HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষিপ্ত হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক, মাওলানা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সংক্ষিপ্ত

হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড

সংকলন :

ড. মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

মাওলানা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার

ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

পূর্বকথা
প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে মক্কা নগরীতে পবিত্র কাবা পুনঃনির্মাণের নির্দেশ পেলেন ইবরাহীম আ.। নির্মাণ শেষে সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হজে আসার আহবান জানিয়ে ঘোষণা উচ্চারণ করারও আদেশ পেলেন তিনি। নির্দেশ মতো ঘোষণা উচ্চারণ করলেন ইবরাহীম আ.। সে ইবরাহীমি ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বর্তমানে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতিবছর পবিত্র নগরী মক্কায় গমন করে থাকে হজ পালনের উদ্দেশ্যে।

হজ, হাতে-গোনা নির্ধারিত কয়েকটি দিনে পালিত হওয়ার বিষয় হলেও, একজন মানুষের জীবনকে ঢেলে সাজাতে সাহায্য করে নতুন করে। কেউ যখন হজ পালনের উদ্দেশ্যে ঘরসংসার ছেড়ে রওয়ানা হয় মক্কার পথে, মনে মনে সে ভাবতে লাগে যে আত্মীয়-পরিজন, জীবনের মায়া-মোহ, নিত্যদিনের ব্যস্ততা-দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদির শেকল ছিঁড়ে সে কেবলই ধাবমান হচ্ছে আল্লাহর পানে। নিজের একান্ত পরিচিত জীবন থেকে আলাদা হয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে সে আল্লাহর যিকির-স্মরণের ভিন্নতর এক জগতে। সে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে যেখানে আছে ‘বায়তুল্লাহ’ আল্লাহর ঘর। যেখানে আছে রাসূলুল্লাহ স. ও তাঁর সাহাবাদের ত্যাগ ও অর্জনের সোনালি ইতিহাস। যেখানে আছে ওইসব মানুষের ত্যাগের ইতিহাস যাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে প্রবাহ পেয়েছে আল্লাহর স্মরণ-ভক্তি-ভালোবাসা। যাদের জীবন-মৃত্যু নিবেদিত হয়েছে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হজ পালনকারীর হৃদয়ে এ ধরনের ভাবও উদিত হয় যে, এমন এক পবিত্র ভূমির দিকে সে পা বাড়াচ্ছে, আল্লাহ যেটাকে চয়ন করেছেন তাঁর শেষ হেদায়েত প্রকাশের জায়গা হিসেবে। এভাবে হজের সফর মানুষের হৃদয়ে শুরু থেকেই সৃষ্টি করে আল্লাহ-মুখী এক পবিত্র চেতনা যা হজের প্রতিটি কাজকে করে দেয় ইখলাসপূর্ণ।

হজ এক অর্থে আল্লাহর পানে সফর। হজে আল্লাহর রহমত-বরকত স্পর্শের এক উন্নততর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে একজন মানুষ। হজ এমন একটি ইবাদত যেখানে একত্রিত হয় আল্লাহর যিকির, শরীরের ক্লেশ-ক্লান্তি-শ্রম। যেখানে ব্যয় হয় উপার্জিত অর্থ। সে হিসেবে হজকে অন্যান্য ইবাদতের নির্যাস বললেও ভুল হবার কথা নয়।

মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয় বলে হাদীসে এসেছে। শরিয়তের সীমা-লঙ্ঘন ও অশালীন আচরণমুক্ত হজকারী নবজাতক শিশু তুল্য হয়ে ফিরে আসে স্বদেশে, এ কথাও ব্যক্ত হয়েছে হাদীসে স্পষ্ট ভাষায়। তবে এ ধরনের হজ কেবল পবিত্র ভূমি পর্যটন করে চলে এলেই হবে না, বরং তার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি হজকর্মে রাসূলুল্লাহ স. এর অনুসরণ-অনুকরণ-ইত্তেবা।

আবহাস এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটির মুহতারাম চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক, হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটির মুহতারাম পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান সাধারণ পাঠকবর্গের জন্য পকেট গাইড হিসেবে এ পুস্তিকাটি সংকলন করেছেন; যা মূলত হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটির প্রকাশিত গবেষণাধর্মী-গ্রন্থ ‘‘হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড’’এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ।

সংকলকদ্বয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম প্রশংসার দাবি রাখে। হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটির পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি রইল অসংখ্য ধন্যবাদ ও দোয়া। বইটি প্রকাশে আরো অনেকেই ঐকান্তিকভাবে শ্রম দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁদের সবার শ্রম কবুল করুন ও উত্তম জাযা দান করুন।

পরিশেষে আল্লাহর সমীপে আকুতি তিনি যেন আমাদের এই মেহনত-শ্রম কবুল করে নেন ও পরকালে আমাদের নাজাতের উসিলা বানান। আমীন!!

নুমান আবুল বাশার

চেয়ারম্যান

হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটি

হজ তিন প্রকার তামাত্তু হজ :
শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ এ তিনটি হজের মাস। হজের মাসসমূহে পৃথকভাবে প্রথমে উমরা ও পরে হজ আদায় করাকে তামাত্তু হজ বলে। অর্থাৎ ১লা শাওয়াল থেকে উকুফে আরাফা এর পূর্বে ৯ যিলহজ, যেকোনো মুহূর্তে উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া ও উকুফে আরাফার পূর্বে নতুন করে হজের ইহরাম বাঁধা এবং হজের যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করা। যারা হাদী সঙ্গে করে মক্কায় গমন করে না - বর্তমানে বহিরাগত হাজীদের কেউই হাদীর পশু সঙ্গে করে আনে না তাদের জন্য তামাত্তু হজই উত্তম। কারও কারও মতে সর্বাবস্থায় তামাত্তু হজ উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ স. বিদায় হজের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবাদের মধ্যে যারা হাদীর জন্তু সঙ্গে নিয়ে আসেননি তাদের সবাইকে তামাত্তু করার পরামর্শ দিয়েছেন, এবং নিজেও এই বলে কামনা ব্যক্ত করেছেন যে, যদি এ বিষয়টি পূর্বে প্রতিয়মান হত তাহলে হাদীর জন্তু সঙ্গে আনতাম না, আর যদি হাদী আমার সাথে না থাকত, তবে হালাল হয়ে যেতাম।

কেরান হজ :
উমরার সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে উমরা ও হজ আদায় করাকে কেরান হজ বলে। কেরান হজ আদায়ের প্রসিদ্ধ নিয়ম হল মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধার সময় হজ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা আদায় করা ও ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। হজের সময় হলে একই ইহরামে মিনা-আরাফায় গমন ও হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।

ইফরাদ হজ :
হজের মাসগুলোয় উমরা না করে শুধু হজ করাকে ইফরাদ হজ বলে। এ ক্ষেত্রে মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়। মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদূম (আগমনি তাওয়াফ) সম্পন্ন করা। ইচ্ছা হলে এ তাওয়াফের পর সাঈ-ও করা যাবে। সে ক্ষেত্রে হজের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সাঈ করতে হবে না। তাওয়াফে কুদূমের পর ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। ৮ যিলহজ একই ইহরামে হজের কার্যাদি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া। ইফরাদ হজকারীকে হাদী যবেহ করতে হয় না। তাই ১০ যিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে ইফরাদ হজকারী প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যায়।

ইহরাম :
ইহরামের মাধ্যমে হজ ও উমরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হারাম করা। হাজী সাহেবগণ হজ অথবা উমরা অথবা উভয়টা পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে যখন তালবিয়া পাঠ করেন তখন তাদের উপর কতিপয় হালাল ও জায়েয বস্ত্তও হারাম হয়ে যায়। একারণেই এ-প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।

ইহরাম বাঁধার সময় :
হজ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে ইহরাম ব্যতীত নির্দিষ্ট সীমারেখা তথা মীকাত পার হওয়া যায় না, বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার সময় বিমানে থাকা অবস্থাতেই মীকাত এসে যায়। মীকাত নিকটবর্তী হলে বিমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা সাধারণত হাজী সাহেবদেরকে এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেন। সে সময়ই ইহরামের নিয়ত করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ স. মীকাতের পূর্বে ইহরামের নিয়ত করেননি। তবে বিমানে আরোহণের পূর্বেই ইহরামের যাবতীয় প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করে নেবেন। শুধুমাত্র নিয়তটা বাকি রাখবেন। বিমানে আরোহণের পূর্বেও ইহরামের নিয়ত করতে পারেন, তবে তা খেলাপে সুন্নত হওয়ায় কেউ কেউ মাকরুহ বলেছেন। আপনি যদি প্রথমে মদীনায় যাওয়ার নিয়ত করে থাকেন তাহলে এ সময় ইহরামের নিয়ত করার দরকার নেই। কেননা মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে আরেকটি মীকাত পড়বে, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেই চলবে।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম :
বাংলাদেশ থেকে যারা হজ করতে যান তাদের অধিকাংশই তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের জন্য দু’বার ইহরাম বাঁধতে হয়। প্রথমবার শুধু উমরার নিয়ত করে মীকাত থেকে। দ্বিতীয়বার ৮ যিলহজ তারিখে মক্কা শরীফে যে জায়গায় আপনি আছেন সে জায়গা থেকে।

ইহরাম সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ম-কানুন নীচে উল্লেখ করা হল।

প্রথম ইহরাম : উমরার নিয়ত
শুরুতে আপনি ক্ষৌরকর্ম অর্থাৎ বগল ও নাভির নীচের চুল পরিষ্কার করুন। নখ কাটুন। মাথার চুল ছোট না করে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিন। ক্ষৌরকর্ম সেরে সাবান মাখিয়ে গোসল করুন। গোসল করা সম্ভব না হলে অজু করুন। অজু-গোসল সম্ভব না হলে কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। এরপর শরীরে, মাথায় ও দাঁড়িতে উত্তম সুগন্ধি মাখুন। স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে ইহরামের কাপড় আলাদা একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে হজ ক্যাম্প অথবা বিমান বন্দরে চলে যান। আপনার ফ্লাইটের সময় সূচী জেনে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সেরে গাড়িতে ওঠার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিন। ফরজ নামাজের সময় হলে ইহরামের কাপড় পরার পর নামাজ আদায় করুন। আর ফরজ সালাতের সময় না হলে তাহিয়্যাতুল অজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। সালাতের পর ইহরামের নিয়ত না করে বিমানে আরোহণ করুন। যেহেতু নিয়ত করেননি তাই তালবিয়া পাঠ করা থেকেও বিরত থাকুন। জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছার পূর্বে যখন মীকাতের ব্যাপারে ঘোষণা হবে তখন মনে মনে উমরার নিয়ত করুন ও মুখে বলুন لَبَّيِكَ عُمْرَةً (লাববাইকা উমরাতান্) এরপর পুরা তালবিয়া-পড়ে নিন। মাথায় টুপি থাকলে নিয়ত করার পূর্বেই তা সরিয়ে নিন।

বিমানের ভেতরে ইহরামের নিয়ত করা যদি ঝামেলা মনে করেন তাহলে বিমানে ওঠার পূর্বেই ফরয সালাত অথবা দু’রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর সালাত আদায় করে সালাম ফেরানোর পর মাথায় টুপি থাকলে তা খুলে, উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে, উমরার নিয়ত করুন ও তালবিয়া পাঠ করুন। ইহরামের আলাদা কোনো সালাত নেই। রাসূলুল্লাহ স. ফরজ সালাতের পর ইহরামের নিয়ত করেছিলেন।

১০
দ্বিতীয় ইহরাম : হজের নিয়তে মক্কা থেকে
মক্কা শরীফ যাওয়ার পর উমরা আদায়ের পর মাথার চুল খাটো করে অথবা মাথা মুন্ডন করে ইহরাম খুলে ফেলে স্বাভাবিক পোশাক-আশাক পরে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকুন ও যত বেশি সম্ভব বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করুন। ৮ যিলহজ আবার আপনাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। এবারের ইহরাম হবে হজের নিয়তে। এ ইহরামের জন্য কোথাও যেতে হবে না। আপনি যে বাসায় বা হোটেলে আছেন সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধুন। শুরুতে ভাল করে গোসল করে নিন। শরীরে, দাড়িতে ও মাথায় আতর মাখুন। ইহরামের কাপড় পরে নিন। ফরয সালাতের সময় হলে ফরয সালাত আদায় করুন। অন্যথায় তাহিয়্যাতুল ওজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। এরপর মনে মনে হজের নিয়ত করুন, ও মুখে বলুন لَبَّيِكَ حَجّاً (লাববাইকা হাজ্জান) এরপর পুরা তালবিয়া পড়ে নিন।

১১
ইহরাম অবস্থায় করণীয়
ইহরাম বাঁধার পর গভীর মনোনিবেশের সাথে আল্লাহর আযমত- বড়ত্ব, রহমত-মাগফিরাত ইত্যাদির কথা ক্ষণে ক্ষণে স্মরণ করুন। বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পড়ুন। তালবিয়া পড়ুন। তালবিয়া কোনো উঁচু জায়গায় ওঠার সময়, নিচু জায়গায় নামার সময়, বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, কারও কাছে বেড়াতে গেলে স শব্দে তালবিয়া পড়ুন। কোরআন তিলাওয়াত করুন। হজ-উমরা বিষয়ক বই পুস্তক পড়ুন। কোনো হক্কানী আলেম আলোচনা করতে থাকলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করুন। বিমানে আরোহণরত অবস্থায় সালাতের সময় হলে একাকীই সালাত আদায় করে নিন। অজু না থাকলে তায়াম্মুম করুন। সালাত কাযা করার অপেক্ষায় থাকবেন না।

৮ যিলহজ ইহরাম বাঁধার পর যেহেতু মূল হজ শুরু হবে তাই ইহরাম খোলা পর্যন্ত নিজেকে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যান্য হাজীদেরকেও নসিহত করুন, যেন সবাই তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যে সময় কাটায়। যারা হজের কার্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞ তাদেরকে আপনি যতটুকু জানেন ততটুকুই বলুন। হজ পালনের জন্য সহীহ-শুদ্ধ কোনো বই সাথে থাকলে তা পড়ে শুনান। এভাবে পুরা সময়টাকে ঈমানী ভাবগাম্ভীর্যতার আওতায় কাটান।

১২
ইহরাম অবস্থায় তালবিয়া পাঠ
لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكْ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ، لا شَرِيْكَ لَكْ

তালবিয়া হজের স্লোগান। তাই তালবিয়া পাঠের কোনো বিকল্প নেই। তালবিয়া পাঠ ফরয না ওয়াজিব না সুন্নত এ নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ইহরাম বাঁধার সময় তালবিয়া অথবা অন্য কোনো যিকর একবার পাঠ করা ফরয, এবং একাধিকবার করা সুন্নত।

উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়ার শুরু ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে এবং শেষ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার সময়ে। আর হজের ক্ষেত্রে ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে ১০ যিলহজ বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।

১৩
ইহরাম অবস্থায় বর্জনীয়
ইহরাম অবস্থায় সকলপ্রকার ঝগড়া- বিবাদ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল কোরআনে এসেছে,‘হজ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে। এ মাসগুলোয় যে ব্যক্তি নিজের ওপর হজ আরোপ করল সে যৌন-স্পর্শ, ঝগড়া-বিবাদ ও অন্যায় আচরণ থেকে দূরে থাকবে।’

শরীরের মাপে বা কোনো অঙ্গের মাপে সেলাই করা কাপড় পরিধান করা যাবে না। তবে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষের বেলায়। মহিলারা সেলাই-করা কাপড় পরতে পারবে, তবে হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবে না।

শরীরের কোনো অংশের মাপে সেলাই করা না হলে তা গায়ে জড়ানো যাবে। যেমন চাদর-কম্বল ইত্যাদি যেগুলোতে সেলাই রয়েছে। টাকা পয়সা সংরক্ষণের জন্য কোমরের বেল্ট, অথবা ইহরামের কাপড়ে সেলাই করা কোনো পকেট করায় কোনো অসুবিধা নেই। ইহরাম অবস্থায় টুপি-পাগড়ি-রুমাল তথা মাথার সাথে লেগে থাকে এমন কোনো আবরণ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা যাবে না।

ইহরাম অবস্থায় শরীরে বা কাপড়ে আতর-সুগন্ধি লাগানো যাবে না। স্বামী-স্ত্রীর মিলন, প্রেমালাপ, অশ্লীল কথা-বার্তা, প্রেমালিঙ্গন, চুম্বন, কামভাব নিয়ে একে অন্যকে স্পর্শ ইত্যাদিও করা যাবে না।

এক হাদীসে এসেছে : মুহরিম ব্যক্তি বিবাহ করে না, তাকে বিবাহ দেওয়াও হয় না, ও সে বিবাহের প্রস্তাবও দেয় না- সে হিসেবে ইমাম শাফী, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ -রাহিমাহুমুল্লাহ- ইহরাম অবস্থায় বিবাহ-শাদী এমনকী বিয়ের প্রস্তাব দেয়াও অবৈধ বলেছেন। তবে হানাফী মাযহাবে বিবাহের প্রস্তাব ও আকদ উভয়টারই অনুমতি আছে।

ইহরাম অবস্থায় স্থলজ জীবজন্তু শিকার করা অবৈধ।

ইহরাম অবস্থায় চেহারা ঢেকে রাখা নিষেধ। তবে যদি ধুলোর তুফান শুরু হয় অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে চেহারা ঢেকে রাখলে কোনো অসুবিধা হবে না।

১৪
নারীর ইহরাম
নারীর ইহরাম পুরুষের ইহরামের অনুরূপ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে নারীরা মাথা ঢেকে রাখবে, মুখ খোলা রাখবে, নেকাব পরে আবৃত করবে না। তবে গায়ের মাহরাম পুরুষের সম্মুখীন হলে মাথার ওপর থেকে ওড়না বা চাদর টেনে দিয়ে চেহারা ঢেকে পর্দা করবে। চাদর বা ওড়না চেহারার সাথে লেগে গেলেও কোনো সমস্যা নেই।

নারীদের ইহরামের কাপড় সাদা হওয়া জরুরি নয়। যে কোনো রঙের শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরে ইহরাম বাঁধতে পারে। তবে জাফরান ও ওর্স বা একপ্রকার লতা যা দিয়ে কাপড়ে হলুদ রঙ সংযোজন করা যায়- দিয়ে রঞ্জিত কাপড় ব্যবহার করা যাবে না।

ইহরাম অবস্থায় মহিলারা হাতমোজা ব্যবহার করতে পারবে না। তবে চাদর বা কাপড়ের নীচে হাত ঢুকিয়ে পর্দা করতে পারবে। পায়ের মোজা, অলংকার ইত্যাদি ব্যবহার করা জায়েয আছে।

মহিলারা হায়েজ অবস্থাতেও ইহরাম বাঁধতে পারবে। এ-পরিস্থিতিতে গোসল করে, ন্যাপকিন ব্যবহার করে, কেবল তাওয়াফ ব্যতীত, অন্যসব কাজ করতে পারবে।

১৫
পবিত্র মক্কায় প্রবেশের বিবরণ
মক্কায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে গোসল করা মুস্তাহাব। মক্কায় হাজীদের বাসস্থানে গিয়ে গোসল করে নিলেও, কারও কারও মতে এ

মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে।

উমরা আদায়ের পদ্ধতি

তালবিয়া পড়ে-পড়ে পবিত্র কাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পবিত্র কাবার চার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদুল হারামের উঁচু বিল্ডিং। এ বিল্ডিংটির যে কোনো দরজা দিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করুন। প্রথমে ডান পা এগিয়ে দিন। আল্লাহ যেন আপনার জন্য তাঁর রহমতের সকল দরজা খুলে দেন সে আকুতি নিয়ে মসজিদে প্রবেশের দোয়াটি পড়ুন। সম্ভব হলে নীচের দোয়াটি পড়ুন।

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ اَللهُمَ اغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أبْوَابَ رَحْمَتِكَ

যথার্থভাবে তাওয়াফ সম্পন্ন করার জন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখুন-

ছোট-বড় সকল প্রকার নাপাকি থেকে পবিত্র হয়ে তাওয়াফ করা।

তাওয়াফের শুরুতে মনে মনে নিয়ত করা। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেই চলবে। বিভিন্ন পুস্তকে তাওয়াফের যে নিয়ত লেখা আছে তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

সতর ঢাকা অবস্থায় তাওয়াফ করা।

হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (চুম্বন-স্পর্শ) অথবা ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা এবং হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসে তাওয়াফ শেষ করা।

হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতে না পারলে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র ডান হাত উঠিয়ে ইশারা করা ও বলা।

হাতিমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করা।

হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি ব্যতীত কাবার অন্য কোনো অংশ তাওয়াফের সময় স্পর্শ না করা। হাঁ, তাওয়াফ শেষ হলে বা অন্য কোনো সময় মুলতাযামের জায়গায় হাত-বাহু-গন্ডদেশ ও বক্ষ রাখা যেতে পারে।

মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ না করা।

পুরুষদের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব পবিত্র কাবার কাছ দিয়ে তাওয়াফ করা।

নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে একপাশ হয়ে তাওয়াফ করা।

খুশুখুজুর সাথে তাওয়াফ করা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলা।

রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে এই দোয়া পড়া।

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي اللآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

প্রত্যেক তাওয়াফে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া আছে এরূপ বিশ্বাস না করা।

সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করা।

তাওয়াফ করার সময় নারীদের স্পর্শ থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকা।

তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করা। জায়গা না পেলে অন্য কোথাও আদায় করা।

সালাত শেষে যমযমের পানি পান করা ও মাথায় ঢালা।

১৬
উমরার তাওয়াফ শুরু
গায়ের চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নীচে রেখে ডান কাঁধ খালি রাখুন। চাদরের উভয় মাথা বাম কাঁধের ওপর রেখে দিন, অর্থাৎ ইযতেবা করুন। মনে-মনে তাওয়াফের নিয়ত করুন। হাজরে আসওয়াদ সোজা মুখোমুখী দাঁড়ান। ভিড় না থাকলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে তাওয়াফ আরম্ভ করুন। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পদ্ধতি হল এই - হাজরে আসওয়াদের ওপর দু’হাত রাখুন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে আলতোভাবে চুম্বন করুন। আল্লাহর জন্য হাজরে আসওয়াদের উপর সিজদাও করুন। চুম্বন করা দুষ্কর হলে, ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করুন এবং হাতের যে অংশ দিয়ে স্পর্শ করেছেন সে অংশ চুম্বন করুন। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন ও স্পর্শ উভয়টাই অত্যন্ত কঠিন ও অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য। সে হিসেবে দূরে দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে, بِسْمِ اللهِ اَللهُ أكْبَرُ ‘বিসমিল্লহি আল্লাহু আকবার’ বলে, হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করুন। যেহেতু হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি তাই হাতে চুম্বনও করতে হবে না। পূর্বে হাজরে আসওয়াদ বরাবর একটি খয়েরি রেখা ছিল বর্তমানে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই হাজরে আসওয়াদ সোজা মসজিদুল হারামের দেয়ালে থাকা সবুজ বাতি দেখে হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসেছেন কি-না তা নির্ণয় করুন।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, স্পর্শ অথবা ইশারা করার পর কাবা শরীফ হাতের বাঁয়ে রেখে তাওয়াফ শুরু করুন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কাবা শরীফের কাছ দিয়ে তাওয়াফ করতে পারলে ভাল। রামলবিশিষ্ট তাওয়াফ হলে প্রথম তিন চক্করে রামল করুন। ছোট কদমে কাঁধ হেলিয়ে বীর বিক্রমে চলুন। অবশিষ্ট চার চক্করে চলার গতি স্বাভাবিক রাখুন। প্রত্যেক তাওয়াফে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া পড়তে হবে এ ব্যাপারে হাদীসে কিছু পাওয়া যায় না। যখন যে ধরনের আবেগ আসে সে ধরনের দোয়া করুন। আল্লাহর প্রশংসা করুন। রাসূলুল্লাহ স. এর ওপর দরুদ পড়ুন। যে ভাষা আপনি ভাল করে বোঝেন ও আপনার মনের আকুতি সুন্দরভাবে প্রকাশ পায় সে ভাষাতেই দোয়া করুন। রুকনে ইয়ামানি অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের কোণের কাছে এলে তা স্পর্শ করুন। রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার পর হাত চুম্বন করতে হয় না। সরাসরি রুকনে ইয়ামানিকে চুম্বন করাও শরিয়তসম্মত নয়। রুকনে ইয়ামানিথেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সা. পড়তেন,

رَبَّّنَا آتِنَا فِي الد ُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النّارِ

‘হে আমাদের প্রতিপালক আপনি আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন ও পরকালেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’

সাঈ যাতে যথার্থভাবে আদায় হয় সেজন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখুন -

সাঈ করার নিয়ত বা প্রতিজ্ঞা করা।

হাজরে আসওয়াদ ইস্তেলাম (চুম্বন, স্পর্শ বা ইশারা) করে সাঈর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।

অজু অবস্থায় সাঈ করা।

তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথে সাঈ করা।

সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে, হাত উঠিয়ে, দীর্ঘক্ষণ দোয়া করা।

পুরুষদের জন্য সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।

সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، إنَّكَ أنْتَ الأعَزٌ الأكْرَمُ .

দুআটি পড়া।

সাত চক্কর পূর্ণ করা।

সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা।

সাফা মারওয়া বরাবর মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। মাসআ অর্থাৎ সাঈ করার সুনির্ধারিত স্থানের বাইরে দিয়ে চক্কর লাগালে সাঈ হবে না।

দুই চক্করের মাঝে বেশি বিলম্ব না করা।

উপরোল্লেখিত পয়েন্টগুলো অনুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার সাঈ শত ভাগ শুদ্ধ হবে। এর কোনোটায় ত্রুটি থেকে গেলে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিন।

১৭
সাঈ শুরু :
সাঈ করতে যাচ্ছেন এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করুন। সাঈর পূর্বে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করুন। চুম্বন-স্পর্শ সম্ভব না হলে, এ ক্ষেত্রে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করার কোনো বিধান নেই। এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে আগান। সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে, রাসূলুল্লাহ স.এর অনুসরণে বলুন -

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ أبْدَءُ بِماَ بَدَءَ اللهُ بِهِ

‘নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন।’

এরপর সাফা পাহাড়ে ওঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। মোনাজাত করার জন্য দুই হাত কাঁধ বরাবর ওঠাবেন। এবং নীচের দোয়াটি দিয়ে মোনাজাত শুরু করবেন। রাসূলুল্লাহ স. সাফা পাহাড়ে ওঠে যেসব দোয়া পড়েছিলেন তন্মধ্যে এটি অন্যতম।

لَا إلَهَ إلّاَ اللهُ اَلله أكْبَرُ، لَا إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلَّ شَيءٍ قَدِيْرٌ، لَا إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَعَبْدَهُ وَهَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ .

‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, এবং আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, ও সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন, ও তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদেরকে পরাজিত করেছেন।’

এ দোয়াটি তিনবার পড়ুন। এরপর অন্যান্য দোয়া, যা আপনার মুখস্থ আছে তা পড়ুন। আরবী ভালভাবে না বুঝলে বাংলা ভাষায় আল্লাহর প্রশংসা করুন ও আপনার বৈধ ইচ্ছাগুলো তার দরবারে পেশ করুন। মাতা-পিতা আত্মীয় স্বজন সকলের জন্য দোয়া করুন।

দোয়া শেষ হলে মারওয়ার দিকে রওয়ানা হন। যেসব দোয়া আপনার মনে আসে পড়ুন। সাফা থেকে নেমে কিছু দূর এগুলেই ওপরে ও ডানে-বামে সবুজ বাতি জ্বালানো দেখবেন। এই জায়গাটুকু, পুরুষ হাজীগণ, দৌড়ানোর মত করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলুন। পরবর্তী সবুজ বাতির আলামত এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় চলার গতি স্বাভাবিক থাকবে । সবুজ দুই আলামতের মাঝে চলার সময় নীচের দোয়াটি পড়ুন-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، إنَّكَ أنْتَ الأعَزٌ الأكْرَمُ .

‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন ও রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি সমধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।’

মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছার পরে, সাফায় পৌঁছার পূর্বে যে আয়াতটি পড়েছিলেন, তা পড়তে হবে না। মারওয়ায় উঠে সাফার মতো পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে একই কায়দায় হাত উঠিয়ে মোনাজাত করুন। মারওয়া থেকে সাফায় আসার পথে সবুজ বাতির এখান থেকে আবার দ্রুত গতিতে চলুন। দ্বিতীয় সবুজ আলামতের এখানে এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। সাফায় এসে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে আবার মোনাজাত ধরুন। সাফা মারওয়া উভয়টা দোয়া কবুলের জায়গা । কাজেই তাড়াতাড়ি সাঈ সেরে নিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। ধীরে সুস্থে রাসূলুল্লাহ স. যেখানে যা করেছেন সেখানে সেটা সেভাবেই করার চেষ্টা করুন। কতটুকু করলে ফরয আদায় হয়ে যাবে, এই চিন্তা মাথায় আনবেন না। বরং এটা টার্গেট বানাবেন যে রাসূলুল্লাহ স. কোথায় কোন কাজ কীভাবে ও কত সময় করেছেন, আমিও ঠিক সেভাবেই করব।

একই নিয়মে সাঈর বাকি চক্করগুলোও আদায় করুন। সাঈ করার সময় সালাত দাঁড়িয়ে গেলে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করুন। সাঈ করার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে আরাম করে নিন। এতে সাঈর কোনো ক্ষতি হবে না।

আপনার শেষ সাঈ - অর্থাৎ সপ্তম সাঈ - মারওয়াতে গিয়ে শেষ হবে। শেষ হওয়ার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করতে যাবেন। মারওয়ার পাশেই চুল কাটার সেলুন রয়েছে।

১৮
উমরা কখন করা যায়
আরাফা দিবস, ও ১০ , ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ এই পাঁচ দিন উমরা করা উচিত নয়। তবে বছরের বাকি দিনগুলোতে যে কোনো সময় উমরা আদায়ে কোনো সমস্যা নেই।

১৯
হজের সফরে একাধিক উমরা
রাসূলুল্লাহ স. ও সাহাবায়ে কেরাম এক সফরে একাধিক উমরা করেননি। শুধু তাই নয় বরং তামাত্তু হজকারীদেরকে উমরা আদায়ের পর হালাল অবস্থায় থাকতে বলেছেন রাসূলুল্লাহ স.। তাই উত্তম হল এক সফরে একাধিক উমরা না করা। একাধিক উমরা থেকে বরং বেশি বেশি তাওয়াফ করাই উত্তম। তবে যদি কেউ উমরা করতেই চায় তাহলে হজের পরে করা যেতে পারে, যেমনটি করেছিলেন আয়েশা রা।

২০
৮ যিলহজ : মক্কা থেকে মিনায় গমন
৮ যিলহজ হজের জন্য ইহরাম বেঁধে মিনায় গমন করতে হবে। আপনার হোটেল বা বাসা থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। মসজিদুল হারামে গিয়ে ইহরাম বাঁধা সুন্নত নয়। এই ইহরামের পর কোনো তাওয়াফ-সাঈ নেই। অনেকেই হজের এই ইহরামের পর নফল তাওয়াফ করে সাঈ করে নেন। এরূপ করা হাদীসে নেই। সাহবায়ে কেরামদের কেউ এরূপ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। যেহেতু হাদীসে ও সাহাবায়ে কেরাম, সালফে সালেহীনদের যুগে এরূপ করার কোনো প্রমাণ নেই তাই এ বিষয়টি কঠিনভাবে বর্জন করা উচিত। নইলে সুন্নতের জায়গায় বিদয়াত কায়েম হবে নিঃসন্দেহে। তাই ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ সাঈ করতে যাবেন না, বরং গাড়ীর অপেক্ষায় থাকুন ও তালবিয়া পাঠে ব্যস্ত থাকুন। গাড়ী আসার পর তালবিয়া পড়ে পড়ে মিনার দিকে রওয়ানা হন। সূর্যোদয়ের পর মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া সুন্নত, তাই চেষ্টা করুন এ সুন্নতটিও যেন ছুটে না যায়। তবে যদি মুয়াল্লেমের গাড়ী চলে আসে তবে সূর্যোদয়ের পূর্বেই চলে যান। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

মিনায় গিয়ে যোহর আসর, মাগরিব এশা ও পর দিন ফজরের সালাত আদায় করুন। এ কয়টি সালাত মিনায় আদায় করা সুন্নত। আপনি মুকিম না মুসাফির সে কথা বিবেচনায় রেখে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাত দু’রাকাত করে কসর অথবা পূর্ণাঙ্গ আকারে পড়ুন। সাধ্য মত তালবিয়া পাঠে ব্যস্ত থাকুন। সময়-সুযোগ পেলে হজের মসলা-মাসায়েল সম্পর্কে পড়াশোনা করুন। বিজ্ঞ আলেমদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনুন। ৯ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া পড়ে পড়ে আরাফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন।

২১
৯ যিলহজ : উকুফে আরাফা আরাফা দিবসের ফযিলত
যিলহজ মাসের ৯ তারিখকে ‘ইয়াউমে আরাফা’ - আরাফা দিবস বলে। আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস। আল্লাহ তাআলা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি দোজখ থেকে মুক্তি দেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন- ওরা কী চায়? অন্য এক হাদীসে এসেছে,‘ আল্লাহ পাক আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়।

২২
আরাফা অভিমুখে রওয়ানা
৯ যিলহজ ভোরে ফজরের সালাত মিনায় আদায় করে সূর্যোদয়ের পর ‘তালবিয়া’ পড়া অবস্থায় রওয়ানা হতে হয় আরাফা অভিমুখে। তবে বর্তমানে হজযাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ফজরের পূর্বেই নিয়ে যাওয়া হয় আরাফায়। এটা নিশ্চয়ই সুন্নতের খেলাপ তবে সমস্যার কারণে এ সুন্নত ছুটে গেলে কোনো সমস্যা হবে না। আরাফার ময়দানে প্রবেশের পূর্বে গোসল করাকেও কেউ কেউ মুস্তাহাব বলেছেন।

২৩
আরাফার ময়দানে যোহর ও আসর একসাথে আদায় করা
রাসূলুল্লাহ (স) সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে যোহর আসর একসাথে আদায় করেছিলেন। বিদায় হজ সম্পর্কে যাবের রা. এর হাদীসে এসেছে,‘ নবী স. উপত্যকার মধ্য খানে এলেন। তিনি লোকজনকে লক্ষ্য করে খোতবা দিলেন। অতঃপর আযান দেয়া হল, একামত হল, এবং তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর একামত হল এবং তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। এদু’য়ের মাঝখানে অন্য কোনো সালাত আদায় করলেন না। (মুসলিম: হাদীস নং ১২১৮)

আরাফা দিবসের মূল আমল ‘দোয়া’।

আরাফা দিবসের মূল আমল দোয়া। রাসূলুল্লাহ স. আরাফার ময়দানে উকুফের সময় কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে বিরতিহীন ভাবে দোয়া করেছেন। এমনভাবে হাত উঠিয়ে তিনি দোয়া করেছেন যে একবার উট হেলে যাওয়ার কারণে উটের লাগাম পড়ে যায়। তিনি এক হাত দিয়ে লাগামটি ওঠালেন, ও অন্য হাত দোয়ার জন্য উঠিয়েই রাখলেন। সে হিসেবে উকুফে আরাফার সময় আমাদেরও উচিত হাত উঠিয়ে নিরন্তরভাবে দোয়া করে যাওয়া। কেননা আরাফার দিবস ও ময়দান আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেয়ার বড় সুযোগ। তাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে হলেও যেন এ সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে পারি সে ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।

২৪
মুযদালিফার পথে রওয়ানা
৯ যিলহজ সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর রওয়ানা হতে হয় আরাফা থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে। মাগরিবের সালাত আরাফার ময়দানে না পড়েই রওয়ানা হতে হয়, কেননা মুযদালিফায় গিয়ে এশার সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে মাগরিবের সালাত। রওয়ানা হতে হয় ধীরে-সুস্থে শান্তভাবে।

আরাফার সীমানা শেষ হলেই মুযদালিফা শুরু হয় না। আরাফা থেকে প্রায় ৬ কি.মি. পথ অতিক্রম করার পর আসে মুযদালিফা। মুযদালিফার পর ওয়াদি আল-মুহাস্সর। এরপর মিনা। আরাফা থেকে যেতে দু পাশে সামনাসামনি দুটি পাহাড় পড়বে। ওয়াদি মুহাস্সর থেকে এ পাহাড়দ্বয় পর্যন্ত মুযদালিফা। মুযদালিফার শুরু ও শেষ নির্দেশকারী বোর্ড রয়েছে।

২৫
মুযদালিফায় করণীয়
মুযদালিফায় পৌঁছার পর প্রথম কাজ হল মাগরিব ও এশা একসাথে আদায় করা। মাগরিব ও এশা উভয়টা এক আযান ও দুই একামতে আদায় করতে হবে। আযান দেয়ার পর একামত দিয়ে প্রথমে মাগরিবের তিন রাকা’ত সালাত আদায় করতে হবে। এরপর সুন্নত নফল না পড়েই এশার উদ্দেশ্যে একামত দিয়ে এশার দু’রাকা’ত কসর সালাত আদায় করতে হবে। ফরয আদায়ের পর বেতরের সালাত ও আদায় করতে হবে। মুযদালিফায় সালাত আদায়ের এটাই বিশুদ্ধ তরিকা। খেয়াল রাখতে হবে যে মুযদালিফায় পৌঁছার পর যদি এশার সালাতের সময় না হয় তবে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, এক বর্ণনা অনুসারে, মুযদালিফার রাতে মাগরীবের সময় পরিবর্তন করে এশার ওয়াক্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাগরীবের সালাতের পর কোনো সুন্নত বা যিকর নেই। তবে এশার পর বেতরের তিন রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। সালাত আদায়ের পর অন্য কোনো কাজ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ স. বিদায় হজের সময় সুবহে সাদিক পর্যন্ত শুয়ে আরাম করেছেন।

তবে এক ফাঁকে কঙ্কর কুড়িয়ে নিতে পারেন। কেননা মিনায় গিয়ে কঙ্কর খুঁজে পাওয়া রীতিমতো কষ্টের ব্যাপার। তবে মুযদালিফা থেকেই কঙ্কর নিতে হবে এ ধারণা ঠিক নয়। মটরশুঁটি আকারের কঙ্কর নেবেন যা আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করা যায়। ৭০ টি কঙ্কর কুড়াবেন। কঙ্কর পানি দিয়ে ধুতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ স. কঙ্কর ধুয়েছেন বলে কোনো হাদীসে পাওয়া যায় না।

মুযদালিফায় থাকাবস্থায় সুবহে সাদিক উদিত হলে আওয়াল ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করে কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়ায় মাশগুল হবেন। রাসূলুল্লাহ স. অবশ্য ফজরের সালাত আদায়ের পর ‘কুযাহ’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন ও উকুফ করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত। এ মসজিদটি মুযদালিফার ৫ নং রোডের পাশে অবস্থিত, এবং ১২ হাজার মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা রাখে। মসজিদটির পশ্চাদ্ভাগে ৩২ মিটার উঁচু দু’টি মিনারা রয়েছে অনেক দূর থেকেই যা স্পষ্ট দেখা যায়। এ মসজিদের এখানে রাসূলুল্লাহ স. উকুফ করেছেন এবং বলেছেন আমি এখানে উকুফ করলাম তবে মুযদালিফা পুরোটাই উকুফের স্থান। সম্ভব হলে উক্ত মসজিদের কাছে গিয়ে উকুফ করা ভাল।

উক্ত মসজিদের কাছে গিয়েই হোক বা যেখানে অবস্থান করছেন সেখানেই হোক ফজরের সালাত আদায়ের পর হাত উঠিয়ে দোয়ায় মাশগুল হবেন ও খুব ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও যিকর চালিয়ে যাবেন। এরপর সূর্যোদয়ের আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।

২৬
মিনায় পৌঁছে করণীয়
আজ ১০ যিলহজ । হজের বড় দিন। রাসূলুল্লাহ স. এই দিন সাহাবীগণকে প্রশ্ন করে বলেছিলেন,‘ এটা কোন দিন?’ উত্তরে তাঁরা বলেছিলেন, ‘ এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কোরবানির দিন। রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘ এটি হজের বড়ো দিন’ বছরের সর্বোত্তম দিবস। রাসূলুল্লাহ বলেছেন ,‘ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’লার কাছে সর্বোত্তম দিবস হল কোরবানির দিন। তারপর পরের দিন । এই দিনে হজের চারটি কাজ অনুষ্ঠিত হয়, যারা হাজী নয় তাদের জন্য ঈদের সালাত ও কোরবানি একত্রিত হয়। সে হিসেবে এই দিনের মর্যাদা অত্যন্ত বেশি। তাই হজ পালনকারী ভাগ্যবান ব্যক্তির উচিত যথাযথ সম্মানের সাথে ও সমস্ত পাপ ও গুনাহ হতে মুক্ত থেকে এ দিনটি অতিবাহিত করা।

২৭
১০ যিলহজের আমলসমূহ
১.বড় জামরায় ৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা।

২. হাদী যবেহ করা ।

৩. মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা ।

৪.তাওয়াফে যিয়ারা সম্পন্ন করা ।

২৮
প্রথম আমল : কঙ্কর নিক্ষেপ
কঙ্কর নিক্ষেপের সময়সীমা

রাসূলুল্লাহ স. সূর্য ওঠার প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর কঙ্কর মেরেছিলেন। সে হিসেবে এ সময়টাতেই ১০ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ করা সুন্নত। সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ- সুন্নত সময় চলতে থাকে। সূর্য ঢলে যাওয়া থেকে শুরু করে ১১ তারিখের সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত জায়েয। বর্তমান যুগে বিশ লক্ষাধিক হজ পালনকারীর ভিড়ে সুন্নত সময়ে কঙ্কর মারা দুঃসাধ্য না হলেও অনেকের পক্ষেই কষ্টকর। তাই প্রথমে খবর নিন কখন ভিড় কম থাকে। অনেক সময় সকাল-বেলা ভিড় কম থাকে। কেননা অনেকেই ভাবেন যে এখন মনে হয় প্রচন্ড ভিড়, তাই পরে যাই। আবার অনেক সময় সকাল-বেলায় প্রচন্ড ভিড় থাকে। তাই উচিত হবে, ভিড় আছে কি-না, তা খবর নিয়ে দেখা।

১০ যিলহজ সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ১১ যিলহজ সুবহে সাদিক উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত ১০ তারিখের কঙ্কর মারা চলে, এটাই আপনি মাথায় রাখুন। এ সময়ের মধ্যে যখন ভিড় কম বলে খবর পাবেন তখনই কঙ্কর মারতে যাবেন।

নারীদের জন্য ১০ তারিখ সূর্য ওঠার আগেও কঙ্কর নিক্ষেপ চলে। তবে বর্তমানে এ সময়টায় পথঘাটে প্রচন্ড ভিড় থাকে। যার কারণে এ সময়ে জামারাতে গিয়ে কঙ্কর মেরে ফিরে আসা কঠিন ব্যাপার। তবে বিকেল বেলায় ও রাতে সাধারণত ফাঁকা থাকে। তাই নারীদের জন্য এ সময়ে কঙ্কর নিক্ষেপ সহজ।

২৯
কঙ্কর নিক্ষেপের পদ্ধতি
তালবিয়া পড়ে পড়ে জামা-রাতের দিকে এগোবেন। মিনার দিক থেকে তৃতীয় ও মক্কার দিক থেকে প্রথম জামরায়- যাকে জাম-রাতুল আকাবা বা জাম-রাতুল কুবরা (বড় জামরা) বলা হয়- ৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। কাবা-ঘর বাঁ দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়াবেন। আল্লাহ আকবার বলে প্রতিটি কঙ্কর ভিন্ন ভিন্নভাবে নিক্ষেপ করবেন। খুশুখুজুর সাথে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।

৩০
দুর্বল ও নারীদের কঙ্কর নিক্ষেপ
যারা দুর্বল অর্থাৎ হাঁটা-চলার ক্ষমতা রাখে না, তারা নিজের কঙ্কর অন্যকে দিয়ে মারাতে পারেন। এক্ষেত্রে যিনি প্রতিনিধি হবেন তাকে অবশ্য হজ পালনকারী হতে হবে, এবং নিজের কঙ্কর প্রথমে মেরে, পরে অন্যেরটা মারতে হবে।

৩১
দ্বিতীয় আমল : হাদী যবেহ করা
বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ করে হাদী যবেহ বিষয়ে মনোনিবেশ করুন। তামাত্তু ও কেরান হজ পালনকারীর জন্য হাদী যবেহ করা ওয়াজিব। ইফরাদ হজকারীর জন্য মুস্তাহাব। উট-গরু-বকরি-মেষ হাদী হিসেবে যবেহ করা যায়। উট হলে ৫ বছর বয়সের, গরু হলে ২ বছর বয়সের ও মেষ হলে ১বছর বয়সের হতে হবে। উট ও গরু হলে একটাতে সাতজন অংশ নিতে পারবে। তবে কারো অংশই যেন এক-সপ্তমাংশের কম না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বকরি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এক হাদী একজনের জন্য যবেহ করতে হবে।

৩২
অজানা ভুলের জন্য দম দেয়া
নিয়ম মুতাবেক হজের প্রত্যেকটি কর্ম সম্পাদনের পরও কেউ কেউ এরূপ সন্দেহ পোষণ করতে থাকেন যে কে জানে কোথাও কোনো ভুল হল কি-না। কাফেলা লিডারদের কেউ কেউ হাজী সাহেবদেরকে উৎসাহিত করেন যে ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে তাই একটা দমে-খাতা দিয়ে দিন, শত ভাগ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে আপনার হজ। এরূপ করাটা মারাত্মক অন্যায়। কেননা আপনার হজ সহীহ-শুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নিজ ইচ্ছায় এভাবে আপনি তাকে সন্দেহযুক্ত করছেন। আপনার যদি সত্যি সত্যি সন্দেহ হয় তাহলে একজন বিজ্ঞ আলেমকে আপনার হজের বিবরণ শুনান। তিনি যদি বলেন যে আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে তবেই কেবল দম দিয়ে শুধরিয়ে নেবেন। অন্যথায় নয়। শুধু আন্দাজের ওপর নির্ভর করে দমে-খাতা দেওয়ার কোনো বিধান ইসলামে নেই । তাই যে যাই বলুক না কেন এ ধরনের কথায় আদৌ কর্ণপাত করবেন না। হাঁ, আপনি যদি নফল হাদী অথবা কোরবানি যবেহ করতে চান তাহলে যত ইচ্ছা করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ স. বিদায় হজের সময় হাদী ও কোরবানি মিলিয়ে একশত উট যবেহ করেছিলেন।

৩৩
তৃতীয় আমল : মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা
হাদী যবেহ হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করুন। তবে মুন্ডন করাই উত্তম।

মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করার পদ্ধতি

মাথা মুন্ডানো হোক বা চুল ছোট করা হোক সমস্ত মাথা ব্যাপ্ত করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ স. সমস্ত মাথা ব্যাপ্ত করে মুন্ডন করেছিলেন। মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করা অথবা ছোট করা, আর কিছু অংশ ছেড়ে দেয়া রাসূলুল্লাহর আদর্শের বিপরীত।

৩৪
চতুর্থ আমল : তাওয়াফে যিয়ারত
১০. যিলহজের চতুর্থ আমল হল তাওয়াফে যিয়ারত। তাওয়াফে যিয়ারত ১০ তারিখেই সেরে নেয়া ভালো। কঙ্কর নিক্ষেপ - হাদী যবেহ - ক্ষৌর কার্য এ-তিনটি আমল শেষ করে গোসল করে, সুগন্ধি মেখে সেলাইযুক্ত কাপড় পরে পবিত্র কাবার দিকে রওয়ানা হবেন। শুরুতে উমরা আদায়ের সময় যে নিয়মে তাওয়াফ করেছেন ঠিক সে নিয়মে তাওয়াফ করবেন। এ তাওয়াফটি হল হজের ফরজ তাওয়াফ। এ তাওয়াফে রামল ও ইযতেবা নেই। তাওয়াফের পর, উমরা অধ্যায়ে বর্ণিত পদ্ধতিতে সাফা মারওয়ার সাঈ করবেন।

ইফরাদ হজকারী তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ করে থাকলে এখন আর সাঈ করতে হবে না। কেরান হজকারীও পূর্বে সাঈ করে থাকলে এখন আর সাঈ করতে হবে না। তবে তামাত্তু হজকারীকে অবশ্যই সাঈ করতে হবে। কেননা তামাত্তু হজকারীর ইতঃপূর্বে সাঈ করে নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।

৩৫
হায়েযরতা মহিলার করণীয়
হায়েযবতী মহিলাগণ অপেক্ষা করবেন। স্রাব বন্ধ হলে তাওয়াফে যিয়ারাত সেরে নেবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো দম দিতে হবে না। আর যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে স্রাব বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত কোনো ক্রমেই অপেক্ষা করা যাচ্ছে না, ও পরবর্তীতে এসে তাওয়াফে যিয়ারাত আদায় করে নেয়ারও কোনো সুযোগ নেই, তাহলে ন্যাপকিন দিয়ে ভাল করে বেঁধে তাওয়াফে যিয়ারাত সেরে নেওয়া বৈধ রয়েছে।

৩৬
মিনায় রাত্রিযাপন
তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে মিনায় ফিরে আসতে হবে। ১০ তারিখ দিবাগত রাত ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও মিনায় যাপন করতে হবে। ১৩ তারিখ কঙ্কর মেরে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে।

৩৭
১১, ১২, ও ১৩ যিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ প্রসঙ্গ :
কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। কঙ্কর নিক্ষেপের দিন চারটি। ১০, ১১,১২ ও ১৩ যিলহজ। ১০ যিলহজ কেবল বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় যা ইতিপূর্বে সেরে নিয়েছেন। অন্যান্য দিন (১১,১২,১৩ তারিখ) তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়। এ দিনগুলোয় কঙ্কর নিক্ষেপের প্রথম ওয়াক্ত শুরু হয় দুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে, চলতে থাকে দিবাগত রাতে সুবেহ সাদিক উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত।

৩৮
১১ তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ
১১ যিলহজ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। প্রথমে ছোট জামরায় ৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। কাবা শরীফ বাম দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়াবেন। খুশুখুজুর সাথে আল্লাহর শিয়ারের - নিদর্শনের- যথাযথ তাজিম বুকে নিয়ে একটি একটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। ‘আল্লাহ আকবার’ বলে প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। ছোট জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ হলে একটু সামনের এগিয়ে যাবেন। কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন ও হাত উঠিয়ে দীর্ঘ মোনাজাত করবেন। এরপর মধ্য জামরায় যাবেন। এখানেও ৭টি কঙ্কর একই কায়দায় নিক্ষেপ করবেন। নিক্ষেপের পর সামান্য এগিয়ে কেবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও দীর্ঘ মোনাজাত করবেন। এরপর বড় জামরায় কঙ্কর মারতে যাবেন। নিয়ম মতো এখানেও ৭টি কঙ্কর মারবেন, তবে এবার আর দোয়া করতে হবে না, কেননা রাসূলুল্লাহ স. বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দাঁড়ান নি। কঙ্কর মারা শেষ হলে তাঁবুতে ফিরে যাবেন।

৩৯
১২ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ
১২ যিলহজ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু হয়। চলতে থাকে দিবাগত রাতে সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত। ১১ তারিখের মত ১২ তারিখেও তিন জামরাতে, একই নিয়মে, কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।

৪০
১৩ তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ
১২ যিলহজ মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে গেলে মিনাতেই রাত কাটাতে হবে এবং ১৩ তারিখ সূর্য ঢলে গেলে তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করতে হবে। তবে যদি কেউ ১২ তারিখ সূর্যাস্তের যথেষ্ট সময় পূর্বে তাঁবু থেকে মিনা ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, এবং অনিচ্ছাকৃত কোনো সমস্যার কারণে - যেমন বৃষ্টি-যানজট ইত্যাদি- মিনা থেকে বের হওয়ার আগেই সূর্য অস্ত যায় তাহলে মিনায় রাতযাপন করতে হবে না।

৪১
বিদায়ী তাওয়াফ
মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করে নেবেন। রাসূলুল্লাহ স. বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করেছেন ও বলেছেন, বায়তুল্লাহর সাথে শেষ সাক্ষাৎ না করে তোমাদের কেউ যেন না যায়। অন্য এক বর্ণনা অনুসারে, রাসূলুল্লাহ স. ইবনে আববাস রা. কে বললেন, লোকদেরকে বল, তাদের শেষ কর্ম যেন হয় বায়তুল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ, তবে তিনি হায়েযগ্রস্ত নারীর জন্য ছাড় দিয়েছেন।

৪২
যিয়ারতে মদীনা মদীনার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা
মক্কার ন্যায় মদীনাও পবিত্র নগরী। মদীনার পবিত্রতা রাসূলুল্লাহ স. স্বয়ং ঘোষণা করেছেন। হাদীসে এসেছে, ‘হে আল্লাহ ! ইব্রাহীম মক্কাকে পবিত্র হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানের জায়গা (মদীনা) পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’ মদীনা ইসলামের আশ্রয়ের স্থল, রাসূলুল্লাহ স. ও তাঁর সাহাবাদের হিজরতের জায়গা। রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস মিশে আছে মদীনার ধুলোকণায়। পবিত্র কোরআনের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদীনায়। অধিকাংশ হাদীসের উৎসও মাদানী জীবনের নানা ঘটনা-অনু-ঘটনা। সে হিসেবে যিয়ারতে মদীনা ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে আমাদেরকে সাহায্য করে। আর হজের সফর যেহেতু মদীনায় যাওয়ার একটা বিরাট সুযোগ এনে দেয়- বিশেষ করে যারা বহির্বিশ্ব থেকে আসে তাদের জন্য- তাই এ সুযোগের সদ্বব্যবহার করাটাই বাঞ্ছনীয়। তবে যিয়ারতে মদীনা যাতে সুন্নত তরিকায় হয় এবং কোনো ক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ স. এর অনুমোদন ও ইজাযতের বাইরে না যায় সে বিষয়টি ভালোভাবে নজরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্নটি আসবে মদীনা গমনের উদ্দেশ্য নিয়ে।

কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করা যাবে না, এ মর্মে হাদীসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে, - তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করো না। মসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদুল আকসা। সে হিসেবে মদীনা গমনের উদ্দেশ্য, কবর যিয়ারত হলে, তা শুদ্ধ হবে না। নিয়ত করতে হবে মসজিদে নববী যিয়ারতের। কেননা রাসূলুল্লাহ স. মসজিদে নববীতে সালাত আদায় বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। এক হাদীসে এসেছে , ‘আমার এই মসজিদে সালাত অন্য মসজিদে এক হাজার সালাত থেকেও উত্তম। তবে মসজিদুল হারাম ব্যতীত। অন্য এক হাদীসে এসেছে,‘ আমার এই মসজিদে সালাত অন্য মসজিদে এক হাজার সালাত থেকে উত্তম। তবে মসজিদুল হারাম ব্যতীত। আর মসজিদুল হারামে সালাত অন্য মসজিদে এক লক্ষ সালাতের চেয়েও উত্তম। শুধু এতটুকই নয় বরং মসজিদে নববীর একটি অংশ বেহেশ্তের বাগানসমূহের একটি বাগান বলে ব্যক্ত করেছেন। বুখারী শরীফে এসেছে, ‘ আমার ঘর ও মেম্বারের মাঝখানের জায়গা বেহেশ্তের বাগানসমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বারটি আমার হাউজের ওপর।’ সে হিসেবে মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় সফর করার নিয়ত করাটাই শরীয়তসিদ্ধ।

৪৩
মদীনার পথে রওয়ানা
মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করে আপনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। মদীনায় প্রবেশের সময় সেখানে ইসলামের যে ইতিহাস তৈরী হয়েছে তা স্মরণ করবেন। মক্কার মতো মদীনাও পবিত্র। তাই মদীনায় গিয়ে যাতে আপনার দ্বারা কোনো বেয়াদবি না হয়, কোনো গুনাহ-পাপে লিপ্ত না হন, সে জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন।

মদীনায় আপনার হোটেল বা বাসায় গিয়ে মালপত্র রেখে সামান্য বিশ্রাম করে নিন। এরপর মসজিদে নববীতে চলে যান। মসজিদে নববীতে যাওয়ার জন্য কোনো ইহরাম তালবিয়া নেই। রাসূলুল্লাহ স. এর ওপর দরুদ ও সালাত পড়ে-পড়ে যেতে হবে এ ব্যাপারেও কোনো হাদীস নেই। মদীনার গাছপালার ওপর নজর পড়া মাত্র অথবা সবুজ গম্বুজের ওপর দৃষ্টি পড়া মাত্র সালাত ও সালাম পড়তে হবে এ মর্মেও রাসূলুল্লাহ স. ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোনো আদর্শ নেই। যারা এরূপ করতে বলেছেন তারা একান্তই আবেগতাড়িত হয়ে বলেছেন। উপযুক্ত দলীল ব্যতীত আবেগের যথেচ্ছা প্রয়োগের কারণেই ইসলামী শরীয়ত স্বচ্ছতা হারিয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।

৪৪
মসজিদে নববীতে প্রবেশ
যে কোনো দরজা দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতে পারেন। প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিন। আল্লাহর নাম স্মরণ করুন। রাসূলুল্লাহ স. এর প্রতি দরুদ পাঠ করুন। আল্লাহ যেন আপনার জন্য তাঁর রহমতের সমস্ত দরজা খুলে দেন সে জন্য দোয়া করুন। বলুন -

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ اَللهُمَ اغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أبْوَابَ رَحْمَتِكَ

মসজিদে প্রবেশের পর, বসার পূর্বে, তাহিয়াতুল মাসজিদের দু’ রাকাত সালাত আদায় করুন। হাদীসে এসেছে, ‘ - তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বে না বসে’। রাওজাতুল জান্নাত - মসজিদের মেহরাবের কাছে সাদা ও সবুজ কার্পেট বিছানো জায়গায় - আদায় করতে পারলে ভালো। কেননা রওজা শরীফ পবিত্রতম একটি জায়গা, বেহেশ্তের বাগান হিসেবে হাদীসে যার পরিচয় এসেছে। রওজায় জায়গা না পেলে যে কোনো স্থানে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করুন। এরপর লাইন ধরে রাসূলুল্লাহ স. এর পবিত্র কবরের দিকে এগিয়ে যান।

৪৫
রাসূলুল্লাহ স. ও তাঁর দুই সাথীর কবর যিয়ারতের আদব
রাসূলুল্লাহ স. এর পবিত্র কবরের সামনে এলে আদবের সাথে দাঁড়ান। দাঁড়ানোর সুযোগ না পেলে চলমান অবস্থাতেই রাসূলুল্লাহ এর প্রতি সালাম পেশ করুন, বলুন -

السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته

‘আপনার ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকতসমূহ বর্ষিত হোক হে আল্লাহর নবী’ ‘রাসূলুল্লাহর গুণাবলির সাথে সংগতিপূর্ণ আরো কিছু শব্দ বাড়িয়ে দেয়া যাবে। বলা যাবে,

السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْلَ اللهِ ، وَ أَمِيْنَهُ عَلَى وَحْيِهِ ، وَخَيْرَتَهُ مِنْ خَلْقِهِ ، أَشْهَدُ أنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ ، وَ أَدَّيْتَ الأَمَانَةَ ، وَ نَصَحْتَ الأُمَّةَ ، وَجَاهَدْتَ فِيْ اللهِ حَقَّ جِهَادِهِ .

- আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর বন্ধু! তাঁর ওহীর বিশ্বস্ত পাত্র, ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমি সাক্ষী দিচ্ছি, আপনি নিশ্চয়ই রেসালত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আমানত আদায় করেছেন । উম্মতকে নসিহত করেছেন। এবং জিহাদ করেছেন আল্লাহর বিষয়ে সত্যিকারের জিহাদ ।

এরপর সামনের দিকে এক গজ পরিমাণ এগিয়ে যান। এখানে আবুবকর সিদ্দীক রা. এর প্রতি সালাম পেশ করুন। বলুন

السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أبَا بَكْرٍ، السَّلَامُ عَلَيكَ يَا خَلِيْفَةَ رَسُوْلِ اللهِ فِيْ أمَّتِهِ، رَضَيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أمَّةِ مُحَمَّدٍ خَيْراً .

- আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আবু বকর, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে রাসূলুল্লহর খলিফা তাঁর উম্মতের ভেতর। আল্লাহ আপনার ওপর রাজি হন। উম্মতে মুহাম্মদীর পক্ষ থেকে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।

এরপর আরেক গজ সামনে আগান। এখানে ওমর রা. এর প্রতি সালাম পেশ করুন। বলুন,

السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا عُمَرُ، السَّلَامُ عَلَيكَ يَا أمِيْرَ المُؤمِنِيْنَ ، رَضَيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أمَّةِ مُحَمَّدٍ خَيْراً .

- আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে ওমর, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আমিরুল মুমিনীন। আল্লাহ আপনার ওপর রাজি হন। উম্মতে মুহাম্মদির পক্ষ থেকে আপনাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।

এরপর বাইরে চলে আসুন। কেবলামুখী হয়ে বা কবরের দিকে মুখ করে দোয়া করবেন না। ইমাম মালেক রা. বলেন, ‘ কবরের কাছে দোয়া করতে দাঁড়ানো আমি শুদ্ধ মনে করি না। তবে সালাম দেবে, ও চলে যাবে যেমনটি করতেন ইবনে ওমর রা. ।

৪৬
রাসূলুল্লাহ স. এর পবিত্র কবর যিয়ারতের সময় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ
রাসূলুল্লাহ স. এর পবিত্র কবর হুজরা শরীফের অভ্যন্তরে অবস্থিত। তাই কবরের দেয়াল ছুঁয়ে বরকত নেয়ার জযবা অনেকের মধ্যে থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আসলে এ ধরনের জযবা-বাসনা থাকাই উচিত না। কেননা কবরের চার পাশে তাওয়াফ, কবর ছুঁয়ে বরকত নেয়া ইত্যাদি শরীয়তে অনুমোদিত নয়। রাসূলুল্লাহ স.কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন যে তাঁর কবরকে যেন পূজ্য মূর্তিতে রূপান্তরিত করা না হয়। আর স্পর্শ ও চুম্বন করার বিধান তো কেবল হাজরে আসওয়াদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কাবার রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার বিধান রয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো জায়গা, এমনকি পবিত্র কাবার অন্য কোনো অংশ স্পর্শ করে বরকত নেয়ারও বিধান নেই।

৪৭
মদীনা শরীফে অন্যান্য যিয়ারতের স্থান জান্নাতুল বাকী
জান্নাতুল বাকী- আরবীতে বাকিউল গারকাদ - পবিত্র মদীনার একটি কবরস্থান যেখানে, ইমাম মালিক র. এর কথা মতে, প্রায় দশ হাজার সাহাবা কবরস্থ আছেন। আহলে বায়তের অধিকাংশ সদস্য, আববাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, উসমান ইবনে মাযউন, আকীল ইবনে আবী তালিব ও খাদিজা রা. ও মায়মুনা রা. ব্যতীত রাসূলুল্লাহ স. এর অন্যান্য স্ত্রী গণ, আব্দুর রহমান, সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস প্রমুখ জলিলুল কদর সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বাকীতে কবরস্থ আছেন। সে হিসেবে তাদেরকে সালাম দেয়া ও তাদের জন্য ইস্তিগফার ও দোয়া করার উদ্দেশ্যে জান্নাতুল বাকীতে যাওয়া শরীয়তসম্মত।

বাকী’তে সমাহিত মুমিনগণের প্রতি সালাম দেয়ার সুন্নত তরিকা হলো অনির্দিষ্টভাবে সবাইকে একসাথে সালাম দেয়া ও তাদের জন্য দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ স. আহলে বাকী’র যিয়ারতকালে বলতেন। ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিনসম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকীদেরকে মাফ করে দিন।’

৪৮
মসজিদে কুবায় সালাত আদায়
একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে মসজিদে কোবা। পবিত্র মদীনায় হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ স. কর্তৃক নির্মিত প্রথম মসজিদ, মসজিদে কোবা। আল্লাহ পাক স্বয়ং এ মসজিদের পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন ও এতে যারা সালাত আদায় করতেন তাদের প্রশংসা করেছেন। এরশাদ হয়েছে, - নিশ্চয়ই একটি মসজিদ যা তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, প্রথম দিন থেকেই, অধিক হকদার যে আপনি তাতে (সালাত আদায় করতে) দাঁড়াবেন। এতে রয়েছে এমন ব্যক্তিগণ যারা পবিত্রতা অর্জনকে পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।

৪৯
মসজিদে কোবায় সালাত আদায়ের নিয়ম
মসজিদে কোবায় গিয়ে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দেবেন। মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়বেন-

মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করবেন। এ সালাতের আলাদা কোনো নিয়ত নেই। কেবল মনে মনে স্থির করবেন, আমি দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করছি। সালাত শেষ হলে মসজিদ হতে বের হওয়ার দোয়া পড়ে বাঁ পা আগে দিয়ে বের হয়ে যাবেন। এখানে অন্য কোনো আমল নেই।

৫০
শুহাদায়ে উহুদের কবর যিয়ারত
হিজরী দ্বিতীয় সালে উহুদযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন হামযা রা. সহ তাঁদের অনেকেই উহুদ প্রান্তরেই শায়িত আছেন। তাদের কবর যিয়ারত করা শরীয়তসম্মত। যিয়ারতের উদ্দেশ্য তাঁদের জন্য দোয়া করা, তাঁদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা। জান্নাতুল বাকী যিয়ারতের সময় যে দোয়া পড়তে হয় সে দোয়া পড়েই যিয়ারত করবেন। যে কোনো দিন শুহাদায়ে উহুদের যিয়ারত করা যেতে পারে। বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার নির্দিষ্ট করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই।

৫১
এক নজরে হজ (তামাত্তু হজ)
৮ যিলহজের পূর্বে তামাত্তু হজকারীর করণীয়

১- মীকাত হতে এহরাম বাঁধা এবং তালবিয়া পড়া। তামাত্তু হজকারীকে উমরা আদায়ের নিয়ত করে মুখে উচ্চারণ করে বলতে হবে لَبَّيْكَ عُمْرَةً (লাববাইকা উমরাতান )

২-মক্কায় গিয়ে উমরার তাওয়াফ সম্পাদন।

৩- উমরার সা‘ঈ সম্পাদন

৪- মাথা মুন্ডন অথবা চুল কর্তন করা ও গোসল করে পরিচ্ছন্ন হয়ে স্বাভাবিক কাপড় পরে নেয়া এবং অন্য কোনো উমরা না করে ৮ যিলহজ পর্যন্ত হজের এহরামের অপেক্ষায় থাকা। এ সময়ে নফল তওয়াফ, কুরআন তিলাওয়াত, জামাতের সাথে নামাজ আদায়, হাজীদের সেবা ইত্যাদিতে নিজেকে মশগুল রাখা।

৮ যিলহজ

(১) নিজ অবস্থান স্থল থেকে হজের নিয়তে لَبَّئِكَ حَجَّاً (লাববাইকা হাজ্জান) বলে এহরাম বাঁধা ও মিনায় গমন করা এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরীব, এশা এবং পরদিনের ফজরের নামাজ নিজ নিজ ওয়াক্তে দু’রাকাত করে আদায় করা।

৯ যিলহজ (আরাফা দিবস)

(১) ৯ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর আরাফা অভিমুখে যাত্রা। সেখানে যোহরের ওয়াক্তে - যোহর ও আসর- এই দুই নামাজ এক আজান ও দুই একামতে দু’ রাকা‘আত করে একত্রে আদায় করা। নামাজান্তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু’আ ও জিকিরে মশগুল থাকা।

(২) সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর ধীরে-সুস্থে শান্তভাবে মুযদালিফাভিমুখে রওয়ানা হওয়া।

(৩) মুযদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্তে, এক আজান ও দুই একামতে, মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করা। এশার নামাজ কসর করে দু’রাকাত পড়া এবং সাথে সাথে বেতরের নামাজও আদায় করে নেয়া।

(৪) মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করা যেতে পারে তবে জরুরি নয়। ৭০ টি কঙ্কর সংগ্রহ করতে হবে। মিনা থেকেও কঙ্কর সংগ্রহ চলে। পানি দিয়ে কঙ্কর ধৌত করার কোনো বিধান নেই।

(৫) মুযদালিফায় রাত্রিযাপন। সুবহে সাদিক উদয়ের পর অন্ধকার থাকা অবস্থাতেই ফজরের নামাজ আদায়। চারদিক আলোকিত হওয়া পর্যন্ত দোয়া মুনাজাতে মশগুল থাকা।

(৬) সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনাভিমুখে যাত্রা। তবে দুর্বলদের ক্ষেত্রে মধ্যরাতের পর মিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে যাওয়া বৈধ।

১০ যিলহজ

১। জামরায়ে আকাবায় (বড় জামরা) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ।

২। হাদী (কোরবানির পশু) জবেহ করা, অন্যকে দায়িত্ব দিয়ে থাকলে হাদী জবেহ হয়েছে কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।

৩। মাথা মুন্ডন অথবা চুল কর্তন করা। মুন্ডন করাই উত্তম। নারীদের ক্ষেত্রে আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কর্তন করা।

৪। মাথা মুন্ডনের মাধ্যমে এহরাম হতে বেরিয়ে প্রাথমিক হালাল হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী মেলা-মেশা ব্যতীত এহরাম অবস্থায় হারাম হয়ে যাওয়া অন্যসব বিষয় গ্রহণ করা।

৫। তাওয়াফে যিয়ারত সম্পাদন। এ ক্ষেত্রে এগারো ও বার তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করার অবকাশ রয়েছে। অধিকাংশ ফেকাহবিদের মতানুসারে এর পরেও আদায় করা যাবে, তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে সেরে নেয়া ভাল।

৬। সা‘ঈ করা ও পুনরায় মিনায় গমন।

৭ । ১০ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন।

বি.দ্র: তাওয়াফে যিয়ারত আদায়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মেলা মেশাও বৈধ হয়ে যায়।

১১ যিলহজ

১। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরার প্রত্যেকটিতে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ। ছোট জামরা থেকে শুরু করে বড় জামরায় শেষ করা। ছোট ও মধ্য জামরায় নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে (দু’হাত উঠিয়ে) দু’আ করা।

১২ যিলহজ

২। ১২ তারিখ (১১ তারিখ দিবাগত রাত) মিনায় রাতযাপন।

৩। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরার প্রত্যেকটিতে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ। শুধু ছোট ও মধ্য জামরাতে নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে (দু’হাত উঠিয়ে) দু‘আ করা।

হাজীদের জন্য ১২ তারিখে মিনা ত্যাগ করা বৈধ। তবে শর্ত হচ্ছে সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনার সীমানা অতিক্রম করতে হবে। মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদায়ি তাওয়াফ আদায় করা।

৪। ১২ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করা উত্তম। তবে ১২ তারিখেও মিনা ত্যাগ করা বৈধ রয়েছে। ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করার ক্ষেত্রে সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনার সীমানার বাইরে চলে যেতে হবে, অন্যথায় ১২ তারিখের রাত মিনায় যাপন করে ১৩ তারিখ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করতে হবে।

১৩ যিলহজ

১। সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পর তিন জামরায় সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ। ছোট জামরা থেকে শুরু করে বড় জামরাতে গিয়ে শেষ করবে। শুধু ছোট ও মধ্য জামরাতে নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে (দু’হাত উঠিয়ে) দু‘আ করবে।

২। মিনা ত্যাগ করে মক্কা অভিমুখে যাত্রা এবং মক্কা ত্যাগের আগে বিদায়ি তাওয়াফ সম্পাদন। তবে প্রসূতি ও স্রাবগ্রস্ত মহিলারা এ থেকে অব্যাহতি পাবে।

হজের তালবিয়া নিম্নরূপ

لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكْ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ، لا شَرِيْكَ لَكْ

‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরিক নেই।

তওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানি থেকে হজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পড়ার বিশেষ দু‘আ

رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿২০১﴾

হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে বাছাও।

আরাফা দিবসের বিশেষ দু‘আ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ .

আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

সমাপ্ত

আরো জানার জন্য ব্রাউজ করুন

১. www.hajj.com.bd

২. www.islam.com.bd

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন