মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আমরা ইতঃমধ্যে ওহীর ভিত্তিতে জানতে পেরেছি আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমাদের দ্বীন হলো ইসলাম, আমাদের নাবী ও রসূল হলেন মুহাম্মাদ ﷺ, আমাদের কিতাব হলো আল কুরআন যা আমাদের আল্লাহ প্রদত্ত পথ প্রদর্শক, আমাদের কিবলা হলো বায়তুল্লাহ। তাই আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি এক হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু আমাদের রব এক, দ্বীন এক, রসূল এক, কিতাব এক, কিবলা এক তাহলে আমাদের পরিচয় ও ইবাদতের পদ্ধতি ভিন্ন হবে কেন? দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা আজ বহু দলে, বহু পরিচয়ে বিভক্ত। এক-এক দলের এক-এক পরিচয়। এমনকি আকীদা ও ইবাদতের পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। মূলত পরিচয়ের উপর ভিত্তি করেই সকলের আকীদা ও ইবাদতের পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে আছে। তাই আমাদের জানা দরকার আমাদের পথ প্রদর্শক আল কুরআন আমাদেরকে কি পরিচয় দিতে বলেছে। আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা/২ঃ১২৮)।
(এখানে ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে নিজেকে ও তার বংশধরকে মুসলিম বানানোর আবেদন করেছেন এবং ইবাদতের পদ্ধতি নিজে তৈরি না করে আল্লাহকে দেখিয়ে দিতে বলেছেন।)
আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইব্রাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুবও, হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে (ইসলামকে) মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমার পর তোমরা কার ইবাদাত করবে? তারা বলল, আমরা ইবাদাত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তাঁরই অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৩)
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নাবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁর অনুগত (মুসলিম)। (সূরা ২/বাকারাঃ১৩৬)
অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ থেকে কুফরী উপলব্দি করল, তখন বলল, কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৫২)
বল, হে আহলে কিতাব, তোমরা এমন একটা কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করব না এবং আমাদের পরস্পরের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে রব হিসাবে গ্রহণ করব না। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৬৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আহলে কিতাব তথা কিতাবের অনুসারী ইহুদী-খৃষ্টানদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করার, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করার এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রব হিসাবে না মানার আহবান জানানো হয়েছে এবং সবশেষে যারা আল্লাহর বিধান পুরোপুরি মানতে রাজী নয় তাদেরকে স্পষ্টভাবে নিজেদের পরিচয় জানিয়ে দিতে বলেছেন যে, আমরা মুসলিম।
আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা মালাইকা ও নাবীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবেন? (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ৮০)
বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর (ওহী তথা কুরআন ও সহীহ হাদীস) আর যা নাযিল হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের উপর, আর যা দেয়া হয়েছে মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নাবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযত ও যথার্থভাবে (হক আদায় করে) তাকে ভয় কর এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা ৩/আলি ইমরানঃ১০২)।
সর্বযুগের মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণী যে, আল্লাহ এখানে যারাই ঈমান এনেছে তাদেরকেই মুসলিম (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী) হবার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, আদেশ করেছেন।
আর যখন আমি হাওয়ারীগণকে (ঈসা আঃ এর অনুসারীদেরকে) এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, আমার প্রতি তোমরা ঈমান আন ও আমার রসূলের প্রতি, তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম। (সূরা ৫/আল মায়িদাঃ ১১১)।
এখানে হাওয়ারীগণ ঈমান আনার সাথে সাথে তাদের রসূল (ঈসা আঃ)কে সাক্ষী রেখে বলছে যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম।
বল, নিশ্চয় আমার রব আমাকে সোজা পথের হিদায়াত দিয়েছেন। তা সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইব্রাহীমের আদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরা ৬/আনআমঃ ১৬২)
আর তুমি আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করছ শুধু এ কারণে যে, আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন। (সূরা ৭/আরাফঃ১২৬)।
ফেরাউনের যাদুকরের মুসা (আঃ) এর মুজেজা দেখে ঈমান আনার পর পরই আল্লাহ কাছে এই প্রার্থনা করেছে যে, আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন।
অতঃপর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমিতো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে, আর আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাই।
(সূরা১০/ ইউনুসঃ ৭২)
এখানেও নুহ (আঃ)কে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম হবার আদেশ দিয়েছেন এবং তথ্যটি ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ﷺ তথা আমাদেরকেও জানিয়ে দিয়েছেন।
আর মূসা বলল, হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হও। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৮৪)
এখানেও মুসা (আঃ) তাঁর জাতির সংকট মুহূর্তে ঈমানদারদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলেছেন এবং মুসলিম বলে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। অতঃপর ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাতার বিধান না মানার, রসূলদের দাওয়াত মেনে না নেওয়ার ও রসূলদের অনুসরণ না করার পরিনতি এবং মৃত্যুর সময় ফিরআ’উনের তাওহীদের ঘোষণা ও মুসলিম হবার আকুতি তুলে ধরে বলেনঃ
আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম অতঃপর ফিরআ’উন ও তার সৈন্যবাহিনী সীমালঙ্ঘন ও শত্রুতা বশত তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বানী ইসরাঈল ঈমান এনেছে আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ১০/ইউনুসঃ৯০)।
কিন্তু তখন ফেরাউনের ঈমান ও মুসলিম হবার ঘোষণা কোন কাজে আসেনি।
অতঃপর সম্ভবত তুমি তোমার কাছে যা ওহী করা হয়েছে তার কিছু অংশ ছেড়ে দিবে এবং তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হবে এ কারণে যে, তারা বলে, কেন তার উপর ধন-ভান্ডার নাযিল হয় না অথবা তার সাথে মালাইকা আসে না? প্রকৃতপক্ষে তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র আর আল্লাহ হলেন প্রত্যেক বিষয়ের উপর তত্ত্বাবধায়ক।
অথবা তারা বলে, সে এটা (কুরআন) নিজে রচনা করেছে; বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
অতঃপর যদি তারা তোমাদের আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, অবশ্যই ইহা (কুরআন) আল্লাহর জ্ঞান অনুসারে নাযিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই। অতএব তোমরা কি মুসলিম হবে?
এখানে আল্লাহ কুরআনের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত তা জানিয়ে দিয়ে আল্লাহর তাওহীদ ও তাদেরকে মুসলিম হবার আহবান করতে বলেছেন।
ইউসুফ (আঃ)ও অন্যান্য সকল নাবীদের মত নিস্পাপ, নিস্কুলুস চরিত্রের অধিকারী ও পরীক্ষীত নাবী হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার দোয়া করতেন বলে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ্য করেছেনঃ
হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখেরাতে আপনিই আমার একমাত্র অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন ও নেককারদের সাথে মিলিত করে দিন। (সূরা ১২/ইউসুফঃ১০১)
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কাছে কিভাবে দোয়া করতে হবে তা শিখিয়েছেন। এখানে ইউসুফ (আঃ) প্রথমে বিনয়ের সাথে আল্লাহর প্রশংসা করেছেন, আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্বীকার করেছেন, পীর-বুযুর্গ, ওলী-আওলীয়া এসকল মাধ্যম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকেই দুনিয়া ও আখেরাতের অভিভাবক হিসাবে মেনে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে দোয়া করেছেন। দোয়া করার এটাই সঠিক পদ্ধতি। প্রতিটি মুসলিমকে এভাবেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি বিনয়ের সাথে অনুচ্চ স্বরে দোয়া করতে হবে। বৃষ্টির জন্য ছাড়া সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে দোয়া করা বিদআত এবং প্রত্যেক সালাতের পর মাসনুন যিকির বাদ দিয়ে হাত তোলে উচ্চস্বরে ইমাম ও মুক্তাদি মিলে সম্মিলিতভাবে দোয়া-মোনাজাত করা নিকৃষ্টতম বিদআত। কারণ কিছু বিদআত আছে বছরে একবার করা হয় আর এই বিদআত দিনে পাঁচবার করা হয়। মুসলিম ভাইদের প্রতি অনুরোধ এই বিদআত অবশ্যই পরিত্যাগ করুন, তওবা করুন, ফরজ সালাতের পর মাসনুন যিকির করুন।
আখেরাতের জীবনে কাফিররাও মুসলিম হবার আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে।
সেদিন (কিয়ামতের দিন) আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটিয়ে নেয়া হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি, যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব, আর ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই।
বল, বস্তুত আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ইলাহ হলো একক ইলাহ; সুতরাং তোমরা কি মুসলিম হবে?
এই আয়াতকয়টি নিয়ে সকল আলেম-ওলামা ও মুসলিম ভাই-বোনদেরকে একটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এবং তাফসীরে আহসানুল বায়ান ও তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।
আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ, তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন আর দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি, এটাই তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দ্বীন, তিনিই তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম- পূর্ব থেকেই ও এই কিতাবেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরাও মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব, তোমরা সালাত কায়েম কর আর যাকাত আদায় কর আর আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, অতএব তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা ২২/হাজ্জঃ ৭৮)
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৭৬-৮১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
আর তুমি অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকারী নও, তুমি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে, অতঃপর তারাই মুসলিম।
আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাবে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকার পরেও ইহুদীরা জানার পরেও না মানার জন্য আর খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাব না পড়ার জন্য না জানার কারণে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এজন্য বিভিন্ন দলের আকীদা-বিশ্বাসও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। যেমনটি আজ মুসলিমদের মধ্যে হয়েছে। কুরআন ও সহীহ হাদীস না পড়ার, না জানার কারণে এবং জানার পরেও না মানার কারণে, প্রবৃত্তির অনুসরণ, বাপ-দাদার অনুসরণসহ বিভিন্ন কারণে দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাই কুরআনের মাধ্যমে তাদের মতবিরোধের ব্যাপারগুলো বর্ণনা করে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে। তেমনিভাবে মুসলিমরাও যদি আবার কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসে তবে আকীদাগত মতভেদ ও দলে দলে বিভক্তি অনেকটাই কমে যাবে।
সূরা নং ২৭, সূরা আন নামল এর ৮৯-৯২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
মূলত আমাকে তো এই নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, এই শহরের রব-এর ইবাদাত করবে যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন, এর সবকিছু তাঁরই অধিকারে আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই,
আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্যই হিদায়াত লাভ করল, আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, আমিতো কেবল সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।
আর আমিতো তাদের কাছে একের পর এক বাণী পৌঁছে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে, যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম এর পূর্বে তারাও এর প্রতি ঈমান আনে। আর যখন তাদের নিকট তা পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় তা সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আমরা পূর্ব থেকেই মুসলিম। (সূরা ২৮/ক্বাসাসঃ ৫১-৫৩)
এখানে ঐ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নাবীগণ যে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তা হলো ইসলাম। ঐ সব নাবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে ‘মুসলিম’ বলা হত।
আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা যুলুম করেছে তাদের ছাড়া; আর বল, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহতো একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (সূরা ২৯/আনকাবুতঃ ৪৬)
আর তুমি অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতে আনতে পারবে না, তুমি শুধু তাদেরকেই শুনাতে পারবে যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, কারণ তারা মুসলিম। (সূরা ৩০/আর রূমঃ ৫৩)
এই আয়াত থেকে বুঝা গেল, যারা নিজেরাই বুঝতে চায় না তাদেরকে কেউ সঠিক পথে আনতে পারবে না। আর যারা মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী বা নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে মেনে নিয়েছে) তারাই কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে।
বল, নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন কেবল আল্লাহরই ইবাদত করি একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্যে। আর আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন প্রথম মুসলিম হই। (সূরা৩৯/যুমারঃ ১১-১২)
আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, আর নিজেও আমলে সালেহ করে এবং বলে নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা ৪১/ফুসসিলাতঃ ৩৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন এবং যুগে যুগে ইসলামের অনুসারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ
১। তার কথা সবচেয়ে উত্তম যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে অর্থাৎ কোন দল, মত, পথের দিকে নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ বা ইসলামের দিকে আহবান করে।
২। সে ব্যক্তি নিজে আমলে সালেহ করে অর্থ্যাৎ নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে সেই অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠার সাথে রসূল ﷺ এর মত ইবাদত করে। মনে রাখা দরকার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও নিষ্ঠার সাথে না হলে আল্লাহ সেই আমল কবুল করবেন না আর আমলটি রসূল ﷺ এর মত না হলে সেটা আমলে সালেহ হবে না বরং সেটা আমলে বিদআত হবে।
৩। তার পরিচয় হবে বা সে পরিচয় দিবে যে, আমি একজন মুসলিম।
সূরা নং ৪৩, সূরা আয যুখরুফ এর ৬৪-৭৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।
ভেবে দেখেছেন কি? এক আল্লাহ, এক রব তার মনোনীত এক দ্বীন ইসলামের মধ্যে যারা মতভেদ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যন্ত্রণাদায়ক আযাবের হুমকি দিয়েছেন আর যারা আল্লাহ আয়াতসমূহকে মেনে নিয়ে মুসলিম হয়ে জীবন যাপন করবে তাদের জন্য কি রকম পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। তারপরেও কি মুসলিমদেরকে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট দ্বীনের মধ্যে মতভেদ করে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ আছে?
আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতিকষ্টে প্রসব করেছে আর গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে আর চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিয়ামত দান করেছ, সেই নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে পারি এবং আমি যেন এমন নেক আমল করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আর আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিকে সংশোধন করে দাও, আমি তোমার কাছে তওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের একজন।
(সূরা ৪৬/আহকাফঃ ১৫)
আহ্! কি সুন্দর আমার রবের আয়াতসমূহ! এত আমল করার পরেও আল্লাহ মুসলিম হিসেবে তার পরিচয় তুলে ধরে দোয়া করতে শিখাচ্ছেন। আর আমরা আজ আমাদের আসল পরিচয় ভুলে, আমি অমুক, আমি তমুক, এসব পরিচয় দিচ্ছি। পরিণতিতে নিজে নিজেরাও কাঁদা ছড়াছুড়ি করছি আর ইহুদী-খ্রিষ্টান-মুশরিক সহ সমস্ত বিজাতীয়রা একযুগে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করছে।
আর স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উত্থিত করব এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে হাযির করব। আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।
বল, রুহুল কুদুস (জিবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১০২)
কুরআন মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ ও সুসংবাদস্বরূপ। আর সহীহ হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা। হাদীস ব্যতীত কুরআনের উপর আমল করাও সম্ভব নয় এবং রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি, জীবনযাপনের রীতি-নীতি) জানা ও মানাও সম্ভব নয়। এজন্য মুসলিমদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস এই দুটোই অধ্যয়ন করতে হবে, দুটোই মেনে চলতে হবে। তবে কুরআন হলো মূল পথের নির্দেশক এবং সহজ ভাবে সরল পথটি আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমেই দেখিয়ে দিয়েছেন। কুরআন সকলের জন্য নাযিল হলেও নিষ্ঠার সাথে বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে এর জ্ঞান অর্জনকারী মুসলিমরাই কেবল এখান থেকে উপকৃত হতে পারবে। কারণ কুরআন হলো বৃষ্টির মত যার দ্বারা কিছু কিছু মাটি প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে কিছু মাটি কাঁটাগাছ ও আগাছা ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না। মুসলিমের অন্তর শিরক, কুফর ও নিফাক থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় কুরআনের বরকতে, ঈমানের আলোতে আলোকিত হয়। দুনিয়াপ্রীতি, অলসতা ইত্যাদি মানবিক দূর্বলতা কখনো কখনো অন্তরে প্রবেশ করলেও অব্যহত কুরআন চর্চার ফলে মুসলিমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারে। আর কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, গাফেল ও পাপীরা কুরআন থেকে দূরে থাকার কারণে কুফর, পাপ-পঙ্কিলতা ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে ডুবে থাকে যেখানে কুরআনের আলো কোন কাজে লাগে না। তাই বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/297/19
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।