HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে
কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা
কবরের সওয়াল-জওয়াবের ব্যাখ্যা ও প্রাসংগিক বিষয়ের উপর
প্রত্যেক মুসলিমের সংগ্রহে রাখার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে
পরিকল্পনা, সংকলন ও গ্রন্থনা
মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকার কঙ্গোতে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বপালনকারী।
গৌরীপুর, শেরপুর সদর, শেরপুর-২১০০।
মোবাইলঃ ০১৯১২-০৩১৮৪৭।
সম্পাদনা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা
কবরের সওয়াল-জওয়াবের ব্যাখ্যা ও প্রাসংগিক বিষয়ের উপর
প্রত্যেক মুসলিমের সংগ্রহে রাখার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে
পরিকল্পনা, সংকলন ও গ্রন্থনা
মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকার কঙ্গোতে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বপালনকারী।
গৌরীপুর, শেরপুর সদর, শেরপুর-২১০০।
মোবাইলঃ ০১৯১২-০৩১৮৪৭।
সম্পাদনা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি বিশ্ব জাহানের রব। অসংখ্য অগণিত দরূদ ও সালাম প্রেরণ করছি আমাদের প্রিয় নাবী, প্রিয় রসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। যাকে আল্লাহ তা‘আলা অজ্ঞতার অন্ধকার ঘুচিয়ে ওহীর আলোতে উদ্ভাসিত করে বিশ্বের সকল মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সঠিক পথে চলার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং তিনি সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। যাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যেই রয়েছে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত সফলতা। যাকে অনুসরণ করা আল্লাহ তা‘আলা সকলের জন্যই ফরজ করে দিয়েছেন- যদিও মানুষেরা বিভিন্ন দল, মত, পথ ইত্যাদি দিক-বিদিক ছুটাছুটি করে নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলছে। আমাদের সেই প্রিয় নাবী, প্রিয় রসূল, একমাত্র আদর্শ কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি রইল অগণিত দরূদ ও সালাম।
অতঃপর ‘‘কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা’’ কিতাবখানী প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে অগণিত শুকরিয়া প্রকাশ করছি- আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা মেহেরবাণী করে তৌফিক না দিলে আমার মত নগন্য বান্দার পক্ষে এই কিতাব সংকলন করা কিছুতেই সম্ভব হতো না। আরো শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, তিনি আমাকে মুসলিম পরিবারে জন্ম দিয়েছেন, কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের দিকে ধাবিত করেছেন এবং সরকারী চাকুরী থেকে অবসরের পর-পরই আমাকে হজ্জ্ব সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন। কারণ অর্থ সব সময় হাতে থাকে না, আয়ুও ফুরিয়ে যেতে পারে, শরীরও অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে। অনেকেই অর্থ থাকতে হজ্জ করেননি আর এখন টাকা নেই বা বিভিন্ন কারণে হজ্জে যেতে পারছেন না। আবার অনেকেই হজ্জে গেলেও যথাযথভাবে জ্ঞান অর্জন না করে যাওয়ায় গতানুগতিকভাবে হজ্জ করে আসছেন। ফলে হজ্জ থেকে খুব একটা ভাল ফায়দা আনতে পারছেন না। হজ্জের আগেও যে জীবন ছিল, হজ্জের পরেও সেই জীবনই আছে। কিন্তু আমাকে আল্লাহ হজ্জে যাওয়ার আগেই কুরআন-সুন্নাহ থেকে কিছু জ্ঞান অর্জনের তৌফিক দিয়েছেন এবং জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই ২০১৬ সালে হজ্জ পালনের সময় আমি মক্কার বায়তুল্লায় হজ্জের কার্যক্রম, সালাত আদায়, তওয়াফ, কুরআন পাঠ এবং মদীনাতে মাসজিদে নববীতে সালাত আদায় ও কুরআন পাঠের পাশাপাশি মক্তবে বসে কিতাবাদি পাঠ করে, বিভিন্ন পুস্তকাদি ও লিফলেট সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন শায়খদের সাথে কথা বলে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেসময় মক্কাতে বায়তুল্লাহর দায়ীদের কাছ থেকে একদিন “Understand the deen from Quran and Sunnah” (দ্বীন শিখুন কুরআন ও সুন্নাহ থেকে) শিরোনামে একটি লিফলেট পেলাম যার বিষয় ছিল “Questions in the Grave for Muslims and Non-Muslims” (মুসলিম ও অমুসলিমের জন্য কবরের/আলমে বারযাখের প্রশ্নসমূহ)।
লিফলেটের শিরোনাম ও বিষয় দুটোই আমার খুব ভাল লাগলো। মনোযোগ সহকারে পড়লাম। যেখানে বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ ও মিশকাতে সংকলিত আবু হুরায়রা (রদিঃ), আনাস ইবনে মালিক (রদিঃ) ও বারা ইবনে আযীব (রদিঃ) এর বর্ণনা করা কবরের সওয়াল জওয়াব সংক্রান্ত হাদীসগুলো একত্র করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুসলিম বা অমুসলিম যে-ই হোক তাকে মৃত্যুর পর কবর দেওয়া/সমাহিত করা বা দগ্ধ করার পর-পরই কবরে বা আলমে বারযাখে দু’জন মালাইকা তাদেরকে প্রশ্ন করবেন (আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ ও আল্লাহ এটা কিভাবে করবেন তিনিই ভাল জানেন, এর উপর মুসলিমদের ঈমান রাখা ফরজ) তা হলো- ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দ্বীন কি ছিল? ৩. তিনি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? এবং যে ব্যক্তি যথাযথভাবে জবাব দিতে পারবেন তাকে আর একটি প্রশ্ন করা হবে, ৪. তুমি এটা কিভাবে জানলে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রথম তিনটি প্রশ্নের জবাবে বলবে, আমার রব হলেন আল্লাহ, আমার দ্বীন ছিল ইসলাম আর তিনি হলেন মুহাম্মাদ ﷺ (প্রকৃত মুসলিম ছাড়া কেউ এসব জবাব দিতে পারবে না) তাকে আরেকটি প্রশ্ন করা হবে, একথা তুমি কিভাবে জানলে? তখন সে জবাবে বলবে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে জেনেছি, অতঃপর সেটাকে বিশ্বাস করেছিলাম এবং সত্য বলে গ্রহণ করেছিলাম।’’ সেই দাওয়াত পত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে যে, উল্লেখিত প্রশ্নের জবাব মুসলিম দাবীদার সবাই দিতে পারবে বা মুখস্ত করে গেলেই দিতে পারবে ব্যাপারটা এমন নয়। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যারা দুনিয়ার জীবনে কুরআন পড়ে তাদের রব, দ্বীন ও রসূল সম্পর্কে জেনে নিবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবে তারাই যথাযথভাবে জবাব দিতে পারবে এবং কবর থেকেই শান্তির জীবন উপভোগ করতে শুরু করবে। আর দুনিয়ার জীবনে যারা নিজেরা কুরআন পড়বে না, বুঝবে না ও সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে না তারা কবরে যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হবে এবং কবর থেকেই তাদের শাস্তির জীবন শুরু হয়ে যাবে। আর কবর হলো আখেরাতের ঘাটি সমূহের প্রথম ঘাটি, এখানে যে মুক্তি পাবে সে সব জায়গা থেকে মুক্তি পাবে আর এখানে যে মুক্তি পাবে না পরবর্তী ঘাটিগুলো (হাশর, মিজান, পুলসিরাত) তার জন্য আরো অনেক কঠিন হবে। অতঃপর সে পুলসিরাত পার হতে গিয়ে পার হতে না পেরে ভয়াবহ আযাবের স্থান আগুনে ভরা জাহান্নামে পরে যাবে। আর যারা কবরে মুক্তি পেয়ে যাবে তারা পরবর্তী ঘাটিগুলোতে মুক্তি পেয়ে অবশেষে চিরসুখের স্থান অফুরন্ত নিয়ামত ভরা জান্নাত লাভ করবে।
হজ্জ থেকে দেশে ফিরে এসে হাদীসগুলো ভালভাবে নিজের ভাষাতে বুঝে বুঝে পড়লাম এবং মৃত্যুর পরে কবরে প্রশ্নগুলোর জবাব যেন যথাযথভাবে দিতে পারি ইন-শা-আল্লাহ সেজন্য কুরআন-সুন্নাহ থেকে আমার রব, দ্বীন ও রসূল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। সাথে সাথে প্রসংগিক বিষয় হিসেবে আমার পরিচয় ও দায়িত্ব-কর্তব্য কি হবে সেটাও জানার চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়গুলোর পরিধি এত ব্যাপক যে, এ ধরনের ক্ষুদ্র কিতাবে সবকিছু বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মূলত আল্লাহ এই তিনটি বিষয় দিয়েই পুরো কুরআনকে সাজিয়েছেন। তাছাড়া সূরা কাহাফের ১০৯ আয়াত ও সূরা লুকমানের ২৭ আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে, তাঁর কথাগুলো লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি দয়া ও করুণা করে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য তার নৈকট্য লাভের উপায়গুলো সহজ করে দিয়ে বলেছেন যে, আমি তোমাদের জন্য পথ নির্দেশিকা (কুরআন) পাঠালাম এবং তোমাদের মধ্য থেকেই একজন মানুষকে রসূল করে পাঠালাম- যিনি তোমাদের মত ঘর-সংসারও করবেন আবার রবের বিধানও মেনে চলবেন। এখন আমাদের কাজ হলো কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞানার্জন করা, বিশুদ্ধ ঈমানের ভিত্তিতে আমলে সালেহ করা এবং রবের সাথে কাউকে শরীক না করা। তাই প্রতিটি মুসলিমকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তা শুধুমাত্র আল্লাহর করুণা ও দয়া আর সেটুকুই জ্ঞান পিপাসুদের জ্ঞানের পিপাসা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কেবলমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা কিতাব আকারে প্রকাশ করলাম যাতে আগ্রহী ব্যক্তিগত পড়েও উপকৃত হতে পারেন এবং মাসজিদে, বাসায়, বিভিন্ন বক্তৃতায়, সম্মেলনে, দাওয়াতী ও তালিমী মাজলিসে অন্যদেরকেও পড়ে শুনানোর মাধ্যমে ও কিতাবখানী সাধ্যমত সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে দাওয়াতী কাজের জন্য ক্রয় করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে উপহার/পড়তে দিয়েও অনেকে সওয়াব অর্জন করতে পারেন। তাছাড়া এ কিতাবের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা‘আলার কুরআনের কিছু আয়াত ও রসূল ﷺ এর কিছু হাদীস আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারলাম এজন্যও অসংখ্য শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
যারা কুরআন পড়তে পারেন না তারাও বাংলা অনুবাদগুলো বুঝে বুঝে পড়ুন, তাতেও কুরআন-হাদীসের কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরবী শিখার চেষ্টা করুন। কিতাবটি পড়ার আগে আপনার নিয়ত ঠিক করে নিন। কেননা প্রতিটি কাজই নিয়তের উপর নির্ভর করবে (বুখারী ১)। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হলে এবং রসূলের পদ্ধতিতে না হলে কোন আমলই আল্লাহ কবুল করবেন না। তাই কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে কিতাবখানী পড়ুন। সবশেষে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর বিধান ও রসূলের আদর্শ কুরআন-সুন্নাহ থেকে বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার, মৃত্যুর পর কবরের সওয়াল জওয়াব সঠিকভাবে দিয়ে শান্তি-সুখের জীবন লাভের তৌফিক দান করেন এবং পরবর্তী ঘাঁটিগুলোও নিরাপদে পার হয়ে চিরসুখের জান্নাত লাভের তৌফিক দান করেন। আমিন।
আল্লাহর অনুগ্রহের একান্ত মুখাপেক্ষী
মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী
গৌরীপুর, শেরপুর সদর, শেরপুর।
অতঃপর ‘‘কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা’’ কিতাবখানী প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে অগণিত শুকরিয়া প্রকাশ করছি- আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা মেহেরবাণী করে তৌফিক না দিলে আমার মত নগন্য বান্দার পক্ষে এই কিতাব সংকলন করা কিছুতেই সম্ভব হতো না। আরো শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, তিনি আমাকে মুসলিম পরিবারে জন্ম দিয়েছেন, কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের দিকে ধাবিত করেছেন এবং সরকারী চাকুরী থেকে অবসরের পর-পরই আমাকে হজ্জ্ব সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন। কারণ অর্থ সব সময় হাতে থাকে না, আয়ুও ফুরিয়ে যেতে পারে, শরীরও অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে। অনেকেই অর্থ থাকতে হজ্জ করেননি আর এখন টাকা নেই বা বিভিন্ন কারণে হজ্জে যেতে পারছেন না। আবার অনেকেই হজ্জে গেলেও যথাযথভাবে জ্ঞান অর্জন না করে যাওয়ায় গতানুগতিকভাবে হজ্জ করে আসছেন। ফলে হজ্জ থেকে খুব একটা ভাল ফায়দা আনতে পারছেন না। হজ্জের আগেও যে জীবন ছিল, হজ্জের পরেও সেই জীবনই আছে। কিন্তু আমাকে আল্লাহ হজ্জে যাওয়ার আগেই কুরআন-সুন্নাহ থেকে কিছু জ্ঞান অর্জনের তৌফিক দিয়েছেন এবং জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই ২০১৬ সালে হজ্জ পালনের সময় আমি মক্কার বায়তুল্লায় হজ্জের কার্যক্রম, সালাত আদায়, তওয়াফ, কুরআন পাঠ এবং মদীনাতে মাসজিদে নববীতে সালাত আদায় ও কুরআন পাঠের পাশাপাশি মক্তবে বসে কিতাবাদি পাঠ করে, বিভিন্ন পুস্তকাদি ও লিফলেট সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন শায়খদের সাথে কথা বলে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেসময় মক্কাতে বায়তুল্লাহর দায়ীদের কাছ থেকে একদিন “Understand the deen from Quran and Sunnah” (দ্বীন শিখুন কুরআন ও সুন্নাহ থেকে) শিরোনামে একটি লিফলেট পেলাম যার বিষয় ছিল “Questions in the Grave for Muslims and Non-Muslims” (মুসলিম ও অমুসলিমের জন্য কবরের/আলমে বারযাখের প্রশ্নসমূহ)।
লিফলেটের শিরোনাম ও বিষয় দুটোই আমার খুব ভাল লাগলো। মনোযোগ সহকারে পড়লাম। যেখানে বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ ও মিশকাতে সংকলিত আবু হুরায়রা (রদিঃ), আনাস ইবনে মালিক (রদিঃ) ও বারা ইবনে আযীব (রদিঃ) এর বর্ণনা করা কবরের সওয়াল জওয়াব সংক্রান্ত হাদীসগুলো একত্র করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুসলিম বা অমুসলিম যে-ই হোক তাকে মৃত্যুর পর কবর দেওয়া/সমাহিত করা বা দগ্ধ করার পর-পরই কবরে বা আলমে বারযাখে দু’জন মালাইকা তাদেরকে প্রশ্ন করবেন (আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ ও আল্লাহ এটা কিভাবে করবেন তিনিই ভাল জানেন, এর উপর মুসলিমদের ঈমান রাখা ফরজ) তা হলো- ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দ্বীন কি ছিল? ৩. তিনি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? এবং যে ব্যক্তি যথাযথভাবে জবাব দিতে পারবেন তাকে আর একটি প্রশ্ন করা হবে, ৪. তুমি এটা কিভাবে জানলে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রথম তিনটি প্রশ্নের জবাবে বলবে, আমার রব হলেন আল্লাহ, আমার দ্বীন ছিল ইসলাম আর তিনি হলেন মুহাম্মাদ ﷺ (প্রকৃত মুসলিম ছাড়া কেউ এসব জবাব দিতে পারবে না) তাকে আরেকটি প্রশ্ন করা হবে, একথা তুমি কিভাবে জানলে? তখন সে জবাবে বলবে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে জেনেছি, অতঃপর সেটাকে বিশ্বাস করেছিলাম এবং সত্য বলে গ্রহণ করেছিলাম।’’ সেই দাওয়াত পত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে যে, উল্লেখিত প্রশ্নের জবাব মুসলিম দাবীদার সবাই দিতে পারবে বা মুখস্ত করে গেলেই দিতে পারবে ব্যাপারটা এমন নয়। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যারা দুনিয়ার জীবনে কুরআন পড়ে তাদের রব, দ্বীন ও রসূল সম্পর্কে জেনে নিবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবে তারাই যথাযথভাবে জবাব দিতে পারবে এবং কবর থেকেই শান্তির জীবন উপভোগ করতে শুরু করবে। আর দুনিয়ার জীবনে যারা নিজেরা কুরআন পড়বে না, বুঝবে না ও সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে না তারা কবরে যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হবে এবং কবর থেকেই তাদের শাস্তির জীবন শুরু হয়ে যাবে। আর কবর হলো আখেরাতের ঘাটি সমূহের প্রথম ঘাটি, এখানে যে মুক্তি পাবে সে সব জায়গা থেকে মুক্তি পাবে আর এখানে যে মুক্তি পাবে না পরবর্তী ঘাটিগুলো (হাশর, মিজান, পুলসিরাত) তার জন্য আরো অনেক কঠিন হবে। অতঃপর সে পুলসিরাত পার হতে গিয়ে পার হতে না পেরে ভয়াবহ আযাবের স্থান আগুনে ভরা জাহান্নামে পরে যাবে। আর যারা কবরে মুক্তি পেয়ে যাবে তারা পরবর্তী ঘাটিগুলোতে মুক্তি পেয়ে অবশেষে চিরসুখের স্থান অফুরন্ত নিয়ামত ভরা জান্নাত লাভ করবে।
হজ্জ থেকে দেশে ফিরে এসে হাদীসগুলো ভালভাবে নিজের ভাষাতে বুঝে বুঝে পড়লাম এবং মৃত্যুর পরে কবরে প্রশ্নগুলোর জবাব যেন যথাযথভাবে দিতে পারি ইন-শা-আল্লাহ সেজন্য কুরআন-সুন্নাহ থেকে আমার রব, দ্বীন ও রসূল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। সাথে সাথে প্রসংগিক বিষয় হিসেবে আমার পরিচয় ও দায়িত্ব-কর্তব্য কি হবে সেটাও জানার চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়গুলোর পরিধি এত ব্যাপক যে, এ ধরনের ক্ষুদ্র কিতাবে সবকিছু বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মূলত আল্লাহ এই তিনটি বিষয় দিয়েই পুরো কুরআনকে সাজিয়েছেন। তাছাড়া সূরা কাহাফের ১০৯ আয়াত ও সূরা লুকমানের ২৭ আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে, তাঁর কথাগুলো লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি দয়া ও করুণা করে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য তার নৈকট্য লাভের উপায়গুলো সহজ করে দিয়ে বলেছেন যে, আমি তোমাদের জন্য পথ নির্দেশিকা (কুরআন) পাঠালাম এবং তোমাদের মধ্য থেকেই একজন মানুষকে রসূল করে পাঠালাম- যিনি তোমাদের মত ঘর-সংসারও করবেন আবার রবের বিধানও মেনে চলবেন। এখন আমাদের কাজ হলো কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞানার্জন করা, বিশুদ্ধ ঈমানের ভিত্তিতে আমলে সালেহ করা এবং রবের সাথে কাউকে শরীক না করা। তাই প্রতিটি মুসলিমকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তা শুধুমাত্র আল্লাহর করুণা ও দয়া আর সেটুকুই জ্ঞান পিপাসুদের জ্ঞানের পিপাসা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কেবলমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা কিতাব আকারে প্রকাশ করলাম যাতে আগ্রহী ব্যক্তিগত পড়েও উপকৃত হতে পারেন এবং মাসজিদে, বাসায়, বিভিন্ন বক্তৃতায়, সম্মেলনে, দাওয়াতী ও তালিমী মাজলিসে অন্যদেরকেও পড়ে শুনানোর মাধ্যমে ও কিতাবখানী সাধ্যমত সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে দাওয়াতী কাজের জন্য ক্রয় করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে উপহার/পড়তে দিয়েও অনেকে সওয়াব অর্জন করতে পারেন। তাছাড়া এ কিতাবের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা‘আলার কুরআনের কিছু আয়াত ও রসূল ﷺ এর কিছু হাদীস আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারলাম এজন্যও অসংখ্য শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
যারা কুরআন পড়তে পারেন না তারাও বাংলা অনুবাদগুলো বুঝে বুঝে পড়ুন, তাতেও কুরআন-হাদীসের কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরবী শিখার চেষ্টা করুন। কিতাবটি পড়ার আগে আপনার নিয়ত ঠিক করে নিন। কেননা প্রতিটি কাজই নিয়তের উপর নির্ভর করবে (বুখারী ১)। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হলে এবং রসূলের পদ্ধতিতে না হলে কোন আমলই আল্লাহ কবুল করবেন না। তাই কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে কিতাবখানী পড়ুন। সবশেষে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর বিধান ও রসূলের আদর্শ কুরআন-সুন্নাহ থেকে বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার, মৃত্যুর পর কবরের সওয়াল জওয়াব সঠিকভাবে দিয়ে শান্তি-সুখের জীবন লাভের তৌফিক দান করেন এবং পরবর্তী ঘাঁটিগুলোও নিরাপদে পার হয়ে চিরসুখের জান্নাত লাভের তৌফিক দান করেন। আমিন।
আল্লাহর অনুগ্রহের একান্ত মুখাপেক্ষী
মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী
গৌরীপুর, শেরপুর সদর, শেরপুর।
হাদীস-১ঃ বারা ইবনু আযীব (রদিঃ) বলেন, আমরা একবার নাবী ﷺ এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় ক্ববরের কাছে গেলাম। (তখনো ক্ববর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ ক্ববরস্থ করা হয়নি। রসূল ﷺ এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূল ﷺ এর হাতে একটি কাঠি ছিল। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ক্ববরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মুমিন বান্দা যখন দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আকাশ থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য। তাঁদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, ‘‘হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর মাগফিরাত ও তাঁর সন্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আস।’’ রসূল ﷺ বলেন, এ কথা শুনে মুমিন বান্দার রূহ তার দেহ থেকে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন জগ থেকে পানি বেরিয়ে আসে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। রসূল ﷺ বলেন, তারপর ঐ মালাইকাহ এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও ‘এ পবিত্র রূহ কার’ জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তারা উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন এবং তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।
প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে পরবর্তী আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ‘ইল্লীয়্যিনে’ লিখে রাখ এবং রূহকে জমিনে (কবরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে কবরের) সওয়াল জওয়াবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। রসূল ﷺ বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাইকা (মুনকীর নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তর দেয়, ‘‘আমার রব আল্লাহ’’। আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দ্বীন কি?’’ তখন সে উত্তর দেয়, ‘‘আমার দ্বীন ইসলাম’’। আবার প্রশ্ন করেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।’’ সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ‘‘তিনি আল্লাহর রসূল ﷺ।’’ তারপর তারা দু’জন বলবেন, ‘‘তুমি কিভাবে জানলে?’’ ঐ ব্যক্তি বলবে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে জেনেছি, এর উপরে ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করেছি।’’ তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাত থেকে তার জন্য একটা দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে) আর সেই দরজা দিয়ে তার কবরে জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক উত্তম পোশাক পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম কর, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম কর। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।
রসূল ﷺ বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে আযাবের মালায়িকাহ নাযিল হবেন, তাদের চেহারা হবে কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন, তারপর মালাকুল মাওত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন ‘‘হে খবিস (নিকৃষ্ট) আত্মা! আল্লাহর আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও।’’ রসূল ﷺ বলেন, কাফিরের রূহ একথা শুনে গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশমের বল হতে টেনে বের করা হয়। মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়কা এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিলিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুর্গন্ধ বের হয়- যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়কাহ এ রূহকে নিয়ে আসমানে চলে যান। যখন মালায়কার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়কাহ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। তারা তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয় কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূল ﷺ (দলীল হিসেবে) এ আয়াত পাঠ করেন, (অনুবাদ) ‘‘ঐ কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।’’ এবার আল্লাহ তা’লা বলবেন, তার আমলনামা ‘সিজ্জীনে’ লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্তুত কাফিরদের রূহ নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূল ﷺ দলীল হিসেবে এ আয়াত পাঠ করেন, (অনুবাদ) ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু-পাখি ঠুকরিয়ে নেয়। অথবা ঝড়ের বাতাস তাকে দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। রসূল ﷺ বলেন, তারপর তার রূহকে দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাইকা (মুনকীর-নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি জানি না’’। আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দ্বীন কি?’’ তখন সে উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি কিছুই জানি না’’। আবার প্রশ্ন করেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি কিছুই জানি না।’’ তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলবেন, সে মিথ্যা বলছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জাহান্নাম থেকে তার জন্য একটা দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হবে) আর সেই দরজা দিয়ে তার কবরে জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাজরের একপাশের হাড়গুলি অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। তারপর তার কাছে একজন কুৎসিৎ চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। সে বলবে তুমি একটা খারাপ সংবাদ শুন যা তোমাকে চিন্তায় ও সুখে-দুঃখে কাতর করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক খারাপ খবরই নিয়ে আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার বদ আমল। এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব! ক্বিয়ামাত কায়িম কর না, হে আমার রব! ক্বিয়ামাত কায়িম কর না। (মুসনাদে আহমাদ/১৮৬৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ, কবরের আযাব অধ্যায়)
হাদীস-২ঃ বারা ইবনু আযীব (রদিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, ক্ববরে মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক ফে আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে (মুসলিম হলে) উত্তরে বলে, ‘‘আমার রব হলেন আল্লাহ’’। তারপর মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে উত্তরে বলে, ‘‘আমার দ্বীন হলো ইসলাম’’, আবার মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন,‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ‘‘তিনি হলেন আল্লাহর রসূল ﷺ।’’ তারপর মালায়িকাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি কিভাবে জানলে?’’। সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) পড়ে জেনেছি, তাঁর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি।’’ রসূল ﷺ বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা’লার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ‘‘আল্লাহ তা’লা সেই সব লোককে (দ্বীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ঃ২৭)। অতঃপর রসূল ﷺ বলেন, আকাশমন্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। রসূল ﷺ বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি ﷺ কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তরে বলে, ‘‘হায়! হায়! আমিতো জানি না।’’ তারপর মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘‘হায়! হায়! আমিতো কিছুই জানি না।’’ আবার মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ‘‘হায়! হায়! আমি এটাও জানি না।’’ তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। রসূল ﷺ বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জি্ন ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলুকই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ ফেরত দেয়া হবে। (এভাবেই অনবরত চলতে থাকবে)। অন্য বর্ণনায় আছে তাকে আঘাত করার আগে মালায়িকাহ বলবে, তুমি কুরআনও পড়নি আর জেনেও নাওনি।
(আবু দাউদ/৪৭৫৫, মুসনাদে আহমাদ/১৮৫৫৭, মিশকাতুল মাসাবিহ/১২৮)
প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে পরবর্তী আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ‘ইল্লীয়্যিনে’ লিখে রাখ এবং রূহকে জমিনে (কবরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে কবরের) সওয়াল জওয়াবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। রসূল ﷺ বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাইকা (মুনকীর নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তর দেয়, ‘‘আমার রব আল্লাহ’’। আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দ্বীন কি?’’ তখন সে উত্তর দেয়, ‘‘আমার দ্বীন ইসলাম’’। আবার প্রশ্ন করেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।’’ সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ‘‘তিনি আল্লাহর রসূল ﷺ।’’ তারপর তারা দু’জন বলবেন, ‘‘তুমি কিভাবে জানলে?’’ ঐ ব্যক্তি বলবে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে জেনেছি, এর উপরে ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করেছি।’’ তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাত থেকে তার জন্য একটা দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে) আর সেই দরজা দিয়ে তার কবরে জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক উত্তম পোশাক পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম কর, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম কর। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।
রসূল ﷺ বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে আযাবের মালায়িকাহ নাযিল হবেন, তাদের চেহারা হবে কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন, তারপর মালাকুল মাওত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন ‘‘হে খবিস (নিকৃষ্ট) আত্মা! আল্লাহর আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও।’’ রসূল ﷺ বলেন, কাফিরের রূহ একথা শুনে গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশমের বল হতে টেনে বের করা হয়। মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়কা এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিলিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুর্গন্ধ বের হয়- যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়কাহ এ রূহকে নিয়ে আসমানে চলে যান। যখন মালায়কার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়কাহ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। তারা তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয় কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূল ﷺ (দলীল হিসেবে) এ আয়াত পাঠ করেন, (অনুবাদ) ‘‘ঐ কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।’’ এবার আল্লাহ তা’লা বলবেন, তার আমলনামা ‘সিজ্জীনে’ লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্তুত কাফিরদের রূহ নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূল ﷺ দলীল হিসেবে এ আয়াত পাঠ করেন, (অনুবাদ) ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু-পাখি ঠুকরিয়ে নেয়। অথবা ঝড়ের বাতাস তাকে দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। রসূল ﷺ বলেন, তারপর তার রূহকে দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাইকা (মুনকীর-নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি জানি না’’। আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দ্বীন কি?’’ তখন সে উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি কিছুই জানি না’’। আবার প্রশ্ন করেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘‘হায়, হায়, আমি কিছুই জানি না।’’ তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলবেন, সে মিথ্যা বলছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জাহান্নাম থেকে তার জন্য একটা দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হবে) আর সেই দরজা দিয়ে তার কবরে জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাজরের একপাশের হাড়গুলি অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। তারপর তার কাছে একজন কুৎসিৎ চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। সে বলবে তুমি একটা খারাপ সংবাদ শুন যা তোমাকে চিন্তায় ও সুখে-দুঃখে কাতর করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক খারাপ খবরই নিয়ে আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার বদ আমল। এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব! ক্বিয়ামাত কায়িম কর না, হে আমার রব! ক্বিয়ামাত কায়িম কর না। (মুসনাদে আহমাদ/১৮৬৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ, কবরের আযাব অধ্যায়)
হাদীস-২ঃ বারা ইবনু আযীব (রদিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, ক্ববরে মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক ফে আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে (মুসলিম হলে) উত্তরে বলে, ‘‘আমার রব হলেন আল্লাহ’’। তারপর মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে উত্তরে বলে, ‘‘আমার দ্বীন হলো ইসলাম’’, আবার মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন,‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ‘‘তিনি হলেন আল্লাহর রসূল ﷺ।’’ তারপর মালায়িকাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি কিভাবে জানলে?’’। সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) পড়ে জেনেছি, তাঁর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি।’’ রসূল ﷺ বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা’লার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ‘‘আল্লাহ তা’লা সেই সব লোককে (দ্বীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ঃ২৭)। অতঃপর রসূল ﷺ বলেন, আকাশমন্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। রসূল ﷺ বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি ﷺ কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তরে বলে, ‘‘হায়! হায়! আমিতো জানি না।’’ তারপর মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘‘হায়! হায়! আমিতো কিছুই জানি না।’’ আবার মালায়িকাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ‘‘হায়! হায়! আমি এটাও জানি না।’’ তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। রসূল ﷺ বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জি্ন ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলুকই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ ফেরত দেয়া হবে। (এভাবেই অনবরত চলতে থাকবে)। অন্য বর্ণনায় আছে তাকে আঘাত করার আগে মালায়িকাহ বলবে, তুমি কুরআনও পড়নি আর জেনেও নাওনি।
(আবু দাউদ/৪৭৫৫, মুসনাদে আহমাদ/১৮৫৫৭, মিশকাতুল মাসাবিহ/১২৮)
মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে মৃত্যুর পরে কবরে/আলমে বারযাখে (অদৃশ্য জগতে) প্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তা হলো, তোমার রব কে? বিষয়টি এমন নয় যে, দুনিয়ার জীবন থেকে বিষয়টি অন্যের মুখে শুনে শুনে জেনে গেলেই সে এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার জীবনে যে ব্যক্তি কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে নিজের রব সম্পর্কে জেনে নিয়ে রবের বিধান মেনে চলবেন তিনিই কেবল এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। অন্যথায় কেউই এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না বরং বলবে, ‘‘হায়, হায়, আমি জানি না।’’ যারা দুনিয়ার জীবনে অসচেতন জীবন যাপন করবে, কে তাকে সৃষ্টি করলেন, কেন তাকে সৃষ্টি করলেন এ ব্যাপারে সচেতন না হয়ে উদাসিন জীবন যাপন করলেন, খাও-দাও-ফূর্তি করো মনোভাব নিয়ে নাটক, সিনেমা, গান বাজনা, যেনা-ব্যাভিচার, সুদ-ঘুষ নানাবিধ পাপের কাজে ডুবে থাকলেন, জীবনভর অন্যের বিধান মেনে চললেন, এমনকি অনেকেই তার অর্থ-শ্রম-মেধা, সময়, শক্তি ও ক্ষমতা সবকিছু মানব রচিত বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করলেন আর কুরআন-সুন্নাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, জীবনে কুরআন-হাদীস পড়লেনও, জানলেনও না আর কবরে গিয়ে সুন্দরভাবে বলে দিলেন আমার রব হলেন আল্লাহ- তা হবার নয়। মূলত দুনিয়ার জীবনে যারা রবকে রবের মত করে জানলেন, রবকে রবের মত করে মানবেন তিনিই কেবল এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন। তাই আমাদের প্রত্যেককে কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে রব সম্পর্কে, তার বিধান সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করতে হবে। পবিত্র কুরআন শুরু হয়েছে সূরা ফাতিহা দিয়ে আর সূরা ফাতিহা শুরু হয়েছে মহান আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে যাকে বিশ্বজাহানের রব বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। রুকু ও সিজদাতেও রবের পবিত্রতা ঘোষণা করতে হয়। পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে বিভিন্ন নাবী-রসূলদের দোয়া তুলে ধরা হয়েছে এভাবে যে, ( رَبِّي ) হে আমার রব, ( رَبَّنَا ) হে আমাদের রব। আর মৃত্যুর পরেও কবরে/আলমে বারযাখে প্রথম প্রশ্ন হবে তোমার রব কে? এই প্রশ্নের জবাব আল্লাহ তা‘আলা নিজেই অনুগ্রহ করে ওহীর মাধ্যমে কুরআন পাঠিয়ে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে সেই কুরআন পড়ে জেনে নিবেন যে, আমাদের রব হলেন আল্লাহ। যেমন পবিত্র কুরআন থেকে আমরা জানতে পেরেছিঃ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি বিশ্ব জাহানের রব। (সূরা ১/ফাতিহাঃ১)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তারপর কাফিররা তাদের রবের সমতুল্য স্থির করে। (সূরা ৬/আনআমঃ১)
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاؕ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি বিশ্ব জাহানের রব। (সূরা ৬/আনআমঃ ৪৫)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ -থ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ থ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ থ
তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, মহাসম্মানের মালিক আর রসূলদের প্রতি সালাম। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (সূরা ৩৭/ সফ্ফাতঃ ১৮০-১৮২)
শুধু দুনিয়াতেই নয় বরং দুনিয়ার জীবনে যারা রবের প্রশংসা করবে, তার বিধান মেনে চলবে তারা আখিরাতে জান্নাতেও তাদের রবের প্রশংসা করবে।
دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌۚ وَّاٰخِرُ دَعْوَاهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সেখানে (জান্নাতে) তাদের কথা হবে, হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র মহান এবং তাদের অভিবাদন হবে, সালাম। আর তাদের শেষ কথা হবে যে, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজাহানের রব। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ১০)
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
আর তারা (জান্নাতবাসীরা) বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। (সূরা ৩৫/ফাতিরঃ ৩৪)
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَقِيْلَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আর তুমি মালায়িকাদেরকে আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করতে দেখতে পাবে। আর তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার করে দেয়া হবে এবং বলা হবে, সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৭৫)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি বিশ্ব জাহানের রব। (সূরা ১/ফাতিহাঃ১)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তারপর কাফিররা তাদের রবের সমতুল্য স্থির করে। (সূরা ৬/আনআমঃ১)
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاؕ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি বিশ্ব জাহানের রব। (সূরা ৬/আনআমঃ ৪৫)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ -থ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ থ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ থ
তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, মহাসম্মানের মালিক আর রসূলদের প্রতি সালাম। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (সূরা ৩৭/ সফ্ফাতঃ ১৮০-১৮২)
শুধু দুনিয়াতেই নয় বরং দুনিয়ার জীবনে যারা রবের প্রশংসা করবে, তার বিধান মেনে চলবে তারা আখিরাতে জান্নাতেও তাদের রবের প্রশংসা করবে।
دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌۚ وَّاٰخِرُ دَعْوَاهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সেখানে (জান্নাতে) তাদের কথা হবে, হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র মহান এবং তাদের অভিবাদন হবে, সালাম। আর তাদের শেষ কথা হবে যে, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজাহানের রব। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ১০)
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
আর তারা (জান্নাতবাসীরা) বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। (সূরা ৩৫/ফাতিরঃ ৩৪)
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَقِيْلَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আর তুমি মালায়িকাদেরকে আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করতে দেখতে পাবে। আর তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার করে দেয়া হবে এবং বলা হবে, সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৭৫)
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْۚ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْؕ قَالُوْا بَلٰىۚ شَهِدْنَاۤۚ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের উপর সাক্ষী করলেন যে, ‘‘আমি কি তোমাদের রব নই?’’ তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম। যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৭২)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُؗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি আর তিনিই মহাআরশের রব। (সূরা ৯/তওবাঃ ১২৯)
اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْاَمْرَؕ مَا مِنْ شَفِيْعٍ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اِذْنِه ؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন, তিনিই সকল বিষয় পরিচালনা করেন, তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৩)
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْؕ هُوَ رَبُّكُمْ۫ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান। তিনি তোমাদের রব এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
(সূরা ১১/হুদঃ ৩৪)
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِي الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه ۤؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তোমাদের রব তিনি, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে চালিত করেন নৌযান, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা ১৭/বানী ইসরাইলঃ ৬৬)
সূরা ৩৫/ফাতির এর ১১-১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَاللهُ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا وَّمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না অথবা সন্তানও প্রসব করে না। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় না কিংবা কমানো হয় না কিন্তু তা তো রয়েছে কিতাবে; নিশ্চয় তা আল্লাহর জন্য সহজ।
وَمَا يَسْتَوِي الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌ وَّمِنْ كُلٍّ تَأْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দুটি সমুদ্র সমান নয়, একটি খুবই সুমিষ্ট ও সুপেয়, অপরটি অত্যন্ত লবণাক্ত; আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ কর অলঙ্কার যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে দেখ নৌযান পানি চিরে চলাচল করে। যাতে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ
তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান আর তিনিই সূর্য ও চাঁদকে বশীভূত করে দিয়েছেন; প্রত্যেকে পরিভ্রমণ করছে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়।
خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَاَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ الْاَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ اَزْوَاجٍ يَّخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّنْ ۢبَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি নফস থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া (পশু), তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে তিনটি অন্ধকারে, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৬)
এ ব্যাপারে কুরআনে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৮০০ আয়াত আছে আর পরোক্ষভাবে আছে আরো অনেক আয়াত। কুরআন নিয়মিত বুঝে বুঝে পড়া ছাড়া এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয় বিধায় পাঠকদেরকে নিয়মিত কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার অনুরোধ রইল।-সংকলক
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের উপর সাক্ষী করলেন যে, ‘‘আমি কি তোমাদের রব নই?’’ তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম। যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৭২)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُؗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি আর তিনিই মহাআরশের রব। (সূরা ৯/তওবাঃ ১২৯)
اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْاَمْرَؕ مَا مِنْ شَفِيْعٍ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اِذْنِه ؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন, তিনিই সকল বিষয় পরিচালনা করেন, তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৩)
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْؕ هُوَ رَبُّكُمْ۫ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান। তিনি তোমাদের রব এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
(সূরা ১১/হুদঃ ৩৪)
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِي الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه ۤؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তোমাদের রব তিনি, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে চালিত করেন নৌযান, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা ১৭/বানী ইসরাইলঃ ৬৬)
সূরা ৩৫/ফাতির এর ১১-১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَاللهُ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا وَّمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না অথবা সন্তানও প্রসব করে না। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় না কিংবা কমানো হয় না কিন্তু তা তো রয়েছে কিতাবে; নিশ্চয় তা আল্লাহর জন্য সহজ।
وَمَا يَسْتَوِي الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌ وَّمِنْ كُلٍّ تَأْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দুটি সমুদ্র সমান নয়, একটি খুবই সুমিষ্ট ও সুপেয়, অপরটি অত্যন্ত লবণাক্ত; আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ কর অলঙ্কার যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে দেখ নৌযান পানি চিরে চলাচল করে। যাতে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ
তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান আর তিনিই সূর্য ও চাঁদকে বশীভূত করে দিয়েছেন; প্রত্যেকে পরিভ্রমণ করছে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়।
خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَاَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ الْاَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ اَزْوَاجٍ يَّخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّنْ ۢبَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি নফস থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া (পশু), তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে তিনটি অন্ধকারে, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৬)
এ ব্যাপারে কুরআনে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৮০০ আয়াত আছে আর পরোক্ষভাবে আছে আরো অনেক আয়াত। কুরআন নিয়মিত বুঝে বুঝে পড়া ছাড়া এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয় বিধায় পাঠকদেরকে নিয়মিত কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার অনুরোধ রইল।-সংকলক
আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকজনের কাছে সরাসরি নিজের রব হবার পরিচয় তুলে ধরেছেন এবং তাদের দৃষ্টান্ত ও উপমা আমাদের জন্য উপস্থাপন করেছেনঃ
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّه ۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَا اُحْيِيْ وَاُمِيْتُ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা ভেবে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে এজন্য যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইব্রাহীম বলল, আমার রব তিনিই, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। (জেল থেকে একজন ফাঁসীর আসামীকে ছেড়ে দিল আর একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরে এনে হত্যা করল)। ইব্রাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, অতএব তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে (নমরূদ) হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না/সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৮)
اَوْ كَالَّذِيْ مَرَّ عَلٰى قَرْيَةٍ وَّهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَاۚ قَالَ اَنّٰى يُحْيِيْ هٰذِهِ اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَاۚ فَاَمَاتَهُ اللهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَه ؕ قَالَ كَمْ لَبِثْتَؕ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالَ بَلْ لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانْظُرْ اِلٰى طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْۚ وَانْظُرْ اِلٰى حِمَارِكَ۫ وَلِنَجْعَلَكَ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَانْظُرْ اِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنْشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوْهَا لَحْمًاؕ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَه قَالَ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা সে ব্যক্তির মত, যে এমন এক নগরে উপস্থিত হয়েছিল যা বিধ্বস্ত হয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। সে বলল, আল্লাহ এটাকে মৃত্যুর পর কিভাবে জীবিত করবেন! তখন আল্লাহ তাকে একশত বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন, অতঃপর তাকে পুনর্জীবিত করলেন। বললেন, তুমি কতকাল অবস্থান করেছ? সে বলল, আমি একদিন অথবা দিনের কিছু সময় অবস্থান করেছি। তিনি বললেন, বরং তুমি একশ বছর অবস্থান করেছ। সুতরাং তুমি তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে তাকাও, সেটি পরিবর্তিত হয়নি এবং তুমি তোমার গাধাটির দিকে তাকাও, আর যাতে আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে পারি এবং তুমি হাড়গুলোর দিকে তাকাও, কিভাবে আমি তা সংযুক্ত করি, অতঃপর তাকে আবৃত করি গোস্ত দ্বারা। পরে যখন তার নিকট স্পষ্ট হলো, তখন সে বলল, আমি জানি, নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৯)
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَّاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
আর যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? সে বলল, অবশ্যই কিন্তু আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। তিনি বললেন, তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে পোষ মানাও, অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলার টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৬০)
সূরা নং ৩, সূরা আলি ইমরান এর ৩৫-৪০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۤۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَاۤ اُنْثٰىۚ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْؕ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثٰىۚ وَاِنِّيْ سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَاِنِّيْۤ اُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
অতঃপর যখন সে তা প্রসব করল, বলল, হে আমার রব, নিশ্চয় আমি কন্যা প্রসব করেছি, আর আল্লাহ জানেন সে যা প্রসব করেছে, আর পূত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মত নয় এবং নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারিয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয়ে দিচ্ছি।
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاؕ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًاۚ قَالَ يَا مَرْيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অতঃপর তার রব তাকে উত্তমরূপে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়ার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়া তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, হে মারিয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি? সে বলত, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّه ۚ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘‘হে আমার রব! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন, নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’’
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُّصَلِّيْ فِي الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
অতঃপর মালাইকা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নাবী।
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
সে বলল, হে আমার রব, আমার পুত্র হবে কিভাবে? আমার তো বার্ধক্য এসে গেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করেন।
সূরা নং ৩, সূরা আলি ইমরান এর ৪৫-৪৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيْهًا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
স্মরণ কর, যখন মালাইকা বলল, হে মারিয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারিয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত ও নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আর সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় (থাকা অবস্থায়) ও পরিণত বয়সে এবং সে নেককারদের অন্তর্ভূক্ত।
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَاۤ قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَه كُنْ فَيَكُوْنُ
সে বলল, হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, হও। ফলে তা হয়ে যায়।
ইব্রাহীম (আঃ) কিভাবে রবকে খুঁজে পেলেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে সূরা আনআম এর ৭১-৮০ আয়াতে এবং ইব্রাহীম (আঃ) কিভাবে রবকে আঁকড়ে ধরলেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে হয়েছে সূরা আনআম এর ১৬১-১৬৫ আয়াতে। আরো দেখুন সূরা শুআরা ২৩-২৮ আয়াত। আল কুরআনের আরো বহু আয়াতে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّه ۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَا اُحْيِيْ وَاُمِيْتُ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা ভেবে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে এজন্য যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইব্রাহীম বলল, আমার রব তিনিই, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। (জেল থেকে একজন ফাঁসীর আসামীকে ছেড়ে দিল আর একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরে এনে হত্যা করল)। ইব্রাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, অতএব তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে (নমরূদ) হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না/সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৮)
اَوْ كَالَّذِيْ مَرَّ عَلٰى قَرْيَةٍ وَّهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَاۚ قَالَ اَنّٰى يُحْيِيْ هٰذِهِ اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَاۚ فَاَمَاتَهُ اللهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَه ؕ قَالَ كَمْ لَبِثْتَؕ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالَ بَلْ لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانْظُرْ اِلٰى طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْۚ وَانْظُرْ اِلٰى حِمَارِكَ۫ وَلِنَجْعَلَكَ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَانْظُرْ اِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنْشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوْهَا لَحْمًاؕ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَه قَالَ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা সে ব্যক্তির মত, যে এমন এক নগরে উপস্থিত হয়েছিল যা বিধ্বস্ত হয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। সে বলল, আল্লাহ এটাকে মৃত্যুর পর কিভাবে জীবিত করবেন! তখন আল্লাহ তাকে একশত বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন, অতঃপর তাকে পুনর্জীবিত করলেন। বললেন, তুমি কতকাল অবস্থান করেছ? সে বলল, আমি একদিন অথবা দিনের কিছু সময় অবস্থান করেছি। তিনি বললেন, বরং তুমি একশ বছর অবস্থান করেছ। সুতরাং তুমি তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে তাকাও, সেটি পরিবর্তিত হয়নি এবং তুমি তোমার গাধাটির দিকে তাকাও, আর যাতে আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে পারি এবং তুমি হাড়গুলোর দিকে তাকাও, কিভাবে আমি তা সংযুক্ত করি, অতঃপর তাকে আবৃত করি গোস্ত দ্বারা। পরে যখন তার নিকট স্পষ্ট হলো, তখন সে বলল, আমি জানি, নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৯)
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَّاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
আর যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? সে বলল, অবশ্যই কিন্তু আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। তিনি বললেন, তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে পোষ মানাও, অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলার টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৬০)
সূরা নং ৩, সূরা আলি ইমরান এর ৩৫-৪০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۤۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَاۤ اُنْثٰىۚ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْؕ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثٰىۚ وَاِنِّيْ سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَاِنِّيْۤ اُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
অতঃপর যখন সে তা প্রসব করল, বলল, হে আমার রব, নিশ্চয় আমি কন্যা প্রসব করেছি, আর আল্লাহ জানেন সে যা প্রসব করেছে, আর পূত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মত নয় এবং নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারিয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয়ে দিচ্ছি।
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاؕ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًاۚ قَالَ يَا مَرْيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অতঃপর তার রব তাকে উত্তমরূপে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়ার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়া তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, হে মারিয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি? সে বলত, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّه ۚ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘‘হে আমার রব! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন, নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’’
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُّصَلِّيْ فِي الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
অতঃপর মালাইকা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নাবী।
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
সে বলল, হে আমার রব, আমার পুত্র হবে কিভাবে? আমার তো বার্ধক্য এসে গেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করেন।
সূরা নং ৩, সূরা আলি ইমরান এর ৪৫-৪৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيْهًا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
স্মরণ কর, যখন মালাইকা বলল, হে মারিয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারিয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত ও নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আর সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় (থাকা অবস্থায়) ও পরিণত বয়সে এবং সে নেককারদের অন্তর্ভূক্ত।
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَاۤ قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَه كُنْ فَيَكُوْنُ
সে বলল, হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, হও। ফলে তা হয়ে যায়।
ইব্রাহীম (আঃ) কিভাবে রবকে খুঁজে পেলেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে সূরা আনআম এর ৭১-৮০ আয়াতে এবং ইব্রাহীম (আঃ) কিভাবে রবকে আঁকড়ে ধরলেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে হয়েছে সূরা আনআম এর ১৬১-১৬৫ আয়াতে। আরো দেখুন সূরা শুআরা ২৩-২৮ আয়াত। আল কুরআনের আরো বহু আয়াতে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
১. আল্লাহ আমাদের রব হবার প্রথম কারণ হলো তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ থ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
পড়, তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রক্তবিন্দু থেকে। (সূরা ৯৬/আলাকঃ ১-২)
রসূল ﷺ এর কাছে নাযিলকৃত সর্বপ্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তার পরিচয় তুলে ধরেছেন যে তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে কি থেকে সৃষ্টি করেছেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ আরো বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকেও, যাতে করে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন কর। (সূরা২/বাকারাঃ২১)
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِه مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আকাশকে ছাদ এবং আকাশ থেকে নাযিল করেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করো না। (সূরা ২/বাকারাঃ২২)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ اسْتَوٰۤى اِلَى السَّمَآءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍؕ وَّهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আকাশের প্রতি খেয়াল করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা ২/বাকারাঃ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًْا وَّنِسَآءًۚ وَّاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِه وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে, আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সাথীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১)
২. আল্লাহ আমাদের রব হবার দ্বিতীয় কারণ হলো তিনি আমাদের রিজিকদাতা।
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الْاَرْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাসস্থল; সবকিছু আছে সুস্পষ্ট কিতাবে (লওহে মাহফুযে)। (সূরা ১১/হুদঃ ৬)
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَؕ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُۚ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ (৩১) فَذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
বল, আসমান ও যমীন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণশক্তির ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। অতঃপর তুমি বল, তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব, অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? অতএব, কোথায় তোমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৩১-৩২)
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আর অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দিয়েছে, আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।
(সূরা ১৭/বানী ইসরাঈলঃ ৭০)
৩. আল্লাহ আমাদের রব হবার তৃতীয় কারণ হলো তিনি সবকিছুর পরিচালনাকারী, নিয়ন্ত্রণকারী, সকল প্রকার জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী, যার কাছে একদিন সবাইকে ফিরে যেতে হবে, যিনি সবকিছুর হিসাব গ্রহণকারী, সৎকর্মের পুরস্কারদানকারী, অসৎকর্মের শাস্তিদানকারী ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍؕ وَّلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيْهِ تَخْتَلِفُوْنَ
বল, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন রব অনুসন্ধান করব অথচ তিনি সবকিছুর রব? আর প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে, তা শুধু তারই উপর বর্তায় আর কেউ অন্য কারো বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদের রবের নিকটই তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৫)
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِؗ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে যমীনে খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৬)
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَأْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আর যা কিছুই তুমি কুরআন হতে পাঠ কর না কেন আর তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমি তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর। তোমার রব থেকে গোপন থাকে না যমীনের বা আসমানের অণু পরিমাণ কিছুই এবং তা থেকে ছোট বা বড়, যা সুস্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ নেই। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৬১)
اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْؕ مَّا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاۤؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় আমি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করছি, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন।
(সূরা ১১/হুদঃ ৫৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِه ۤ اِلَيْكُمْؕ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّيْ قَوْمًا غَيْرَكُمْۚ وَلَا تَضُرُّوْنَهٗ شَيْئًاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
অতঃপর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে যা নিয়ে আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি তা তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আর আমার রব তোমাদেরকে ছাড়া অন্য এক জাতিকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয় আমার রব সব কিছুর হেফাযতকারী।
(সূরা ১১/হুদঃ ৫৭)
৪. আল্লাহ আমাদের রব হবার চতুর্থ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা না মানলেই নয়, তা হলো তিনি আমাদের বিধানদাতা। কারণ আরবের কাফের মুশরিকরাও আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে মেনে নিয়েছিল কিন্তু আল্লাহকে তারা এককভাবে বিধানদাতা, কুরআন আল্লাহর বাণী এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে তারা নাবী ও রসূল হিসেবে মানেনি। আর এ কারণেই তারা আমাদের মত মানুষ হয়েও কাফির যাদের অনিবার্য পরিণতি হলো জাহান্নাম। যুগে যুগে ফেরাউন ও নমরূদ এর মত ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিরা আল্লাহ যাদেরকে অর্থ-ক্ষমতা দিয়েছিলেন তারা মূলত এই অর্থেই নিজেদেরকে রব দাবী করেছেন যে এই যমীন আমাদের বিধান মত চলবে (২৬ঃ২৯)। মূলত বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার পরীক্ষার জন্য দেওয়া সামান্য কয়েক দিনের ক্ষমতার দাপটে আল্লাহর বিধান, তাঁর ওহী ও রসূলদেরকে মানতে অস্বীকার করেছে। অথচ বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ ঃ
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ ؕ اُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيْمَةُ الْاَنْعَامِ اِلَّا مَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর, তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করা হচ্ছে তা ছাড়া। তবে ইহরাম অবস্থায় শিকারকে হালাল করবে না, নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা বিধান দেন। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ১)
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তারা কি জাহিলিয়াতের বিধান চায়? আর দৃঢ় বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৫০)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন-সুন্নাহ বা ওহীর মাধ্যমে পাঠানো বিধান তথা ইসলাম ছাড়া সবকিছুই জাহিলিয়াত বলে উল্লেখ্য করেছেন।
قُلْ اِنِّيْ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَكَذَّبْتُمْ بِه ؕ مَا عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِه ۤؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমি আমার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর রয়েছি আর তোমরা তা অস্বীকার করছ। তোমরা যা নিয়ে তাড়াহুড়া করছ তা আমার কাছে নেই। হুকুম দিবেন কেবল আল্লাহ (বিধান চলবে কেবল আল্লাহর), তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং তিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। (সূরা ৬/আনআমঃ ৫৭)
ثُمَّ رُدُّوْاۤ اِلَى اللهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّؕ اَلَا لَهُ الْحُكْمُ۫ وَهُوَ اَسْرَعُ الْحَاسِبِيْنَ
অতঃপর তাদেরকে আল্লাহর কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি সত্যিকারের মাওলা (অভিভাবক)। সাবধান! হুকুম/বিধান দেয়ার ক্ষমতা তাঁরই, আর তিনি হচ্ছেন খুব দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা ৬/আনআমঃ ৬২)
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَّالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদের নিকট বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন। আর যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানত যে, তা তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিলকৃত। সুতরাং তুমি কখনো সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১১৪)
اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ۫ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهٗ حَثِيْثًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرَاتٍ ۢبِاَمْرِه ۤؕ اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় তোমাদের রব হলেন, আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল মাত্র ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন, তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন, প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে, আর সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ সৃষ্টি ও নির্দেশ/বিধান তাঁরই; বরকতময় আল্লাহই বিশ্ব জাহানের রব।
(সূরা ৭/আরাফঃ ৫৪)
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তোমরা তাঁকে (আল্লাহকে) বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা করেছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। (সূরা ১২/ইউসুফঃ ৪০)
اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ থ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
পড়, তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রক্তবিন্দু থেকে। (সূরা ৯৬/আলাকঃ ১-২)
রসূল ﷺ এর কাছে নাযিলকৃত সর্বপ্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তার পরিচয় তুলে ধরেছেন যে তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে কি থেকে সৃষ্টি করেছেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ আরো বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকেও, যাতে করে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন কর। (সূরা২/বাকারাঃ২১)
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِه مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আকাশকে ছাদ এবং আকাশ থেকে নাযিল করেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করো না। (সূরা ২/বাকারাঃ২২)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ اسْتَوٰۤى اِلَى السَّمَآءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍؕ وَّهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আকাশের প্রতি খেয়াল করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা ২/বাকারাঃ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًْا وَّنِسَآءًۚ وَّاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِه وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে, আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সাথীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১)
২. আল্লাহ আমাদের রব হবার দ্বিতীয় কারণ হলো তিনি আমাদের রিজিকদাতা।
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الْاَرْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাসস্থল; সবকিছু আছে সুস্পষ্ট কিতাবে (লওহে মাহফুযে)। (সূরা ১১/হুদঃ ৬)
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَؕ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُۚ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ (৩১) فَذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
বল, আসমান ও যমীন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণশক্তির ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। অতঃপর তুমি বল, তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব, অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? অতএব, কোথায় তোমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৩১-৩২)
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আর অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দিয়েছে, আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।
(সূরা ১৭/বানী ইসরাঈলঃ ৭০)
৩. আল্লাহ আমাদের রব হবার তৃতীয় কারণ হলো তিনি সবকিছুর পরিচালনাকারী, নিয়ন্ত্রণকারী, সকল প্রকার জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী, যার কাছে একদিন সবাইকে ফিরে যেতে হবে, যিনি সবকিছুর হিসাব গ্রহণকারী, সৎকর্মের পুরস্কারদানকারী, অসৎকর্মের শাস্তিদানকারী ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍؕ وَّلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيْهِ تَخْتَلِفُوْنَ
বল, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন রব অনুসন্ধান করব অথচ তিনি সবকিছুর রব? আর প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে, তা শুধু তারই উপর বর্তায় আর কেউ অন্য কারো বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদের রবের নিকটই তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৫)
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِؗ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে যমীনে খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৬)
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَأْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আর যা কিছুই তুমি কুরআন হতে পাঠ কর না কেন আর তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমি তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর। তোমার রব থেকে গোপন থাকে না যমীনের বা আসমানের অণু পরিমাণ কিছুই এবং তা থেকে ছোট বা বড়, যা সুস্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ নেই। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৬১)
اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْؕ مَّا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاۤؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় আমি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করছি, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন।
(সূরা ১১/হুদঃ ৫৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِه ۤ اِلَيْكُمْؕ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّيْ قَوْمًا غَيْرَكُمْۚ وَلَا تَضُرُّوْنَهٗ شَيْئًاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
অতঃপর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে যা নিয়ে আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি তা তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আর আমার রব তোমাদেরকে ছাড়া অন্য এক জাতিকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয় আমার রব সব কিছুর হেফাযতকারী।
(সূরা ১১/হুদঃ ৫৭)
৪. আল্লাহ আমাদের রব হবার চতুর্থ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা না মানলেই নয়, তা হলো তিনি আমাদের বিধানদাতা। কারণ আরবের কাফের মুশরিকরাও আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে মেনে নিয়েছিল কিন্তু আল্লাহকে তারা এককভাবে বিধানদাতা, কুরআন আল্লাহর বাণী এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে তারা নাবী ও রসূল হিসেবে মানেনি। আর এ কারণেই তারা আমাদের মত মানুষ হয়েও কাফির যাদের অনিবার্য পরিণতি হলো জাহান্নাম। যুগে যুগে ফেরাউন ও নমরূদ এর মত ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিরা আল্লাহ যাদেরকে অর্থ-ক্ষমতা দিয়েছিলেন তারা মূলত এই অর্থেই নিজেদেরকে রব দাবী করেছেন যে এই যমীন আমাদের বিধান মত চলবে (২৬ঃ২৯)। মূলত বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার পরীক্ষার জন্য দেওয়া সামান্য কয়েক দিনের ক্ষমতার দাপটে আল্লাহর বিধান, তাঁর ওহী ও রসূলদেরকে মানতে অস্বীকার করেছে। অথচ বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ ঃ
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ ؕ اُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيْمَةُ الْاَنْعَامِ اِلَّا مَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর, তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করা হচ্ছে তা ছাড়া। তবে ইহরাম অবস্থায় শিকারকে হালাল করবে না, নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা বিধান দেন। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ১)
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তারা কি জাহিলিয়াতের বিধান চায়? আর দৃঢ় বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৫০)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন-সুন্নাহ বা ওহীর মাধ্যমে পাঠানো বিধান তথা ইসলাম ছাড়া সবকিছুই জাহিলিয়াত বলে উল্লেখ্য করেছেন।
قُلْ اِنِّيْ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَكَذَّبْتُمْ بِه ؕ مَا عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِه ۤؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমি আমার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর রয়েছি আর তোমরা তা অস্বীকার করছ। তোমরা যা নিয়ে তাড়াহুড়া করছ তা আমার কাছে নেই। হুকুম দিবেন কেবল আল্লাহ (বিধান চলবে কেবল আল্লাহর), তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং তিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। (সূরা ৬/আনআমঃ ৫৭)
ثُمَّ رُدُّوْاۤ اِلَى اللهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّؕ اَلَا لَهُ الْحُكْمُ۫ وَهُوَ اَسْرَعُ الْحَاسِبِيْنَ
অতঃপর তাদেরকে আল্লাহর কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি সত্যিকারের মাওলা (অভিভাবক)। সাবধান! হুকুম/বিধান দেয়ার ক্ষমতা তাঁরই, আর তিনি হচ্ছেন খুব দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা ৬/আনআমঃ ৬২)
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَّالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদের নিকট বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন। আর যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানত যে, তা তোমার রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিলকৃত। সুতরাং তুমি কখনো সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১১৪)
اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ۫ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهٗ حَثِيْثًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرَاتٍ ۢبِاَمْرِه ۤؕ اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় তোমাদের রব হলেন, আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল মাত্র ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন, তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন, প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে, আর সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ সৃষ্টি ও নির্দেশ/বিধান তাঁরই; বরকতময় আল্লাহই বিশ্ব জাহানের রব।
(সূরা ৭/আরাফঃ ৫৪)
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তোমরা তাঁকে (আল্লাহকে) বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা করেছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। (সূরা ১২/ইউসুফঃ ৪০)
কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে পূর্বের অধ্যায়গুলো থেকে আমরা জেনেছি যে, আমাদের রব হলেন আল্লাহ। তবে কবরে ‘‘তোমার রব কে?’’ এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়ার জন্য আরো যে বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে তা হলো, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক ও একক এবং তার কোন শরীক নেই। যেহেতু আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, নিয়ন্ত্রণকারী, বিধানদাতা। সুতরাং ইবাদত পাবার যোগ্যতম সত্ত্বাও একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া যেহেতু আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, রিজিকদাতা নেই, নিয়ন্ত্রণকারী নেই, বিধানদাতা নেই তাই তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ বা উপাস্য নেই। আর এই বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে যেহেতু তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই সেহেতু ইবাদত পাওয়ার ক্ষেত্রেও তার কোন অংশীদার নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
شَهِدَ اللهُ اَنَّه لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, আর মালাইকা ও জ্ঞানীগণও। (তিনি) ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৮)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَأْخُذُه سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَّه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَه اِلَّا بِاِذْنِه ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه ۤ اِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُه حِفْظُهُمَاۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ/উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী, তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা ষ্পর্শ করে না। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না আর তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।
(সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৫, আয়াতুল কুরসী)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। সকল বিষয়েই তার জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। (সূরা ২০/তব হাঃ ৯৮)
وَلَا تَدْعُ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আর আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁর চেহারা ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা ২৮/কাসাসঃ ৮৮)
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। اَللهُ الصَّمَدُ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেন নি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং তিনি জন্ম নেন নি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তাঁর সমকক্ষ/সমতুল্য কেউ নেই।
(সূরা ১১২/ইখলাস)
মূলত আন্তরিকভাবে নিষ্ঠার সাথে এই সাক্ষ্য দিয়েই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওহেদাহু, লা শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক-অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রসূল।
এই কালিমাকে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়, মুখে স্বীকৃতি দিতে হয় এবং এর দাবী ও শর্ত অনুযায়ী রসূল ﷺ এর দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করতে হয়। আর এটাই হলো ঈমান। এর একটাও যদি অনুপস্থিত থাকে তবে সে ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য গাজী মুহাম্মদ তানযিল ভাইয়ের সংকলিত ‘‘কালিমাতুশ শাহাদাহ’’ কিতাবটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।
সুতরাং ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর, চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। মোট কথা আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে ও তাওহীদকে মেনে না নিলে সে কবরের প্রথম প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। তাই আমাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কেও কুরআন-সুন্নাহ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
شَهِدَ اللهُ اَنَّه لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, আর মালাইকা ও জ্ঞানীগণও। (তিনি) ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৮)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَأْخُذُه سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَّه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَه اِلَّا بِاِذْنِه ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه ۤ اِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُه حِفْظُهُمَاۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ/উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী, তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা ষ্পর্শ করে না। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না আর তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।
(সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৫, আয়াতুল কুরসী)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। সকল বিষয়েই তার জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। (সূরা ২০/তব হাঃ ৯৮)
وَلَا تَدْعُ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আর আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁর চেহারা ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা ২৮/কাসাসঃ ৮৮)
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। اَللهُ الصَّمَدُ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেন নি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং তিনি জন্ম নেন নি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ আর তাঁর সমকক্ষ/সমতুল্য কেউ নেই।
(সূরা ১১২/ইখলাস)
মূলত আন্তরিকভাবে নিষ্ঠার সাথে এই সাক্ষ্য দিয়েই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওহেদাহু, লা শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক-অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রসূল।
এই কালিমাকে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়, মুখে স্বীকৃতি দিতে হয় এবং এর দাবী ও শর্ত অনুযায়ী রসূল ﷺ এর দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করতে হয়। আর এটাই হলো ঈমান। এর একটাও যদি অনুপস্থিত থাকে তবে সে ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য গাজী মুহাম্মদ তানযিল ভাইয়ের সংকলিত ‘‘কালিমাতুশ শাহাদাহ’’ কিতাবটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।
সুতরাং ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর, চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। মোট কথা আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে ও তাওহীদকে মেনে না নিলে সে কবরের প্রথম প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। তাই আমাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কেও কুরআন-সুন্নাহ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
১. আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা ও তাওহীদ কে আঁকড়ে ধরা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের প্রকাশিত ‘‘আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে’’ কিতাবটি সংগ্রহ করে পড়ুন। উক্ত কিতাবে আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে বিধায় এখানে আলোচনা করা হলো না।
২. আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে।
৩. আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করতে হবে।
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌۚ يَّحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّوْنَ الَّذِيْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِيْنَ هَادُوْا وَالرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتَابِ اللهِ وَكَانُوْا عَلَيْهِ شُهَدَآءَۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ وَّمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নাবীগণ ও রববানী (আল্লাহভক্ত) ও ধর্মবিদ (আলেম/পন্ডিত)গণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৪)
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَاۤ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌؕ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِه فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهٗؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই যালিম।
(সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৫)
وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৭)
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে ডাকা হবে এ মর্মে যে, তিনি তাদের মাঝে বিচার-মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই যে, আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম, আর তারাই হলো সফলকাম। (সূরা ২৪/নূরঃ ৫১)
৪. তাগুতের সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করতে হবে।
لَاۤ اِكْرَاهَ فِي الدِّيْنِۚ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ لَا انْفِصَامَ لَهَاۚ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই, অবশ্যই সত্য মিথ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, অতএব যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে এমন একটা মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৬)
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে, এরা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত। (সূরা ৪/নিসাঃ ৫১)
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِه ؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬০)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَى اللهُ وَمِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُؕ فَسِيْرُوْا فِي الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ কাউকে হিদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে কারো উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, অস্বীকারকারীদের পরিণতি কিরূপ হয়েছে। (সূরা ১৬/নাহলঃ ৩৬)
وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْاۤ اِلَى اللهِ لَهُمُ الْبُشْرٰى فَبَشِّرْ عِبَادِ
আর যারা তাগুতের উপাসনা পরিহার করে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয় তাদের জন্য আছে সুসংবাদ, অতএব আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও। (সূরা ৩৯/যুমারঃ ১৭)
৫. শিরকের সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করতে হবে।
তোমার রব কে? কবরের এই প্রশ্নের উত্তরে ‘‘আমার রব হলেন আল্লাহ’’ এর যথাযথ জবাব দিতে হলে আপনাকে শিরক থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকার শিরক থেকে একেবারে মুক্ত। যে ব্যক্তি শিরক করবে সে ব্যক্তি কবরের প্রশ্নের জবাব তো দূরের কথা সে সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাবে যে গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেনঃ
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِه وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলুম। (সূরা ৩১/লুকমানঃ ১৩)
اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤى اِثْمًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না, তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান; আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ করে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৪৮)
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَؕ وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ অথচ মাসীহ (ঈসা আঃ) বলেছেন, হে বানী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দিবেন এবং তার ঠিকানা হবে আগুন (জাহান্নাম) আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৭২)
আমাদের রসূল ﷺ †ক উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শিরক করলে তোমার কর্মও নিস্ফল হবে আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা ৩৯/যুমারঃ ৬৫)
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّفِصَالُهٗ فِيْ عَامَيْنِ اَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ اِلَيَّ الْمَصِيْرُ (১৪) وَاِنْ جَاهَدَاكَ عَلٰۤى اَنْ تُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِه عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا وَّاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ ثُمَّ اِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করতে, তবে যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর করে যে ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না; আমার দিকেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর তোমরা যা করতে তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব। (৩১/লুকমানঃ ১৪-১৫)
حُنَفَآءَ لِلّٰهِ غَيْرَ مُشْرِكِيْنَ بِه ؕ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَكَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ اَوْ تَهْوِيْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ مَكَانٍ سَحِيْقٍ
আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে (ইবাদত কর), তাঁর সাথে শিরক না করে আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল। (সূরা ২২/হজ্জ্বঃ ৩১)
ইসলামের একটি অন্যতম রুকন হজ্জে গিয়েই আল্লাহর কাছে সর্বপ্রথম বান্দাদেরকে মন-প্রাণ উজাড় করে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে হৃদয় নিংড়িয়ে যে মনোমুগ্ধকর স্বীকারোক্তি দিতে হয় তা হলো,
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ
লাববাইক, আল্লা-হুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা-শারীকালাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকালাক।
আমি তোমার কাছে হাযির, হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে হাযির; আমি তোমার কাছে হাযির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার কাছে হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত, সামাজ্য/সাবভৌমত্ব শুধু তোমার জন্য, কোন কিছুতেই তোমার কোন শরীক নেই।
অন্তর থেকে আন্তরিকভাবে নিষ্ঠার সাথে সকল প্রকার শিরক থেকে সম্পর্ক ছিন্ন না করে শুধু মুখে এই স্বীকারোক্তি দিলেই হজ্জ কবুল হবে না। বরং সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহীদকে আঁকড়ে ধরলেই কেবল ঐ ব্যক্তির হজ্জ কবুল হবে। এমনকি অন্যান্য ইবাদত কবুল হবার জন্য এটাই অন্যতম শর্ত যা আমরা প্রত্যেক সালাতের প্রতি রাকাতেই সূরা ফাতিহাতে বলে থাকিঃ
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি আর একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই।
কিন্তু বাস্তবে যদি আমরা অন্যের ইবাদত করি (কুরআন-সুন্নাহর দলিল ছাড়া অন্য কারো কথায় কোন আমল করলে সেটাও ইবাদত), সাহায্য চাই, ইবাদত ও দোয়াতে ভায়া-মাধ্যম সাব্যস্ত করি তবে শুধু মুখের কথায় আল্লাহ ঈমান-আমল কোনটাই গ্রহণ করবেন না। সুতরাং সাবধান! কুরআন-সুন্নাহ বিমুখ পীর-বুযুর্গ, মুরুববী, ওলী-আওলীয়া, ফাজায়েল আর ওয়াজকারী হুজুরদের ভুল শিক্ষা থেকে সাবধান। কুরআন-সুন্নাহর যথাযথ জ্ঞানই কেবল আপনাকে শিরক, বিদআত ও যাবতীয় ফিতনাহ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করতে পারে। কেননা সুন্দর লেবাসে আজকের সমাজে শিরক-বিদআতের অহ-রহ ছড়াছড়ি। শিরকের বেড়াজালে উম্মত আজ নিজেদের ঈমানকে সামলে রাখতে পারছে না। পীর ও মাযারের নামে শিরকের আড্ডাখানা খোলা হয়েছে আর বড় বড় আলেমদের দোহাই দিয়েও বহু মানুষের হাতে হাতে, গলায় গলায় শিরক ঝুলছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ اَكْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক (শিরক করে)।
(সূরা ১২/ইউসুফঃ ১০৬)
অনেক আলেম আজ লোকদেরকে তাবিয দিয়ে শিরক করাচ্ছে। অথচ রসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তাবিয ঝুলাল সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ইউসুফ, ১০৬ নং আয়াতের তাফসীর)
তাবিয দেয়া শিরক এ কথাটা আজ অনেককেই বুঝানো যাচ্ছে না এই জন্য যে, বড় হুজুর- বড় মুফতি সাহেব তাবিয দিচ্ছেন। তিনি কি কম জানেন? এমনকি অনেক ডাক্তারকেও আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা দিয়ে অন্যের চিকিৎসা করার পরেও নিজে, স্ত্রী-সন্তান-নাতী-পুতিদেরকে হুজুরের তাবিয দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে শিরক করতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কেননা যিনি নিজে তাফসীরে ইবনে কাসীর পড়েন, বুঝেন তাকেও বড় হুজুর তাবিজ দেওয়াতে তারই সংগ্রহে থাকা কিতাব খুলে দেখিয়েও তাবিয থেকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
শিরক সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান আর আল্লাহর সাহায্যই কেবল আপনাকে শিরক থেকে মুক্ত রাখতে পারে। আল্লাহর কাছে কায়মনে শিরক থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করার পাশাপাশি নিচের কিতাবগুলো পাঠ করার জন্য পাঠকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করছিঃ
১। শিরক - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
২। শিরক কি এবং কেন? - অধ্যাপক মুযাম্মিল আলী।
৩। আশ শিরক - বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের গবেষনা পত্র।
৪। শিরকের বেড়াজালে উম্মত বেসামাল - তাওহীদ প্রকাশনী।
৫। অধিকাংশ লোক ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক - আত তাওহীদ পাবলিকেশন্স।
৬। যে সব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্থ হয় - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
৭। যে সব কারণে ইবাদত বরবাদ হয় - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
প্রিয় পাঠক শিরক সম্পর্কে এখনই সচেতন হন, নইলে আপনার সর্বনাশ হয়ে যাবে। পরে আফসোস করে লাভ হবে না। এ বিষয়ে আপনাদেরকে পবিত্র কুরআনের চমৎকার আয়াত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যেখানে আল্লাহ বলেন,
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَآءَ رَبِّه فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّه ۤ اَحَدًا
বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ; সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন আমলে সালেহ করে এবং তাঁর রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা ১৮/কাহাফঃ ১১০)
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলুমের (শিরকের) সাথে মিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
(সূরা ৬/আনআমঃ ৮৩)
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের প্রকাশিত ‘‘আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে’’ কিতাবটি সংগ্রহ করে পড়ুন। উক্ত কিতাবে আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে বিধায় এখানে আলোচনা করা হলো না।
২. আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে।
৩. আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করতে হবে।
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌۚ يَّحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّوْنَ الَّذِيْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِيْنَ هَادُوْا وَالرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتَابِ اللهِ وَكَانُوْا عَلَيْهِ شُهَدَآءَۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ وَّمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নাবীগণ ও রববানী (আল্লাহভক্ত) ও ধর্মবিদ (আলেম/পন্ডিত)গণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৪)
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَاۤ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌؕ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِه فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهٗؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই যালিম।
(সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৫)
وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৪৭)
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে ডাকা হবে এ মর্মে যে, তিনি তাদের মাঝে বিচার-মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই যে, আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম, আর তারাই হলো সফলকাম। (সূরা ২৪/নূরঃ ৫১)
৪. তাগুতের সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করতে হবে।
لَاۤ اِكْرَاهَ فِي الدِّيْنِۚ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ لَا انْفِصَامَ لَهَاۚ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই, অবশ্যই সত্য মিথ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, অতএব যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে এমন একটা মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৫৬)
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে, এরা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত। (সূরা ৪/নিসাঃ ৫১)
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِه ؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬০)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَى اللهُ وَمِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُؕ فَسِيْرُوْا فِي الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ কাউকে হিদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে কারো উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, অস্বীকারকারীদের পরিণতি কিরূপ হয়েছে। (সূরা ১৬/নাহলঃ ৩৬)
وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْاۤ اِلَى اللهِ لَهُمُ الْبُشْرٰى فَبَشِّرْ عِبَادِ
আর যারা তাগুতের উপাসনা পরিহার করে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয় তাদের জন্য আছে সুসংবাদ, অতএব আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও। (সূরা ৩৯/যুমারঃ ১৭)
৫. শিরকের সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করতে হবে।
তোমার রব কে? কবরের এই প্রশ্নের উত্তরে ‘‘আমার রব হলেন আল্লাহ’’ এর যথাযথ জবাব দিতে হলে আপনাকে শিরক থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকার শিরক থেকে একেবারে মুক্ত। যে ব্যক্তি শিরক করবে সে ব্যক্তি কবরের প্রশ্নের জবাব তো দূরের কথা সে সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাবে যে গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেনঃ
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِه وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলুম। (সূরা ৩১/লুকমানঃ ১৩)
اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤى اِثْمًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না, তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান; আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ করে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৪৮)
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَؕ وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ অথচ মাসীহ (ঈসা আঃ) বলেছেন, হে বানী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দিবেন এবং তার ঠিকানা হবে আগুন (জাহান্নাম) আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৭২)
আমাদের রসূল ﷺ †ক উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শিরক করলে তোমার কর্মও নিস্ফল হবে আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা ৩৯/যুমারঃ ৬৫)
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّفِصَالُهٗ فِيْ عَامَيْنِ اَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ اِلَيَّ الْمَصِيْرُ (১৪) وَاِنْ جَاهَدَاكَ عَلٰۤى اَنْ تُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِه عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا وَّاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ ثُمَّ اِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করতে, তবে যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর করে যে ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না; আমার দিকেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর তোমরা যা করতে তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব। (৩১/লুকমানঃ ১৪-১৫)
حُنَفَآءَ لِلّٰهِ غَيْرَ مُشْرِكِيْنَ بِه ؕ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَكَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ اَوْ تَهْوِيْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ مَكَانٍ سَحِيْقٍ
আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে (ইবাদত কর), তাঁর সাথে শিরক না করে আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল। (সূরা ২২/হজ্জ্বঃ ৩১)
ইসলামের একটি অন্যতম রুকন হজ্জে গিয়েই আল্লাহর কাছে সর্বপ্রথম বান্দাদেরকে মন-প্রাণ উজাড় করে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে হৃদয় নিংড়িয়ে যে মনোমুগ্ধকর স্বীকারোক্তি দিতে হয় তা হলো,
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ
লাববাইক, আল্লা-হুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা-শারীকালাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকালাক।
আমি তোমার কাছে হাযির, হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে হাযির; আমি তোমার কাছে হাযির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার কাছে হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত, সামাজ্য/সাবভৌমত্ব শুধু তোমার জন্য, কোন কিছুতেই তোমার কোন শরীক নেই।
অন্তর থেকে আন্তরিকভাবে নিষ্ঠার সাথে সকল প্রকার শিরক থেকে সম্পর্ক ছিন্ন না করে শুধু মুখে এই স্বীকারোক্তি দিলেই হজ্জ কবুল হবে না। বরং সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহীদকে আঁকড়ে ধরলেই কেবল ঐ ব্যক্তির হজ্জ কবুল হবে। এমনকি অন্যান্য ইবাদত কবুল হবার জন্য এটাই অন্যতম শর্ত যা আমরা প্রত্যেক সালাতের প্রতি রাকাতেই সূরা ফাতিহাতে বলে থাকিঃ
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি আর একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই।
কিন্তু বাস্তবে যদি আমরা অন্যের ইবাদত করি (কুরআন-সুন্নাহর দলিল ছাড়া অন্য কারো কথায় কোন আমল করলে সেটাও ইবাদত), সাহায্য চাই, ইবাদত ও দোয়াতে ভায়া-মাধ্যম সাব্যস্ত করি তবে শুধু মুখের কথায় আল্লাহ ঈমান-আমল কোনটাই গ্রহণ করবেন না। সুতরাং সাবধান! কুরআন-সুন্নাহ বিমুখ পীর-বুযুর্গ, মুরুববী, ওলী-আওলীয়া, ফাজায়েল আর ওয়াজকারী হুজুরদের ভুল শিক্ষা থেকে সাবধান। কুরআন-সুন্নাহর যথাযথ জ্ঞানই কেবল আপনাকে শিরক, বিদআত ও যাবতীয় ফিতনাহ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করতে পারে। কেননা সুন্দর লেবাসে আজকের সমাজে শিরক-বিদআতের অহ-রহ ছড়াছড়ি। শিরকের বেড়াজালে উম্মত আজ নিজেদের ঈমানকে সামলে রাখতে পারছে না। পীর ও মাযারের নামে শিরকের আড্ডাখানা খোলা হয়েছে আর বড় বড় আলেমদের দোহাই দিয়েও বহু মানুষের হাতে হাতে, গলায় গলায় শিরক ঝুলছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ اَكْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক (শিরক করে)।
(সূরা ১২/ইউসুফঃ ১০৬)
অনেক আলেম আজ লোকদেরকে তাবিয দিয়ে শিরক করাচ্ছে। অথচ রসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তাবিয ঝুলাল সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ইউসুফ, ১০৬ নং আয়াতের তাফসীর)
তাবিয দেয়া শিরক এ কথাটা আজ অনেককেই বুঝানো যাচ্ছে না এই জন্য যে, বড় হুজুর- বড় মুফতি সাহেব তাবিয দিচ্ছেন। তিনি কি কম জানেন? এমনকি অনেক ডাক্তারকেও আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা দিয়ে অন্যের চিকিৎসা করার পরেও নিজে, স্ত্রী-সন্তান-নাতী-পুতিদেরকে হুজুরের তাবিয দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে শিরক করতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কেননা যিনি নিজে তাফসীরে ইবনে কাসীর পড়েন, বুঝেন তাকেও বড় হুজুর তাবিজ দেওয়াতে তারই সংগ্রহে থাকা কিতাব খুলে দেখিয়েও তাবিয থেকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
শিরক সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান আর আল্লাহর সাহায্যই কেবল আপনাকে শিরক থেকে মুক্ত রাখতে পারে। আল্লাহর কাছে কায়মনে শিরক থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করার পাশাপাশি নিচের কিতাবগুলো পাঠ করার জন্য পাঠকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করছিঃ
১। শিরক - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
২। শিরক কি এবং কেন? - অধ্যাপক মুযাম্মিল আলী।
৩। আশ শিরক - বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের গবেষনা পত্র।
৪। শিরকের বেড়াজালে উম্মত বেসামাল - তাওহীদ প্রকাশনী।
৫। অধিকাংশ লোক ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক - আত তাওহীদ পাবলিকেশন্স।
৬। যে সব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্থ হয় - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
৭। যে সব কারণে ইবাদত বরবাদ হয় - ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ।
প্রিয় পাঠক শিরক সম্পর্কে এখনই সচেতন হন, নইলে আপনার সর্বনাশ হয়ে যাবে। পরে আফসোস করে লাভ হবে না। এ বিষয়ে আপনাদেরকে পবিত্র কুরআনের চমৎকার আয়াত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যেখানে আল্লাহ বলেন,
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَآءَ رَبِّه فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّه ۤ اَحَدًا
বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ; সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন আমলে সালেহ করে এবং তাঁর রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা ১৮/কাহাফঃ ১১০)
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলুমের (শিরকের) সাথে মিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
(সূরা ৬/আনআমঃ ৮৩)
আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নেয়ার পুরস্কার হলো জান্নাতে মেহমানদারী।
সূরা নং ৪১, সূরা হা-মীম সিজদাহ এর ৩০-৩৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ অতঃপর অটল অবিচল থাকে তাদের প্রতি মালাইকা নাযিল হয় (আর বলে), তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিতও হয়ো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।
نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْاٰخِرَةِ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ
আমরা দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু ছিলাম আর আখেরাতেও, সেখানে তোমাদের জন্য তাই থাকবে যা কিছু তোমরা চাইবে এবং তোমাদের জন্য সেখানে আরো থাকবে যা তোমরা দাবী করবে,
نُزُلًامِّنْغَفُوْرٍرَّحِيْمٍ
পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ।
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর তার কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজেও নেক আমল করে আর বলে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের একজন।
আল্লাহকে যারা রব হিসেবে চিনবে ও মেনে চলবে তারা মৃত্যুর সময়ই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ (২৭) اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً (২৮) فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ (২৯) وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ (৩০)
হে প্রশান্ত (চিন্তামুক্ত/উদ্বেগশূণ্য) আত্মা, তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টি সহকারে, অতঃপর আমার (নেককার) বান্দাদের শামিল হয়ে যাও আর জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা ৮৯/ফাজরঃ ২৭-৩০)
তবে শর্ত হলো তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত অটল অবিচল থাকতে হবে যে জীবনে যত কষ্টই হোক আমরা আল্লাহর বিধান ছাড়া আর কোন বিধান মানব না যেমনটি মুসা (আঃ) মুজেজা দেখে ফেরাউনের যাদুকররা অবিচল ছিল, অবিচল ছিল সাহাবী (রদিঃ) গণ।সূরা আরাফ এর ১২০-১২৬ আয়াত,সূরা শুআরা ৪৬-৫১ আয়াত ও সূরা হিজরের সর্বশেষ আয়াত দেখুন।
সূরা নং ৪১, সূরা হা-মীম সিজদাহ এর ৩০-৩৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ অতঃপর অটল অবিচল থাকে তাদের প্রতি মালাইকা নাযিল হয় (আর বলে), তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিতও হয়ো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।
نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْاٰخِرَةِ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ
আমরা দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু ছিলাম আর আখেরাতেও, সেখানে তোমাদের জন্য তাই থাকবে যা কিছু তোমরা চাইবে এবং তোমাদের জন্য সেখানে আরো থাকবে যা তোমরা দাবী করবে,
نُزُلًامِّنْغَفُوْرٍرَّحِيْمٍ
পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ।
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর তার কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজেও নেক আমল করে আর বলে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের একজন।
আল্লাহকে যারা রব হিসেবে চিনবে ও মেনে চলবে তারা মৃত্যুর সময়ই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ (২৭) اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً (২৮) فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ (২৯) وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ (৩০)
হে প্রশান্ত (চিন্তামুক্ত/উদ্বেগশূণ্য) আত্মা, তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টি সহকারে, অতঃপর আমার (নেককার) বান্দাদের শামিল হয়ে যাও আর জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা ৮৯/ফাজরঃ ২৭-৩০)
তবে শর্ত হলো তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত অটল অবিচল থাকতে হবে যে জীবনে যত কষ্টই হোক আমরা আল্লাহর বিধান ছাড়া আর কোন বিধান মানব না যেমনটি মুসা (আঃ) মুজেজা দেখে ফেরাউনের যাদুকররা অবিচল ছিল, অবিচল ছিল সাহাবী (রদিঃ) গণ।সূরা আরাফ এর ১২০-১২৬ আয়াত,সূরা শুআরা ৪৬-৫১ আয়াত ও সূরা হিজরের সর্বশেষ আয়াত দেখুন।
মৃত্যুর পর কবরে/আলমে বারযাখে দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি সবাইকে করা হবে, তা হলো- তোমার দ্বীন কি ছিল? মুসলিম ব্যক্তি এর জবাবে বলবে যে, আমার দ্বীন ছিল ইসলাম। তবে যে ব্যক্তি কুরআন থেকে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে ভালভাবে জেনে, দুনিয়ার জীবনে ইসলামী জীবন যাপন করবেন তিনিই কেবল এই জবাব দিতে পারবেন। আর যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে কুরআন-হাদীস থেকে ভালভাবে জানবেন না এবং দুনিয়ার জীবনে ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন না সে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না বরং বলবে, ‘‘হায়, হায়, আমি জানি না।’’ তাই আমাদের জানা উচিত ইসলাম কি?
ইসলাম শব্দটি এসেছে ( سلم ) শব্দ থেকে যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা বা অনুগত হওয়া। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলাম মানে এক আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করা বা সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর বিধানকে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করা। অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল করে নেয়া যে, আল্লাহ হলেন সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং মানুষের প্রতি অত্যন্ত সেণহশীল ও মেহেরবান। সুতরাং আল্লাহই ভাল জানেন কোন বিধান মানুষের জন্য উপকারী এবং তিনি যে বিধান দিয়েছেন তা অবশ্যই সুন্দর ও উত্তম। তাই দুনিয়া ও আখেরাতে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য আমি সন্তুষ্ট চিত্তে তাঁর বিধান মেনে নিলাম এবং নিষ্ঠার সাথে তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পালনের জন্য আত্মসমর্পণ করলাম। যেমন আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَ لَه رَبُّه اَسْلِمْ قَالَ اَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
(স্মরণ কর) যখন তার রব তাকে বললেন, ‘আত্মসমর্পণ কর।’ সে বলেছিল, আমি বিশ্বজগতের রবের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৩১)
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيْهِ شُرَكَآءُ مُتَشَاكِسُوْنَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلَا الْحَمْدُ لِلّٰهِ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, এক ব্যক্তি যার মনিব অনেক, যারা পরস্পর বিরোধী এবং আরেক ব্যক্তি, যে এক মনিবের অনুগত, এ দু’জনের অবস্থা কি সমান? সকল প্রশংসাই আল্লাহর কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ২৯)
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর, অতঃপর আর সাহায্য করা হবে না।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৫৪)
আল্লাহর বিধান সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার জন্য ইব্রাহীম (আঃ) যে দৃষ্টান্তহীন অনুসরণ ও আনুগত্যের নমুনা পেশ করেছিলেন মহান আল্লাহ তা কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি মুসলিম এমনই হোক মহান আল্লাহ এটাই চান। আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ وَّاتَّبَعَ مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَّاتَّخَذَ اللهُ اِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا
আর দ্বীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণ সমার্পণ করল এবং একনিষ্টভাবে ইব্রাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল? আর আল্লাহ ইব্রাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১২৫)
শিরকমুক্ত হয়ে নিষ্ঠার সাথে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যও নাবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করাই ইবাদত কবুল হওয়ার মৌলিক শর্ত। আখেরাতের মুক্তি এই মৌলিক নীতি অনুযায়ী কৃত নেক আমলের উপর নির্ভরশীল। কেবল আশা ও কামনা করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ۫ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষবশত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৯)
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِؕ فَاِلٰهُكُمْ اِلَهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিযিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ, অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ২২/হজ্জ্বঃ ৩৪)
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُؕ قُلْ اِنِّيْۤ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَسْلَمَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বল, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা? তিনি আহার দেন, তাঁকে আহার দেয়া হয় না। বল, নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে আমি যেন তাদের প্রথম হই। আর তুমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না।
(সূরা ৬/আনআমঃ ১৪)
ইসলাম হলো মহান আল্লাহর সেই মনোনীত দ্বীন, যার প্রতি সকল নবীগণ সব যুগে আহবান করেছেন এবং যার শিক্ষা দিয়েছেন। আর এখন এই ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো সেটাই, যা শেষ নাবী মুহাম্মাদ ﷺ বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেছেন। তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতের উপর ঐভাবেই ঈমান আনতে হবে যেভাবে নাবী কারীম ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন। এখন কেবল আল্লাহকে এক মনে করে নিলেই অথবা কিছু নেককাজ করলেই যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নয়, বরং ঈমান ও ইসলামের দাবী হল, আল্লাহকে এক মনে করে কেবল তাঁরই ইবাদত করা। মুহাম্মাদ ﷺ সহ সকল নাবীদের উপর ঈমান আনা। মুহাম্মাদ ﷺ এরপর আর কোন নাবী আসবেন না, এ কথাও স্বীকার করে নেওয়া।
ইসলাম হলো আল্লাহর দেওয়া পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহ বলেন,
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًاؕ فَمَنِ اضْطُرَّ فِيْ مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثْمٍ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকেই তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৩)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّه لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা ২/বাকারাঃ ২০৮)
সুতরাং ইসলাম হলো রবের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা যেখানে বিদআতের কোন স্থান নেই। যিনি কুরআন হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ ঈমান ও আকীদার অধিকারী হবেন, কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত আমলগুলো রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে সম্পাদন করবেন এবং শিরক-বিদআত থেকে বেছে থাকবেন তিনিই কেবল কবরে তোমার দ্বীন কি ছিল এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন। আর যাদের ঈমান ও আকীদা বিশুদ্ধ নয় এবং আমলে সালেহ এর সাথে আমলে বিদআত মিশ্রিত করে ফেলেছেন কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের মত তারাও কবরে এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন না। সুতরাং মুক্তি প্রত্যাশী মুসলিম ভাই-বোনদেরকে ঈমান, আকীদা, শিরক, বিদআত ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কিতাবসমূহ যথেষ্ট সহায়ক হবে ইন-শা-আল্লাহ।
দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ বলেই আল্লাহ এমনটি বলেছেন এবং ঈমানদেরদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর। এমন করো না যে, যে নির্দেশগুলো তোমাদের স্বার্থ ও মনমত হবে সেগুলোর উপর আমল করবে এবং যেগুলো পছন্দ হবে না সেই নির্দেশগুলো পরিত্যাগ করবে। অনুরূপভাবে যা দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় তা পালন করতে নিষেধ করেছেন। এ আয়াতে দ্বীনের নামে বিদআতেরও খন্ডন করা হয়েছে এবং বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসীদের মতবাদেরও খন্ডন করা হয়েছে, যারা ইসলামকে সম্পূর্ণরুপে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়, বরং দ্বীনকে কেবল (ব্যক্তিগত) ইবাদত অর্থাৎ মাসজিদে সীমাবদ্ধ রেখে রাজনীতি এবং দেশের সংসদ থেকে তাকে নির্বাসন দিতে চায়। এইভাবে জনসাধারণকেও বুঝানো হচ্ছে, যারা প্রচলিত প্রথা ও লোকাচার এবং আঞ্চলিক সভ্যতা-সংস্কৃতিকে পছন্দ করে, কোন মতেই তারা এগুলোকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়, যেমন মৃত্যু ও বিবাহ-শাদীতে ব্যায়বহুল ও অপচয়মূলক এবং বিজাতীয় রীতিনীতি ইত্যাদিও অনুসরণ করে থাকে, তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা সেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, যে ইসলাম পরিপন্থী কথা ও কর্মকে লোভনীয় ও শোভনীয় ভঙ্গীতে তোমাদের সামনে পেশ করে, যে মন্দের উপর খুব ভালোর লেবেল চড়ায় এবং বিদআতকেও নেকীর কাজ বলে বুঝায়, যাতে সর্বদা তোমরা তার পাতা জালে ফেঁসে যাও। আল্লাহ বলেন,
فَاِنْ حَآجُّوْكَ فَقُلْ اَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلّٰهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِؕ وَقُلْ لِّلَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ وَالْاُمِّيِّيْنَ اَاَسْلَمْتُمْؕ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْاۚ وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ
যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারীরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে তীক্ষন দৃষ্টিবান। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ২০)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন,
اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَه اَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮৩)
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(সূরা আলি ইমরানঃ৮৫)
فَمَنْ يُّرِدِ اللهُ اَنْ يَّهْدِيَهٗ يَشْرَحْ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِۚ وَمَنْ يُّرِدْ اَنْ يُّضِلَّهٗ يَجْعَلْ صَدْرَهٗ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَآءِؕ كَذٰلِكَ يَجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং আল্লাহ যাকে হিদায়াত/সৎপথে পরিচালিত করতে চান, ইসলামের জন্য তার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেন আর যাকে বিপথগামী করতে চান, তার হৃদয়কে সংকীর্ণ করে দেন, (তার জন্য ইসলাম মানা এতটাই কঠিন) যেন সে আসমানে আরোহন করছে; এমনিভাবে আল্লাহ তাদের উপর অকল্যাণ চাপিয়ে দেন যারা ঈমান আনে না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১২৫)
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষকে খুলে দিয়েছেন ফলে সে তার রবের পক্ষ থেকে (আসা) আলোর (ওহী তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের) উপর রয়েছে, তবে কি (সে তার সমান, যে এরূপ নয়); অতএব ধ্বংস সে লোকদের জন্য যাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে আল্লাহর স্মরণ থেকে, তারাই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। (সূরা যুমারঃ ২২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আর সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয় আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত/সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ৬১/আস-সফঃ ৭)
যারা আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করে ও যাবতীয় নিষিদ্ধ বর্জন করে এবং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমল করে এবং যাবতীয় আদেশ ও বিধান কুরআন-সুন্নাহ থেকে জেনে নিয়ে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে সম্পাদন করে তাদের জন্য আছে পুরস্কার ও শুভ পরিণাম। আল্লাহ বলেন,
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَه لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَه اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্যই যে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধচিত্তে আত্মসমর্পণ করেছে এবং সে নেককার, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট পুরস্কার। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ২/বাকারাঃ ১১২)
ইসলাম শব্দটি এসেছে ( سلم ) শব্দ থেকে যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা বা অনুগত হওয়া। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলাম মানে এক আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করা বা সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর বিধানকে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করা। অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল করে নেয়া যে, আল্লাহ হলেন সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং মানুষের প্রতি অত্যন্ত সেণহশীল ও মেহেরবান। সুতরাং আল্লাহই ভাল জানেন কোন বিধান মানুষের জন্য উপকারী এবং তিনি যে বিধান দিয়েছেন তা অবশ্যই সুন্দর ও উত্তম। তাই দুনিয়া ও আখেরাতে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য আমি সন্তুষ্ট চিত্তে তাঁর বিধান মেনে নিলাম এবং নিষ্ঠার সাথে তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পালনের জন্য আত্মসমর্পণ করলাম। যেমন আল্লাহ বলেন,
اِذْ قَالَ لَه رَبُّه اَسْلِمْ قَالَ اَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
(স্মরণ কর) যখন তার রব তাকে বললেন, ‘আত্মসমর্পণ কর।’ সে বলেছিল, আমি বিশ্বজগতের রবের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৩১)
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيْهِ شُرَكَآءُ مُتَشَاكِسُوْنَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلَا الْحَمْدُ لِلّٰهِ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, এক ব্যক্তি যার মনিব অনেক, যারা পরস্পর বিরোধী এবং আরেক ব্যক্তি, যে এক মনিবের অনুগত, এ দু’জনের অবস্থা কি সমান? সকল প্রশংসাই আল্লাহর কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ২৯)
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর, অতঃপর আর সাহায্য করা হবে না।
(সূরা ৩৯/যুমারঃ ৫৪)
আল্লাহর বিধান সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার জন্য ইব্রাহীম (আঃ) যে দৃষ্টান্তহীন অনুসরণ ও আনুগত্যের নমুনা পেশ করেছিলেন মহান আল্লাহ তা কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি মুসলিম এমনই হোক মহান আল্লাহ এটাই চান। আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ وَّاتَّبَعَ مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَّاتَّخَذَ اللهُ اِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا
আর দ্বীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণ সমার্পণ করল এবং একনিষ্টভাবে ইব্রাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল? আর আল্লাহ ইব্রাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১২৫)
শিরকমুক্ত হয়ে নিষ্ঠার সাথে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যও নাবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করাই ইবাদত কবুল হওয়ার মৌলিক শর্ত। আখেরাতের মুক্তি এই মৌলিক নীতি অনুযায়ী কৃত নেক আমলের উপর নির্ভরশীল। কেবল আশা ও কামনা করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ۫ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষবশত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৯)
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِؕ فَاِلٰهُكُمْ اِلَهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিযিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ, অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ২২/হজ্জ্বঃ ৩৪)
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُؕ قُلْ اِنِّيْۤ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَسْلَمَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বল, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা? তিনি আহার দেন, তাঁকে আহার দেয়া হয় না। বল, নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে আমি যেন তাদের প্রথম হই। আর তুমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না।
(সূরা ৬/আনআমঃ ১৪)
ইসলাম হলো মহান আল্লাহর সেই মনোনীত দ্বীন, যার প্রতি সকল নবীগণ সব যুগে আহবান করেছেন এবং যার শিক্ষা দিয়েছেন। আর এখন এই ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো সেটাই, যা শেষ নাবী মুহাম্মাদ ﷺ বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেছেন। তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতের উপর ঐভাবেই ঈমান আনতে হবে যেভাবে নাবী কারীম ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন। এখন কেবল আল্লাহকে এক মনে করে নিলেই অথবা কিছু নেককাজ করলেই যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নয়, বরং ঈমান ও ইসলামের দাবী হল, আল্লাহকে এক মনে করে কেবল তাঁরই ইবাদত করা। মুহাম্মাদ ﷺ সহ সকল নাবীদের উপর ঈমান আনা। মুহাম্মাদ ﷺ এরপর আর কোন নাবী আসবেন না, এ কথাও স্বীকার করে নেওয়া।
ইসলাম হলো আল্লাহর দেওয়া পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহ বলেন,
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًاؕ فَمَنِ اضْطُرَّ فِيْ مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثْمٍ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকেই তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৩)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّه لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা ২/বাকারাঃ ২০৮)
সুতরাং ইসলাম হলো রবের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা যেখানে বিদআতের কোন স্থান নেই। যিনি কুরআন হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ ঈমান ও আকীদার অধিকারী হবেন, কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত আমলগুলো রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে সম্পাদন করবেন এবং শিরক-বিদআত থেকে বেছে থাকবেন তিনিই কেবল কবরে তোমার দ্বীন কি ছিল এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন। আর যাদের ঈমান ও আকীদা বিশুদ্ধ নয় এবং আমলে সালেহ এর সাথে আমলে বিদআত মিশ্রিত করে ফেলেছেন কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের মত তারাও কবরে এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন না। সুতরাং মুক্তি প্রত্যাশী মুসলিম ভাই-বোনদেরকে ঈমান, আকীদা, শিরক, বিদআত ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কিতাবসমূহ যথেষ্ট সহায়ক হবে ইন-শা-আল্লাহ।
দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ বলেই আল্লাহ এমনটি বলেছেন এবং ঈমানদেরদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর। এমন করো না যে, যে নির্দেশগুলো তোমাদের স্বার্থ ও মনমত হবে সেগুলোর উপর আমল করবে এবং যেগুলো পছন্দ হবে না সেই নির্দেশগুলো পরিত্যাগ করবে। অনুরূপভাবে যা দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় তা পালন করতে নিষেধ করেছেন। এ আয়াতে দ্বীনের নামে বিদআতেরও খন্ডন করা হয়েছে এবং বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসীদের মতবাদেরও খন্ডন করা হয়েছে, যারা ইসলামকে সম্পূর্ণরুপে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়, বরং দ্বীনকে কেবল (ব্যক্তিগত) ইবাদত অর্থাৎ মাসজিদে সীমাবদ্ধ রেখে রাজনীতি এবং দেশের সংসদ থেকে তাকে নির্বাসন দিতে চায়। এইভাবে জনসাধারণকেও বুঝানো হচ্ছে, যারা প্রচলিত প্রথা ও লোকাচার এবং আঞ্চলিক সভ্যতা-সংস্কৃতিকে পছন্দ করে, কোন মতেই তারা এগুলোকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়, যেমন মৃত্যু ও বিবাহ-শাদীতে ব্যায়বহুল ও অপচয়মূলক এবং বিজাতীয় রীতিনীতি ইত্যাদিও অনুসরণ করে থাকে, তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা সেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, যে ইসলাম পরিপন্থী কথা ও কর্মকে লোভনীয় ও শোভনীয় ভঙ্গীতে তোমাদের সামনে পেশ করে, যে মন্দের উপর খুব ভালোর লেবেল চড়ায় এবং বিদআতকেও নেকীর কাজ বলে বুঝায়, যাতে সর্বদা তোমরা তার পাতা জালে ফেঁসে যাও। আল্লাহ বলেন,
فَاِنْ حَآجُّوْكَ فَقُلْ اَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلّٰهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِؕ وَقُلْ لِّلَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ وَالْاُمِّيِّيْنَ اَاَسْلَمْتُمْؕ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْاۚ وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ
যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারীরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে তীক্ষন দৃষ্টিবান। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ২০)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন,
اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَه اَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮৩)
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(সূরা আলি ইমরানঃ৮৫)
فَمَنْ يُّرِدِ اللهُ اَنْ يَّهْدِيَهٗ يَشْرَحْ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِۚ وَمَنْ يُّرِدْ اَنْ يُّضِلَّهٗ يَجْعَلْ صَدْرَهٗ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَآءِؕ كَذٰلِكَ يَجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং আল্লাহ যাকে হিদায়াত/সৎপথে পরিচালিত করতে চান, ইসলামের জন্য তার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেন আর যাকে বিপথগামী করতে চান, তার হৃদয়কে সংকীর্ণ করে দেন, (তার জন্য ইসলাম মানা এতটাই কঠিন) যেন সে আসমানে আরোহন করছে; এমনিভাবে আল্লাহ তাদের উপর অকল্যাণ চাপিয়ে দেন যারা ঈমান আনে না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১২৫)
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষকে খুলে দিয়েছেন ফলে সে তার রবের পক্ষ থেকে (আসা) আলোর (ওহী তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের) উপর রয়েছে, তবে কি (সে তার সমান, যে এরূপ নয়); অতএব ধ্বংস সে লোকদের জন্য যাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে আল্লাহর স্মরণ থেকে, তারাই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। (সূরা যুমারঃ ২২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আর সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয় আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত/সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ৬১/আস-সফঃ ৭)
যারা আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করে ও যাবতীয় নিষিদ্ধ বর্জন করে এবং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমল করে এবং যাবতীয় আদেশ ও বিধান কুরআন-সুন্নাহ থেকে জেনে নিয়ে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে সম্পাদন করে তাদের জন্য আছে পুরস্কার ও শুভ পরিণাম। আল্লাহ বলেন,
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَه لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَه اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্যই যে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধচিত্তে আত্মসমর্পণ করেছে এবং সে নেককার, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট পুরস্কার। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ২/বাকারাঃ ১১২)
১. ইবনে উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রসূল ﷺ ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি- (১) আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রসূল - এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, (২) সালাত কায়িম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হাজ্জ্ব সম্পাদন করা এবং (৫) রমযানে সিয়াম রাখা। (বুখারীঃ ৭, ৪৫১৬; মুসলিমঃ ১৬)
২. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল ﷺ -কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে।
(বুখারীঃ ১২, মুসলিমঃ ৪২)
৩. আবু হুরাইরা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ ইরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সে যে আমলে সালেহ (নেক আমল) করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ পর্যন্ত (পুণ্য) লেখা হয়। আর সে যে পাপ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য ঠিক ততটুকুই পাপ লেখা হয়।
(বুখারীঃ ৪০, মুসলিমঃ ১২৯)
৪. আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, ভাগিয়ে দিও না। (বুখারীঃ ৬৯, মুসলিমঃ ১৭৩৪)
৫. হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রদিঃ)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধীতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
(বুখারীঃ ৭১, মুসলিমঃ ১০৩৭)
৬. আনাস (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের কিছু আলামত হলঃ ইল্ম (শরীয়তের জ্ঞান) হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে। (বুখারীঃ ৮০, মুসলিমঃ ২৬৭১)
৭. জারীর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, বিদায় হজ্জের সময় নাবী ﷺ তাকে বললেন, তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেন, আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফিরদের (এর মত) হয়ে যেও না। (বুখারীঃ ১২৩, ৪৪০৫, মুসলিমঃ ৬৫)
৮. ইব্রাহীম তাইমী (রঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, একবার আলী ইবনু আবু তালিব (রদিঃ) আমাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যে ব্যক্তি মনে করে যে, এ পুস্তিকা ও আল্লাহর কিতাব ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কিছু আছে যাকে আমরা অধ্যয়ন করি সে মিথ্যা বলছে। সে সময় তার তরবারির খাপের মধ্যে একখানা পুস্তক ঝুলানো ছিল। এ পুস্তিকায় উটের দাঁতের বিবরণ ছিল এবং যখমের দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে বিধান ছিল। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, নাবী ﷺ বলেছেন, মাদীনার ‘আয়র’ থেকে ‘সাওর’ পর্বত পর্যন্ত এলাকা হারাম। যে ব্যক্তি এ এলাকায় বিদআত করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত, তাঁর মালাইকাদের ও সমগ্র মানবজাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না। সকল মুসলিমের দায়িত্ব এক-অভিন্ন। একজন সাধারণ মুসলিমও এ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে। যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যে ক্রীতদাস তার মনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক বানায় তার উপর আল্লাহর লা’নাত, তাঁর মালাইকাদের ও সমগ্র মানবজাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত কবুল করবেন না। (মুসলিমঃ ৩৬৫২)। সুতরাং বিদআত থেকে সাবধান, কেননা ইসলাম পরিপূর্ণ, ইসলামে বিদআতের কোন সুযোগ নেই আর বিদআত কোন ছোট-খাট গুনাহ নয়। বিদআত করলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। কুরআন-হাদীস থেকে জেনে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে ইবাদত করুন।
দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীসের কিতাবগুলো সাধ্যমত বুঝে বুঝে পড়ার পাশাপাশি ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত- ইসলাম কী?, কুফর কী?, কালিমাতুশ শাহাদাহ, আকীদাহ, শিরক, বিদআত - এই কিতাবগুলিসহ অন্যান্য কিতাবগুলো পাঠ করুন।
২. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল ﷺ -কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে।
(বুখারীঃ ১২, মুসলিমঃ ৪২)
৩. আবু হুরাইরা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ ইরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সে যে আমলে সালেহ (নেক আমল) করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ পর্যন্ত (পুণ্য) লেখা হয়। আর সে যে পাপ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য ঠিক ততটুকুই পাপ লেখা হয়।
(বুখারীঃ ৪০, মুসলিমঃ ১২৯)
৪. আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, ভাগিয়ে দিও না। (বুখারীঃ ৬৯, মুসলিমঃ ১৭৩৪)
৫. হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রদিঃ)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধীতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
(বুখারীঃ ৭১, মুসলিমঃ ১০৩৭)
৬. আনাস (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের কিছু আলামত হলঃ ইল্ম (শরীয়তের জ্ঞান) হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে। (বুখারীঃ ৮০, মুসলিমঃ ২৬৭১)
৭. জারীর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, বিদায় হজ্জের সময় নাবী ﷺ তাকে বললেন, তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেন, আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফিরদের (এর মত) হয়ে যেও না। (বুখারীঃ ১২৩, ৪৪০৫, মুসলিমঃ ৬৫)
৮. ইব্রাহীম তাইমী (রঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, একবার আলী ইবনু আবু তালিব (রদিঃ) আমাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যে ব্যক্তি মনে করে যে, এ পুস্তিকা ও আল্লাহর কিতাব ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কিছু আছে যাকে আমরা অধ্যয়ন করি সে মিথ্যা বলছে। সে সময় তার তরবারির খাপের মধ্যে একখানা পুস্তক ঝুলানো ছিল। এ পুস্তিকায় উটের দাঁতের বিবরণ ছিল এবং যখমের দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে বিধান ছিল। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, নাবী ﷺ বলেছেন, মাদীনার ‘আয়র’ থেকে ‘সাওর’ পর্বত পর্যন্ত এলাকা হারাম। যে ব্যক্তি এ এলাকায় বিদআত করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত, তাঁর মালাইকাদের ও সমগ্র মানবজাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না। সকল মুসলিমের দায়িত্ব এক-অভিন্ন। একজন সাধারণ মুসলিমও এ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে। যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যে ক্রীতদাস তার মনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক বানায় তার উপর আল্লাহর লা’নাত, তাঁর মালাইকাদের ও সমগ্র মানবজাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত কবুল করবেন না। (মুসলিমঃ ৩৬৫২)। সুতরাং বিদআত থেকে সাবধান, কেননা ইসলাম পরিপূর্ণ, ইসলামে বিদআতের কোন সুযোগ নেই আর বিদআত কোন ছোট-খাট গুনাহ নয়। বিদআত করলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। কুরআন-হাদীস থেকে জেনে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে ইবাদত করুন।
দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীসের কিতাবগুলো সাধ্যমত বুঝে বুঝে পড়ার পাশাপাশি ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত- ইসলাম কী?, কুফর কী?, কালিমাতুশ শাহাদাহ, আকীদাহ, শিরক, বিদআত - এই কিতাবগুলিসহ অন্যান্য কিতাবগুলো পাঠ করুন।
কবরে/আলমে বারযাখে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তৃতীয় যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো ‘‘তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে?’’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার নাবী কে?’’ মুক্তি পেতে হলে ব্যক্তিকে বলতে হবে, ‘‘আমার নাবী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা আগেই জেনেছি যে, যে ব্যক্তি কুরআন থেকে তার নাবী সম্পর্কে ভালভাবে জেনে না নিবে সে এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না বরং বলবে ‘‘হায়, হায়, আমি জানি না’’। তাই আমরা আমাদের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত মহান আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কুরআন থেকে যাকে আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন সেই প্রিয় নাবী ও প্রিয় রসূল ﷺ সম্পর্কে জানব ইন-শা-আল্লাহ। মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَّسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
আর মুহাম্মাদ একজন রসূল ব্যতীত কিছু নন, নিশ্চয় তার পূর্বে অনেক রসূল গত হয়ে গেছে; যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তবে কি তোমরা তোমাদের পিছনে (জাহেলিয়াতে) ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পিছনে ফিরে যাবে (ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে) সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে পুরস্কৃত করবেন।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৪৪)
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রসূল ও সর্বশেষ নাবী; আর আল্লাহ হলেন সকল বিষয়ে অবগত।
(সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৪০)
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْاِنْجِيْلِ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْاَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰى عَلٰى سُوْقِه يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَّغْفِرَةً وَّاَجْرًا عَظِيْمًا
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও নেককাজ করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। (সূরা ৪৮/ফাতহঃ ২৯)
اَلَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْاُمِّيَّ الَّذِيْ يَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِؗ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَالْاَغْلَالَ الَّتِيْ كَانَتْ عَلَيْهِمْؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِه وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা অনুসরণ করে সেই রসূলের যিনি উম্মী (নিরক্ষর) নাবী, যার গুণাবলী তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়; সে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ/মন্দ কাজের নিষেধ করে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করে আর অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করে আর তাদের থেকে সেই বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল (পূর্ববর্তী শরিয়তের কঠোরতা) তা অপসারন করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৫৭)
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعَا الَّذِيْ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِه وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
বল, হে লোকসকল, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, যার জন্য রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব, তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু দেন। অতএব, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নাবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৫৮)
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُؕ وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
বল, আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো শুধু একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৮৮)
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَّسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
আর মুহাম্মাদ একজন রসূল ব্যতীত কিছু নন, নিশ্চয় তার পূর্বে অনেক রসূল গত হয়ে গেছে; যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তবে কি তোমরা তোমাদের পিছনে (জাহেলিয়াতে) ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পিছনে ফিরে যাবে (ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে) সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে পুরস্কৃত করবেন।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৪৪)
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রসূল ও সর্বশেষ নাবী; আর আল্লাহ হলেন সকল বিষয়ে অবগত।
(সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৪০)
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْاِنْجِيْلِ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْاَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰى عَلٰى سُوْقِه يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَّغْفِرَةً وَّاَجْرًا عَظِيْمًا
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও নেককাজ করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। (সূরা ৪৮/ফাতহঃ ২৯)
اَلَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْاُمِّيَّ الَّذِيْ يَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِؗ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَالْاَغْلَالَ الَّتِيْ كَانَتْ عَلَيْهِمْؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِه وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা অনুসরণ করে সেই রসূলের যিনি উম্মী (নিরক্ষর) নাবী, যার গুণাবলী তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়; সে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ/মন্দ কাজের নিষেধ করে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করে আর অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করে আর তাদের থেকে সেই বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল (পূর্ববর্তী শরিয়তের কঠোরতা) তা অপসারন করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৫৭)
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعَا الَّذِيْ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِه وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
বল, হে লোকসকল, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, যার জন্য রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব, তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু দেন। অতএব, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নাবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৫৮)
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُؕ وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
বল, আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো শুধু একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ৭/আরাফঃ ১৮৮)
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلَا تُسْاَلُ عَنْ اَصْحَابِ الْجَحِيْمِ
নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং তোমাকে আগুনের অধিবাসীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না।
(সূরা ২/বাকারাঃ ১১৯)
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৫১)
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর আর যদি তুমি তা না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত প্রচার করলে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৬৭)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاحْذَرُوْاۚ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও আনুগত্য কর রসূলের আর সাবধান হও। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৯২)
مَا عَلَى الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلَاغُؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ
প্রচার ব্যতীত রসূলের কোন দায়িত্ব নেই আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৯৯)
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ فَمَنْ اٰمَنَ وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আর আমি রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করি, অতএব যারা ঈমান এনেছে ও শুধরে নিয়েছে, তাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। (সূরা ৬/আনআমঃ ৪৮)
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
সুতরাং যাদের নিকট রসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব এবং অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব রসূলগণকেও। (সূরা ৭/আরাফঃ ৬)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে।
(সূরা তওবাঃ ৩৩)
নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং তোমাকে আগুনের অধিবাসীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না।
(সূরা ২/বাকারাঃ ১১৯)
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৫১)
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর আর যদি তুমি তা না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত প্রচার করলে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৬৭)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاحْذَرُوْاۚ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও আনুগত্য কর রসূলের আর সাবধান হও। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৯২)
مَا عَلَى الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلَاغُؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ
প্রচার ব্যতীত রসূলের কোন দায়িত্ব নেই আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৯৯)
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ فَمَنْ اٰمَنَ وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আর আমি রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করি, অতএব যারা ঈমান এনেছে ও শুধরে নিয়েছে, তাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। (সূরা ৬/আনআমঃ ৪৮)
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
সুতরাং যাদের নিকট রসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব এবং অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব রসূলগণকেও। (সূরা ৭/আরাফঃ ৬)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে।
(সূরা তওবাঃ ৩৩)
আমরা দুনিয়াতে কার বিধান মেনে চলেছি বা আমাদের রব কে? কবরে এটা প্রশ্ন করা স্বাভাবিক এবং কোন জীবন বিধান বা দ্বীন মেনে চলেছি বা আমাদের দ্বীন কি ছিল? এই প্রশ্ন করাও স্বাভাবিক কিন্তু তোমাদের মাঝে যাকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে বা তোমার নাবী কে? এই প্রশ্নের হাকীকত কি? আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মধ্য থেকে মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে রিসালাতের দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন ও দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠাও করেছেন। সুতরাং তোমার দ্বীন কি ছিল? এই প্রশ্নইতো যথেষ্ঠ ছিল। এই প্রশ্নের হাকীকত হলো দ্বীন ইসলামকে আমরা কোন পদ্ধতিতে পালন করেছি, ইসলামের আমলগুলো কার পদ্ধতিতে সম্পাদন করেছি এটাই হলো তার হিকমত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিবসের (কল্যাণ) কামনা করে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমানে স্মরণ করে। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ২১)
এই সূরার প্রেক্ষাপট এবং এই আয়াতের আগে পিছের আয়াত খেয়াল করলে অবশ্য বুঝা যায় যে, সূরাটি ও আয়াত জিহাদের ধৈর্যশীলতা ও পদ দৃঢ়তায় রসূল ﷺ এর আর্দশকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নাবী ﷺ ক্ষুধার্ত থেকে জিহাদ করেছেন, এমনকি তাঁকে পেটে পাথর বাঁধতে হয়েছে। তাঁর চেহারা মুবারক জখম হয়েছে, তাঁর দাত ভেঙ্গে গেছে, তিনি নিজ হাতে পরিখা খনন করেছেন এবং প্রায় এক মাস শত্রু বাহিনীর অবরোধের মুখে সাহসিকতার সাথে মুকাবেলা করেছেন। উক্ত আয়াত যদিও আহযাব যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে যুদ্ধের সময় বিশেষভাবে রসূল ﷺ এর আদর্শকে সামনে রাখা ও তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূলত এটি একটি ব্যাপক আদেশ। সামগ্রিকভাবে ইসলাম পালনের ক্ষেত্রেও এই আদেশ সমভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ নাবী ﷺ এর সকল কথা, কাজ, ঈমান-আমল, ইবাদত, যিকির, প্রার্থনা এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত হোক, জীবিকা সম্পর্কিত হোক বা রাজনীতি সম্পর্কিত হোক; এককথায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ ও আদর্শ (সুন্নাহ) পালন করা একান্ত কর্তব্য। সূরা ৫৯/হাশরের ৭ নং আয়াত এবং সূরা ৩/আলি ইমরানের ৩১ নং আয়াতের দাবীও এটাই। এখানে আরও একটি কথা পরিস্কার করে বলা হয়েছে যা অনেকের বুঝতে পারেন না, তা হলো- রসূল ﷺ এর আদর্শে ঐ ব্যক্তি আদর্শবান হবেন, যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী (অর্থাৎ দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেন) এবং যে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে থাকেন অর্থাৎ আল্লাহর বিধানকে স্মরণ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিমরা উক্ত দুই গুণ থেকে বঞ্চিত। যার ফলে তাদের অন্তরে রসূল ﷺ এর আদর্শের কোন গুরুত্ব নেই। সহীহ হাদীসের দলিল দিয়ে রসূল ﷺ সুন্নাহর কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরেও মুখ ফিরিয়ে নেন। এদের মধ্যে যারা দুনিয়াদার বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের আদর্শ ও পথপ্রদর্শক হলো পাশ্চাত্যের নেতারা। আর যারা দ্বীনদার তাদের আদর্শ হলো তাদের পীর, বুযুর্গ, মুরববী, আলেম-ওলামা, ওস্তাদ ও আকাবির, দল, মত, ইজম, মাযহাব ইত্যাদি। রসূল ﷺ এর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসার কথা খুব করে মুখে দাবী করলেও কার্যতঃ তাকে নিজেদের আদর্শ, নেতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে মানার ব্যাপারে অধিকাংশই নারাজ। অবশ্য রসূল ﷺ এর সুন্নতের কথা বলে বিদয়াতী আমলে অনেকেই নিষ্ঠাবান। সুতরাং সাবধান! সহীহ হাদীসের কিতাব পড়ে জেনে নিন কোনটা আসলে সুন্নত। মনে রাখবেন, বিদয়াতের কোন দলিল নেই। যা রসূল ﷺ নিজে করেননি, করতে বলেননি, যা কুরআন-হাদীসে নেই সেটাই বিদয়াত। সেটাই পরিত্যাজ। আমল করতে হবে আল্লাহ ও রসূল ﷺ এর আদেশ জেনে এবং রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে। এটাই কালিমাতুশ শাহাদাতের শেষ অংশের শিক্ষা যেখানে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছিঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়েদাহু, লা সারি কালাহু, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি এক ও একক এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রসূল।
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিবসের (কল্যাণ) কামনা করে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমানে স্মরণ করে। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ২১)
এই সূরার প্রেক্ষাপট এবং এই আয়াতের আগে পিছের আয়াত খেয়াল করলে অবশ্য বুঝা যায় যে, সূরাটি ও আয়াত জিহাদের ধৈর্যশীলতা ও পদ দৃঢ়তায় রসূল ﷺ এর আর্দশকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নাবী ﷺ ক্ষুধার্ত থেকে জিহাদ করেছেন, এমনকি তাঁকে পেটে পাথর বাঁধতে হয়েছে। তাঁর চেহারা মুবারক জখম হয়েছে, তাঁর দাত ভেঙ্গে গেছে, তিনি নিজ হাতে পরিখা খনন করেছেন এবং প্রায় এক মাস শত্রু বাহিনীর অবরোধের মুখে সাহসিকতার সাথে মুকাবেলা করেছেন। উক্ত আয়াত যদিও আহযাব যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে যুদ্ধের সময় বিশেষভাবে রসূল ﷺ এর আদর্শকে সামনে রাখা ও তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূলত এটি একটি ব্যাপক আদেশ। সামগ্রিকভাবে ইসলাম পালনের ক্ষেত্রেও এই আদেশ সমভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ নাবী ﷺ এর সকল কথা, কাজ, ঈমান-আমল, ইবাদত, যিকির, প্রার্থনা এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত হোক, জীবিকা সম্পর্কিত হোক বা রাজনীতি সম্পর্কিত হোক; এককথায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ ও আদর্শ (সুন্নাহ) পালন করা একান্ত কর্তব্য। সূরা ৫৯/হাশরের ৭ নং আয়াত এবং সূরা ৩/আলি ইমরানের ৩১ নং আয়াতের দাবীও এটাই। এখানে আরও একটি কথা পরিস্কার করে বলা হয়েছে যা অনেকের বুঝতে পারেন না, তা হলো- রসূল ﷺ এর আদর্শে ঐ ব্যক্তি আদর্শবান হবেন, যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী (অর্থাৎ দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেন) এবং যে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে থাকেন অর্থাৎ আল্লাহর বিধানকে স্মরণ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিমরা উক্ত দুই গুণ থেকে বঞ্চিত। যার ফলে তাদের অন্তরে রসূল ﷺ এর আদর্শের কোন গুরুত্ব নেই। সহীহ হাদীসের দলিল দিয়ে রসূল ﷺ সুন্নাহর কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরেও মুখ ফিরিয়ে নেন। এদের মধ্যে যারা দুনিয়াদার বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের আদর্শ ও পথপ্রদর্শক হলো পাশ্চাত্যের নেতারা। আর যারা দ্বীনদার তাদের আদর্শ হলো তাদের পীর, বুযুর্গ, মুরববী, আলেম-ওলামা, ওস্তাদ ও আকাবির, দল, মত, ইজম, মাযহাব ইত্যাদি। রসূল ﷺ এর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসার কথা খুব করে মুখে দাবী করলেও কার্যতঃ তাকে নিজেদের আদর্শ, নেতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে মানার ব্যাপারে অধিকাংশই নারাজ। অবশ্য রসূল ﷺ এর সুন্নতের কথা বলে বিদয়াতী আমলে অনেকেই নিষ্ঠাবান। সুতরাং সাবধান! সহীহ হাদীসের কিতাব পড়ে জেনে নিন কোনটা আসলে সুন্নত। মনে রাখবেন, বিদয়াতের কোন দলিল নেই। যা রসূল ﷺ নিজে করেননি, করতে বলেননি, যা কুরআন-হাদীসে নেই সেটাই বিদয়াত। সেটাই পরিত্যাজ। আমল করতে হবে আল্লাহ ও রসূল ﷺ এর আদেশ জেনে এবং রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে। এটাই কালিমাতুশ শাহাদাতের শেষ অংশের শিক্ষা যেখানে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছিঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়েদাহু, লা সারি কালাহু, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি এক ও একক এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রসূল।
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৩১)
কেবল মৌখিক দাবী ও মনগড়া তরীকায় আল্লাহর ভালবাসা এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না। এসব লাভ করার পথ একটাই আর তা হলো শেষ নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর ঈমান আনা ও তাঁর নির্দেশ ও সুন্নাহর অনুসরণ করা। এই আয়াতে সমস্ত ভালবাসার দাবীদারদের জন্য একটি পথই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অতএব আল্লাহর ভালবাসার অনুসন্ধানী ব্যক্তি যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসরণের মাধ্যমে তা অনুসন্ধান করে, তাহলে অবশ্যই সে সফল হবে এবং স্বীয় দাবীতে সত্য প্রমাণিত হবে। অন্যথায় সে মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত হবে এবং উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হবে। নাবী কারীম ﷺ এর নিজেও বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল, যে কাজের নির্দেশ আমি দিইনি, তার সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।’’ (বুখারী, মুসলিম) অর্থাৎ রসূল ﷺ এর প্রদর্শিত তরীকা বা পদ্ধতি বহির্ভূত আমল প্রত্যাখ্যাত হবে, তথা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আর রসূল ﷺ এর অনুসরণে আল্লাহর ভালবাসাও পাওয়া যাবে এবং গুনাহগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে। একটি কাজের দুটি পুরস্কার কেবল রসূল ﷺ অনুসরণের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে। কেননা রসূল ﷺ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ৬৮/ক্বলামঃ ৪)
আর এই মহান চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কারণ এই যে, রসূল ﷺ নিজে থেকে কিছু বলতেন না। আল্লাহ যা ওহী করতেন সেটাই তিনি মেনে চলতেন ও সেটাই প্রচার করতেন। আল্লাহ বলেন,
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِه وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
এটি কিতাব যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সংকীর্ণতা না থাকে। যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পার এবং তা মুমিনদের জন্য উপদেশ। (সূরা ৭/আরাফঃ ২)
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না, তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা ৭/আরাফঃ ৩)
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
হে রসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রচার কর, আর যদি তুমি তা না কর হবে তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না, মানুষের কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৬৭) অতঃপর আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
আর যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নাবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককারদের মধ্য থেকে আর সাথী হিসেবে তারা উত্তম। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬৯)
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ (৫৫) وَمَنْ يَّتَوَلَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَاِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْغَالِبُوْنَ
তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী।
(সূরা ৫/মায়িদাঃ ৫৫-৫৬)
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বানী আদম, যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ আসে যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে, তখন যারা সতর্ক হবে এবং (ঈমান-আমল) সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ৭/আরাফঃ ৩৫)
وَلَوْ اَنَّهُمْ رَضُوْا مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِيْنَا اللهُ مِنْ فَضْلِه وَرَسُوْلُهٗۤ اِنَّا اِلَى اللهِ رَاغِبُوْنَ
আর যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকত এবং বলত, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন ও তাঁর রসূলও, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত। (সূরা তওবাঃ ৫৯)
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
প্রকৃতপক্ষে মুমিনদের কথাতো হলো সেটাই, যখন তাদেরকে আহবান করা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য তখন তারা বলে, ‘‘আমরা শুনলাম ও আমরা আনুগত্য/মান্য করলাম’’ আর তারাই হলো সফলকাম। (সূরা ২৪/নূরঃ ৫১)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর (শাস্তি হতে বাঁচার জন্য) সতর্ক হয়, অতঃপর তারাই সফলকাম।
(সূরা নূরঃ ৫২)
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং নেক আমল করবে আমি তাকে দু’বার তার পুরস্কার দান করব এবং আমি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا (৭০) يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا (৭১)
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল, তাহলে তিনি তোমাদের আমলগুলোকে শুদ্ধ করে দিবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৭০-৭১)
আয়িশা (রদিঃ) কে রসূল ﷺ এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রসূল ﷺ এর চরিত্র ছিল হুবুহু কুরআন।’’ আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করে কেবলমাত্র রসূল ﷺ এর সুন্নাহ মোতাবেক ইবাদত করার ও জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
রসূল ﷺ এর আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা রসূল ﷺ অনুসরণ না করা কুফরী ও মুনাফিকের লক্ষণ এবং এর পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে ও রসূলের দিকে, তখন মুনাফিকদের দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, যখন তোমরা (আল্লাহর আদেশ) শুনছ।
(সূরা ৮/আনফালঃ ২০)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاۤؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
(সূরা আনফালঃ ৪৬)
এখানে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আনুগত্য বর্জন করার পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে যে তার পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এহেন অবস্থায় বরং প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক। না হলে সেটা মুসলিমদের জন্য লাঞ্ছনার কারণ হতে পারে যা বর্তমানে আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْۤ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
অতএব না, তোমার রবের কসম, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব করবে না এবং পূর্ণ সম্মতিতে তা মেনে নিবে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬৫)
এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সঠিক কারণ হল, রসূল ﷺ এর ফুফুতো ভাই যুবায়ের (রদিঃ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যে জমি সেচার নালা ও পানিকে কেন্দ্র করে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। ব্যাপারটি নাবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছায়। তিনি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ফয়সালা দিলে রায় যুবায়ের (রদিঃ) এর পক্ষে যায়। ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠল যে, রসূল ﷺ এই ফয়সালা এই জন্য দিলেন যে, যুবায়ের (রদিঃ) তার ফুফুতো ভাই। তখন এই আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা নিসা)। মুসলিমদের জন্য আয়াতের শিক্ষা হলো, রসূল ﷺ এর কোন কথা অথবা কোন ফয়সালার ব্যাপারে বিরোধিতা করা তো দূরের কথা সে ব্যাপারে অন্তরে কোন সামান্য পরিমান দ্বিধা রাখাও ঈমানের পরিপন্থী। কুরআনের এই আয়াত হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্যতো বটেই, সেই সাথে অন্যান্য এমন লোকদের জন্যও চিন্তা ও চেতনার দ্বার উদঘাটন করে, যাঁরা তাদের ইমাম, আলেম-ওলামার উক্তির মোকাবেলায় সহীহ হাদীসকে মানতে কেবল সংকোচ বোধই করেন না বরং হয় পরিস্কার ভাষায় তা মানতে অস্বীকার করেন, নতুবা বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন অপব্যাখ্যা করেন, নতুবা বিশ্বস্ত রাবীকে যয়ীফ বা দুর্বল আখ্যা দিয়ে হাদীস প্রত্যাখান করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা চালান।
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
আর যে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর বাসস্থান হিসেবে তা খুবই মন্দ।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১১৫)
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَاقِقِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটি এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করবে তবে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা ৮/আনফালঃ ১৩)
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّهٗ مَنْ يُّحَادِدِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيْمُ
তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, তবে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটাই হলো চরম লাঞ্ছনা। (সূরা ৯/তওবাঃ ৬৩)
وَيَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالرَّسُوْلِ وَاَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَؕ وَمَاۤ اُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি, তারপর তাদের একটি দল (রসূলের সুন্নাহ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় আর তারা মুমিন নয়। (সূরা ২৪/নূরঃ ৪৭)
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا
আর সেদিন যালিমরা (যারা রসূলের সুন্নতের অনুসরণ করেনি) নিজেদের হাত দু’টো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।
(সূরা ২৫/ফুরকানঃ ২৭)
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
আর কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন নির্দেশ দেন তখন সে বিষয়ে তার কোন ভিন্ন মত পোষণের অধিকার নেই, আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করল সে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে।
(সূরা আহযাবঃ ৩৬)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا
যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম।
সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর, আর তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না। (সূরা ৪৭/মুহাম্মাদঃ ৩৩)
এই আয়াতের শিক্ষা এটাই যে, রসূল ﷺ নির্দেশ ও তার সুন্নাহর অনুসরণ না করলে উক্ত ব্যক্তির আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে তা যত বড় বুযুর্গই করুক আর যত নিষ্ঠার সাথে করুক।
আপনার আমল রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে না হলে কবরের তৃতীয় প্রশ্নের জবাবতো দিতে পারবেনই না বরং আপনার আমলে যদি বিদয়াতী আমল থাকে তবে রসূল ﷺ নিজেই আপনাকে হাউজে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দিবেন। সুতরাং সাবধান! কুরআন-হাদীসের দলিল দেখে সুন্নাহ মোতাবেক রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করুন। অনেক লোক কিয়ামতের দিন অনেক আমল নিয়ে হাজির হবে কিন্তু আমলগুলো রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে না হওয়ায় আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করবেন না। সুতরাং দুনিয়ার জীবনে সকল মত-পথ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র রসূল ﷺ এর আদর্শ বা সুন্নতকে আঁকড়ে ধরলেই কেবল কবরের তৃতীয় প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ নতুবা নয়। সুতরাং পীর-মুর্শিদ, মুরুববী-বুযুর্গ, আলেম-ওলামা, বাপ-দাদা, অধিকাংশ লোকের পদ্ধতি, প্রচলিত রীতি-নীতি, দল-মত-পথ-ইজম-মাযহাব সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী রসূল ﷺ এর আদর্শকে অনুসরণ করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা বুঝার জন্য ও রসূল ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিঃদ্রঃ- রসূল ﷺ সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু প্রকৃত মুসলিমদের কর্তব্য হলো রসূল ﷺ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কুরআন-সুন্নাহ দলিলভিত্তিক সংকলিত ও আমাদের প্রকাশিত ‘‘মুহাম্মদ ﷺ সম্পর্কে ভুল ধারনা’’ কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইল।-সংকলক।
বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৩১)
কেবল মৌখিক দাবী ও মনগড়া তরীকায় আল্লাহর ভালবাসা এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না। এসব লাভ করার পথ একটাই আর তা হলো শেষ নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর ঈমান আনা ও তাঁর নির্দেশ ও সুন্নাহর অনুসরণ করা। এই আয়াতে সমস্ত ভালবাসার দাবীদারদের জন্য একটি পথই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অতএব আল্লাহর ভালবাসার অনুসন্ধানী ব্যক্তি যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসরণের মাধ্যমে তা অনুসন্ধান করে, তাহলে অবশ্যই সে সফল হবে এবং স্বীয় দাবীতে সত্য প্রমাণিত হবে। অন্যথায় সে মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত হবে এবং উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হবে। নাবী কারীম ﷺ এর নিজেও বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল, যে কাজের নির্দেশ আমি দিইনি, তার সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।’’ (বুখারী, মুসলিম) অর্থাৎ রসূল ﷺ এর প্রদর্শিত তরীকা বা পদ্ধতি বহির্ভূত আমল প্রত্যাখ্যাত হবে, তথা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আর রসূল ﷺ এর অনুসরণে আল্লাহর ভালবাসাও পাওয়া যাবে এবং গুনাহগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে। একটি কাজের দুটি পুরস্কার কেবল রসূল ﷺ অনুসরণের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে। কেননা রসূল ﷺ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ৬৮/ক্বলামঃ ৪)
আর এই মহান চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কারণ এই যে, রসূল ﷺ নিজে থেকে কিছু বলতেন না। আল্লাহ যা ওহী করতেন সেটাই তিনি মেনে চলতেন ও সেটাই প্রচার করতেন। আল্লাহ বলেন,
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِه وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
এটি কিতাব যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সংকীর্ণতা না থাকে। যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পার এবং তা মুমিনদের জন্য উপদেশ। (সূরা ৭/আরাফঃ ২)
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না, তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা ৭/আরাফঃ ৩)
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
হে রসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রচার কর, আর যদি তুমি তা না কর হবে তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না, মানুষের কাছ থেকে তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৬৭) অতঃপর আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
আর যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নাবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককারদের মধ্য থেকে আর সাথী হিসেবে তারা উত্তম। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬৯)
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ (৫৫) وَمَنْ يَّتَوَلَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَاِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْغَالِبُوْنَ
তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী।
(সূরা ৫/মায়িদাঃ ৫৫-৫৬)
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বানী আদম, যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ আসে যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে, তখন যারা সতর্ক হবে এবং (ঈমান-আমল) সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ৭/আরাফঃ ৩৫)
وَلَوْ اَنَّهُمْ رَضُوْا مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِيْنَا اللهُ مِنْ فَضْلِه وَرَسُوْلُهٗۤ اِنَّا اِلَى اللهِ رَاغِبُوْنَ
আর যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকত এবং বলত, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন ও তাঁর রসূলও, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত। (সূরা তওবাঃ ৫৯)
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
প্রকৃতপক্ষে মুমিনদের কথাতো হলো সেটাই, যখন তাদেরকে আহবান করা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য তখন তারা বলে, ‘‘আমরা শুনলাম ও আমরা আনুগত্য/মান্য করলাম’’ আর তারাই হলো সফলকাম। (সূরা ২৪/নূরঃ ৫১)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর (শাস্তি হতে বাঁচার জন্য) সতর্ক হয়, অতঃপর তারাই সফলকাম।
(সূরা নূরঃ ৫২)
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং নেক আমল করবে আমি তাকে দু’বার তার পুরস্কার দান করব এবং আমি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا (৭০) يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا (৭১)
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল, তাহলে তিনি তোমাদের আমলগুলোকে শুদ্ধ করে দিবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৭০-৭১)
আয়িশা (রদিঃ) কে রসূল ﷺ এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রসূল ﷺ এর চরিত্র ছিল হুবুহু কুরআন।’’ আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করে কেবলমাত্র রসূল ﷺ এর সুন্নাহ মোতাবেক ইবাদত করার ও জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
রসূল ﷺ এর আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা রসূল ﷺ অনুসরণ না করা কুফরী ও মুনাফিকের লক্ষণ এবং এর পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে ও রসূলের দিকে, তখন মুনাফিকদের দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, যখন তোমরা (আল্লাহর আদেশ) শুনছ।
(সূরা ৮/আনফালঃ ২০)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاۤؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
(সূরা আনফালঃ ৪৬)
এখানে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আনুগত্য বর্জন করার পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে যে তার পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এহেন অবস্থায় বরং প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক। না হলে সেটা মুসলিমদের জন্য লাঞ্ছনার কারণ হতে পারে যা বর্তমানে আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْۤ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
অতএব না, তোমার রবের কসম, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব করবে না এবং পূর্ণ সম্মতিতে তা মেনে নিবে। (সূরা ৪/নিসাঃ ৬৫)
এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সঠিক কারণ হল, রসূল ﷺ এর ফুফুতো ভাই যুবায়ের (রদিঃ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যে জমি সেচার নালা ও পানিকে কেন্দ্র করে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। ব্যাপারটি নাবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছায়। তিনি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ফয়সালা দিলে রায় যুবায়ের (রদিঃ) এর পক্ষে যায়। ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠল যে, রসূল ﷺ এই ফয়সালা এই জন্য দিলেন যে, যুবায়ের (রদিঃ) তার ফুফুতো ভাই। তখন এই আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা নিসা)। মুসলিমদের জন্য আয়াতের শিক্ষা হলো, রসূল ﷺ এর কোন কথা অথবা কোন ফয়সালার ব্যাপারে বিরোধিতা করা তো দূরের কথা সে ব্যাপারে অন্তরে কোন সামান্য পরিমান দ্বিধা রাখাও ঈমানের পরিপন্থী। কুরআনের এই আয়াত হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্যতো বটেই, সেই সাথে অন্যান্য এমন লোকদের জন্যও চিন্তা ও চেতনার দ্বার উদঘাটন করে, যাঁরা তাদের ইমাম, আলেম-ওলামার উক্তির মোকাবেলায় সহীহ হাদীসকে মানতে কেবল সংকোচ বোধই করেন না বরং হয় পরিস্কার ভাষায় তা মানতে অস্বীকার করেন, নতুবা বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন অপব্যাখ্যা করেন, নতুবা বিশ্বস্ত রাবীকে যয়ীফ বা দুর্বল আখ্যা দিয়ে হাদীস প্রত্যাখান করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা চালান।
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
আর যে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর বাসস্থান হিসেবে তা খুবই মন্দ।
(সূরা ৪/নিসাঃ ১১৫)
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَاقِقِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটি এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করবে তবে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা ৮/আনফালঃ ১৩)
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّهٗ مَنْ يُّحَادِدِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيْمُ
তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, তবে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটাই হলো চরম লাঞ্ছনা। (সূরা ৯/তওবাঃ ৬৩)
وَيَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالرَّسُوْلِ وَاَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَؕ وَمَاۤ اُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি, তারপর তাদের একটি দল (রসূলের সুন্নাহ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় আর তারা মুমিন নয়। (সূরা ২৪/নূরঃ ৪৭)
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا
আর সেদিন যালিমরা (যারা রসূলের সুন্নতের অনুসরণ করেনি) নিজেদের হাত দু’টো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।
(সূরা ২৫/ফুরকানঃ ২৭)
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
আর কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন নির্দেশ দেন তখন সে বিষয়ে তার কোন ভিন্ন মত পোষণের অধিকার নেই, আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করল সে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে।
(সূরা আহযাবঃ ৩৬)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا
যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম।
সূরা ৩৩/আহযাবঃ ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর, আর তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না। (সূরা ৪৭/মুহাম্মাদঃ ৩৩)
এই আয়াতের শিক্ষা এটাই যে, রসূল ﷺ নির্দেশ ও তার সুন্নাহর অনুসরণ না করলে উক্ত ব্যক্তির আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে তা যত বড় বুযুর্গই করুক আর যত নিষ্ঠার সাথে করুক।
আপনার আমল রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে না হলে কবরের তৃতীয় প্রশ্নের জবাবতো দিতে পারবেনই না বরং আপনার আমলে যদি বিদয়াতী আমল থাকে তবে রসূল ﷺ নিজেই আপনাকে হাউজে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দিবেন। সুতরাং সাবধান! কুরআন-হাদীসের দলিল দেখে সুন্নাহ মোতাবেক রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করুন। অনেক লোক কিয়ামতের দিন অনেক আমল নিয়ে হাজির হবে কিন্তু আমলগুলো রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে না হওয়ায় আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করবেন না। সুতরাং দুনিয়ার জীবনে সকল মত-পথ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র রসূল ﷺ এর আদর্শ বা সুন্নতকে আঁকড়ে ধরলেই কেবল কবরের তৃতীয় প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ নতুবা নয়। সুতরাং পীর-মুর্শিদ, মুরুববী-বুযুর্গ, আলেম-ওলামা, বাপ-দাদা, অধিকাংশ লোকের পদ্ধতি, প্রচলিত রীতি-নীতি, দল-মত-পথ-ইজম-মাযহাব সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী রসূল ﷺ এর আদর্শকে অনুসরণ করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা বুঝার জন্য ও রসূল ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিঃদ্রঃ- রসূল ﷺ সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু প্রকৃত মুসলিমদের কর্তব্য হলো রসূল ﷺ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কুরআন-সুন্নাহ দলিলভিত্তিক সংকলিত ও আমাদের প্রকাশিত ‘‘মুহাম্মদ ﷺ সম্পর্কে ভুল ধারনা’’ কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইল।-সংকলক।
পূর্বের অধ্যায়গুলো থেকে কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে কবরে বা আলমে বারযাখের জীবনে প্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তা হলো, তোমার রব কে? দ্বিতীয় যে প্রশ্ন করা হবে, তোমার দ্বীন কি ছিল? এবং তৃতীয় যে প্রশ্ন করা হবে, তা হলো তোমাদের মাঝে যাকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? অর্থাৎ তোমার নাবী কে? হাদীস থেকে একথাও জানতে পেরেছি যে সঠিক উত্তরদাতাকে আরেকটি প্রশ্ন করা হবে, এটা তুমি কিভাবে জানলে? বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরদাতা যখন তিনটি প্রশ্নের উত্তরে, আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ছিল ইসলাম এবং আমার নাবী মুহাম্মাদ ﷺ তখনই সত্যায়ন চাওয়া হচ্ছে, তুমি এগুলো কিভাবে জানলে। উত্তরে তাকে বলতে হবে, ‘‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে জেনেছি, সেটাকে বিশ্বাস করেছিলাম এবং সত্য বলে গ্রহণ করেছিলাম।’’ সুতরাং কবরের সওয়াল জওয়াব সবাই দিতে পারবে বিষয়টি এমন নয়। এই হাদীসগুলো থেকে কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। তাছাড়া আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমাদের দ্বীন হলো ইসলাম এবং আমাদের নাবী ও রসূল হলেন মুহাম্মাদ ﷺ, এই কথাগুলো সত্যি সত্যিই কুরআন থেকে জানা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমরাও কুরআন থেকে এগুলো জেনেছি। কুরআন হলো আমাদের পথ প্রদর্শক। তাছাড়া এই প্রশ্নের হাকিকত হলো শুধু কুরআন থেকে জেনে নিলেই হবে না বরং যে ব্যক্তি কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী তার জীবন পরিচালনা করবেন তিনিই কেবল প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারবেন। আর এজন্য কুরআন সম্পর্কে আমাদের ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।কেননা কুরআন আসার আগে রসূল ﷺ নিজেই কিছু জানতেন না। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এভাবেই আমি ওহী পাঠিয়েছি তোমার প্রতি রূহকে আমার নির্দেশে, তুমিতো জানতেই না কিতাব কি ও ঈমান কি? আর পক্ষান্তরে আমি একে করেছি এমন আলো, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করি, আর নিশ্চয় তুমি অবশ্যই সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও।
(সূরা ৪২/শুরাঃ ৫১)
এখানে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা রসূল ﷺ †ক কুরআন দিয়েই হিদায়াতের সরল পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ আরো বলেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এই কুরআন এমন একটা পথ দেখিয়ে দেয় যা সবচাইতে সহজ, আর নেককার মুমিনদেরকে এই মর্মে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে মহা পুরস্কার। (সূরা ১৭/বানী ইসরাইলঃ ৯)
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِيْۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ اِنَّكَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ - وَاِنَّهٗ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ وَسَوْفَ تُسْاَلُوْنَ
অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে তাকে তুমি সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর, নিশ্চয় তুমি সরল পথের উপর আছ। আর নিশ্চয় এই কুরআন তোমার ও তোমার জাতির জন্য উপদেশ স্বরূপ আর অচিরেই এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা ৪৩/যুখরূফঃ ৪৩-৪৪)
রসূল ﷺ দ্বীনের ব্যাপারে নিজে থেকে কোন কথা না বলে তার প্রতি যে ওহী করা হয়েছে তাই পড়ে পড়ে শুনাতেন। আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৬৪)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যাদের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে। আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।
(সূরা ৮/আনফালঃ ২)
আরো কয়েকটি আয়াত ও হাদীস গভীরভাবে বুঝে বুঝে পড়লেই যে কোন বুদ্ধিমান শিক্ষিত ব্যক্তিই কুরআন বুঝার গুরুত্ব ও না বুঝার পরিণতি সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন। আল্লাহ বলেনঃ
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِه وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَلْبَابِ
(কুরআন) এক কল্যাণময় কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তারা ইহার আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা ৩৮/সোয়াদঃ ২৯)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা গবেষনা করে না, তাদের হৃদয় কি তালাবদ্ধ। (সূরা ৪৭/মুহাম্মদঃ ২৪)
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আর তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল, আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
(সূরা ১৬/নাহলঃ ৪৪)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
নিশ্চয় এতে (কুরআনে) উপদেশ রয়েছে তার জন্য যার আছে (বোধসম্পন্ন) অন্তর কিংবা যে খুব মন দিয়ে শ্রবণ করে। (সূরা ৫০/ক্বফঃ ৩৭)
আবু মালিক আল আশআরী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূল ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ নেকীর পাল্লাকে ভরে দেয়, এবং ‘‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ’’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে পরিপূর্ণ করে দেয়। সালাত হলো নূর, দান (সাদকা) হলো প্রমাণ, ধৈর্য হলো জ্যোতি আর ‘‘আল কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হবে’’। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা সে নিজের ধ্বংস সাধন করে।
(মুসলিমঃ ৪২৫)
‘‘আল কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হবে’’রসূল ﷺ এর বাণীটুকুই কুরআন পড়া, বুঝা ও সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার ব্যাপারে যার বিবেক জাগ্রত আছে তার জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়ে www.islamhouse.com-এ একটি প্রবন্ধ সহ অনেক প্রবন্ধ আছে। আগ্রহী ব্যক্তিগণ সেখান থেকে পড়ে কুরআন বুঝার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এভাবেই আমি ওহী পাঠিয়েছি তোমার প্রতি রূহকে আমার নির্দেশে, তুমিতো জানতেই না কিতাব কি ও ঈমান কি? আর পক্ষান্তরে আমি একে করেছি এমন আলো, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করি, আর নিশ্চয় তুমি অবশ্যই সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও।
(সূরা ৪২/শুরাঃ ৫১)
এখানে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা রসূল ﷺ †ক কুরআন দিয়েই হিদায়াতের সরল পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ আরো বলেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এই কুরআন এমন একটা পথ দেখিয়ে দেয় যা সবচাইতে সহজ, আর নেককার মুমিনদেরকে এই মর্মে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে মহা পুরস্কার। (সূরা ১৭/বানী ইসরাইলঃ ৯)
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِيْۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ اِنَّكَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ - وَاِنَّهٗ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ وَسَوْفَ تُسْاَلُوْنَ
অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে তাকে তুমি সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর, নিশ্চয় তুমি সরল পথের উপর আছ। আর নিশ্চয় এই কুরআন তোমার ও তোমার জাতির জন্য উপদেশ স্বরূপ আর অচিরেই এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা ৪৩/যুখরূফঃ ৪৩-৪৪)
রসূল ﷺ দ্বীনের ব্যাপারে নিজে থেকে কোন কথা না বলে তার প্রতি যে ওহী করা হয়েছে তাই পড়ে পড়ে শুনাতেন। আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১৬৪)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যাদের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে। আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।
(সূরা ৮/আনফালঃ ২)
আরো কয়েকটি আয়াত ও হাদীস গভীরভাবে বুঝে বুঝে পড়লেই যে কোন বুদ্ধিমান শিক্ষিত ব্যক্তিই কুরআন বুঝার গুরুত্ব ও না বুঝার পরিণতি সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন। আল্লাহ বলেনঃ
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِه وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَلْبَابِ
(কুরআন) এক কল্যাণময় কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তারা ইহার আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা ৩৮/সোয়াদঃ ২৯)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা গবেষনা করে না, তাদের হৃদয় কি তালাবদ্ধ। (সূরা ৪৭/মুহাম্মদঃ ২৪)
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আর তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল, আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
(সূরা ১৬/নাহলঃ ৪৪)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
নিশ্চয় এতে (কুরআনে) উপদেশ রয়েছে তার জন্য যার আছে (বোধসম্পন্ন) অন্তর কিংবা যে খুব মন দিয়ে শ্রবণ করে। (সূরা ৫০/ক্বফঃ ৩৭)
আবু মালিক আল আশআরী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূল ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ নেকীর পাল্লাকে ভরে দেয়, এবং ‘‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ’’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে পরিপূর্ণ করে দেয়। সালাত হলো নূর, দান (সাদকা) হলো প্রমাণ, ধৈর্য হলো জ্যোতি আর ‘‘আল কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হবে’’। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা সে নিজের ধ্বংস সাধন করে।
(মুসলিমঃ ৪২৫)
‘‘আল কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হবে’’রসূল ﷺ এর বাণীটুকুই কুরআন পড়া, বুঝা ও সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার ব্যাপারে যার বিবেক জাগ্রত আছে তার জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়ে www.islamhouse.com-এ একটি প্রবন্ধ সহ অনেক প্রবন্ধ আছে। আগ্রহী ব্যক্তিগণ সেখান থেকে পড়ে কুরআন বুঝার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
কুরআন বুঝার গুরুত্ব ও ফজিলত এবং না বুঝার পরিণতি নিয়ে লিখতে গেলে কিতাবটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তারপরও এ বিষয়ে লিখে পুরোপুরি বুঝানো সম্ভব হবে না। কুরআন বুঝে বুঝে পড়েই এটা অনুবাধন করা সম্ভব। কুরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহ নিজেই তার কালাম সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। রসূল ﷺ ও কুরআন সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারপরও ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আমার একটি স্বতন্ত্র কিতাব সংকলনের ইচ্ছা আছে ইন-শা-আল্লাহ। আপাতত আগ্রহী ব্যক্তিরা ‘‘কুরআন সম্পর্কে কুরআন কি বলে’’ কিতাবটি পড়তে পারেন। কয়েক বছর ধরে আমি আমার সাধ্যমত বুঝে বুঝে কুরআন-হাদীস অধ্যয়নের পর এ বিষয়ে আমার চেতনায় যা ধরা পড়েছে তার উপলব্ধি এখানে উল্লেখ করলামঃ
১. কুরআন হচ্ছে জ্ঞানের আধাঁর। কুরআন আসার আগে পৃথিবী জাহিলিয়াতের অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। কুরআনের আলোই পৃথিবীর সকল জাহিলিয়াতের অন্ধকার দূর করে দিয়েছিল। কুরআন যে পড়বে, বুঝবে তার জীবনে কুরআনের আলোতে আলোকিত হবে; কুরআন থেকে যে দূরে থাকবে তার জীবন অন্ধকারে পড়ে থাকবে।
২. পৃথিবীতে দুটি পথ - একটি কুরআন-সুন্নাহর, আরেকটি শয়তানের। কুরআন-সুন্নাহর পথে চলবেন, জান্নাতে যেতে পারবেন; শয়তানের পথে চলবেন, জাহান্নামে গিয়ে পড়বেন। সুতরাং আজ থেকেই কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করুন।
৩. মৃত্যুর পরে প্রত্যেক ঘাঁটিতে কুরআনের সাথে দেখা হবে, কুরআনকে প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং কুরআনকে সাথী বানান দুনিয়ার জীবনে, কুরআন আপনার সাথী হবে কবরে, হাশরে ও মিজানে।
৪. মুসলিমরা যতদিন কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেছিল ততদিন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে ছিল যখন থেকে কুরআন-সুন্নাহ পড়া, বুঝা ও সেই অনুযায়ী চলা ছেড়ে দিয়ে ভোগ-বিলাসে মেতে উঠেছে তখন থেকে মুসলিমরা অধপতনের দিকে যাচ্ছে। দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও মুক্তি পেতে হলে আবারও মুসলিমদেরকে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে হবে।
৫. মনে রাখবেন, বেঁচে থাকতে যদি আপনার কুরআনের সাথে সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনার মৃত্যুর পরে অন্যের মাধ্যমে হাজারো খতম দেয়ালেও আপনার কোন কাজে আসবে না। বরং মৃত ব্যক্তির জন্য খতম দেওয়া কুরআন-হাদীসে নেই বিধায় এটা বিদয়াত। (দেখুন মারেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৩৫, সূরা বাকারার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর)। এই বিদয়াতের জন্য আপনার আমল নষ্ট হয়ে যাবে, কবরে শাস্তি হবে। সুতরাং বেঁচে থাকতে কুরআনের সাথে সম্পর্ক করে যান। বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন, পড়ে পড়ে কুরআন বুঝুন। কুরআন দিয়ে জীবন গড়ুন।
৬. উর্বর জমিতে চাষ করলে যেমন ভাল ফসল জন্ম নেয়, আর চাষ না করলে আগাছা জন্ম নেয় তেমনি কুরআন পড়লে, বুঝলে আপনার অন্তরে কুরআনের ফুল ফুটবে, জান্নাতের পথে চলতে সহজ হবে আর কুরআন না পড়লে, না বুঝলে আপনার অন্তর পাপের আড্ডাখানায় পরিণত হবে এবং পাপ আপনাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। আর কুরআন বুঝে বুঝে পড়লে কুরআন আপনাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং সাবধান!! ঈমান রাখুন শিরক মুক্ত, আমল করুন বিদয়াত মুক্ত, নামাজ পড়ুন সময়মত, কুরআন পড়ুন অবিরত, হাদীস পড়ুন যথাযথ, দাওয়াত দিন শত শত, এই কাজগুলো করবেন যত, আল্লাহর প্রিয় হবেন তত।
৭. আপনার সন্তানকে যদি কুরআনের পথে না রেখে চলে যান তবে সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যাই হোক না কেন সে জান্নাতের পথে চলতে পারবে না। দুনিয়াতে নাম-যশ-খ্যাতি-অর্থ হলেও আখেরাতে জান্নাত হারাবে। কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত প্রত্যেক ঘাঁটিতে অত্যন্ত কষ্টের শাস্তি ভোগ করতে হবে। অতঃপর জাহান্নামে যেতে হবে আর জাহান্নামে যাওয়ার সময় আপনাকেও টেনে নিয়ে যাবে। সুতরাং সাবধান!! আপনার সন্তান যেন প্রতিদিন কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে পড়ে, কুরআন-হাদীস অনুযায়ী চলে সেটা নিশ্চিত করুন।
আমাদের সমাজে মৃত্যু, মৃত্যু পরবর্তী জানাযা, দাফন-কাফন ও মৃতকে কেন্দ্র করে অনেক বিদআত ও কুসংস্কার চালু আছে এবং অনেক সময় জানার অভাবে সঠিকটা মানা হয় না তাই মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে সম্পাদন এবং এ সংক্রান্ত বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বাঁচার জন্য ‘‘জীবনের শেষ দিনটি যেন ভাল হয়’’ কিতাবটি সকল মুসলিম ভাই-বোনদের সংগ্রহে রাখার জন্য অনুরোধ রইল।
১. কুরআন হচ্ছে জ্ঞানের আধাঁর। কুরআন আসার আগে পৃথিবী জাহিলিয়াতের অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। কুরআনের আলোই পৃথিবীর সকল জাহিলিয়াতের অন্ধকার দূর করে দিয়েছিল। কুরআন যে পড়বে, বুঝবে তার জীবনে কুরআনের আলোতে আলোকিত হবে; কুরআন থেকে যে দূরে থাকবে তার জীবন অন্ধকারে পড়ে থাকবে।
২. পৃথিবীতে দুটি পথ - একটি কুরআন-সুন্নাহর, আরেকটি শয়তানের। কুরআন-সুন্নাহর পথে চলবেন, জান্নাতে যেতে পারবেন; শয়তানের পথে চলবেন, জাহান্নামে গিয়ে পড়বেন। সুতরাং আজ থেকেই কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করুন।
৩. মৃত্যুর পরে প্রত্যেক ঘাঁটিতে কুরআনের সাথে দেখা হবে, কুরআনকে প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং কুরআনকে সাথী বানান দুনিয়ার জীবনে, কুরআন আপনার সাথী হবে কবরে, হাশরে ও মিজানে।
৪. মুসলিমরা যতদিন কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেছিল ততদিন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে ছিল যখন থেকে কুরআন-সুন্নাহ পড়া, বুঝা ও সেই অনুযায়ী চলা ছেড়ে দিয়ে ভোগ-বিলাসে মেতে উঠেছে তখন থেকে মুসলিমরা অধপতনের দিকে যাচ্ছে। দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও মুক্তি পেতে হলে আবারও মুসলিমদেরকে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে হবে।
৫. মনে রাখবেন, বেঁচে থাকতে যদি আপনার কুরআনের সাথে সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনার মৃত্যুর পরে অন্যের মাধ্যমে হাজারো খতম দেয়ালেও আপনার কোন কাজে আসবে না। বরং মৃত ব্যক্তির জন্য খতম দেওয়া কুরআন-হাদীসে নেই বিধায় এটা বিদয়াত। (দেখুন মারেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৩৫, সূরা বাকারার ২৪ নং আয়াতের তাফসীর)। এই বিদয়াতের জন্য আপনার আমল নষ্ট হয়ে যাবে, কবরে শাস্তি হবে। সুতরাং বেঁচে থাকতে কুরআনের সাথে সম্পর্ক করে যান। বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন, পড়ে পড়ে কুরআন বুঝুন। কুরআন দিয়ে জীবন গড়ুন।
৬. উর্বর জমিতে চাষ করলে যেমন ভাল ফসল জন্ম নেয়, আর চাষ না করলে আগাছা জন্ম নেয় তেমনি কুরআন পড়লে, বুঝলে আপনার অন্তরে কুরআনের ফুল ফুটবে, জান্নাতের পথে চলতে সহজ হবে আর কুরআন না পড়লে, না বুঝলে আপনার অন্তর পাপের আড্ডাখানায় পরিণত হবে এবং পাপ আপনাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। আর কুরআন বুঝে বুঝে পড়লে কুরআন আপনাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং সাবধান!! ঈমান রাখুন শিরক মুক্ত, আমল করুন বিদয়াত মুক্ত, নামাজ পড়ুন সময়মত, কুরআন পড়ুন অবিরত, হাদীস পড়ুন যথাযথ, দাওয়াত দিন শত শত, এই কাজগুলো করবেন যত, আল্লাহর প্রিয় হবেন তত।
৭. আপনার সন্তানকে যদি কুরআনের পথে না রেখে চলে যান তবে সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যাই হোক না কেন সে জান্নাতের পথে চলতে পারবে না। দুনিয়াতে নাম-যশ-খ্যাতি-অর্থ হলেও আখেরাতে জান্নাত হারাবে। কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত প্রত্যেক ঘাঁটিতে অত্যন্ত কষ্টের শাস্তি ভোগ করতে হবে। অতঃপর জাহান্নামে যেতে হবে আর জাহান্নামে যাওয়ার সময় আপনাকেও টেনে নিয়ে যাবে। সুতরাং সাবধান!! আপনার সন্তান যেন প্রতিদিন কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে পড়ে, কুরআন-হাদীস অনুযায়ী চলে সেটা নিশ্চিত করুন।
আমাদের সমাজে মৃত্যু, মৃত্যু পরবর্তী জানাযা, দাফন-কাফন ও মৃতকে কেন্দ্র করে অনেক বিদআত ও কুসংস্কার চালু আছে এবং অনেক সময় জানার অভাবে সঠিকটা মানা হয় না তাই মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে সম্পাদন এবং এ সংক্রান্ত বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বাঁচার জন্য ‘‘জীবনের শেষ দিনটি যেন ভাল হয়’’ কিতাবটি সকল মুসলিম ভাই-বোনদের সংগ্রহে রাখার জন্য অনুরোধ রইল।
আমরা ইতঃমধ্যে ওহীর ভিত্তিতে জানতে পেরেছি আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমাদের দ্বীন হলো ইসলাম, আমাদের নাবী ও রসূল হলেন মুহাম্মাদ ﷺ, আমাদের কিতাব হলো আল কুরআন যা আমাদের আল্লাহ প্রদত্ত পথ প্রদর্শক, আমাদের কিবলা হলো বায়তুল্লাহ। তাই আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি এক হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু আমাদের রব এক, দ্বীন এক, রসূল এক, কিতাব এক, কিবলা এক তাহলে আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি ভিন্ন হবে কেন? দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা আজ বহু দলে, বহু পরিচয়ে বিভক্ত। এক-এক দলের এক-এক পরিচয়। এমনকি আকীদা ও ইবাদতের পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। মূলত পরিচয়ের উপর ভিত্তি করেই সকলের আকীদা ও ইবাদতের পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে আছে। তাই আমাদের জানা দরকার আমাদের পথ প্রদর্শক আল কুরআন আমাদেরকে কি পরিচয় দিতে বলেছে। আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۤۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা/২ঃ১২৮)।
(এখানে ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে নিজেকে ও তার বংশধরকে মুসলিম বানানোর আবেদন করেছেন এবং ইবাদতের পদ্ধতি নিজে তৈরি না করে আল্লাহকে দেখিয়ে দিতে বলেছেন।)
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইব্রাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুবও, হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে (ইসলামকে) মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা বাকারাঃ ১৩২)
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَّنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমার পর তোমরা কার ইবাদাত করবে? তারা বলল, আমরা ইবাদাত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তাঁরই অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৩)
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নাবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁর অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৬)
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِ ؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِۚ اٰمَنَّا بِاللهِۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ থেকে কুফরী উপলব্দি করল, তখন বলল, কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৫২)
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৬৭)
অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) যাবতীয় শিরক-বিদয়াত থেকে মুক্ত এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি একনিষ্ঠ বা নিষ্ঠাবান বান্দা ছিলেন।
এই সমস্ত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’লা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলামের অনুসারীদের পরিচয় হবে একটাই আর তা হলো মুসলিম।
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বল, হে আহলে কিতাব, তোমরা এমন একটা কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করব না এবং আমাদের পরস্পরের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে রব হিসাবে গ্রহণ করব না। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৬৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আহলে কিতাব তথা কিতাবের অনুসারী ইহুদী-খৃষ্টানদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করার, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করার এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রব হিসাবে না মানার আহবান জানানো হয়েছে এবং সবশেষে যারা আল্লাহর বিধান পুরোপুরি মানতে রাজী নয় তাদেরকে স্পষ্টভাবে নিজেদের পরিচয় জানিয়ে দিতে বলেছেন যে, আমরা মুসলিম।
وَلَا يَأْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًاؕ اَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা মালাইকা ও নাবীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবেন? (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৮০)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর (ওহী তথা কুরআন ও সহীহ হাদীস) আর যা নাযিল হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর, আর যা দেয়া হয়েছে মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নাবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযত ও যথার্থভাবে (হক আদায় করে) তাকে ভয় কর এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ১০২)।
সর্বযুগের মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণী যে, আল্লাহ এখানে যারাই ঈমান এনেছে তাদেরকেই মুসলিম (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী) হবার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, আদেশ করেছেন।
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
আর যখন আমি হাওয়ারীগণকে (ঈসা আঃ এর অনুসারীদেরকে) এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, আমার প্রতি তোমরা ঈমান আন ও আমার রসূলের প্রতি, তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম। (সূরা ৫/আল মায়িদাঃ ১১১)।
এখানে হাওয়ারীগণ ঈমান আনার সাথে সাথে তাদের রসূল (ঈসা আঃ)কে সাক্ষী রেখে বলছে যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম।
قُلْ اِنَّنِيْ هَدَانِيْ رَبِّيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍۚ دِيْنًا قِيَمًا مِّلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاۚ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমার রব আমাকে সোজা পথের হিদায়াত দিয়েছেন। তা সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইব্রাহীমের আদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬২)
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজাহানের রব। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৩)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৪)
وَمَا تَنْقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنْ اٰمَنَّا بِاٰيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَاؕ رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
আর তুমি আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করছ শুধু এ কারণে যে, আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন। (সূরা ৭/আরাফঃ১২৬)।
ফেরাউনের যাদুকরের মুসা (আঃ) এর মুজেজা দেখে ঈমান আনার পর পরই আল্লাহ কাছে এই প্রার্থনা করেছে যে, আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন।
فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
অতঃপর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমিতো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে, আর আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাই।
(সূরা১০/ ইউনুসঃ ৭২)
এখানেও নুহ (আঃ)কে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম হবার আদেশ দিয়েছেন এবং তথ্যটি ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ﷺ তথা আমাদেরকেও জানিয়ে দিয়েছেন।
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
আর মূসা বলল, হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হও। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৮৪)
এখানেও মুসা (আঃ) তাঁর জাতির সংকট মুহূর্তে ঈমানদারদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলেছেন এবং মুসলিম বলে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। অতঃপর ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাতার বিধান না মানার, রসূলদের দাওয়াত মেনে না নেওয়ার ও রসূলদের অনুসরণ না করার পরিনতি এবং মৃত্যুর সময় ফিরআ’উনের তাওহীদের ঘোষণা ও মুসলিম হবার আকুতি তুলে ধরে বলেনঃ
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَا اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيْۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম অতঃপর ফিরআ’উন ও তার সৈন্যবাহিনী সীমালঙ্ঘন ও শত্রুতা বশত তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বানী ইসরাঈল ঈমান এনেছে আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৯০)।
কিন্তু তখন ফেরাউনের ঈমান ও মুসলিম হবার ঘোষণা কোন কাজে আসেনি।
সূরা নং ১১, সূরা হুদ এর ১২-১৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ ۢبَعْضَ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَضَآئِقٌ ۢبِه صَدْرُكَ اَنْ يَّقُوْلُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ جَآءَ مَعَهٗ مَلَكٌؕ اِنَّمَاۤ اَنْتَ نَذِيْرٌؕ وَّاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
অতঃপর সম্ভবত তুমি তোমার কাছে যা ওহী করা হয়েছে তার কিছু অংশ ছেড়ে দিবে এবং তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হবে এ কারণে যে, তারা বলে, কেন তার উপর ধন-ভান্ডার নাযিল হয় না অথবা তার সাথে মালাইকা আসে না? প্রকৃতপক্ষে তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র আর আল্লাহ হলেন প্রত্যেক বিষয়ের উপর তত্ত্বাবধায়ক।
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِه مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
অথবা তারা বলে, সে এটা (কুরআন) নিজে রচনা করেছে; বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
فَاِلَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ بِعِلْمِ اللهِ وَاَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
অতঃপর যদি তারা তোমাদের আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, অবশ্যই ইহা (কুরআন) আল্লাহর জ্ঞান অনুসারে নাযিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই। অতএব তোমরা কি মুসলিম হবে?
এখানে আল্লাহ কুরআনের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত তা জানিয়ে দিয়ে আল্লাহর তাওহীদ ও তাদেরকে মুসলিম হবার আহবান করতে বলেছেন।
ইউসুফ (আঃ)ও অন্যান্য সকল নাবীদের মত নিস্পাপ, নিস্কুলুস চরিত্রের অধিকারী ও পরীক্ষীত নাবী হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার দোয়া করতেন বলে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ্য করেছেনঃ
رَبِّ قَدْ اٰتَيْتَنِيْ مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِيْ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ۫ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখেরাতে আপনিই আমার একমাত্র অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন ও নেককারদের সাথে মিলিত করে দিন। (সূরা ১২/ইউসুফঃ১০১)
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কাছে কিভাবে দোয়া করতে হবে তা শিখিয়েছেন। এখানে ইউসুফ (আঃ) প্রথমে বিনয়ের সাথে আল্লাহর প্রশংসা করেছেন, আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্বীকার করেছেন, পীর-বুযুর্গ, ওলী-আওলীয়া এসকল মাধ্যম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকেই দুনিয়া ও আখেরাতের অভিভাবক হিসাবে মেনে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে দোয়া করেছেন। দোয়া করার এটাই সঠিক পদ্ধতি। প্রতিটি মুসলিমকে এভাবেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি বিনয়ের সাথে অনুচ্চ স্বরে দোয়া করতে হবে। বৃষ্টির জন্য ছাড়া সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে দোয়া করা বিদআত এবং প্রত্যেক সালাতের পর মাসনুন যিকির বাদ দিয়ে হাত তোলে উচ্চস্বরে ইমাম ও মুক্তাদি মিলে সম্মিলিতভাবে দোয়া-মোনাজাত করা নিকৃষ্টতম বিদআত। কারণ কিছু বিদআত আছে বছরে একবার করা হয় আর এই বিদআত দিনে পাঁচবার করা হয়। মুসলিম ভাইদের প্রতি অনুরোধ এই বিদআত অবশ্যই পরিত্যাগ করুন, তওবা করুন, ফরজ সালাতের পর মাসনুন যিকির করুন।
আখেরাতের জীবনে কাফিররাও মুসলিম হবার আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে।
الٓرٰ۫ تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْاٰنٍ مُّبِيْنٍ (১) رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ
আলিফ-লাম-রা, এগুলো মহাগ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত। কখনো কখনো কাফিররা আকাংখা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হতো! (সূরা আল হিজরঃ১-২)
সূরা নং ২১, সূরা আল আম্বিয়া এর ১০৪-১০৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَأْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاۤؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটিয়ে নেয়া হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব, আর ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই।
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْ ۢبَعْدِ الذِّكْرِ اَنَّ الْاَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُوْنَ
আর উপদেশ দেয়ার পর আমি কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্য বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।
اِنَّ فِيْ هٰذَا لَبَلَاغًا لِّقَوْمٍ عَابِدِيْنَ
নিশ্চয় এতে বার্তা রয়েছে ইবাদাতকারী সম্প্রদায়ের জন্য।
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
আর আমিতো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বল, বস্তুত আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ইলাহ হলো একক ইলাহ; সুতরাং তোমরা কি মুসলিম হবে?
এই আয়াতকয়টি নিয়ে সকল আলেম-ওলামা ও মুসলিম ভাই-বোনদেরকে একটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এবং তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।
وَجَاهِدُوْا فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِه ؕ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍؕ مِّلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِۚ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ, তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন আর দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি, এটাই তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দ্বীন, তিনিই তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম- পূর্ব থেকেই ও এই কিতাবেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরাও মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব, তোমরা সালাত কায়েম কর আর যাকাত আদায় কর আর আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, অতএব তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা ২২/হাজ্জঃ ৭৮)
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৭৬-৮১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَقُصُّ عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَكْثَرَ الَّذِيْ هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
নিশ্চয় এই কুরআন তাদের কাছে বর্ণনা করছে বানী ইসরাঈলের অধিকাংশ বিষয় যেসব বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত,
وَاِنَّهٗ لَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
আর নিশ্চয় এটি (কুরআন) মুমিনদের জন্য হিদায়াত (স্পষ্ট পথের দিক নির্দেশনা) ও রহমত,
اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ بِحُكْمِه وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার রব নিজের বিচার-প্রজ্ঞা দ্বারা তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন, আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ اِنَّكَ عَلَى الْحَقِّ الْمُبِيْنِ
অতএব আল্লাহর উপর ভরসা কর, নিশ্চয় তুমি সুস্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ।
اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ
নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবে না, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়।
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِي الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তুমি অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকারী নও, তুমি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে, অতঃপর তারাই মুসলিম।
আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাবে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকার পরেও ইহুদীরা জানার পরেও না মানার জন্য আর খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাব না পড়ার জন্য না জানার কারণে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এজন্য বিভিন্ন দলের আকীদা-বিশ্বাসও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। যেমনটি আজ মুসলিমদের মধ্যে হয়েছে। কুরআন ও সহীহ হাদীস না পড়ার, না জানার কারণে এবং জানার পরেও না মানার কারণে, প্রবৃত্তির অনুসরণ, বাপ-দাদার অনুসরণসহ বিভিন্ন কারণে দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাই কুরআনের মাধ্যমে তাদের মতবিরোধের ব্যাপারগুলো বর্ণনা করে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে। তেমনিভাবে মুসলিমরাও যদি আবার কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসে তবে আকীদাগত মতভেদ ও দলে দলে বিভক্তি অনেকটাই কমে যাবে।
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৮৯-৯২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ خَيْرٌ مِّنْهَا وَهُمْ مِّنْ فَزَعٍ يَّوْمَئِذٍ اٰمِنُوْنَ
যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে তার জন্য থাকবে তা থেকে উত্তম প্রতিদান এবং সেদিনের ভীতিকর অবস্থা থেকে তারা নিরাপদ থাকবে,
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوْهُهُمْ فِي النَّارِ هَلْ تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর যারা মন্দ কাজ নিয়ে আসবে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (আর বলা হবে) তোমরা যে আমল করেছ তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হল।
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
মূলত আমাকে তো এই নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, এই শহরের রব-এর ইবাদাত করবে যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন, এর সবকিছু তাঁরই অধিকারে আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই,
وَاَنْ اَتْلُوَ الْقُرْاٰنَ فَمَنِ اهْتَدٰى فَاِنَّمَا يَهْتَدِيْ لِنَفْسِه وَمَنْ ضَلَّ فَقُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্যই হিদায়াত লাভ করল, আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, আমিতো কেবল সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।
وَلَقَدْ وَصَّلْنَا لَهُمُ الْقَوْلَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ (৫১) اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِه هُمْ بِه يُؤْمِنُوْنَ (৫২) وَاِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِه ۤ اِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِه مُسْلِمِيْنَ (৫৩)
আর আমিতো তাদের কাছে একের পর এক বাণী পৌঁছে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে, যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম এর পূর্বে তারাও এর প্রতি ঈমান আনে। আর যখন তাদের নিকট তা পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় তা সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আমরা পূর্ব থেকেই মুসলিম। (সূরা ২৮/ক্বাসাসঃ ৫১-৫৩)
এখানে ঐ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নাবীগণ যে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তা হলো ইসলাম। ঐ সব নাবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে ‘মুসলিম’ বলা হত।
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَاُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَاِلٰهُنَا وَاِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَّنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা যুলুম করেছে তাদের ছাড়া; আর বল, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহতো একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (সূরা ২৯/আনকাবুতঃ ৪৬)
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِ الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তুমি অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতে আনতে পারবে না, তুমি শুধু তাদেরকেই শুনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, কারণ তারা মুসলিম। (সূরা ৩০/আর রূমঃ ৫৩)
এই আয়াত থেকে বুঝা গেল, যারা নিজেরাই বুঝতে চায় না তাদেরকে কেউ সঠিক পথে আনতে পারবে না। আর যারা মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী বা নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে মেনে নিয়েছে) তারাই কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে।
قُلْ اِنِّيْۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ (১১) وَاُمِرْتُ لِاَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ الْمُسْلِمِيْنَ (১২)
বল, নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন কেবল আল্লাহরই ইবাদত করি একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্যে। আর আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন প্রথম মুসলিম হই। (সূরা৩৯/যুমারঃ ১১-১২)
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, আর নিজেও আমলে সালেহ করে এবং বলে নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা ৪১/ফুসসিলাতঃ ৩৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন এবং যুগে যুগে ইসলামের অনুসারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ
১। তার কথা সবচেয়ে উত্তম যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে অর্থাৎ কোন দল, মত, পথের দিকে নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ বা ইসলামের দিকে আহবান করে।
২। সে ব্যক্তি নিজে আমলে সালেহ করে অর্থ্যাৎ নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে সেই অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠার সাথে রসূল ﷺ এর মত ইবাদত করে। মনে রাখা দরকার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও নিষ্ঠার সাথে না হলে আল্লাহ সেই আমল কবুল করবেন না আর আমলটি রসূল ﷺ এর মত না হলে সেটা আমলে সালেহ হবে না বরং সেটা আমলে বিদআত হবে।
৩। তার পরিচয় হবে বা সে পরিচয় দিবে যে, আমি একজন মুসলিম।
সূরা নং ৪৩, সূরা আয যুখরুফ এর ৬৪-৭৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ اللهَ هُوَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই আমার রব ও তোমাদেরও রব, অতএব তাঁরই ইবাদত কর, এটাই সরল পথ।
فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
অতঃপর তাদের মধ্যকার কতগুলি দল মতভেদ করেছিল, সুতরাং যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের দুর্ভোগ।
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তারাতো তাদের অজ্ঞাতসারে হঠাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে।
اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ব্যতীত।
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না,
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ
যারা আমার আয়াতে ঈমান এনেছিলে এবং যারা ছিলে মুসলিম।
اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
(বলা হবে) তোমরা সন্ত্রীক সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّاَكْوَابٍ وَّفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْاَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْاَعْيُنُ وَاَنْتُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْۤ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর এটিই জান্নাত, নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী (ওয়ারিস) বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ
সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।
ভেবে দেখেছেন কি? এক আল্লাহ, এক রব তার মনোনীত এক দ্বীন ইসলামের মধ্যে যারা মতভেদ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যন্ত্রণাদায়ক আযাবের হুমকি দিয়েছেন আর যারা আল্লাহ আয়াতসমূহকে মেনে নিয়ে মুসলিম হয়ে জীবন যাপন করবে তাদের জন্য কি রকম পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। তারপরেও কি মুসলিমদেরকে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট দ্বীনের মধ্যে মতভেদ করে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ আছে?
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَانًا حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَّحَمْلُهٗ وَفِصَالُهٗ ثَلَاثُوْنَ شَهْرًا حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَبَلَغَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً قَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْۤ اِنِّيْ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতিকষ্টে প্রসব করেছে আর গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে আর চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিয়ামত দান করেছ, সেই নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে পারি এবং আমি যেন এমন নেক আমল করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আর আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিকে সংশোধন করে দাও, আমি তোমার কাছে তওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের একজন।
(সূরা ৪৬/আহকাফঃ ১৫)
আহ্! কি সুন্দর আমার রবের আয়াতসমূহ! এত আমল করার পরেও আল্লাহ মুসলিম হিসেবে তার পরিচয় তুলে ধরে দোয়া করতে শিখাচ্ছেন। আর আমরা আজ আমাদের আসল পরিচয় ভুলে, আমি অমুক, আমি তমুক, এসব পরিচয় দিচ্ছি। পরিণতিতে নিজে নিজেরাও কাঁদা ছড়াছুড়ি করছি আর ইহুদী-খ্রিষ্টান-মুশরিক সহ সমস্ত বিজাতীয়রা একযুগে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করছে।
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আর স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উত্থিত করব এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে হাযির করব। আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।
(সূরা ১৬/নাহলঃ ৮৯)
قُلْ نَزَّلَهٗ رُوْحُ الْقُدُسِ مِنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
বল, রুহুল কুদুস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১০২)
কুরআন মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ ও সুসংবাদস্বরূপ। আর সহীহ হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা। হাদীস ব্যতীত কুরআনের উপর আমল করাও সম্ভব নয় এবং রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি, জীবনযাপনের রীতি-নীতি) জানা ও মানাও সম্ভব নয়। এজন্য মুসলিমদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস এই দুটোই অধ্যয়ন করতে হবে, দুটোই মেনে চলতে হবে। তবে কুরআন হলো মূল পথের নির্দেশক এবং সহজ ভাবে সরল পথটি আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমেই দেখিয়ে দিয়েছেন। কুরআন সকলের জন্য নাযিল হলেও নিষ্ঠার সাথে বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে এর জ্ঞান অর্জনকারী মুসলিমরাই কেবল এখান থেকে উপকৃত হতে পারবে। কারণ কুরআন হলো বৃষ্টির মত যার দ্বারা কিছু কিছু মাটি প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে কিছু মাটি কাঁটাগাছ ও আগাছা ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না। মুসলিমের অন্তর শিরক, কুফর ও নিফাক থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় কুরআনের বরকতে, ঈমানের আলোতে আলোকিত হয়। দুনিয়াপ্রীতি, অলসতা ইত্যাদি মানবিক দূর্বলতা কখনো কখনো অন্তরে প্রবেশ করলেও অব্যহত কুরআন চর্চার ফলে মুসলিমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারে। আর কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, গাফেল ও পাপীরা কুরআন থেকে দূরে থাকার কারণে কুফর, পাপ-পঙ্কিলতা ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে ডুবে থাকে যেখানে কুরআনের আলো কোন কাজে লাগে না। তাই বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন।
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۤۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা/২ঃ১২৮)।
(এখানে ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে নিজেকে ও তার বংশধরকে মুসলিম বানানোর আবেদন করেছেন এবং ইবাদতের পদ্ধতি নিজে তৈরি না করে আল্লাহকে দেখিয়ে দিতে বলেছেন।)
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইব্রাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুবও, হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে (ইসলামকে) মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা বাকারাঃ ১৩২)
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَّنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমার পর তোমরা কার ইবাদাত করবে? তারা বলল, আমরা ইবাদাত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তাঁরই অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৩)
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নাবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁর অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৬)
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِ ؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِۚ اٰمَنَّا بِاللهِۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ থেকে কুফরী উপলব্দি করল, তখন বলল, কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৫২)
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৬৭)
অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) যাবতীয় শিরক-বিদয়াত থেকে মুক্ত এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি একনিষ্ঠ বা নিষ্ঠাবান বান্দা ছিলেন।
এই সমস্ত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’লা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলামের অনুসারীদের পরিচয় হবে একটাই আর তা হলো মুসলিম।
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বল, হে আহলে কিতাব, তোমরা এমন একটা কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করব না এবং আমাদের পরস্পরের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে রব হিসাবে গ্রহণ করব না। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৬৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আহলে কিতাব তথা কিতাবের অনুসারী ইহুদী-খৃষ্টানদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করার, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করার এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রব হিসাবে না মানার আহবান জানানো হয়েছে এবং সবশেষে যারা আল্লাহর বিধান পুরোপুরি মানতে রাজী নয় তাদেরকে স্পষ্টভাবে নিজেদের পরিচয় জানিয়ে দিতে বলেছেন যে, আমরা মুসলিম।
وَلَا يَأْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًاؕ اَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা মালাইকা ও নাবীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবেন? (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৮০)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ
বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর (ওহী তথা কুরআন ও সহীহ হাদীস) আর যা নাযিল হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর, আর যা দেয়া হয়েছে মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নাবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযত ও যথার্থভাবে (হক আদায় করে) তাকে ভয় কর এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ১০২)।
সর্বযুগের মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণী যে, আল্লাহ এখানে যারাই ঈমান এনেছে তাদেরকেই মুসলিম (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী) হবার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, আদেশ করেছেন।
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
আর যখন আমি হাওয়ারীগণকে (ঈসা আঃ এর অনুসারীদেরকে) এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, আমার প্রতি তোমরা ঈমান আন ও আমার রসূলের প্রতি, তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম। (সূরা ৫/আল মায়িদাঃ ১১১)।
এখানে হাওয়ারীগণ ঈমান আনার সাথে সাথে তাদের রসূল (ঈসা আঃ)কে সাক্ষী রেখে বলছে যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম।
قُلْ اِنَّنِيْ هَدَانِيْ رَبِّيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍۚ دِيْنًا قِيَمًا مِّلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاۚ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমার রব আমাকে সোজা পথের হিদায়াত দিয়েছেন। তা সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইব্রাহীমের আদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬২)
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজাহানের রব। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৩)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬৪)
وَمَا تَنْقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنْ اٰمَنَّا بِاٰيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَاؕ رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
আর তুমি আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করছ শুধু এ কারণে যে, আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন। (সূরা ৭/আরাফঃ১২৬)।
ফেরাউনের যাদুকরের মুসা (আঃ) এর মুজেজা দেখে ঈমান আনার পর পরই আল্লাহ কাছে এই প্রার্থনা করেছে যে, আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন।
فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
অতঃপর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমিতো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে, আর আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাই।
(সূরা১০/ ইউনুসঃ ৭২)
এখানেও নুহ (আঃ)কে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম হবার আদেশ দিয়েছেন এবং তথ্যটি ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ﷺ তথা আমাদেরকেও জানিয়ে দিয়েছেন।
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
আর মূসা বলল, হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হও। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৮৪)
এখানেও মুসা (আঃ) তাঁর জাতির সংকট মুহূর্তে ঈমানদারদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলেছেন এবং মুসলিম বলে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। অতঃপর ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাতার বিধান না মানার, রসূলদের দাওয়াত মেনে না নেওয়ার ও রসূলদের অনুসরণ না করার পরিনতি এবং মৃত্যুর সময় ফিরআ’উনের তাওহীদের ঘোষণা ও মুসলিম হবার আকুতি তুলে ধরে বলেনঃ
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَا اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيْۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম অতঃপর ফিরআ’উন ও তার সৈন্যবাহিনী সীমালঙ্ঘন ও শত্রুতা বশত তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বানী ইসরাঈল ঈমান এনেছে আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৯০)।
কিন্তু তখন ফেরাউনের ঈমান ও মুসলিম হবার ঘোষণা কোন কাজে আসেনি।
সূরা নং ১১, সূরা হুদ এর ১২-১৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ ۢبَعْضَ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَضَآئِقٌ ۢبِه صَدْرُكَ اَنْ يَّقُوْلُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ جَآءَ مَعَهٗ مَلَكٌؕ اِنَّمَاۤ اَنْتَ نَذِيْرٌؕ وَّاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
অতঃপর সম্ভবত তুমি তোমার কাছে যা ওহী করা হয়েছে তার কিছু অংশ ছেড়ে দিবে এবং তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হবে এ কারণে যে, তারা বলে, কেন তার উপর ধন-ভান্ডার নাযিল হয় না অথবা তার সাথে মালাইকা আসে না? প্রকৃতপক্ষে তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র আর আল্লাহ হলেন প্রত্যেক বিষয়ের উপর তত্ত্বাবধায়ক।
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِه مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
অথবা তারা বলে, সে এটা (কুরআন) নিজে রচনা করেছে; বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
فَاِلَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ بِعِلْمِ اللهِ وَاَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
অতঃপর যদি তারা তোমাদের আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, অবশ্যই ইহা (কুরআন) আল্লাহর জ্ঞান অনুসারে নাযিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই। অতএব তোমরা কি মুসলিম হবে?
এখানে আল্লাহ কুরআনের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত তা জানিয়ে দিয়ে আল্লাহর তাওহীদ ও তাদেরকে মুসলিম হবার আহবান করতে বলেছেন।
ইউসুফ (আঃ)ও অন্যান্য সকল নাবীদের মত নিস্পাপ, নিস্কুলুস চরিত্রের অধিকারী ও পরীক্ষীত নাবী হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার দোয়া করতেন বলে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ্য করেছেনঃ
رَبِّ قَدْ اٰتَيْتَنِيْ مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِيْ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ۫ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখেরাতে আপনিই আমার একমাত্র অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন ও নেককারদের সাথে মিলিত করে দিন। (সূরা ১২/ইউসুফঃ১০১)
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কাছে কিভাবে দোয়া করতে হবে তা শিখিয়েছেন। এখানে ইউসুফ (আঃ) প্রথমে বিনয়ের সাথে আল্লাহর প্রশংসা করেছেন, আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্বীকার করেছেন, পীর-বুযুর্গ, ওলী-আওলীয়া এসকল মাধ্যম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকেই দুনিয়া ও আখেরাতের অভিভাবক হিসাবে মেনে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে দোয়া করেছেন। দোয়া করার এটাই সঠিক পদ্ধতি। প্রতিটি মুসলিমকে এভাবেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি বিনয়ের সাথে অনুচ্চ স্বরে দোয়া করতে হবে। বৃষ্টির জন্য ছাড়া সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে দোয়া করা বিদআত এবং প্রত্যেক সালাতের পর মাসনুন যিকির বাদ দিয়ে হাত তোলে উচ্চস্বরে ইমাম ও মুক্তাদি মিলে সম্মিলিতভাবে দোয়া-মোনাজাত করা নিকৃষ্টতম বিদআত। কারণ কিছু বিদআত আছে বছরে একবার করা হয় আর এই বিদআত দিনে পাঁচবার করা হয়। মুসলিম ভাইদের প্রতি অনুরোধ এই বিদআত অবশ্যই পরিত্যাগ করুন, তওবা করুন, ফরজ সালাতের পর মাসনুন যিকির করুন।
আখেরাতের জীবনে কাফিররাও মুসলিম হবার আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে।
الٓرٰ۫ تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْاٰنٍ مُّبِيْنٍ (১) رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ
আলিফ-লাম-রা, এগুলো মহাগ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত। কখনো কখনো কাফিররা আকাংখা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হতো! (সূরা আল হিজরঃ১-২)
সূরা নং ২১, সূরা আল আম্বিয়া এর ১০৪-১০৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَأْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاۤؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটিয়ে নেয়া হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব, আর ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই।
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْ ۢبَعْدِ الذِّكْرِ اَنَّ الْاَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُوْنَ
আর উপদেশ দেয়ার পর আমি কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্য বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।
اِنَّ فِيْ هٰذَا لَبَلَاغًا لِّقَوْمٍ عَابِدِيْنَ
নিশ্চয় এতে বার্তা রয়েছে ইবাদাতকারী সম্প্রদায়ের জন্য।
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
আর আমিতো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বল, বস্তুত আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ইলাহ হলো একক ইলাহ; সুতরাং তোমরা কি মুসলিম হবে?
এই আয়াতকয়টি নিয়ে সকল আলেম-ওলামা ও মুসলিম ভাই-বোনদেরকে একটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এবং তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।
وَجَاهِدُوْا فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِه ؕ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍؕ مِّلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِۚ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ, তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন আর দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি, এটাই তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দ্বীন, তিনিই তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম- পূর্ব থেকেই ও এই কিতাবেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরাও মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব, তোমরা সালাত কায়েম কর আর যাকাত আদায় কর আর আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, অতএব তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা ২২/হাজ্জঃ ৭৮)
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৭৬-৮১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَقُصُّ عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَكْثَرَ الَّذِيْ هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
নিশ্চয় এই কুরআন তাদের কাছে বর্ণনা করছে বানী ইসরাঈলের অধিকাংশ বিষয় যেসব বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত,
وَاِنَّهٗ لَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
আর নিশ্চয় এটি (কুরআন) মুমিনদের জন্য হিদায়াত (স্পষ্ট পথের দিক নির্দেশনা) ও রহমত,
اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ بِحُكْمِه وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার রব নিজের বিচার-প্রজ্ঞা দ্বারা তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন, আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ اِنَّكَ عَلَى الْحَقِّ الْمُبِيْنِ
অতএব আল্লাহর উপর ভরসা কর, নিশ্চয় তুমি সুস্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ।
اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ
নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবে না, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়।
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِي الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তুমি অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকারী নও, তুমি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে, অতঃপর তারাই মুসলিম।
আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাবে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকার পরেও ইহুদীরা জানার পরেও না মানার জন্য আর খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাব না পড়ার জন্য না জানার কারণে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এজন্য বিভিন্ন দলের আকীদা-বিশ্বাসও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। যেমনটি আজ মুসলিমদের মধ্যে হয়েছে। কুরআন ও সহীহ হাদীস না পড়ার, না জানার কারণে এবং জানার পরেও না মানার কারণে, প্রবৃত্তির অনুসরণ, বাপ-দাদার অনুসরণসহ বিভিন্ন কারণে দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাই কুরআনের মাধ্যমে তাদের মতবিরোধের ব্যাপারগুলো বর্ণনা করে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে। তেমনিভাবে মুসলিমরাও যদি আবার কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসে তবে আকীদাগত মতভেদ ও দলে দলে বিভক্তি অনেকটাই কমে যাবে।
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৮৯-৯২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ خَيْرٌ مِّنْهَا وَهُمْ مِّنْ فَزَعٍ يَّوْمَئِذٍ اٰمِنُوْنَ
যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে তার জন্য থাকবে তা থেকে উত্তম প্রতিদান এবং সেদিনের ভীতিকর অবস্থা থেকে তারা নিরাপদ থাকবে,
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوْهُهُمْ فِي النَّارِ هَلْ تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর যারা মন্দ কাজ নিয়ে আসবে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (আর বলা হবে) তোমরা যে আমল করেছ তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হল।
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
মূলত আমাকে তো এই নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, এই শহরের রব-এর ইবাদাত করবে যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন, এর সবকিছু তাঁরই অধিকারে আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই,
وَاَنْ اَتْلُوَ الْقُرْاٰنَ فَمَنِ اهْتَدٰى فَاِنَّمَا يَهْتَدِيْ لِنَفْسِه وَمَنْ ضَلَّ فَقُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্যই হিদায়াত লাভ করল, আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, আমিতো কেবল সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।
وَلَقَدْ وَصَّلْنَا لَهُمُ الْقَوْلَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ (৫১) اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِه هُمْ بِه يُؤْمِنُوْنَ (৫২) وَاِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِه ۤ اِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِه مُسْلِمِيْنَ (৫৩)
আর আমিতো তাদের কাছে একের পর এক বাণী পৌঁছে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে, যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম এর পূর্বে তারাও এর প্রতি ঈমান আনে। আর যখন তাদের নিকট তা পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় তা সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আমরা পূর্ব থেকেই মুসলিম। (সূরা ২৮/ক্বাসাসঃ ৫১-৫৩)
এখানে ঐ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নাবীগণ যে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তা হলো ইসলাম। ঐ সব নাবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে ‘মুসলিম’ বলা হত।
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَاُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَاِلٰهُنَا وَاِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَّنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা যুলুম করেছে তাদের ছাড়া; আর বল, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহতো একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (সূরা ২৯/আনকাবুতঃ ৪৬)
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِ الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর তুমি অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতে আনতে পারবে না, তুমি শুধু তাদেরকেই শুনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, কারণ তারা মুসলিম। (সূরা ৩০/আর রূমঃ ৫৩)
এই আয়াত থেকে বুঝা গেল, যারা নিজেরাই বুঝতে চায় না তাদেরকে কেউ সঠিক পথে আনতে পারবে না। আর যারা মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী বা নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে মেনে নিয়েছে) তারাই কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে।
قُلْ اِنِّيْۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ (১১) وَاُمِرْتُ لِاَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ الْمُسْلِمِيْنَ (১২)
বল, নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন কেবল আল্লাহরই ইবাদত করি একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্যে। আর আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন প্রথম মুসলিম হই। (সূরা৩৯/যুমারঃ ১১-১২)
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, আর নিজেও আমলে সালেহ করে এবং বলে নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা ৪১/ফুসসিলাতঃ ৩৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন এবং যুগে যুগে ইসলামের অনুসারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ
১। তার কথা সবচেয়ে উত্তম যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে অর্থাৎ কোন দল, মত, পথের দিকে নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ বা ইসলামের দিকে আহবান করে।
২। সে ব্যক্তি নিজে আমলে সালেহ করে অর্থ্যাৎ নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে সেই অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠার সাথে রসূল ﷺ এর মত ইবাদত করে। মনে রাখা দরকার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও নিষ্ঠার সাথে না হলে আল্লাহ সেই আমল কবুল করবেন না আর আমলটি রসূল ﷺ এর মত না হলে সেটা আমলে সালেহ হবে না বরং সেটা আমলে বিদআত হবে।
৩। তার পরিচয় হবে বা সে পরিচয় দিবে যে, আমি একজন মুসলিম।
সূরা নং ৪৩, সূরা আয যুখরুফ এর ৬৪-৭৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ اللهَ هُوَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই আমার রব ও তোমাদেরও রব, অতএব তাঁরই ইবাদত কর, এটাই সরল পথ।
فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
অতঃপর তাদের মধ্যকার কতগুলি দল মতভেদ করেছিল, সুতরাং যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের দুর্ভোগ।
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তারাতো তাদের অজ্ঞাতসারে হঠাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে।
اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ব্যতীত।
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না,
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ
যারা আমার আয়াতে ঈমান এনেছিলে এবং যারা ছিলে মুসলিম।
اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
(বলা হবে) তোমরা সন্ত্রীক সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّاَكْوَابٍ وَّفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْاَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْاَعْيُنُ وَاَنْتُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْۤ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আর এটিই জান্নাত, নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী (ওয়ারিস) বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ
সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।
ভেবে দেখেছেন কি? এক আল্লাহ, এক রব তার মনোনীত এক দ্বীন ইসলামের মধ্যে যারা মতভেদ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যন্ত্রণাদায়ক আযাবের হুমকি দিয়েছেন আর যারা আল্লাহ আয়াতসমূহকে মেনে নিয়ে মুসলিম হয়ে জীবন যাপন করবে তাদের জন্য কি রকম পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। তারপরেও কি মুসলিমদেরকে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট দ্বীনের মধ্যে মতভেদ করে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ আছে?
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَانًا حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَّحَمْلُهٗ وَفِصَالُهٗ ثَلَاثُوْنَ شَهْرًا حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَبَلَغَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً قَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْۤ اِنِّيْ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতিকষ্টে প্রসব করেছে আর গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে আর চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিয়ামত দান করেছ, সেই নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে পারি এবং আমি যেন এমন নেক আমল করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আর আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিকে সংশোধন করে দাও, আমি তোমার কাছে তওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের একজন।
(সূরা ৪৬/আহকাফঃ ১৫)
আহ্! কি সুন্দর আমার রবের আয়াতসমূহ! এত আমল করার পরেও আল্লাহ মুসলিম হিসেবে তার পরিচয় তুলে ধরে দোয়া করতে শিখাচ্ছেন। আর আমরা আজ আমাদের আসল পরিচয় ভুলে, আমি অমুক, আমি তমুক, এসব পরিচয় দিচ্ছি। পরিণতিতে নিজে নিজেরাও কাঁদা ছড়াছুড়ি করছি আর ইহুদী-খ্রিষ্টান-মুশরিক সহ সমস্ত বিজাতীয়রা একযুগে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করছে।
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আর স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উত্থিত করব এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে হাযির করব। আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।
(সূরা ১৬/নাহলঃ ৮৯)
قُلْ نَزَّلَهٗ رُوْحُ الْقُدُسِ مِنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
বল, রুহুল কুদুস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১০২)
কুরআন মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ ও সুসংবাদস্বরূপ। আর সহীহ হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা। হাদীস ব্যতীত কুরআনের উপর আমল করাও সম্ভব নয় এবং রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি, জীবনযাপনের রীতি-নীতি) জানা ও মানাও সম্ভব নয়। এজন্য মুসলিমদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস এই দুটোই অধ্যয়ন করতে হবে, দুটোই মেনে চলতে হবে। তবে কুরআন হলো মূল পথের নির্দেশক এবং সহজ ভাবে সরল পথটি আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমেই দেখিয়ে দিয়েছেন। কুরআন সকলের জন্য নাযিল হলেও নিষ্ঠার সাথে বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে এর জ্ঞান অর্জনকারী মুসলিমরাই কেবল এখান থেকে উপকৃত হতে পারবে। কারণ কুরআন হলো বৃষ্টির মত যার দ্বারা কিছু কিছু মাটি প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে কিছু মাটি কাঁটাগাছ ও আগাছা ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না। মুসলিমের অন্তর শিরক, কুফর ও নিফাক থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় কুরআনের বরকতে, ঈমানের আলোতে আলোকিত হয়। দুনিয়াপ্রীতি, অলসতা ইত্যাদি মানবিক দূর্বলতা কখনো কখনো অন্তরে প্রবেশ করলেও অব্যহত কুরআন চর্চার ফলে মুসলিমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারে। আর কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, গাফেল ও পাপীরা কুরআন থেকে দূরে থাকার কারণে কুফর, পাপ-পঙ্কিলতা ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে ডুবে থাকে যেখানে কুরআনের আলো কোন কাজে লাগে না। তাই বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন।
প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে, এখানে আমি মুসলিম পরিচয় উল্লেখিত ও আমাদের আমল উল্লেখিত সব হাদীস উল্লেখ করতে পারিনী। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে, মুসলিম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কুতুবে সিত্তা থেকে এমন সব হাদীস একত্র করব। কিন্তু সংকলন করতে গিয়ে দেখি, আশ্চার্য ব্যাপার, এরূপ হাদীসের সংখ্যা বহু যা সংকলন করলে ভলিয়ম ভলিয়ম কিতাব হবে। অনুমান করে বুঝলাম যে এগুলোর দশ ভাগের এক ভাগও যদি সংকলন করি তবে কিতাবের কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া কুতুবে সিত্তাগুলোতে সংকলিত আছেই। আগ্রহী মুসলিম ভাই-বোনেরা সেখান থেকেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। তাই এখানে মুষ্টিমেয় কয়েকটি হাদীস সংকলন করলাম।
১. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে।
(বুখারীঃ ৯, মুসলিমঃ ৪০)
২. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারীঃ ১০, মুসলিমঃ ৪২)
৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা হতে সে তার দ্বীন সহ পলায়ন করবে। (বুখারীঃ ১৮)
৪. যুবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়াইল (রহঃ)-কে মুরজিআ (একটি বাতিল ফিরকা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ (ইবন মাসউদ) আমার নিকট বলেছেন,নাবী ﷺ বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।
(বুখারীঃ ৪৮, মুসলিমঃ ৬৪)
৫. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি- সালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (বুখারীঃ ৫৫, মুসলিমঃ ৫৬)
৬. আবু জুহাইফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আলী (রদিঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব (কুরআন) রয়েছে আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না। (বুখারীঃ ১১২, ১৮৭০, ৩০৪৭)
৭. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেন, আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই থাকবে। রক্ত ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হতে মিশকের মত।
(বুখারীঃ ২৩৭, ২৮০৩, মুসলিমঃ ১৮৭৬)
৮. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।
(বুখারীঃ ৩৮৪)
৯. আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনে মালিক (রদিঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে মানুষের জান-মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যক্তি লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কিবলামুখী হয়, আমাদের মত সালাত আদায় করে আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম। অন্য মুসলিমের মতই তার অধিকার রয়েছে আর অন্য মুসলিমদের মতই তাকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। (বুখারীঃ ৩৮৫ শেষাংশ)
১০. ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রদিঃ) এর নিকট আসতাম। তিনি সর্বদা মাসজিদে নাববীর সেই স্তম্ভের নিকট সালাত আদায় করতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুঁজে বের করে সামনে রেখে সালাত আদায় করতে দেখি (এর কারণ কী?) তিনি বললেন, আমি নাবী ﷺ কে এটি খুঁজে বের করে এর নিকট সালাত আদায় করতে দেখেছি। (বুখারীঃ ৪৭৮)
১১. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রসূল ﷺ এর সঙ্গে ফজরের জামাআতে হাযির হতেন, অতঃপর সালাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন, আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। (বুখারীঃ ৫৭৮)
১২. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল তাঁরা সালাতের সময় হয়েছে বুঝানোর জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক কিংবা ঘন্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রদিঃ)কে আযানের শব্দগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হলো। (বুখারীঃ ৫৭৯)
১৩. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমগণ ফজরের সালাতে রত, এ সময় আল্লাহর রসূল ﷺ আয়িশা (রদিঃ) এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাঁকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন, তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আবূ বকর (রদিঃ) তাঁর ইমামতের স্থান ছেড়ে কাতারে শামিল হবার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, রসূল ﷺ বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিতে তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পুরো কর। অতঃপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। এ দিনেরই শেষে তাঁর ওফাত (মৃত্যু) হয়। (বুখারীঃ ৭৫৪)
১৪. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রববানা ওয়া লাকাল হামদ’’ বলতেন আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেন, হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম, আইয়্যাস ইবনু আবু রাবীআ (রদিঃ) এবং অপরাপর দূর্বল মুসলিমদেরকে রক্ষা করুন। (বুখারীঃ ৮০৪ প্রথমাংশ)
১৫. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। (বুখারীঃ ৮৯৭)
১৬. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ জুমুআর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, একবার নাবী ﷺ সূরা আন-নাজম পাঠ করে সিজদা করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা করেছিল। (বুখারীঃ ১০৭১) এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, যারা ইসলাম কবুল করে পুরোপুরি মেনে চলবে তারা মুসলিম আর অন্যরা মুশরিক পরিচয়ে পরিচিত হবে।
১৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল ﷺ †ক বলতে শুনেছি, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটিঃ ১. সালামের জবাব দেয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া, ৩. জানাযার পিছনে চলা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা (আলহামদুলিল্লাহ-র জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা) (বুখারী ১২৪০)
১৯. আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিমের (যিনি ইসলামকে পুরোপুরি মেনে চলেন) তিনটি সন্তান সাবালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারীঃ ১২৪৮, ১২৫১, ১৩৮১)
২০. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজিন (রক্কক) নির্দেশিত পরিমাণ সদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সদকা দানকারী হিসেবে গণ্য। (বুখারীঃ ১৪৩৮)
২১. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, প্রতিটি মুসলিমের সদকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, কেউ যদি সদকা দেয়ার মত কিছু না পায়? নাবী ﷺ বললেন, সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সদকাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেন, কোন বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় সে যেন সৎ আমল করে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। (বুখারীঃ ১৪৪৫)
এসব হাদীস থেকে বুঝা যায় রসূল ﷺ নিজে ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করেছেন আর সাহাবী (রদিঃ) গণ ইসলামের কোন বিষয়ই জেনে বুঝে রাখতে ও পরবর্তীদের কাছে বর্ণনা করতে বাদ রাখেননি। আমাদের উচিত মুসলিম পরিচয় দেয়া, মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ থাকা এবং কুরআন-হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা।
২২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত,নাবী ﷺ বলেছেন, মুসলিমদের উপরে ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই। (বুখারীঃ ১৪৬৩, ১৪৬৪)
২৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নাবী ﷺ মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তা হলো এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হবে। এক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নাবী ﷺ নিরব হলেন, প্রশ্নকারীকে বলা হল, তোমার কী হয়েছে? তুমি নাবী ﷺ এর সাথে কথা বলছ কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নাবী ﷺ এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি ঘাম মুছলেন এবং বললেন প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে ও পুণরায় চলে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হলো আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নাবী ﷺ যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। (বুখারী ১৪৬৫)
২৪. ইবনে উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রসূলুল্লাহ ﷺ সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারীঃ ১৫০৩. ১৫০৪)
হাদীসটির শিক্ষাঃ ১. ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশে নাবী ﷺ ও ফরজ বা হালাল-হারাম নির্ধারণ করতে পারেন, ২. এক সা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে, ৩. ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করতে হবে, ৪. এসব নাবী ﷺ এর নির্দেশ। নাবী ﷺ এর নির্দেশ মান্য করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর অবশ্য কর্তব্য এবং অমান্য করা নিন্দনীয় অপরাধ।
২৫. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, জাহিলি যুগে যল-মাজায ও উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগল, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হলঃ ‘‘হজ্জের মৌসুমে তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে তোমাদের পাপ নেই’’
(আল কুরআন, বাকারাঃ১৯৮), (বুখারীঃ ১৭৭০, ২০৫০, ২০৯৮, ৪৫১৯)
২৭. আবু হুরাইরা (রদিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বিরতীহীন সওম (সওমে বিসাল) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে বিরতীহীন সওম পালন করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব আমাকে পানাহার করান। এরপরও যখন লোকেরা বিরতীহীন সওম পালন করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সওমে বিসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমে বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল।
(বুখারী ১৯৬৫)
শিক্ষাঃ রসূল ﷺ এর ব্যক্তিগত আমল (ফেইলি হাদীস) ও নির্দেশের মধ্যে (কওলি হাদীস) অমিল হলে নির্দেশের উপরে কাজ করতে হবে কেননা কিছু ইবাদত রসূল ﷺ এর জন্য খাস ছিল। উম্মতের কষ্টের কথা ভেবে অনেক কিছু তিনি হালকা করে দিয়েছেন। তবে মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোতে শিথিলতার সুযোগ নেই। সাধ্যমত সুন্নতের উপর আমল করাটাই মুসলিমদের কর্তব্য।
২৮. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রদিঃ) কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার জাতি জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর (রদিঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন। (বুখারী ২০৭০)
লক্ষ্য করুন, এই হাদীসে আবু বকর সিদ্দিক (রদিঃ) ইসলামের অনুসারীদেরকে ‘মুসলিম জনগণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
২৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়, ‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে-’’ (আল ইমরান ৭৭) (বুখারীঃ ২০৮৮)। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, দ্বীনের ব্যাপারে ইসলামে কোন কিছু বাদ নেই এবং হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা ও রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি) জানার ওহী ভিত্তিক উৎস। হাদীস ছাড়া ইসলাম পালন করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুসলিমের উচিত সাধ্যমত কুরআনের পাশাপাশি কুতুবস সিত্তা (বুখারী, মুসলিম হতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ) ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে সহীহ হাদীস অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ইবাদত করা।
৩০. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ, কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও।
(বুখারী ২৫৬৬)
৩১. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারীঃ ২৮৩০)। প্রকৃত ও ভাল মুসলিমের জন্য কুরআন-হাদীসে আরো অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। ভাল মুসলিমের জন্য সুখ-দুঃখ (শোকরিয়া, ধৈর্য্য ও ইবাদতের কারণে) সবকিছুই কল্যাণকর। কুরআন-সুন্নাহ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে ভাল মুসলিম হবার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমিন।
৩২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইহুদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইহুদী আছে, তাকে হত্যা কর।’’ (বুখারীঃ ২৯২৬) লক্ষ্য করুন, পাথরও ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করবে। এজন্য আমাদের উচিত অন্য সব পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়া এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা।
৩৩. ইবনু উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে শত্রুরা তা আটক করে। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন সে ঘোড়াটি আল্লাহর রসূল ﷺ এর যুগেই তাঁকে ফেরত দেয়া হয়। আর তাঁর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রদিঃ) রসূল ﷺ এর যামানার পর তা তাঁকে ফেরত দিয়ে দেন।
(বুখারীঃ ৩০৬৭-৩০৬৯)
আহা! মুসলিমগণ যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তখন রোম হেরে গেল আর মুসলিমরা যখন বিভিন্ন পরিচয়ে দলে দলে বিভক্ত তখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে তারা শুধু মার খাচ্ছে। কবে মুসলিমদের চেতনা ফিরবে, কবে তারা শুধু মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট হয়ে কুরআন-সুন্নাহকে আকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হবে, সমস্ত শিরক-বিদআত, দল-মত-ইজম-মাযহাব পরিত্যাগ করে নিজেদের মধ্যের সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে শুধু ওহীর দলিল ভিত্তিক জ্ঞান চর্চা করবে, ইবাদত করবে, সমাজ পরিচালনা করবে, দাওয়াত দিবে আর ইসলামের পতাকাকে উর্দ্ধে তুলে ধরার জন্য ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হবে। আল্লাহ মুসলিম ভাই-বোনদেরকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলার জন্য তৌফিক দান করুন, আমিন!
৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা আলী (রদিঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী ﷺ এর পরে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আবু বকর (রদিঃ), আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, উমার (রদিঃ)। আমার আশংকা হলো যে, অতঃপর তিনি উসমান (রদিঃ) এর নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমিতো মুসলিমদের একজন। (বুখারীঃ ৩৬৭১)
৩৫. তামীম আদ্ দারী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, সদুপদেশ দেয়াই হলো দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের (কুরআনের), তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। (মুসলিমঃ ১০২)
বিঃদ্রঃ- মুসলিম শাসক তাদেরকেই বলা যাবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং ততক্ষনই তাদের নির্দেশ মানা যাবে যতক্ষণ কুরআন ও হাদীস মোতাবেক নির্দেশ দিবে, আর মুসলিম জনগণ তাদেরকেই বলা হবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ইসলামের উপর অটল থাকবে। সুতরাং যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করছেন বলে মনে করেন তাদের উচিত অন্য কোন পরিচয় না দিয়ে কেবল মুসলিম পরিচয় দেয়া, অন্য সকল পরিচয় পরিত্যাগ করে মুসলিম পরিচয়ে অটল থাকা। আল্লাহ আমাদের সঠিকটা বুঝার জন্য তৌফিক দিন, আমিন।
৩৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি নাবী ﷺ †ক বলতে শুনেছি, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবে। এ হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান।
(মুসলিমঃ ২৯২)
৩৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ রাওহা নামক স্থানে একদল আরোহীর সাক্ষাৎ পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর জন্য হাজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে। (মুসলিম ৩১১৯) তারা কোন সম্প্রদায়ের লোক জানতে চাইলেও তারা মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। তাই আমাদের জন্য মুসলিম পরিচয় দেয়াই সহীহ, সঠিক ও সুন্নাতী পদ্ধতি। মুসলিমদের জন্য অন্য কোন পরিচয়ে পরিচয় দেয়া সমীচীন নয়।
৩৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম মহিলার জন্য তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়। (মুসলিমঃ ৩১৩২)
৩৯. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (মুসলিমঃ ৩৩২৭)
৪০. আবু ইদ্রীস খাওলানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রদিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রসূল ﷺ †ক কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট অকল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম এই ভয়ে যে, পরে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এ কল্যাণ প্রদান করলেন। এ কল্যাণের পরেও কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আমি বললাম, ঐ অকল্যাণের পর আবার কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তা ধুম্রতা আছে। আমি বললাম, কী সে ধুম্রতা? তিনি বললেন, তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হিদায়াতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হিদায়াত খুঁজবে। দেখবে তাদের মধ্যে ভাল মন্দ উভয়টাই। তখন আমি আরয করলাম, এ কল্যাণের পর কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের বর্ণ হবে আমাদেরইমত এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কী করতে বলেন? তিনি বলেন, তোমরা মুসলিমদের জামাআত ও ইমামের সাথে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামাআত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তা হলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আকঁড়ে থাক এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।
(মুসলিমঃ ৪৬৩১)
সুতরাং সাবধান! সমস্ত বিচ্ছিন্ন দল থেকে সাবধান!! নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী মুসলিম পরিচয়ে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করুন এবং মুসলিম জামায়াত বা সাহাবীদের মত জামায়াত পেলে সেই জামায়াতকে আকঁড়ে ধরুন নতুবা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তাওহীদ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরুন, শিরক-বিদআতকে বর্জন করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা জানার বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন!
রসূল ﷺ সকালে ও বিকালে যে যিকিরসমূহ পাঠ করতেন সেখানেও বেশ কিছু যিকিরে মুসলিম হবার, থাকার অভিপ্রায় দেখা যায়। যেমন :
أَصْبَحْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَسُنَّةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا ‐ وَمَا كَانَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ
আমরা সকাল করলাম ইসলামের ফিতরাতের উপর, একনিষ্ঠ কালিমার উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের উপর এবং আমাদের একনিষ্ঠ মুসলিম পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর আদর্শের উপর। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৪৪; দারেমী, হা/২৭৪৪
রসূল ﷺ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ৩ বার করে এবং প্রত্যেক আযানের পর ১ বার করে পাঠ করতেনঃ
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
আল্লাহকে রব ও ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ ﷺ †ক নাবী হিসেবে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।
(আবু দাউদ ১৫৩১, তিরমিযী ৩৩৮৯, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদঃ ১৮৯৬৭)
সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন ও মুহাম্মাদ ﷺ কে নাবী/রসূল (আদর্শ) হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ আমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান নাযিল করেছেন, পরিপূর্ণ দ্বীন মনোনীত করেছেন এবং রসূল ﷺ দ্বীনের সকল বিষয়ে আমল ও কথার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে দেখিয়ে গেছেন ও বর্ণনা করেছেন। তাই অন্য সকল মতবাদ, ইজম ও মাযহাব পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলো আগেও যেমন প্রয়োজন ছিল না, এখনও তেমনি প্রয়োজন নেই। কুরআন ও সহীহ হাদীসেই সবকিছু স্পষ্ট আছে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করার ও কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন। আমিন!
১. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে।
(বুখারীঃ ৯, মুসলিমঃ ৪০)
২. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারীঃ ১০, মুসলিমঃ ৪২)
৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা হতে সে তার দ্বীন সহ পলায়ন করবে। (বুখারীঃ ১৮)
৪. যুবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়াইল (রহঃ)-কে মুরজিআ (একটি বাতিল ফিরকা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ (ইবন মাসউদ) আমার নিকট বলেছেন,নাবী ﷺ বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।
(বুখারীঃ ৪৮, মুসলিমঃ ৬৪)
৫. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি- সালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (বুখারীঃ ৫৫, মুসলিমঃ ৫৬)
৬. আবু জুহাইফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আলী (রদিঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব (কুরআন) রয়েছে আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না। (বুখারীঃ ১১২, ১৮৭০, ৩০৪৭)
৭. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেন, আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই থাকবে। রক্ত ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হতে মিশকের মত।
(বুখারীঃ ২৩৭, ২৮০৩, মুসলিমঃ ১৮৭৬)
৮. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।
(বুখারীঃ ৩৮৪)
৯. আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনে মালিক (রদিঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে মানুষের জান-মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যক্তি লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কিবলামুখী হয়, আমাদের মত সালাত আদায় করে আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম। অন্য মুসলিমের মতই তার অধিকার রয়েছে আর অন্য মুসলিমদের মতই তাকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। (বুখারীঃ ৩৮৫ শেষাংশ)
১০. ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রদিঃ) এর নিকট আসতাম। তিনি সর্বদা মাসজিদে নাববীর সেই স্তম্ভের নিকট সালাত আদায় করতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুঁজে বের করে সামনে রেখে সালাত আদায় করতে দেখি (এর কারণ কী?) তিনি বললেন, আমি নাবী ﷺ কে এটি খুঁজে বের করে এর নিকট সালাত আদায় করতে দেখেছি। (বুখারীঃ ৪৭৮)
১১. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রসূল ﷺ এর সঙ্গে ফজরের জামাআতে হাযির হতেন, অতঃপর সালাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন, আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। (বুখারীঃ ৫৭৮)
১২. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল তাঁরা সালাতের সময় হয়েছে বুঝানোর জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক কিংবা ঘন্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রদিঃ)কে আযানের শব্দগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হলো। (বুখারীঃ ৫৭৯)
১৩. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমগণ ফজরের সালাতে রত, এ সময় আল্লাহর রসূল ﷺ আয়িশা (রদিঃ) এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাঁকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন, তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আবূ বকর (রদিঃ) তাঁর ইমামতের স্থান ছেড়ে কাতারে শামিল হবার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, রসূল ﷺ বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিতে তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পুরো কর। অতঃপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। এ দিনেরই শেষে তাঁর ওফাত (মৃত্যু) হয়। (বুখারীঃ ৭৫৪)
১৪. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রববানা ওয়া লাকাল হামদ’’ বলতেন আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেন, হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম, আইয়্যাস ইবনু আবু রাবীআ (রদিঃ) এবং অপরাপর দূর্বল মুসলিমদেরকে রক্ষা করুন। (বুখারীঃ ৮০৪ প্রথমাংশ)
১৫. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। (বুখারীঃ ৮৯৭)
১৬. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ জুমুআর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, একবার নাবী ﷺ সূরা আন-নাজম পাঠ করে সিজদা করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা করেছিল। (বুখারীঃ ১০৭১) এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, যারা ইসলাম কবুল করে পুরোপুরি মেনে চলবে তারা মুসলিম আর অন্যরা মুশরিক পরিচয়ে পরিচিত হবে।
১৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল ﷺ †ক বলতে শুনেছি, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটিঃ ১. সালামের জবাব দেয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া, ৩. জানাযার পিছনে চলা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা (আলহামদুলিল্লাহ-র জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা) (বুখারী ১২৪০)
১৯. আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিমের (যিনি ইসলামকে পুরোপুরি মেনে চলেন) তিনটি সন্তান সাবালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারীঃ ১২৪৮, ১২৫১, ১৩৮১)
২০. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজিন (রক্কক) নির্দেশিত পরিমাণ সদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সদকা দানকারী হিসেবে গণ্য। (বুখারীঃ ১৪৩৮)
২১. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, প্রতিটি মুসলিমের সদকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, কেউ যদি সদকা দেয়ার মত কিছু না পায়? নাবী ﷺ বললেন, সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সদকাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেন, কোন বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় সে যেন সৎ আমল করে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। (বুখারীঃ ১৪৪৫)
এসব হাদীস থেকে বুঝা যায় রসূল ﷺ নিজে ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করেছেন আর সাহাবী (রদিঃ) গণ ইসলামের কোন বিষয়ই জেনে বুঝে রাখতে ও পরবর্তীদের কাছে বর্ণনা করতে বাদ রাখেননি। আমাদের উচিত মুসলিম পরিচয় দেয়া, মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ থাকা এবং কুরআন-হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা।
২২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত,নাবী ﷺ বলেছেন, মুসলিমদের উপরে ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই। (বুখারীঃ ১৪৬৩, ১৪৬৪)
২৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নাবী ﷺ মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তা হলো এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হবে। এক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নাবী ﷺ নিরব হলেন, প্রশ্নকারীকে বলা হল, তোমার কী হয়েছে? তুমি নাবী ﷺ এর সাথে কথা বলছ কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নাবী ﷺ এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি ঘাম মুছলেন এবং বললেন প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে ও পুণরায় চলে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হলো আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নাবী ﷺ যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। (বুখারী ১৪৬৫)
২৪. ইবনে উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রসূলুল্লাহ ﷺ সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারীঃ ১৫০৩. ১৫০৪)
হাদীসটির শিক্ষাঃ ১. ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশে নাবী ﷺ ও ফরজ বা হালাল-হারাম নির্ধারণ করতে পারেন, ২. এক সা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে, ৩. ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করতে হবে, ৪. এসব নাবী ﷺ এর নির্দেশ। নাবী ﷺ এর নির্দেশ মান্য করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর অবশ্য কর্তব্য এবং অমান্য করা নিন্দনীয় অপরাধ।
২৫. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, জাহিলি যুগে যল-মাজায ও উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগল, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হলঃ ‘‘হজ্জের মৌসুমে তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে তোমাদের পাপ নেই’’
(আল কুরআন, বাকারাঃ১৯৮), (বুখারীঃ ১৭৭০, ২০৫০, ২০৯৮, ৪৫১৯)
২৭. আবু হুরাইরা (রদিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বিরতীহীন সওম (সওমে বিসাল) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে বিরতীহীন সওম পালন করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব আমাকে পানাহার করান। এরপরও যখন লোকেরা বিরতীহীন সওম পালন করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সওমে বিসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমে বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল।
(বুখারী ১৯৬৫)
শিক্ষাঃ রসূল ﷺ এর ব্যক্তিগত আমল (ফেইলি হাদীস) ও নির্দেশের মধ্যে (কওলি হাদীস) অমিল হলে নির্দেশের উপরে কাজ করতে হবে কেননা কিছু ইবাদত রসূল ﷺ এর জন্য খাস ছিল। উম্মতের কষ্টের কথা ভেবে অনেক কিছু তিনি হালকা করে দিয়েছেন। তবে মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোতে শিথিলতার সুযোগ নেই। সাধ্যমত সুন্নতের উপর আমল করাটাই মুসলিমদের কর্তব্য।
২৮. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রদিঃ) কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার জাতি জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর (রদিঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন। (বুখারী ২০৭০)
লক্ষ্য করুন, এই হাদীসে আবু বকর সিদ্দিক (রদিঃ) ইসলামের অনুসারীদেরকে ‘মুসলিম জনগণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
২৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়, ‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে-’’ (আল ইমরান ৭৭) (বুখারীঃ ২০৮৮)। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, দ্বীনের ব্যাপারে ইসলামে কোন কিছু বাদ নেই এবং হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা ও রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি) জানার ওহী ভিত্তিক উৎস। হাদীস ছাড়া ইসলাম পালন করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুসলিমের উচিত সাধ্যমত কুরআনের পাশাপাশি কুতুবস সিত্তা (বুখারী, মুসলিম হতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ) ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে সহীহ হাদীস অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ইবাদত করা।
৩০. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ, কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও।
(বুখারী ২৫৬৬)
৩১. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারীঃ ২৮৩০)। প্রকৃত ও ভাল মুসলিমের জন্য কুরআন-হাদীসে আরো অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। ভাল মুসলিমের জন্য সুখ-দুঃখ (শোকরিয়া, ধৈর্য্য ও ইবাদতের কারণে) সবকিছুই কল্যাণকর। কুরআন-সুন্নাহ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে ভাল মুসলিম হবার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমিন।
৩২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইহুদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইহুদী আছে, তাকে হত্যা কর।’’ (বুখারীঃ ২৯২৬) লক্ষ্য করুন, পাথরও ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করবে। এজন্য আমাদের উচিত অন্য সব পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়া এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা।
৩৩. ইবনু উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে শত্রুরা তা আটক করে। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন সে ঘোড়াটি আল্লাহর রসূল ﷺ এর যুগেই তাঁকে ফেরত দেয়া হয়। আর তাঁর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রদিঃ) রসূল ﷺ এর যামানার পর তা তাঁকে ফেরত দিয়ে দেন।
(বুখারীঃ ৩০৬৭-৩০৬৯)
আহা! মুসলিমগণ যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তখন রোম হেরে গেল আর মুসলিমরা যখন বিভিন্ন পরিচয়ে দলে দলে বিভক্ত তখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে তারা শুধু মার খাচ্ছে। কবে মুসলিমদের চেতনা ফিরবে, কবে তারা শুধু মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট হয়ে কুরআন-সুন্নাহকে আকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হবে, সমস্ত শিরক-বিদআত, দল-মত-ইজম-মাযহাব পরিত্যাগ করে নিজেদের মধ্যের সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে শুধু ওহীর দলিল ভিত্তিক জ্ঞান চর্চা করবে, ইবাদত করবে, সমাজ পরিচালনা করবে, দাওয়াত দিবে আর ইসলামের পতাকাকে উর্দ্ধে তুলে ধরার জন্য ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হবে। আল্লাহ মুসলিম ভাই-বোনদেরকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলার জন্য তৌফিক দান করুন, আমিন!
৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা আলী (রদিঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী ﷺ এর পরে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আবু বকর (রদিঃ), আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, উমার (রদিঃ)। আমার আশংকা হলো যে, অতঃপর তিনি উসমান (রদিঃ) এর নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমিতো মুসলিমদের একজন। (বুখারীঃ ৩৬৭১)
৩৫. তামীম আদ্ দারী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, সদুপদেশ দেয়াই হলো দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের (কুরআনের), তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। (মুসলিমঃ ১০২)
বিঃদ্রঃ- মুসলিম শাসক তাদেরকেই বলা যাবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং ততক্ষনই তাদের নির্দেশ মানা যাবে যতক্ষণ কুরআন ও হাদীস মোতাবেক নির্দেশ দিবে, আর মুসলিম জনগণ তাদেরকেই বলা হবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ইসলামের উপর অটল থাকবে। সুতরাং যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করছেন বলে মনে করেন তাদের উচিত অন্য কোন পরিচয় না দিয়ে কেবল মুসলিম পরিচয় দেয়া, অন্য সকল পরিচয় পরিত্যাগ করে মুসলিম পরিচয়ে অটল থাকা। আল্লাহ আমাদের সঠিকটা বুঝার জন্য তৌফিক দিন, আমিন।
৩৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি নাবী ﷺ †ক বলতে শুনেছি, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবে। এ হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান।
(মুসলিমঃ ২৯২)
৩৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ রাওহা নামক স্থানে একদল আরোহীর সাক্ষাৎ পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর জন্য হাজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে। (মুসলিম ৩১১৯) তারা কোন সম্প্রদায়ের লোক জানতে চাইলেও তারা মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। তাই আমাদের জন্য মুসলিম পরিচয় দেয়াই সহীহ, সঠিক ও সুন্নাতী পদ্ধতি। মুসলিমদের জন্য অন্য কোন পরিচয়ে পরিচয় দেয়া সমীচীন নয়।
৩৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম মহিলার জন্য তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়। (মুসলিমঃ ৩১৩২)
৩৯. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (মুসলিমঃ ৩৩২৭)
৪০. আবু ইদ্রীস খাওলানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রদিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রসূল ﷺ †ক কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট অকল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম এই ভয়ে যে, পরে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এ কল্যাণ প্রদান করলেন। এ কল্যাণের পরেও কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আমি বললাম, ঐ অকল্যাণের পর আবার কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তা ধুম্রতা আছে। আমি বললাম, কী সে ধুম্রতা? তিনি বললেন, তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হিদায়াতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হিদায়াত খুঁজবে। দেখবে তাদের মধ্যে ভাল মন্দ উভয়টাই। তখন আমি আরয করলাম, এ কল্যাণের পর কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের বর্ণ হবে আমাদেরইমত এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কী করতে বলেন? তিনি বলেন, তোমরা মুসলিমদের জামাআত ও ইমামের সাথে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামাআত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তা হলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আকঁড়ে থাক এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।
(মুসলিমঃ ৪৬৩১)
সুতরাং সাবধান! সমস্ত বিচ্ছিন্ন দল থেকে সাবধান!! নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী মুসলিম পরিচয়ে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করুন এবং মুসলিম জামায়াত বা সাহাবীদের মত জামায়াত পেলে সেই জামায়াতকে আকঁড়ে ধরুন নতুবা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তাওহীদ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরুন, শিরক-বিদআতকে বর্জন করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা জানার বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন!
রসূল ﷺ সকালে ও বিকালে যে যিকিরসমূহ পাঠ করতেন সেখানেও বেশ কিছু যিকিরে মুসলিম হবার, থাকার অভিপ্রায় দেখা যায়। যেমন :
أَصْبَحْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَسُنَّةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا ‐ وَمَا كَانَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ
আমরা সকাল করলাম ইসলামের ফিতরাতের উপর, একনিষ্ঠ কালিমার উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের উপর এবং আমাদের একনিষ্ঠ মুসলিম পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর আদর্শের উপর। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৪৪; দারেমী, হা/২৭৪৪
রসূল ﷺ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ৩ বার করে এবং প্রত্যেক আযানের পর ১ বার করে পাঠ করতেনঃ
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
আল্লাহকে রব ও ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ ﷺ †ক নাবী হিসেবে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।
(আবু দাউদ ১৫৩১, তিরমিযী ৩৩৮৯, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদঃ ১৮৯৬৭)
সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন ও মুহাম্মাদ ﷺ কে নাবী/রসূল (আদর্শ) হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ আমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান নাযিল করেছেন, পরিপূর্ণ দ্বীন মনোনীত করেছেন এবং রসূল ﷺ দ্বীনের সকল বিষয়ে আমল ও কথার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে দেখিয়ে গেছেন ও বর্ণনা করেছেন। তাই অন্য সকল মতবাদ, ইজম ও মাযহাব পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলো আগেও যেমন প্রয়োজন ছিল না, এখনও তেমনি প্রয়োজন নেই। কুরআন ও সহীহ হাদীসেই সবকিছু স্পষ্ট আছে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করার ও কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন। আমিন!
আমরা কুরআন-সুন্নাহ থেকে জানলাম যে, আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমাদের দ্বীন হলো ইসলাম আর আমাদের রসূল হলেন মুহাম্মাদ ﷺ। আল্লাহ ও রসূলের পক্ষ থেকে কুরআন ও হাদীসে আমাদের যে পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো মুসলিম। শুধু আমাদের নয় বরং যুগে যুগে যত নাবী ও রসূল এসেছেন তাদের সবার দ্বীন ছিল ইসলাম আর সকলের পরিচয় ছিল মুসলিম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের রব, দ্বীন, রসূল ও পরিচয় এক হবার পরেও আজ আমরা পরিচয়, দল, মত, পথ, ইজম ও মাযহাবের দিক থেকে বহু ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু বাস্তবে আমরা সবাই দাবী করছি আমাদের রব হলেন আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমরা এটাও দাবী করছি ইসলাম আমাদের দ্বীন যা আল্লাহর মনোনীত ও পরিপূর্ণ দ্বীন এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রসূল, আমাদের একমাত্র আদর্শ। আর আমাদের পরিচয় হলো মুসলিম। তা ছাড়া আমাদের কিতাব এক, কিবলা এক, লক্ষ্য ও উদ্দেশ এক। তাহলে আমাদের আকীদা ও আমল কেন ভিন্ন হবে? কুরআন আমাদের পথ প্রদর্শক, সুন্নাহ আমাদের চলার পথ, বায়তুল্লাহ (কাবা) আমাদের কিবলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অফুরন্ত নিয়ামত ভরা জান্নাত আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সুতরাং আমাদের আকীদা ও আমল এক হতেই হবে। আমরা কুরআন-হাদীস গভীরভাবে অধ্যয়ন করে আর বাস্তবতা মিলিয়ে দেখেছি যে, মুসলিমরা আজ কুরআন-সুন্নাহ ছেড়ে দেওয়াতে বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক রসূলের আদর্শ বাদ দিয়ে কেউ ব্যক্তির আদর্শ, কেউ দলের আদর্শ, কেউ পীরের আদর্শ, কেউ মুরববী-বুযুর্গের আদর্শ, কেউ আলেম-ওলামাদের আদর্শ, কেউ বাপ-দাদার আদর্শ আঁকড়ে ধরেছে। মোট কথা বিভিন্ন জন বিভিন্ন আদর্শ অনুসরণ করার ফলে পুরো মুসলিম জাতি আজ ক্ষতিগ্রস্থ, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিশ্ব মানবতা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দুনিয়ার জীবন, ক্ষতিগ্রস্থ হবে আখেরাতের জীবন। আজ সারা বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকায় অমুসলিমদের চেয়ে মুসলিমরাই বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ ইসলাম যতদিন প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিন মুসলিমসহ অমুসলিমরাও সুখে-শান্তিতে বসবাস করত। এটাই হলো শ্বাশত বিধান। আল্লাহর দ্বীন ইসলাম যখন প্রতিষ্ঠিত থাকবে তখন সবাই শান্তিতে থাকতে পারবে আর আল্লাহর বিধান যখন লংঘিত হবে তখন সবাই অশান্তিতে থাকবে। এ বিষয়ে ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘‘কিতাবুল ইলম’’ এর মধ্যে মুহতারাম আবদুর রহমান ভাই আরো সুন্দরভাবে সমাধানগুলো তুলে ধরেছেন। আবার অন্যরা যদি এ বিষয়ে এগিয়ে না আসে তবে যিনি আখিরাতে অন্তত জান্নাত পেতে চান তার করণীয় বর্জনীয় সম্পর্কে মুহতারাম আবদুর রহমান ভাই ‘‘কিয়ামতের পূর্বাভাস ও ফেতনার যুগে করণীয়’’ বইতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। আগ্রহী মুসলিম ভাই-বোনদেরকে কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে অধ্যয়নের পাশাপাশি এই দুটি কিতাবসহ ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কিতাব, অন্যান্য নির্ভরযোগ্য প্রকাশনীর কিতাব, নির্ভরযোগ্য ওয়েব সাইট যেমন www.islamhouse.com, www.themessagecanada.com ইত্যাদি থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধ ও বইগুলো সাধ্যমত অধ্যয়ন করতে অনুরোধ করছি।
আমাদের রব এক, দ্বীন এক, রসূল এক, কিতাব এক, কিবলা এক, আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি কেন ভিন্ন হবে? আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি এক হতেই হবে। কেননা তার উৎস এক আর আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও এক (আল্লাহর সন্তুষ্টি, জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্তি এবং অফুরন্ত নিয়ামত ভরা জান্নাত)। ২০১৬ সালের জিলহজ্জ মাসের প্রথম জুমার খুতবায় বায়তুল্লাহর (কাবার) খতিব উত্তেজিত অবস্থায় অত্যন্ত আবেগঘন ভাষায় (ওয়াহেদ রব, ওয়াহেদ দ্বীন, ওয়াহেদ রসূল, ওয়াহেদ কিতাব, ওয়াহেদ কিবলা) একথাগুলো বার বার বলছিলেন যা আজও আমার কানে ভাসে। আমরা এক আল্লাহর বান্দা, এক রসূলের উম্মত, একই শরীয়তের অনুসারী, তাহলে আমরা কেন দলে দলে বিভক্ত? এর পরিণতিই বা কি? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলেন,
وَمَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَاخْتَلَفُوْاؕ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيْمَا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
আর মানুষ তো এক উম্মতই ছিল, পরে তারা বিভক্ত হয়ে পড়ল, আর তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি কথা ঘোষিত না হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত, যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করে। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ১৯)
وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ مُبَوَّاَ صِدْقٍ وَّرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِۚ فَمَا اخْتَلَفُوْا حَتّٰى جَآءَهُمُ الْعِلْمُؕ اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
আর অবশ্যই আমি বানী ইসরাঈলকে উত্তম বাসভূমিতে আবাস দিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দিলাম। অতঃপর তারা মতবিরোধ করেনি, যতক্ষণ না তাদের নিকট জ্ঞান এল। নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে ফয়সালা করবেন যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করত। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৯৩)
اِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِؕ وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
শনিবার তো তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যারা তাতে মতবিরোধ করেছে। আর নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন, যাতে তারা মতভেদ করত। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১২৪)
اِنَّ هٰذِه ۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةًؗ وَّاَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْنِ (৯২) وَتَقَطَّعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْؕ كُلٌّ اِلَيْنَا رَاجِعُوْنَ (৯৩) فَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِه ۚ وَاِنَّا لَهٗ كَاتِبُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সকলেই আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। সুতরাং যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করে তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আর আমি তো তা লিখে রাখি। (সূরা ২১/আম্বিয়াঃ ৯২-৯৪)
وَاِنَّ هٰذِه ۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّاَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ (৫২) فَتَقَطَّعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًاؕ كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
আর নিশ্চয় তোমাদের এই জাতিতো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর। কিন্তু লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই উৎফুল্ল। (সূরা ২৩/মুমিনুনঃ ৫২-৫৩)
اِنَّ اللهَ هُوَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ (৬৪) فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই আমার রব ও তোমাদের রব। অতএব, তাঁর ইবাদত কর, এটিই সরল পথ। অতঃপর তাদের মধ্যকার কতগুলি দল মতভেদ করেছিল। সুতরাং যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের দুর্ভোগ!
(সূরা ৪৩/যুখরুফঃ ৬৪-৬৫)
দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়ার কি পরিণতি হতে পারে নিজেই ভেবে দেখুন। নেককাজের দশগুণ পুরস্কার, পাপের সমানুপাতিক শাস্তি, কুরআন ও সহীহ হাদীস তথা ওহীর মাধ্যমে সরল পথে হিদায়াত, ইব্রাহীম (আঃ) নিষ্ঠার প্রশংসা ও আদর্শ এবং জীবনের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করার, শিরকমুক্ত বিশুদ্ধ তাওহীদকে আঁকড়ে ধরার ও খালেস ইবাদতের আহবান এবং মুসলিম হবার জন্য যে নির্দেশ মহান আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন তা এই কয়টি আয়াত থেকে যদি বুঝতে না পারেন তবে হয়ত আপনাকে আফসোসই করতে হবে। আয়াতকয়টি কয়েকবার পড়ুন, অর্থগুলো নিয়ে কয়েকবার ভাবুন, তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা পড়ুন, আল্লাহ আপনাদের নিষ্ঠার উপর ভিত্তি করে চিন্তার দিগন্ত খুলে দিতেও পারেন ইন-শা-আল্লাহ।
সুতরাং আমাদেরকে এক হতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? আমরা সবাই সমস্ত দল, মত, পথ পরিত্যাগ করে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানলেই এবং ওহীর ভিত্তিতে প্রাপ্ত সীরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথে চললেই আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি এক হবে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে রব, দ্বীন, রসূল, কিতাব ও পরিচয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে সরল পথে চলার এবং সমস্ত শিরক-বিদআত পরিত্যাগ করে রসূল ﷺ এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ইবাদত করার জন্য তৌফিক দান করুন, আমিন!
وَمَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَاخْتَلَفُوْاؕ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيْمَا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
আর মানুষ তো এক উম্মতই ছিল, পরে তারা বিভক্ত হয়ে পড়ল, আর তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি কথা ঘোষিত না হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত, যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করে। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ১৯)
وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ مُبَوَّاَ صِدْقٍ وَّرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِۚ فَمَا اخْتَلَفُوْا حَتّٰى جَآءَهُمُ الْعِلْمُؕ اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
আর অবশ্যই আমি বানী ইসরাঈলকে উত্তম বাসভূমিতে আবাস দিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দিলাম। অতঃপর তারা মতবিরোধ করেনি, যতক্ষণ না তাদের নিকট জ্ঞান এল। নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে ফয়সালা করবেন যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করত। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ৯৩)
اِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِؕ وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
শনিবার তো তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যারা তাতে মতবিরোধ করেছে। আর নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন, যাতে তারা মতভেদ করত। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১২৪)
اِنَّ هٰذِه ۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةًؗ وَّاَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْنِ (৯২) وَتَقَطَّعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْؕ كُلٌّ اِلَيْنَا رَاجِعُوْنَ (৯৩) فَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِه ۚ وَاِنَّا لَهٗ كَاتِبُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সকলেই আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। সুতরাং যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করে তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আর আমি তো তা লিখে রাখি। (সূরা ২১/আম্বিয়াঃ ৯২-৯৪)
وَاِنَّ هٰذِه ۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّاَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ (৫২) فَتَقَطَّعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًاؕ كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
আর নিশ্চয় তোমাদের এই জাতিতো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর। কিন্তু লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই উৎফুল্ল। (সূরা ২৩/মুমিনুনঃ ৫২-৫৩)
اِنَّ اللهَ هُوَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ (৬৪) فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই আমার রব ও তোমাদের রব। অতএব, তাঁর ইবাদত কর, এটিই সরল পথ। অতঃপর তাদের মধ্যকার কতগুলি দল মতভেদ করেছিল। সুতরাং যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের দুর্ভোগ!
(সূরা ৪৩/যুখরুফঃ ৬৪-৬৫)
দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়ার কি পরিণতি হতে পারে নিজেই ভেবে দেখুন। নেককাজের দশগুণ পুরস্কার, পাপের সমানুপাতিক শাস্তি, কুরআন ও সহীহ হাদীস তথা ওহীর মাধ্যমে সরল পথে হিদায়াত, ইব্রাহীম (আঃ) নিষ্ঠার প্রশংসা ও আদর্শ এবং জীবনের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করার, শিরকমুক্ত বিশুদ্ধ তাওহীদকে আঁকড়ে ধরার ও খালেস ইবাদতের আহবান এবং মুসলিম হবার জন্য যে নির্দেশ মহান আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন তা এই কয়টি আয়াত থেকে যদি বুঝতে না পারেন তবে হয়ত আপনাকে আফসোসই করতে হবে। আয়াতকয়টি কয়েকবার পড়ুন, অর্থগুলো নিয়ে কয়েকবার ভাবুন, তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা পড়ুন, আল্লাহ আপনাদের নিষ্ঠার উপর ভিত্তি করে চিন্তার দিগন্ত খুলে দিতেও পারেন ইন-শা-আল্লাহ।
সুতরাং আমাদেরকে এক হতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? আমরা সবাই সমস্ত দল, মত, পথ পরিত্যাগ করে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানলেই এবং ওহীর ভিত্তিতে প্রাপ্ত সীরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথে চললেই আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি এক হবে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে রব, দ্বীন, রসূল, কিতাব ও পরিচয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে সরল পথে চলার এবং সমস্ত শিরক-বিদআত পরিত্যাগ করে রসূল ﷺ এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ইবাদত করার জন্য তৌফিক দান করুন, আমিন!
মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের মাধ্যমে বার বার নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দলে দলে বিভক্ত হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِه ۤ اِخْوَانًاۚ وَّكُنْتُمْ عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়োনা। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনাকরেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১০৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর রজ্জু বলতে ওহী তথা কুরআন-সুন্নাহকে আর দৃঢ়ভাবে ধারণ বলতে কুরআন-হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করে সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর নিয়ামত বলতে ওহীর দ্বারা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন ইসলাম) ও রসূল ﷺ †ক পাঠিয়ে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও আমলের পদ্ধতি দেখিয়ে দেয়াকে বুঝিয়েছেন এবং আয়াতের শেষ অংশে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য সবকিছু বিস্তারিতভাবে (কুরআন-হাদীসে) বর্ণনা করেছেন যাতে আমরা দিক-বিদিক ছুটোছুটি না করে কুরআন-হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করি এবং কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে সঠিক পথে চলতে পারি। আল্লাহ আরো বলেন,
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরেও আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১০৫)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
আর নিশ্চয় এটাই সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৫৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার কোন দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬০)
وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ (৩১) مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো নাযারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে ও যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ দিয়ে আনন্দিত। (সূরা ৩০/রুমঃ ৩২)
এই আয়াত আল্লাহ তা‘আলা যারা এক অখন্ড আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে বিভক্ত করে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আকীদা আমল থাকারা পরেও, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বা রসূল ﷺ ও তার সাহাবীদের মতাদর্শের বিরোধী থাকার পরেও দলের, ব্যক্তির মতাদর্শ নিয়ে সন্তুষ্ট আছে তাদেরকে তিরস্কার করে প্রকৃত দ্বীন ইসলামের অনুসারী তথা সত্যিকারের মুসলিমদেরকে বিভিন্ন দল, মত, পথ, ইজম, মাযহাবে বিভক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত হতে নিষেধ করেছেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর দেখুন।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ نُوْرُهُمْ يَسْعٰى بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَاۤ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নাবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। (সূরা ৬৬/তাহরিমঃ ৮)
রসূল ﷺ ও উম্মতের জন্য এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন যা সহীহ হাদীসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। এখানে তার কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ উল্লেখ্য করা হলোঃ
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তিনটি গুন যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাধ আস্বাদন করতে পারে- (১) আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা, এবং (৩) কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপছন্দ করা। (বুখারীঃ ১৫, ২১, ৬০৪১, ৬৯৪১; মুসলিমঃ ৪৩)
আবু হুরাইরা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশ (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও।
(বুখারীঃ ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫)
নুমান ইবনু বশীর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ †ক বলতে শুনেছি, ‘‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।
(বুখারীঃ ৫২, ২০৫১, মুসলিমঃ ১৫৯৯)
আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূল ﷺ বলেছেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(বুখারীঃ ৭২৮০)
যারা আল্লাহর রসূলের সহীহ হাদীসকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পরিত্যাগ করে বিভিন্ন দল, মত ও পথের অনুসরন করে তারা আল্লাহর রসূলের অবাধ্য।
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। (বুখারীঃ ৬৯, ৬১২৫, মুসলিমঃ ১৭৩৪)
আলী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে। (বুখারীঃ ১০৬, মুসলিম মুকাদ্দামাঃ হাঃ ২)।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা যুবায়র (রদিঃ)কে বললাম, আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মত আল্লাহর রসূল ﷺ এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন, জেনে রাখ, আমি তাঁর থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নিল।
(বুখারীঃ ১০৭, মুসলিম মুকাদ্দামা, হাঃ ৩)
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নাবী ﷺ বলেছেন, যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
(বুখারী ১০৮)।
সুতরাং জাল/জয়ীফ হাদীস ও ইসলামের নামে মুরববী, বুযুর্গ, পীর-মুর্শিদ, ওলী-আওলীয়াদের নামে বানানো কিস্সা, স্বপ্নের কাহিনী ও কারগুজারী বর্ণনা থেকে সাবধান! কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করুন। সেই অনুযায়ী আমল করুন ও দাওয়াত দিন।
উমর (রদিঃ) বলেন, তোমরা নেতা হবার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) বলেন, আর নেতা বানিয়ে দেয়ার পরও, কেননা নাবী ﷺ এর সাহাবীগণ বৃদ্ধ বয়সেও ইলম অর্জন করেছেন। (সহীহুল বুখারী, ৩/১৫ অধ্যায়ঃ ইলম ও হিকমাহ এর ক্ষেত্রে সমতুল্য হবার উৎসাহ)
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِه ۤ اِخْوَانًاۚ وَّكُنْتُمْ عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়োনা। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনাকরেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১০৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর রজ্জু বলতে ওহী তথা কুরআন-সুন্নাহকে আর দৃঢ়ভাবে ধারণ বলতে কুরআন-হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করে সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর নিয়ামত বলতে ওহীর দ্বারা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন ইসলাম) ও রসূল ﷺ †ক পাঠিয়ে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও আমলের পদ্ধতি দেখিয়ে দেয়াকে বুঝিয়েছেন এবং আয়াতের শেষ অংশে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য সবকিছু বিস্তারিতভাবে (কুরআন-হাদীসে) বর্ণনা করেছেন যাতে আমরা দিক-বিদিক ছুটোছুটি না করে কুরআন-হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করি এবং কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে সঠিক পথে চলতে পারি। আল্লাহ আরো বলেন,
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরেও আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ১০৫)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
আর নিশ্চয় এটাই সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৫৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার কোন দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬০)
وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ (৩১) مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো নাযারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে ও যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ দিয়ে আনন্দিত। (সূরা ৩০/রুমঃ ৩২)
এই আয়াত আল্লাহ তা‘আলা যারা এক অখন্ড আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে বিভক্ত করে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আকীদা আমল থাকারা পরেও, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বা রসূল ﷺ ও তার সাহাবীদের মতাদর্শের বিরোধী থাকার পরেও দলের, ব্যক্তির মতাদর্শ নিয়ে সন্তুষ্ট আছে তাদেরকে তিরস্কার করে প্রকৃত দ্বীন ইসলামের অনুসারী তথা সত্যিকারের মুসলিমদেরকে বিভিন্ন দল, মত, পথ, ইজম, মাযহাবে বিভক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত হতে নিষেধ করেছেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর দেখুন।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ نُوْرُهُمْ يَسْعٰى بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَاۤ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নাবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। (সূরা ৬৬/তাহরিমঃ ৮)
রসূল ﷺ ও উম্মতের জন্য এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন যা সহীহ হাদীসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। এখানে তার কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ উল্লেখ্য করা হলোঃ
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তিনটি গুন যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাধ আস্বাদন করতে পারে- (১) আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা, এবং (৩) কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপছন্দ করা। (বুখারীঃ ১৫, ২১, ৬০৪১, ৬৯৪১; মুসলিমঃ ৪৩)
আবু হুরাইরা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশ (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও।
(বুখারীঃ ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫)
নুমান ইবনু বশীর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ †ক বলতে শুনেছি, ‘‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।
(বুখারীঃ ৫২, ২০৫১, মুসলিমঃ ১৫৯৯)
আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূল ﷺ বলেছেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(বুখারীঃ ৭২৮০)
যারা আল্লাহর রসূলের সহীহ হাদীসকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পরিত্যাগ করে বিভিন্ন দল, মত ও পথের অনুসরন করে তারা আল্লাহর রসূলের অবাধ্য।
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। (বুখারীঃ ৬৯, ৬১২৫, মুসলিমঃ ১৭৩৪)
আলী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে। (বুখারীঃ ১০৬, মুসলিম মুকাদ্দামাঃ হাঃ ২)।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা যুবায়র (রদিঃ)কে বললাম, আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মত আল্লাহর রসূল ﷺ এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন, জেনে রাখ, আমি তাঁর থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নিল।
(বুখারীঃ ১০৭, মুসলিম মুকাদ্দামা, হাঃ ৩)
আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নাবী ﷺ বলেছেন, যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
(বুখারী ১০৮)।
সুতরাং জাল/জয়ীফ হাদীস ও ইসলামের নামে মুরববী, বুযুর্গ, পীর-মুর্শিদ, ওলী-আওলীয়াদের নামে বানানো কিস্সা, স্বপ্নের কাহিনী ও কারগুজারী বর্ণনা থেকে সাবধান! কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করুন। সেই অনুযায়ী আমল করুন ও দাওয়াত দিন।
উমর (রদিঃ) বলেন, তোমরা নেতা হবার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) বলেন, আর নেতা বানিয়ে দেয়ার পরও, কেননা নাবী ﷺ এর সাহাবীগণ বৃদ্ধ বয়সেও ইলম অর্জন করেছেন। (সহীহুল বুখারী, ৩/১৫ অধ্যায়ঃ ইলম ও হিকমাহ এর ক্ষেত্রে সমতুল্য হবার উৎসাহ)
১। কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা।
২। তাওহীদ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক ও বিদআতকে পরিত্যাগ করা।
৩। অন্ধভাবে দল মত ইজম মাযহাব আলেম-ওলামাদেরকে প্রাধান্য না দিয়ে কুরআন-সুন্নাহকে প্রাধান্য দেয়া।
৪। ছোট-খাট বিষয়গুরুত্ব না দিয়ে শিরক-বিদয়াতের মত বড় বড় বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া।
৫। ব্যক্তি, সমাজ, অধিকাংশ লোক, প্রচলিত পদ্ধতিকে প্রাধান্য না দিয়ে কুরআন-হাদীসের দলিলকে প্রাধান্য দেয়া।
৬। আবেগ পরিহার করে বিবেককে কাজে লাগানো। রসূল ﷺ এর সুন্নাহ কে সহীহ হাদীস থেকে জানার চেষ্টা করা।
৭। কুরআন ও সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট দলিল পেলে অন্য সবকিছু পরিহার করা।
৮। তর্ক-বির্তক, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দরভাবে আলোচনার মাধ্যমে কুরআন হাদীস থেকে সমাধান বের করার চেষ্টা করা।
৯। মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের দিকে ফিরে আসা এবং কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বিষয়ে মতবিরোধ পরিহার করা।
১০। ইসলামের ব্যাপারে যাচাই বাচাই না করে কোন কথা না বলা। জাল-যয়ীফ হাদীস, দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে বিভিন্ন কিস্সা কাহিনী, মুরববী, বুযুর্গ, পীর, আলেম-ওলামাদের দোহাই দিয়ে কথা বলা পরিহার করা।
২। তাওহীদ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক ও বিদআতকে পরিত্যাগ করা।
৩। অন্ধভাবে দল মত ইজম মাযহাব আলেম-ওলামাদেরকে প্রাধান্য না দিয়ে কুরআন-সুন্নাহকে প্রাধান্য দেয়া।
৪। ছোট-খাট বিষয়গুরুত্ব না দিয়ে শিরক-বিদয়াতের মত বড় বড় বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া।
৫। ব্যক্তি, সমাজ, অধিকাংশ লোক, প্রচলিত পদ্ধতিকে প্রাধান্য না দিয়ে কুরআন-হাদীসের দলিলকে প্রাধান্য দেয়া।
৬। আবেগ পরিহার করে বিবেককে কাজে লাগানো। রসূল ﷺ এর সুন্নাহ কে সহীহ হাদীস থেকে জানার চেষ্টা করা।
৭। কুরআন ও সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট দলিল পেলে অন্য সবকিছু পরিহার করা।
৮। তর্ক-বির্তক, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দরভাবে আলোচনার মাধ্যমে কুরআন হাদীস থেকে সমাধান বের করার চেষ্টা করা।
৯। মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের দিকে ফিরে আসা এবং কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বিষয়ে মতবিরোধ পরিহার করা।
১০। ইসলামের ব্যাপারে যাচাই বাচাই না করে কোন কথা না বলা। জাল-যয়ীফ হাদীস, দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে বিভিন্ন কিস্সা কাহিনী, মুরববী, বুযুর্গ, পীর, আলেম-ওলামাদের দোহাই দিয়ে কথা বলা পরিহার করা।
১। কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করুন। প্রতিদিন সকালে, বিকালে ও রাতে কিছু সময়ের জন্য হলেও বুঝে বুঝে কুরআন ও হাদীসের কিতাব পড়ুন। দিন-রাতের অন্যান্য অবসর সময়ে কুরআন-হাদীসের দলিল ভিত্তিক কিতাব পড়ুন। এতে আপনার জ্ঞানও বাড়বে, নেকীও হবে। ঈমান-আমল শুদ্ধ হবে, জান্নাতের পথে চলা সহজ হবে।
২। দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিন। কেননা দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী আখেরাত চিরস্থায়ী। প্রতিমাসেই ১/২ করে নির্ভরযোগ্য কিতাব ক্রয় করুন। এটা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে থেকে যাবে। আপনার সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও পরবর্তী বংশধরের যারাই এই কিতাবগুলো পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে ও সঠিক পথে চলবে তাদের সওয়াবও আপনি কবরে শুয়ে শুয়েই পাবেন এবং তাদের দাওয়াতের দ্বারা যারা হিদায়াত পাবে তাদের নেকীও কিয়ামত পর্যন্ত আপনার আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।
৩। আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার দ্বীন, মুহাম্মাদ ﷺ আমার রসূল, মুসলিম আমার পরিচয়, কুরআন আমার পথ প্রদর্শক, সুন্নাহ আমার চলার পথ এই নীতিতে জীবন গঠন করার চেষ্টা করুন। আমরা এক আল্লাহর বান্দা, এক দ্বীন ইসলামের অনুসারী, এক রসূলের উম্মত, এক কিতাব, এক কিবলা ও এক সুন্নাহর অনুসারী। সুতরাং আমাদের মাযহাব (চলার পথ) একটাই তা হলো ইসলাম, আর আমাদের পরিচয় হলো মুসলিম। অন্য সকল দল-মত-পথ, ইজম, মাযহাব পরিত্যাগ করুন।
৪। যারা কুরআন-হাদীস নিজে পড়ে, সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে, অন্যদেরকে কুরআন-হাদীস পড়তে উৎসাহিত করে তাদের সাথীত্ব গ্রহণ করুন। যারা কুরআন-হাদীস পড়তে নিষেধ করে, নিরুৎসাহিত করে তাদেরকে ভদ্রভাবে পরিহার করুন। কোন বিশেষ প্রকাশনীর বা বিশেষ ব্যক্তির সংকলিত কিতাব পড়তে না চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত অনুবাদসহ কুরআন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এসব কিতাব সংগ্রহ করে পড়ুন। আরবী পড়তে, বুঝতে না পারলে বাংলা বুঝে বুঝে পড়ুন। তথাপি কিছু জ্ঞানতো অর্জন করতে পারবেন। আপনার নিষ্ঠা ও চেষ্টা কবুল করেই আল্লাহ আপনাকে সঠিক বুঝ দিতে পারেন। পাশাপাশি আরবী শিখার চেষ্টা করুন, তাতেও অনেক নেকী হবে।
৫। নিজের জ্ঞান নিজে অর্জন করুন, নিজের আমল নিজে করুন। অন্যের উপর নির্ভর করবেন না। কারোর জন্য আমল বাকী রাখবেন না। মনে রাখবেন, আপনার কবরে আপনাকেই যেতে হবে, আপনার সওয়াল জওয়াব আপনাকেই দিতে হবে, আপনার হিসাবও আপনাকে দিতে হবে। আমার মরার পর আমার সন্তানেরা হুজুরের মাধ্যমে খতম পড়িয়ে আমাকে মাফ করিয়ে দিবে এই চিন্তা বাদ দিন। সন্তানকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন শিখিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে সন্তানরা হুজুরের মাধ্যমে নয়, তারা নিজেরাই যেন শিরক-বিদআত থেকে মুক্ত থেকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক নেক আমল করে আপনার জন্য দোয়া করতে পারে।
৬। কুরআন হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য কাউকে নিরুৎসাহিত করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ভ্রান্ত পথে চলার জন্য কুরআন-হাদীস নাযিল করেননি। একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ কুরআন-হাদীস পাঠ করছে, ইসলামী কিতাবাদি পাঠ করছে তাকে বরং উৎসাহিত করুন।
৭। দল-মত-পথ মুসলিমদেরকে অনেক ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। তাই সবকিছু পরিহার করে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসুন। কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরুন। নিজেও দলিল নির্ভর আমল করুন। অন্যকেও দাওয়াত দিন। কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কেউ দলিল দিতে পারলে মেনে নিন। সেক্ষেত্রে নিজের ভাল লাগাসহ সকল মতামত পরিহার করুন।
৮। মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের দলিল চান, আপনারটাও বলুন, সমজোতার চেষ্টা করুন, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। অন্যেরটা অধিকতর সহীহ হলে মেনে নিন, আপনারটা দূর্বল হলে ছেড়ে দিন। এটাতো আপনি আল্লাহর খুশির জন্য করবেন। এতে আপনি অনেক সওয়াব পাবেন। সঠিক পথে চলতে সহজ হবে। আর আপনারটা সঠিক হলে আপনি বুঝানোর পরেও না মানলে তাকে তাঁর রাস্তায় ছেড়ে দিন, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আপনার দায়িত্ব শেষ।
৯। বহুদিন থেকে চলে আসবে, অনেক লোক করছে, আলেম ওলামারা করছে, বাপ-দাদারা করছে এগুলো কোন দলিল নয়। দ্বীনের ক্ষেত্রে দলিল হলো কুরআন-সুন্নাহ। ওমর (রদিঃ) এর স্ত্রী তাঁর খেলাফতকালে তিনি অপছন্দ করার পরেও রসূল ﷺ এর সুন্নাতের উপর আমল করেছেন মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করেছেন। তার ছেলেকে অন্য সাহাবী (রদিঃ) ওমর (রদিঃ) এর মতামত মনে করিয়ে দেয়ার পরেও হজ্জ্বে তামাত্তু করেছেন এবং অনেক সাহাবী ওমর (রদিঃ) এর মতের বিরুদ্ধে রসূল ﷺ এর আমল ও মতামত তুলে ধরলে ওমর (রদিঃ) মেনে নিয়েছেন হাদীসে এর অনেক বর্ণনা আছে। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে রসূল ﷺ এর সুন্নাহকে প্রাধান্য দিন।
১০। একাকী নির্জনে সরাসরি একমাত্র আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য, সঠিক পথে চলার জন্য দোয়া করুন। সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। নেকীও হবে না, দোয়াও কবুল হবে না বরং গুনাহ হবে। সুন্নাহ অনুসরণ করুন। প্রত্যেক আযানের ও ইকামতের মাঝখানে দোয়া কবুল হয়, শেষ রাতে দোয়া কবুল হয়। এই সময়গুলোতে একা একা নিজের জন্য, মাতাপিতার জন্য, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, আমাদের জন্য এবং সকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করুন। দোয়া সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ‘‘দৈনন্দিন সহীহ দু’আ ও কুরআন-সুন্নার চিকিৎসা’’ কিতাবটি সংগ্রহ করুন।
২। দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিন। কেননা দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী আখেরাত চিরস্থায়ী। প্রতিমাসেই ১/২ করে নির্ভরযোগ্য কিতাব ক্রয় করুন। এটা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে থেকে যাবে। আপনার সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও পরবর্তী বংশধরের যারাই এই কিতাবগুলো পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে ও সঠিক পথে চলবে তাদের সওয়াবও আপনি কবরে শুয়ে শুয়েই পাবেন এবং তাদের দাওয়াতের দ্বারা যারা হিদায়াত পাবে তাদের নেকীও কিয়ামত পর্যন্ত আপনার আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।
৩। আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার দ্বীন, মুহাম্মাদ ﷺ আমার রসূল, মুসলিম আমার পরিচয়, কুরআন আমার পথ প্রদর্শক, সুন্নাহ আমার চলার পথ এই নীতিতে জীবন গঠন করার চেষ্টা করুন। আমরা এক আল্লাহর বান্দা, এক দ্বীন ইসলামের অনুসারী, এক রসূলের উম্মত, এক কিতাব, এক কিবলা ও এক সুন্নাহর অনুসারী। সুতরাং আমাদের মাযহাব (চলার পথ) একটাই তা হলো ইসলাম, আর আমাদের পরিচয় হলো মুসলিম। অন্য সকল দল-মত-পথ, ইজম, মাযহাব পরিত্যাগ করুন।
৪। যারা কুরআন-হাদীস নিজে পড়ে, সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে, অন্যদেরকে কুরআন-হাদীস পড়তে উৎসাহিত করে তাদের সাথীত্ব গ্রহণ করুন। যারা কুরআন-হাদীস পড়তে নিষেধ করে, নিরুৎসাহিত করে তাদেরকে ভদ্রভাবে পরিহার করুন। কোন বিশেষ প্রকাশনীর বা বিশেষ ব্যক্তির সংকলিত কিতাব পড়তে না চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত অনুবাদসহ কুরআন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এসব কিতাব সংগ্রহ করে পড়ুন। আরবী পড়তে, বুঝতে না পারলে বাংলা বুঝে বুঝে পড়ুন। তথাপি কিছু জ্ঞানতো অর্জন করতে পারবেন। আপনার নিষ্ঠা ও চেষ্টা কবুল করেই আল্লাহ আপনাকে সঠিক বুঝ দিতে পারেন। পাশাপাশি আরবী শিখার চেষ্টা করুন, তাতেও অনেক নেকী হবে।
৫। নিজের জ্ঞান নিজে অর্জন করুন, নিজের আমল নিজে করুন। অন্যের উপর নির্ভর করবেন না। কারোর জন্য আমল বাকী রাখবেন না। মনে রাখবেন, আপনার কবরে আপনাকেই যেতে হবে, আপনার সওয়াল জওয়াব আপনাকেই দিতে হবে, আপনার হিসাবও আপনাকে দিতে হবে। আমার মরার পর আমার সন্তানেরা হুজুরের মাধ্যমে খতম পড়িয়ে আমাকে মাফ করিয়ে দিবে এই চিন্তা বাদ দিন। সন্তানকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন শিখিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে সন্তানরা হুজুরের মাধ্যমে নয়, তারা নিজেরাই যেন শিরক-বিদআত থেকে মুক্ত থেকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক নেক আমল করে আপনার জন্য দোয়া করতে পারে।
৬। কুরআন হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য কাউকে নিরুৎসাহিত করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ভ্রান্ত পথে চলার জন্য কুরআন-হাদীস নাযিল করেননি। একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ কুরআন-হাদীস পাঠ করছে, ইসলামী কিতাবাদি পাঠ করছে তাকে বরং উৎসাহিত করুন।
৭। দল-মত-পথ মুসলিমদেরকে অনেক ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। তাই সবকিছু পরিহার করে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসুন। কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরুন। নিজেও দলিল নির্ভর আমল করুন। অন্যকেও দাওয়াত দিন। কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কেউ দলিল দিতে পারলে মেনে নিন। সেক্ষেত্রে নিজের ভাল লাগাসহ সকল মতামত পরিহার করুন।
৮। মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের দলিল চান, আপনারটাও বলুন, সমজোতার চেষ্টা করুন, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। অন্যেরটা অধিকতর সহীহ হলে মেনে নিন, আপনারটা দূর্বল হলে ছেড়ে দিন। এটাতো আপনি আল্লাহর খুশির জন্য করবেন। এতে আপনি অনেক সওয়াব পাবেন। সঠিক পথে চলতে সহজ হবে। আর আপনারটা সঠিক হলে আপনি বুঝানোর পরেও না মানলে তাকে তাঁর রাস্তায় ছেড়ে দিন, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আপনার দায়িত্ব শেষ।
৯। বহুদিন থেকে চলে আসবে, অনেক লোক করছে, আলেম ওলামারা করছে, বাপ-দাদারা করছে এগুলো কোন দলিল নয়। দ্বীনের ক্ষেত্রে দলিল হলো কুরআন-সুন্নাহ। ওমর (রদিঃ) এর স্ত্রী তাঁর খেলাফতকালে তিনি অপছন্দ করার পরেও রসূল ﷺ এর সুন্নাতের উপর আমল করেছেন মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করেছেন। তার ছেলেকে অন্য সাহাবী (রদিঃ) ওমর (রদিঃ) এর মতামত মনে করিয়ে দেয়ার পরেও হজ্জ্বে তামাত্তু করেছেন এবং অনেক সাহাবী ওমর (রদিঃ) এর মতের বিরুদ্ধে রসূল ﷺ এর আমল ও মতামত তুলে ধরলে ওমর (রদিঃ) মেনে নিয়েছেন হাদীসে এর অনেক বর্ণনা আছে। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে রসূল ﷺ এর সুন্নাহকে প্রাধান্য দিন।
১০। একাকী নির্জনে সরাসরি একমাত্র আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য, সঠিক পথে চলার জন্য দোয়া করুন। সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। নেকীও হবে না, দোয়াও কবুল হবে না বরং গুনাহ হবে। সুন্নাহ অনুসরণ করুন। প্রত্যেক আযানের ও ইকামতের মাঝখানে দোয়া কবুল হয়, শেষ রাতে দোয়া কবুল হয়। এই সময়গুলোতে একা একা নিজের জন্য, মাতাপিতার জন্য, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, আমাদের জন্য এবং সকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করুন। দোয়া সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ‘‘দৈনন্দিন সহীহ দু’আ ও কুরআন-সুন্নার চিকিৎসা’’ কিতাবটি সংগ্রহ করুন।
আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, অতীত জীবনে অনেক ভুলের মধ্যে ছিলাম। মহান আল্লাহ অনেক দয়া ও করুণা করে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ধাবিত করেছেন। বিগত কয়েক বছর থেকে কুরআন-সুন্নাহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব পাঠ করে এবং কয়েকজন আলেমের সোহবতে থেকে তাদের উপদেশ ও পরামর্শে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি মাত্র। সেজন্য আমার পক্ষে ভুল হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক। কিতাবটিতে কোন ভুল পেলে জানাবেন। দলিল প্রমান দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল। উপদেশ ও পরামর্শ দেবার জন্য অগ্রীম মুবারকবাদ। আপনার পড়া শেষ হলে কিতাবটি অন্যকে পড়তে দিন। পারলে সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে দাওয়াতী কাজের জন্য সাধ্যমত কিতাবটি ক্রয় করে উপহার দিন। এতে তারাও কবরের সওয়াল জওয়াব সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে আর আপনিও দাওয়াতী কাজের সওয়াব পেয়ে যাবেন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক উৎস থেকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে সঠিক পথে চলার ও সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন!
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
হে আমাদের রব আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত দান কর এবং আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। (সূরা ১৮/কাহাফঃ ১০)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরগুলোকে আর বাঁকা করে দিবেন না আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন, নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮)
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ۫ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, আপনিই আমার অভিভাবক দুনিয়া ও আখিরাতে, আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিবেন আর আমাকে নেককারদের অর্ন্তভূক্ত করে দিবেন। (সূরা ১২/ইউসুফঃ ১০১)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
হে আমাদের রব আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত দান কর এবং আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। (সূরা ১৮/কাহাফঃ ১০)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরগুলোকে আর বাঁকা করে দিবেন না আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন, নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৮)
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ۫ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, আপনিই আমার অভিভাবক দুনিয়া ও আখিরাতে, আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিবেন আর আমাকে নেককারদের অর্ন্তভূক্ত করে দিবেন। (সূরা ১২/ইউসুফঃ ১০১)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন