hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হারাম শরীফের দেশ ফজিলত ও আহকাম

লেখকঃ দা‘ওয়াহ ও উসূলুদ্দীন ফ্যাকাল্টি, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়

ভূমিকা
নাম, সীমানা ও প্রাথমিক পর্যায়

১. শহরটির নামসমূহ :

বালাদুল্লাহিল হারাম, (আল্লাহর সম্মানিত শহর)। আল্লাহ (তাআলা) তাকে হারাম করেছেন, মর্যাদাবান করেছেন পবিত্র করেছেন এবং শহরটির সম্মানার্থে তার একাধিক নামকরণ করেছেন। কুরআন কারীমে বর্ণিত তার একাধিক নামগুলোর অন্যতম কয়েকটি নাম নিম্নে বর্ণিত হলো:

ক) মক্কা : এ নামটিই হচ্ছে সর্বাধিক পরিচিত নাম। আল্লাহ (তাআলা) ইরশাদ করেন :

وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ﴿الفتح :24﴾

‘‘তিনি মক্কা উপত্যকায় ওদের হাত তোমাদের হতে এবং তোমাদের হাত ওদের হতে বিরত রেখেছেন, ওদের উপর তোমাদের বিজয় করার পর। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন।’’ [সূরা ফাতহঃ ২৪]

খ) বাক্কা : এ পুণ্যভূমির আরেকটি নাম হলো ‘বাক্কা’। আল্লাহ (তাআলা) এরশাদ করেন—

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ ﴿آل عمران :96﴾

‘‘অবশ্যই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় অবস্থিত। ওটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’’ [সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬]

গ) উম্মুল কুরা : তার অন্য একটি নাম হলো ‘উম্মুল কুরা’।

وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآَنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ ﴿الشورى :7﴾

‘‘এভাবে আমি তোমার প্রতি ওয়াহীর মাধ্যমে কুরআন নাজিল করেছি আরবি ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার চতুষ্পার্শ্বের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামতের দিন সম্পর্কে যাতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আরেক দল প্রবেশ করবে জাহান্নামে।’’ [সূরা শূরাঃ ৭]

মুফাসসিরগণের সর্বসম্মত মত হলো ‘উম্মুল কুরা’ দ্বারা মক্কাকেই বুঝানো হয়েছে। এ নামকরণের কারণ হলো এ শহরটি সর্বাধিক সম্মানিত এবং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় শহর। [তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/১০৭]

ঘ) আল-বালাদুল আমীন : তার অন্য একটি নাম হলো ‘আল-বালাদুল আমীন’ (নিরাপদ শহর)। [গ্রাগুক্ত ১/৩/৮৩, আল-ফাসী, শিফাউল গারাম ১/৪৮] আল্লাহ (তাআলা) এরশাদ করেন—

وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ . وَطُورِ سِينِينَ . وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ ﴿التين :-3﴾

‘‘কসম তীন ও যাইতূনের। কসম সিনাই পর্বতের। এবং কসম এ নিরাপদ শহরের।’’ [সূরা তীনঃ ১-৩।] আর ‘আল-বালাদুল আমীন’ দ্বারা সর্বসম্মতভাবে মক্কাকে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও তার রয়েছে আরো প্রচুর নাম যেগুলো দিয়ে এ নিরাপদ শহরের (মক্কা) নামকরণ করা হয়েছে।

২. শহরটির সীমানা :

বিষয়টির গুরুত্ব এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট শার‘ঈ আহকাম যা আল্লাহ (তাআলা) তার হারামের জন্য নির্ধারণ করেছেন- এগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহীর মাধ্যমে হারামের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। জিবরীল (আঃ) এ ঘরের নির্মাতা ইব্রাহীম (আঃ)-কে হারামের সীমানা দেখিয়ে দেয়ার জন্য আগমন করলেন। তাঁর দেখানো মতে ইব্রাহীম (আঃ) হারামের সীমানা স্থির করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে হারামের সীমানা পুনঃ নির্ধারিত হয়। মক্কা বিজয়ের বছর তিনি আসাদ খুযা‘ঈকে প্রেরণ করলে তিনি হারামের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করেন।

আবূ না‘ঈম ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের বছর আসাদ খুযা‘ঈকে প্রেরণ করেন। তিনি হারামের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করেন। ইব্রাহীম (আঃ) এ সীমানা স্থির করেছিলেন যা তাঁকে জিবরীল দেখিয়ে দিয়েছিলেন। [আল-ইসাবা ১/১৮৩, ইবনে হাজার বলেন- এ সনদের সহীহ।]

আর এভাবেই প্রয়োজন অনুসারে আমাদের যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হারামের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করা হয়। [আর এরই ধারাবাহিকতায় হারামের আশেপাশে অবস্থিত জনপদ ও পাহাড়ে অবস্থানের আলোকে হারামে মাক্কীর সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য মাসজিদে হারাম ও মাসজিদে নাবাবী বিষয়ক কমিটির সাবেক নির্বাহী সভাপতি ও মাসজিদে হারামের সম্মানিত ইমাম ও খাতীব শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ আস্-সুবাইয়িলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় নির্দেশ জারী করা হয়। কমিটি তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে মাক্কার অভ্যন্তরে সীমানা খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ সমাপ্ত হয়।] ইমাম নাবাবী বলেন, হারামের সীমানা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সাথে প্রচুর বিধি-বিধানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। [তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত ৩/৮২।]

৩. হারামের প্রাথমিক পর্যায় ও সম্মানিত কা‘বার নির্মাণ :

কা‘বা শরীফ নির্মাণ, হারাম, কা‘বা ও হজের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়টি আল্লাহর খলিল ইবরাহীম ও তাঁর পুত্র ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর সাথে সম্পৃক্ত যেমনটি কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে। হাফিজ ইবনে কাসীর বলেন, ‘কুরআনের ভাষ্য মতে বুঝা যায় যে, ইব্রাহীম (আঃ) সর্বপ্রথম কা‘বা নির্মাণের সূচনা করেন এবং কা‘বার প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ২/২৭৭।] যদিও এ বিষয় প্রাপ্ত অন্যান্য বক্তব্য ইতিপূর্বে নির্মিত কা‘বার অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। এ ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন।

ইব্রাহীম খলিল (আঃ) কর্তৃক কা‘বা নির্মাণ এবং তাঁর পুত্র ইসমা‘ঈলের সহযোগিতা সম্পর্কে আল্লাহ () এরশাদ করেন :

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿البقرة :127﴾

‘‘এবং (স্মরণ কর), যখন ইব্রাহীম ও ইসমা‘ঈল কা‘বা ঘরের প্রাচীর তুলছিল (তখন তারা বলেছিল) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের (এ কাজ) গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।’’ [সূরা বাকারাঃ ১২৭।]

কা‘বা নির্মাণের ঘটনা ও হারাম শরীফের প্রাথমিক পর্যায় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে বেশ কিছু সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়। ইমাম বুখারি তাঁর সহীহ গ্রন্থে সা‘ঈদ ইবনে জুবাইর হতে একটি রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন। সা‘ঈদ বলেন, ইবনে ‘আববাস বলেছেন, মেয়েরা সর্বপ্রথম যে জিনিসটির ব্যবহার শুরু করে তা ছিল কোমর-বন্দ। ইতিপূর্বে ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মাতা সারাহ থেকে তার ছাপ গোপন করার জন্য কোমরবন্দ ব্যবহার করেন। এরপর ইব্রাহীম (আঃ) তাঁকে ও তাঁর দুধ পানকারী পুত্র ইসমা‘ঈলকে সাথে নিয়ে বাইতুল্লাহর নিকট মাসজিদের উঁচুস্থানে যামযামের উপর এক বড় বৃক্ষের নিচে নিয়ে আসেন। তখন মক্কা ছিল জনমানবহীন। ছিল পানিশূন্য। তিনি তাদেরকে সেখানে রেখে আসেন। রেখে আসেন তাদের জন্য এক পাত্র খেজুর ও এক মশক পানি। এরপর ফিরে আসার জন্য তিনি পিছন ফিরেন। তাঁকে অনুসরণ করেন ইসমা‘ঈলের আম্মা-জান। তিনি বলতে থাকেন, হে ইব্রাহীম! যেখানে কোন মানুষ নেই, নেই কোন কিছু এমন এক স্থানে আমাদেরকে রেখে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি এ কথাটুকু বারবার বলতে লাগলেন। কিন্তু ইব্রাহীম তাঁর প্রতি কোন ভ্রূক্ষেপ করলেন না। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কি আপনাকে এ নির্দেশ দান করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ইসমাঈলের আম্মাজান বললেন, তাহলে তিনি (আল্লাহ) আমাদের ধ্বংস করবেন না। এ বলে তিনি ফিরে আসেন। ইব্রাহীমও তাঁর পথে হাঁটা ধরলেন। হাঁটতে হাঁটতে যখন তিনি পাহাড়ি পথের এমন এক স্থানে পৌঁছালেন যেখানে তাঁকে তারা দেখতে পাবে না তখন তিনি বাইতুল্লাহমুখী হয়ে হাত তুলে নিম্নোক্ত দু‘আ করেন, তিনি বলেন :

رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ﴿إبراهيم :37﴾

‘‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর ভূমিতে তোমার পবিত্র ঘরের নিকট, হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিয্কের ব্যবস্থা করে দিন যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’’ [সূরা ইব্রাহীমঃ ৩৭।]

ইসমা‘ঈলের মা ইসমা‘ঈলকে দুধ পান করাতে থাকেন এবং তিনি স্বয়ং মশক হতে পানি পান করতে থাকেন। যখন মশকের পানি ফুরিয়ে গেল তখন তিনি পিপাসার্ত হলেন এবং তাঁর ছেলেও পিপাসার্ত হলো। তখন মা আড় চোখে অথবা (বর্ণনাকারী বললেন) অস্থিরচিত্তে- ছেলের দিকে তাকালেন। সন্তানের দিকে দৃষ্টি পড়ার ভয়ে মা সেখান থেকে উঠে গেলেন। সেখানে তিনি সবচেয়ে নিকটে সাফা পাহাড় দেখতে পেলেন। তিনি পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন। এরপর খোলা বিস্তীর্ণ মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করলেন কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। সাফা হতে নীচে নেমে এলেন তিনি। যখন তিনি ময়দানে পৌঁছে গেলেন তখন তিনি পোশাক কিছু উপরে তুলে পরিশ্রান্ত মানুষের মত দৌড়াতে দৌড়াতে ময়দান পার হয়ে মারওয়া পাহাড়ের নিকট এসে পৌঁছালেন এবং পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে চারিদিকে দেখতে লাগলেন কাউকে দেখা যায় কিনা? কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এভাবে সাতবার করলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ‘আববাস (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : (এটা হলো সাফা মারওয়ার মাঝখানে মানুষের সা‘ঈ। যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং নিজেকে নিজে বললেন, চুপ। এরপর আরো মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে শোনানো হয়েছে যে, তোমার নিকট সাহায্যকারী রয়েছে। হঠাৎ যমযমের স্থানে একজন ফেরেশতা দেখা গেল সে তার পায়ের গোড়ালি দিয়ে অথবা (বললেন) তার পাখা দিয়ে মাটিতে আঘাত করছে। একসময় সেখান থেকে পানি বেরোতে শুরু করল। ইসমাইলের মাতা তখন সে পানি হাউজের মত করে ধরে রাখার চেষ্টা করলেন [আল-ফাতাহ ৬/৪৬৩।] এবং কোষ ভরে মশক ভরতে লাগলেন। কোষ ভরে পানি উঠাবার পর নীচ থেকে প্রবলভাবে পানি উঠতে লাগল।

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : ‘আল্লাহ (তাআলা) ইসমা‘ঈলের আম্মাজানকে রহম করুন, তিনি যদি যমযমকে ছেড়ে দিতেন অথবা (বলেছেন) যদি তিনি কোষ করে পানি না তুলতেন, তাহলে যমযম একটি প্রবাহিত ঝর্ণাধারায় পরিণত হত। তিনি বলেন, ইসমা‘ঈলের আম্মা পানি পান করলেন এবং সন্তানকে দুধ পান করালেন। ফেরেশতা তাঁকে বলল, ধ্বংসের ভয় করো না। কারণ, এখানে রয়েছে আল্লাহর ঘর যা এ বাচ্চা ও তাঁর পিতা নির্মাণ করবে। আর আল্লাহ (তাআলা) তার পরিবারকে ধ্বংস করবেন না। ঘরখানা মাটির উপরে টিলার মত উঁচু ছিল। এখানে বন্যার পানি আসত। তখন বন্যার পানি ডানে বামে এ টিলা সরিয়ে নিয়ে যেত। এভাবেই দিন গড়াতে লাগল। একদিন জুরহাম গোত্রের একদল সফর সঙ্গী অথবা জুরহাম গোত্রের কোন এক উপশাখা কাদা নামক স্থানের পথ ধরে তাদের পাশ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করছিল। তারা মক্কার নিচু এলাকায় যাত্রা বিরতি করল। সেখানে তারা দেখতে পেল এক ঝাঁক পাখি পানি পানের জন্য উড়ছে। তখন তারা বলাবলি করতে লাগল, পাখির এ দলটি পানির উপর ঘুরপাক খাচ্ছে। এ মরুভূমির সাথে রয়েছে আমাদের বহুদিনের পরিচিতি। এখানে কোন পানি ছিল না। এক অথবা দু’জনকে পাঠাও (ঘটনা জেনে আসুক)। তারা সেখানে গিয়ে পানির সন্ধান পেল। তারা ফিরে এসে পানি প্রাপ্তির খবর দিল। এরপর সবাই সেখানে রওয়ানা হল। তিনি বলেন, ইসমা‘ঈলের আম্মা জান সেখানেই ছিলেন।

তারা বলল, আপনি কি আমাদেরকে আপনার পাশে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেবেন?

তিনি বললেন, অবশ্যই, তবে শর্ত হলো পানিতে তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না।

তারা বলল, ঠিক আছে।

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : ইসমা‘ঈলের মাকে তারা পেলেন মানুষকে ভালোবাসতে। তারা সেখানে বসবাস শুরু করলো। এভাবে সেখানে বেশ কিছু বসতি গড়ে উঠলো। শিশু ইসমা‘ঈল বড় হতে লাগলেন। তাদের কাছে তিনি আরবি শিখলেন এবং তিনি তাদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। পাশাপাশি তিনি বড় হলেন। যখন তাঁর বিয়ের বয়স হলো তখন তারা তাদের এক মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে সম্পন্ন করেন। ইতোমধ্যে ইসমা‘ঈলের মা ইন্তিকাল করেন। ইসমা‘ঈল বিয়ে করার পর একদিন ইবরাহীম (আঃ) তার পরিবারের খবরাখবর জানার জন্য এখানে আসেন। তখন ইসমা‘ঈল ঘরে ছিলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। স্ত্রী বললেন, আমাদের জন্য উপার্জনের সন্ধানে তিনি বাইরে গেছেন। এরপর ইবরাহীম তাদের খাওয়া দাওয়া ও অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। উত্তরে স্ত্রী বললেন, আমরা খুবই দুরবস্থায় আছি। অভাব অনটনে আছি। এ বলে তিনি ইবরাহীমের নিকট অভিযোগ করলেন।

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, তোমার স্বামী ফিরে এলে তাকে আমার সালাম বলবে। তাকে এও বলবে সে যেন তার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করে। ইসমা‘ঈল ফিরে কিছু যেন আঁচ করতে পারলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে কি কেউ এসেছিল। স্ত্রী বলল, হ্যাঁ, আমাদের নিকট এমন এমন আকৃতির এক বুজুর্গ ব্যক্তি এসেছিলেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে আপনার সম্পর্কে জানিয়েছি। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন আমাদের সংসার কেমন চলছে? তাকে আমি জানিয়েছি আমরা খুবই কষ্টে আছি।

ইসমা‘ঈল (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি কোন উপদেশ দিয়ে গেছেন? স্ত্রী বলল, হাঁ। তিনি আপনাকে সালাম বলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, আপনি আপনার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করুন।

ইসমা‘ঈল বলেন, তিনি ছিলেন আমার পিতা। তিনি তোমাকে পৃথক করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আমাকে। তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তিনি তাকে তালাক দেন। এরপর তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন। আল্লাহ (তাআলা) যতদিন চেয়েছেন ইবরাহীম (আঃ) ততদিন আর আসেননি। একদিন তিনি এলেন তবে তিনি ইসমা‘ঈলকে পাননি। তিনি ইসমা‘ঈলের স্ত্রীর নিকট এসে তার নিকট ইসমা‘ঈল সম্পর্কে জানতে চান।

ইসমা‘ঈলের স্ত্রী বললেন, আমাদের জন্য উপার্জনের সন্ধানে তিনি বাইরে গেছেন। ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছ তোমরা? এবং তিনি তাদের খাওয়া দাওয়া ও অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। উত্তরে স্ত্রী বললেন, আমরা খুবই ভাল ও সচ্ছল আছি এবং এজন্য তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, তোমাদের খাবার কি? ইসমা‘ঈলের স্ত্রী বললেন, গোশত। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, তোমাদের পানীয় কি? ইসমা‘ঈলের স্ত্রী বললেন, পানি। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তাদের জন্য গোশত ও পানিতে বরকত দান করুন।

নবী (ﷺ) বলেছেন, সে সময় শস্য জাতীয় কোন খাদ্য ছিল না। যদি থাকত তাহলে তিনি তাদের শস্যের জন্যও দু‘আ করতেন।

তিনি (ইবনে ‘আববাস) বলেন, মক্কা ব্যতীত অন্য কোথাও যদি কেউ শুধু এ দু’টি জিনিসের উপর নির্ভর করে তবে তা তাদের জন্য উপযোগী হবে না।

ইবরাহীম (আঃ) বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে তাকে আমার সালাম বলবে। আর তাকে তার দরজার চৌকাঠ বহাল রাখতে বলবে। ইসমা‘ঈল (আঃ) যখন ফিরে এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে কেউ কি এসেছিল? ইসমা‘ঈলের স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, আমাদের নিকট সুন্দর আকৃতির এক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এসেছিলেন। স্ত্রী তাঁর প্রশংসা করলেন। তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন। আমি তাকে আপনার সম্পর্কে জানিয়েছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমাদের সংসার কেমন চলছে? তাকে আমি জানিয়েছি আমরা খুবই ভাল আছি। ইসমা‘ঈল (আঃ) বললেন, তিনি কি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়ে গেছেন? ইসমা‘ঈলের স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ। তিনি আপনাকে সালাম বলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং আপনি যেন আপনার দরজার চৌকাঠ বহাল রাখেন সে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমা‘ঈল বললেন, তিনি ছিলেন আমার পিতা। আর তুমি হলে দরজার চৌকাঠ। তিনি তোমাকে বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহর ইচ্ছায় ইবরাহীম (আঃ) অনেকদিন পর আবার আসলেন। তখন ইসমা‘ঈল যামযাম কূপের নিকট এক বড় বৃক্ষের নীচে তাঁর একটি বর্শা ঠিক করছিলেন। তিনি যখন ইবরাহীমকে দেখতে পেলেন তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং একজন পিতা তার সন্তানের সাথে এবং সন্তান তার পিতার সাথে যে আচরণ করে তারা দু’জন পরস্পরের সাথে ঠিক সে আচরণই করলেন। এরপর ইবরাহীম বললেন, ইসমা‘ঈল, আল্লাহ (তাআলা) আমাকে একটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমা‘ঈল বললেন, আপনার প্রভু আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন আপনি তা বাস্তবায়ন করুন। ইবরাহীম বললেন, তুমি কি আমাকে সহযোগিতা করবে? ইসমা‘ঈল বললেন, অবশ্যই আমি আপনাকে সহযোগিতা করব। ইবরাহীম বললেন, আল্লাহ (তাআলা) আমাকে এখানে একটি ঘর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বলে তিনি পাশে একটি উঁচু টিলার মত স্থানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তিনি বলেন, দু’জনে মিলে সেখানেই ঘর নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। ইসমা‘ঈল পাথর এনে দিতেন আর ইবরাহীম তা দিয়ে নির্মাণ কাজ করতেন। যখন নির্মাণাধীন ঘর কিছুটা উঁচুতে উঠে গেল তখন এ পাথরটি সেখানে আনা হলো এবং ইবরাহীম তার উপর দাঁড়িয়ে কাজ করতেন, ইসমা‘ঈল তাঁকে পাথর ধরিয়ে দিতেন। আর দু’জনে মিলে এ দু‘আ পাঠ করতেন :

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿البقرة :127﴾

‘‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের (এ কাজ) গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।’’ [সূরা বাকারাঃ ১২৭।]

তিনি বলেন, তাঁরা উভয়ে কা‘বা ঘরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলেন এবং দু‘আ করতে থাকেন এ বলে,

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿البقرة :127﴾

‘‘হে আমাদের রব! আমাদের (এ কাজ) গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।’’ [সূরা বাকারাঃ ১২৭, সহীহ বুখারী- কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং- ৩৩৬৪।]

নির্মাণ শেষে এ ঘরটিই ছিল যমীনের উপর ‘ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম ঘর। আল্লাহ (তাআলা) এরশাদ করেন :

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ ﴿آل عمران :96﴾

‘‘অবশ্যই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় অবস্থিত। ওটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’’ [সূরা আলে-ইমরানঃ ৯৬।]

আবূ যার (রাঃ) হতে ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জমিনের বুকে সর্বপ্রথম কোন ঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? তিনি বললেন, হারাম শরীফের মাসজিদ। তিনি বলেন, আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আক-সা। আমি প্রশ্ন করলাম, দু’টি মাস জিদ নির্মাণের মাঝে কতদিনের ব্যবধান ছিল। তিনি বলেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তুমি যেখানেই থাক না কেন সালাতের সময় হলে তুমি সেখানেই সালাত আদায় করে নেবে। কারণ, এতে রয়েছে ফজিলত। [সহীহ বুখারী- কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং- ১০, ৩৩৬৬]

আল্লাহ (তাআলা) এ মর্মে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এতে তিনি অনেক স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছেন এবং রেখেছেন অনেক প্রকাশ্য দলিল। ঘরটি ইবরাহীম খালীল (আঃ) কর্তৃক নির্মিত এবং আল্লাহ (তাআলা) এ ঘরকে সম্মানিত করেছেন এবং দান করেছেন মর্যাদা। তিনি বলেন :

فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿آل عمران :97﴾

‘‘তাতে রয়েছে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন যেমন মাকামে ইবরাহীম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করবে সে হবে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যাদের সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশে সেই ঘরের হজ করা তার অবশ্যই কর্তব্য এবং কেউ তা প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’’ [সূরা আলে-ইমরানঃ ৯৭।]

কাতাদা ও মুজাহিদ বলেন, প্রকাশ্য নিদর্শনা বলীর একটি হলো মাকামে ইবরাহীম। [তাফসীরে ত্ববারী ৪/৮]

উপরে বর্ণিত কুরআনের আয়াত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিস ও সালাফে স্বাস্থ্যহীনের বক্তব্যের আলোকে শহরটির একাধিক নাম, তার সীমারেখা, তার প্রাথমিক পর্যায় ও নির্মাণের সূচনা এবং পরবর্তীতে তাকে হারাম করার বর্ণনার মাধ্যমে উপর্যুক্ত আলোচনায় হারাম শরীফের মহান সম্মান ও উঁচু মর্যাদার কথা ফুটে উঠেছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন