hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আত-তাওবার তাফসীর

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

২০
মসজিদে দ্বিরার (ক্ষতিসাধণের উদ্দেশ্যে বানান মসজিদ) আর যে মসজিদ তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত:
অত্র আয়াতটির প্রেক্ষাপট:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে খাযরাজ গোত্রের ‘আবু আমের রাহেব’ নামক এক ব্যক্তি যে জাহেলী যুগে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে আর তাদের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে ধর্মযাজক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। খাযরাজ গোত্রে তার বড় মর্যাদা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদিনায় আগমন করেন তখন মুসলিমগণ তার নিকট একত্রিত হন আর ইসলামের কালিমা সমুন্নত হয়। বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেন। ফলে অভিশপ্ত আবু ‘আমেরের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে এবং সে ইসলামের বিরুদ্ধে তার শত্রুতা ঘোষণা করে। সে আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য মক্কার কুরাইশ পৌত্তলিক কাফিরদের নিকট যায়। কুরাইশদের সম্মিলিত বাহিনী আর বেদুইনরা একত্রিত হয়ে ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমগণকে পরীক্ষা করেন। অবশ্য শেষ পরিণাম ফল আল্লাহ-ভীরুদের জন্য। এই পাপিষ্ঠ (আবু ‘আমের রাহেব) দুই শিবিরের মাঝে অনেকগুলো গর্ত খনন করে। তার কোনো একটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়ে যান। তাঁর মুখমণ্ডল জখম হয়, তাঁর নিচের পাটির ডান দিকের তৃতীয় দাঁতটি (রুবায়া) ভেঙ্গে যায় আর তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। আবু ‘আমের লড়াইয়ের শুরুতে তার গোত্রের আনসারদের নিকট এসে তাদের সম্বোধন করে এবং তাকে সাহায্য ও তার সাথে একমত হওয়ার জন্য তাদেরকে বুঝাতে থাকে। যখন তারা তাকে চিনতে পারে তখন তারা বলে: ওহে আল্লাহর দুশমন, হে পাপিষ্ঠ তোর দর্শনের মাধ্যমে যেন আল্লাহ আমাদের চক্ষু শীতল না করেন। তারা তাকে ভর্ৎসনা করে। অবশেষে সে এ বলে চলে যায় যে, আল্লাহর শপথ আমার পরে আমার সম্প্রদায়কে অনিষ্ট পেয়ে বসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তার চলে যাওয়ার পূর্বে তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন আর কুরআন থেকে তিলাওয়াত করে শুনান। সে ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি আর ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর এ বলে বদ-দো’আ করেন যেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিতাড়িত করে দূরবর্তী স্থানে তার মৃত্যু ঘটান। ফলে আবু ‘আমেরের উপর এ বদ-দো’আ পতিত হয়। আর তা এভাবে যে,

ওহুদ যুদ্ধ সমাপ্ত হল। আবু ‘আমের অনুধাবন করল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদ-দো’আ ক্রমশ উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে। সে রোমের বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের নিকট গমন করে আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করে। ফলে তার উপর হিরাক্লিয়াসের করুণা হয় আর তাকে ওয়াদা দেয় এবং তাকে তার নিকট আশ্রয় দেয়। আবু ‘আমের তার গোত্রের অর্থাৎ খাযরাজ গোত্রের কতিপয় কপট ও ইসলামের উপর সংশয়ী লোকদেরকে লিখে পাঠাল, তাদের সাথে অঙ্গিকার করল যে, শীঘ্রই সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এক সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করবে যারা তাঁর এবং তাঁর দো‘আর উপর বিজয় লাভ করবে। সে তাদেরকে নির্দেশ দিল যেন তারা একটি মজবুত স্থান তৈরি করে যেখানে সে তার গুপ্তচর পাঠাতে পারে এবং যেটি তার একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে সে পরবর্তীতে তাদের সাথে মিলিত হতে পারে। তারা কুবা মসজিদের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। অবশেষে ঐ সকল মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসে এবং আবেদন জানায় যে, তিনি যেন তাদের নিকট আসেন আর তাদের মসজিদে সালাত আদায় করেন। যাতে তা তাদের এই মসজিদে তাদের সালাত আদায় করার সঠিকতার উপর প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আর তারা জানায় যে, তারা এই মসজিদ তাদের মধ্যেকার দুর্বল লোক এবং রাতে বৃষ্টির কারণে আসতে না পারা লোকদের জন্য নির্মাণ করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ মসজিদে সালাত আদায় করা থেকে বাঁচান। তিনি বললেন: ‘আমরা তো এখন সফরে বের হয়েছি। আল্লাহ যদি চান তো ফিরে এসে’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাবুক থেকে ফিরলেন আর তাঁর মদিনায় পৌঁছতে তখনও একদিন কি দিনের কিছু অংশ বাকি ছিল এমতাবস্থায় জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এ মর্মে তাঁর নিকট সংবাদ নিয়ে এলেন যে, এ মসজিদটি কুফুরির ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত আর তা ইসলামের ক্ষতি সাধন ও মুসলিমগণ “যারা কুবা মসজিদে সালাত আদায় করতেন যা প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যা নির্মিত হয়েছে।” ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌঁছার পূর্বেই কতক সাহাবীকে পাঠালেন এ ‘মসজিদে দ্বিরার ভেঙ্গে ফেলার জন্য। যেমন আলী ইবনে আবু তালহা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: কতিপয় আনসার মসজিদ নির্মাণ করে। আবু ‘আমের তাদেরকে বলে: তোমরা মসজিদ নির্মাণ কর আর তোমরা তোমাদের সামর্থ্যানুযায়ী সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর। আমি রোমের বাদশাহ কায়সারের নিকট যাচ্ছি। অতঃপর তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমি আগমন করব এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার সাথীদের বের করে দিব। অতঃপর যখন তারা মসজিদ নির্মাণ সমাপ্ত করে তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে: আমরা আমাদের মসজিদ নির্মাণ সমাপ্ত করেছি। আমরা এটা পছন্দ করি যে, আপনি তাতে সালাত আদায় করেন আর আমাদের জন্য বরকতের দো’আ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন: لَا تَقُمۡ فِيهِ أَبَدٗاۚ পর্যন্ত। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَلَيَحۡلِفُنَّ অর্থাৎ যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّا ٱلۡحُسۡنَىٰۖ “আমরা এর নির্মাণ দ্বারা শুধু লোকদের কল্যাণ ও আরামই চেয়েছি।” আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন: (আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।) অর্থাৎ তারা যে ইচ্ছা ও সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেছে তাতে; বরং তারা তো কেবল কুবা মসজিদের ক্ষতি সাধন, আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস, মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি আর ইতোপূর্বে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি বানানোর উদ্দেশ্যে তা নির্মাণ করেছে। আর ঐ ব্যক্তি হচ্ছে পাপিষ্ঠ আবু ‘আমের। তাকে বলা হয় ‘রাহিব’ তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।

আর তাঁর বাণী لَا تَقُمۡ فِيهِ أَبَدٗاۚ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মতকে সব সময়ের জন্য এ মাসজিদে সালাতে দণ্ডায়মান হতে নিষেধ করেছেন।

কুবা মসজিদ এবং এতে সালাত আদায়ের ফযিলত:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে কুবা মাসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করছেন যা প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হওয়া। মুমিনগণের বাণীকে সমুন্নত করার জন্য আর ইসলাম ও তার অনুসারীদের দুর্গ ও আশ্রয় শিবির হিসেবে। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ “এ প্রাচীন মসজিদ যা তার প্রথম নির্মাণ থেকেই এক আল্লাহ যার কোনো শরীক নেই তার ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত”-এর বর্ণনা প্রসঙ্গ কুবা মসজিদ সম্পর্কে। এ কারণে সহীহ হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কুবা মাসজিদে সালাত আদায় একটি উমরার সমান (সাওয়াব)।

অপর একটি সহীহ রেওয়ায়াতে রয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে ও পায়ে হেটে কুবা মাসজিদে যেতেন। সহীহ হাদিস এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তা নির্মাণ করেন আর তার আগমন ও বনী আমর ইবনে আউফ গোত্রে অবতরণের প্রাক্কালে তার ভিত্তি স্থাপন করেন তখন জিবরাঈল স্বয়ং তার কিবলা নির্ধারণ করে দেন।

ইমাম আহমাদ উওয়াইম ইবনে সা‘ইদাহ আল আনসারী থেকে, তিনি তাকে (এ) হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট মাসজিদে কুবায় আসলেন অতঃপর বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মসজিদের ঘটনা প্রসঙ্গে পবিত্রতার ক্ষেত্রে তোমাদের অত্যন্ত সুন্দর প্রশংসা করেছেন। কী সেই পবিত্রতা, যা তোমরা অর্জন কর? তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ এ ব্যাপারে আমাদের তো কিছু জানা নেই তবে আমাদের পড়শি কিছু ইয়াহূদী ছিল তারা মলত্যাগের পর তাদের পশ্চাৎ দেশ ধৌত করত অতঃপর আমরাও ধৌত করি যেমন তারা ধৌত করত।

ইবনে খুযাইমা তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ “এ প্রাচীন মসজিদ যা তার প্রথম নির্মাণ থেকেই এক আল্লাহ যার কোনো শরীক নেই তার ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত”- তাতে সালাত আদায় মুস্তাহাব হওয়ার উপর দলীল। এতে আরও দলীল রয়েছে সৎকর্মশীল, ইবাদাতকারী সুচারুরূপে ওযুকারী এবং ময়লা পোশাক থেকে সতর্কতা অর্জনকারীদের সাথে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার ওপর।

ইমাম আহমাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে ফজরের সালাত আদায় করলেন অতঃপর সূরা রুম তিলাওয়াত করে তাতে (তিলাওয়াতে) ভুল করলেন। অতঃপর সালাত সমাপ্ত করে বললেন: আমরা কখনও তিলাওয়াতে ভুল করে থাকি, তোমাদের কতক লোক আমাদের সাথে সালাত আদায় করে; কিন্তু তারা সুচারুরূপে ওজু করে না। অতএব যারা আমাদের সাথে সালাত আদায় করে তারা যেন ভালভাবে ওজু করে। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জন ইবাদতে দণ্ডায়মান হতে, তা সম্পন্ন করতে আর শরী‘আত সম্মতভাবে ইবাদত করতে সাহায্য করে।

আল্লাহর বাণী وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ “আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।” সম্পর্কে আবুল আলীয়া বলেন, পানি দিয়ে পবিত্রতা উত্তম, যাদের আল্লাহ ভালোবাসেন। তবে তারা হল যারা গুণাহ হতে পবিত্র। আর আ’মাশ বলেন, তারা হলেন যারা গুনাহ হতে তাওবা করেন এবং শির্ক হতে পবিত্র।

﴿أَفَمَنۡ أَسَّسَ بُنۡيَٰنَهُۥ عَلَىٰ تَقۡوَىٰ مِنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٍ خَيۡرٌ أَم مَّنۡ أَسَّسَ بُنۡيَٰنَهُۥ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٖ فَٱنۡهَارَ بِهِۦ فِي نَارِ جَهَنَّمَۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٩ لَا يَزَالُ بُنۡيَٰنُهُمُ ٱلَّذِي بَنَوۡاْ رِيبَةٗ فِي قُلُوبِهِمۡ إِلَّآ أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ١١٠﴾ [ التوبة : ١٠٩، ١١٠ ]

“১০৯. যে তার গৃহের ভিত্তি আল্লাহর তাকওয়া ও সন্তুষ্টির উপর প্রতিষ্ঠা করল, সে কি উত্তম না ঐ ব্যক্তি, যে তার গৃহের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এক গর্তের পতনোন্মুখ কিনারায়? অতঃপর তাকে নিয়ে তা ধসে পড়ল জাহান্নামের আগুনে। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। ১১০. তাদের নির্মিত গৃহ, তাদের অন্তরে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৯-১১০]

দুই মসজিদের মাঝে পার্থক্য (মসজিদে দ্বিরার ও কুবা মসজিদ)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা সমান নয়, যে তার ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহভীতি ও তার সন্তুষ্টির উপর, আর যে তা নির্মাণ করেছে ক্ষতিসাধন, কুফরী, মুমিনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি, আর যে ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করেছে তার সীমান্ত ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে। তারা তো কেবল তাদের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করেছে কোনো গর্তের কিনারায়। উদাহরণস্বরূপ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ “আল্লাহ তা‘আলা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কর্মকে সংশোধন করেন না।” জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যে মসজিদটি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল তা থেকে আমি ধোঁয়া নির্গত হতে দেখেছি।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: رِيبَةٗفِي قُلُوبِهِم “সন্দেহ ও কপটতা বশতঃ তাদের অন্তরে।” তাদের এ জঘন্য কর্ম সম্পাদনের কারণে তারা উত্তরাধিকারসূত্রে কপটতা অর্জন করেছে যেভাবে গোবৎসের পূজারীরা গোবৎসপ্রীতির সুধা পান করেছিল। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: إِلَّآ أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمۡۗ অর্থাৎ তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে। যেমন ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদা, যায়েদ ইবন আসলাম, সুদ্দী, হাবীব ইবনে আবী সাবেত, দাহ্হাক, আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম প্রমুখ সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে। عَلِيمٌ “সর্বজ্ঞ” তার সৃষ্টিকুল সম্পর্কে। حَكِيمٌ “প্রজ্ঞাময়” ভালো-মন্দ বিনিময় প্রদানের ক্ষেত্রে।

﴿إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١١﴾ [ التوبة : ١١١ ]

“১১১. নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১১১]

আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের বিনিময়ে মুজাহিদগণের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন:

আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর মুমিন বান্দাদের জান ও মালের বিনিময় প্রদান করেন আর তা হচ্ছে জান্নাত। যখন তারা তা (জান-মাল) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। আর এটা তাঁর অনুগ্রহ, দয়া ও অনুকম্পাস্বরূপ। কারণ তিনি সৎকর্ম গ্রহণ করেন, অথচ সেটার তিনিই মালিক তারপরও তার বিনিময়ে তাঁর ঈমানদার বান্দাদের প্রতি তিনি অনুগ্রহ করেন।

এ কারণে হাসান আল বাসরী, কাতাদা প্রমুখ বলেন: আল্লাহ তাদের সাথে বেচা-কেনা করেছেন তারপরও মূল্যও বেশি করে দিয়েছেন। শামির ইবনু আতিয়্যাহ বলেন: এমন কোনো মুসলিম নেই যার ঘাড়ে ক্রয়বিক্রয়ের কোনো দায়িত্ব নাই, যা সে আল্লাহর নিকট করে। হয় সে তা সম্পাদন করে অথবা সম্পাদন না করেই মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এ কারণে বলা হয়: যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে সে আল্লাহর সাথে ক্রয়বিক্রয় সম্পাদন করেছে অর্থাৎ এই চুক্তি গ্রহণ করেছে আর তা পূর্ণ করেছে।

আল্লাহ ত‘আলার বাণী: فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ চাই সে হত্যা করে অথবা নিহত হয় অথবা হত্যা করে ও নিহত হয়। এ সর্বাবস্থায় তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।

এ কারণে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে: আল্লাহ তা‘আলা তার সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ হন, যে তার রাস্তায় বের হয়। (আল্লাহ বলেন) কেবল আমার রাস্তায় জিহাদ ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাসই তাকে বের করেছে। যদি সে মৃত্যুবরণ করে তবে তো আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা সে যা সাওয়াব লাভ করার তা লাভ করে ও গনিমত সহকারে তার গৃহে ফিরে আসে যেখান থেকে সে বের হয়েছিল।”

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ এ আয়াতাংশ (পূর্বোক্ত জান্নাতের) ওয়াদার তাকীদস্বরূপ আর সংবাদস্বরূপ যে, তিনি তার উপর দয়া অবধারিত করে নিয়েছেন। আর তা তার রাসূলগণের উপর তার বড় বড় কিতাবসমূহে অবতীর্ণ করেছেন। তা হচ্ছে: তাওরাতে যা মুসা আলাইহিস সালাম-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আর ইঞ্জিলে যা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আর আল-কুরআনে যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ হয়েছে।

আর তাঁর বাণী: وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ তিনি তাঁর অঙ্গিকার ভঙ্গ করেন না। এটা ঐ বাণীর মত যাতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ الله حديثا এবং وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ الله قيلا আর এ কারণে তিনি বলেন: فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ অতএব এই চুক্তির দাবি সম্পাদনে যে সচেষ্ট হয় আর তা পূর্ণ করে সে যেন মহা সাফল্য ও চিরস্থায়ী নি‘আমত প্রাপ্তিতে খুশি হয়।

﴿ٱلتَّٰٓئِبُونَ ٱلۡعَٰبِدُونَ ٱلۡحَٰمِدُونَ ٱلسَّٰٓئِحُونَ ٱلرَّٰكِعُونَ ٱلسَّٰجِدُونَ ٱلۡأٓمِرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡحَٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١١٢﴾ [ التوبة : ١١٢ ]

“১১২. তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী। আর মু’মিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১১২]

এটা ঐ সমস্ত মু’মিনদের গুণ, আল্লাহ তা‘আলা যাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। যাদের রয়েছে এ সমস্ত সুন্দর ও সম্মানজনক বৈশিষ্ট্য। যারা التائبون সমস্ত পাপাচার থেকে, সমস্ত অশ্লীল কাজ পরিত্যাগকারী। العابدون যারা তাদের পালনকর্তার ইবাদতকারী, তার সংরক্ষণকারী, আর যাতে রয়েছে কথা ও কাজসমূহ। কথাগুলোর মধ্যে বিশেষ কথা হচ্ছে ‘আল্লাহর প্রশংসা করা’। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন: الحامدون অনুরূপ কর্মসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে ‘সিয়াম’, আর তা হচ্ছে খাদ্যপানীয়ও ও স্ত্রীসম্ভোগের বিনোদন থেকে বিরত থাকা। এখানে এরই অর্থ হচ্ছে السائحون যেমন আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন السائحات “সিয়াম পালনকারিনী।” অনুরূপভাবে রুকু ও সিজদা আর এ দুটো দ্বারা সালাতকে বোঝানো হয়ে থাকে। الراكعون الساجدون এছাড়াও তারা আল্লাহর সৃষ্টির (মানবের) উপকার সাধন করে। তাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি দিক-নির্দেশনা দান করে। তাদের কী করা উচিৎ আর কী বর্জন করা উচিৎ- এ জ্ঞানও তাদের রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে জ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের আল্লাহ প্রদত্ত সীমারেখার সংরক্ষণ। তারা আল্লাহর ইবাদত এবং লোকদের নসিহত করতে সচেষ্ট হয়। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ কেননা ঈমান এসবগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর আল্লাহর প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তাদের জন্য মহা-সাফল্য।

﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ ١١٣ وَمَا كَانَ ٱسۡتِغۡفَارُ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَن مَّوۡعِدَةٖ وَعَدَهَآ إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُۥٓ أَنَّهُۥ عَدُوّٞ لِّلَّهِ تَبَرَّأَ مِنۡهُۚ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ لَأَوَّٰهٌ حَلِيمٞ ١١٤﴾ [ التوبة : ١١٣، ١١٤ ]

“১১৩. কোনো নবী ও মু’মিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী। ১১৪. নিজ পিতার জন্য ইবরাহীমের ক্ষমা প্রার্থনা তো ছিল একটি ওয়াদার কারণে, যে ওয়াদা সে তাকে দিয়েছিল। অতঃপর যখন তার নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নিশ্চয় সে আল্লাহর শত্রু, সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম ছিল অধিক প্রার্থনাকারী ও সহনশীল।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১১৩-১১৪]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন