hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হারাম শরীফের দেশ ফজিলত ও আহকাম

লেখকঃ দা‘ওয়াহ ও উসূলুদ্দীন ফ্যাকাল্টি, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়

২৫
অষ্টমত: যমযম
যমযম হল ঐ কূপের নাম যা বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের পূর্বে ও মাকামে ইবরাহীমের দক্ষিণে অবস্থিত। এ শব্দটি আরবি ‘যামযামাহ’ থেকে উদগত। সাধারণভাবে এর অর্থ আওয়াজ। ইবনে কুতাইবা বলেন, পানি উৎসারিত হলে যে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকেই আরবগণ ‘যমযম’ বলে অভিহিত করেন। [গরীবুল হাদীস ২/৫০২]

‎বায়তুল্লাহর নির্মাণ কাজ সম্পর্কিত হাদিসে যমযম সৃষ্টি হওয়ার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘‘যখন বিবি হাজেরা মারওয়া পাহাড়ে এসে উপনীত হলেন, তখন তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। নিজেকে উদ্দেশ্য করেই তিনি বললেন, থাম এবং মনোযোগ দিয়ে শোন। আবারো শব্দটি শুনতে পেয়ে বললেন, (আপনি যেই হোন না কেন) আপনি আমাকে আপনার আওয়াজ শুনিয়েছেন। আপনি কি আমাকে কোন সাহায্য করতে পারেন? অকস্মাৎ তিনি দেখতে পেলেন, যমযমের স্থানে একজন ফেরেশতা গোড়ালি দিয়ে অথবা ডানা দিয়ে মাটি খনন করছে। এতে সেখানে পানি প্রবাহিত হল। আর বিবি হাজেরা হাত দিয়ে স্থানটির চারদিকে জলাধার তৈরি করে নিলেন। কোষভরে পানি নিয়ে তিনি পানপাত্র পরিপূর্ণ করতে লাগলেন। আর পানি নেয়ার পর সেখানে আরো পানি নির্গত হতে থাকল।’’

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন :

يرحم الله أم إسماعيل لو تركت زمزم أو قال لولم تغرف من الماء لكانت زمزم عينا معينا . قال فشربت وأرضعت ولدها .

‘‘আল্লাহ উম্মে ইসমাইলকে রহম করুন, যদি তিনি (নিয়ন্ত্রণ না করে) যমযমকে ছেড়ে দিতেন অথবা বললেন, যদি তিনি কোষভরে পানি না নিতেন, তাহলে যমযম একটি প্রবাহিত স্রোতস্বিনীতে পরিণত হত। রাসূল (ﷺ) আরো বললেন, এরপর তিনি পানি পান করলেন এবং সন্তানকে দুধ পান করালেন।’’ [ইতিপূর্বে হাদীসটির তাখরীজ সম্পর্কিত তথ্যাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। দেখুন পৃঃ ১২৫।]

এ হচ্ছে আল্লাহর এক ফেরেশতার মাধ্যমে নিরাপদ হারাম এলাকায় মার্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় পানি নির্গত হওয়ার ঘটনা। হারাম শরীফের দেশে কতই না বরকতময় এ পানি!!

যমযমের পানির উপর নির্ভর করেই মক্কায় মানুষের জীবন পরিচালিত হত। এভাবেই বছরের পর বছর অতিবাহিত হল। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় যমযমের চিহ্ন মুছে গেল এবং মানুষের কাছে এর স্থান গোপন থাকল বহুদিন। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল (ﷺ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবের হাতে এ বরকতময় পানি আবারও প্রবাহিত হল। তিনিই এর চিহ্ন মুছে যাবার পর পুনরায় তা খনন করেন।

এ বরকতময় পানির ফজিলত বর্ণনায় শরিয়তের অনেক দলিল প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নের দলিলগুলো উল্লেখযোগ্য :

১. যমযমের পানি দ্বারা রাসূল (ﷺ)-এর বক্ষ ধৌতকরণ :

যমযমের পানির ফজিলতের প্রমাণ বহন করছে এমন বিষয়সমূহের একটি এই যে, মিরাজের ঘটনার আগে রাসূল (ﷺ)-এর বক্ষ ধৌত করার জন্য আল্লাহ এ পানিকেই মনোনীত করেছিলেন। ইমাম বুখারি তার সহীহ গ্রন্থে আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

فُرِجَ سَقْفِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا ... الحديث .

অর্থাৎ- ‘‘মক্কায় অবস্থানকালে একদিন আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হল। এরপর জিবরীল (আঃ) নেমে আসলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করলেন। এরপর তিনি হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ স্বর্ণের একটি প্লেট নিয়ে এসে আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর বক্ষ জোড়া লাগিয়ে আমার হাত ধরে নিকটবর্তী আসমানে আরোহণ করলেন।’’ [সহীহ বুখারী- কিতাবুল হজ্জ, পরিচ্ছেদঃ ‘‘যমযম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে’’, হাদীস নং (১৬৩৬)।]

২. যমযম হচ্ছে সুস্বাদু খাবার ও রোগের চিকিৎসা :

যমযমের পানি হচ্ছে বরকতময় পবিত্র খাবার এবং আল্লাহর ইচ্ছায় এক উপকারী চিকিৎসা। ইমাম মুসলিম আবদুল্লাহ ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (‘আবদুল্লাহ) আবূ যার (রাঃ) থেকে তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করেন এ বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) আবূ যারকে বললেন :

مَتَى كُنْتَ هَاهُنَا قَالَ قُلْتُ قَدْ كُنْتُ هَاهُنَا مُنْذُ ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ قَالَ فَمَنْ كَانَ يُطْعِمُكَ قَالَ قُلْتُ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْم .

‘‘তুমি কতদিন ধরে এখানে অবস্থান করছ? আবূ যার বললেন, আমি এখানে ত্রিশটি দিন ও রাত ধরে অবস্থান করছি। রাসূল (ﷺ) বললেন : ‘‘কে তোমার আহার জোগাত?’’ আবা যার বললেন, আমি বললাম, যমযমের পানি ছাড়া আমার আর কোন খাবার ছিল না। আমি এতই মোটা হলাম যে, আমার পেটে ভাঁজ পড়ল। আমি ক্ষুধা অনুভব করতাম না। রাসূল (ﷺ) বললেন : ‘‘যমযম হল বরকতময় এবং তা সুস্বাদু খাবার।’’ [সহীহ মুসলিম- সাহাবাদের ফযীলত অধ্যায় ‘‘আবূ যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ফযীলত’’ পরিচ্ছেদ, হাদীস নং (২৪৭৩)।]

তাবারানী আল-মু‘জাম আল-কাবীর গ্রন্থে ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন :

خير ماء على وجه الأرض ماء زمزم فيه طعام من الطعم وشفاء من السقم .

‘‘ভূ-পৃষ্ঠে যত পানি আছে, তন্মধ্যে সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের স্বাদ ও রোগ নিরাময়তা।’’ [মু‘জামুত তাবারানী আল-কাবীর ১১/৯৮, হাদীস নং (১১১৬৮)। আলবানী, আস-সিলসিলা আস-সহীহায় (৩/৪৫) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

মুজাহিদ বলেন, ‘‘যমযমের পানি যে উদ্দেশে পান করা হয় সে উদ্দেশ্য সফল হয়। আপনি যদি রোগ থেকে আরোগ্য লাভের নিয়তে তা পান করেন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করবেন। তৃষ্ণায় আপনি তা পান করলে তিনি আপনাকে পিপাসা নিবারণ করবেন। ক্ষুধায় আপনি তা পান করলে আল্লাহ আপনার ক্ষুধা নিবারণ করবেন। এ হল জিবরীলের পায়ের গোড়ালীর আঘাতে উৎসারিত পানি এবং ইসমাইল (আঃ)-এর তৃষ্ণা নিবারণকারী পানীয়।’’ [ইবনে ‘আববাস থেকে হাদীসটি মারফু’ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, যা দারাকুতনী (২/২৮৯), হাকিম (১/৬৪৬) বর্ণনা করেন। তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল। অবশ্য আবদুর রাযযাক মুসান্নিফ গ্রন্থে (৫/১১৮) ও আল-আযরুকী আখবার মক্কা গ্রন্থে (২/৫০) মুজাহিদ থেকে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেন।]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, ‘‘আমি সহ আরো অনেকের রয়েছে যমযম পানি দ্বারা আরোগ্য লাভের বহু আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা। এ পানি দ্বারা আমি বহু রোগ থেকে আরোগ্য লাভের প্রার্থনা করে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগমুক্ত হয়েছি। অনেককে দেখেছি বহুদিন ধরে যেমন অর্ধমাস কিংবা ততোধিক সময় তারা এ পানি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং ক্ষুধা অনুভব করতেন না। আর মানুষের সাথে তাদেরই একজনের মত তারা তাওয়াফ করতেন।’’ [যাদুল মাআ‘দ (৩/৪০৬)।]

৩. যমযমের পানি সর্বোত্তম পানি এবং যমযমের কূপ সর্বোত্তম কূপ :

যমযমের পানির ফজিলত আরো প্রমাণিত হয় রাসূল (ﷺ)-এর এ সংবাদ প্রদানের মাধ্যমে যে, এর পানি ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোত্তম পানি এবং অনুরূপভাবে এর কূপ সর্বোত্তম কূপ। ইতিপূর্বে ইবনে ‘আববাসের হাদিস বলা হয়েছে :

خير ماء على وجه الأرض ماء زمزم ..... الحديث

‘‘ভূ-পৃষ্ঠে সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি ... আল হাদিস।

আমাদের এটা ও জেনে রাখা উচিত যে, এ পানি বরকতময় হওয়া সত্ত্বেও তা দিয়ে ওজু করা, গোসল করা কোন বাধা নেই এবং কাপড় ধৌত করায়ও কোন অসুবিধা নেই। [দেখুন, মাজমু‘ ফাতাওয়া ইবনে বায (১৭/২৩০)]

৪. যমযমের পানি পানে পরিপূর্ণ তৃপ্তি অর্জন :

ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

إِنَّ آيَةَ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُنَافِقِينَ إِنَّهُمْ لاَ يَتَضَلَّعُونَ مِنْ زَمْزَمَ

অর্থাৎ- ‘‘আমাদের ও মুনাফেকদের মধ্যে ভেদাভেদ চিহ্ন হল তারা যমযমের পানি পানে পরিতৃপ্ত হয় না।’’ [হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ (৩০৬১) হাকীম মুস্তাদরাক গ্রন্থে (১/৪৭৩), বায়হাকী সুনান কুবরা গ্রন্থে (৫/১৪৭), তয়ালিসি ও আরো অনেকে। বুসিরি ‘মিসবাহুয যুজাজা’ গ্রন্থে (৩/৩৪) বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং তার বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।]

শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ‘উসাইমীন বলেন, এটা এ কারণে যে, যমযমের পানি মিষ্টি সুস্বাদু নয়। বরং তা অনেকটা লোনা পানি। মানুষ তা এজন্যই পান করে যে, এ পানির মধ্যে যে বরকত রয়েছে তার প্রতি তার ঈমান রয়েছে। সুতরাং এ পানি পান করে পরিতৃপ্ত হওয়া তার ঈমানেরই পরিচায়ক।’’ [আশ-শারহুল মুমতি’ (৭/৩৭৯)।]

মক্কার বাইরে যমযম নিয়ে যেতে কোন বাধা নেই। কেননা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি মক্কার বাইরে যমযম নিয়ে যেতেন এবং এটাও বলেছেন যে, রাসূল (ﷺ)-ও এমনটি করতেন। [হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন, হাদীস নং (৯৬৩) এবং বলেন যে, ‘‘হাসান-গরীব’’ ইমাম বুখারী আত-তারীখ আল-কাবীর গ্রন্থে (৩/১৮৯),বায়হাকী আস-সুনান আল-কুবরা গ্রন্থে (৫/২০২) এ হাদীস বর্ণনা করেন। আলবানী আস-সিলসিলা আস-সহীহায় (২/৫৭২) একে সহীহ বলেছেন।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন