hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আত-তাওবার তাফসীর

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

মুশরিকদের প্রতি সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা:
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: بَرَاءَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হল” অর্থাৎ এই ঘোষণা হচ্ছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সকল প্রকার দায়িত্ব আদায়ের বাধ্য-বাধকতার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষণা।

إِلَى ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ “মুশরিকদের মধ্যেকার যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধি চুক্তি করেছিলে তাদের সাথে।”

২. অতঃপর [(হে কাফিরগণ!] চার মাস তোমরা জমিনে (ইচ্ছেমত) চলাফেরা করে নাও] এই আয়াতে ঐ সমস্ত কাফেরদের কথা বলা হয়েছে, যাদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি রয়েছে অথবা যাদের সাথে চার বছরের কম মেয়াদের চুক্তি রয়েছে। এরপর তাদের চার বৎসর পূর্ণ হয়ে গেছে, কাজেই যাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি রয়েছে তাদের সময় হচ্ছে এর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যে অবস্থায় তা থাকুক না কেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡۚ﴾ [ التوبة : ٤ ] “তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর” [সূরা আত-তাওবাহ: ৪] কেননা অচিরেই হাদিসে আসছে: “আর যার মাঝে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে চুক্তি রয়েছে তার চুক্তি কার্যকরী থাকবে এর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত।” আল-কালবী, মুহাম্মদ ইবনু কা‘আব আল কুরাযী এবং অন্যান্যদের থেকেও এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

আবু মা‘শার আল-মাদানি বলেন: হাদিসটি আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনু কা‘আব আল কুরাযী এবং অন্যান্যরা। তাঁরা বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবম হিজরি সনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে হজের আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রেরণ করেন। আর সূরাআল-বারা’আতের ত্রিশটি অথবা চল্লিশটি আয়াত সহকারে আলী ইবনু আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে প্রেরণ করেন। তিনি এগুলো লোকদের সম্মুখে পাঠ করে শোনান। আর তিনি মুশরিকদেরকে চার মাস সময় দেন, যে সময় তারা স্বাধীনভাবে জমিনে বিচরণ করতে পারবে। তিনি তাদের সম্মুখে আরাফার দিন এ আয়াতগুলো পাঠ করেন। যিলহজ মাসের বিশ দিন, মুহাররাম, সফর, রবিউল আউওয়াল এবং রবিউল আখিরের দশ দিন অবকাশ দান করেন। তিনি তাদের আবাসস্থলগুলো গিয়ে ঘোষণা দেন যে, এই বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না আর উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلنَّاسِ يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥۚ فَإِن تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ٣ ﴾ [ التوبة : ٣ ]

“৩. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে মহান হজের দিনে মানুষদের কাছে ঘোষণা দেওয়া হল যে, আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের সাথে সম্পর্কহীন এবং তাঁর রাসূলও। কাজেই এখন যদি তোমরা তাওবাহ কর, তাতে তোমাদেরই ভালো হবে, আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না। আর যারা কুফুরি করে চলেছে তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সু-সংবাদ শুনিয়ে দাও।” ]সূরা আত-তাওবাহ্: ৩[

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ “আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে ঘোষণা, প্রাথমিক সতর্কীকরণ”

يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ (মহান হজের দিনে) সেটা হচ্ছে কুরবানির দিন, যা হজের আচার-অনুষ্ঠানের সর্বোত্তম ও স্পষ্ট দিন। যাতে সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়ে থাকে। أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥ (আল্লাহ মুশরিকদের সাথে সম্পর্কহীন এবং তাঁর রাসূলও) অর্থাৎ তাদের থেকেও দায়মুক্ত। এরপর তিনি তাদেরকে তাঁর নিকট অনুশোচনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন: فَإِن تُبۡتُمۡ (কাজেই এখন যদি তোমরা তাওবাহ কর) অর্থাৎ তোমরা যে শির্ক ও গোমরাহির মধ্যে রয়েছ তা হতে যদি তোমরা তাওবা কর فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ (তাতে তোমাদেরই ভালো হবে। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও) অর্থাৎ তোমরা যাতে রয়েছ তাতে নিরবচ্ছিন্ন থাক فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِۗ (তাহলে জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না); বরং তিনি তোমাদের উপরে ক্ষমতাবান, তোমরা তাঁর কব্জায়, তাঁর দমন ও ইচ্ছার অধীনে রয়েছ। وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (আর যারা কুফরি করে চলেছে তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সু-সংবাদ শুনিয়ে দাও) অর্থাৎ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও শাস্তির মাধ্যমে আর পরকালে শিকল ও বেড়ির শাস্তির দ্বারা।

ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে সে হজে সে সমস্ত ঘোষকদের অন্যতম করে প্রেরণ করেন, যাদেরকে তিনি কুরবানির দিন প্রেরণ করেন। তারা মিনায় এ ঘোষণা দেয়: এই বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না এবং উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। হুমাইদ বলেন: তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বারা’আতের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আলী আমাদের সাথে কুরবানির দিন মিনায় অবস্থানকারীদের মাঝে মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির ঘোষণা দেন। আর এ ঘোষণাও দেন যে, এ বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না আর উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করবে না।

ইমাম বুখারী আরও বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে কুরবানির দিন মিনায় প্রেরিত ঘোষকদের অন্যতম করে প্রেরণ করেন: এই বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না, আর উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফও করবে না। কুরবানির দিনকে ‘হাজ্জিল আকবার’ বলা হয়। الأكبر এ জন্য বলা হয়েছে যে, লোকেরা একে আল-হাজ্জুল আসগার বলত। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সে বৎসর লোকদেরকে বিমুক্তির ঘোষণা প্রদান করেন। ফলে বিদায় হজ, যাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ করেন তাতে কোনো মুশরিক হজ করে নি। হাদিসের এ শব্দগুলো ইমাম বুখারীর যা তিনি কিতাবুল জিহাদে উল্লেখ করেছেন।

মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক রহ. আবু জা‘ফার মুহাম্মদ ইবনু আলী ইবনুল হুসাইন ইবনু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপরে যখন সূরা আত- তাওবাহ অবতীর্ণ হয়, ইতোপূর্বে তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হজের অনুষ্ঠানাদির তত্ত্বাবধান করার জন্য প্রেরণ করেন। তখন বলা হয়: ইয়া রাসূলাল্লাহ, এ সংবাদ যদি আবু বকরের নিকট প্রেরণ করতেন! তখন তিনি বলেন: ‘এটা আমার পক্ষ থেকে কেবল আমার গৃহের কোনো লোক আদায় করবে।’ এরপর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ডেকে বলেন: সূরা আল-বারা’আতের এই প্রথম ভাগটি নিয়ে বের হয়ে পড় আর কুরবানির দিন লোকদের নিকট তা প্রচার করে দাও, যখন তারা মিনায় একত্রিত হয়। ‘কোনো কাফির জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এই বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না, উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না, যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুক্তি রয়েছে তার মেয়াদ হচ্ছে এর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত।’ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদ্ববা নামক উটের পিঠে চড়ে বের হয়ে পড়েন, এমনকি পথে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে পেয়ে যান। যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে দেখেন তখন তিনি বলেন: আপনাকে কি নেতা করে পাঠানো হয়েছে নাকি অধীনস্থ করে? তিনি বলেন: বরং অধীনস্থ করে। এরপর তাঁরা চলতে থাকেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হজে লোকদের নেতৃত্ব দান করেন, সে বছর আরবরা তাদের সাধারণ স্থানগুলোতে অবস্থান করেছিল যাতে তারা জাহেলী যুগে অবস্থান করত। অবশেষে কুরবানির দিন আসলে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু উঠে দাঁড়ান আর লোকদের মাঝে সেই ঘোষণা প্রদান করেন যা তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন: হে লোক সকল, জান্নাতে কোনো কাফির প্রবেশ করবে না, এ বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করবে না, উলঙ্গ হয়ে কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে যার কোনো চুক্তি রয়েছে এর মেয়াদ হচ্ছে তার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। ফলে সে বৎসরের পরে কোনো মুশরিক হজ করে নি, উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে নি। এরপর তাঁরা (দু’জন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে আসে। এই হচ্ছে দায়মুক্তির ঘোষণা তাদের থেকে যারা অনির্ধারিত সময়ের চুক্তির অধিকারী মুশরিক এবং যে সমস্ত মুশরিক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চুক্তি করেছিল।

﴿ إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ثُمَّ لَمۡ يَنقُصُوكُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَمۡ يُظَٰهِرُواْ عَلَيۡكُمۡ أَحَدٗا فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ٤ ﴾ [ التوبة : ٤ ]

“৪. কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করে নি, আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করে নি, তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৪]

যার অঙ্গিকার রয়েছে কিন্তু সে তা ভঙ্গ করেনি তার মেয়াদ হচ্ছে এর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এখানে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে তাদেরকে যারা অনির্দিষ্ট মেয়াদে সাধারণভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যা বর্ণিত চার মাস মেয়াদের বাইরে। তাদের মেয়াদ হচ্ছে চার মাস। তারা জমিনে বিচরণ করবে, তারা যেখানে খুশি নিজেদের বাঁচার উপায় খুঁজে নিবে। আর যারা নির্ধারিত মেয়াদে চুক্তি হয়েছে তাদের মেয়াদ সে পর্যন্ত যে মেয়াদের উপরে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইতোপূর্বে বেশ কিছু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যার চুক্তি রয়েছে তার চুক্তির মেয়াদ এর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। তবে তা এ শর্তসাপেক্ষে যে, চুক্তিকারী তার চুক্তি ভঙ্গ করতে পারবে না। আর তারা মুসলিমবৃন্দের বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করতে পারবে না, অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারবে না, যে তা করবে তার সাথে কৃত মুসলিমদের এ ধরণের শান্তি চুক্তি শেষ পর্যন্ত রক্ষিত হবে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা এ ধরণের চুক্তি পূরণ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন: إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ “অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।”

﴿فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [ التوبة : ٥ ]

“৫. তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদেরকে পাকড়াও করবে, তাদেরকে ঘেরাও করবে, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তাওবাহ করে, সলাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু্।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৫]

মুজাহিদ, আমর ইবনু শুআইব, মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক, কাতাদা, সুদ্দী, আব্দুর রহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম বলেন: আয়াতে উল্লিখিত চার মাস হচ্ছে পূর্বের আয়াতে বর্ণিত নির্দিষ্ট চার মাস,

﴿فَسِيحُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِ وَأَنَّ ٱللَّهَ مُخۡزِي ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢﴾ [ التوبة : ٢ ]

“অতঃপর (হে কাফিরগণ!) চার মাস তোমরা জমিনে (ইচ্ছে মত) চলাফেরা করে নাও” [সূরা আত-তাওবাহ: ২] এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ “তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে” অর্থাৎ চার মাস, যাতে আমরা তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে নিষিদ্ধ করেছি। আর যে নির্দিষ্ট সময় আমরা তাদেরকে প্রদান করেছি সেটা যখন শেষ হয়ে যায় তখন তাদেরকে যেখানে পাও সেখানেই হত্যা কর।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ “মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর” অর্থাৎ জমিনে সার্বিকভাবে, তবে হারাম (মক্কার আশে-পাশের সুনির্দিষ্ট এলাকা) এলাকায় হত্যা নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যতিক্রম করা হয়েছে। আর তা এ আয়াতের মাধ্যমে

﴿وَلَا تُقَٰتِلُوهُمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِيهِۖ فَإِن قَٰتَلُوكُمۡ فَٱقۡتُلُوهُمۡۗ ١٩١﴾ [ البقرة : ١٩١ ]

“আর তোমরা মসজিদে হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ করে। কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা কর।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯১]

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَخُذُوهُمۡ “তাদেরকে পাকড়াও কর” অর্থাৎ তাদেরকে বন্দী কর, যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তবে হত্যাও করতে পার। আর যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে বন্দী করতে পার।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ “তাদেরকে ঘেরাও কর, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক” অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকো না। তাদেরকে তাদের এলাকায় এবং দুর্গসমূহে খোঁজ কর এবং অবরোধ কর, তাদেরকে তাদের পথে-ঘাটে এবং চলার স্থানসমূহে তোমাদের পর্যবেক্ষণে রাখ, তাদের জন্য সংকীর্ণতা আনয়ন কর, তাদেরকে হত্যা অথবা ইসলামের প্রতি বাধ্য কর। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ “কিন্তু তারা যদি তাওবা করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।” এ কারণেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এই সম্মানিত আয়াত এবং এ ধরণের অন্যান্য আয়াতের উপরে নির্ভর করে যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কারণ এ আয়াতে কিছু কাজের শর্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে নিষিদ্ধ করা হয় তা হচ্ছে, ইসলামে প্রবেশ এবং এর আবশ্যকীয় বিষয়গুলো পালনে সচেষ্ট হওয়া। অবশ্য এ আয়াতে মহান আল্লাহ এ আবশ্যকীয় বিষয়গুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এর নিচের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পূর্বে উল্লেখ করেন, কারণ শাহাদাতাঈন অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল -এ দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্যের পরে ইসলামের সবচেয়ে সম্মানিত রুকন (ভিত্তি) হচ্ছে সালাত, যা আল্লাহ তা‘আলার হক্ব। এরপরে হচ্ছে যাকাত আদায়, যা দরিদ্র ও অভাবী লোকদের জন্য চলমান উপকার। আর তা আল্লাহর সৃষ্টি (বান্দা)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে সম্মানিত কাজ। এ কারণে বহু স্থানে আল্লাহ তা‘আলা সালাতের সাথে সাথে যাকাতের আলোচনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে: আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি লোকদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে।– আল-হাদীস।

এই সম্মানিত আয়াতটি হচ্ছে তরবারির (জিহাদের) আয়াত যে সম্পর্কে দহ্হাক ইবনু মুযাহিম বলেন: এই আয়াতটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকদের মাঝে সংঘটিত যাবতীয় চুক্তিকে রহিত করে দিয়েছে। সকল চুক্তি এবং সকল মেয়াদকে রহিত করে দিয়েছেন।

আউফী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: সূরা আল-বারা’আহ (সূরা আত-তাওবাহ) অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে কোনো মুশরিকের কোনো চুক্তি এবং কোনো অঙ্গিকার আর অবশিষ্ট নেই। হারাম মাসসমূহ অতিক্রান্ত হওয়া, সূরা আত-তাওবাহ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির নির্দেশের দিন থেকে রবিউল আখির মাসের প্রথম দশ দিন এই চার মাস।

﴿وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٱسۡتَجَارَكَ فَأَجِرۡهُ حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ أَبۡلِغۡهُ مَأۡمَنَهُۥۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡلَمُونَ ٦ ﴾ [ التوبة : ٦ ]

“৬. মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়; তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দাও। এটা এজন্য করতে হবে যে, এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা (ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) অজ্ঞ।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬]

মুশরিক যখন নিরাপত্তা কামনা করে তখন তাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন: وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ “ মুশরিকদের কেউ যদি” অর্থাৎ যাদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে তোমার প্রতি নির্দেশ দিয়েছি আর যাদের জান-মাল তোমার জন্য বৈধ করেছি, তাদের কেউ যদি ٱسۡتَجَارَكَ “তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে” অর্থাৎ তোমার নিকট নিরাপত্তা চায়, তবে তাদের আবেদনে সাড়া দাও। যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায় অর্থাৎ তার সম্মুখে কুরআন পাঠ কর এবং দ্বীনের কিছু অংশ বর্ণনা কর, যাতে করে তার বিরুদ্ধে তুমি আল্লাহর দলীল প্রতিষ্ঠা করতে পার। ثُمَّ أَبۡلِغۡهُ مَأۡمَنَهُۥ “তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দাও” অর্থাৎ তার দেশে, তার ঘরে ও তার নিরাপ্দ স্থানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে নিরাপদ থাকবে ও নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা পাবে।

ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡلَمُونَ “এটা এ জন্য করতে হবে যে, এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা (ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) অজ্ঞ।” এ ধরণের লোকদের জন্য আমরা নিরাপত্তার বিধান দিয়েছি যাতে করে তারা আল্লাহ তা‘আলার দ্বীনকে জানতে পারে আর আল্লাহ তা‘আলার দা‘ওয়াত তাঁর বান্দাদের মাঝে বিস্তার লাভ করে।

ইবনু আবু নাজীহ বর্ণনা করেন, মুজাহিদ এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন: যে লোক তুমি কী বল এবং তোমার ওপরে কী অবতীর্ণ হয়েছে তা শোনার জন্য তোমার নিকট আসে, সে নিরাপদ, যখন সে তোমার নিকট তখন সে নিরাপদ, আল্লাহ তা‘আলার বাণী শ্রবণ করে, এরপর সে সেই এলাকার দিকে অগ্রসর হয়ে পৌঁছে যাবে যেখান থেকে সে এসেছিল।

এ আয়াতের দাবী অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতেন যে হিদায়াতের আশায় অথবা পত্র পৌঁছে দিতে তাঁর নিকট আসত। যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধির দিন কুরাইশদের একদল দূত তাঁর নিকট আসে, তাদের মধ্যে ছিল উরওয়াহ ইবনু মাসঊদ, মিকরায ইবনু হাফ্স, সুহাইল ইবনু আমর এবং অন্যান্যরা। তারা তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কুরাইশ কাফিরদের মাঝে মধ্যস্ততা করার জন্য একের পর এক আগমন করে। তারা প্রত্যক্ষ করে যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অত্যন্ত ইজ্জত-সম্মান করছেন, যা তাদেরকে তাক লাগিয়ে দেয়। এ ধরনের ইজ্জত-সম্মান ইতোপূর্বে তারা আর কারও জন্য প্রত্যক্ষ করে নি। না কোনো রাজা-বাদশাহর জন্য দেখেছে আর না রোম সম্রাটের জন্য। এরপর তারা নিজেদের কাওমের নিকট ফিরে যায় আর এ ব্যাপারটি তাদেরকে অবহিত করে। এই ঘটনা এবং এ জাতীয় অন্যান্য ঘটনা ছিল তাদের অধিকাংশের হিদায়েত লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় কারণ।

আর এ কারণেই মুসাইলামাতুল কায্যাবের দূত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসে, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলেন: তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, মুসাইলামাহ আল্লাহর রাসূল? তারা বলে: হাঁ, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দূতকে হত্যার বিধান যদি থাকত, তবে আমি অবশ্যই তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। তবে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কুফার গভর্নর থাকার সময়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য লোক নিযুক্ত করেন। তাকে ইবনুন নাওয়াহাহ্ বলে ডাকা হত, যখন জানা যায় যে, সে মুসাইলামার রাসূলের দাবিতে তখনও অটল ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছিল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে তাকে বলেন: তুমি এখন আর দূত নও। ফলে তাঁর নির্দেশে তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়া হয়। (তার উপরে আল্লাহ তা‘আলা দয়া না করুন, আর তার উপরে তাঁর অভিশাপ বর্ষিত হোক)।

এখানে যা উদ্দেশ্য তা হচ্ছে: যে ব্যক্তি বিধর্মী রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্রে আগমন করে বার্তাবাহক হিসেবে অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে অথবা সন্ধির আশায় অথবা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে অথবা যিযিয়া কর প্রদানের জন্য অথবা এ জাতীয় অন্যান্য কারণে, আর সে রাষ্ট্রের নেতা অথবা তার সহকারীর নিকট নিরাপত্তা কামনা করে তখন কর্তব্য হচ্ছে যতক্ষণ সে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করে এবং যতক্ষণ না সে তার নিরাপদ ভূমি ও স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ততক্ষণ তাকে নিরাপত্তা দেওয়া।

﴿كَيۡفَ يَكُونُ لِلۡمُشۡرِكِينَ عَهۡدٌ عِندَ ٱللَّهِ وَعِندَ رَسُولِهِۦٓ إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۖ فَمَا ٱسۡتَقَٰمُواْ لَكُمۡ فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ٧ ﴾ [ التوبة : ٧ ]

“৭. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে মুশরিকদের চুক্তি কি করে কার্যকর থাকতে পারে? অবশ্য ঐসব লোক ছাড়া যাদের সঙ্গে তোমরা মসজিদুল হারামের নিকট চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে; তারা যদ্দিন তোমাদের সঙ্গে চুক্তি ঠিক রাখে, তোমরাও তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিতে দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৭]

মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির বিষয়টির প্রতি জোর প্রদান:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রজ্ঞার বর্ণনা দিচ্ছেন মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির এবং তাদেরকে চার মাস অবকাশ প্রদানের ব্যাপারে, এরপর তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে ধারালো তরবারি (দ্বারা তাদেরকে হত্যা করা হবে)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: كَيۡفَ يَكُونُ لِلۡمُشۡرِكِينَ عَهۡدٌ “আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে মুশরিকদের চুক্তি কী করে কার্যকর থাকতে পারে?” অর্থাৎ নিরাপদ স্থান- তারা যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় তাদেরকে কীভাবে ছেড়ে দেওয়া হবে? যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করছে, তাঁকে এবং তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করছে।

إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۖ “ঐসব লোক ছাড়া যাদের সঙ্গে তোমরা মসজিদুল হারামের নিকট চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।” অর্থাৎ হুদাইবিয়ার দিন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿هُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّوكُمۡ عَنِ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ وَٱلۡهَدۡيَ مَعۡكُوفًا أَن يَبۡلُغَ مَحِلَّهُۥۚ ٢٥﴾ [ الفتح : ٢٥ ] “এরা তো তারাই যারা কুফুরী করেছিল আর তোমাদেরকে মসজিদুল হারাম থেকে বাধা দিয়েছিল। বাধা দিয়েছিল হাদঈর পশুগুলোকে তার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে।” [সূরা আল-ফাতাহ্: ২৫] فَمَا ٱسۡتَقَٰمُواْ لَكُمۡ فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ “সুতরাং তারা যদ্দিন তোমাদের সঙ্গে চুক্তি ঠিক রাখে, তোমরাও তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিতে দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।” যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গিকার রক্ষা করে এবং এ মর্মে অঙ্গিকার পূর্ণ করে যে, তারা দশ বৎসর যুদ্ধ করবে না فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ “তোমরাও তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিতে দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমবৃন্দ তা-ই সম্পাদন করেন। ষষ্ঠ হিজরি সনের যিলকদ মাস থেকে শুরু হওয়া মক্কাবাসীদের সাথে কৃত চুক্তি সে পর্যন্ত বহাল থাকে যে পর্যন্ত কুরাইশরা অঙ্গিকার ভঙ্গ করে। আর তাদের মিত্র বানু বাকরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিত্র খুঁজা’আহর বিরুদ্ধে চক্রান্তে সাহায্য করে। এমনকি তারা হারামে (পবিত্র এলাকায়) তাদের সাথে যুদ্ধ করে। ফলে সে সময় অষ্টম হিজরি সনে রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে পবিত্র নগরীর বিজয় দান এবং তাদের উপরে কর্তৃত্ব প্রদান করেন। (আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল প্রশংসা এবং তাঁরই অনুগ্রহ)। তাদের মধ্যে যারা পরাজিত হওয়ার পরে ঈমান আনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ছেড়ে দেন আর তাদের তুলাকা’ (মুক্ত) বলে আখ্যায়িত করেন। তারা ছিল দুই হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা কুফরির উপরে নিরবচ্ছিন্ন থাকে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পলায়ন করে। তিনি তাদেরকে চার মাস জমিনে নিরাপত্তা ও সহজ সাবলীলভাবে বিচরণের অঙ্গিকার প্রদান করেন। যেখানে খুশি তারা যেতে পারে। তাদের মধ্যে ছিল সাফওয়ান ইবনু উমাইইয়া, ইকরিমা ইবনু আবু জাহাল এবং অন্যান্যরা। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরিপূর্ণ ইসলাম পালনের প্রতি পথ প্রদর্শন করেন। (আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সকল ফায়সালা এবং কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশংসিত)।

﴿كَيۡفَ وَإِن يَظۡهَرُواْ عَلَيۡكُمۡ لَا يَرۡقُبُواْ فِيكُمۡ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ يُرۡضُونَكُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَتَأۡبَىٰ قُلُوبُهُمۡ وَأَكۡثَرُهُمۡ فَٰسِقُونَ ٨﴾ [ التوبة : ٨ ]

“৮. কিভাবে (চুক্তি থাকতে পারে) যদি তারা তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারে তাহলে তারা তোমাদের সঙ্গে না আত্মীয়তার মর্যাদা দেয়, আর না ওয়াদা-অঙ্গীকারের; তারা তাদের মুখের কথায় তোমাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে চায় কিন্তু তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে, তাদের অধিকাংশই ফাসিক।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৮]

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে মুশরিকদের প্রতি দুশমনি এবং তাদের থেকে দায়মুক্তির ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করছেন। আর বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাদের সাথে কোনো প্রকার চুক্তি হতে পারে তারা এর যোগ্য নয়। কেননা তারা তো আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে এবং তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে। এ সমস্ত কাফিররা যদি মুসলিমবৃন্দকে পরাজিত করার সুযোগ পায়, তবে তারা তাদের বিরাট ক্ষতিসাধন করে। তারা তাদের অনিষ্ট না করে ছাড়ে না। তারা আত্মীয়তার বন্ধনের তোয়াক্কা করে না আর তাদের শপথের পবিত্রতাও রক্ষা করে না।

আলী ইবনু আবু তালহা, ইকরিমা এবং আউফী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: ۡ إِلّٗا শব্দের অর্থ হচ্ছে রক্তের সম্পর্ক, আর الذمة শব্দের অর্থ হচ্ছে অঙ্গিকার। দাহ্হাক এবং সুদ্দীও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।

﴿ٱشۡتَرَوۡاْ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ ثَمَنٗا قَلِيلٗا فَصَدُّواْ عَن سَبِيلِهِۦٓۚ إِنَّهُمۡ سَآءَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩ لَا يَرۡقُبُونَ فِي مُؤۡمِنٍ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُعۡتَدُونَ ١٠ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ وَنُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ١١ ﴾ [ التوبة : ٩، ١١ ]

“৯. আল্লাহর আয়াতকে তারা (দুনিয়াবি স্বার্থে) অতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে, ফলে তারা আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তারা যা করে কতই না জঘন্য সে কাজ। ১০. কোনো ঈমানদার ব্যক্তির ব্যাপারে তারা না কোনো আত্মীয়তার মর্যাদা দেয়, আর না কোনো ওয়াদা-অঙ্গীকারের। এরা সেই লোক যারা সীমালঙ্ঘনকারী। ১১. এখন যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য আমি স্পষ্ট করে নিদর্শন বলে দিলাম।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৯-১১]

আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের নিন্দা জানিয়ে এবং মুমিনগণকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে অনুপ্রেরণা প্রদান করে বলেন: ٱشۡتَرَوۡاْ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ ثَمَنٗا قَلِيلٗ “আল্লাহর আয়াতকে তারা (দুনিয়াবি স্বার্থে) অতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থাৎ মুশরিকরা দুনিয়ার নিকৃষ্ট বিষয়াদিতে ডুবে থাকার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অনুসরণ না করে এর বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে। فَصَدُّواْ عَن سَبِيلِهِۦ (আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে) অর্থাৎ তারা মুমিনগণকে সত্যের অনুসরণ করার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেছে إِنَّهُمۡ سَآءَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩ لَا يَرۡقُبُونَ فِي مُؤۡمِنٍ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ “তারা যা করে কতই না জঘন্য সে কাজ। ১০. কোনো ঈমানদার ব্যক্তির ব্যাপারে তারা না কোনো আত্মীয়তার মর্যাদা দেয়, আর না কোনো ওয়াদা-অঙ্গীকারের।” এ আয়াত এবং পরবর্তী আয়াতের তাফসীর ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ “এখন যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে” এই আয়াতের শেষ পর্যন্ত আগে বর্ণিত হয়েছে।

﴿وَإِن نَّكَثُوٓاْ أَيۡمَٰنَهُم مِّنۢ بَعۡدِ عَهۡدِهِمۡ وَطَعَنُواْ فِي دِينِكُمۡ فَقَٰتِلُوٓاْ أَئِمَّةَ ٱلۡكُفۡرِ إِنَّهُمۡ لَآ أَيۡمَٰنَ لَهُمۡ لَعَلَّهُمۡ يَنتَهُونَ ١٢﴾ [ التوبة : ١٢ ]

“১২. তারা যদি চুক্তি করার পর তাদের শপথ ভঙ্গ করে আর তোমাদের দীনের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে, তাহলে কাফিরদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে লড়াই কর, শপথ বলে কোনো জিনিস তাদের কাছে নেই, (কাজেই শক্তি প্রয়োগ কর) যাতে তারা (শয়তানী কার্যকলাপ থেকে) নিবৃত্ত হয়।” [সূরা আত-তাওবাহ্: ১২]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন