মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কথা এখানেই শেষ নয়। আল্লাহর ইবাদাতের দায়িত্ব পালনের জন্যেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে তাঁরই ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু এ উদ্দেশ্যে যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।-সূরা আয যারিয়াতঃ ৫৬
কুরআনের এ ইবাদাত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক পরিভাষা। আল্লাহ তায়ালা যেসব কথা, কাজ-প্রকাশ্য বা গোপনীয়-ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন তা সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
(আরবী)
ইবাদাত শব্দের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে মানুষের যাবতীয় কথা, কাজ ব্যবহার প্রয়োগ, আয়-ব্যয় ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধ-এক কথায় মানুষের সমগ্র জীবন ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত পথও পন্থা এবং নিয়ম ও পদ্ধতি অনুযায়ী সুসম্পন্ন হওয়া কর্তব্য হয়। তা যদি করা হয় তাহলেই আল্লাহর মানব সৃষ্টি সংক্রান্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সার্থক হতে পারে। অন্যথায় মানুষের জীবনে আল্লাহর উদ্দেশ্য পূর্ণ হতে পারে না, আল্লাহর উদ্দেশ্যের দৃষ্টিতে মানব জীবন ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু মানুষের জীবনকে এদিক দিয়ে সার্থক করতে হলে গোটা সমাজ ও পরিবেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে এ দৃষ্টিতে জীবন যাপন করা তাদের পক্ষেই সহজ-সাধ্য হয়ে উঠে। কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মধ্যেই যাপিত হয় মানুষের জীবন আর মানুষ যে সমাজ পরিবেশে বসবাস করে তার দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হচ্ছে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি। এ প্রভাব স্বীকৃতির ফলেই মানুষ যেমন ভালো হয় তেমন মন্দও হয়। যেমন হয় হেদায়েতের পথের পথিক তেমনি হয় গোমরাহীর আঁধার পথের যাত্রী। সহীহ হাদীস থেকে সমাজ-পরিবেশের এ অনস্বীকার্য প্রভাবের কথা সমর্থিত। নবী করীম স. ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
প্রত্যেকটি সন্তানই প্রাকৃতিক ব্যবস্থাধীন জন্মগত প্রকৃতিতে ভূমিষ্ঠ হয়। অতঃপর তার পিতামাতা হয় তাদের ইহুদী বানিয়ে দেয়, নয় খৃষ্টান কিংবা অগ্নিপূজক। ঠিক যেমন করে পশু প্রসব করে তার পূর্নাঙ্গ শাবক। তাতে তোমরা কোনো খুঁত দেখতে পাও কি, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা তাতে খুঁত সৃষ্টি করে দাও?- আল মুনতাখাব মিনাস সুন্নাহ, ৩৯১ পৃষ্ঠা।
এ হাদীস অনুযায়ী ছোট্ট শিশুর পিতামাতা সমন্বিত সমাজই হচ্ছে তার জন্যে ছোট্ট সমাজ। এ সমাজ পরিবেশেই তার জন্ম, লালন-পালন এবং ক্রমবৃদ্ধি। অতএব পিতামাতা যে রকম হবে তাদের সন্তান হবে ঠিক তেমনি। তারা যদি পথভ্রষ্ট হয়, তাহলে তারা তাদের সন্তানকেও পৌঁছে দেবে গোমরাহীর অতল গহবরে। আল্লাহ যে সুস্থ প্রশান্ত প্রকৃতির উপর শিশুকে পয়দা করেছেন তা থেকে তারা বহিষ্কৃত করে নেয়। পক্ষান্তরে তারা যদি সত্যদর্শী ও নেককার হয় তাহলে তারা তাদের সন্তানকে আল্লাহর সৃষ্টি প্রকৃতির ওপর বহাল রাখতে এবং একে কল্যাণের পথে পরিচালিত করতে পারে। যেমন কুরআন মজীদে বলা হয়েছে যে, বিপর্যস্ত সমাজ ইসলামের বিধি-নিষেধ কার্যকরী করার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়। ফলে মুসলমান সেখানে ইসলামের উদ্দেশ্যানুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে না। তখন সেখান থেকে অন্যত্র এক অনুকূল সমাজ পরিবেশে হিজরত করে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুসলমানকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
(আরবী)
ফেরেশতাগণ যেসব লোকের জান এ অবস্থায় কবজ করেছে যে, তারা ছিল আত্ম-অত্যাচারী, তাদের জিজ্ঞেস করবে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলবে, আমরা দুনিয়ায় দুর্বল ছিলাম। তখন ফেরেশতাগণ বলবেন, আল্লাহর যমীন কি বিশাল প্রশস্ত ছিল না, সেখানে তোমরা হিজরত করে যেতে পারতে? এসব লোকের পরিণাম হলো জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত খারাপ জায়গা।-সূরা আন নিসাঃ ৯৭
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর বলেনঃ
এ আয়াত নাযিল হয়েছে সাধারণভাবে সেসব লোক সম্পর্কে যারা মুশরিক সমাজে বসবাস করে এমতাবস্থায় যে, তারা দীন কায়েম করতে সক্ষম না হলেও তারা সেখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এরূপ অবস্থায় তারা হয় আত্ম-অত্যাচারী। হিজরত না করেও কুফরি সমজে বাস করে তারা যে হারাম কাজ করেছে এ বিষয়ে তাফসীরকারদের মধ্যে ইজমা রয়েছে।-তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১ম খন্ড, ৫৪২ পৃষ্ঠা।
উপরোক্ত আয়াত এবং তার তাফসীর অনুযায়ী স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইসলামের শিক্ষানুযায়ী জীবন যাপন করা এবং শরীয়তের বিধান মত সমাজের লোকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে কেবল গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যক্তির পক্ষে ইসলামী জীবন যাপন কেবল এরূপ পবিত্র পরিবেশেই সম্ভব, সম্ভব নানা প্রকারের ইবাদাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আত্মপূর্ণতা লাভ করা। যে সমাজ সেরূপ নয় সেখানে তা সম্ভবও নয়।
কিন্তু ইসলামী সমাজ গঠন করা কিভাবে সম্ভব? তা কি শুধু ওয়াজ-নসীহত বক্তৃতা-ভাষণেই কায়েম হতে পারে?…না তা সম্ভব নয়। সে জন্যে প্রয়োজন পূর্নাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। ইসলামী রাষ্ট্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সম্ভব ইসলামের আদর্শ সমাজ গঠন। কেননা, এরূপ একটি রাষ্ট্র কায়েম হলেই তা দ্বারা ইসলামের পক্ষে ক্ষতিকর মতামত প্রচার ও শরীয়ত বিরোধী কাজ-কর্ম বন্ধ করা সম্ভব। এ কাজের জন্যে যে শক্তি ও ক্ষমতার প্রয়োজন তা কেবল এ রাষ্ট্রের হাতেই থাকতে পারে, কোনো বেসরকারী ব্যক্তি বা সমাজ সাধারণের হাতে এ শক্তি ও ক্ষমতা কখনো থাকে না। কুরআনের আয়াত থেকেও তা প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
বস্তুত আমি পাঠিয়েছি আমার নবী-রসূলগণকে এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মানদণ্ড-যেন লোকেরা ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আরো নাযিল করেছি লৌহ। এর মধ্যে রয়েছে বিযুক্ত অনমনীয় শক্তি এবং জনগণের জন্য অশেষ কল্যাণ। আরো এজন্য যে, কে আল্লাহ এবং তার রসূলের অগোচরে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে তাকে যেন আল্লাহ জানতে পারেন।-সূরা আল হাদীদঃ ২৫
লৌহ মানে শক্তি-রাষ্ট্রশক্তি, যে লোক কুরআনের হেদায়াত পেয়ে দীনের পথে চলতে উদ্যোগী হবে না, রাষ্ট্রশক্তি তাকে গোমরাহী ও বিপর্যয় সৃষ্টির পথ থেকে বিরত রাখতে পারবে। নৌকার আরোহীরা ডুবে মরুক – এ উদ্দেশ্যে নৌকায় ছিদ্র সৃষ্টি করার অধিকার কাউকে দেয়া যেতে পারে না। সমাজকে য শক্তি বিপর্যয় ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করতে পারে তাহলো রাষ্ট্রশক্তি, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। হযরত উসমানের একটি কথা স্মরনীয়ঃ
কুরআন দ্বারা যে হেদায়াত প্রাপ্ত হয় না আল্লাহ তাকে রাষ্ট্রশক্তি দ্বারা হেদায়াত করেন।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা যখন ইসলামী শরীয়তের স্বাভাবিক দাবীও প্রবণতা, শুধু তা-ই নয় ইসলামী শরীয়ত যখন তারই জন্য নির্দেশ দেয় তখন সে কাজ রসূলে করী স. এরও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে পারে না। তাই ইতিহাস প্রমাণ করেছে, রসূলে করীম স. এমনি একটি রাষ্ট্র কায়েমের জন্য মক্কা শরীফে থাকাবস্থায়-ই বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আর তার সূচনা হয়েছিল আকাবার দ্বিতীয়বারের শপথ কালে এবং মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করার পূর্বেই এ প্রচেষ্টা সম্পূর্ণতা লাভ করেছিলো। ইতিহাসে এ পর্যায়ে যে বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধৃত হয়েছে তার সারকথা হলোঃ মদীনার মুসলমানদের একটি প্রতিনিধি দল মক্কা শরীফে এক গোপন স্থানে রসূলে করীম স.-এর সাথে মিলিত হয়। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে তাদের সংখ্যা ছিলো তিয়াত্তর জন। এ গোপন বৈঠকে রসূলে করীম স. তাদের সামনে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করার দাওয়াত পেশ করেন। এ দাওয়াত পেশ করার পর প্রতিনিধি দলের একজন বলেনঃ হে রসূল! আপনার হাতে বাইয়াত করবো কোন কথার ওপর? রসূলে করীম স. বলেনঃ তোমরা আমার হাতে এই বলে বাইয়াত করবে যে, তোমরা ভালো ও মন্দ উভয় অবস্থাতেই আমার কথা শুনতে ও মেনে চলতে প্রস্তুত থাকবে, তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ থেকে লোকদের নিষেধ করবে-বিরত রাখবে। আর তোমরা আল্লাহর কথা বলবে, কিন্তু তাতে কোনো উৎপীড়কের ভয় করবে না। আর তোমাদের বাইয়াত হবে একথার ওপর যে, তোমরা আমার সার্বিক সাহায্য করবে। আর আমি যখন তোমাদের মাঝে এসে বসবাস করতে থাকবো তখন যেসব ব্যাপার থেকে তোমরা নিজেদেরকে, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে রক্ষা করো তা থেকে তোমরা আমাকেও রক্ষা করবে। আর এর বিনিময়ে তোমাদের জন্যে জান্নাত নির্দিষ্ট থাকবে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।