনুসরণ করব? তিনি বললেন: তার সন্তানের অনুসরণ কর, অতঃপর সর্বদা এভাবে অনুসরণ কর। আমি বললাম: আমি যদি তাকে না চিনি, তার স্থান না জানি, কি করব?.. তিনি বললেন: তুমি বলবে: “হে আল্লাহ তোমার দলিল ও হুজ্জত হিসেবে বিগত ইমামের যে সন্তান রয়েছে তার বেলায়েত আমি গ্রহণ করছি..! কারণ তোমর জন্য এতটুকু যথেষ্ট”!!

এ প্রসঙ্গে আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে যারারাহ ইব্‌ন আয়ূন, ইয়াকুব ইব্‌ন শু‘আইব ও আব্দুল আলা থেকে, তারা সবাই ইমাম সাদেককে জিজ্ঞাসা করেছেন: “ইমাম যখন কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন মানুষেরা কি করবে? তিনি বলেন: আল্লাহ যেরূপ বলেছেন সেরূপ হয়ে যাবে, আল্লাহ ইরশাদ করেন:

﴿فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢﴾ [ التوبة : 122]

“অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সর্তক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে”। [সূরা আত-তাওবা: (১২২)]

আমি বললাম: তাদের পরিণতি কেমন হবে? তিনি বললেন: তারা অপারগ। আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ! মুতাফাক্কেহ বা জ্ঞানীদের আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষাকারীদের অবস্থা কেমন হবে? তিনি বললেন: আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন, তুমি জান না মুহাম্মদ ও ইসার মাঝখানে দুই শত পঞ্চাশ বছর ব্যবধান ছিল। মুহাম্মদের অপেক্ষায় ইসার দীনের ওপর এক প্রজন্ম মারা গেছে। আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ সাওয়াব দান করেছেন?! আমি বললাম: মনে করুন আমরা যাত্রা করলাম, অতঃপর আমাদের এক-গ্রুপ রাস্তায় মারা গেল? তিনি বললেন:

﴿ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [ النساء : ١٠٠ ]

“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা নিসা: (১০০)]

আমি বললাম: [মনে করুন] আমরা মদিনায় গেলাম, সেখানে ইমামের গেট পেলাম তালাবন্ধ, তিনি পর্দার আড়ালে? তিনি বললেন: এসব ঘটবে প্রকাশে। তুমি মদিনায় প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা কর, অমুক কার নিকট ওসিয়ত করেছেন? তারা বলবে: অমুকের নিকট”। [তাফরিরুল আইইয়াশী: (২/১১৭-১১৮), আল-ইমামাহ ওয়াত তাবসিরাহ মিনাল হায়রাহ: (পৃ.২২৬), ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫)]

বরং অনেক বর্ণনা প্রমাণ করে যে, স্বয়ং ইমামগণ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত নিজেদের ইমামত অথবা তাদের পরবর্তী ইমাম সম্পর্কে জানতেন না। আর তাদের অনুসারী ইমামিয়্যারা বরাবর এক ইমামের মৃত্যুর পর পরবর্তী ইমাম নির্ধারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হত। প্রত্যেক ইমামকে তারা অনুরোধ করত পরবর্তী ইমাম নির্দিষ্ট করে যান, যেন নতুন ইমাম জানা ব্যতীত তাদের মৃত্যু না হয়।

“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে ইমাম হাসান আসকারির ছাত্র আবু জাফর মুহাম্মদ আস-সাফার বলেন: “অধ্যায়: ইমামগণ জানেন তাদের মৃত্যুর পূর্বে কার জন্য ওসিয়ত করবেন, কারণ আল্লাহ তাদের জানিয়ে দেন”। [“বাসায়েরুদ দারাজাত”: (পৃ.৪৩৫)]

এ অধ্যায়ে তিনি অনেক বর্ণনা পেশ করেছেন, একটি বর্ণনা: আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম থেকে আব্দুর রহমান আল-খাজ্জার বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: ইসমাইল ইব্‌ন ইবরাহিমের ছোট এক বাচ্চা ছিল তিনি তাকে খুব মহব্বত করতেন। ইসমাইলের মনোযোগ তার প্রতিই বেশী ছিল, আল্লাহ তা হতে দিলেন না। তিনি বললেন: হে ইসমাইল সে [ইমাম] অমুক। আল্লাহ যখন ইসমাইলের মৃত্যুর ফয়সালা করেন ও তার ওসি এসে উপস্থিত হল, তিনি বললেন: হে বৎস যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, আমি যেমন করেছি তেমন করবে। তাই কোন ইমাম মৃত্যু বরণ করেন না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন কার জন্য ওসিয়ত করবে!

“বাসায়েরুদ দারাজাত” গ্রন্থে একটি অধ্যায় রয়েছে “ইমাম জানেন তার মৃত্যুর পর কে ইমাম হবেন” নামে!

ইমামিয়্যাহ আকিদায় ধারণ করা এসব রহস্য ও জটিলতার কারণে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত ব্যতীত খোদ ইমাম জানেন না তার পরবর্তী ইমাম কে। তাই সাধারণ শিয়া তো বটেই প্রখ্যাত বর্ণনাকারী ও ইমামদের সাথীগণ পর্যন্ত দুই ইমামের মাঝে দিকভ্রষ্ট থাকেন।

বর্ণনা করা হয় ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর প্রসিদ্ধ শাগরেদ জুরারা ইব্‌ন আয়ূন ইমাম সাদেকের পরবর্তী ইমাম না জেনেই মারা যান!

জুরারা নিজ ছেলে উবাইদুল্লাহর নিকট কুফা থেকে মদিনায় পত্র লিখেন যেন তাকে নতুন ইমাম সম্পর্কে জানানো হয়, কিন্তু উত্তর আসার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তখন কুরআন বুকে ধরে বলেন: “হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, তুমি এ কুরআনে যার ইমামত নির্দিষ্ট করেছ তাকেই আমি ইমাম মানছি”। [ইকমালুদ্দিন: (পৃ.৭৫,৭৬)]

যদি তিনি অথবা ইমামের অন্য শাগরেদ জানত যে, জাফর সাদেকের পর মুসা কাজেম ইমাম, তাহলে পত্র লেখা ও সন্দেহ পোষণ ব্যতীত তার প্রতি ইমান আনত।

আল-সেফার, আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আল-কাশি বলেছেন: ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদগণ যেমন হিশাম ইব্‌ন সালেম আল-জাওয়ালিকি, মুহাম্মদ ইব্‌ন আন-নুমান আল-আহওয়াল প্রমুখদের –প্রথম- বিবেচনায় জাফর সাদেক এর মৃত্যুর পর আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতাহ ইমাম ছিলেন। কারণ আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “ইমামত বড় সন্তানের মধ্যে থাকবে যদি তার মাথায় সমস্যা না থাকে”। ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক এর শাগরেদ আম্মার আস-সাবাতি শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতাহ এর ইমামতের ওপর অটল ছিলেন! [আল-কাফি: (১/৩৫১-৩৫২), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্‌ন সালেম এর জীবনী দেখুন।]

হিশাম ইব্‌ন সালেম আল-জাওয়ালিকি বর্ণনা করেন: তিনি শিয়াদের এক গ্রুপসহ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতাহের দরবারে গমন করেন, অতঃপর তাকে ফেকহি কতক মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু তিনি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাই তারা তার ইমামত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন ও তার দরবার থেকে বেরিয়ে যান। [তিনি বলেন:] “আমরা ছিলাম পেরেশান ও দিকভ্রষ্ট... আমরা কাঁদতে কাঁদতে দিকহারা হয়ে কুফার এক রাস্তায় বসে পড়লাম। আমরা ঠিক করতে পারছিলাম না কার কাছে যাব ও কাকে আমাদের উদ্দিষ্ট বানাব। আমরা বলতে ছিলাম: মুরজিয়াতের নিকট?!. জায়দিয়াদের নিকট?!.. মুতাজিলাদের নিকট?!. খারেজিদের নিকট?!. কোথায় যাব? আমরা এভাবেই ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম আমার অপরিচিত এক ব্যক্তি আমার দিকে হাতে ইশারা করছে... তিনি বললেন: প্রবেশ কর, আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন! আমি প্রবেশ করলাম। দেখলাম আবুল হাসান মুসা। তিনি আমাকে নিজ থেকে বললেন: না মুরজিয়াদের দিকে, না কাদরিয়াদের দিকে, না জায়দিয়াদের দিকে, না খারেজিদের দিকে!.. বরং আমার দিকে, আমার দিকে..! আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনার পিতা চলে গেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ... আমি বললাম: তার পরবর্তী আমাদের নেতা কে? তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাকে তার পথ দেখাবেন। আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ! আপনিই কি সে? তিনি বললেন: না, আমি তা বলছি না। আমি অন্তরে বললাম: আমি প্রশ্ন করতে ভুল করেছি, অতঃপর বললাম: আমি আপনার প্রতি উৎসর্গ! আপনার কোন ইমাম রয়েছে? তিনি বললেন: না, তখন তার ভয় ও সম্মানের কারণে আমার অন্তরে কিছু প্রবেশ করল, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না”। [আল-কাফি: (১/৩৫১), আল-ইরশাদ: (পৃ.২৯১), বাসায়েরুদ দারাজাত: (পৃ.২৫০-২৫১), মুনতাহাল আমাল: (২/২৫৮), দেখুন রিজালুল কাশিতে হিশাম ইব্‌ন সালেম এর জীবনী।]

এ বর্ণনায় হিশাম বলেন: মানুষেরা –শুরুতে- আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতার ইমামতে একমত ছিল। ইমামিয়্যাহ সম্প্রদায়ের কুতুবরা পর্যন্ত জানে না কাজেম কিসের ভিত্তিতে ইমাম হলেন, তিনি নিজেও ইমামতের ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হিশাম ইব্‌ন সালেম ও তার সাথীগণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতাহ-এর ইমামতের দাবি থেকে প্রত্যাবর্তন করুন বা না-করুন, আল-আফতাহ তার পিতার মৃত্যুর পর মাত্র সত্তুর দিন পর মারা যান। তিনি কোন সন্তান রেখে যাননি, যার মধ্যে ইমামত চালু থাকবে। এ ঘটনা তখন ইমামতের মাসআলায় বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। কেউ ইমামতের ধারণা থেকে ফিরে যান, ইমামিয়াদের দফতর থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন। কেউ নতুন ইমাম মুসা ইব্‌ন জাফরের ওপর ইমান আনয়ন করেন, তারা মুসুবিয়াহ নামে পরিচিত। অপর গ্রুপ যেমন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বুকাইর ও আম্মার ইব্‌ন মুসা আস-সাবাতি মুসার ভাইকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা ফাতহিয়াহ নামে পরিচিত। তারা ছিল ইমাম সাদেক ও তার পরবর্তী ইমামদের প্রখ্যাত শাগরেদ।

প্রিয় পাঠক, আপনি মনে করবেন না ইমামতের মাসআলা এ বিভ্রান্তি ও সমস্যার পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, বরং ইসমাইলকে ওসি মনোনীত করা ও তার ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ইমামিয়্যাহ মতবাদ মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। আরেক সমস্যা দেখা দেয় আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আল-আফতার সন্তান বিহীন মারা যাওয়ার ফলে। অতঃপর কাজেমের ইমামত প্রমাণের জটিলতা, অবশেষে বাগদাদে হারুনুর রশিদের জেলখানায় ১৮৪ হিজরিতে তার অদৃশ্য মৃত্যুর ফলে জটিলতার ওপর জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন শিয়া মুসুবিয়ারা বলত তিনি জেলখানা থেকে পলায়ন করেছেন!

প্রকৃত অর্থে মুসা কাজেমের মৃত্যুটি রহস্যাবৃত। তার অধিকাংশ সন্তান, ছাত্র ও সাথীদের ওপর তার ব্যাপারটি অস্পষ্ট। যেমন প্রখ্যাত বর্ণনাকারী আলি ইব্‌ন আবু হামজাহ, আলি ইব্‌নুল খাত্তাব, গালেব ইব্‌ন উসমান, মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন আম্মার আত-তাগলিবি আস-সায়রাফি, ইসহাক ইব্‌ন জারির, মুসা ইব্‌ন বাকার, ওয়াহাইব ইব্‌ন হাফস আল-জারিরি, ইয়াহইয়া ইব্‌নু হুসাইন ইব্‌ন জায়েদ ইব্‌ন আলি ইব্‌নুল হুসাইন, ইয়াহইয়া ইব্‌ন আল-কাসেম আল-হেযা আবু বাসির, আব্দুর রহমান ইব্‌নুল হাজ্জাজ, রেফাআহ ইব্‌ন মুসা, ইউনুস ইব্‌ন ইয়াকুব, জামিল ইব্‌ন দারাজ, হাম্মাদ ইব্‌ন ইসা, আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন আবু নাসার ও আলে মেহরান প্রমুখ বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ। [আল-গায়বাহ লিত তুসী: (পৃ.৪৭), আল-কাফি: (১/৩৪), উইনুল আখবারুর রেদা: (পৃ.৩৯)]

মুসুবিয়াদের কাজেমকে ইমাম মেনে নেয়া ও তার সন্তান আলি রেদার ইমামত প্রত্যাখ্যান করার পেছনে কতক বর্ণনা রয়েছে, যার দাবি ইমাম কাজেম নিজেই হাদি, তিনি মৃত্যুর পূর্বে পুনরায় উত্থিত হবেন। আত-তুসি “আল-গায়বাহ” কিতাবে তার কতিপয় বর্ণনা উল্লেখ করে আলোকপাত করেছেন। [আল-গায়বাহ: (পৃ.২৯-৪০)]

আলি রেদা কিভাবে জানলেন তার পিতার মৃত্যুর সংবাদ, কখন জানলেন এবং কখন নিশ্চিত হলেন তার পিতার খলিফা হিসেবে তিনি ইমাম হয়েছেন এ সম্পর্কে অনেক সন্দেহ ও প্রশ্ন রয়েছে। ইমাম কাজেমের মৃত্যু ও ছেলে আলি রেদার পিতার মৃত্যু সংবাদ জানতে সময় ক্ষেপণ হয়েছিল কি-না, পিতার পরবর্তী তার ইমাম হওয়ার মধ্যে বিরতি ছিল কি-না প্রভৃতি?! [আল-কাফি: (১/৩৮১)]

শিয়াদের নিকট প্রচলিত কতক হাদিস-ই আলি রেদার ইমামতের সন্দেহ পাকাপোক্ত করেছিল, যেমন: “ইমামকে একমাত্র ইমামই গোসল দিবেন”। তারা বলল: তাহলে কিভাবে আলি রেদা তার পিতার গোসল দিলেন, যিনি বাগদাদে মারা যান, আলি রেদা তখন মদিনায়?!! [আল-কাফি: (১/৩৮৫)]

আলি রেদার ইমামতের বিষয়টা শুধু সাধারণ শিয়াদের নিকটই অস্পষ্ট ছিল না, বরং কাজেমের সন্তান ও তার স্ত্রী আসিরাহ [উম্মে আহমদ]র নিকটও অস্পষ্ট ছিল, যেমন ইতিহাস উল্লেখ করেছে। [আল-কাফি: (১/৩৮১-৩৮২)]

কোন এক বর্ণনা বলে: মদিনায় শিয়ারা ইমাম কাজেমের মৃত্যুর সংবাদ শুনে উম্মে আহমদের ঘরের সামনে জড়ো হয় ও আহমদ ইব্‌ন ইমাম কাজেমের হাতে বায়েত গ্রহণ করে, তিনি তাদের থেকে বায়েত নেন। [হায়াতুল ইমাম মুসা ইব্‌ন জাফর, লি বাকের শরীফ আল-কুরাশি: (পৃ.৪১০-৪১১), তুহফাতুল আলম থেকে নেয়া, লি সাইয়্যেদ জাফর, আলে বাহরুল উলুম: (২/৮৭)]

ইমামিয়ারা আলি রেদার ইমামত প্রমাণে বিভিন্ন দলিলের আশ্রয় নিয়ে বারবার ব্যর্থ হতে ছিল, তাদের এ সমস্যার সমাধান না হতেই (২০৩হি.)তে খোরাসানে তিনি মারা যান, তখন তার ছেলে মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের বয়স মাত্র সাত। ফলে ইমামত মতবাদ নতুন সমস্যার সম্মুখীন হল। ছেলে পিতার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ধারণা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। কারণ একজন বাচ্চাকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের জন্য বাছাই করবেন কোন যুক্তিতে টিকে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে যার নিজের ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদে কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই, শরীয়ত যার ওপর কোন বিধান ফরজ করেনি, যিনি নিজ পিতা থেকে ইলম অর্জন করার সুযোগ লাভ করেননি, তার পিতা যখন মদিনা ত্যাগ করেন, তখন তার বয়স মাত্র চার বছর, তিনি কিভাবে ইমাম হবেন! [আল-মাকালাত ওয়াল ফেরাক, লিল আশ-আরি আল-কুম্মি: (পৃ.৯৬-৯৮), ফেরাকুশ শিয়াহ লিন নাওবখতি: (পৃ.৮৮)]

এসব কারণে শিয়ারা বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্তি হয়:

ক. এক ফেরকা কাজেমের ইমামতে ফিরে আসেন, আলি রেদার ইমামত থেকে সরে দাঁড়ান এবং মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামত প্রত্যাখ্যান করেন।

খ. এক ফেরকা আলি রেদার ভাই আহমদ ইব্‌ন মুসার ইমামতে বিশ্বাসী হন। কারণ তিনি আলি রেদার খুব সম্মান ও মহব্বতের পাত্র ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল জায়দিয়াদের ন্যায়। তিনি এক দল লোকের সাথে কুফার উদ্দেশ্য রওয়ানা করেন। তার ইলম, তাকওয়া ও পরহেজগারি প্রসিদ্ধ ছিল, যেমন আল-মুফিদ ইরশাদ গ্রন্থে বলেছেন। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৮৮), আল-মাকালাত: (পৃ.৯৭)]... তাদের ধারণা আলি রেদা তার জন্য ওসিয়ত করেছেন ও তার ইমামতের ঘোষণা দিয়েছেন। [আল-ফুসুলুল মুখতারাহ: (পৃ.২৫৬)]

গ. শিয়াদের অপর গ্রুপ ইমাম মুহাম্মদ ইব্‌ন আল-কাসেম ইব্‌ন ওমর ইব্‌ন আলি ইব্‌ন হুসাইন ইব্‌ন আলি ইব্‌ন আবি তালিবের ইমামতের স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি কুফায় থাকতেন। তার ইবাদত, দুনিয়ার প্রতি নির্লোভ, তাকওয়া, ইলম ও ফিকহি গভীরতা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল। তিনি ২১৮হি.তে তালেকান নামক স্থানে খলিফা আল-মুতাসিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। [মুকাতিলুত তালেবিয়্যিন: (পৃ.৫৭৯), তারিখে তাবারি: (৭/২২৩)]

ঘ. অপর ফেরকা ছোট বাচ্চা মুহাম্মদ আল-জাওয়াদের ইমামতে বিশ্বাসী হল, কিন্তু সমস্যা তাদের পিছু ছাড়ল না। কারণ ইমাম জাওয়াদ তার যৌবনের শুরুতেই মারা যান, তখন তার দুই ছেলে আলি হাদি ও মুসা ছোট, বড় ছেলের বয়স মাত্র সাত। ইমাম জাওয়াদ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মিসওয়ারের নিকট সম্পদ, সন্তানের ব্যয়ভার ও গোলাম দেখাশোনার ওসিয়ত করে যান। হাদি বড় হলে তার নিকট এসব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন!! এর সাক্ষী ছিলেন আবু জাফরের মাওলা আহমদ ইব্‌ন আবি খালেদ। [আল-কাফি: (১/৩২৫)]

এ ঘটনা তখন শিয়াদের মাঝে প্রবল ঝড় তুলেছিল: বয়সের কারণে যখন হাদি নিজেই পিতার দৃষ্টিতে সম্পদ, পিতার সন্তানদের দেখাশোনা ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত নয়, সে কিভাবে ইমামতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে?! অন্যথায় এ সময়ের ইমাম কে?! ইতিপূর্বে এ প্রশ্নই ইমাম আলি রেদাকে করা হয়েছিল তার মৃত্যুর সময়, যখন জাওয়াদ ছোট। ইমামতের বিষয়টি আরো জটিল, কঠিন ও ঘোলাটে করে তুলেছে ছোট দুই ভাই আলি ও মুসা, তাদের মধ্যে ইমাম কে?!

ইমাম নির্ধারণে অস্পষ্টতা, শিয়াদের প্রখ্যাত আলেমদের পর্যন্ত ইমাম না-জানা, ইমামত নির্ধারণে মুহাম্মদ ইব্‌ন আল-ফারাজের শরণাপন্ন হওয়া, অতঃপর এক ব্যক্তির আগমন করা ও তাকে গোপনে বলা যে, ইমাম জাওয়াদ নিজ ছেলে আলি হাদির ইমামতের ওসিয়ত করেছেন প্রভৃতি বিষয় আল-কুলাইনি ও আল-মুফিদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। [আল-কাফি: (১/৩২৪), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩২৮)]

ইমামতের ব্যাপারে এসব ভ্রান্তি ও অস্পষ্টতার কারণে জাওয়াদের অনুসারী শিয়া ইমামিয়ারা দু’ভাবে ভাগ হয়েছে:

এক গ্রুপ হাদির ইমামতের দাবিদার।

অপর গ্রুপ তার ভাই মুসার ইমামতের দাবিদার। [ফেরাকুশ শিয়াহ: (পৃ.৯১)]

কিন্তু ইমাম হাদি নিজের ছেলে মুহাম্মদকে তার খলিফা মনোনীত করে সবাইকে অবাক করে দেন! অতঃপর সে ইমাম হাদির জীবতাস্থায় মারা যান, ফলে তার অপর সন্তান হাসান আসকারীর ইমামতের ঘোষণা দেন। তাকে বলেন: “হে বৎস, আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য বলছি, আল্লাহ তোমার মধ্যে একটি জিনিস দান করেছেন”!! [আল-কাফি: (১/৩২৬-৩২৭), বাসায়েরুদ দারাজাত লিস-সাফা: (পৃ.৪৭৩), আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ.৩৩৭), আল-গায়বাহ লিত তুসি: (পৃ.১২২)]

আল-কুলাইনি, আল-মুফিদ ও আত-তুসি আবু হাশেম দাউদ ইব্‌ন আল-কাসেম আল-জাফরি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: যখন আবু জাফর মারা যায় আমি আবুল হাসান আল-আসকারির নিকট ছিলাম, অথচ তিনি ইমামতের জন্য তাকেই নির্ধারণ ছিলেন। আমি চিন্তা করছিলাম এ হল আবু ইবরাহিম ও ইসমাইলের ঘটনা। আবুল হাসান আমার নিকটবর্তী হয়ে বললেন: ঠিকই বলেছ আবুল হাশেম, আবু জাফরের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, তিনি তার স্থানে আবু মুহাম্মদকে নির্ধারণ করেছেন। যেমন আবু আব্দুল্লাহর ঘোষণা দেয়ার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইসমাইলকে ইমাম ঘোষণা দেন। বিষয়টা তেমনি যেমন তোমর অন্তর কল্পনা করেছে, কিন্তু বাতিলপন্থীরা অস্বীকার করেছে... আবু মুহাম্মদ আমার পরবর্তী আমার স্থলাভিষিক্ত, তার নিকট তোমাদের প্রয়োজনীয় সব পাবে, তার কাছে রয়েছে ইমামতের নিদর্শন। আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা। [আল-কাফি: (১/৩২৮), আল-গায়বাহ: (পৃ.৫৫, ১৩০), আল-ইরশাদ: (পৃ.৩৩৭), বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি: (৫০/২৪১)]

অনুরূপ ঘটেছিল ইসমাইলিয়াদের সাথে, তারা ইসমাইল ইব্‌ন জাফরের ইন্তেকাল অস্বীকার করেছিল, কারণ জাফর সাদেক তার ইমামত সম্পর্কে স্পষ্ট বলেছিলেন। অনুরূপ ইমাম হাদির অনুসারী শিয়াদের একগ্রুপ তার ছেলে মুহাম্মদের ইন্তেকালের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের দৃষ্টিতে তিনি জীবিত ও অদৃশ্য। তারা দাবি করেছে, হাদি তাকিয়ার আশ্রয় নিয়ে সত্য গোপন করে তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেছেন!!

কিন্তু হাসান আল-আসকারি সামুররা শহরে ২৬০হি. সনে নিঃসন্তান হয়ে মারা যাওয়ায় ইমামতের মাসআলায় আবার কালো মেঘ দেখা দেয়, যে ইমামতের ধারাবাহিকতা তাদের নিকট অবশ্য জরুরী। সেখান থেকে তারা চৌদ্দ ফেরকায় বিভক্ত হয়, যেমন আল-কুম্মি “মাকালাত ওয়াল ফেরাক” গ্রন্থে, নাওবখতি “ফেরাকুশ শিয়াহ” গ্রন্থে, ইব্‌ন আবি জায়নব আন-নুমানি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে, সাদুক “ইকমালুদ্দিন” গ্রন্থে, আল-মুফিদ “আল-ইরশাদ” গ্রন্থে ও আত-তুসি “আল-গায়বাহ” গ্রন্থে ও অন্যান্য শিয়া আলেমগণ বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন