মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অল্প কিছুক্ষণ পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি যে, ইসলামের আগমন ঘটেছে এমন অবস্থায় যে, দাসত্ব একটি আন্তর্জাতিক প্রথা, যা বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও জাতির নিকট স্বীকৃত; বরং দাসত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং সামাজিকভাবে প্রচলিত জরুরি বিষয়, যাকে কোনো মানুষ অপছন্দ করত না এবং তা রদবদল করার সম্ভাব্যতার ব্যাপারে কেউ চিন্তাও করত না।
আর পূর্বে আমরা আরও আলোচনা করেছি যে, ইসলামপূর্ব সময়ে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহে দাসত্বের উৎসধারা বা উৎপত্তিস্থলসমূহ ছিল বিভিন্ন প্রকৃতির, বিভিন্ন পদ্ধতির এবং ঐক্যবদ্ধ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংবলিত !!
এমতাবস্থায় ইসলাম কী করেছে?
ইসলাম প্রাচীনকালের দাসত্বের উৎস্থলসমূহ থেকে একটি ব্যতীত বাকী সবগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে; আর সে একটি উৎস বন্ধ না করার কারণ হচ্ছে, এ উৎসটি বন্ধ করা তার আওতাধীন ছিল না; কারণ, সে সময়ে যুদ্ধবিগ্রহের ময়দানে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল স্বীকৃত ছিল যুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত দাসত্বের প্রথাটি। আর তাই যে উৎসটি ইসলামে অবশিষ্ট ছিল, তা হলো যুদ্ধের মাধ্যমে সংঘটিত দাসত্ব।
এখন আমরা সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব:
‘কিতাবুশ্ শুবহাত’ ( كتاب الشبهات ) নামক গ্রন্থের লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী সেই সময় বহুল প্রচলিত ও প্রভাব বিস্তারকারী প্রথা ছিল, যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানো অথবা তাদেরকে হত্যা করা। [‘তারীখুল ‘আলম’ ( تاريخ العالم ) নামক ঐতিহাসিক বিশ্বকোষের ২২৭৩ পৃষ্ঠায় এসেছে, যার ভাষ্য হল: “৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে রোমানীয় সম্রাট ‘মুরীস’ তার অর্থলোভের কারণে ‘খান আল-আওয়ার’ এর হাতে বন্দী হাজার হাজার যুদ্ধবন্দীকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনতে অস্বীকার করে; ফলে ‘খান আল-আওয়ার’ তাদের সকলকে হত্যা করে।]
আর এই প্রথা ছিল খুবই প্রাচীন, যা ইতিহাসের অন্ধকার যুগেরে গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। তা প্রথম মানুষ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তনের উপক্রম হতে পারে; কিন্তু তা মানবতার জন্য তার বিভিন্ন ধাপে নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ে।
মানুষের এই পরিস্থিতিতে ইসলামের আগমন ঘটল এবং ইসলাম ও তার শত্রুগণের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হল; ফলে মুসলিম যুদ্ধবন্দীগণ ইসলামের শত্রুদের নিকট গোলাম বা দাসে পরিণত হলো, অতঃপর হরণ করা হলো তাদের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি এমন দুঃখ-কষ্ট ও যুলুমের শিকার হতে লাগল, যে আচরণ ঐ সময় দাস-দাসীদের সাথে করা হত !!
