hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আত-তাওবার তাফসীর

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

১৯
মুহাজির ও আনসার এবং পরম নিষ্ঠার সাথে যারা তাদের অনুসরণ করে তাদের মর্যাদা:
আল্লাহ তা‘আলা এ মর্মে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনসারদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং পরম নিষ্ঠার সাথে তাঁদের যারা অনুসরণ করে তাদের প্রতিও। আর তারাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য নি‘আমত পূর্ণ চিরস্থায়ী জান্নাত তৈরি করেছেন।

শা’বি বলেন: অগ্রবর্তী ও প্রথম সারির মুহাজির ও আনসার তারাই যারা হুদাইবিয়ার বৎসরে বাই‘আতুর রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেছেন।

তবে আবু মুসা আশ‘আরী, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, মুহাম্মাদ ইবনু সীরিন, হাসান ও কাতাদা প্রমুখ বলেন: তাঁরা হচ্ছেন যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে উভয় কিবলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন।

মহান আল্লাহ সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি অগ্রবর্তী ও প্রথম সারির মুহাজির ও আনসার এবং পরম নিষ্ঠার সাথে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা তাদের সাথে শত্রুতা রাখে অথবা তাদেরকে গালি দেয়। বিশেষত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সাহাবাগণের নেতা ও তাঁদের মাঝে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে মর্যাদাবান আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। কারণ নিকৃষ্ট লাঞ্ছিত শিয়া রাফেযীরা এ সর্বোত্তম সাহাবীদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে। তাদেরকে ঘৃণা করে এবং গালি দেয়। (আল্লাহর নিকট আমরা এমন কাজ থেকে আশ্রয় চাই)। এতে প্রমাণিত হয় তাদের জ্ঞান বুদ্ধি বাঁকা ও অন্তরসমূহ উল্টা। কোথায় তাদের কুরআনের প্রতি ঈমান, যখন তারা তাদেরকে গালমন্দ করে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন? আর (আহলে সুন্নাহ) সুন্নাতের অনুসারীগণ তাদের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন যাদের উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাদেরকে তিরস্কার করে যাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তিরস্কার করেছেন, তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে আল্লাহ যার বন্ধু হন। আর তার সাথে শত্রুতা পোষণ করে যার সাথে রয়েছে আল্লাহর শত্রুতা। এরাই প্রকৃত অনুসারী, বিদ‘আতি নয়। এরাই সুন্নাহর আনুগত্য করে আর নিজেরা তা বানিয়ে নেয় না আর এরাই সফলতা অর্জনকারী আল্লাহর দল আর তার বিশ্বাসী বান্দা।

﴿وَمِمَّنۡ حَوۡلَكُم مِّنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مُنَٰفِقُونَۖ وَمِنۡ أَهۡلِ ٱلۡمَدِينَةِ مَرَدُواْ عَلَى ٱلنِّفَاقِ لَا تَعۡلَمُهُمۡۖ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡۚ سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيۡنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٖ ١٠١﴾ [ التوبة : ١٠١ ]

“১০১. আর তোমাদের আশপাশের মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কিছু লোক অতিমাত্রায় মুনাফিকীতে লিপ্ত আছে। তুমি তাদেরকে জান না। আমি তাদেরকে জানি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার আযাব দেব। তারপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে মহা ‘আযাবের দিকে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০১]

মদিনার আশে পাশে রয়েছে মুনাফিক, যার উপর তারা নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে। বলা হয়ে থাকে شيطان مريد “অবাধ্য শয়তান।” বলা হয় تمرد فلان “জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে” অর্থাৎ উদ্ধত হয়েছে। আল্লাহর বাণী لَا تَعۡلَمُهُمۡۖ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡۚ “তুমি তাদেরকে জান না। আমি তাদেরকে জানি” এই আয়াতটি ﴿وَلَوۡ نَشَآءُ لَأَرَيۡنَٰكَهُمۡ فَلَعَرَفۡتَهُم بِسِيمَٰهُمۡۚ ٣٠﴾ ( محمد : ٣٠ ) এ আয়াতকে রহিত করে না। কেননা, এটা তাদের স্বরূপ পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যে, তাদের মাঝে এমন কিছু গুণাগুণ রয়েছে যার দ্বারা তাদেরকে চেনা যায়। এটা নয় যে, রাসূলের নিকট যত কপট ও সংশয়কারী রয়েছে তাদের সকলকেই নির্দিষ্টভাবে তিনি চিনবেন। অবশ্য কিছুসংখ্যক মদীনাবাসীদের তিনি চিনতেন, যারা তাঁর সাথে কপটতা নিয়ে মিশত এবং তিনি তাদেরকে সকাল সন্ধ্যায় দেখতেন। আর এ বিষয়টি ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ১৪ অথবা ১৫ জন মুনাফিক নেতৃবৃন্দের সম্পর্কে অবহিত করেন। আর এই নির্দিষ্টকরণ দাবি রাখে না যে, তিনি তাদের সকলের নাম ও তাদের নেতৃবৃন্দের সম্পর্কে অবগত ছিলেন।

আব্দুর রাযযাক বলেন: মা‘মার কাতাদা থেকে এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: ঐ সম্প্রদায়ের কী হল যারা লোকদের সম্পর্কে জ্ঞানের দাবি করে যে, অমুক জান্নাতে আর অমুক জাহান্নামে; যখন তাদেরকে কাউকে তার নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন সে বলে: আমি জানি না (আমার শেষ পরিণতি কী?) তুমি তোমার নিজের সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি অবগত। তোমরা নিজেদের উপর এমন কিছু বিষয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে নিয়েছ যা ইতোপূর্বে নবীগণও করেন নি।

মুজাহিদ রহ. سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيۡنِ “অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার আযাব দেব” আয়াত সম্পর্কে বলেন: অর্থাৎ হত্যা ও বন্দী। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে-ক্ষুধা ও কবরের আযাব। হাসান বসরী রহ. বলেন, দুনিয়ার শাস্তি ও কবরের শাস্তি। ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٖ “তারপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে মহা ‘আযাবের দিকে।” আব্দুর রহমান ইবনু যায়িদ বলেন: দুনিয়াবি শাস্তি হচ্ছে সন্তান-সন্ততি ও ধনসম্পদ। আর তিনি তিলাওয়াত করলেন: . فَلَا تُعۡجِبۡكَ أَمۡوَٰلُهُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُهُمۡۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا “কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেন তোমার চোখ ধাঁদিয়ে না দেয়, ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চান।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৫৫]

এই বিপদাপদগুলো তাদের (মুনাফিক)-দের জন্য দুনিয়াতে আযাবস্বরূপ আর সেটা মুমিনদের জন্য পুরষ্কার। আর পরকালের শাস্তি (মুনাফিকদের জন্য) হচ্ছে জাহান্নাম। (আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই)। ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٖ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: এ হল জাহান্নাম।

﴿وَءَاخَرُونَ ٱعۡتَرَفُواْ بِذُنُوبِهِمۡ خَلَطُواْ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَءَاخَرَ سَيِّئًا عَسَى ٱللَّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٌ ١٠٢﴾ [ التوبة : ١٠٢ ]

“১০২. আর আরেকদল তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, সৎকর্মের সঙ্গে তারা অসৎকর্মের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা তাওবাহ: ১০২]

অলসতাবশত: যে সকল মু’মিন জিহাদ থেকে পেছনে পড়ে রয়েছে:

ইতোপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, যারা অনাগ্রহ, মিথ্যা সাব্যস্তকরণ ও সন্দেহে জিহাদ থেকে পেছনে পড়ে রয়েছিল। এখন ঐ সমস্ত গোনাহগার মুমিনদের সম্পর্কে আলোচনা শুরু করছেন, যারা মু’মিন এবং সত্যকে সত্য বলে স্বীকৃতি দান সত্ত্বেও নিছক অলসতা ও আরামপ্রিয়তার কারণে জিহাদ থেকে পেছনে পড়ে রয়েছিল।

তারা তাদের গোনাহসমূহ স্বীকার করেছে। আর যা তাদের ও তাদের রবের মাঝে রয়েছে তা মেনে নিয়েছে। অবশ্য তাদের অন্যান্য সৎ আমল রয়েছে এগুলোকে তাদের ঐ সমস্ত গোনাহসমূহে মিশ্রিত করেছে অতএব এরা আল্লাহর ক্ষমা ও মার্জনার অধীনে। যদিও এ আয়াতটি কতিপয় নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে; কিন্তু তা প্রত্যেক গোনাহগার, অপরাধী, যারা তাদের ভালো আমলকে মন্দ আমলের সাথে মিশ্রিত করে ফেলেছে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ইবনু আব্বাস বলেন: وَءَاخَرُونَ আয়াতটি আবু লুবাবা ও একদল সাহাবীর ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়, যারা তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ করে নি। কেউ কেউ বলেন: আবু লুবাবা এবং তার সাথে পাঁচজন। কেউ বলেন: তার সাথে সাতজন। কেউ বলেন: তার সাথে নয় জন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিযান থেকে ফিরে আসলেন। তারা নিজেদেরকে মসজিদের খুঁটির সাথে বাঁধলেন এবং শপথ করলেন যে, একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া তাদেরকে কেউ এখান থেকে মুক্ত করবে না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন وَءَاخَرُونَ ٱعۡتَرَفُواْ بِذُنُوبِهِمۡ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ছেড়ে দিলেন আর তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। ইমাম বুখারী সামুরাহ ইবন জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: গত রাত্রিতে দু’জন আগন্তুক আমার নিকট আগমন করে আর আমাকে এমন একটি নগরীতে নিয়ে যায়, যা এমনভাবে নির্মিত যে, যার একটি ইট স্বর্ণের এবং আরেকটি ইট রৌপ্যের। অতঃপর আমাদের সাথে এমন একদল লোকের দেখা হল যাদের (দেহের) এক অংশ এত সুন্দর যে, এমন সুন্দর তুমি কখনই অবলোকন কর নি আর অপর অংশ এত কুৎসিত যে, এমন কুৎসিত তুমি কখনই দেখ নি। তারা দু’জন বললেন: তোমরা যাও এবং ঐ দরিয়ায় ডুব দাও। তারা তাতে ডুব দিল, অতঃপর আমাদের নিকট ফিরে এলো আর তাদের থেকে সেই কুৎসিত রূপ দূর হয়ে গেল। এরপর তারা সুন্দর আকৃতিবিশিষ্ট হয়ে গেল। তারা দু’জন বলল: এটা হচ্ছে জান্নাতে ‘আদন আর এটা আপনার বাসস্থান। তারা বলল: আর এরা যাদের অর্ধাঙ্গ সুন্দর আর অর্ধাঙ্গ কুৎসিত এরা ওরাই যারা তাদের সৎকর্মকে মন্দ কর্মের সাথে মিশ্রিত করেছিল। আল্লাহ তাদের দোষসমূহ উপেক্ষা করেছেন। এভাবে বুখারী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এভাবে বর্ণনা করেছেন।

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣ أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [ التوبة : ١٠٣، ١٠٤ ]

“১০৩.তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দো’আ কর, নিশ্চয় তোমার দো’আ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ১০৪. তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সদকা গ্রহণ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৩-১০৪]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি মুসলিমগণের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করবেন, যার দ্বারা তাদেরকে পবিত্র করবেন। এ আয়াতটি সাধারণভাবে অবতীর্ণ হয়েছে যদিও কেউ কেউ أموالهم এর هم কে তাদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করেছে, যারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, যারা তাদের সৎ আমলের সাথে মন্দ কর্মসমূহকে মিশ্রিত করেছে। এ কারণে আরবের কতিপয় গোত্র যারা যাকাত প্রদানে বিরত ছিল তাদের বিশ্বাস যে, ইমামের নিকট যাকাত প্রদানের বিধান এখন আর নেই; বরং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এ কারণে তারা خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ এ আয়াত দ্বারা দলিল দিয়ে থাকে। আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও সকল সাহাবিগণ তাদের এই ভুল ব্যাখ্যা ও অনুধাবন প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন অবশেষে তারা খলীফার নিকট যাকাত প্রদান করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিত। এমনকি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর শপথ, তারা যদি আমাকে একটি রশিও দিতে অস্বীকার করে যা তারা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিত, তাহলে তাদের এই যাকাত প্রদান না করার কারণে অবশ্যই আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব।

وصل عليه “তাদের জন্য দু’আ করুন আর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” যেমন ইমাম মুসলিম তার ‘সহীহ মুসলিমে’ আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যখন কোনো গোত্রের সদকা নিয়ে আসা হত তখন তিনি তাদের জন্য দো’আ করতেন। আমার পিতা তার নিকট তার সদকা নিয়ে আসলেন ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘হে আল্লাহ! আপনি আবু আউফার উপর রহমত বর্ষণ করুন।’ আল্লাহর বাণী إن صلاتك অপর এক কিরাআতে রয়েছে صلواتك বহুবচনরূপে। অন্যান্যরা পড়েছেন إن صلوتك একবচনরূপে। إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ ইবনে আব্বাস বলেন: “তাদের জন্য রহমতস্বরূপ।” আল্লাহ তা‘আলার বাণী وَٱللَّهُ سَمِيعٌ অর্থাৎ আপনার দো’আর জন্য অত্যাধিক শ্রবণকারী عَلِيمٌ অর্থাৎ যে আপনার দো’আ পাওয়ার অধিকারী তার সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ “তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সদকা গ্রহণ করেন।” এটা তাদেরকে তাওবা ও সদকার প্রতি প্রেরণা দানস্বরূপ বলা হয়েছে যে, এ দুটো (তাওবা ও সদকা) গোনাহকে মিটিয়ে দেয় আর তা নিশ্চিহ্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি তাঁর নিকট তাওবা করে তিনি তার তাওবা কবুল করেন। আর যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে দান-সদকা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার ডান হাত দ্বারা তা কবুল করে থাকেন অতঃপর সেটা সেই সদকাকারীর জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন। অবশেষে তা থেকে একটি খেজুর সদৃশ জিনিস উহুদ পাহাড় পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। যেমন এ সম্পর্কে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস এসেছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সদকা কবুল করেন আর তা তিনি তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন অতঃপর সেটা তোমাদের কারও জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন যেমন ভাবে তোমাদের কেউ তার অশ্বসাবককে লালন পালন করে। অবশেষে সামান্য একটি লোকমা ওহুদ পাহাড় পরিমাণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এ বিষয়টির প্রমাণস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ “তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সদাকা গ্রহণ করেন।” আর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় সদকা তার যাচ্ঞাকারীর নিকট পৌঁছার পূর্বে আল্লাহর নিকট পৌঁছে থাকে। এরপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন।

﴿وَقُلِ ٱعۡمَلُواْ فَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُولُهُۥ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۖ وَسَتُرَدُّونَ إِلَىٰ عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ١٠٥ ﴾ [ التوبة : ١٠٥ ]

“১০৫. আর বল, তোমরা আমল কর। অতএব, অচিরেই আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণও। আর অচিরেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর নিকট। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জানাবেন যা তোমরা আমল করতে সে সম্পর্কে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৫]

পাপিষ্ঠদের প্রতি হুমকি:

মুজাহিদ বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচারীদের প্রতি ভীতিপ্রদর্শনস্বরূপ বলা হচ্ছে যে, অবশ্যই তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণের নিকট উত্থাপিত হবে। কিয়ামতের দিন এটা অবশ্যই হবে। যেমন তিনি বলেন: ﴿يَوۡمَئِذٖ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٞ ١٨﴾ [ الحاقة : ١٨ ] তিনি আরও বলেন: ﴿يَوۡمَ تُبۡلَى ٱلسَّرَآئِرُ ٩﴾ [ الطارق : ٩ ] তিনি আরও বলেন: ﴿وَحُصِّلَ مَا فِي ٱلصُّدُورِ ١٠﴾ [ العاديات : ١٠ ] আর সেটা আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে লোকদের জন্য তা প্রকাশ করে দিবেন।

ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: কোনো ব্যক্তির সৎ আমল যদি তোমাকে চমৎকৃত করে তবে তুমি বল: وَقُلِ ٱعۡمَلُواْ فَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُولُهُۥ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ হাদিস শরীফে এরূপ একটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম আহমাদ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের উপর এমনটি নয় যে, তোমরা কারো (আমলের) দ্বারা আশ্চর্যান্বিত হবে না, তবে সে যেন দেখে নেয় কিসের দ্বারা ঐ ব্যক্তির (আমল) শেষ হচ্ছে। কেননা ঐ ব্যক্তি তার জীবনের কোনো এক সময়ে সৎ ‘আমল করতে থাকে। যদি সে এরই উপর মৃত্যুবরণ করে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; কিন্তু কখনও তার পরিবর্তন ঘটে যায় ফলে মন্দ-কর্ম করতে থাকে।

অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের কোনো এক সময় অসৎ আমল করতে থাকে যদি সে এরই উপর মৃত্যুবরণ করে তবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আবার দেখা যায় তার পরিবর্তন ঘটে ফলে সৎকর্ম করতে থাকে। যখন আল্লাহ তা‘আলা তার কোনো বান্দার কল্যাণ চান তার মৃত্যুর পূর্বে সে অনুযায়ী তার দ্বারা আমল করিয়ে নেন। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে তার দ্বারা আমল করিয়ে নেন। তিনি বললেন: তাকে সৎকর্ম করার সামর্থ্য দান করেন। অতঃপর এরই উপর তার মৃত্যু ঘটান। এ হাদিসটি শুধুমাত্র ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন।

﴿وَءَاخَرُونَ مُرۡجَوۡنَ لِأَمۡرِ ٱللَّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمۡ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيۡهِمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ١٠٦﴾ [ التوبة : ١٠٦ ]

“১০৬. আর আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় অপর কিছু লোকের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া হলো। তিনি তাদেরকে ‘আযাব দেবেন নয়তো তাদের তাওবা কবূল করবেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৬]

তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা তিন সাহাবীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করা:

ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, ইকরিমা, যাহ্হাক প্রমুখ থেকে বর্ণিত: ওরা তিন ব্যক্তি যারা বিলম্বে তাওবাহ করেছে। তারা হচ্ছে মুরারা ইবনু রবী‘, কা‘ব ইবনু মালেক এবং হিলাল ইবনু উমাইয়া। তারা তাবুক যুদ্ধে গমন করা থেকে ঐ সমস্ত লোকদের সাথে বসে ছিল যারা নিছক অলসতা, জানের হিফাযাত, উৎকৃষ্ট ফলফুল লাভ, গোমরাহি ও আরাম আয়েশের টানে তাবুক যুদ্ধে গমন করা থেকে বসে রয়েছিল। দীনের প্রতি সন্দেহ ও কপটতার কারণে নয়। তাদের মাঝে একটি দল ছিল যারা নিজেদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধেছিল। যেমন আবু লুবাবা ও তাঁর সাথিরা। অপর একটি দল যারা তা করে নি। আর তারা হচ্ছে উল্লিখিত তিন ব্যক্তি। এদের পূর্বে আবু লুবাবা ও তাঁর সাথিদের তাওবার ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়। ﴿لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ﴾ ( التوبة : ١١٧ ) অবশেষে অবতীর্ণ হয় ﴿وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ﴾ [ التوبة : ١١٨ ] -যার বর্ণনা অচিরেই কা‘ব ইবনে মালেকের হাদিসে আলোচনা করা হবে। আর আল্লাহর বাণী إِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَإِمَّا يَتُوبَ عَلَيْهِمْ তারা আল্লাহর ক্ষমার অধীন, চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে এরূপ এরূপ আচরণ করবেন আর চাইলে এরূপ এরূপ আচরণ করবেন। তবে আল্লাহ তা‘আলার রহমত তার ক্রোধের উপর বিজয়ী। وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ “কে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত আর কে ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সম্যক অবগত। প্রজ্ঞাময় তিনি তার কথা ও কর্মসমূহে।” তিনি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তিনি ছাড়া কোনো রব নেই।

﴿وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مَسۡجِدٗا ضِرَارٗا وَكُفۡرٗا وَتَفۡرِيقَۢا بَيۡنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَإِرۡصَادٗا لِّمَنۡ حَارَبَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ مِن قَبۡلُۚ وَلَيَحۡلِفُنَّ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّا ٱلۡحُسۡنَىٰۖ وَٱللَّهُ يَشۡهَدُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ ١٠٧ لَا تَقُمۡ فِيهِ أَبَدٗاۚ لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ ١٠٨﴾ [ التوبة : ١٠٧، ١٠٨ ]

“১০৭. আর যারা মসজিদ বানিয়েছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে। আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, ‘আমরা কেবল ভালো চেয়েছি’। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। ১০৮. তুমি সেখানে কখনো (সালাত কায়েম করতে) দাঁড়িও না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৭-১০৮]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন