মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
নিকৃষ্ট আলেম এবং পথভ্রষ্ট ইবাদত-কারীদের থেকে সতর্কীকরণ:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/344/15
সুদ্দী বলেন: الأحبار হচ্ছে ইয়াহূদী ধর্মযাজক আর الرهبان হচ্ছে খৃষ্টান সন্ন্যাসী। এই মত সঠিক। কেননা الأحبار হচ্ছে ইয়াহূদী পণ্ডিতরা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿لَوۡلَا يَنۡهَىٰهُمُ ٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ عَن قَوۡلِهِمُ ٱلۡإِثۡمَ وَأَكۡلِهِمُ ٱلسُّحۡتَۚ ٦٣﴾ [ المائدة : ٦٣ ] “রব্বানী ও পুরোহিতগণ তাদেরকে পাপ কথা বলা হতে এবং হারাম ভক্ষণ থেকে নিষেধ করে না কেন?” [সূরা আল-মায়েদা: ৬৩] আর الرهبان হচ্ছে খৃষ্টান উপাসক, قسيس হচ্ছে তাদের পণ্ডিতরা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّيسِينَ وَرُهۡبَانٗا ٨٢﴾ [ المائدة : ٨٢ ] “কেননা তাদের মধ্যে ‘ইবাদতকারী ‘আলিম ও সংসার বিরাগী আছে।” [সূরা আল-মায়েদা: ৮২] উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিকৃষ্ট আলেম এবং পথভ্রষ্ট ইবাদতকারীদের থেকে সতর্কীকরণ, যেমন সুফিয়ান ইবনু উইয়াইনা বলেন: আমাদের আলেমগণের মধ্যে যারা নষ্ট হয়ে গেছে তাদের মাঝে ইয়াহূদীদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। আর আমাদের মাঝে যে সমস্ত ইবাদতকারী নষ্ট হয়ে গেছে তাদের মধ্যে খৃষ্টানদের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অনুরূপ সহীহ হাদিসে এসেছে: তোমরা ধাপে ধাপে তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতির অনুসরণ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন: ইয়াহূদী-নাসারাদের কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: তবে আর কাদের? অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: পারস্য ও রোমের? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ওরা ছাড়া লোকদের মাঝে আর কাদের?
মোদ্দাকথা হচ্ছে: এখানে ইয়াহূদী-নাসাদের কথাবার্তা ও কার্যকলাপের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: لَيَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ “ভুয়া কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষদের সম্পদ গ্রাস করে থাকে আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে” কেননা তারা দীনের পরিবর্তে দুনিয়া, লোকদের মাঝে তাদের পদমর্যাদা ও নেতৃত্বের সুফল ভোগ করে আর এর মাধ্যমে তারা তাদের ধনসম্পদ ভোগ করে। যেভাবে জাহেলী যুগে লোকদের মাঝে ইয়াহূদী পণ্ডিতদের মর্যাদা ছিল, তারা তাদেরকে উপঢৌকন, খাজনা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করত। এরপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেন তখন তারা তাদের গোমরাহি, কুফরী ও একগুঁয়েমির উপরে অটল থাকে এ লোভে পড়ে যে, তাদের সে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব টিকে থাকবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা নবুওয়তের আলোর মাধ্যমে তাকে নিভিয়ে দেন। তাদের থেকে সেই নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব কেড়ে নেন। তার পরিবর্তে তাদের উপর অপমান অপদস্থতা চাপিয়ে দেন, তারা নিজেদের উপরে আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টি ডেকে আনে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۗ “আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে” তারা তাদের হারাম ভক্ষণের পাশাপাশি লোকদেরকে সত্যের অনুসরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে। সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে আর যারা অজ্ঞতাবশত তাদের অনুসরণ করে তাদের নিকট তারা প্রকাশ করে যে, তারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সেরূপ নয় যেমন তারা ধারণা করে; বরং তারা হচ্ছে জাহান্নামের প্রতি আহ্বানকারী। আর কিয়ামত দিবসে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্যকে জমা করে রাখে তাদের শাস্তি:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও” এরা হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ। কেননা লোকেরা সাধারণত তাদের মধ্যেকার পণ্ডিত (আলেম), ইবাদাতকারী ও সম্পদশালী লোকদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। যখন এই শ্রেণীর লোকেরা নষ্ট হয়ে যায় তখন লোকদের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। যেমন পূর্ববর্তী মনিষীদের কেউ কেউ (আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক) বলতেন:
রাজা-বাদশাহ এবং নিকৃষ্ট ‘আলিম ও দরবেশদের ছাড়া আর কারও দ্বারা কি দীন নষ্ট হয়েছে?
الكنز সম্পর্কে মালিক রহ. আব্দুল্লাহ ইবনু দীনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে, তিনি বলেন: সেটা হচ্ছে যে সম্পদের যাকাত আদায় করা হয় না।
ইমাম বুখারী যুহরী থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, খালিদ ইবনু আসলাম বলেন: আমরা আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে বের হলে তিনি বলেন: এটা হচ্ছে যাকাতের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের বিধান, এরপর যখন যাকাতের আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তিনি সেটাকে মালের পবিত্রকারী হিসেবে গণ্য করেন। ওমর ইবনু আব্দুল আযীয এবং এরাক ইবনু মালিকও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন: তারা বলেন, এ আয়াতটিকে ﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ﴾ [ التوبة : ١٠٣ ] “তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করবে” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৩] এ আয়াত রহিত করে দিয়েছে।
স্বল্প পরিমাণ স্বর্ণ-চাঁদি থাকার প্রশংসা করে এবং তা বেশি থাকার নিন্দা জানিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে তার কয়েকটি বর্ণনা করব যা অন্যান্যগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে। আব্দুর রাযযাক বর্ণনা করেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: স্বর্ণের জন্য দুঃখ, চাঁদির জন্য দুঃখ। তিনবার তিনি একথা বলেন: তিনি (আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের নিকট অত্যন্ত জটিল মনে হয়। তাঁরা বলেন: তাহলে আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করব? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আচ্ছা আমি তোমাদের জন্য বিষয়টি তাঁর নিকট জেনে নিচ্ছি। ফলে তিনি বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার সাহাবীগণের নিকট তো বিষয়টি ভারি হয়ে গেছে। তারা বলেছে: আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করব? তিনি বলেন: যিকিরকারী জবান, শুকরিয়া আদায়কারী অন্তর এবং এমন স্ত্রী যে তোমাদের কাউকে তার দীনের ব্যাপারে সাহায্য করে।
“যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে আর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে, (আর তাদেরকে বলা হবে) এটা হল, যা তোমরা নিজেদের জন্য স্তূপীকৃত করেছিলে। কাজেই যা জমা করছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর।” [সুরা আত-তাওবাহ: ৩৫]
এ কথা তাদেরকে তিরস্কার, সমালোচনা এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে বলা হবে। যেমন তিনি এ আয়াতে বলেন,
“অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে ‘আযাব দাও। (বলা হবে) গ্রহণ কর স্বাদ-তুমি তো ছিলে ক্ষমতাশালী, সম্মানী।” [সূরা আদ-দুখান:৪৮-৪৯] অর্থাৎ এ শাস্তি, এ কারণে যে, এটা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করতে। এ কারণে বলা হয়: যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের উপরে কোনো কিছুকে ভালোবাসবে এবং সেটা প্রাধান্য দিবে -এর দ্বারা তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের নিকট এ সমস্ত ধন-সম্পদ জমা করা যখন আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে অধিক প্রিয়, তখন এর মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। যেভাবে আবু লাহাব-তার উপরে আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে শত্রুতায় চেষ্টিত ছিল আর তার স্ত্রী এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল। সে কিয়ামত দিবসেও আবু লাহাবের শাস্তির ক্ষেত্রে সাহায্যকারিণী হবে। তার ঘাড়ে রয়েছে পাকানো আগুনের রশি। অর্থাৎ সে জাহান্নাম থেকে জ্বালানি একত্রিত করে তার উপরে নিক্ষেপ করবে, যাতে করে তার শাস্তি চরমে পৌঁছে- যেটা তার নিকট দুনিয়াতে অধিক ভয়ের কারণ ছিল। যেভাবে এ সমস্ত সম্পদ তাদের নিকট তাদের রবের চেয়ে অধিক সম্মানের ছিল অনুরূপভাবে সেটা তাদের জন্য পরকালে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হবে। এগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, এটা হবে চরম পর্যায়ের গরম। এরপর এর দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে।
ইমাম আবু জা‘ফার ইবনু জারীর বর্ণনা করেন, সাউবান বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ ছেড়ে মারা যায় (যেগুলোর সে যাকাত আদায় করে নি) কিয়ামত দিবসে সেগুলোকে টেকো বিষধর স্বর্পে পরিণত করা হবে। যার চোখের উপরে দু’টো কালো দাগ হবে। এই সাপটি তাকে অনুসরণ করবে। তখন সে বলবে: তুমি ধ্বংস হও, কে তুমি? সে বলবে: আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ যা তুমি তোমার পরে ছেড়ে গিয়েছিলে। সে তাকে অনবরত অনুসরণ করেই চলবে এমনকি লোকটি তাকে তার হাত দিবে ফলে সে তা গিলে ফেলবে। অবশেষে তার পুরো দেহকে সে গিলে নিবে। ইবনু হিব্বান তাঁর সহীহতে বর্ণনা করেছেন, ইয়াযীদ সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন, এ হাদীসের মুল সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করে না কিয়ামত দিবসে সেটাকে আগুনের থালায় রুপান্তরিত করা হবে। এর দ্বারা তার পার্শ্বদেশে, কপালে এবং পৃষ্ঠদেশে এমন একদিন দাগ দেওয়া হবে যার দৈর্ঘ্য হবে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান। এমনকি বান্দাদের মাঝে বিচার-ফায়সালা সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর তাকে তার গন্তব্য দেখানো হবে- হয় জান্নাত নয়ত জাহান্নাম। তিনি সম্পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন।
ইমাম বুখারী এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, যাইদ ইবনু ওয়াহ্হাব বলেন: আমি রাবাযাহ নাকম স্থানে আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে অতিক্রমকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করি: কীসে আপনাকে অত্র এলাকায় বসবাস করতে উদ্বুদ্ধ করেছে? তিনি বলেন: আমি শামে ছিলাম, এরপর আমি وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও” এ আয়াত পাঠ করি। তখন মু‘আবিয়া বলেন: এই আয়াত আমাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় নি, এ তো শুধুমাত্র আহলে কিতাবীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন: আমি বলি এটা আমাদের এবং তাদের (উভয়ের) ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
“৩৬. আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসগুলোর সংখ্যা হল বারো। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হল সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা। কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর জুলুম করো না। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৩৬]
বারো মাসে এক বৎসর:
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আবু বাকরাহ বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হজের ভাষণে বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যখন থেকে আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে সময় তার আপন অবস্থায় (বারবার) ঘুরে আসে। বৎসর হচ্ছে বার মাসে, তার মধ্যে চারটি পবিত্র- তিনটি পরস্পর ধারাবাহিকভাবে আসে (সেগুলো হল) যিলক্বদ, যিলহজ এবং মুহাররম। আর মুদার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা ও শাবান মাসের মাঝে রয়েছে। এরপর তিনি বলেন: আজ কোন দিন? আমরা বলি: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বেশি ভালো জানেন। এরপর তিনি (কিছুক্ষণ) চুপ থাকেন এমনকি আমরা ধারণা করি তিনি হয়ত এর অন্য নাম দিবেন। তারপর তিনি বলেন: এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বলি: অবশ্যই। এরপর তিনি বলেন: এটা কোন শহর? আমরা বলি: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বেশি ভালো জানেন, এরপর তিনি (কিছুক্ষণ) চুপ থাকেন এমনকি আমরা ভাবি, তিনি অচিরেই এর অন্য কোনো নাম রাখবেন। তারপর তিনি বলেন: এটা কি (পবিত্র) নগরী নয়? আমরা বলি: অবশ্যই। তিনি বলেন: নিশ্চয় তোমাদের পরস্পরের জান, তোমাদের মাল, আমার ধারণা- তিনি এও বলেন:- তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের নিকট তেমনি পবিত্র যেমন তোমাদের এই মাসে তোমাদের এই নগরে তোমাদের আজকের এই দিনটি তোমাদের নিকট পবিত্র। অচিরেই তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাত করবে। এরপর তিনি বলেন, তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। জেনে রাখ, তোমরা একে অপরের গর্দানে আঘাত করে গোমরাহিতে ফিরে যেও না। হে উপস্থিতি, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে তোমাদের যারা উপস্থিত রয়েছ তারা অনুপস্থিতদের নিকট (আমার বাণী) পৌঁছে দিবে। সম্ভবত যাকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সে কতক অংশে যে পৌঁছাচ্ছে তার চেয়ে অধিক বোধশক্তি সম্পন্ন।” ইমাম বুখারী তাফসীর এবং অন্য প্রসঙ্গে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, ইমাম মুসলিমও তা বর্ণনা করেছেন।
[অধ্যায়]
শাইখ আলামুদ্দীন আস-সাখাবী তাঁর ছোট্ট পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন আর তার নাম দিয়েছেন: المشهور في أسماء الأيام والشهور অর্থাৎ ‘প্রসিদ্ধ’ দিবস ও মাসসমূহের নামের ব্যাপারে (লিখিত গ্রন্থ) তাতে তিনি বলেন,
[মাসসমূহের নাম]
মুহাররম মাসের নাম (মুহাররম) রাখা হয়েছে কেননা সেটা সম্মানিত মাস। আমার মতে এ মাসে অন্যায় কাজ করা হারাম হওয়ার অধিক গুরুত্ব বুঝাতে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা আরবরা একে অদল-বদল করত। এক বৎসর তারা বলত এটা পবিত্র মাস, আবার অন্য বৎসর বলত এটা নিষিদ্ধ মাস। এর বহুবচন কয়েক ভাবে হয়। যেমন, محرمات , محارم , محاريم
সফর মাসকে এ জন্য صفر বলা হয়; কেননা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে লোকেরা তাদের বাড়ি-ঘর পরিত্যাগ করত। বলা হয় صفر المكان সে স্থান খালি করেছে। এর বহুবচন হচ্ছে أصفار যেমন, جمل ও أجمل
রবিউল আউওয়াল এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, এ মাসে লোকেরা তাদের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করত। এর বহুবচন হচ্ছে أربعاء যেমন نصيب থেকে أنصباء তবে এর বহুবচন أربعة ও হয়। যেমন - رغيف থেকে أرغفة রবিউল আখির আউওয়ালের মতই।
جمادى এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে এ সময় পানি জমে যায়।
তিনি বলেন: তাদের হিসেবে মাসসমূহ (প্রতি বৎসর) আগপাছ হয় না। (অর্থাৎ মওসুমগুলোতে) কিন্তু এ কথায় আপত্তি রয়েছে। কেননা মাসসমূহ চন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত ফলে অবশ্যই তা (মওসুমসমূহে) আগপাছ হয়। সম্ভবত সর্বপ্রথম তারা যখন এর নামকরণ করে তখন ঠাণ্ডায় পানি জমে গিয়েছিল (কিন্তু প্রত্যেক বৎসরে শীতের সময় জমাদিউল মাসদ্বয় আসে না।) এর বহুবচন হচ্ছে جماديات যেমন حبارى থেকে حباريات একে কখনও পুরুষবাচক আবার কখনও স্ত্রীবাচকরূপে ব্যবহার করা হয়। যেমন جمادى الأولى আবার جمادى الأول অনুরূপভাবে جمادى الآخر আবার جمادى الآخرة
রাজাব হচ্ছে ترجيب শব্দ থেকে। অর্থ, সম্মান করা। এর বহুবচন আসে أرجاب , رجاب , رجبات
শাবানকে এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে- বিভিন্ন গোত্র (নিজেদের মাঝে) বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের বাড়ীঘরে ফিরে আসত। এর বহুবচন شعابين এবং شعبانات আসে।
রমযান শব্দটি رمضاء শব্দ থেকে উৎকলিত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে উষ্ণতা, উটের বাচ্চা যখন তৃষ্ণার্ত হয়, তখন رمضت الفصال বলা হয়। এর বহুবচন رمضانات , رماضين এবং أرمضة আসে। আর যে বলে এটা আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি নাম তা ভুল। এর কোনো দলীল বা এর কোনো সমর্থন নেই। আমি (ইবনু কাসীর) বলি: এ ব্যাপারে হাদিস এসেছে তবে তা দুর্বল। এটি আমি ‘সিয়াম অধ্যায়ের’ শুরুতে বর্ণনা করেছি।
শাউওয়াল শব্দটি شالت শব্দ থেকে এসেছে। উট যখন দৌড়ানোর জন্য তার লেজকে উত্তোলন করে তখন এ কথা বলা হয়। এর বহুবচন شواول , شواويل এবং شوَّالات আসে।
القعدة শব্দটি قاف এর উপরে যাবার দিয়ে- আমি (ইবনু কাসীর) বলি: যের দিয়েও পড়া যায়, যুদ্ধবিগ্রহ ও সফরে না গিয়ে তাদের বসে থাকার কারণে এ নাম রাখা হয়েছে। এর বহুবচন ذوات القعدة আসে। الحجة শব্দটি যের দিয়ে (আমি বলি) যাবার দিয়েও পড়া যায়, হজে অবস্থান করার কারণে এ নাম রাখা হয়েছে। এর বহুবচন ذوات الحجة আসে।
দিবসসমূহের নামসমূহ:
প্রথমত: الأحد , এর বহুবচন آحاد , أوحاد এবং وحاد আসে।
এরপর الاثنين এর বহুবচন أثانين আসে।
الثلاثاء লম্বা করে এটা পুরুষবাচক এবং স্ত্রীবাচক উভয়টি হয়। এর বহুবচন ثلاثاوات এবং أثالث উভয়টি আসে।
এরপর الأربعاء মাদ (লম্বা) সহকারে, এর বহুবচন أربعات এবং أرابيع উভয়টি আসে।
الخميس শব্দটির বহুবচন أخمسة এবং أخامس উভয় আসে।
এরপর الجمعة শব্দটির ميم এ পেশ, সাকীন এবং যাবার (তিন অবস্থায়)পড়া যায়। এর বহুবচন جُمَع এবং جماعات উভয়টি আসে।
السبت শব্দটি سَبْت শব্দ থেকে উৎকলিত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে القطع শেষ হওয়া; কেননা সংখ্যার গণনা এখানে শেষ হয়।
আরবরা বারের নামসমূহ এভাবে রেখেছিল: আউওয়াল, আহওয়ান, জুবার, দুবার, মু’নিস, ‘আরূবাহ এবং শিয়ার। জনৈক প্রচীন আরব কবি তার কবিতায় এ নামগুলো উল্লেখ করেছেন।
হারাম (পবিত্র) মাস:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: مِنۡهَآ أَرۡبَعَةٌ حُرُمٞۚ “তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস” এ মাসটিকে আরবরা জাহেলী যুগেও পবিত্র বলে ঘোষণা করেছিল। তবে বাসল নামক তাদের একটি দল অতিরঞ্জিত করে ও বাড়াবাড়ি বশত বৎসরে আটটি মাসকে পবিত্র (যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ) বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
‘তিনটি মাস পরস্পর’- যিলক্বদ, যিলহজ এবং মুহাররম এবং মুদার এর রাজাব যা জুমাদা এবং শাবানের মাঝে অবস্থিত। রজব শব্দের পূর্বে মুদার শব্দটি সংযোজন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে: রজবের ব্যাপারে মুদার গোত্রের দাবির বিশুদ্ধতা বর্ণনার জন্য যে, সেটা হচ্ছে ঐ মাস যা জুমাদা এবং শাবানের মাঝে অবস্থিত। রাবী‘আহ গোত্র যে ধারণা করে যে সম্মানিত রজব মাস হচ্ছে যা শাবান ও শাউওয়ালের মাঝে অবস্থিত তা নাকচ করে দেওয়ার জন্য। যা বর্তমানে রমযান হিসেবে গণ্য। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, সেটা হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব, রাবী‘আহ গোত্রের রজব নয়।
পবিত্র মাস হচ্ছে চারটি: তিনটি পরস্পর সংযুক্ত আর একটি পৃথক। হজ ও উমরার আচার অনুষ্ঠান পালনের উদ্দেশ্যে হজের মাসের পূর্বের একটি মাসকে পবিত্র করা হয় তা হচ্ছে যিলক্বদ। কেননা লোকেরা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বসে থাকে। যিল হাজ্জ মাসকে পবিত্র করা হয়। কেননা এটা হচ্ছে হজের মাস আর এ মাসে লোকেরা হজের আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য ব্যস্ত থাকে। আর এর পরেও আরেকটি মাসকে পবিত্র করা হয় সেটা হচ্ছে মুহাররম। লোকেরা যাতে করে নিরাপদে দূর-দূরান্তে তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যেতে পারে। আর বৎসরের মাঝখানে রজব মাসকে পবিত্র মাস করা হয়েছে, যাতে আরব উপদ্বীপের দূর-দূরান্ত থেকে লোকেরা বায়তুল্লাহর যিয়ারত ও উমরা করার উদ্দেশ্যে এসে আবার নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ “এটা হল সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা” এটা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত শরী‘আত যা পবিত্র হিসেবে গণ্য করা মাস, যা গোড়া থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট লিপিবদ্ধ ছিল -এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ পালন কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: فَلَا تَظۡلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمۡۚ “কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম করো না” অর্থাৎ এই পবিত্র মাসসমূহে। কেননা অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে সংঘটিত গোনাহ্ অধিক গুরুতর এবং তা কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেভাবে হারাম শরীফে (পবিত্র এলাকায়) সংঘটিত গোনাহ দ্বিগুণ হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۢ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٢٥﴾ [ الحج : ٢٥ ] “যে তাতে অন্যায়ভাবে কোনো দীনদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছে করে তাকে আমি আস্বাদন করাব ভয়াবহ শাস্তি।” [সূরা আল-হজ: ২৫] অনুরূপভাবে পবিত্র মাস, এতে গোনাহ্ গুরুতর হয়ে থাকে। আলী ইবনু আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثۡنَا عَشَرَ شَهۡرٗا فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ “আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসগুলোর সংখ্যা হল বারো” فَلَا تَظۡلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمۡۚ “কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম করো না” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: এর সবগুলোতেই (অপরাধ করো না) তবে তার মধ্যে চারটি মাসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মাসগুলোকে তিনি পবিত্র মাস হিসেবে ঘোষণা করেন আর এগুলোর পবিত্রতা অত্যন্ত বড় করে তুলে ধরেন। এ মাসগুলোতে সংঘটিত গোনাহকে গুরুতর বলে উল্লেখ করেন আর এ মাসে কৃত সৎ আমলের প্রতিদান অত্যন্ত বড় বলেও অবহিত করেন।
কাতাদা فَلَا تَظۡلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمۡۚ “কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর জুলুম করো না” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: পবিত্র মাসসমূহে কৃত অন্যায় অন্যান্য মাসে কৃত অন্যায়ের চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট এবং গুরুতর। যদিও অন্যায় সর্বাবস্থায় গুরুতর। তবে আল্লাহ তা‘আলা কোনো জিনিসকে তাঁর যেমন খুশি অন্য জিনিসের চেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কোনো কোনো সৃষ্টিকে অন্যান্য সৃষ্টির উপরে বেশি পছন্দ করেছেন, তিনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে বার্তাবাহক মনোনীত করেছেন, মানুষের মধ্য থেকে তিনি রাসূল বেছে নিয়েছেন, কথাবার্তার মধ্য থেকে তাঁর যিকিরকে চয়ন করেছেন, জমিনের মধ্য থেকে মসজিদকে প্রাধান্য দিয়েছেন, মাসসমুহের মধ্য হতে রমযানকে বেশি ভালোবেসেছেন, দিবসসমূহের মধ্য হতে জুমু‘আর দিনকে অধিক পছন্দ করেছেন, রাত্রিসমূহের মধ্য হতে লাইলাতুল ক্বদরকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কাজেই তোমরাও তাকে সম্মান কর আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্মানিত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যে সব বিষয়কে সম্মানিত করেছেন তাকে সম্মানিত করা বোধশক্তিসম্পন্ন ও জ্ঞানী লোকের পরিচয়।
পবিত্র মাসে যুদ্ধবিগ্রহ:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَقَٰتِلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ كَآفَّةٗ “মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর” অর্থাৎ তোমাদের সকলেই كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمۡ كَآفَّةٗۚ “যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে” অর্থাৎ তোমাদের সকলের সাথে, وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ “জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন” অর্থাৎ জেনে রাখ, পবিত্র মাসে নিজে থেকে প্রথমে গিয়ে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُحِلُّواْ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ وَلَا ٱلشَّهۡرَ ٱلۡحَرَامَ ٢﴾ [ المائدة : ٢ ] “হে মু’মিনগণ! আল্লাহর নিদর্শনাবলী এবং হারাম মাসের অসম্মান করো না।” [সূরা আল-মায়েদা: ২] তিনি আরও বলেন: ﴿ٱلشَّهۡرُ ٱلۡحَرَامُ بِٱلشَّهۡرِ ٱلۡحَرَامِ وَٱلۡحُرُمَٰتُ قِصَاصٞۚ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَٱعۡتَدُواْ عَلَيۡهِ بِمِثۡلِ مَا ٱعۡتَدَىٰ عَلَيۡكُمۡۚ ١٩٤﴾ [ البقرة : ١٩٤ ] “সম্মানিত মাস হচ্ছে সম্মানিত মাসের বিনিময়ে এবং পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব সবার জন্য সমান, কাজেই যে কেউ তোমাদের প্রতি কঠোর আচরণ করে, তবে তোমরাও তাদের প্রতি কঠোর আচরণ কর যেমনি কঠোরতা সে তোমাদের প্রতি করেছে।” (সূরা আল-বাকারা: ১৯৪) তিনি আরও বলেন: فَإِذَا انْسَلَخَ الأشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِين “তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে হত্যা কর।”
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَقَٰتِلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ كَآفَّةٗ كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمۡ كَآفَّةٗۚ “যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর।” তবে যদি মুশরিকরাই প্রথম যুদ্ধের সূচনা করে, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে। এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে যুদ্ধের অনুমতি দিচ্ছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ٱلشَّهۡرُ ٱلۡحَرَامُ بِٱلشَّهۡرِ ٱلۡحَرَامِ وَٱلۡحُرُمَٰتُ قِصَاصٞۚ ﴾ [ البقرة : ١٩٤ ] “সম্মানিত মাস হচ্ছে সম্মানিত মাসের বিনিময়ে এবং পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব সবার জন্য সমান।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৪] তিনি আরও বলেন: ﴿وَلَا تُقَٰتِلُوهُمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِيهِۖ فَإِن قَٰتَلُوكُمۡ فَٱقۡتُلُوهُمۡۗ ١٩١﴾ [ البقرة : ١٩١ ] “তোমরা মাসজিদে হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ না করে; কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা কর।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯১] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফবাসীকে যে অবরোধ করেছিলেন -এমনকি পবিত্র মাসে তা প্রবেশ করে সে ব্যাপারটি ছিল হাওয়াযিন এবং তাদের মিত্র সাক্বীফ গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্পূরক হিসেবে। ওরাই যুদ্ধের সূচনা করেছিল, পুরুষদেরকে একত্রিত করেছিল। যুদ্ধ ও সংঘাতের দিকে তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বের হন। এরপর যখন তারা তায়েফে দূর্গে আশ্রয় নেয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদেরকে দুর্গ থেকে নামিয়ে আনার জন্য তাদের প্রতি রওয়ানা করেন; কিন্তু তারা সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনকি মুসলিমদের কয়েকজনকে হত্যাও করে ফেলে, তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাদেরকে অবরোধ করে রাখেন। এই অবরোধ শুরু হয়েছিল হালাল মাসে (যাতে যুদ্ধবিগ্রহ করা বৈধ); কিন্তু তা পবিত্র মাসে প্রবেশ করে এর কয়েকটি দিন অতিবাহিত হয়। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবরোধ তুলে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। কেননা “কোনো কিছু শুরু করতে যে ধরণের নিষিদ্ধতা থাকে তা সে বিষয়ের অবশিষ্টতায় থাকে না”। এটা শরী‘আতস্বীকৃত নীতি, এর বহু দৃষ্টান্তও রয়েছে। আল্লাহ্ই ভালো জানেন। এ বিষয়টি আমরা সীরাতের কিতাবে লিখেছি। আল্লাহ ভালো জানেন।
“৩৭. নিষিদ্ধ মাসকে পিছিয়ে দেওয়া কুফরির উপর আরেক কুফরী কাজ যা দ্বারা কাফিরদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয়। এক বছর তারা একটি মাসকে হালাল করে, আরেক বছর ঐ মাসটিকে হারাম করে যাতে আল্লাহর হারাম করা মাসগুলোর সংখ্যা পূর্ণ করা যায়। এভাবে তারা আল্লাহর হারাম করা মাসগুলোকে হারাম করে নেয়। তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের কাছে আনন্দদায়ক। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৩৭]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/344/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।