ইসলামের পক্ষে সেই সময় সম্ভব ছিল না যে, তার হাতে শত্রুদের মধ্য থেকে যারা যুদ্ধবন্দী হবে তাদেরকে সাধারণভাবে ছেড়ে দেওয়া; আর এটা সুন্দর রাজনৈতিক দর্শনও নয় যে, তুমি তোমার শত্রুকে তার যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে তোমার ব্যাপারে আরও উৎসাহিত করবে, যখন তোমার পরিবার, তোমার আত্মীয়-স্বজন ও তোমার দীন-ধর্মের অনুসারীগণ ঐসব শত্রুগণের নিকট লাঞ্ছনা, অপমান ও শাস্তির শিকার।
এমতাবস্থায় সেখানে সমান নীতি অবলম্বন করাটাই অধিক ন্যায়সঙ্গত নিয়ম, যার প্রয়োগ শত্রুতা প্রতিরোধে সক্ষম হবে, বরং এটাই একমাত্র ও অনন্য নিয়ম।
আর ইসলামের দৃষ্টিতে যে যুদ্ধ যুদ্ধবন্দীদের দাস-দাসীতে পরিণত করাকে বৈধ করে দেয়, তা হলো শরী‘য়ত সম্মত যুদ্ধ; আর শরী‘য়ত সম্মত যুদ্ধ হলো সেই যুদ্ধ, যা নিম্নোক্ত মৌলিক শর্তের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়:
১. আল্লাহর পথে শত্রুর সাথে লড়াই হবে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা’র কথাকে বাস্তবায়ন করার জন্য: তিনি বলেন:
“যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে।” [সূরা আন-নিসা: ৭৬] এর অর্থ হল: ইসলামে যুদ্ধের বিষয়টি বিজয় লাভের আকাঙ্খা, সুবিধা ভোগ করার লোভ এবং খ্যাতি ও সম্মান লাভের উদ্দেশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়; আরও প্রতিষ্ঠিত নয় উপনেশবাদ ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের উপর। যুদ্ধের এই বিষয়টি বিধিসম্মত করা হয় মূলত মানবজাতির হিদায়েত ও তাদেরকে সংশোধন করার জন্য, মানুষকে মানুষের গোলামী করা থেকে বের করে আল্লাহর ইবাদত করার দিকে নিয়ে আসার জন্য, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে বের করে তার প্রশস্ততার পথ দেখানোর জন্য এবং (বাতিল) ধর্মসমূহের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে বের করে ইসলামের ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের দিকে নিয়ে আসার জন্য।
আল্লাহর পথে লড়াই হতে হবে নিম্নোক্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের অধীনে:
(ক) মুসলিমদের পক্ষ থেকে আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯০]
(খ) বিদ্রোহী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য, যারা জোর জবরদস্তি করে মানুষকে তাদের দীনের ব্যাপারে ফিতনা বা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দুর হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” [সূরা আল-আনফাল: ৩৯]
(গ) তাগূতকে অপসারণ ও পথভ্রষ্ট স্বৈরাচারী শক্তিকে উৎখাত করার জন্য, যা ইসলামী দা‘ওয়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং জনগণের নিকট যাতে তা না পৌঁছাতে পারে সে জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“আর যদি তারা তাদের চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে কটুক্তি করে, তবে কুফরের নেতাদের সাথে যুদ্ধ কর; এরা এমন লোক যাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই; যেন তারা নিবৃত্ত হয়।” [সূরা আত-তাওবা: ১২]
২. মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কোনো জাতির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া বৈধ হবে না যতক্ষণ না তারা তাদেরকে সতর্ক করবে এবং তার নিকট তিনটি বিষয় পেশ করবে:
(ক) ইসলাম;
(খ) জিযিয়া;
(গ) যুদ্ধ।
- যদি তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে এবং সত্য দীনের অনুসরণ করে, তাহলে পরস্পরের মধ্যে কোনো প্রকার যুদ্ধ, ঝগড়া-বিবাদ ও শত্রুতা করার অবকাশ নেই; বরং তাদের অবস্থা মুসলিমগণের অবস্থার মত হয়ে যাবে; আমাদের জন্য যা থাকবে, তাদের জন্যও তাই থাকবে; আমাদের উপর যে দায়-দায়িত্ব থাকবে, তাদের উপরও সে দায়-দায়িত্ব থাকবে; তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও সৎ কাজের মানদণ্ড ব্যতীত একজনের উপর অন্য জনের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে না।
- আর তারা যদি ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইসলামী শাসনের ছায়ায় থেকে তাদের আকিদা-বিশ্বাসকে লালন করতে চায়, তবে মুসলিমগণ কর্তৃক তাদের নিরাপত্তা বিধানের বিনিময়ে ‘জিযিয়া’ কর প্রদানের শর্তে কারও পক্ষ থেকে কোনো প্রকার চাপ অথবা জোর জবরদস্তি ছাড়াই তাদের জন্য এই ধরনের স্বাধীনতা থাকবে। [মুসলিমগণ যদি তাদের নিরাপত্তা বিধানে অক্ষম হয়, তাহলে তাদের কর্তব্য হল তাদের প্রদত্ত ‘জিযিয়া’ কর তাদের নিকট ফেরত দেয়া, ‘হীরা’ এর পার্শ্ববর্তী শহরবাসীদের সাথে যেমন ব্যবহার করেছিলেন আবূ ‘উবায়দা রা.।] আর এই ব্যাপারটি বিস্তৃত হবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং তাদের ধর্মকর্ম পালনের ক্ষেত্রে, যে ব্যাপারটিকে তাগিদ করে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার বাণী:
“দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে।” [সূরা আল-বাকারা: ২৫৬]
ইসলামী বিশ্বে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ কর্তৃক তাদের ধর্মের উপর বর্তমান সময় পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকা এমন একটি অকাট্য দলিল যাতে কোনো বিতর্ক করার সুযোগ নেই যে, ইসলাম বল প্রয়োগ ও তরবারীর জোরে অন্যকে তা (ইসলাম) গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি।
আর এর পক্ষে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান ‘স্যার আরনুলদ’ তার ‘আদ-দা‘ওয়াত ইলাল ইসলাম ( الدعوة إلى الإسلام ) [ইসলামের দিকে আহ্বান] - নামক গ্রন্থের মধ্যে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
- আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ ও ‘জিযিয়া’ কর প্রদান করতে অস্বীকার করে, তাহলে তারা হবে অবাধ্য ও অপরাধী; বরং তারা ইসলামী দা‘ওয়াত জনগণের নিকট পৌঁছাবার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে তৎপর ও সংকল্পবদ্ধ গোষ্ঠী।
কেবল তখন, ও সে সময়ে তাদেরকে রাস্তা থেকে অপসারণ করার জন্য লড়াইয়ের পালা এসে যায়। কিন্তু তারা (মুসলিমগণ) তাদেরকে ‘জিযিয়া’ কর প্রদান অথবা রক্তপাত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যুদ্ধের পথ বেছে নেওয়ার সর্বশেষ সুযোগ দানের জন্য যুদ্ধের সতর্কবাণী উচ্চারণ না করা পর্যন্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় না।
৩. যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের মধ্যে যখন শত্রুগণ সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়বে, তখন মুসলিমগণের উচিৎ হবে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার বাণী বাস্তবায়নের জন্য সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়া; তিনি বলেন:
“আর তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে আপনিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবেন এবং আল্লাহ্র উপর নির্ভর করুন; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আনফাল: ৬১]
তবে শর্ত হলো ঐ সন্ধি বা শান্তিচুক্তি এমন না হওয়া, যাতে শত্রুর জন্য কল্যাণ রয়েছে এবং মুসলিমগণের জন্য ক্ষতিকারক।
আর এগুলো হলো ইসলামের দৃষ্টিতে শর‘য়ী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যাবলী এবং এগুলো হলো সেই যুদ্ধের সর্বোৎকৃষ্ট শর্তাবলী ও উদ্দেশ্য-লক্ষ্য।
সুতরাং এসব শর‘ঈ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগণের পক্ষ থেকে যখন যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে, (যার বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে) আর যখন তারা (মুসলিমগণ) তাদের থেকে যুদ্ধাদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটকাবে, তখন তাদেরকে তাদের (যুদ্ধবন্দীদের) সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে স্বাধীনতা দেওয়া হবে:
১. কোনো বিনিময় ছাড়াই তাদেরকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া, আর এটা হলো অনুগ্রহ বা অনুকম্পা।
২. বিনিময় গ্রহণ করে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া, আর এটা হলো মুক্তিপণ।
৩. হত্যা করা।
৪. দাস হিসেবে গ্রহণ করা।
* অনুগ্রহ ও মুক্তিপণ (প্রথম দু’টি) গ্রহণের বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার বাণীর কারণে, তিনি বলেছেন:
“কোন নবীর জন্য সংগত নয় যে তার নিকট যুদ্ধবন্দী থাকবে, যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন।” [সূরা আল-আনফাল: ৬৭]
* আর দাস-দাসী বানানোর বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে সুন্নাহ’র মধ্যে; নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কোনো যুদ্ধে নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, যেমন তিনি বনু কুরাইযার যুদ্ধে নারী ও তাদের সন্তানদেরকে দাস-দাসীতে পরিণত করেছেন।
আর এর উপর ভিত্তি করে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতার জন্য সাধারণ ক্ষমতা থাকবে যে, সে পছন্দ বা নির্বাচন করবে: অনুকম্পা, অথবা মুক্তিপণ, অথবা হত্যা করা, অথবা দাস-দাসী বানানো।
আর তার জন্য অধিকার থাকবে যে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিদ্যমান অবস্থার দুর্বলতা অথবা শক্তিমত্তার প্রতি নজর দিবেন ... এবং তার জন্য এই অধিকার থাকবে যে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে শত্রুগণের আচরণের বিষয়টির প্রতিও লক্ষ্য করবেন, যাতে তিনি তাদের (শত্রুগণের) যুদ্ধবন্দীদের সাথে মূলনীতির ভিত্তিতে আচরণ করতে পারেন; আর (শত্রুর সাথে) আচার-আচরণের মূলনীতি হলো তাদের আচরণের অনুরূপ আচরণ করা, যে নীতি আল-কুরআনুল কারীম প্রণয়ন করেছে, যখন তিনি বলেছেন:
অনুরূপভাবে তার অধিকার রয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অনুকম্পা ও মুক্তিপণের বুনিয়াদের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণের ব্যাপারে ইসলামী উদারতার দিকে লক্ষ্য করবেন, যাতে তিনি শক্তি-সামর্থ্য থাকার পরেও (প্রতিশোধ না নিয়ে) মহানুভবতা প্রদর্শন ও ক্ষমার ব্যাপারে শত্রুদেরকে মহান শিক্ষা দান করতে পারেন, যেমনটি করেছেন ‘সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী’ যখন তিনি হিত্তিনের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধে খ্রিষ্টানদের উপর জয় লাভ করার পরে যুদ্ধবন্দীদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন ও মুক্তিপণ গ্রহণ করার মাধ্যমে অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন; আর তিনি যদি তাদেরকে হত্যা করার ইচ্ছা করতেন, তাহলে এটাই হত সম-আচরণের নীতিমালায় ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ; কারণ, খ্রিষ্টানগণ প্রথম ক্রুশের যুদ্ধে একদিনে সত্তর হাজারেরও বেশি মুসলিম যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করেছে; আর আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যিনি বলেছেন:
ملكنا فكان العدل منا سجية
فلما ملكتم سال بالدم أبطح
وحللتم قتل الأسارى وطالما
غدونا على الأسرى نمنّ و نصفح
فحسبكم هذا التفاوت بيننا
و كل إناء بالذي فيه ينضح
অর্থাৎ-
“আমরা যখন ক্ষমতা লাভ করেছি, তখন ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন ছিল আমাদের নীতি ও স্বভাব।
আর যখন তোমরা ক্ষমতা লাভ করেছ, তখন রক্তে সয়লাব হয়েছে উপাত্যকা।
আর তোমরা যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করাকে বৈধ করে নিয়েছ, অথচ যতবার আমাদের সকাল হয়েছে যুদ্ধবন্দীদের উপর, আমরা অনুকম্পা ও ক্ষমা প্রদর্শন করেছি ততবার।
সুতরাং এটাই আমাদের ও তোমাদের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ে যথেষ্ট। বস্তুত: প্রত্যেকটি পাত্র তাই প্রদান করে যা তাতে রক্ষিত আছে।”
আমরা যা পর্যালোচনা করলাম, তা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতার জন্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ও ক্ষমতা রয়েছে: অনুকম্পা প্রদর্শন, অথবা মুক্তিপণ আদায়, অথবা হত্যা করা, অথবা দাস-দাসী বানানো (এই চারটি বিকল্প বিষয়) থেকে যেই বিষয়টির মধ্যে কল্যাণ আছে বলে তিনি মনে করবেন, তিনি তাই করতে পারবেন।
সুতরাং যখন মুসলিমদের নেতা মনে করবেন বর্তমানে দাস-দাসী বানানোর শরণাপন্ন হওয়ার দরকার নেই; কারণ বর্তমান বিশ্বে দাস-দাসী নিষিদ্ধ; তাছাড়া ইসলামের সাধারণ লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হলো গোলামদেরকে আযাদ করে দেওয়া এবং তাদেরকে স্বাধীনা দান করা; অনুরূপভাবে অনুকম্পা প্রদর্শন ও মুক্তিপণ আদায়ের বুনিয়াদের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে মহানুভবতার কুরআনিক নির্দেশ সংক্রান্ত নীতি গ্রহণের জন্য... তখন তিনি তার সামর্থ্যের আলোকে দাসত্বকে বাদ দিয়ে অপর যে কোনো একটিকে বাছাই করবেন, যাতে যুদ্ধের ভার (অস্ত্র) নামিয়ে ফেলার পর আমাদের হাতে আসা যুদ্ধবন্দীদের উপর তিনি সমাধানমূলক সিদ্ধান্ত পেশ করতে পারেন।
আর এটাই করেছেন ওসমানী খলিফা সুলাতান ‘মুহাম্মদ আল-ফাতেহ’, যখন তিনি যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানোর প্রথা বাতিল করার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় সন্ধি-চুক্তিতে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন; আর ঐ সময় থেকেই রাষ্ট্রসমূহ এ পরিভাষা সম্পর্কে অবগত হয় এবং যুদ্ধের মধ্যে দাস-দাসী বানানোর প্রথা নিষিদ্ধ হয়ে যায় !!
তবে এর অর্থ এই নয় যে, দাসত্ব প্রথা চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে গেছে এবং শর‘য়ীভাবে সেই অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে, যেমনটি কেউ কেউ ধারণা করে থাকে; বরং এর অর্থ হলো যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইমাম তার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেছে তার দাস-দাসী বানানোর ইচ্ছার উপরে অনুকম্পা প্রদর্শন ও মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা গ্রহণের দ্বারা; যা ইসলামী রাজনীতির অনবদ্য অংশ।
আবার কখনও কখনও এমন দিন আসতে পারে, যেদিন বিশ্বের মধ্যে সামাজিক শাসন প্রণালী আবারও নতুন করে যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানো বৈধ করার দাবি উত্থাপন করতে পারে; অবস্থা যখন এটা দাঁড়াবে তখন ইসলাম এ নতুন ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বৈধতার নীতির সামনে তার দু হাত বাঁধা অবস্থায় থমকে দাঁড়িয়ে থাকবে (আবার যুদ্ধ-বন্দী নীতি গ্রহণ করবে না) এটা কোনো বিবেকবান মেনে নিতে পারে না। বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী ইসলামকেও সে অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে; আর কোনো সন্দেহ নেই— তখন পারস্পরিক আচার-আচরণ ও লেনদেনটি হবে সমানে সমান বা অনুরূপ।
সারকথা:
ইসলাম প্রাচীনকালের দাসত্বের উৎস্থলসমূহ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে; তবে একটি মাত্র উৎস ছাড়া, আর তা হলো শরীয়ত সম্মত যুদ্ধে বন্দী হওয়া যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ করার উৎস, যখন মুসলিমগণের ইমাম এই দাস-দাসী বানানোর মধ্যে কল্যাণ আছে বলে মনে করেন।
আর ইমামের জন্য সুযোগ বা অধিকার রয়েছে যে, তিনি (যুদ্ধবন্দীদেরকে) দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ করার পরিবর্তে অনুকম্পা প্রদর্শন অথবা মুক্তিপণ গ্রহণের নীতি অনুসরণ করতে পারবেন, যখন যুদ্ধসমূহে দাস-দাসী বানানোর প্রথাকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিশ্ব সন্ধি-চুক্তি করবে, যেই কাজটি করেছেন ওসমানী সুলতান ‘মুহাম্মদ আল-ফাতেহ’ র. এই বিবেচনায় যে, ইসলাম তাকে যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ব্যাপারে চারটি বিষয়ে সুযোগ দান করেছে: অনুকম্পা প্রদর্শন, অথবা মুক্তিপণ আদায় করা, অথবা হত্যা করা, অথবা দাস-দাসী বানানো।
সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান ইসলাম, মুসলিম ও সমস্ত মানবতার কল্যাণের দিক বিবেচনা করে এর মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে নির্বাচন করার এখতিয়ার রাখেন।
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/743/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।