মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলাম স্বীকৃতি দেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে পরিপূর্ণ দায়িত্বশীল করে সৃষ্টি করেছেন, তার উপর শরী‘আতের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছেন এবং এগুলোর ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছা ও পছন্দের উপর ভিত্তি করে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। আর এই ইচ্ছাকে সীমাবদ্ধ করা অথবা এই পছন্দকে হরণ করার কোন অধিকার কোন মানুষের নেই। আর যে ব্যক্তি এই ব্যাপারে দুঃসাহস করবে, সে হবে যালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী।
এই বিষয়ে এটা ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান ও মূলনীতি। আর যখন প্রশ্ন উত্থাপিত হবে: কীভাবে ইসলাম দাসপ্রথাকে বৈধতা দেয়?
তার জবাবে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ও নির্দ্বিধায় বলব: দাসত্ব প্রথা ইসলামে বৈধ; কিন্তু ইনসাফের দৃষ্টিভঙ্গি; ও সত্য উৎঘাটনের লক্ষ্য থাকলে দেখতে হবে দাসপ্রথার উৎস ও কারণসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক ইসলামে দাসপ্রথার খুঁটিনাটি বিধানসমূহ; অতঃপর আরও দেখতে হবে দাস-দাসীর সাথে আচার-ব্যবহার, অধিকার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে স্বাধীন ব্যক্তির সাথে তার সমতা বিধান; স্বাধীনতা ও মুক্তি লাভের পদ্ধতি এবং শরী‘আতে এর বহু ধরনের দরজার কথা; বিশেষ করে যখন এসব পদ্ধতির সাথে অন্যান্য ধর্ম ও মতাদর্শের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়াও স্মরণে রাখতে হবে সভ্যতা, আধুনিকতা ও প্রগতির চাদরে আবৃত এই পৃথিবীর নতুন ধরনের দাসপ্রথার কথা। এখানে পাঠক লক্ষ্য করবেন যে, আমি এ বিষয়ের উপর অনেক পরিমাণে আল-কুরআনুল কারীমের বক্তব্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য ও নির্দেশনার সাহায্য গ্রহণ করব— এর গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এবং এ কথা জোর দিয়ে বলার জন্য যে, ত্রুটিপূর্ণ কাজকর্ম দ্বারা ইসলামকে বিচার-বিশ্লেষণ করা বৈধ নয়।
আর এই ব্যাপারে আমরা বলব: ইসলাম দাস-দাসীর ব্যাপারে যে চমৎকার অবস্থান গ্রহণ করেছে, অন্য কোন গোষ্ঠী বা ধর্মের কেউ সে অবস্থান গ্রহণ করে নি। আর এই দাসপ্রথা সম্পর্কিত সকল বিষয় যদি এই নিয়ম-নীতির আলোকে চলত, তবে কখনো সৃষ্টি হত না এসব সমস্যা, যেগুলোর মূলে রয়েছে অপহরণ, ছিনতাই, বলপ্রয়োগ অথবা যে কোন ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে প্রাচীন ও আধুনিক কালে স্বাধীন ব্যক্তিকে দাস বানানো। এর ফলেই দাসপ্রথার বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে ও নিকৃষ্ট পদ্ধতিতে এত কলঙ্কিত বিষয়ে রূপ নিয়েছে। মূলত দাসপ্রথা এই অপহরণ পদ্ধতির মাধ্যমেই পৃথিবীর সকল মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বরং এ পদ্ধতিই বিগত শতাব্দীগুলোতে ইউরোপ ও আমেরিকায় দাসপ্রথার বড় উৎস ছিল।
আর ইসলাম এই ব্যাপারে তার বক্তব্যসমূহের মাধ্যমে দৃঢ়সঙ্কল্প ও চূড়ান্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। এক হাদিসে কুদসীর মধ্যে এসেছে:
« قال الله ثلاثة أنا خصمهم يوم القيامة، ومن كنت خصمه خصمته . رجل أعطى بي ثم غدر ورجل باع حرا فأكل ثمنه ورجل استأجر أجيرا فاستوفى منه ولم يعطه أجره» ( أخرجه البخاري ).
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ হব, তাকে পরাজিত করবই। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি হল এমন, যে আমার নামে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং শপথ করে, অতঃপর তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যক্তি হল যে স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে, অতঃপর তার বিনিময় ভক্ষণ করে। আর তৃতীয় আরেক ব্যক্তি হল যে ব্যক্তি কোন শ্রমিক নিয়োগ করে, অতঃপর তার থেকে পুরাপুরি কাজ আদায় করে নেয়, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না।” —(বুখারী, কিতাবুল বুয়ূ, বাব নং- ১০৬, হাদিস নং- ২১১৪)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ثَلاَثَةٌ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُمْ صَلاَةً مَنْ تَقَدَّمَ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ وَرَجُلٌ أَتَى الصَّلاَةَ دِبَارًا ( بمعنى بعد خروج وقتها ). وَرَجُلٌ اعْتَبَدَ مُحَرَّرًا» . ( أخرجه أبو داود و ابن ماجه , كلاهما من رواية عبد الرحمن بن زياد الإفرقيّ ).
“তিন শ্রেণীর মানুষের সালাত (নামায) আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন না; এক ব্যক্তি হলেন যিনি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করেন, অথচ ঐ সম্প্রদায়ের লোক তাকে অপছন্দ করে। আরেক ব্যক্তি হল যে সালাতের ওয়াক্ত অতিবাহিত হলে সালাত আদায় করতে আসে এবং তৃতীয় আরেক ব্যক্তি হল যে স্বাধীন ব্যক্তিকে ধরে গোলামে পরিণত করে।” — (আবূ দাউদ, সালাত অধ্যায়, বাব নং- ৬৩, হাদিস নং- ৫৯৩ ; ইবনু মাজাহ, কিতাবু ইকামাতিস সালাত ওয়াসসুন্নাতু ফীহা, বাব নং- ৪৩, হাদিস নং- ৯৭০ ; তারা উভয়ে আবদুর রহমান ইবন যিয়াদ আল-ইফরিকীর বর্ণনা থেকে বর্ণনা করেন)।
মজার ব্যাপার হলো, আপনি আল-কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যসমূহের মধ্যে এমন একটি বক্তব্যও খুঁজে পাবেন না, যা মানুষকে দাস-দাসী বানানোর কথা বলে; কিন্তু আল-কুরআনের আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যসমূহ থেকে শতাধিক বক্তব্যের সমাবেশ আছে, যেগুলো দাসকে গোলামী থেকে মুক্তি ও আযাদী দিতে আহ্বান করে ও উৎসাহিত করে।
ইসলামের অভ্যুদয়ের সময় দাসত্বের উৎস ছিল বহু রকমের; কিন্তু দাসত্ব থেকে মুক্তির কোন পদ্ধতি ও উপায়-উপকরণ ছিল না বললেই চলে। অতঃপর ইসলাম এসে তার শরী‘আত তথা নিয়ম-নীতির মধ্যে এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করল; ফলে মুক্তি ও আযাদী অর্জনের বহু ক্ষেত্র তৈরি করল এবং বন্ধ করল দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধকরণের অনেক পথ; আর অনেক অসিয়তের প্রবর্তন করল, যা এসব পথকে বন্ধ করে দেয়।
দাসপ্রথার অন্যতম পূর্বলক্ষণ ছিল বিভিন্ন যুদ্ধের সময়ে বন্দীকরণ পদ্ধতি। আর প্রত্যেক যুদ্ধেই আবশ্যকীয় ব্যাপার ছিল যুদ্ধবন্দী। তখনকার দিনের স্বতঃসিদ্ধ প্রথা অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীদের মান-সম্মান ও অধিকার বলতে কিছু ছিল না; আর তাদের ছিল দু’টি উপায়: হয় তাদেরকে হত্যা করা হত, আর না হয় দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হত।
কিন্তু ইসলাম এসে তৃতীয় এক পদ্ধতির প্রতি উৎসাহিত করল; আর তা হচ্ছে: যুদ্ধবন্দীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা ও তাকে মুক্ত করে দেয়া। আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“খাবারের প্রতি মহব্বত সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাবার দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই আমরা তোমাদেরকে খাবার দান করি, আমরা তোমাদের নিকট থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও না।” — (সূরা আল-ইনসান: ৮ - ৯)
আয়াতটির মর্মস্পর্শতা ও উৎসাহদান মন্তব্যের অবকাশ রাখে না। আর ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্রের আঙ্গিনায় বলেন:
সর্বপ্রথম মুসলিম ও তাদের শত্রুগণের মধ্যে সংঘটিত বদর যুদ্ধে মুসলিমগণ বিজয় লাভ করেন এবং তাতে আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক হয়। তারা বন্দী জীবনে নিপতিত হল, যেমনিভাবে রোম ও পারস্য সম্রাটদের মতো গণ্যমান্য ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বড় বড় রাষ্ট্রের যুদ্ধসমূহে যুদ্ধবন্দিত্বের শিকার হতো। যদি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হত, তবে তা তাদের জন্য যথাযথ হত; কেননা তারা ইসলামী দাওয়াতের সূচনা লগ্নে মুসলিমদেরকে অত্যন্ত কঠিন কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু, আল-কুরআনুল কারীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরকে দিকনিদের্শনা দিচ্ছে এইভাবে:
“হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বল, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট থেকে যা নেয়া হয়েছে, তা অপেক্ষা উত্তম কিছু তিনি তোমাদেরকে দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তারা তোমার সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করতে চাইলে, তারা তো পূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসভঙ্গ করেছে; অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” — (সূরা আল-আনফাল: ৭০ - ৭১)
এসব যুদ্ধবন্দীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের শুরু থেকে এই যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত অধিকাংশ মুসলিমদের সাথে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন ও নিপীড়নমূলক আচরণ করেছিল। তারা চেয়েছিল তাদেরকে ধ্বংস কর দিতে অথবা তাদেরকে দখল করতে। তাদেরকে এমনি-এমনি খুব দ্রুত ছেড়ে দেয়াটা কি আপনি উত্তম-নীতি বলে গণ্য করবেন??
জেনে রাখা দরকার যে, এই বিষয়টি রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের স্বার্থের সাথে জড়িত। এই জন্য আপনি দেখতে পাবেন যে, মুসলিমগণ বদরে [বদর মদীনার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম।] যুদ্ধবন্দীদের নিকট থেকে বিনিময় গ্রহণ করেছেন; আর মক্কা বিজয়ের দিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল:
" اذهبوا فأنتم الطلقاء "
“যাও, তোমার আজ সকলেই মুক্ত”।
বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরাজিত গোত্রের এক যুদ্ধবন্দিনীকে বিয়ে করে ঐ বন্দিনীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছিলেন; কারণ, তিনি ছিলেন ঐ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের অন্যতম একজনের কন্যা। ফলে মুসলিমগণের সকলেই ঐসব যুদ্ধবন্দীদের সবাইকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
আর এ থেকেই দাসত্বের আশ্রয় নেওয়ার সীমিত পরিসর ও ক্ষুদ্র স্থানগুলো জানতে পারবেন। দাসপ্রথাকে একেবারে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় নি; কারণ, সত্য ও ন্যায়ের বিরোধী এই কাফির যুদ্ধবন্দী হয় ছিল যালিম, অথবা যুলুমের সহায়তাকারী, অথবা যুলুম বাস্তবায়নের অথবা যুলুমের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের এক উপকরণ। তাই তার স্বাধীনতা ছিল অন্যদের উপর তার সীমালঙ্ঘন, বাড়াবাড়ি ও অহংকারের সুযোগ।
তবুও এর জন্য এবং অনুরূপ ব্যক্তিদের জন্য স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার সুযোগ ইসলামে অনেক এবং ব্যাপক। তেমনিভাবে ইসলামে দাস-দাসীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের পদ্ধতিসমূহে ন্যায়পরায়ণতা ও সম্প্রীতির সমাবেশ ঘটিয়েছে।
স্বাধীনতা লাভের উপায়-উপকরণসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম কতগুলো উপকরণ হল: যাকাতের এক অংশ গোলাম মুক্তির জন্য নির্ধারণ; ভুলজনিত হত্যার কাফ্ফারা, যিহার ও শপথের কাফ্ফারা; রমযানে ইচ্ছাকৃত রোযাভঙ্গের কাফ্ফারা। এছাড়াও রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় গোলাম মুক্তকরণে সাধারণভাবে সহানুভূতিমূলক আবেদন।
ঐসব দাস-দাসীদের প্রতি ন্যায় ও অনুকম্পার ভিত্তিতে কতিপয় কাঙ্ক্ষিত আচার-আচরণের সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত নিম্নে দেওয়া হলো:
১. তাদের মনিবদের মত খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদের নিশ্চয়তা:
আবূ দাউদ র. মা‘রুর ইবন সুয়াইদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমরা ‘রবযা’ [‘রবযা’ মদীনার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম।] নামক স্থানে আবূ যরের নিকট উপস্থিত হলাম, অতঃপর দেখা গেল যে, তাঁর গায়ে এবং তাঁর গোলামের গায়ে একই ধরনের চাদর। অতঃপর তিনি বললেন: হে আবূ যর! আপনি যদি আপনার গোলামের চাদরটা আপনার চাদরের সাথে মিলেয়ে ব্যবহার করতেন, তবে তা সুন্দর হত; আর তাকে আপনি অন্য আরেকটি কাপড় পড়িয়ে দিতেন? তখন তিনি (আবূ যর) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি:
«هم إخوانكم جعلهم الله تحت أيديكم فمن جعل الله أخاه تحت يده فليطعمه مما يأكل وليلبسه مما يلبس ولا يكلفه من العمل ما يغلبه فإن كلفه ما يغلبه فليعنه عليه» ( أخرجه البخاري ).
“তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়; আর সে যেন তাকে পোশাক হিসেবে তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে এবং যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, সে যেন এমন বোঝা তার উপর চাপিয়ে না দেয়। তার পরেও যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, এমন বোঝা যদি তার উপর চাপিয়ে দেয়, তবে সে যেন তাকে সহযোগিতা করে।” —(বুখারী, কিতাবুল আদব, বাব নং- ৪৪, হাদিস নং- ৫৭০৩)।
২. তাদের সম্মান রক্ষা করা:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওবার নবী আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من قذف مملوكه وهو بريء مما قال جلد يوم القيامة إلا أن يكون كما قال» ( أخرجه البخاري ).
“যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামকে অপবাদ দেবে, কিয়ামতের দিন তাকে অপবাদের শাস্তি স্বরূপ বেত্রাঘাত করা হবে; তবে সে যা বলেছে তা যথাযথ হলে ভিন্ন কথা।” —(বুখারী, কিতাবুল হুদুদ, বাব নং- ৩১, হাদিস নং- ৬৪৬৬)।
ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর গোলামকে স্বাধীন করে দিয়ে মাটি থেকে এক খণ্ড কাঠ অথবা অন্য কিছু হাতে নিয়ে বলেন: এর মধ্যে আমার জন্য এমন কোন প্রতিদান নেই, যা এর সমান হতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি:
« مَنْ لَطَمَ مَمْلُوكَهُ أَوْ ضَرَبَهُ فَكَفَّارَتُهُ أَنْ يُعْتِقَهُ » .( أخرجه أبو داود و مسلم ).
“যে ব্যক্তি তার গোলামকে চড় মারলো অথবা প্রহার করল, তবে তার কাফ্ফারা হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।” —( আবূ দাউদ, আদব, বাব নং- ১৩৪, হাদিস নং- ৫১৭০ ; মুসলিম, আইমান, বাব নং- ৮, হাদিস নং- ৪৩৮৮)।
৩. দীন ও দুনিয়ার বিষয়ে মর্যাদাবান গোলামকে স্বাধীন ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দেওয়া:
সালাতে গোলামের ইমামতি করাটা শুদ্ধ। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার একজন গোলাম ছিল, সে সালাতে তাঁর ইমামতি করত ... এমনকি মুসলিমগণকে গোলামের কথা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যখন সে তাদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং অন্যদের থেকে অধিক যোগ্য হয়।
স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার; আপতিত কোনো কারণ ব্যতীত কোন ব্যক্তির এই অধিকার হরণ করা যায় না। আর ইসলাম যখন দাসপ্রথাকে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে গ্রহণ করেছে (যা আমরা পরিষ্কারভাবে আলোচনা করেছি), তখন ইসলাম সেই মানুষকে দাস করেছে যে তার স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছে। ফলে যখন সে কোনো সীমালঙ্ঘনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পর যুদ্ধবন্দী হবে, তখন তাকে যুদ্ধবন্দিত্বের সময়কালীন আটক রাখা একটি সঠিক আচরণ।
আর যখন কোনো কারণে মানুষ দাস-দাসীতে রূপান্তরিত হয়; অতঃপর যখন তার পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসে, তার অতীতকে সে ভুলে যায় এবং সে এমন মানুষ হয়ে যায় যে অপকর্ম থেকে দূরে ও সৎকর্মের নিকটবর্তী, তখন তার স্বাধীনতা লাভের আবেদন মঞ্জুর করা হবে কি?
ইসলাম তার আবেদন মঞ্জুর করার পক্ষে অভিমত পেশ করে; ফিকাহবিদগণের কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করাকে আবশ্যক মনে করেন এবং কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করারকে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) মনে করেন।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদের ব্যাপারে অনেক ওসিয়ত করেছেন। এ কথা প্রমাণিত যে, তিনি যখন সাহাবাদের মাঝে বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের বণ্টন করেন, তখন তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: " استوصوا بالأسرى خيراً " (তোমরা যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর)। [এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদাসী স্বাধীন করার সওয়াব বর্ণনা করে আরও বলেন: “যে কেউ কোন দাস বা দাসী স্বাধীন করবে, আল্লাহ্ তাকে তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন।” [বুখারী ও মুসলিম] কুরআনুল কারীমেও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দাসমুক্তিকে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করে বলা হয়েছে: “তবে সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি। আর কিসে আপনাকে জানাবে— বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে: দাসমুক্তি...” [সূরা আল-বালাদ: ১১-১৩] — সম্পাদক।]
বর্ণিত আছে যে, ওসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোন অপরাধ করার কারণে তাঁর গোলামের কান মলে দিয়েছিলেন; অতঃপর তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে পরবর্তীতে বললেন: তুমি আস, অতঃপর আমার কানে চিমটি কাট। কিন্তু গোলাম তাতে অপারগতা প্রকাশ করল; তখন তিনি তাকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন, তারপর সে হালকাভাবে কানে চিমটি কাটতে শুরু করল। তখন তিনি তাকে বললেন: ভাল করে চিমটি কাট; কেননা আমি কিয়ামতের দিনের শাস্তি ভোগ করতে পারব না। তখন গোলাম বলল: হে আমার মনিব! আপনি যেই দিনকে ভয় করেন, অনুরূপভাবে আমিও তো সেই দিনকে ভয় করি।
আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন তাঁর গোলামদের সাথে হাঁটতেন, তখন তাদের কেউ তাঁকে পৃথক কেউ ভাবতে পারতেন না। কেননা তিনি তাদের সামনে চলতেন না এবং তারা যেই পোশাক পরিধান করত তিনিও সেই পোশাক পরিধান করতেন।
আর ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোন একদিন মক্কার পথ অতিক্রম করতেছিলেন, অতঃপর তিনি গোলামদেরকে তাদের মনিবদের সাথে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন; তখন তিনি রাগ হয়ে তাদের অভিভাবকদেরকে বললেন: এই জাতির কী হল যে, তারা তাদের খাদেমদের উপর নিজেদেরকে প্রাধান্য দেয়? তারপর তিনি খাদেমদেরকে ডাকলেন, তারা তাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া করল।
আর জনৈক ব্যক্তি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট প্রবেশ করলে সে তাঁকে ময়দার খামির তৈরি করতে দেখল, তখন বলল: হে আবূ আবদিল্লাহ! এ কী হচ্ছে? অতঃপর তিনি বললেন: আমরা খাদেমকে এক কাজে পাঠিয়েছি এবং আমরা তার উপর দু’টি কাজ এক সাথে চাপিয়ে দিতে অপছন্দ করলাম।
এটা হলো ইসলাম দাস-দাসীদেরকে যে অনুগ্রহ ও করুণা দেখিয়েছে তার কিছু নমুনা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/602/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।