মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুজাহিদ প্রমুখ বলেন: এ আয়াতটি তাবুক যুদ্ধ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। মুসলিমগণ কঠিন অবস্থার মধ্যে তাবুক যুদ্ধে বের হয়। তা ছিল এমন একটি বৎসর যখন ভূমি শুকিয়ে হয়েছিল অনুর্বর, আবহাওয়া ছিল প্রচণ্ড গরম। সফরের সম্বল ও পানীয় সংগ্রহ ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। কাতাদা বলেন: তাবুক যুদ্ধের বৎসরে প্রচণ্ড অগ্নিঝরা গরমে তারা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় আর যে কষ্ট তারা ভোগ করেন আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত আছেন। সেখানে তারা প্রচণ্ড কষ্টে পড়েন। এমনকি আমাদের বলা হয়, দুই ব্যক্তি একটি খেজুরকে তাদের মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেন। দুই ব্যক্তি একটি খেজুরকে নিজেদের মাঝে বিনিময় করে। তাদের একজন তা চোষণ করে আর তার উপর গলা ভিজায়। অতঃপর আরেকজন তা চোষণ করে আর তার উপর গলা ভিজায়। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা কবুল করেন আর যুদ্ধ বিরতির নির্দেশ দান করেন।
ইবনে জারীর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন: ওমর ইবনুল খাত্তাবকে এই কষ্টময় সফর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে তাবুকের উদ্দেশ্যে বের হই। অতঃপর এক স্থানে আমরা যাত্রা বিরতি করলাম। এ সময় আমাদের এমন পিপাসা পেয়ে বসে যে, আমাদের মনে হল আমাদের গর্দানসমুহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমনকি আমাদের মধ্যে কেউ তার উট জবাই করে তার গোবর বের করে তার রস পান করে। আর তার কিডনিতে যা অবশিষ্ট ছিল তা রাখল।
অবশেষে আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার দো’আ মঞ্জুর করেন। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দো’আ করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘এটা কি পছন্দ কর যে, আমি তা করি’ তিনি (আবু বকর) বললেন: হাঁ। ফলে তিনি তার দু‘হাত উত্তোলন করলেন আর ততক্ষণ পর্যন্ত তা নামালেন না যতক্ষণ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হল। অতঃপর কিছুক্ষণের জন্য তা বন্ধ হল। এরপর আবার বর্ষণ শুরু হল। ফলে তাদের কাছে যা ছিল তা ভর্তি করে নিলো। আমরা দেখার জন্য বের হলাম কোথায় বৃষ্টি পৌঁছেছে? ফলে পেলাম যে তা আমাদের শিবির অতিক্রম করে চলে গিয়েছে।
আল্লাহ তা“আলার বাণী لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ ٱلۡعُسۡرَةِ সম্পর্কে ইবনে জারীর বলেন: অর্থাৎ খরচাদি, বিজয়, পথের সম্বল, পানীয়ের সঙ্কট। مِنۢ بَعۡدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٖ مِّنۡهُمۡ অর্থাৎ সত্য থেকে অন্তর বিচ্যুত হওয়ার উপক্রম ঘটেছিল। আর তারা রাসূলের দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে আর তার ব্যাপারে সন্দেহ করে যিনি তাদেরকে (পরীক্ষাস্বরূপ) তাদের সফর ও যুদ্ধে এই ক্লেশ-কষ্ট প্রদান করেন।
﴿وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ أَنفُسُهُمۡ وَظَنُّوٓاْ أَن لَّا مَلۡجَأَ مِنَ ٱللَّهِ إِلَّآ إِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوبُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١١٨ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩﴾ [ التوبة : ١١٨، ١١٩ ] “১১৮. আর সে তিন জনের (তাওবা কবূল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে তিনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবাহ কবুল করলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাহ কবূলকারী, পরম দয়ালু। ১১৯. হে মু’মিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১১৮-১১৯]
ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে কা‘ব ইবনে মালেক, যিনি কা‘ব অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার চলাফিরায় তাকে সহযোগিতা করতেন। তিনি বলেন: আমি কা‘বকে তার তাবুক যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যাতে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ করেন নি। কা‘ব ইবনে মালেক বলেন: কোনো যুদ্ধাভিযানেই আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছনে পড়ি নি তাবুক অভিযান ছাড়া। অবশ্য আমি বদর অভিযানে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিলাম; কিন্তু বদর অভিযানে যারা অংশ নেয়নি তারা কেউ তিরষ্কৃত হয়নি। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল কুরাইশ কাফেলাকে ধরার জন্য বের হয়েছিলেন। অবশেষে দিন ধার্য ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম আর তাদের শত্রুদের একত্রিত করেন। আমি আক্বাবার রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশ গ্রহণ করেছি যখন ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে তিনি আমাদের অঙ্গিকার নিয়েছিলেন। আমি এটাকে বদর যুদ্ধের স্থলাভিষিক্ত করতে পছন্দ করি না। যদিও বদর যুদ্ধ লোকদের নিকট বাই‘আতে আক্বাবার চেয়ে অধিক পরিচিত। তাবুক যুদ্ধে আমার ঘটনা হচ্ছে এই: এ যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছেনে পড়েছিলাম। আমি কখনই এত শক্তিশালী আর আমার জন্য কখনই এত সহজ ছিল না যখন আমি এই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ করি নি। আল্লাহর শপথ ইতোপূর্বে কখনই আমার দুটো উষ্ট্রী ছিল না অথচ এ যুদ্ধের সময় তা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো অভিযানে বের হতেন (রণকৌশল হিসেবে) রাস্তা পরিবর্তন করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পরিচালনা করেন। তিনি দীর্ঘ মরু সফরে বের হন। বহুসংখ্যক শত্রুর মুখোমুখি হন। মুসলিমবৃন্দের নিকট শত্রুদের বিরুদ্ধে (যুদ্ধ) প্রস্তুতি গ্রহণ করার বিষয়টি তুলে ধরেন, যাতে তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দিকে যাওয়ার মন স্থির করেন সেটা তাদেরকে অবগত করেন। আর তাঁর সাথে মুসলিমবৃন্দ ছিল অনেক যার তালিকা করা যাবে না। কতক লোক যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত চায় নি তারা ভেবেছিল যে, তাদের ব্যাপারটি গোপনীয়ই থেকে যাবে যদি না আল্লাহ তা‘আলা তা জানিয়ে দেন। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় এই অভিযান পরিচালনা করেন যখন ফলফলাদি পেকেছিল আর ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমার ঝোঁক সেদিকেই ছিল। (এদিকে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর তাঁর সাথে মুসলিমগণও তাবুক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আমি তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বের হলাম; কিন্তু তার কিছুই না করে ফিরে আসলাম। আমি মনে মনে বললাম: আমি চাইলে তা করতে পারি। আর এভাবেই আমার (অবস্থা) চলতে থাকে আর লোকেরা এদিকে তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাথে মুসলিমবৃন্দও সকাল সকাল বেরিয়ে গেলেন। আর আমি কোনো প্রস্তুতিই গ্রহণ করলাম না। আমি বললাম: আমি একদিন অথবা দুইদিন পর প্রস্তুতি নিব। অতঃপর তার সাথে গিয়ে মিলিত হব। তাদের যাত্রার পরদিন সকালে প্রস্তুতি নিতে গেলাম কিন্তু কিছু না করেই ফিরে এলাম। পরের দিন আবার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম; কিন্তু কিছু না করেই ফিরে এলাম। আর এভাবেই আমার চলতে থাকল। অবশেষে লোকেরা প্রতিযোগিতা করে জিহাদে ছুটে গেল। আমি তখন তাদেরকে ধারার জন্য যাত্রা করতে মনস্থ করলাম। হায় যদি আমি তা করতাম। আর এটা আমার পক্ষে সম্ভব হল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলে যাওয়ার পর যখন আমি লোকদের মাঝে বের হতাম (যারা যুদ্ধে যায় নি) তখন আমাকে এটা পিড়া দিল যে, নেফাকে অভিযুক্ত এবং আল্লাহ কর্তৃক মুক্ত ঘোষিত দুর্বল লোক ছাড়া অন্য কোনো লোক দেখলাম না। তাবুক পৌঁছার পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্মরণ করেন নি। তাবুক গিয়ে তিনি লোকদের মধ্যে বসে ছিলেন এ সময় বললেন: “কা‘ব ইবন মালেকের কি সমাচার?” বাণী সালামা গোত্রের জনৈক লোক বলল: তাকে তার দুই বুরদা (পোষাকবিশেষ) আর গর্বভরে নিজের দিকে দর্শন তাকে আটকে দিয়েছে। মু‘আয ইবনে জাবাল বলেন: কত মন্দ কথাই না তুমি বলেছ! আল্লাহর শপথ হে আল্লাহ রাসূল! আমরা তার ব্যাপারে ভালো ছাড়া কিছুই জানি না। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন।
কা‘ব ইবন মালেক আরও বলেন: যখন আমি জানতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাফেলা তাবুক থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে তখন অস্থিরতা আমার উপর ভর করল এবং মনের মধ্যে মিথ্যা অজুহাত দাড় করানোর কথা চিন্তা করতে লাগলাম। আর বললাম কীভাবে আগামীকাল আমি তার ক্রোধ থেকে বের হতে পারি। আর আমার পরিবারের সমস্ত অভিজ্ঞ লোকদের নিকট এ ব্যাপারে সহযোগিতা নিলাম। যখন বলা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেছেন তখন সমস্ত দুষ্ট ও মিথ্যা ওজুহাতগুলো আমার মন থেকে দুর হয়ে গেল। আর আমি ভালোভাবেই জানি এ সমস্ত মিথ্যা অজুহাতে আমি পার পাব না। তখন সত্য বলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে আগমন করলেন। (তাঁর নিয়ম ছিল) যখন তিনি সফর থেকে আগমন করতেন তখন প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে দু’রা‘আত সালাত আদায় করতেন অতঃপর লোকদেরকে সময় দেওয়ার জন্য বসতেন। ফলে যখন তিনি এভাবে মসজিদে বসলেন। যুদ্ধ থেকে পেছনে পড়ে থাকা লোকেরা এ সময় আসল আর তার কাছে শপথ করে (নানা) ওযর আপত্তি পেশ করতে লাগল। তারা ছিল আশির কিছু ঊর্ধ্বে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাহ্যিক অবস্থা থেকে তাদের ওযর গ্রহণ করলেন আর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে দিলেন। অতঃপর আমি (তাঁর নিকট) আসলাম। যখন সালাম দিলাম তিনি রাগসুচক মুচকি হাসি দিলেন। অতঃপর আমাকে বললেন: (এ দিকে) এস, ফলে পদব্রজে তার নিকট গেলাম আর তার সামনে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন: কিসে তোমাকে আমাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে পিছে ফেলেছে? তুমি কি যুদ্ধের বাহন ক্রয় কর নি? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি আপনি ছাড়া পৃথিবীর আর কারও নিকট (এ সময়) বসতাম তবে কোনো ওযর আপত্তি পেশ করে তার ক্রোধ হতে বের হওয়ার উপায় অবলম্বন করতাম। আল্লাহ আমাকে বাগ্মিতা পূর্ণ কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন; কিন্তু আল্লাহর শপথ আমি অবগত আছি আজ যদি আমি মিথ্যা বলি তবে আপনি হয়ত আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন; কিন্তু অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর আপনাকে অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আমি যদি সত্যি বলি আর আমার সত্য বলার কারণে আপনি রাগান্বিত হন কিন্তু আমি অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালো পরিণতির আশা করি। আল্লাহর শপথ ! আমার কোনোই ওযর ছিল না। আমি কখনই এতটা অবসরে ছিলাম না আর আমার পক্ষে কখনই এতটা সহজ ছিল না, যতটা সহজ ছিল যখন আপনি তাবুক অভিযানে বের হন। তিনি বলেন: অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “এ সত্য বলেছে, উঠ, দেখ আল্লাহ তোমার ব্যাপারে কি ফায়সালা দেন।” ফলে আমি উঠে দাঁড়ালাম। আর আমার নিকট বনু সালামার কতিপয় ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল আর অনুসরণ করল। অতঃপর বলল: এর পূর্বে তুমি কোনো অপরাধ করেছ বলে আমরা জানি না। জিহাদ থেকে পেছনে রয়ে যাওয়া অন্যান্যদের মত তুমি ওযর পেশ করতে অপারগ হয়েছ। তোমার অপরাধের জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর শপথ! তারা আমাকে তিরস্কার করতেই থাকল ফলে আমার মনে হল যেন ফিরে যাই আর আমি (আসলে) মিথ্যা বলেছি বলে তাঁকে অবহিত করি। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: অতঃপর আমি তাদেরকে বললাম: এতে (এ অভিযোগে) আমার সাথে আর কেউ আছে কি? তারা বলল: হাঁ এতে তোমার সাথে দু’ব্যক্তি রয়েছে আর তারাও তোমার মতই বলেছে (আল্লাহর রাসূলকে)। আর তাদেরকেও তাই বলা হয়েছে যা তোমাকে বলা হয়েছে (শাস্তির ব্যাপারে)। ফলে বললাম: তারা কারা? তারা বলল: মুরারাহ ইবনে রবী‘ আল আমেরী এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া আল ওয়াকিফী। অতঃপর আমাকে দু’জন সৎ ব্যক্তির কথা বলা হল যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে যাদের মাঝে রয়েছে আমার জন্য আদর্শ। সুতরাং আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমগণকে আমাদের (পূর্বে উল্লিখিত তিন ব্যক্তির) সাথে কথা বলতে নিষেধ করলেন। লোকেরা আমাদেরকে বয়কট করল। তারা আমাদের সাথে তাদের অবস্থাদি পরিবর্তন করল ফলে ধরা আমার জন্য যেন অপরিচিত হয়ে উঠল। এভাবে আমাদের পঞ্চাশ দিন চলে যায়। এদিকে আমার দুই সাথি তাদের বাড়িতে লুকিয়ে বসে থাকল। আমি ছিলাম আমার গোত্রের কঠিন ও সহিষ্ণু ব্যক্তি। আমি মুসলিমগণের সাথে সলাতে অংশগ্রহণ করতাম আর বাজারে যেতাম তবে কেউ আমার সাথে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সালাতের পর তার মাজলিসে আগমন করি আর মনে মনে বলি আমার সালামের উত্তর প্রদানে তার ঠোঁট নড়ে কিনা? তার নিকটে সালাত আদায় করি আর আড় চোখে তাকে দেখে নিই। যখন আমি আমার সলাতে আত্মনিয়োগ করি তিনি আমার দিকে তাকান। অতঃপর যখন আমি তার দিকে তাকাই তখন আমার থেকে তাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন। মুসলিমগণের এই বয়কটে বিষয়টি আমার নিকট অত্যন্ত দীর্ঘ হয়ে উঠল। চলতে লাগলাম অবশেষে আবু কাতাদার (বাড়ীর) প্রাচীরে আরোহণ করলাম। তিনি আমার চাচাত ভাই আর আমার প্রিয় ব্যক্তি। আমি তাকে সালাম দিলাম। আল্লাহর শপথ! তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। আমি তাকে বললাম: হে আবু কাতাদা! আল্লাহর শপথ! তুমি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: তিনি (আবু কাতাদা) চুপ থাকলেন। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: আমি তার জন্য বসলাম আর আল্লাহর দোহাই দিলাম। (কিন্তু) তিনি চুপ করে রইলেন। অতঃপর আমি তার জন্য বসলাম আর দোহাই দিলাম। তারপরও তিনি চুপ করে রইলেন। এরপর তিনি বললেন: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (এ ব্যাপারে) অধিক অবগত।
তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: আমার চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আর ফিরে আসলাম অবশেষে প্রাচীরে আরোহণ করলাম। একসময় আমি মদিনার বাজারে ঘুরছি হঠাৎ আমার চোখে সিরিয়ার এক নাবাতী বিক্রয়ের জন্য মদীনাতে খাদ্য নিয়ে এসেছে। তারা বলল: কে কা‘ব ইবন মালেকের খোঁজ দিতে পারবে? তিনি বলেন: লোকেরা তাকে আমার দিকে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিতে লাগল। অবশেষে সে আসল আর আমাকে গাস্সানের বাদশার চিঠি প্রদান করল। আমি লিখক ছিলাম। ফলে দেখি তাতে লিখা রয়েছে: অতঃপর, আমরা জানতে পেরেছি যে, তোমার সাথী তোমার প্রতি নির্দয় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে লাঞ্ছনাময় ভূমিতে না রাখুন। আমাদের সাথে মিলিত হও আমরা তোমাকে সান্তনা দিব। ফলে যখন আমি তা পাঠ করলাম তখন বললাম: এটাও আরেক পরীক্ষা। অতঃপর আমি পত্রখানা চুলার আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম। অতঃপর পঞ্চাশ দিন থেকে যখন চল্লিশ দিন চলে গেল তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমার নিকট এসে বলল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে তোমার স্ত্রী পরিত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: আমি বললাম: আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দেব না কি করব? অতঃপর তিনি বললেন: না; বরং তার থেকে বিচ্ছিন্ন হও আর তার নিকটবর্তী হয়ো না। তিনি বলেন: আমার দুই সাথীর নিকটও অনুরূপ প্রেরণ করেন। তিনি বলেন: আমি আমার স্ত্রীকে বললাম: তুমি তোমার পরিবারের সাথে মিলিত হও আর তাদের নিকট থাক যে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা এ ব্যাপারে ফায়সালা প্রদান করেন। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী আগমন করল অতঃপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল! হিলাল হচ্ছে একজন দুর্বল বৃদ্ধ তার কোনো সেবক নাই। আমি যদি তার সেবা করি তবে কি আপনি তা অপছন্দ করবেন? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: না তবে সে যেন তোমার নিকটবর্তী না হয়। সে (হিলালের স্ত্রী) বলল: তার কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ নেই। আর আল্লাহর শপথ! সেই দিন থেকে আজও পর্যন্ত সে কেঁদেই চলেছে। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) আমার পরিবারের কেউ বলল: তুমি যদি তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি নিতে। হিলালের স্ত্রীকে তার (হিলালের) সেবা করার জন্য তিনি অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন: আমি বললাম: আল্লাহর শপথ আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি চাইব না আর আমি জানি না যখন আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইব তখন তিনি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে কী বলবেন অথচ আমি একজন যুবক পুরুষ?
তিনি বলেন: অতঃপর (আরও দশদিন) অবস্থান করলাম। অবশেষে লোকদের আমার সাথে কথা না বলার পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হল। তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: অতঃপর আমাদের গৃহসমূহের কোনো এক গৃহের ছাদে পঞ্চাশতম দিবসের প্রভাতে ফজরের সালাত আদায় শেষ করেছি। আর আমি এমন অবস্থায় বসে আছি যার বিবরণ আল্লাহ তা‘আলা (কুরআনে) প্রদান করেছেন অর্থাৎ যখন আমি আমার নিজের উপর বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছিলাম এবং ভূ-পৃষ্ঠ নিজ প্রশস্ততা সত্ত্বেও আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল। এক চিৎকারকারীকে শুনলাম সে সাল‘আ পাহাড়ে আরোহণ করে তার উচ্চস্বরে বলছে: সুসংবাদ গ্রহণ করো হে কা‘ব ইবনে মালিক! তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: আমি সিজদায় পড়ে গেলাম আর বুঝতে পারলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবার মাধ্যমে আমরা নিষ্কৃতি লাভ করলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায়ের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের তাওবাহ কবুল হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিলেন। লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দিতে গেল। আর কতক সু-সংবাদদাতাও গেল আমার দুই সাথীর নিকট। এক ঘোড়ার মালিক আমার নিকট ছুটে এলো আর বানু আসলামের ঐ ব্যক্তিও ছুটে এলো, যে সাল‘আ পাহাড়ে আরোহণ করেছিল। তার আওয়াজ ছিল ঘোড়ার চেয়েও দ্রুত। অতঃপর যখন সে এলো যে আমাকে সুসংবাদ দিয়েছিল আমি তাকে আমার পোশাক দু’টি খুলে দিলাম আর আমাকে সুসংবাদ প্রদানস্বরূপ তাকে সেগুলো পরিধান করালাম। আল্লাহর শপথ সেদিন এ দুটো পোষাক ছাড়া আমার আর কোনো পোশাকই ছিল না। অতঃপর আমি দুটো পোষাক ধার করলাম আর তা পরিধান করে আল্লাহর রাসূলের নিকট গেলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে গ্রহণ করল আর আল্লাহর নিকট তাওবাহ করার সুযোগ লাভের অভ্যর্থনা জানাতে লাগল। তারা বলল: আমরা তোমাকে আল্লাহর নিকট তোমার তাওবার সুযোগ লাভের অভ্যর্থনা জানাচ্ছি। অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। দেখি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন আর লোকেরা তার চারপাশে রয়েছে। আমার নিকট তালহা ইবনে ওবাইদুল্লাহ দাড়িয়ে গেল এবং দ্রুত এসে আমার সাথে মুসাফাহা করল আর অভ্যর্থনা জানাল। আল্লাহর শপথ! তিনি ছাড়া মুহাজিরদের আর কেউ আমার নিকট দাঁড়ায় নি। (অধস্তন রাবী) বলেন: এ কারণে কা‘ব তালহাকে কখনই ভুলেন নি। কা‘ব বলেন: যখন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলাম খুশিতে তখন তার চেহারা চমকাচ্ছিল। তিনি বললেন: তোমার মা যেদিন তোমাকে প্রসব করেছে সে দিন থেকে অতিবাহিত হওয়া সবচেয়ে উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তিনি (কা‘ব) বলেন: আমি বললাম: এটা কি আপনার পক্ষ থেকে নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন: না বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশি হতেন তখন তাঁর চেহারা আলোকিত হয়ে উঠত যেন সেটি চাঁদের একটি টুকরা যা তাঁর মাঝে বুঝা যেত। অতঃপর যখন আমি তার সামনে বসলাম তাঁকে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমার তাওবাহ হচ্ছে আমি আমার (যাবতীয়) সম্পদ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নিকট সদকা হিসেবে দিয়ে দিতে চাই। তিনি বললেন: ‘তোমার কিছু সম্পদ তোমার নিকট রেখে দাও সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।’ তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: আমি বললাম: খায়বার হতে প্রাপ্ত আমার অংশটি আমার জন্য রেখে দিলাম। আর বললাম: হে আল্লাহর রাসূল: নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সত্য বলার কারণে মুক্তি দিয়েছেন। আর আমার তাওবার একটি অংশ হচ্ছে: আমি যতদিন বেঁচে থাকি সত্য ছাড়া কিছু বলব না। আল্লাহর শপথ আমি এমন কোন মুসলিম সম্পর্কে জানি না যাকে আল্লাহ আমার চেয়ে সত্য বলতে সাহায্য করেছেন।
আমি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছিলাম সেদিন থেকে আজও পর্যন্ত মিথ্যা (বলার) চিন্তাও করি নি আর আমি আল্লাহর নিকট আকাঙ্ক্ষা করি আমি যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন তিনি যেন আমাকে মিথ্যা বলা থেকে হিফাযত করেন।
তিনি (কা‘ব ইবন মালিক) বলেন: আর আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন:
“অবশ্যই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু। আর সে তিন জনের (তাওবা কবূল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে তিনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবা কবুল করলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১১৭-১১৯] এভাবে আয়াতসমূহের শেষ পর্যন্ত।
কা‘ব বলেন: আল্লাহর শপথ আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ইসলামের সঠিক পথ দেখানোর পর আমার উপর সে দিনের (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট) আমার সত্য বলার চেয়ে বড় কোনো অনুগ্রহ আর করেন নি আর তা হচ্ছে যে, আমি মিথ্যা বলব না (আর বললে) ফলে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ধ্বংস করবেন যেমন তিনি তাদেরকে ধ্বংস করেছেন যারা তাঁকে (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিথ্যা বলেছিল। যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা বলেছিল আল্লাহ তা‘আলা যখন ওয়াহী অবতীর্ণ করেন তখন তাদের প্রত্যেকের জন্য মন্দ বলেছেন।
তিনি বলেন: আমরা সেই তিনজন যারা তাবুক যুদ্ধ অংশগ্রহণ করি নি। তারা ওরাই যাদের থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযর গ্রহণ করেছেন যখন তারা শপথ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের সাথে বাই‘আত করেন আর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আর আল্লাহ তা‘আলা ফায়সালা না দেওয়া পর্যন্ত তিনি আমাদের ব্যাপারটি মুলতবী রাখেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: سَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ إِذَا ٱنقَلَبۡتُمۡ إِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ فَأَعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ إِنَّهُمۡ رِجۡسٞۖ ْ -এ আয়াত আমরা যারা যুদ্ধ থেকে পেছনে বসেছিলাম সকলের ক্ষেত্রে নয়; বরং যারা তার নিকট শপথ করেছিল আর তার নিকট ওযর পেশ করেছিল এবং তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন (তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়)।
এ হাদিসটি বিশুদ্ধ এবং প্রমাণিত, যার সঠিক হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে, আর বুখারী ও মুসলিম তার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসটি এ আয়াতের সাথে সুন্দরভাবে সংশ্লিষ্ট একাধিক তাফসিরকার থেকে এ আয়াতের তাফসীরে তা বর্ণিত রয়েছে। যেমন আ‘মাশ আবু সুফইয়ান থেকে, তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করে وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: তাঁরা হচ্ছে কা‘ব ইবন মালিক, হিলাল ইবনে উমাইয়া ও মুরারা ইবনে রবী‘। আর তারা প্রত্যেকে আনসার।
সত্য বলার নির্দেশ:
পঞ্চাশ দিবা ও রজনী মুসলিমগণের বয়কটের ফলে দুঃখ কষ্টে নিপতিত অবস্থা থেকে ঐ তিনজনকে আল্লাহ তা‘আলা যখন স্বস্তি দেন তখন এ সম্পর্কে তিনি আয়াত অবতীর্ণ করেন। আর তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছিল আর যখন ভূ-পৃষ্ঠ নিজ প্রশস্ততা সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল অর্থাৎ প্রশস্ততা সত্ত্বেও চলার পথ ও গন্তব্য সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল। আর তারা দিশা পাচ্ছিল না যে, তারা কী করবে? আল্লাহর নির্দেশের জন্য ধৈর্যধারণ করেছিল, তার আদেশের জন্য বিনয়ী হয়েছিল আর অটল ছিল। অবশেষে যুদ্ধে মুসলিমগণের সাথে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য বলার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে স্বস্তি দান করেন। বিনা ওযরে যুদ্ধে গমন থেকে বিরত থাকার কারণে এ পরিমাণ সময় তারা শাস্তি ভোগ করে অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা কবুল করেন। অতঃপর তাদের সত্য বলার পরিণাম তাদের জন্য কল্যাণকর ছিল আর সেটা তাদের তাওবাহ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” অর্থাৎ সত্য বল, সত্যকে আঁকড়ে ধর সত্যবাদী হও ধ্বংস থেকে বাঁচ। তোমাদের কর্মসমুহের ব্যাপারে তোমাদের জন্য স্বস্তি ও সমাধানের পথ বের করে দিবেন।
ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্য কল্যাণের পথ দেখায় আর কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। কোন ব্যক্তি সত্য বলে আর সত্যের প্রয়াস চালায় অবশেষে আল্লাহর নিকট তাকে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়। তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপাচারীতার পথ দেখায়। আর পাপচারীতা জাহান্নামের পথ দেখায়। কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলে আর মিথ্যার প্রয়াস চালায় অবশেষে আল্লাহর নিকট তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখিত হয়, যদি তোমরা উল্লিখিত আয়াত তিলাওয়াত কর। ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
“১২০. মদীনার অধিবাসী ও তার আশপাশের মরুবাসীদের জন্য সংগত নয় যে, রাসূলুল্লাহ থেকে পেছনে থেকে যাবে এবং রাসূলের জীবন অপেক্ষা নিজদের জীবনকে অধিক প্রিয় মনে করবে। এটা এ কারণে যে, তাদেরকে আল্লাহর পথে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় আক্রান্ত করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধ জন্মায় এবং শত্রুদেরকে তারা ক্ষতিসাধন করে, তার বিনিময়ে তাদের জন্য সৎকর্ম লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১২০]
যুদ্ধের জন্য বের হবার পুরষ্কার:
আল্লাহ তা‘আলা তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অবগতগুলোর মদীনাবাসী এবং তার আশে পাশের পেছনে পড়ে থাকা লোকদের তিরস্কার করেন। যে কষ্ট-ক্লেশ তিনি এই যুদ্ধে ভোগ করেছেন সে ব্যাপারে তাকে সান্ত্বনা দান থেকে তাদের অনিচ্ছা। তারা নিজেরা নিজেদের সাওয়াবকে হ্রাস করে। কেননা তাদেরকে যে ظَمَأٞ “তৃষ্ণা”, نَصَبٞ “ক্লান্তি” مَخۡمَصَةٞ “ক্ষুধা” স্পর্শ করে। وَلَا يَطَُٔونَ مَوۡطِئٗا يَغِيظُ ٱلۡكُفَّارَ “তারা এমন কোথাও অবতীর্ণ হয় যেখানে তারা তাদের শত্রুদের ভীতি প্রদর্শন করে।” আর وَلَا يَنَالُونَ مِنۡ عَدُوّٖ نَّيۡلًا এর উপর তাদের কোনো সফলতা ও বিজয় অর্জিত হয়, إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِۦ عَمَلٞ صَٰلِحٌۚ এ সমস্ত কর্মসমূহের বিনিময়ে যা তাদের ক্ষমতার অধীনে নয়, তাদের কর্মে ফলাফল মাত্র বড় সাওয়াব ও নেক আমল। إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ “নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।” যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন, ﴿ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا ٣٠﴾ ( الكهف : ٣٠ ) “অবশ্যই যে ভালো কাজ করে তার কর্মের বিনিময় আমি নষ্ট করি না।” [সূরা আল-কাহাফ: ৩০]
“১২১. আর তারা স্বল্প কিংবা অধিক যা-ই ব্যয় করে এবং অতিক্রম করে যে প্রান্তরই, তা তাদের জন্য লিখে দেওয়া হয়, যাতে তারা যা আমল করত, আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১২১]
আল্লাহর পথে ঐ সমস্ত লড়াইকারী। نَفَقَةٗ صَغِيرَةٗ وَلَا كَبِيرَة “অল্প হোক অথবা বেশি।” وَلَا يَقۡطَعُونَ وَادِيًا শত্রুদের উদ্দেশ্যে চলাতে إِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ এখানে ভালো কর্মের ফলাফল হিসেবে তার জন্য রয়েছে বিরাট পুরষ্কার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ এ কারণে তিনি বলেন: আমীরুল মু’মিনীন উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু এই আয়াতের প্রতিফলন হিসেবে বিশাল অংশ প্রতিদান হিসেবে লাভ করেন। আর তা এভাবে যে, তিনি এই অভিযানে বিরাট খরচাদি ও অনেক সম্পদ ব্যয় করেন। আব্দুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ বর্ণনাকারী আব্দুর রহমান ইবনে সামরাহ থেকে আরও বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: উসমান ইবনে আফ্ফান রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার কাপড়ে এক হাজার দিনার নিয়ে আসেন। ফলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্টদায়ক এই অভিযানের সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন: অতঃপর তিনি তাঁর (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোলে ঢেলে দেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোকে তার হাতে উল্টাতে থাকেন আর বলেন: আফ্ফান পুত্র আজকের পর তার কোনো আমলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি একথা বারবার বলতে থাকলেন।
কাতাদা আল্লাহর বাণী وَلَا يَقۡطَعُونَ وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ -এর সম্পর্কে বলেন: যে জাতি আল্লাহর রাস্তায় তার পরিবার থেকে যত দুরে থাকে এতে সে আল্লাহর ততই নিকটবর্তী হয়।
“১২২. আর মুমিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা সকলে একসঙ্গে অভিযানে বের হবে। অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১২২]
এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিবরণ যে, আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন গোত্রগুলো যেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে বের হয়। কতক পূর্বসূরি আলেম মত ব্যক্ত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধে বের হন তখন প্রতিটি মুসলিমের উপর আবশ্যক হল তাঁর সাথে বের হওয়া।
আর আমরা বলতে পারি: এটা সকল গোত্রের বের হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। অন্ততপক্ষে প্রতিটি গোত্রের ক্ষুদ্র একটি দলের জিহাদে যাওয়ার আবশ্যক হওয়ার বর্ণনা। যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে জিহাদে বের হয়েছে (তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি দল) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অধ্যয়ন করবে। আর যখন তারা তাদের (বাকি) লোকদের নিকট ফিরে আসবে তখন তাদেরকে এই যুদ্ধ সম্পর্কে সতর্ক করবে। অতএব এই দলটি যারা লোকদের সাথে জিহাদে বের হয়েছে তাদের মাঝে দু’টি বিষয় একত্রিত হয়েছে আর তা হচ্ছে: জিহাদ এবং ওহীর জ্ঞান অধ্যয়ন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর প্রতিটি গোত্রের ক্ষুদ্র একটি দল তারা দু’টির যে কোনো একটি অর্জনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ব। তা হল- ১. জিহাদ ২. দ্বীনের জ্ঞান অর্জন। এ কারণে প্রতিটি মুসলিম সমাজের উপর জিহাদ ফরযে কিফায়া।
আলী ইবনে আবু তালহা ইবনে আব্বাস থেকে এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ “মু’মিনদের জন্য আবশ্যক নয় যে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাকী ফেলে সকলেই (জিহাদে) বেরিয়ে পড়বে।” فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ অর্থাৎ ক্ষুদ্র একটি দল। তারা কেবল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি সাপেক্ষেই জিহাদে বের হবে। অতঃপর যখন এই দলটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে আসবে, আর তাদের বের হয়ে যাবার পর কুরআনের যে অংশ অবতীর্ণ হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসে থাকা লোকেরা তা শিক্ষা অর্জন করবে। আর তারা বলবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর উপর কুরআন (এর কিছু অংশ) অবতীর্ণ করেছেন আর তা আমরা শিখে নিয়েছি। ফলে (ফিরে আসা) দলটি অবস্থান করবে আর তাদের পরে (অনুপস্থিত থাকাকালিন সময়ে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তারা শিক্ষা অর্জন করবে। আর অপর একটি দলকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করবেন। আর তাই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ তারা শিক্ষা অর্জন করবে যা তাদের নবীর উপর প্রেরিত হয়েছে। আর যুদ্ধে প্রেরিত দলকে শিক্ষা দিবে যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে। لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ “যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে।”
মুজাহিদ বলেন: এই আয়াতটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবীর ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়, যারা মরু অঞ্চলে গিয়েছিল আর তার অধিবাসীদের থেকে ভালো ব্যবহার পেয়েছিল। আর ভূমি ছিল উর্বর যার দ্বারা তারা তার উপকার অর্জন করেছিল। তারা লোকদের মাঝে যাদেরকে পেয়েছিল (ইসলামের) দাওয়াত দিয়েছিল। লোকেরা তাদেরকে বলল: আমরাতো দেখছি তোমরা তোমাদের সাথীকে ফেলে আমাদের নিকট এসেছ। এতে তারা নিজেদের মাঝে মন্দ দেখতে পেল। ফলে তারা সকলে (ঐ) মরু অঞ্চল থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে আসল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন: فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ কল্যাণ কামনা করে। لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ লোকদের নিকট যা রয়েছে তা শ্রবণ করে وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ সকল লোকদেরকে যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসে إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ
কাতাদাহ এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেন: এটা যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের নবীর সাথে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিলেন। এ সময় একদল সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অবস্থান করে দীনের জ্ঞান অর্জন করবে। আরেক দল তাদের লোকদের নিকট যাবে আর তাদেরকে (আল্লাহর দিকে) আহ্বান করবে আর তাদেরকে তাদের সামনে আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ -এ আয়াতটি জিহাদ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় নি; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহর নিকট মুদার গোত্রের বিরুদ্ধে দুর্ভিক্ষের বদদো‘আ করলো, তাদের দেশে খরা দেখা দিল, তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন গোত্র যারা চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিল তারা গোটা জাতি একসাথে মদিনায় আসতে শুরু করল। তারা মিছেমিছি দাবি করল যে, তারা মুসলিম। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীর উপর অত্যন্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে আয়াত অবতীর্ণ করে জানিয়ে দিলেন যে, তারা মু’মিন নয়। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরকে ফেরত পাঠালেন আর তাদের (অন্যান্য) লোকদের সতর্ক করলেন যেন তারা যা করেছে তার পুনরাবৃত্তি না।
“১২৩. হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১২৩]
কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ প্রথমে কাছের তারপর দুরের:
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে প্রথমে ইসলামী রাষ্ট্রের নিকটবর্তী অতঃপর তার দূরবর্তী স্থানের কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিচ্ছেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরব ভূ-খণ্ডের মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। যখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হয় আর আল্লাহ তাকে মক্কা, মদিনা, তায়েফ ইয়েমেন, ইয়ামামাহ, হিজর খাইবার, হাদরামাউত ছাড়াও আরব ভূ-খণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চল সমূহের উপর বিজয় দান করেন আর সকল আরব গোত্রগুলো থেকে লোকেরা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে তখন ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন, যারা আরব ভূ-খণ্ডের নিকটতম অধিবাসী আর ইসলামের দিকে দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে (অন্যদের চেয়ে) অধিক উপযোগী। কেননা তারা ঐশী গ্রন্থের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক পৌঁছেন অতঃপর লোকদের কষ্ট-ক্লেশ, ভূমির অনুর্বরতা আর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ায় সেখান থেকে তিনি ফিরে আসেন। আর এটা নবম হিজরিতে সংঘটিত হয়। দশম হিজরিতে তিনি বিদায় হজের জন্য ব্যস্ত থাকেন। তারপর তিনি বিদায় হজের একাশি দিন পর ঊর্ধ্বজগতের পরমবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নশ্বর জগত ত্যাগ করেন। তাঁর উপর আল্লাহর সালাত ও সালামের ধারা অব্যাহত থাকুক। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচর, বন্ধু ও প্রতিনিধি আবু বকরকে নেতৃত্বের জন্য চয়ন করেন। সে সময় ইসলামের সামনে বহু আক্রমণ এবং তার পরাজয়ের উপক্রম হয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার দীনকে তাঁর (আবু বকরের) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তার ভিত্তি সুদৃঢ় করেন। অবাধ্য ধর্মত্যাগীদেরকে দ্বীনের প্রতি ফিরিয়ে আনেন। আর ঐ সকল নির্বোধদের নিকট থেকে যাকাত আদায় করেন যারা তা দিতে অস্বীকার করেছিল। তিনি সত্যকে তাদের সামনে উপস্থাপন করেন যারা সে ব্যাপারে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে তা পালন করেন। অতঃপর তিনি ইসলামী সৈন্যদেরকে ক্রুশের পূজারি রোম আর অগ্নিপুজারী পারস্যদের বিরুদ্ধে সুসজ্জিত করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এই অভিযানের বরকতে (এই ভূ-খণ্ডের) উপর বিজয় দান করেন। আর রোম ও পারস্য সম্রাট এবং এদের অনুগতদের অনেককে পরাজিত করেন আর এ থেকে অর্জিত ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেন। যেমন এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন। এই অভিযান অব্যাহত থাকে তার নির্বাচিত প্রতিনিধি যিনি পরবর্তীতে (মসজিদের) মিহরাবে শাহাদাত বরণ করেন আবু হাফ্স ওমর ইবনুল খাত্তাবের নেতৃত্বে। আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা নাস্তিকদের শায়েস্তা করেন ও অবাধ্য মুনাফিকদের দমন করেন। বিশ্বের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভূ-খণ্ডের উপর কর্তৃত্ব দান করেন। দূরের এবং নিকটের সমস্ত অঞ্চল থেকে ধনভাণ্ডার তার নিকট বহন করে আনা হয়। অতঃপর শরী‘আতসম্মতভাবে ও সন্তোষজনক উপায়ে সেগুলোকে বণ্টন করে দেন। অতঃপর মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের পর যখন তিনি শাহাদাত বরণ করেন তখন মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফতের উপর ঐক্যমত্য পোষণ করেন। তিনি গৃহবন্দী অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর খিলাফতকালে ইসলাম নেতৃত্বের প্রশস্ত পরিচ্ছদ পরিধান করে আর পৃথিবীর আনাচে কানাচে পূজারীদের কাঁধে আল্লাহর পরিপূর্ণ দলিল-প্রমাণাদি পৌঁছে যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ইসলাম প্রচার লাভ করে। আল্লাহর বাণী সমুন্নত হয় আর তার দীন প্রকাশিত হয়। শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার খাঁটি দীন এর গভীর লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। যখনই তারা কোনো পাপিষ্ঠ জাতির উপর বিজয় লাভ করে তখন তাঁরা তাদের পরে এরপর যারা রয়েছে তাদের দিকে ছুটে যায়। আল্লাহ তা‘আলার এই আদেশ পালনার্থে। يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قَٰتِلُواْ ٱلَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ ٱلۡكُفَّارِ “হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।”
আল্লাহ তা’আলার বাণী - وَلۡيَجِدُواْ فِيكُمۡ غِلۡظَةٗۚ “কাফেররা যেন তোমাদের থেকে তাদের উপর তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের লড়াইয়ে কঠোরতা পায়।” কেননা পূর্ণাঙ্গ মু’মিন তো সেই, যে তার মু’মিন ভাইয়ের প্রতি হয় নম্র এবং কাফের শত্রুর উপর হয় কঠোর। এটা আল্লাহ তা‘আলার সে বাণীর মত, যাতে তিনি বলেন, ﴿أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٥٤﴾ ( المائدة : ٥٤ অনুরূপ আল্লাহ বলেন, ﴿أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ ٢٩﴾ ( الفتح : ٢٩ তাছাড়া আল্লাহ বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ ( التحريم : ٩ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি হাস্য-রসকারী স্বীয় বন্ধুদের সাথে এবং হত্যাকারী দুশমনদের। অর্থাৎ বন্ধুদের মুখে হাসি কিন্তু শত্রুদের মাথার খুলি উড়াই।
আর আল্লাহর বাণী, “আর জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সাথে রয়েছেন” অর্থাৎ তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর, আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ তোমাদের সাথে রয়েছেন [জ্ঞানে ও সাহায্য-সহযোগিতায়] যদি তোমরা তাঁর তাকওয়া অবলম্বন কর, ও তাঁর অনুসরণ কর। আর এমনই অবস্থা ছিল প্রথম তিন শতাব্দীতে। তারা (এ শতাব্দীর মুসলিমগণ) দীনের উপর অবিচল ছিল আর আল্লাহর আনুগত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ছিল এ জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তারা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেই চলেছিল। এ সময় বহু সাম্রাজ্য ইসলামী শাসনের আওতায় আসতে থাকে। আর ইসলামের শত্রুদের ক্ষতি সাধিত হতেই থাকে।
অতঃপর যখন ইসলামী সাম্রাজ্যগুলোর শাসকদের মাঝে দ্বন্দ্ব-কলহ, প্রবৃত্তির অনুসরণ আর ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে, শত্রুরা তখন সাম্রাজ্যের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোর প্রতি লোভী হয়ে উঠে এবং এ সময় মুসলিম শাসকদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ততার কারণে এক রকম বিনাবাধায় ভূ-খণ্ডের দিকে অগ্রসর হয়। এভাবে চলতে থাকে। অবশেষ তারা অনেক মুসলিম রাষ্ট্র দখল করে নেয়। সমস্ত ব্যাপার আল্লাহর জন্য, শুরুতে এবং শেষেও। যখনই মুসলিম শাসকবৃন্দ উঠে দাঁড়াবে, আল্লাহর নির্দেশে মেনে নেবে আর তাঁর উপর ভরসা করবে তিনি তাদেরকে নিজ ক্ষমতাবলে তাদের দেশসমূহ (হাতছাড়া হয়ে যাওয়া) কাফের হাত থেকে ফিরিয়ে দিবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তো এ দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি তাঁর কাফের শত্রুদের থেকে মুসলিমগণকে সুদৃঢ় করবেন আর সমস্ত অঞ্চলগুলোতে তার বাণীকে সমুন্নত করবেন। নিশ্চয় তিনি অতিশয় দানশীল মর্যাদাবান।
“১২৪. আর যখনই কোনো সূরা নাযিল করা হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটি তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করল’? অতএব যারা মু’মিন, নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়। ১২৫. আর যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, এটি তাদের অপবিত্রতার সাথে অপবিত্রতা বৃদ্ধি করে এবং তারা মারা যায় কাফির অবস্থায়।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১২৪]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/344/22
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।