মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কোনো ব্যাপারে একথা বলতে শুনেছি যে, আমার ধারণা হয় ব্যাপারটি এমন হবে, তবে তার ধারণা মত ব্যাপারটি সংঘটিত হয়েছে। একবার উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বসা ছিলেন, এমন সময় একজন সুদর্শন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে তবে আমার মনে হয় লোকটি জাহেলী ধর্মাবলম্বী অথবা ভবিষ্যৎ গণনাকারীও হতে পারে। লোকটিকে আমর কাছে নিয়ে এস। তাকে তাঁর কাছে ডেকে আনা হল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার ধারণার কথা তাকে শুনালেন। তখন সে বলল, একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে বলা হল যা আজকার মত আর কোনো দিন দেখেনি। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি তোমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারটা খুলে বল। সে বলল, জাহেলী যুগে আমি তাদের ভবিষ্যৎ গণনাকারী ছিলাম। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, জ্বিনেরা তোমাকে যে সব কথাবার্তা বলেছে, তন্মধ্যে কোনো কথটি তোমার নিকট সর্বাধিক বিষ্ময়কর ছিল। সে বলল, আমি একদিন বাজারে অবস্থান করছিলাম। তখন একটি মহিলা জ্বিন আমার নিকট আসল। আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পেলাম। তখন সে বলল, তুমি কি জ্বিন জাতির অবস্থা দেখছনা, তারা কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে? তাদের মধ্যে হতাশা ও বিমূঢ় হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা ক্রমশঃ উটওয়ালাদের এবং চাদর জুব্বা পরিধানকারীদের (আরববাসী) অনুগত হয়ে পড়ছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সে সত্য কথা বলেছে। আমি একদিন তাদের দেবতাদের কাছে ঘুমন্ত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি একটি গরুর বাছুর নিয়ে হাযির হল এবং সেটা জবাই করে দিল। ঐ সময় এক ব্যক্তি এমন বিকট চীৎকার করে উঠল, যা আমি আর কখনও শুনিনি। সে চীৎকার করে বলছিল, হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক কল্যাণময় ব্যাপার অচিরেই প্রকাশ লাভ করবে। তা হল, একজন বিশুদ্ধভাষী লোক বলবেন, (এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত) লোকজন ছুটাছুটি করে পলায়ন করল। আমি বললাম, এ ঘোষণার রহস্য উদঘাটন অবশ্যই করব। তারপর আবার ঘোষণা দেওয়া হল। হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক ও কল্যাণময় ব্যাপার অতি সত্বর প্রকাশ পাবে। তাহল একজন বাগ্মী ব্যক্তি এর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে। তারপর আমি উঠে দাড়ালাম। এর কিছুদিন পরেই বলা হল যে, তিনিই নবী। [বুখারী, হাদীস নং ৩৮৬৬।]
আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিব শামের উদ্দেশ্যে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঙ্গে করে রওয়ানা হলেন, তাঁর সাথে কুরাইশদের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। যখন তারা পাদ্রী বাহিরার নিকটবর্তী হলেন তখন যাত্রা বিরতি দিলেন। তাদের কাছে পাদ্রী আসলেনচ। কুরাইশ কাফেলা ইতোপূর্বে এ পথ দিয়ে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছেন, কিন্তু তিনি তাদের সামনে বের হতেন না এবং কোনো কথা বার্তাও বলতেন না। তারা সেখানে যাত্রা বিরতি দিলেন এবং পাদ্রী তাদেরকে ঘুরে ঘুরে অবলোকন করছিলেন। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরে বললেন, ইনি সাইয়্যেদুল আলামীন, ইনি রাসূলু রাব্বিল আলামীন। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরাইশ প্রবীনরা বলল, আপনি কিভাবে তাঁকে চিনলেন? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা যখন মরুউপত্যাক্যা দিয়ে যাচ্ছিলে তখন সেখানকার সব গাছ ও পাথর তাঁকে সিজদা করছিল। আর নবী ছাড়া কাউকে গাছপালা ও পাথর সিজদা করেনা। আমি তাঁর পিঠের দু’স্কন্ধের মাঝে নবুওয়তের সীলমোহর দেখেছি তা আপেলের মত। অতঃপর পাদ্রী ফিরে গিয়ে খাদ্য তৈরি করে নিয়ে আসল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পালের কাছে ছিল। তিনি বললেন, তাঁকে ডেকে নিয়ে আসো। তিনি যখন আসছিলেন তখন মেঘ তাঁকে ছায়া দিচ্ছিল। তিনি যখন কাফেলার কাছে এলেন দেখলেন সবাই ছায়ায় গেছেন, ফলে তিনি রৌদ্রে বসলেন, কিন্তু তখন গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে গেল। তখন পাদ্রী বললেন, দেখ গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে গেছে। পাদ্রী তাঁকে নিয়ে রোমে যেতে বারবার নিষেধ করলেন। বললেন, সেখানকার লোকেরা তাঁকে চিনতে পারলে হত্যা করবে। তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, রোম থেকে সাতজন আরোহী তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তাদের আগমনের হেতু কি? তারা বললেন, একজন নবী এ মাসে এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। আমরা এমন কোনো পথ বাকি রাখিনি সেখানে লোক পাঠাইনি। আমরা তাঁর খবর সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পশ্চাতে উত্তম কেউ আছেন? তারা বললেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়েই আসছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ কোনো কিছু করতে চাইলে তা বাস্তবায়ন হবে, কোনো মানুষ কি তা ঠেকাতে পারবে? তারা বললেন, না। কুরাইশ কাফেলা সেখানে রাত্রি যাপন করলেন। পাদ্রী তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বালকের অবিভাভক কে? তারা বললেন, আবু তালিব। তিনি আবু তালিবকে বারবার বলতে লাগলেন যে, তাঁকে মক্কায় ফিরে যেতে। ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে করে মক্কায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাদ্রী তাদের পথের খাবারের জন্য রুটি ও তেলের ব্যবস্থা করেন। [তিরমিযি, হাদীস নং ৩৬২০।]
ইবন ইসহাক রহ. এর বর্ণনায় সিরাতে ইবন হিশামে এসেছে, আসেম ইবন ‘উমর ইবন কাতাদা তাঁর গোত্রের লোকের থেকে বর্ণনা করেন, তারা বলেন, আমাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি আমাদেরকে হিদায়েতও দান করেছেন। আমরা যখন ইয়াহুদিদের থেকে শুনতাম যে, –আমরা মুশরিক ছিলাম, আর তারা আহলে কিতাব- তাদের কাছে এমন ইলম আছে যা আমাদের কাছে নেই। ফলে আমাদের ও তাদের মাঝে ঝগড়া ও মতবিরোধ লেগেই থাকত। আমরা যখন তাদের কোনো প্রতিশোধ নিতাম যা তারা অপছন্দ করত তখন তারা বলত, শীঘ্রই একজন নবীর আগমন ঘটবে, আমরা তাঁর সাথে জিহাদ করে তোমাদেরকে হত্যা করব যেমনিভাবে ‘আদ ও ইরাম জাতিকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা প্রায়ই তাদের থেকে এ ধরণের কথা শুনতাম। আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করলেন আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। আর তখনই বুখতে পারলাম তারা কিসের ধমক দিত। আমরা দ্রুত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম, কিন্তু তারা (ইয়াহুদিরা) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুফুরী (অস্বীকার) করল। এদের সম্পর্কেই সূরা আল-বাকারাহর নিন্মোক্ত আয়াত নাযিল হয়, “আর যখন তাদের কাছে, তাদের সাথে যা আছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সত্যায়নকারী কিতাব এল, অথচ তারা পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত। সুতরাং যখন তাদের নিকট এল যা তারা চিনত, তখন তারা তা অস্বীকার করল। অতএব কাফিরদের উপর আল্লাহর লা‘নত”।[সূরা আল-বাকারা: ৮৯] [সিরাতে ইবন হিশাম, ১/২১১, হাদীসের সনদটি হাসান।]
জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা যুকালা ও যু‘আমর নামে ইয়ামানের দু’ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শোনাতে লাগলাম। (বর্ণনাকারী বলেন) এমন সময়ে যু‘আমর, (রাবী) জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা যদি তোমার সাথীরই [রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের] কথা হয়ে থাকে তা হলে মনে রেখো যে, তিন দিন আগে তিনি মৃত্যু বরণ গেছেন। (জারীর বলেন, কথাটি শুনে আমি মদীনা অভিমুখে ছুটলাম)। তারা দু’জনেও আমার সাথে সম্মুখের দিকে চললেন। অবশেষে আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদীনার দিক থেকে আসা একদল সওয়ারীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়ে গেছে। মুসলিমদের সম্মতিক্রমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু’জনে (আমাকে) বলল, (তুমি মদীনায় পৌঁছলে) তোমার সাথী (আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলবে যে, আমরা কিছুদূর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ্, এ কথা বলে তারা দু’জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের কথা জানালাম। তিনি (আমাকে) বললেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময় (যু‘আমরের সাথে সাক্ষাৎ হলে) তিনি আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটি কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষন পর্যন্ত কল্যান ও সাফল্যের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা একজন আমির মারা গেলে অপরজনকে (পরামর্শের মাধ্যম) আমির বানিয়ে নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয়, তা হলে তোমাদের আমিরগন (জাগতিক) অন্যান্য রাজা বাদশাদের মতোই হয়ে যাবে। তারা রাজাসুলভ ক্রোধ, রাজাসুলভ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। (খলীফা ও খিলাফত আর অবশিষ্ট থাকবে না।) [বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫৯।]
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন, যু‘আমর একথা পূর্ববর্তী কিতাব থেকে বলেছেন। কেননা ইয়ামেনে তখন অনেক ইয়াহুদী বাস করতেন, ফলে অনেক ইয়ামেনী ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাদের থেকে সে ধর্ম শিক্ষালাভ করেন। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অন্তর্ভুক্ত তিনি যখন মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইয়ামেনে পাঠিয়েছেন এবং তখন তাকে বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। [ফাতহুল বারী: ৮/৭৬।]
সালামাহ ইবন সালামাহ ইবন ওয়াকশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, বনী আব্দুল আশহাল গোত্রে আমাদের একজন ইয়াহুদী প্রতিবেশী ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের কিছুদিন আগে তিনি একদিন ঘর থেকে আমাদের মাঝে বের হলেন এবং বনী আব্দুল আশহালের মসলিশে উপস্থিত হলেন। সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখনকার উপস্থিত সকলের মাঝে আমি খুব অল্প বয়সী ছিলাম, আমার পড়নে একখানা চাদর ছিল, আমার পরিবারের আঙ্গিনায় শুয়ে ছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুর পরে জীবিতকরণ, কিয়ামাহ, হিসাব নিকাশ, মিযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াজ করছিল। তিনি বললেন, মুশরিকরা মনে করেন, মৃত্যুর পরে তাদের পুনরুত্থান হবেনা। তারা বলল, দুর্ভোগ, তারা মিথ্যা বলে। মৃত্যুর পরে মানুষ হয়তো জান্নাতের গৃহে যাবে অথবা তাদের আমলের ফলোস্বরূপ জাহান্নামে যাবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি শপথ করে বলতে পারি, যে কারো জন্য দুনিয়ার চেয়েও বড় চুলা জাহান্নামে অপেক্ষা করতেছে, তাতে তারা প্রবেশ করবে, ইহা তাদেরকে রান্না করে ফেলবে, তবে আগামীতে তাদেরকে এ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তারা বলল, কিভাবে? এর নিদর্শন কি? তিনি বললেন, এই দেশ থেকে –তখন তিনি আঙ্গুল দিয়ে মক্কা ও ইয়ামেনের দিকে ইশারা করলেন- একজন নবীর আগমন ঘটবে। তারা বলল, কখন তাকে দেখা যাবে? তখন তিনি আমার দিকে তাকালেন, আর আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলাম। তিনি বললেন, যদি তিনি আবির্ভাব হন তবে এখন তাঁর বয়স এ ছেলের মতই হবে। সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ, রাত দিন অতিবাহিত হতে লাগল একসময় আল্লাহ তাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন। তিনি জীবিত, আমাদের আছেন। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম, আর সে ইয়াহুদি হিংসা ও বিদ্বেষবশত তাঁর কুফুরী করল। আমরা বললাম, হে অমুক! আপনার দুর্ভাগ্য, আপনি না সেদিন আমাদেরকে একথা বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলেছি। কিন্তু ইনি সে লোক নন। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৫৮৪১, হাদীসটি হাসান।]
ফালতান ইবন ‘আসিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন, সে মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক, তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি তাওরাত পড়? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ইঞ্জিল পড়? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। বললেন, কুরআন পড়? বলল, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জীবন যদি আমি চাই তবে কুরআন পড়তে পারি। তিনি বললেন, তুমি তা পড়। তুমি কি আমাকে তাওরাত ও ইঞ্জিলে পাওনি? সে বলল, আপনার, আপনার উম্মত ও জন্মের কথা সবই পেয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম আপনি আমাদের গোত্র থেকে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আপনি যখন আবির্ভাব হলেন ভেবেছিলাম আপনিই সে নবী, কিন্তু দেখলাম আপনি সে নবী নন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেন তোমার এমন মনে হলো? সে বলল, আমরা পেয়েছি যে, তাঁর সাথে সত্তর হাজার উম্মত থাকবেন। তাদের কোনো হিসেব হবেনা ও তাদের কোনো আযাবও হবে না। অথচ আপনার সাথে গুঁটিকয়েক লোক দেখতে পাচ্ছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আল্লাহর কুদরতি হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, আমিই সে নবী, এরাই আমার উম্মত, তারা সত্তর হাজারেরও অধিক, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি। [সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৫৮০, হাদীসটি হাসান।]
আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জাফর ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে নাজ্জাশীর দেশে হিজরত করতে আদেশ করলেন। এ সংবাদ আমাদের গোত্রের লোকের কাছে পৌঁছে গেল। তারা ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহ ইবন ওয়ালিদকে অনেক উপঢৌকন সহকারে নাজ্জাশীর দরবারে পাঠালেন। আমরা নাজ্জাশীর দেশে আসলাম, তারা দু’জনও নাজ্জাশীর দেশে আসল। তারা নাজ্জাশীকে হাদিয়া পেশ করল, তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং তারা তাকে সিজদা করল। অতঃপর ‘আমর ইবন ‘আস নাজ্জাশীকে বলল, আমাদের জাতির কিছু লোক নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে আপনার দেশে বসবাস করছে। তখন নাজ্জাশী বলল, তারা কি আমার দেশে আছে? তারা বলল হ্যাঁ। তখন নাজ্জাশী আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন। জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে বললেন, তোমরা কেউ কোনো কথা বলবে না। আজকে আমি তোমাদের মুখপাত্র (বক্তা)। তিনি বললেন, আমরা নাজ্জাশীর কাছে আসলাম, তিনি তাঁর আসনে উপবিষ্ট ছিল। ‘আমর ইবন ‘আস তাঁর ডান পাশে ও ‘উমারাহ তাঁর বাম পাশে ছিল। কিসসীস ও রুহবানরা খাদ্য সামনে দস্তরখানে বসা ছিল। ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহ তাদেরকে বলল, তারা আপনাকে সিজদা করেনি। তখন যাজকেরা জোরপূর্বক সিজদা করানোর চেষ্টা করল। তারা বলল, তোমরা সম্রাটকে সিজদা কর। জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করি না। আমরা যখন নাজ্জাশীর কাছে পৌঁছলাম তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন আমাকে সিজদা করলে না? তিনি বললেন, আমরা একমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করি। নাজ্জাশী তাদেরকে বললেন, তোমরা কি কর? তিনি (জাফর) বললেন, আল্লাহ আমাদের মাঝে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি সে রাসূল যার সম্পর্কে ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন যে, “আমার পরে একজন রাসূল আসবেন যার নাম আহমদ”। [সূরা আস-সাফ: ৬] তিনি আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে ও তাঁর সাথে কোনো শরীক না করতে আদেশ দেন। তিনি সালাত কায়েম, যাকাত আদায়, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, একথা শুনে নাজ্জাশী আশ্চর্য হলেন। ‘আমর ইবন ‘আস যখন নাজ্জাশীর এ অবস্থা দেখল তখন সে বলল, আল্লাহ সম্রাটকে সংশোধন করুন। তারা ঈসা ইবন মারইয়ামের বিরোধীতা করে। তখন নাজ্জাশী জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সাথী ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন তাই বলেন, তিনি রুহুল্লাহ, ও আল্লাহর কালিমা, সতীস্বাধ্বী রমনী মারইয়াম আলাইহিস সালাম যাকে কোনো মানুষ স্পর্শ করেনি তাঁর গর্ব থেকে তিনি ভুমিষ্ট হয়েছেন। একথা শুনে নাজ্জাশী মাটি থেকে একটি লাঠি নিয়ে বলতে লাগলেন, হে কিসসীস ও রুহবানের দল! তোমরা ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে যা যা বল এরা এর বেশি কিছু বাড়িয়ে বলেনি। তোমাদেরকে স্বাগতম ও তোমরা যার কাছ থেকে এসেছ তাকেও স্বাগতম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর সম্পর্কেই ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন। আমি যদি এ রাষ্ট্রের বাদশাহের স্থানে না হতাম তবে আমি তাঁর কাছে যেতাম এবং তাঁর জুতো বহন করতাম। তোমরা আমার দেশে যতদিন খুশী বসবাস কর। তিনি আমাদের জন্য খাদ্য ও পোশাকের নির্দেশ দেন। ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহর হাদিয়া ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমর ইবন ‘আস খাটো আর ‘উমারাহ ইবন ওয়ালীদ সুদর্শন পুরুষ ছিল। তারা সমুদ্রে নাজ্জাশীর কাছে এলো। তিনি বলেন, তারা মদ্য পান করলেন। ‘আমর ইবন ‘আসের সাথে তার স্ত্রী ছিল। তারা যখন মদ পান করল তখন উমারাহ ‘আমরকে বলল, তোমার স্ত্রীকে আমাকে চুম্বন করতে বলো। ‘আমর তাকে বলল, তোমার লজ্জা করা উচিত। ফলে উমারাহ তাকে ধরে সাগরে ফেলে দেয়। ‘আমর অনেক কষ্ট করে নিজেকে সাগর থেকে উঠিয়ে নৌকায় তোলে। এতে ‘আমর তার উপর রাগান্বিত হয়। সে নাজ্জাশীকে বলল, আপনি যখন বের হয়েছেন ‘উমারাহ আপনার পিছনে আপনার পরিবারকে দেখেছে। ফলে নাজ্জাশী উমারাহকে ডাকলেন। তিনি তার মূত্রনালীতে ফুঁৎকার দিল, ফলে সে হিংস্র হয়ে গেল। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৩৬৬৪০। হাদীসটি সহীহ এবং এর রিজাল শাইখাইনের রিজাল।]
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদী আলিমদের থেকে জনৈক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ্। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন,
“আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে”। [সূরা আয্-যুমার: ৬৭] [বুখারী, হাদীস নং ৪৮১১, মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮৬।]
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন একটি রুটি হয়ে যাবে, আর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য তাকে স্বহস্তে তুলে নেবেন, যেমন তোমাদের মাঝে কেউ সফরের সময় তার রুটি হাতে তুলে নেয়। এমন সময় একজন ইয়াহুদী এলো এবং বলল, হে আবুল কাসিম! দয়াময় আপনাকে বরকত প্রদান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের অতিথেয়তা সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বললেন হ্যাঁ, লোকটি বলল, (সেই দিন) সমস্ত ভূ-মন্ডল একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (লোকটিও সেইরূপই বলল)। এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন, এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁতসমূহ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন। তবে কি আমি তোমাদেরকে (সেই রুটির) তরকারী সম্পর্কে বলব না? তিনি বললেন, তাদের তরকারী হবে বালাম এবং নুন, সাহাবীগণ বললেন, সে আবার কি? তিনি বললেন, ষাঁড় এবং মাছ। এদের কলিজার গুরদা থেকে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে। [বুখারী, হাদীস নং ৬৫২০, মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯২।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।