মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুনাফিক কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হত্যার পরিকল্পনা:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/344/18
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَهَمُّواْ بِمَا لَمۡ يَنَالُواْ “তারা ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু তাতে সফল হয় নি” বলা হয়: এই আয়াতটি জুলাস ইবনু সুওয়াইদ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। কেননা সে তার স্ত্রীর পুত্র (তার পালকপুত্র)-কে হত্যার পরিকল্পনা করে যখন সে বলে: আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (এ কথা) জানিয়ে দিব। কেউ বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুলের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হত্যার পরিকল্পনা করে। সুদ্দী বলেন: এমন কতিপয় লোক সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় যারা আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করে। যদিও তাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত নেই। বর্ণিত হয়েছে, কতিপয় মুনাফিক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হত্যার পরিকল্পনা করে আর সেটা তাবুকের যুদ্ধে তাঁর যাত্রাকালিন সময়ের কোনো এক রাত্রিতে। তারা ছিল সংখ্যায় দশের কিছু বেশি। দাহ্হাক বলেন: তাদের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়: বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে দালাইলুন নুবুওয়াহ গ্রন্থে। যাতে হাফিয আবু বকর আল-বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন, হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটনীর লাগাম টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলাম আর আম্মার ইবনু ইয়াসার সেটাকে হাঁকাচ্ছিলেন অথবা আমি উটনীকে হাঁকাচ্ছিলাম আর আম্মার তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে আমরা যখন আক্বাবায় আগমন করি তখন দেখি বারোজন সওয়ারী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ রোধ করেছে। যখন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সতর্ক করি তখন তিনি তাদের প্রতি চিৎকার করলে তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেন: তোমরা কি ওদেরকে চিনতে পেরেছ? আমরা বলি: না (চিনতে পারি নি) ইয়া রাসূলাল্লাহ, তারা মুখ ঢেকে ছিল, তবে আমরা তাদের ঘোড়াগুলো চিনতে পেরেছি। তিনি বলেন: তারা কিয়ামত পর্যন্ত একদল মুনাফিক, তোমরা কি জান তারা কী চেয়েছিল? আমরা বলি: না (জানি না), তিনি বলেন: তারা আক্বাবাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিশে গিয়ে সেখান থেকে তাকে (উপত্যকার দিকে) নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল। আমরা বলি: আপনি কি তাদের গোত্রগুলোকে এ মর্মে সংবাদ পাঠাবেন না তারা যেন প্রত্যেক গোত্র প্রধানকে আপনার নিকট প্রেরণ করে? তিনি বলেন: না, (পাঠাব না) আমি এটা অপছন্দ করি যে, আরবরা বলাবলি করুক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে যুদ্ধে ব্যবহার করেন এরপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদের সাহায্যের মাধ্যমে তাঁকে বিজয় দান করেন এরপর তিনি তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি বলেন: হে আল্লাহ, তাদের প্রতি আপনি দুবাইলাহ প্রেরণ করুন, আমরা বলি: হে আল্লাহর রাসূল, দুবাইলাহ কী? তিনি বলেন: আগুনের উল্কা যা তাদের কারও অন্তরে নিক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়।
হাদিস বর্ণনা করেছেন আমাদেরকে আবুত তুফাইল (তিনি বলেন), আক্বাবার জনৈক ব্যক্তি এবং হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাঝে তর্ক-বিতর্ক হয়। যেমন লোকদের মধ্যে হয়ে থাকে, তিনি বলেন: আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আক্বাবার অধিবাসীদের সংখ্যা কত ছিল? বর্ণনাকারী বলেন: লোকেরা তাকে বলে: তাকে বল যখন সে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, হুযাইফা বলেন: আমাদেরকে বলা হয়েছিল তারা ছিল চৌদ্দ জন। আর যদি তুমি তাদের মধ্যে থেকে থাক তবে তাদের সংখ্যা পনের জন। আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি তাদের মধ্যে বার ব্যক্তি দুনিয়ায় এবং যেদিন সাক্ষীদেরকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সম্মুখে আনা হবে সেদিন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের মধ্যেকার তিন ব্যক্তি ওযর গ্রহণ করা হয়। কেননা তারা বলে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যক্তিকে কিছু ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন আমরা তাঁর কথা শুনি নি আর আমরা ওদের চক্রান্ত সম্পর্কেও অবগত ছিলাম না। কেননা তিনি কঙ্করময় স্থান দিয়ে চলছিলেন আর বলছিলেন: পানির পরিমাণ কম, কাজেই কেও যেন আমার পূর্বে সেখানে না পৌঁছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও কতিপয় ব্যক্তিকে দেখেন সেখানে আগেই গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। ফলে তিনি সেদিন তাদেরকে অভিশাপ দেন।
ইমাম মুসলিম আরও বর্ণনা করেন, আম্মার ইবনু ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে বলেন: তিনি বলেছেন: আমার সাহাবীগণের মাঝে বারোজন মুনাফিক হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা এর সুবাসও পাবে না যতক্ষণ না সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে আট ব্যক্তি দুবাইলাহর দ্বারা মারা যাবে, (সেটা হচ্ছে) আগুনের উল্কা যা তাদের কাঁধের মাঝে প্রকাশ পাবে আর তাদের বক্ষদেশকে ছিদ্র করে ফেলবে। এ কারণে হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রহস্যের ধারক বলা হয়ে থাকে যা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না। অর্থাৎ তিনি জানেন যে, সে সমস্ত মুনাফিক কারা ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পরিচয় সম্পর্কে শুধুমাত্র তাঁকেই বলেছিলেন অন্য কাউকে নয়। আল্লাহ ভালো জানেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَمَا نَقَمُوٓاْ إِلَّآ أَنۡ أَغۡنَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ مِن فَضۡلِهِۦ “তাদের এ প্রতিশোধ স্পৃহার কারণ এছাড়া আর কিছু ছিল না যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল করুণাবশতঃ তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছেন।” রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় করেন নি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বরকত এবং সৌভাগ্যের দ্বারা তাদেরকে সম্পদশালী করেছেন। তাদের উপরে যদি সৌভাগ্য পূর্ণতা লাভ করত তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি হিদায়েত করতেন। যেমন তিনি আনসারবৃন্দকে বলেন: আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাই নি? এরপর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে আমার দ্বারা হিদায়েত করেছেন। তোমরা দলে দলে বিভক্ত ছিলে এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা তোমাদেরকে একত্রিত করেছেন, তোমরা ছিলে দরিদ্র। আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা তোমাদেরকে ধনী করেছেন। যখনই তিনি কিছু বলেন তাঁরা বলে: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অনুগ্রহ করেছেন। এভাবে বলা হয়েছে যখন সেখানে কোনো অন্যায় হয় নি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَمَا نَقَمُواْ مِنۡهُمۡ إِلَّآ أَن يُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ ٨﴾ ( البروج : ٨ ) “তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল একমাত্র এই কারণে যে, তারা মহা-পরাক্রান্ত প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।” [সূরা আল-বুরূজ: ৮]
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাওবাহ করার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন: فَإِن يَتُوبُواْ يَكُ خَيۡرٗا لَّهُمۡۖ وَإِن يَتَوَلَّوۡاْ يُعَذِّبۡهُمُ ٱللَّهُ عَذَابًا أَلِيمٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ “এখন যদি তারা অনুশোচনাভরে এ পথ থেকে ফিরে আসে তবে তা তাদের জন্যই কল্যাণকর। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন” অর্থাৎ যদি তারা তাদের পন্থার উপরে নিরবচ্ছিন্ন থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন অর্থাৎ হয় তারা নিহত হবে নয়ত দুশ্চিন্তায় পড়বে আর পরকালে: তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি, আযাব, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা।
ۚ وَمَا لَهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِير “পৃথিবীতে রক্ষক আর সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে তারা পাবে না” অর্থাৎ যে তাদেরকে খুশি করবে, তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের কোনো উপকার করতে পারবে না আর তাদের থেকে কোনো ক্ষতি দুর করতে পারবে না।
“৭৫. তাদের মধ্যেকার কিছু লোক আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করেছিল, ‘যদি তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ হতে দান করেন তবে আমরা অবশ্যই দান করব আর অবশ্যই সৎ লোকদের মধ্যে শামিল থাকব।’ ৭৬. অতঃপর আল্লাহ যখন তাদেরকে স্বীয় করুণার দানে ধন্য করলেন, তখন তারা দান করার ব্যাপারে কার্পণ্য করল আর বে-পরোয়া ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল। ৭৭. পরিণামে তিনি আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত ওয়া‘দা ভঙ্গের কারণে এবং মিথ্যাচারে লিপ্ত থাকার কারণে তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন; ঐ দিন পর্যন্ত যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে। ৭৮. তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাদের গোপন কথাবার্তা আর গোপন পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত আছেন আর আল্লাহ তো যাবতীয় গায়েব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত আছেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭৫-৭৮]
মুনাফিকদের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে তারা সম্পদ চায় কিন্তু দান করার সময় কৃপণতা করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মুনাফিকদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে অঙ্গিকার দিয়েছে যে, যদি তিনি অনুগ্রহ করে তাকে ধনী করে দেন তবে সে তার সম্পদ থেকে দান করবে, আর সে সৎকর্মশীল হয়ে যাবে; কিন্তু সে তার অঙ্গিকার পূর্ণ করে নি আর সে যে দাবি করেছিল তাতে সত্যবাদীর পরিচয় দেয় নি। ফলে তাদের এমন কর্মের পরিণামে তাদের অন্তরে মুনাফিকিই বদ্ধমূল করে দিলেন আর তা সে দিন পর্যন্ত যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে কিয়ামত দিবসে, (আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার এ থেকে আশ্রয় চাই)।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: بِمَا أَخْلَفُوا اللَّهَ مَا وَعَدُوهُ “তিনি আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত ওয়া‘আদা ভঙ্গের কারণে” অর্থাৎ তাদের অঙ্গিকার ভঙ্গ এবং মিথ্যাচারের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে কপটতাকে বদ্ধমূল করে দেন। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুনাফিকের নিদর্শন হচ্ছে তিনটি: যদি সে কথা বলে তবে মিথ্যা বলে, যদি সে অঙ্গিকার করে, তবে তা ভঙ্গ করে, আর যদি তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তা আত্মসাৎ করে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ سِرَّهُمۡ وَنَجۡوَىٰهُمۡ “তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাদের গোপন কথাবার্তা আর গোপন পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত আছেন।”
আল্লাহ তা‘আলা অবহিত করেন যে, তিনি গোপন এবং তারও চেয়ে বেশি লুকানো বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনি তাও জানেন যা তারা তাদের অন্তরসমূহে লুকিয়ে রাখে, যদিও তারা প্রকাশ করে যে, তারা যদি সম্পদ অর্জন করে তবে তারা সেখান থেকে সদকা করবে আর এ জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করবে; কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিজেদের থেকে তাদের সম্পর্কে অবগত আছেন, কেননা আল্লাহ তা‘আলা গায়েবের সব কিছু সম্পর্কে জানেন অর্থাৎ তিনি প্রতিটি গোপন এবং দৃশ্যমান সম্পর্কে জানেন আরও অবগত আছেন গোপন কথাবার্তা ও গোপন পরামর্শ সম্পর্কে এবং প্রতিটি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে।
“৭৯. মু’মিনদের মধ্যে যারা মুক্ত হস্তে দান করে, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে আর সীমাহীন কষ্টে দানকারীদেরকে যারা বিদ্রূপ করে আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন আর তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭৯]
মুনাফিকদের অন্যমত নিদর্শন হচ্ছে, তারা মুক্ত হস্তে দানকারীদের দোষারোপ করে এবং সামান্য সম্পদের অধিকারীদের সাথে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে:
মুনাফিকদের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, তারা সর্বাবস্থায় কারও দোষত্রুটি ধরতে ছাড়ে না, এমন দানকারীরাও তাদের সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়। তাদের কেউ যদি অঢেল সম্পদও নিয়ে আগমন করে তবু তার সম্পর্কে মুনাফিকরা বলে: সে তো লোক দেখানোর জন্য দান করছে আর যদি সামান্য সম্পদ নিয়ে (দানকারী) উপস্থিত হয় তবে তারা তাকে বলে: আল্লাহ তা‘আলা তোমার এই সামান্য সম্পদের মুখাপেক্ষী নন। যেমন ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, (তিনি বলেন) হাদিস বর্ণনা করেছেন আমাদের নিকট আবুন নু‘মান আল বাসারী, (তিনি বলেন) হাদিস বর্ণনা করেছেন, আমাদের নিকট শু‘বা (তিনি) সুলাইমান থেকে (তিনি) আবু ওয়াইল থেকে, (তিনি) আবু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি বলেন: দান-সদকা করার আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় এ সময় আমরা কুলির কাজ করতাম। এক ব্যক্তি এসে অনেক দান-সদকা করে। ফলে তারা (মুনাফিকরা) বলেন: লোক দেখানো আরেক ব্যক্তি এসে এক সা পরিমাণ দান করলে তারা বলতে থাকে: আল্লাহ তা‘আলা তোমার এই সামান্য সম্পদের মুখাপেক্ষী নন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়: يَلۡمِزُونَ ٱلۡمُطَّوِّعِينَ “যারা মুক্ত হস্তে দানকারীদের দোষারোপ করে” ইমাম মুসলিমও তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
আউফী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন লোকদের মাঝে বের হয়ে এসে তাদেরকে দান-সদকা জমা করার নির্দেশ দেন। ফলে লোকেরা যার যার সদকা এনে জমা করে। সর্বশেষে এক ব্যক্তি এক সা পরিমাণ খেজুর নিয়ে হাযির হয়ে বলে: হে আল্লাহর রাসূল, এই হচ্ছে এক সা খেজুর, আমি গতরাতে পানি আনার কাজ করে দুই সা খেজুর উপার্জন করেছি, আমি এক সা রেখে দিয়েছি আর আরেক সা আপনার নিকট নিয়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকেও যাকাতের সাথে যুক্ত করার নির্দেশ দেন। কতিপয় ব্যক্তি সেই লোকটিকে ঠাট্টা করতে শুরু করে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার এ দানের মুখাপেক্ষী নন, তোমার এই সা লোকদের কী উপকারে আসবে? এরপর আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন: সদকা করতে আর কেউ বাকি আছে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি ছাড়া আর কেউ বাকি নেই। তখন আব্দুর রহমান ইবনু আউফ তাঁকে বলেন: আমি দান বাবদ একশত উকিয়া স্বর্ণ প্রদান করছি। তখন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: তুমি কি বাতিকগ্রস্ত (অত্যুৎসাহী)? তিনি বলেন: আমি বাতিকগ্রস্ত নই। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: তুমি যা দিতে চেয়েছে তাই কি প্রদান করবে? তিনি বলেন: হাঁ, আমার নিকট আশি হাজার দিরহাম রয়েছে, তন্মধ্যে চল্লিশ হাজার দিরহাম আমি আমার রবকে ঋণ বাবদ দিচ্ছি, আর চল্লিশ হাজার আমার নিজের জন্য রেখে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি যা রেখে দিয়েছ তাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বরকত দিন আর যা তুমি প্রদান করেছ তাতেও তোমাকে বরকত দান করুন। তখন মুনাফিকরা কুৎসা রটিয়ে বলতে শুরু করে: আব্দুর রহমান লোক দেখানো ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে দান করে নি; কিন্তু এ সব মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। আব্দুর রহমান স্বেচ্ছায় দান করেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এবং তাঁর সঙ্গি দরিদ্র ব্যক্তির নির্দোষ-নির্মলতা সাব্যস্ত করে আয়াত অবতীর্ণ করেন ٱلَّذِينَ يَلۡمِزُونَ ٱلۡمُطَّوِّعِينَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ “মু’মিনদের মধ্যে যারা মুক্ত হস্তে দান করে, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে” এভাবে মুজাহিদ এবং একাধিক ব্যক্তি থেকে এরূপ বর্ণিত হয়েছে।
ইবনু ইসহাক বলেন: মু’মিনদের মধ্যে যারা মুক্ত হস্তে দান করে তাদের মধ্যে রয়েছে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ, তিনি চার হাজার দিরহাম দান করেন, আর বানূ ‘আজলানের ‘আসিম ইবনু আদী। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান করতে উদ্বুদ্ধ করেন আর তা দিতে বলেন ফলে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ উঠে দাঁড়িয়ে চার হাজার দিরহাম দান করেন, ‘আসিম ইবনু ‘আদী দাঁড়িয়ে একশত ওয়াসাক খেজুর দান করেন, ফলে (মুনাফিকরা) তাঁদের দু’জনের কুৎসা রটাতে থাকে আর বলে: এটা রিয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই নয়, আর যে ব্যক্তি তাঁর সামর্থ্যানুযায়ী সামান্য পরিমাণ দান করে তার নাম আবু আক্বীল। সে আমর ইবনু আউফ গোত্রের মিত্র আনীফ আল-আরাশ গোত্রের লোক। সে এক সা পরিমাণ খেজুর নিয়ে আসে আর তা সদকা মধ্যে যুক্ত করে, তারা (মুনাফিকরা) তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করে আর বলে: আল্লাহ তা‘আলা আবু আক্বীলের সদকা থেকে অমুখাপেক্ষী।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَيَسۡخَرُونَ مِنۡهُمۡ سَخِرَ ٱللَّهُ “যারা বিদ্রূপ করে আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন” তাদের এই মন্দ কর্ম এবং মুমিনগণের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পরিবর্তে তাদেরকে তিরস্কার করেন। কেননা যেমন কর্ম তেমন ফল, ফলে দুনিয়াতে মুমিনগণকে সাহায্য করার জন্য মুমিনগণ নিয়ে যারা ঠাট্টা করে তাদের প্রতি তিনিও অনুরূপ করেন। আল্লাহ তা‘আলা পরকালে মুনাফিকদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। কেননা যেমন কর্ম ফল ঠিক সেই অনুযায়ী।
“৮০. তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর (উভয়ই সমান), তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফুরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮০]
মুনাফিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা:
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে অবহিত করেন যে, এ সমস্ত মুনাফিক এর যোগ্য নয় যে, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে, যদিও তুমি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা চাও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। বলা হয়েছে: তাদের জন্য ক্ষমার দরজা বন্ধ করে দিতে সত্তর বারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আরবরা তাদের কথার পদ্ধতিতে কোনো কিছু বাড়িয়ে বলার ক্ষেত্রে সত্তর (সংখ্যাটি) ব্যবহার করত। তারা নির্দিষ্ট করে সত্তরেই সীমাবদ্ধ রাখত না আবার সত্তরের বেশিও বুঝাত না।
কেউ কেউ বলেন: এর নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে, যেমন শা‘বী তা বলেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই যখন মারা যায় তখন তার পুত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে বলে: আমার পিতা মারা গেছে, আমি পছন্দ করি যে, আপনি তার নিকট উপস্থিত হোন আর তার জানাযার সালাত আদায় করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: ‘তোমার নাম কী’ সে বলে: আল-হুবাব ইবনু আব্দুল্লাহ, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: বরং তুমি হচ্ছ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ, কেননা আল-হুবাব হচ্ছে শয়তানের নাম। তিনি তার সাথে গিয়ে আব্দুল্লাহর জানাযায় উপস্থিত হন আর কাফন হিসেবে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি জামা পরিধান করান আর তার জানাযার সালাত পড়ান। তখন তাঁকে বলা হয়: আপনি কি এর জানাযা পড়বেন (অথচ এ হচ্ছে মুনাফিক) ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ “তুমি তাদের জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও” আমি তার জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করব। আরও সত্তরবার আরও সত্তর বার। এভাবে উরওয়া ইবনু জুবাইর, মুজাহিদ, কাতাদা ইবনু দি‘আমাহ থেকে এটা বর্ণিত হয়েছে, ইবনু জারীর এর সনদ সহ এই হাদিস বর্ণনা করেন।
“৮১. (তাবুক অভিযানে) যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল তারা রাসূলের বিরোধিতায় বসে থাকাতেই আনন্দ প্রকাশ করেছিল আর তাদের ধন-সম্পদ ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে তারা অপছন্দ করেছিল। তারা বলেছিল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বেরিও না।’ বল, ‘জাহান্নামের আগুনই তাপে প্রচণ্ডতম।’ যদি তারা বুঝত! ৮২. তারা যেন কম হাসে এবং বেশি কাঁদে, তারা যে (পাপ) কামাই করছে তার ফলস্বরূপ।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮১-৮২]
যুদ্ধ থেকে পেছনে থেকে যাওয়ায় মুনাফিকদের আনন্দ:
তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ থেকে যে সমস্ত মুনাফিকরা পেছনে পড়ে রয়েছিল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যুদ্ধের জন্য) বেরিয়ে যাবার পরও যারা বসে থাকতেই পছন্দ করেছিল, আল্লাহ তা‘আলা তাদের তিরস্কার করে বলেন, وَكَرِهُوٓاْ أَن يُجَٰهِدُواْ “আর জিহাদ করতে তারা অপছন্দ করেছিল” তাঁর সাথে, بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَقَالُواْ “তাদের ধন-সম্পদ ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে আর তারা বলেছিল” অর্থাৎ, পরস্পর পরস্পরকে لَا تَنفِرُواْ فِي ٱلۡحَرِّۗ “গরমের মধ্যে অভিযানে বেরিও না।” কেননা তাবুক যুদ্ধে বের হওয়াটা ছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্যে যখন মদীনায় ছায়া (অন্য সময়ের তুলনায়) ছিল ভালো এবং ফলফলাদি পেকেছিল। এ কারণে তারা বলে: لَا تَنفِرُواْ فِي ٱلۡحَرِّۗ “গরমের মধ্যে অভিযানে বেরিও না।”
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেন: قُلۡ “বল” তাদেরকে نَارُ جَهَنَّمَ “জাহান্নামের আগুনই” তোমাদের বিরোধিতার কারণে যেটা হবে তোমাদের ঠিকানা, أَشَدُّ حَرّٗاۚ “তাপে প্রচণ্ডতম” যে গরম থেকে তোমরা পালিয়েছ; বরং সেটা দুনিয়ার আগুনের চেয়েও বেশি উত্তপ্ত হবে। যেমন ইমাম আহমাদ আবুয যিনাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘আরাজ থেকে (তিনি) আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মানুষের (ব্যবহৃত) আগুন যা তোমরা জ্বালিয়ে থাক সেটা জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন: এই আগুনই তো যথেষ্ট। তিনি বলেন: জাহান্নামের আগুনকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম তাঁদের ‘সহীহ’ গ্রন্থদ্বয়ে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। ‘আমাশ বর্ণনা করেন, আবু ইসহাক নু‘মান ইবনু বাশীর থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামত দিবসে সবচেয়ে হালকা শাস্তি দেওয়া হবে ঐ ব্যক্তিকে যাকে জাহান্নামের আগুনের দু‘টি জুতা পরিয়ে দেওয়া হবে। এতে তার মগজ টগবগ করে ফুটবে যেভাবে হাড়ি টগবগ করে। সে ভাববে তার চাইতে আর কাউকে এর চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সেই সবচেয়ে হালকা শাস্তির অধিকারী।” বুখারী ও মুসলিম তাঁদের ‘সহীহ’ গ্রন্থদ্বয়ে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে বহু আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্মানিত গ্রন্থে বর্ণনা করেন: ﴿كَلَّآۖ إِنَّهَا لَظَىٰ ١٥ نَزَّاعَةٗ لِّلشَّوَىٰ ١٦﴾ [ المعارج : ١٥، ١٦ ] “না, কখনো নয়, ওটা জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, যা চামড়া তুলে দিবে।” (সুরা আল-মা‘আরিজ: ১৫-১৬) অন্যত্র তিনি বলেন:
“এরা বিবাদের দু’টি পক্ষ, (মু’মিনরা একটি পক্ষ আর সমস্ত কাফিররা আরেকটি পক্ষ) এরা এদের রব সম্বন্ধে বাদানুবাদ করে। অতঃপর যারা (তাদের রবকে) অস্বীকার করে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের পেটে যা আছে তা ও তাদের চামড়া গলিয়ে দেওয়া হবে। উপরন্তু তাদের (শাস্তির) জন্য থাকবে লোহার মুগুর। যখনই তারা যন্ত্রণার চোটে তাত্থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে (তখনই) তাদেরকে তার ভিতরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে (আর বলা হবে, আগুনে) পোড়ার শাস্তি আস্বাদন কর।” [সূরা আল-হজ: ১৯-২২]
অনুরূপ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَِٔايَٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِيهِمۡ نَارٗا كُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُودُهُم بَدَّلۡنَٰهُمۡ جُلُودًا غَيۡرَهَا لِيَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَۗ ٥٦﴾ [ النساء : ٥٦ ] “যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করব। যখন তাদের গায়ের চামড়া দগ্ধ হবে, আমি সেই চামড়াকে নতুন চামড়া দ্বারা বদলে দেব যেন তারা (শাস্তির পর) শাস্তি ভোগ করে।” [সূরা আন-নিসা: ৫৬]
সেরূপ আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে বলেন: قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرّٗاۚ لَّوۡ كَانُواْ يَفۡقَهُونَ “বল, ‘জাহান্নামের আগুনই তাপে প্রচণ্ডতম’। যদি তারা বুঝত।” অর্থাৎ যদি তাদের জ্ঞান থাকত এবং তারা অনুধাবন করত, তবে অবশ্যই তারা গরমের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হত এবং জাহান্নামের উত্তাপ থেকে বাঁচত, যার উত্তাপ বহুগুণ বেশি।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ সকল মুনাফিকদের কর্মকাণ্ডের উপরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন: فَلۡيَضۡحَكُواْ قَلِيلٗا “তারা যেন কম হাসে।” ইবনু আবু তালহা বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন: দুনিয়া সামান্য, কাজেই তারা যেমন খুশি এখানে হেসে নেয়, এরপর যখন দুনিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং তারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যাবে তখন তারা কাঁদতে শুরু করবে যা কোনো দিন শেষ হবে না।
“আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন আর যদি তারা (তোমার সঙ্গে) অভিযানে বের হবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন বলবে, ‘আমার সাথে কখনো বের হতে পারবে না আর কখনো আমার সঙ্গে গিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না, তোমরা প্রথমবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকাকেই বেশি পছন্দ করে নিয়েছ, কাজেই (এখন) পিছে-পড়াদের সাথেই বসে থাক’।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮৩]
মুনাফিকদেরকে যুদ্ধে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না:
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন: فَإِن رَّجَعَكَ ٱللَّهُ “আল্লাহ যদি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন” অর্থাৎ তোমার এই যুদ্ধ থেকে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ফিরিয়ে আনেন إِلَىٰ طَآئِفَةٖ “তাদের কোনো দলের কাছে।” কাতাদা বলেন: আমরা অবহিত হই তারা ছিল ১২জন ব্যক্তি। فَٱسۡتَٔۡذَنُوكَ لِلۡخُرُوجِ “আর যদি তারা (তোমার সঙ্গে) অভিযানে বের হবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে” অর্থাৎ তোমার সঙ্গে অন্য যুদ্ধে فَقُل لَّن تَخۡرُجُواْ مَعِيَ أَبَدٗا وَلَن تُقَٰتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّاۖ “তখন বলবে, ‘আমার সাথে কখনো বের হতে পারবে না আর কখনো আমার সঙ্গে গিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না” অর্থাৎ তাদেরকে তিরস্কার ও শাস্তিস্বরূপ। এরপর এর কারণ বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: إِنَّكُمۡ رَضِيتُم بِٱلۡقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٖ “তোমরা প্রথমবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকাকেই বেশি পছন্দ করে নিয়েছ” এ আয়াতটি এ আয়াতের মত ﴿وَنُقَلِّبُ أَفِۡٔدَتَهُمۡ وَأَبۡصَٰرَهُمۡ كَمَا لَمۡ يُؤۡمِنُواْ بِهِۦٓ أَوَّلَ مَرَّةٖ ١١٠﴾ [ الانعام : ١١٠ ] “যেহেতু তারা প্রথম চোটেই ঈমান আনে নি, কাজেই আমি তাদের বিবেক আর অন্তর্দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দেব।” [সূরা আল-আন‘আম: ১১০] কেননা মন্দের পরিণতি তার পরে মন্দই হয়, যেভাবে ভালো কাজের সাওয়াব তার পরে ভালোই হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা হুদাইবিয়ার উমরাহ প্রসঙ্গে বলেন: ﴿سَيَقُولُ ٱلۡمُخَلَّفُونَ إِذَا ٱنطَلَقۡتُمۡ إِلَىٰ مَغَانِمَ لِتَأۡخُذُوهَا ١٥﴾ [ الفتح : ١٥ ] “তোমরা যখন গনিমতের মাল সংগ্রহ করার জন্য যেতে থাকবে তখন পিছনে থেকে যাওয়া লোকগুলো বলবে।” [সূরা আল-ফাতহ্: ১৫] আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡخَٰلِفِينَ “কাজেই (এখন) পিছে-পড়াদের সাথেই বসে থাক।” আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: অর্থাৎ এ সমস্ত লোকদের সাথে যারা অভিযান থেকে পেছনে পড়ে রয়েছিল।
“৮৪. তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কক্ষনো তাদের জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না আর তাদের কবরের পাশে দণ্ডায়মান হবে না। তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে কুফুরী করেছে আর বিদ্রোহী পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮৪]
মুনাফিকদের জানাযার সালাত আদায় করা নিষেধ:
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি যেন মুনাফিকদের বর্জন করেন আর তাদের যদি কেউ মারা যায় তবে তার জানাযার সালাত যেন আদায় না করেন। আর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করার উদ্দেশ্যে তার কবরে না দাঁড়ান। কেননা সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে আর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিধান প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য যার নিফাক সম্পর্কে জানা গেছে। যদিও এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। যেমন ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই যখন মারা যায় তখন তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে সে তার পিতাকে কাফন পরানোর জন্য তাঁর জামাটি দিতে বলে, ফলে তিনি তা দিয়ে দেন। এরপর সে তার পিতার জানাযার সালাত আদায় করতে বললে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হতে উদ্যত হন তখন উমার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসারাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামা ধরে বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি তার জানাযার সালাত আদায় করবেন অথচ আপনাকে আপনার রব তার জানাযা পড়াতে নিষেধ করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ বলে ইখতিয়ার দিয়েছেন: ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗفَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর (উভয়ই সমান), তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ কক্ষনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” আমি তার জন্য সত্তর বারেরও বেশি ক্ষমা চাইব। তিনি (উমার) বলেন: সে তো মুনাফিক। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত আদায় করেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন:
وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓ “তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কখনো তাদের জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না। আর তাদের কবরের পাশে দণ্ডায়মান হবে না।”
এই হাদিস প্রায় এভাবে স্বয়ং উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেও বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে: তিনি বলেন: এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়িয়ে দেন। তার (খাটলার) পেছনে পেছনে যান। আর তাকে দাফন করা পর্যন্ত তার কবরের উপরে দাঁড়িয়ে থাকেন। (উমর বলেন) আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এভাবে কথা বলার সাহসিকতায় সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অধিক অবগত। আল্লাহর শপথ, বিষয়টি সহজ ছিল। অবশেষে এ দু’টো আয়াত অবতীর্ণ হয়:
وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا “তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কখনো তাদের জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না।” এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোএা মুনাফিকের জানাযা পড়েন নি এবং তার কবরের উপরে দাঁড়ান নি আর এ অবস্থাতেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রূহ কবজ করে নেন। তিরমিযী এভাবে এই হাদিস তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন আর তিনি বলেন: (হাদিসটি) হাসান-সহীহ। ইমাম বুখারীও এ হাদিস বর্ণনা করছেন।
“তাদের মূলধন আর সন্তান-সন্ততি তোমার যেন চোখ ধাঁদিয়ে না দেয়, দুনিয়াতে আল্লাহ সে সব দিয়েই তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে করেন আর কাফির অবস্থায় যেন তাদের প্রাণবায়ু নির্গত হয়।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮৫]
এই ধরণের আয়াতের তাফসীর ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল প্রশংসা এবং তাঁরই অনুগ্রহ।
“৮৬. যখন সূরা অবতীর্ণ করা হয় যে, ‘আল্লাহর ওপর ঈমান স্থাপন কর আর তাঁর রসূলের সঙ্গে থেকে জিহাদ কর’- তখন শক্তি-সামর্থ্য সম্পন্ন লোকেরা তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে আর বলে, ‘আমাদেরকে রেহাই দিন, যারা (ঘরে) বসে থাকে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব। ৮৭. তারা পিছনে (ঘরে বসে) থাকা স্ত্রীলোকদের সাথে থাকাকেই পছন্দ করে। তাদের হৃদয়কে সিল করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই তারা কিছুই বুঝতে পারে না।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮৬-৮৭]
আল্লাহ তা‘আলা ঐ সব লোকদের তিরস্কার করেন, যারা ক্ষমতা, সামর্থ্য এবং অর্থ বিত্ত থাকা সত্ত্বেও জিহাদ থেকে পেছনে পড়ে থাকে এবং তা থেকে বিরত থাকে। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (অভিযানে না গিয়ে) বসে থাকার অনুমতি চায় আর বলে: ذَرۡنَا نَكُن مَّعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ “আমাদেরকে রেহাই দিন। যারা (ঘরে) বসে থাকে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব” তারা নিজেদের জন্য লজ্জিত হওয়া এবং নারীদের সাথে এলাকায় বসে থাকাকেই পছন্দ করে নিয়েছে। সেনাবাহিনী বের হয়ে যাওয়ার পরে নারীরাই তো পেছনে পড়ে থাকে। যুদ্ধের সময় এলে ওরাই হচ্ছে সবচেয়ে কাপুরুষ; কিন্তু নিরাপদ সময়ে তাদের মত বাচাল আর দেখা যায় না। যেমন, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে অপর এক আয়াতে বলেন:
“তোমাদের প্রতি কৃপণতার বশবর্তী হয়ে। যখন বিপদ আসে তখন তুমি দেখবে মৃত্যু ভয়ে অচেতন ব্যক্তির ন্যায় চোখ উল্টিয়ে তারা তোমার দিকে তাকাচ্ছে। অতঃপর বিপদ যখন কেটে যায় তখন ধনের লালসায় তারা তোমাদেরকে তীক্ষ্ণ বাক্য-বাণে বিদ্ধ করে। নিরাপদ (যখন যুদ্ধবিগ্রহ থাকে না এমন) সময় শক্তিশালী ধারালো কথার মাধ্যমে তাদের জবান চড়া হয়; কিন্তু যুদ্ধের সময় (একেবারে) কাপুরুষ। ওরাই এই সকল লোক যারা ঈমান আনে নি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ‘আমলসমুহ পণ্ড করে দিয়েছেন আর এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।” [সূরা আল-আহযাব: ১৯]
“মু’মিনরা বলে, একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোনো সুস্পষ্ট অর্থবোধক সূরা অবতীর্ণ হয় আর তাতে যুদ্ধের কথা উল্লেখ থাকে তখন তুমি তাদেরকে দেখবে যাদের অন্তরে রোগ আছে মৃত্যুর ভয়ে জ্ঞানহারা লোকের মত তোমার দিকে তাকাচ্ছে। কাজেই ধ্বংস তাদের জন্য। তাদের জন্য উত্তম ছিল (আল্লাহর) আনুগত্য করা ও ন্যায়সঙ্গত কথা বলা। অতঃপর যুদ্ধের সিদ্ধান্ত হলে তারা যদি আল্লাহর নিকট দেওয়া অঙ্গিকার পূর্ণ করত। তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত।” [সূরা মুহাম্মদ: ২০]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ “তাদের হৃদয়কে সীল করে দেওয়া হয়েছে)” জিহাদ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর পথে রাসূলের সাথে বের হওয়ার কারণে। فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ “কাজেই তারা কিছুই বুঝতে পারে না” অর্থাৎ কিসে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে সেটা তারা বুঝে না? যার ফলে সেটা তারা করবে। (আরও বুঝে না) কিসে তাদের অকল্যাণ রয়েছে? ফলে সেটা থেকে তারা বিরত থাকবে।
“৮৮. কিন্তু রাসূল আর তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের মাল দিয়ে এবং জান দিয়ে জিহাদ করে। যাবতীয় কল্যাণ তো তাদেরই জন্য। সফলকাম তো তারাই। ৮৯. আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, যাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হল বিরাট সফলতা।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৮৮-৮৯]
ইতোপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের গোনাহ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরপর তিনি মুমিনগণের প্রশংসা করেন এবং পরকালে তাদের সাওয়াব সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তিনি বলেন: لَٰكِنِ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ جَٰهَدُواْ “কিন্তু রাসূল আর তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা জিহাদ করে” এই দু’টি আয়াতের শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থা এবং ঠিকানা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡخَيۡرَٰتُۖ “যাবতীয় কল্যাণ তো তাদেরই জন্য” অর্থাৎ পরকালে। জান্নাতুল ফিরদাউসে এবং উঁচু স্তরে।
“৯০. মরুচারীদের মধ্যেও ওজর-আপত্তি পেশকারীরা এসে অব্যাহতির আবেদন জানালো। যারা (নিজেদের ঈমান থাকার ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট মিথ্যা বলেছিল তারাও পিছনে রয়ে গেল। তাদের (অর্থাৎ বেদুইনদের) মধ্যে যারা কুফুরী করেছে শীঘ্রই এক ভয়ঙ্কর ‘আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৯০]
এরপর আল্লাহ তা‘আলা জিহাদ পরিত্যাগের ব্যাপারে ওযর পেশকারীদের অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করেন, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে ওযর পেশ করতে থাকে আর তাদের জিহাদে বের হতে যে দুর্বলতা ও অক্ষমতা রয়েছে তার বর্ণনা দেয়। এরা হচ্ছে মদিনার আশে-পাশে বসবাসকারী আরব বেদুঈন। দাহ্হাক বর্ণনা করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা وَجَآءَ ٱلۡمُعَذِّرُونَ “ওজর-আপত্তি পেশকারীরা এসে” (তাশদীদ বিহীন) পড়েন আর বলেন: এ হচ্ছে ওযরওয়ালা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এর পরে বলেন: وَقَعَدَ ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ “যারা (নিজেদের ঈমান থাকার ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট মিথ্যা বলেছিল তারাও পিছনে রয়ে গেল” অর্থাৎ তারা এসে ওযর পেশ করে নি।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন: سَيُصِيبُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ “তাদের (অর্থাৎ বেদুইনদের) মধ্যে যারা কুফুরী করেছে, শীঘ্রই এক ভয়ঙ্কর ‘আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।”
“৯১. দুর্বলের উপর, পীড়িতের উপর আর ব্যয় করার মত কোনো সম্বল যাদের নেই তাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই। যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি কল্যাণকামী হয়ে থাকে। সৎ কর্ম পরায়ণদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৯২. তাদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ নেই যারা তোমার কাছে যখন বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিল তখন তুমি বলেছিলে, ‘আমি তো তোমাদের জন্য কোনো বাহন পাচ্ছি না’। তখন তারা ফিরে গেল আর সে সময় তাদের চোখ থেকে অশ্র ঝরে পড়ছিল এ দুঃখে যে, ব্যয় বহন করার মত কোনো কিছু তাদের ছিল না। ৯৩. অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে যারা সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও (যুদ্ধে যাওয়া হতে) তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করেছিল, যারা ঘরে বসা থাকা (স্ত্রী লোকদের) সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করেছিল। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সীল করে দিয়েছেন আর এ জন্য যে, (কিসে নিজেদের কল্যাণ আছে আর কিসে অকল্যাণ) তা তারা জানে না।” [সুরা আত-তাওবাহ: ৯১-৯৩]
এরপর আল্লাহ তা‘আলা (বৈধ) ওযরগুলোর কথা বর্ণনা করেন, যেগুলোর কারণে যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাকলেও ক্ষতি নেই। তন্মধ্যে (প্রথমত তিনি) সেই ওযরের কথা উল্লেখ করেন, যা কোনো ব্যক্তির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে থাকে, শারীরিক দুর্বলতা যা কাউকে জিহাদে না যেতে অনুমতি দেয়। যেমন অন্ধ, খোঁড়া এবং তার অনুরূপ। এ কারণে তিনি এর দ্বারা শুরু করেছেন। এরপর তিনি এমন সব ওজরের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো স্থায়ী নয়। যেমন অসুস্থতা, যা আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করতে বাধা দেয় অথবা দারিদ্রতা, যার কারণে সে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পারে না -এ সমস্ত লোকের জন্য অসুবিধা নেই যদি তারা যুদ্ধে না গিয়ে বসে থাকে আর তাদের বসে থাকা অবস্থায় তারা কল্যাণকামী হয়। তারা বিদ্বেষ ছড়ানো অথবা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে মুসলিমবৃন্দকে নিরুৎসাহিত করে না; বরং তাদের এ সকল অবস্থায় তারা সৎ স্বভাবের অধিকারী। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: مَا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ مِن سَبِيلٖۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ “কর্ম পরায়ণদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
আউযায়ী বর্ণনা করেন, লোকেরা যখন ইস্তিস্কা (বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত)-এর জন্য বের হয় তখন তাদের মাঝে বিলাল ইবনু সা‘আদ দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে বলেন: উপস্থিত জনমণ্ডলি, তোমারা কি গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছ না? তারা বলে: হাঁ, আল্লাহর শপথ, এরপর তিনি বলেন: হে আল্লাহ আমরা তোমাকে বলতে শুনি: مَا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ مِن سَبِيلٖۚ “কর্ম পরায়ণদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই” আমরা গোনাহের স্বীকৃতি দিয়েছি। কাজেই আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি রহম করুন, আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ করুন। তিনি তাঁর দু’হাত উত্তোলন করেন। (তার সঙ্গে) লোকেরাও তাদের দু’হাত উত্তোলন করে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। আউফী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে যুদ্ধে তাঁর সাথে বের হয়ে আসতে নির্দেশ দেন। তখন একদল সাহাবী বের হয়ে আসেন যাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল ইবনু মুকাররিন আল-মুযানীও ছিলেন। তাঁরা বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমাদেরকে বাহন দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে বলেন: আল্লাহর শপথ, আমার কাছে কোনো বাহন নেই। তারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যায়। তাদের জন্য জিহাদে না গিয়ে বসে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাদের (পথের) খরচও নেই আবার বাহনও নেই। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি তাদের ভালোবাসার আগ্রহ লক্ষ্য করেন তখন তাদের ওযর গ্রহণ করে আয়াত অবতীর্ণ করেন: لَّيۡسَ عَلَى ٱلضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرۡضَىٰ “দুর্বলের উপর, পীড়িতের উপর কোনো অভিযোগ নেই” لَّيۡسَ عَلَى ٱلضُّعَفَآء “দুর্বলের উপর” فَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ “তা তারা জানে না” এই পর্যন্ত।
মুজাহিদ রহ. وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ “তাদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ নেই, যারা তোমার কাছে যখন বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিল” এ আয়াত সম্পর্কে বলেন: মুকাররিন ইবনু মুযায়নাহ গোত্রের ব্যাপারে (এ আয়াত) অবতীর্ণ হয়।
ইবনু আবু হাতিম বর্ণনা করেন, হাসান বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা মদিনায় একদল লোক ছেড়ে এসেছ, তোমরা যা কিছুই খরচ করেছ, যে কোনো উপত্যকা অতিক্রম করেছ আর শত্রুদের থেকে যে কোনো কষ্ট পেয়েছ তাতেই তারা তোমাদের সাথে সাওয়াবে শরীক হয়েছে। এরপর তিনি পাঠ করেন: وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَآ أَجِدُ مَآ أَحۡمِلُكُمۡ عَلَيۡهِ “তাদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ নেই যারা তোমার কাছে যখন বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিল তখন তুমি বলেছিলে, ‘আমি তো তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না’।”
মুল হাদিসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মদিনায় একদল লোক রয়েছে, তোমরা যে উপত্যকাই অতিক্রম করেছ, সম্মুখে অগ্রসর হয়েছ তাতেই তারা তোমাদের সাথে রয়েছে। সাহাবীগণ বলেন: তারা মদিনাতে থেকেই? তিনি বলেন: হাঁ, তাদের ওযর তাদেরকে আটকে দিয়েছে। আর ধনী হওয়া সত্ত্বেও যারা জিহাদে না গিয়ে বসে থাকার অনুমতি চেয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি তিরস্কার করেছেন। আর তাদের ভর্ৎসনা করেছেন পেছনে থেকে যাওয়াতে খুশি হওয়ায় নারীদের সাথে যারা তাদের বাড়িঘরে বসে থাকে।
وَطَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ “আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সীল করে দিয়েছেন আর এ জন্য যে, (কিসে নিজেদের কল্যাণ আছে আর কিসে অকল্যাণ) তা তারা জানে না।”
“৯৪. তারা তোমাদের নিকট ওযর পেশ করবে যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে। বল, ‘তোমরা ওযর পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনো বিশ্বাস করব না। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের খবর আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন এবং তাঁর রাসূলও। তারপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর নিকট। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে যা তোমরা আমল করতে সে সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন’। ৯৫. যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, তখন অচিরেই তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে শপথ করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপক্ষো কর। নিশ্চয় তারা অপবিত্র এবং জাহান্নাম হল তাদের আশ্রয়স্থল। তারা যা অর্জন করত, তার প্রতিফলস্বরূপ। ৯৬. তারা শপথ করবে তোমাদের নিকট, যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। অতএব তোমরা যদিও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক কওমের প্রতি সন্তুষ্ট হন না।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৯৪-৯৬]
মুনাফিকদের চক্রান্তের বর্ণনা :
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে মুমিনগণ যখন মদিনায় ফিরে আসে তখন মুনাফিকরা মুমিনদের নিকট ওযর পেশ করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন ‘বলূন তোমরা ওযর পেশ করো না আমরা কখনই তোমাদেরকে বিশ্বাস করি না।’ অর্থাৎ তোমাদেরকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করি না। (আল্লাহ তোমাদের খবর আমাদের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের অবস্থাদি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন (অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল তোমাদের কর্মসমূহ প্রত্যক্ষ করবেন)। অর্থাৎ পৃথিবীতে লোকদের কাছে তোমাদের কর্মসমূহ প্রকাশ করে দিবেন।
فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ “তোমাদেরকে তোমাদের সৎকর্ম ও মন্দ কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন ও এর ভিত্তিতে তোমাদের প্রতিফল দিবেন।” অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের (মুনাফিকদের) সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, অচিরেই তারা ওযর পেশের জন্য তোমাদের সাথে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের পরিহার কর কাজেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যস্বরূপ তাদেরকে উপেক্ষা কর। নিঃসন্দেহে তারা অপবিত্র। অপবিত্র তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় ও আক্বীদা-বিশ্বাস। তারা যা উপার্জন করেছিল প্রতিফল হিসাবে, পরকালে তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। অর্থাৎ গুনাহ ও দোষত্রুটির কারণে।
ٱلۡفَٰسِقِينَ অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেছে। কেননা فسق বলা হয়, বের হয়ে যাওয়াকে। যেমন ইঁদুরকে فويسقة বলা হয় ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তার গর্ত থেকে বের হওয়ার জন্য।
“৯৭. বেদুঈনরা কুফর ও কপটতায় কঠিনতর এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যা নাযিল করেছেন তার সীমারেখা না জানার অধিক উপযোগী। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। ৯৮. আর বেদুঈনদের কেউ কেউ যা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, তা জরিমানা গণ্য করে এবং তোমাদের দুর্বিপাকের প্রতীক্ষায় থাকে। দুর্বিপাক তাদের উপরই এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। ৯৯. আর বেদুঈনদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর নিকট নৈকট্য ও রাসূলের দো’আর উপায় হিসেবে গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৯৭-৯৯]
বেদুঈন লোকেরা কুফুরী ও কপটতার দিক থেকে অধিক কঠোর:
আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, মরুবাসীদের মধ্যে রয়েছে কাফের, মুনাফিক ও মু’মিন। তবে তাদের (মরুবাসী লোকদের) কুফুরী ও কপটতা অন্যদের চেয়ে ব্যাপক, কঠিন ও অধিক উপযোগী। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তার সীমা না জানার ব্যাপারে অধিকতর যোগ্য। যেমন আ‘মাশ ইব্রাহীম থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক বেদুঈন যায়েদ বিন সওহান-এর নিকট উপবিষ্ট ছিল। তিনি (যায়েদ) তাঁর সাথীদের সাথে কথা বলছিলেন আর তিনি ‘নাহাওয়ান্দ’-এর যুদ্ধে তাঁর হাত হারান (কেটে বিচ্ছিন্ন হয়)। গ্রাম্য লোকটি বলল: আল্লাহর শপথ তোমার কথা আমাকে চমৎকৃত করেছে। আর তোমার হাত আমাকে সন্দেহে ফেলেছে। যায়েদ বললেন: তুমি আমার হাতের ব্যাপারে সন্দিহান কেন? মরুবাসী লোকটি বলল: আল্লাহর শপথ আমি জানি না কোনো হাতটি তারা কেটেছিল (চুরি অপরাধের জন্য) ডান হাত নাকি বা হাত? যায়েদ ইবন সওহান বললেন: আল্লাহ সত্যই বলেছেন: ٱلۡأَعۡرَابُ أَشَدُّ كُفۡرٗا وَنِفَاقٗا وَأَجۡدَرُ أَلَّا يَعۡلَمُواْ حُدُودَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ “বেদুঈনরা কুফর ও কপটতায় কঠিনতর এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যা নাযিল করেছেন তার সীমারেখা না জানার অধিক উপযোগী।”
ইমাম আহমাদ ইবনে আব্বাস থেকে তিনি (ইবনু আব্বাস) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “যে মরু অঞ্চলে বাস করে সে হয় কঠোর, যে শিকারের পিছনে ছুটে সে হয় গাফেল আর যে বাদশাহর কাছে আসে সে ফিতনায় পড়ে”। আবু দাউদ, তিরমিযী এবং নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। আর তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, (তা হচ্ছে) “জনৈক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিছু উপঢৌকন দিলে তিনি বেদুঈনকে এর কয়েকগুণ প্রতিদান দিলেন, ফলে সে খুশি হল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মনে হয় যেন আমি কোনো কুরাইশ, সাকাফী, আনসারী এবং দাওসি ছাড়া অন্য কারও থেকে উপঢৌকন গ্রহণ না করি।” কেননা তারা মক্কা, তায়েফ, মদিনা এবং ইয়ামেনে বাস করত। তারা মরুবাসীদের চেয়ে কোমল চরিত্রের অধিকারী। কেননা মরুবাসীদের স্বভাব প্রকৃতিতে রয়েছে রুক্ষতা।
وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ “আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়” ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যে ঈমান ও জ্ঞান শিক্ষা লাভের অধিকার রাখে আর বান্দাদের মাঝে জ্ঞান, অজ্ঞতা, ঈমান, কুফরী এবং কপটতা বণ্টনের ক্ষেত্রে তিনি প্রজ্ঞার অধিকারী। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা হেতু তিনি যা করেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বর্ণনা করেন যে, তারা আল্লাহর রাস্তায় দানকে مَغۡرَمٗا জরিমানা, ক্ষতি মনে করে وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ ٱلدَّوَآئِرَ “আর তোমাদের দুর্ঘটনা বা বিপদাপদের তারা প্রতিক্ষা করে।” বস্তুত: عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۗ “উল্টো তাদের উপরই দুঃখ মসিবত আপতিত হয়।” আল্লাহ তার বান্দাদের অতিশয় দো’আ শ্রবণকারী আর কে সাহায্য পাওয়ার অধিকারী ও কে অপদস্থ হওয়ার যোগ্য সে সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা জ্ঞাত।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এটা মরুবাসী লোকদের প্রশংসিত একটি অংশ। আর তারা ওরাই যারা আল্লাহর রাস্তায় যা খরচ করে তাকে তারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম মনে করে, যার দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে থাকে। আর এর দ্বারা তারা তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের দো’আ কামনা করে থাকে। সত্যিই তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম, জেনে রাখ নিশ্চয় তা তারা অর্জন করবে।
“১০০. আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০০]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/344/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।