hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা

লেখকঃ ড. আবদুল করিম জায়দান

৩৮
সাম্য ও সমতা
ইসলামী শরীয়তে সাম্যের গুরুত্বঃ ইসলামী শরীয়তে সাম্য ও সমতার গুরুত্ব বিরাট। সব মানুষ মৌলিকভাবেই সমান বলে ইসলাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম মূলের দিক দিয়েই সব মানুষের মাঝেও অভিন্ন সাম্য কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মাঝে পার্থক্য হতে পারে কেবল নেক আমল ও কল্যাণকর কার্যক্রমের ভিত্তিতে। আল্লাহ তায়ালা একথাই ঘোষণা করেছেন কুরআন মজীদের নিম্নোদ্ধৃত আয়াতেঃ

(আরবী)

হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও স্ত্রী থেকে। আর তোমাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে বিভক্ত করেছি তোমাদের পারস্পরিক পরিচিতি লাভের জন্যে। তবে আসল কথা হলো, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী সম্মানার্হ, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু।- সুরা হুজরাতঃ ১৩

এ আয়াত স্পষ্ট বলছে, মানুষ মৌলিকভাবেই এক, অভিন্ন ও সর্বতোভাবে সমান। মানুষ হিসাবে তাদের মাঝে কোনোই পার্থক্য নেই। আর মানুষকে যে বিভিন্ন গোত্র, গোষ্ঠী ও বংশ সম্ভূত করে সৃষ্টি করা হয়েছে, এর উদ্দেশ্য মানুষকে নানাভাবে বিভক্ত এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও নিঃসম্পর্ক করে দেয়া নয়, বরং তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মানুষের পারস্পরিক পরিচিতি লাভ ও পারস্পরিক গৌরব-অহংকার করা এবং নানাভাবে পার্থক্য ও ভেদাভেদের পাহাড় খাড়া করা কখনো এর উদ্দেশ্য নয়, তা করা জায়েযও নয় কারোর জন্যে। এর ভিত্তিতে কেউ কারোর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব, প্রাধান্য ও বৈশিষ্ট্যের দাবী করতে পারে না। বস্তুত ইসলামের এ মহান আদর্শ মানব সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও ভেদাভেদের মূলকেই উৎপাটিত করে দিয়েছে, শেষ করে দিয়েছে সব বংশীয় ও বর্ণীয় গৌরব অহংকার। অতঃপর প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি মানুষের মাঝে পার্থক্য ও তারতম্য করার কোনো ভিত্তি নেই? পার্থক্য করার বস্তুনির্ভর কোনো ভিত্তি যে নেই তা চূড়ান্ত। ইসলাম এ পার্থক্যের একটি ভিত্তিই শুধু উপস্থাপিত করেছে এবং তা এমন, যা মানুষের নিজস্ব গুণ ও ইচ্ছা প্রণোদিত হয়ে অর্জন করতে পারে, যে কোনো মানুষ তা লাভ করতে পারে। তার পথে কোনো বংশগত বা অর্থগত-সম্পদগত মর্যাদা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

বস্তুত ইসলামী শরীয়তে সাম্য ও সমতার শিকড় অতি গভীরে নিবদ্ধ। শরীয়তে যাবতীয় বিধি-বিধান ও আইন-কানুনেই এ সাম্য পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা এখানে এ পর্যায়ের কয়েকটি দিকের উল্লেখ করছি। এর মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ও বিচার-ব্যবস্থার সাম্যের দিকটি সবচেয়ে বেশী উল্লেখ্য।

আইনের দৃষ্টিতে মানুষের সাম্যঃ আইনের দৃষ্টিতে মানুষের সাম্য, সাম্যের এক পরম প্রকাশ। ইসলাম যে সুবিচার নীতি উপস্থাপিত করেছে এ তারই চুড়ান্ত রূপ। ইসলামে আইন সকল মানুষের প্রতিই সমানভাবে প্রযোজ্য। আইন প্রয়োগে মানুষের মানুষে মানুষে কোনোরূপ ভেদাভেদ করার নীতি ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, না বংশের দিক দিয়ে না বর্ণ, ভাষা ও সম্পদ পরিমাণের ভিত্তিতে। এমনকি আকীদা, বিশ্বাস, আত্মীয়তা, নৈকট্য, বন্ধুত্ব ইত্যাদির কারণেও আইন প্রয়োগে মানুষের মাঝে কোনোরূপ পার্থক্য করা চলবে না। হাদীসে নবী করীম স.-এর এ ঘোষণাটি এক বিপ্লবী ঘোষণা হিসাবেই উদ্ধৃত হয়েছেঃ

(আরবী)

তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছে কেবল এ বিভেদ নীতির ফলে যে, তাদের সমাজের ভদ্রলোকেরা যখন চুরি করতো, তখন তাদের কোনো শাস্তি দেয়া হতো না। পক্ষান্তরে তাদের মাঝে দুর্বল লোকেরা যখন চুরি করতো, তখন তারা তাদের ওপর কঠোর অনুশাসনই চাপিয়ে দিতো। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে, তাহলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।- তাফসীরুল উসূল, ২য় খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠা।

আইনের দৃষ্টিতে সাম্যের গুরুত্বঃ বস্তুত জনসম্পদে এরূপ নির্বিশেষে সমতা বিধানের ফলেই রাষ্ট্রের জনগণ সন্তোষ এবং নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারে। তারা কার্যত দেখতে পায় যে, এখানে কারোর প্রতিই কোনোরূপ অবিচার বা যুলুম করা হয় না, করা হয় না কারোর প্রতি এক বিন্দু পক্ষপাতিত্ব, এখানে নির্বিশেষে সকলেরই অধিকার পূর্ণ মাত্রায় সংরক্ষিত হয়। তখন তারা রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করে। এ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্যে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করতে কুণ্ঠিত হয় না।

কিন্তু এ সাম্য যদি কখনোও লঙ্ঘিত হয় আর আইন যদি কেবল দুর্বলদের ওপরই কার্যকর হতে থাকে, তখন জনগণ এ রাষ্ট্র সম্পর্কে চরম নৈরাশ্য পোষণ করতে শুরু করে। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি তাদের মনে থাকে না কোনোরূপ আন্তরিকতা। তখন তারা এর স্থিতি ও প্রতিরক্ষার জন্যে কোনোরূপ ত্যাগ

স্বীকার করতে ও প্রস্তুত হয়না। আর এর ফলেই জনগণের উপর যুলুম হতে শুরু হয়। এখানে কেবল শক্তিশালীদেরই কর্তৃত্ব চলে। শক্তিই হয় চুড়ান্ত ফয়সালাকারী, আইন নয়। জোর যার মুল্লুক তার এ-ই হয় এখানকার অবস্থা সম্পর্ক সঠিক কথা। আর কোন রাষ্ট্র যখন এ অবস্থায় পৌঁছে যায়, তখন স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এজন্য (আরবী) ভাষায় এ কথাটি প্রচলিত হয়েছে:

(আরবী)

সুবিচারকারী রাষ্ট্র কাফের হলেও টিকে থাকে আর যালেম রাষ্ট্র মুসলিম হলেও টিকে থাকেনা।

একটি দৃষ্টান্তঃ খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর ফারুক রা: এর খেলাফতের আমলে মিসরের শাসনকর্তা হযরত আমর এবনুল আছ রা: একজন কিবতী নাগরিককে অকারনে চপেটাঘাত করেছিলেন। কিবতি হযরত উমর রা: এর কাছে অভিযোগ করলো। পরে ইবনে আমর যখন খলীফার দরবারে হাযির হলেন, তখন তিনি কিবতিকে হাযির করে জিজ্ঞেস করলেন: তোমাকে এই লোক মেরে ছিলো? কিবতি বললো হ্যাঁ, এ লোকই আমাকে অকারনে চপেটাঘাত করেছিলো। খলীফা বললেন: তাহলে তুমিও ওকে মারো। এ আদেশ পেয়ে ইবনে আমরকে মারতে শুরু করলো। পরে খলীফা ওমর রা: আমর ইবনুল আসকে লক্ষ্য করে বলেন:

(আরবী)

হে আমর! কবে থেকে তুমি লোকদের গোলাম বানাতে শুরু করলে। অথচ তাদের মায়েরাতো তাদের স্বাধীন রূপেই প্রসব করেছিল?

বিচারের ক্ষেত্রে সাম্য: ইসলামী রাষ্ট্রে দেশের সকল নাগরিকই বিচারের ক্ষেত্রে সমান ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী। সে খানে যে কোন লোকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় এবং আদালত যেকোন লোককে বিচারের সম্মুখীন হতে বাধ্য করতে পারে। বিচারালয়ে কোন রূপ বাদী বিবাদীর মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করা চলেনা। এমনকি কোন শত্রু ও যদি আদালতের সামনে ফরিয়াদি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে ঠিক তেমনি আচরণই পাবে যেমন আচরণ পাবে একজন মিত্র বা স্বদেশের নাগরিক। একথাই আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন কুরআন মাজীদের নিম্নক্ত আয়াতে: হে, ঈমানদারগণ! আল্লাহর ওয়াস্তে সত্য নীতির উপর স্থায়ীভাবে দণ্ডায়মান ও ইনসাফের সাক্ষ্য দাতা হও। কোন বিশেষ দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতদূর উত্তেজিত করে না দেয় যে, (তার ফলে) ইনসাফ ত্যাগ করে ফেলবে। ন্যায় বিচার করো। বস্তুত আল্লাহর পরস্তির সাথে এর গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাক। সুরা আল মায়েদা: ৮

তিনি আরো স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এ ভাষায়:

(আরবী)

তোমরা যখন লোকদের মাঝে বিচার কার্য করবে, তখন অবশ্যই সুবিচার করবে। সুরা আন নিসা: ৫৮

বস্তুত আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ও বিচারের ক্ষেত্রে সাম্য—এ দুটোই ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। খলীফা হযরত উমর রা: গভর্নর হযরত আবু মুসা আশয়ারীকে লিখেছেন:

(আরবী)

তোমরা বৈঠকে, চেহারা ও বিচারে পূর্ণ সাম্য রক্ষা করবে লোকদের মাঝে, যেন কেউ তোমার দোষ ধরতে না পারে এবং দুর্বল লোকেরা যেন তোমার সুবিচার থেকে নিরাশ হয়ে না যায়। এনামুল মুয়াওবেকিন, ১ম খন্ড, ৭২ পৃষ্ঠা।

বস্তুত ইসলামের এ সাম্যনীতি এতই উন্নত যে, আধুনিক কালে কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থাও এর সমান হওয়া দাবি করতে পারেনা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন