hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আত-তাওবার তাফসীর

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

১৭
জিহাদের ব্যাপারে অলসতা করার উপরে তিরস্কার ও হুঁশিয়ারী:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে যে সকল ব্যক্তি পেছনে রয়ে গিয়েছিল এখানে তাদের প্রতি তিরস্কার শুরু হয়েছে। এ সময় ফল পেকেছিল আর প্রচণ্ড ও ভয়ানক গরম হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَا لَكُمۡ إِذَا قِيلَ لَكُمُ ٱنفِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়” অর্থাৎ যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য আহ্বান জানানো হয় ٱثَّاقَلۡتُمۡ إِلَى ٱلۡأَرۡضِۚ “তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধর।” ছায়া ও পাকা ফলের স্থানে থেকে যাওয়ার জন্য অলসতা কর হেলান দিয়ে পড়ে যাও। أَرَضِيتُم بِٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا مِنَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ “তোমরা কি আখিরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ কর?” তোমাদের কী হল, কেন তোমরা এ কাজ কর, এটা কি তোমাদের আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে নেওয়ার কারণে? এরপর আল্লাহ তা‘আলা পার্থিব জীবনের প্রতি আগ্রহ হ্রাস করে এবং আখিরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে বলেন: فَمَا مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ “আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য”।

ইমাম আহমদ বানু ফিহরের অন্যতম এক ব্যক্তি মুসতাওরিদ থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবন তো তদ্রুপ যেমন তোমাদের কোনো ব্যক্তি সাগরে তার আঙ্গুল ডুবায় এরপর যেন সে দেখে তাতে কতটুকু পানি ফিরে আসে? এরপর তিনি তার তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করেন। ইমাম মুসলিম এককভাবে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

সাউরী আ‘মাশ থেকে فَمَا مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ “আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: মুসাফিরের পাথেয়ের মত।

আব্দুল আযীয ইবনু আবু হাযিম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আব্দুল আযীয ইবনু মারওয়ান যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত হন তখন তিনি বলেন: আমাকে যে কাফন পরানো হবে সেটি নিয়ে এস যেন আমি তা প্রত্যক্ষ করতে পারি। এরপর যখন সেটা তাঁর সম্মুখে রাখা হয় তিনি সেটা দেখতে থাকেন আর বলেন: এটা কি সেই জিনিস যার সাথে আমার দুনিয়াবী জীবন সমাপ্ত হচ্ছে? এরপর তিনি পিঠ ফিরান আর কেঁদে কেঁদে বলেন: তোমার জন্য আফসোস, হে দুনিয়া, তোমার প্রাচুর্য প্রকৃতই স্বল্প। আর তোমার স্বল্প তো আরও ছোট। আমরা তো তোমার ধোঁকায় পড়ে রয়ে ছিলাম।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা জিহাদ পরিত্যাগ করা থেকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন: إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا “তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদেরকে ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে।” আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় আরবকে যুদ্ধে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানান; কিন্তু তারা অলসতা বশতঃ থেকে যায়। ফলে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন আর এটা ছিল তাদের শাস্তি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمٌۡ “আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায়কে আনা হবে” অর্থাৎ তাঁর নবীকে সাহায্য করতে এবং তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَإِن تَتَوَلَّوۡاْ يَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓاْ أَمۡثَٰلَكُم ٣٨﴾ [ محمد : ٣٨ ] “তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে নিয়ে আসবেন, তখন তারা তোমাদের মত হবে না।” [সূরা মুহাম্মদ: ৩৮]

وَلَا تَضُرُّوهُ شَيۡ‍ٔٗاۗ “(অথচ) তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না” অর্থাৎ তোমরা যদি জিহাদ থেকে পেছনে থেকে যাও, গৃহে অবস্থান কর আর অলসতা কর, তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।

وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ “আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান” অর্থাৎ তিনি তোমাদের সাহায্য ছাড়াই শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ ٱللَّهُ إِذۡ أَخۡرَجَهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ ٱثۡنَيۡنِ إِذۡ هُمَا فِي ٱلۡغَارِ إِذۡ يَقُولُ لِصَٰحِبِهِۦ لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَيۡهِ وَأَيَّدَهُۥ بِجُنُودٖلَّمۡ تَرَوۡهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلسُّفۡلَىٰۗ وَكَلِمَةُ ٱللَّهِ هِيَ ٱلۡعُلۡيَاۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ٤٠

“৪০. যদি তোমরা তাকে (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) সাহায্য না কর (তাতে কোনই পরোয়া নেই) কারণ আল্লাহ তো তাকে সেই সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফিররা তাকে বের করে দিয়েছিল, সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, যখন সে তার সঙ্গীকে বলছিল, ‘চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ তখন আল্লাহ তার প্রতি তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন আর তাকে এমন সেনাবাহিনী দিয়ে শক্তিশালী করলেন তোমরা যা দেখতে পাওনি, আর তিনি কাফিরদের মুখের বুলিকে গভীর নীচে ফেলে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই রয়েছে সর্বোচ্চে। আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৪০]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর সাহায্যকারী:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: إِلَّا تَنصُرُوهُ “যদি তোমরা তাকে (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) সাহায্য না কর, (তাতে কোনই পরোয়া নেই)।” অর্থাৎ তাঁর রাসূলকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্যকারী, তিনি তাঁকে শক্তিশালী করবেন। তিনিই তাঁর জন্য যথেষ্ট, তাঁর হিফাযতকারী, যেভাবে তিনি তাঁকে সাহায্য করেছেন إِذۡ أَخۡرَجَهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ ٱثۡنَيۡنِ “যখন কাফিররা তাকে বের করে দিয়েছিল, সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন।” অর্থাৎ হিজরতের বৎসর যখন মুশরিকরা তাকে হত্যা অথবা বন্দী অথবা বয়কট করার চিন্তা করেছিল, তখন তিনি তাঁর বন্ধু ও সঙ্গী আবু বকর ইবনু আবু কুহাফাকে সাথে নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি সাউর পর্বতে তিনদিন আশ্রয় গ্রহণ করেন, যাতে করে যে সমস্ত অনুসন্ধানকারীরা তাদের পদচি‎হ্ন ধরে তাঁদেরকে খুঁজতে এসেছিল তারা ফিরে যায়। এরপর তিনি মদিনার দিকে রওয়ানা হন, (তাঁরা যখন সাউর গুহায় অবস্থান করেন) তখন আবু বকর ভয় পান যে তাদের কেউ তাঁদেরকে দেখে ফেলবে আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিবে; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মনে প্রশান্তি আনয়ন করেন আর তাকে শান্ত করে বলেন: হে আবু বকর, তোমার দু’জনের সম্পর্কে কী ধারণা যাদের তৃতীয় জন হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা। যেমন- ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বর্ণনা করেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করি -এমতাবস্থায় যে আমি গুহায় অবস্থান করছি- তাদের কেউ যদি তার দু’পায়ের প্রতি লক্ষ্য করে তবে তার দু’পায়ের তলে আমাদেরকে দেখতে পাবে। তিনি বলেন: তখন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আবু বকর, তোমার দু’জনের সম্পর্কে কী ধারণা যাদের তৃতীয় জন হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা? ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম তাঁদের ‘সহীহ’ গ্রন্থদ্বয়ে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَيۡهِ “তখন আল্লাহ তার প্রতি তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন” তাঁর নবীর প্রতি তাঁর সাহায্য বিজয় প্রেরণ করেন। কেউ কেউ বলেন: আবু বকরের উপরে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَأَيَّدَهُۥ بِجُنُودٖلَّمۡ تَرَوۡهَا “আর তাকে এমন সেনাবাহিনী দিয়ে শক্তিশালী করলেন তোমরা যা দেখতে পাও নি” অর্থাৎ ফেরেশতা পাঠিয়ে। وَجَعَلَ كَلِمَةَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلسُّفۡلَىٰۗ وَكَلِمَةُ ٱللَّهِ هِيَ ٱلۡعُلۡيَاۗ “আর তিনি কাফিরদের মুখের বুলিকে গভীর নীচে ফেলে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই রয়েছে সর্বোচ্চে।”

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: কাফেরদের মুখের বুলির অর্থ হচ্ছে: শির্ক আর আল্লাহর বাণীর অর্থ হচ্ছে لا إله إلا الله অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে: আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সমস্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যারা বীরত্ব দেখানোর জন্য লড়াই করে অথবা নিজের সম্মানের উন্মত্ততা প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে অথবা লোক দেখানোর জন্য লড়াই করে, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে লড়াই করে? তিনি বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার বাণীকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য লড়াই করে সে আল্লাহর পথে লড়াই করে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَٱللَّهُ عَزِيزٌ “আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত” অর্থাৎ তাঁর প্রতিশোধ গ্রহণে এবং শাস্তি প্রদানে। তিনি হচ্ছেন শক্তিশালী সম্মানিত, যে ব্যক্তি তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করে আর তিনি যা শিক্ষা দিয়েছেন তা আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হয় সে অন্যায়ভাবে অত্যাচারিত হয় না। حَكِيمٌ “মহা-বিজ্ঞানী” তাঁর কথা ও কাজে।

﴿ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٤١﴾ [ التوبة : ٤١ ]

“৪১. যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়, অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক (অস্ত্র কম থাকুক আর বেশি থাকুক) আর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের মাল দিয়ে আর তোমাদের জান দিয়ে জিহাদ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, তোমরা যদি জানতে!” [সূরা আত-তাওবাহ: ৪১]

সর্বাবস্থায় জিহাদ অপরিহার্যকরণ:

সুফিয়ান আস-সারী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবুয্ যুহা মুসলিম ইবনু সুবাইহ থেকে বর্ণনা করেন। সূরা বারা’আতের এই আয়াত সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়। মু‘তামির ইবনু সুলাইমান তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হাদরামী দাবি করেন যে, তাকে বলা হয়েছে: কতিপয় ব্যক্তি ঘোষণা করত যে (যদি তারা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মুসলিম সৈন্যদল থেকে পেছনে রয়ে যায়) তবে তাদের কোনো গোনাহ হবে না। কেননা তারা অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন: ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا “ যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়, অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক।” আল্লাহ তা‘আলা তাবুক যুদ্ধের বছর তাঁর শত্রু আহলে কিতাবি রোমিও কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সকলকে সার্বিকভাবে বেরিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। আর সুখ-দুঃখ, উদ্দীপনা-অনীহা সর্বাবস্থায় মুমিনগণকে রাসূলুল্লাহ‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হওয়াকে আবশ্যক করে দেন। তিনি বলেন: ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا “যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়, অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক।”

আলী ইবনু যাইদ আনাস থেকে বর্ণনা করেন, আবু তলহা বলেন: পৌঢ় হোক বা যুবক হোক, আল্লাহ তা‘আলা কারো জন্যও কৈফিয়ত প্রদানের সুযোগ রাখেন নি। এরপর আবু তালহা শামের দিকে রওয়ানা করেন এবং লড়াই করতে করতে শহীদ হন।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: আবু তালহা সূরা আল-বারা’আহ পাঠ করতে থাকেন অবশেষে যখন তিনি ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ “যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়, অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক আর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের মাল দিয়ে আর তোমাদের জান দিয়ে জিহাদ কর” এ আয়াতে পৌঁছেন তখন তিনি বলেন: আমি দেখছি আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জিহাদে বের হতে বলেছেন, চাই আমরা বৃদ্ধ হই অথবা যুবক হই। ওহে আমার পুত্ররা, আমাকে সাজিয়ে দাও, তাঁর পুত্ররা বলেন: আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন। আপনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এরও মৃত্যু র্যন্ত তাঁর সাথে থেকে জিহাদ করেছেন, আপনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এরও মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন। এখন আমরা আপনার পক্ষ থেকে যুদ্ধ করব; কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন। তিনি সমুদ্রে ভ্রমণ করেন, এরপরে মারা যান। তাঁকে দাফন করার জন্য এক টুকরোও দ্বীপও পাওয়া যায় নি। তবে নয় দিন পরে যখন তাঁকে দাফন করা হয় তখন দেখা যায় তাঁর দেহে কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। এরপর তাঁরা তাঁকে একটি দ্বীপে দাফন করেন।

সুদ্দী ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا “অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: ধনী হোক, দরিদ্র হোক, শক্তিশালী হোক বা দুর্বল হোক, জনৈক ব্যক্তি সম্মুখে আসে, লোকেরা মনে করে তিনি হচ্ছেন মিকদাদ। তিনি ছিলেন বিশাল ও মোটা দেহের অধিকারী। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে আপত্তি জানান আর যুদ্ধে না যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করেন; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বীকার করেন তখন সেদিন অবতীর্ণ হয়: ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا “অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়।” যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন এই নির্দেশ লোকদের উপরে অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত রহিত করে দিয়ে বলেন: لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَى وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ “দুর্বলের উপর, পীড়িতের উপর আর ব্যয় করার মত কোনো সম্বল যাদের নেই তাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি কল্যাণকামী হয়ে থাকে।”

ইবনু জারীর বলেন: হাদিস বর্ণনা করেন আমার নিকট হিব্বান ইবনু যাইদ আশ-শারআবী, তিনি বলেন: আমরা আল-আফসূস নগরীর নিকট অবস্থিত হিমসের গভর্নর সাফওয়ান ইবনু আমেরের সাথে জিরাজিমাহর দিকে জিহাদের জন্য বের হই, (এ সময়) আমি সেনাবাহিনীর মধ্যে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করি যিনি তখনও সক্রিয় ছিলেন। তাঁর ভ্রূদ্বয় তাঁর দুই চোখের উপরে ঝুলে পড়েছে, তিনি ছিলেন লড়াই করতে আসা দামেস্ক-বাসীদের অন্যতম; যিনি তাঁর বাহনে সাওয়াররত ছিলেন। আমি তাঁর নিকট এগিয়ে গিয়ে বলি: হে চাচা, আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার জন্য কৈফিয়ত রেখেছেন। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর তিনি তাঁর ভ্রূদ্বয় উঠিয়ে বলেন: হে আমার ভাতিজা, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক সর্ববাস্থায় যুদ্ধে বের হতে বলেছেন। জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভালোবাসেন তাকে পরীক্ষায় ফেলেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদেরকে চিরস্থায়ী ঠিকানায় ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মাঝে তাকে ভালোবাসেন যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে এবং তাঁকে স্মরণ করে। আর সে আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করে না।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাস্তায় দান করার ব্যাপারে এবং তাঁর ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রক্ত দিতে উৎসাহিত করে বলেন: وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ “আর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের মাল দিয়ে আর তোমাদের জান দিয়ে জিহাদ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, তোমরা যদি জানতে।” অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। কেননা তোমরা সামান্য পরিমাণ ব্যয় কর, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুদের সম্পদের মাধ্যমে ধনী করে দিবেন। আবার তার সাথে তো তিনি তোমাদের জন্য পরকালে সম্মান সঞ্চিত করে রেখেছেন। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পথে লড়াইকারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, সে যদি মারা যায় তবে তিনি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সাওয়াব ও গনিমত সহকারে তাঁকে তাঁর বাসস্থানে ফিরিয়ে দিবেন। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦﴾ [ البقرة : ٢١٦ ] “তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপ্রিয় কিন্তু তোমরা কোন কিছু অপছন্দ কর সম্ভবত: তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর এবং সম্ভবত: কোনো কিছু তোমাদের কাছে প্রিয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুত: আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।” [সুরা আল-বাকারা: ২১৬]

এ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলেন: তুমি ইসলাম গ্রহণ কর; কিন্তু সেই লোকটি বলে: এমনটি করতে আমার অপছন্দ হচ্ছে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি ইসলাম গ্রহণ কর যদিও তোমার নিকট তা অপছন্দনীয় মনে হয়।

﴿لَوۡ كَانَ عَرَضٗا قَرِيبٗا وَسَفَرٗا قَاصِدٗا لَّٱتَّبَعُوكَ وَلَٰكِنۢ بَعُدَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلشُّقَّةُۚ وَسَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَوِ ٱسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَكُمۡ يُهۡلِكُونَ أَنفُسَهُمۡ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ ٤٢﴾ [ التوبة : ٤٢ ]

“৪২. স্বার্থ উদ্ধার হলে আর যাত্রা সহজ হলে তারা অবশ্যই তোমার সাথে যেত; কিন্তু পথ তাদের কাছে দীর্ঘ ও ভারী মনে হয়েছে। অচিরেই তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলবে, ‘আমরা যদি পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম।’ আসলে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যেবাদী।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৪২]

মুনাফিকদের পেছনে পড়ার কারণ আর তাদের ছলচাতুরী:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে যাওয়া থেকে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি ভৎসনা করেন। তাদের ওযর রয়েছে এ ধরণের ভাব প্রকাশ করে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া বাদ দিয়ে বসেছিল অথচ প্রকৃতপক্ষে তাদের এ ধরণের ওযর ছিল না। তিনি বলেন: لَوۡ كَانَ عَرَضٗا قَرِيبٗا “স্বার্থ উদ্ধার হলে” অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: তাদের সম্মুখে গনিমত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, وَسَفَرٗا قَاصِدٗا “আর যাত্রা সহজ হলে” সম্মুখে সফর থাকলে لَّٱتَّبَعُوكَ “তারা অবশ্যই তোমার সাথে যেত।” অর্থাৎ তারা সেজন্য তোমার সাথে যেত। وَلَٰكِنۢ بَعُدَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلشُّقَّةُۚ “কিন্তু পথ তাদের কাছে দীর্ঘ ও ভারী মনে হয়েছে” শামে যাওয়ার দূরত্ব وَسَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ يُهۡلِكُونَ أَنفُسَهُمۡ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ “অচিরেই তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলবে” অর্থাৎ তোমাদের নিকট তোমরা যখন তাদের নিকট ফিরে আস لَوِ ٱسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَكُمۡ “আমরা যদি পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম।” অর্থাৎ আমাদের যদি ওযর না থাকত তবে অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে বের হতাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: يُهۡلِكُونَ أَنفُسَهُمۡ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ “আসলে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যেবাদী।”

﴿عَفَا ٱللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمۡ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَتَعۡلَمَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٤٣ لَا يَسۡتَ‍ٔۡذِنُكَ ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ أَن يُجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلۡمُتَّقِينَ ٤٤ إِنَّمَا يَسۡتَ‍ٔۡذِنُكَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱرۡتَابَتۡ قُلُوبُهُمۡ فَهُمۡ فِي رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُونَ ٤٥ ﴾ [ التوبة : ٤٣، ٤٥ ]

“৪৩. আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন! কারা সত্য বলেছে তা স্পষ্ট না হতেই আর মিথ্যাবাদীদেরকে তুমি চিনে না নিয়েই কেন তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দিলে? ৪৪. যারা আল্লাহয় ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে তারা তাদের মাল দিয়ে আর জান দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে না। মুত্তাকীদের সম্পর্কে আল্লাহ খুবই অবগত আছেন। ৪৫. তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা তারাই করে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে না, যাদের অন্তর সন্দেহ-পূর্ণ, কাজেই তাঁরা তাদের সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।” (সূরা আত-তাওবাহ্: ৪৩)

তাদেরকে অনুমতি দেওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিরস্কার করেন

ইবনু আবু হাতিম বর্ণনা করেন, আউন বলেন: আপনারা কি এর চেয়ে উত্তম কোন তিরস্কারে কথা কি শুনেছেন? তিরস্কারের পূর্বেই ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: عَفَا ٱللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمۡ “আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন! কেন তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দিলে?” মুওর্য়ারক আল-আজালী এবং অন্যান্যরা এ মত ব্যক্ত করেন।

কাতাদা বলেন: তিনি তাঁকে তিরস্কার করেছেন যেমন তোমরা শুনছ এরপর তাদের মধ্যে তাঁর যাকে খুশি অনুমতি দানের অনুমতি প্রদান করে সূরা আন-নূরে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করেন ﴿ فَإِذَا ٱسۡتَ‍ٔۡذَنُوكَ لِبَعۡضِ شَأۡنِهِمۡ فَأۡذَن لِّمَن شِئۡتَ مِنۡهُمۡ ٦٢﴾ ( النور : ٦٢ ) “কাজেই তাদের কেউ তাদের কোনো কাজে যাওয়ার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চাইলে তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে অনুমতি দিবে।” [সূরা আন-নূর: ৬২] অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে ‘আতা’ আল খোরাসানী থেকে।

মুজাহিদ বলেন: এই আয়াত একদল লোক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে তারা বলে: তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি চেয়ে দেখ, যদি তিনি অনুমতি দেন তবে যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাক। আর যদি তিনি অনুমতি নাও দেন তবুও বসে থাকবে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ “কারা সত্য বলেছে তা স্পষ্ট না হতেই” প্রকৃতই ওযর রয়েছে কিনা তা না জেনে وَتَعۡلَمَ ٱلۡكَٰذِبِينَ “আর মিথ্যাবাদীদেরকে তুমি চিনে না নিয়েই” আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কেন তুমি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলে না যখন তারা তোমার নিকট যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাকার অনুমতি চায়তে আসে, যাতে করে তুমি বুঝতে পার তোমার আনুগত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কে তাদের মধ্যে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী। তারা তো যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাকার দিকেই ঝুঁকে ছিল যদিও তুমি তাদেরকে অনুমতি না দিতে।

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা অবহিত করেন যে, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে তারা যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাকার অনুমতি চায় না। তিনি বলেন: لَا يَسۡتَ‍ٔۡذِنُكَ “তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে না” অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে বসে থাকার জন্য। ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ أَن يُجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۗ “যারা আল্লাহয় ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে তারা তাদের মাল দিয়ে আর জান দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য।” তারা জিহাদকে আল্লাহ তা‘আলা নৈকট্য পাওয়ার কারণ মনে করে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে জিহাদের আহ্বান জানান তখন তারা দ্রুত সেদিকে অগ্রসর হয়। আর তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে, وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلۡمُتَّقِينَ “মুত্তাকীদের সম্পর্কে আল্লাহ খুবই অবগত আছেন। তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা তারাই করে” অর্থাৎ যাদের কোনো ওজর-আপত্তি নেই তারাই বসে থাকার জন্য, ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ “যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে না” অর্থাৎ পরকালে তারা তাদের আমলের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাওয়াবের আশা করে না। وَٱرۡتَابَتۡ قُلُوبُهُمۡ “যাদের অন্তর সন্দেহপূর্ণ” অর্থাৎ তুমি যা নিয়ে তাদের নিকট আগমন করেছ তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে তারা সন্দিহান فَهُمۡ فِي رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُونَ “কাজেই তাঁরা তাদের সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে” তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পতিত, তারা একবার একধাপ সামনে অগ্রসর হয় আরেকবার একধাপ পিছিয়ে যায়, কোনো বিষয়ে তাদের পা স্থির নেই। তারা আত্মবিশ্বাস-হীন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত। তারা এ দলেও নেই ও দলেও নেই। আল্লাহ তা‘আলা যাকে গোমরাহ করেন তার জন্য কোন পথ পাবে না।

﴿وَلَوۡ أَرَادُواْ ٱلۡخُرُوجَ لَأَعَدُّواْ لَهُۥ عُدَّةٗ وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيلَ ٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ ٤٦ لَوۡ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمۡ إِلَّا خَبَالٗا وَلَأَوۡضَعُواْ خِلَٰلَكُمۡ يَبۡغُونَكُمُ ٱلۡفِتۡنَةَ وَفِيكُمۡ سَمَّٰعُونَ لَهُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلظَّٰلِمِينَ ٤٧ ﴾ [ التوبة : ٤٦، ٤٧ ]

“৪৬. (যুদ্ধাভিযানে) তাদের যদি বের হওয়ার ইচ্ছেই থাকত তবে তারা সেজন্য অবশ্যই প্রস্তুতি নিত; কিন্তু তাদের অভিযানে গমনই আল্লাহর পছন্দ নয়। কাজেই তিনি তাদেরকে পশ্চাতে ফেলে রাখেন আর তাদেরকে বলা হয়, ‘যারা (নিষ্ক্রিয় হয়ে) বসে থাকে তাদের সাথে বসে থাক’। ৪৭. তারা যদি তোমাদের সঙ্গে বের হত তাহলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই বাড়াত না আর তোমাদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশে তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করত আর তোমাদের মাঝে তাদের কথা শুনার লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবহিত আছেন।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৪৬-৪৭]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَلَوۡ أَرَادُواْ ٱلۡخُرُوجَ “(যুদ্ধাভিযানে) বের হওয়ার তাদের যদি ইচ্ছেই থাকত” অর্থাৎ তোমার সাথে যুদ্ধে لَأَعَدُّواْ لَهُۥ “তবে তারা সেজন্য অবশ্যই প্রস্তুতি নিত” এ ধরণের কাজে তারা প্রস্তুতি নিত।

وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ “কিন্তু তাদের অভিযানে গমনই আল্লাহর পছন্দ নয়।” তারা তোমার সাথে যাক আল্লাহ এটা অপছন্দ করেছেন তাঁর ফায়সালা-গত ভাবে فَثَبَّطَهُمۡ “কাজেই তিনি তাদেরকে পশ্চাতে ফেলে রাখেন।” অর্থাৎ তিনি তাদেরকে পেছনে করে দিয়েছেন وَقِيلَ ٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ “আর তাদেরকে বলা হয়, ‘যারা (নিষ্ক্রিয় হয়ে) বসে থাকে তাদের সাথে বসে থাক।” এটা তাদের বিরুদ্ধে ফায়সালার একটি অংশ, এরপর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণের সাথে তাদের বের হওয়া অপছন্দ করার কারণ বর্ণনা করে বলেন: لَوۡ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمۡ إِلَّا خَبَالٗا “তারা যদি তোমাদের সঙ্গে বের হত তাহলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই বাড়াত না।” অর্থাৎ কেননা তারা ভীরু, ব্যর্থ। وَلَأَوۡضَعُواْ خِلَٰلَكُمۡ يَبۡغُونَكُمُ ٱلۡفِتۡنَةَ “আর তোমাদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশে তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করত।” তোমাদের মাঝে ফিতনা, ঘৃণা এবং কুৎসা রটনার উদ্দেশ্যে ছুটে বেড়াত وَفِيكُمۡ سَمَّٰعُونَ لَهُمۡۗ “আর তোমাদের মাঝে তাদের কথা শুনার লোক আছে।” অর্থাৎ তাদের অনুসারী, তাদের আলোচনা ও কথা-বার্তা তাদের কাছে ভালো লাগে। তারা তাদের নিকট উপদেশ চায়, যদিও তারা তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে সেটা মুমিনগণের মাঝে অনিষ্ট ও বিরাট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেন, আমার জানা মতে যারা অনুমতি চেয়েছিল তার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ, তাদের মধ্যে রয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল, জাদ্দ ইবনু কাইস, তারা ছিল তাদের গোত্রের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত লোক। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পেছনে করে দেন কারণ তিনি জানেন যে, তারা যদি তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে বের হত তবে তাঁর সৈন্যগণের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত। তাঁর সৈন্যগণের মধ্যে এমন কতগুলো লোক ছিল যারা তাদেরকে পছন্দ করত এবং তারা তাদেরকে যার প্রতি আহ্বান জানাত সেক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করত, কেননা তাদের মাঝে তাদের সম্মান ছিল। তিনি বলেন: وَفِيكُمۡ سَمَّٰعُونَ لَهُمۡۗ “আর তোমাদের মাঝে তাদের কথা শুনার লোক আছে” এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পূর্ণ জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করে বলেন: وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلظَّٰلِمِينَ “আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবহিত আছেন।” এরপর তিনি অবহিত করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা সে সব বিষয় জানেন যা ঘটেছে এবং ঘটবে। আর যা হয় নি যদি তা হত তবে কীভাবে সেটা হত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: لَوۡ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمۡ إِلَّا خَبَالٗا “তারা যদি তোমাদের সঙ্গে বের হত তাহলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই বাড়াত না।” আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন যে, যদি তারা বের হত তবে কী ঘটত তা সত্ত্বেও তার বের হয় নি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ وَلَوۡ رُدُّواْ لَعَادُواْ لِمَا نُهُواْ عَنۡهُ وَإِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ ٢٨﴾ [ الانعام : ٢٨ ] “আর তাদেরকে (পৃথিবীতে) ফিরিয়ে দেওয়া হলে তারা আবার তা-ই করবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, নিশ্চয় তারা হল মিথ্যুক।” [সূরা আল-আন‘আম: ২৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَلَوۡ عَلِمَ ٱللَّهُ فِيهِمۡ خَيۡرٗا لَّأَسۡمَعَهُمۡۖ وَلَوۡ أَسۡمَعَهُمۡ لَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعۡرِضُونَ ٢٣﴾ [ الانفال : ٢٣ ] “আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কোনো ভালো গুণ নিহিত আছে, তবে তিনি তাদেরকে শুনবার তাওফিক দিতেন। আর (গুণ না থাকা অবস্থায়) তিনি যদি তাদেরকে শুনতে দিতেন তাহলে তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিত।” [সূরা আল-আনফাল: ২৩]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَوۡ أَنَّا كَتَبۡنَا عَلَيۡهِمۡ أَنِ ٱقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ أَوِ ٱخۡرُجُواْ مِن دِيَٰرِكُم مَّا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٞ مِّنۡهُمۡۖ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ فَعَلُواْ مَا يُوعَظُونَ بِهِۦ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ وَأَشَدَّ تَثۡبِيتٗا ٦٦ وَإِذٗا لَّأٓتَيۡنَٰهُم مِّن لَّدُنَّآ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٦٧﴾ [ النساء : ٦٦، ٦٧ ]

“৬৬. যদি আমি তাদের প্রতি ফরয করে দিতাম যে তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর কিংবা নিজেদের দেশ থেকে বেরিয়ে যাও, তবে স্বল্পসংখ্যক লোক ছাড়া কেউ তা পালন করত না। যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হয় তা যদি তারা পালন করত, তবে তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর হত এবং দৃঢ় চিত্তটার কারণ হত। সে অবস্থায় অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার নিকট হতে মহা-পুরস্কার দান করতাম এবং তাদেরকে অবশ্যই সঠিক পথ প্রদর্শন করতাম।” [সূরা আন-নিসা: ৬৬-৬৮] এ ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে।

﴿لَقَدِ ٱبۡتَغَوُاْ ٱلۡفِتۡنَةَ مِن قَبۡلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ ٱلۡأُمُورَ حَتَّىٰ جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَظَهَرَ أَمۡرُ ٱللَّهِ وَهُمۡ كَٰرِهُونَ ٤٨﴾ [ التوبة : ٤٨ ]

“৪৮. আগেও তারা ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছে আর তোমার অনেক কাজ নষ্ট করেছে যতক্ষণ না প্রকৃত সত্য এসে হাজির হল আর আল্লাহর বিধান প্রকাশিত হয়ে গেল যদিও এতে তারা ছিল নাখোশ।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৪৮]

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে তাঁর নবীকে উৎসাহিত করে বলেন: لَقَدِ ٱبۡتَغَوُاْ ٱلۡفِتۡنَةَ مِن قَبۡلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ ٱلۡأُمُورَ “আগেও তারা ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছে আর তোমার অনেক কাজ নষ্ট করেছে” আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মুনাফিকরা তোমার এবং তোমার সাথিদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। যেমন- তারা তোমাদের দীনকে ব্যর্থ করার ও নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। সেটা ঐ সময় যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম মদিনায় আগমন করেন, যখন সকল আরব পৌত্তলিকরা একত্রিত হয়েছিল, মদিনার ইয়াহূদী এবং এর মুনাফিকরা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। এরপর যখন বদর যুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেন আর তাঁর বাণীকে উঁচুতে তুলে ধরেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথিরা বলে: এটা (ইসলাম) এমন এক বিষয় যা বিজয় লাভ করেছে। ফলে তারা বাহ্যিকভাবে ইসলামে প্রবেশ করে। এরপর যখনই আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম এবং এর অনুসারীদের শক্তিশালী করেন তখন মুনাফিকদের ক্রোধ এবং হতাশা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: حَتَّىٰ جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَظَهَرَ أَمۡرُ ٱللَّهِ وَهُمۡ كَٰرِهُونَ “যতক্ষণ না প্রকৃত সত্য এসে হাজির হল আর আল্লাহর বিধান প্রকাশিত হয়ে গেল যদিও এতে তারা ছিল নাখোশ।”

﴿وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ ٱئۡذَن لِّي وَلَا تَفۡتِنِّيٓۚ أَلَا فِي ٱلۡفِتۡنَةِ سَقَطُواْۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ ٤٩﴾ [ التوبة : ٤٩ ]

“৪৯. তাদের মাঝে এমন লোক আছে যারা বলে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন, আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না।’ জেনে রেখ, তারা তো ফিতনাতে পড়েই আছে। বস্তুত: জাহান্নাম কাফিরদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৪৯]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মুনাফিকদের মধ্যে কেউ বলে: হে মুহাম্মাদ, ٱئۡذَن لِّي “আমাকে অব্যাহতি দিন” অর্থাৎ বসে থাকার وَلَا تَفۡتِنِّيٓۚ “আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না” আপনার সাথে বের হয়ে আর রোমিও নারীদের দেখে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: أَلَا فِي ٱلۡفِتۡنَةِ سَقَطُواْ “জেনে রেখ, তারা তো ফিতনাতে পড়েই আছে।” তারা তো তাদের এ কথার দ্বারাই ফিতনাতে পড়ে গেছে। যেমন, মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেন, যুহরী, ইয়াযীদ ইবনু রূমান, আব্দুল্লাহ ইবনু আবু বকর, ‘আসিম ইবনু কাতাদাহ এবং অন্যান্যরা বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ সালামার জাদ্দ ইবনু কায়েসকে বলেন: হে জাদ্দ, এ বৎসর কি তুমি বানূ আসফারকে বিতাড়নে আমাদের সাথি হবে? তখন সে বলে: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আর আমাকে ফিতনায় (পরীক্ষায়) ফেলবেন না, আল্লাহর শপথ, আমার কাওম জানে যে, আমার চেয়ে নারীদের প্রতি অধিক আকৃষ্ট ব্যক্তি আর নেই। আর আমার ভয় হচ্ছে আমি যদি বনূ আসফারের নারীদেরকে দেখি তবে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরে থাকতে পারব না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন আর বলেন: ‘আমি তোমাকে অনুমতি দিলাম’ তখন জাদ্দ ইবনু কায়েসের ব্যাপারে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়: وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ ٱئۡذَن لِّي وَلَا تَفۡتِنِّيٓۚ “তাদের মাঝে এমন লোক আছে যারা বলে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন, আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না” অর্থাৎ যদি এমন হয় যে, সে বনূ আসফারের নারীদের ব্যাপারে আশঙ্কা করছে, -প্রকৃত ব্যাপার অবশ্যই তা নয়। তবে সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে না যেয়ে পেছনে থেকে যাওয়ার চেয়ে বড় ফিতনা নয়। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জানের নিরাপত্তার চেয়ে নিজের জানের নিরাপত্তাকে পছন্দ করে নেওয়া তার চেয়ে আরও বড় ফিতনা (যার সে মিথ্যা দাবিদার)। এরূপ ভাবে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ এবং অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এই আয়াতটি জাদ্দ ইবনু কায়েসের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। জাদ্দ ইবনু কায়েস ছিল বনু সালামার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন: হে বনু সালামাহ, তোমাদের নেতা কে? তারা বলে: আল জাদ্দ ইবনু কায়েস, যদিও আমরা তাকে কঞ্জুস হিসেবে জানি, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কৃপণতার ব্যাধির চেয়ে অধিক ব্যাধি আর কী হতে পারে?। বরং তোমাদের নেতা হচ্ছে কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট ফর্সা যুবক বিশর ইবনুল বারা’ ইবনু মা‘রূর। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ “বস্তুত: জাহান্নাম কাফিরদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।” অর্থাৎ এ থেকে তাদের পলায়নের কোনো স্থান নেই, নেই তাদের কোনো পালাবার পথ।

﴿إِن تُصِبۡكَ حَسَنَةٞ تَسُؤۡهُمۡۖ وَإِن تُصِبۡكَ مُصِيبَةٞ يَقُولُواْ قَدۡ أَخَذۡنَآ أَمۡرَنَا مِن قَبۡلُ وَيَتَوَلَّواْ وَّهُمۡ فَرِحُونَ ٥٠ قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا هُوَ مَوۡلَىٰنَاۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٥١ ﴾ [ التوبة : ٥٠، ٥١ ]

“৫০. তোমার মঙ্গল হলে তা তাদেরকে মনঃকষ্ট দেয়, আর তোমার উপর বিপদ আসলে তারা খুশির সঙ্গে এ কথা বলতে বলতে সরে পড়ে যে, ‘আমরা আগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম।’ ৫১. বলে দাও, ‘আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কিছুই আমাদের ঘটবে না। তিনিই আমাদের রক্ষক আর আল্লাহর উপরই মু’মিনদের ভরসা করা দরকার।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৫০-৫১]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে তাঁর প্রতি ওদের শত্রুতার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন, কেননা তিনি যে কল্যাণই অর্জন করেন অর্থাৎ শত্রুদের উপরে বিজয়, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আর তাঁর সাহাবীগণের জন্য সহজ করে দিয়েছেন এতে তারা (মুনাফিকরা) কষ্ট পায়। وَإِن تُصِبۡكَ مُصِيبَةٞ يَقُولُواْ قَدۡ أَخَذۡنَآ أَمۡرَنَا مِن قَبۡلُ “আর তোমার উপর বিপদ আসলে তারা বলে: আমরা আগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম।” অর্থাৎ আমরা ইতোপূর্বেই তার আনুগত্য করা থেকে সতর্ক ছিলাম।

وَيَتَوَلَّواْ وَّهُمۡ فَرِحُونَ “আর তারা খুশির সঙ্গে এ কথা বলতে বলতে সরে পড়ে” ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে তাঁর প্রতি তাদের পুর্ণাঙ্গ শত্রুতার এ ভাবে জবাব দিতে বলছেন قُلْ “বলে দাও” অর্থাৎ তাদেরকে বলে দাও لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا “আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কিছুই আমাদের ঘটবে না” অর্থাৎ আমরা তাঁর ইচ্ছা ও তাঁর ফায়সালার অধীনে আছি। هُوَ مَوۡلَىٰنَاۚ “তিনিই আমাদের রক্ষক” আমাদের অভিভাবক, আমাদের আশ্রয়স্থল। وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ “আর আল্লাহর উপরই মু’মিনদের ভরসা করা দরকার” অর্থাৎ আমরা তাঁর উপরে ভরসা রাখি। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট আর তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।

﴿قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُونَ بِنَآ إِلَّآ إِحۡدَى ٱلۡحُسۡنَيَيۡنِۖ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَاۖ فَتَرَبَّصُوٓاْ إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ ٥٢ قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهٗا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ إِنَّكُمۡ كُنتُمۡ قَوۡمٗا فَٰسِقِينَ ٥٣ وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ نَفَقَٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَٰرِهُونَ ٥٤ ﴾ [ التوبة : ٥٢، ٥٤ ]

“৫২. বল, ‘তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষা করছ তা দুটো ভালোর একটি ছাড়া আর কিছুই না (শাহাদাত কিংবা বিজয়)আর আমরা অপেক্ষা করছি এজন্য যে, আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান। কাজেই অপেক্ষায় থাক, আমরা তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’ ৫৩. বল, ‘স্বেচ্ছায় দান কর আর অনিচ্ছায়, তোমাদের থেকে কক্ষনো তা গ্রহণ করা হবে না; তোমরা হলে এক ফাসিক সম্প্রদায়।’ ৫৪. তাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করার কারণ এ ছাড়া আর কিছু নয় যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, সলাতে আসলে আসে শৈথিল্যভরে আর দান করলেও করে অনিচ্ছা নিয়ে।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৫২-৫৪]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: قُلْ (বল) তাদেরকে, হে মু‏হাম্মাদ هَلۡ تَرَبَّصُونَ “তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষা করছ” অর্থাৎ তোমরা আমাদের যে জিনিসের প্রতীক্ষায় রয়েছ, إِلَّآ إِحۡدَى ٱلۡحُسۡنَيَيۡنِۖ “তা দু’টো ভালোর একটি ছাড়া আর কিছুই না।” তা হল, শাহাদত অথবা তোমাদের উপরে বিজয়। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ, কাতাদা এবং অন্যান্যরা এ মত ব্যক্ত করেছেন وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ “আর আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি এজন্য যে” অর্থাৎ আমরাও তোমাদের প্রতীক্ষায় রয়েছি أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَاۖ “আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান।” অর্থাৎ আমরা তোমাদের জন্য এর অথবা ওর প্রতীক্ষায় আছি- হয়

أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَا “আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান।” অর্থাৎ বন্দি করে অথবা হত্যা করে فَتَرَبَّصُوٓاْ إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ “কাজেই অপেক্ষায় থাক, আমরা তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।” আল্লাহ তা‘আলার বাণী: قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهٗا “বল, স্বেচ্ছায় দান কর আর অনিচ্ছায়” অর্থাৎ তোমরা যা কিছু দান কর স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ إِنَّكُمۡ كُنتُمۡ قَوۡمٗا فَٰسِقِينَ “তোমাদের থেকে কক্ষনো তা গ্রহণ করা হবে না; তোমরা হলে এক ফাসিক সম্প্রদায়।” এরপর আল্লাহ তা‘আলা এর কারণ উল্লেখ করেন অর্থাৎ তিনি যে তাদের থেকে গ্রহণ করবেন না তার কারণ أَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ “তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে” অর্থাৎ আমল কেবলমাত্র ঈমান সহকারে বিশুদ্ধ হয় وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ كُسَالَىٰ “সলাতে আসলে আসে শৈথিল্যভরে” অর্থাৎ তাদের না আছে বিশুদ্ধ অভিপ্রায় আর না আছে আমল করার আগ্রহ। وَلَا يُنفِقُونَ “আর দান করলেও” কোন দান, إِلَّا وَهُمۡ كَٰرِهُونَ “অনিচ্ছা নিয়ে” সত্যবাদী এবং সত্য যার প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা কোএা বান্দাকে পুরস্কার দেওয়া বন্ধ করে দেন না, যতক্ষণ না তোমরা (হে বিশ্বাসীগণ) আমল করা বন্ধ করে দাও। আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন পবিত্র আর তিনি কেবল পবিত্র বিষয়ই গ্রহণ করেন। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে কোনো ধরণের দান-সদাক্বাহ, কোনো ধরণের আমল গ্রহণ করবেন না। কেননা তিনি শুধুমাত্র মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের থেকেই গ্রহণ করেন।

﴿فَلَا تُعۡجِبۡكَ أَمۡوَٰلُهُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُهُمۡۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ أَنفُسُهُمۡ وَهُمۡ كَٰفِرُونَ ٥٥ ﴾ [ التوبة : ٥٥ ]

“৫৫. কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেন তোমার চোখ ধাঁদিয়ে না দেয়, ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চান আর কাফির অবস্থাতেই যেন তাদের জান বাহির হয়।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৫৫]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেন: فَلَا تُعۡجِبۡكَ أَمۡوَٰلُهُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُهُمۡۚ “কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেন তোমার চোখ ধাঁদিয়ে না দেয়” যেমন তিনি বলেন: ﴿وَلَا تَمُدَّنَّ عَيۡنَيۡكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعۡنَا بِهِۦٓ أَزۡوَٰجٗا مِّنۡهُمۡ زَهۡرَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا لِنَفۡتِنَهُمۡ فِيهِۚ وَرِزۡقُ رَبِّكَ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰ ١٣١﴾ [ طه : ١٣١ ] “তুমি কখনো চোখ খুলে তাকিও না ঐ সব বস্তুর প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন দলকে পার্থিব জীবনে উপভোগের জন্য সৌন্দর্যস্বরূপ দিয়েছি, এসব দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের দেওয়া রিযকই হল সবচেয়ে উত্তম ও সবচেয়ে বেশি স্থায়ী।” (সূরা ত্বহা: ১৩১) তিনি আরও বলেন: ﴿أَيَحۡسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُم بِهِۦ مِن مَّالٖ وَبَنِينَ ٥٥ نُسَارِعُ لَهُمۡ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ بَل لَّا يَشۡعُرُونَ ٥٦﴾ [ المؤمنون : ٥٥، ٥٦ ] “তারা কি ভেবে নিয়েছে, আমি যে তাদেরকে ধনঐশ্বর্য ও সন্তানাদির প্রাচুর্য দিয়ে সাহায্য করেছি ৫৬. এর দ্বারা কি তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” [সূরা আল-মু’মিনুন: ৫৫-৫৬]

তাঁর বাণী: إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا “ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চান।” হাসান আল-বাসরী রহ. বলেন: তাদের থেকে তাদের অর্থ-সম্পদের যাকাত গ্রহণ করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মাধ্যমে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَتَزۡهَقَ أَنفُسُهُمۡ وَهُمۡ كَٰفِرُونَ “আর কাফির অবস্থাতেই যেন তাদের জান বাহির হয়” অর্থাৎ তিনি তাদেরকে মৃত্যু দিতে চান। যখন তাদেরকে মৃত্যু দিতে চান-কুফরির উপরে যাতে করে সেটা তাদের জন্য অত্যন্ত নিকৃষ্ট হয় আর শাস্তি হিসেবে চরম যন্ত্রণাদায়ক হয়। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমরা আশ্রয় কামনা করি। আর তারা যাতে পড়ে আছে তাতে ঢিল বা সাময়িক ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে।

﴿وَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنَّهُمۡ لَمِنكُمۡ وَمَا هُم مِّنكُمۡ وَلَٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٞ يَفۡرَقُونَ ٥٦ لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَ‍ًٔا أَوۡ مَغَٰرَٰتٍ أَوۡ مُدَّخَلٗا لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ ٥٧﴾ [ التوبة : ٥٦، ٥٧ ]

“৫৬. তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে, তারা তোমাদেরই মধ্যের লোক, তারা কক্ষনো তোমাদের মধ্যের লোক নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা তোমাদের ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত লোক। ৫৭. তারা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জায়গা পেলে কিংবা গিরিগুহা বা ঢুকে থাকার মত জায়গা পেলে সেখানেই তারা ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেত।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৫৬-৬৭]

মুনাফিকদের আতঙ্কের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের আতঙ্ক, বিভীষিকা ও ভয়-ডর সম্পর্কে অবহিত করেন। আল্লাহ বলেন, وَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنَّهُمۡ لَمِنكُمۡ “তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে, তারা তোমাদেরই মধ্যের লোক” দৃঢ় শপথ

وَمَا هُم مِّنكُمۡ “তারা কক্ষনো তোমাদের মধ্যের লোক নয়” অর্থাৎ বাস্তবে

وَلَٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٞ يَفۡرَقُونَ “প্রকৃতপক্ষে তারা তোমাদের ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত লোক।” এ বিষয়টি তাদেরকে শপথ করার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে

لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَ‍ًٔا “তারা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জায়গা পেলে” কোনো দূর্গ অথবা সুরক্ষিত যাতে তারা আশ্রয় নিবে, أَوۡ مَغَٰرَٰتٍ “কিংবা গিরিগুহা” অর্থাৎ যা পাহাড়ে হয়ে থাকে أَوۡ مُدَّخَلٗا “বা ঢুকে থাকার মত জায়গা পেলে” অর্থাৎ জমিনের মধ্যে কোনো সুড়ঙ্গ এবং গর্ত -এ তিনটি বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ এবং কাতাদা।

لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ “সেখানেই তারা ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেত।” তবে তারা তোমাদের থেকে ছুটে পালিয়ে যেত। কেননা তারা তোমাদের সাথে মিশে নিছক অসন্তুষ্টি সহকারে, ভালোবেসে নয়। তারা পারতপক্ষে তোমাদের সাথে মিশতে চায় না; অবশ্য অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয় কিছু বিধি-বিধান এর ব্যতিক্রম রয়েছে, এ কারণে তারা সর্বদা উদ্বিগ্ন এবং দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকে। কেননা ইসলাম এবং তার অনুসারীদের উত্তরোত্তর উন্নতই ঘটেই চলেছে। এ কারণে যখনই মুসলিমগণ আনন্দিত হয় তখনই তারা এতে কষ্ট পায় এবং তারা মুমিনগণের সাথে মিশতে চায় না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَ‍ًٔا أَوۡ مَغَٰرَٰتٍ أَوۡ مُدَّخَلٗا لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ “তারা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জায়গা পেলে কিংবা গিরিগুহা বা ঢুকে থাকার মত জায়গা পেলে সেখানেই তারা ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেত।

﴿وَمِنۡهُم مَّن يَلۡمِزُكَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ فَإِنۡ أُعۡطُواْ مِنۡهَا رَضُواْ وَإِن لَّمۡ يُعۡطَوۡاْ مِنۡهَآ إِذَا هُمۡ يَسۡخَطُونَ ٥٨ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ رَضُواْ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ سَيُؤۡتِينَا ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَرَسُولُهُۥٓ إِنَّآ إِلَى ٱللَّهِ رَٰغِبُونَ ٥٩ ﴾ [ التوبة : ٥٨، ٥٩ ]

“৫৮. তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা সদাক্বাহ (বণ্টনের) ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে, তাত্থেকে দেওয়া হলে খুশি হয়, আর তাত্থেকে না দেওয়া হলে সাথে সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ৫৯. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তারা যদি তাতে সন্তুষ্ট থাকত আর বলত, ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদেরকে দিবেন আর তাঁর রাসূলও, আমরা আশা ভরসা নিয়ে আল্লাহর দিকেই চেয়ে থাকি।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৫৮-৫৯[

সদাক্বাহর ব্যাপারে মুনাফিকদের দোষারোপ করা এবং এর প্রতি তাদের লোভ:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَمِنۡهُم “তাদের মধ্যে এমন লোক আছে” অর্থাৎ মুনাফিকদের মধ্যে مَّن يَلۡمِزُكَ “তোমার প্রতি দোষারোপ করে” অর্থাৎ তোমার দোষ বের করে فِي “ব্যাপারে” বন্টনের ব্যাপারে ٱلصَّدَقَٰتِ “সদকা” যখন তুমি তা বন্টন কর তখন সে ব্যাপারে তোমার স্বচ্ছতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে। অথচ তারাই এর উপযুক্ত যে, তাদের চরিত্র প্রশ্নের সম্মুখীন। তারা দ্বীনের দরদে যে এরকম আচরণ করে তা নয়; বরং তারা আরও বেশি পাওয়ার জন্য এমনটি করে। এ কারণে যদি فَإِنۡ أُعۡطُواْ مِنۡهَا رَضُواْ وَإِن لَّمۡ يُعۡطَوۡاْ مِنۡهَآ إِذَا هُمۡ يَسۡخَطُون “তাত্থেকে তাদেরকে দেওয়া হয়, তখন খুশি হয় আর তাত্থেকে না দেওয়া হলে সাথে সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।” অর্থাৎ- ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়ে। কাতাদা وَمِنۡهُم مَّن يَلۡمِزُكَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ “তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা সদকা (বণ্টনের) ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: তাদের মধ্যে কেউ কেউ সদকা বণ্টনের ব্যাপারে তোমার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী জনৈক গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করে। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণ-রৌপ্য বণ্টন করছিলেন। তখন সে বলে: হে মুহাম্মাদ, যদিও আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বণ্টনের ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে বলেছেন তথাপি তুমি ইনসাফ কর নি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি ধ্বংস হও, আমার পরে আর কে তোমার উপরে ইনসাফ করবে? এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা এর এবং এর মত যারা আছে তাদের থেকে সতর্ক হও। আমার উম্মতের মাঝে এর মত কিছু লোক হবে, (যারা) কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু সেটা তাদের গণ্ডদেশও অতিক্রম করবে না। কাজেই যখন তারা বের হবে তখন তাদেরকে তোমরা হত্যা কর। এরপর (আবারও) যখন তারা বের হবে তখন তোমরা তাদেরকে হত্যা কর। এরপর (আবারও) যখন তারা বের হবে তখনও তোমরা তাকে হত্যা কর। আমাদেরকে বলা হয়: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, আমি তোমাদেরকে কোনো কিছু দিবও না আবার বাধাও দিব না। আমি তো কেবল একজন তত্ত্বাবধায়ক।

কাতাদা এ সংক্রান্ত যা কিছু বলেন সেটা তার মত যা বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আবু সাঈদ ‘যুল খুওয়াইসারাহ’-এর ঘটনা সম্পর্কে বলেন, যার নাম হচ্ছে ‘হুরকুস’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের গনিমত বণ্টন করার সময় সে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপরে আপত্তি জানায়। সে তাঁকে বলে: ইনসাফ করুন, কেননা আপনি ইনসাফ করেন নি। ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ‘যদি আমি ইনসাফ না করি তবে তো ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।’ লোকটি চলে যাওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এর বংশধরের মধ্যে এমন কতগুলো লোক হবে যাদের সালাতের তুলনায় তোমাদের সালাতকে নিতান্ত নগণ্য মনে করবে। তাদের সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দীন থেকে সেভাবে বের হয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়। তাদের সাথে তোমাদের যেখানেই দেখা হবে সেখানেই তাদেরকে হত্যা করবে। আসমানের নিচে এরা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লাশ। এরপর হাদিসের বাকি অংশ বর্ণনা করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ ধরণের লোকদেরকে জানিয়ে দেন যে, এ ধরণের আচরণের চেয়ে কিসে তাদের আরও বেশি উপকার রয়েছে? তিনি বলেন: وَلَوۡ أَنَّهُمۡ رَضُواْ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ سَيُؤۡتِينَا ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَرَسُولُهُۥٓ إِنَّآ إِلَى ٱللَّهِ رَٰغِبُونَ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তারা যদি তাতে সন্তুষ্ট থাকত আর বলত, ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদেরকে দিবেন আর তাঁর রাসূলও, আমরা আশা ভরসা নিয়ে আল্লাহর দিকেই চেয়ে থাকি।” এই সম্মানিত আয়াতটি মহান শিষ্টাচার এবং সম্মানিত রহস্যের সাথে সংশ্লিষ্ট, আল্লাহ তা‘আলা ধার্য করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হতে হয় আর কেবল তাঁর উপর ভরসা রাখতে হয়। এ কথাই তিনি বলেছেন: وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট” অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করার সামর্থ্য চাওয়া, তাঁর নির্দেশসমূহ পালন করা এবং তাঁর নিষেধসমূহকে বর্জন করা, তিনি যে সব বিষয়ে অবহিত করেছেন সেগুলো সত্য বলে মেনে নেওয়া এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। এ সকল ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আশা করতে হয়।

﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦٠ ﴾ [ التوبة : ٦٠ ]

“৬০. সদাক্বাহ হল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য) আর মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা-বিজ্ঞানী।” (সূরা আত-তাওবাহ্: ৬০)

যাকাতের খাতগুলোর বর্ণনা:

ইতোপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেন যে, নির্বাধ মুনাফিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-উপরে আপত্তি জানায় আর সাদাক্বাহ বণ্টনের ক্ষেত্রে তাঁকে দোষারোপ করে। এরপর তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনিই স্বয়ং এগুলো বণ্টন করেছেন, এর বিধান বর্ণনা করেছেন, তিনি স্বয়ং এর তত্ত্বাবধান করেছেন। বণ্টনের দায়িত্ব তিনি ছাড়া আর কারও উপরে ন্যস্ত করেন নি। তিনি একে উল্লিখিত লোকদের মাঝে বণ্টন করেছেন। অন্যদের উপরে এখানে ফকীরদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেননা এ কথা প্রসিদ্ধ যে, অন্যদের চেয়ে ফকীররাই সবচেয়ে অভাবগ্রস্ত আর তাদের চাহিদা এবং অভাব বেশি। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ, হাসান আল-বাসরই এবং ইবনু যাইদ থেকে বর্ণিত হয়েছে, ইবনু জারীর সহ একাধিক আলেম এ মতকে পছন্দ করেছেন যে, ফকীর হচ্ছে ঐ মার্জিত ব্যক্তি যে কারও কাছে কোনো কিছুই চায় না। আর মিসকীন হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে যাচনা করে এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে এবং পেছনে পেছনে ঘুরে। কাতাদা বলেন: ফকীর হচ্ছে দরিদ্র ব্যক্তি আর মিসকীন হচ্ছে সে, যে সুস্থ দেহ-সম্পন্ন। আমরা এখানে কতগুলো হাদিস উল্লেখ করব যা এই আট প্রকারের সকলের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ফকীর:

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ধনী ব্যক্তির জন্য সদকা গ্রহণ হালাল নয় এবং তারও জন্য নয়, যে সুস্থ দেহের অধিকারী। আহমাদ, আবু দাউদ এবং তিরমিযী এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

মিসকীন:

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিসকীন তো সে নয়, যে লোকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় আর তাদের নিকট এক বা দুই লোকমা খাদ্যে অথবা একটি বা দু’টি খেজুর যাচনা করে। তখন সাহাবীগন জিজ্ঞেস করেন তবে মিসকীন কে ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বলেন: সে ঐ ব্যক্তি যে এমন কিছু পায় না, যার দ্বারা সে তার অভাব পূরণ করতে পারে অথবা যার অবস্থা সম্পর্কে লোকেরা জানে ফলে তাকে সদকা করে; কিন্তু লোকদের নিকট কিছু চায় না। বুখারী ও মুসলিম।

যাকাত সংগ্রাহক:

যাকাত সংগ্রাহকগন যাকাতের একটি অংশ পাওয়ার হকদার। আর এই যাকাত সংগ্রাহক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটাত্মীয়দের হওয়া শোভনীয় নয়, যাদের উপরে যাকাত হারাম। যেমন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল মুত্তালিব ইবনু রাবী‘আহ ইবনুল হারিস বর্ণনা করেন, তিনি এবং ফযল ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাদেরকে যাকাত সংগ্রাহকের দায়িত্বে নিযুক্ত করার জন্য আরয করেন। তখন তিনি বলেন: যাকাত মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) বংশধরের জন্য বৈধ নয়। সেটা তো জনগণের সম্পদের ময়লা।

মন সন্তুষ্ট করা হয়েছে এমন লোকজন:

মন সন্তুষ্ট করা হয়েছে এমন লোকজন কয়েক-ভাগে বিভক্ত: তাদের মাঝে কাউকে দেওয়া হবে তাকে ইসলাম গ্রহণ করাতে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবনু উমাইয়াকে হুনাইনের গনিমত থেকে প্রদান করেন, সে মুশরিক অবস্থায় হুনাইনের যুদ্ধে অংশ নেয়। তিনি (সাফওয়ান) বলেন: তিনি আমাকে দিতেই থাকেন এমনকি তিনি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন অথচ ইতোপূর্বে তিনি আমার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ছিলেন। যেমন ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের দিন আমাকে দান করেন। তিনি ছিলেন আমার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। তিনি আমাকে দিতেই থাকেন অবশেষে তিনি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। মুসলিম, তিরমিযী এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

তাদের মধ্যে কাউকে এজন্য দেওয়া হবে, সে যেন তার ইসলামকে (রীতিনীতি পালনকে) সুন্দর করে, আর তার অন্তর স্থির হয়, যেভাবে তিনি হুনাইনের দিনই তুলাকা (যাদের তিনি মক্কা বিজয়ের পর ছেড়ে দেন) এরূপ লোকদের বিশিষ্ট জনকে একশতটি করে উট দেন আর তিনি বলেন: আমি এমন এক ব্যক্তিকে (যাকাত) থেকে প্রদান করছি ঠিক যে সময়ে অন্য লোক তার চেয়ে আমার নিকট বেশি প্রিয়। আর তা এ ভয়ে যে, আল্লাহ তা‘আলা হয়ত তার মুখের ভরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (যদি সে ইসলাম গ্রহণ না করে)। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়েমেন থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মাটি মিশ্রিত স্বর্ণ প্রেরণ করেন। ফলে তিনি সেটা চারজন ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দেন। (তাঁরা হলেন) আল-আকরা‘ ইবনু হাবিস, উইয়াইনা ইবনু বাদর, ‘আলক্বামাহ ইবনু উলাসাহ, এবং যাইদ আল-খাইর। আর তিনি বলেন: তাদের অন্তরগুলো কাছে আনার জন্য (এগুলো প্রদান করলাম)।

তাদের কাউকে এজন্য দেওয়া হবে হতে পারে তার কোনো সহচর ইসলাম গ্রহণ করবে। আবার কাউকে দেওয়া হবে আশে পাশের এলাকা থেকে যাকাত সংগ্রহ করার জন্য অথবা মুসলিমদের চৌকি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।

দাসমুক্তি

রিক্বাব (দাসমুক্তি) সম্পর্কে হাসান আল-বসরী, মুকাতিল ইবনু হাইয়ান, ওমর ইবনু আব্দুল ‘আযীয, সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর, নাখ‘ঈ, যুহরী এবং ইবনু যাইদ থেকে বর্ণিত হয়েছে: যে গোলাম অর্থ প্রদান করার শর্তে তার মনিবের সাথে নিজেকে মুক্ত করার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আবু মূসা আশ‘আরী থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, হাসান বলেছেন: যাকাতের অর্থ দিয়ে গোলাম আযাদ করায় দোষের কিছু নেই। অর্থাৎ রিক্বাব শব্দটি এ থেকে ব্যাপক যে, শুধুমাত্র মুকাতাব -কে তার মুক্তির জন্য অর্থ প্রদান করা হবে। অথবা দাস ক্রয় করে তাকে স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে আযাদ করা হবে। মারফূ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে: আল্লাহ তা‘আলা আযাদকৃত গোলামের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। এমনকি লজ্জা স্থানের বদলে লজ্জা স্থান। আর তা এ জন্য যে, পুরস্কার আমলের অনুরূপ হয়ে থাকে। ﴿ وَمَا تُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٩ ﴾ [ الصافات : ٣٩ ] “তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেওয়া হবে যা তোমরা করতে।” [সূরা আস-সাফফাত: ৩৯]

দাসমুক্তির ফযিলত:

মুসনাদে এসেছে: বারা’ ইবনু ‘আযিব বলেন: জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে আর জাহান্নাম থেকে দুরে রাখবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: নাসামা (গোলাম) আযাদ কর আর গর্দান মুক্ত কর। তখন লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, এ দু’টি বিষয় কি এক নয়? তিনি বললেন: না, নাসামা আযাদ করার অর্থ হচ্ছে তাকে তুমি এককভাবে আযাদ করে দাও আর গর্দান মুক্ত করার অর্থ হচ্ছে তার (মুক্ত হওয়ার চুক্তিকৃত) অর্থে সাহায্য কর।

ঋণগ্রস্তদের জন্য:

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য কয়েকভাবে হতে পারে: তন্মধ্যে কেউ নিজের কাঁধে কারও ঋণের বোঝা বয়ে নেয়। (ফলে লোকদের মাঝে সংঘটিত বিবাদ মিটিয়ে দেয়।) আবার কেউ ঋণের জামিন হয় যে, সে ঋণ পরিশোধ করে দিবে; কিন্তু (দেখা যায়) তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা সে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে অথবা পাপে (ঋণী হয়ে পড়েছে) পরে সে তাওবাহ করেছে। এ ধরণের লোকের ঋণ পরিশোধে তাদেরকে যাকাত দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাবীসাহ ইবনু মুখারিক্ব আল-হিলালীর হাদিস এসেছে, তিনি বলেন: আমি এক ব্যক্তির ঋণের বোঝা নিজের ঘাড়ে তুলে নেই। এরপর আমি এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করি। তিনি বলেন: তুমি ধৈর্য ধর, অবশেষে যখন আমাদের নিকট যাকাত আসে আমরা তোমার জন্য সেখান থেকে বরাদ্দ করার নির্দেশ দিব। তিনি বলেন: এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে কাবীসাহ, এই তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য যাচনা করা বৈধ নয়: যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কাঁধে নেয়, তার জন্য যাচনা করা বৈধ যে পর্যন্ত না সে তা পায়, এরপর সে বিরত থাকবে। অথবা যে ব্যক্তির আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে তার জীবন ধারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন যাচনা করা বৈধ রয়েছে। যে ব্যক্তি দারিদ্রতার কারণে দুর্বল হয়ে গিয়েছে, তার নিকটাত্মীয়দের তিনজন বিচক্ষণ ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিবে যে, সে দারিদ্রতার কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে, ফলে তার জন্য যাচনা করা বৈধ রয়েছে- যে পর্যন্ত না সে তার জীবনধারণের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে যাচনা করা অবৈধ সম্পত্তি। এর ভক্ষক অবৈধ সম্পদ ভক্ষণ করে। (মুসলিম)

আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈক ব্যক্তির ক্রয়কৃত ফলফলাদি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে সে অত্যন্ত ঋণী হয়ে পড়ে। ফলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: একে তোমরা সদকা কর। ফলে লোকেরা তাকে সদকা করে, তবে সেটা তার ঋণ শোধ করার পরিমাণ পর্যন্ত পৌঁছে না। তখন তিনি ঋণ পাওনাদারদের বলেন: যা পেয়েছ তাই গ্রহণ কর। এ ছাড়া তোমাদের জন্য আর কিছু নেই। [মুসলিম]

আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য):

আল্লাহর পথে, তাদের মধ্যে রয়েছে মুজাহিদ (আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী) যে মুসলিমদের সম্পদ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করে না।

আর মুসাফিরের জন্য:

ইবনুস সাবীল হচ্ছে, সে অভাবি মুসাফির যে এমন কোনো জমিনে ভ্রমণ করে সেখানে এমন কোনো সাহায্য পায় না যার মাধ্যমে সে তার সফরের ব্যয়ভার বহন করতে পারে। ফলে তাকে যাকাত থেকে সেই পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে যাতে সে তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। যদিও তার দেশে বা গন্তব্যে তার সম্পদ থাকে। এই বিধান তার জন্যও প্রযোজ্য যে তার নিজ এলাকা থেকে সফরের ইচ্ছা পোষণ করে; কিন্তু তার সাথে কিছু নেই। ফলে তার যাওয়া-আসার জন্য যে পরিমাণ অর্থ যথেষ্ট সেটা তাকে যাকাত থেকে দেওয়া যাবে। এর দলীল হচ্ছে বক্ষ্যমাণ আয়াতটি আর সেই হাদিস যা ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ মা‘মার থেকে বর্ণনা করেছেন। যায়েদ ইবনু আসলাম ‘আতা’ ইবনু ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ধনীর জন্য যাকাত বৈধ নয় তবে পাঁচটি কারণ ছাড়া: সে তহশিলদার (যাকাত সংগ্রাহক), যে ব্যক্তি তার অর্থ দ্বারা যাকাতের বস্তু বা সম্পদ কিছু ক্রয় করে। ঋণী, আল্লাহ পথে লড়াইকারী অথবা কোনো মিসকিনকে সদকা করা হলে যে ধনীকে হাদিয়া হিসেবে তা প্রদান করে।”

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ “এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয।” অর্থাৎ একটি বিধান, ফায়সালা এবং বণ্টন যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ধার্যকৃত। وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ “আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী” অর্থাৎ তিনি সকল বিষয়ের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত আরও জানেন কিসে তাঁর বান্দাদের উপকার রয়েছে। তিনি প্রজ্ঞাবান সে সব বিষয়ে যা তিনি বলেন, যা তিনি করেন, যে আইন প্রণয়ন করেন এবং যে ফায়সালা প্রদান করেন। তিনি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তিনি ছাড়া নেই কোনো রব।

﴿وَمِنۡهُمُ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلنَّبِيَّ وَيَقُولُونَ هُوَ أُذُنٞۚ قُلۡ أُذُنُ خَيۡرٖ لَّكُمۡ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَيُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡۚ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ رَسُولَ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٦١﴾ [ التوبة : ٦١ ]

“৬১. তাদের মাঝে এমন লোকও আছে যারা নবীকে কষ্ট দেয় আর বলে তিনি কান কথা শুনেন। বল, ‘তোমাদের যাতে ভালো আছে সে তাই শোনে’। সে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে, আর মু’মিনদেরকে বিশ্বাস করে, আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য রহমত। অপরপক্ষে আল্লাহর রাসূলকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ ‘আযাব।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬১]

মুনাফিকদের অন্যমত নিদর্শন হচ্ছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেওয়া:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মুনাফিকদের একদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্রের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে তাকে কষ্ট দেয়। তারা বলে: هُوَ أُذُنٌ “তিনি কান কথা শুনেন” অর্থাৎ আমাদের সম্পর্কে যে যাই বলে তাই তিনি বিশ্বাস করেন। তার সাথে যেই কথা বলে তাকেই তিনি বিশ্বাস করেন। কাজেই আমরা যদি তাঁর নিকট যাই আর শপথ করি তিনি আমাদেরকে বিশ্বাস করে নিবেন। এ ধরণের বর্ণনা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ এবং কাতাদা থেকে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: قُلۡ أُذُنُ خَيۡرٖ لَّكُمۡ “বল, ‘যাতে তোমাদের ভালো আছে, তিনি তাই শোনেন।” তাঁর শোনা ভালো। তিনি জানেন কার কথা সত্য আর কার কথা মিথ্যা। يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَيُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ وَرَحۡمَةٞ “সে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে, আর মু’মিনদেরকে বিশ্বাস করে” অর্থাৎ তিনি মুমিনগণকে বিশ্বাস করেন। وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡۚ “আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য রহমত” অর্থাৎ তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ رَسُولَ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ “অপরপক্ষে আল্লাহর রাসূলকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ ‘আযাব।”

﴿يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ لِيُرۡضُوكُمۡ وَٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَحَقُّ أَن يُرۡضُوهُ إِن كَانُواْ مُؤۡمِنِينَ ٦٢ أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّهُۥ مَن يُحَادِدِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَأَنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدٗا فِيهَاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡخِزۡيُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٣ ﴾ [ التوبة : ٦٢، ٦٣ ]

“৬২. তোমাদেরকে খুশি করার জন্য তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম করে। তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তবে কাউকে খুশি করতে চাইলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এর সবচেয়ে বেশি হকদার। ৬৩. তারা কি জানে না যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন যেখানে সে হবে চিরস্থায়ী? আর এটা খুবই লাঞ্ছনার ব্যাপার।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬২-৬৩]

(মুনাফিকদের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে) মিথ্যা শপথ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সন্তুষ্টি করার প্রচেষ্টা। কাতাদা يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ لِيُرۡضُوكُمۡ “তোমাদেরকে খুশি করার জন্য তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম করে।” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: আমাদেরকে বলা হয়েছে: জনৈক মুনাফিক বলে: আল্লাহর শপথ, এরা (মুনাফিকরা) হচ্ছে আমাদের নেতা এবং আমাদের মধ্যেকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন তা যদি সত্য হয় যে, তারা গাধার চেয়ে নিকৃষ্ট। জনৈক মুসলিম এ কথা শুনে ফেলেন এরপর বলেন: আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন তা অবশ্যই সত্য আর তুমি হচ্ছ গাধার চেয়ে নিকৃষ্ট। মুসলিম ব্যক্তিটি যা ঘটেছে সে বিষয়টি বহন করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে অবহিত করেন। রাসূল লোকটিকে ডেকে পাঠান। এরপর বলেন: ‘কিসে তোমাকে এ কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে? সে নিজেকে ভর্ৎসনা করা শুরু করে আর আল্লাহর শপথ করে বলে যে, সে এ কথা বলে নি। তখন মুসলিম ব্যক্তিটি বলে ওঠে: হে আল্লাহ আপনি সত্যবাদীকে সত্যবাদী ঘোষণা করুন আর মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদী ঘোষণা করুন। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন: أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّهُۥ مَن يُحَادِدِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ “তারা কি জানে না যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে” অর্থাৎ তারা কি নিশ্চিত হয় না আর জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার বিরোধিতা করে, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় আর তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে আর এভাবে সে একদিকে অবস্থান নেয়, যে সময়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অন্যদিকে থাকেন। فَأَنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدٗا فِيهَاۚ “তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন যেখানে সে হবে চিরস্থায়ী।” অর্থাৎ লাঞ্ছনা ও বেদনাদায়ক শাস্তি। ذَٰلِكَ ٱلۡخِزۡيُ ٱلۡعَظِيمُ “আর এটা খুবই লাঞ্ছনার ব্যাপার” অর্থাৎ এটা হচ্ছে মহা অপমান এবং বড় ধরণের দুর্ভাগ্য।

﴿ يَحۡذَرُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُورَةٞ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمۡۚ قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ ٦٤ ﴾ [ التوبة : ٦٤ ]

“৬৪. মুনাফিকরা ভয় পায় তাদের মনের কথা প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে কোন সূরা নাযিল হয়ে যায় নাকি। বল, ‘ঠাট্টা করতে থাক, তোমরা যে ব্যাপারে ভয় পাও, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিবেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬৪]

(আরও নিদর্শন হচ্ছে) তাদের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়:

মুজাহিদ বলেন: তারা তাদের মধ্যে কথাবার্তা বলে এরপর বলে: আল্লাহর নিকট আমাদের আশা, তিনি যেন আমাদের এই গোপনীয় প্রকাশ করে না দেন। এই আয়াতটি এই আয়াতের মত ﴿ وَإِذَا جَآءُوكَ حَيَّوۡكَ بِمَا لَمۡ يُحَيِّكَ بِهِ ٱللَّهُ وَيَقُولُونَ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ لَوۡلَا يُعَذِّبُنَا ٱللَّهُ بِمَا نَقُولُۚ حَسۡبُهُمۡ جَهَنَّمُ يَصۡلَوۡنَهَاۖ فَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ٨﴾ [ المجادلة : ٨ ] “তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে এমনভাবে সম্ভাষণ করে, যেমনভাবে আল্লাহ তোমাকে সম্ভাষণ করেন নি। তারা মনে মনে বলে, ‘আমরা যা বলি তার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে ‘আযাব দেন না কেন?। জাহান্নামই তাদের জন্য যথেষ্ট, তাতে তারা জ্বলবে, কতই না নিকৃষ্ট সেই গন্তব্য স্থল!” [সূরা আল-মুজাদিলাহ: ৮] তিনি অত্র আয়াতে বলেন: قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ “বল, ‘ঠাট্টা করতে থাক, তোমরা যে ব্যাপারে ভয় পাও, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিবেন” অর্থাৎ শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপরে আয়াত অবতীর্ণ করে তোমাদেরকে গোপনীয়তা ফাঁস করবেন আর তাঁকে তোমাদের ব্যাপারাদি জানিয়ে দিবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿أَمۡ حَسِبَ ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَن لَّن يُخۡرِجَ ٱللَّهُ أَضۡغَٰنَهُمۡ ٢٩ وَلَوۡ نَشَآءُ لَأَرَيۡنَٰكَهُمۡ فَلَعَرَفۡتَهُم بِسِيمَٰهُمۡۚ وَلَتَعۡرِفَنَّهُمۡ فِي لَحۡنِ ٱلۡقَوۡلِۚ ٣٠﴾ [ محمد : ٢٩، ٣٠ ] “যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ কক্ষনো তাদের লুকানো বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দিবেন না? আমি যদি ইচ্ছে করতাম তাহলে আমি তোমায় ওদেরকে দেখিয়ে দিতাম। আর তাদের কথাবার্তার ধরন দেখে তুমি তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই চিনতে পারবে।” [সূরা মুহাম্মাদ: ২৯-৩০] এ কারণে কাতাদা বলেন: এই সূরাটিকে সূরা ‘ফাদিহাহ’ মুনাফিকদের ‘গোমর ফাঁস’ সূরা বলা হয়।

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ ٦٦ ﴾ [ التوبة : ٦٥، ٦٦ ]

“৬৫. তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, ‘আমরা হাস্য রস আর খেল-তামাশা করছিলাম।’ বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রুপ করছিলে?’ ৬৬. ওযর পেশের চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। তোমাদের মধ্যেকার কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্যদেরকে শাস্তি দেব, কারণ তারা অপরাধী।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৫৬-৬৬]

মুনাফিকরা মিথ্যার উপরে নির্ভর করে আর মিথ্যা বাহানা দেখায়:

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: জনৈক ব্যক্তি তাবুক যুদ্ধে এক মজলিসের মধ্যে বলে: আমরা আমাদের ক্বারীদের মত (ক্বারী) আর দেখি নি আর ওদের পেট হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষুধার্ত, তাদের জিহ্বা হচ্ছে সবচেয়ে মিথ্যাবাদী আর তারা যুদ্ধের ময়দানে সবচেয়ে ভীরু। ((এ সময়) মসজিদে অবস্থানরত এক ব্যক্তি বলে: তুমি মিথ্যা বলেছ, আসলে তুমি হচ্ছ একটা মুনাফিক। আমি এখনই গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা জানিয়ে দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছে, তখন কুরআন অবতীর্ণ হয়। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: আমি পরে ঐ লোকটিকে দেখি সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের কাঁধের সাথে লেগে অবস্থান করছিল, প্রস্তরের আঘাত পাচ্ছিল। আর সে বলছিল: হে আল্লাহর রাসূল, আমি তো হাঁসি-তামাশা করে এ কথা বলেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ “আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?” ইবনু ইসহাক বলেন: একদল মুনাফিক যাদের মধ্যে ওয়াদী‘আহ ইবনু সাবিতও ছিল (সে হচ্ছে) বানু উমাইয়া ইবনু যাইদ ইবনু আমর ইবনু আউফের লোক, আরও ছিল বানু সালামার মিত্র আশাজা‘ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার নাম হচ্ছে মুখাশ্শান ইবনু হুমাইর। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে চলছিল যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তাদের একজন অপরজনকে বলে: তোমরা কি মনে কর বনু আসফারের বিতাড়ন আরবদের পারস্পরিক যুদ্ধের মতই? আল্লাহর শপথ, যেন আমরা তোমাদের সাথে আগামীকাল একই রশিতে বন্দি হতে যাচ্ছি মুমিনগণকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য। (একথা বলে) তখন মুখাশশান ইবনু হুমাইইয়ার বলে: আল্লাহর শপথ, আমি তো এ ফায়সালা দেওয়ার ইচ্ছা করেছি আমাদের প্রত্যেককে একশটি করে কোড়া মারা হবে, আমরা তো পরাজিত হব। তোমাদের এই যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের নিকট কুরআন অবতীর্ণ হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- যতদূর আমরা জানি -আম্মার ইবনু ইয়াসারকে বলেন: এই লোকগুলোকে ধর, তারা তো আগুন জ্বালিয়েছে, তারা যা বলেছে সে সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তারা অস্বীকার করে তবে বল: অবশ্যই তোমরা এরূপ এরূপ বলেছ। আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে এ কথা জিজ্ঞেস করেন। তখন তারা কৈফিয়ত প্রদানের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসে। তখন ওয়াদী‘আহ ইবনু সাবিত বলে, আর এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহনে ছিলেন, ওয়াদী‘আহ উটের কাঁধ ধরে বলতে থাকে: ইয়া রাসূলাল্লাহ‌্, আমরা তো কেবল খেল-তামাশার ছলে এ কথা বলেছিলাম। তখন মুখশা ইবনু হুমাইয়ার বলে: ইয়া রাসূলাল্লাহ‌্, আমার আর আমার পিতার নাম ডুবে গেছে। এই আয়াতে যাকে ক্ষমা করা হয় সে হচ্ছে মুখাশ্শান ইবনু হুমাইয়ার। তাঁর নাম আব্দুর রহমান রাখা হয়। তিনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন তিনি যেন এমন স্থানে শহীদ হন যে সম্পর্কে কেউ জানতে না পারে। তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন; কিন্তু তাঁর চি‎হ্ন কেউ খুঁজে পায় নি।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ “ওজর পেশের চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ।” অর্থাৎ যে কথার দ্বারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছ, إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ “তোমাদের মধ্যেকার কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্যদেরকে শাস্তি দেব” অর্থাৎ তোমাদের সকলকেই ক্ষমা করা হবে তা নয়; বরং তোমাদের কাউকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ “কারণ তারা অপরাধী” অর্থাৎ এই ভুল ও পাপের উক্তির কারণে।

﴿ٱلۡمُنَٰفِقُونَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتُ بَعۡضُهُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمُنكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَقۡبِضُونَ أَيۡدِيَهُمۡۚ نَسُواْ ٱللَّهَ فَنَسِيَهُمۡۚ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٦٧ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتِ وَٱلۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ هِيَ حَسۡبُهُمۡۚ وَلَعَنَهُمُ ٱللَّهُۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ ٦٨﴾ [ التوبة : ٦٧، ٦٨ ]

“৬৭. মুনাফিক পুরুষ আর মুনাফিক নারী সব এক রকম, তারা অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় আর সৎ কাজ করতে নিষেধ করে, (আল্লাহর পথে ব্যয় করার ব্যাপারে) হাত গুটিয়ে রাখে, তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, তাই তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন। মুনাফিকরাই তো ফাসিক। ৬৮. আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়া‘দা দিয়েছেন, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট। তাদের উপর আছে আল্লাহর অভিশাপ, আর আছে তাদের জন্য স্থায়ী ‘আযাব।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬৭-৬৮]

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের তিরস্কার করেন, কেননা তারা মুমিনগণের বৈশিষ্ট্যের চেয়ে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কেননা মুমিনগণ সৎকাজের আদেশ দেয় আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে; কিন্তু মুনাফিকরা يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمُنكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَقۡبِضُونَ أَيۡدِيَهُمۡۚ “তারা অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় আর সৎ কাজ করতে নিষেধ করে হাত গুটিয়ে রাখে” অর্থাৎ আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে (হাত গুটিয়ে রাখে), نَسُواْ ٱللَّهَ “তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে” অর্থাৎ তারা আল্লাহর স্মরণ ভুলে গেছে, فَنَسِيَهُمۡۚ “তাই তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন” অর্থাৎ তিনিও তাদের সাথে তাদেরকে ভুলে যাওয়ার মত আচরণ করেছেন, যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, ﴿وَقِيلَ ٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰكُمۡ كَمَا نَسِيتُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَا وَمَأۡوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن نَّٰصِرِينَ ٣٤﴾ [ الجاثية : ٣٤ ] “আর বলা হবে ‘আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব, যেমন করে তোমরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে।” [সূরা আল- জাছিয়াহ: ৩৪]

إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ “মুনাফিকরাই তো ফাসিক” অর্থাৎ সত্য পথ থেকে বের হয়ে গেছে, গোমরাহির পথে প্রবেশ করেছে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتِ وَٱلۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ “আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়া‘দা দিয়েছেন।” এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণে যা আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ “তাতে তারা চিরদিন থাকবে” তারা এবং কাফেররা চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে। هِيَ حَسۡبُهُمۡۚ “তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট” শাস্তির জন্য وَلَعَنَهُمُ ٱللَّهُۖ “তাদের উপর আছে আল্লাহর অভিশাপ” তিনি তাদেরকে বিতাড়িত করেছেন, (তাঁর রহমত থেকে) দুরে সরিয়ে দিয়েছেন, وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ “আর আছে তাদের জন্য স্থায়ী ‘আযাব।”

﴿ كَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ كَانُوٓاْ أَشَدَّ مِنكُمۡ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرَ أَمۡوَٰلٗا وَأَوۡلَٰدٗا فَٱسۡتَمۡتَعُواْ بِخَلَٰقِهِمۡ فَٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِخَلَٰقِكُمۡ كَمَا ٱسۡتَمۡتَعَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُم بِخَلَٰقِهِمۡ وَخُضۡتُمۡ كَٱلَّذِي خَاضُوٓاْۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٦٩ ﴾ [ التوبة : ٦٩ ]

“৬৯. (তোমাদের কাজ-কারবার) তোমাদের আগের লোকদের মতই, যারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তির অধিকারী, আর ধন-মাল আর সন্তান-সন্ততিতেও তোমাদের চেয়ে অধিক সমৃদ্ধিশালী, তাদের প্রাপ্য অংশ তারা ভোগ করে গেছে। এখন তোমরাও তোমাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ কর যেমন তোমাদের আগের লোকেরা তাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ করেছে। আর তোমরা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত আছ যেমন তারা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত ছিল। এরাই হল তারা দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের কাজ-কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” [সুরা আত-তাওবাহ: ৬৯]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: দুনিয়া ও আখিরাতে তারা সেভাবেই আযাবের সম্মুখীন হয়েছে যেভাবে তাদের পূর্ববর্তীগণ সম্মুখীন হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: بِخَلَٰقِكُمۡ “তাদের প্রাপ্য অংশ” হাসান আল-বাসরী বলেন: তাদের দ্বীনের সাথে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَخُضۡتُمۡ كَٱلَّذِي خَاضُوٓاْۚ “এখন তোমরাও তোমাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ কর যেমন তোমাদের আগের লোকেরা তাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ করেছে।” অর্থাৎ মিথ্যা ও ভ্রান্ত বিষয়ে, أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ “এরাই হল তারা যাদের কাজ-কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে।” তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে, এ জন্য তাদের কোনো সাওয়াব নেই। কেননা সেগুলো নষ্ট।

فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ “দুনিয়া ও আখিরাতে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”। এ জন্য তাদের কোনো সাওয়াবই হয় নি। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: এই রাত্রিটি গত রাত্রির সাথে কতই না সাদৃশ্যপূর্ণ। كَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ “তোমাদের আগের লোকদের মতই” এরা হচ্ছে বনী ইসরাইল, যাদের সাথে আমাদের তুলনা দেওয়া হয়েছে। আমি এটাই কেবল জানি যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তোমরা তাদের অনুসরণ করবে, এমনকি তাদের কেউ যদি ষাণ্ডার গর্তে গিয়ে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে।” আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, অবশ্যই তোমরা এক বিঘত এক বিঘত, এক হাত এক হাত, এক বাহু এক বহু করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি ষাণ্ডার গর্তে গিয়ে প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন: তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল, আহলে কিতাবরা কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “তবে আর কারা?” বিশুদ্ধ বর্ণনায় এ হাদিসের সমার্থক হাদিস রয়েছে।

﴿أَلَمۡ يَأۡتِهِمۡ نَبَأُ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ قَوۡمِ نُوحٖ وَعَادٖ وَثَمُودَ وَقَوۡمِ إِبۡرَٰهِيمَ وَأَصۡحَٰبِ مَدۡيَنَ وَٱلۡمُؤۡتَفِكَٰتِۚ أَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ فَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ ٧٠ ﴾ [ التوبة : ٧٠ ]

“৭০. তাদের কাছে কি তাদের আগের লোকদের সংবাদ আসে নি, নূহের জাতি, ‘আদ, সামূদ, ইবরাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদায়েনের অধিবাসীবৃন্দ আর উল্টে দেওয়া নগরসমূহের? তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, অতঃপর আল্লাহ তাদের উপর জুলুম করেননি, আসলে (তারাই তাদের অন্যায় কার্যকলাপের মাধ্যমে) নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করেছিল।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭০]

মুনাফিকরা যেন তাদের পূর্ববর্তীদের থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে এ মর্মে উপদেশ:

আল্লাহ তা‘আলা এ সমস্ত মুনাফিকদের উপদেশ দিচ্ছেন, যারা রাসূলগণকে অস্বীকার করে। أَلَمۡ يَأۡتِهِمۡ نَبَأُ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ “তাদের কাছে কি তাদের আগের লোকদের সংবাদ আসে নি” অর্থাৎ তোমাদের কাছে কি ঐ সমস্ত জাতির খবর পৌঁছে নি যারা রাসূলগণকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল। قَوۡمِ نُوحٖ “নূহের জাতির” জমিনবাসীর সকলেই নিমজ্জিত হয়েছিল, তবে তারা ব্যতীত যারা তাঁর বান্দা এবং তাঁর রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান এনেছিল। وَعَادَٖ “আদ” কীভাবে তিনি তাদেরকে অনুর্বর বাতাস দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কেননা তারা হূদ আলাইহিস সালামকে অস্বীকার করেছিল। وَثَمُودَ “সামূদ” কীভাবে তাদেরকে বিকট আওয়াজ পাকড়াও করেছিল। কেননা তারা সালিহ আলাইহিস সালামকে অস্বীকার করেছিল এবং উটনিকে হত্যা করেছিল। وَقَوۡمِ إِبۡرَٰهِيمَ “ইব্রাহীমের সম্প্রদায়” কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তাদের উপরে সাহায্য করেন আর সুস্পষ্ট মু‘জিযা দ্বারা তাদের উপরে তাঁকে শক্তিশালী করেন। আর কীভাবে তাদের বাদশাহ নামরূদ ইবনু কিন‘আন ইবনু কূশ আল-কিন‘আনীকে ধ্বংস করেন। (তার উপরে আল্লাহ তা‘আলার লা‘নাত) وَأَصۡحَٰبِ مَدۡيَنَ “এবং মাদায়েনের অধিবাসীবৃন্দ” তারা হচ্ছে শু‘আইব আলাইহিস সালামের কাওম। কীভাবে তাদেরকে ভূমিকম্প এবং ছায়ার দিবসের শাস্তি গ্রাস করে। وَٱلۡمُؤۡتَفِكَٰتِۚ “আর উল্টে দেওয়া নগরসমূহের?” অর্থাৎ লুত আলাইহি সালামের সম্প্রদায়, যারা ইতোপূর্বে মাদায়েনে বসবাস করত। অন্য আয়াতে এসেছে, ﴿وَٱلۡمُؤۡتَفِكَةَ أَهۡوَىٰ ٥٣﴾ [ النجم : ٥٣ ] “তিনি (লুত জাতির) উল্টানো আবাস ভূমিকে উঠিয়ে নিক্ষেপ করেছিলেন।” [সূরা আন-নাজম: ৫৩] অর্থাৎ উল্টে দেওয়া জাতি। কেউ কেউ বলেন: তাদের জনপদকে (উল্টে দেওয়া হয়), আর সেটা হচ্ছে সাদূম (জনপদ), উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে ধ্বংস করে দেন। কেননা তারা তাদের নবী লুত আলাইহি সালামকে অস্বীকার করেছিল আর তারা এমন জঘন্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়েছিল যাতে ইতোপূর্বে পৃথিবীর আর কেউ লিপ্ত হয় নি।

أَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ “তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল” অর্থাৎ অকাট্য দলীল-প্রমাণ সহকারে,

فَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ “অতঃপর আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেন নি” অর্থাৎ তাদেরকে ধ্বংস করে, কেননা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণকে প্রেরণ করেন এবং সন্দেহ দুর করে তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠা করেন।

وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ “আসলে (তারাই তাদের অন্যায় কার্যকলাপের মাধ্যমে) নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করেছিল” অর্থাৎ রাসূলগণকে অস্বীকার করে সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে যেমন ধ্বংস ও শাস্তির মধ্যে পতিত হওয়ার পতিত হয়।

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٧١ ﴾ [ التوبة : ٧١ ]

“৭১. মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারী পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত ক্বায়িম করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাবান।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭১]

মুমিনগণের প্রশংসনীয় গুণাবলী:

ইতোপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেন, এর সাথে তিনি সংযুক্ত করে আলোচনা করেন মুমিনগণের প্রশংসনীয় গুণাবলী সম্পর্কে। তিনি বলেন: وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ “মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারী পরস্পর পরস্পরের বন্ধু” তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে, যেমন সহীহ হাদিসে এসেছে: এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য ভবনস্বরূপ, এর একটি অংশ অপর অংশকে শক্তি যোগায়, এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আঙ্গুলসমূহকে পরস্পর পরস্পরের মাঝে প্রবেশ করান। বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও রয়েছে: “মু’মিনগণের পারস্পরিক দয়ামায়ার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি দেহের ন্যায়। এর একটি অঙ্গ যখন পীড়িত হয় তখন সমস্ত শরীর জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় ভোগে।”

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ “তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় কাজে বাঁধা দেয়।” যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ] “তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল হোক, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করে।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৪]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ “সালাত কায়িম করে, যাকাত দেয়” অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে এবং তাঁর বান্দাদের প্রতি সদয় আচরণ করে।

وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ “আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে।” অর্থাৎ যে বিষয়ে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন আর যা থেকে বারণ করেছেন তার বর্জন করে।

أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ “তাদের প্রতিই আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন” অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন।

إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ “আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত” যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করে তিনি তাকে শক্তিশালী করেন। কেননা শক্তি ও মর্যাদা তো আল্লাহর জন্য আর তাঁর রাসূলের জন্য এবং মুমিনগণের জন্য।

حَكِيمٞ “মহা প্রজ্ঞাবান” তাঁদের জন্য এ সমস্ত গুণাবলীর তাঁর বণ্টনের ক্ষেত্রে এবং পূর্ববর্তী বৈশিষ্ট্যগুলো মুনাফিকদের সাথে নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে। কেননা বরকতময় ও মহান আল্লাহ যা কিছুই করেন তাতেই তাঁর প্রজ্ঞা নিহীত রয়েছে।

﴿وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٧٢ ﴾ [ التوبة : ٧٢ ]

“৭২. মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারীর জন্য আল্লাহ অঙ্গিকার করেছেন জান্নাতের- যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে। আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের (সেদিনের) সবচাইতে বড় (নি‘আমত) হবে (বান্দার প্রতি) আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; এটাই হল বিরাট সাফল্য।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭২]

মুমিনগণকে চিরস্থায়ী নি‘আমতের সুসংবাদ:

আল্লাহ তা‘আলা মুমিন এবং মুমিনগণকে অবহিত করছেন যে, তিনি তাদের জন্য আনন্দ এবং চিরস্থায়ী সুখ তৈরি করে রেখেছেন جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا “জান্নাতে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে” সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে।

وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ “আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের” সুন্দর নির্মাণ, যা চারদিক থেকে সুন্দর নিবাস। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আবু মুসা আব্দুল্লাহ ইবনু কাইস আল-‘আশ‘আরী বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দু’টো জান্নাত হবে যার পেয়ালা এবং এতে যা কিছু হবে সবকিছু হবে স্বর্ণের এবং দু’টো জান্নাত হবে যার পেয়ালা এবং এতে যা কিছু হবে সবকিছু হবে রৌপ্যের। জান্নাতে আদনে লোকদের এবং তাদের রবকে দর্শনের মাঝে রয়েছে তাঁর চেহারার উপরে থাকা গৌরবের পর্দা।” তিনি আরও বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জান্নাতে মুমিনের জন্য ফাঁপা মুক্তার একটি তাঁবু হবে, যার দৈর্ঘ্য আসমানের দিকে ষাট মাইল আর তাঁবুতে মুমিনের বিরাট পরিবার বাস করবে যাদের সকলের নিকট মু’মিন গমন করবে; কিন্তু তাদের একে অপরকে দেখতে পাবে না।” বুখারী ও মুসলিম তাঁদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। বুখারী-মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, রমযানের সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তা‘আলার কর্তব্য হচ্ছে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (কোনো ব্যাপার নয়) চাই সে আল্লাহর পথে হিজরত করুক অথবা সে তার স্থানে যেখানে জন্মেছে সেখানে বসে থাকুক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি এ কথা লোকদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি বলেন: জান্নাতে একশতটি স্তর রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পথে লড়াইকারী (মুজাহিদদের) জন্য যা তৈরি করে রেখেছেন। প্রতি দুই স্তরের মাঝের দুরত্ব আসমান-জমিনের দূরত্বের মত। কাজেই যখন তোমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে তখন তোমরা জান্নাতুল ফিরদাউস চাও। কেননা এটা হচ্ছে জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু স্তর আর জান্নাতের মধ্যস্থান, এখান থেকে জান্নাতের নহর সমূহ প্রবাহিত হয় আর এর উপরে রয়েছে দয়াময়ের আরশ।”

ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমরা আমার ওপরে দুরূদ পাঠ কর তখন তোমরা আমার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও। বলা হয়: হে আল্লাহর রাসূল, ‘ওয়াসীলা’ কী? তিনি বলেন: জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ সেটা পাবে না আর আমি আশা করি সেই ব্যক্তি আমিই”।

মুসনাদ ইমাম আহমদে বর্ণিত হয়েছে, সা‘দ ইবনু মুজাহিদ আত-ত’ঈ বলেন, আবুল মুদিল্লাহ আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি (আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: আমরা জিজ্ঞেস করি: হে আল্লাহর রাসূল, জান্নাত সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করুন যে, সেটা কিসের তৈরি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: এর একটি ইট হচ্ছে স্বর্ণের, একটি ইট হচ্ছে রৌপ্যের, এর মশলা গোলা (ইট গাঁথার) হচ্ছে কস্তূরীর, এর নুড়ি পাথর হচ্ছে মণিমুক্তা ও চুনির -এর মাটি হচ্ছে জাফরানের, যে তাতে প্রবেশ করবে, সে আনন্দিত হবে, সে নিরাশ হবে না, সে চিরকাল বসবাস করবে মৃত্যুবরণ করবে না, তার কাপড় মলিন হবে না তার যৌবন কখনও শেষ হবে না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۚ “(সেদিনের) সবচাইতে বড়ো (নি‘আমত) হবে (বান্দার প্রতি) আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি।” অর্থাৎ তারা যে নি‘আমতের মাঝে ডুবে থাকবে তার চেয়ে বড় ও মহান হচ্ছে তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি। যেমন ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, যাইদ ইবনু আসলাম ‘আতা’ ইবনু ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন, আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদের বলবেন: হে জান্নাতবাসীরা, তারা বলবে: আমরা আপনার খেদমতে হাযির। আর সৌভাগ্য আর সকল কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেন: তোমরা কি খুশি হয়েছ? তারা বলবে: আমাদের কী হল যে, আমরা খুশি হবো না, হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা আপনার অন্য কোন সৃষ্টিকে দেননি। এরপর তিনি বলবেন: আমি কি এর চেয়ে উত্তম কোন কিছু তোমাদেরকে দিব না? তারা বলবে: হে আমাদের রব, এগুলোর চেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে? তিনি বলবেন: আমি তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টিকে মঞ্জুর করে নিব, আর কখনও তোমাদের প্রতি আমি অসন্তুষ্ট হব না”।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡۚ وَمَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ٧٣ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدۡ قَالُواْ كَلِمَةَ ٱلۡكُفۡرِ وَكَفَرُواْ بَعۡدَ إِسۡلَٰمِهِمۡ وَهَمُّواْ بِمَا لَمۡ يَنَالُواْۚ وَمَا نَقَمُوٓاْ إِلَّآ أَنۡ أَغۡنَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ مِن فَضۡلِهِۦۚ فَإِن يَتُوبُواْ يَكُ خَيۡرٗا لَّهُمۡۖ وَإِن يَتَوَلَّوۡاْ يُعَذِّبۡهُمُ ٱللَّهُ عَذَابًا أَلِيمٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَمَا لَهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٖ ٧٤﴾ [ التوبة : ٧٣، ٧٤ ]

“৭৩. হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর, তাদের বাসস্থান হল জাহান্নাম আর তা কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল! ৭৪. তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে তারা (অন্যায়) কিছু বলেনি; কিন্তু তারা তো কুফরী কথা বলেছে আর ইসলাম গ্রহণ করার পরও কুফরী করেছে। তারা ষড়যন্ত্র করেছিল; কিন্তু তাতে সফল হয় নি, তাদের এ প্রতিশোধ স্পৃহার কারণ এছাড়া আর কিছু ছিল না যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল করুণাবশতঃ তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছেন। এখন যদি তারা অনুশোচনাভরে এ পথ থেকে ফিরে আসে তবে তা তাদের জন্যই কল্যাণকর। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন। পৃথিবীতে রক্ষক আর সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে তারা পাবে না।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭৩-৭৪]

কাফের, মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপের নির্দেশ:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে কাফের এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং তাদের উপরে কঠোরতা আরোপের নির্দেশ প্রদান করেন, যেভাবে তিনি তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন মুমিনগণের যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হতে। তিনি তাঁকে অবহিত করেন যে, পরকালে কাফের এবং মুনাফিকদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ﴾ [ التحريم : ٩ ] “কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর” [সূরা আত-তাহরীম: ৯] এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: জিহাদ করুন তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাত দ্বারা আর যদি তিনি তা না পারেন তবে অন্ততপক্ষে তাদের প্রতি তাঁর চেহারায় কঠোর ভাব আনয়ন করবেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তরবারির সাহায্যে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জবানের মাধ্যমে জিহাদের নির্দেশ দেন। আর তাদের থেকে নমনীয়তা দুর করতে বলেন।

দাহ্হাক বলেন: কাফেরদের বিরুদ্ধে তরবারির মাধ্যমে জিহাদ করতে এবং মুনাফিকদের উপরে কথার দ্বারা কঠোরতা আরোপ করুন, আর সেটাই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ। মুকাতিল এবং রবী‘ থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

হাসান ও কাতাদা বলেন: তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের অর্থ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে হদ (দণ্ড) কায়েম করুন। বলা যেতে পারে: এ সমস্ত মতামত সাংঘর্ষিক নয়। কখনও তাদেরকে এভাবে ধরা হবে কখনও ওভাবে ধরা হবে। (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে কাফির ও মুনাফিকদেরকে এ সমস্ত শাস্তি দেওয়া হবে।) আল্লাহ ভালো জানেন।

শানে নুযূল (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট):

আল-উমাবী তাঁর মাগাযী গ্রন্থে বলেন: হাদিস বর্ণনা করেছেন আমাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক, (তিনি) যুহরী থেকে (তিনি) আব্দুর রহমান ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু কা‘আব ইবনু মালিক থেকে, (তিনি) তাঁর পিতা থেকে, তাঁর দাদা থেকে তিনি বলেন: তিনি (কা‘আব ইবনু মালিক) যে সমস্ত মুনাফিক যুদ্ধ থেকে পেছনে রয়ে গিয়েছিল, তিনিও তাদের সাথে ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে তাঁর ব্যাপারে কুর’আনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যারা ছিলেন তাদের অন্যতম হচ্ছে আল-জুলাস ইবনু সুওয়াইদ ইবনুস সামিত। সে উমাইর ইবনু সা‘আদের মাকে বিবাহ করেছিল। উমাইর তার গৃহে লালিত পালিত হয়েছিল। এরপর যখন কুর’আন অবতীর্ণ হয় আর মুনাফিকদের আচার-আচরণ সম্পর্কে অবহিত করে আল্লাহ তা‘আলা যা উল্লেখ করার উল্লেখ করেন। তখন জুলাস বলে: আল্লাহর শপথ, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কথায় যদি সত্য হয়, তবে আমরা গাধার চেয়েও নিকৃষ্ট। এ কথা উমাইর ইবনু সা‘আদ শুনে ফেলে, এরপর বলে: আল্লাহর শপথ হে জুলাস, তুমি আমার নিকট লোকদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। আমার প্রতি তোমার অনেক অবদান রয়েছে। আমি অন্য যে কারও ব্যাপারের চেয়ে বেশি অপছন্দ করি তোমাকে কোনো কষ্ট স্পর্শ করলে। তুমি এমন এক মারাত্মক কথা বলেছ, যদি আমি তা প্রকাশ করি তবে তোমাকে প্রকাশ করা হবে। আর যদি আমি তা গোপন করি তবে তুমি আমাকে ধ্বংস করে দিবে, তবে এ দু’টোর একটি আমার নিকট অপরটির চেয়ে বেশি সহজ। এ বলে উমাইর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে জুলাসের বলা কথা ব্যক্ত করেন। এ খবর যখন জুলাসের নিকট পৌঁছে তখন সে বের হয়ে রাসূলুল্লাহ‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয় আর আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলে যে, উমাইর ইবনু সা‘আদ যা বলেছে সে তা বলে নি। সে আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ করেন: يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدۡ قَالُواْ كَلِمَةَ ٱلۡكُفۡرِ وَكَفَرُواْ بَعۡدَ إِسۡلَٰمِهِمۡ “তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে তারা (অন্যায়) কিছু বলে নি; কিন্তু তারা তো কুফরী কথা বলেছে। আর তারা ইসলাম গ্রহণ করার পরও কুফরী করেছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি জুলাসকে পৌঁছে দেন, সে তাঁদের ধারণা মতে তাওবা করে। আর তার তাওবা ছিল অকৃত্রিম, সে সুন্দরভাবে কপটতা পরিহার করে।

ইমাম আবু জা‘ফার ইবনু জারীর বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের ছায়ায় বসে ছিলেন এ সময় তিনি বলেন: তোমাদের নিকট অচিরেই এক ব্যক্তি আগমন করবে যে শয়তানের দু’চোখ দ্বারা তোমাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে। কাজেই সে যখন আসবে তার সাথে তোমরা কথা বলবে না। কিছু সময় যাওয়ার পর নীলবর্ণের এক ব্যক্তির আগমন ঘটে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন: তুমি এবং তোমার সাথিরা আমাকে গাল-মন্দ কর কেন? লোকটি গিয়ে তার সাথিদেরকে ডেকে এনে আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলে, তারা এরূপ কিছু বলে নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন: يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُواْ “তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে তারা (অন্যায়) কিছু বলে নি”

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন