মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ দা‘ওয়াহ ও উসূলুদ্দীন ফ্যাকাল্টি, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮
প্রথমত : কা‘বা শরীফ ও এর কিছু বিধি-বিধান :
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/801/18
কা‘বা হচ্ছে পবিত্র আল্লাহর ঘর, যা মাসজিদের মাঝখানে অবস্থিত। এর আকৃতি চতুর্ভুজ। এর দরজা মাটি থেকে কিছু উপরে। চতুষ্কোণ হওয়ার কারণে কা‘বা বলে এর নামকরণ করা হয়েছে। [আল-মাজমু’ আল-মুগীসঃ ৫২/৩]
الكعبة (আল-কা‘বা) শব্দটি হুবহু এই নামে আল-কুরআনে এসেছে। যেমন :
‘‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাইল কা‘বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দু‘আ করেছিল : পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।’’ [আল-বাক্বারাহঃ ১২৭]
‘‘যখন আমি ইবরাহীমকে বাইতুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরিক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তওয়াফকারীদের জন্যে, নামাজে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রুকু-সিজাকারীদের জন্যে।’’ [আল-হাজ্জঃ ২৬]
কা‘বার আরেকটি নাম হচ্ছে : الْبَيْتِ الْعَتِيقِ (আল-বাইতুল ‘আতিক)
‘‘এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানৎ পূর্ণ করে এবং এ পুরাতন গৃহের তওয়াফ করে।’’ [হাজ্জঃ ২৯]
সুতরাং উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বুঝা গেল, কা‘বা হচ্ছে : আল-বাইছিল হারাম (সম্মানিত ঘর) এবং আল-বাইতুল ‘আতিক (সু সংরক্ষিত গৃহ)।
ইতিপূর্বে আল্লাহ (তাআলা) উল্লেখ করেন যে, ইবরাহীম খলিলুল্লাহই বাইতুল্লাহর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং কা‘বা গৃহ নির্মাণ করেন এবং এ কাজে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আলাইহি সালাম) তাঁকে সহযোগিতা করেন।
আল্লাহ (তাআলা) কা‘বাগৃহের মর্যাদা এত বেশি নির্ধারণ করেন যা এ পৃথিবীর বুকে অন্য কোন স্থানের জন্য নির্ধারণ করেননি। পবিত্র আল্লাহর ঘর কা‘বা সম্পর্কিত কিছু বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুন নিম্নে দেওয়া হলো:
১. তওয়াফ : কা‘বা গৃহ ছাড়া এ পৃথিবীর কোন গৃহের তওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করার অনুমতি আল্লাহ (তাআলা) দেননি। এ তাওয়াফকে সর্বোত্তম কাজ আখ্যা দিয়ে কুরআনে তিনি নির্দেশ প্রদান করেছেন :
পবিত্র ঘর কা‘বাকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সিজাকারীদের জন্য পবিত্র করার লক্ষ্যে তিনি তাঁর খলিল ইবরাহীম ও স্বীয় পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে নির্দেশ প্রদান করেন, যা আল-কুরআনে এভাবে এসেছে :
‘‘এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাইল (আঃ)-কে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সিজাকারীদের জন্যে পবিত্র রাখ।’’ [সূরা আল-বাক্বারাঃ ১২৫।]
আল্লাহ (তাআলা) কা‘বার চতুষ্পার্শ্বে তওয়াফ তথা প্রদক্ষিণ করাকে প্রত্যেক হাজী এবং ‘উমরাকারীর জন্য রুকন তথা ফরজ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কা‘বাগৃহের তওয়াফ ছাড়া হজ বা ‘ওমরাহ বিশুদ্ধ হবে না। এমনকি হজ ও ‘ওমরাহ ছাড়াও এ গৃহের তওয়াফকে তিনি বিশেষ সাওয়াবের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সেই যে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাওয়াফ করল না।
আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার বলেন, ‘‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন :
مَنْ طَافَ سَبْعًا فَهُوَ كَعِدْلِ رَقَبَةٍ .
অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি (কা‘বা গৃহের) সাত চক্কর তাওয়াফ করবে সে একজন ক্রীতদাস মুক্ত করার ছাওয়াব পাবে।’’ [সুনান আন-নাসায়ীঃ ২২১/৫, আলবানী উক্ত হাদীসকে বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদীস নং- ২৭৩২।]
‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাঃ) থেকে এ মর্মে আরেকটি হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন : ‘‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:
অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের তওয়াফ করবে। আল্লাহ (তাআলা) তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি নেকি লিখবেন এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’’ [তিরমিযী ৯৫৯; আল-হাকিম ৪৮৯/১; ইবনে খুযাইমা ২৭৫৩; সহীহ ইবনে হিববান ৩৬৯৭; উপরোল্লিখিত হাদীসের সনদে ‘আতা ইবনে সায়িব নামক বর্ণনাকারী দুর্বল। কারণ শেষ জীবনে তার স্মৃতির বিভ্রম দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদে উক্ত হাদীসের অনুরূপ একটি হাদীস সুফিয়ান ইবনে ‘উয়াইনার সনদে ‘আতা ইবনে সায়িব থেকে উল্লেখ করেছেন- (মুসনাদে আহমাদ ১১/২)। আর সুফিয়ান ‘আতা থেকে উক্ত হাদীস তাঁর স্মৃতির বিভ্রমের পূর্বেই বর্ণনা করেন। ইবনে হিববান তাঁর সহীহ গ্রন্থে অনুরূপ একটি হাদীস সুফিয়ান সাওরী থেকে বর্ণনা করেন- (সহীহ হিববান ১২/৯)। সুতরাং উল্লেখিত হাদীসটি এ ধরনের অনুগামী সাদৃশ্যপূর্ণ হাদীস দ্বারা শক্তিশালী হয়েচে। কারণ সুফিয়ান ইবনে ‘উয়াইনা ও সুফিয়ান সাওরী উভয়ই ‘আতা থেকে তাঁর স্মৃতির বিভ্রমের পূর্বে বর্ণনা করেছেন। (আল-আলবানী, আল-সিল্সিলাতুস সাহীহা ৪৯৭/৬)]
অনুরূপভাবে যে হাজী মক্কা ছেড়ে স্বদেশের দিকে যাত্রা করতে চায় রাসূল (ﷺ) তার উপর কা‘বাগৃহের বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজিব করেছেন। ইমাম বুখারি তাঁর রচিত সহীহ বুখারিতে ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন :
‘‘রাসূল (ﷺ) ঋতুবতী মহিলা ছাড়া অন্য সকল হাজীকে মক্কা ত্যাগ করার পূর্বে বাইতুল্লাহর তওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’ [সহীহ বুখারী- হাজ্জ অধ্যায়ের তওয়াফুল বিদা’র অনুচ্ছেদ, হাদীস নং- ১৭৫৫।]
অপর বর্ণনায় ইমাম মুসলিম ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন : ‘‘মানুষ হজের কাজ সম্পাদন করার পর চতুর্দিকে চলে যাচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (ﷺ) বললেন :
‘‘সর্বশেষ আমল হিসেবে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে কেউ যেন মক্কা ত্যাগ না করে ।’’ [সহীহ মুসলিম- হাজ্জ অধ্যায়ের ওজুবু তাওয়াফিল বিদা’র অনুচ্ছে, হাদীস নং- ১৩২৭।]
শরিয়ত প্রণেতা কা‘বা গৃহের তওয়াফকারীদেরকে যখন ইচ্ছা তওয়াফ করা থেকে বারণ করতে নিষেধ করেছেন। যুবায়ের ইবনে মুত্‘য়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন :
ইমাম নাসায়ী উসামা ইবনে যায়দ থেকে বর্ণনা করেন : রাসূল (ﷺ) কা‘বার ভিতর থেকে বের হলেন এবং কা‘বামুখী হয়ে দু’রাকাত‘আত সালাত পড়ে বললেন : এটাই কিবলা, এটাই কিবলা।’’ [সুনানুল নাসায়ীঃ ২২০/৫, আলবানী বলেনঃ এ হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ। সহীহ সুনানুল নাসায়ী, হাঃ নং- ২৭২৮। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে নিম্নোক্ত অধ্যায়ে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। অধ্যায়ঃ হাজ্জ, অনুচ্ছেদঃ তাওয়াফুল বিদা’ ওয়াজিব হওয়া এবং এ হুকুম ঋতুবতী থেকে রহিত হওয়া, হাদীস নং- ১৩৩০।]
সুতরাং কা‘বার চতুর্দিকই কিবলা। অতএব যে ব্যক্তি কা‘বা দেখতে পায়, তার জন্য কা‘বামুখী হওয়া ছাড়া সালাত হবে না। যখন কোন ব্যক্তি ভিন্নমুখী হয়ে সালাত আদায় করবে, তার পুরো সালাতগুলো পুনরায় পড়তে হবে। আর যে ব্যক্তি কা‘বা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে, তাকে কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করতে হবে। [এ মতটি কুরতুবী তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। কুরতুবীর এই ব্যাখ্যায় আলিমদের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই। (১৬০/২)]
মুসাফিরের নফল সালাতের ক্ষেত্রে নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। সওয়ারি যেদিকে যায় সেদিকে মুখ করেই সে সালাত আদায় করবে। উম্মতের জন্য সহজ করার উদ্দেশে রাসূল (ﷺ) এ ব্যবস্থা করেছেন। জাবির (রাঃ) বলেন :
অর্থাৎ- ‘‘রাসূল (ﷺ) সওয়ারীর উপর সওয়ারি যেদিকে যায় সেদিকে মুখ করে নফল সালাত আদায় করতেন। আর যখন ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছে করতেন, তখন সওয়ারি থেকে নেমে কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করতেন।’’ [ইমাম বুখারী উক্ত হাদীসটি তাঁর সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অধ্যায়ঃ সলাত, অনুচ্ছেদঃ কিবলামুখী হওয়া, হাঃ নং- ৪০০।]
জীবদ্দশায় সালাতে মুসলমানদের কিবলা যেমন কা‘বা, মৃতের জন্যও কা‘বা শরীফ হলো তার কিবলা। কবিরা গুনাহর বর্ণনায় ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত মাওকুফ হাদিসে এসেছে : ‘‘তোমাদের জীবিত ও মৃতের কিবলা বাইছিল হারাম (কা‘বা)-এ গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।’’ [উক্ত হাদীসের উৎস নির্ধারণ পূর্বে হয়েছে। মূল বইয়ের ৩৩ নং পৃষ্ঠায়।] মৃত ব্যক্তিকে কবরে তার ডান কাতে শোয়ানো হয়। তার চেহারাকে কিবলামুখী রাখা হয়। তার মাথা কিবলার ডান পার্শ্বে এবং পা দ্বয় কিবলার বাম পার্শ্বে। রাসূল (ﷺ) থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মুসলিমদের কর্ম এরই উপর প্রতিষ্ঠিত। গোটা পৃথিবীর মুসলিমদের কবরের দৃশ্য এটাই। [ইবনে হাযম, আল-মুহাল্লাঃ ১৭৩/৫।]
৩. টয়লেট সারার সময় কিবলামুখী হওয়া অথবা কিবলাকে পশ্চাৎ রেখে বসার উপর নিষেধাজ্ঞা :
কা‘বা গৃহের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে রাসূল (ﷺ) টয়লেট সারার সময় কা‘বা ও কিবলামুখী হওয়া বা তাকে পশ্চাৎ রেখে বসা থেকে নিষেধ করেছেন। ইমাম বুখারি ও মুসলিম আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
অর্থাৎ- ‘‘যখন তোমরা টয়লেটে যাবে (তথা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবে) তখন কিবলামুখী অথবা কিবলাকে পিছ দিয়ে বসবে না। বরং তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী হয়ে বসবে। আবূ আইউব বলেন : আমরা যখন শাম দেশে আসলাম, তখন দেখতে পেলাম সেখানকার টয়লেটগুলোকে কিবলামুখী করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে ফিরে আসলাম এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম।’’ [সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ সলাত, অনুচ্ছেদঃ মাদীনাহ, শাম ও প্রাচ্যবাসীদের কিবলা, হাদীস নং- ৩৯৪; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া, হাদীস নং- ২৬৪।]
ইমাম মুসলিম সালমান ফারসি (রাঃ) হতে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাকে প্রশ্ন করা হলো :
অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের নবী তোমাদেরকে সকল কিছু শিখিয়েছেন এমনকি টয়লেট কীভাবে সারতে হয়, তাও শিক্ষা দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন : হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন কিবলামুখী হয়ে পায়খানা ও প্রস্রাব করা থেকে বা ডান হাতে শৌচ করা ঢিলা ব্যবহার করা থেকে বা তিন থেকে কম পাথর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করা থেকে বা গোবর বা হাড় দিয়ে ঢিলা নেয়া থেকে।’’ [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা, হাদীস নং- ২৬২।]
উপরে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, পায়খানা ও প্রস্রাব করার সময় কিবলামুখী হওয়া বা কিবলাকে পিছনে রেখে বসা কোন অবস্থাতে বৈধ নয়। এটা বাসাবাড়ীতে হোক অথবা খোলা মাঠে হোক। কিন্তু কিছু হাদিস এমনও আছে যার দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা খোলা মাঠের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বাসা-বাড়ির ক্ষেত্রে নয়। বুখারি ও মুসলিম ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলতেন :
অর্থাৎ- ‘‘মানুষ এ কথা বলাবলি করে, যখন তুমি পায়খানা-প্রস্রাব করতে বস, তখন তুমি কিবলা বা বাইতুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে বস না। ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন : একদা আমি আমাদের ঘরের উপর উঠে দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি ইটের উপরে বসে বাইতুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারছেন। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম- অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া, হাদীস নং- ২৬৬।]
ইমাম মুসলিম ইবনে ‘উমার (রাঃ) থেকে অনুরূপ আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন :
অর্থাৎ- ‘‘একদা আমি আমার বোন হাফসার ঘরের উপরে ছাদে উঠে দেখতে পেলাম যে, রাসূল (ﷺ) কিবলাকে পিছন দিয়ে শামদেশমুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার দেয়ার জন্য বসেছেন।’’ [সহীহ মুসলিম- অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা, হাদীস নং- ২৬৬।]
হাদিসের এ উভয় বক্তব্যের মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে ‘ঊলামায়ে কিরাম ভিন্ন ভিন্নমত পোষণ করেছেন। অধিকাংশ আলিমের বক্তব্য হচ্ছে: এ নিষেধাজ্ঞা খোলা মাঠ এবং মরুভূমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বাসাবাড়ীর ক্ষেত্রে নয়। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : এ অভিমতটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য; কারণ এর মাধ্যমে সকল হাদিসের উপর ‘আমল করা সম্ভব। [ফতহুল বারীঃ ২৯৬/১, উল্লেখিত বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধতম মত হচ্ছে দু’টিঃ১। সর্বাবস্থায় নিষেধাজ্ঞা। এটি আবূ আইউব, আবূ হুরাইরাহ, ইবনে মাস‘ঊদ, মুজাহিদ, আন-নাখ্য়ী, আস্-সাওরী, ‘আতা, আওযায়ী প্রমুখ এর অভিমত। দ্রষ্টব্যঃ আল-আউসাতঃ ৩২৫-৩২৬/১; আত্-তামহীদঃ ৩০৯/১; শরহুস সুন্নাহঃ ৩৫৮/১, আল-মুহাল্লাঃ ১৯৪/১। উপরোক্ত মতটি হানাফীদের। দ্রষ্টব্যঃ হাশিয়াতু ইবনে ‘আবেদীনঃ ৩৪১/১; আল-‘আরিদা গ্রন্থে ইবনেুল ‘আরাবী উক্ত মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন- (২৭/১)। ইমাম আহমাদ থেকে অনুরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে। তাসহীহুল ফুরু’ঃ ১১১/১। এটি ইবনে হাযমের পছন্দসই মত। আল-মুহাল্লা ১৯৩/১। এটি শায়খুল ইসলাম-এর বাছাইকৃত মত। আল-ইযতিয়ারাতুল ‘ইল্মিয়া পৃঃ ১৫, ইবনেুল কায়্যিম যাদুল মা‘আদ গ্রন্থে এ অভিমতের স্বপক্ষে বক্তব্য পেশ করেন। (৪৯/১)২। দ্বিতীয়পক্ষ খোলামাঠ ও বাসাবাড়ীর মাঝে পার্থক্য করে বলেনঃ বাসা-বাড়ীর মাঝে এটা বৈধ এবং খোলামাঠ এবং মরুভূমির ক্ষেত্রে অবৈধ। এটি ইমাম মালিকের অভিমত। দ্রষ্টব্যঃ আর-মুদাউওয়ানাঃ ১১৭/১; আত্-তামহীদঃ ৩৯০/১; এটা ইমাম শাফিঈর অভিমত। দ্রষ্টব্যঃ আল-উম্মঃ ১৭৬/১, আল-মাজমু’ঃ ৯২/১। এটা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল-এর প্রসিদ্ধ মত। দ্রষ্টব্যঃ আল-মুগনীঃ ১০৭/১; আল-ইনসাফঃ ১০০/১। এটা ইমাম বুখারী ও ইবনে হাজার আসকালানীরও মত। আল-ফাত্হঃ ২৯৬/১।]
৪. সুযোগ হলে কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব :
কাউকে কষ্ট না দিয়ে সুযোগ হলে কা‘বা শরীফের অভ্যন্তর সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে দু’ রাকাত‘আত সালাত আদায় করেছেন। ইমাম বুখারি সালিম হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন :
অর্থাৎ- ‘‘রাসূল (ﷺ), উসামা ইবনে যায়দ, বিলাল ও ‘উসমান ইবনে তালহা কা‘বা গৃহে প্রবেশ করার পর দ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর যখন দরজা খুলে দেয়া হয়, তখন সর্বপ্রথম আমি কা‘বা গৃহে প্রবেশ করি। সেখানে বিলালের সাথে সাক্ষাতে জিজ্ঞেস করলাম : রাসূল (ﷺ) কি সেখানে সালাত আদায় করেছেন? জবাবে তিনি বললেন : হ্যাঁ। তিনি ইয়ামেনী দুই স্তম্ভের মাঝামাঝি স্থানে সালাত আদায় করেছেন।’’ [সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ হাজ্জ, অনুচ্ছেদঃ কা‘বা গৃহকে বন্ধ করে দেয়া এবং কা‘বার যে কোন পানে সালাত আদায় করা, হাঃ নং- ১৫৯৮। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ হাজ্জ, অনুচ্ছেদঃ হাজী বা সাধারণ মানুষ কা‘বা গৃহে প্রবেশ এবং তার যে কোন পার্শ্বে সালাত ও দু‘আ করা প্রসঙ্গে, হাঃ নং- ১৩২৯।]
ইবনে ‘উমারের ক্রীতদাস নাফি‘ উল্লেখ করেন যে, যে কা‘বা গৃহে প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য সেখানে যে কোন দিকে ফিরে সালাত আদায় শুদ্ধ। [সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ সলাত, অনুচ্ছেদঃ ৯৭, হাঃ নং- ৫০৬।]
উপরের বর্ণনা নফল সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কা‘বা গৃহের অভ্যন্তরে ফরজ সালাত আদায় বৈধ কিনা, তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। [ফতহুল বারীঃ ৪৬৬-৪৬৭/৩।] উল্লেখ্য হাতীমে কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করা কা‘বা গৃহের অভ্যন্তরে সালাত আদায়ের সমতুল্য। কারণ এটা কা‘বারই অংশ। এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে।
৫. কা‘বার শেষ পরিণতি :
আল্লাহ (তাআলা) আল-কুরআনে এবং রাসূল (ﷺ) আল-হাদিসে কেয়ামত সম্পর্কে মানুষদেরকে অবহিত করেছেন। আল্লাহ (তাআলা) ক্বিয়ামাতের উল্লেখযোগ্য কিছু নিদর্শন নির্ধারণ করেছেন, যা রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে অবহিত করেছেন। ক্বিয়ামাতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে : কাবা শরীফকে ধ্বংস করা ও ভেঙে চুড় মার করে ফেলা, যা পুনরায় আর কখনো নির্মিত হবে না। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন পৃথিবীতে আল্লাহ, আল্লাহ (আল্লাহর নাম) বলার কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
বুখারি ও মুসলিম তাদের সহীহ গ্রন্থ দ্বয়ে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে, তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন :
ঐ যুগ পাওয়া (আগমন পর্যন্ত বেঁচে থাকা) থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/801/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।