মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ ড. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সালেহ আস-সুহাইম
২৮
দীন ইসলামের কতিপয় আদর্শ ও গুণাবলি* [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, শাইখ আব্দুর রহমান ইবন নাসের আস-সা‘দী লিখিত, আদ-দুররাতুল মুখতাসারাতু ফী মাহাসিনিদ দীনিল ইসলামী; শাইখ আব্দুল আযীয আস-সালমান লিখিত, মাহাসিনুল ইসলাম।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/28
ইসলামের গুণাবলিকে (লিখে) পরিবেষ্টন করতে কলম অপারগ হয়ে যায় এবং এই দীনের শ্রেষ্ঠত্ব পুরোপুরি বর্ণনা করতে শব্দ গুচ্ছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণ আর কিছু নয়; বরং এর প্রকৃত কারণ হলো: এই দীন হচ্ছে আল্লাহর (একমাত্র মনোনীত) দীন। অতএব, চক্ষু যেমন আল্লাহকে উপলব্ধি করার দিক দিয়ে আয়ত্ত করতে পারবে না, তেমনি মানুষও জ্ঞানের মাধ্যমে তাকে আয়ত্ত করতে পারবে না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আতও, যার গুণাবলি বর্ণনা করে, কলম তাকে বেষ্টন করতে পারবে না। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আপনি যদি এই মজবুত ও নির্ভেজাল দীন এবং মুহাম্মাদী শরী‘আতের ব্যাপারে সূক্ষ্ম বিচক্ষণতার সাথে চিন্তা-ভাবনা করেন, বর্ণনা করার জন্য যার শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না, যার সৌন্দর্য বর্ণনার জন্য গুণ নাগাল পায় না। জ্ঞানীদের জ্ঞান যার উপরে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যদিও তা একত্রিত হয় এবং তা তাদের সবচেয়ে পরিপূর্ণ মানুষটির মধ্যে হয়। বরং উত্তম ও পূর্ণ জ্ঞান অনুযায়ী প্রত্যেকে ইসলামের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রত্যক্ষ করবে। সে অবশ্যই বুঝতে পারবে যে, জগতে এর চেয়ে পরিপূর্ণ, সুমহান ও মহত্তর শরী‘আতের (দীনের) আগমন ঘটেনি।
রাসূল যদি এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নাও নিয়ে আসতেন, তবে অবশ্যই এর জন্য প্রমাণ, নিদর্শন ও সাক্ষী হিসেবে এটাই যথেষ্ট হত যে, নিশ্চয় এ শরী‘আত আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে। আর এ শরী‘আত পুরোপুরিই এ সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, তাতে আছে পরিপূর্ণ জ্ঞান, পূর্ণ হিকমত, প্রশস্ত রহমত ও দয়া, তা বেষ্টন করে আছে অনুপস্থিত ও উপস্থিত সবকিছু, তাতে রয়েছে আদি ও অন্তের জ্ঞান। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে যেসব বড় বড় নি‘আমত দান করেছেন তার মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি তাদেরকে যে সব নি‘আমত দান করেছেন তাতে এর চেয়ে বড় নি‘আমত আর কিছু দেননি যে, তিনি তাদেরকে এ শরী‘আতের দিশা দিয়েছেন, এর অনুসারী করেছেন এবং তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন ঐ লোকদের সাথে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর এ কারণেই তিনি এ দীন ও শরী‘আতের প্রতি হেদায়াত করাকে তাঁর বান্দাদের ওপর অনুগ্রহ করার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪] তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে স্বীয় মহান নেয়া‘মতের কথা পরিচিতি প্রদান করে, স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং তাদেরকে এর অনুসারী করায়, তাঁর শুকরিয়া আদায় করার আহ্বান করে বলেন,
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩] [দেখুন: মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ: ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৪ ও ৩৭৫।]
এই দীনের যে আদর্শ ও গুণাবলির জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত তার কতিপয় আলোচনা করা হলো:
(১) এটি আল্লাহর দীন:
এটি এমন দীন, যা তিনি নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। এর দিকে আহ্বানের জন্য তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এবং মানবকে তিনি এর গণ্ডির মধ্যে থেকেই তাঁর ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর সাথে যেমন সৃষ্টিকুলের সাদৃশ্য নেই, তেমনিভাবে তাঁর দীন “ইসলামের” সাথে মানুষের আইন-কানুন ও তাদের রচিত দীনের সাদৃশ্য নেই। মহান আল্লাহ যেমন সাধারণ পূর্ণাঙ্গতায় গুণান্বিত হয়েছেন, তেমনিভাবে শরী‘আতকে পূরণ করার ক্ষেত্রে যা মানুষের জীবনকাল ও পরকালের জন্য উপযোগী এবং মহান স্রষ্টার অধিকারসমূহ ও তাঁর প্রতি বান্দার কর্তব্যসমূহ, বান্দার কতকের ওপর কতকের অধিকারসমূহ ও কতকের জন্য কতকের কর্তব্যসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর দীন ইসলামেরও সবধরণের পূর্ণাঙ্গতা রয়েছে।
(২) সকল বিষয়ের সমাহার বা ব্যাপকতা:
এই দীনের উল্লেখযোগ্য গুণাবলির একটি হচ্ছে- প্রত্যেক বিষয়ের সমাহার ও তার ব্যাপকতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কিতাবে আমরা কোনো বস্তুর কোনো বিষয়ই (লিপিবদ্ধ করতে) বাদ দেয়নি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮]
অতএব এই দীন স্রষ্টার সাথে যা সম্পৃক্ত এমন প্রত্যেক বিষয় যেমন: আল্লাহ তা‘আলার নাম, তাঁর গুণাবলি ও তাঁর অধিকারসমূহ এবং সৃষ্টজীবের সাথে যা সংশ্লিষ্ট এমন প্রত্যেক বিষয়, যেমন: আইন-কানুন, দায়িত্ব, আখলাক বা নৈতিকতা, লেনদেন ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই দীন পূর্ব ও পরের সমস্ত মানুষ, ফিরিশতামণ্ডলী এবং নবী ও রাসূলগণের সংবাদকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। তেমনি ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল, নক্ষত্ররাজি, সাগর-মহাসাগর, গাছ-পালা, ও নিখিল বিশ্ব সম্পর্কে আলোচনা আছে। সৃষ্টির কারণ, লক্ষ-উদ্দেশ্য ও তার সমাপ্তি, জান্নাত ও মুমিনদের ফলাফল। জাহান্নাম ও কাফিরদের শেষ পরিণতি সম্পর্কেও বর্ণনা রয়েছে।
(৩) সৃষ্টি জীবের সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক স্থাপন করে:
প্রত্যেক বাতিল দীন ও সম্প্রদায় মানুষকে মৃত্যু, দুর্বলতা, অক্ষমতা ও রোগ মুক্তির উদ্দেশ্যে তার মত মানুষের সাথে জুড়ে দেয়। বরং কখনও কখনও তাকে এমন মানুষের সাথে জুড়ে দেয়, যে কয়েক শত বছর পূর্বে মরে গিয়ে হাড্ডিসার হয়েছে। পক্ষান্তরে এই দীন তথা “ইসলাম” মানুষকে সরাসরি তার রবের সাথে জুড়ে দেয়। ফলে তাদের মাঝে কোনো পুরোহিত, সাধক এবং পবিত্র গোপন বলতে কিছু নেই । বরং তা সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টজীবের মাঝে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে দেয়; এমন সংযোগ যা অন্তরকে তার রবের সাথে সম্পৃক্ত করে। যার ফলে সে (হিদায়াতের) আলো পায়, (হক) পথের সন্ধান চায়, মর্যাদাবান ও বড় হয়, পূর্ণাঙ্গতা সন্ধান করে এবং নীচ ও নগণ্য হতে নিজেকে উঁচু মনে করে। সুতরাং প্রত্যেক অন্তর, যে তার রবের সাথে সম্পৃক্ত হয়নি সে চতুষ্পদ জীব-জন্তুর চেয়েও অধিক বিপথগামী।
আর এটি স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে এমন এক সংযোগ, যার মাধ্যমে তার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য কী তা জানতে পারে। ফলে সে জেনে বুঝে তাঁর ইবাদাত করে। তাঁর সন্তুষ্টির স্থান ও কারণসমূহ জানতে পারে, ফলে সে তা চায়। আর তাঁর অসন্তোষের স্থানসমূহও জানতে পারে, ফলে সে তা বর্জন করে।
এটি মহান সৃষ্টিকর্তা এবং দুর্বল ও অভাবী সৃষ্টির মাঝে সংযোগ স্থাপন। ফলে সে তাঁর নিকট সাহায্য, সহযোগিতা ও তাওফীক কামনা করে এবং সে আরও চায় যে, তিনি যেন তাকে চক্রান্তকারীর চক্রান্ত হতে ও শয়তানের খেল তামাশা হতে হিফাযত করেন।
(৪) দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের প্রতি মনোযোগ:
ইসলামী শরী‘আত দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের প্রতি গুরুত্বারোপ এবং চারিত্রিক উত্তম গুণাবলি পূর্ণ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আখিরাতের কল্যাণের বর্ণনা: এই শরী‘আত তার বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেছে। কোনো কিছুই উপেক্ষা করেনি। বরং তার কোনো কিছুই যেন অজ্ঞাত না থাকে, এজন্য তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছে। ফলে (পুণ্যবানগণকে) তার নিআ‘মতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর (গুনাহগারদেরকে) তার শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছে।
পার্থিব কল্যাণের বর্ণনা: আল্লাহ তা‘আলা এই দীনে মানুষের নিজ ধর্ম, জীবন, সম্পদ, বংশ, সম্মান ও জ্ঞানের সংরক্ষণের সঠিক বিধান করে দিয়েছেন।
চারিত্রিক উত্তম গুণাবলির বর্ণনা, যেমন: প্রকাশ্য ও গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা এর নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং এর যাবতীয় দোষ-ত্রুটি ও নিকৃষ্টতা থেকে নিষেধ করেছেন। বাহ্যিক উত্তম গুণাবলি যেমন: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা, ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত থাকা, সুগন্ধি ব্যবহার এবং সর্বদা সুন্দর ও সজ্জিত থাকা ইত্যাদি। খারাপ কর্মসমূহকে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন যেমন: যেনা-ব্যভিচার, মদপান, মৃত, রক্ত ও শূকরের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি। পবিত্র বস্তুসমূহকে তিনি খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অপচয় ও অপব্যয় করাকে নিষেধ করেছেন। পক্ষান্তরে আভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে: নিন্দিত আখলাক বা আচরণ ছেড়ে দেয়া এবং প্রশংসনীয় ও সুন্দর স্বভাবে সজ্জিত হওয়া। নিন্দিত আখলাক বা আচরণ, যেমন: মিথ্যা, পাপাচার, রাগ, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা, সংকীর্ণতা, দুনিয়া ও সুখ্যাতি অর্জনের লোভ, অহংকার, বড়াই, রিয়া বা কপটতা।
আর প্রশংসিত আখলাকের মধ্যে যেমন: উত্তম চরিত্র, মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের প্রতি ইহসান করা। ন্যায়পরায়ণতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যবাদিতা, উদার মন, ত্যাগ, আল্লাহর ওপর ভরসা, ইখলাস বা আন্তরিকতা, আল্লাহ ভীতি, ধৈর্য, শুকর ইত্যাদি। [দেখুন: ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ প্রণীত “আল- ই‘লাম বিমা ফী দীনিন নাসারা মিনাল ফাসাদি ওয়াল আওহাম, পৃ. ৪৪২-৪৪৫।]
(৫) সহজসাধ্য:
এই দীন যেসব গুণাবলিতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো সহজ ও সরলতা। অতএব, দীনের প্রতিটি পর্ব এবং প্রতিটি ইবাদাতরই সহজ । আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭৮]
আর এই সহজসাধ্যের সর্বপ্রথম তো এই যে, যদি কেউ এই দীনে প্রবেশ করতে চায়, তাহলে তার কোনো মানুষের মধ্যস্থতা গ্রহণ অথবা পূর্ববর্তী কোনো স্বীকারোক্তির প্রয়োজন নেই। বরং তার যা দরকার তা হচ্ছে: সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হবে এবং বলবে:
أشهد أن لا اله إلا الله و أن محمدا رسول الله
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই আর মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল বা দূত।” এই দুই সাক্ষ্যের উদ্দেশ্যের প্রতি দৃঢ় ঈমান আনয়ন করবে এবং তার দাবী ও চাহিদা মোতাবেক আমল করবে। অতএব যখন মানুষ সফর করে অথবা অসুস্থ হয়, তখন প্রত্যেকটি ইবাদাতের মধ্যেই সহজসাধ্যতা ও শিথিলতা প্রবেশ করে। ফলে সে গৃহে অবস্থানরত ও সুস্থ অবস্থায় যেমন আমল করত অনুরূপ আমলই তার (আমলনামায়) লেখা হয়। বরং মুসলিমের জীবন কাফিরের তুলনায় সহজ ও শান্তিময়। আর কাফিরের জীবন হয় দুঃখ-কষ্ট ও কঠিন। তেমনই মুমিনের মৃত্যুও হয় অতি সহজভাবে, ফলে তার আত্মা (এত আরামে) বের হয়, যেমন পাত্র থেকে (অতি সহজে ও আরামে) পানির ফোটা বের হয়।
“ফিরিশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়; তখন তারা বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জন্নাতে প্রবেশ কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩২]
পক্ষান্তরে কাফিরের মৃত্যুর সময় তার নিকট কঠোর ও খুব শক্তিশালী ফিরিশতাগণ উপস্থিত হয় এবং তাকে চাবুক দ্বারা প্রহার করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“(হে রাসূল) আর আপনি যদি (ঐ সময়ের অবস্থা) দেখতে পেতেন, যখন যালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণার সম্মুখীন হবে এবং ফিরিশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে: তোমাদের প্রাণগুলো বের কর, তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্পর্কে অহংকার প্রকাশ করতে, সেজন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩]
“(হে রাসূল) আর আপনি যদি (ঐ অবস্থা) দেখতে পেতেন, যখন ফিরিশতাগণ কাফিরদের রূহ কবজ করার সময় তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে আর বলে: তোমরা জাহান্নামের দহন-যন্ত্রণা ভোগ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫০]
(৬) ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতা:
নিশ্চয় যিনি ইসলামী শরী‘আতের প্রবর্তন করেছেন তিনি একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সাদা-কালো, নারী-পুরুষ সকল মানুষের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর হুকুম-আহকাম, ন্যায়বিচার ও রহমতের ক্ষেত্রে সবাই সমান। তিনিই নারী ও পুরুষ প্রত্যেকের জন্য তেমনই শরী‘আত করেছেন যা তাদের জন্য উপযোগী। এমতাবস্থায় শরী‘আত নারীর তুলনায় পুরুষকে সুবিধা দিবে অথবা নারীকে প্রাধান্য দিবে আর পুরুষের প্রতি যুলুম করবে অথবা সাদা বর্ণের মানুষকে কোনো বিশেষ গুণে বিশিষ্ট করবে আর কালো বর্ণের মানুষকে তা থেকে বঞ্চিত করবে এটা অসম্ভব। বরং সবাই আল্লাহর বিধানের ক্ষেত্রে সমান। একমাত্র তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ছাড়া তাদের মাঝে আর কোনো পার্থক্য নেই।
(৭) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ:
এই শরী‘আত একটি মহৎ ও সম্ভ্রান্ত গুণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তা হলো সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ। ফলে প্রত্যেক ক্ষমতাবান, জ্ঞানী, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর ও নারীর ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ওয়াজিব। এটা করবে আদেশ ও নিষেধের স্তর হিসেবে যেমন- সে আদেশ ও নিষেধ করবে তার হাত দ্বারা। কিন্তু যদি সে তা করতে সক্ষম না হয়, তবে মুখ বা যবান দ্বারা করবে। কিন্তু তাও যদি করতে সক্ষম না হয়, তবে সে তার অন্তর দ্বারা করবে। আর এরই মাধ্যমে সম্পূর্ণ (মুসলিম) জাতি স্বীয় জাতির তত্ত্বাবধায়ক হয়ে পড়বে। সুতরাং যারাই মঙ্গলজনক কাজে অবহেলা করে অথবা নিকৃষ্ট কাজ করে তাদের প্রত্যেককে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা প্রতিটি ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব। চাই সে শাসক হোক অথবা শাসিত হোক, তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং ঐ শার‘য়ী নিয়ম-নীতি মোতাবেক হবে, যা এই (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের) বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে।
এই বিষয়টি যেমন আপনি লক্ষ্য করছেন! (অর্থাৎ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী ওয়াজিব। যে সময়ে সমসাময়িক অনেক রাজনীতির লোকেরা গর্ববোধ করে বলে যে, তারা তাদের বিরোধী দলগুলোকে সরকারী কাজ-কর্মের প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করার এবং সরকারী আসবাবপত্র ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। (অথচ এটা তো ইসলাম পূর্বে দিয়ে দিয়েছে।)
এগুলো দীনের সামান্য কতিপয় সৌন্দর্য। আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে এর প্রতিটি পর্বে, প্রতিটি বিষয়ে এবং প্রতিটি আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে যেসব পরিপূর্ণ হিকমত, মজবুত বিধান, পূর্ণ সৌন্দর্য এবং এমন পূর্ণাঙ্গতা যা উদাহরণহীন বিষয় রয়েছে তা বর্ণনা করার জন্য ভাবা প্রয়োজন। আর যে ব্যক্তি এই দীনের (ধর্মের) বিধানাবলিকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণা করবে, সে সুনিশ্চিতভাবে জানতে পারবে যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তা এমন চির সত্য, যাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই এবং এমন হিদায়াত সম্বলিত (পথপ্রদর্শন) যার মধ্যে কোনো প্রকার ভ্রষ্টতা নেই।
সুতরাং আপনি যদি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হতে, তাঁর শরী‘আতকে মেনে চলতে এবং তাঁর নবী-রাসূল বা পয়গাম্বরগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান, তাহলে এখনও আপনার সামনে তাওবার দরজা খোলা রয়েছে। আর আপনার মহান রব, যিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, তিনি আপনার যাবতীয় পাপরাশীকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আপনাকে আহ্বান করছেন।
মানুষ তার মনের দিক দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল, তেমনিভাবে সে তার দৃঢ় ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও খুব দুর্বল। তাই সে তার ত্রুটি ও গুনাহের দায়ভার বহন করার ক্ষমতা রাখে না। ফলে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি সদয় হয়ে হালকা করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য তাওবার বিধান চালু করেছেন। সত্যিকার তাওবা হচ্ছে, গুনাহের কারণে আল্লাহর ভয়ে এবং তিনি তাঁর বান্দাদের জন্যে নি‘আমতসমূহের যা প্রস্তুত করে রেখেছেন তার আশায় পাপ পরিত্যাগ করা। পূর্বে তার দ্বারা যেসব পাপ হয়েছে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কৃত পাপ পুনরায় না করার ওপর দৃঢ় সংকল্প করা। জীবনের বাকী সময় সৎ আমলের দ্বারা পূরণ করা। [আসফাহানী, আল-মুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন পৃ. ৭৬। ঈষৎ পরিবর্তিত।]
লক্ষ্য করুন যে, এগুলো হলো আন্তরিক কাজ, যা তার ও তার রবের মাঝে হয়ে থাকে। যাতে কোনো পরিশ্রম, কষ্ট ও কঠিন কাজের যন্ত্রণাও নেই। বরং তা হচ্ছে অন্তরের কাজ; পাপ পরিত্যাগ করা এবং পুনরায় তা না করা। আর নিবারণের মাঝেই রয়েছে ত্যাগ ও শান্তি। [ইবনুল কাইয়্যেম, আল-ফাওয়ায়েদ পৃ. ১১৬।]
সুতরাং কোনো মানুষের হাত ধরে তাওবা করার প্রয়োজন নেই, যে আপনার সম্ভ্রম নষ্ট করবে, আপনার গোপনীয়তাকে প্রকাশ করে দিবে এবং আপনার দুর্বলতাকে ব্যবহার করবে। বরং তা আপনার ও আপনার রবের মাঝে নিভৃত গোপন কথা। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন ও হিদায়াত চান। তিনি আপনার তাওবা কবুল করবেন।
ইসলামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কোনো গুনাহ নেই এবং নিষ্কৃতি বা উদ্ধারকারী প্রতীক্ষিত কোনো মানুষও নেই। বরং যেমন তা অস্ট্রীয় নাগরিক মুহাম্মাদ আসাদ নামক এক ইয়াহূদী, যিনি পরবর্তীতে ইসলামের হিদায়াত প্রাপ্ত হন, তিনি তার গবেষণাকালে খুঁজে পান। তিনি বলেন, আমি কুরআনের মধ্যে যেকোনো স্থানে যা-ই বর্ণিত হয়েছে সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার প্রয়োজন খুঁজে পেতে সক্ষম হইনি (অর্থাৎ এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই তা খুঁজে পাইনি, বরং প্রয়োজন রয়েছে এটাই বুঝেছি) আর ইসলামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত প্রথম কোনো গুনাহ নেই; যা কোনো ব্যক্তি ও তার পরিণামের মাঝে অবস্থান করে তাকে সমস্যায় ফেলে। এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৯]
আর (ইসলামে) মানুষের কাছে দাবী করা হয় না যে, সে কিছু উৎসর্গ পেশ করুক অথবা নিজে নিজেকে হত্যা করুক, যাতে করে তার জন্য তওবার দরজা খোলা হয় এবং গুনাহ থেকে মুক্তি পায়। [মুহাম্মাদ আসাদ, আত-তারীক ইলাল ইসলাম পৃ. ১৪০, ঈষৎ পরিবর্তিত।] বরং যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অবশ্যই কোনো পাপী অন্য কারো পাপ বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮]
তাওবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা ও প্রভাব রয়েছে, এখানে কিছু উপস্থাপন করছি:
(১) বান্দা আল্লাহর ধৈর্য এবং তাঁর উদারতার প্রশস্ততা জানতে পারে যখন তিনি তার গুনাহকে গোপন রাখেন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে গুনাহের কারণে তাৎক্ষণিক তাকে শাস্তি দিতে এবং অন্যান্য বান্দার সামনে তাকে লাঞ্ছিত করতে পারতেন। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে তার জীবনযাত্রা ভালো হতো না। বরং তিনি তাকে গোপন করার মাধ্যমে সম্মানিত করেন, তাঁর ধৈর্য দিয়ে তাকে ঢেকে দেন এবং শক্তি, সামর্থ্য ও খাদ্য-খোরাক দিয়ে তাকে সাহায্য করেন।
(২) তাওবাকারী তার আত্মার হাকীকত জানতে পারে; বস্তুত আত্মা হচ্ছে, খারাপ কাজের উস্কানি-দাতা। সুতরাং তা হতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ ও ব্যর্থতা প্রকাশ পায়, তা আত্মার দুর্বলতা এবং ধৈর্য ও নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির ক্ষেত্রে তার অক্ষমতার প্রমাণ। আর সে আত্মার বিষয়ে, সেটাকে পবিত্র করতে ও হিদায়াত দিতে, চোখের পলক পরিমাণ সময়ের জন্যও, আল্লাহর অমুখাপেক্ষী নয়।
(৩) মহান আল্লাহ তাওবার বিধান প্রদান করেন, যাতে করে এর মাধ্যমে বান্দার সৌভাগ্যের সবচেয়ে বড় উপায় অর্জিত হয়। তাওবা হলো, আল্লাহর আশ্রয় বা শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। অনুরূপ তাওবার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন- দো‘আ, বিনয়, মিনতি, অভাব, ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদি অর্জিত হয়। ফলে আত্মা তাঁর স্রষ্টার একান্ত নিকটবর্তী হয়ে যায়। যা তাওবা ও আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া অন্য কোনো কিছু দ্বারা অর্জিত হয় না।
(৪) আল্লাহ তা‘আলা (তাওবার দ্বারা) তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তবে যারা তাওবা করে ও ঈমান আনয়ন করে এবং সৎ আমল করে; আল্লাহ তাদের পাপসমূহ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-ফুরক্বান, আয়াত: ৭০]
(৬) মানুষ তার সগোত্রীয়দের সাথে তাদের খারাপ আচরণ ও তাকে অপমান করার ক্ষেত্রে এমন আচরণ করা উচিত, যেমন আচরণ সে আল্লাহর কাছ থেকে আশা করে, যখন সে নিজে আল্লাহর সাথে খারাপ আচরণ করে, তাকে অমান্য করে ও তার সাথে পাপ করে। কেননা যেমন কর্ম তেমন ফল। সুতরাং মানুষ যখন অন্যের সাথে উত্তম আচরণ করে, তখন সেও আল্লাহর পক্ষ হতে অনুরূপ সদ্ব্যবহার পাবে। মহান আল্লাহ নিজ ইহসান দ্বারা তার খারাপ আচরণ ও পাপকে বদলিয়ে দিবেন, যেমন সে তার সাথে মানুষের খারাপ আচরণকে বদলিয়ে দেয়।
(৭) তাওবার কারণে সে জানবে যে, তার অনেক ভুল-ভ্রান্তি ও দোষ-ত্রুটি রয়েছে। ফলে এটা তাকে অন্য মানুষের দোষ-ত্রুটি ধরা হতে বিরত থাকতে বাধ্য করবে। আর অন্যদের দোষ-ত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হতে নিজেকে সংশোধন করার ব্যাপারে সে ব্যস্ত থাকবে। [দেখুন: মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫৮, ৩৭০।]
পরিশেষে এই পর্বটি শেষ করব এমন এক ব্যক্তির খবরের মাধ্যমে, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করে আরয করেন:
“হে আল্লাহর রাসূল! ছোট-বড় এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমি করিনি (আমি সকল প্রকার পাপের কাজ করেছি)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিবে না যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিন বার বললেন। লোকটি বললেন: জী, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই সাক্ষ্য প্রদান ঐ পাপকে মিটিয়ে দিবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে: নিশ্চয় এই সাক্ষ্য প্রদান ঐ সমস্ত সকল পাপকে মিটিয়ে দিবে।” [মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, খণ্ড ৬, পৃ. ১৫৫; ত্বাবারানী আল-মুজামুল আওসাত, খণ্ড ৭, পৃ. ১৩২; মু‘জামুস সাগীর, খণ্ড ২, পৃ. ২০১; আদ-দ্বিয়াউ ফিল মুখতারাহ, ৫/১৫১, ১৫২, তিনি বলেন, এর সনদ সহীহ; আল-মাজমু‘, খণ্ড ১০, পৃ. ৮৩।]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল:
“হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার মতামত কী, যে সকল প্রকার পাপ করেছে, কিন্তু আল্লাহর সাথে কোনো প্রকার শির্ক স্থাপন করেনি? ছোট বড় এমন কোন পাপের কাজই বাদ রাখেনি বরং সে তার নিজ হস্তে সব সম্পাদন করেছে, এমতাবস্থায় তার কি তাওবার ব্যবস্থা আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন সে বলল: আমি এই মুহূর্তেই সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, কেবলমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই আর আপনি হলেন আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, [অর্থাৎ তোমার তাওবা আছে] (এখন থেকে) তুমি মঙ্গলজনক কাজ করবে আর মন্দ ও পাপকাজ পরিহার করবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত সকল মন্দ কাজগুলোকে মঙ্গলময় কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল: আমার সকল প্রতারণা ও সকল পাপই কি পরিবর্তন হয়ে যাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হ্যাঁ, সকল পাপই পরিবর্তন হবে। সে তখন বলল: আল্লাহু আকবার। অতঃপর সে তাকবীর ধ্বনি বলতে বলতে লোক চক্ষুর আড়াল হয়ে যায়।” [ইবন আবু আসেম, আল-আহাদ ওয়াল মাছানি, খণ্ড ৫, পৃ. ১৮৮; ত্বাবারানী আল-মুজামুল আওসাত, খণ্ড ৭, পৃ. ৫৩, ৩১৪; আল-হাইছামী আল-মাজমা‘ এর মধ্যে বলেন, খণ্ড ১, পৃ. ৩২।]
সুতরাং ইসলাম ইতোপূর্বের সকল পাপকে মিটিয়ে ফেলে। আর খাঁটি তাওবাও তার পূর্বেকার সকল অপরাধকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস প্রমাণিত রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/28
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।