hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের প্রশ্ন ও প্রাসংগিক আলোচনা

লেখকঃ মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী

২০
রসূল ﷺ এর সহীহ হাদীসে আমাদের পরিচয় ও কিছু আমল
প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে, এখানে আমি মুসলিম পরিচয় উল্লেখিত ও আমাদের আমল উল্লেখিত সব হাদীস উল্লেখ করতে পারিনী। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে, মুসলিম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কুতুবে সিত্তা থেকে এমন সব হাদীস একত্র করব। কিন্তু সংকলন করতে গিয়ে দেখি, আশ্চার্য ব্যাপার, এরূপ হাদীসের সংখ্যা বহু যা সংকলন করলে ভলিয়ম ভলিয়ম কিতাব হবে। অনুমান করে বুঝলাম যে এগুলোর দশ ভাগের এক ভাগও যদি সংকলন করি তবে কিতাবের কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া কুতুবে সিত্তাগুলোতে সংকলিত আছেই। আগ্রহী মুসলিম ভাই-বোনেরা সেখান থেকেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। তাই এখানে মুষ্টিমেয় কয়েকটি হাদীস সংকলন করলাম।

১. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে।

(বুখারীঃ ৯, মুসলিমঃ ৪০)

২. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারীঃ ১০, মুসলিমঃ ৪২)

৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা হতে সে তার দ্বীন সহ পলায়ন করবে। (বুখারীঃ ১৮)

৪. যুবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়াইল (রহঃ)-কে মুরজিআ (একটি বাতিল ফিরকা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ (ইবন মাসউদ) আমার নিকট বলেছেন,নাবী ﷺ বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।

(বুখারীঃ ৪৮, মুসলিমঃ ৬৪)

৫. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি- সালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (বুখারীঃ ৫৫, মুসলিমঃ ৫৬)

৬. আবু জুহাইফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আলী (রদিঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব (কুরআন) রয়েছে আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না। (বুখারীঃ ১১২, ১৮৭০, ৩০৪৭)

৭. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেন, আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই থাকবে। রক্ত ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হতে মিশকের মত।

(বুখারীঃ ২৩৭, ২৮০৩, মুসলিমঃ ১৮৭৬)

৮. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।

(বুখারীঃ ৩৮৪)

৯. আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনে মালিক (রদিঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে মানুষের জান-মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যক্তি লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কিবলামুখী হয়, আমাদের মত সালাত আদায় করে আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সেই মুসলিম। অন্য মুসলিমের মতই তার অধিকার রয়েছে আর অন্য মুসলিমদের মতই তাকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। (বুখারীঃ ৩৮৫ শেষাংশ)

১০. ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রদিঃ) এর নিকট আসতাম। তিনি সর্বদা মাসজিদে নাববীর সেই স্তম্ভের নিকট সালাত আদায় করতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুঁজে বের করে সামনে রেখে সালাত আদায় করতে দেখি (এর কারণ কী?) তিনি বললেন, আমি নাবী ﷺ কে এটি খুঁজে বের করে এর নিকট সালাত আদায় করতে দেখেছি। (বুখারীঃ ৪৭৮)

১১. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রসূল ﷺ এর সঙ্গে ফজরের জামাআতে হাযির হতেন, অতঃপর সালাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন, আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। (বুখারীঃ ৫৭৮)

১২. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল তাঁরা সালাতের সময় হয়েছে বুঝানোর জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক কিংবা ঘন্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রদিঃ)কে আযানের শব্দগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হলো। (বুখারীঃ ৫৭৯)

১৩. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, মুসলিমগণ ফজরের সালাতে রত, এ সময় আল্লাহর রসূল ﷺ আয়িশা (রদিঃ) এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাঁকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন, তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আবূ বকর (রদিঃ) তাঁর ইমামতের স্থান ছেড়ে কাতারে শামিল হবার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, রসূল ﷺ বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিতে তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পুরো কর। অতঃপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। এ দিনেরই শেষে তাঁর ওফাত (মৃত্যু) হয়। (বুখারীঃ ৭৫৪)

১৪. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রববানা ওয়া লাকাল হামদ’’ বলতেন আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেন, হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম, আইয়্যাস ইবনু আবু রাবীআ (রদিঃ) এবং অপরাপর দূর্বল মুসলিমদেরকে রক্ষা করুন। (বুখারীঃ ৮০৪ প্রথমাংশ)

১৫. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। (বুখারীঃ ৮৯৭)

১৬. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ জুমুআর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারীঃ ৯৩৫)

১৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, একবার নাবী ﷺ সূরা আন-নাজম পাঠ করে সিজদা করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা করেছিল। (বুখারীঃ ১০৭১) এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, যারা ইসলাম কবুল করে পুরোপুরি মেনে চলবে তারা মুসলিম আর অন্যরা মুশরিক পরিচয়ে পরিচিত হবে।

১৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল ﷺ †ক বলতে শুনেছি, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটিঃ ১. সালামের জবাব দেয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া, ৩. জানাযার পিছনে চলা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা (আলহামদুলিল্লাহ-র জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা) (বুখারী ১২৪০)

১৯. আনাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিমের (যিনি ইসলামকে পুরোপুরি মেনে চলেন) তিনটি সন্তান সাবালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে তাদের প্রতি তাঁর রহমত স্বরূপ অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারীঃ ১২৪৮, ১২৫১, ১৩৮১)

২০. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজিন (রক্কক) নির্দেশিত পরিমাণ সদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সদকা দানকারী হিসেবে গণ্য। (বুখারীঃ ১৪৩৮)

২১. আবূ মূসা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, প্রতিটি মুসলিমের সদকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, কেউ যদি সদকা দেয়ার মত কিছু না পায়? নাবী ﷺ বললেন, সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সদকাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেন, কোন বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় সে যেন সৎ আমল করে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। (বুখারীঃ ১৪৪৫)

এসব হাদীস থেকে বুঝা যায় রসূল ﷺ নিজে ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করেছেন আর সাহাবী (রদিঃ) গণ ইসলামের কোন বিষয়ই জেনে বুঝে রাখতে ও পরবর্তীদের কাছে বর্ণনা করতে বাদ রাখেননি। আমাদের উচিত মুসলিম পরিচয় দেয়া, মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ থাকা এবং কুরআন-হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা।

২২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত,নাবী ﷺ বলেছেন, মুসলিমদের উপরে ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই। (বুখারীঃ ১৪৬৩, ১৪৬৪)

২৩. আবু সাঈদ খুদরী (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নাবী ﷺ মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তা হলো এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হবে। এক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নাবী ﷺ নিরব হলেন, প্রশ্নকারীকে বলা হল, তোমার কী হয়েছে? তুমি নাবী ﷺ এর সাথে কথা বলছ কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নাবী ﷺ এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি ঘাম মুছলেন এবং বললেন প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে ও পুণরায় চলে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হলো আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নাবী ﷺ যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। (বুখারী ১৪৬৫)

২৪. ইবনে উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রসূলুল্লাহ ﷺ সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারীঃ ১৫০৩. ১৫০৪)

হাদীসটির শিক্ষাঃ ১. ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশে নাবী ﷺ ও ফরজ বা হালাল-হারাম নির্ধারণ করতে পারেন, ২. এক সা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে, ৩. ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করতে হবে, ৪. এসব নাবী ﷺ এর নির্দেশ। নাবী ﷺ এর নির্দেশ মান্য করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর অবশ্য কর্তব্য এবং অমান্য করা নিন্দনীয় অপরাধ।

২৫. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, জাহিলি যুগে যল-মাজায ও উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগল, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হলঃ ‘‘হজ্জের মৌসুমে তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে তোমাদের পাপ নেই’’

(আল কুরআন, বাকারাঃ১৯৮), (বুখারীঃ ১৭৭০, ২০৫০, ২০৯৮, ৪৫১৯)

২৭. আবু হুরাইরা (রদিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বিরতীহীন সওম (সওমে বিসাল) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে বিরতীহীন সওম পালন করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব আমাকে পানাহার করান। এরপরও যখন লোকেরা বিরতীহীন সওম পালন করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সওমে বিসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমে বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল।

(বুখারী ১৯৬৫)

শিক্ষাঃ রসূল ﷺ এর ব্যক্তিগত আমল (ফেইলি হাদীস) ও নির্দেশের মধ্যে (কওলি হাদীস) অমিল হলে নির্দেশের উপরে কাজ করতে হবে কেননা কিছু ইবাদত রসূল ﷺ এর জন্য খাস ছিল। উম্মতের কষ্টের কথা ভেবে অনেক কিছু তিনি হালকা করে দিয়েছেন। তবে মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোতে শিথিলতার সুযোগ নেই। সাধ্যমত সুন্নতের উপর আমল করাটাই মুসলিমদের কর্তব্য।

২৮. আয়িশা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রদিঃ) কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার জাতি জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর (রদিঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন। (বুখারী ২০৭০)

লক্ষ্য করুন, এই হাদীসে আবু বকর সিদ্দিক (রদিঃ) ইসলামের অনুসারীদেরকে ‘মুসলিম জনগণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

২৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়, ‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে-’’ (আল ইমরান ৭৭) (বুখারীঃ ২০৮৮)। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, দ্বীনের ব্যাপারে ইসলামে কোন কিছু বাদ নেই এবং হাদীস হলো কুরআনের ব্যাখ্যা ও রসূল ﷺ এর সুন্নাহ (ইবাদতের পদ্ধতি) জানার ওহী ভিত্তিক উৎস। হাদীস ছাড়া ইসলাম পালন করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুসলিমের উচিত সাধ্যমত কুরআনের পাশাপাশি কুতুবস সিত্তা (বুখারী, মুসলিম হতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ) ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে সহীহ হাদীস অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ইবাদত করা।

৩০. আবু হুরায়রা (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ, কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও।

(বুখারী ২৫৬৬)

৩১. আনাস ইবনু মালিক (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারীঃ ২৮৩০)। প্রকৃত ও ভাল মুসলিমের জন্য কুরআন-হাদীসে আরো অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। ভাল মুসলিমের জন্য সুখ-দুঃখ (শোকরিয়া, ধৈর্য্য ও ইবাদতের কারণে) সবকিছুই কল্যাণকর। কুরআন-সুন্নাহ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে ভাল মুসলিম হবার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমিন।

৩২. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইহুদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইহুদী আছে, তাকে হত্যা কর।’’ (বুখারীঃ ২৯২৬) লক্ষ্য করুন, পাথরও ইসলামের অনুসারীদেরকে মুসলিম বলে সম্বোধন করবে। এজন্য আমাদের উচিত অন্য সব পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়া এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা।

৩৩. ইবনু উমর (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, তাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে শত্রুরা তা আটক করে। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন সে ঘোড়াটি আল্লাহর রসূল ﷺ এর যুগেই তাঁকে ফেরত দেয়া হয়। আর তাঁর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রদিঃ) রসূল ﷺ এর যামানার পর তা তাঁকে ফেরত দিয়ে দেন।

(বুখারীঃ ৩০৬৭-৩০৬৯)

 আহা! মুসলিমগণ যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তখন রোম হেরে গেল আর মুসলিমরা যখন বিভিন্ন পরিচয়ে দলে দলে বিভক্ত তখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে তারা শুধু মার খাচ্ছে। কবে মুসলিমদের চেতনা ফিরবে, কবে তারা শুধু মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট হয়ে কুরআন-সুন্নাহকে আকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হবে, সমস্ত শিরক-বিদআত, দল-মত-ইজম-মাযহাব পরিত্যাগ করে নিজেদের মধ্যের সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে শুধু ওহীর দলিল ভিত্তিক জ্ঞান চর্চা করবে, ইবাদত করবে, সমাজ পরিচালনা করবে, দাওয়াত দিবে আর ইসলামের পতাকাকে উর্দ্ধে তুলে ধরার জন্য ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হবে। আল্লাহ মুসলিম ভাই-বোনদেরকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলার জন্য তৌফিক দান করুন, আমিন!

৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা আলী (রদিঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী ﷺ এর পরে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আবু বকর (রদিঃ), আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, উমার (রদিঃ)। আমার আশংকা হলো যে, অতঃপর তিনি উসমান (রদিঃ) এর নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমিতো মুসলিমদের একজন। (বুখারীঃ ৩৬৭১)

৩৫. তামীম আদ্ দারী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, সদুপদেশ দেয়াই হলো দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের (কুরআনের), তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। (মুসলিমঃ ১০২)

বিঃদ্রঃ- মুসলিম শাসক তাদেরকেই বলা যাবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং ততক্ষনই তাদের নির্দেশ মানা যাবে যতক্ষণ কুরআন ও হাদীস মোতাবেক নির্দেশ দিবে, আর মুসলিম জনগণ তাদেরকেই বলা হবে যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ইসলামের উপর অটল থাকবে। সুতরাং যারা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করছেন বলে মনে করেন তাদের উচিত অন্য কোন পরিচয় না দিয়ে কেবল মুসলিম পরিচয় দেয়া, অন্য সকল পরিচয় পরিত্যাগ করে মুসলিম পরিচয়ে অটল থাকা। আল্লাহ আমাদের সঠিকটা বুঝার জন্য তৌফিক দিন, আমিন।

৩৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি নাবী ﷺ †ক বলতে শুনেছি, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবে। এ হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান।

(মুসলিমঃ ২৯২)

৩৭. ইবনু আববাস (রদিঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ রাওহা নামক স্থানে একদল আরোহীর সাক্ষাৎ পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর জন্য হাজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে। (মুসলিম ৩১১৯) তারা কোন সম্প্রদায়ের লোক জানতে চাইলেও তারা মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। তাই আমাদের জন্য মুসলিম পরিচয় দেয়াই সহীহ, সঠিক ও সুন্নাতী পদ্ধতি। মুসলিমদের জন্য অন্য কোন পরিচয়ে পরিচয় দেয়া সমীচীন নয়।

৩৮. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম মহিলার জন্য তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়। (মুসলিমঃ ৩১৩২)

৩৯. আবু হুরায়রা (রদিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (মুসলিমঃ ৩৩২৭)

৪০. আবু ইদ্রীস খাওলানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রদিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রসূল ﷺ †ক কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট অকল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম এই ভয়ে যে, পরে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এ কল্যাণ প্রদান করলেন। এ কল্যাণের পরেও কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আমি বললাম, ঐ অকল্যাণের পর আবার কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তা ধুম্রতা আছে। আমি বললাম, কী সে ধুম্রতা? তিনি বললেন, তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হিদায়াতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হিদায়াত খুঁজবে। দেখবে তাদের মধ্যে ভাল মন্দ উভয়টাই। তখন আমি আরয করলাম, এ কল্যাণের পর কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের বর্ণ হবে আমাদেরইমত এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কী করতে বলেন? তিনি বলেন, তোমরা মুসলিমদের জামাআত ও ইমামের সাথে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামাআত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তা হলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আকঁড়ে থাক এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।

(মুসলিমঃ ৪৬৩১)

সুতরাং সাবধান! সমস্ত বিচ্ছিন্ন দল থেকে সাবধান!! নিজে ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী মুসলিম পরিচয়ে রসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করুন এবং মুসলিম জামায়াত বা সাহাবীদের মত জামায়াত পেলে সেই জামায়াতকে আকঁড়ে ধরুন নতুবা কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তাওহীদ ও সুন্নতকে আঁকড়ে ধরুন, শিরক-বিদআতকে বর্জন করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা জানার বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন!

রসূল ﷺ সকালে ও বিকালে যে যিকিরসমূহ পাঠ করতেন সেখানেও বেশ কিছু যিকিরে মুসলিম হবার, থাকার অভিপ্রায় দেখা যায়। যেমন :

أَصْبَحْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَسُنَّةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ

আমরা সকাল করলাম ইসলামের ফিতরাতের উপর, একনিষ্ঠ কালিমার উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের উপর এবং আমাদের একনিষ্ঠ মুসলিম পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর আদর্শের উপর। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৪৪; দারেমী, হা/২৭৪৪

রসূল ﷺ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ৩ বার করে এবং প্রত্যেক আযানের পর ১ বার করে পাঠ করতেনঃ

رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا

আল্লাহকে রব ও ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ ﷺ †ক নাবী হিসেবে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।

(আবু দাউদ ১৫৩১, তিরমিযী ৩৩৮৯, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদঃ ১৮৯৬৭)

সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন ও মুহাম্মাদ ﷺ কে নাবী/রসূল (আদর্শ) হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ আমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান নাযিল করেছেন, পরিপূর্ণ দ্বীন মনোনীত করেছেন এবং রসূল ﷺ দ্বীনের সকল বিষয়ে আমল ও কথার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে দেখিয়ে গেছেন ও বর্ণনা করেছেন। তাই অন্য সকল মতবাদ, ইজম ও মাযহাব পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলো আগেও যেমন প্রয়োজন ছিল না, এখনও তেমনি প্রয়োজন নেই। কুরআন ও সহীহ হাদীসেই সবকিছু স্পষ্ট আছে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করার ও কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন। আমিন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন