মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ ড. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সালেহ আস-সুহাইম
২৯
ইসলাম না গ্রহণ করার পরিণতি
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/29
ইতোপূর্বে যেমন এ কিতাবে আপনার নিকট এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর দীন। আর তা সত্য এবং এমন দীন যা নিয়ে সমস্ত নবী ও রাসূলগণ আগমন করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তিনি তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন এবং যে তাঁর কুফুরী করে, তাকে কঠিন শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
আর যেহেতু আল্লাহ বিশ্বজগতের স্রষ্টা, অধিপতি ও কর্তৃত্বকারী, আর আপনি মানুষ হলেন তাঁর একটি সৃষ্টজীব। তাই তিনি আপনাকে সৃষ্টি করেন এবং বিশ্বজগতের সবকিছুকে আপনার অনুগত করেন, আপনার জন্য তাঁর বিধান রচনা করেন ও আপনাকে তাঁর আনুগত্য করার আদেশ দেন। সুতরাং আপনি যদি তাঁর ওপর বিশ্বাস আনেন এবং তিনি আপনাকে যা আদেশ করেছেন তা পালন করেন, আর তিনি আপনাকে যা হতে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার সাথে আখেরাত দিবসে যে স্থায়ী নি‘আমতের ওয়াদা করেছেন তা লাভ করবেন। দুনিয়াতে যেসব বিভিন্ন প্রকার নি‘আমত আপনাকে দান করেছেন তা অর্জন করবেন। আর জ্ঞানের দিক দিয়ে যার সৃষ্টি পরিপূর্ণ এবং যাদের অন্তর অধিক পবিত্র যেমন- নবী, রাসূল, নেককার, ও সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফিরিশতামণ্ডলী, আপনি তাদের মত হলেন।
আর যদি আপনার প্রভুর কুফুরী করেন ও অবাধ্য হন, তাহলে তো আপনি আপনার দুনিয়া ও আখেরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে আপনি তাঁর ঘৃণা ও ‘আযাবকে গ্রহণ করলেন। আর আপনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং যাদের জ্ঞান সবচেয়ে কম ও যাদের অন্তর সবচেয়ে নিম্নতর যেমন- শয়তান, অত্যাচারী, ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ও তাগুত, তাদের মত হলেন। এগুলো সংক্ষিপ্তাকারে মাত্র। নিম্নে বিস্তারিতভাবে কুফুরীর কিছু পরিণাম উপস্থাপন করলাম যথা:
(১) ভয়-ভীতি ও অশান্তি
যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর রাসূলগণের আনুগত্য করে, তাদেরকে তিনি পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“প্রকৃতপক্ষে তারাই শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী। যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং তাদের স্বীয় বিশ্বাসকে যুলুমের সাথে (শির্কের সাথে) সংমিশ্রন করেনি, আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮২]
আর আল্লাহ হলেন নিরাপত্তা দানকারী, তত্ত্বাবধায়ক এবং বিশ্বজগতে যা রয়েছে তার সবকিছুর অধিপতি। সুতরাং তিনি যদি কোনো বান্দাকে তাঁর ওপর ঈমান আনয়নের কারণে ভালোবাসেন, তাহলে তিনি তাকে নিরাপত্তা, প্রশান্তি ও স্থিরতা প্রদান করেন। আর মানুষ যদি তাঁর সাথে কুফুরী করে, তাহলে তিনি তার নিরাপত্তা ও শান্তি ছিনিয়ে নেন। সুতরাং আপনি তাকে দেখবেন, সে আখেরাত দিবসে তার পরিণাম সম্পর্কে সর্বদা ভীত অবস্থায় আছে। আর সে তার নিজের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ ও রোগ-ব্যাধি এবং দুনিয়াতে তার ভবিষ্যতের ব্যাপারেও ভীত। আর এই নিরাপত্তা-হীনতা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা না থাকার কারণেই গোটা বিশ্বে জান ও মালের ওপর বীমা তথা ইনস্যুরেন্সের মার্কেট গড়ে উঠেছে।
(২) সংকীর্ণ জীবন:
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেন এবং পৃথিবীর সবকিছুকে তার অনুগত করে দেন। আর তিনি প্রত্যেকটি মাখলুককে তার অংশ তথা রিযিক ও বয়স বণ্টন করে দেন। তাই তো আপনি দেখতে পান, পাখি তার রিযিকের খোঁজে সকাল বেলা বাসা হতে বেরিয়ে যায় এবং রুযী আহরণ করে। এডালে ওডালে ছুটাছুটি করে এবং মিষ্টি সূরে গান গায়। আর মানুষও এক সৃষ্টজীব যাদের রিযিক ও বয়স বণ্টন করা হয়েছে। সুতরাং সে যদি তার প্রভুর ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর শরী‘আতের ওপর অটল থাকে, তাহলে তিনি তাকে সুখ ও প্রশান্তি দান করবেন এবং তার যাবতীয় কাজকে সহজ করে দিবেন। যদিও তা জীবন গড়ার সামান্য কিছু হোক না কেন। পক্ষান্তরে সে যদি তার প্রভুর সাথে কুফুরী করে এবং তাঁর ইবাদাত করা হতে অহংকার প্রদর্শন করে, তাহলে তিনি তার জীবনকে কঠিন ও সংকীর্ণ করে দিবেন এবং তার ওপর চিন্তা ও বিষণ্ণতা একত্রে জড়িয়ে দিবেন। যদিও সে আরাম আয়েশের সকল উপকরণ এবং ভোগ সামগ্রীর বিভিন্ন প্রকার জিনিসের মালিক হয় না কেন। আপনি কি ঐ সমস্ত দেশে আত্মহত্যাকারীর আধিক্য লক্ষ্য করেননি, যারা তাদের জনগণের বিলাসিতার সমস্ত উপকরণের দায়িত্ব নিয়েছে এবং তাদের পার্থিব জীবনের দ্বারা আনন্দ উপভোগ করার জন্য আপনি কি বিভিন্ন ধরনের অভিজাত আসবাবপত্র ও চিত্ত বিনোদনের ভ্রমণের ক্ষেত্রে অপচয় লক্ষ্য করেননি? আর এ ব্যাপারে অপচয়ের দিকে যে জিনিসটি ধাবিত করে তা হলো- ঈমান বা বিশ্বাসশূন্য অন্তর, সঙ্কীর্ণতা অনুভব এবং এসব সংকীর্ণতাকে পরিবর্তনকারী ও নতুন কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে এই মনঃকষ্টকে দূর করার প্রচেষ্টা করা। আর আল্লাহ তা‘আলা তো সত্যই বলেছেন, তিনি বলেন,
“আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০] আর তার শরীর তার রবের জন্য আত্মসমর্পণ করে এবং তার নিয়মে চলে। কিন্তু কাফির তার সৃষ্টি তথা প্রকৃতির বিরোধিতা করে এবং সে তার স্বেচ্ছামুলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে তার প্রভুর আদেশের বিপক্ষ হয়ে বেঁচে থাকে। ফলে তার শরীর আত্মসমর্পণকারী হলেও তার পছন্দ হয় বিপক্ষ।
সে তার চারপাশের সৃষ্টিজগতের সাথে সংঘাতের মধ্যে থাকে। কারণ এই বিশ্বজগতের সবচেয়ে বড় থেকে আরম্ভ করে সবচেয়ে ছোট কীট-পতঙ্গ পর্যন্ত সবকিছু ঐ নীতি নির্ধারণের ওপর চলে, যা তাদের রব তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্র বিশেষ। তারপর তিনি ওটাকে ও পৃথিবীকে বললেন: তোমরা উভয়ে এসো (আমার বশ্যতা স্বীকার কর) ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল: আমরা অনুগত হয়ে আসলাম।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১১] বরং এই বিশ্বজগত ঐ ব্যক্তিকে পছন্দ করে যে আল্লাহর জন্য আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে তার সাথে মিলে যায় এবং যে তার বিরোধিতা করে তাকে সে অপছন্দ করে। আর কাফির তো হলো এই সৃষ্টি জগতের মাঝে অবাধ্য, যেহেতু সে নিজেকে প্রকাশ্যভাবে তা প্রভুর বিরোধী হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। এজন্য ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডল এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের জন্য; তাকে, তার কুফুরীকে এবং তার নাস্তিকতাকে ঘৃণা করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তারা বলে: দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ। এতে যে আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা দয়াময় আল্লাহর ওপর সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্য শোভনীয় নয়। আকাশসমূহে এবং পৃথিবীতে যারাই রয়েছে তারা সবাই আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে বান্দারূপে।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৮-৯৩]
মহান আল্লাহ ফির‘আউন এবং তার সৈন্যদল সম্পর্কে বলেন,
“আকাশ এবং পৃথিবী কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হয়নি।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ২৯]
(৪) সে মূর্খ হয়ে বেঁচে থাকে:
যেহেতু কুফর বা অবিশ্বাস হলো; মূর্খতা, বরং তা সবচেয়ে বড় মূর্খতা। কারণ কাফির তার প্রভু সম্পর্কে অজ্ঞ। সে এই বিশ্বজগৎকে দেখে; এটাকে তার প্রভু চমৎকারভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং সে নিজেকে দেখে যা এক মহান কাজ ও গৌরবময় গঠন। তারপরও সে এ বিষয়ে অজ্ঞ যে, এই বিশ্বজগতকে কে সৃষ্টি করেছেন এবং কে তাকে গঠন করেছেন, এটা কি সবচেয়ে বড় মূর্খতা নয়?
(৫) কাফির তার নিজের প্রতি এবং যারা তার চারপাশে রয়েছে তাদের প্রতি যুলুমকারী হিসেবে জীবন-যাপন করে:
কারণ সে নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যে জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়নি। সে তার প্রভুর ইবাদাত না করে বরং অন্যের ইবাদাত করে। আর যুলুম হচ্ছে কোন বস্তুকে তার অ-জায়গায় রাখা। আর ইবাদাতকে তার প্রকৃত হকদার ব্যতীত অন্যের দিকে ফিরানোর চেয়ে বেশি বড় যুলুম আর কী হতে পারে। লুকমান হাকীম পরিষ্কারভাবে শির্কের নিকৃষ্টতা বর্ণনা করে বলেন,
“হে বৎস! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয় শির্ক হচ্ছে মহা অন্যায়।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]
সে তার চারপাশের মানুষ ও সৃষ্টিকুলের প্রতি যুলুম করে; কারণ সে প্রকৃত হকদারের হক সম্পর্কে অবহিত হয় না। ফলে কিয়ামত দিবসে মানুষ অথবা জীব-জন্তু যাদের প্রতিই সে যুলুম করেছে, তারা সবাই তার সামনে এসে দাঁড়াবে এবং তার রবের কাছে তার নিকট থেকে তাদের প্রতিশোধ নেয়ার আবেদন করবে।
(৬) দুনিয়াতে সে নিজেকে আল্লাহর ঘৃণা ও ক্রোধের সম্মুখীন করে:
সে দ্রুত শাস্তিস্বরূপ বালা-মুসিবত ও দুর্যোগ অবতীর্ণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিশ্চিত আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক হতে শাস্তি আসবে না যা তাদের ধারণাতীত অথবা চলাফেরা করা অবস্থায় তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? তার তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না অথবা তাদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ধৃত করবেন না? তোমাদের রব তো অবশ্যই অনুগ্রহশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৪৫-৪৭]
“যারা কুফুরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্যে তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশে পাশে আপতিত হতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি আসবে, নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ৩১]
“তাদের প্রত্যেককেই তার অপরাধের জন্যে শাস্তি দিয়েছিলাম, তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি শিলাবৃষ্টি, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট শব্দ, কাউকে দাবিয়ে দিয়েছিলাম ভূ-গর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আর আল্লাহ তাদের কারো প্রতি যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪০]
আর আপনি যেমন আপনার চারপাশে যাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর আযাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মুসিবত লক্ষ্য করছেন।
(৭) তার জন্য ব্যর্থতা ও ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়:
সে তার যুলুমের কারণে, সবচেয়ে বড় ক্ষতিতে নিপতিত হয়, তা হারানোর মাধ্যমে যার দ্বারা তার হৃদয় ও আত্মা উপকৃত হতো। তা হলো- আল্লাহর পরিচয় লাভ এবং তাঁকে ডাকার মাধ্যমে তাঁর ঘনিষ্ঠতা অর্জন ও তাঁর প্রশান্তি লাভ।
সে দুনিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ সে দুনিয়াতে শোচনীয় ও দিশেহারা হয়ে জীবন-যাপন করে।
আর সে তার নিজের জানের ক্ষতি করে, অথচ এর জন্যই সে সম্পদ জমা করে। কারণ, তাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে নিজেকে সেই কাজে নিয়োজিত করে না এবং দুনিয়াতে সে এর দ্বারা সুখীও হয় না। কারণ সে হতভাগ্য হয়ে বেঁচে থাকে, হতভাগ্য হয়ে মারা যায় এবং কিয়ামত দিবসে তাকে হতভাগাদের সাথে পুনরুত্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যাদের নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে ঐসব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতি নিজেরাই করেছে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯]
সে তার পরিবারের ক্ষতি করে, কারণ সে আল্লাহর সাথে কুফুরী করা অবস্থায় তাদের সাথে বসবাস করে। সুতরাং তারাও দুঃখ ও কষ্টের ক্ষেত্রে তার সমান এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“(ফিরিশতাদেরকে বলা হবে) একত্রিত কর যালিম ও তাদের সহচরদেরকে এবং তাদেরকে, যাদের তারা ইবাদাত করতো-আল্লাহর পরিবর্তে এবং তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাও জাহান্নামের পথে।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ২২, ২৩]
(৮) সে তার রবের প্রতি অবিশ্বাসী এবং তাঁর নি‘আমতের অস্বীকারকারী রূপে জীবন-যাপন করে:
আল্লাহ তা‘আলা তাকে অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে হতে অস্তিত্বে আনয়ন করেন এবং তার প্রতি সকল প্রকার নি‘আমত পূর্ণ করেন। অতএব সে কীভাবে অন্যের ইবাদাত করে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে এবং তিনি ব্যতীত অন্যের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ...... কোন অস্বীকৃতি এর চেয়ে বেশি বড়? কোন অস্বীকৃতি এর চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট?
(৯) সে প্রকৃত জীবন থেকে বঞ্চিত হয়:
কারণ পার্থিব জীবনের যোগ্য মানুষ তো সেই, যে তার রবের প্রতি ঈমান রাখে, তার উদ্দেশ্যকে জানতে পারে, তার গন্তব্য তার জন্য স্পষ্ট এবং সে তার পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করে। অতএব, সে প্রত্যেক হকদারের হক সম্পর্কে অবহিত, কোনো হককেই সে অবজ্ঞা করে না এবং কোনো সৃষ্টজীবকে কষ্ট দেয় না। ফলে সে সুখীদের মত জীবনযাপন করে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সুন্দর জীবন লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এই পার্থিব জীবনে চতুষ্পদ জানোয়ারের মতো জীবন-যাপন করে; অতএব সে তার রবকে চেনে না এবং সে জানে না যে তার উদ্দেশ্য কী এবং এও জানে না যে, তার গন্তব্য-স্থল কোথায়? বরং তার উদ্দেশ্য হলো; খাবে, পান করবে এবং ঘুমবে। তাহলে তার মাঝে এবং সমস্ত জীব-জানোয়ারের মাঝে কী পার্থক্য? বরং সে তাদের চাইতে বড় বেশি বিপথগামী। মহান আল্লাহ বলেন,
“আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত। তারাই হচ্ছে গাফেল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৯]
“আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মত বরং তারা আরও বেশি পথভ্রষ্ট।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৪৪]
(১০) চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে:
কারণ কাফির এক শাস্তি থেকে আরেক শাস্তিতে স্থানান্তর হয়। তাই সে দুনিয়া থেকে বের হওয়া থেকে আরম্ভ করে আখেরাত পর্যন্ত ওর বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রণা ও বিপদ ভোগ করতে থাকে। এর প্রথম পর্যায়ে সে যে শাস্তির উপযুক্ত তা প্রদান করতে তার নিকট মালাকুল মাউত বা মৃত্যুর ফিরিশতা আগমন করার আগেই শাস্তির ফিরিশতা আগমন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“(হে রাসূল) আর আপনি যদি (ঐ অবস্থা) দেখতে পেতেন, যখন ফিরিশতাগণ কাফিরদের রূহ কবজ করার সময় তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫০]
তারপর যখন তার রূহ বের হয় এবং তার কবরে অবতরণ করে তখন সে এর চেয়ে বেশি কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়। আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউনের বংশধরের সংবাদ দিয়ে বলেন,
“সকাল-সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হবে আগুনের সম্মুখে, আর যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে ফির‘আউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৬]
তারপর যখন কিয়ামত হবে, সকল সৃষ্টিকুলকে পুনরুত্থিত করা হবে, মানুষের আমলসমূহ তাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে, তখন কাফিররা দেখবে; আল্লাহ তা‘আলা তাদের যাবতীয় আমলকে সেই কিতাবের মধ্যে লিখে রেখেছেন, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর উপস্থাপিত করা হবে ‘আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধিদেরকে দেখবেন আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে, ‘হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে।’ আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে; আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৪৯]
“সেদিন মানুষ তার নিজ হাতের অর্জিত কৃতকর্মকে দেখবে আর কাফির বলতে থাকবে: হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!” [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৪০]
কিয়ামত দিবসের সেই অবস্থার তীব্র আতঙ্কের কারণে, মানুষ যদি পৃথিবীর সবকিছুর মালিক হতো, তাহলে অবশ্যই তারা সেই দিনের ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য তা মুক্তিপণ দিতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা যুলুম করেছে তাদের কাছে যদি সমস্ত পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরো সম্পদ থাকে, তবুও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য মুক্তিপণ স্বরূপ সকল কিছু তারা দিয়ে দিতে প্রস্তুত হবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৭]
“তাদেরকে করা হবে একে অপরের দৃষ্টিগোচর। অপরাধী সেই দিনের শাস্তির বদলে দিতে চাবে আপন সন্তানকে। তার স্ত্রী ও ভাইকে। তার আত্মীয়-স্বজনকে, যারা তাকে আশ্রয় দিতো এবং পৃথিবীর সকলকে, যাতে এই মুক্তিপণ তাকে মুক্তি দেয়।” [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ১১-১৪]
কারণ সেই জায়গা (নিবাস) তো হলো প্রতিদানের জায়গা, তা কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা নয়। সুতরাং মানুষ তার কর্মের প্রতিফল অবশ্যই পাবে; দুনিয়ায় যদি তার কর্ম ভালো হয়, তবে তার প্রতিদানও ভালো হবে। আর দুনিয়ায় যদি তার কর্ম মন্দ হয়, তবে তার প্রতিদানও হবে মন্দ। আর আখেরাতের আবাসস্থলে কাফির যে মন্দ জিনিস পাবে তা হলো- জাহান্নামের শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার শাস্তি প্রদান করবেন, যাতে করে তারা তাদের মন্দ কর্মের কঠিন শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“সুতরাং যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যা দ্বারা, তাদের পেটে যা রয়েছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহা হাতুড়িসমূহ।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ১৯-২১]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/29
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।