hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের মৌলিক নীতিমালা

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সালেহ আস-সুহাইম

মানব সৃষ্টি ও তার মর্যাদা
এই জগতে বসবাসের জন্য আল্লাহ তা‘আলা উপযুক্ত একটি জাতি সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই জাতি হলো মানুষ জাতি। আর আল্লাহর হিকমতের দাবি তিনি মানুষকে যে ধাতু দিয়ে সৃষ্টি করবেন তা হবে মাটি। তাই তিনি তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করেন। তারপর তিনি এই সুন্দর আকৃতি দিয়ে তাকে গঠন করলেন, যে আকৃতিতে মানুষের জন্ম হয়। অতঃপর যখন তার আকৃতি পরিপূর্ণ হলো, তখন তিনি তাতে আত্মা দিলেন। ফলে যখন মানুষ সুন্দর আকৃতি পেয়ে শুনতে, দেখতে, নড়াচড়া করতে ও কথা বলতে আরম্ভ করল তখন তাঁর প্রভু তাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিলেন। আর তার যা জানা প্রয়োজন সব তাকে শিক্ষা দিলেন। জান্নাতের সবকিছু তার জন্য বৈধ করে দিলেন এবং পরীক্ষা করার জন্য একটি মাত্র গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করলেন। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ করতে চাইলেন। তাই ফিরিশতাদের প্রতি তাকে সাজদাহ করার নির্দেশ দিলেন। সকল ফিরিশতা আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে সাজদাহ করল; কিন্তু একমাত্র ইবলিস অহংকার ও অবাধ্যতার বশবর্তী হয়ে সাজদাহ করা হতে বিরত থাকল। আদেশ অমান্য করার কারণে আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন এবং অহংকারের জন্য তিনি তাঁর রহমত থেকে তাকে বঞ্চিত করলেন। এরপর ইবলিস আল্লাহর নিকট কিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত বৃদ্ধি করার জন্য প্রার্থনা করল। তিনি তার এই প্রার্থনা কবুল করে তার আয়ুকাল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি করলেন। আদম ‘আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের মান-মর্যাদা দেখে ইবলিস-শয়তান হিংসায় ফেটে পড়ল এবং সে তার রবের শপথ করল: সমস্ত বনী আদমকে সে পথভ্রষ্ট করবে। তাই পথভ্রষ্ট করার জন্য সে তাদের সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে সর্ব দিক থেকে তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। কেবল আল্লাহর একনিষ্ঠ, সত্যবাদী ও মুত্তাকী বান্দাদেরকে সে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা আদম ‘আলাইহিস সালামকে শয়তানের চক্রান্তে পতিত হতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তান আদম ‘আলাইহিস সালাম ও তার স্ত্রী হাওয়্যাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করার জন্য এবং তাদের লজ্জাস্থান যা তাদের পরস্পরের নিকট গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য তার কুমন্ত্রণার জালে আবদ্ধ করল। সে তাদের সামনে শপথ করে বলল: আমি তোমাদের শুভাকাঙ্খী। এই গাছের ফল খেলে তোমরা ফিরিশতা হয়ে যাবে অথবা চিরকাল জান্নাতী হয়ে যাবে। মূলত এ কারণেই আল্লাহ তোমাদেরকে ঐ গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেছেন। ফলে মিথ্যা কুমন্ত্রণার ফাঁদে পড়ে তারা আল্লাহর নিষিদ্ধ গাছের ফল খেলেন। তাই নির্দেশ অমান্য করার কারণে প্রথম শাস্তি হিসেবে তারা বস্ত্রহীন হয়ে পড়লেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক করার ব্যাপারটি তিনি তাদেরকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিলেন। আদম ‘আলাইহিস সালাম তার ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা তাওবা করলে তিনি তার তাওবা কবুল করেন, তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তিনি তাকে মনোনীত করেন ও হিদায়াত দান করেন। আর দ্বিতীয় শাস্তি হিসেবে তিনি তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণের নির্দেশ দিলেন। কেননা এটাই তার বাসস্থান। এখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবনকাল অতিবাহিত করতে হবে। আর তিনি তাকে জানিয়ে দেন যে, এ মাটি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এখানে জীবন-যাপন করবে, এখানেই মারা যাবে, অবশেষে কিয়ামত দিবসে এই যমীন থেকেই পুনরায় উঠানো হবে।

অতঃপর আদম ‘আলাইহিস সালাম ও তার স্ত্রী হাওয়্যা আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে অবতরণ করলেন এবং বসবাস শুরু করলেন। তাদের বংশ বিস্তার হলো। তারা সবাই আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর ইবাদাত করতেন। আর আদম ‘আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহর নবী।

আল্লাহ তা‘আলা এই সংবাদের বর্ণনা দিয়ে বলেন,

﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَٰكُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنَٰكُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأٓدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ لَمۡ يَكُن مِّنَ ٱلسَّٰجِدِينَ ١١ قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسۡجُدَ إِذۡ أَمَرۡتُكَۖ قَالَ أَنَا۠ خَيۡرٞ مِّنۡهُ خَلَقۡتَنِي مِن نَّارٖ وَخَلَقۡتَهُۥ مِن طِينٖ ١٢ قَالَ فَٱهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَٱخۡرُجۡ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّٰغِرِينَ ١٣ قَالَ أَنظِرۡنِيٓ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٤ قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلۡمُنظَرِينَ ١٥ قَالَ فَبِمَآ أَغۡوَيۡتَنِي لَأَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَٰطَكَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ١٦ ثُمَّ لَأٓتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيۡنِ أَيۡدِيهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ أَيۡمَٰنِهِمۡ وَعَن شَمَآئِلِهِمۡۖ وَلَا تَجِدُ أَكۡثَرَهُمۡ شَٰكِرِينَ ١٧ قَالَ ٱخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُومٗا مَّدۡحُورٗاۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٨ وَيَٰٓـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ فَكُلَا مِنۡ حَيۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٩ فَوَسۡوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيۡطَٰنُ لِيُبۡدِيَ لَهُمَا مَا وُۥرِيَ عَنۡهُمَا مِن سَوۡءَٰتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنۡ هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّآ أَن تَكُونَا مَلَكَيۡنِ أَوۡ تَكُونَا مِنَ ٱلۡخَٰلِدِينَ ٢٠ وَقَاسَمَهُمَآ إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّٰصِحِينَ ٢١ فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٖۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡءَٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخۡصِفَانِ عَلَيۡهِمَا مِن وَرَقِ ٱلۡجَنَّةِۖ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَآ أَلَمۡ أَنۡهَكُمَا عَن تِلۡكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَآ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمَا عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٢٢ قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٢٣ قَالَ ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوّٞۖ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرّٞ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٖ ٢٤ قَالَ فِيهَا تَحۡيَوۡنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُونَ ٢٥﴾ [ الاعراف : ١١، ٢٥ ]

“আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমরা তোমাদের আকৃতি প্রদান করেছি, তারপর আমরা ফিরিশতাদেরকে বললাম, আদমকে সাজদা কর। অতঃপর ইবলিস ছাড়া সবাই সাজদাহ করল। সে সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না। তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সাজদাহ করলে না?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ সে বলল, ‘আমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ সে বলল, ‘আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে কারণে অবশ্যই অবশ্যই আমি আপনার সরল পথে মানুষের জন্য বসে থাকব। তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ তিনি বললেন, ‘এখান থেকে বের হয়ে যাও ধিকৃত, বিতাড়িত অবস্থায়। মানুষের মধ্যে যারাই তোমার অনুসরণ করবে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব।’ আর হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন, অতঃপর যেথা হতে ইচ্ছা খান, কিন্তু এ গাছের ধারে-কাছেও যাবেন না, তাহলে আপনারা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’ তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, ‘পাছে তোমরা উভয়ে ফিরিশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হও, এ জন্যেই তোমাদের রব এ গাছ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।’ আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন।’ অতঃপর সে তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বারা অধঃপতিত করল। এরপর যখন তারা সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু?’ তারা বলল, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু এবং যমীনে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’ তিনি বললেন, ‘সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে’।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১১-২৫]

আপনি যখন আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির এই মহান বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন, তখন দেখতে পাবেন; আল্লাহ তাকে সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মর্যাদার যাবতীয় সম্মানসূচক পরিচ্ছদগুলো তাকে দান করেছেন। যেমন, বিবেক শক্তি, জ্ঞান, প্রকাশ করার শক্তি, কথা বলার শক্তি, সুন্দর গঠন ও আকৃতি, মাঝারী শরীর, যুক্তি ও বিবেচনা শক্তি দিয়ে জ্ঞানার্জনের দক্ষতা এবং উত্তম চরিত্র যেমন- সততা, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। সুতরাং সে যখন মায়ের গর্ভের মধ্যে এক বিন্দু তুচ্ছ পানি ছিল তার সেই অবস্থার মাঝে এবং সে যখন পরিপূর্ণ সুন্দর আকৃতির মানুষ হয়ে সৎ আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে চিরস্থায়ী ‘আদন’ জান্নাতের অধিবাসী হবে আর তার নিকট ফিরিশতা প্রবেশ করবে, তার ঐ অবস্থার মাঝে কতই না তফাৎ! তাই তো তিনি বলেন,

﴿فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ ١٤﴾ [ المؤمنون : ١٤ ]

“অতএব (দেখে নিন) সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১৪]

সুতরাং, পৃথিবীটা একটি গ্রামের মতো, আর মানুষ তার অধিবাসী। সবকিছু তার কাজে ব্যস্ত। তার যাবতীয় কল্যাণ সাধনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের খিদমত ও প্রয়োজনের জন্যই এসব কিছু তৈরি করা হয়েছে। তাই তার হিফাযতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ দিন-রাত তার হিফাযতের কাজ করে যাচ্ছে। বৃষ্টি ও উদ্ভিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ তার রিযিকের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও কাজ করে যাচ্ছে। কক্ষপথসমূহকে অনুগত করা হয়েছে, তারা তার কল্যাণে চলমান। সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিকে অনুগত ও চলমান রাখা হয়েছে তার সময়ের হিসাবের জন্য এবং তার সার্বিক জীবনের স্থিতিশীলতা ঠিক রাখার জন্য। উপর আকাশের ভাসমান জগত যেমন বাতাস, মেঘমালা, পাখী ইত্যাদি সহ তাতে যা কিছু আছে সবই তার অনুগত। নিচের সমস্ত জগতও তার অনুগত, তার কল্যাণ সাধনের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন- যমীন, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদ-নদী, গাছপালা, ফলমূল, তৃণলতা, জীব-জন্তু ইত্যাদি আরও যা কিছু আছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡفُلۡكَ لِتَجۡرِيَ فِي ٱلۡبَحۡرِ بِأَمۡرِهِۦۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡأَنۡهَٰرَ ٣٢ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ دَآئِبَيۡنِۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ ٣٣ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤﴾ [ ابراهيم : ٣٢، ٣٤ ]

“আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আর যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন এবং যিনি নৌযানকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন যাতে তাঁর নির্দেশে সেগুলো সাগরে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে। আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চাঁদকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে। আর তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর কাছে যা কিছু চেয়েছ তা থেকে। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩২-৩৪ ] [মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ, ১ম খণ্ড; ৩২৭, ৩২৮ নং পৃষ্ঠা।]

মহান আল্লাহ যে মানুষকে পূর্ণ মর্যাদা দান করেছেন তার অন্যতম প্রমাণ হলো, তিনি পার্থিব জীবনে তার প্রয়োজনীয় সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং পরকালে উচ্চ আসনে তাকে পৌঁছে দেবে এমন প্রয়োজনীয় মাধ্যমও দান করেছেন; ফলে তিনি তার কাছে কিতাব অবতীর্ণ করেন, অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠান, যারা আল্লাহর বিধি-বিধান বর্ণনা করেন এবং তাঁর দিকে আহ্বান করেন।

তারপর আত্মিক, মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা আদম ‘আলাইহিস সালামের জন্য তার সত্তা থেকে তার স্ত্রী হাওয়্যাকে সৃষ্টি করেন। এর ফলে তিনি তার নিকট আরাম, প্রশান্তি, স্থিরতা অনুভব করলেন। তিনি শুধু একা নন; বরং এমন মিলনে তারা উভয়েই পরস্পরের মাঝে প্রশান্তি, তৃপ্তি, ভালোবাসা, ও অনুকম্পা অনুভব করলেন। কেননা উভয়ের শারীরিক, আত্মিক ও স্নায়ুবিক সেতু বন্ধনের মাঝে এক ধরনের সাড়া পরিলক্ষিত হয় এবং একজনের অনুপস্থিতি অন্যজনের মধ্যে খেয়াল করা যায়। তাদের ভালোবাসা ও ঐক্য শুধুমাত্র একটি নতুন প্রজন্ম গঠনের জন্য। এই সমস্ত আবেগ, অনুভূতি তাদের দু’টি আত্মাকে একত্রিত করেছে এবং ঐ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই অনুভূতিগুলো আত্মা ও স্নায়ুর জন্য প্রশান্তি, শরীর ও অন্তরের জন্য আরামদায়ক, জীবন ও জীবিকার স্থিরতা এবং রূহ ও অন্তরসমূহের মিলনস্বরূপ। এক কথায় পুরুষ ও নারীর সমানভাবে প্রশান্তির জন্য।

আল্লাহ তা‘আলা মানব সন্তানের মধ্য থেকে মুমিন বান্দাদেরকে বাছাই করে তার বন্ধু বানিয়েছেন এবং তাঁর আনুগত্যে তাদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। তারা তার বিধি মোতাবেক কাজ করে থাকেন। যাতে করে তারা জান্নাতে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকতে পারেন। আর তাদের মধ্য থেকেই নবী, রাসূল, ওলী ও শহীদগণকে চয়ন করে তাদেরকে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় নি‘আমত দান করেন, যা দ্বারা জীবন সুখকর হয়। আর তা হলো আল্লাহর ইবাদাত, তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর সঙ্গে গোপনে কথা বলার সুযোগ অর্থাৎ মোনাজাত। এ ছাড়া আরও অনেক নি‘আমত দিয়ে তাদেরকে ধন্য করেছেন, যেগুলো অন্য কেউ অর্জন করতে পারে না। যেমন- নিরাপত্তা, প্রশান্তি লাভ ও সফলতা ইত্যাদি। বরং এসবের চেয়ে বড় নি‘আমত হলো, তারা সে সত্যকে জানতে পেরেছেন যা নবী-রাসূলগণ নিয়ে এসেছেন, তারা সে সত্যের ওপর ঈমান এনেছেন। আর তিনিও তাঁর প্রতি তাদের ঈমান (বিশ্বাস স্থাপন) ও একনিষ্ঠতার পুরস্কারস্বরূপ আখেরাতে তাদের জন্য গচ্ছিত রেখেছেন জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ এবং আল্লাহর দয়ার মানানসই মহাসাফল্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন