hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সর্বযুগের বিশ্বস্ত নবী

লেখকঃ কামাল উদ্দিন মোল্লা

১৫
(৫) এই রিসালতের চিন্তা পদ্ধতি:
এই রিসালতের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আর একটি হচ্ছে হক্ব অনুসন্ধানে এর রয়েছে চিন্তা পদ্ধতি। এই রিসালত একজন মানুষকে পুরোপুরিভাবে সম্বোধন করে- তার বোধ শক্তি ও আত্মাকে সমান ভাবে। যেমন কুরআন উদ্বুদ্ধ করে মানুষের অনুভূতিকে যাতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়; সৃষ্টি জগতে আল্লাহর নিদর্শন সমূহ প্রতক্ষ্যে। অতঃপর অনুভব করতে পারে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব এতে করে বিনত হয় তার মানসিক আল্লাহর বড়ত্বের কাছে এবং তার অনুগত্য মেনে নেয়। অনুরূপভাবে কুরআন জাগ্রত করে মানুষের চিন্তা শক্তি। যাতে সে গবেষণা ও চিন্তা করে, বাস্তব ভিত্তিক আলোচনা করে ইয়াক্বীন বা সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারে। অনুভূতিকে জাগ্রত করার জন্য এ ধরনের আয়াত দ্বারা তাকে সন্বোধন করা হয়।

قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى آَللَّهُ خَيْرٌ أَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿৫৯﴾ أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنْزَلَ لَكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنْبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُنْبِتُوا شَجَرَهَا أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ ﴿৬০﴾ أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ﴿৬১﴾ أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ ﴿৬২﴾ أَمَّنْ يَهْدِيكُمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَنْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ تَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿৬৩﴾ أَمَّنْ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَمَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿৬৪﴾ ( النمل : ৫৯-৬৪(

বল সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তার মনোনীত বান্দাদের প্রতি। শ্রেষ্ঠ কে আল্লাহ না ওরা তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে। বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষন করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শিক্তই তোমাদের নেই। অতএব আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্য বিচ্যুত সমপ্রদায়। বল তো কে পৃথিবীতে বসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থির রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানেনা। বলতো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থালাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর। বলতো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তার অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদ বাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা থেকে অনেক উর্দ্ধে। বলতো কে প্রথবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করেন এবং কে তোমাদের আকাশ ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।

আকল বা বুদ্ধিকে জাগ্রত করার জন্য এজাতীয় আয়াত দ্বারা সন্বোধন করেন-

أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لَا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿ألنحل :১৭﴾

যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি সে লোকের সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না। তোমরা কি চিন্তা করবেনা?

لَوْ كَانَ فِيهِمَا آَلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا ( الأنبياء : ২২(

যদি নভোমন্ডলে ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকতো তবে উভয়েরই ধ্বংস হয়ে যেত।

مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِنْ وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ إِذًا لَذَهَبَ كُلُّ إِلَهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ﴿ ألمؤمنون :৯১﴾

আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا ﴿ ألمؤمنون :৮২﴾

এরা কি লক্ষ্য করে না? কুরআনে পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর করও পক্ষ থেকে হতো তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেতো।

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ ﴿৩﴾ ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ ﴿৪﴾ سورة الملك

তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুনাময় আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবেনা। আবার দৃষ্টি ফিরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آَبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آَبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ ﴿১৭০﴾ سورة البقرة

আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমের আনুগত্য কর যা আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না। আমরা তো সে বিষয়ের অনুসরণ করব যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ- দাদারা কিছুই জানতোনা, জানতোনা সরল পথও।

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا ﴿ألاسراء :৩৬﴾

যে বিষয় তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটাই জিজ্ঞাসিত হবে।

قُلْ إِنَّمَا أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ أَنْ تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَى وَفُرَادَى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا مَا بِصَاحِبِكُمْ مِنْ جِنَّةٍ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ ﴿سبأ :৪৬﴾

বল আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই দুইজন অথবা এক একজন করে দাঁড়াও, অতঃপর তোমরা চিন্তা করে দেখো তোমাদের সঙ্গী আদৌ উম্মাদ নয়। সে তো আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তোমাদের সতর্ককারী মাত্র।

উল্লেখিত আয়াত ও অনুরূপ যে সব আয়াত আছে সেগুলো সম্মিলিতভাবে চিন্তা পদ্ধতির একটি রূপ রেখার জন্ম দেয়। যা চিন্তাশীল ব্যক্তিদের হক্বের দিকে পৌঁছায়।

তা সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্টে উল্লেখ করা যেতে পারে-

অন্ধনুকরণ ও বাপ- দাদাদের থেকে প্রাপ্ত, দলিল প্রমান বিহীন রসম-রেওয়াজকে পরিত্যাগ করা।

কোন মতাদর্শ যাচাই ও যুক্তিক প্রমান নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে তার অনুকরণ না করা। কারণ মানুষকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে চিন্তা ও গবেষণা করার। আল্লাহ তাকে কান, চক্ষু ও বুদ্ধি দিয়েছে সে নিজে চিন্তা করবে যাচাই করবে। কিয়ামতে সে জিজ্ঞাসিত হবে কেন সে অনুকরণ করল? বিষয়ের ভালো- মন্দ না জেনে।

সকল বিষয় যুক্তি গ্রাহ্য চিন্তা করা প্রবৃত্তি মত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা, কারণ প্রবৃত্তি মানুষকে হক্ব থেকে অন্ধ করে রাখে।

মানুষ যখন এ পদ্ধতির অনুসরণ করে, প্রমাণ বিহীন রসম রেওয়াজ প্রত্যাখ্যান করবে অন্ধনুকরণ থেকে দূরে থাকবে দলিল ছাড়া কোন বিষয় গ্রহনে রাজী হবে না। অতঃপর প্রবৃত্তি হতে মুক্ত হয়ে বুদ্ধি বিবেক দিয়ে বাস্তব ভিত্তিক চিন্তা করবে আল্লাহর ইচ্ছায় সে হক্ব পথে পরিচালিত হবে।

পূর্বেকার সকল রিসালত হতে এ রিসালত স্বতন্ত্রতা পেয়েছে চিন্তা পদ্ধতির মাধ্যমে। কারণ পূর্বেকার সকল রিসালতে প্রত্যক্ষ মুজিযাই প্রামাণ হিসেবে উত্থাপিত হতো আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূলের প্রমাণ হিসেবে। আল্লাহ প্রেরিত রাসূলদের উপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যম ছিল তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য মুজিজা পেশ। যা মানুষ প্রত্যক্ষ করত অথবা শুনতো।

কিন্তু রিসালতে মুহাম্মদী যা আল্লাহর ইচ্ছা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এর উপর বিশ্বাস স্থাপনকে আল্লাহ তাআলা আকল বুদ্ধির মুখোমুখি করে দিয়েছেন। যাতে সম্বোধন করা যায় সকল মানুষকে এই রিসালত অবতীর্ণ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত। আকল বুদ্ধি মানুষের সঙ্গে যুগের পর যুগ সকল সময় সকল স্থানে বিরাজ করে। শুধু প্রত্যক্ষ কোন মুজিযা নির্দিষ্ট কোন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে নয়। মানুষের ভিতর অবস্থিত এই সুপ্ত যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে আহ্বান জানায় হক্বের আনুগত্য করতে যদি সে সঠিক ভাবে এই বুদ্ধি কে ব্যবহার করে তা হলে হক্ব গ্রহনের বিকল্প অন্য কিছু থাকবেনা। কুরআন কখনো অন্ধ বিশ্বাস করতে আহ্বান করেনা, বরং সকল বিষয় বুদ্ধি বিবেক ব্যবহারের আহ্বান জানায়। এমনকি স্রষ্টার একত্ববাদের স্বকৃতি বিষয়েও - যে আনুগত্য তার জন্য ফরজ। যাতে করে সে পরিতৃপ্তি সহ আনুগত্য করে। তাহলে এ বিশ্বাস হবে অটল- অবিচল কোন সন্দেহ সংশয় থাকবেনা। স্রষ্টা, সিরালত, ওহী পুনরুত্থান এ সব হচ্ছে ঈমানের মূল ভিত্তি। এখানেও কুরআন প্রমান বিহীন আনুগত্যের আহ্বান করেনা। বরং মানুষকে বলে, চিন্তা কর বুদ্ধি খাটাও এবং নিজেকে জিজ্ঞেস কর আল্লাহর সাথে কি কোন উপাস্য আছে? আল্লাহ কি রাসূল প্রেরণ, ওহী অবতীর্ণ করা, মৃতকে জীবিত করা, ও তাদের হিসাব গ্রহনে অক্ষম? যদি বুদ্ধি ব্যবহারের পর উত্তর হয় না, তিনি অক্ষম নয়। তবে ঈমান গ্রহণ ও আল্লাহকে স্বীকার করা তোমার উপর ফরজ।

এর মানে এই নয় যে মানুষের বুদ্ধি সবকিছু আয়ত্ব করতে সক্ষম বরং যার পরনাই চেষ্টা করে ও সে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম আহ্বান জানায় অনুমোদিত সকল পন্থায় সে তার বুদ্ধিকে ব্যবহার করবে ঈমানের মৌলিক বিষয় সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে। এই ক্ষেত্রে ইসলামেই অন্য সকল রিসালত থেকে স্বতন্ত্র।

এরপরও কথা থাকে চিন্তার স্বাধীনতা ইসলাম শুধু আক্বিদাহ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করেনি। বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই স্বাধীনতা দিয়েছে।

কুরআন মানব বিবেকের কাছে যেমন এই দাবী করে যে সে স্রষ্টাকে জানার জন্য তার নিদর্শন সমূহে চিন্তা গবেষণা করবে। তেমনিভাবে এই দাবীও করে, যেন সে আল্লাহর নিদর্শন সমূহে চিন্তা গবেষনা করে, যাতে সে বুঝতে পারে বিশ্বজগৎ সম্পর্কীয় আল্লাহর নিয়ম নীতি; যার উপর নির্ভর করে এ জগৎ পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে সে আল্লাহ তাআলা তার অধীন করে দেয়া বস্তু ও শক্তিকে ব্যবহার করতে জানতে পারবে।

وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ ﴿الجاثية :১৩

এবং আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য যা আছে নভোমন্ডলে যা আছে ভূ মন্ডলে তার পক্ষ থেকে।

وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آَيَتَيْنِ فَمَحَوْنَا آَيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آَيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا ﴿الأسراء :১২﴾

আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিসপ্রভ করে দিয়েছি রাত্রের নিদর্শন ও দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের পালন কর্তার অনুগ্রহ অন্বেষন কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পার বছর সমূহের গননা ও হিসাব এবং আমি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ َ ﴿ألبقرة :১৮৯﴾

তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা মানুষের ও হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক।

لقد جعل الله لكل داء دواء فاذا مرضتم فتداووا . ( ابو داؤد :৩৩৭৬(

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেছে অতএব অসুস্থ্য হলে তোমরা চিকিৎসা কর।

কুরআন ও সুন্নাহর এ জাতীয় উপদেশ দিকনির্দেশনা দর্শন করা যথেষ্ট নয় বরং তার কারণ অনুসন্ধানে দৃষ্টি দিতে হবে। উম্মতে মুসলিমাহ তো এই জন্যেই প্রেরিত হয়েছিল যে, তারা সমকালিন বৈধ উৎস হতে জ্ঞান আহরণ করবে। অতঃপর এ সঞ্চিত জ্ঞান দিয়ে উদ্ভাবন করবে নিজস্ব বিজ্ঞানাগার, যে বিজ্ঞানাগারের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এক সময় ইউরোপ জন্ম দিয়েছিল বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের। এই বিপ্লবের উল্লেখ যোগ্য পদ্ধতি ছিল- দর্শন, পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলন। যার উপরই প্রতিষ্ঠিত হয় সকল আধুনিক বৈজ্ঞানিক সভ্যতার। এমনি ভাবে কুরআন দাবী করে মানব বিবেকের কাছে সে যেন আল্লাহর বিধানে তাৎপর্যপূর্ণ চিন্তা, গবেষণা করে। যতটুকু তার জন্য বৈধ করা হয়েছে। যেন পরক্ষণে এই বিধানের বাস্তবায়ন হয় পরিপূর্ণ সতর্কতা ও সুনিপুনভাবে। এজন্য লক্ষ্য করা যায় যে আল্লাহ তাআলা আহকামের আয়াতের সমাপ্তি এভাবে করেছেন।

كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآَيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ﴿ألنور :৬১﴾

এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াত সমূহ বিশদ ভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝে নাও।

এই দিক নির্দেশনা থেকেই সৃষ্টি হয় ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের, এ হলো মহামূল্যবান এক বিস্ময়কর ফল যা মুসলিম মেধা হতে জন্ম হয়েছে। এই উদ্ভাবনী আজও কার্যকর। জীবনের উন্নয়নের জন্য, যত দিন জীবন থাকবে ততদিন এর কার্যকারিতাও থাকবে। এমনি ভাবে ইসলাম, মানব বিবেককে দৃষ্টি দিতে বলে আল্লাহর পরিকল্পনা ও রীতি প্রকৃতির দিকে যার উপর ভর করে পৃথিবীতে মানব জীবন পরিচালিত হচ্ছে।

وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا ﴿ألفتح :২৩﴾

তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ( الرعد :১১(

আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴿ الروم :৪১﴾

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান যাতে তারা ফিরে আসে।

وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا ﴿ألأسراء : ১৬﴾

যখন আমি কোন জনপথ কে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদের উদ্বুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জন গৌষ্ঠীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿الأعراف :৯৬﴾

আর যদি সে জন পদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারী অবলম্বন করত তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ ﴿الأنعام :৪৪﴾

অতঃপর তারা যখন ঐ উপদেশ ভূলে গেল, যা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল তখন আমি তাদের সামনে সব কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। এমনকি যখন তাদেরকে প্রদত্ত বিষয়াদির জন্যে তারা খুব গর্বিত হয়ে পড়ল, তখন আমি আকস্মীক তাদেরকে পাকড়াও করলাম। তখন তারা নিরাশ হয়ে গেল।

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ( الأنفال : ২৫)

আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম।

لتأمرن بالمعروف ولتمنعن عن المنكر أو ليوشكن الله إن يبعث عليكم عذابا منه ثم تدعونه فلا يستجاب لكم . ( الترمذي :২৯০)

অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে বাধা দিবে নচেৎ আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবে অতঃপর তোমরা দুয়া করবে তবে তা গ্রহণ হবে না।

এই দিক নির্দেশনা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যাতে জানতে পারে, যে তার জীবন নিয়ম নীতি ছাড়া চলছেনা, এবং এমন নয় যে তার কর্মের ফলাফল নেই। বরং মানুষ যে আমলেই করুক ব্যক্তিগত অথবা দলবদ্ধ তার একটা পরিণতি আছে চাই তা দুনিয়াতে হোক অথবা পরকালে। এবং তা হবে আল্লাহর নিজস্ব নিয়ম রীতি অনুযায়ী। ব্যক্তি অথবা দল বিশেষের জন্য এতে কোন পরিবর্তন হবে না। এ জন্য মানুষের উচিৎ সে নির্ধারণ করবে কোন রীতি নিয়ম তার জন্য উচিত হবে এবং কোন কাজ করার পূর্বে তার পরিণতিও সে জেনে নিবে।

قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُروا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿آل عمران : ১৩৭﴾

তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে।

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ ﴿ألحج :৪৬﴾

তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকার হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষুতো অন্ধ হয়না, কিন্তু বক্ষাস্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।

অতএব দাবী হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া। ঘটনাবহুল মানব ইতিহাস এমনিতে সৃষ্টি হয়নি বরং আল্লাহর সুচিন্তিত নীতিতেই জীবনাচরণ অগ্রসর হয়। এবং একটা ঘটনার সাথে অপর ঘটনার আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ যোগসূত্র রয়েছে এবং সেসব রব্বানি জীবনাচরণের প্রতিষ্ঠিত নিয়মেই ঘটছে। অতএব, যখন আকল তাহা চিন্তা করবে এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিবে, নিশ্চিত যে পূর্ববর্তী মানব সমাজ যেসব ভুল করেছিল সে ঐ সব ভুলে নিমজ্জিত হবেনা। বরং তার ভুল সে সংশোধন করে নিবে যাতে দুনিয়াতে আল্লাহর নিয়ম নীতির সাথে সংঘাত না হয় এবং এই সতর্কতা তাকে পরিচালিত করবে পরকালের শান্তি ও নিরাপত্তার দিকে। আলোচনার আলোকে বলতে পারি, যেসব ক্ষেত্রে ইসলাম মানব বিবেককে চিন্তা ও গবেষণা করতে বলে এমন ক্ষেত্র পাঁচটি।

(ক) সৃষ্টি জগতে আল্লাহর নিদর্শন সমূহে চিন্তা- গবেষণা করা যাতে স্রষ্টার পরিচয়, তারপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তার আনুগত্য অর্জন করা যায়।

(খ) সৃষ্টি জগতে আল্লাহর নিদর্শন সমূহে চিন্তা গবেষণা করা প্রকৃতি শক্তিকে আহরণের জন্য। যার উপর বিশ্ব জগত চলছে, যাতে তার শক্তি কাজে লাগানো যায়, অধীনে নেয়া যায় ভূমন্ডল বিনির্মানের জন্য।

(গ) আল্লাহর প্রজ্ঞাময় বিধানে চিন্তা করা যাতে মানব জীবনের নতুন নতুন বিষয়ে তা প্রয়োগ করতে সুন্দর হয়।

(ঘ) রব্বানী রীতি-নীতিতে চিন্তা গবেষণা করা যে রীতিনুযায়ী ভুখন্ডে মানব জীবন পরিচালিত হয়, মানব সমাজকে সুবিন্যস্ত করার জন্যে।

(ঙ) ভুল থেকে বাঁচতে অতিক্রান্ত মানব ইতিহাসে চিন্তা করা উপদেশ গ্রহণ করা যাতে সরল পথে অবিচল থাকা যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন