মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ ড. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সালেহ আস-সুহাইম
২৩
ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও তার উৎসসমূহ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/23
মানব রচিত ও রহিত হওয়া ধর্মগুলোর অনুসারীরা তাদের মাঝে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিতাবসমূকে পবিত্র করার একটা অভ্যাস গড়ে তুলেছে। সে সব কিতাব লেখা হয়েছিল প্রাচীন যুগে। ফলে এ সমস্ত কিতাব কে লিখেছে বা কে তার অনুবাদ করেছে বা কোন সময় লেখা হয়েছে, তার কোন সত্যতা জানা যায় না। বরং এগুলো এমন সব মানুষেরা লিখেছিল যাদের মাঝে ঐসব গুণ থাকে যা অন্য মানুষের মাঝেও থাকে। যথা- দুর্বলতা, ঘাটতি, প্রবৃত্তি, ভুল ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ইসলাম হচ্ছে অন্য ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা; কারণ তা হক বা সত্য মূলনীতির (অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত অহীর) ওপর নির্ভর করে তথা “কুরআন ও সুন্নাহ (হাদীস)”। নিচে এ দু’টির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:
(ক) মহাগ্রন্থ আল-কুরআন:
ইতোপূর্বে আপনি জেনেছেন যে, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত দীন। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা তার প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কুরআন অবতীর্ণ করেন, যা মুত্তাক্বীন তথা পরহেজগার বান্দাদের জন্য হিদায়াত এবং মুসলিমদের জন্য সংবিধানস্বরূপ। আর আল্লাহ যাদের (কুফুরী ও নেফাকী) থেকে আরোগ্য কামনা করেন তাদের অন্তরের রোগমুক্তি এবং যাদের মুক্তি ও (হিদায়াতের) আলো কামনা করেন তাদের জন্য আলোকবর্তিকাস্বরূপ। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ঐ সমস্ত মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত, যে কারণে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। [শাইখ মোস্তফা আস্ সুবায়ী প্রণীত “আস্ সুন্নাতু ওয়া মাকানতুহা ফিত্তাশরীঈল ইসলামী” ৩৭৩ নং পৃষ্ঠা।]
এটি আসমানী কিতাব হওয়ার ব্যাপারে নতুন নয়, যেমন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও রাসূল হওয়ার ব্যাপারেও নতুন ছিলেন না। বরং এর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের ওপর সহীফা অবতীর্ণ করেন, মূসা ‘আলাইহিস সালামকে তাওরাত ও দাউদ ‘আলাইহিস সালামকে যাবূর দিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করেন। এমনিভাবে ‘ঈসা মাসীহ ‘আলাইহিস সালাম ইঞ্জীল নিয়ে আসেন। এ সব কিতাব ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী, যা তিনি তাঁর প্রেরিত নবী ও রাসূলগণকে অহী করেছিলেন। এসব পূর্ববর্তী কিতাবের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এর অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে এবং তার মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধিত হয়েছে। পক্ষান্তরে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের হিফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই নিয়েছেন এবং তিনি তাকে পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের তত্ত্বাবধায়ক ও রহিতকারী করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর আমরা এ কিতাব (কুরআন)কে আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি হকের সাথে, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণকারী এবং ঐসব কিতাবের সংরক্ষকও।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৮]
আল্লাহ তা‘আলা এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন যে, এতে প্রত্যেক জিনিসের বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। ফলে মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয় এ কুরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে যা আকওয়াম (সরল, সুদৃঢ়)।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯] অতএব, তা মানবজাতিকে এমন পথ প্রদর্শন করে যা তাদের জীবনের সকল বিষয়ে সঠিক।
[আর যে চিন্তা-ভাবনা করে যে, কীভাবে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে? তাহলে সে কুরআনের মহত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারবে এবং সে তার ইচ্ছাকেও আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিশ্চয় এটি (আল-কুরআন) বিশ্বজাহানের রব হতে অবতারিত। রূহুল আমীন (জিবরীল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছেন। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৯২-১৯৪]
সুতরাং, যিনি কুরআন অবতীর্ণ করেন, তিনি হচ্ছেন বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ। আর যার মাধ্যমে তা অবতরণ হয়, তিনি রূহুল আমীন তথা জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম। আর যার অন্তরে তা অবতরণ করা হয় তিনি হচ্ছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।] [দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ কোনো কোনো সংস্করণে নেই। তবে তা থাকা উচিত বলে মনে হয়। -সম্পাদক]
এই কুরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সমস্ত নিদর্শন কিয়ামত অবধি অবশিষ্ট থাকবে তার অন্তর্গত একটি স্থায়ী নিদর্শন। অথচ পূর্ববর্তী নবীগণের জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের নিদর্শন ও মু‘জিযাসমূহও শেষ হয়ে যেত। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা এই কুরআনকে একটি স্থায়ী নিদর্শন বা প্রমাণস্বরূপ করেছেন।
এটা একটি পরিপূর্ণ প্রমাণপত্র ও সমুজ্জ্বল নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন তারা যেন কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব অথবা কুরআনের সূরার অনুরূপ দশটি সূরা অথবা একটি সূরা নিয়ে আসে। কিন্তু তারা কয়েকটি অক্ষর বা শব্দ বানাতেও অপারগ হয়। অথচ যে জাতির ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়, তারা ছিল ভাষার বিশুদ্ধতা ও অলঙ্কার শাস্ত্রের জাতি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৮]
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী তার প্রমাণ হলো: এর মধ্যে পূর্ববর্তী জাতির বহু সংবাদ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং সম্মুখে আগমনকারী যেসব ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে তা হুবহু ঐভাবেই ঘটেছে যেভাবে কুরআন সংবাদ দিয়েছে। আর অনেক বিষয়ে এমন সব বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ উল্লেখ করেছে, বিজ্ঞানীরা যার কিছু কিছু মাত্র বিষয়ে বর্তমান যুগে এসে উপনীত হয়েছে।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী, তার আরও প্রমাণ হলো: যে নবীর ওপর এই কুরআন অবতীর্ণ হয়, তাঁর কাছ থেকে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে অনুরূপ কিছু জানা যায়নি এবং তার সদৃশ কোনো বিষয়ও বর্ণনা করা হয়নি যা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বলুন, আল্লাহ যদি চাইতেন আমিও তোমাদের কাছে এটা তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে জানাতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি; তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৬] বরং তিনি ছিলেন এমন নিরক্ষর ব্যক্তি যে, তিনি পড়তে ও লিখতে জানতেন না। এমনকি তিনি কোনো শিক্ষকের নিকট গমন করেননি এবং কোনো শিক্ষকের কাছে বসেননি। এতদসত্ত্বেও তিনি বিশুদ্ধভাষী ও অলঙ্কার-শাস্ত্রবিদ কাফিরদেরকে কুরআনের অনুরূপ কিছু নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আপনি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বহস্তে কোনো দিন কিতাব লিখেননি যে, মিথ্যাবাদীরা সন্দেহ পোষণ করবে।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৮]
এই নিরক্ষর নবীর বৈশিষ্ট্য তাওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি এমন নিরক্ষর, যিনি পড়তে ও লিখতে জানেন না। অথচ ইয়াহূদী ও নাসারাদের যেসব পাদ্রী বা পণ্ডিতদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলের কিছু অবশিষ্ট আছে, তারা যে ব্যাপারে মতভেদ করে সে সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল এবং তারা পরস্পর যে বিষয়ে ঝগড়া করে সে বিষয়ে তারা তাঁর নিকট বিচার প্রার্থনা করেছিল। তাওরাত ও ইঞ্জিলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সংবাদ পরিষ্কারভাবে বলেছেন-
“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, উম্মী নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেন, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭ ]
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে ইয়াহূদী ও নাসারারা যে প্রশ্ন করেছিল আল্লাহ তা‘আলা তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে বলেন,
“বনী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতভেদ করে, নিশ্চয় এ কুরআন তার অধিকাংশ তাদের কাছে বিবৃত করে।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৭৬]
ইবরাহীম ফিলিপস নামক এক খ্রিষ্টান পাদ্রী ডিগ্রি অর্জনের জন্য তার ডক্টরেট থিসিসের মধ্যে কুরআনকে সন্দেহযুক্ত করার অপচেষ্টা চালান। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হন। বরং কুরআন তার দলীল প্রমাণাদি দ্বারা তাঁকে পরাভূত করে। ফলে তিনি তার অক্ষমতার ঘোষণা দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং তিনি তার ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। [দেখুন: ইবরাহীম খলীল আহমাদ রচিত “আল-মুসতাশরিকুন ওয়াল মুবাশশিরুন ফিল ‘আলামিল আরাবী ওয়াল ইসলামী গ্রন্থ।]
এমনভাবে একজন মুসলিম আমেরিকান নাগরিক ড. জাফরী লাং নামক এক ভদ্রলোককে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অনুবাদের একখানা কপি দিলে সে তা পাঠ করে অনুভব করে যে, এই কুরআন যেন তাকেই সম্বোধন করে কথা বলছে। আর তার সকল প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। তার ও তার অন্তরের মাঝে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা অপসারণ করছে। বরং সে বলে, নিশ্চয় যে সত্তা এই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, তিনি যেন আমাকে আমি যতখানি জানি তার চেয়ে অনেক বেশি জানেন। [ড. জাফরী লাং রচিত “আসসেরা‘উ মিন আজলিল ঈমান” অনুবাদ- ড. মুনযির আল-আবসী, দারুল ফিকর প্রকাশনা: ৩৪ নং পৃষ্ঠা।] কেনই বা নয়? যিনি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, তিনিই তো মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন মহা পবিত্র আল্লাহ।
“যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি জানেন না? তিনি তো সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-মূলক, আয়াত: ১৪] সুতরাং কুরআনুল কারীমের অনুবাদ পড়াটাই ড. জাফরীর ইসলামের মধ্যে প্রবেশ এবং উক্ত গ্রন্থ লেখার কারণ, যে গ্রন্থ থেকে আপনাকে রেফারেন্স দিলাম।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে তা নিয়ম-পদ্ধতি, আকীদাহ-বিশ্বাস, হুকুম-আহকাম, পারস্পরিক সম্পর্ক বা লেনদেন এবং আদব-কায়দাসমূহের মূলনীতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমরা (এই) কিতাবে কোনো বস্তুর কোনো বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে ছাড়িনি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮]
সুতরাং এর মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের আহ্বান, তাঁর নাম, সিফাত বা বৈশিষ্ট্য-গুণাবলি ও কর্মসমূহের বর্ণনা রয়েছে। তা নবী ও রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন তার সত্যতার দিকে আহ্বান করে। কিয়ামত দিবস, কর্মের প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশকে সাব্যস্ত এবং এ ব্যাপারে দলীল-প্রমাণাদি কায়েম করে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের সংবাদ ও দুনিয়াতে তাদের প্রতি যে নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যেসব শাস্তি ও দুর্ভোগ তাদের জন্য আখেরাতে অপেক্ষা করছে তা বর্ণনা করে।
এর মধ্যে অনেক জিনিসের এমন নিদর্শন, যুক্তি ও দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে, যে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, আর তা প্রত্যেক যুগের অনুকূলে হয়। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এর মধ্যে তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু পায়। এখন আমি আপনার জন্য শুধুমাত্র তিনটি উদাহরণ পেশ করব যা আপনাকে এর কিছুটা প্রকাশ করে দিবে। উদাহরণগুলো নিম্নরূপ:
“আর তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্টি, মজাদার এবং অপরটি লবণাক্ত, বিস্বাদ; উভয়ের মধ্যে করেছেন এক অন্তরায়, এক শক্ত ব্যবধান।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৫৩]
“অথবা গভীর সমুদ্রতলের অন্ধকার সদৃশ, যাকে আচ্ছন্ন করে ঢেউয়ের উপর ঢেউ, যার উপর মেধপুঞ্জ, অন্ধকারপুঞ্জ স্তরের উপর স্তর, এমনকি সে হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্যে কোনো আলো নেই।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪০]
আর সর্বজন বিদিত যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও সমুদ্রে গমন করেননি এবং সমুদ্রের গভীরতা অনুসন্ধানে সাহায্য করবে এ ধরনের কোনো বস্তুগত মাধ্যমও তাঁর যুগে ছিল না। সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত আর কে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ তথ্যাবলি জানিয়েছেন?
“আর অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে, তারপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ ভাণ্ডারে; পরে আমরা শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাকা-তে, অতঃপর ‘আলাকা-কে পরিণত করি গোশতপিণ্ডে, অতঃপর গোশতপিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিতে; অতঃপর অস্থিকে ঢেকে দেই গোশত দিয়ে; তারপর তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব, (দেখে নিন) সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!” [সূরা আল-মু‘মিনূন, আয়াত: ১২-১৪]
বিজ্ঞানীরা বর্তমান যুগে এসেই কেবল গর্ভস্থ সন্তানের (ভ্রূণের) সৃষ্টির ধাপ সম্পর্কে এই সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের উদঘাটন করে।
“গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। আর স্থল ও জলভাগে যা কিছু রয়েছে তাও তিনি অবগত রয়েছেন, তাঁর অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ থেকে একটি পাতাও ঝরে না এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না। এমনিভাবে যেকোনো সিক্ত ও শুষ্ক বস্তুও পতিত হয় না কেন, সমস্ত বস্তুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯] মানবজাতি এই ব্যাপক চিন্তা পর্যন্ত বিবেচনা করতে পারে না এবং এ ব্যাপারে চিন্তাও করে না অধিকন্তু তারা তা করতে সক্ষমও না। বরং বিজ্ঞানীদের কোনো দল যদি একটি অঙ্কুর অথবা একটি কীট-পতঙ্গ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার সম্পর্কে যা জানতে পেরেছে তা রেকর্ড করে, তাহলে সে কারণে আমরা খুবই বিস্ময় প্রকাশ করি। অথচ তারা যে ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করেছে তার চেয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রই তাদের কাছে গোপন রয়েছে।
ফ্রান্সের অধিবাসী বিজ্ঞানী ‘মরিস বুকাই’ তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনের মাঝে তুলনা করে এবং ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডল এবং মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে সাম্প্রতিক আবিষ্কার যেখানে পৌঁছেছে তা বর্ণনা করে। তাতে তিনি পেয়েছেন, সাম্প্রতিক কালের আবিষ্কার মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মধ্যে যা বর্ণিত হয়েছে তার হুবহু মিল রয়েছে। পক্ষান্তরে তিনি বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল, মানুষ এবং জীবজন্তুর সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্যাবলি অন্তর্ভুক্ত দেখেছেন। [দেখুন: মোরিস বুকাইল রচিত “আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন” ১৩৩-২৮৩ পৃষ্ঠা, তিনি ফ্রান্সের অধিবাসী ও খ্রিস্টধর্মাবলম্বী একজন ডাক্তার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।]
(খ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ তথা হাদীস:
আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেন এবং তার সদৃশ আরও কিছু অহী করেন তাই হলো সুন্নাতে নববী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ, হাদীস। যা কুরআনের ব্যাখ্যাকারী ও ভিত্তি। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জেনে রেখো! আমাকে কুরআন ও তার সাথে তার সদৃশ কিছু দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, ৪র্থ খণ্ড, ১৩১ পৃষ্ঠা। সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ; সুন্নাহ’র অপরিহার্যতা পরিচ্ছেদ, হাদীস নং ৪৬০৪, ৪র্থ খণ্ড, ২০০ নং পৃষ্ঠা।]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে, তিনি যেন কুরআনের মধ্যে যা রয়েছে তা বর্ণনা করেন যেমন— তাতে আছে ‘ইজমাল’ বা সংক্ষিপ্ত, তাতে আছে ‘খুসূস’ বা বিশেষ, তাতে আছে ‘উমূম’ বা ব্যাপক ইত্যাদি, আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর আমরা আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৪৪]
সুন্নাহ বা হাদীস হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় মূল উৎস। আর তা প্রত্যেক যা সহীহ সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, যার সূত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ধারাবাহিক, হোক তা কথা অথবা কাজ অথবা সম্মতি অথবা গুণ বা বৈশিষ্ট্য হোক না কেন।
আর তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহী; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবৃত্তি থেকে কোনো কথা বলেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তিনি প্রবৃত্তি হতে কথা বলেন না। তিনি যা বলেন তা তো এক অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। তাকে শিক্ষা দান করে মহা শক্তিশালী (ফিরিশতা)।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩, ৫]
তাঁকে যা আদেশ করা হয়েছে তিনি মানুষের নিকট তাই প্রচার করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমার প্রতি যা অহী করা হয় আমি তো শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করি। আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছুই নই।” [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত:৯]
পবিত্র সুন্নাহ হলো ইসলামের বাস্তবিক ব্যবহার। যেমন এতে রয়েছে, বিধি-বিধান, আকীদাহ-বিশ্বাস, ইবাদাত, পারস্পরিক সম্পর্ক বা লেনদেন, আদব-কায়দা ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা হুকুম দেয়া হয়েছে তা তিনি পালন করেছেন এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা করেছেন। আর তিনি যেভাবে করেন, ঠিক অনুরূপভাবে তাদেরকেও করার নির্দেশ দেন। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী তিনি বলেন,
“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ’র মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
সম্মানিত সাহাবীবৃন্দ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ও কর্মসমূহকে তাদের পরবর্তীদের (অর্থাৎ তাবে‘ঈদের) নিকট বর্ণনা করেন এবং তারা তাদের পরবর্তীদের (অর্থাৎ তাবে‘ তাবে‘ঈদের) নিকট বর্ণনা করেন, অতঃপর সেগুলোর সংকলন হাদীসের ভাণ্ডারে পরিণত হয়। আর হাদীস বর্ণনাকারী তার নিকট থেকে যারা বর্ণনা করবেন তাদের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেন এবং যারা তার নিকট থেকে গ্রহণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে তারা তলব করেন যে সে তিনি ব্যক্তির সমসাময়িক হবেন যে তার নিকট হতে গ্রহণ করেছে। যাতে করে সূত্রের ধারাবাহিকতা বর্ণনাকারী থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সংযুক্ত হয়। [ফলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে এই অনন্য ইলমী পদ্ধতি এবং এই নিয়ন্ত্রণের কারণে, মুসলিমদের মাঝে ‘ইলমুল জারহি ওয়াত্ তা‘দীল” এবং “মুসত্বলাহুল হাদীস” নামে এক প্রসিদ্ধ বিদ্যার সৃষ্টি হয়, এই দু’টি বিদ্যা ইসলামী উম্মাহ’র এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা পূর্বে আর কোনো দিন ছিল না।] আর বর্ণনা সূত্রের সকল বর্ণনাকারী যেন নির্ভরযোগ্য, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং বিশ্বস্ত হয়।
সুন্নাহ যেমন ইসলামের বাস্তবিক ব্যবহার, তেমনি তা কুরআনুল কারীমকে প্রকাশ করে এবং এর আয়াতের ব্যাখ্যা করে ও সংক্ষিপ্ত হুকুম-আহকাম বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তিনি কখনও কথার মাধ্যমে, কখনও কর্মের মাধ্যমে, আবার কখনও এতদুভয়ের মাধ্যমে একসাথে ব্যাখ্যা করতেন। আবার হাদীস কতিপয় বিধান ও আইন প্রণয়ন বর্ণনা করার দিক দিয়ে কুরআনুল কারীম হতে স্বাধীন।
কুরআন ও হাদীসের প্রতি এই বিশ্বাস রাখা ওয়াজিব যে, এই দু’টি দীন ইসলামের মূল দু’টি উৎস। যে দু’টির অনুসরণ করা, যার দিকে প্রত্যাবর্তন করা, যার আদেশ মান্য করা ও নিষেধকে বর্জন করা, যার সংবাদসমূহকে বিশ্বাস করা, এ দু’টির মধ্যে যেসব আল্লাহর নাম, তাঁর গুণাবলি ও তাঁর কর্মসমূহ রয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখা এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওলী-আওলিয়া মুমিনদের জন্য যা প্রস্তুত করেছেন ও তাঁর শত্রু কাফিরদের জন্য যার প্রতিশ্রুতি করেছেন তার প্রতি ঈমান রাখা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অতএব, আপনার রবের শপথ! তারা কখনও মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আপনাকে তাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক হিসেবে মেনে না নিবে, অতঃপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে আর তা শান্তভাবে পরিগ্রহণ না করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত:৭]
এই দীন বা ধর্মের উৎসের পরিচয় প্রদানের পর আমাদের উচিত হবে এর স্তরসমূহ বর্ণনা করা। আর তা হচ্ছে- ইসলাম, ঈমান এবং ইহসান। সংক্ষিপ্তভাবে এই স্তরগুলোর আরকান বা স্তম্ভসমূহ আলোচনা করব ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/23
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।